Thread Rating:
  • 22 Vote(s) - 3.41 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
Thriller বাইনোকুলার by uttam4004
#37
৮৭
 
ম্যাঙ্গালোর থেকে কোচি যাওয়ার হাইওয়েতে উঠেই ড্রাইভারকে স্পীড বাড়াতে বলল কাপুর।
সুমোটা বেশ ভাল স্পীডেই যাচ্ছিল। হঠাৎই দূরে কিছু একটা দেখে স্পীড কমিয়ে আনল ড্রাইভার।
কী হল, স্পীড কমালে কেন?’
স্যার সামনে পুলিশ চেকিং চলছে।
কাপুর এবার একটু ঘাবড়ে গেল। খুব তাড়াতাড়ি ভাবতে হবে। চেকিং পোস্টের সামনে আর খুব বেশী গাড়ি নেই। দরজা খুলে পালাবে? নাহ তাহলে নজরে পড়ে যাবে। চুপচাপ থাকাই ভাল। পকেট থেকে রুমাল বের করে কপালের ঘামটা একটু মুছে নিয়ে একটা সিগারেট ধরালো। এতে তার টেনশন কমবে, আর পুলিশকে বোঝানো যাবে যে ও স্বাভাবিক আচরণ করছে।
কিন্ত যে চিন্তাটা ওর মাথায় ঘুরছে, সেটা হল এত তাড়াতাড়ি পুলিশ ট্রেস করল কী করে!
একটা একটা করে গাড়ি চেকিং পোস্ট পেরিয়ে যাচ্ছে আর ওর সুমোর ড্রাইভার ধীরে ধীরে গাড়িটা নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে।
সামনের গাড়িটার চেকিং শেষ হওয়ার আগেই একজন অফিসার আর দুজন কনস্টেবল এগিয়ে এলেন ওদের গাড়ীর দিকে।
ড্রাইভারের দিকে গিয়ে জিগ্যেস করলেন, ‘কোথায় যাচ্ছ?’
কোচি শুনেই অফিসার পেছনে বসা কাপুরের দিকে তাকাল। হাতে একটা কাগজ ছিল। চেহারায় মিল আছে কী না খোঁজার চেষ্টা করছিল। তারপরে কাগজটা পকেটে রেখে দিয়ে ওর দিকে জানলার কাঁচ নামাতে ইশারা করল।
আপনি কোথা থেকে আসছেন? .. কী নাম. কী করেন....একে একে অনেকগুলো প্রশ্ন করল।
তারপরেই যে আশঙ্কাটা করেছিল কাপুর, সেটাই হল। আপনার লাগেজ একটু চেক করব,’ বলল অফিসার।
কেন? হঠাৎ লাগেজ চেকিং কেন?’
আমাদের দরকার আছে বলে,’ কড়া গলায় কথাটা বলল অফিসার।
স্ট্রলিটা খুলে দিল কাপুর।
একে একে পোষাক, টয়েলট্রী কিট এসব সরিয়ে কিছুই পাওয়া গেল না কিছু ফাইলপত্র ছাড়া।
গাড়ীটার থেকে একটু দূরে সরে গিয়ে কাউকে একটা ফোন করল অফিসার। কনস্টেবল দুজন পাশেই দাঁড়িয়ে রইল।
ফিরে এসে ড্রাইভারকে বলল, ‘গাড়ী ঘোরাও। পুলিশ হেডকোয়ার্টার চলো।দুজন কনস্টেবলকে বললেন গাড়ীতে বসতে।
ড্রাইভার জানতে চাইছিল, ‘কেন স্যার কী হয়েছে? আমি তো কোনও দোষ করি নি। হোটেল থেকে গাড়ী বুক করেছিলেন এই সাহেব। মালিক আমাকে পাঠিয়েছে।
সব কথা ওখানে গিয়ে হবে। চলো।
কাপুরও জানতে চাইল, ‘কোচিতে আমার জরুরী কাজ আছে। কেন গাড়ীটা ঘোরাতে হবে, সেটা তো বলুন।
কোনও জবাব না দিয়ে অফিসার নিজের জীপে উঠে পড়লেন।
পেছন পেছন সুমোটাও চলল।
হেড কোয়ার্টারে ঢুকতেই আরও কয়েকজন পুলিশ ঘিরে ধরল সুমোটাকে। নামিয়ে আনা হল ড্রাইভার আর কাপুরকে। অফিসার এগিয়ে এসে ওর স্ট্রলি সুটকেশটা একজন কনস্টেবলকে নিতে বললেন।
ওদের দুজনকে একটা ঘরে বসানো হল। সেখানে স্ট্রলিটাও রইল, আর দুজন কনস্টেবল।
একটু পরেই হন্তদন্ত হয়ে প্রথম অফিসারের সঙ্গেই আরেকজন ঢুকলেন।
কাপুর দেখল ওর বুকের ব্যাজে নাম লেখা আছে হেগড়ে।
অধৈর্য হয়ে কাপুর জিগ্যেস করল, ‘আমাদের দোষটা কি সেটা তো বলবেন। আমার জরুরী কাজ আছে কোচিতে।
হেগড়ে হাত তুলে চুপ করতে বললেন, ‘সব জানতে পারবেন সময়মতো। আপনার সঙ্গে কোনও আই কার্ড আছে?’
