06-03-2019, 01:14 PM
৯৯
এবার পুষ্কর, দীপ্ত – এদের কাছে মুখ দেখাবেন কী করে ও সি সাহেব? বলতে হবে সাংঘাতিক ভুল হয়ে গেছে? ইশ.. এত ভাল করে কেসটা সাল্টে নিয়ে তীরে এসে তরী ডুববে তাঁর?
দীপ্তকে একটু বাইরে আসতে বললেন ও সি সাহেব।
বুঝিয়ে বললেন, গলার স্বর শুনে সাবিনা নিশ্চিত করেছে যে পুষ্কর বড় সাহেব নয়। কিন্তু চেহারায় এত অদ্ভূত মিল কী করে হতে পারে, সেটাই ভেবে পাচ্ছেন না তিনি। আর ওদিকে আবার ঠিক একই চেহারার একজনকে ভিক্টরদের দল ধরে ফেলেছে বেহরমপুর থেকে। তার কাছ থেকে জানার চেষ্টা করা হচ্ছে আসল পরিচয়। একটু পরেই ভয়েস স্যাম্পেলও হয়তো পাঠিয়ে দেবে ওরা – যাতে সাবিনা গলা শুনে আইডেন্টিফাই করতে পারে।
কিন্তু এখন সমস্যা হচ্ছে পুষ্করবাবুকে কীভাবে গোটা ব্যাপারটা বলা হবে?
দীপ্তর কাছে কাতর অনুরোধ করলেন ও সি, ‘প্লিজ আপনি একটু হেল্প করুন।‘
দীপ্তর পরিচিতি আছে ঠান্ডা মাথায় সব কিছু সামলাতে পারে বলে। কিন্তু সে-ও রেগে কাঁই এখন, ‘আপনি এত বড় একটা এলিগেশন আনলেন ভাল করে ক্রস চেক না করেই! ছি ছি, আমি এখন ওর কাছে মুখ দেখাব কী করে? ও তো বলছিলই যে আমি জেনে বুঝেই ওকে থানায় নিয়ে এসেছি!! এটা কী করলেন আপনি? প্রথম থেকে এত কোঅপারেট করলাম আমরা সবাই, আপনিও হেল্প করলেন, কিন্তু এটা কি হল?’
একটা বড় নিশ্বাস ছেড়ে বললেন, ‘ভুল তো হতেই পারে। যাক আমি ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি উনার কাছে।‘
নিজের ঘরে ঢুকলেন ও সি সাহেব।
পুষ্কর আবারও বলার চেষ্টা করছিল যে সে নির্দোষ। ও সি বললেন, ‘দেখুন পুষ্কর,’ বলে দু সেকেন্ড চুপ করলেন। তুমি থেকে আবারও আপনিতে ফিরে গেছেন ও সি।
‘আপনি উড়িষ্যায় কী করতে গিয়েছিলেন বলুন তো ঠিক করে? কোনও বাজে কথা বললে কিন্তু আপনারই ঝামেলা বাড়বে।‘
দীপ্তও ঘরে ঢুকে এসেছে।
পুষ্কর বলতে শুরু করল।
‘স্যার মাস দুয়েক আগেকার কথা। আমি এসপ্ল্যানেডে গিয়েছিলাম একটা কাজে। পিছন থেকে কেউ দাদা, ও দাদা শুনছেন বলে কেউ ডাকে। অনেকের সঙ্গে আমিও পেছনে ফিরেছিলাম এটা দেখতে যে আমার পরিচিত কেউ ডাকছে কী না! ফিরে যা দেখেছিলাম, জীবনে অত অবাক হই নি – অবিকল আমার মতো দেখতে একজন ডাকছে দাদা ও দাদা বলে!’
