Thread Rating:
  • 34 Vote(s) - 3.35 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
Thriller মুখোশ - The Mask by Daily Passenger
#60
এইবার আসি পরের কথায়। অবশ্য আমার পরের প্রশ্নটা করার আগে আরেকটা তথ্য জানিয়ে রাখি। আপনাকে দেওয়া ওই দুটো পেন মারফত ও ইতি মধ্যে জানতে পেরে গেছে শান্তনু মুখার্জি কয়েক দিনের জন্য আমেরিকা থেকে দেশে ফিরছে। আর কয়েকজন ঘনিষ্ঠ বন্ধুদের সাথে মন্দারমনি যাওয়ার প্ল্যান করছে। মিস মুখার্জি আপনি নিশ্চই কারোর না কারোর সাথে এই ব্যাপার নিয়ে আলোচনা করেছেন আপনার দাদার দেশে ফেরার আগে। আর তখন নিশ্চই আপনার ওই পেনটা আপনার আশে পাশেই কোথাও রাখা ছিল। সুতরাংও দীপককে মিস্টার মুখার্জির ভিডিও দেখিয়ে ওকে মিস্টার মুখার্জির বিরুদ্ধে উসকে দেয়। তারপর দীপককে শান্তনুর দেশে ফেরার ব্যাপারে জানায়। দীপককে ও টাকার বিনিময়ে শান্তনু কে খুন করার প্রস্তাব দেয়। প্রথমে দীপক খুন করতে রাজি না হলেও, প্রানের ভয় দেখিয়ে সংকেত ওকে রাজি করায়। দীপক শুধু বুঝেছিল যে সংকেত মিস্টার মুখার্জির কিছু ক্ষতি করতে চাইছে ওর ছেলেকে হত্যা করে।। ও যেটা বুঝল না, সেটা হল এই যে, গোটা ব্যাপারটার সাথে সংকেত দীপককে দীপকের অজান্তেই জড়িয়ে ফেলতে চাইছে। আর দীপকের নাম একবার জড়িয়ে গেলে কারোর মাথায় রাজনৈতিক হত্যা ছাড়া আর কোনও চিন্তাই আসবে না। আর তার সাথে সংকেতের আরেকটা টার্গেট ফুলফিল হতে চলেছে এই হত্যার সাথে সাথে। সংকেতের পরামর্শ মতন দীপক শান্তনুকে পৃথিবী থেকে সরিয়ে দেয়। গোটা জিনিসটা এমন ভাবে করা হয় যে দেখে মনে হবে দুর্ঘটনা। দীপক মোটা মাথা নিয়ে সংকেতের ফাঁদে পা দেয়। ও বুঝতে পারেনি, যে সংকেত গোড়া থেকে জানত যে একদিনেই পুলিশ বুঝে যাবে যে গোটা ব্যাপারটা খুন, কোনও দুর্ঘটনা নয়। আর সেই খুনের জন্য ওরা দায়ী করবে দীপককেই। দীপককে হাসপাতালে নিয়ে আসার যাকগে তার আগে আমার আরেকটা প্রশ্ন আছে।
 
মিস্টার বেরা বললেন মিস সান্যাল, আর মিস মুখার্জি, আপনারা একটা জিনিস খোলাখুলি বলবেন এইবার? যে রাতে শান্তনু মুখার্জি মারা যান সেই রাতে একটা হোটেলে আপনারা সবাই পার্টি করতে গিয়েছিলেন। সেখানে থেকে একটা দল বেরিয়ে যায় মন্দারমনির উদ্দেশ্যে। সংকেত চলে যায় মাতাল শিখাকে ওর বাড়ি ছেড়ে দিয়ে আসতে। তারপর ও কিছুক্ষণ পরে এসে আপনাদের দুজনকে মিট করে খেয়া ঘাটে। আপনারা বেশ কিছুক্ষণ তিনজনে নৌকা বিহার করছিলেন সেই অন্ধকারে। আর এটা ভুললে চলবে না যে তখন অনেক রাতও হয়েছে । দোলন একটু গম্ভীর হয়ে বলল হ্যাঁ আমরা তিনজনে গিয়েছিলাম নৌকা বিহারে। নৌকার ওপরে বসে অনেক রাত অব্দি আমরা তিনজনে মদ খেয়েছি, গল্প করেছি। অনেক রাত অব্দি পার্টি করার প্ল্যান ছিল। কিন্তু অসময়ে সবাই বেরিয়ে পড়ে মন্দারমনির উদ্দেশ্যে। তাই আমরা বাকি টাইমটুকু ওই ভাবে এনজয় করব বলে ঠিক করি। সংকেতকে দলে টেনে নি। আর তাছাড়া এত রাতে সাথে একটা ছেলে থাকলে অনেক সেফ লাগে। ব্যস এই অব্দি। কিন্তু এটা থেকে আপনি কি প্রমান করতে চাইছেন?”
 
মিস্টার বেরা হেসেবললেন প্রমান করতে চাইছি না। শুধু একটা তথ্য বলার আগে গ্রাউন্ড প্রিপেয়ার করে নিলাম। সেই রাতের পর থেকে, আপনারা সংকেতকে ঘন ঘন এস এম এস করতে শুরু করেন। কল করতে শুরু করেন। অনেক সময় আপনারা গভীর রাতেও ওকে এস এম এস পাঠিয়েছেন। কি ব্যাপার জানতে পারি কি? “ দোলন আর রাকা একবার দুজন দুজনের মুখের দিকে তাকিয়ে দেখে নিল। মিস্টার বেরা বললেন আমি কিন্তু কিছু কিছু জানি, এবং খুব ভালো ভাবে জানি। তাই আগে আপনাদের জিজ্ঞেস করছি যে আপনারা এই ব্যাপারে নিজে থেকে কিছু বলতে চান?” রাকা একটু আমতা আমতা করে বলল আসলে, ওই দিন আমরা ইচ্ছে করে সংকেতকে আমাদের সাথে নিয়ে গেছিলাম। ইয়ে মানে, দোলনের সংকেতকে খুবই পছন্দ হয়েছিল একবার দেখেই। সেদিন ও ঠিক করেছিল সংকেতকে প্রোপোস করবে। কিন্তু একা ওর সাথে যেতে দোলন ভয় পাচ্ছিল বা লজ্জা পাচ্ছিল, তাই আমিও ওদের সঙ্গ দিতে গেছিলাম। নৌকায় বেড়াতে বেড়াতে সংকেতকে দোলন নিজের মনের কথা খুলে বলে। সংকেত অবশ্য সেই দিন দোলনের প্রস্তাবের কোনও উত্তর দেয়নি।মিস্টার বেরা বললেন আমি যদি বলি সংকেত কোনও দিনও দোলনকে ওর প্রস্তাবের উত্তর দেয়নি?” দোলন, রাকা দুজনেই এই কথার প্রতিবাদ করে উঠল।
 
