Thread Rating:
  • 34 Vote(s) - 3.35 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
Thriller মুখোশ - The Mask by Daily Passenger
#58
মিস্টার বেরা বললেন যমজ হলে আশ্চর্য হব না। অনেক আগেই আমার এই সন্দেহ হয়েছিল। সংকেত অন্য জায়গায়, আর অন্য আরেকজনকে সেই দিনই শিখার বাড়িতে দেখা যায়। ওই অন্য লোকটার চেহারা সংকেতের সাথে হুবুহু মিলে যায়। আর তাই ওই দুজন মহিলে সংকেতের কথাই বারবার বলে চলেছে। তবে এই সিম লোকেশনের রিপোর্ট পাওয়ার আগে অব্দি আরও অনেক চিন্তা মাথায় আসছিল। এখন তো মনে হচ্ছে সংকেত অ্যান্ড হতে পারে যমজ ভাই। মিস্টার খান বললেন স্যার মাস্কও তো হতে পারে!মিস্টার বেরা বললেন বোকার মতন কথা বলে চলেছ তখন থেকে। তুমি বিবাহিত?” মিস্টার খান মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ বললেন। মিস্টার বেরা বললেন বউয়ের সাথে ইন্টারকোর্স করেছ নিশ্চই?” এর কোনও উত্তর হয় না। স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে মিসেস রাহার মুখে হাসি লেগে থাকলেও উনিও এই প্রশ্নে কিছুটা অপ্রস্তুত ফিল করেছেন। মিস্টার বেরা বললেন করি সবাই, কিন্তু এই নিয়ে কথা বলতে হলেই লজ্জায় মাটির নিচে লুকিয়ে পড়ি। যাই হোক। সেক্সের সময় চুম্বন, এর ওর গালে হাত দেওয়া এগুলো কমন ব্যাপার। তোমার বউয়ের সামনে কাল মাস্ক পরে ওই সব করতে যেও। তারপর…”
 
মিসেস রাহা এই ব্যাপারটাকে এখানেই থামানোর উদ্দেশ্যে হাত তুলে বললেন মানে মাস্ক পরে রাস্তার লোককে ধোকা দেওয়া খুব সহজ হলেও হতে পারে। কিন্তু মাস্ক পরে কোনও মেয়ের সাথে কিছু করলে সে ধরে ফেলবে এক নিমেষে। এইবার এই টপিক থাক, কাজের কথায় ফেরা যাক।মিস্টার বেরা বললেন অর্থাৎ যে শিখার বাড়ি গেছে তার মুখে মাস্ক ছিল না। কারণ ওই বিছানার ক্যাচ ক্যাচ বা ঘষ ঘষ আওয়াজ শুনে নিচের মহিলা দুজন বুঝেছেন যে ওদের মধ্যে সেক্স হচ্ছিল। এই শব্দ ওরা আগেও শুনেছে যখন দীপক আসত। মিস্টার রাহা বললেন মাস্ক ওর নো মাস্ক এখনই খুব একটা সিওর হওয়া যাচ্ছে না, বাট সিচুয়েশন ওই দিকেই ইশারা করছে। তবে আসল কথা হল সংকেতের চেহারা আর ওই লোকের চেহারা তখন বাইরে থেকে দেখলে একই রকম দেখাবে। সুতরাং ওরা যমজ হলেও এই সিদ্ধান্তে আসতে হবে আর যমজ না হয়ে কেউ একজন মাস্ক পরলেও একই সিদ্ধান্তে আসতে হবে। কে যে কার বাড়ি গেছে সেটা বলা শক্ত। তাই আমি বলেছিলাম যে সংকেতের সিম ধারী ব্যক্তি মিস্টার মুখার্জির বাড়ির দিকে গেছে টু ক্রিয়েট হিস অ্যালিবাই, আর অন্য সিম ধারী ব্যক্তি চলে গেল শিখার বাড়ি। মাস্কের ব্যাপার থাকলে, আমি বলব সংকেত চলে গেল শিখার বাড়ি কারণ ইন্টারকর্সের সময় মাস্ক কোনও কাজে আসবে না, আর মাস্ক পরা অন্য জন চলে গেল লেট মিস্টার মুখার্জির বাড়ি। আর যমজ হলে তো কে কোথায় গেছে মা গঙ্গাই জানেন।
 
মিস্টার খান ওনাকে থামিয়ে দিয়ে বললেন স্যার এক মোমেন্ট। আপনি অ্যালিবাই তৈরি করার ব্যাপারটা কেন বললেন?” মিস্টার বেরা এইবার বিরক্ত হয়ে চেয়ার ছেড়ে উঠে পড়েছেন। মিস্টার রাহা বললেন সংকেতকে এখনও চিনতে পারলে না। মিস্টার মুখার্জি ওর কে লাগে? কেউ না। আর সংকেত খুব ভালো করে জানে মিস্টার মুখার্জির কাজের ঘর থেকে ওই সব জিনিস সরাতে ওর বেশ খানিকটা সময় লাগবে। আর ওই দিন মিস্টার মুখার্জির বাড়িতে লোকের ছড়াছড়ি। কে কখন ওকে দেখে ফেলবে! সেদিন এই কাজ করা যাবে না। তবুও, হয় ও নিজেই, বা ওর যমজ ভাই বা ওর চেহারাওয়ালা কেউ, বা ওর চেহারার মাস্ক পরা কেউ লেট মিস্টার মুখার্জির বাড়ি গেল জোগাড় যন্ত্র করতে। এই জাতের ক্রিমিনালরা প্রয়োজনের বাইরে একটাও বাড়তি কাজ করে না। কারণ? কারণ, কাজ করলেই তাতে ভুল হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। আর বাড়তি কাজ করা মানে যেচে ভুল করা। একজন শিখার বাড়ি গেছে কিছু একটা কারণে, হতে পারে নিছক সেক্স। বা হতে পারে আগের দিন সংকেত শিখাকে ছাড়তে গিয়ে ওর ঘরে কিছু ভুল করে কিছু একটা ফেলে এসেছিল, এইবার ও গেছে সেটা কালেক্ট করতে। সঠিক বলতে পারব না। কিন্তু, সেই জন্যই আরেকজন তার অ্যালিবাই তৈরি করতে মিস্টার মুখার্জির বাড়িতে বেগার খাটতে গেছে। তাই কে কোথায় গেছে বলা শক্ত। কিন্তু অ্যালিবাই তৈরি করতেই যে এদের একজন মিস্টার মুখার্জির বাড়ি সেদিন গেছে সেটা অস্বীকার করার কোনও উপায় নেই। আর এর থেকে যে সিদ্ধান্তটা আমি করেছি সেটা আরও বেশী জরুরি।
 
