14-08-2020, 07:31 PM
দ্বাদশ
ঠিক করার পরও সারা রাত শুতে পারিনি, ভেতরে জানি না কিছু একটা ভয় করছিলো, মন বলছিলো গিয়ে একবার দেখে আসতে আবার কিছু একটা জিনিষ ভেতর থেকে আমাকে যেতে বারণ করছিলো, যাই হোক সেই রাতটা এই ভেবেই কেটে গেলো পরের দিন ও যখন দেখলাম শাহজাদা আসিনি আমি কাউকে কিছু না বলেই বেরিয়ে গেলাম ওই ঠিকানার খোঁজে, তখন কি আর জানতাম আমার ভাগ্য আমাকে টানছে এক অজানা ভবিষ্যত এর দিকে এমন ভবিষ্যত যেইখানে আমার সব কিছু পরিবর্তন হয়ে যাবে, যাই হোক বেরিয়েতো গিয়েছিলাম কিন্তু আমার ছেলে কে ঠিক মত দুধ খাওয়ানো হয়নি বলে দুধ একটু একটু করে বেরিয়ে পড়ছিল, তাই যা হোক করে শারি চাপা দিয়ে হাঁটছিলাম, ভেতরে একটা অজানা ভয় আমার উপর ভর করেছিল সেইদিন আর মনে মনে ভাবছিলাম ও অজানা একটা লোকের জন্যে এত দূরে আসা কি ভালো হবে ভাবতে ভাবতে ওই ঠিকানার কাছে পৌঁছে গেলাম, কিন্তু ঘর খোজাতে একটু অসুবিধা হচ্ছিলো তাই আশপাশে একটু জিজ্ঞাসা করতে হলো, যাকেই জিজ্ঞাসা করেছিলাম কেমন যেনো আমার দিকে তাকাচ্ছিলো, সন্দেহের নজরে দেখছিল, বুঝতে পারছিলাম না কেন! যাইহোক শেষ অবধি জানা গেলো যে রেল লাইন এর ধারের ঝুপড়ি তে নাকি শাহজাদা থাকে, যত কাছে যাচ্ছিলাম আমার ভেতরের ভয় আমাকে গ্রাস করেছিল, শেষ অবধি নিজের মনকে শান্ত করে পৌঁছে গেলাম। ঘরের কাছে এসে থমকে গেলাম কিছুটা, একটা লোক কি করে এমন একটা নোংরা জায়গায় থাকতে পারে, ঘরের আশপাশে শুধু বড় বড় গাছ, পাশে একটা নোংরা খাল আছে, ঐখানে বেশির ভাগ লোক আবর্জনা ফেলতে যায়, এই সব দেখে নিজেকে খুব ছোট লাগছিলো , আমি এতদিন নিজের ভাগ্যকে দোষ দিছিলাম যা পাইনি আমি নিজের জীবনে কিন্তু এই লোকটা এই টুকু ঘরে , এই নোংরাতেই নিজের জিবনটা কাটাচ্ছে কিন্তু কোনোদিন তাকে কাদতেঁ বা দুঃখ করতে দেখিনি, যখনই তাকাতো আমার দিকে এক ভাবেই তাকিয়ে থাকতো শেষে হাসতো, সেই লোকটা কিনা আমার জন্যে আজ না খেতে পাওয়ার মত অবস্থা! শেষ অবধি আমি ওর ঘরের দিকে রওনা দিলাম, ঘরের সামনে দেখলাম দুটো ফুলগাছ লাগানো আছে, দেখে মনে হচ্ছে যেনো কেউ এতে রোজ জল দিয়ে বড়ো করেছে, আর ঘরের সামনে একটা নোংরা চটের বস্তা ঝোলানো, দরজা নেই বলে তাই হয়তো চটের বস্তা ঝোলানো আছে, যাই হোক সরিয়ে দিয়ে আস্তে আস্তে ভেতর টা দেখলাম, ঘরে ধুলো ভরা , একটা ভাঙাচোরা কাঠের বিছানা আছে , পাশে দু তিনটে লুঙ্গি আছে তাও কতদিনের না কাচা, দুটো গেঞ্জি ছেরা, কি করে যে একটা মানুষ এই নোংরাতে থাকতে পারে কে জানে, যাইহোক ঘরে কেউ ছিলো না তাই অজান্তেই আমি আস্তে আস্তে সব গোছাতে লাগলাম, মনে হলো যেনো এই ঘরে একটা মেয়েছেলে দরকার যে কিনা ঘর টাকে গুছিয়ে রাখতে পারবে। আগে ঘরে ঢুকে সব লুঙ্গি র গেঞ্জি গুলোকে একটু জল এ ভেজালাম তারপর ঘরটাকে থাকার মতো করতে লাগলাম, যতই হোক একটা মেয়ে হয়ে কি করে একটা এরকম নোংরা ঘর থাকতে দি, তাই আস্তে আস্তে শারি কোমরে গুজে কাজে লেগে গেলাম, বাইরে থেকে কেউ দেখলে ভাববে আমি বোধয় এই ঘরের বউ, ঘরের নোংরা পরিস্কার করার পর যখন বাইরের নোংরা বস্তাটা বদলাতে যাবো হটাৎ আমি দাড়িয়ে গেলাম, দেখি ঘরের এককোনে শাহজাদা আমাকে দেখছে ভালো করে, জানিনা কতক্ষন ধরে কারণ আমি ঘর গোছাতে ব্যস্ত ছিলাম
আমি:- আরে আপনি! কতক্ষন ধরে দাড়িয়ে আছেন ( শাহজাদা আমাকে এক ভাবেই তাকিয়ে ছিলো তাই আমি বেশি ওর নজর এর দিকে তাকাতে পারছিলাম না)
শাহজাদা :- এই কিছুক্ষন আগে মালকিন, বাইরে থেকে শুনলাম কোন একটা সুন্দর বউ আমার খোজ করছিলো, তাই জানতাম আপনি হবেন নিশ্চয়ই
আমি:- বাহ্! কি করে বুঝলেন যে আমি হবো, ওই সুন্দর বউ তো অন্য কেউও হতে পারে?
