Thread Rating:
  • 34 Vote(s) - 3.35 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
Thriller মুখোশ - The Mask by Daily Passenger
#59
মিস্টার বেরা সোজা হয়ে বসে শুরু করলেন। সভা আরম্ভের আগে আপানাদের কেন এখানে ধরে নিয়ে আসা হয়েছে সেই ব্যাপারে কিছুটা বলে দেওয়া দরকার। নইলে খামোকা আপনারা ভুল জিনিস নিয়ে ভেবে সময় নষ্ট করবেন। ইনি মিস্টার মেহেরা। সরি ডঃ মেহেরা। ডবল পি এইচ ডি। বিশাল বড় সাইন্টিস্ট। নিউক্লিয়ার আর্মসের ব্যাপারে ইনি অনেক গুরুত্বপূর্ণ গবেষণা করেছেন এই দেশ আর দেশবাসীর জন্য। আগের সরকার আর এই সরকার, দুই দলেরই প্রিয় পাত্র এই মিস্টার মেহেরা। এই ছোট খাটো গোবেচারা লোকটা। ইনি একজন স্টলওয়ার্ট। মনীষী ব্যক্তি। এনার ট্র্যাক রেকর্ড দেখে এইটুকু বলতে পারি ইনি আজ অব্দি টাকার জন্য, নিজের স্বার্থের জন্য, বা অন্য কোনও কারণে আমাদের দেশের বা দশের কোনও ক্ষতি করেননি। সারা জীবন উনি শুধু দেশের ভালোই করে এসেছেন। আরেকজন আছেন আমাদের তদন্তের আওতায়। আর তাকে নিয়েই এই কেস।
 
মিস্টার রঞ্জন মুখার্জি। সবাই তার নাম জানেন। সবাই তাকে চেনেন। আমাদের এক্স মিনিস্টার। কিন্তু আগে ভাগেই জানিয়ে রাখি যে এখানে আমরা বৈজ্ঞানিক রঞ্জন মুখার্জির ব্যাপারে কথা বলতে বসেছি। মিনিস্টার বা রাজনৈতিক নেতা রঞ্জন মুখার্জির ব্যাপারে নয়। আমাদের তদন্তের বিষয় এই দুজন মনীষীকে নিয়ে। মিস্টার মুখার্জিও নিজের গবেষণা আর নিজের জীবন উৎসর্গ করে দিয়েছিলেন দেশের জন্য। আর ওনারও প্রিয় বিষয় ছিল আর্মস। মডার্ন আর্মস। বরং বলা ভালো নিউক্লিয়ার আর্মস। মিস্টার মেহেরার মতন ইনিও নিজের ব্যক্তিগত জীবনে যাই করুন না কেন, বৈজ্ঞানিক জীবনে দেশের সাথে কোনও রকম বিশ্বাসঘাতকতা করেননি। বরং উনি জীবনের শেষ দিন অব্দি আমাদের সবার ভালোর জন্য যুদ্ধ করে গেছেন। ভূমিকা শেষ।
 
এইবার কাজের কথা শুরু করছি। আমি একা নই এই টিমে, বিশিষ্ট মনোবিজ্ঞানি মিস্টার রাহা আর ওনার স্ত্রীও এখানে উপস্থিত। আমি কারোর সাংবিধানিক অধিকার থেকে তাকে বঞ্চিত করছি কিনা সেটা দেখার জন্য এখানে উপস্থিত আছেন মিস্টার সান্যাল। ওনাকে আমি ডাকিনি বিশেষ কারণে। কিন্তু আদালতের একজন এত বড় সেবক যখন আমাদের মধ্যে উপস্থিত তখন সাংবিধানিক অধিকারের দিকটা দেখার ব্যাপারে ওনাকেই আমি ...মানে উনি যদি এই ছোট দায়িত্বটা নেন তো আমি এবং আমার টিম খুবই বাধিত হবে। তবে আবারও বলছি। কেসটা দেশের আর দশের ব্যাপারে। তাই আমি সবার সহযোগিতা পাওয়ার আশা করেই এই সভা শুরু করছি। তবে মিস্টার সান্যাল কোথাও বাধা দিলে আমরা পরের আলোচনার দিকে এগিয়ে যাব।মিস্টার সান্যাল বললেন আপনি শুরু করুন। আমি দেশের আইন মোটামুটি জানি।
 