মিস্টার বেরা বেজার মুখে বললেন সংকেত আগে থেকেই জানত যে কোনও না কোনও দিন ওর শিখার বাড়ি যাওয়া নিয়ে কথা উঠবে। সেইদিন এই ব্যাপারটা ওর অ্যালিবাইয়ের কাজ করবে। আর তাই গতকাল দুপুর বেলা অব্দি আমরা সবাই কনফিউসড ছিলাম সংকেতের শিখার বাড়ি যাওয়া নিয়ে। ও কিছুটা সময় পেয়ে গেল। অবশ্যই ওর এক্সিট প্ল্যানের পার্ট। কিন্তু এখানে আরেকটা জিনিস না মেনে পারছি না। সেটা হল এই যে শিখা হয় পয়সার কারণে, বা অন্য কোনও ব্যাপারে ভয় পেয়ে সংকেতের সাথে শুতে রাজি হয়, অবশ্য হতে পারে দীপক শিখাকে সংকেতের ব্যাপারে কিছু বলেছিল। সংকেত মানে আমি সংকেতের চেহারার লোকের কথা বলছি। কারণ কে যে কোথায় গেছে সেটা আমরা এখনও জানি না। আর কোনও দিনও জানতে পারব বলেও মনে হচ্ছে না। তবে ও জানত এই ব্যাপারটা সবার সামনে কোনও না কোনও দিন আসবে। আর সেটাই ভাইটাল পয়েন্ট। আর তাছাড়া আরেকটা ব্যাপার এখানে না বলে পারছি না। সেদিন রাতে সংকেতের সিম ধারী লোকটাই আমাদের বাড়ি ফেরত আসে। আমরা জানি না কে সেদিন মিস্টার মুখার্জির বাড়ি গেছিল। সুতরাং কে যে সংকেত সেজে আমাদের বাড়িতে ফেরত এসেছিল সেটাও মিস্টার রাহা পরের হাইপোথিসিস?”
 
মিস্টার রাহা বললেন এই ব্যাপারে গোটা ব্যাপারটাই আগের ব্যাপারের সাথে এক। শুধু এই বিষয়ে দুই একটা কথা বলা প্রয়োজন। যে লোক প্রথম দিন মিস শিখার বাড়ি গিয়েছিল, আমি আশা করছি সেই একই লোক পরের দিনও শিখার বাড়ি গিয়েছিল। মানে ওর চেহারার অন্য কেউ যায়নি। ইন্টারকোর্সের সময় স্বাভাবিক কারণে মুখের স্মেল ইত্যাদি বোঝা যায়। বডির স্মেল কিছুটা হলেও স্প্রে ইত্যাদি দিয়ে ঢাকা যায়, কিন্তু মুখের স্মেল, প্রাইভেট অরগ্যানের স্মেল ইত্যাদি ঢাকা যায় না। মেয়েরা সেটা ধরে ফেলবে। মিসেস রাহার কান লাল হয়ে উঠেছে নিজের কর্তার কথা শুনে। সেটা সবাই লক্ষ্য করেছে, তবুও মিস্টার রাহা থামলেন না, “ তাই আমার বিশ্বাস, প্রথম দিন সংকেত সেজে যে গিয়েছিল, সেই একই লোক দ্বিতীয় দিনও গিয়েছিল। কলের প্যাটার্ন যা লেখা আছে সেটা থেকে একটাই জিনিস মনে হচ্ছে। আগেই বলছি, এটা ভুল হতে পারে। কিন্তু মনে হচ্ছে যে, প্রথমের এস এম এস গুলোতে শুধু কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জানিয়ে দেওয়া হয়েছে সংকেতের সিম ধারী লোকটিকে। হতে পারে সাথে এটাও জানিয়ে দেওয়া হয়েছে যে দ্বিতীয় লোকটি শিখার বাড়ি পৌঁছে গেছে। সারা রাত ওদের মধ্যে শারীরিক মিলন হয়। যে কোনও কারনেই হোক, ও নিজের সিম আর মোবাইলটাকে তখনও চালু রেখেছিল। ভোরে, ৬টার সময় ওই মোবাইল থেকে একটা এস এম এস করা হয়। আর তারপর একটা কল। পোস্টমর্টেম বলছে ছটার দিকেই শিখার মৃত্যু হয়। খুব সিওর নই, কিন্তু মোটামুটি ভাবে সিওর হয়ে বলা চলে যে , ওই কলের সময় শিখা জেগে যায়, বা সব কিছু শুনে ফেলে। হয়ত কিছু গোপন ব্যাপারে কথা হয়েছিল। জানি না অত কম সময়ে কি কথা হতে পারে। হতে পারে কোড ভাষায় কিছু কথা হয়েছে। কিন্তু মোদ্দা কথা শিখা সেটা শুনে ফেলে। আর ঠিক তার পরেই ওকে মেরে ফেলে ব্যাপারটাকে আরও রোমাঞ্চকর একটা চেহারা দিয়ে, মানে সব বডি পার্টস আলাদা করে, শিখার ঘরের সব জিনিস নিজের ব্যাগে ঠুসে আততায়ী ওখান থেকে বেলা আটটার দিকে বিদায় নেয়। এখানে দুটো জিনিস আমার চোখে পড়েছে।
 