শাহজাদা:- না, হতে পারে না, আমার দেখাতে আপনি সব থেকে সুন্দরী
(একটা নারী সবসময় নিজের প্রশংসা শুনতে ভালোবাসে সেইটা বোধয় এই লোকটা ভালো করেই জানে , তাও শুনে কেমন যেনো লজ্জা করছিলো, আমার চোখ টা যেনো ওর চোখে মেলাতে পারছিলাম না, দুই পায়ের বুড়ো আঙুলটা ক্রমাগত একে অপরের দিকে এগিয়ে যাচ্ছিল, যাইহোক লোকটা ভালো কথা বলতে পারে সেইটা বোঝা গেলো)
শাহজাদা:- আর আপনি ছাড়া কেউ খোজ নেওয়ার এইখানে নাই, কার অত জায় আসে মালকিন যে আমার মত অভাগার খোজ নিবে
( শুনে একটু চমকে গেলাম, এ কি করে জানলো যে আমি এর খোজ নি)
আমি:- আচ্ছা, আপনি কি করে জানলেন যে আমি আপনার খোজ নি
শাহজাদা:- আমি আমার দোস্ত দের থেকে জানলুম, আপনি প্রায় খোজ নিয়ে রাখেন আমার , কেনো আমি আসছি নাই , কি কারণ এ আস্তে পারছি নাই, আর খোজ না রাখলে একটা অজানা মরদের জন্যে এত দূর কেউ আসে নাই ( লোকটা এতগুলো কথা এক টানা বলে গেলো আমার দিকে তাকিয়ে আর আমি ভাবছিলাম সত্যিইতো কি বোকার মত প্রশ্নটাই না করলাম, বুঝতে পারছিলাম এবার প্রসঙ্গ টা বদলাতে হবে)
আমি:- আচ্ছা আপনি আগে এইটা বলুন তো একটা লোক কি করে এই নোংরা জায়গাতে থাকতে পারে ?ঘরে সব দিকে খালি ধুলো, জানলা থেকে বাজে গন্ধ আসছে, আশপাশে মনে হয় কত দিন পরিষ্কার হয়নি, কাপড় কাচা তো ছেরেই দিন, সে সব তো মনে হয় আপনি জানেনই না
(শাহজাদা ক্রমাগত হেসে যাচ্ছিলো আমাকে দেখে, ওই নোংরা দাঁত টা বের করে আমার দিকে তাকিয়ে আছে ,আর চোখ টা যেই ভাবে বড়ো করেছে ,যেনো ও নিজেকে বিশ্বাস করতে পারছে না যে আমি ওর সামনে দাড়িয়ে আছি), কি হলো উত্তর দিন, এমন ভাবে কি তাকিয়ে আছেন
শাহজাদা:- নিজের কপালকে বিশ্বাস করতে পারছি নাই, যেই মাইয়াকে আমি স্বপ্নে দেখতাম সে কি না আজ আমার এই ঝুপড়ি তে নিজে আইসাছে, সত্যি খোদা আছে নাহলে এইটা কি করে হলো
( লোকটা সত্যি বলছে নাকি আমাকে ভুল বুঝিয়ে নিজের কাছে টানছে বুঝতে পারছিলাম না,আমি কি না কারোর স্বপ্নের নারী, ভাবতেও কেমন যেনো ভালো লাগছিলো, আমার কাছে যেনো এইটা স্বপ্ন)
আমি:- আপনি ভালো মিথ্যে বলেন দেখছি, এতো মিথ্যে কথা ভালো নয়
শাহজাদা:- নিজের ঘরে দাইরে আজ অবধি কোনো দিন মিথ্যা বলি নাই , গরিব হতে পারি কিন্তু খোদা জানে এরকম কাম (কাজ) আমি করতে পারবো নাই, যা বলসি সতিই বলসি মালকিন
(শাহজাদার মুখ দেখে মনে হচ্ছিল সত্যি সে মন থেকে বলছিলো, কিন্তু আজ পর্যন্ত কারোর থেকে কিছু ভালো শুনিনিকখনও তাই সন্দেহ লাগছিলো, কিন্তু সত্যি এইটা খুব আজব লাগছিলো, যেনো ও আমার খুব কাছের, লোকটা সত্যি গরিব হতে পারে কিন্তু মনের দিক থেকে খুব ধনী)
আমি:- উফফ! আপনি না খুব বাড়িয়ে বলেন , আমি কি না কারোর স্বপ্নের মেয়ে ( একটু হেসেই ফেল্লাম), যাইহোক একটু হাত লাগান ওই চটের বস্তা টা পাল্টাতে হবে, জানি না শেষ কবে বদলেছেন
শাহজাদা:- ( হাসতে হাসতে আমার দিকে তাকালো) আমিও ভুলা গেছি,
( আমরা দুজনেই হাসতে লাগলাম এক সাথে, যেনো আমরা ভুলেই গিয়েছিলাম যে আমরা দুজন আলাদা জগৎ থেকে এসেছিলাম, একে অপরের জীবনের মধ্যে বিস্তর পার্থক্য, তাও এই সময়টা আমার ভালো লাগছিলো, নিজের বর তো কোনো দিন পাত্তা দিলো না , একটা অজানা লোকের সাথে যদি একটু ভালো সময় কাটাতে পারি এতে অসুবিধা কোথায়!)