‘আচ্ছা? তারপর?’ জিগ্যেস করলেন ও সি।
‘সেই খেয়াল করেছিল ভীড়ের মধ্যে যে আমার আর তার একদম এক চেহারা। এমনকি গায়ের রঙ, হাইট – সব মিলে গিয়েছিল! শুধু চোখের নিচে যে তিলটা আছে আমার, তার সেটা নেই। সে বলেছিল এত চেহারার মিল কী করে হয় দুজনের। আমার কি ছোটবেলায় কোন ভাই হারিয়ে গিয়েছিল? আমার তখন মনে পড়ে নি.. বলেছিলাম সেটা। উনার নাম বলেছিলেন অলোক গুপ্তা। ইউ পির লোক। আমরা ফোন নম্বর এক্সচেঞ্জ করেছিলাম।‘
‘সেদিন রাতে শুয়ে শুয়ে আমার হঠাৎ মনে পড়ে যায় অনেক ছোটবেলায় শোনা একটা গল্প। মায়ের কাছে শুনতাম যে আমার নাকি একটা যমজ ভাই ছিল। সে হাসপাতালেই মারা গিয়েছিল। মা সেই কথাটা মনে করতে চাইত না বলে খুব বেশী বলতও না বাড়িতে এই ব্যাপারে। কিন্তু অনেক ছোট বেলায় শোনা ঘটনাটা আমার সেদিন মনে পড়ে গেল। আমি পরের দিন মি. গুপ্তাকে ফোন করেছিলাম। উনি পার্ক স্ট্রীটের একটা রেস্তরায় ডিনারে ডাকেন। আমি গিয়েছিলাম। উনাকে বলেছিলাম ছোটবেলায় মায়ের কাছে এক আধবার শোনা কাহিনীটা।‘
‘তারপর?’ এবার দীপ্ত জিগ্যেস করল।
‘তারপর মি. গুপ্তা বললেন যে অদ্ভূত গল্প। ঘটনাচক্রে উনি যে তাঁর বাবা-মায়ের দত্তক নেওয়া ছেলে, সেটা বেশ কিছুটা বড় হয়ে জানতে পেরেছিলেন উনি। বাবা-মায়ের সঙ্গে ছেলের চেহারার অমিল দেখে কলেজে বন্ধুরা ক্ষ্যাপাত তাঁকে। তাই কলেজ থেকে বাড়ি ফিরে এসে চেপে ধরেছিলেন মা কে – যে কেন তোমার বা বাবার চেহারার সঙ্গে আমার চেহারার মিল নেই! ছেলের কাছে কেঁদে ফেলে দত্তক নেওয়ার কথাটা বলে ফেলেছিলেন অলোকের মা। অলোক সেদিন ডিনার করতে করতে সেই সময়ের কথাগুলো বলেছিল। ওর মা নাকি এটাও বলেছিল যে কলকাতার এক নার্সিং হোম থেকেই দত্তক নেওয়া হয়েছিল ওকে। সেদিন অলোক আরও বলেছিল যে ও ব্যবসার কাজে মাঝে মাঝেই কলকাতা আসে। অনেক চেষ্টা করেছে নিজের আসল বাবা-মাকে খুঁজে বার করতে, পারে নি। ও কথায় কথায় বলেছিল, হতেই পারে আমি-ই ওর সহোদর ভাই। ওর ব্যবসা আছে সেটাও জানিয়েছিল।‘
‘মাঝে মাঝেই ফোন করত ও। আমি বাড়িতে দীপ্তিকে কিছু বলি নি এসব। কোনও প্রমান তো নেই যে অলোক আমার যমজ ভাই! দিনকয়েক আগে আমাকে অলোক ফোন করে বলেছিল যে ব্যবসার কাজে বেহরমপুর গিয়ে ও খুব অসুস্থ হয়ে পড়েছে। ওর আর কেউ নেই চেনাশুনো। কাছাকাছি আমিই আছি কলকাতায় – যে তাড়াতাড়ি পৌঁছতে পারব। রক্তের সম্পর্ক এখনও প্রমানিত না হলেও ও একটা টান অনুভব করছে আমার প্রতি, তাই আমাকে রিকোয়েস্ট করেছিল তাড়াতাড়ি বেহরমপুর যেতে। আমি ওর কাছেই গিয়েছিলাম স্যার। ওর ব্যবসার কয়েকটা কাজে একটু হেল্পও করে দিলাম, ওর হয়ে কয়েকটা জিনিষ ওর ক্লায়েন্টদের কাছে দিয়ে এলাম, প্লাস ওর দেখাশোনাও করলাম কদিন। কিন্তু আমার বাড়িতে এরকম বিপদ দেখে ও-ই জোর করে আমাকে ফেরত পাঠিয়ে দিল।‘
‘আপনার জন্ম কোথায় হয়েছিল পুষ্করবাবু?’
‘যতদূর মনে পড়ছে, সেন্ট্রাল কলকাতার কোথাও। আমরা তখন ওদিকেই থাকতাম – নর্থের দিকে। একটা নার্সিং হোমে। বাড়িতে বার্থ সার্টিফিকেট আছে। ছোটবেলায় মাঝে মাঝে নিজের বার্থ সার্টিফিকেটটা দেখতাম। মাধ্যমিকের পরে তো আর দরকার পড়ে নি.. দাঁড়ান দাঁড়ান মনে পড়েছে.. শ্রী কৃষ্ণ নার্সিং হোম।‘
ও সি প্রায় লাফ দিয়ে উঠলেন, ‘কী নাম বললেন, শ্রী কৃষ্ণ নার্সিং হোম!’
পুষ্কর আর দীপ্ত একটু অবাক হয়ে গেল ও সি-র চীৎকার শুনে!