একঃ diversionary tactic. ও শিখার ডেড বডি যদি সাধারণ অবস্থায় রেখে দিয়ে আসত তাহলে পুলিশ অন্য অ্যাঙ্গেল থেকে জিনিসটা দেখতে শুরু করবে। তাই শিখার শরীরের টুকরো টুকরো করে গোটা ব্যাপারটার একটা নতুন চেহারা দিয়ে দিল। আমি জানি পুলিশ প্রথম একদিন, বা অন্তত বেশ কয়েক ঘণ্টা অযথা নষ্ট করেছে কোনও সিরিয়াল ক্রিমিনালের খোঁজ করে।(মিস্টার লাহিড়ীর মুখ মাটির দিকে) পরে অবশ্য সংকেতের স্কেচ হাতে পাওয়ার পরযাই হোক, এই খানে ওই কয়েক ঘণ্টাই বিশেষ জরুরি। হতে পারে ওই কয়েক ঘণ্টায় আমাদের সংকেত তার এক্সিট প্ল্যানের দিকে আরেক ধাপ এগিয়ে গেছে। এরকম ছেলেরা হাফ আন আওয়ারের জন্য পুলিশের চোখে ধুলো দিয়ে গোটা দুনিয়া উদ্ধার করে ফিরে আসে। এখানে আমরা বেশ কয়েক ঘণ্টা ব্যয় করেছি ভুল জিনিস বুঝে। এইবার পরেরটা।
 
দুইঃ এতক্ষন ধরে বাকি কল রেকর্ডগুলো দেখে একটা ব্যাপার নিশ্চিত যে প্রয়োজনের একটা কি দুটো কল বা এস এম এস করার পরই সিম, মোবাইল সব লাপাতা হয়ে গেছে। কিন্তু এইখানে তার ব্যতিক্রম দেখা যাচ্ছে। খেয়াল করে দেখো এই সিম থেকে এই লাস্ট কলের পর সংকেতের সিমে আর কোনও কল বা এস এম এস আসেনি। অর্থাৎ, শিখার মতন এই সিমের প্রয়োজনও ফুরিয়েছে। তবুও আততায়ী ওই লাস্ট কলের পর, যেটা হয়েছিল ৬টার দিকে, আরও দুঘণ্টার ওপর এই সিম আর মোবাইলটাকে চালু রেখেছিল? এরা প্রফেশনল। এদের ভুল হয়না। তাহলে এই ভুলটা হল কি করে? সেই থেকেই আমার সন্দেহ জাগে যে, শিখা ওই লাস্ট কলের সময় কিছু একটা অপ্রত্যাশিত ভাবে শুনে ফেলেছিল। তাতে আততায়ীর স্থির করা প্ল্যানটা ঘেঁটে যায়। শিখাকে তৎক্ষণাৎ খুন করে তার ডেড বডির টুকরো টুকরো করে খুনের বা ক্রাইমের একটা নতুন চেহারা দেওয়ার ব্যাপারে আততায়ীর বেশ কিছুটা সময় নষ্ট হয়ে যায়। অর্থাৎ সে সিম বা মোবাইল বন্ধ করার সুযোগ পায়নি, বা সেই সিচুয়েশনে মোবাইল বা সিমের কথা তার মাথায় আসেনি। তারপর ব্যস্ততার সাথে সমস্ত ঘর সাফ করে সে বেরিয়ে আসে ৮.০৫ মিনিটে। তারপর সে বুঝতে পারে যে ভুল বশত তার মোবাইলটা এখনও অন আছে। ব্যস, সেই মুহূর্তে সে মোবাইল অফ করে দিয়ে আনরিচেবল হয়ে যায়, মানে ধরা ছোঁয়ার বাইরে চলে যায়। এক কথায় শিখাকে মারা হয়ত তার প্ল্যানের মধ্যে ছিল না। কেন ওখানে সে গেছিল সেটা কোনও দিনও হয়ত জানা যাবে না। তবে এইসব লোকদের সেক্স ভীষণ উগ্র হয়। হতে পারে শিখার সাথেবা হতে পারেজানি না। সেক্স ছাড়া আপাতত আর কিছু দেখতে পাচ্ছি না। সবাই স্তম্ভিত। মিস্টার বেরা বললেন হান্ড্রেড আউট অফ হান্ড্রেড। এগিয়ে চলুন।
 
মিস্টার রাহা বললেন ৫ আর ৮ পয়েন্ট মিলালে একটাই কথা বলতে পারি। মিস সান্যাল সংকেতের প্রেমে পড়েছিল। নইলে ওই বৃষ্টির মধ্যে লেকের ভেতর দুজনে মিলে বসে এতক্ষন সময় কাটানো কোনও ভাবে মেনে নেওয়া যাচ্ছে না। মিস্টার খান আবার আপনি একটা ভুল করবেন, তাই তার আগেই বলছি, মিস সান্যাল সংকেতের প্রেমে পড়েছিল। সংকেত প্রেমে পড়েনি। ও সুযোগ বুঝে আরেকটা শরীর ভোগ করছিল বা ভোগ করার প্ল্যান করছিল মাত্র। প্রেম ছিল রাকার দিক থেকে। সংকেত এখানে এসেছে একটা মিশনে। ও এখানে প্রেম করতে আসেনি। আবারও বলছি এইসব ছেলেরা একটাও বাড়তি কাজ করেনা। কোনও প্রয়োজন না থাকলে, ও নিজে থেকে আগ বাড়িয়ে মিস সান্যালকে প্রেম নিবেদন করতে যাবে না। মেয়েদের শরীর ওর কাছে একটা ভোগের বস্তু মাত্র। সারা দিনের পরিশ্রমের পর, একটা শরীর না পেলে এই সব ক্রিমিনালের রাতের ঘুম হয় না। আর নতুন নতুন শরীর পাওয়ার জন্য এরা খুবই উদগ্রীব। তবে এরা প্ল্যানের বাইরে যায় না। আমার ধারণা রাকা ওর প্রেমে পড়েছিল। ও জেনে শুনে বাধা দেয়নি। এখান থেকে যাওয়ার আগে আরেকটা নতুন নারী শরীর ভোগ করার ইচ্ছে হয়ত সংকেতকে, বা ইয়ে ওদেরকে পেয়ে বসেছিল। তাই ওরা রাকার সামনে প্রেমের নাটক করে এইআর কি। এরা প্রেমে পড়েনা। গোটা কেসের রেসপেক্টে আমার মতে এটা একটা diversionary tactic ছাড়া আর কিছুই নয়। তবে মিস সান্যালের ব্যাপারটা আমার মতে জেনে শুনে করা হয়নি। মানে এখানে সংকেতের কোনও কারসাজি নেই। মিস সান্যাল নিজে থেকেই এগিয়ে আসে। সংকেত বা ওই ইয়েরা ওকে ভোগ করার সিদ্ধান্তটা তার পরে নেয়।
 
