Thread Rating:
  • 34 Vote(s) - 3.35 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
Thriller মুখোশ - The Mask by Daily Passenger
#61
যাই হোক। ও, মানে সৌরভ পাল বাধ্য করেছিল তোমাকে সংকেতের সাথে শুতে। তুমি ওর কথা মতন সংকেতকে সিডিউস করলে। সংকেত এমন ভান করল যেন ও কিছুই জানে না। সম্পূর্ণ বোকা সেজে তোমার শরীরটা ও ভোগ করল, খোলা জানালার সামনে। সংকেতের সাথে সব কিছু হয়ে যাওয়ার পর সৌরভ পালের নির্দেশ মতন তুমি সংকেতকে সব কিছু পড়িয়ে বুঝিয়ে দিলে যে তুমি অসহায় অবস্থায় ওর সাথে মিলিত হতে বাধ্য হয়েছ। অন্য দিকে তুমি ওর সাথে শুয়ে ভীষণ তৃপ্তি পেলে। বার বার ওর সাথে মিলিত হওয়ার জন্য তখন তুমি ব্যাকুল। তোমাদের প্রেম পর্যায় শুরু হল। এখন তোমরা একে ওপরের কাছে নিজেকে বিলিয়ে দেওয়ার জন্য তৈরি হয়ে গেছ, মানসিক আর শারীরিক ভাবে। কিন্তু একটা বাড়তি কাজ করার জন্য ও তোমাকে বাধ্য করল। সেটা তুমি বুঝতে পারনি। কিন্তু আমি পেরেছি। ও তোমার জীবন থেকে চলে যাওয়ার আগে তোমাদের কল করে বুঝিয়ে দিল যে তোমাদের ব্যাপারটা জানাজানি হয়ে গেলে তোমার বিপদ হয়ে যাবে। ব্যাপারটা শুনে আপাত ভাবে স্বাভাবিক মনে হলেও অতটা স্বাভাবিক নয়। তোমার মনে কোনও খটকা লাগেনি সঞ্চিতা? ব্যাপারটা জানাজানি হবেই বা কি করে? আমি জানি প্রথম মিলনের পর সবার মনেই একটা চোর চোর ভাব আসতে বাধ্য। আফটার অল তুমি একটা খারাপ কাজ করছ। কেউ জানুক বা নাই জানুক, কিন্তু তুমি তো জানো যে তুমি একটা গর্হিত কাজ করে ফেলেছ। ও তোমার সেই মানসিক অবস্থার সুযোগ নিল। ও তোমাকে নেহাত ফালতু কারণে ভয় দেখিয়ে বলল যে ব্যাপারটা বাইরে জানাজানি হওয়ার আগেই যেন তুমি নিজে থেকেই গোটা দুনিয়াকে জানিয়ে দাও যে সংকেতকে তুমি নিজের ভাইয়ের মতন দেখো। এইবার আমার অনুমান সেদিন মর্নিং ওয়াকে যাওয়া আর সেই সাথে অতগুলো সেলফি তুলে ফেসবুকে আপলোড করার আইডিয়াটাও নিশ্চই সেই সৌরভ পাল ই দিয়েছিল তোমাদের? আর সংকেত নিশ্চই তাতে সায় দিয়েছিল? কি ঠিক বলছি কিনা?”
 
সঞ্চিতা ম্যাডাম কোনও জবাব দিলেন না। শুধু ঘাড় নাড়িয়ে মিস্টার বেরার কথায় সায় দিলেন। মিস্টার বেরা বললেন তুমি একটা গর্হিত কাজ করে সেটা জানাজানি হওয়ার ভয় পেয়ে গেলে বিনা কারণে। আর সৌরভ পালের কথা মতন সংকেতকে নিয়ে মর্নিং ওয়াকে বেরোলে। চোরের মন আফটার অল। কেউ তোমাদের ব্যাপারে কিছুই জানত না। তবুও নিজেকে সেফ সাইডে রাখার জন্য একগাদা সেলফি তুললে সংকেতের সাথে। ফেসবুকে আপলোড হল সব কটা ছবি। সব কটার ক্যাপশনে লিখলে সুইট ব্রাদারের সাথে মর্নিং ওয়াক এনজয় করছ। গোটা দুনিয়া জানল সংকেত তোমার ভাই। সুতরাং তোমাদের মধ্যে তেমন কোনও সম্পর্ক নেইকিন্তু এইবার একটা কথা ভেবে বলবে? কেন এই বাড়তি কাজটা করতে ও তোমাকে বাধ্য করল?”
 
সবাই বোকার মতন এর ওর মুখের দিকে তাকিয়ে দেখছে। মিস্টার বেরা হেসেবললেন সংকেত নিজের অ্যালিবাই তৈরি করল। সেদিন সংকেতের এক ভাই শিখার বাড়ি গিয়ে সারা রাত ধরে শিখার সাথে সহবাস করে। সঠিক বলতে পারব না তাদের মধ্যে সেদিন বা তার আগে কি কথাবার্তা হয়েছিল, কিন্তু আমার অনুমান, শিখা সংকেতের ব্যাপারে সব না জানলেও এমন কোনও কিছু জানতে পারে যেটা জানাজানি হলে সংকেত বা সংকেতদের বিপদ হতে পারে। সব জিনিস হাতিয়ে কাউকে কোনও কিছু না জানিয়ে সরে পড়াই ছিল সংকেতের এক্সিট প্ল্যান। এদিকে মিস্টার মুখার্জির বাড়ি থেকে এখনও জিনিসগুলো ও সরাতে পারেনি, তাছাড়া আমার ঘর থেকে সুযোগের অভাবে ফাইলগুলোও এখনও ওর হাতে আসেনি। এখন জানাজানি হলে পালাতে হবে খালি হাতে। সুতরাং শিখাকে পৃথিবী থেকে সরিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হল। কেন এই সিদ্ধান্ত নিতে হল, কি কারণ এইগুলো সঠিক ভাবে জানা যায়নি। আর জেনে কোনও লাভও নেই। হতে পারে শিখা সংকেতকে ব্ল্যাক মেইল করছিল। জানি না। এইবার ভেবে দেখো , শিখা খুন হলে, সেদিন রাতে সংকেত যে শিখার বাড়ি গেছে, মানে সংকেতের চেহেরার একজন, সেটা ওই বাড়ির দুই মহিলা পুলিশের সামনে বলে দেবে। তোমার আর সংকেতের ব্যাপারে জানাজানি হলে তোমার যদিও বা কিছু আসবে যাবে, কিন্তু সংকেতের তাতে কিছুই এসে যায় না। তোমার সাথে সহবাসের করার জন্য তো আর ওকে জেলে ভরা যায় না। ও তোমাকে রেপ করলে অবশ্য অন্য ব্যাপার হত। কিন্তু যা কিছু হয়েছে তোমার ইচ্ছেতে হয়েছে। ও নিজে থেকে এগিয়ে এসে কিছুই করতে চায়নি তোমার সাথে। আর এই কথাটা ভুলে যেও না, যে শিখার হত্যার অপরাধে কিন্তু ওর জেল হতে বাধ্য।
 
সুতরাং, কি দাঁড়াল? ওই দুই মহিলার বয়ানের ওপর নির্ভর করে পুলিশ সংকেত অব্দি ঠিক পৌঁছে যাবে। আর তাতে সংকেতের কাজে ক্ষতি হবে। তাই ও নিজের জন্য একটা মোক্ষম অ্যালিবাই তৈরি করল। তোমার সেলফিগুলো হল ওর অ্যালিবাই। এইখানে রাকা মিস্টার বেরাকে বাঁধা দিয়ে বলে উঠল কিন্তু একটা কথা আমার মাথায় কিছুতেই ঢুকছে না। ম্যাডামের সেলফিগুলো থাকুক বা নাই থাকুক, ওই দুই মহিলার বয়ান শোনার পর পুলিশ তো এমনিতেই সংকেতকে সন্দেহ করতে বাধ্য হবে। মিস্টার বেরা বললেন এই সব ক্রিমিন্যালদের কাছে প্রত্যকটা মুহূর্ত ভীষণ জরুরি। সেলফিগুলো না থাকলে পুলিশ সরাসরি গিয়ে সংকেতের হাতে হাত কড়া পরিয়ে সংকেতকে জেলে ঢুকিয়ে দিত। তারপর, সঞ্চিতা নিজের বয়ান দেবে, উকিল ইত্যাদির খেলা শুরু হবে। কিন্তু সংকেতের বেশ কিছুটা সময় তাতে নষ্ট হয়ে যাবে। কিন্তু এখন, পুলিশ ওই দুই মহিলার বয়ানের ওপর নির্ভর করে সংকেতকে হাতকড়া পরাতে পারবে না কিছুতেই। সঞ্চিতার বয়ান ঠিক কি ভুল সে নিয়ে কোনও প্রশ্নই উঠবে না। রিয়েল টাইমে তোলা ওই ছবিগুলো পুলিশকে বাধ্য করবে সংকেতকে ছেড়ে দিতে। মানে সংকেতকে ওরা গ্রেফতার করতে পারবে না। সংকেতের ওপর ওদের সন্দেহ থাকবে ঠিকই, কিন্তু সরাসরি কিছু করতে পারবে না। সংকেতকে গ্রেফতার করতে হলে পুলিশকে আরও অনেক তদন্ত করতে হবে সংকেতের ব্যাপারে। সুতরাং নিজের কাজ শেষ করে পালিয়ে যাওয়ার জন্য সংকেত আরও বেশ খানিকটা সময় পেয়ে যাবে। সঞ্চিতা তুমি নিজের অজান্তে সংকেতের জন্য অ্যালিবাই তৈরি করেছ। বদ্ধ ঘরের মধ্যে কিছু হলে বাইরের দুনিয়া সেটা জানতে পারবে না, আর তাই পুলিশ বারবার তোমাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে তোমার বয়ানের সত্যতা যাচাই করার চেষ্টা করবে। কিন্তু এই সময়টা সংকেতকে থাকতে হবে জেলে! বুঝতে পারলে?”
 
মিস্টার বেরা আরেকটা সিগারেট ধরিয়ে শুরু করলেন এইবার কাজের কথায় আসি। সঞ্চিতার মোবাইলের কল রেকর্ড থেকে আমরা সৌরভ পালের নাম্বার পাই। আমরা অবশ্য নামটা জানতাম না। সঞ্চিতার মোবাইল হ্যাক করে ওর সো কলড নামটা জানতে পেরেছি এই কিছুক্ষণ আগে। ১৫ ই আগস্ট ভোর রাত অব্দি ওই মোবাইলটা ছিল আমাদের বাড়ির পেছন দিকের বস্তিতে। আমার লোক ওখানে যায়। অনেক লোক বলেছে যে বেশ কিছু দিন ধরে ওরা সংকেতকে ওই বস্তিতে ঘোরা ঘুরি করতে দেখেছে। আর বেশী বুঝিয়ে বলার দরকার নেই, কিন্তু আপনার নিশ্চই ইতিমধ্যে বুঝে গেছেন যে এই সৌরভ পাল আর সংকেত দুটো আলাদা ব্যক্তি। কিন্তু সৌরভ পালের চেহারা আর সংকেতের চেহেরা এক। সুতরাং একই সময় সংকেত আমাদের বাড়িতে আমার বউয়ের সাথে সহবাস করছে, ঠিক সেই সময় এই সৌরভ পাল ওই বস্তির বাইরে দাঁড়িয়ে চোখে দূরবীন লাগিয়ে সেই দৃশ্য উপভোগ করছে, আর ঠিক সেই একই সময়ে নাম না জানা আরেকজন লোক শিখার সাথে সহবাস করছে। সুতরাং…” মিসেস মুখার্জি বললেন একটা জিনিস বলবেন? মিসেস বেরার সাথে ওই সৌরভ পালের লিঙ্ক আপনারা কি ভাবে বুঝতে পেরেছেন সেটা বুঝতে পেরেছি, কিন্তু সংকেত আর ওই লোকটা যে লিঙ্কড সেটা আপনারা বুঝলেন কি করে? শুধু ওদের চেহারা ম্যাচ করছে বলে…” মিস্টার বেরা বললেন নো। ওই নাম্বার নিয়ে আমাদের কোনও মাথাব্যথা হত না। সঞ্চিতাকে ও মাঝরাতে কল করেছে বলেই আমি আবারও বলছি আমি লোকের কেচ্ছা নিয়ে আলোচনা করছি না। কিন্তু সেই নাম্বার থেকে যদি সংকেতের মোবাইলেও কল যায় তখন একটু ভেবে দেখতে হবে বইকি? ওই মোবাইল থেকে সঞ্চিতার ফোনে কল যায়, আবার সংকেতের মোবাইলেও কল যায়। সঞ্চিতা সেই সময় জানত না যে মিস্টার পাল সংকেতকে চেনে, কিন্তু আমরা কল রেকর্ড থেকে জানি যে ওই লোকটা সংকেতকে চিনত। মোটের ওপর এই।
 
মিস্টার বেরা এইবার মিসেস সান্যালের দিকে তাকিয়ে শুরু করলেন এইবার আপনার কাছে আসব। তার আগে আরেকটা জিনিস সঞ্চিতাকে জানিয়ে রাখি। তোমার সৌরভ পালকে পাঠানো ছবিগুলো, সংকেতের সাথে তোমার সহবাসের ভিডিওগুলো, আর সেই সাথে তোমার অনেক প্রাইভেট মুহূর্তের ভিডিও আর ছবি ওই একই ওয়েব সাইটে আপলোড করে দেওয়া হয়েছে। গোটা দুনিয়ার সামনে ও তোমাকে নগ্ন করে দিয়েছে কিছুক্ষণ আগে। আমি দেখেছি সেই ভিডিও। অবশ্যই টাকা দিয়ে সেই ভিডিও দেখতে হবে। কিন্তু অনেকেই ইতিমধ্যে সেসব দেখে ফেলেছে। যাই হোক, এইবার ১৫ই আগস্ট রাতের কথায় আসব। ১৫ই আগস্ট রাতে তুমি সংকেতের সাথে আবার সহবাস করেছিলে, সেটা নিয়ে কথা বলে লাভ নেই। কিন্তু তার আগে, সংকেত মিসেস মুখার্জির বাড়িতে গিয়েছিল। আমি খবর নিয়ে জানতে পেরেছি যে মিসেস সান্যাল সেদিন ছিলেন মিসেস মুখার্জির বাড়িতে। মিস মুখার্জি সেদিন ওই বাড়িতে ছিল না। বাড়ির কাজের লোকজনদের সন্ধ্যার পর ছুটি দিয়ে দেওয়া হয়েছিল সেটাও আমি জানতে পেরেছি। সংকেত…” মিসেস মুখার্জি বললেন হ্যাঁ ওকে নেমন্তন্ন করেছিলাম।
 
মিস্টার বেরা বললেন খুব ভেবে চিন্তে কথা বলবেন মিসেস মুখার্জি। আপনাদের তিনজনের মোবাইল লোকেশন একই জায়গায় ছিল ৮.২৫ এর পর থেকে। ওকে নেমন্তন্ন করলে ওকে খাবার দাবার দেওয়ার জন্য কাউকে না কাউকে বাড়িতে রাখতেন। কিন্তু কাজের লোকদের আপনি কেন সেই দিন ছুটি দিয়ে দিয়েছিলেন সেটা বলবেন? তার থেকেও জরুরি প্রশ্ন, সংকেত সেদিন মধ্যরাত্রি অব্দি আপনাদের সাথে কি করছিল? “ মিস্টার বেরা থামলেন। বেলা আনটি আর সুধা আনটির মুখ ফ্যাকাশে হয়ে গেছে। ওনারা কিছু বলতে পারলেন না। মিস্টার বেরা বললেন আপনারা সেদিন নিজেদের শারীরিক ক্ষিদে মেটানোর জন্য সংকেতকে ওই সময় ডেকেছিলেন। ঠিক বলছি কি না? লজ্জা পাওয়ার কোনও কারণ নেই। সংকেতের চেহারা, ওর ফিগার দেখে যেকোনো মেয়ে ওর প্রেমে পড়তে বাধ্য।
 