নিজের পাসপোর্ট বার করে দেখাল কাপুর।
পাতাগুলো উল্টাতে উল্টাতে হেগড়ে জিগ্যেস করলেন, ‘আপনি তো নিয়মিত দুবাই যান দেখছি। থাকেন মুম্বইতে আর ম্যাঙ্গালোর দিয়ে যান কেন?’
এখান থেকে যে বিকেলের ফ্লাইটটা ধরা আমার সুবিধা। কারণ আমি মুম্বইতে থাকলেও আমার কাজকর্ম এদিকেই থাকে অনেক সময়ে। তাই সেগুলো সেরে এখান থেকেই ফ্লাইট ধরি।
এই কথাগুলো আগেও অনেকবার ইমিগ্রেশন করানোর সময় বলতে হয়েছে কাপুরকে। তাই জবাব তৈরী-ই ছিল।
আপনার স্ট্রলিটা আবারও খুলতে হবে। চেক করব।
কাপুর বলতে গিয়েছিল উনি তো তখন দেখলেন, কিন্তু একটা ধমক খেয়ে চুপ করে যেতে হল ওকে।
কনস্টেবল দুজন এসে আবারও সব জামাকাপড়, ফাইল পত্র বার করে একটা টেবিলে রাখল। হেগড়ে ফাইলগুলো খুলে কাগজপত্র দেখতে থাকলেন।
জিগ্যেস করলেন, ‘আপনি দুবাইয়ের ফ্লাইট না ধরে হঠাৎ কোচি যাচ্ছিলেন কেন?’
আমার একটা জরুরী কাজ পড়ে গেছে, তাই।
কী কাজ?’
একজন ক্লায়েন্টের সঙ্গে দেখা করতেই হবে। অনেক টাকার ব্যবসা করি ওর সঙ্গে। হঠাৎ খবর দিয়েছে। তাই ওর সঙ্গে দেখা করে একদিন কি দুদিন পরে যাব দুবাই।
আপনি কী কাজ করেন? ব্যবসা?’
হ্যাঁ
কীসের?’
এক্সপোর্ট-ইম্পোর্ট
হুম। কীসের?’
অনেক কিছু মশলা, পোষাক।
কথা বলতে বলতেই হাতের ফাইলগুলো টেবিলে রাখলেন হেগড়ে।
আঙুলের গাঁট দিয়ে ঠুকে ঠুকে স্ট্রলির ভেতর-বাইরেটা চেক করতে লাগলেন।
ভেতরে ভেতরে কাপুর ঘামতে লাগল। ও বুঝতে পারছে আর বোধহয় ম্যানেজ করতে পারল না।
এতগুলো পেন ড্রাইভ। সব ব্যবসার ফাইলপত্র আছে না কি?’