মিস্টার বেরা মাথা নাড়ালেন মাত্র। এইবার উনি কিছুই বললেন না। তবে মাথা নাড়িয়ে বুঝিয়ে দিলেন যে উনি মিস্টার রাহার সাথে এই ব্যাপারে সম্পূর্ণ একমত। মিস্টার বেরা বললেন এখন আর কিছুই করার নেই। অনেক রাত, সরি ভোর হয়ে গেছে। এইবার সবাই কেটে পড়ো। কাল বেলার দিকে সব কটা রিপোর্ট আগে আমাদের হাতে আসুক। তারপর দেখা যাবে। আমার বাড়ির বাইরে ভিডিও সারভিলিয়েন্স বসাও। সংকেতকে এক মোমেন্টের জন্য নজরের বাইরে যেতে দেওয়া যাবে না। সংকেতের সাথে বাকি সবার নাম্বার ট্যাপ করো। মিসেস বেরার নাম্বারও। আর হ্যাঁ। শ্যামা নস্করের ব্যাপারে খোঁজ করতে গিয়ে সেই হাবিলদার এখনও কেন ফিরল না সেটার ব্যাপারে কাল সকাল হতেই খোঁজ করা শুরু করো। এখন মনে হচ্ছে ব্যাপারটা যতটা ভেবেছিলাম তার থেকেও বেশী সিরিয়াস। সেকন্ড হাফে সবাইকে ডেকে পাঠাও। আমার লিস্ট তৈরি। আরিফ, এই লিস্টটা তোমার কাছে রেখে দাও। আমি আর বাড়ি যাব না। কোনও লকআপ খালি আছে? সেখানেই একটা তক্তপোষ পেতে দাও। বাকি রাতটা আমি ওখানেই শুয়ে কাটিয়ে দিতে চাই। আমাকে এখন অনেক কিছু ভাবতে হবে। অনেক কিছু হাতের সামনে আছে। আশা করছি সাক্ষীদের সহযোগিতা পেলে কালই এই সমস্যার একটা সমাধান হয়ে যাবে। তবে ওই ফাইল বা ফিউস বা অন্য গবেষণার কাগজ ফিরে পাব কিনা, সেই ব্যাপারে এখনই কিছু বলতে পারছি না। চলো। এইবার সবাই কেটে পড়ো। আমি লাস্ট পেগটা একলা বসে পান করতে চাই। মনের ভেতরকার জটগুলো যদি কিছুটা ছাড়াতে পারি! আরেকটা জিনিস, ইউপি গিয়ে কোনও লাভ নেই। আমার ধারণা গোটা ব্যাপারটা ভাঁওতা। এখনও আমাদের হাতে ওখান থেকে কোনও তথ্য এসে পৌছায়নি। তবে গোপালবাজারে দ্বিগুণ লোক পাঠিয়ে দাও। এক্ষুনি। কাল দুপুরের মধ্যে তাদের রিপোর্টটা আসা খুব দরকার। গুড মর্নিং। বাই।
 
৪৫
 
মিস্টার খান বললেন কাল স্পার্ম …” মিস্টার বেরা বিরক্ত হয়ে বললেন ধুসস। তোমার মনে হয় ওখানে কোনও ম্যাচ পাওয়া যাবে। ওই টেস্ট ছাড়ো। ওটা এই সংকেতের স্পার্ম নয়। সেটা এখনও বুঝতে পারোনি? ও জেনে বুঝে আরেকটু টাইম বাই আউট করল। তাছাড়া আর কিছুই না। ওই টেস্টের রেজাল্ট ভুলে যাও। অন্য জিনিস গুলো ফলোআপ করো। ওর মর্নিং ওয়াকের প্লেসে কুকুর পাঠাও, মানে ওই লেকের ধারে। সব কিছু খুঁটিয়ে দেখো। এইবার এসো। বাই।আসর ভেঙ্গে গেল।
 