দোলন বলল না ও উত্তর জানিয়েছিল পরের দিন সকালে হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পরেই। তারপর ও আবার হাসপাতালে ফিরে আসে। মিস্টার রাহা মিস্টার বেরার কানের কাছে মুখ নিয়ে গিয়ে ফিস ফিস করে কিছু বলতেই মিস্টার বেরা হেসেবললেন আমার ভুল। আয়াম সরি। অবশ্যই ও আপনার প্রস্তাবে হ্যাঁ বলবে। তার কারণও আছে। এর পরের প্রশ্ন মিস সান্যালের জন্য। কিন্তু তার আগে, ইতি মধ্যে ঘটনা যে খাতে বয়ে গেছে সেটা সংক্ষেপে খুলে বলে দি। দীপককে হাসপাতালে নিয়ে আসার কিছুক্ষনের মধ্যেই পুলিশের সন্দেহ গিয়ে পড়ল দীপকের ওপর। সংকেতের প্ল্যান সফল হতে শুরু করে দিয়েছে। গোটা ব্যাপারটা এখন একটা রাজনৈতিক খুনে পরিণত হয়েছে।
 
আর দ্বিতীয় টার্গেট? সেটাও সফল হয়ে গেল। মিস্টার মুখার্জি পুত্র শোকে ভেঙ্গে পড়েন। নিজের সিকিউরিটির বেড়া জাল ভেঙ্গে হাজির হলেন সেই হাসপাতালের ভেতর, পাবলিক প্লেসে। সংকেত এটাই চাইছিল। এইবার কৌশলে একটা বিশেষ যন্ত্র দিয়ে সংকেত ওনাকে সবার চোখের সামনে খুন করল। কেউ বুঝতে পারল না। এখানে আরও কয়েকটা জিনিস বলা দরকার সত্য উদ্ঘাটনের উদ্দেশ্যে। আগের দিন রাতে সংকেত শিখাকে ছাড়তে ওর বাড়ি যায়। নিচের লোকজন আমাদের জানিয়েছিল যে ওপর তলার খাটের শব্দ শুনে ওনাদের মনে হয়েছিল যে সংকেত মদ্যপ শিখার সাথে সহবাস করছে। কিন্তু সংকেত শিখার মদ্যপ অবস্থার অজুহাতে বিভিন্ন গল্প বলে গোটা ব্যাপারটা অস্বীকার করে। শিখা সেদিন বেহুঁশ ছিল। অসহায় ছিল। কিন্তু সংকেত নিজের সেন্সে ছিল। ও বেহুঁশ শিখাকে নগ্ন করে রেপ করে ওই ঘুমন্ত অবস্থায়। সেই রেপের আর তার পরের অনেক ছবি আর একটা ভিডিও সেই একই ওয়েব সাইটে আপলোড করে দিয়েছে ইতিমধ্যে।
 
আমি সেটা দেখেছি। তারিয়ে তারিয়ে শিখার বেহুঁশ শরীরটাকে ভোগ করে ওই রেপের ভিডিও বানায় ও। তারপর আবার ওকে পোশাক পরিয়ে দিয়ে ও বিদায় নেয়। সুতরাং নিচের মহিলারা সত্যিই বলছিলেন আর ঠিকই বলছিলেন। এই ভিডিওর লিঙ্ক হাতে আসার আগে অবশ্য অন্য আরেকটা জিনিস আমি জানতে পারি। সেটাও বলে রাখা দরকার। হাসপাতালের যে ফ্লোরে মিস্টার মুখার্জি মারা যান,সেই ফ্লোরেই দীপককে রাখা হয়েছিল। সংকেত ওখানে যাওয়ার পরেই একটা জিনিস আমাদের চোখে পড়ে। আমাদের বলতে আমি সি সি টিভির ফুটেজের কথা বলতে চাইছি এখানে। প্রথমে কেউ সেটা খেয়াল না করলেও, ব্যাপারটা আমার চোখ এড়ায়নি।
 
একটু দম নিয়ে শান্ত গলায় মিস্টার বেরা আবার শুরু করলেন ফুটেজে আমরা দেখেছি যে সংকেতকে দেখেই শিখা উগ্রমূর্তি ধারণ করে সংকেতের দিকে ধেয়ে যায় ওকে কিছু বলতে। সংকেত শান্ত ভাবে ওকে কিছু বলে। ও ওই ফ্লোরের অন্য দিকে চলে যায় সবার চোখের আড়ালে। সবার বলতে মানুষের কথা বলছি। ফুটেজে সব কিছুই ধরা পড়েছে। ও যখন সংকেতের কাছে ফিরে আসে তখন ভয়ে কেঁচো হয়ে গেছে। সংকেত ওকে কিছু বলে, আর ও ভয়ে চুপসে সংকেতের সামনে থেকে সরে পড়ে। সংকেতের যা কাজ করার প্যাটার্ন আমরা ইতিমধ্যে দেখতে পেয়েছি, মানে মিস্টার মেহেরার ঘরের ভেতর সেট করা ক্যামেরা ইত্যাদি থেকে, আমার মনে হয়েছিল কোনও ভিডিও দেখিয়ে সংকেত ওকে ভয় দেখিয়েছে। মালিনীর ভিডিওর ব্যাপারে অবশ্য তখনও কিছু জানতাম না। তবুও আমাদের হাতে তখন এসে গিয়েছিল ওই দুই মহিলার বয়ান। তবে কি সংকেত শিখার সাথে যৌন সহবাস করে সেটাকে ক্যামেরাবন্দী করেছে। কিন্তু তাতে অন্য একটা সমস্যা আছে। নিজের ইচ্ছেতে সংকেতের সাথে যৌন সহবাস করলে শিখা সংকেতের ওপর এত চটে আছেই বা কেন?
 
