05-03-2019, 03:57 PM
ওনার গুদের ভেতরে কি অবস্থা, জল আছে না শুঁকিয়ে গেছে, নাকি আঠালো হয়ে আছে, এইসব চিন্তা আর মাথায় আসছে না। একটানা মন্থন করে চললাম ওনার শরীরের সব থেকে পবিত্র গহ্বরটাকে। খুব স্মভবত এই বারের মতন এই শহরে এটাই আমার নারী শরীর ভোগ করার শেষ সুযোগ। কোনও কিছু শেষ বারের মতন করতে হলে অন্যের সুখের থেকে আমি নিজের সুখের দিকে বেশী নজর দি। এখন ওনার ভালো লাগছে কি লাগছে সেই নিয়ে সত্যি কথা বলতে আমার কোনও মাথা ব্যথাই নেই। যতক্ষণ না আমার বীর্য স্খলন হয় ততক্ষণ আমি একটানা ওনার ভেতরটাকে মন্থন করে ছারখার করে দেব। সত্যিই বলতে পারব না উনি এর পর আর কতবার অরগ্যাসম পেয়েছেন। পরে উনি বলেছিলেন উনি আরও তিনবার জল খসিয়েছিলেন। কথাটা আমার মন রাখার জন্য বলেছিলেন নাকি সত্যি সত্যি পেয়েছিলেন, সেটা আমি বুঝতে পারিনি। আর কতক্ষণ ধরে এইরকম একটানা ওনাকে ঠাপিয়ে গেছি সেই হিসাবও আমি রাখিনি। ওই যে বললাম একটা নরম রক্ত মাংসের নারী শরীর শেষ বারের মতন ভোগ করছি। এখন টেকনিক, কতক্ষণ করলাম ইত্যাদি নিয়ে ভাবার কোনও মানে নেই। একসময় আমার বীর্য স্খলন হল, আর সেটা হল ওনার শরীরের একদম গভীরে। দুটো শরীর শাওয়ারের ঠাণ্ডা জলের স্রোতের নিচে এক হয়ে গিয়েছিল সেই মুহূর্তে। ব্যস খেল খতম। ওনাকে কোল থেকে নামিয়ে দিলাম। অদ্ভুত একটা জিনিস দেখলাম। এতক্ষন ধরে ওনার ভারী শরীরটাকে নিজের কোলের ওপর উঠিয়ে একটানা কোমর ঝাঁকিয়ে নির্মম ভাবে ওনার ভেতরটা মন্থন করা সত্ত্বেও আমার ভেতরে তেমন কোনও ক্লান্তি আসেনি, কিন্তু ওনাকে মাটিতে নামাতে না নামাতেই উনি টাল খেয়ে ক্লান্ত ভাবে বাথরুমের মেঝের ওপর বসে পড়লেন। একেই বলে নরম তুলতুলে আদুরে মেয়ে।
কতক্ষণ উনি শাওয়ারের নিচে এইভাবে বসে ছিলেন সেটা বলতে পারব না। আমি ভেজা শরীর নিয়েই বাথরুমের বাইরে বেরিয়ে এসে একটা সিগারেট ধরালাম। মোবাইল উঠিয়ে কয়েকটা মেসেজ চেক করে নিলাম। তোয়ালেটা নিজের ভেজা শরীরের চারপাশে জড়িয়ে বাথরুমের সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম। হাতের সিগারেটটা এখনও জ্বলছে। ম্যাডাম উঠে দাঁড়িয়েছেন। শাওয়ারের নিচে দাঁড়িয়ে স্নান করছেন। নিজের শরীরের ওপর থেকে সারাদিনের ক্লেদ ধুয়ে ফেলছেন। আমি ওনার শাওয়ার জেল আর শ্যাম্পুর শিশিটা বেসিনের ধারে নামিয়ে রাখলাম। একটা রেজারও নিয়ে এসেছিলেন সাথে করে। আমার ইচ্ছে ছিল ওনার কিছু কিছু জায়গা আজ আমি শেভ করে দেবো। কিন্তু এখন মাথায় আবার অন্য চিন্তা ঘুরছে। রেজারটাও আমি বেসিনের ধারে নামিয়ে রাখলাম। উনি স্নান করার মাঝে মাঝে আমার দিকে তাকিয়ে একটা করে মিষ্টি হাসি ছুঁড়ে দিচ্ছেন। আমার ঠোঁটের কোনায়ও হাসি লেগে আছে। কিন্তু মাথার ভেতরে? অনেকগুলো চিন্তা একসাথে এসে জটলা পাকিয়েছে সেখানে। উনি যদি আমার মন পড়তে পারতেন তাহলে বুঝতে পারতেন যে এখন উনি যা দেখতে পাচ্ছেন সেটা আমার মুখ নয়, একটা মুখোশ। আমার সামনে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়েই উনি গায়ে শাওয়ার জেল মাখলেন, শ্যাম্পু করলেন, সারা গা শেভ করলেন। আমি একটানা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ওনার নগ্ন সৌন্দর্য উপভোগ করে চললাম। সত্যি কি উপভোগ করতে পারলাম।
অবশেষে উনি ভেজা গা নিয়ে বাইরে বেরিয়ে এলেন। আমার কোমরে জড়ানো তোয়ালেটা নিরবে ওনাকে হস্তান্তরিত করলাম। উনি সেটা দিয়ে কোনও মতে গা মুছে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজের সারা শরীরটাকে একবার পরীক্ষা করে নিজের জামা কাপড় উঠিয়ে নিজের ঘরে চলে গেলেন। আমিও স্নান করে রেডি হয়ে নিলাম। ব্যস তারপরের ইতিহাস সব আপনাদের জানা। আমি আমার দুটো মোবাইল নিয়ে নিচে চেমে গেলাম। খেলার কমেন্ট্রি শুনতে আমার চিরকালের আলার্জি। আমার সেই বিখ্যাত মোবাইলে হেডসেটটা গুঁজে দিলাম। বাইরে থেকেই এর স্টেশন চেঞ্জ করা যায়। সুতরাং সেটাকে গোপনে ঢুকিয়ে রাখলাম পকেটের ভেতর। অন্য পকেটে আমার সেই সাদা মাটা ফোনটা। ম্যাডাম নিশ্চিত ভাবে দুটো মোবাইলের উপস্থিতি লক্ষ্য করেননি। উনি এখন রান্না ঘরের কাজে ব্যস্ত। আমি নিচে নেমে ওনার অনুমতি নিয়ে টেলিভিশন চালিয়ে ম্যাচ দেখতে বসে গেলাম। ভলিউম কেন কমিয়ে রেখেছি জিজ্ঞেস করাতে বললাম “আমার এই বোকা বোকা কমেন্ট্রি শুনতে ভালো লাগে না। তাই রেডিও শুনতে শুনতে খেলা দেখছি। আপনি চাইলে ভলিউম বাড়িয়ে দিচ্ছি।” উনি বললেন “ আমার এই ক্রিকেট জিনিসটাই ভালো লাগে না। দরকার হলে মিউট করে দিতে পারো। তাই করলাম। “ এই একই ট্র্যাক প্যান্ট আর অন্য একটা টি শার্ট পরে আমি স্যারের জন্য জেরক্স করাতে গেছিলাম। মোবাইলটা সেই তখন থেকেই ছিল আমার পকেটের ভেতর,আর ইয়ারফোন গোঁজা ছিল কানে। তাই ওনারা গোটা ঘর খুঁজে আমার ল্যাপটপের হদিশ পেলেও আমার এই মোবাইলটাকে দেখতে পাননি। এইবার সময় এসেছে থানায় ফেরার। ওনারা ইতিমধ্যে অনেকদূর অগ্রসর হয়েছেন। বাড়িতে ডিনার শেষ। ম্যাডাম আমাকে গুড নাইট কিস দিয়ে ঘরে চলে গেছেন। ওনার ঘরের দরজা বন্ধ। আমি ঘরে ঢুকে আমার ডাইরিটা খুলে বসে পড়লাম। কানে ইয়ারফোন। তখন ওনারা এই ডাইরিটার হদিশ পাননি। কেন সেটা পরে জানা যাবে।
৪১
মিস্টার বেরা আমার মোবাইল লোকেশনের রিপোর্টটা হাতে নিয়ে চোখ বন্ধ করে বসে আছেন। বেশ কয়েক পাতার রিপোর্ট। হুঁশ ফিরল মিস্টার আরিফ খানের কথায়। উনিও ব্যস্ত। কিন্তু এত ব্যস্ততার মধ্যেও সব অফিসেই খোশগল্প হয়েই থাকে। তো এখানে হবে না কেন? পুলিশ বা গোয়েন্দা বলে কি এনারা কেউ মানুষ নন? ওনারা সবাই কন্ট্রোল রুমে বসে নিজেদের কাজ করছেন। মিসেস রাহা কে জরুরি তলব করে ডেকে আনা হয়েছে। আর সেই সাথে ডেকে আনা হয়েছে ওনার হাজবেন্ডকেও। মিস্টার রাহাও ক্রিমিন্যাল সাইকলজি নিয়ে রিসার্চ করছেন। বহু বছর উনি দেশের বাইরে ছিলেন। ঘটনাচক্রে এনার নামও অর্জুন আর ইনি মিস্টার বেরার বিশেষ পরিচিত। ওনাকে ডাকা হয়েছে বিশেষ কারণে। প্রচণ্ড সিরিয়াস কিছু কেস ছাড়া ওনাকে ডাকা হয়না। আর উনি আসেনও না। উনি রিসার্চ পাগল মানুষ। সেই নিয়েই আছেন। নিজের স্ত্রীর মুখে আমার (সংকেতের) কথা শুনে ফাইনালি এখানে আসতে রাজি হয়েছেন।
সবার সামনে আরিফ একটু হাসি হাসি মুখ নিয়ে মিস্টার বেরা কে জিজ্ঞেস করলেন “ স্যার সেই তখন থেকে একটা কথা জিজ্ঞেস করব করব করেও করতে পারছি না। যদি অভয় দেন তো করি।” এইবার আরেকটা জিনিস বলার সময় এসেছে। এই কথাগুলো আমি ম্যাডামের কাছ থেকেই জানতে পেরেছি ম্যাচ দেখার সময়। মেয়েরা ফ্র্যাঙ্ক হলে অনেক কথাই বলে ফেলে নিজেদের অজান্তে। আজ ম্যাডামও অনেক তথ্য সেই একই কারণে আমার সামনে তুলে ধরেছেন। এই সব অফিসারদের বয়স মিস্টার অর্জুন বেরার থেকে একটু হলেও বেশী।
মিস্টার অর্জুন বেরা লাইফে ২২ বার সাসপেন্ড হয়েছেন। কিন্তু একবারও ওনাকে উইথআউট পেমেন্ট সাসপেন্ড করা হয়নি। উনি কাজ পাগল লোক সেটা সবাই জানে। ভীষণ হার্শ। সেই জন্য বারবার সাসপেন্ড করা হয়। তবে এনাকে প্রমোশন দিতেও সরকার কোনও দিন কার্পণ্য করেনি। ইনি যে ঠিক কি সেটা নাকি কেউ সঠিক বলতে পারবে না। শুধু সিরিয়াস কেসের জন্য এনাকে তলব করা হয়, বাইরে পাঠানো হয়। আর ওনাকে যখন বাইরে পাঠানো হয় তখন ওনাকে যে পরিমাণ অ্যালাঅয়েন্স দেওয়া হয় সেটা শুনলে নাকি সাধারণ লোকের মাথা ঘুরে যাবে। তবে আজ অব্দি উনি দুই একটা বাদ দিয়ে তেমন কোনও কেসে ফেল করেননি। তবে প্রায় প্রত্যেকটা কেসের শেষেই ওনাকে অন্তত দুই দিনের জন্য হলেও সাসপেন্ড করা হয়েছে। ম্যাডামের ধারণা এই কেসের শেষেও ওনার একই পরিণতি হবে। উনি পদাধিকারের বলে সবার থেকে সিনিয়র বলেই সবাই ওনাকে স্যার স্যার করেন।
আরিফের প্রশ্ন শুনে মিস্টার বেরা বললেন “বলে ফেলো আরিফ। এখন আর রাখা ঢাকা করে লাভ নেই। হয় এস্পার নয় অস্পার। “ আরিফ বললেন “না স্যার। অন্য একটা কথা বলছিলাম। আপনি সংকেতকে হঠাৎ করে মিসেস বেরার রান্নার কোয়ালিটি নিয়ে কেন জিজ্ঞেস করলেন সেটা ঠিক ধরতে পারিনি।” মিস্টার বেরা এতসব টেনশনের মধ্যেও হো হো করে হেসেউঠলেন। হাসি থামার পর বললেন “এই ব্যাপার?” তারপর একটু গম্ভীর হয়ে বললেন “ আরিফ যে কারণে প্রশ্নটা করেছিলাম সেটা তো কোনও কাজে দিল না।” মিস্টার খান জিজ্ঞেস করলেন “সেটা সিরিয়াস কোশ্চেন ছিল?” মিস্টার বেরা বললেন “ করেছিলাম দুটো কারণে। বুঝিয়ে বলছি শোনো।”
মিস্টার বেরা একটা সিগারেট ধরিয়ে শুরু করলেন “ আরিফ, এই পলিগ্রাফ টেস্ট হল গিয়ে কিছুটা আদালতে ক্রস এক্সামিনেশন করার মতন জিনিস। মানে প্রশ্ন সাজিয়ে তুমি একের পর এক করে যাবে। তোমার টার্গেটঃ সামনে যে বসে আছে তার ভেতরে চিত্ত বৈকল্য সৃষ্টি করা। মেশিন সেটাই ধরতে পারবে। এখানে একটা সমস্যা আছে। আমরা চলতি কথায় বলি বটে লাই ডিটেকশন হচ্ছে এই টেস্টের মাধ্যমে, আসলে কিন্তু সেটা সত্যি নয়। আমরা শুধু জানতে পারছি যে কোন কোন প্রশ্ন শুনে সামনের ব্যক্তির ভেতরে চিত্ত বৈকল্য আসছে। আমরা পরে সেই জিনিসগুলো নিয়েই আরও তদন্ত করে দেখব। একদম ডাহা মিথ্যা কথা না হলে কোর্ট কিন্তু এইসব টেস্টের রেজাল্টকে অনেক সময় খুব একটা গুরুত্বও দেয় না। অনেকে আছে যাদের গলা এইরকম অবস্থায় সামান্য সত্যি কথা বলতে গেলেও কেঁপে যায়। মেশিন কিন্তু তাদের চিত্ত বৈকল্যও রেকর্ড করে। আর অনেক সময় তাদের সত্যি কথাটাকেও মিথ্যে বলে ধরে নেয়। আমার হাতে এরকম নজিরের সংখ্যা কম নয়। মোটের ওপর এই রিপোর্ট খুব একটা কনক্লুসিভ কিছু না। তবে সামনে যে বসে আছে তার ব্যাপারে অনেক কিছু জানা যেতে পারে এই টেস্টের মাধ্যমে।
এইবার টার্গেটের কথায় আসি। যদিও চিত্ত বৈকল্য ঘটানোটাই আমাদের মেইন মোটিভ তবুও এরকম নজিরও পাওয়া যায় যেখানে উত্তর দেওয়ার সময় লোকে ভুল করে সত্যি কথাও স্বীকার করে ফেলেছে। সুতরাং এখানে দুটো মোটিভ আমাদের দিক থেকে ক্লিয়ার। বা বলা যায় টার্গেট। একঃ কোন কোন ব্যাপারে প্রশ্ন করলে সামনে বসে থাকা ব্যক্তিটি সব থেকে বেশী বিচলিত হয়ে পড়ছে। আর দুইঃ কোনও ভাবে যদি ওনাকে দিয়ে ওনার ব্যাপারে আমাদের যে হাইপোথিসিস আছে সেটাকে স্বীকার করিয়ে নেওয়া যায়। আর একই সাথে ওনার দেওয়া উত্তরটাকে মেশিনও সত্যি বলে মেনে নিচ্ছে।
এখানে একটা কথা বলে রাখা দরকার আরিফ। এই টেস্টে সত্যি মিথ্যা বলে কিছু হয় না। সত্যি মিথ্যা এইগুলো সব অ্যাবসলিউট ব্যাপার। যে প্রশ্ন করছে সেও জানে না কোনটা সত্যি আর যে উত্তর দিচ্ছে সেও জানে না কোনটা সত্যি। মানে অনেক সময় নাও জানতে পারে। অর্থাৎ এখানে আমরা আমাদের হাইপোথিসিসটাকেই সত্যি বলে মেনে নিয়ে এগিয়ে চলি। যে উত্তর দিচ্ছে তার ক্ষেত্রে এই ব্যাপারটা সত্যি, আর যে প্রশ্ন করছে তার ক্ষেত্রেও কিন্তু এই ব্যাপারটা সত্যি।
সাধারণ উদাহরণ দিচ্ছি একটা। ধরে নাও তোমাকে ছোটবেলা থেকে শেখানো হয়েছে সূর্য দক্ষিণ দিকে ওঠে। এটা ভুল। কিন্তু তোমার হাইপোথিসিস বা বিশ্বাস অনুযায়ী এটাই ঠিক। সুতরাং মেশিনের সামনে বসিয়ে তোমাকে যদি জিজ্ঞেস করা হয় যে সূর্য কোন দিকে ওঠে। তুমি অকপটে বলবে দক্ষিণ দিকে। মেশিন বলবে সেটা ঠিক। কিন্তু লোকে বলবে তুমি মিথ্যাবাদী। মোটের ওপর এই যে আমরা ধরতে চাইছি কোনও লোক জ্ঞানত কোনও মিথ্যা কথা বলছে কিনা। অর্থাৎ, তুমি জানো এক, কিন্তু পরিস্থিতির চাপে পড়ে এখন অন্য কিছু বলতে হচ্ছে তোমাকে। সুতরাং তোমার চিত্ত বৈকল্য আসতে বাধ্য। আর আমরাও বুঝে যাব যে তুমি যেটা জানো বা বিশ্বাস করো সেটা তুমি স্বীকার করছ না। কেমন?
এইবার টেকনিকের কথায় আসি। যে প্রশ্ন করছে সে চাইবে একের পর এক প্রশ্ন খুব দ্রুত ছুঁড়ে দিতে উল্টো দিকে বসে থাকা লোকের উদ্দেশ্যে। এর ভালো খারাপ দুই দিকই আছে। কিন্তু তার আগে যে উত্তর দিচ্ছে তার দিকটাও একটু ভেবে দেখতে হবে। যে উত্তর দিচ্ছে সে কিন্তু ভেবে চিনতে উত্তর দিতে পারে। অর্থাৎ তুমি এক সেকন্ড অন্তর অন্তর প্রশ্ন করতে চাইছ বটে, কিন্তু উল্টো দিকে বসে থাকা লোকটার পূর্ণ অধিকার আছে জিনিসটাকে স্লো ডাউন করে দেওয়ার। তুমি হয়ত জিজ্ঞেস করলে আপনার নাম কি। সে প্রায় পাঁচ মিনিট পর উত্তর দিল ব্যোমকেশ বক্সি। এই অধিকার তার আছে। আচ্ছা, এইবার, টেকনিকের ব্যাপারটাও খুব কম্পলিকেটেড। একটু বুঝিয়ে বলি। তুমি কেন তাড়াতাড়ি প্রশ্ন করতে চাইছ? কারণ একটাই, সামনে বসে থাকা ব্যক্তিটির পেটের ভেতর থেকে আসল সত্যিটা বের করে নেওয়া। তোমার টার্গেট লোকটাকে বেশী চিন্তা করার সুযোগ দেওয়া যাবে না। কিন্তু সেটা তো সব সময় ঠিক টেকনিক নয়। “
আরিফ বিরোধিতা করে বললেন “স্যার, কেন ঠিক নয় সেটা কিন্তু বুঝতে পারলাম না। সামনে বসে থাকা লোকটাকে যদি চিন্তা করার সুযোগ না দেওয়া হয় তাহলে হতে পারে সে নিজের অজান্তেই সত্যি কথাটা উগড়ে দেবে। ঠিক কিনা?” মিস্টার বেরা আড়মোড়া ভেঙ্গে চেয়ার ছেড়ে উঠে পড়লেন। “ না আরিফ জিনিসটা অতটা সিম্পল নয়। একটা কাজ করো। জাস্ট ফর রিক্রিয়েশন। মেশিন আনার দরকার নেই। এমনিই করো।” মিস্টার বেরা মিসেস রাহার দিকে তাকিয়ে বললেন “আপনি আমাকে প্রশ্ন করুন। আমি সব কটা প্রশ্নের উত্তর দেব। আর সব কটা উত্তর হবে মিথ্যা। আর হ্যাঁ খুব দ্রুত প্রশ্ন করবেন। রেডি?”
রঃ আপনার নাম?
বঃ সুকুমার রায়।
রঃ কোথায় থাকেন?
বঃ ঢাকা।
রঃ আপনি বিবাহিত?
বঃ না।
রঃ আপনার বউ কেমন রান্না করেন?
বঃ জানি না।
রঃ আপনি তো অবিবাহিত। তাহলে বউ এলো কোথা থেকে?
বঃ জানি না।
রঃ আপনার ছেলে মেয়ে?
বঃ জানি না।
রঃ আমাকে আপনার কেমন লাগে?
বঃ কুৎসিত। (মিসেস রাহা দেখতে খুবই সুন্দরী)
রঃ আমার বরকে?
বঃ আপনার বরকে আমি চিনি না।
এখানেই ব্যাপারটা থেমে গেলো। মিস্টার বেরা জানলার সামনে গিয়ে বললেন “ আরিফ, মেশিন দিয়ে পরীক্ষা করালে দেখতে পেতে আমার সব কটা প্রশ্নের উত্তর ১০০% সত্যি। মানে মেশিন অনুযায়ী। কারণ আমি অ্যাকচুয়ালি কিছু চিন্তাই করছি না। তুমি প্রত্যেক সেকন্ডে একটা করে প্রশ্ন করে চলেছ। আমার টার্গেট একটাই। তোমার প্রশ্নের সাথে সাথে একটা উত্তর তোমার দিকে ছুঁড়ে দেওয়া। অর্থাৎ? দাঁড়াও ...আগে চা। তারপর বাকি সব। চা বলে দাও আরিফ। তুমি আমাকে চিন্তা করার সুযোগ দিচ্ছ না আর আমিও সেই সুযোগ নিচ্ছি না। যদিও আমার সেই সুযোগ নেওয়ার পূর্ণ অধিকার আছে। এইবার একটা কথা বলো আরিফ, আমি যদি চিন্তাই না করি, তাহলে আমার চিত্ত বৈকল্যটা আসবে কোথা থেকে। এখানে তুমি তোমার হাইপোথিসিস প্রমান করার জন্য বেগার খেটে মরছ আর আমি তোমাকে নিয়ে খেলা করছি। দাঁড়াও...তোমার প্রশ্ন আমি জানি। এইবার সেই কথাতেই আমি আসব। তার আগে চাটা চলে আসুক। আর কাউকে পাঠিয়ে আমার জন্য এক প্যাকেট সিগারেট আনিয়ে দাও প্লীজ। এই নাও টাকা।”
মিস্টার বেরা আবার শুরু করলেন “ আমি জানি তুমি কি প্রশ্ন করবে। একটা কথা মিথ্যা বলার পর মানে তোমার হাইপোথিসিস অনুযায়ী মিথ্যা কথা বলার পর তুমি এমন সব প্রশ্ন করবে যাতে আমি পরে অন্য এমন একটা উত্তর দেব যেটা আমার প্রথম উত্তরের পরিপন্থী আর সেটাই হবে তোমার হাতিয়ার। কি ঠিক কিনা? এই প্রশ্নের উত্তরে তিনটে জিনিস বলতে হয়।
১। কোথাও ফেঁসে গেলে যে উত্তর দিচ্ছে তার একটা সহজ উত্তর হতেই পারে “জানি না।” আর আমরা সবাই জানি এটা খুবই কমন একটা টেকনিক।
২। ক্রিমিন্যালদের অনেক রকম জাত হয় আরিফ। সাদামাটা ক্রিমিন্যালরা অনেক সময় এইরকম সওয়ালের সামনে ভেঙ্গে পড়ে। কিন্তু তেমন জাত ক্রিমিন্যাল হলে আগে থেকেই অনেকগুলো প্রশ্ন আর কাউন্টার প্রশ্নের উত্তর মনে মনে তৈরি করে নিয়ে আসবে। অর্থাৎ তুমি যে যে প্রশ্ন করে ওকে কাবু করবে ভেবেছ, সেই সেই প্রশ্ন ওকে করা হলে ও কি কি উত্তর দেবে সেটা মোটামুটি ও আগে থেকেই ঠিক করে এসেছে। এইবার তোমার প্রশ্নের পিঠে পিঠে ও উত্তর দিয়ে যাচ্ছে কিন্তু যা বলছে সেগুলো সব মনগড়া।
৩। এরা হচ্ছে সব থেকে উঁচু জাতের ক্রিমিনাল। এরা ফ্রেশ মাথায় আসে। তুমি প্রশ্ন করে চললে এরা উত্তর দিয়ে চলল। কোনও একটা প্রশ্নের উত্তরে ও মিথ্যা কথা বলল। অর্থাৎ প্রশ্নোত্তরের সেশনে চলাকালীন ও নিজের মতন একটা হাইপোথিসিস ক্রিয়েট করল (জ্ঞানত মিথ্যা কথা বলল)। তুমি কাউন্টার প্রশ্ন করা শুরু করলে। এইবার, সাধারণ ক্রিমিন্যাল হলে তোমার কাউন্টার প্রশ্নের সামনে ভেঙ্গে পড়তে বাধ্য। এমনকি জাত ক্রিমিন্যালরা যারা আগে থেকেই সম্ভাব্য কাউন্টার প্রশ্নের উত্তর মনে করে এসেছে তারাও আউট অফ সিলেবাস প্রশ্নের সামনে ভেঙ্গে পড়তে বাধ্য। অথবা তারা হয়ত বলবে জানি না। বা অনেক সময় তাদের বিচলিত হয়ে পড়তেও দেখা যায়। কিন্তু ক্রিমিনাল যদি খুব উঁচু জাতের হয় তো ব্যাপারটা আরও জটিল হয়ে যায়। তারা প্রথম একটা প্রশ্নের উত্তরে মিথ্যা বলার পর তৎক্ষণাৎ সেই মিথ্যা কথাটাকে মনে করে রেখে দেয়। অর্থাৎ তার আগের হাইপোথিসিস (মিথ্যা) অনুযায়ীই ও পরের উত্তরগুলো দেবে, এবং শুধু দেবেই না, তোমার প্রশ্নের পিঠে পিঠে দিয়ে যাবে যাতে তোমার মনে কোনও রকম সন্দেহ না হয়। ব্যাপারটা করা যে খুবই কঠিন সেটা মেনে নিচ্ছি। কিন্তু রেকর্ড ঘেঁটে দেখো, এরকম অনেক দৃষ্টান্ত তুমি পেয়ে যাবে।
কি? মিসেস রাহা ভুল বললাম কিছু?”
মিসেস রাহা বললেন “ স্যার আমি এমন কেস দেখেছি যেখানে ৩০ মিনিট ধরে সওয়াল করা হয়েছে একটানা। রেজাল্ট বলছে যে ও সবকটা প্রশ্নের উত্তরেই সত্যি কথা বলেছে। পরে জানা গেছিল যে টেস্টে ওই লোক ১৭ টা কাউন্টার প্রশ্নের উত্তরে পরপর জেনে বুঝে মিথ্যা কথা বলে গেছে। লোকটাকে পরে ধরা গেছিল। তামিলনাডুর কেস। লোকটা স্বীকার করেছিল যে ও কোনও রকম প্রশ্নের উত্তর আগে ভাগে মুখস্থ করে আসেনি। টেস্ট চলাকালীন যখন যেমন মনে হয়েছে তেমন বলে গেছে। কোনও প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার আগেই ও খুব একটা কিছু চিন্তা করেনি। টেস্ট চলা কালীন ও শুধু একটাই কাজ করেছে। আগের মিথ্যা বা প্রি-হাইপোথিসিসটাকে মনে করে রেখে দিয়েছে আর সেই অনুযায়ী পরের উত্তরগুলো সাজিয়ে গেছে। আমি হিসাব করে দেখেছিলাম যে ওই ৩০ মিনিটের সেশানে লোকটা ১০ টা প্রি-হাইপোথিসিস অন দা ফ্লাই মুখস্থ করে ফেলেছিল। আর বাকি কাউন্টার প্রশ্নের উত্তরগুলো ও ওই প্রি-হাইপোথিসিস অনুযায়ী দিয়ে গেছে। সাধারণ লোকের পক্ষে এটা করা প্রায় অসম্ভব।”
মিস্টার বেরা বললেন “ এত কথা বলার অর্থ এই যে পলিগ্রাফ টেস্টের সময় সাবজেক্ট যদি প্রশ্নের পিঠে পিঠে উত্তর দিয়ে চলে তাহলে সেটা অনেক সময় আমাদের হিতের বিরুদ্ধে চলে গেলেও যেতে পারে। আর তুমি কি এটা জানো আরিফ, অনেক ক্রিমিনাল আছে যারা জেনে বুঝে ইচ্ছে করে এই টেকনিক ইউজ করে। ওদের টার্গেট হল কোনও প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার আগেই ওরা সময় নিয়ে ভাববে না। সময় নিয়ে ভাবলে যদি চিত্ত বৈকল্য আসে তাহলে তো মেশিন সেটা ধরে ফেলবে! এতে কাউন্টার প্রশ্নে ফেঁসে যাওয়ার রিস্ক যে থাকে সেটা বলাই বাহুল্য তবুও অনেকেই এটা ট্রাই করে। তাই অন দা কন্ট্রারি, আমি চাই যে সাবজেক্ট যেন একটু ভেবে চিনতে উত্তর দেয়। সব সময় প্রশ্নের পিঠে উত্তর দেওয়া ভালো নয়। এইবার তোমার অরিজিন্যাল প্রশ্নের উত্তরে আসছি। কেন আমি ওই সেশনে সংকেতকে আমার গিন্নীর রান্নার হাত কেমন সেটা জিজ্ঞেস করেছিলাম। একে একে চিন্তা করো।
১। সংকেত যখন এখানে এসেছিল তখন কি ও জানত যে ওর পলিগ্রাফ টেস্ট করা হবে? আনসার ইস নো। যে ওর টেস্ট নেবে, অর্থাৎ আমি নিজেই জানতাম না তো ও কি করে জানবে। অর্থাৎ ও যখন এখানে আসে তখন ওর মাথা ফ্রেশ, পরিষ্কার। ও কোনও উত্তর মুখস্থ করার সুযোগ পায়নি।
২। সত্যি কথা বলব একটা? ওর বজ্রআঁটুনি অ্যালিবাইগুলো শোনার পর থেকে আমি কিন্তু ভাবতে শুরু করেছিলাম যে ও সম্পূর্ণ নির্দোষ। বেকার বিনাকারনে এরকম একটা বিশ্রী ব্যাপারে ফেঁসে গেছে বা কেউ ওকে জেনে বুঝে ফাঁসিয়েছে। পলিগ্রাফ টেস্ট চলাকালীন প্রথমবার আমার সন্দেহটা ওর ওপর গিয়ে পড়ে। খেয়াল করে দেখো আমি প্রশ্ন করার স্পীড বাড়িয়ে চললাম, সেই সাথে সংকেতও প্রশ্নের পিঠে উত্তর চাপিয়ে যেতে লাগলো। অর্থাৎ ও এটা জানে যে “বেশী চিন্তা করা যাবে না।” বেশী চিন্তা করলেই বিপদে পড়তে পারে! সাধারণ লোকে একটু হলেও ভেবে চিনতে উত্তর দিত, কিন্তু ও সেটা করল না। এইবার একটা কথা বলো আরিফ, সাধারণ লোক এই “না-ভেবে-উত্তর-দেওয়া”র স্ট্র্যাটেজিটা জানবে কেমন করে? ও ক্রিমিনালদের সেই সহজ টেকনিকটা আমার ওপর খাটিয়েছে। অবশ্য এটাও হতে পারে যে গোটা ব্যাপারটাই কাকতালীয়। কিন্তু আমার হাইপোথিসিস অনুযায়ী এই টেকনিক ও জেনে বুঝে খাটিয়েছে।
৩। প্রথম সবকটা প্রশ্নের উত্তরকে মেশিন “১০০%” সত্যি বলে সার্টিফাই করার পর আমার সন্দেহ আরও প্রবল হয়ে গেল। কোনও সন্দেহই নেই যে ও মেশিনকে বিট করছে। দেখো, এইবার শুধু মাত্র ২ টো সম্ভাবনা থেকে যায়।
প্রথম, ও সব সত্যি কথা বলছে। সেক্ষেত্রে ওর প্রশ্নের সাথে সাথে উত্তর দেওয়ার ব্যাপারটাকে কাকতালীয় বলে মেনে নেওয়া ছাড়া আর অন্য কোনও রাস্তা থাকে না। তবে এটা মানতে বেশ কষ্ট হচ্ছে। কারণ আমরা জানি যে সত্যি কথা বললেও খুব কম সময় মেশিন সেটাকে ১০০% ট্রু বলে ঘোষণা করে। যদি ৯০% ট্রু বলত তাহলেও আমি মেনে নিতাম, কিন্তু ১০০%? হাউ? ৯০% সাবজেক্টের ক্ষেত্রে সাবজেক্ট নিজের নাম বললেও মেশিন সেটাকে ১০০% ট্রু বলে মানে না। মেশিন হয়ত বলবে ৮৫% ট্রু। অর্থাৎ পরিস্থিতির চাপে পড়ে সাবজেক্টের একটু হলেও চিত্ত বৈকল্য হয়েছে, আর এটাই স্বাভাবিক।
দ্বিতীয়, ও জেনে বুঝে মিথ্যা কথা বলছে। আর মেশিন সেটা ধরতে পারছে না।
৪। আমি সেই মুহূর্তে দ্বিতীয় সম্ভাবনাটাকেই সত্যি বলে ধরে নিলাম। অর্থাৎ ও জেনে বুঝে মেশিন কে বিট করছে। তাই আমি ওকে হঠাৎ করে আমার গিন্নীর রান্নার হাত কেমন সেটা জিজ্ঞেস করলাম। আমার গিন্নি ওর কলেজের টিচার। সংকেত আমাদের বাড়িতে পেয়িং গেস্ট হিসাবে থাকে। সব থেকে বড় কথা এই যে ওকে উত্তরটা দিতে হবে আমার গিন্নীর সামনে। ইউসুয়ালি কেউ কারোর মুখের ওপর বলে না যে আপনার রান্নার হাত খুব খারাপ। অন্তত নিজের টিচারের সামনে ওনার রান্নার নিন্দে করা খুবই কঠিন। সুতরাং ওকে আমি পরোক্ষ ভাবে বাধ্য করলাম একটা মিথ্যা কথা বলতে। আমি চাইছিলাম যে ও বলুক সঞ্চিতা ম্যাডামের রান্নার হাত খুব ভালো। আর এই উত্তর শুনে মেশিন যদি দেখায় যে ও ১০০% সত্যি কথা বলছে তাহলে আমার আর কোনও সন্দেহই থাকবে না যে ও অন্যান্য প্রশ্নের জবাবেও মিথ্যা কথা বলেছে আর মেশিন সেটা ধরতে পারছে না।
এখানে আরিফ বাঁধা দিয়ে হেসেবললেন “স্যার অন্য আরেকটা সম্ভাবনাও থাকে। সাবজেক্ট এখানে নিজের বিশ্বাসের কথা বলছে। ওর যদি ম্যাডামের রান্না সত্যিই ভালো লাগে তাহলে তো আপনার প্ল্যান…”
মিস্টার বেরা বললেন “ ওর সাথে বসে একদিন আমি লাঞ্চ করেছিলাম। আমাদের বাড়িতে যে কাজ করে সে বাকি রান্নাগুলো করেছিল, শুধু একটা মেনু করেছিল আমার মিসেস। সেই তরকারি দিয়ে ভাত মেখে প্রথম গ্রাসটা মুখে পুড়তেই ওর মুখের যা অবস্থা হয়েছিল সেটা দেখার মতন… হাহাহাহা। বিয়ের পর আমার মিসেস সব রান্না নুন দিয়ে পুড়িয়ে দিত। আর এখন সব কটা রান্না হয় বিস্বাদ। নুনের ছিটেফোঁটাও থাকে না।
তাছাড়া ওর রান্নার হাত ভীষণ বাজে । আমাদের ওই ডোমেস্টিক হেল্প আছে বলে আমি কোনও মতে বাড়ির রান্না খেয়ে টিকে আছি। যাই হোক কাজের কথায় আসি, আমি চাইছিলাম ও মিথ্যে কথাটা বলুক আর মেশিন সেটাকে ১০০% ট্রু বলে মেনে নিক। কিন্তু সেই ফিকির কোনও কাজে লাগলো না। ও আমার আমার মিসেসের সামনেই বলে দিল যে ওনার রান্নার হাত খুব খারাপ। রান্নায় কোনও নুন থাকে না। আর এই সত্যি কথাটাকে মেশিনও ১০০% ট্রু বলে সার্টিফাই করল।” উনি একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললেন।
মিস্টার রাহা এই প্রথমবার মুখ খুললেন “মিস্টার বেরা, আপনি চাইছিলেন যে সংকেত ফ্লো তে একটা জ্ঞানত মিথ্যা কথা বলুক, বা বলতে বাধ্য হোক। কিন্তু সংকেত যদি খুব বড় জাতের ক্রিমিনাল হয়, অ্যান্ড ও যদি আগে এই টেস্ট কোনও দিন ফেস করে থাকে তো টেস্ট চলাকালীন কোন প্রশ্নের উত্তরে ও মিথ্যা কথা বলবে আর কোন প্রশ্নের উত্তরে ও ইচ্ছে করে সত্যি কথা বলে সামনে বসে থাকা অন্য পার্টিকে বিভ্রান্ত করবে সেটা ওর পক্ষে অন দা ফ্লাই ডিসাইড করা কিন্তু খুব একটা জটিল কিছু নয়। “ মিস্টার বেরা বললেন “আই নো, আই নো। এদিকে আমাদের বাড়ির কাজের লোকটাও নাকি দুই দিন ধরে আসছে না। “
কতক্ষণ উনি শাওয়ারের নিচে এইভাবে বসে ছিলেন সেটা বলতে পারব না। আমি ভেজা শরীর নিয়েই বাথরুমের বাইরে বেরিয়ে এসে একটা সিগারেট ধরালাম। মোবাইল উঠিয়ে কয়েকটা মেসেজ চেক করে নিলাম। তোয়ালেটা নিজের ভেজা শরীরের চারপাশে জড়িয়ে বাথরুমের সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম। হাতের সিগারেটটা এখনও জ্বলছে। ম্যাডাম উঠে দাঁড়িয়েছেন। শাওয়ারের নিচে দাঁড়িয়ে স্নান করছেন। নিজের শরীরের ওপর থেকে সারাদিনের ক্লেদ ধুয়ে ফেলছেন। আমি ওনার শাওয়ার জেল আর শ্যাম্পুর শিশিটা বেসিনের ধারে নামিয়ে রাখলাম। একটা রেজারও নিয়ে এসেছিলেন সাথে করে। আমার ইচ্ছে ছিল ওনার কিছু কিছু জায়গা আজ আমি শেভ করে দেবো। কিন্তু এখন মাথায় আবার অন্য চিন্তা ঘুরছে। রেজারটাও আমি বেসিনের ধারে নামিয়ে রাখলাম। উনি স্নান করার মাঝে মাঝে আমার দিকে তাকিয়ে একটা করে মিষ্টি হাসি ছুঁড়ে দিচ্ছেন। আমার ঠোঁটের কোনায়ও হাসি লেগে আছে। কিন্তু মাথার ভেতরে? অনেকগুলো চিন্তা একসাথে এসে জটলা পাকিয়েছে সেখানে। উনি যদি আমার মন পড়তে পারতেন তাহলে বুঝতে পারতেন যে এখন উনি যা দেখতে পাচ্ছেন সেটা আমার মুখ নয়, একটা মুখোশ। আমার সামনে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়েই উনি গায়ে শাওয়ার জেল মাখলেন, শ্যাম্পু করলেন, সারা গা শেভ করলেন। আমি একটানা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ওনার নগ্ন সৌন্দর্য উপভোগ করে চললাম। সত্যি কি উপভোগ করতে পারলাম।