নিজের পেগ শেষ করে এক মাথা চিন্তা নিয়ে মিস্টার বেরা একটা খালি লকআপের ভেতর ঢুকে মেঝেতেই শুয়ে পড়লেন। কিছুক্ষণ পর উনি ঘুমিয়ে পড়লেন বটে, কিন্তু ঘুমের মধ্যেও ওনার মাথার ভেতরে নানান চিন্তা ঘুরপাক খেয়ে চলল। ভোরের আলো ফুটতে না ফুটতেই দুটো গোয়েন্দা কুকুর এসে হাজির হল। একদল পুশিল কুকুরদুটোকে নিয়ে সেই লেকের ধারে গিয়ে হানা দিল। আরও কিছু জিনিস মিস্টার বেরার কথামতন পালন করা হয়েছে। মিস্টার বেরার বাড়ির চারপাশে একদল পুলিশ প্লেন ড্রেসে ক্যামেরা অন করে বসে আছে। দুজন অফিসার চলে গেছে মিস্টার বাড়ির পেছনের বস্তিটাতে। ১৪-১৫ ই আগস্ট রাতের ব্যাপারে খোঁজ খবর করা হয়েছে। আমার ছবিও দেখানো হয়েছে। একটা পুলিশের জিপ অবশ্য ভোরের আলো ফোটার আগেই গোপালবাজারের উদ্দেশ্য বেরিয়ে পড়েছে। কালো রঙের স্যান্ট্রোর রহস্যের মোটামুটি একটা সমাধান হয়ত করা গেছে। তবে প্রত্যক্ষ প্রমান এখনও হাতে আসেনি। দুজন দুঁদে অফিসারকে লাগিয়ে দেওয়া হয়েছে উকিল সত্যজিৎ ধরের পেছনে। তার পুরো ঠিকুজি কুষ্ঠী বের করা হচ্ছে। সবার ফোন এখন ট্যাপ করা হচ্ছে। কিছু তথ্য জানাও গেছে। আশা করা যাচ্ছে যে সময়ের সাথে আরও বেশ কিছু তথ্য হাতে এসে যাবে এই ফোন ট্যাপ করার ফলে। আরও বেশ কিছু ব্যাপার ঘটে গেছে সেগুলো সব সময়ে প্রকাশ পাবে।
 
মিস্টার বেরা ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে চায়ের কাপ হাতে যখন কন্ট্রোল রুমে গিয়ে বসলেন তখনও ঘর প্রায় খালি। টেবিলের ওপর রিপোর্টের স্তূপ জমা করা আছে। উনি একে একে রিপোর্টের ওপর চোখ বোলানো শুরু করলেন। ঘড়ির কাঁটা বলছে ৮ বেজে ১৫ মিনিট। সংকেত কলেজের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে গেছে। তার কিছুক্ষনের মধ্যেই মিসেস বেরা বেরিয়ে গেলেন গাড়ি চড়ে। সংকেতের পেছনে পুলিশের দল শিকারি কুকুরের মতন লেগে আছে সারাক্ষন। এসবই কন্ট্রোল রুমে বসে মিস্টার বেরা সচক্ষে দেখতে পাচ্ছেন। ধীরে ধীরে রুমে এসে হাজির হলেন মিস্টার অ্যান্ড মিসেস রাহা। মিস্টার খানও এসে হাজির হয়েছেন। উনি জানালেন ওনার নাকি এক ফোঁটাও ঘুম হয়নি চিন্তায়। রবিন দাস ইত্যাদিও এসে হাজির হয়েছেন। সব শেষে এসে হাজির হলেন মিস্টার লাহিড়ী। মিস্টার লাহিড়ী গোয়েন্দা বিভাগের লোক নন। তার স্বাভাবিক ভাবেই ওনার হাব ভাবে একটা ঢিলে ঢালা ভাব লক্ষ্য করা যায়। স্বভাবের দোষ আর কি। কিন্তু ওনার চোখ মুখ দেখেও স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে যে উনিও ভেতরে ভেতরে বেশ উত্তেজিত হয়ে উঠেছেন। মিস্টার বেরা রিপোর্টের তাড়াটা নিয়ে উঠে পড়লেন। আরিফ খান, রবিন বাবু, আর রাহা দম্পতি কে নিয়ে উনি পাশের ঘরে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দিলেন। বলে দিয়ে গেলেন সংকেত বেপরোয়া কিছু করলেই ওর পায়ে গুলি করবে। তারপর যা হয় দেখা যাবে। আর এখন কিছুক্ষণ আমাদের কেউ বিরক্ত করবে না। আমরা কিছুক্ষণ গোপনে আলোচনা করতে চাই।
 
মিটিং ভাঙল প্রায় সাড়ে তিন ঘণ্টা পর। বাইরে বেরিয়ে এসেই মিস্টার খান একদল পুলিশকে কন্ট্রোল রুমে ডেকে পাঠালেন। মিস্টার বেরা কন্ট্রোল রুমে ঢুকে প্রথমেই জিজ্ঞেস করলেন সংকেতের লোকেশন কি?” জবাব এলো, “সংকেত ক্লাস করছে। ওর মোবাইল লোকেশনও তাই দেখাচ্ছে।মিস্টার বেরা বললেন ক্লাসের বাইরে একাধিক লোক রেডি রেখো। ক্লাস থেকে বেরোলেই ওকে উঠিয়ে নেবে। তবে অযথা সিন ক্রিয়েট করতে যেও না। চুপ চাপ উঠিয়ে নেবে। বেশী লোক জানাজানি করার দরকার নেই। মনে রেখো আমাদের লোক যেমন সংকেতের ওপর নজর রেখেছে, ওই দিকে সংকেতের লোকও সংকেতের ওপর নজর রেখেছে। ওকে গ্রেফতার করার সাথে সাথে কিছু জিনিস আমাদের উদ্ধার করতে হবে ওর লোকের কাজ থেকে। ওপর প্রান্ত থেকে জানিয়ে দেওয়া হল যে ওরা প্রস্তুত। নির্দেশ মতন কাজ হয়ে যাবে।
 