মিস্টার বেরা উঠে দাঁড়ালেন। সবাইকে একটা বাও করে শুরু করলেন নিজের প্রারম্ভিক ভাষণ। আমাদের দেশের সরকার একটা অন্য ধরণের নিউক্লিয়ার ডিভাইস, অর্থাৎ অস্ত্র তৈরি করার সিদ্ধান্ত নেয় গোপনে। রিসার্চ শুরু হয় কয়েক বছর আগে। মিস্টার মুখার্জি আর মিস্টার মেহেরা সেই রিসার্চের পার্ট ছিলেন। এরপর নানা কারণে মিস্টার মুখার্জি রাজনৈতিক ভাবে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। অতএব গোটা জিনিসটার সাথে ওনার ছাড়াছাড়ি হয়ে যায়। আমাদের দেশের বৈজ্ঞানিকরা মিলে মোটামুটি পুরো জিনিসটা তৈরি করে ফেলেছিলেন। তার ডিসাইন প্রস্তুত করে ফেলা হয়। কিন্তু জিনিসটা কাজে আসে না কারণ ওই জিনিসটা চালনা করার জন্য একটা বিশেষ ধরণের ফিউসের দরকার। সেটা তৈরি করতে না পেরে দেশের সরকার আর মিস্টার মেহেরা, আবার মিস্টার মুখার্জির সাথে কন্ট্যাক্ট করেন। উনি ছিলেন বিশাল মনের মানুষ। উনি এত ব্যস্ততা সত্ত্বেও আবার সেটা নিয়ে কাজ করতে রাজি হন। মিস্টার মেহেরার ভাষায়, এই কাজের সাথে উনি আগে থেকেই জড়িত ছিলেন, সেই জন্য সেই সেন্টিমেন্টও কাজ করেছে ওনার মধ্যে। মোটের ওপর উনি রাজি হন। গবেষণা করেন। উনি সফল হন সেই গবেষণায়, সব তৈরি হয়। কিন্তু দেশের কোনও কাজে আসে না সেই জিনিস। বরংসে কথায় পরে আসছি। তার আগে এটা বলে দেওয়া ভালো যে আপনারা যারা এই ঘরে বসে আছেন তারা নিশ্চই এই ব্যাপারটা বুঝতে পেরে গেছেন যে এই জিনিস ভুল লোকের হাতে পড়লে আমাদের আপনারা বুদ্ধিমান আপনারাই বুঝে নিন, আপনার আমার কতটা ক্ষতি হবে। সেটা নিয়েই এই কেস। কোনও মেয়ে, ছেলে বা কোনও রাজনৈতিক নেতার খুনের ব্যাপারে আমাকে নিয়োগ করা হয়নি। কিন্তু কিছু জিনিসের সাথে নিজেকে না জড়িয়ে আমি থাকতে পারিনি। এই ব্যাপারেও আমি পরে আসব। আপাতত, দুই একটা তথ্য আপনাদের সামনে তুলে ধরছি। ফিউস তৈরির আগে অব্দি যা কিছু হয়েছে তার সমস্ত তথ্য, ডিসাইন আমাদের সরকারের কাছে আছে। মিস্টার মুখার্জি ফিউস তৈরি করার ডিসাইন তৈরি করেন গোপনে। তার দুটো ফাইল ছিল। একটা তার বাড়িতে, গোপন একটা সেফে। আর একটা তিনি মিস্টার মেহেরার হাতে তুলে দেন। ওনার ডিসাইন অনুযায়ী একটা রিয়েল ফিউস তৈরি করে আমাদের ইঞ্জিনিয়াররা। সেটাও তুলে দেওয়া হয় মিস্টার মেহেরার হাতে। এইবার একটা জিনিস বলে রাখি, ফিউস ছাড়া এই যন্ত্র, আর যন্ত্র ছাড়া এই ফিউস, কোনওটাই কোনও কাজে আসবে না। এইবার এক কথায় বলে রাখি, দুটো ফাইল , মানে যন্ত্র আর ফিউসের ফাইল দুটো চুরি গেছে। যন্ত্রের ফাইলের কপি আমাদের কাছে আছে, কিন্তু ফিউসের ফাইলের কপি আর নেই। মিস্টার মুখার্জির বাড়িতে এর একটা কপি রাখা ছিল, সেটাও চুরি গেছে। সেই সাথে, ফিউসের মডেলটা, যেটা আমাদের ইঞ্জিনিয়াররা বানিয়েছিল, সেটিও চুরি গেছে। অর্থাৎ ফিউস সম্পর্কে আমাদের হাতে কিছুই নেই। বাই দা ওয়ে, ওই ফিউসের ডিসাইনের একটা কপি ছিল মিস্টার মেহেরার হাতে। সেটা চুরি গেছে বলেই বলছি যে আমাদের হাতে আর কিছুই নেই। উপরন্তু, মিস্টার মুখার্জি, মানে যিনি এটার স্রস্টা তিনিও ইহ লোক ত্যাগ করেছেন। অর্থাৎ এই ব্যাপারে আমাদের হাতে আর কিছুই নেই। উনি জীবিত থাকলে নিশ্চই আবার আরেকটা ডিসাইন তৈরি করে ফেলতেন। কিন্তু উনি চলে যাওয়ার পর আমাদের দেশ এখন পঙ্গু। এইবার আশা করছি কেসের সিরিয়াসনেসের ব্যাপারে আপনাদের বোঝাতে পেরেছি। এইবার কাজের কথায় আসছি।
 
কিছুটা আমি বলব, কিছুটা ফিল ইন দা গ্যাপ করতে আপনারা আমাকে সাহায্য করবেন। সেই আশা নিয়েই এই সভা শুরু করছি। সবাই রাজি তো?” মিস্টার সান্যাল বললেন আপনি শুরু করুন মিস্টার বেরা…” মিস্টার বেরা শুরু করলেন এই তথ্য গুলো কোনও ভাবে বাইরে জানাজানি হয়ে যায়। একটা বিশাল বড় সমাজবিরোধী সংস্থার পক্ষ থেকে একটা অ্যাসাসিন গ্রুপ কে এই ব্যাপারে নিযুক্ত করা হয়। আমাদের গল্পের নায়ক, বা খলনায়ক, যাই বলুন না কেন, সে একটা ছাত্রের মুখোশ পরে এসে হাজির হয় কোলকাতার বুকে। ওরা জানত গোটা ব্যাপারটা ঘটবে গোপনে একটা বেসরকারি হোটেলের রুমে। হোটেলের নাম ব্লু রিসর্ট। মিস্টার মেহেরা রুম বুক করার সাথে সাথে আমাদের নায়কও নিজের নামে একটা রুম বুক করে সেই একই হোটেলে, একই ফ্লোরে। ওর ঘরটা ছিল মিস্টার মেহেরার ঘরের থেকে একটা ঘর পরে।
 