হ্যাঁ স্যার,’ কাপুর জবাব দিল।
কাপুর কীভাবে ম্যানেজ করবে সেটাই ভাবতে লাগল। ও জানে ধরা পড়ে যাবে এবার। তবে একটা চান্স আছে ও জানে।
পেনড্রাইভগুলো একজন কনস্টেবলকে দিয়ে বললেন, ‘আমার অফিসে গিয়ে এগুলো চেক করতে বল তো।
কাপুর মনে মনে বলল ও এযাত্রায় বোধহয় বেঁচে গেল।
মিনিট দশেক পরে হেগড়ের মোবাইলে ফোন। উনি তখন মন দিয়ে ফাইলের কাগজপত্র গুলো দেখছিলেন।
ফোনটা ছেড়ে দিয়ে কাপুরের দিকে তাকিয়ে বললেন, ‘ওগুলো কী ফাইল যে খোলা যাচ্ছে না?’
ব্যবসার কাজের ফাইল। তাই পাসওয়ার্ড দেওয়া আছে।
উহু। শুধু পাসওয়ার্ড না। আপনি নিজের থেকে ফাইলগুলো ওপেন না করলেও আমি কিন্তু সহজেই খুলে ফেলব। আমাদের সাইবার সেলের ছেলেরা খুব এক্সপার্ট। এখন আপনি ঠিক করুন কী করবেন।
এ রকম পরিস্থিতিতে পড়তে পারে, এই ভেবে ও আগেই একটা ব্যবস্থা করে রেখেছিল বড় সাহেবের বুদ্ধিতে।
***
 
৮৮
 
শ্রী মাসির সঙ্গে একবার সশরীরে একবার ফোনে রতিক্রীড়া সেরে অভি একটু ক্লান্ত হয়ে পড়েছিল। ফোন করে খাবার হোম ডেলিভারির কথা বলে দিয়ে ও বিছানায় শুয়েছিল। হঠাৎই ওর মোবাইলে একটা মেসেজ ঢুকল মনি-র।
কী রে বোকাচোদা কী করছিস?’
কিছু না। শুয়ে আছি.. তুই কী করছিস?’ মেসেজের উত্তর দিল অভি।
খাওয়া হয়ে গেছে? আমি এবার খেতে যাব। খেয়ে নিয়ে ফোন করব.. মুউউউউআআআআ..মনি উত্তর পাঠাল মেসেজে।
তখনই অভির ঘরের বাইরে দাঁড়িয়ে দীপ্তি বলল, ‘কী রে খাবারের অর্ডার দিয়েছিস? ভেতরে আসব?’
হ্যাঁ, এসো.. খাবারের কথা বলে দিয়েছি তো অনেকক্ষণ। এসে যাবে।
দীপ্তি বলল, ‘আচ্ছা তোর বাবা তো কালকের পরে একবারও ফোন করল না!
কাল রাতে মায়ের দেরী করে বাড়ি ফেরা, তারপর আজ সকাল থেকে থানা পুলিশ এসবের মধ্যে আর খেয়াল করে নি যে বাবা ফোন করে নি, ওরাও জানায় নি কিছু।
তুমিই একটা ফোন কর না বাবাকে। তবে এসব ডিটেলস বলার দরকার নেই। বাইরে আছে, শুধু শুধু চিন্তা করবে,’ দীপ্তিকে বলল অভি।
হুম,’ বলল দীপ্তি।
তোকে একটা কথা জিগ্যেস করি। তোর আর মনির মধ্যে যে একটা রিলেশন তৈরী হয়েছে এটা বলিস নি কেন? আমাকে তো সব কিছুই জানাতিস আগে,’ ছেলের মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে জিগ্যেস করল দীপ্তি।
এখনও সেরকম কিছু হয় নি। তাই বলি নি।
দীপ্তি বলল, ‘তুই লুকোচ্ছিস এখনও। এদিকে বলছিস সেরকম কিছু হয় নি, আবার মোবাইলে যা যা সব ছবি পাঠিয়েছিস, তা কি কিছু না হলে যে কাউকে পাঠানো যায়?’
ছবির কথা তোমাকে কে বলল শ্রী মাসি?’