আমি:- দিন্, ওইখানে একটা ভালো বস্তা দেখলাম , ওইটা আমাকে দিন আমি টাঙিয়ে দিচ্ছি, নাহলে আপনি পরে ভুলে যাবেন এইখানে লাগাতে, আর পাশে একটা টুল আছে ওইটাও দি্ন, ( ও আমার দিকে এক ভাবেই তাকিয়ে ছিলো, জানি না কি দেখছিলো ) আরে তাকাবেন পরে , আগে কাজটা করেনি তাড়াতাড়ি
(ও আমার কথা শুনে একটু হতভম্ব হয়ে পড়েছিলো, বলার সঙ্গে সঙ্গে দেখলাম তাড়াতাড়ি নিয়ে আস্তে গেলো, কিন্তু দেখলাম খুড়িয়ে খুড়িয়ে গেলো, মনে হয় সেইদিনের চোট টা সারিনি এখনও, দেখে খুব খারাপ লাগছিলো)
শাহজাদা:- এই যে টুল, ধীরে ধীরে উঠবেন মালকিন, ভেঙ্গেও যাইতে পারে
আমি:- চিন্তা নেই আমি অতো ভারী না , আর ভাঙলেও আমি একটা নতুন কিনে দেবো, ( হাসতে লাগলাম এইটা বলে, সত্যি অনেক দিন পর আজকে অনেক হাসছিলাম, মনটা আজকে খুব খুশি )
শাহজাদা:- মালকিন কিনো লজ্জা দিচ্ছেন এই গরিব আদমিটাকে, এইরকম হাজার টুল কুরবান আপনার জন্যে, আর এরকম হাজার শাহজাদা কুরবান আমার সপ্নের মাইয়ার জন্যে
( আমি এই কথাটা শুনে এই প্রথমবার ওর নজরে তাকালাম, সত্যি কি সরল লোকটা, এত বড় কথা কি সরল ভাবেই না বলে গেলো, হটাৎ দেখলাম টুলের এক সাইডটা ভেঙে গেলো, আর আমি হুমড়ি খেয়ে ওর উপর পরে গেলাম, কিন্তু ও আমার কোমর টা জড়িয়ে ধরে পড়তে দিলো না। হটাৎ ওর স্পর্শ পাওয়াতে মন টা যেনো আবেগে ভেসে গেলো, অজান্তেই আমি ওকে জড়িয়ে ধরলাম, আর ও আমার কোমরটা জোর করে জড়িয়ে ধরলো, ওর মুখটা আমার বুকের উপর ছিলো, কিন্তু আমার অত হুশ ছিলো না, শুধু ওকে জড়িয়ে ওকে দেখছিলাম। ও নিজের হাত দিয়ে আস্তে আস্তে আমার কোমর থেকে আমার পিঠে নিজের হাতকে নিয়ে গেলো, আরো আমার কাছে এসে গেলো , অর্ধেকটা আমি ঝুলেই ছিলাম, তাও ও আমাকে এই ভেবেই রেখেছে, এই সময় টা যেনো মনে হচ্ছিলো থেমে যাক, ও যেনো আমার বুকেই থাকুক আর আমি ওর বাহুবন্ধনে, আমরা দুজনেই একে অপরের দিকে তাকিয়ে ছিলাম, শুধু আমাদের নিশ্বাস টা চলছিলো, আমার মন আরো কাছে ওর যেতে চাইছিলো, হটাৎ মনে পড়লো বেচারার পায়ে লাগা আছে আর আমি কিনা ওকে আরো কষ্ট দিচ্ছি, আমি ওকে ইশারা করলাম যাতে ও আমাকে নিচে নামিয়ে দেয়, ও খুব ধীরে আমাকে নিচে নামালো, এই প্রথমবার আমি ওর এত সামনে ছিলাম, ও যত না লম্বা ছিলো তত তার বুক চোওড়া খুব ছোট লাগছিলো ওর সামনে, সত্যি শাহজাদাই বটে, নাহলে এতো লম্বা কে হয়
আমি:- (নিচের দিকে তাকিয়ে) আমার জন্যে আপনার ক্ষতি হয়ে গেলো, বুঝতে পারিনি যে আমার ওজন এত বেড়ে গেছে
শাহজাদা:- আমি জানি নাই মালকিন আগে আপনার কত ওজন ছিলো, কিন্তু আমার কাছে এই ওজন কিসুই না, আর আপনার মত খুবসুরত মাইয়ার ওজন তো আরো কিছু মনে হয় না
আমি:- ও বাবা তাই নাকি, তা আমার মত কত খুবসুরত মেয়েকে এরকম করে ধরেছো শুনি( আমার মনে না চাইতেও একটা আবদার জেগে গেছিলো ওর প্রতি, ওর ব্যাপারে জানার আবদার, ওর কাছে আসার আবদার)