আমাদের হাতে শিখার মোবাইল নেই। কিন্তু শিখার ই-মেইল হ্যাক করে আমরা সেইদিনকার ভিডিওটা দেখতে পাই। এখন সব কিছু জানার পর যে সিদ্ধান্তে এসেছি সেটা এক কথায় বলে দিতে চাই। সংকেত বেহুঁশ শিখাকে রেপ করে বেরিয়ে যায় আপনাদের সাথে দেখা করতে। শিখার সাথে সহবাসের সময় সব কিছু ও রেকর্ড করে ভিডিও ক্যামেরায়। কিন্তু সেটা দেখিয়ে ও শিখাকে ব্ল্যাক মেইল করেনি। শিখা জ্ঞান হওয়ার পর বুঝতে পারে যে সংকেত ওর শরীরের ভেতর নিজের ঔরস ঢেলে দিয়ে গেছে। ও সংকেতের কাছে যায় ওকে রেপ কেসের ব্যাপারে ভয় দেখাতে। কিন্তু সংকেত, ওকে বলে নিজের মেইল চেক করতে মোবাইলে। সেই ভিডিওটা এইবার আপনাদের দেখাচ্ছি। এটা শিখার মেইল থেকে পেয়েছি। সেন্ডার সংকেত_অশনি।
 
৪৮
 
উনি নিজের ল্যাপটপটা ঘুরিয়ে দিলেন বাকিদের দিকে। ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে দীপক সংকেতের পায়ের সামনে বসে কাকুতি মিনতি করছে, নিজের প্রাণ ভিক্ষা চাইছে। দীপকের চোখে জল। ও বারবার বলছে আমি ক্ষমা চাইছি। প্লীজ আমাকে ছেড়ে দিন। আমি কাউকে কিছু বলব না।সংকেতের হাতে একটা উদ্যত আধুনিক পিস্তল। সেটা উঁচিয়ে ধরা আছে দীপকের দিকে। সংকেত বলল আমার কথা মতন কাজ না করলে তোকে আর তোর ওই রেন্ডি গার্লফ্রেন্ডকে আমার লোক মেরে ফেলবে। অবশ্য মারার আগে তোর ওই গার্ল ফ্রেন্ডের সাথে কি কি করা হবে সেটা নিশ্চই ভালো মতন বুঝতে পারছিস? আর তুইও বাদ যাবি না। তোকে ভালো মতন টর্চার করে তবে মেরে রাস্তায় ফেলে রেখে দিয়ে যাব। মুখ বন্ধ এইবার। আমার কথা মন দিয়ে শোন। তোর হাতে অন্য কোনও রাস্তা নেই। ওই খোলা জানলার বাইরে একজন বন্দুক উঁচিয়ে তোর দিকে তাক করে বসে আছে। সংকেত শিখাকে ওর যৌনতার ভিডিও দেখিয়ে ব্ল্যাক মেইল করেনি। কিন্তু এই ভিডিও দেখার পর শিখা ভয়ে সিটিয়ে যায়, কারণ ও বুঝতে পারে যে ওর নিজেও বিপদে পড়েছে। আবার থামলেন মিস্টার বেরা।
 
মিস্টার বেরা আবার শুরু করলেন শিখা ভিডিও দেখে ভয় পায়। সংকেতের আসল রূপ জানতে পারে ও। বেশী কিছু না জানলেও এইটুকু ও বুঝতে পারে যে সংকেত চাইলেই ওদের মেরে ফেলতে পারে আর তাই দীপক ওর পায়ে পড়ে এইভাবে কাকুতি মিনতি করে চলেছে। ও সরে পড়ে। সংকেত মিস্টার মুখার্জিকে খুন করে বেরিয়ে যায় হাসপাতাল থেকে। তারপর আবার ফিরে এসে দীপকের সামনে নিজের জবানবন্দি দেয়। দীপকের প্রয়োজন ওর ফুরিয়ে গেছে। ওকে দিয়ে শান্তনু মুখার্জিকে খুন করিয়ে ও মিস্টার মুখার্জিকে বাইরে বের করে নিয়ে এসেছে, আর সেই সাথে ওনাকে খুন করার কাজটাও ওর করা হয়ে গেছে। গোটা ব্যাপারটার সাথে এখন দীপকের নাম জড়িয়ে গেছে দীপকের বোকামিতে, এইবার দীপককে বাঁচতে দেওয়াটা বোকামি হবে। সবার সামনে ও এমন ভাবে কথা বলল যে সবাই ভাবল ও দীপককে মিস্টার মুখার্জির লোকেদের ব্যাপারে সাবধান করছে। কিন্তু সাবধান করছে সংকেতের নিজের থেকে। ও বুঝিয়ে দিল যে সুইসাইড করা ছাড়া দীপকের সামনে আর কোনও রাস্তা নেই। বাইরে বেরোলেই ওর লোকেরা ওকে উঠিয়ে নিয়ে গিয়ে টর্চার করে খুন করবে। সবার নজর তখন দীপকের মুখের দিকে। সংকেত দীপকের বিছানার দিকে এগিয়ে গিয়ে সন্তর্পণে সবার অলক্ষ্যে ওর চাদরের নিচে একটা চোরাই বন্দুক রেখে দিয়ে চলে আসে। ঘরের মধ্যে উপস্থিত যারা ছিল তাদের কেউ সেটা লক্ষ্য করল না। দীপক সুইসাইড করল ওর কথা মতন। বুঝে দেখুন আপনারা, সংকেতের ভয়ে তখন দীপক কতটা কাবু হয়ে গিয়েছিল। ও ওকে সুইসাইড করতে ইশারা করল আর ও সেটা করেও ফেলল।
 