যে-ই বলে থাকুক না কেন.. আমাকে লুকিয়ে ঠিক করিস নি।
দীপ্তি ছেলের খাট থেকে উঠে পড়ল।
দরজার কাছে গিয়ে ঘুরে দাঁড়িয়ে বলল, ‘আমি একটু শুচ্ছি। খাবার এসে গেলে ঘরে গিয়ে আমার ব্যাগ থেকে টাকা নিয়ে নিস আর আমি ঘুমিয়ে পড়তে পারি, আমাকে ডাকিস কিন্তু।
ঠিক আছে
দীপ্তি বেরিয়ে যাওয়ার মিনিট পনেরো পরে নীচের দরজায় বেল বাজল।
অভি ভাবল খাবার হোম ডেলিভারি করতে এসেছে। ও ম্যাজিক আই-তে দেখে নিল।
দরজা খুলতেই বাইরে দাঁড়ানো দুটো লোককে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখল।
একজন জিগ্যেস করল তোমার মাকে ডেকে দাও। আমরা উনার অফিস থেকে এসেছি।
মা একটু বিশ্রাম করছে। আপনারা পরে ফোনে কথা বলে নেবেন?’
ফোনে কথা বলা গেলে এতদূর তো আসতাম না ভাই,’ দ্বিতীয় লোকটা একটু কড়া গলায় বলল।
লোকটার কথার টোন ভাল লাগল না। তা-ও মায়ের অফিসের লোক বলে কথা, তাই ও বলল, ‘একটু ওয়েট করুন। মাকে ডাকছি।
দরজাটা বন্ধ করেই ও ওপরে যাবে ভেবেছিল।
কিন্তু একজন বলল, ‘ঠিক আছে আমরা নীচেই ওয়েট করছি,’ তারপর যেন দরজাটায় একটু চাপ দিয়ে ঠেলে ভেতরে ঢুকে এল।
অভি আর কিছু না বলে ওদের ভেতরে আসতে দিয়ে দরজাটা বন্ধ করে ওপরে গেল।
মাকে ডেকে বলল, ‘তোমার অফিস থেকে দুজন লোক এসেছে। ডাকছে।
একটু অবাক হয়ে দীপ্তি জিগ্যেস করল, ‘অফিস থেকে? অদ্ভূত তো! সুমনা-ও তো ফোন করে নি! তুই যা নীচে, বল আমি আসছি।
অভি নীচে নেমে বলল, ‘একটু বসুন, মা আসছে।
মিনিট দুয়েকের মধ্যেই দীপ্তি নাইটির ওপরে একটা হাউসকোট চাপিয়ে নীচে নামল। বেশ ক্লান্ত লাগছিল ওর। স্নান করে এখন খুব ঘুম পাচ্ছে ওর।
সিঁড়ি দিয়ে নামতে নামতেই দুজনকে বসে থাকতে দেখে বলল, ‘কে পাঠিয়েছে আপনাদের? কী ব্যাপার বলুন তো?’
আপনাকে একটু অফিসে যেতে হবে। খুব জরুরী দরকার আছে। সুমনা ম্যাডাম গাড়ী দিয়ে পাঠিয়েছেন।
কিন্তু আপনারা কারা? কখনও দেখি নি তো আপনাদের অফিসে! আর সুমনা তো ফোন করে কিছু বলেও নি।
ম্যাডাম একটু তাড়াতাড়ি চলুন। সুমনা ম্যাডাম ব্যস্ত আছেন, তাই হয়তো ফোন করতে পারেন নি। আপনাকে খুব তাড়াতাড়ি যেতে হবে। বলে দিয়েছে, যে অবস্থায় আছেন, সেভাবেই যেন আমরা নিয়ে যাই,’ কথাগুলো বলতে বলতে দুজন একটু একটু করে এগিয়ে আসছিল দীপ্তি আর ওর পাশে দাঁড়ানো অভির দিকে।
মানে কী? কীসের এত তাড়া পড়ল? আমি সুমনার সঙ্গে কথা বলছি আগে। তোর মোবাইলটা দে তো অভি,’ দীপ্তি কথাগুলো বলার আগেই একজন অভির সামনে দাঁড়ালো, অন্যজন দীপ্তির দিকে এগিয়ে গিয়ে বলল, ‘বলছি তো সে অবস্থায় আছেন, সেভাবেই নিয়ে যেতে বলেছে আমাদের। চলুন চুপচাপ।
এবার অভি মুখ খুলল, ‘মানে কী? কে আপনারা? মাকে যেতে দেব না হঠাৎ করে আপনাদের সঙ্গে। যতই দরকার থাকুক উনি যাবেন না।
নিশ্চই যাবে বাবু,’ বলেই একটা লোক অভির হাতটা চেপে ধরল, অন্যজন দীপ্তিকে কব্জি ধরে বাইরের দিকে টানল।
কী হচ্ছে, হাত ছাড়ুন .. কারা আপনারা .. কী হচ্ছে.. আহ... হাত ছাড়ুন.. আমি কিন্তু চিৎকার করব এবার.. হাত ছাড়ুন,’ চীৎকার করেই বলতে লাগল দীপ্তি।
অভি নিজের হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করছে আর মায়ের থেকেও গলা তুলে চীৎকার করে বলছে, ‘মায়ের হাত ছাড়ুন.. খুব খারাপ হয়ে যাবে কিন্তু..