শাহজাদা:- না মালকিন, আমি বেজন্মা, জন্মের সময় মা কে খায়সি, আমার ওরকম কপাল কুথায় যে এরকম মিয়েছেলে আমার কাছে আসবে, আপনি এলেন এই অনেক
আমি:- যাক, এই বস্তা টা আমি না হয় পরে এসে টাঙিয়ে দিয়ে যাবো
শাহজাদা:- (চোখ টা যেনো জ্বলজ্বল করছিল সেইটা শুনে) আপনি এই গরিবখানাতে আবার আইসবেন মালকিন? আমাগো সত্যি বিশ্বাস হইসে না মালকিন
আমি:- কেনো? না আসার কি আছে, আজকে অনেক দেরি হয়ে গেছে, আমাকে এবার বেরোতে হবে, কিন্তু এখনও এই ঘর টাকে ভালো করে গোছাতে হবে, আপনি মনে হয় ঘর গোছাতে পারেন না, তাই এইটা কাজটা আমার কাছেই ছেড়ে দিন, আমি দেখে নেবো কি করে কি করতে হয়
শাহজাদা:- আমি তো এই জনম টাও আপনার জন্যে দিতা পারি মালকিন, আপনি একবার হুকুম করেন
আমি:- বাব্বা! আপনি তো ভালো কথা জানেন, যখন কাজে আসতেন তখন তো কোনো কথাই বলতেন না, যা বলতাম চুপচাপ শুনতেন, আজকে কি হয়ে গেলো, খালি আমার ছেলে কে দুধ খাওয়ানোর সময় আপনি নিচে আসতেন, তাও দেখতাম এক ভাবেই তাকিয়ে থাকতেন, তো দেখতেন কি একটু শুনি ওরকম তাকিয়ে?
শাহজাদা:- গরিব দের বাত তো দিল থেকে বেরোয় মালকিন, আপনার বাড়িতে আপনি আমাকে দিয়ে কাম করাতেন, তাই আমাদের কাছে কাম ই খোদা তাই চুপ করে শুনে কাম করতাম, আর যখন আপনাকে দেখার ইচ্ছা হতো তখন নিচে নেমে দেখে আসতাম
আমি:- তাই নাকি? আমি তো জানতাম আপনি জল নিতে আসতেন, তো বললেন না কি দেখতেন একভাবে ওরকম করে তাকিয়ে
শাহজাদা:- আপনার পোলাকে মালকিন
(আমি একটু অবাক হলাম, আমি ভাবলাম হোয়তো বলবে আপনাকে, কিন্তু ও আমাকে আবার অবাক করে দিল)
শাহজাদা:- আমি আগেই বলেসি না মালকিন, আমি বেজন্মা, দুনিয়া তে আসতেই আম্মি কে খেলাম, বুকের দুধ কি , আমি জানি নাই, তাই আপনার পোশাকে দেখে আমার ভেতরের মনটা দুখ পেতো মালকিন, আমার কপালে বুকের দুধ এই জনম এ আর নাই
( চোখ এর কোণে একটু জল চলে এলো, সত্যি তো এই কথা টা আমি ভাবতেই পারিনি, আর আমি কি না এই লোকটাকে খারাপ ভাবছিলাম, সত্যি কতো ছোট হয়ে গেলাম আজ)
আমি:- ওরকম বলবেন না , ভগবান আছেন, কে জানে হোয়তো আপনার ভাগ্যে বুকের দুধ ও লেখা আছে
( মুখ ফস্কে কি বলে দিলাম এইটা?আমি কি সত্যি ওর জন্যে পাগল হয়ে যাচ্ছি? আমি কি সত্যি এইটা করতে পারবো কোনোদিন? নাকি ওকে মন ভোলানোর জন্যে বলে দিলাম)
শাহজাদা:- (আমার দিকে তাকিয়ে) আপনি যখন বলসেন তাহলে খোদা সত্যি আমার ভাগ্যে লিখেসে দুধ, সত্যি বলসি মালকিন আপনার মরদ খুব কপাল করে আইসাছে, নাহলে কি করে এরকম বেগম পায় বলুন, যে এই টুকু সময় আমার ঝুপরি কে ঘর করে দেয় সে এতদিন নিজের ঘর কে কতো ভালো ভাবেই না রেখেসে! এরকম বেগম পেলে আর কি চাই বলুন মালকিন?