‘আরে মশাই এ ঘটনা কোথা থেকে কোন দিকে যাচ্ছে – উফফফ.. আরে দীপ্তবাবু, কাগজে পড়ছেন না .. সেন্ট্রাল ক্যালকাটার ওই নার্সিং হোম থেকে কত বছর ধরে সদ্য জন্মানো শিশু পাচার হচ্ছে! জীবন্ত শিশুকে পাচারকারীরা তুলে নিয়ে গিয়ে অন্য কোনও বাচ্চার মৃতদেহ দিয়ে দিচ্ছে বাপ-মাকে! হতেই পারে পুষ্করবাবুর যমজভাইকে তুলে নিয়ে গিয়ে কোনও একটা শিশুর দেহ দেওয়া হয়েছিল উনার বাবা-মাকে! আর সেই অন্য যমজ ভাইটাই হচ্ছে এই অলোক গুপ্তা। তাকে পাচার করে দত্তক দিয়ে দিয়েছিল উত্তরপ্রদেশে! উফ কী ঘটনা মশাই! আচ্ছা পুষ্করবাবু, আপনার বাড়িতে বার্থ সার্টিফিকেটটা আছে তো? গাড়ি দিচ্ছি – গিয়ে নিয়ে আসুন তো ঝট করে।‘
ভিক্টরকে ফোন করলেন ও সি। সবটা জানালেন। ওদিকে ধরা পড়া লোকটা কী কী বলেছে, সেটাও জেনে নিলেন.. তারপর বললেন, ‘জিগ্যেস করো তো অলোক গুপ্তা কে? আর পুষ্করকে কীভাবে চেনে সেটাও জানতেচাইবে.. অলোক কি ওর বাবামায়ের দত্তক নেওয়া ছেলে? জিগ্যেস করো তাড়াতাড়ি। ওর মুখের এক্সপ্রেশনটা লক্ষ্য করবে। জানাও আমাকে।‘
আবারও সিগারেট ধরালেন ও সি। সন্ধ্যে থেকে দশটা সিগারেট হয়ে গেল।
প্রায় একঘন্টা পরে পুষ্কর আর দীপ্ত ফিরে এল বার্থ সার্টিফিকেট নিয়ে।
ভিক্টর ফোন করল আরও বেশ কিছুক্ষণ পরে। জানাল অলোক গুপ্তা ব্রেক করেছে.. দত্তক নেওয়া, পুষ্কর – এসব বলতেই সে একেবারে ভেঙ্গে পড়েছে। ওর চোখের নীচে তিলটা একটু চেষ্টা করতেই খুলে ফেলতে পেরেছে ভিক্টর।
জেরায় অলোক গুপ্তা স্বীকার করেছে যে চেহারা অদ্ভূত মিল দেখে ও-ই পুষ্করের সাহায্য নিয়েছিল ল্যাপটপ আর হার্ড ড্রাইভগুলো সরিয়ে দিতে। কাপুরের হাতে যে ওগুলো তুলে দিয়েছিল, সে আসলে চোখের নীচে নকল তিল লাগানো অলোক গুপ্তা নয়, পুষ্করকেই না জানিয়ে ওর হাত দিয়ে পর্ণ ভর্তি হার্ড ড্রাইভগুলো কাপুর আর আরও কয়েকজন কুরিয়ারের কাছে পৌঁছিয়ে দিয়েছিল অলোক।
ও সি দীপ্ত আর পুষ্করকে সঙ্গে নিয়ে যখন ওদের বাড়ির সামনে পৌঁছলেন, তখন রাত প্রায় সাড়ে এগারোটা।
***
১০০
শ্রীদের বাড়িতে সকলে জড়ো হয়েছিল পরের দিন বেলার দিকে। ও সিকে দিয়ে সবাইকে খবর পাঠিয়েছিল শ্রী আর দীপ্ত। দুপুরে খাবার নেমতন্ন।
রাত প্রায় আড়াইটে পর্যন্ত ও আর দীপ্তি বসে বসে গোটা ঘটনাটা খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে শুনেছে
কনিকা, বিজন, মিতালী, পার্থ, মধুমিতার বাবা মা, পুষ্কর, ও সি সাহেব – সবাই বসে আড্ডা দিচ্ছে ওদের ড্রয়িং রুমে।
দীপ্তি গেছে শ্রীকে হেল্প করতে রান্নাঘরে। সাবিনাও আছে সেখানেই। ওকে ও সি সাহেব নিজের দায়িত্বে কিছুক্ষনের জন্য থানা থেকে নিয়ে এসেছেন। ও মুখ না খুললে এই কেস সলভ করা যেত না সহজে।
অভি, মনি আর মধুমিতা মনির রুমে আছে। শ্রী মনে মনে বলল, তিনটেতে মিলে কী করছে কে জানে!! সেটা সাবিনার কান বাঁচিয়ে দীপ্তির কানে কানে বলতেই হেসে ফেলে ওর পিঠে একটা ছোট কিল মেরেছে দীপ্তি। পাল্টা ফিস ফিস করে বলেছে, ‘ইশ, ছেলে মেয়েদের নিয়ে তোর কী সব কথাবার্তা..’