অভি গায়ের জোরে পারল না ওদিকে বাইরে যে একটা গাড়ী দাঁড়িয়ে ছিল, সেটাও খেয়াল করে নি ও। সেখান থেকে আরও একজন এসে মায়ের অন্য হাতে কব্জি ধরে টান দিল। দীপ্তি পড়েই যাচ্ছিল কিন্তু দুজনে দুই কব্জি ধরে থাকায় পড়ল না। ওরা এখন চারহাতে দীপ্তিকে টেনে নিয়ে যাচ্ছে, আর একজন অভিকে শক্ত করে ধরে আছে।
দীপ্তি আর অভি দুজনেই তারস্বরে চেঁচাচ্ছে..
গাড়ির দরজাটা খুলে ওই দুজন দীপ্তিকে ঠেলে ভেতরে তুলে দিতেই অভিকে ধরে রেখেছিল যে লোকটা, সে সজোরে একটা ঘুঁষি মারল ওর মুখে। অভি কয়েক সেকেন্ডের জন্য চোখে অন্ধকার দেখল আর তার মধ্যেই সেই লোকটা দৌড়ে গিয়ে গাড়ীতে উঠে পড়ল।
গাড়ীটা ভীষণ স্পীডে বেরিয়ে যাচ্ছে.. অভি দৌড়ে বাইরে গিয়ে নম্বরটা দেখে নিল। চেঁচামেচি শুনে ততক্ষণে দীপ্ত মেসো ওদের দরজার খুলে বাইরে এসেছে.. .অন্যান্য কয়েকটা বাড়ী থেকেও কয়েকজন মুখ বাড়িয়েছে।
কেউ কিছু বুঝে ওঠার আগেই খুব স্পীডে গাড়ীটা গলি বাঁক নিয়ে চোখের আড়ালে চলে গেল।
অভি একটু দৌড়ে গেল দীপ্ত তখন রাস্তায় নেমে এসেছে।
কী হয়েছে অভি?’
মা কে জোর করে নিয়ে গেল কয়েকজন।
মানে?’
অভি তখনও হাঁপাচ্ছে। হাতে ধরে রাখা মোবাইলটায় ও সি সাহেবের সেভ করে নম্বরটা খুঁজছে অভি।
মায়ের অফিস থেকে এসেছি বলে ঘরে ঢুকে জোর করে টেনে নিয়ে গেল ওরা..কোনও মতে এইটুকু বলতে পারল অভি।
গন্ডগোল শুনে শ্রী আর মনিও নেমে এসেছে.. অন্যান্য কয়েকটা বাড়ী থেকেও বেরিয়ে এসেছে কয়েকজন।
কয়েকবার রিং হতেই ও সি সাহেব ফোন তুলে বললেন, ‘হ্যাঁ বলো অভি।
স্যার মা-কে কয়েকজন বাড়ী থেকে জোর করে একটা গাড়ীতে নিয়ে চলে গেল। বলছিল অফিসে খুব জরুরী দরকার। কিন্তু মা যেতে চাইছিল না... জবরদস্তি নিয়ে গেল.. আমাকে মেরেওছে.. গাড়ীর নম্বরটা হল...