ঘটনা এখানে থামল না। রঞ্জন মুখার্জির বাড়ির ভেতর থেকে ফাইল সরানো এখনও বাকি। সেই ব্যাপারে কি করা যায়? দোলন আগের দিন ওকে প্রেম নিবেদন করেছে। ও হ্যাঁ বলে দিল। আমি অবশ্য অন্য একটা জিনিসের ব্যাপারে প্রমান পেয়েছিলাম। সেই ব্যাপারে এক্ষুনি আসছি। কিন্তু তার আগে...দোলনের পরিবার এখন শোকাচ্ছন্ন। কয়েকদিনের ভেতরেই ওদের বাড়িতে অনেক কাজ আছে, মানে শ্রাদ্ধ, মৎসমুখী ইত্যাদি আর কি। সেই সব জিনিসের কাজে হাত লাগাতে হলে কিছু একটা পারিবারিক ঘনিষ্ঠটা তো চাই নাকি? কারণ সেই সব কাজের ফাঁকেই ওকে সেই ফাইলটা সরাতে হবে। দোলনের বিশেষ বন্ধু না হতে পারলে হয়ত ওর মিস্টার মুখার্জির বাড়িতে অবাধ যাতায়াত বন্ধ হয়ে যাবে। সুতরাং দোলনের প্রোপসালে হ্যাঁ বলার কারণ হল মিস্টার মুখার্জির বাড়িতে ঢোকার ছাড়পত্র হাসিল করা। সেটা ও দোলনের ভুলে আদায় করে নিল। কিন্তু দুঃখের বিষয় হল এই যে সংকেত কিন্তু লোকের ভিড়ের মধ্যে ওই ফাইল সরাতে পারেনি। যাকগে। তার আগে যে প্রশ্নে আসছি সেটা হল মিস সান্যালের জন্য। দোলন সংকেতকে প্রেম নিবেদন করল। সংকেত হ্যাঁ বলে দিল। কিন্তু তার ঠিক পরই আপনার আর সংকেতের মধ্যে ঘনিষ্ঠতা কেমন জানি অদ্ভুত ভাবে বেড়ে গেল! কি ঠিক বলছি না।রাকার মুখ কালো হয়ে গেছে।
 
দোলন প্রতিবাদ করে বলল আপনি কি যাতা বলে চলেছেন মিস্টার? আমাকে আসলে শিখা একটা ফোন করেছিল। এখন অবশ্য বুঝতে পারছি…” মিস্টার বেরা বললেন আমি জানিয়ে দিচ্ছি যে, শিখা হয়ত আপনাকে সংকেতের আসল চেহারা দেখাতে চাইছিল। কিন্তু সেটা ও পারল না ভয়ে। পরে হয়ত ও আপনাদের সামনে ওর আসল চেহারা তুলে ধরত, কিন্তু তার আগেই সংকেত সেখানে গিয়ে ওকে বশ করে ফেলল। অবশ্য এই সময় শিখার বেশ টানাটানি চলছিল। সংকেতকে ব্ল্যাক করার প্ল্যান ও বানায়। ওর থেকে টাকা বের করতে পারলে মন্দ কি। যাই হোক। সেসব কথা পরে হবে। কিন্তু তার আগে আপনার কথা শেষ করুন!দোলন বলে চলল শিখার সাথে কথা বলার পর আমার মনে সংকেতের ওপর সন্দেহ হয়। আমি সংকেতকে সে কথা সরাসরি বলেছিলাম একদিন। ও যদিও খুব একটা ভয় পেয়েছে বলে মনে হয়নি। তাই আমি ভেবে নিয়েছিলাম যে সংকেত নির্দোষ। শিখা বেকার ফুটেজ খাচ্ছে আমার সামনে। রাকা জানত যে প্রেমের শুরুতেই আমাদের মধ্যে ভুল বোঝা বুঝি শুরু হয়েছে। রাকা সেই ব্যাপারেই কথা বলার জন্য সংকেতকে এস এম এস করত। একবার ও সংকেতের সাথে ওই লেকের সাথে দেখা করে ওকে বোঝাতেও গেছিল। আসলে তখন আমার মনের অবস্থা এমন ছিল যে…”
 
মিস্টার বেরা বললেন বেশ। যখন লেকের কথা ওঠালেন, তখন সেই কথাটা আগে সেরে ফেলি। রাকাকে উনি জিজ্ঞেস করলেন সেদিন সংকেতকে দোলনের ব্যাপারে বোঝানোর জন্য আপনি ওর সাথে দেখা করতে গিয়েছিলেন। আর তার আগের রাতেও আপনার সাথে সংকেতের অনেকগুলো এস এম এস আদান প্রদান হয়। কি ঠিক বলছি তো? এইবার একটা কথা বলুন, সেদিন আপনারা কোথায় বসে কথা বলছিলেন?” রাকা একটু ভেবে নিয়ে বলল প্রথমে রাস্তার ধারে হাঁটতে হাঁটতে কথা হচ্ছিল, তারপর একটা বারের ভেতর ঢুকে যাই। বৃষ্টি হচ্ছিল ভীষণ।মিস্টার বেরা বললেন এক্সাক্টলি বৃষ্টি হচ্ছিল। তাই জিজ্ঞেস করছি। আপনারা লেকের ধারের রাস্তায় ঘুরে বেরাচ্ছিলেন না সেদিন। আপনারা ছিলেন লেকের ভেতর। আর প্রায় ঘণ্টা খানেক ছিলেন। আপনারা লেকের ভেতর অনেকক্ষণ কথাবার্তা বলেন। তারপর লেকের একটা দেওয়ালের ধারে আপনি সংকেতের সাথে সহবাসে লিপ্ত হন। খোলা আকাশের নিচে নগ্নভাবে অনেকক্ষণ ধরে চলে সেই মিলনের মুহূর্ত। আমরা সেটা জানি।রাকা নড়ে চড়ে বসেছে। কিন্তু কিছু একটা বলার চেষ্টা করেও বলতে পারল না। ভয়ে ওর মুখ শুঁকিয়ে গেছে। কোনও মতে বলল এরও কি ভিডিও?”
 