শুধু ভিক্টর নেই। বেহরমপুরের কোর্টে আজ অলোককে পেশ করবে পুলিশ, তারপর ট্র্যান্সিট রিমান্ডে কলকাতায় নিয়ে আসা হবে।
ভিক্টর না থাকলেও তার মেসেজ এসেছে এই বাড়িতেই উপস্থিত একজনের কাছে।
সে লিখেছে, ‘ভাল ভাল। অপরাধী ধরলাম আমি আর তোমরা করছ পার্টি!’ মেসেজটা চট করে পড়ে নিয়েই রাঙা মুখে মোবাইলটা খাপের মধ্যে ঢুকিয়ে সরিয়ে রেখেছে মধুমিতা। ভিক্টরের সঙ্গে মেসেজ চালাচালিটা কদিন হলই শুরু হয়েছে.. আপনি থেকে তুমিতে তো প্রথম দিনের শেষেই চলে গিয়েছিল।
ড্রয়িং রুমে সবার হাতেই বিয়ারের বোতল।
রান্নাটা প্রায় শেষ করে ফেলে সেখানে সাবিনার হাত ধরে নিয়ে এসে বসল শ্রী। সঙ্গে দীপ্তি। পুষ্কর ওদের হাতেও বিয়ারের বোতল তুলে দিল।
তারপরে দীপ্ত বলল, ‘আরে ছেলে মেয়ে তিনটেকেও ডাক। ওরাও খাক বিয়ার একটু।‘
দীপ্তি আর শ্রী চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে রইল ... কিন্তু সেই চাহনিতে ইনডালজেন্স ছিল।
ওরা তিনজন নেমে আসার পরে যখন ওদের হাতে দীপ্ত বিয়ারের বোতল তুলে দিল, তখন দৃশ্যতই অস্বস্তিতে তিনজনেই।
‘খা খা। সবাই আঠেরো পেরিয়েছিস.. হয়তো খাসও একটু আধটু.. কদিন খুব ধকল গেছে সবার ওপরে।‘
মধুমিতার বাবা মা দুজনেই অন্য সময়ে এটা দেখে হয়তো অজ্ঞানই হয়ে যেতেন। কিন্তু পেটে বিয়ার পড়ায় ওদের দুজনের সবসময়ে হতভম্ব হয়ে থাকা ভাবটা এখন কেটে গেছে।
মধুমিতার বাবা-ই প্রস্তাবটা দিলেন।
‘আমরা এই সবাই মিলে কোথাও একটু ঘুরতে গেলে কেমন হয়?’
সবাই হাততালি দিয়ে উঠল... এককথায় রাজি।
সাবিনা শুধু চুপ করে রইল। ও সি সাহেবের নজরে পড়ল সেটা।
‘চিন্তা করো না। তুমিও যেতে পারবে.. তার আগেই তোমার বেইল করিয়ে নেব.. বহু বছর তো আনন্দ করো নি কোনও ফ্যামিলির সঙ্গে।‘
সাবিনার মনে পড়ল ওর বরের কথা। দুচোখের কোনটা চিকচিক করছিল।
মনি গিয়ে সাবিনাকে জড়িয়ে ধরল..
‘কোথায় যাওয়া হবে, সেটা ঠিক করা হোক,’ পার্থ বলল।
ও সি বললেন, দীঘার কাছে শঙ্করপুর চলুন। ওখানকার ও সি আমার বন্ধু। ভাল হোটেল বা রিসর্ট ব্যবস্থা করে দেবে।
আবারও সমবেত হাততালি।
রসভঙ্গটা করলেন সবসময়ে হতভম্ব হয়ে থাকা, কিন্তু এখন আধ বোতল বিয়ার পেটে পড়ার পরে মুখের আগল খুলে যাওয়া মধুমিতার মা।
উনারা সবাই গোটা কাহিনীটা ও সি-র কাছ থেকে শুনেছেন।
মধুমিতার মা বললেন, ‘আচ্ছা অলোক গুপ্তা যে পুষ্করবাবুর সেই হারিয়ে যাওয়া যমজ ভাই, সেটা কি বোঝা যাবে?’
ও সি বললেন, ‘দুজনের ডি এন এ ম্যাচ করলেই বোঝা যাবে যে ওদের রক্তের সম্পর্ক আছে।‘
মধুমিতার বাবা ইতিহাস পড়ান, বিজ্ঞানের ব্যাপারে খুব একটা ধারণা নেই।
উনি বললেন, ‘ওই রক্ত নিয়ে বাইনোকুলারের নীচে রেখে টেস্ট করবে, তাই তো? ম্যাচ করলেই বোঝা যাবে যে ওরা দুই ভাই!’
বাক্যটার মাঝখানেই মধুমিতা আর মনি চেঁচিয়ে উঠেছে... ‘ওটা বাইনোকুলার নাআআআআ.. মাইক্রোস্কোপপপপপপপ’
শ্রী মনে মনে ভাবল, আবার বাইনোকুলার...... !!!!