কথাটা বলেই উনি মালিনীর মুখের ওপর একবার চোখ বুলিয়ে নিলেন। মালিনীর চোয়াল শক্ত হয়ে গেছে। কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে হঠাৎ হাসিমুখে উনি মালিনীর বর রনিকে জিজ্ঞেস করলেন আপনার কাছে আমার একটা সামান্য প্রশ্ন আছে। কথা দিচ্ছি। আপনার উত্তর এই চার দেওয়ালের বাইরে যাবে না। এই কেস কোনও দিন আদালতে উঠলে আলাদা করে আপনার জবানবন্দি নেওয়া হবে তখন। আপাতত শুধু সত্য উদ্ঘাটন করার তাগিদে আপনাকে প্রশ্নটা করছি। রনি বলল বলুন।” “ আপনি কি সংকেত বলে কাউকে চেনেন?” রনি এই কথার কোনও উত্তর দেওয়ার আগেই মিস্টার বেরা বললেন আপনি যদি মনে করতে না পারেন তাহলে আমি আপনাকে এই ব্যাপারে অবশ্যই সাহায্য করব। ওই হোটেলের চার তলার ঘরে এক উইকএন্ডে একটা ইয়ং ছেলে আপনার আর আপনার স্ত্রীর সাথে দেখা করতে আসে। অনেকক্ষণ ছিল সে ওই ঘরে। এইবার মনে পড়েছে?” রনি বলল হ্যাঁ ভালো ভাবেই মনে আছে। কিন্তু কি ব্যাপার বলুন তো?”
 
মিস্টার বেরা বললেন ব্যাপার তো বলবেন আপনি। আমরা সবাই মিলে শুনব। একবার বলবেন রাত প্রায় আড়াইটা অব্দি আপনারা তিন জন মিলে ওই ঘরের ভেতরে বসে কি এমন গভীর আলোচনা করছিলেন? আর ওই ছেলেটাকে আপনি চেনেনই বা কি করে?” প্রশ্নটা করেই উনি একবার মালিনীর মুখের ওপর চোখ বুলিয়ে নিলেন। মালিনীর ফ্যাকাশে মুখ আরও ফ্যাকাশে হয়ে গেছে। রনি খুব স্বাভাবিক ভাবেই এর উত্তর দিল। আমরা সেদিন তিনজনে মিলে পার্টি করছিলাম। ওই ছেলেটাই পার্টি থ্রো করেছিল ওর বিয়ে ঠিক হওয়ার খুশিতে। ওই ছেলেটা মালিনীর কলিগ। অনেক দিন ওরা একসাথে কাজ করছে ওই হোটেলে। ও এসেছিল আমাদের সাথে, সরি আমার সাথে সেলিব্রেট করতে। মিস্টার বেরা বললেন তারপর কি কি হল পার্টিতে যদি একটু বিস্তারিত ভাবে বলেন।রনি বলল অনেক আগেই মালিনীর হাত দিয়ে একটা হার্ড ড্রিংকের বোতল ও ওই ঘরে পাঠিয়ে দিয়েছিল। প্রথমে আমি একাই খাচ্ছিলাম। কিছুক্ষণ পরে ও এসে হাজির হল। আমি তখনও ঠিক জানতাম না যে এই পার্টিটা ওর তরফ থেকে থ্রো করা হয়েছে। মালিনী গোটা ব্যাপারটা গোপন রেখেছিল। পরে অবশ্য ছেলেটার মুখ থেকেই গোটা ব্যাপারটা জানতে পারি। যাই হোক। ছেলেটা কখন এসেছিল সঠিক বলতে পারব না কারণ ততক্ষণে আমার বেশ ভালো নেশা হয়ে গিয়েছিল। ছেলেটা আসার পর আমাদের মধ্যে কিছু গল্প গুজব হয়। তবে স্যার সত্যি কথা বলছি, আমার সেদিন এত নেশা চড়ে গেছিল যে কি কথাবার্তা হয়েছে সঠিক বলতে পারব না। কিছুই মনে নেই। একবার বমি করে আউট হয়ে যাই। পরে ওরা ধরাধরি করে আমাকে বিছানায় শুয়ে দিয়েছিল। ব্যস এর থেকে বেশী আর কিছুই জানি না। কটার সময় আমি আউট হয়ে গিয়েছিলাম, সেটাও বলতে পারব না। বেশ অনেকক্ষণ ধরেই, মানে ঠিক হুঁশ ছিল না আমার।
 
হোটেলের ম্যানেজারের মুখ বিস্ময়ে হাঁ হয়ে গেছে রনির উত্তর শুনে। মিস্টার বেরা সরাসরি হোটেলের ম্যানেজারকে প্রশ্নটা করলেন সংকেত আপনাদের এমপ্লয়ী ছিল সে কথা আগের দিন তো আমাদের সামনে স্বীকার করেননি।ম্যানেজারকে উত্তর দেওয়ার সুযোগ না দিয়ে পরের প্রশ্নটা উনি ছুঁড়ে দিলেন মালিনীর উদ্দেশ্য, “ আপনার স্বামীর সামনে সংকেতকে নিজের কলিগ বলে মিথ্যা পরিচয় দেওয়ার পিছনে কোনও বিশেষ কারণ? “ মালিনী মুখ নিচু করে বসে আছে। মিস্টার বেরা বললেন আমাদের এখন সময় নষ্ট করার মতন ফালতু সময় একেবারে নেই, তাই আমি এগিয়ে চললাম। মালিনী দেবী আপনি যে ঘন ঘন সংকেতের ঘরে যাতায়াত করতেন সেটার ব্যাপারে আপনার পিছনে হোটেলে অনেক রকম কথা চালাচালি শুরু হয়েছিল। আপনাকে আপনার ম্যানেজার এই নিয়ে জিজ্ঞেসও করেছিলেন, কিন্তু আপনি বলেছিলেন যে সংকেত আপনার ভাইয়ের বন্ধু। তাই আপনার ভাইয়ের ব্যাপারেই ওর সাথে কথা বার্তা বলার জন্য আপনি ওর ঘরে যেতেন। মালিনী ফ্যাকাশে মুখ নিয়ে মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানালো।
 