মিস্টার বেরা হেসেবললেন না। কিন্তু আপনার এই প্রশ্ন থেকে প্রমান হয়ে গেল যে আমার কথাটা সত্যি। আবারও বলছি, এইসব তথ্য কোর্টে কোনও কাজে আসবে না কারণ এই সব ঘটনার সাথে আসল ঘটনার কোনও যোগসাজশ নেই। কিন্তু তাও, ব্যাপারটা বুঝিয়ে বলছি। আপনাদের দুজনের মোবাইল লেকের ভেতরে গিয়ে ঘণ্টা খানেকের জন্য স্থির হয়ে যায়। তার কিছুক্ষণ আগে অব্দি আপানাদের দুজনের মধ্যে অনেক মেসেজ আদান প্রদান হয়েছে। সুতরাং অনুমান করা কঠিন নয় যে আপনারা আলাপ আলোচনা করেই ওই লেকের ভেতর গিয়ে বসেন ব্যক্তিগত সময় কাটানোর জন্য। লেকের ভেতরে কাপল ছাড়া কেউ ঢোকে না। আর এই রকম প্রাকৃতিক দুর্যোগকে অবহেলা করে যারা বসে থাকতে পারে তাদের মধ্যে কিছু তো আছে। এটা নিছক কোইন্সিডেন্স হতেই পারে না। সেই সন্দেহ হওয়ার পর আমি লেকের ধারে লোক পাঠাই। আপনাদের দুজনের ছবি দেখিয়ে চারপাশের লোকজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করি। একটা ছেলে পাওয়া যায় যার নাকের হাড় ভেঙ্গে গেছে। শিন বোনও ভেঙ্গে গেছে। সংকেত ভেঙেছে। ওরা তিন চারজন ছেলে মিলে আপনাদের অনেকক্ষণ ধরেই ফলো করছিল। সংকেত সেটা বুঝতেপারলেও আপনি সেটা বুঝতে পারেননি। ওরই মুখে বাকি ঘটনাটা শুনতে পাই। আপনাদের সহবাস হওয়ার পর আপনি সেই নির্জন লেকের জলে নেমে নগ্ন ভাবে স্নান করেন। ভেজা কাপড়ে আপনারা বাইরে বেরিয়ে আসেন। ওরা আমাকে এটাও বলেছে যে সেদিন আপনার পরনে কোনও ব্রা ছিল না। যাই হোক...ছেলেগুলো আপনার ব্যাপারে কটু মন্তব্য করে। সংকেত ভেতরে ঢুকে চারটে ছেলেকে কয়েক মুহূর্তে কাবু করে বাইরে বেরিয়ে আসে। চারটে ছেলে বুঝতে পারেনি কার সাথে ওরা পাঙ্গা নিয়েছে। তারপর অবশ্য আপনারা একটা বারে গিয়েই বসেছিলেন। ওদের বয়ান ছাড়া আমি আপনাদের সম্পর্কের ব্যাপারে অনুমান করতে পারতাম ঠিকই, কিন্তু এত সিওর হয়ে এত কথা কখনই বলতে পারতাম না। কিন্তু ছেলেটা বলেছে যে সংকেতের শরীর একটা লোহার শরীর। কয়েক সেকন্ডে ও ওই চারজনের বেশ কয়েকটা হাড় ভেঙ্গে দিয়ে শান্ত ভাবে বাইরে বেরিয়ে এসেছিল। হি ইজ অ্যা প্রফেশনল।
 
দোলন রাকার দিকে তাকিয়ে বলল তুই আমার বেস্ট ফ্রেন্ড ছিলিস। আর তুই?” রাকা এতক্ষনে নিজেকে অনেকটা সামলে নিয়েছে। ও ব্যাজার মুখে বলল তুই একটা সন্দেহ বাতিক মেয়ে। ও একদিনেই তোর সাথে হাঁপিয়ে উঠেছিল। সব কিছু যখন জানাজানি হয়েই গেছে তখন পুরোটাই খুলে বলে দিচ্ছি। আমিও সংকেতকে ভালবাসতাম। আমি হয়ত তোদের মাঝে কোনও দিনও আসতাম না। কিন্তু তোর সন্দেহ বাতিক মেন্টালিটির সামনে ও দু-দিনেই ভেঙ্গে পড়েছিল। আমি এগিয়ে গেলাম ওর দিকে। ও আমার দিকে চলে এলো। তোর এই মানসিক অবস্থার জন্য আমরা ঠিক করেছিলাম যে তোকে আগে একটু থিতু হতে দি। আমি তোর সাথে সম্পর্ক নষ্ট করতে চাইব না। কিন্তু সংকেতকেও আমি ছাড়তে পারব না তোর হাতে। সুতরাং তুই একটু স্টেডী হলেই আমরা তোকে ব্যাপারটা বুঝিয়ে বলব, এমনটাই ঠিক করেছিলাম আমরা।
 