ঠিক করার পরও সারা রাত শুতে পারিনি, ভেতরে জানি না কিছু একটা ভয় করছিলো, মন বলছিলো গিয়ে একবার দেখে আসতে আবার কিছু একটা জিনিষ ভেতর থেকে আমাকে যেতে বারণ করছিলো, যাই হোক সেই রাতটা এই ভেবেই কেটে গেলো পরের দিন ও যখন দেখলাম শাহজাদা আসিনি আমি কাউকে কিছু না বলেই বেরিয়ে গেলাম ওই ঠিকানার খোঁজে, তখন কি আর জানতাম আমার ভাগ্য আমাকে টানছে এক অজানা ভবিষ্যত এর দিকে এমন ভবিষ্যত যেইখানে আমার সব কিছু পরিবর্তন হয়ে যাবে, যাই হোক বেরিয়েতো গিয়েছিলাম কিন্তু আমার ছেলে কে ঠিক মত দুধ খাওয়ানো হয়নি বলে দুধ একটু একটু করে বেরিয়ে পড়ছিল, তাই যা হোক করে শারি চাপা দিয়ে হাঁটছিলাম, ভেতরে একটা অজানা ভয় আমার উপর ভর করেছিল সেইদিন আর মনে মনে ভাবছিলাম ও অজানা একটা লোকের জন্যে এত দূরে আসা কি ভালো হবে ভাবতে ভাবতে ওই ঠিকানার কাছে পৌঁছে গেলাম, কিন্তু ঘর খোজাতে একটু অসুবিধা হচ্ছিলো তাই আশপাশে একটু জিজ্ঞাসা করতে হলো, যাকেই জিজ্ঞাসা করেছিলাম কেমন যেনো আমার দিকে তাকাচ্ছিলো, সন্দেহের নজরে দেখছিল, বুঝতে পারছিলাম না কেন! যাইহোক শেষ অবধি জানা গেলো যে রেল লাইন এর ধারের ঝুপড়ি তে নাকি শাহজাদা থাকে, যত কাছে যাচ্ছিলাম আমার ভেতরের ভয় আমাকে গ্রাস করেছিল, শেষ অবধি নিজের মনকে শান্ত করে পৌঁছে গেলাম। ঘরের কাছে এসে থমকে গেলাম কিছুটা, একটা লোক কি করে এমন একটা নোংরা জায়গায় থাকতে পারে, ঘরের আশপাশে শুধু বড় বড় গাছ, পাশে একটা নোংরা খাল আছে, ঐখানে বেশির ভাগ লোক আবর্জনা ফেলতে যায়, এই সব দেখে নিজেকে খুব ছোট লাগছিলো , আমি এতদিন নিজের ভাগ্যকে দোষ দিছিলাম যা পাইনি আমি নিজের জীবনে কিন্তু এই লোকটা এই টুকু ঘরে , এই নোংরাতেই নিজের জিবনটা কাটাচ্ছে কিন্তু কোনোদিন তাকে কাদতেঁ বা দুঃখ করতে দেখিনি, যখনই তাকাতো আমার দিকে এক ভাবেই তাকিয়ে থাকতো শেষে হাসতো, সেই লোকটা কিনা আমার জন্যে আজ না খেতে পাওয়ার মত অবস্থা! শেষ অবধি আমি ওর ঘরের দিকে রওনা দিলাম, ঘরের সামনে দেখলাম দুটো ফুলগাছ লাগানো আছে, দেখে মনে হচ্ছে যেনো কেউ এতে রোজ জল দিয়ে বড়ো করেছে, আর ঘরের সামনে একটা নোংরা চটের বস্তা ঝোলানো, দরজা নেই বলে তাই হয়তো চটের বস্তা ঝোলানো আছে, যাই হোক সরিয়ে দিয়ে আস্তে আস্তে ভেতর টা দেখলাম, ঘরে ধুলো ভরা , একটা ভাঙাচোরা কাঠের বিছানা আছে , পাশে দু তিনটে লুঙ্গি আছে তাও কতদিনের না কাচা, দুটো গেঞ্জি ছেরা, কি করে যে একটা মানুষ এই নোংরাতে থাকতে পারে কে জানে, যাইহোক ঘরে কেউ ছিলো না তাই অজান্তেই আমি আস্তে আস্তে সব গোছাতে লাগলাম, মনে হলো যেনো এই ঘরে একটা মেয়েছেলে দরকার যে কিনা ঘর টাকে গুছিয়ে রাখতে পারবে। আগে ঘরে ঢুকে সব লুঙ্গি র গেঞ্জি গুলোকে একটু জল এ ভেজালাম তারপর ঘরটাকে থাকার মতো করতে লাগলাম, যতই হোক একটা মেয়ে হয়ে কি করে একটা এরকম নোংরা ঘর থাকতে দি, তাই আস্তে আস্তে শারি কোমরে গুজে কাজে লেগে গেলাম, বাইরে থেকে কেউ দেখলে ভাববে আমি বোধয় এই ঘরের বউ, ঘরের নোংরা পরিস্কার করার পর যখন বাইরের নোংরা বস্তাটা বদলাতে যাবো হটাৎ আমি দাড়িয়ে গেলাম, দেখি ঘরের এককোনে শাহজাদা আমাকে দেখছে ভালো করে, জানিনা কতক্ষন ধরে কারণ আমি ঘর গোছাতে ব্যস্ত ছিলাম
আমি:- আরে আপনি! কতক্ষন ধরে দাড়িয়ে আছেন ( শাহজাদা আমাকে এক ভাবেই তাকিয়ে ছিলো তাই আমি বেশি ওর নজর এর দিকে তাকাতে পারছিলাম না)
শাহজাদা :- এই কিছুক্ষন আগে মালকিন, বাইরে থেকে শুনলাম কোন একটা সুন্দর বউ আমার খোজ করছিলো, তাই জানতাম আপনি হবেন নিশ্চয়ই
আমি:- বাহ্! কি করে বুঝলেন যে আমি হবো, ওই সুন্দর বউ তো অন্য কেউও হতে পারে?