মিস্টার বেরা সহজভাবেই বললেন এইবার একটা কথা বলবেন যে আপানার ভাইয়ের ব্যাপারে কি এমন গুরুত্বপূর্ণ কথা ছিল যেটা বলার জন্য আপনাকে ওর ঘরে এত ঘন ঘন যেতে হত? আর প্রায় প্রত্যেকদিনই ঘণ্টা খানেক ধরে বন্ধ ঘরের মধ্যে চলত আপনাদের এই মিটিং? আর সময়টা হচ্ছে গভীর রাত। হোটেলের কোনও কর্মচারী কোনও বোর্ডারের রুমে এত রাতে যায় না, সেটা নিশ্চই আপনার অজানা নয়। উত্তর দেওয়ার দরকার নেই। আমরা এখানে আপনার পার্সোনাল কেচ্ছা নিয়ে আলোচনা করতে বসিনি, তবে এইটুকু বলতে পারি যে, আমি জানি সংকেতের সাথে আপনার রোজ শারীরিক সম্পর্ক হত। আপনি ওর সাথে সহবাস করতে যেতেন আর তাই আপনাদের এতটা সময় লাগত! মালিনী ফ্যাকাশে মুখ নিয়েই উঠে দাঁড়িয়ে প্রতিবাদ করল। আপনি কোনও রকম প্রমান ছাড়া সবার সামনে আমার নামে যা খুশি...।
 
মিস্টার বেরা অম্লান বদনে বললেন এত উত্তেজিত হবেন না। হোটেল ছাড়ার আগে এবং পরে আপনাদের মধ্যে অসংখ্য বার মেসেজ আদান প্রদান হয়েছে। আপনাদের মধ্যে যে একটা ঘনিষ্ঠতা তৈরি হয়েছিল সেটার প্রমান এই মেসেজের আদানপ্রদান। তাছাড়া...আপনার সেই প্রিয় বন্ধুটি আপনাদের সমস্ত গোপন মুহূর্তের ভিডিও ইন্টারনেটে আপলোড করে দিয়েছে। ইতিমধ্যে হাজার হাজার মানুষ দেখে ফেলেছে সেই ভিডিও। অবশ্য বিপুল টাকার বিনিময়ে। সহবাসের সময় আপনাদের মধ্যে কি কি কথা হত সেসবও আমি মোটামুটি শুনেছি। সেদিন চার তলার ঘরে ও গিয়েছিল আপনার নেশাগ্রস্ত বরের সামনে আপনাকে ভোগ করার প্ল্যান নিয়ে। আপনি সেটা আগে থেকেই জানতেন। আপনাদের ভেতর এই অশ্লীল প্ল্যান নিয়ে ইতিমধ্যে অনেক আলোচনাও হয়েছিল। দুটো ভিডিও আছে, যেগুলোতে আপনাদের কথাবার্তা স্পষ্ট শোনা যাচ্ছে, এই প্ল্যান নিয়েই আপনাদের মধ্যে কথাবার্তা হচ্ছিল, আপনাদের দুজনকেই স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে ভিডিওতে। আপনার বেহুঁশ বরের সামনে ও আপনার মাথায় সিদুর পরিয়ে আপনাকে নিজের স্ত্রী বানায়, এবং আপনার বরের সামনেই আপনার সাথে সহবাস করে, সারাক্ষন ধরে আপনার বরকে ও অশ্রাব্য ভাষায় তিরস্কার করে চলে, আর আপনি সুখের সাগরে ভাসতে ভাসতে সব কিছু উপভোগ করলেন। আপনাদের ভাষায় বলতে গেলে সেদিন আপনার বরের সামনেই আপনাদের ফুলশয্যা হয়েছিল। সব ধরা আছে ভিডিওতে। কিন্তু এই নিয়ে আমার কোনও মাথা ব্যথা নেই। আমার যেটা নিয়ে মাথা ব্যথা সেটা নিয়ে সরাসরি একটা প্রশ্ন করছি এইবার। তবে তার আগে একটা কথা আপনাদের সবাইকে বলে দিই যে আমি হাওয়ায় কথা বলছি না। আমার হাতে প্রমান না থাকলে কোনও বাজে প্রশ্ন আমি করব না। আপনি সংকেতের কাছে শারীরিক সুখ পাওয়ার জন্য একটা সময়ের পর থেকে ব্যাকুল হয়ে থাকতেন। এই সময় আপনি কি কোনও কারণে, বা বলা ভালো কোনও অসতর্কতার মুহূর্তে সংকেতের সামনে এটা বলে ফেলেছিলেন যে ফার্স্ট ফ্লোরের ক্যামেরা মিস্টার মেহেরার জন্য বন্ধ করা হয়েছে গোপনে? খুব ভেবে চিন্তে কথাটার উত্তর দেবেন। এটা দেশের সিকিউরিটির ব্যাপারে কথা বলছি, আপনার কেচ্ছার ব্যাপারে নয়।
 