তখনও হাঁপাচ্ছে অভি।
শ্রী কয়েক মুহুর্ত হতবাক হয়ে গিয়েছিল, তারপরেই পাড়ার অন্য লোকের কৌতুহল যাতে না হয়, সেজন্য অভির পিঠে হাত রেখে ওকে দীপ্তিদের বাড়ির দিকে নিয়ে চলল। বরের দিকে তাকিয়ে বলল, ‘তুমি আর মনি দরজা লক করে এসো। আমি অভিকে নিয়ে যাচ্ছি।
আশপাশের বাড়ীর কয়েকজন দীপ্তকে জিগ্যেস করছিল, ‘কী ব্যাপার মশাই?’ বা কী হল দীপ্তবাবু!
দীপ্ত কৌতুহল বাড়াতে না দিয়ে মনির দিকে তাকিয়ে বলল, ‘তুই চাবি নিয়ে দরজা বন্ধ করে আয় তো।
অভির পিঠে হাত দিয়ে ততক্ষণে শ্রী ওদের বাড়িতে ঢুকে পড়েছে..দরজাটা তখনও খোলাই আছে.. কয়েক মিনিট আগে এই জায়গাটাতে যে একটা সাংঘাতিক কান্ড হয়ে গেছে, তার কোনও চিহ্নই নেই।
অভির ফোনে তক্ষুনি ও সি সাহেব ফোন করলেন। অভি জবাবে শুধু বলে গেল, ‘হ্যাঁ স্যার.. না না ডীপ ব্লু.. হ্যাঁ স্যার..প্লিজ মাকে বাঁচান.. স্যার.. প্লিজ..
শ্রী অভির পিঠে হাত বুলিয়ে দিচ্ছে.. কিছুক্ষণ আগেই এর সঙ্গে ফোনে রমন করেছে, কিন্তু এখন সে দায়িত্বশীলা.. মায়ের বন্ধু..
ফোনটা ছাড়তেই দীপ্ত আর মনি বাড়িতে ঢুকল।
দরজাটা বন্ধ করতে করতে দীপ্ত বলল, ‘কী হল বল তো আমাদের ..তুই ও সি কে ফোন করলি তো?’
অভি গোটা ঘটনাটা বলল শ্রী দীপ্ত আর মনির সামনে.. তারপরে দুহাতে মুখ ঢেকে কেঁদে ফেলল।
মনি এগিয়ে এসে ওর পাশে দাঁড়িয়ে পিঠে হাত রাখল।
ওরা চারজনেই চুপচাপ ছিল।
আবারও দরজায় বেল ..
অভি মুখ তুলল। দীপ্ত এগিয়ে গেল দরজা খুলতে .. খাবার হোম ডেলিভারি দিতে এসেছে..
শ্রী এগিয়ে গিয়ে খাবারগুলো নিল। মনিও মায়ের সঙ্গে হাত লাগালো.. দীপ্ত টাকা দিয়ে দিল।
হোম ডেলিভারির ছেলেটা বেরিয়ে যাওয়ার মিনিট পাঁচেকের মধ্যেই বাইরে একটা গাড়ী থামার আওয়াজ।
আবারও দরজায় বেল দিল কেউ।
দীপ্ত খুলেই বলল, ‘ও আসুন ও সি সাহেব..
ও সি আর ভিক্টর কয়েকজন কনস্টেবলকে নিয়ে এসেছেন।
শ্রী আর মনিও রান্নাঘরে খাবারগুলো রেখে ফিরে এসেছে ততক্ষণে।
ও সি-কে দেখে অভি সোফা থেকে উঠে দাঁড়িয়েছিল।
ও সি বললেন, ‘বোসো বোসো ভাই.. কী হল বল তো। ভিক্টর তুমি নোট করো তো।
গোটা ঘটনা শুনলেন ও সি। মাঝে মাঝে ভুরু কুঁচকে ভিক্টরের দিকে তাকাচ্ছিলেন।
অভির বলা শেষ হলে ও সি বললেন, ‘তুমি তক্ষুনি ফোনটা করে ভাল করেছ। বেশীদূর যেতে পারবে না। আমি তোমার ফোন পেয়েই ওয়্যারলেসে জানিয়ে দিয়েছি নম্বরটা। তবে এদের সাহস আছে বলতে হবে। ভরদুপুরে বাড়ী থেকে একজনকে তুলে নিয়ে চলে গেল। আচ্ছা.. সুমনা ম্যাডামের নাম বলেছিল বললে না?’
অভি বলল, ‘হ্যাঁ
ভিক্টর তুমি কোর্টে কনস্টেবল বিজনকে ফোন করে জিগ্যেস কর তো ওই সিংয়ের সঙ্গে সুমনা বলে কোনও মহিলা দেখা করতে এসেছিল কী না.. বা সিংয়ের কোনও লইয়ারও বলতে পারে তাকে কে অ্যাপয়েন্ট করেছে খোঁজ নাও তো.. ওই মহিলাকে থানায় ডাকা দরকার।
ওদিকে কালো কাঁচে ঢাকা গাড়ীতে তোলার পরেই দীপ্তির চোখ বেঁধে দিয়েছে ওরা .. মুখ, হাত পা চেপে ধরে ওকে সীটে শুইয়ে দিয়েছে দুজন। তৃতীয়জন সামনে বসেছে আর একজন গাড়ী চালাচ্ছে। এরই মধ্যে একজন দীপ্তির মুখে একটা রুমালজাতীয় কিছু গুঁজে দিল জোর করে।
দীপ্তি চেঁচানোর চেষ্টা করছে, কিন্তু পারছে না। ছটফট করছে দেখে একজন কেউ ওর পাছায় একটা জোরে থাবড়া মারল, হিস হিস করে বলল, ‘একদম চুপ করে থাক.. বেশী নড়াচড়া করবি না।
খুব স্পীডে চলতে চলতে গাড়ীটা যে মাঝে মাঝেই বাঁক নিচ্ছে, সেটা টের পাচ্ছিল দীপ্তি। প্রায় আধঘন্টা চলার পরে থামল, হর্ণ বাজালো ড্রাইভার। তারপর আবারও চলতে শুরু করল তবে এবার খুব ধীরে ধীরে। মিনিট খানেক চলার পরেই আবার দাঁড়িয়ে পড়ল গাড়ীটা।
দরজা খুলল সামনের দিকে। তারপর ড্রাইভার আর তার পাশে থাকা লোকটা পেছনের দরজা খুলল। দীপ্তি আবারও ছটফট করে নিজেকে ছাড়াবার চেষ্টা করতে লাগল.. ও জানতই যে এদের সঙ্গে গায়ের জোরে পারবে না..তবুও!
ওকে চারজনে মিলে টানতে টানতে নিয়ে যেতে লাগল কোথাও একটা। দীপ্তি কয়েকবার হোঁচট খেল। আবারও চলতে বাধ্য হল ওদের সঙ্গে।
একটু পরে কয়েক ধাপ সিঁড়ি ভাঙতে হল দীপ্তিকে। তারপরে আরও কিছুটা হেঁটে গিয়ে দাঁড় করালো ওকে.. তারপরে হাতদুটো বেঁধে দিয়ে ওকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেওয়া হল... পড়ে গিয়ে ও বুঝল সেটা একটা গদি জাতীয় কিছু.. কিছুই দেখতে পাচ্ছে না ও, আওয়াজও করতে পারছে না.. শুধু গলা দিয়ে গোঁ গোঁ করে শব্দ বেরচ্ছে।
একটা দরজা বন্ধ হওয়ার আওয়াজ পেল.. তারপর সব নিস্তব্ধ।
চোখে কাপড় বাঁধা, তার নীচেই কেঁদে ফেলল দীপ্তি।
***
Like Reply


Messages In This Thread
RE: বাইনোকুলার by uttam4004 - by pcirma - 06-03-2019, 01:01 PM



Users browsing this thread: 13 Guest(s)