মিস্টার বেরা বললেন আমি ১৫ মিনিটের জন্য হেঁটে আসছি। এসি ঘরে বসে বসে মাথা কাজ করছে না। জানলাটা খুলে দাও কালকের মতন। সিগারেটে টান না দিলে আমার মাথা খোলে না। আমি সিগারেট কিনে নিয়ে আসছি। বাই দা ওয়ে, স্পার্ম ম্যাচ করেছে?” মিস্টার খান বললেন বিকালের আগে জানা যাবে না। আমি আবার তাড়া দিচ্ছি।মিস্টার বেরা বললেন কোনও কিছু গোলমাল দেখলেই আমাকে কল করবে। আমি থানার আসে পাশেই থাকব। বেশ কয়েকজন পুলিশ এসে ইতি মধ্যে হাজির হয়েছে কন্ট্রোল রুমে। মিস্টার খান ওনাদের হাতে মিস্টার বেরার দেওয়া লিস্টটা তুলে দিলেন। এদের সবাইকে নিয়ে আসতে হবে ১২ টার পর। জিপে করে নিয়ে আসবে পার্সোনালি। সংকেতকে তোমাদের আনতে হবে না। ওর জন্য অন্য ব্যবস্থা করা আছে। কিন্তু খেয়াল রাখবে কোথাও কোনও রকম সিন ক্রিয়েট করবে না। চুপ চাপ কথা বলে উঠিয়ে নিয়ে আসবে। এরপর আরও কিছুক্ষণ বেশ নির্বিঘ্নে কেটে গেল। লাঞ্চ আওয়ার শুরু হবে আর কিছুক্ষনের মধ্যেই...কেটে গেল আরও বেশ কিছুক্ষণ। ক্লাসের বাইরে দাঁড়িয়ে থাকা চারজন অফিসার ঘন ঘন নিজেদের ঘড়ি দেখে চলেছেন। রিভলবারের সেফটী ক্যাচ অফ করে ওনারা রেডি। আর ১০ মিনিটও নেই। তারপরই শিকার এসে ফাঁদে পা দেবে। সময় যে আর কাটতে চায় না।
 
এইবার যা হল তার কিছুটা আমি নিজের মুখেই বলি, কেমন? মিস্টার বেরা তো আমার মুখোশ খুলেই ফেলেছেন। এখন আর নাটক করে কি লাভ। তবে এখনও পুরোটা খুলতে পারেননি। তাছাড়া, একটা জিনিস ওনাকে জানানো আমার কর্তব্যের মধ্যে পড়ে। সেটা না বললে ওনাকে চিট করা হবে। যাই হোক। লাঞ্চ আওয়ার শুরু হতে এখনও ১০ মিনিট বাকি। ১০ মিনিট মানে ৬০০ সেকন্ড! বাইরে দাঁড়িয়ে থাকা চারজন অফিসার যেমন বার বার নিজেদের ঘড়ি দেখে চলেছেন, আমিও ঠিক তেমনই বার বার নিজের ঘড়ি দেখে চলেছি। তবে মোবাইল ঘড়ি নয়। বুক পকেটের ঘড়িটা। এইবার সময় এসেছে। আর ঠিক মিনিট দুয়েকের অপেক্ষা। সেকন্ডের কাঁটাটা টিকটিক করে ঘুরে চলেছেব্যস সময় শেষ। এইবার।
 
ক্লাসের বাইরে বিনা মেঘে যেন বাজ পড়ল, একবার নয়, পরপর দুই বার। কয়েক মুহূর্তের জন্য আবার সব চুপ। তারপর আবার পরপর কান ফাটানো দ্রুম দ্রুম শব্দ। আর সাথে সাথে আমাদের ক্লাসের ভেতরে ছোট একটা জিনিস এসে পড়ল মেঝের ওপর। পড়ার সাথে সাথে সেটা বার্স্ট করল, আবার ভয়ানক কান ফাটানো শব্দ। আর সেই সাথে ঘন ধোঁয়ায় ক্লাসরুম ভরে গেল নিমেষে। প্রাণবন্ত ক্লাস রুমটা এক নিমেষে কালো ধোঁয়ায় ঢাকা পড়ে গেল। প্রায় কিছুই দখেয়া যাচ্ছে না। আমি একটা চাপা চশমা চড়িয়ে নিলাম। আমার সিটের নিচেই আঠা দিয়ে আটকানো ছিল। ক্লাসের ভেতরে বাইরে, সব জায়গায় একসাথে হইচই শুরু হয়ে গেছে। আমাদের ক্লাস থেকে, পাশের ক্লাস থেকে, নিচের ফ্লোর থেকে, ঝাঁকে ঝাঁকে ছাত্র ছাত্রীরা ছুটে এলো আমাদের ক্লাসের দিকে। প্রফেসর সহ সবাই ছুট মেরেছে বাইরের দিকে। একমাত্র আমিই স্থির হয়ে বসে আছি। ম্যাদা মারা কুন্তলকেও উত্তেজিত দেখাচ্ছে। ও সিট ছেড়ে চলে যাওয়ার আগে চোখ ডলতে ডলতে আমাকে জিজ্ঞেস করল কিরে? গিয়ে দেখবি না কি হয়েছে?” আমি ধীরে ধীরে বেঞ্চ থেকে উঠে দাঁড়িয়ে বললাম যা হওয়ার হয়ে গেছে। এখন আর দৌড়াদৌড়ি করে কি লাভ। আমাকে বরং একবার বাথরুমে যেতে হবে।
 