মালিনীর বেশ কয়েক মিনিট সময় লাগল নিজেকে সামলে নিতে। অবশেষে ভাঙা গলায় বলল ফার্স্ট ফ্লোরের ক্যামেরা নিয়ে ওর সাথে আমার কোনও দিনও কোনও কথাই হয়নি। ও আমাকে এই ব্যাপারে কিছুই জিজ্ঞেস করেনি কোনও দিন, আর আমিও আগ বাড়িয়ে এই নিয়ে কোনও কথা বলিনি ওর সামনে। কিন্তু …” মিস্টার বেরা বললেন কিন্তুটাই শোনার জন্য আমি মুখিয়ে আছি। মালিনী বলল আমাদের হোটেলে একজন সিকিউরিটিকে ও পিটিয়েছিল। আপনি বোধহয় জানেন না।মিস্টার বেরা বললেন আমরা সব জানি। তারপর?” মালিনী বলল আমি ওকে সেই ব্যাপারে একদিন জিজ্ঞেস করেছিলাম একান্তে। আমি জানতাম এটা ওরই কীর্তি। ও নিজের মুখে সেটা স্বীকারও করেছে। কিন্তু স্বীকার করার সময় ও বারবার যেভাবে আমাকে, মানে আমাদের হোটেলকে ফুটেজ দেখিয়ে পুরো ব্যাপারটা প্রমান করতে বলছিল, সেটা থেকে আমার কেমন একটা সন্দেহ হয়েছিল তখন যে ও ক্যামেরার ব্যাপারটা কোনও ভাবে জেনে গেছে। কিন্তু বিশ্বাস করুন আমি এই ব্যাপারে ওর সামনে কিছুই বলিনি।
 
৪৭
 
মিস্টার বেরা মিস্টার রাহার দিকে তাকিয়ে বললেন এইবার?” মিস্টার রাহা বললেন এগিয়ে চলুন। আমি এখনও সিওর আমার হাইপোথিসিসের ব্যাপারে। হতে পারে পরে আরও কিছু জানতে পারব অন্য কারোর কাছ থেকে, যেটা …” মিস্টার বেরা সময় নষ্ট না করে বলে চললেন আমাদের গল্পের হিরো যে সংকেত রায় সেটা নিশ্চই এর মধ্যে আপনারা বুঝে ফেলেছেন। এইবার , নেক্সট ফেসের দিকে এগচ্ছি। মন দিয়ে শুনতে থাকুন। মালিনীর কথা থেকেই শুরু করছি। সেদিন ও হোটেলের একজন সিকিউরিটিকে পেটায়। এটা আমাদের মতে একটা diversionary tacticসেদিনই ও ইচ্ছে করে মিস্টার মেহেরার সাথে ধাক্কা খায় লিফটের সামনে, আর সেই সুযোগে ওনার পকেট থেকে ওনার ঘরের চাবিটা সরিয়ে নেয়। যাতে মিস্টার মেহেরার সেই দিকে কোনও নজর না যেতে পারে তাই ও ইচ্ছে করে সিকিউরিটিকে পিটিয়ে গোটা ব্যাপারটার একটা অন্য রূপ দেয়। মিস্টার মেহেরা এতটাই বিচলিত হয়ে পড়েন যে বিকেল অব্দি চাবির ব্যাপারটা ওনার মাথায় আসেনি। সংকেত চাবি সরিয়ে ২০ মিনিট মতন ওপরে ছিল। তখন সেখানে কোনও রুমবয়ও ছিল না। ও মিস্টার মেহেরার ঘরে গিয়ে স্পাই ক্যাম আর মাইক্রোফোন বসিয়ে দিয়ে আসে। নিপুণ হাতের কাজ। কেউ বুঝতে পারবে না। আজ আমাদের লোক গিয়ে সেই সব জিনিস খুলে নিয়ে আসে। বলাই বাহুল্য ওনার বডি গার্ড দের ঘর থেকে তেমন কোনও জিনিস উদ্ধার করা যায়নি। আমাদের একজন অফিসারের প্রশ্ন ছিল যে কেন সংকেত চাবি না সরিয়ে হাতের কেরামতির জোরে ওনার ঘরে প্রবেশ করেনি, সেটার উত্তর আপনাদের জানিয়ে রাখা ভালো এইবার। মিস্টার মেহেরার যাতায়াতের সময়, বা ওনার ঘরে কোনও ভি আই পি, বা আর্মির লোক এলে ওখান থেকে রুম বয়দের সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হত। কিন্তু তারপর? ক্যামেরা না চললেও রুমবয়দের যাতায়াত ওখানে লেগেই থাকবে। হাতের কেরামতি লাগিয়ে সেই ঘর খুলতে গিয়ে যদি সামান্য দেরী হয় তো কোনও রুম বয় সংকেতকে মিস্টার মেহেরার ঘরে ঢুকতে দেখে ফেলতে পারে। সব ব্যাপারটা তাহলে কেঁচে যাবে। সুতরাং সেফ খেলল ও।
 