শাহজাদা:- না, হতে পারে না, আমার দেখাতে আপনি সব থেকে সুন্দরী
(একটা নারী সবসময় নিজের প্রশংসা শুনতে ভালোবাসে সেইটা বোধয় এই লোকটা ভালো করেই জানে , তাও শুনে কেমন যেনো লজ্জা করছিলো, আমার চোখ টা যেনো ওর চোখে মেলাতে পারছিলাম না, দুই পায়ের বুড়ো আঙুলটা ক্রমাগত একে অপরের দিকে এগিয়ে যাচ্ছিল, যাইহোক লোকটা ভালো কথা বলতে পারে সেইটা বোঝা গেলো)
শাহজাদা:- আর আপনি ছাড়া কেউ খোজ নেওয়ার এইখানে নাই, কার অত জায় আসে মালকিন যে আমার মত অভাগার খোজ নিবে
( শুনে একটু চমকে গেলাম, এ কি করে জানলো যে আমি এর খোজ নি)
আমি:- আচ্ছা, আপনি কি করে জানলেন যে আমি আপনার খোজ নি
শাহজাদা:- আমি আমার দোস্ত দের থেকে জানলুম, আপনি প্রায় খোজ নিয়ে রাখেন আমার , কেনো আমি আসছি নাই , কি কারণ এ আস্তে পারছি নাই, আর খোজ না রাখলে একটা অজানা মরদের জন্যে এত দূর কেউ আসে নাই ( লোকটা এতগুলো কথা এক টানা বলে গেলো আমার দিকে তাকিয়ে আর আমি ভাবছিলাম সত্যিইতো কি বোকার মত প্রশ্নটাই না করলাম, বুঝতে পারছিলাম এবার প্রসঙ্গ টা বদলাতে হবে)
আমি:- আচ্ছা আপনি আগে এইটা বলুন তো একটা লোক কি করে এই নোংরা জায়গাতে থাকতে পারে ?ঘরে সব দিকে খালি ধুলো, জানলা থেকে বাজে গন্ধ আসছে, আশপাশে মনে হয় কত দিন পরিষ্কার হয়নি, কাপড় কাচা তো ছেরেই দিন, সে সব তো মনে হয় আপনি জানেনই না
(শাহজাদা ক্রমাগত হেসে যাচ্ছিলো আমাকে দেখে, ওই নোংরা দাঁত টা বের করে আমার দিকে তাকিয়ে আছে ,আর চোখ টা যেই ভাবে বড়ো করেছে ,যেনো ও নিজেকে বিশ্বাস করতে পারছে না যে আমি ওর সামনে দাড়িয়ে আছি), কি হলো উত্তর দিন, এমন ভাবে কি তাকিয়ে আছেন
শাহজাদা:- নিজের কপালকে বিশ্বাস করতে পারছি নাই, যেই মাইয়াকে আমি স্বপ্নে দেখতাম সে কি না আজ আমার এই ঝুপড়ি তে নিজে আইসাছে, সত্যি খোদা আছে নাহলে এইটা কি করে হলো
( লোকটা সত্যি বলছে নাকি আমাকে ভুল বুঝিয়ে নিজের কাছে টানছে বুঝতে পারছিলাম না,আমি কি না কারোর স্বপ্নের নারী, ভাবতেও কেমন যেনো ভালো লাগছিলো, আমার কাছে যেনো এইটা স্বপ্ন)
আমি:- আপনি ভালো মিথ্যে বলেন দেখছি, এতো মিথ্যে কথা ভালো নয়
শাহজাদা:- নিজের ঘরে দাইরে আজ অবধি কোনো দিন মিথ্যা বলি নাই , গরিব হতে পারি কিন্তু খোদা জানে এরকম কাম (কাজ) আমি করতে পারবো নাই, যা বলসি সতিই বলসি মালকিন
(শাহজাদার মুখ দেখে মনে হচ্ছিল সত্যি সে মন থেকে বলছিলো, কিন্তু আজ পর্যন্ত কারোর থেকে কিছু ভালো শুনিনিকখনও তাই সন্দেহ লাগছিলো, কিন্তু সত্যি এইটা খুব আজব লাগছিলো, যেনো ও আমার খুব কাছের, লোকটা সত্যি গরিব হতে পারে কিন্তু মনের দিক থেকে খুব ধনী)
আমি:- উফফ! আপনি না খুব বাড়িয়ে বলেন , আমি কি না কারোর স্বপ্নের মেয়ে ( একটু হেসেই ফেল্লাম), যাইহোক একটু হাত লাগান ওই চটের বস্তা টা পাল্টাতে হবে, জানি না শেষ কবে বদলেছেন
শাহজাদা:- ( হাসতে হাসতে আমার দিকে তাকালো) আমিও ভুলা গেছি,
( আমরা দুজনেই হাসতে লাগলাম এক সাথে, যেনো আমরা ভুলেই গিয়েছিলাম যে আমরা দুজন আলাদা জগৎ থেকে এসেছিলাম, একে অপরের জীবনের মধ্যে বিস্তর পার্থক্য, তাও এই সময়টা আমার ভালো লাগছিলো, নিজের বর তো কোনো দিন পাত্তা দিলো না , একটা অজানা লোকের সাথে যদি একটু ভালো সময় কাটাতে পারি এতে অসুবিধা কোথায়!)