বাইরে বেরনোর জো নেই। সবাই এর ওর ঘাড়ের ওপর চড়ে বসেছে। বলাই বাহুল্য চারটে প্রাণহীন রক্তাক্ত মৃতদেহকে ঘিরে সবাই দাঁড়িয়ে আছে। ওই যে অবশিষ্ট একজন অফিসার ছুটে আসছে জটলার দিকে। একে সরু প্যাসেজ, তার ওপর এতগুলো ছেলে মেয়ে একসাথে জমায়েত হয়ে চেঁচামেচি করে চলেছে। অফিসার নিজের আই কার্ড দেখিয়ে ওদের কিছু বোঝানোর চেষ্টা করে চলেছেন, কিছু জিজ্ঞেস করে চলেছেন ওদের বারবার, কিন্তু এই উত্তেজনা আর চিৎকারের মাঝে ওনার কথা কেই বা শুনবে। কোনও মতে ভিড় ঠেলে আমি ধীরে ধীরে বাথরুমের দিকে এগিয়ে চললাম। কাঁধে ল্যাপটপের ব্যাগ। তাছাড়া আমার হাতে আর কিছুই নেই। একটু হালকা হয়ে নেওয়া দরকার। তবে হাতে সময় বেশী নেই। তাই এই ফ্লোরের বাথরুমে না গিয়ে ইচ্ছে করেই নিচের ফ্লোরের বাথরুমে চলে গেলাম। জানি আর কিছুক্ষনের মধ্যেই বাইরে আরেকটা রেসকিউ টিম এসে হাজির হবে আমাকে ধাওয়া করে। কিন্তু তার আগেই আমাকে বিদায় নিতে হবে। ধীরে ধীরে ভিড় বাড়ছে। নিচে নামার আগে একবার পিছন দিকে তাকিয়ে দেখে নিলাম। সেই অফিসার ভিড়ের ভেতর হারিয়ে গেছেন। কয়েক সেকন্ডের ভেতর ভিড় যেন আরও বেড়ে গেছে। ভিড়ের ভেতর একবার রাকাকে খোঁজার চেষ্টা করলাম। কিন্তু পেলাম না। থাক সে সব পরেই হবে। নিচের ফ্লোর পুরো খালি। সেটাই স্বাভাবিক। উপরের ফ্লোর এখন লোকে লোকারণ্য। কিন্তু নিচের সব কটা ক্লাস খালি। বাথরুমের কাজ সারতে ১৫ মিনিটের মতন লেগে গেল, বা তার কিছু বেশী।
 
করিডোরের অন্য দিক থেকে আবার সিঁড়ি ভেঙ্গে উপরের ফ্লোরে গিয়ে হাজির হলাম। সিঁড়ির ঠিক মুখে দাঁড়িয়ে আছে সেই অফিসার। কানে মোবাইল। চেঁচিয়ে চেঁচিয়ে কি সব বলে চলেছেন। আমি ওনাকে ক্রস করার আগেই আমার একটা হাত চেপে ধরে বললেন বিশ্রী ব্যাপার হয়েছে। এই বয়সে আপনার ওই দিকে যাওয়া ঠিক নয়। আর প্রচণ্ড ধোয়া। আপনি ওই লিফটে করে নিচে নেমে যান। এই লিফট সাধারণ ছাত্র ছাত্রিদের ব্যবহারের জন্য নয়। শিক্ষক আর ডিফারেন্টলি চ্যালেঞ্জড ছাত্র ছাত্রিদের জন্য এই লিফট। ওনার কথা মতন আমি ধীরে ধীরে ওই লিফটের দিকে এগিয়ে চললাম। কিছুক্ষনের মধ্যে খালি লিফট এসে হাজির হল। আমি নিচে নেমে চললাম। রেসকিউ টিম এখনও এসে পৌঁছায়নি। গাড়িচড়ে কলেজ ছেড়ে বেরিয়ে যেতে আমাদেরকোনও বেগ পেতে হল না। বেশ কয়েকটা জায়গা আমাদের কভার করতে হবে। আর করতে হবে ভীষণ দ্রুত। শুধু একটা জায়গা কভার করা যাবে না। তবে সেটা নিয়ে এত চিন্তা করার কিছুই নেই।
 
৪৬
 
এর পর প্রায় ঘণ্টা খানেক সময় কেটে গেছে। কলেজের ক্যাম্পাস এখন অনেক শান্ত। ক্যাম্পাসের ভেতর পুলিশের ছড়াছড়ি। ১২ জন পুলিশের ডেড বডি চালান করার বন্দবস্ত হচ্ছে। সেই অবশিষ্ট অফিসারকে আর দেখতে পেলাম না। এইটা আমার জানার কথা নয় এই রিয়েল টাইমে। কিন্তু এই ব্যাপারে এখন আমি বলতে পারছি কারণ সেই আমাদেরআমি এখন বসে আছি কলেজ ক্যাম্পাসের বাইরে। আমাদেরবাকিরা নিজেদের গন্তব্যস্থলের দিকে এগিয়ে পড়েছে। কলেজের মেইন গেটের বাইরে যে বড় ভাত খাওয়ার হোটেলটা (হোটেল না বলে বড়সড় ঝুপড়ি বলা যেতে পারে এটাকে) আছে সেটার ভেতরে কলেজের দিকে মুখ করে বসে আমি আমার লাঞ্চ সারছি। মেনু? ভাত, ডাল, আলুভাজা, ডবল ডিমের অমলেট, মাছের ডিমের বড়া, আর পাবদা মাছের ঝাল, তাও আবার একটা নয় দুটো পাবদা নিয়েছি আজকে। কে জানে, এই খাবার খাওয়ার সুযোগ এরপর কবে পাওয়া যাবে! সুতরাং এই লাস্ট লাঞ্চটা একটু রাজকীয় ভাবে করা যাক। হোক না একটা শস্তা ঝুপড়ি, কিন্তু বৌদির রান্নার হাত খুব ভালো। তেল মশলা দিয়ে মন্দ রাঁধেন না। এই হোটেলের লোকজনের মধ্যেও ভীষণ হইচই পড়ে গেছে। ভাত দেওয়ার জন্য, ডাল দেওয়ার জন্য, ঝোল দেওয়ার জন্য বার বার ডাকতে হচ্ছে। আমার দিকে কারোর কোনও খেয়ালই নেই। খাওয়া দাওয়া শেষ করে কলেজ ক্যাম্পাসের ভেতর আবার প্রবেশ করলাম। শেষ বারের মতন।
 