মালিনী হঠাৎ বলল স্যার, একটা জিনিস। মিস্টার মেহেরার নাম ওকে আমি কোনও দিনও বলিনি। আমি শুধু বলেছিলাম যে একজন ভি আই পি এসেছেন। যেদিন ওই সিকিউরিটি পেটানোর ব্যাপারে ওর সাথে আমার কথা হয়, সেদিন ও আমাকে জিজ্ঞেস করেছিল মিস্টার মেহেরার ব্যাপারে। অবশ্য ও কোনও নাম নেই। আমি বলেছিলাম যে মিস্টার মেহেরা ডিফেন্সের লোক, তবে আর্মি নন। সেটা শুনে সংকেত অদ্ভুত একটা তাচ্ছিল্যের সুরে বলেছিল, সেটা আমি জানি যে উনি আর্মির লোক নন, নইলে অনেক কিছুই বুঝে যেতেন। তখন আমি বুঝতে পারিনি, কিন্তু এখন মনে হচ্ছে, …” মিস্টার বেরা বললেন ইয়েস। আর্মির লোকের পকেট মারা এত সোজা নয়। তবে এই তথ্য ওর আগে থেকেই জানা ছিল। আপনার সাথে রসিকতা করেছে মাত্র, নিজের সারল্য দেখানোর জন্য। এত কথা বলার কারণটা এইবার এক কথায় বলে দি, মিস্টার মেহেরার পকেট থেকে চাবি মারার সময়ও ও জানত যে ক্যামেরা বন্ধ করা আছে, ওনার ঘরের ভেতর ঢোকার সময়ও জানত যে ক্যামেরা বন্ধ করা আছে। মালিনী তুমি আমাকে হতাশ করলে। কি করে ও জানতে পারল যে ক্যামেরা বন্ধ করে রাখা আছে? সিকিউরিটি পেটানোর পর নিচে গিয়ে ও যেভাবে ফুটেজ দেখানোর জন্য চীৎকার করছিল সেটা থেকেও এটা স্পষ্ট যে ও ক্যামেরার ব্যাপারটা জানত। আর এখন তো তোমার কথা থেকেও সেটা প্রমান হয়ে গেছে। যাই হোক। পরের ব্যাপারে এগোনো যাক। মিস্টার মেহেরা ওনার চোখের সামনে চলে এলো। কি কথা হচ্ছে, কে কবে আসছে সব কিছু এখন ওর নখদর্পণে। এরপর?”
 
ওর প্যারালাল টার্গেট ছিল মিস্টার মুখার্জি। ও ইতিমধ্যে মিস্টার মেহেরার ঘরের ভেতরে হওয়া কথা বার্তা থেকে জেনে গেছে যে মিস্টার মুখার্জির কাজ শেষ। একটা মডেল ফিউস তৈরিও করা হচ্ছে। কিন্তু, এই ব্যাপারে এখন অপেক্ষা করা ছাড়া উপায় নেই। কারণ ফাইল মিস্টার মেহেরার ঘরে চলে এলেও, যতক্ষণ না ফিউস্টা ওনার হাতে আসছে ততক্ষণ ওনার ঘর থেকে কিছু সরানো যাবে না। ফিউজ হাতে আসার আগে ওনার ঘর থেকে ফাইল চুরি হলে, বুঝতেই পারছেন ফিউজটা আর উনি নিজের ঘরে ডেলিভারি নেবেন না। ফিউজ আমাদের দেশের কাছে থাকলে আমরা আবার ওই ফিউজটাকে দেখে মিস্টার মুখার্জির ডিসাইনটা বানিয়ে ফেলতে পারব। সুতরাং এখানে অপেক্ষা করা ছাড়া ওর হাতে আর কোনও রাস্তা নেই। ফিউস আসার পর ফিউস আর ফাইল একসাথে ও সরাবে মিস্টার মেহেরার হোটেলের রুম থেকে। এর মধ্যে অবশ্য ওকে আরেকটা কাজ করতে হবে। আগেই বলেছি সেই ব্যাপারে। মিস্টার মুখার্জিকে সরাতে হবে, কারণ মিস্টার মুখার্জির কাছ থেকে পাওয়ার মতন আর কিছুই বাকি নেই। আর শুধু খুন করলেই হবে না, খুনটা এমন ভাবে করতে হবে যাতে পুরো ব্যাপারটা দেখে মনে হয় যে রাজনৈতিক প্রতিহিংসা। কারণ কেউ যদি মিস্টার মুখার্জির হত্যা রহস্যকে ফিউসের ব্যাপারে জড়িয়ে ফেলতে পারে তাহলেও বিপদ। হয়ত সেই ফাইল তৎক্ষণাৎ মিস্টার মেহেরার ঘর থেকে সরিয়ে নেওয়া হবে। ফিউসও আর ওখানে ডেলিভারি করা হবে না। মিস্টার মুখার্জিকে ও বাড়ির ভেতর গিয়ে হত্যা করতে পারবে না। বাড়ির বাইরে কড়া পাহারা, আর তাছাড়া, বাড়ির ভেতর ঢুকে ওনাকে মারলে সরাসরি সন্দেহটা গিয়ে ওর ওপর পড়বে। ওকে তখন পালাতে হবে, কিন্তু এখনও শহর ছেড়ে পালাতে পারবে না, কারণ? ফিউস আর ফাইল এখনও ওর হাতে আসেনি। সুতরাং মিস্টার মুখার্জিকে ওনার সিকিউরিটির ঘেরা টোপ থেকে বের করতে হবে যেকোনো মূল্যে। ও জেনে ফেলল দীপকের সাথে মিস্টার মুখার্জির ঝামেলা চলছে। সেই মাফিক ও প্ল্যান বানাল। একটা সুবিধা অবশ্য ওর হয়েছে না চাইতেই... দীপকের গার্লফ্রেন্ড শিখা ক্লাসে ক্লাসে গিয়ে ছেলে মেয়েদের র্যাগিঙ্গ করে। সুযোগটাকে ও কাজে লাগাল অন্য দিক থেকে। মিস্টার মুখার্জির হত্যার সাথে যদি কোনও ভাবে এই দীপকের নাম জড়িয়ে দেওয়া যায়, তো স্বাভাবিক ভাবেই সবাই মিস্টার মুখার্জির মৃত্যুটাকে রাজনৈতিক প্রতিহিংসার ফলাফল বলে ধরে নেবে। কলেজের র্যাগিঙ্গের সময় ও ইচ্ছে করে শিখার ওপর পড়ে যায়। দাম্ভিক শিখা তখন দীপকের গায়ের জোরের ওপর ভরসা করে আকাশে উড়ছে। সংকেত জানত ওকে দীপকের সামনে নিয়ে যাওয়া হবে।
 