মিস্টার বেরা বদ্ধ ঘরেই একটা সিগারেট ধরিয়ে বললেন আআআআহ। এই সব পার্সোনাল কথা আপনারা বাইরে গিয়েও আলোচনা করতে পারেন। এইবার, মুল ঘটনায় ফেরা যাক। সংকেত কিন্তু আপনাদের বাড়িতে কাজ চলাকালীন লোকের ভিড়ে কিছুই সরাতে পারেনি। সেই ব্যাপারে এইবার আসব। সংকেত ১২ই আগস্ট শিখার বাড়ি যায়। সেটাও রহস্য। একে একে শুরু করছি। ১২ইআগস্ট সংকেত মিস্টার মুখার্জির বাড়িতেও ছিল, আবার শিখার বাড়িতেও ছিল। কিভাবে। উত্তর হল, সংকেতরা যমজ ভাই। সংকেত মিস্টার মুখার্জির বাড়ির দিকে রওয়ানা দেয় বৃষ্টি মাথায় করে। নিজের অ্যালিবাই রাখা খুব দরকার। পথে ট্যাক্সি থামিয়ে একটা পাবলিক পে অ্যান্ড ইউস টয়লেটের সামনে ও নেমে পড়ে। ট্যাক্সির চালককে আমরা ট্রেস করেছি। সেই ট্যাক্সি চালকই একথা তার জবানবন্দিতে বলেছে। ভেতরে ওর জন্য অপেক্ষা করছিল ওর যমজ ভাই। এগুলো আমরা বিভিন্ন কল লোকেশন আর কল রেকর্ড চেক করে বুঝতে পেরেছি। সংকেত এর পর আপনার বাড়ির দিকে চলে যায়। আর ওর ভাই চলে যায় শিখার বাড়ির উদ্দেশ্য। দুজনে ঠিক সময়ে দুটো জায়গায় পৌঁছায়। আমাদের গোটা ব্যাপারটা লিঙ্ক করতে বেশ বেগ পেতে হয়েছে ঠিকই , কিন্তু আমাদের এই ব্যাপারে কোনও সন্দেহ নেই এখন। সংকেত শিখাকে টাকা অফার করে। অর্থাৎ সংকেতের যমজ ভাই সংকেত সেজে এই কাজটা করে। শিখা রাজি হয়। অনেক রাত অব্দি সংকেতের যমজ ভাইয়ের সাথে শিখা যৌন সহবাস করে। দীপকের জায়গা নেয় সংকেতের যমজ ভাই। অন্য দিকে সেই সময় সংকেত আপনাদের বাড়িতে বেগার খাটছে এই আশায় যে কোনও একটা সুযোগ পেলেই ও মিস্টার মুখার্জির কাজের ঘর থেকে সেকন্ড আর লাস্ট ফাইলটা সরিয়ে দেবে। এইবার খেয়াল করে দেখুন, ওই দিন শিখার বাড়ির দুই জন মহিলা বলেছিলেন যে সংকেত সেদিন ওই বাড়ি গিয়ে মাঝ রাত অব্দি ছিল। আর ওই নড়বড়ে খাটের শব্দ থেকে ওরা বুঝতে পেরেছিল যে ওদের মধ্যে যৌন মিলন হচ্ছে।
 
এইবার একটা কলের ব্যাপারে আসছি আমি। এইটা আমি ভিডিওতে দেখেছি। মিস মুখার্জি... সেইদিন বিকালের পর শিখার মোবাইল থেকে আপনার মোবাইলে কোনও কল এসেছিল? একটু মনে করে বলুন।দোলনের এই কলের ব্যাপারে মনে করতে একটু দেরী হল। কিন্তু অবশেষে ও বলল হ্যাঁ মনে পড়েছে। শিখা ফোন করেছিল আমাকে। ও বলেছিল যে সংকেতের ব্যাপারে ওর ধারণা ভুল। সংকেত ভালো ছেলে। আমি অবশ্য তার আগেই ঠিক করে ফেলেছিলাম যে শিখার কথার ওপর আর কোনও গুরুত্ব দেব না। আমি ওকে বেশ কয়েকটা কড়া কথা শুনিয়ে ফোন কেটে দি।মিস্টার বেরা বললেন শিখা ওই ফোনটা করেছিল সংকেতের নির্দেশে। সরি , ওর যমজ ভাইয়ের নির্দেশে। ও শিখাকে বোঝাতে চাইছিল যে দীপক চলে যাওয়ার পর শিখাকে এরপর আর কেউ পাত্তা দেবে না। এটা আমি ভিডিওতে দেখেছি। ওর কথাতেই শিখা তোমাকে, সরি আপনাকে ফোন করে সংকেতের ব্যাপারে ভালো ভালো কয়েকটা কথা বলে। আর আপনার উত্তর থেকে ও বুঝতে পারে যে ওর দাপট, প্রভাব প্রতিপত্তি সব দীপকের সাথেই শেষ হয়ে গেছে। এখন ও সবার চোখের সামনে একটা বাজারে মেয়ে ছাড়া আর কিছুই নয়। আগেই ও সংকেতের যমজ ভাইয়ের বেশ্যা হওয়ার জন্য রাজি হয়ে গিয়েছিল, কিন্তু এই কলের পর দোলনের কথা শুনে ও বুঝতে পারে যে ওর পায়ের তলা থেকে মাটি সরে গেছে। ও আরও জোরে আঁকড়ে ধরতে চায় সংকেতকে। মানে সংকেত ভেবে ওর যমজ ভাইকে। মাঝ রাত অব্দি চলে ওদের মিলনের খেলা। সংকেত বাড়ি ফিরে আসে ঠিক সময়ে নিজের অ্যালিবাই তৈরি করে। যদিও আসল জিনিসটা ও ওঠাতে পারেনি সেদিন, মানে ফাইলটা।
 