অবশেষে উনি ভেজা গা নিয়ে বাইরে বেরিয়ে এলেন। আমার কোমরে জড়ানো তোয়ালেটা নিরবে ওনাকে হস্তান্তরিত করলাম। উনি সেটা দিয়ে কোনও মতে গা মুছে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজের সারা শরীরটাকে একবার পরীক্ষা করে নিজের জামা কাপড় উঠিয়ে নিজের ঘরে চলে গেলেন। আমিও স্নান করে রেডি হয়ে নিলাম। ব্যস তারপরের ইতিহাস সব আপনাদের জানা। আমি আমার দুটো মোবাইল নিয়ে নিচে চেমে গেলাম। খেলার কমেন্ট্রি শুনতে আমার চিরকালের আলার্জি। আমার সেই বিখ্যাত মোবাইলে হেডসেটটা গুঁজে দিলাম। বাইরে থেকেই এর স্টেশন চেঞ্জ করা যায়। সুতরাং সেটাকে গোপনে ঢুকিয়ে রাখলাম পকেটের ভেতর। অন্য পকেটে আমার সেই সাদা মাটা ফোনটা। ম্যাডাম নিশ্চিত ভাবে দুটো মোবাইলের উপস্থিতি লক্ষ্য করেননি। উনি এখন রান্না ঘরের কাজে ব্যস্ত। আমি নিচে নেমে ওনার অনুমতি নিয়ে টেলিভিশন চালিয়ে ম্যাচ দেখতে বসে গেলাম। ভলিউম কেন কমিয়ে রেখেছি জিজ্ঞেস করাতে বললাম “আমার এই বোকা বোকা কমেন্ট্রি শুনতে ভালো লাগে না। তাই রেডিও শুনতে শুনতে খেলা দেখছি। আপনি চাইলে ভলিউম বাড়িয়ে দিচ্ছি।” উনি বললেন “ আমার এই ক্রিকেট জিনিসটাই ভালো লাগে না। দরকার হলে মিউট করে দিতে পারো। তাই করলাম। “ এই একই ট্র্যাক প্যান্ট আর অন্য একটা টি শার্ট পরে আমি স্যারের জন্য জেরক্স করাতে গেছিলাম। মোবাইলটা সেই তখন থেকেই ছিল আমার পকেটের ভেতর,আর ইয়ারফোন গোঁজা ছিল কানে। তাই ওনারা গোটা ঘর খুঁজে আমার ল্যাপটপের হদিশ পেলেও আমার এই মোবাইলটাকে দেখতে পাননি। এইবার সময় এসেছে থানায় ফেরার। ওনারা ইতিমধ্যে অনেকদূর অগ্রসর হয়েছেন। বাড়িতে ডিনার শেষ। ম্যাডাম আমাকে গুড নাইট কিস দিয়ে ঘরে চলে গেছেন। ওনার ঘরের দরজা বন্ধ। আমি ঘরে ঢুকে আমার ডাইরিটা খুলে বসে পড়লাম। কানে ইয়ারফোন। তখন ওনারা এই ডাইরিটার হদিশ পাননি। কেন সেটা পরে জানা যাবে।
৪১
মিস্টার বেরা আমার মোবাইল লোকেশনের রিপোর্টটা হাতে নিয়ে চোখ বন্ধ করে বসে আছেন। বেশ কয়েক পাতার রিপোর্ট। হুঁশ ফিরল মিস্টার আরিফ খানের কথায়। উনিও ব্যস্ত। কিন্তু এত ব্যস্ততার মধ্যেও সব অফিসেই খোশগল্প হয়েই থাকে। তো এখানে হবে না কেন? পুলিশ বা গোয়েন্দা বলে কি এনারা কেউ মানুষ নন? ওনারা সবাই কন্ট্রোল রুমে বসে নিজেদের কাজ করছেন। মিসেস রাহা কে জরুরি তলব করে ডেকে আনা হয়েছে। আর সেই সাথে ডেকে আনা হয়েছে ওনার হাজবেন্ডকেও। মিস্টার রাহাও ক্রিমিন্যাল সাইকলজি নিয়ে রিসার্চ করছেন। বহু বছর উনি দেশের বাইরে ছিলেন। ঘটনাচক্রে এনার নামও অর্জুন আর ইনি মিস্টার বেরার বিশেষ পরিচিত। ওনাকে ডাকা হয়েছে বিশেষ কারণে। প্রচণ্ড সিরিয়াস কিছু কেস ছাড়া ওনাকে ডাকা হয়না। আর উনি আসেনও না। উনি রিসার্চ পাগল মানুষ। সেই নিয়েই আছেন। নিজের স্ত্রীর মুখে আমার (সংকেতের) কথা শুনে ফাইনালি এখানে আসতে রাজি হয়েছেন।
সবার সামনে আরিফ একটু হাসি হাসি মুখ নিয়ে মিস্টার বেরা কে জিজ্ঞেস করলেন “ স্যার সেই তখন থেকে একটা কথা জিজ্ঞেস করব করব করেও করতে পারছি না। যদি অভয় দেন তো করি।” এইবার আরেকটা জিনিস বলার সময় এসেছে। এই কথাগুলো আমি ম্যাডামের কাছ থেকেই জানতে পেরেছি ম্যাচ দেখার সময়। মেয়েরা ফ্র্যাঙ্ক হলে অনেক কথাই বলে ফেলে নিজেদের অজান্তে। আজ ম্যাডামও অনেক তথ্য সেই একই কারণে আমার সামনে তুলে ধরেছেন। এই সব অফিসারদের বয়স মিস্টার অর্জুন বেরার থেকে একটু হলেও বেশী।
মিস্টার অর্জুন বেরা লাইফে ২২ বার সাসপেন্ড হয়েছেন। কিন্তু একবারও ওনাকে উইথআউট পেমেন্ট সাসপেন্ড করা হয়নি। উনি কাজ পাগল লোক সেটা সবাই জানে। ভীষণ হার্শ। সেই জন্য বারবার সাসপেন্ড করা হয়। তবে এনাকে প্রমোশন দিতেও সরকার কোনও দিন কার্পণ্য করেনি। ইনি যে ঠিক কি সেটা নাকি কেউ সঠিক বলতে পারবে না। শুধু সিরিয়াস কেসের জন্য এনাকে তলব করা হয়, বাইরে পাঠানো হয়। আর ওনাকে যখন বাইরে পাঠানো হয় তখন ওনাকে যে পরিমাণ অ্যালাঅয়েন্স দেওয়া হয় সেটা শুনলে নাকি সাধারণ লোকের মাথা ঘুরে যাবে। তবে আজ অব্দি উনি দুই একটা বাদ দিয়ে তেমন কোনও কেসে ফেল করেননি। তবে প্রায় প্রত্যেকটা কেসের শেষেই ওনাকে অন্তত দুই দিনের জন্য হলেও সাসপেন্ড করা হয়েছে। ম্যাডামের ধারণা এই কেসের শেষেও ওনার একই পরিণতি হবে। উনি পদাধিকারের বলে সবার থেকে সিনিয়র বলেই সবাই ওনাকে স্যার স্যার করেন।
আরিফের প্রশ্ন শুনে মিস্টার বেরা বললেন “বলে ফেলো আরিফ। এখন আর রাখা ঢাকা করে লাভ নেই। হয় এস্পার নয় অস্পার। “ আরিফ বললেন “না স্যার। অন্য একটা কথা বলছিলাম। আপনি সংকেতকে হঠাৎ করে মিসেস বেরার রান্নার কোয়ালিটি নিয়ে কেন জিজ্ঞেস করলেন সেটা ঠিক ধরতে পারিনি।” মিস্টার বেরা এতসব টেনশনের মধ্যেও হো হো করে হেসেউঠলেন। হাসি থামার পর বললেন “এই ব্যাপার?” তারপর একটু গম্ভীর হয়ে বললেন “ আরিফ যে কারণে প্রশ্নটা করেছিলাম সেটা তো কোনও কাজে দিল না।” মিস্টার খান জিজ্ঞেস করলেন “সেটা সিরিয়াস কোশ্চেন ছিল?” মিস্টার বেরা বললেন “ করেছিলাম দুটো কারণে। বুঝিয়ে বলছি শোনো।”