দোলন বলে উঠল সেদিন সংকেত কে দীপকের ঘরে নিয়ে যাওয়া হয় আর দীপক ওকে উত্তমমধ্যম দিয়েছিল। বাইরে থেকে আমরা শব্দ শুনতে পেয়েছিলাম। পরের দিন ও নিজেও স্বীকার করেছিল যে ওর পিঠে ব্যথা আছে ওই মারের ফলে।মিস্টার বেরা বললেন আপাত ভাবে সেটা মনে হলেও, আসলে যা হয়েছিল সেটা সম্পূর্ণ অন্য। সংকেত ঘরের দরজা বন্ধ হওয়া মাত্র তোমাদের বক্সার দীপককে উত্তম মধ্যম দেয়। বাই দা ওয়ে হি ইজ অ্যা প্রফেশনল। দীপক কয়েক সেকন্ডের বেশী ওর সামনে টিকতে পারবে না। দীপক এই কথা নিজের রাইট ম্যানের সামনে স্বীকারও করেছে মদ্যপ অবস্থায়। দীপক মার খেয়ে চুপসে যায়। সংকেত ওকে নিজের পরিচয় দেয়, দীপককে খুন করার হুমকি দেয়। সেই সাথে তোমাদের বাড়ির ভিতরে হওয়া মিস্টার মুখার্জির সাথে ওনার পার্টির একজন নেতার কিছু কথাবার্তার ফুটেজ দেখায় এবং শোনায়। সেই ফুটেজে কিভাবে দীপককে পার্টি থেকে সরানো হবে সেই নিয়ে আলোচনা হচ্ছিল। আমার প্রশ্ন ও তোমার ঘরের ভেতর এন্ট্রি পেল কি ভাবে? প্রশ্নটা আমি মিসেস অ্যান্ড মিস, দুই মুখার্জিকেই করছি একই সাথে।
 
দুজনেই মাথা নাড়িয়ে বুঝিয়ে দিল যে সংকেত এর আগে কোনও দিনও ওদের বাড়িতে আসেনি। মিস্টার বেরা বললেন মিসেস মুখার্জি, আপনার স্বামীর মৃত্যুর আগে আপনি সংকেতকে চিনতেন?” মিসেস মুখার্জি বললেন ওর নাম শুনেছিলাম। কিন্তু কোনও দিনও চোখে দেখিনি। খোকা, মানে শান্তনু মারা যাওয়ার পর হাসপাতালে ওকে প্রথমবার চোখে দেখি।মিস্টার বেরা বললেন অদ্ভুত ব্রেন আপনার মিসেস মুখার্জি। আপনার ছেলে মারা গেছে। এই সময় মায়েদের কোনও হুঁশ থাকে না। তবুও হাসপাতালে ওকে দেখে এখনও প্রথম সাক্ষাতের কথা ভুলতে পারেননি। যাই হোক। সে কথায় পরে আসব। কিন্তু এখন আমার প্রশ্ন হল, আপনার তো ওর নামও জানার কথা নয়! আপনাকে কি দোলন ওর ব্যাপারে বলেছে? “ মিসেস মুখার্জি বললেন হ্যাঁ সেরকমই। মিস্টার বেরা বললেন আমি যতদূর জানি আপনাদের মা মেয়েতে খুব একটা কথা বলার সময় নেই। আর তাই দোলন ওর পিতার মৃত্যুর পর নিজের মাসির বাড়ি চলে যায়। আমি খবর নিয়ে জেনেছি, দোলন ওর মাসিকে আপনার থেকে বেশী পছন্দ করে। যাই হোক, সেই নিয়ে আমার কোনও মাথা ব্যথা নেই। কিন্তু তাহলে কার মুখ থেকে আপনি সংকেতের নামটা শুনলেন? একটু ভেবে বলুন, দোলন আপনাকে সংকেতের ব্যাপারে বলেছে? নাকি অন্য কেউ? এটা জানা দরকার, কারণ সবকটাকে একসাথে জেলে না ভরতে পারলে আমার রাতের ঘুম হবে না।
 
দোলন মুখ খুলল এইবার। আমিই মমকে বলেছি। সংকেত নিজের জন্মদিন উপলক্ষ্যে ক্লাসের সবাইকে খাইয়েছিল আর গিফট দিয়েছিল। এটা নাকি ওদের ফ্যামিলির রীতি। ওর বাবা নাকি এই জন্য অনেক টাকাও পাঠিয়েছে। আমার বাবার জন্যও একটা গিফট দিয়েছিল। সেইটা আমি বাপীকে দেওয়ার সময় পুরো ব্যাপারটা আর ওর নাম বলেছিলাম। তখন মম ওখানে ছিল। তাই হয়ত সংকেতের নাম ওর জানা। মিস্টার রাহা নড়ে চড়ে বসে বললেন কি গিফট?” দোলন বলল গোটা ক্লাসের সবাইকে ও একটা করে পেন উপহার দিয়েছিল। মিস্টার রাহা বললেন তোমার কাছে এখন আছে সেই পেন?” দোলন বলল আমার পেনটা আমার কাছে আছে। কিন্তু বাপির পেনটা বাড়িতেই আছে ওর কাজের ঘরে।মিস্টার বেরা হাত বাড়িয়ে দিলেন, পেন হস্তান্তরিত হল। পেনটা চলে গেল একজন অফিসারের হাতে। এক মিনিটের মধ্যে জানিয়ে দেওয়া হল যে পেনের মুখে স্পাইক্যাম লাগানো আছে। কথাও রেকর্ড করা যাবে। আর শুধু তাই নয়। ভীষণ আধুনিক ডিভাইস। কথা আর ছবি ট্রান্সফার হবে কিছু দূরে রাখা অন্য কোনও ডিভাইসে। তবে দূরত্ব ৫০০ মিটারের বেশী হলে হবে না।
 