মিস্টার বেরা সিগারেটটা মাটিতে ফেলে দিয়ে সেটাকে নিজের ভারী বুটের তলায় পিষে ফেলে পরের কথা শুরু করলেন। এখন সংকেতের হাতে শুধু দুটো কাজ বাকি। প্রথম, মিস্টার মুখার্জির বাড়ি থেকে ফাইলটা সরাতে হবে। তাহলেই আমাদের দেশ পঙ্গু হয়ে যাবে। কারণ মিস্টার মুখার্জি ইতিমধ্যে মৃত। দোলনের সাথে প্রেমের সুবাদে ওর ওই বাড়িতে এখন অবাধ যাতায়াত শুরু হয়ে গেছে। সুতরাং সেই ব্যাপারটা নিয়ে এখন ও আর খুব একটা বেশী চিন্তিত নয়। লাস্টঃ মিস্টার মেহেরার হাতে জিনিসটা আসা মাত্র সেখান থেকে সেই জিনিসটাকে হাতিয়ে নিয়ে হোটেল ছেড়ে কেটে পড়া। এইবার, কয়েকটা অদ্ভুত জিনিস হয়ে যায়। এইগুলো অবশ্য আগেই ঘটেছে। সেই হোটেলে থাকার সময়কার কথা বলছি। সংকেত হঠাৎ জানতে পারে যে ওর যা চাই সেগুলো সব মিস্টার মেহেরার হাতে চলে এসেছে। সুতরাং সেইগুলো সরিয়ে ফেলার আগেই ওকে নিজের হাতের কেরামতি দেখাতে হবে। সংকেত হল বড় ম্যাচের প্লেয়ার। ধরে নিন মেসি। এই সময় ও মদ্যপ অবস্থাতেও কোনও ভুল করবে না। খবরটা পেয়েই ও সজাগ হয়ে উঠল। সেই রাতেই ও মালিনীর ঘরে গিয়ে মানে, ওই হোটেলের চারতলায় সেই ঘরে গিয়ে আড়াইটা অব্দি রনির সামনে মালিনীর সাথে সহবাস করে। মদ্যপান করে। তারপর বেরিয়ে এসে সটান নেমে আসে মিস্টার মেহেরার ঘরের সামনে। ও জানে মিস্টার মেহেরা মদ্যপান করে ঘুমাতে গেছেন। বাইরে ক্যামেরা অফ করে রাখা আছে। নিজের হাতের কারসাজি দেখিয়ে ও ঘুমন্ত মিস্টার মেহেরার ঘরে ঢোকে। স্প্রে করে ওনার ঘুম আরও গভীর করে দেয় ও। আমরা সেই ঘুম পাড়ানো স্প্রের চিহ্ন দেখতে পেয়েছি ওই ঘরে। সংকেত নিজের কাজ হাসিল করে বেরিয়ে আসে। ভোর রাতে চেক আউট করে। চলে আসে আমার বাড়িতে। এইবার সঞ্চিতা!ম্যাডাম সচকিত হয়ে উঠলেন।
 
মিস্টার বেরা সঞ্চিতা ম্যাডামের দিকে তাকিয়ে শুরু করলেন নিজের বক্তব্য। সঞ্চিতা। সংকেত আমাদের বাড়ির ভেতর কি করে পৌছাল সেটা কি তুমি একটু ভালো করে বলবে?” সঞ্চিতা ম্যাডাম অলরেডি জানা কথাগুলো আওড়ে চললেন। উনি থামার পর স্যার বললেন না। সবটা বলছ না। সৌরভ পাল কে? সেটা তো তুমি বলোনি! সঞ্চিতা ম্যাডামের মুখ এক নিমেষে কালো হয়ে গেছে। মিস্টার বেরা বললেন আমি তোমার মোবাইল আগেই অ্যাকসেস করেছি। থানায় ঢোকার আগে আপনাদের সবার বডি সার্চ করা হয়েছিল। সেকথা মনে আছে? তখন আপনাদের মোবাইল জমা দিতে হয়েছিল। ফেরত পেয়েছেন এই ঘরের ভেতর ঢুকে। সেই সময় তোমার মোবাইল হ্যাক করে তোমার হোয়াটসঅ্যাপের সব মেসেজ আমি পড়ে ফেলি। শুধু তাই নয়। আরও কিছু ব্যাপার আমার সামনে স্পষ্ট হয়ে যায়। তবে তারও আগে ঘটনার ব্যাপারটা খুলে বলা যাক। এই শহরে, মিস্টার মেহেরার সাথে এমন একটা গণ্ডগোল কিছু হলে সেই কেসটা আসবে আমার হাতে। এটা সকলের জানা। সেটা সংকেতেরও অজানা ছিল না। ও শহরে আসার পর থেকেই আমার বাড়ির ওপর নজর রেখেছিল, সে ব্যাপারে যথেষ্ট প্রমান আমাদের হাতে আছে। সঞ্চিতা কখন বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায় সেই ব্যাপারে ও নিশ্চিত হওয়ার পর একদিন সঞ্চিতা বাড়ি থেকে বেরিয়ে যেতেই নিজের হাতের কারসাজি দেখিয়ে আমাদের বাড়ির ভেতর প্রবেশ করে। আমার চিন্তা ভাবনা, কাজের পদ্ধতি ইত্যাদি জেনে ফেলা ওর প্রধান লক্ষ্য। আর সেটা করতে পারলে ওর অনেক মুশকিল আসান হয়ে যাবে। বাড়িতে ঢুকল... গোটা বাড়ির ভেতর স্পাই ক্যাম আর মাইক্রোফোন সেট করে ও বেরিয়ে গেল। সেদিন তোমার ছিল ফার্স্ট ক্লাস। সেদিন ও ক্লাসে লেট হয়েছিল। খেয়াল করে দেখ। ও জানতে পারল তুমি চোরের ভয়ে বাড়িতে একজন পেয়িং গেস্ট রাখার চিন্তা করছ। সেদিনই বাড়িতে চোর পড়ল। সংকেতের ভাই। তুমি আরও ভয় পেয়ে গেলে। পরের দিনই ও তোমার সামনে এসে হাজির হল সো কলড কাকতালীয় ভাবে। আমরা খাল কেটে কুমির ঢোকালাম আমাদের বাড়িতে। কিন্তু ও কেনই বা আমাদের বাড়িতে এসে থাকতে যাবে? কেন ও অন্য কোথাও গিয়ে উঠল না? এইবার সেই উত্তরে আসছি।
 