আমি:- দিন্, ওইখানে একটা ভালো বস্তা দেখলাম , ওইটা আমাকে দিন আমি টাঙিয়ে দিচ্ছি, নাহলে আপনি পরে ভুলে যাবেন এইখানে লাগাতে, আর পাশে একটা টুল আছে ওইটাও দি্ন, ( ও আমার দিকে এক ভাবেই তাকিয়ে ছিলো, জানি না কি দেখছিলো ) আরে তাকাবেন পরে , আগে কাজটা করেনি তাড়াতাড়ি
(ও আমার কথা শুনে একটু হতভম্ব হয়ে পড়েছিলো, বলার সঙ্গে সঙ্গে দেখলাম তাড়াতাড়ি নিয়ে আস্তে গেলো, কিন্তু দেখলাম খুড়িয়ে খুড়িয়ে গেলো, মনে হয় সেইদিনের চোট টা সারিনি এখনও, দেখে খুব খারাপ লাগছিলো)
শাহজাদা:- এই যে টুল, ধীরে ধীরে উঠবেন মালকিন, ভেঙ্গেও যাইতে পারে
আমি:- চিন্তা নেই আমি অতো ভারী না , আর ভাঙলেও আমি একটা নতুন কিনে দেবো, ( হাসতে লাগলাম এইটা বলে, সত্যি অনেক দিন পর আজকে অনেক হাসছিলাম, মনটা আজকে খুব খুশি )
শাহজাদা:- মালকিন কিনো লজ্জা দিচ্ছেন এই গরিব আদমিটাকে, এইরকম হাজার টুল কুরবান আপনার জন্যে, আর এরকম হাজার শাহজাদা কুরবান আমার সপ্নের মাইয়ার জন্যে
( আমি এই কথাটা শুনে এই প্রথমবার ওর নজরে তাকালাম, সত্যি কি সরল লোকটা, এত বড় কথা কি সরল ভাবেই না বলে গেলো, হটাৎ দেখলাম টুলের এক সাইডটা ভেঙে গেলো, আর আমি হুমড়ি খেয়ে ওর উপর পরে গেলাম, কিন্তু ও আমার কোমর টা জড়িয়ে ধরে পড়তে দিলো না। হটাৎ ওর স্পর্শ পাওয়াতে মন টা যেনো আবেগে ভেসে গেলো, অজান্তেই আমি ওকে জড়িয়ে ধরলাম, আর ও আমার কোমরটা জোর করে জড়িয়ে ধরলো, ওর মুখটা আমার বুকের উপর ছিলো, কিন্তু আমার অত হুশ ছিলো না, শুধু ওকে জড়িয়ে ওকে দেখছিলাম। ও নিজের হাত দিয়ে আস্তে আস্তে আমার কোমর থেকে আমার পিঠে নিজের হাতকে নিয়ে গেলো, আরো আমার কাছে এসে গেলো , অর্ধেকটা আমি ঝুলেই ছিলাম, তাও ও আমাকে এই ভেবেই রেখেছে, এই সময় টা যেনো মনে হচ্ছিলো থেমে যাক, ও যেনো আমার বুকেই থাকুক আর আমি ওর বাহুবন্ধনে, আমরা দুজনেই একে অপরের দিকে তাকিয়ে ছিলাম, শুধু আমাদের নিশ্বাস টা চলছিলো, আমার মন আরো কাছে ওর যেতে চাইছিলো, হটাৎ মনে পড়লো বেচারার পায়ে লাগা আছে আর আমি কিনা ওকে আরো কষ্ট দিচ্ছি, আমি ওকে ইশারা করলাম যাতে ও আমাকে নিচে নামিয়ে দেয়, ও খুব ধীরে আমাকে নিচে নামালো, এই প্রথমবার আমি ওর এত সামনে ছিলাম, ও যত না লম্বা ছিলো তত তার বুক চোওড়া খুব ছোট লাগছিলো ওর সামনে, সত্যি শাহজাদাই বটে, নাহলে এতো লম্বা কে হয়
আমি:- (নিচের দিকে তাকিয়ে) আমার জন্যে আপনার ক্ষতি হয়ে গেলো, বুঝতে পারিনি যে আমার ওজন এত বেড়ে গেছে
শাহজাদা:- আমি জানি নাই মালকিন আগে আপনার কত ওজন ছিলো, কিন্তু আমার কাছে এই ওজন কিসুই না, আর আপনার মত খুবসুরত মাইয়ার ওজন তো আরো কিছু মনে হয় না
আমি:- ও বাবা তাই নাকি, তা আমার মত কত খুবসুরত মেয়েকে এরকম করে ধরেছো শুনি( আমার মনে না চাইতেও একটা আবদার জেগে গেছিলো ওর প্রতি, ওর ব্যাপারে জানার আবদার, ওর কাছে আসার আবদার)