মিস্টার বেরা হাত তুলে থামিয়ে দিলেন অফিসারকে। উনি দোলনকে জিজ্ঞেস করলেন তুমি এই পেন মিস্টার মুখার্জির হাতে দিয়েছিলে? আর উনি সেটা নিজের কাজের ঘরে…” বাকিটা শেষ করতে হল না। দোলন বলল হ্যাঁ। ওটা এখনও ওখানেই আছে।মিস্টার রাহা বিজয়ীর হাসি হেসেবললেন কি বলেছিলাম মিস্টার বেরা। কাজের প্যাটার্ন!মিস্টার বেরা এক মিনিট চুপ থেকে কি একটা ভেবে নিয়ে মালিনীকে বলল একটু চিন্তা করে ভেবে বলবে। তোমাকে সংকেত কখনও কোনও গিফট দিয়েছে। বেচারি লজ্জায় মাটির মধ্যে মিশে গেছে প্রায়। এবার আরও ভালো ভাবে মিশে যেতে হল ওকে। ও কান্না থামিয়ে, কোনও মতে বলল হ্যাঁ। ও আমাকে পাঁচ হাজার টাকা দিয়েছিল, আমার বরের হেল্পের জন্য। একটা গলার চেইন দিয়েছিল। আর এই দুটো কানের দুল দিয়েছিল।বলেই ভীষণ রাগের সাথে নিজের কানে পরে থাকে দুটো দুল খুলে টেবিলের ওপর ছুঁড়ে ফেলে দিল। আবার সেই অফিসার এসে ওগুলোকে উঠিয়ে নিয়ে গেল। এতেও মাইক্রোফোন ফিট করা আছে। হারটা মালিনীর সাথে এখন নেই। সেটা থাকলে তাতেও হয়ত এমন কোনও ডিভাইস পাওয়া যেত। কে জানে!
 
মিস্টার বেরা বললেন মিস সান্যাল আপনিও তো একই ক্লাসে পড়েন। তাই না? “ রাকা মাথা নাড়িয়ে বুঝিয়ে দিল হ্যাঁ। মিস্টার বেরা বললেন আপনার পেনটা একবার দেখা যায়?” রাকা নিঃশব্দে পেনটা মিস্টার বেরার হাতে দিয়ে দিল। নাহ এই পেনে কোনও কিছু সেট করা নেই। মিস্টার বেরা বললেন এতে আশ্চর্য হওয়ার কিছু নেই। এরকম প্রফেশনলরা প্রয়োজনের বাইরে একটাও কাজ করে না। ওর টার্গেট মিস্টার মুখার্জি। তাই দোলনের হাত দিয়ে দুটো ক্যামেরা ফিট করা পেন ওর বাড়ির ভেতর পাঠিয়ে দিল কৌশলে। মিস সান্যালের বাড়ির ভেতর থেকে ওর কিছুই জানার নেই। তাই এই পেনটা সাধারণ। কিন্তু শুধু দোলনের হাতে দুটো পেন ধরিয়ে দিলে ব্যাপারটা দৃষ্টিকটু হয়ে যাবে, তাই জন্মদিনের ড্রামা করে গোটা ক্লাসকে পেন উপহার দিল। যাই হোক এগিয়ে পড়া যাক। মালিনী তুমি নিশ্চই এই গিফট পাওয়ার পর তোমার কোনও কলিগ বা তোমার ম্যানেজারের সাথে ফার্স্ট ফ্লোরের ক্যামেরার ব্যাপারে কথা বলেছ? (মালিনী মাথা নাড়াল, সেই সাথে ম্যানেজারও) সেই কথাবার্তা শুনে ফেলল সংকেত। সংকেতের টার্গেট ছিল মিস্টার মেহেরা। ও জানে উনি সব ব্যাপারে ভীষণ রকম গোপনীয়তা অবলম্বন করতে চাইবেন। আর হোটেলের ম্যানেজমেন্ট ওনাকে সেই ব্যাপারে সাহায্যও করবে। তাই ওনার ব্যাপারে জানার সব থেকে সহজ রাস্তা হল হোটেলের কর্মচারীদের কথাবার্তা শুনে ওনার গোপনীয়তার ব্যাপারে কিছু খোঁজ খবর করা। তাই এই গিফট। পরে অবশ্য ও যাতে পারে যে ফার্স্ট ফ্লোরে কোনও ক্যামেরা কাজ করছে না, সুতরাং ওনার পকেট মেরে ওনার ঘরে ঢুকে যা সেট করার করে বেরিয়ে আসে। আরেকটা রহস্যের তাহলে সমাধান করা গেল। 
[+] 1 user Likes pcirma's post
Like Reply


Messages In This Thread
RE: মুখোশ - The Mask by Daily Passenger - by pcirma - 05-03-2019, 04:01 PM



Users browsing this thread: 4 Guest(s)