মিসেস মুখার্জি বললেন না। আপনি ভুল করছেন। আসলে সংকেতকে আমি ডেকেছিলাম কারণ ওকে আমি রঞ্জনের ঘর থেকে টাকা চুরি করতে দেখেছিলাম।দোলন বলল মম। তুমি আমাকে আগে সেটা বলোনি কেন?” মিসেস মুখার্জি বললেন আসলে বলার সময় পাইনি। যেদিন তোর বাবা মারা যান সেদিন ওকে আমি দেখেছিলাম যে সংকেত ওর কাজের ঘরের ড্রয়ার থেকে টাকা সরাচ্ছে। ওখানে তোর বাবা ২০০০০ টাকা রেখে দিয়েছিল বেরনোর আগে। তুইও তো সেটা জানতিস।দোলন বলল মম। ওই টাকা ও সরায়নি। তুমি হাসপাতাল থেকে ফিরে জড়ভরতের মতন বসে ছিলে শুধু। কিছুই তো করছিলে না। আমাকেই সব কিছু করতে হচ্ছিল। তাই আমিই ওই টাকা ওখান থেকে বের করে নি। মিসেস মুখার্জির মুখ আরও ফ্যাকাশে হয়ে গেছে। মিস্টার বেরা বললেন আপনাদের এই ফালতু কথার ধাক্কায় আমার আসল প্রশ্নটাই তো হারিয়ে গেল। বেশ ক্লিয়ার করে বলুন এইবার। আপনার মনে হয়েছিল যে সংকেত ওখান থেকে ২০০০০ টাকা সরিয়েছে। ওকে সাথে সাথে চার্জ করলেন না কেন? কেন ১৫ ই আগস্ট অব্দি অপেক্ষা করলেন? আর এত গোপনীয়তার কারণই বা কি? ”
 
এই প্রশ্নের কোনও উত্তর হয় না সেটা মিস্টার বেরা খুব ভালো করে জানেন, তবুও উনি একটু থামলেন কারণ পরের প্রশ্নের ওপর আরও জোর দিতে হবে। ধরে নিলাম আপনি ওই টাকা চুরির ব্যাপারে কথা বলার জন্য সংকেতকে ডেকেছিলেন, কিন্তু অত রাত অব্দি আপনারা ওর সাথে ওই টাকা চুরি নিয়ে কথা বলছিলেন? ব্যাপারটা একটু অবিশ্বাস্য নয় কি? “ আবারও উনি থামলেন, এবারও মিসেস মুখার্জি চুপ। মিসেস সান্যাল মুখ খুললেন এইবার আপনি বলেছেন আপনি কারোর পার্সোনাল লাইফ নিয়ে আলোচনা করতে চান না। কিন্তু এখন আপনি তাই করছেন। তাই একটা প্রশ্ন আপনাকে আমি জিজ্ঞেস করতে চাই। ও কি কোনও ভিডিও ওই ওয়েব সাইটে…” মিস্টার বেরা বললেন ইয়েস। মিস্টার মুখার্জির ডেথের পর ওই বাড়িতে এন্ট্রি নিয়ে ও সবার অলক্ষ্যে প্রথম যে কাজটা করেছিল সেটা হল জায়গায় জায়গায় স্পাইক্যাম আর মাইক্রোফোন সেট করে দেওয়া।
 
সংকেত সেদিন ড্রয়ার থেকে টাকা সরাচ্ছিল না। ও মিস্টার মুখার্জির গবেষণার কাগজগুলো খুঁজে দেখছিল। আপনি ভুল বুঝলেন। সংকেতকে আপনার প্রথম বার দেখেই মনে ধরেছিল। আপনার চরিত্রের ব্যাপারে কথা বলার আমি কেউ নই। কিন্তু তবুও বলছি, আপনার ব্যাপারে সবাই অনেক কিছুই জানে। কচি মাথা চেবানর ব্যাপারে যে আপনি আর মিসেস সান্যাল বিশেষ পারদর্শী সেটাও আমার বা আমাদের অজানা নয়। আপনি ভাবলেন যে সংকেত টাকা চুরি করছে। আপনি তখনই ওকে কিছু বললেন না। কিন্তু অন্য একটা প্ল্যান করলেন। সংকেতকে ঘরে ডেকে পরে সেই চুরির কথা বলে ভয় দেখিয়ে আপনাদের সাথে সহবাস করতে বাধ্য করবেন। ওর শরীর নিয়ে খেলা করার ইচ্ছে তখন আপনাকে পেয়ে বসেছে। আপনি সংকেতের চেহারার ব্যাপারে মিসেস সান্যালকে বলার পর থেকে উনিও পাগল হয়ে উঠলেন এই নতুন শরীরের স্বাদ পাওয়ার জন্য। কি ঠিক বলছি কিনা? আপনারা সংকেতকে ডেকে আপনাদের মেইল স্লেভ হওয়ার প্রস্তাব দেন টাকার বিনিময়ে। এই কারনেই সেদিন সব কাজের লোকদের ছুটি দিয়ে দেওয়া হয়েছিল। সংকেতকে ভয় দেখিয়ে নানান প্রলোভন দেখিয়ে বাধ্য করেন আপনাদের সাথে শুতে। এই সব কিছু আমরা ভিডিওতে দেখেছি।
 
রাকা চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়ে বলল মম ইউ টু? সংকেত? ইউ আর অ্যা স্লাট। অ্যা ফিলথি চিপ স্লাট। মেইল স্লেভ? হোয়াট দা হেল!মিস্টার বেরা বললেন এত ব্যস্ত হবেন না মিস সান্যাল। আসল কথাটা এখনও বলা বাকি। আপনাদের মধ্যে কি কথা হয় সব আমি শুনেছি। আপনাদের সব কাজ আমি দেখেছি ওই আপলোড করা ভিডিওতে। আপনারা সেদিন একটা জিনিস বুঝেও বোঝেননি। অত দামি মদ খাওয়া সত্ত্বেও কি করে অল্প দুই তিন পেগের মধ্যে আপনাদের এত চড়ে গেছিল সেদিন! মিসেস সান্যাল বললেন হ্যাঁ। এটা আমার বারবার মনে হচ্ছিল। আসলে…” মিস্টার বেরা বললেন আসলে আপনি ভাবলেন সারাদিন আপনাদের শরীরের ওপর দিয়ে অনেক ধকল গেছে। সেই জন্যই এত কমে চড়ে গেল! কি? ঠিক বলছি? কিন্তু ভিডিও দেখার পর আমি বুঝতে পেরেছি যে ফার্স্ট পেগের পর থেকে আপনাদের জন্য পেগ বানাচ্ছিল সংকেত। আপনারা দেখেননি, কিন্তু ক্যামেরায় সংকেতের হাতের কারসাজি ধরা পড়েছে। ও আপনাদের ড্রিঙ্কে অন্য একটা ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে দিচ্ছিল স্লো ডোসে। আপনারা ঝিমিয়ে পড়লেন অল্পেতেই। অবশ্য তাতেও আপনারা ওর শরীরটাকে নিজেদের মতন করে ভোগ করার সুযোগ ছাড়েননি। ও আপনাদের শরীর ভোগ করতে চাইত কি চাইত না সেটা জানি না।
 
তবে একটা কথা ১০০% নিশ্চিত হয়ে বলতে পারি। ও সারা বাড়িতে ক্যামেরা আর মাইক্রোফোন বসিয়েছিল আপনাদের ওপর নজর রাখার জন্য। ওর প্রাইমারি টারগেট হল মিস্টার মুখার্জির গবেষণার কাগজ। আপনারা ওনার গবেষণার ব্যাপারে কোনও কথা বললে সেটা শুনে ফেলাই ওর লক্ষ্য। কিন্তু এইবার আপনারা যখন নিজে থেকেই ওকে আপনাদের মেইল স্লেভ হওয়ার প্রস্তাব দিলেন তখন ও সাথে সাথে অন্য একটা প্ল্যান বানাল। আপনাদের ড্রিঙ্কে ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে আপনাদের ধীরে ধীরে অবশ করে দিল। আপনাদের কথা মতন আপনাদের সুখ দিল। কিন্তু তারপর আপনারা ঝিমিয়ে পড়তেই ও চলে গেল মিস্টার মুখার্জির ঘরে। এখন আপনাদের আর নড়াচড়া করার মতন অবস্থা নেই। সুতরাং আপনারা কিছুই করতে পারবেন না। অবশ্য ওর সামনে বেচাল কিছু করলে ও আপনাদের খুন করে ফেলত। ওর গায়ের জোর অসম্ভব। আপনারা দুই জন মিলে কিছু করতে পারতেন না। আর ভুলে যাবেন না যে ও তখন মিস্টার মুখার্জির গবেষণার কাগজ হাতানোর জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছে। ও মিস্টার মুখার্জির ঘরে গিয়ে নিজের হাতের কারসাজি দেখিয়ে সব সেফ খুলে সেগুলোর ভেতর থেকে সব ফাইল হাতিয়ে নিল। তারপর আপনাদের ঘুম থেকে উঠিয়ে বিদায় নিল। মিসেস সান্যাল ওকে ২০০০০ টাকা দিয়েছিলেন সেদিন। সেসব আমি দেখেছি ভিডিওতে। আপনারা নিজেদের অজান্তে সেদিন নিজেদের দেশটাকে শত্রুর হাতে বেচে দিলেন। শেইম অন ইউ। শেইম অন ইউ।
 
 
 
মিস্টার বেরা একটু থেকে আবার বলে চললেন শুধু আপনাদের সাথে সংকেতের সহবাসের ভিডিও আপলোড করা হয়নি। আপনাদের দুজনের লেসবিয়ান সেক্সের দৃশ্যও আছে দুটো ভিডিওতে। আপনরা দুজন যে অনেক দিন ধরেই একে ওপরের সাথে ...যাই হোক। মোটের ওপর এখন সংকেতের হাতে বাকি শুধু একটা কাজ। ওয়েপন ডিলারদের ফাইলগুলো হাতানো আমার বাড়ি থেকে। এদিকে সঞ্চিতা তখন ওর প্রেমে পাগল। ওকে দেখলেই ওর ওপর গিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ছে। একটা কথা মানতেই হবে, ছেলেটার সেক্সুয়াল স্ট্যামিনা অসাধারন। শিখা খুন হয়ে গেছে। এই খবরও নিশ্চই ওর হাতে পৌঁছে গেছে যে আমাকে ইতি মধ্যে এই কেসের ব্যাপারে নিয়োগ করা হয়েছে। এইবার আর ওর হাতে একদম সময় নেই। অয়েপন ডিলারদের ফাইল না পেলেও ওকে চলে যেতে হবে। তখন বাইরে বেরিয়ে ওকে সেই সব ডিলারদের ব্যাপারে খোঁজ খবর করে দেখতে হবে। কিন্তু তবুও একটা শেষ চেষ্টা করে দেখবে ও। সংকেত নিজে চলে গেল কলেজে। কিন্তু ওর এক ভাই চলে এলো আমাদের বাড়িতে। অবশ্যই ছদ্মবেশে। আমার কাজের ঘরে ঢুকে ফাইল ঘাঁটা শুরু করল। আর তখনই ঘটনাচক্রে আমি বাড়ি চলে আসি। তারপর কি হয়েছে সেসব তো আপনাদের সবই জানা…” ঘরের মধ্যে যারা বসে আছে তাদের সবার চোখে জল। সবাই প্রায় এখন নগ্ন হয়ে গেছে। শুধু পাঁচজন ছাড়া। বাবুয়া, হোটেলের ম্যানেজার, মিস্টার সত্যজিৎ ধর , প্রফেসর অরুপ চক্রবর্তী এবং রমা ব্যানার্জি (মালিনীর সহকর্মী) ।
 
৪৯
 
মিস্টার বেরা মিসেস রমা ব্যানার্জিকে প্রথম প্রশ্ন করলেন আপনি এইবার যেতে পারেন। আপনাকে এখানে ডেকেছিলাম একটা বিশেষ জিনিস জানতে কিন্তু সেটা ইতিমধ্যে আমাদের জানা হয়ে গেছে। যাওয়ার আগে শুধু একটা কথা বলুন, আপনার আর মালিনীর মধ্যে কি কোনও দিন ওই ফার্স্ট ফ্লোরের ক্যামেরা নিয়ে কথা হয়েছিল একান্তে?” মিসেস ব্যানার্জি বললেন ইয়েস। হয়েছিল। আর একবার নয় অনেকবার। আপনার কথা শুনে আমার মনে হয়েছে যে আমাদের সেই কথা থেকেই…” মিসেস ব্যানার্জি রুম ছেড়ে বেরিয়ে গেলেন। মিস্টার বেরা এইবার বাবুয়ার দিকে তাকাল। তোমাকে আমি ছাড়ছি না। তোমার হাজতবাস পাক্কা। বাবুয়া ভয় পেয়েছে সেটা দেখলেই বোঝা যায়। মিস্টার বেরা প্রচণ্ড ধমকের স্বরে বললেন সংকেত কোলকাতায় আসার আগে ওর বা ওর গ্রুপের সাথে তোমার যোগাযোগ হয়েছিল? “ বাবুয়া একবার চারপাশটা দেখে নিয়ে বলল স্যার, সংকেতকে আমি দেখিনি কোনও দিন। কিন্তু ও আসার আগে আমার বাড়িতে একজন লোক এসেছিল। আমাকে বলেছিল যে একজন এসে আমার হাতে একটা ব্যাগ দেবে। সংকেত আমার সাথে দেখা করে নির্দিষ্ট স্থানে। একটা থানার সামনে। ওর ব্যাগটা আমাকে পৌঁছে দিতে হবে ওর ঘরে।
 
মিস্টার বেরা বললেন সংকেতের ব্যাগে প্রয়োজনীয় সব জিনিস ছিল। আর্মস, গ্যাজেটস ইত্যাদি। সেগুলো হোটেলের সিকিউরিটি স্ক্যানারে ধরা পড়ে যাবে। সেগুলো নিয়ে কিছুতেই হোটেলে প্রবেশ করতে পারবে না। তাই বাবুয়াকে ব্যবহার করল ও। বাবুয়া হোটেলে ঢোকে পিছন দিক দিয়ে। ওর জন্য কোনও সিকিউরিটি চেক নেই। অনেক দিন ধরে ও কাজ করে হোটেলে। টাকার বিনিময়ে বাবুয়া পিছন দিক দিয়ে সংকেতের ব্যাগ হোটেলের ভেতর ঢুকিয়ে দিল। এইবার আসি পরের কথায়। এই ব্যাগ নিজের ঘরে রাখা সেফ নয়। সুতরাং পরের দিন সংকেত সেই ব্যাগ মর্নিং ওয়াকে গিয়ে একটা লেকের পাশে , একটা গাছের নিচে গর্ত করে লুকিয়ে রেখে দিয়ে আসে। ম্যানেজারের দিকে তাকিয়ে মিস্টার বেরা বললেন আমরা সংকেতের সিম লোকেশন ট্র্যাক করে জানতে পেরেছি ও প্রত্যেক দিন ভীষণ ভোরে মর্নিং ওয়াক করতে সেই লেকের ধারে যেত। আমাদের লোক আজ কুকুর আর সংকেতের ছবি নিয়ে সেই লেকের ধারে যায়। অনেকেই সংকেতকে সেখানে দেখেছে। আর হ্যাঁ, কুকুরের দরকার হয়নি। সংকেত কোথায় বসে রোজ মেডিটেশন করত সেটা অনেকেই আমাদের বলে দিয়েছে। ওই গাছের নিচ থেকে গর্ত খুঁড়ে আমরা ওর ব্যাগটা আবিস্কার করেছি। বাবুয়া, যেদিন সংকেত কোলকাতায় আসে সেদিনই তোমার সাথে ও দেখা করে একটা থানার সামনে। সেটা তুমি না বললেও আমি জানতাম। তোমাদের সিম লোকেশন থেকে। ছিঃ, সামান্য কয়েকটা টাকার জন্য নিজের দেশটাকে বেচে দিতে তোমার প্রানে বাধল না বাবুয়া? আমি হোটেলের সিকিউরিটির সাথেও কথা বলেছি। ও আমাকে জানিয়েছে যে ও গাঁজা টেনে ভোর রাতের আগে ঘুমিয়ে পড়ে। মানে বন্ধ গেটের সামনে বসে থাকে ঠিকই কিন্তু ঘুমিয়ে থাকে। প্রত্যেক দিন সংকেতকে ও মর্নিং ওয়াকের শেষে হোটেলে ঢোকার সময় লক্ষ্য করেছে। কিন্তু কোনও দিনও ও সংকেতকে হোটেল থেকে বেরোতে দেখেনি। প্রশ্ন হল কেন? “
 
এই উত্তর কারোর জানা নেই। মিস্টার বেরা বলে চললেন আমার অনুমান সংকেত হোটেলের পিছন দিক দিয়ে দেওয়াল বা পাইপ বেয়ে নিচে নামত আর তারপর দেওয়াল টপকে বাইরে বেরিয়ে যেত। সেই কম সময়ের জন্য ও হয়ত সিকিউরিটি ক্যামেরাটাকে ট্যাম্পার করে দিত। আমরা হোটেলের পিছন দিকের কয়েকটা অংশের ফুটেজ দেখেছি যেগুলো বন্ধ করে রাখা হয়নি। প্রত্যক দিন সকাল বেলায় সেগুলো কেমন যেন স্টিল হয়ে গেছে। তবে এই ব্যাপারে আমি সিওর নই। তবে এই কারনেই ওকে হোটেলের বাইরে বেরোতে দেখা যেত না, কিন্তু ফেরার সময় ওকে দেখা যেত। একজন অফিসার বাবুয়াকে নিয়ে বাইরে বেরিয়ে গেল। ওকে হাজতে পোরার সময় এসেছে।
 
মিস্টার বেরা এইবার পরের প্রশ্নটা করলেন আচমকা মিস্টার ধর। আপনি এতবড় উকিল। আপনাকে আমি উত্তর দিতে বাধ্য করতে পারব না। তবুও জিজ্ঞেস করছি। সংকেত আপনার বাড়িতে কেন গেছিল? আপনার মিসেসের কথা থেকে আমার মনে হয়েছে যে আপনি সংকেতকে ভীষণ ভয় পেতেন। প্রশ্ন হল কেন? আনসার দ্যাট। আর নইলে বলে দিন যে আপনি এখন আমাদের সামনে কোনও উত্তর দেবেন না। মিস্টার ধর কিছু বলার আগেই মিস্টার বেরা বললেন আপনার কপাল ভীষণ ভালো মিস্টার ধর। তীর আপনার কান ছুঁয়ে বেরিয়ে গেছে। আপনি সংকেতের ব্যাপারে অনেক কিছু জানতেন তবুও ও আপনাকে খুন করেনি। ও কোলকাতায় আসার পর যার যার সাথে দেখা করেছিল কাজের ব্যাপারে সবাই আজ মৃত। ধর্মতলা, বালিগঞ্জ ফাঁড়ি, সব জায়গায় আমাদের লোক গেছে। যার যার সাথে ও দেখা করেছিল কাজের ব্যাপারে, সবাই অদ্ভুত ভাবে হার্ট অ্যাটাক করে মারা গেছে ইতিমধ্যে। তবে ব্যাপারগুলো যে একই সুত্রে গাঁথা সেটা লোকাল থানাগুলো বুঝে উঠতে পারেনি। কিন্তু আমি জানি আপনাদের ও কি ভাবে টাকার প্রলোভন দেখিয়ে ইউজ করেছে। এইবার বলুন, সংকেতকে আপনি এত ভয় পান কেন? গতকাল আপনি সারাটা সময় থানার বাইরে দাঁড়িয়ে ছিলেন। সেটাও আমরা সবাই দেখেছি। সংকেতকে আমরা ছেড়ে দিতেই আপনি কেটে পড়লেন।
 
মিস্টার ধর বললেন আমাকে ওরা মেরে ফেলবে। মিস্টার বেরা শান্ত ভাবে বললেন কারা আপনাকে মেরে ফেলবে, সেটাই জানতে চাইছি।মিস্টার ধর বললেন আমি সব কিছু খুলে বলছি। একটা নকশাল গ্রুপের সাথে আমি বহুদিন আগে যুক্ত ছিলাম। পরে ছাড়াছাড়ি হয়ে যায়। হঠাৎ একদিন একজন কমরেড আমাকে ফোন করে আমার সাথে দেখা করতে চায়। পুলিশের ওয়ান্টেড লিস্টে ওর নাম আছে। আমি ভয় পেয়ে যাই। তবুও দেখা করি। আমাকে ওই লোকটা বলে যে সংকেত বলে একজন ছেলে কোলকাতায় আসবে। যদি প্রয়োজন হয়, ওই ছেলেটাকে সব রকম আইনি সাহায্য আমাকে দিতে হবে। ১০ লাখ টাকা অফার করে। আমি ফেলতে পারিনি। একটা কানাঘুষো খবর আমিও শুনেছিলাম। ছেলেটা এখানে বড় কিছু করতে আসছে। কিন্তু ঠিক কি করতে আসছে আমি জানতাম না। আমার বউ আছে, মেয়ে আছে। আমি ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম স্যার। আমাকে শাসিয়ে দিয়ে গিয়েছিল যে আমি মুখ খুললেই ওরা আমাকে মেরে ফেলবে। অনেক দিন কিছু না হওয়ায় আমি পুরো ব্যাপারটা ভুলে গিয়েছিলাম। কিন্তু সেদিন সকালে সংকেত যখন আমার বাড়ি আসে, তখন বুঝতে পারি যে গোটা ব্যাপারটা একটা সিরিয়াস দিকে এগোচ্ছে। উনি আর কিছু বলতে পারলেন না। কান্নায় ভেঙ্গে পড়লেন। বারবার শুধু একটাই কথা বলে চললেন আমায় ওরা মেরে ফেলবে।মিস্টার বেরা একজন অফিসারকে ইশারা করতেই উনি এগিয়ে এসে মিস্টার ধরকে নিয়ে ঘরের বাইরে বেরিয়ে গেলেন। ওনাকেও আজ হয়ত হাজতে রাত্রিবাস করতে হবে। আপাতত ওনার বয়ান নেওয়া হচ্ছে।
 
মিস্টার বেরা একটা সিগারেট ধরিয়ে বললেন লাস্ট বাট নট দা লিস্ট। প্রফেসর চক্রবর্তী। আপনি কতদিন ধরে ওই নকশাল গ্রুপের সাথে লিঙ্কড সেটা যদি একটু বলে দেন।প্রফেসর চক্রবর্তী হঠাৎ উত্তেজিত হয়ে কিছু একটা বলতে যাচ্ছিলেন কিন্তু তার আগেই মিস্টার বেরা বললেন মিস্টার ধরের কল রেকর্ডও আমার কাছে আছে। আর যেই লোক ওনাকে কন্ট্যাক্ট করেছিল সেই লোক যে আপনার সাথেও যোগাযোগ করেছিল সেটা আমি জানি। আমি আপনার সামনে শুধু একটা প্রশ্ন করব। আপনার সেই কালো রঙের স্যান্ট্রোর ব্যাপারে!মিস্টার চক্রবর্তী এক নিমেষে কেমন যেন ফ্যাকাসে হয়ে গেছেন। না না ভয় পেলে হবে না। সত্যিটা চাই। গোটা রাজ্যে যত কালো স্যান্ট্রো আছে সবার মালিকের সাথে আমরা যোগাযোগ করেছি। কারোর সাথে এই গোটা ব্যাপারটার কোনও লিঙ্ক পাওয়া যায়নি। শুধু আপনি সংকেতের সাথে লিঙ্কড। কি? ঠিক কিনা?
 
আপনি সংকেতকে ক্লাসে বকাবকি করলেন একদিন, সেই কথা আমি ওর ক্লাসের বাকি ছেলেদের কাছ থেকে জেনেছি। ও আপনার পেছন পেছন যায় আপনার সাথে একান্তে কথা বলার জন্য। আপনি গাড়ির ডুপ্লিকেট চাবিটা ওর হাতে দিয়ে দেন কোনও এক অছিলায়। ও সেদিন আপনার গাড়ি নিয়ে শান্তনুর গাড়িটাকে ফলো করতে করতে গিয়েছিল। ও মানে সংকেত নিজে নয় অবশ্যই। কারণ ও নিজে তো তখন দোলন আর রাকার সাথে নৌকা বিহারে ব্যস্ত। অ্যালিবাই! কিন্তু ওর কোনও এক ভাই গিয়েছিল। দীপক যদি নিজের কাজে অসফল হয় তাহলে সেই কাজটা তো ওকেই করতে হবে, আর করতে হবে সেই রাতেই। হাহাহাহাহা। চেক পোস্টের ক্যামেরায় আপনার গাড়িটা ধরা পড়েছে, আর সেই সাথে আপনার গাড়ির ডান দিকে যে স্ক্র্যাচটা আছে সেটাও ধরা পড়েছে। আপনি ফেঁসে গেছেন।
 
আমরা আপনার ব্যাপারে অনেক খোঁজ খবর করেছি। আপনি নকশাল দের সাথে লিঙ্কড। আপনি একটা আতঙ্কবাদী সংস্থার সাথেও লিঙ্কড। সেই সংস্থার দুই জন এখন আমাদের হাজতে । আজ সকালেই ধরেছি। আর তার থেকেও বড় কথা হল, সংকেত আপনারই গাড়ি চড়ে আজ পালিয়ে গেছে। আপনি সব কিছু জেনেও মুখ বন্ধ করে ছিলেন। অ্যাম আই রাইট অর অ্যাম আই রং? না না। এখন কিছুই বলতে হবে না আপনাকে। এখনও আপনি মুখ বন্ধ করেই থাকুন। যা বলার বলবেন আদালতে। আপনার গাড়িটা আমরা একটা মেট্রো ষ্টেশনের সামনে থেকে উদ্ধার করেছি।
 
৫০
 
মিস্টার বেরা কেমন যেন ঝিমিয়ে পড়েছেন। খুব ক্লান্ত হাতে সেই খামটা খুললেন। বের করলেন সেই সাদা রঙের লম্বা কাগজগুলো। চশমার কাঁচটা একবার মুছে নিয়ে উনি শুরু করলেন এই কাগজে কি লেখা আছে সেটা আপনাদের সবার জানা দরকার। কিন্তু তার আগে সঞ্চিতা একটা কথা তোমাকে আমি বলতে চাই। তোমাদের সবার মোবাইল গতকাল থেকে ট্যাপ করা হচ্ছিল। আজ সকালে তোমার মোবাইল থেকে সংকেতের মোবাইলে যে মেসেজগুলো গেছে সেইগুলো আমি দেখেছি। ---তোমার কথা মতন আজ নাভির নিচে শাড়ি পরেছি। শাড়িটা কেন জানি না বার বার পাশে সরে যাচ্ছে। গোটা ক্লাস দেখছে আমার নগ্ন নাভির সৌন্দর্য। আমার সবথেকে সেন্সিটিভ স্পট ওটাই। ছেলেরা ফিস ফিস করে কিছু বললেই কেন জানি না বারবার মনে হচ্ছে যে ওরা আমার এই নাভির ব্যাপারেই কথা বলছে। ভেতরে ভেতরে ভীষণ ভিজে গেছি। আজ কিন্তু অনেকক্ষণ করতে হবে। প্লীজ আজ সব এনার্জি বাঁচিয়ে রেখো আমার জন্য। সঞ্চিতা তোমার এই মেসেজগুলো আমি পড়েছি। সংকেতের রিপ্লাইও আমি পড়েছি। ---ম্যাম আপনি সুপার সেক্সি। সবাই আপনার পেটির ব্যাপারেই কথা বলছে। যা চাই সব পাবেন। তবে জানি না আজ কিছু দিতে পারব কি না! কেমন জানি অসহায় লাগছে। আপনাকে কাছে পেতে খুব ইচ্ছে করছেইত্যাদি।
[+] 1 user Likes pcirma's post
Like Reply
Do not mention / post any under age /rape content. If found Please use REPORT button.


Messages In This Thread
RE: মুখোশ - The Mask by Daily Passenger - by pcirma - 05-03-2019, 04:03 PM



Users browsing this thread: 7 Guest(s)