ওই তো রাকা। ওকে একটা পুলিশের জিপে ওঠানো হচ্ছে। ও বারবার ব্যাকুল ভাবে এদিক ওদিক তাকাচ্ছে। ও কি নিজের গাড়ি অব্দি পৌঁছাতে পেরেছিল? ঠিক আছে। সেসব বোঝার উপায়ও আছে। ধীরে ধীরে ওর গাড়ির সামনে গিয়ে হাজির হলাম। ওর গাড়ির দিকে কারোর নজর নেই। সামনের ড্রাইভিং সিটের ওপর একবার নজর বুলিয়ে নিলাম। নাহ। ও নিজের গাড়ি অব্দি এসে পৌঁছাতে পারেনি। তার আগেই ওকে পুলিশের জিপে তুলে নেওয়া হয়েছে। তাহলে এইবার? এইবার, যবনিকা পতনের সময় এসে উপস্থিত হয়েছে।
 
মিস্টার বেরার দেওয়া লিস্ট অনুযায়ী সবাইকে থানায় নিয়ে আসা হয়েছে পুলিশের জিপে। শুধু মাত্র একজন সেখানে অনুপস্থিত। আমি। আবার আমি ঘটনাগুলো রঙ্গমঞ্চে ঘটে যাওয়া নাটকের মতন বর্ণনা করব। কারণ এই নাটকে আমি নিজে অনুপস্থিত। মিস্টার লাহিড়ীর ঘর এখন ভর্তি। তিল ধারনের জায়গা নেই। মিস্টার লাহিড়ীর সিটে বসে আছেন স্বয়ং মিস্টার বেরা। বাকি অফিসারদের জন্যও গাদাগাদি করে কোনও মতে চেয়ার এনে রাখা হয়েছে ঘরের ভেতর। মিস্টার বেরার মুখে হতাশার ছাপ স্পষ্ট। ওনার চোখদুটো কেমন জানি ছল ছল করছে। হাতে তিনটে সাদা রঙের লম্বা ফুল স্কেপ কাগজ ধরা আছে। সেই পাতাগুলোয় কালো কালিতে ছোট ছোট হরপে যে লেখাগুলো লেখা আছে তার ওপর বার বার চোখ বুলিয়ে নিচ্ছেন উনি। যত সময় যাচ্ছে, ওনার হতাশা ততই যেন বেড়ে চলেছে। অবশেষে, পাতাগুলোকে একটা ব্রাউন খামের মধ্যে ভরে রেখে উনি চারপাশের লোকজনের ওপর একবার চোখ বুলিয়ে নিলেন। ঘরে পুলিশের বা গোয়েন্দা বিভাগের লোক ছাড়া আরও অনেকে আছে। তাদের ব্যাপারে সংক্ষেপে লিখে দেওয়া ভালো।
 
১। মিসেস বেলা মুখার্জি।
 
২। মিসেস সুধা সান্যাল।
 
৩। মালিনী।
 
৪। রনি। (মালিনীর বর। ধন্যি ছেলের অধ্যাবসায়। একেও কাঁথি থেকে উঠিয়ে নিয়ে এসেছে লোক লাগিয়ে।)
 
৫। দোলন।
 
৬। রাকা।
 
৭। কুন্তল।
 
৮। মিসেস সঞ্চিতা বেরা।
 
৯। চন্দন নস্কর। (শ্যামা নস্করের বর।)
 
১০। মিস্টার অবিনাশ সান্যাল। (এনাকে ধরে আনা হয়নি। ইনি নিজে এসে হাজির হয়েছেন।)
 
১১। মিস্টার সত্যজিৎ ধর। (উকিল)
 
১২। ডঃ অরুপ চক্রবর্তী।
 
১৩। মিসেস রমা ব্যানার্জি। (ইনি মালিনীর সহকর্মী। একই হোটেলে কাজ করেন)
 
১৪। ব্লু রিসোর্টের ম্যানেজার মিস্টার বসন্ত মল্লিক।
 
১৫। ব্লু রিসোর্টের মালিক মিস্টার দত্ত।
 
১৬ মিস্টার মেহেরা আর ওনার দুজন বডি গার্ড।
 
১৭। টেবিলের এক পাশে দাঁড়িয়ে আছে হোটেল ব্লু রিসোর্টের ১০৭ নম্বর রুমের রুমবয় বাবুয়া!
 
এছাড়া এই মুহূর্তে আরেকজন আছে এই ঘরে। তাকে অবশ্য উঠিয়ে নিয়ে আসা হয়নি। সে এসেছে পেটের দায়ে। বা বলা ভালো তলপেটের দায়ে। গরীব বয়স্ক চা ওয়ালা। এই মুহূর্তে সে সবার হাতে হাতে চায়ের গ্লাস তুলে দিচ্ছে। কাপ নয়, গ্লাস। কাঁচের গ্লাসে চা যেমন হয় আর কি! ঘরে জমায়েত সবার হাতে হাতে চায়ের গ্লাস তুলে দিয়ে মিস্টার লাহিড়ীর হাত থেকে চায়ের দাম বুঝে নিয়ে সে বেরিয়ে গেল। ঘরের দরজা বন্ধ হয়ে গেল সশব্দে। ঠিক তার পরের মুহূর্তেই আবার খুলে গেল। মিস রাকা সান্যাল ঘরের বাইরে বেরিয়ে এসেছে। কি ব্যাপার? ওনার পেছনে একজন মহিলা পুলিশ। মিস সান্যাল টয়লেটে যাবে। দরজার মুখে দাঁড়িয়ে আছে সেই মহিলা অফিসার। বাথরুম থেকে বেরিয়ে আবার মিস সান্যাল সেই বদ্ধ ঘরের ভেতর ঢুকে পড়ল সেই মহিলা অফিসারের সাথে। দরজা আবার বন্ধ হল। ভেতর থেকে লক করে দেওয়া হল। 
[+] 1 user Likes pcirma's post
Like Reply


Messages In This Thread
RE: মুখোশ - The Mask by Daily Passenger - by pcirma - 05-03-2019, 04:00 PM



Users browsing this thread: