05-03-2019, 03:58 PM
“আরিফ আরেকটা জিনিস। শুধু ওই ১৫০ টা সিমের লোকেশন রিপোর্ট বের করে লাভ নাও হতে পারে। সংকেতের সাথে যাদের যাদের ফোনে যোগাযোগ ছিল, যেমন, রাকা, দোলন, মালিনী, বেলা মুখার্জি,সঞ্চিতা এদের সবার সিম লোকেশনের রিপোর্ট বের করো। “ মিস্টার খান একটু গলা খাঁকড়িয়ে বললেন “ মিসেস বেরার সিম লোকেশনের রিপোর্টটা বেরা করা কি সত্যি খুব জরুরি?” মিস্টার বেরা এইবার খেঁকিয়ে উঠেছেন “ কেন? আমার বউ বলে কি গোটা রাজ্যের মাথা কিনে নিয়েছেন? যা বলছি তাই করো। আর খুব কুইক করো। “ মিস্টার আরিফ বললেন “স্যার আরেকটা জিনিস অনেকক্ষণ ধরে মনে হচ্ছিল। আমরা সংকেতকে অ্যারেস্ট করছি না কেন?”
মিস্টার বেরা বললেন “ কতবার বলব যে বোকার মতন কথা বলবে না। ওর অপরাধটা কি? মিস্টার মেহেরার সাথে একই হোটেলে একই ফ্লোরে থাকা? ওর সাথে মিস্টার মেহেরার একবার ধাক্কা লেগেছিল? যার আবার কোনও প্রমান নেই। ওর ঘরে একটা ল্যাপটপ আছে যেটা চোরাই মাল? মালিনীর সাথে ওর সম্পর্ক ছিল? ১৫০ টা ভুয়ো নম্বর থেকে ওর কাছে ফোন এসেছিল বা এস এম এস এসেছিল? কিসের জন্য ওকে অ্যারেস্ট করব একবার বুঝিয়ে বলবে? প্রথম দিনেই আদালাত থেকে ও ছাড়া পেয়ে যাবে। আর তাতে হিতে বিপরীত হবে। পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে যে এই শহরে ও একা নয়। ওর ঘরে যে ফাইল নেই সেটা তো আমরা আগেই দেখেছি। তার মানে ফাইল আর ফিউস্টা অন্য কারোর কাছে আছে। ওকে গ্রেফতার করলেই সে সতর্ক হয়ে সরে পড়বে। ওর বিরুদ্ধে একদম কংক্রিট প্রমান পাওয়ার পর ওকে গ্রেফতার করতে হবে। আর একই সাথে ওর সাঙ্গপাঙ্গগুলোকেও গ্রেফতার করতে হবে। সবাইকে একই সাথে গ্রেফতার না করতে পারলে সব গুবলেট হয়ে যাবে আরিফ। তাই এখন বোকার মতন কথা বলো না। (একটু নরম হয়ে বললেন) শ্যামা নস্করের বাড়িতে যে অফিসার গেছিল সে কি ফিরেছে? ওই কালো স্যান্ট্রোর কোনও খবর পাওয়া গেল? ”
আরিফ আমতা আমতা করে বললেন “ ওই অফিসার এখনও ফেরেনি। কোলকাতার বা কোলকাতার চারপাশে যত রেজিস্টারড কালো রঙের স্যান্ট্রো আছে সবগুলোর ইনফরমেশন আমাদের হাতে চলে এসেছে। আমরা এক এক করে ইনভেস্টিগেট করে দেখছি। “ মিস্টার বেরা বললেন “ব্যাপারটা জানি যে ওয়াইল্ড গুজ চেজ করা হচ্ছে। তবুও বলছি। প্রত্যেকটা গাড়ির মালিকের ব্যাপারে খোঁজ নাও। দেখো কারোর সাথে কোনও ভাবে সংকেতকে লিঙ্ক করা যায় কিনা? আমি দশ মিনিট বাইরে থেকে হেঁটে আসছি। তারপর আমরা ডাইরির প্রশ্নগুলো নিয়ে আলোচনা করব।” মিস্টার বেরা ঘর থেকে হন হন করে বেরিয়ে গেলেন।
মিস্টার বেরা ঘর থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পর প্রায় পনের মিনিট কেটে গেছে। সবাই রেডি। চাও এসে গেছে। মিস্টার বেরা ফিরে এলেন হাতে দুটো প্লাস্তিকের থলি। বললেন “ আরিফ দরজা বন্ধ করে দাও। কয়েকটা গ্লাস নিয়ে এসো। এখন আর গলা দিয়ে চা নামবে না। যা বিষ মালের সাথে পালা পড়েছে না… গলা দিয়ে একটু বিষ না ঢাললে হচ্ছে না। “ সবাই বুঝে গেছে যে থলিতে কি আছে। রবিন বাবু বললেন “এত রাতে পেলেন কোথা থেকে?” মিস্টার বেরা বললেন “ ব্ল্যাকে কিনেছি, এই কথাটা কি ঢাক পিটিয়ে না বললেই নয়। “
আসর শুরু করার আগে অবশ্য সেই অফিসারের বয়ান নিয়ে নেওয়া হল। এই অফিসার তার পুরো নেটওয়ার্ক লাগিয়ে কিছু তথ্য কালেক্ট করেছেন। “স্যার, ওই পাড়াতে চুরি চামারি হচ্ছে সেটা ঠিক। কিন্তু সবাই জানে ওটা আপনার বাড়ি। আর ইয়ে, মানে আমরা তো সবাই জানি যে কোন এরিয়া কার? মানে কোন গ্রুপের কোন এরিয়া সেটা তো আগে থেকেই একদম ভাগাভাগি করা থাকে। আমি প্রায় সব কটা গ্রুপের সাথে কথা বলে ভেরিফাই করেছি যে কেউ জ্ঞানত আপনার বাড়িতে চুরি করতে যায়নি। একবারের জন্যও নয়। আর আমার নেটওয়ার্ক বলছে এই বাজারে আর কোনও নতুন চোর আসেনি। আমি একদম সিওর। দরকার হলে সবকটাকে এক্ষুনি তুলে নিয়ে আসতে পারি। স্যার নতুন চোর এলে আমাদেরও আগে সেই এরিয়ার চোরেরা জেনে যাবে। কারণ তাদের পেটেই তো লা...।”
মিস্টার বেরা হাত তুলে ওনাকে বিদায় দিলেন। দরজা বন্ধ হল। গ্লাস সাজিয়ে রাখা আছে। মিসেস রাহার জন্য ভদকা নিয়ে এসেছেন মিস্টার বেরা। মিসেস রাহা শুরুতেই জানিয়ে দিয়েছেন যে উনি খুবই অল্প করে নেবেন। গ্লাসে পানীয় ঢেলে একে একে সবাই চিয়ার্স বলল, মিস্টার বেরা চিয়ার্স না বলে বললেন “ হ্যাং সংকেত রায়। মিস্টার রাহা শুরু করা যাক। আপনি বলুন। আমরা ক্রস করব যখন যেমন দরকার হবে। “
মিস্টার রাহা আরম্ভ করলেন। “ মিস্টার বেরা একটা সিগারেট পাওয়া যাবে? মদের সাথে সিগারেট না পেলে…” একটা সিগারেট ধরিয়ে উনি শুরু করলেন “ মিস্টার বেরা কোনও পয়েন্ট নিয়ে এগোনোর আগে কিছু কথা আমি অ্যাজ এ ক্রিমিনাল সাইকলজিস্ট বলতে চাই। কিছু মিস করলে আমার গিন্নি সেই ব্যাপারে পাদপূরণ করে দেবেন। আপনি একজন পোর খাওয়া ইনভেস্টিগেটর। আপনি জানেন, যে কোনও ক্রাইম ক্র্যাক করতে গেলে প্রথমে ক্রাইমের প্যাটার্নটা বুঝতে হয়। ক্রিমিনালের কাজ করার প্যাটার্ন বুঝতে হয়। সেটা ধরতে পারলেই আমাদের ৯০% কাজ শেষ। তারপর সেই লোককে ধরা ইস জাস্ট অ্যা ম্যাটার অফ টাইম। আপনি আপনার ডাইরিতে যে প্রশ্নগুলো লিখেছেন আর চার পাশে যা যা হয়েছে, তার থেকে কোনও প্যাটার্ন ধরতে পেরেছেন? বা কোনও বিশেষত্ব লক্ষ্য করেছেন গোটা ব্যাপারটার ভেতর? ”
মিস্টার বেরা বললেন “ আমার নিজস্ব একটা হাইপোথিসিস তৈরি। বাইরে হাঁটতে গিয়ে সেটা ভেবে ফেলেছি। কিন্তু আগে আপনি বলবেন, আমি শুধু ভেরিফাই করব যে আমারটা আপনার সাথে মিলছে কি না!” মিস্টার রাহা বললেন “ সেটা না করে আপনি নিজের হাইপোথিসিসটা তুলে ধরুন। কারণ অনেক জিনিস আছে এই কেসের ব্যাপারে যেগুলো আমি জানি না। কিন্তু আপনি জানেন। আমি তো এই কিছুক্ষণ হল এসেছি। তবে আমি বলব , একটা একটা করে প্রশ্নের পিছনে ধাওয়া না করে ওভার অল একটা হাইপথিসিস সাজানোর চেষ্টা করুন। কোথাও মতের অমিল হলে আমি বলে দেব। “
মিস্টার বেরা একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে শুরু করলেন। “ প্রথমেই বলে রাখি যে আমরা শিখার মৃত্যুর ব্যাপারে কোনও কথা বলছি না। এখানে সংকেত কে বোঝার চেষ্টা করছি। বা ওর কাজ কর্মের প্যাটার্ন বোঝার চেষ্টা করছি। আমার আগের হাইপোথিসিসগুলোতে আমি অলরেডি বলেছি কেন এটা ভাবার যথেষ্ট কারণ আছে যে সংকেত এখানে এসেছে মিস্টার মেহেরার কাছ থেকে ওই মূল্যবান জিনিসগুলো হাতিয়ে নিতে। এইবার আরও ব্রড ওয়েতে ভাবার চেষ্টা করছি। তার আগে একটা জিনিস বলছি আরিফ। আজ সকাল হতে না হতে, মালিনীকে উঠিয়ে নিয়ে এসো। ওর কাছ থেকে আমার অনেক কিছু জানার আছে। “
১। সংকেত এই শহরে আসছে মিস্টার মেহেরার জিনিস হাতিয়ে নিতে।
২। সংকেত মিস্টার মেহেরার সাথে একই হোটেলে একই ফ্লোরে রুম বুক করে থাকতে লাগলো।
৩। সেখানে ঘটনাচক্রে ও জানতে পারল যে মালিনীর ভাই ওরই ক্লাসমেট।
৪। ওই ভাইয়ের সুযোগ নিয়ে ও মালিনীর সাথে আলাপ করল। ওদের ঘনিষ্ঠতা হল। এখানে একটা কথা বলে রাখি, মালিনীর সাথে না হলে অন্য কারোর সাথে ও ঘনিষ্ঠতা করতে চাইত, কারণ যে হোটেলে ও আছে সেই হোটেলের নাড়ি নক্ষত্র ওকে জানতে হবে।
৫। মালিনী ওর ফাঁদে পা দিল।
৬। মালিনীর কাছ থেকে কোনও মতে ও জানতে পারল যে ফার্স্ট ফ্লোরের ক্যামেরা কাজ করে না। (আরিফ পুরো জিনিসটা নোট করছেন। এখানে মিস্টার রাহা বাঁধা দিয়ে বললেন, “মিস্টার খান, এখানে একটা প্রশ্ন বোধক চিহ্ন দিয়ে রাখুন।” মিস্টার বেরা এগিয়ে চললেন...) যদি ফার্স্ট ফ্লোরের ক্যামেরা কাজ করত তাহলে ও কি উপায় অবলম্বন করত সেটা এখন ভেবে লাভ নেই। হতে পারে অন্য কোনও প্ল্যান ছিল কিন্তু ক্যামেরা কাজ না করায় ওর যে কিছুটা সুবিধা হয়েছে সেটা তো মানতেই হবে। মদ্যা কথা মালিনীর কাছ থেকে ও জানতে পারে যে ক্যামেরা কাজ করছে না।
৭। মিস্টার মেহেরার পকেট মেরে চাবি হাতানো, এবং …
মিস্টার রাহা এইবার নড়ে চড়ে বসলেন “ এইখানে আমি কিছু বলতে চাই। ব্যাপারটা অন্য বেশ কয়েকটা জিনিসের সাথে খাপে খাপে বসে যাবে। এখানে প্যাটার্নের কথা আসছে। সংকেত মিস্টার মেহেরার পকেট থেকে চাবি হাতায় এবং ওনার ঘরে ঢুকে ভিডিও ক্যামেরা আর মাইক্রফোন বসিয়ে দিয়ে আসে। আর তাই ওর সেই কাজ করতে গিয়ে ১৫-২০ মিনিট সময় নষ্ট হয়ে যায়। এরপর থেকে ওই ঘরের ভেতর যা যা হয়েছে, তার সবকিছু সংকেত দুটো ঘর পরে বসে জানতে পেরেছে, দেখতে পেয়েছে। এইভাবেই ও জানতে পারে যে একটা ফিউস তৈরি হচ্ছে। এইভাবেই ও জানতে পারে যে কবে ফিউসটা মিস্টার মেহেরার হাতে আসছে। মানে ও সব কিছু দেখতে পেত, শুনতে পেত।”
মিস্টার আরিফ বললেন “স্যার এখানে একটা সামান্য ক্রস করতে পারি?” মিস্টার বেরা বললেন “অবশ্যই।” আরিফ বললেন “ স্যার একটা জিনিস মাথায় ঢুকছে না। সংকেত যে জাতের ধুরন্ধর, তাতে ওর পকেট মারার দরকার হল কেন? এইসব প্রফেশনলরা তো চাবি ছাড়াই যেকোনো তালা খুলতে পারে বলে শুনেছি বা দেখেছি।” মিস্টার বেরা উত্তর দিলেন “ ভুলে যেও না আরিফ, ফার্স্ট ফ্লোরের ক্যামেরা বন্ধ হতে পারে। কিন্তু গেস্ট আর রুম বয়ের যাতায়াত সর্বক্ষণ লেগেই আছে। ওই চাবি খুলতে গিয়ে ওর দেরী হলে কেউ না কেউ ওকে দেখে ফেলতে পারত। যখন মিস্টার মেহেরার ঘরে কোনও ভি আই পি আসত পেছনের গেট দিয়ে শুধু তখনই ফার্স্ট ফ্লোর থেকে সব রুম বয়দের সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হত। এক্ষেত্রে ঘরের চাবি দিয়ে তালা খুলতে কম সময় লাগবে, আর সেটাই সব থেকে সেফ।”
সুতরাং পুরো হাইপোথিসিসটা কি দাঁড়াচ্ছে? মিস্টার মেহেরা এখন ওর কব্জায় চলে এলো, কারণ ওনার ঘরের ভেতর স্পাইক্যাম আর মাইক্রোফোন সেট করা আছে। মিস্টার রাহা বললেন “এর পরের কথাগুলো আমি আরেকটু গুছিয়ে বলছি।” মিস্টার রাহা বলে চললেন।
৮। এইবার অন্য দিক থেকে ভাবা যাক। জিনিসটা চুরি করে সব কিছু পরিষ্কার করে পালাতে একটু হলেও সময় লাগবে। আর ন্যাশনাল সিকিউরিটি নিয়ে কোনও প্রশ্ন হলে বেস্ট অফিসারকেই সেই দায়িত্ব দেওয়া হবে। অ্যান্ড অফ কর্স দা বেস্ট আর অবভিয়াস চয়েস হল অর্জুন বেরা। (মিস্টার বেরা ছাড়া ঘরের বাকি সবাই হো হো করে হেসেউঠলেন) আর এই সব ব্যাপারে সরকার একফোঁটা দেরী করবে না। কারণ এই জিনিসে গাফিলতি হলে গোটা দেশ লুটে যাবে।
৯। সংকেত এখানে আসার আগেই চুরি করার পরের এক্সিট প্ল্যান গুলো ঠিক করে ফেলল। ও জানে জিনিসটা চুরি যেতে না যেতেই অর্জুন এসে ওর ঘাড়ের ওপর নিঃশ্বাস ফেলা শুরু করবে। অতএব? এখানে আসার আগেই ও অর্জুন বেরার ব্যাপারে সব খবর কালেক্ট করে নিল।
১০। কিন্তু অর্জুনের ব্যাপারে শুধু খবর নিয়ে কি হবে? অর্জুনের আক্রমণ থেকে নিজেকে বাঁচাতে হলে ওকে সব সময় অর্জুনের থেকে অন্তত এক পা এগিয়ে থাকতে হবে। অর্থাৎ অর্জুন কি করছে, কি ভাবছে, অর্জুনের কাজ করার প্যাটার্ন এগুলো যতটা সম্ভব আগে ভাগে ওকে জানতেই হবে। নইলে জিনিসটা চুরি যাওয়ার পর ও ফেঁসে যেতে পারে। ও জানে অর্জুন কি ধাতুতে গড়া। সুতরাং এখানে এসেই ও হানা দিল বাঘের ডেরায়।
ঠিক এই সময় কেন জানি না, রবিন দাসের পাশে বসে থাকা অফিসারটি ভীষণ ব্যস্ত হয়ে উঠলেন। মিস্টার বেরা বললেন “ তুমি কিছু বলবে?” উনি এতক্ষন ধরে বসে বসে আমার কল রেকর্ড আর সিম লোকেশন রিপোর্ট খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে চেক করছিলেন। উনি বললেন “স্যার জানি না, ব্যাপারটা সম্পূর্ণ ভাবে কাকতালীয় কিনা। তবুও বলছি। বেশ কয়েকটা অদ্ভুত জিনিস ওর সিম লোকেশন থেকে আমি পাচ্ছি। কিন্তু তার মধ্যে দুয়েকটা জিনিস এখন না বললেই নয়। (একটু থেমে বললেন) মনে হয় মিস্টার রাহা খুব একটা ভুল বলছেন না। স্যার, হোটেল থেকে সংকেতকে কলেজে যেতে হলে যে পথে যেতে হবে আপনার বাড়ি ঠিক তার উল্টো পথে।
কিন্তু আশ্চর্য ব্যাপার হল, সংকেত কোলকাতায় আসার ঠিক পরের দিন সকাল ৭ টার কিছু আগে থেকে আপনার বাড়ির চারপাশে ঘুরঘুর করছিল। ৭.১০ অব্দি আপনার বাড়ির চারপাশে ঘুরঘুর করে ও আবার নিজের হোটেলে ফিরে যায়।
এইবার তার পরের দিনের রিপোর্ট বলছে, ঠিক ৭ টার সময় ও আপনার বাড়ির সামনে গিয়ে হাজির হয়। ৭.১৫ অব্দি ওখানে থেকে আবার হোটেলে ফিরে আসে।
তার পরের দিনের রিপোর্ট বলছে, ৭.২৮ মিনিটে ও আপনার বাড়ির কাছে গিয়ে পৌঁছায় এবং ৭.৫৮ অব্দি ও ওখানেই ছিল (এই দিন আমি সবার জন্য জন্মদিনের স্যান্ডউইচ প্যাক করতে গেছিলাম)। তারপর ও আবার কলেজের দিকে রওয়ানা দেয়।
সব থেকে ইন্টারেস্টিং হচ্ছে তার পরের দিনের রিপোর্ট। সেদিন ও ঠিক ৮.০২ এ আপনার বাড়ির সামনে গিয়ে পৌঁছায়। ৮.৩৫ অব্দি ও আপনার বাড়ির লোকেশনেই ছিল। তারপর কলেজের দিকে রওয়ানা দেয়। (এই দিন ফার্স্ট পিরিয়ড ছিল সঞ্চিতা ম্যাডামের। এই দিন আমি বেশ কিছুটা লেটে ক্লাসে ঢুকেছিলাম, আর সেজন্য ম্যাডামের কাছ থেকে ডিসিপ্লিন ইত্যাদি নিয়ে বেশ কিছু লেকচারও শুনতে হয়েছিল। )”
অফিসার থামলেন। সিম লোকেশনের কাগজগুলো সবার হাত ঘুরে আবার সেই অফিসারের হাতে গিয়ে পৌছালো। অফিসার আবার শুরু করলেন “ জাস্ট আরও দুটো কথা বলতে চাইছি।” মিস্টার বেরা ওনাকে থামিয়ে বললেন “ তার আগে বল, এই দিনটা শুক্রবার তাই তো?” অফিসার বলল “ হ্যাঁ মানে, ও সাড়ে আটটা অব্দি যেদিন আপনার বাড়ির চারপাশে ছিল, সেদিন ছিল শুক্রবার। আমি কিন্তু তার পরের দিনের কথা বলতে চাইছি। মানে শনিবারের। “ মিস্টার বেরা ওকে থামিয়ে দিয়ে বললেন “ আর শুনে লাভ নেই। মিস্টার রাহা ১০ নম্বর হাইপোথিসিসটা শুরু করেছিলেন। আমি সেটা খতম করছি এইবার। সংকেত সোমবার এসে পৌছালো কোলকাতায়। মঙ্গল, বুধ, বৃহস্পতি, এই তিন দিন আমার বাড়ির ওপর নজর রাখল। ও দেখে নিল সকাল বেলায় কে কে আমাদের বাড়িতে আসে, কে কখন বেরোয়। সঞ্চিতা প্রত্যেকদিন ৮ টা থেকে ৮.০৫ এর মধ্যে বেরিয়ে যায়। ৮.৩০ থেকে ওর ক্লাস থাকে। ৮ টার পর থেকে আমাদের বাড়ি মোটামুটি খালি হয়ে যায়। শুক্রবার ও ৮ টার সময় গিয়ে আমার বাড়ির সামনে হাজির হয়। এই রকম ক্রিমিনালের কাছে বাড়ির তালা খোলা যে এমন কোনও ব্যাপার নয় সেটা তো আরিফ আগেই বলেছে। ও নিজের কলা কৌশল খাটিয়ে বাড়ির তালা খুলে ভেতরে প্রবেশ করল। সারা বাড়িতে স্পাই ক্যামেরা আর মাইক্রো ফোন সেট করে বেরিয়ে গেল। ক্লাসে ঢুকতে একটু লেট হল বটে, কিন্তু আসল কাজ হয়ে গেছে। এখন ওর চোখ আর কান দুটোই আমাদের বাড়িতে গোপনে বসানো আছে।
১১। সঞ্চিতা বাড়ি ফেরার পর ওর সাথে সেদিন আমার অনেকক্ষণ ধরে ফোনে কথা হয়। বৃহস্পতিবার রাতেই আমাদের বাড়ি থেকে দুটো বাড়ি পরে চোর এসেছিল। অনেক কিছু নিয়ে গেছে। সেই নিয়ে ও খুব চেঁচামেচি করছিল ফোনে। বার বার বলছিল দোতলার খালি ঘরটাতে একজন পেয়িং গেস্ট রাখার কথা। কথাটা ও বলতে চেয়েছিল আমাকে, কিন্তু শুনে ফেলল সংকেত।
১২। সংকেত আমার ব্যাপারে তখন অনেক কিছু জেনে গেছে। ডিফেন্সের সেই ইললিগ্যাল ওয়েপণ ডিলারদের যে ফাইলগুলো আমার বাড়ি থেকে গতকাল চুরি গেছে সেই ফাইলগুলোর অস্তিত্বের ব্যাপারে ও আশা করছি ইতিমধ্যে জেনে গেছে। কোনও ভাবে ও জানতে পেরেছিল যে ফাইলগুলো আছে আমার বাড়িতে। এদের সোর্সের তো আর অভাব নেই!
১৩। ও যখন কোলকাতায় এসেছিল তখন ওর হাতে ছিল তিনটে মাত্র টার্গেটঃ
-- মিস্টার মেহেরার ঘর থেকে জিনিস হাতানো
-- মিস্টার মুখার্জির হত্যা
-- মিস্টার মুখার্জির বাড়ি থেকে সেই ফিউস রিলেটেড ফাইলের লাস্ট কপিটা সরিয়ে ফেলে ওনার ল্যাপটপের হার্ড ড্রাইভটা বদলে ফেলা।
১৪। কিন্তু এইবার, সঞ্চিতা একা থাকতে ভয় পায়, বাড়িতে পেয়িং গেস্ট বসাতে চায়, আমার বাড়িতে ওয়েপন ডিলারদের ফাইল আছে- এই ৩ টে তথ্যের ওপর ভিত্তি করে ও একটা আরেকটা বাড়তি প্ল্যান বানিয়ে ফেলল।
-- মিস্টার মুখার্জির বাড়ি থেকে ফাইল হাতানর সময় মিস্টার মুখার্জির আর যেসব আর্মস রিলেটেড গবেষণার ফাইল আছে সেগুলোও সংকেত হাতিয়ে নেবে।
-- আমার বাড়িতে এন্ট্রি নিয়ে অয়েপন ডিলারদের ফাইলগুলো হাতিয়ে নেবে।
-- মিস্টার মুখার্জির বাড়ি থেকে চুরি করা বাদ বাকি ফাইলগুলো ও এই অয়েপন ডিলারদের কাছে চড়া দামে বেচে দেবে। অর্থাৎ ফাইলগুলো চুরি করার পর ওকে আর খদ্দের ধরার জন্য হন্যে হয়ে ঘুরতে হবে না। মানতেই হবে ছেলেটার মাথায় কিছু দিয়েছেন ভগবান।
১৫। ওর শুধু আমাদের বাড়ির ভেতর ক্যামেরা আর মাইক্রোফোন সেট করলেই চলত। কিন্তু এই বাড়তি প্ল্যানটা মাথায় আসার সাথে সাথে ও মরিয়া হয়ে উঠল আমাদের বাড়ির ভেতর এন্ট্রি নেওয়ার জন্য।
১৬। স্পষ্ট মনে আছে শুক্রবার রাতেই আমাদের বাড়িতে চোর আসে। অবশ্য সংকেত নিজে আসেনি। সংকেতের কোনও সাকরেদ কে দিয়ে এই কাজটা করিয়েছে। কেন? সঞ্চিতাকে আরও ভয় দেখানো। পাশের বাড়িতে চুরি হলে যে মেয়ে ভয়ে কাঁপতে থাকে তার নিজের বাড়িতে চোর পড়লে তো আর কথাই নেই। ফলও হল সেই মতন। সঞ্চিতা শুক্রবার রাতেই আবার ফোন করে আমাকে বলল যে এইবার হয় একটা পেয়িং গেস্ট বসাতে হবে অথবা একটা পাহারাদার। সংকেতের কাজ সোজা হয়ে গেল।
১৭। শনিবার করে বিকাল বেলায় সঞ্চিতা বাজার করতে যায়। সপ্তাহের বাজার। খবরটা সংকেত পেয়ে গেল। কিভাবে পেয়ে গেল সেটা নিয়ে ভেবে এখন আর কোনও লাভ নেই। হতে পারে এই নিয়ে সঞ্চিতা কাউকে কিছু বলেছে, বা ওর ওপর আগে থেকেই নজর রাখা হচ্ছিল। যাই হোক, সংকেত শনিবার সন্ধ্যের দিকে গিয়ে হাজির হল বাজারের ঠিক মুখে। উনি অফিসারের দিকে তাকিয়ে বললেন “কি এটাই বলতে চাইছিলে তো?” অফিসার হেসেমাথা নাড়াল। মিস্টার বেরা বলে চললেন।
১৮। সঞ্চিতার সাথে সংকেতের বাজারের সামনে দেখা হয়। সঞ্চিতা মনে করল ব্যাপারটা কাকতালীয়। সংকেত ওর জিনিস বয়ে নিয়ে বাড়ি অব্দি পৌঁছে দিয়ে যায়। সঞ্চিতা ওকে বাড়ির ভেতর ডেকে বসতে বলে। কথাবার্তার ফাঁকে সংকেত ওকে জানিয়ে দেয় যে ও সস্তায় মেস খুঁজছে। অর্থাৎ সঞ্চিতা যে জিনিসটা পাওয়ার জন্য বাড়িতে চোর আসার পর থেকে মরিয়া হয়ে উঠছে, ও ঠিক সেই জিনিসটাই ওর মুখের সামনে সাজিয়ে গুছিয়ে তুলে ধরল।
১৯। সঞ্চিতা ওর ফাঁদে পা দিল। রাতে আমার সাথে কথা হল। আমিও গোটা ব্যাপারটা তখন বুঝতে পারিনি। আমি সায় দিলাম। সঞ্চিতা সংকেতকে ডেকে পাঠাল। মোটের ওপর সংকেত যেটা চাইছিল, সেটা ও পেয়ে গেল। আমাদের বাড়িতে এন্ট্রি।
২০। মনে করে দেখো,শনিবারই মিস্টার মেহেরা মিসিং কির ব্যাপারে কমপ্লেন করেছিলেন। আর ওই দিনই হোটেলে সংকেত সেই সিকিউরিটি পিটিয়ে অদ্ভুত একটা নাটক করেছিল। সকালে ও মিস্টার মেহেরার ঘরে ক্যামেরা আর মাইক্রোফোন বসালো। সন্ধ্যায় আমার বাড়িতে প্রবেশ করার পথ পুরো সাফ করে ফেলল। ওর এখন মাত্র দুটো কাজ বাকি।
ক। মিস্টার মুখার্জিকে হত্যা, কারণ উনি বেঁচে থাকলে ওই ফিউস উনি আরেকবার বানিয়ে ফেলবেন।
খ। যেকোনো ছুতোয় মিস্টার মুখার্জির বাড়িতে অবাধ যাতায়াতের পারমিশন।
২১। তারপর, এইটা আমার একটু দুর্বল হাইপোথিসিস, কিন্তু আগেও বলছি, এখনও আরেকবার বলছি, মিস্টার মুখার্জিকে বাইরে পাবলিক প্লেসে নিয়ে আসতে না পারলে তাকে হত্যা করা খুব কঠিন। বাড়িতে ঢুকে মারার কোনও প্রশ্নই ওঠে না। ও সেদিনই রাতে দোলন ইত্যাদিদের সাথে পার্টি করতে গেল। জানতে পারল সবাই মদ্যপ অবস্থায় মন্দারমনি যাওয়ার প্ল্যান করছে সেই রাতে। এক ঢিলে দুই পাখি মারল ও। দীপককে হাত করে গাড়ির দুর্ঘটনা করে শান্তনু মুখার্জিকে মেরে ফেলল।
২২। রঞ্জন মুখার্জি পাবলিক প্লেসে আসতে বাধ্য হলেন। সেই হাসপাতাল। কি করে রঞ্জন মুখার্জিকে ও হত্যা করল সেটা এখনও জানি না। তবে ব্যোমকেশ বক্সির পথের কাঁটা যারা পড়েছেন, তারা অনুমান করতে পারেন কিভাবে পাবলিক প্লেসে সকলের সামনে অনুরূপ একটা অত্যাধুনিক যন্ত্রের সাহায্যে ও রঞ্জন মুখার্জিকে হত্যা করেছিল। হত্যার পদ্ধতি বুঝতে পারছি, কিন্তু যন্ত্রের কথাটা এখনও জানি না। কিন্তু পরের ঘটনাটা জলের মতন পরিষ্কার।
২৩। এইটা সেদিন কার অফিসারের বয়ান অনুযায়ী ফাইলেই আছে। সংকেত সবার সামনে ইঙ্গিত করল যে রঞ্জন বাবুর হত্যা দীপকেরই কোনও লোকের কাজ। কারণ রাজনৈতিক প্রতিহিংসা। ফাইলে দেখেছি, একটা জায়গায় নোট করা আছে, সংকেত সবার সামনে দীপককে বলেছিল যে দীপক যদি খুন করে থাকে তো ও বাইরে বেরনোর সাথে সাথে খতম হয়ে যাবে, মিস্টার মুখার্জির পার্টির লোকজন দীপককে মেরে ফেলবে। সংকেত সেই সাথে আরও বলল... সংকেত নিজে যদি দীপকের জায়গায় থাকত তাহলে ও সুইসাইড করে নিত। লাহিড়ীও তখন ওখানে ছিল। কি ঠিক বলছি না? (মিস্টার লাহিড়ী নিরবে মাথা নাড়িয়ে বললেন “স্যার ও দীপকের দিকে একদম তেড়ে গেছিল। বেশ বুঝতে পারছিলাম যে দীপক ওর কথা বার্তা শুনে ভয় পেয়েছে। তখনই ও দীপককে বলে যে আমি তোমার জায়গায় থাকলে কি করতাম জানো? আমি নিজে সুইসাইড করে নিতাম। তোমার বাচার সব রাস্তা এখন বন্ধ। আর তারপরেই তো স্যার জানেন। আমি অবশ্য তখন ভেবেছিলাম যে পার্টির লোকের হাতে মরার কথা বলছে ওই ছেলেটা, কিন্তু আপনার কথা ঠিক হলে তো গোটা ব্যাপারটাই...” মিস্টার বেরা আবার শুরু করলেন...) লাহিড়ীর এক অফিসার এই নোটটা নিয়েছিল। এইবার কাজের কথায় আসা যাক। সবাই শুনল সংকেত বলছে যে মিস্টার মুখার্জির পার্টির লোক দীপককে মেরে ফেলবে। কিন্তু দীপক শুনল অন্য কথা। ও শুনল, ও বাইরে বেরলেই সংকেত ওকে খুন করে দেবে। আর সংকেত ওকে বলছে যে তুই নিজেই সুইসাইড করে নে। এইবার …
মিস্টার বেরার চারপাশের লোকজন এই হাইপোথিসিসটা শুনে একটু উসখুস করতে শুরু করে দিয়েছে দেখে উনি বললেন “দাঁড়াও। আমি জানি কেন তোমাদের কনফিউশন হচ্ছে। কনফিউশন আমারও একটা আছে। আরিফ চট করে দীপক যে হোস্টেলে থাকত তার নাম্বার ডায়াল কর। স্পিকারে দাও। যতক্ষণ না কেউ ফোন তোলে রিং করতে থাকো। এই ব্যাপারটার একটা হেস্ত নেস্ত হওয়া দরকার। কেন দীপক সংকেতের কথায় ওই দুর্ঘটনাটা ঘটাল? আর কেনই বা সংকেতকে ও এত ভয় পায়? “ আরিফ বললেন “ স্যার আপনি কেন দীপককে সংকেতের সাথে জড়াচ্ছেন সেটা কিন্তু ঠিক বুঝতে পারছি না।”
উত্তরটা দিলেন মিস্টার রাহা। বললেন “মিস্টার খান, কারণ এছাড়া ব্যাপারটা দাঁড়ায় না। এখন একটাই জিনিস জানতে হবে যে দীপকের সাথে সংকেতের যোগ সাজশ হল কি করে?” কথা মতন কাজ হল। প্রায় ভোর রাত, কিন্তু তাও একজন এসে ফোন ধরল। মিস্টার বেরা বললেন “ আমি থানা থেকে অর্জুন বেরা কথা বলছি। বিশেষ দরকার আছে ফোন কাটবেন না। এটা সরকারি ব্যাপার। “ ঘুম জড়ানো গলায় বললেন “ বলুন। আমি এখানকার কেয়ারটেকার। আমার নাম বিকাশ পাল। “ মিস্টার বেরা বললেন “ মিস্টার পাল, এরকম অসময়ে আপনাকে বিরক্ত করার জন্য দুঃখিত। কিন্তু আমাদের এখনই দীপক বলে ওই ছেলেটার ব্যাপারে কিছু কথা বলতে হবে। “ উনি বললেন “ ছেলেটা তো মারা গেছে। সুইসাইড…” মিস্টার বেরা বললেন “জানি। ওর সব থেকে কাছের বন্ধু কে ছিল। তাকে একটু ফোনটা দিন। “
ভদ্রলোক একটু ভেবে বললেন “স্যার দীপকের খুব কাছের লোক...দাঁড়ান আছে। ওই দীপকের সাথে কাজ করত। জানেনই তো ও পলিটিকাল …” বুঝলাম গুণ্ডা কথাটা আগবাড়িয়ে বলতে পারলেন না ভদ্রলোক। সবাই অপেক্ষা করছে। বেশ কিছুক্ষণ পরে একটা ছেলে জড়ানো গলায় বলল “হ্যালো।” মিস্টার বেরা সরাসরি কাজের কথায় চলে গেলেন “ তোমার নাম?” উত্তর এলো “সন্দীপন।” মিস্টার বেরা বললেন “আমি অর্জুন বেরা কথা বলছি। “ ছেলেটার যেন চমক ভেঙেছে। “ও স্যার আপনি, বলুন স্যার। “ মিস্টার বেরা বললেন “ তুমি দীপকের সবথেকে কাছের বন্ধু ছিলে?” ছেলেটা বলল “হ্যাঁ স্যার। ও সব কথা আমাকে বলত। আমি ছিলাম ওর ডান হাত।” মিস্টার বেরা বললেন “ সরাসরি একটা প্রশ্ন করছি। সংকেতের সাথে দীপকের আলাপ হয় কি ভাবে একদম ডিটেলে বলো। ওয়েট! আরেকটা প্রশ্ন আছে। দীপক সংকেতকে ভয় পেত কেন? তুমি যদি সত্যিই ওর ডান হাত হয়ে থাকো তো তোমার এই প্রশ্নের উত্তর জানা উচিৎ। আর হ্যাঁ, কিছু বলার আগে ভেবে চিনতে বলো। কারণ আমাদের যদি তোমার কোনও কথা শুনে খটকা লাগে, তাহলে তোমাকে থানায় উঠিয়ে নিয়ে এসে পিটিয়ে তোমার পেট থেকে সব কথা বার করব। এবং সেটা আমরা করব এখনই। ”
মিস্টার বেরা বললেন “ কতবার বলব যে বোকার মতন কথা বলবে না। ওর অপরাধটা কি? মিস্টার মেহেরার সাথে একই হোটেলে একই ফ্লোরে থাকা? ওর সাথে মিস্টার মেহেরার একবার ধাক্কা লেগেছিল? যার আবার কোনও প্রমান নেই। ওর ঘরে একটা ল্যাপটপ আছে যেটা চোরাই মাল? মালিনীর সাথে ওর সম্পর্ক ছিল? ১৫০ টা ভুয়ো নম্বর থেকে ওর কাছে ফোন এসেছিল বা এস এম এস এসেছিল? কিসের জন্য ওকে অ্যারেস্ট করব একবার বুঝিয়ে বলবে? প্রথম দিনেই আদালাত থেকে ও ছাড়া পেয়ে যাবে। আর তাতে হিতে বিপরীত হবে। পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে যে এই শহরে ও একা নয়। ওর ঘরে যে ফাইল নেই সেটা তো আমরা আগেই দেখেছি। তার মানে ফাইল আর ফিউস্টা অন্য কারোর কাছে আছে। ওকে গ্রেফতার করলেই সে সতর্ক হয়ে সরে পড়বে। ওর বিরুদ্ধে একদম কংক্রিট প্রমান পাওয়ার পর ওকে গ্রেফতার করতে হবে। আর একই সাথে ওর সাঙ্গপাঙ্গগুলোকেও গ্রেফতার করতে হবে। সবাইকে একই সাথে গ্রেফতার না করতে পারলে সব গুবলেট হয়ে যাবে আরিফ। তাই এখন বোকার মতন কথা বলো না। (একটু নরম হয়ে বললেন) শ্যামা নস্করের বাড়িতে যে অফিসার গেছিল সে কি ফিরেছে? ওই কালো স্যান্ট্রোর কোনও খবর পাওয়া গেল? ”
আরিফ আমতা আমতা করে বললেন “ ওই অফিসার এখনও ফেরেনি। কোলকাতার বা কোলকাতার চারপাশে যত রেজিস্টারড কালো রঙের স্যান্ট্রো আছে সবগুলোর ইনফরমেশন আমাদের হাতে চলে এসেছে। আমরা এক এক করে ইনভেস্টিগেট করে দেখছি। “ মিস্টার বেরা বললেন “ব্যাপারটা জানি যে ওয়াইল্ড গুজ চেজ করা হচ্ছে। তবুও বলছি। প্রত্যেকটা গাড়ির মালিকের ব্যাপারে খোঁজ নাও। দেখো কারোর সাথে কোনও ভাবে সংকেতকে লিঙ্ক করা যায় কিনা? আমি দশ মিনিট বাইরে থেকে হেঁটে আসছি। তারপর আমরা ডাইরির প্রশ্নগুলো নিয়ে আলোচনা করব।” মিস্টার বেরা ঘর থেকে হন হন করে বেরিয়ে গেলেন।
মিস্টার বেরা ঘর থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পর প্রায় পনের মিনিট কেটে গেছে। সবাই রেডি। চাও এসে গেছে। মিস্টার বেরা ফিরে এলেন হাতে দুটো প্লাস্তিকের থলি। বললেন “ আরিফ দরজা বন্ধ করে দাও। কয়েকটা গ্লাস নিয়ে এসো। এখন আর গলা দিয়ে চা নামবে না। যা বিষ মালের সাথে পালা পড়েছে না… গলা দিয়ে একটু বিষ না ঢাললে হচ্ছে না। “ সবাই বুঝে গেছে যে থলিতে কি আছে। রবিন বাবু বললেন “এত রাতে পেলেন কোথা থেকে?” মিস্টার বেরা বললেন “ ব্ল্যাকে কিনেছি, এই কথাটা কি ঢাক পিটিয়ে না বললেই নয়। “
আসর শুরু করার আগে অবশ্য সেই অফিসারের বয়ান নিয়ে নেওয়া হল। এই অফিসার তার পুরো নেটওয়ার্ক লাগিয়ে কিছু তথ্য কালেক্ট করেছেন। “স্যার, ওই পাড়াতে চুরি চামারি হচ্ছে সেটা ঠিক। কিন্তু সবাই জানে ওটা আপনার বাড়ি। আর ইয়ে, মানে আমরা তো সবাই জানি যে কোন এরিয়া কার? মানে কোন গ্রুপের কোন এরিয়া সেটা তো আগে থেকেই একদম ভাগাভাগি করা থাকে। আমি প্রায় সব কটা গ্রুপের সাথে কথা বলে ভেরিফাই করেছি যে কেউ জ্ঞানত আপনার বাড়িতে চুরি করতে যায়নি। একবারের জন্যও নয়। আর আমার নেটওয়ার্ক বলছে এই বাজারে আর কোনও নতুন চোর আসেনি। আমি একদম সিওর। দরকার হলে সবকটাকে এক্ষুনি তুলে নিয়ে আসতে পারি। স্যার নতুন চোর এলে আমাদেরও আগে সেই এরিয়ার চোরেরা জেনে যাবে। কারণ তাদের পেটেই তো লা...।”
মিস্টার বেরা হাত তুলে ওনাকে বিদায় দিলেন। দরজা বন্ধ হল। গ্লাস সাজিয়ে রাখা আছে। মিসেস রাহার জন্য ভদকা নিয়ে এসেছেন মিস্টার বেরা। মিসেস রাহা শুরুতেই জানিয়ে দিয়েছেন যে উনি খুবই অল্প করে নেবেন। গ্লাসে পানীয় ঢেলে একে একে সবাই চিয়ার্স বলল, মিস্টার বেরা চিয়ার্স না বলে বললেন “ হ্যাং সংকেত রায়। মিস্টার রাহা শুরু করা যাক। আপনি বলুন। আমরা ক্রস করব যখন যেমন দরকার হবে। “
মিস্টার রাহা আরম্ভ করলেন। “ মিস্টার বেরা একটা সিগারেট পাওয়া যাবে? মদের সাথে সিগারেট না পেলে…” একটা সিগারেট ধরিয়ে উনি শুরু করলেন “ মিস্টার বেরা কোনও পয়েন্ট নিয়ে এগোনোর আগে কিছু কথা আমি অ্যাজ এ ক্রিমিনাল সাইকলজিস্ট বলতে চাই। কিছু মিস করলে আমার গিন্নি সেই ব্যাপারে পাদপূরণ করে দেবেন। আপনি একজন পোর খাওয়া ইনভেস্টিগেটর। আপনি জানেন, যে কোনও ক্রাইম ক্র্যাক করতে গেলে প্রথমে ক্রাইমের প্যাটার্নটা বুঝতে হয়। ক্রিমিনালের কাজ করার প্যাটার্ন বুঝতে হয়। সেটা ধরতে পারলেই আমাদের ৯০% কাজ শেষ। তারপর সেই লোককে ধরা ইস জাস্ট অ্যা ম্যাটার অফ টাইম। আপনি আপনার ডাইরিতে যে প্রশ্নগুলো লিখেছেন আর চার পাশে যা যা হয়েছে, তার থেকে কোনও প্যাটার্ন ধরতে পেরেছেন? বা কোনও বিশেষত্ব লক্ষ্য করেছেন গোটা ব্যাপারটার ভেতর? ”
মিস্টার বেরা বললেন “ আমার নিজস্ব একটা হাইপোথিসিস তৈরি। বাইরে হাঁটতে গিয়ে সেটা ভেবে ফেলেছি। কিন্তু আগে আপনি বলবেন, আমি শুধু ভেরিফাই করব যে আমারটা আপনার সাথে মিলছে কি না!” মিস্টার রাহা বললেন “ সেটা না করে আপনি নিজের হাইপোথিসিসটা তুলে ধরুন। কারণ অনেক জিনিস আছে এই কেসের ব্যাপারে যেগুলো আমি জানি না। কিন্তু আপনি জানেন। আমি তো এই কিছুক্ষণ হল এসেছি। তবে আমি বলব , একটা একটা করে প্রশ্নের পিছনে ধাওয়া না করে ওভার অল একটা হাইপথিসিস সাজানোর চেষ্টা করুন। কোথাও মতের অমিল হলে আমি বলে দেব। “
মিস্টার বেরা একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে শুরু করলেন। “ প্রথমেই বলে রাখি যে আমরা শিখার মৃত্যুর ব্যাপারে কোনও কথা বলছি না। এখানে সংকেত কে বোঝার চেষ্টা করছি। বা ওর কাজ কর্মের প্যাটার্ন বোঝার চেষ্টা করছি। আমার আগের হাইপোথিসিসগুলোতে আমি অলরেডি বলেছি কেন এটা ভাবার যথেষ্ট কারণ আছে যে সংকেত এখানে এসেছে মিস্টার মেহেরার কাছ থেকে ওই মূল্যবান জিনিসগুলো হাতিয়ে নিতে। এইবার আরও ব্রড ওয়েতে ভাবার চেষ্টা করছি। তার আগে একটা জিনিস বলছি আরিফ। আজ সকাল হতে না হতে, মালিনীকে উঠিয়ে নিয়ে এসো। ওর কাছ থেকে আমার অনেক কিছু জানার আছে। “
১। সংকেত এই শহরে আসছে মিস্টার মেহেরার জিনিস হাতিয়ে নিতে।
২। সংকেত মিস্টার মেহেরার সাথে একই হোটেলে একই ফ্লোরে রুম বুক করে থাকতে লাগলো।
৩। সেখানে ঘটনাচক্রে ও জানতে পারল যে মালিনীর ভাই ওরই ক্লাসমেট।
৪। ওই ভাইয়ের সুযোগ নিয়ে ও মালিনীর সাথে আলাপ করল। ওদের ঘনিষ্ঠতা হল। এখানে একটা কথা বলে রাখি, মালিনীর সাথে না হলে অন্য কারোর সাথে ও ঘনিষ্ঠতা করতে চাইত, কারণ যে হোটেলে ও আছে সেই হোটেলের নাড়ি নক্ষত্র ওকে জানতে হবে।
৫। মালিনী ওর ফাঁদে পা দিল।
৬। মালিনীর কাছ থেকে কোনও মতে ও জানতে পারল যে ফার্স্ট ফ্লোরের ক্যামেরা কাজ করে না। (আরিফ পুরো জিনিসটা নোট করছেন। এখানে মিস্টার রাহা বাঁধা দিয়ে বললেন, “মিস্টার খান, এখানে একটা প্রশ্ন বোধক চিহ্ন দিয়ে রাখুন।” মিস্টার বেরা এগিয়ে চললেন...) যদি ফার্স্ট ফ্লোরের ক্যামেরা কাজ করত তাহলে ও কি উপায় অবলম্বন করত সেটা এখন ভেবে লাভ নেই। হতে পারে অন্য কোনও প্ল্যান ছিল কিন্তু ক্যামেরা কাজ না করায় ওর যে কিছুটা সুবিধা হয়েছে সেটা তো মানতেই হবে। মদ্যা কথা মালিনীর কাছ থেকে ও জানতে পারে যে ক্যামেরা কাজ করছে না।
৭। মিস্টার মেহেরার পকেট মেরে চাবি হাতানো, এবং …
মিস্টার রাহা এইবার নড়ে চড়ে বসলেন “ এইখানে আমি কিছু বলতে চাই। ব্যাপারটা অন্য বেশ কয়েকটা জিনিসের সাথে খাপে খাপে বসে যাবে। এখানে প্যাটার্নের কথা আসছে। সংকেত মিস্টার মেহেরার পকেট থেকে চাবি হাতায় এবং ওনার ঘরে ঢুকে ভিডিও ক্যামেরা আর মাইক্রফোন বসিয়ে দিয়ে আসে। আর তাই ওর সেই কাজ করতে গিয়ে ১৫-২০ মিনিট সময় নষ্ট হয়ে যায়। এরপর থেকে ওই ঘরের ভেতর যা যা হয়েছে, তার সবকিছু সংকেত দুটো ঘর পরে বসে জানতে পেরেছে, দেখতে পেয়েছে। এইভাবেই ও জানতে পারে যে একটা ফিউস তৈরি হচ্ছে। এইভাবেই ও জানতে পারে যে কবে ফিউসটা মিস্টার মেহেরার হাতে আসছে। মানে ও সব কিছু দেখতে পেত, শুনতে পেত।”
মিস্টার আরিফ বললেন “স্যার এখানে একটা সামান্য ক্রস করতে পারি?” মিস্টার বেরা বললেন “অবশ্যই।” আরিফ বললেন “ স্যার একটা জিনিস মাথায় ঢুকছে না। সংকেত যে জাতের ধুরন্ধর, তাতে ওর পকেট মারার দরকার হল কেন? এইসব প্রফেশনলরা তো চাবি ছাড়াই যেকোনো তালা খুলতে পারে বলে শুনেছি বা দেখেছি।” মিস্টার বেরা উত্তর দিলেন “ ভুলে যেও না আরিফ, ফার্স্ট ফ্লোরের ক্যামেরা বন্ধ হতে পারে। কিন্তু গেস্ট আর রুম বয়ের যাতায়াত সর্বক্ষণ লেগেই আছে। ওই চাবি খুলতে গিয়ে ওর দেরী হলে কেউ না কেউ ওকে দেখে ফেলতে পারত। যখন মিস্টার মেহেরার ঘরে কোনও ভি আই পি আসত পেছনের গেট দিয়ে শুধু তখনই ফার্স্ট ফ্লোর থেকে সব রুম বয়দের সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হত। এক্ষেত্রে ঘরের চাবি দিয়ে তালা খুলতে কম সময় লাগবে, আর সেটাই সব থেকে সেফ।”
সুতরাং পুরো হাইপোথিসিসটা কি দাঁড়াচ্ছে? মিস্টার মেহেরা এখন ওর কব্জায় চলে এলো, কারণ ওনার ঘরের ভেতর স্পাইক্যাম আর মাইক্রোফোন সেট করা আছে। মিস্টার রাহা বললেন “এর পরের কথাগুলো আমি আরেকটু গুছিয়ে বলছি।” মিস্টার রাহা বলে চললেন।
৮। এইবার অন্য দিক থেকে ভাবা যাক। জিনিসটা চুরি করে সব কিছু পরিষ্কার করে পালাতে একটু হলেও সময় লাগবে। আর ন্যাশনাল সিকিউরিটি নিয়ে কোনও প্রশ্ন হলে বেস্ট অফিসারকেই সেই দায়িত্ব দেওয়া হবে। অ্যান্ড অফ কর্স দা বেস্ট আর অবভিয়াস চয়েস হল অর্জুন বেরা। (মিস্টার বেরা ছাড়া ঘরের বাকি সবাই হো হো করে হেসেউঠলেন) আর এই সব ব্যাপারে সরকার একফোঁটা দেরী করবে না। কারণ এই জিনিসে গাফিলতি হলে গোটা দেশ লুটে যাবে।
৯। সংকেত এখানে আসার আগেই চুরি করার পরের এক্সিট প্ল্যান গুলো ঠিক করে ফেলল। ও জানে জিনিসটা চুরি যেতে না যেতেই অর্জুন এসে ওর ঘাড়ের ওপর নিঃশ্বাস ফেলা শুরু করবে। অতএব? এখানে আসার আগেই ও অর্জুন বেরার ব্যাপারে সব খবর কালেক্ট করে নিল।
১০। কিন্তু অর্জুনের ব্যাপারে শুধু খবর নিয়ে কি হবে? অর্জুনের আক্রমণ থেকে নিজেকে বাঁচাতে হলে ওকে সব সময় অর্জুনের থেকে অন্তত এক পা এগিয়ে থাকতে হবে। অর্থাৎ অর্জুন কি করছে, কি ভাবছে, অর্জুনের কাজ করার প্যাটার্ন এগুলো যতটা সম্ভব আগে ভাগে ওকে জানতেই হবে। নইলে জিনিসটা চুরি যাওয়ার পর ও ফেঁসে যেতে পারে। ও জানে অর্জুন কি ধাতুতে গড়া। সুতরাং এখানে এসেই ও হানা দিল বাঘের ডেরায়।
ঠিক এই সময় কেন জানি না, রবিন দাসের পাশে বসে থাকা অফিসারটি ভীষণ ব্যস্ত হয়ে উঠলেন। মিস্টার বেরা বললেন “ তুমি কিছু বলবে?” উনি এতক্ষন ধরে বসে বসে আমার কল রেকর্ড আর সিম লোকেশন রিপোর্ট খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে চেক করছিলেন। উনি বললেন “স্যার জানি না, ব্যাপারটা সম্পূর্ণ ভাবে কাকতালীয় কিনা। তবুও বলছি। বেশ কয়েকটা অদ্ভুত জিনিস ওর সিম লোকেশন থেকে আমি পাচ্ছি। কিন্তু তার মধ্যে দুয়েকটা জিনিস এখন না বললেই নয়। (একটু থেমে বললেন) মনে হয় মিস্টার রাহা খুব একটা ভুল বলছেন না। স্যার, হোটেল থেকে সংকেতকে কলেজে যেতে হলে যে পথে যেতে হবে আপনার বাড়ি ঠিক তার উল্টো পথে।
কিন্তু আশ্চর্য ব্যাপার হল, সংকেত কোলকাতায় আসার ঠিক পরের দিন সকাল ৭ টার কিছু আগে থেকে আপনার বাড়ির চারপাশে ঘুরঘুর করছিল। ৭.১০ অব্দি আপনার বাড়ির চারপাশে ঘুরঘুর করে ও আবার নিজের হোটেলে ফিরে যায়।
এইবার তার পরের দিনের রিপোর্ট বলছে, ঠিক ৭ টার সময় ও আপনার বাড়ির সামনে গিয়ে হাজির হয়। ৭.১৫ অব্দি ওখানে থেকে আবার হোটেলে ফিরে আসে।
তার পরের দিনের রিপোর্ট বলছে, ৭.২৮ মিনিটে ও আপনার বাড়ির কাছে গিয়ে পৌঁছায় এবং ৭.৫৮ অব্দি ও ওখানেই ছিল (এই দিন আমি সবার জন্য জন্মদিনের স্যান্ডউইচ প্যাক করতে গেছিলাম)। তারপর ও আবার কলেজের দিকে রওয়ানা দেয়।
সব থেকে ইন্টারেস্টিং হচ্ছে তার পরের দিনের রিপোর্ট। সেদিন ও ঠিক ৮.০২ এ আপনার বাড়ির সামনে গিয়ে পৌঁছায়। ৮.৩৫ অব্দি ও আপনার বাড়ির লোকেশনেই ছিল। তারপর কলেজের দিকে রওয়ানা দেয়। (এই দিন ফার্স্ট পিরিয়ড ছিল সঞ্চিতা ম্যাডামের। এই দিন আমি বেশ কিছুটা লেটে ক্লাসে ঢুকেছিলাম, আর সেজন্য ম্যাডামের কাছ থেকে ডিসিপ্লিন ইত্যাদি নিয়ে বেশ কিছু লেকচারও শুনতে হয়েছিল। )”
অফিসার থামলেন। সিম লোকেশনের কাগজগুলো সবার হাত ঘুরে আবার সেই অফিসারের হাতে গিয়ে পৌছালো। অফিসার আবার শুরু করলেন “ জাস্ট আরও দুটো কথা বলতে চাইছি।” মিস্টার বেরা ওনাকে থামিয়ে বললেন “ তার আগে বল, এই দিনটা শুক্রবার তাই তো?” অফিসার বলল “ হ্যাঁ মানে, ও সাড়ে আটটা অব্দি যেদিন আপনার বাড়ির চারপাশে ছিল, সেদিন ছিল শুক্রবার। আমি কিন্তু তার পরের দিনের কথা বলতে চাইছি। মানে শনিবারের। “ মিস্টার বেরা ওকে থামিয়ে দিয়ে বললেন “ আর শুনে লাভ নেই। মিস্টার রাহা ১০ নম্বর হাইপোথিসিসটা শুরু করেছিলেন। আমি সেটা খতম করছি এইবার। সংকেত সোমবার এসে পৌছালো কোলকাতায়। মঙ্গল, বুধ, বৃহস্পতি, এই তিন দিন আমার বাড়ির ওপর নজর রাখল। ও দেখে নিল সকাল বেলায় কে কে আমাদের বাড়িতে আসে, কে কখন বেরোয়। সঞ্চিতা প্রত্যেকদিন ৮ টা থেকে ৮.০৫ এর মধ্যে বেরিয়ে যায়। ৮.৩০ থেকে ওর ক্লাস থাকে। ৮ টার পর থেকে আমাদের বাড়ি মোটামুটি খালি হয়ে যায়। শুক্রবার ও ৮ টার সময় গিয়ে আমার বাড়ির সামনে হাজির হয়। এই রকম ক্রিমিনালের কাছে বাড়ির তালা খোলা যে এমন কোনও ব্যাপার নয় সেটা তো আরিফ আগেই বলেছে। ও নিজের কলা কৌশল খাটিয়ে বাড়ির তালা খুলে ভেতরে প্রবেশ করল। সারা বাড়িতে স্পাই ক্যামেরা আর মাইক্রো ফোন সেট করে বেরিয়ে গেল। ক্লাসে ঢুকতে একটু লেট হল বটে, কিন্তু আসল কাজ হয়ে গেছে। এখন ওর চোখ আর কান দুটোই আমাদের বাড়িতে গোপনে বসানো আছে।
১১। সঞ্চিতা বাড়ি ফেরার পর ওর সাথে সেদিন আমার অনেকক্ষণ ধরে ফোনে কথা হয়। বৃহস্পতিবার রাতেই আমাদের বাড়ি থেকে দুটো বাড়ি পরে চোর এসেছিল। অনেক কিছু নিয়ে গেছে। সেই নিয়ে ও খুব চেঁচামেচি করছিল ফোনে। বার বার বলছিল দোতলার খালি ঘরটাতে একজন পেয়িং গেস্ট রাখার কথা। কথাটা ও বলতে চেয়েছিল আমাকে, কিন্তু শুনে ফেলল সংকেত।
১২। সংকেত আমার ব্যাপারে তখন অনেক কিছু জেনে গেছে। ডিফেন্সের সেই ইললিগ্যাল ওয়েপণ ডিলারদের যে ফাইলগুলো আমার বাড়ি থেকে গতকাল চুরি গেছে সেই ফাইলগুলোর অস্তিত্বের ব্যাপারে ও আশা করছি ইতিমধ্যে জেনে গেছে। কোনও ভাবে ও জানতে পেরেছিল যে ফাইলগুলো আছে আমার বাড়িতে। এদের সোর্সের তো আর অভাব নেই!
১৩। ও যখন কোলকাতায় এসেছিল তখন ওর হাতে ছিল তিনটে মাত্র টার্গেটঃ
-- মিস্টার মেহেরার ঘর থেকে জিনিস হাতানো
-- মিস্টার মুখার্জির হত্যা
-- মিস্টার মুখার্জির বাড়ি থেকে সেই ফিউস রিলেটেড ফাইলের লাস্ট কপিটা সরিয়ে ফেলে ওনার ল্যাপটপের হার্ড ড্রাইভটা বদলে ফেলা।
১৪। কিন্তু এইবার, সঞ্চিতা একা থাকতে ভয় পায়, বাড়িতে পেয়িং গেস্ট বসাতে চায়, আমার বাড়িতে ওয়েপন ডিলারদের ফাইল আছে- এই ৩ টে তথ্যের ওপর ভিত্তি করে ও একটা আরেকটা বাড়তি প্ল্যান বানিয়ে ফেলল।
-- মিস্টার মুখার্জির বাড়ি থেকে ফাইল হাতানর সময় মিস্টার মুখার্জির আর যেসব আর্মস রিলেটেড গবেষণার ফাইল আছে সেগুলোও সংকেত হাতিয়ে নেবে।
-- আমার বাড়িতে এন্ট্রি নিয়ে অয়েপন ডিলারদের ফাইলগুলো হাতিয়ে নেবে।
-- মিস্টার মুখার্জির বাড়ি থেকে চুরি করা বাদ বাকি ফাইলগুলো ও এই অয়েপন ডিলারদের কাছে চড়া দামে বেচে দেবে। অর্থাৎ ফাইলগুলো চুরি করার পর ওকে আর খদ্দের ধরার জন্য হন্যে হয়ে ঘুরতে হবে না। মানতেই হবে ছেলেটার মাথায় কিছু দিয়েছেন ভগবান।
১৫। ওর শুধু আমাদের বাড়ির ভেতর ক্যামেরা আর মাইক্রোফোন সেট করলেই চলত। কিন্তু এই বাড়তি প্ল্যানটা মাথায় আসার সাথে সাথে ও মরিয়া হয়ে উঠল আমাদের বাড়ির ভেতর এন্ট্রি নেওয়ার জন্য।
১৬। স্পষ্ট মনে আছে শুক্রবার রাতেই আমাদের বাড়িতে চোর আসে। অবশ্য সংকেত নিজে আসেনি। সংকেতের কোনও সাকরেদ কে দিয়ে এই কাজটা করিয়েছে। কেন? সঞ্চিতাকে আরও ভয় দেখানো। পাশের বাড়িতে চুরি হলে যে মেয়ে ভয়ে কাঁপতে থাকে তার নিজের বাড়িতে চোর পড়লে তো আর কথাই নেই। ফলও হল সেই মতন। সঞ্চিতা শুক্রবার রাতেই আবার ফোন করে আমাকে বলল যে এইবার হয় একটা পেয়িং গেস্ট বসাতে হবে অথবা একটা পাহারাদার। সংকেতের কাজ সোজা হয়ে গেল।
১৭। শনিবার করে বিকাল বেলায় সঞ্চিতা বাজার করতে যায়। সপ্তাহের বাজার। খবরটা সংকেত পেয়ে গেল। কিভাবে পেয়ে গেল সেটা নিয়ে ভেবে এখন আর কোনও লাভ নেই। হতে পারে এই নিয়ে সঞ্চিতা কাউকে কিছু বলেছে, বা ওর ওপর আগে থেকেই নজর রাখা হচ্ছিল। যাই হোক, সংকেত শনিবার সন্ধ্যের দিকে গিয়ে হাজির হল বাজারের ঠিক মুখে। উনি অফিসারের দিকে তাকিয়ে বললেন “কি এটাই বলতে চাইছিলে তো?” অফিসার হেসেমাথা নাড়াল। মিস্টার বেরা বলে চললেন।
১৮। সঞ্চিতার সাথে সংকেতের বাজারের সামনে দেখা হয়। সঞ্চিতা মনে করল ব্যাপারটা কাকতালীয়। সংকেত ওর জিনিস বয়ে নিয়ে বাড়ি অব্দি পৌঁছে দিয়ে যায়। সঞ্চিতা ওকে বাড়ির ভেতর ডেকে বসতে বলে। কথাবার্তার ফাঁকে সংকেত ওকে জানিয়ে দেয় যে ও সস্তায় মেস খুঁজছে। অর্থাৎ সঞ্চিতা যে জিনিসটা পাওয়ার জন্য বাড়িতে চোর আসার পর থেকে মরিয়া হয়ে উঠছে, ও ঠিক সেই জিনিসটাই ওর মুখের সামনে সাজিয়ে গুছিয়ে তুলে ধরল।
১৯। সঞ্চিতা ওর ফাঁদে পা দিল। রাতে আমার সাথে কথা হল। আমিও গোটা ব্যাপারটা তখন বুঝতে পারিনি। আমি সায় দিলাম। সঞ্চিতা সংকেতকে ডেকে পাঠাল। মোটের ওপর সংকেত যেটা চাইছিল, সেটা ও পেয়ে গেল। আমাদের বাড়িতে এন্ট্রি।
২০। মনে করে দেখো,শনিবারই মিস্টার মেহেরা মিসিং কির ব্যাপারে কমপ্লেন করেছিলেন। আর ওই দিনই হোটেলে সংকেত সেই সিকিউরিটি পিটিয়ে অদ্ভুত একটা নাটক করেছিল। সকালে ও মিস্টার মেহেরার ঘরে ক্যামেরা আর মাইক্রোফোন বসালো। সন্ধ্যায় আমার বাড়িতে প্রবেশ করার পথ পুরো সাফ করে ফেলল। ওর এখন মাত্র দুটো কাজ বাকি।
ক। মিস্টার মুখার্জিকে হত্যা, কারণ উনি বেঁচে থাকলে ওই ফিউস উনি আরেকবার বানিয়ে ফেলবেন।
খ। যেকোনো ছুতোয় মিস্টার মুখার্জির বাড়িতে অবাধ যাতায়াতের পারমিশন।
২১। তারপর, এইটা আমার একটু দুর্বল হাইপোথিসিস, কিন্তু আগেও বলছি, এখনও আরেকবার বলছি, মিস্টার মুখার্জিকে বাইরে পাবলিক প্লেসে নিয়ে আসতে না পারলে তাকে হত্যা করা খুব কঠিন। বাড়িতে ঢুকে মারার কোনও প্রশ্নই ওঠে না। ও সেদিনই রাতে দোলন ইত্যাদিদের সাথে পার্টি করতে গেল। জানতে পারল সবাই মদ্যপ অবস্থায় মন্দারমনি যাওয়ার প্ল্যান করছে সেই রাতে। এক ঢিলে দুই পাখি মারল ও। দীপককে হাত করে গাড়ির দুর্ঘটনা করে শান্তনু মুখার্জিকে মেরে ফেলল।
২২। রঞ্জন মুখার্জি পাবলিক প্লেসে আসতে বাধ্য হলেন। সেই হাসপাতাল। কি করে রঞ্জন মুখার্জিকে ও হত্যা করল সেটা এখনও জানি না। তবে ব্যোমকেশ বক্সির পথের কাঁটা যারা পড়েছেন, তারা অনুমান করতে পারেন কিভাবে পাবলিক প্লেসে সকলের সামনে অনুরূপ একটা অত্যাধুনিক যন্ত্রের সাহায্যে ও রঞ্জন মুখার্জিকে হত্যা করেছিল। হত্যার পদ্ধতি বুঝতে পারছি, কিন্তু যন্ত্রের কথাটা এখনও জানি না। কিন্তু পরের ঘটনাটা জলের মতন পরিষ্কার।
২৩। এইটা সেদিন কার অফিসারের বয়ান অনুযায়ী ফাইলেই আছে। সংকেত সবার সামনে ইঙ্গিত করল যে রঞ্জন বাবুর হত্যা দীপকেরই কোনও লোকের কাজ। কারণ রাজনৈতিক প্রতিহিংসা। ফাইলে দেখেছি, একটা জায়গায় নোট করা আছে, সংকেত সবার সামনে দীপককে বলেছিল যে দীপক যদি খুন করে থাকে তো ও বাইরে বেরনোর সাথে সাথে খতম হয়ে যাবে, মিস্টার মুখার্জির পার্টির লোকজন দীপককে মেরে ফেলবে। সংকেত সেই সাথে আরও বলল... সংকেত নিজে যদি দীপকের জায়গায় থাকত তাহলে ও সুইসাইড করে নিত। লাহিড়ীও তখন ওখানে ছিল। কি ঠিক বলছি না? (মিস্টার লাহিড়ী নিরবে মাথা নাড়িয়ে বললেন “স্যার ও দীপকের দিকে একদম তেড়ে গেছিল। বেশ বুঝতে পারছিলাম যে দীপক ওর কথা বার্তা শুনে ভয় পেয়েছে। তখনই ও দীপককে বলে যে আমি তোমার জায়গায় থাকলে কি করতাম জানো? আমি নিজে সুইসাইড করে নিতাম। তোমার বাচার সব রাস্তা এখন বন্ধ। আর তারপরেই তো স্যার জানেন। আমি অবশ্য তখন ভেবেছিলাম যে পার্টির লোকের হাতে মরার কথা বলছে ওই ছেলেটা, কিন্তু আপনার কথা ঠিক হলে তো গোটা ব্যাপারটাই...” মিস্টার বেরা আবার শুরু করলেন...) লাহিড়ীর এক অফিসার এই নোটটা নিয়েছিল। এইবার কাজের কথায় আসা যাক। সবাই শুনল সংকেত বলছে যে মিস্টার মুখার্জির পার্টির লোক দীপককে মেরে ফেলবে। কিন্তু দীপক শুনল অন্য কথা। ও শুনল, ও বাইরে বেরলেই সংকেত ওকে খুন করে দেবে। আর সংকেত ওকে বলছে যে তুই নিজেই সুইসাইড করে নে। এইবার …
মিস্টার বেরার চারপাশের লোকজন এই হাইপোথিসিসটা শুনে একটু উসখুস করতে শুরু করে দিয়েছে দেখে উনি বললেন “দাঁড়াও। আমি জানি কেন তোমাদের কনফিউশন হচ্ছে। কনফিউশন আমারও একটা আছে। আরিফ চট করে দীপক যে হোস্টেলে থাকত তার নাম্বার ডায়াল কর। স্পিকারে দাও। যতক্ষণ না কেউ ফোন তোলে রিং করতে থাকো। এই ব্যাপারটার একটা হেস্ত নেস্ত হওয়া দরকার। কেন দীপক সংকেতের কথায় ওই দুর্ঘটনাটা ঘটাল? আর কেনই বা সংকেতকে ও এত ভয় পায়? “ আরিফ বললেন “ স্যার আপনি কেন দীপককে সংকেতের সাথে জড়াচ্ছেন সেটা কিন্তু ঠিক বুঝতে পারছি না।”
উত্তরটা দিলেন মিস্টার রাহা। বললেন “মিস্টার খান, কারণ এছাড়া ব্যাপারটা দাঁড়ায় না। এখন একটাই জিনিস জানতে হবে যে দীপকের সাথে সংকেতের যোগ সাজশ হল কি করে?” কথা মতন কাজ হল। প্রায় ভোর রাত, কিন্তু তাও একজন এসে ফোন ধরল। মিস্টার বেরা বললেন “ আমি থানা থেকে অর্জুন বেরা কথা বলছি। বিশেষ দরকার আছে ফোন কাটবেন না। এটা সরকারি ব্যাপার। “ ঘুম জড়ানো গলায় বললেন “ বলুন। আমি এখানকার কেয়ারটেকার। আমার নাম বিকাশ পাল। “ মিস্টার বেরা বললেন “ মিস্টার পাল, এরকম অসময়ে আপনাকে বিরক্ত করার জন্য দুঃখিত। কিন্তু আমাদের এখনই দীপক বলে ওই ছেলেটার ব্যাপারে কিছু কথা বলতে হবে। “ উনি বললেন “ ছেলেটা তো মারা গেছে। সুইসাইড…” মিস্টার বেরা বললেন “জানি। ওর সব থেকে কাছের বন্ধু কে ছিল। তাকে একটু ফোনটা দিন। “
ভদ্রলোক একটু ভেবে বললেন “স্যার দীপকের খুব কাছের লোক...দাঁড়ান আছে। ওই দীপকের সাথে কাজ করত। জানেনই তো ও পলিটিকাল …” বুঝলাম গুণ্ডা কথাটা আগবাড়িয়ে বলতে পারলেন না ভদ্রলোক। সবাই অপেক্ষা করছে। বেশ কিছুক্ষণ পরে একটা ছেলে জড়ানো গলায় বলল “হ্যালো।” মিস্টার বেরা সরাসরি কাজের কথায় চলে গেলেন “ তোমার নাম?” উত্তর এলো “সন্দীপন।” মিস্টার বেরা বললেন “আমি অর্জুন বেরা কথা বলছি। “ ছেলেটার যেন চমক ভেঙেছে। “ও স্যার আপনি, বলুন স্যার। “ মিস্টার বেরা বললেন “ তুমি দীপকের সবথেকে কাছের বন্ধু ছিলে?” ছেলেটা বলল “হ্যাঁ স্যার। ও সব কথা আমাকে বলত। আমি ছিলাম ওর ডান হাত।” মিস্টার বেরা বললেন “ সরাসরি একটা প্রশ্ন করছি। সংকেতের সাথে দীপকের আলাপ হয় কি ভাবে একদম ডিটেলে বলো। ওয়েট! আরেকটা প্রশ্ন আছে। দীপক সংকেতকে ভয় পেত কেন? তুমি যদি সত্যিই ওর ডান হাত হয়ে থাকো তো তোমার এই প্রশ্নের উত্তর জানা উচিৎ। আর হ্যাঁ, কিছু বলার আগে ভেবে চিনতে বলো। কারণ আমাদের যদি তোমার কোনও কথা শুনে খটকা লাগে, তাহলে তোমাকে থানায় উঠিয়ে নিয়ে এসে পিটিয়ে তোমার পেট থেকে সব কথা বার করব। এবং সেটা আমরা করব এখনই। ”