মিস্টার বেরা একটা সিগারেট ধরিয়ে শুরু করলেন “ আরিফ, এই পলিগ্রাফ টেস্ট হল গিয়ে কিছুটা আদালতে ক্রস এক্সামিনেশন করার মতন জিনিস। মানে প্রশ্ন সাজিয়ে তুমি একের পর এক করে যাবে। তোমার টার্গেটঃ সামনে যে বসে আছে তার ভেতরে চিত্ত বৈকল্য সৃষ্টি করা। মেশিন সেটাই ধরতে পারবে। এখানে একটা সমস্যা আছে। আমরা চলতি কথায় বলি বটে লাই ডিটেকশন হচ্ছে এই টেস্টের মাধ্যমে, আসলে কিন্তু সেটা সত্যি নয়। আমরা শুধু জানতে পারছি যে কোন কোন প্রশ্ন শুনে সামনের ব্যক্তির ভেতরে চিত্ত বৈকল্য আসছে। আমরা পরে সেই জিনিসগুলো নিয়েই আরও তদন্ত করে দেখব। একদম ডাহা মিথ্যা কথা না হলে কোর্ট কিন্তু এইসব টেস্টের রেজাল্টকে অনেক সময় খুব একটা গুরুত্বও দেয় না। অনেকে আছে যাদের গলা এইরকম অবস্থায় সামান্য সত্যি কথা বলতে গেলেও কেঁপে যায়। মেশিন কিন্তু তাদের চিত্ত বৈকল্যও রেকর্ড করে। আর অনেক সময় তাদের সত্যি কথাটাকেও মিথ্যে বলে ধরে নেয়। আমার হাতে এরকম নজিরের সংখ্যা কম নয়। মোটের ওপর এই রিপোর্ট খুব একটা কনক্লুসিভ কিছু না। তবে সামনে যে বসে আছে তার ব্যাপারে অনেক কিছু জানা যেতে পারে এই টেস্টের মাধ্যমে।
এইবার টার্গেটের কথায় আসি। যদিও চিত্ত বৈকল্য ঘটানোটাই আমাদের মেইন মোটিভ তবুও এরকম নজিরও পাওয়া যায় যেখানে উত্তর দেওয়ার সময় লোকে ভুল করে সত্যি কথাও স্বীকার করে ফেলেছে। সুতরাং এখানে দুটো মোটিভ আমাদের দিক থেকে ক্লিয়ার। বা বলা যায় টার্গেট। একঃ কোন কোন ব্যাপারে প্রশ্ন করলে সামনে বসে থাকা ব্যক্তিটি সব থেকে বেশী বিচলিত হয়ে পড়ছে। আর দুইঃ কোনও ভাবে যদি ওনাকে দিয়ে ওনার ব্যাপারে আমাদের যে হাইপোথিসিস আছে সেটাকে স্বীকার করিয়ে নেওয়া যায়। আর একই সাথে ওনার দেওয়া উত্তরটাকে মেশিনও সত্যি বলে মেনে নিচ্ছে।
এখানে একটা কথা বলে রাখা দরকার আরিফ। এই টেস্টে সত্যি মিথ্যা বলে কিছু হয় না। সত্যি মিথ্যা এইগুলো সব অ্যাবসলিউট ব্যাপার। যে প্রশ্ন করছে সেও জানে না কোনটা সত্যি আর যে উত্তর দিচ্ছে সেও জানে না কোনটা সত্যি। মানে অনেক সময় নাও জানতে পারে। অর্থাৎ এখানে আমরা আমাদের হাইপোথিসিসটাকেই সত্যি বলে মেনে নিয়ে এগিয়ে চলি। যে উত্তর দিচ্ছে তার ক্ষেত্রে এই ব্যাপারটা সত্যি, আর যে প্রশ্ন করছে তার ক্ষেত্রেও কিন্তু এই ব্যাপারটা সত্যি।
সাধারণ উদাহরণ দিচ্ছি একটা। ধরে নাও তোমাকে ছোটবেলা থেকে শেখানো হয়েছে সূর্য দক্ষিণ দিকে ওঠে। এটা ভুল। কিন্তু তোমার হাইপোথিসিস বা বিশ্বাস অনুযায়ী এটাই ঠিক। সুতরাং মেশিনের সামনে বসিয়ে তোমাকে যদি জিজ্ঞেস করা হয় যে সূর্য কোন দিকে ওঠে। তুমি অকপটে বলবে দক্ষিণ দিকে। মেশিন বলবে সেটা ঠিক। কিন্তু লোকে বলবে তুমি মিথ্যাবাদী। মোটের ওপর এই যে আমরা ধরতে চাইছি কোনও লোক জ্ঞানত কোনও মিথ্যা কথা বলছে কিনা। অর্থাৎ, তুমি জানো এক, কিন্তু পরিস্থিতির চাপে পড়ে এখন অন্য কিছু বলতে হচ্ছে তোমাকে। সুতরাং তোমার চিত্ত বৈকল্য আসতে বাধ্য। আর আমরাও বুঝে যাব যে তুমি যেটা জানো বা বিশ্বাস করো সেটা তুমি স্বীকার করছ না। কেমন?
এইবার টেকনিকের কথায় আসি। যে প্রশ্ন করছে সে চাইবে একের পর এক প্রশ্ন খুব দ্রুত ছুঁড়ে দিতে উল্টো দিকে বসে থাকা লোকের উদ্দেশ্যে। এর ভালো খারাপ দুই দিকই আছে। কিন্তু তার আগে যে উত্তর দিচ্ছে তার দিকটাও একটু ভেবে দেখতে হবে। যে উত্তর দিচ্ছে সে কিন্তু ভেবে চিনতে উত্তর দিতে পারে। অর্থাৎ তুমি এক সেকন্ড অন্তর অন্তর প্রশ্ন করতে চাইছ বটে, কিন্তু উল্টো দিকে বসে থাকা লোকটার পূর্ণ অধিকার আছে জিনিসটাকে স্লো ডাউন করে দেওয়ার। তুমি হয়ত জিজ্ঞেস করলে আপনার নাম কি। সে প্রায় পাঁচ মিনিট পর উত্তর দিল ব্যোমকেশ বক্সি। এই অধিকার তার আছে। আচ্ছা, এইবার, টেকনিকের ব্যাপারটাও খুব কম্পলিকেটেড। একটু বুঝিয়ে বলি। তুমি কেন তাড়াতাড়ি প্রশ্ন করতে চাইছ? কারণ একটাই, সামনে বসে থাকা ব্যক্তিটির পেটের ভেতর থেকে আসল সত্যিটা বের করে নেওয়া। তোমার টার্গেট লোকটাকে বেশী চিন্তা করার সুযোগ দেওয়া যাবে না। কিন্তু সেটা তো সব সময় ঠিক টেকনিক নয়। “
আরিফ বিরোধিতা করে বললেন “স্যার, কেন ঠিক নয় সেটা কিন্তু বুঝতে পারলাম না। সামনে বসে থাকা লোকটাকে যদি চিন্তা করার সুযোগ না দেওয়া হয় তাহলে হতে পারে সে নিজের অজান্তেই সত্যি কথাটা উগড়ে দেবে। ঠিক কিনা?” মিস্টার বেরা আড়মোড়া ভেঙ্গে চেয়ার ছেড়ে উঠে পড়লেন। “ না আরিফ জিনিসটা অতটা সিম্পল নয়। একটা কাজ করো। জাস্ট ফর রিক্রিয়েশন। মেশিন আনার দরকার নেই। এমনিই করো।” মিস্টার বেরা মিসেস রাহার দিকে তাকিয়ে বললেন “আপনি আমাকে প্রশ্ন করুন। আমি সব কটা প্রশ্নের উত্তর দেব। আর সব কটা উত্তর হবে মিথ্যা। আর হ্যাঁ খুব দ্রুত প্রশ্ন করবেন। রেডি?”