শাহজাদা:- না মালকিন, আমি বেজন্মা, জন্মের সময় মা কে খায়সি, আমার ওরকম কপাল কুথায় যে এরকম মিয়েছেলে আমার কাছে আসবে, আপনি এলেন এই অনেক
আমি:- যাক, এই বস্তা টা আমি না হয় পরে এসে টাঙিয়ে দিয়ে যাবো
শাহজাদা:- (চোখ টা যেনো জ্বলজ্বল করছিল সেইটা শুনে) আপনি এই গরিবখানাতে আবার আইসবেন মালকিন? আমাগো সত্যি বিশ্বাস হইসে না মালকিন
আমি:- কেনো? না আসার কি আছে, আজকে অনেক দেরি হয়ে গেছে, আমাকে এবার বেরোতে হবে, কিন্তু এখনও এই ঘর টাকে ভালো করে গোছাতে হবে, আপনি মনে হয় ঘর গোছাতে পারেন না, তাই এইটা কাজটা আমার কাছেই ছেড়ে দিন, আমি দেখে নেবো কি করে কি করতে হয়
শাহজাদা:- আমি তো এই জনম টাও আপনার জন্যে দিতা পারি মালকিন, আপনি একবার হুকুম করেন
আমি:- বাব্বা! আপনি তো ভালো কথা জানেন, যখন কাজে আসতেন তখন তো কোনো কথাই বলতেন না, যা বলতাম চুপচাপ শুনতেন, আজকে কি হয়ে গেলো, খালি আমার ছেলে কে দুধ খাওয়ানোর সময় আপনি নিচে আসতেন, তাও দেখতাম এক ভাবেই তাকিয়ে থাকতেন, তো দেখতেন কি একটু শুনি ওরকম তাকিয়ে?
শাহজাদা:- গরিব দের বাত তো দিল থেকে বেরোয় মালকিন, আপনার বাড়িতে আপনি আমাকে দিয়ে কাম করাতেন, তাই আমাদের কাছে কাম ই খোদা তাই চুপ করে শুনে কাম করতাম, আর যখন আপনাকে দেখার ইচ্ছা হতো তখন নিচে নেমে দেখে আসতাম
আমি:- তাই নাকি? আমি তো জানতাম আপনি জল নিতে আসতেন, তো বললেন না কি দেখতেন একভাবে ওরকম করে তাকিয়ে
শাহজাদা:- আপনার পোলাকে মালকিন
(আমি একটু অবাক হলাম, আমি ভাবলাম হোয়তো বলবে আপনাকে, কিন্তু ও আমাকে আবার অবাক করে দিল)
শাহজাদা:- আমি আগেই বলেসি না মালকিন, আমি বেজন্মা, দুনিয়া তে আসতেই আম্মি কে খেলাম, বুকের দুধ কি , আমি জানি নাই, তাই আপনার পোশাকে দেখে আমার ভেতরের মনটা দুখ পেতো মালকিন, আমার কপালে বুকের দুধ এই জনম এ আর নাই
( চোখ এর কোণে একটু জল চলে এলো, সত্যি তো এই কথা টা আমি ভাবতেই পারিনি, আর আমি কি না এই লোকটাকে খারাপ ভাবছিলাম, সত্যি কতো ছোট হয়ে গেলাম আজ)
আমি:- ওরকম বলবেন না , ভগবান আছেন, কে জানে হোয়তো আপনার ভাগ্যে বুকের দুধ ও লেখা আছে
( মুখ ফস্কে কি বলে দিলাম এইটা?আমি কি সত্যি ওর জন্যে পাগল হয়ে যাচ্ছি? আমি কি সত্যি এইটা করতে পারবো কোনোদিন? নাকি ওকে মন ভোলানোর জন্যে বলে দিলাম)
শাহজাদা:- (আমার দিকে তাকিয়ে) আপনি যখন বলসেন তাহলে খোদা সত্যি আমার ভাগ্যে লিখেসে দুধ, সত্যি বলসি মালকিন আপনার মরদ খুব কপাল করে আইসাছে, নাহলে কি করে এরকম বেগম পায় বলুন, যে এই টুকু সময় আমার ঝুপরি কে ঘর করে দেয় সে এতদিন নিজের ঘর কে কতো ভালো ভাবেই না রেখেসে! এরকম বেগম পেলে আর কি চাই বলুন মালকিন?