- শেষ -
এবার পুষ্কর, দীপ্ত – এদের কাছে মুখ দেখাবেন কী করে ও সি সাহেব? বলতে হবে সাংঘাতিক ভুল হয়ে গেছে? ইশ.. এত ভাল করে কেসটা সাল্টে নিয়ে তীরে এসে তরী ডুববে তাঁর?
দীপ্তকে একটু বাইরে আসতে বললেন ও সি সাহেব।
বুঝিয়ে বললেন, গলার স্বর শুনে সাবিনা নিশ্চিত করেছে যে পুষ্কর বড় সাহেব নয়। কিন্তু চেহারায় এত অদ্ভূত মিল কী করে হতে পারে, সেটাই ভেবে পাচ্ছেন না তিনি। আর ওদিকে আবার ঠিক একই চেহারার একজনকে ভিক্টরদের দল ধরে ফেলেছে বেহরমপুর থেকে। তার কাছ থেকে জানার চেষ্টা করা হচ্ছে আসল পরিচয়। একটু পরেই ভয়েস স্যাম্পেলও হয়তো পাঠিয়ে দেবে ওরা – যাতে সাবিনা গলা শুনে আইডেন্টিফাই করতে পারে।
কিন্তু এখন সমস্যা হচ্ছে পুষ্করবাবুকে কীভাবে গোটা ব্যাপারটা বলা হবে?
দীপ্তর কাছে কাতর অনুরোধ করলেন ও সি, ‘প্লিজ আপনি একটু হেল্প করুন।‘
দীপ্তর পরিচিতি আছে ঠান্ডা মাথায় সব কিছু সামলাতে পারে বলে। কিন্তু সে-ও রেগে কাঁই এখন, ‘আপনি এত বড় একটা এলিগেশন আনলেন ভাল করে ক্রস চেক না করেই! ছি ছি, আমি এখন ওর কাছে মুখ দেখাব কী করে? ও তো বলছিলই যে আমি জেনে বুঝেই ওকে থানায় নিয়ে এসেছি!! এটা কী করলেন আপনি? প্রথম থেকে এত কোঅপারেট করলাম আমরা সবাই, আপনিও হেল্প করলেন, কিন্তু এটা কি হল?’
একটা বড় নিশ্বাস ছেড়ে বললেন, ‘ভুল তো হতেই পারে। যাক আমি ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি উনার কাছে।‘
নিজের ঘরে ঢুকলেন ও সি সাহেব।
পুষ্কর আবারও বলার চেষ্টা করছিল যে সে নির্দোষ। ও সি বললেন, ‘দেখুন পুষ্কর,’ বলে দু সেকেন্ড চুপ করলেন। তুমি থেকে আবারও আপনিতে ফিরে গেছেন ও সি।
‘আপনি উড়িষ্যায় কী করতে গিয়েছিলেন বলুন তো ঠিক করে? কোনও বাজে কথা বললে কিন্তু আপনারই ঝামেলা বাড়বে।‘
দীপ্তও ঘরে ঢুকে এসেছে।
পুষ্কর বলতে শুরু করল।
‘স্যার মাস দুয়েক আগেকার কথা। আমি এসপ্ল্যানেডে গিয়েছিলাম একটা কাজে। পিছন থেকে কেউ দাদা, ও দাদা শুনছেন বলে কেউ ডাকে। অনেকের সঙ্গে আমিও পেছনে ফিরেছিলাম এটা দেখতে যে আমার পরিচিত কেউ ডাকছে কী না! ফিরে যা দেখেছিলাম, জীবনে অত অবাক হই নি – অবিকল আমার মতো দেখতে একজন ডাকছে দাদা ও দাদা বলে!’