পেয়িং গেস্টের ব্যাপারটা জানার পরই ও নিজের প্ল্যানটাকে আরেক ধাপ বাড়িয়ে দিল। ও আমাদের বাড়িতে থাকবে। মিস্টার মুখার্জির ঘর থেকে সেই ফাইলটা সরানোর সময় ও আরও কয়েকটা ফাইল সরিয়ে ফেলবে। অর্থাৎ, মিস্টার মুখার্জির যে গবেষণা গুলো শেষ হয়েছিল সেই গুলোর সবকটা ফাইল ও সরিয়ে ফেলবে। আর ও জানত যে আমার বাড়িতে বেশ কিছু ফাইল আছে যেখানে ইললিগ্যাল ওয়েপণ ডিলারদের তথ্য আছে। চিন্তা করে দেখুন। আমার বাড়িতে পেয়িং গেস্ট রাখা হবে এই তথ্য শুনেই ও নিজের প্ল্যানে চেঞ্জ করল। মিস্টার মুখার্জির বাড়ি থেকে ওকে আরও অনেকগুলো ফাইল সরাতে হবে। আর যাদের ও ওই জিনিসগুলো বেচবে সেগুলোর ব্যাপারে ওকে কোনও খোঁজ খবর করতে হবে না। সেই লিস্টটা ও সংগ্রহ করবে আমার বাড়ির ভেতর থেকে। এর আগেও, আরও কয়েকটা ব্যাপার ঘটে গেছে। আমার আর সঞ্চিতার ব্যাপারে, বিশেষ করে সঞ্চিতার ব্যাপারে খোঁজ খবর করে ও জেনে গেছে যে সঞ্চিতা সেক্সুয়ালি ফ্রাসট্রেটেড একজন মহিলা। হয়ত বাড়ির ভেতরে সেট করা জিনিসগুলোই ওকে জানিয়ে দিয়েছে এই ব্যাপারে। আমাদের সন্তান মারা যাওয়ার পর থেকে আমাদের ভেতর সব কিছু শুকিয়ে যায়। নিজেদের ব্যাপারে এইসব নিয়ে কথা বলতে আমার সংকোচ বোধ হচ্ছে তাই সংক্ষেপে বলছি।
 
সঞ্চিতার সাথে ওর তৃতীয় ভাই যোগাযোগ করে। ওরা যমজ নয়। তিনজন আছে ওরা। সঞ্চিতাকে অনেক দিন ধরেই ফেসবুকে ও ফলো করছিল। আলাপও হয়। আমার চোখে ধুলো দেওয়া ওর এক্সিট প্ল্যানের পার্ট। সঞ্চিতা ওর কথা শুনে ভেঙ্গে পড়ে। এই ভাইও কোনও সাধারণ উদ্দেশ্য নিয়ে সঞ্চিতার সাথে ভাব করেনি। কি কারণ ছিল, সেই ব্যাপারে পরে আসছি। আপাতত, তোমাদের মধ্যে সেক্সুয়াল কথাবার্তা হয়। পরে, ব্ল্যাক মেইল করে সেক্সুয়াল ছবির আদান প্রদান হয় তোমাদের মধ্যে। তুমি তখনও বুঝতে পারনি সঞ্চিতা যে সংকেতের লাগানো ক্যামেরা দিয়ে সেই ছবি আর ভিডিওগুলো ওঠানো হয়েছে। তুমি মানসিক ভাবে উত্তেজিত হয়ে উঠলে, কিন্তু একই সাথে ভেতরে ভেতরে ভয় পেয়ে গেলে। ছেলেটা ঠিক কি করতে চায় তুমি বুঝতে পারলে না। ছেলেটা তোমাকে ব্ল্যাক মেইল করতে শুরু করে দিল। আর তুমি ওর হাতের পুতুল হয়ে গেলে। তুমি আরও ব্যস্ত হয়ে উঠলে একটা পেয়িং গেস্ট পাওয়ার জন্য। সবই সংকেতের চাল। প্রথমে চোর, আর ঠিক সেই দিনই ও শুরু করল তোমাকে ব্ল্যাক মেইল করতে। তুমি তখন বেপরোয়া হয়ে পেয়িং গেস্ট খুঁজছ। এইবার বুঝতে পারছ? সংকেত তোমাকে বাধ্য করেছে ওকে তোমার বাড়িতে পেয়িং গেস্ট হিসাবে রাখতে। অন্যদিকে তোমার সাথে সৌরভের কথাবার্তা চলতে থাকল। তোমার স্বস্তির নিঃশ্বাস পড়ল সেদিন যেদিন সৌরভ বলল ও ফাইনালি তোমার জীবন থেকে চলে যাবে। কিন্তু যাওয়ার আগে ও তোমার সামনে একটা অশ্লীল শর্ত রাখল। তুমি সংকেতের সাথে সহবাস করে নিজের ভেতরে এতদিন ধরে যে ক্ষিদে জমিয়ে রেখেছ, সেটা তোমাকে ওর চোখের সামনে মেটাতে হবে। ও জানালার বাইরে থেকে চোখে দূরবীন লাগিয়ে সেটা দেখবে। এক কথায় ও তোমার অসহায় শরীরটাকে সংকেতের হাতে সপে দেওয়ার জন্য আদেশ দিল। অনেক দিন ধরে তুমি উপোষী। তবুও কোথাও একটা বাধছিল তোমার। শরীর চাইছে কিছু একটা করতে, কিন্তু মন বাধা দিচ্ছে। তবুও সৌরভের ব্ল্যাক মেইলের ভয়ে তুমি নিজেকে সপে দিলে সংকেতের হাতে।
[+] 2 users Like pcirma's post
Like Reply


Messages In This Thread
RE: মুখোশ - The Mask by Daily Passenger - by pcirma - 05-03-2019, 04:02 PM



Users browsing this thread: 3 Guest(s)