‘আচ্ছা? তারপর?’ জিগ্যেস করলেন ও সি।
‘সেই খেয়াল করেছিল ভীড়ের মধ্যে যে আমার আর তার একদম এক চেহারা। এমনকি গায়ের রঙ, হাইট – সব মিলে গিয়েছিল! শুধু চোখের নিচে যে তিলটা আছে আমার, তার সেটা নেই। সে বলেছিল এত চেহারার মিল কী করে হয় দুজনের। আমার কি ছোটবেলায় কোন ভাই হারিয়ে গিয়েছিল? আমার তখন মনে পড়ে নি.. বলেছিলাম সেটা। উনার নাম বলেছিলেন অলোক গুপ্তা। ইউ পির লোক। আমরা ফোন নম্বর এক্সচেঞ্জ করেছিলাম।‘
‘সেদিন রাতে শুয়ে শুয়ে আমার হঠাৎ মনে পড়ে যায় অনেক ছোটবেলায় শোনা একটা গল্প। মায়ের কাছে শুনতাম যে আমার নাকি একটা যমজ ভাই ছিল। সে হাসপাতালেই মারা গিয়েছিল। মা সেই কথাটা মনে করতে চাইত না বলে খুব বেশী বলতও না বাড়িতে এই ব্যাপারে। কিন্তু অনেক ছোট বেলায় শোনা ঘটনাটা আমার সেদিন মনে পড়ে গেল। আমি পরের দিন মি. গুপ্তাকে ফোন করেছিলাম। উনি পার্ক স্ট্রীটের একটা রেস্তরায় ডিনারে ডাকেন। আমি গিয়েছিলাম। উনাকে বলেছিলাম ছোটবেলায় মায়ের কাছে এক আধবার শোনা কাহিনীটা।‘
‘তারপর?’ এবার দীপ্ত জিগ্যেস করল।
‘তারপর মি. গুপ্তা বললেন যে অদ্ভূত গল্প। ঘটনাচক্রে উনি যে তাঁর বাবা-মায়ের দত্তক নেওয়া ছেলে, সেটা বেশ কিছুটা বড় হয়ে জানতে পেরেছিলেন উনি। বাবা-মায়ের সঙ্গে ছেলের চেহারার অমিল দেখে কলেজে বন্ধুরা ক্ষ্যাপাত তাঁকে। তাই কলেজ থেকে বাড়ি ফিরে এসে চেপে ধরেছিলেন মা কে – যে কেন তোমার বা বাবার চেহারার সঙ্গে আমার চেহারার মিল নেই! ছেলের কাছে কেঁদে ফেলে দত্তক নেওয়ার কথাটা বলে ফেলেছিলেন অলোকের মা। অলোক সেদিন ডিনার করতে করতে সেই সময়ের কথাগুলো বলেছিল। ওর মা নাকি এটাও বলেছিল যে কলকাতার এক নার্সিং হোম থেকেই দত্তক নেওয়া হয়েছিল ওকে। সেদিন অলোক আরও বলেছিল যে ও ব্যবসার কাজে মাঝে মাঝেই কলকাতা আসে। অনেক চেষ্টা করেছে নিজের আসল বাবা-মাকে খুঁজে বার করতে, পারে নি। ও কথায় কথায় বলেছিল, হতেই পারে আমি-ই ওর সহোদর ভাই। ওর ব্যবসা আছে সেটাও জানিয়েছিল।‘
‘মাঝে মাঝেই ফোন করত ও। আমি বাড়িতে দীপ্তিকে কিছু বলি নি এসব। কোনও প্রমান তো নেই যে অলোক আমার যমজ ভাই! দিনকয়েক আগে আমাকে অলোক ফোন করে বলেছিল যে ব্যবসার কাজে বেহরমপুর গিয়ে ও খুব অসুস্থ হয়ে পড়েছে। ওর আর কেউ নেই চেনাশুনো। কাছাকাছি আমিই আছি কলকাতায় – যে তাড়াতাড়ি পৌঁছতে পারব। রক্তের সম্পর্ক এখনও প্রমানিত না হলেও ও একটা টান অনুভব করছে আমার প্রতি, তাই আমাকে রিকোয়েস্ট করেছিল তাড়াতাড়ি বেহরমপুর যেতে। আমি ওর কাছেই গিয়েছিলাম স্যার। ওর ব্যবসার কয়েকটা কাজে একটু হেল্পও করে দিলাম, ওর হয়ে কয়েকটা জিনিষ ওর ক্লায়েন্টদের কাছে দিয়ে এলাম, প্লাস ওর দেখাশোনাও করলাম কদিন। কিন্তু আমার বাড়িতে এরকম বিপদ দেখে ও-ই জোর করে আমাকে ফেরত পাঠিয়ে দিল।‘
‘আপনার জন্ম কোথায় হয়েছিল পুষ্করবাবু?’
‘যতদূর মনে পড়ছে, সেন্ট্রাল কলকাতার কোথাও। আমরা তখন ওদিকেই থাকতাম – নর্থের দিকে। একটা নার্সিং হোমে। বাড়িতে বার্থ সার্টিফিকেট আছে। ছোটবেলায় মাঝে মাঝে নিজের বার্থ সার্টিফিকেটটা দেখতাম। মাধ্যমিকের পরে তো আর দরকার পড়ে নি.. দাঁড়ান দাঁড়ান মনে পড়েছে.. শ্রী কৃষ্ণ নার্সিং হোম।‘
ও সি প্রায় লাফ দিয়ে উঠলেন, ‘কী নাম বললেন, শ্রী কৃষ্ণ নার্সিং হোম!’
পুষ্কর আর দীপ্ত একটু অবাক হয়ে গেল ও সি-র চীৎকার শুনে!
‘আরে মশাই এ ঘটনা কোথা থেকে কোন দিকে যাচ্ছে – উফফফ.. আরে দীপ্তবাবু, কাগজে পড়ছেন না .. সেন্ট্রাল ক্যালকাটার ওই নার্সিং হোম থেকে কত বছর ধরে সদ্য জন্মানো শিশু পাচার হচ্ছে! জীবন্ত শিশুকে পাচারকারীরা তুলে নিয়ে গিয়ে অন্য কোনও বাচ্চার মৃতদেহ দিয়ে দিচ্ছে বাপ-মাকে! হতেই পারে পুষ্করবাবুর যমজভাইকে তুলে নিয়ে গিয়ে কোনও একটা শিশুর দেহ দেওয়া হয়েছিল উনার বাবা-মাকে! আর সেই অন্য যমজ ভাইটাই হচ্ছে এই অলোক গুপ্তা। তাকে পাচার করে দত্তক দিয়ে দিয়েছিল উত্তরপ্রদেশে! উফ কী ঘটনা মশাই! আচ্ছা পুষ্করবাবু, আপনার বাড়িতে বার্থ সার্টিফিকেটটা আছে তো? গাড়ি দিচ্ছি – গিয়ে নিয়ে আসুন তো ঝট করে।‘
ভিক্টরকে ফোন করলেন ও সি। সবটা জানালেন। ওদিকে ধরা পড়া লোকটা কী কী বলেছে, সেটাও জেনে নিলেন.. তারপর বললেন, ‘জিগ্যেস করো তো অলোক গুপ্তা কে? আর পুষ্করকে কীভাবে চেনে সেটাও জানতেচাইবে.. অলোক কি ওর বাবামায়ের দত্তক নেওয়া ছেলে? জিগ্যেস করো তাড়াতাড়ি। ওর মুখের এক্সপ্রেশনটা লক্ষ্য করবে। জানাও আমাকে।‘
আবারও সিগারেট ধরালেন ও সি। সন্ধ্যে থেকে দশটা সিগারেট হয়ে গেল।
প্রায় একঘন্টা পরে পুষ্কর আর দীপ্ত ফিরে এল বার্থ সার্টিফিকেট নিয়ে।
ভিক্টর ফোন করল আরও বেশ কিছুক্ষণ পরে। জানাল অলোক গুপ্তা ব্রেক করেছে.. দত্তক নেওয়া, পুষ্কর – এসব বলতেই সে একেবারে ভেঙ্গে পড়েছে। ওর চোখের নীচে তিলটা একটু চেষ্টা করতেই খুলে ফেলতে পেরেছে ভিক্টর।
জেরায় অলোক গুপ্তা স্বীকার করেছে যে চেহারা অদ্ভূত মিল দেখে ও-ই পুষ্করের সাহায্য নিয়েছিল ল্যাপটপ আর হার্ড ড্রাইভগুলো সরিয়ে দিতে। কাপুরের হাতে যে ওগুলো তুলে দিয়েছিল, সে আসলে চোখের নীচে নকল তিল লাগানো অলোক গুপ্তা নয়, পুষ্করকেই না জানিয়ে ওর হাত দিয়ে পর্ণ ভর্তি হার্ড ড্রাইভগুলো কাপুর আর আরও কয়েকজন কুরিয়ারের কাছে পৌঁছিয়ে দিয়েছিল অলোক।
ও সি দীপ্ত আর পুষ্করকে সঙ্গে নিয়ে যখন ওদের বাড়ির সামনে পৌঁছলেন, তখন রাত প্রায় সাড়ে এগারোটা।
***
১০০
শ্রীদের বাড়িতে সকলে জড়ো হয়েছিল পরের দিন বেলার দিকে। ও সিকে দিয়ে সবাইকে খবর পাঠিয়েছিল শ্রী আর দীপ্ত। দুপুরে খাবার নেমতন্ন।
রাত প্রায় আড়াইটে পর্যন্ত ও আর দীপ্তি বসে বসে গোটা ঘটনাটা খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে শুনেছে
কনিকা, বিজন, মিতালী, পার্থ, মধুমিতার বাবা মা, পুষ্কর, ও সি সাহেব – সবাই বসে আড্ডা দিচ্ছে ওদের ড্রয়িং রুমে।
দীপ্তি গেছে শ্রীকে হেল্প করতে রান্নাঘরে। সাবিনাও আছে সেখানেই। ওকে ও সি সাহেব নিজের দায়িত্বে কিছুক্ষনের জন্য থানা থেকে নিয়ে এসেছেন। ও মুখ না খুললে এই কেস সলভ করা যেত না সহজে।
অভি, মনি আর মধুমিতা মনির রুমে আছে। শ্রী মনে মনে বলল, তিনটেতে মিলে কী করছে কে জানে!! সেটা সাবিনার কান বাঁচিয়ে দীপ্তির কানে কানে বলতেই হেসে ফেলে ওর পিঠে একটা ছোট কিল মেরেছে দীপ্তি। পাল্টা ফিস ফিস করে বলেছে, ‘ইশ, ছেলে মেয়েদের নিয়ে তোর কী সব কথাবার্তা..’
শুধু ভিক্টর নেই। বেহরমপুরের কোর্টে আজ অলোককে পেশ করবে পুলিশ, তারপর ট্র্যান্সিট রিমান্ডে কলকাতায় নিয়ে আসা হবে।
ভিক্টর না থাকলেও তার মেসেজ এসেছে এই বাড়িতেই উপস্থিত একজনের কাছে।
সে লিখেছে, ‘ভাল ভাল। অপরাধী ধরলাম আমি আর তোমরা করছ পার্টি!’ মেসেজটা চট করে পড়ে নিয়েই রাঙা মুখে মোবাইলটা খাপের মধ্যে ঢুকিয়ে সরিয়ে রেখেছে মধুমিতা। ভিক্টরের সঙ্গে মেসেজ চালাচালিটা কদিন হলই শুরু হয়েছে.. আপনি থেকে তুমিতে তো প্রথম দিনের শেষেই চলে গিয়েছিল।
ড্রয়িং রুমে সবার হাতেই বিয়ারের বোতল।
রান্নাটা প্রায় শেষ করে ফেলে সেখানে সাবিনার হাত ধরে নিয়ে এসে বসল শ্রী। সঙ্গে দীপ্তি। পুষ্কর ওদের হাতেও বিয়ারের বোতল তুলে দিল।
তারপরে দীপ্ত বলল, ‘আরে ছেলে মেয়ে তিনটেকেও ডাক। ওরাও খাক বিয়ার একটু।‘
দীপ্তি আর শ্রী চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে রইল ... কিন্তু সেই চাহনিতে ইনডালজেন্স ছিল।
ওরা তিনজন নেমে আসার পরে যখন ওদের হাতে দীপ্ত বিয়ারের বোতল তুলে দিল, তখন দৃশ্যতই অস্বস্তিতে তিনজনেই।
‘খা খা। সবাই আঠেরো পেরিয়েছিস.. হয়তো খাসও একটু আধটু.. কদিন খুব ধকল গেছে সবার ওপরে।‘
মধুমিতার বাবা মা দুজনেই অন্য সময়ে এটা দেখে হয়তো অজ্ঞানই হয়ে যেতেন। কিন্তু পেটে বিয়ার পড়ায় ওদের দুজনের সবসময়ে হতভম্ব হয়ে থাকা ভাবটা এখন কেটে গেছে।
মধুমিতার বাবা-ই প্রস্তাবটা দিলেন।
‘আমরা এই সবাই মিলে কোথাও একটু ঘুরতে গেলে কেমন হয়?’
সবাই হাততালি দিয়ে উঠল... এককথায় রাজি।
সাবিনা শুধু চুপ করে রইল। ও সি সাহেবের নজরে পড়ল সেটা।
‘চিন্তা করো না। তুমিও যেতে পারবে.. তার আগেই তোমার বেইল করিয়ে নেব.. বহু বছর তো আনন্দ করো নি কোনও ফ্যামিলির সঙ্গে।‘
সাবিনার মনে পড়ল ওর বরের কথা। দুচোখের কোনটা চিকচিক করছিল।
মনি গিয়ে সাবিনাকে জড়িয়ে ধরল..
‘কোথায় যাওয়া হবে, সেটা ঠিক করা হোক,’ পার্থ বলল।
ও সি বললেন, দীঘার কাছে শঙ্করপুর চলুন। ওখানকার ও সি আমার বন্ধু। ভাল হোটেল বা রিসর্ট ব্যবস্থা করে দেবে।
আবারও সমবেত হাততালি।
রসভঙ্গটা করলেন সবসময়ে হতভম্ব হয়ে থাকা, কিন্তু এখন আধ বোতল বিয়ার পেটে পড়ার পরে মুখের আগল খুলে যাওয়া মধুমিতার মা।
উনারা সবাই গোটা কাহিনীটা ও সি-র কাছ থেকে শুনেছেন।
মধুমিতার মা বললেন, ‘আচ্ছা অলোক গুপ্তা যে পুষ্করবাবুর সেই হারিয়ে যাওয়া যমজ ভাই, সেটা কি বোঝা যাবে?’
ও সি বললেন, ‘দুজনের ডি এন এ ম্যাচ করলেই বোঝা যাবে যে ওদের রক্তের সম্পর্ক আছে।‘
মধুমিতার বাবা ইতিহাস পড়ান, বিজ্ঞানের ব্যাপারে খুব একটা ধারণা নেই।
উনি বললেন, ‘ওই রক্ত নিয়ে বাইনোকুলারের নীচে রেখে টেস্ট করবে, তাই তো? ম্যাচ করলেই বোঝা যাবে যে ওরা দুই ভাই!’
বাক্যটার মাঝখানেই মধুমিতা আর মনি চেঁচিয়ে উঠেছে... ‘ওটা বাইনোকুলার নাআআআআ.. মাইক্রোস্কোপপপপপপপ’
শ্রী মনে মনে ভাবল, আবার বাইনোকুলার...... !!!!
- শেষ -