রঃ আপনার নাম?
বঃ সুকুমার রায়।
রঃ কোথায় থাকেন?
বঃ ঢাকা।
রঃ আপনি বিবাহিত?
বঃ না।
রঃ আপনার বউ কেমন রান্না করেন?
বঃ জানি না।
রঃ আপনি তো অবিবাহিত। তাহলে বউ এলো কোথা থেকে?
বঃ জানি না।
রঃ আপনার ছেলে মেয়ে?
বঃ জানি না।
রঃ আমাকে আপনার কেমন লাগে?
বঃ কুৎসিত। (মিসেস রাহা দেখতে খুবই সুন্দরী)
রঃ আমার বরকে?
বঃ আপনার বরকে আমি চিনি না।
এখানেই ব্যাপারটা থেমে গেলো। মিস্টার বেরা জানলার সামনে গিয়ে বললেন “ আরিফ, মেশিন দিয়ে পরীক্ষা করালে দেখতে পেতে আমার সব কটা প্রশ্নের উত্তর ১০০% সত্যি। মানে মেশিন অনুযায়ী। কারণ আমি অ্যাকচুয়ালি কিছু চিন্তাই করছি না। তুমি প্রত্যেক সেকন্ডে একটা করে প্রশ্ন করে চলেছ। আমার টার্গেট একটাই। তোমার প্রশ্নের সাথে সাথে একটা উত্তর তোমার দিকে ছুঁড়ে দেওয়া। অর্থাৎ? দাঁড়াও ...আগে চা। তারপর বাকি সব। চা বলে দাও আরিফ। তুমি আমাকে চিন্তা করার সুযোগ দিচ্ছ না আর আমিও সেই সুযোগ নিচ্ছি না। যদিও আমার সেই সুযোগ নেওয়ার পূর্ণ অধিকার আছে। এইবার একটা কথা বলো আরিফ, আমি যদি চিন্তাই না করি, তাহলে আমার চিত্ত বৈকল্যটা আসবে কোথা থেকে। এখানে তুমি তোমার হাইপোথিসিস প্রমান করার জন্য বেগার খেটে মরছ আর আমি তোমাকে নিয়ে খেলা করছি। দাঁড়াও...তোমার প্রশ্ন আমি জানি। এইবার সেই কথাতেই আমি আসব। তার আগে চাটা চলে আসুক। আর কাউকে পাঠিয়ে আমার জন্য এক প্যাকেট সিগারেট আনিয়ে দাও প্লীজ। এই নাও টাকা।”
মিস্টার বেরা আবার শুরু করলেন “ আমি জানি তুমি কি প্রশ্ন করবে। একটা কথা মিথ্যা বলার পর মানে তোমার হাইপোথিসিস অনুযায়ী মিথ্যা কথা বলার পর তুমি এমন সব প্রশ্ন করবে যাতে আমি পরে অন্য এমন একটা উত্তর দেব যেটা আমার প্রথম উত্তরের পরিপন্থী আর সেটাই হবে তোমার হাতিয়ার। কি ঠিক কিনা? এই প্রশ্নের উত্তরে তিনটে জিনিস বলতে হয়।
১। কোথাও ফেঁসে গেলে যে উত্তর দিচ্ছে তার একটা সহজ উত্তর হতেই পারে “জানি না।” আর আমরা সবাই জানি এটা খুবই কমন একটা টেকনিক।
২। ক্রিমিন্যালদের অনেক রকম জাত হয় আরিফ। সাদামাটা ক্রিমিন্যালরা অনেক সময় এইরকম সওয়ালের সামনে ভেঙ্গে পড়ে। কিন্তু তেমন জাত ক্রিমিন্যাল হলে আগে থেকেই অনেকগুলো প্রশ্ন আর কাউন্টার প্রশ্নের উত্তর মনে মনে তৈরি করে নিয়ে আসবে। অর্থাৎ তুমি যে যে প্রশ্ন করে ওকে কাবু করবে ভেবেছ, সেই সেই প্রশ্ন ওকে করা হলে ও কি কি উত্তর দেবে সেটা মোটামুটি ও আগে থেকেই ঠিক করে এসেছে। এইবার তোমার প্রশ্নের পিঠে পিঠে ও উত্তর দিয়ে যাচ্ছে কিন্তু যা বলছে সেগুলো সব মনগড়া।
৩। এরা হচ্ছে সব থেকে উঁচু জাতের ক্রিমিনাল। এরা ফ্রেশ মাথায় আসে। তুমি প্রশ্ন করে চললে এরা উত্তর দিয়ে চলল। কোনও একটা প্রশ্নের উত্তরে ও মিথ্যা কথা বলল। অর্থাৎ প্রশ্নোত্তরের সেশনে চলাকালীন ও নিজের মতন একটা হাইপোথিসিস ক্রিয়েট করল (জ্ঞানত মিথ্যা কথা বলল)। তুমি কাউন্টার প্রশ্ন করা শুরু করলে। এইবার, সাধারণ ক্রিমিন্যাল হলে তোমার কাউন্টার প্রশ্নের সামনে ভেঙ্গে পড়তে বাধ্য। এমনকি জাত ক্রিমিন্যালরা যারা আগে থেকেই সম্ভাব্য কাউন্টার প্রশ্নের উত্তর মনে করে এসেছে তারাও আউট অফ সিলেবাস প্রশ্নের সামনে ভেঙ্গে পড়তে বাধ্য। অথবা তারা হয়ত বলবে জানি না। বা অনেক সময় তাদের বিচলিত হয়ে পড়তেও দেখা যায়। কিন্তু ক্রিমিনাল যদি খুব উঁচু জাতের হয় তো ব্যাপারটা আরও জটিল হয়ে যায়। তারা প্রথম একটা প্রশ্নের উত্তরে মিথ্যা বলার পর তৎক্ষণাৎ সেই মিথ্যা কথাটাকে মনে করে রেখে দেয়। অর্থাৎ তার আগের হাইপোথিসিস (মিথ্যা) অনুযায়ীই ও পরের উত্তরগুলো দেবে, এবং শুধু দেবেই না, তোমার প্রশ্নের পিঠে পিঠে দিয়ে যাবে যাতে তোমার মনে কোনও রকম সন্দেহ না হয়। ব্যাপারটা করা যে খুবই কঠিন সেটা মেনে নিচ্ছি। কিন্তু রেকর্ড ঘেঁটে দেখো, এরকম অনেক দৃষ্টান্ত তুমি পেয়ে যাবে।
কি? মিসেস রাহা ভুল বললাম কিছু?”
মিসেস রাহা বললেন “ স্যার আমি এমন কেস দেখেছি যেখানে ৩০ মিনিট ধরে সওয়াল করা হয়েছে একটানা। রেজাল্ট বলছে যে ও সবকটা প্রশ্নের উত্তরেই সত্যি কথা বলেছে। পরে জানা গেছিল যে টেস্টে ওই লোক ১৭ টা কাউন্টার প্রশ্নের উত্তরে পরপর জেনে বুঝে মিথ্যা কথা বলে গেছে। লোকটাকে পরে ধরা গেছিল। তামিলনাডুর কেস। লোকটা স্বীকার করেছিল যে ও কোনও রকম প্রশ্নের উত্তর আগে ভাগে মুখস্থ করে আসেনি। টেস্ট চলাকালীন যখন যেমন মনে হয়েছে তেমন বলে গেছে। কোনও প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার আগেই ও খুব একটা কিছু চিন্তা করেনি। টেস্ট চলা কালীন ও শুধু একটাই কাজ করেছে। আগের মিথ্যা বা প্রি-হাইপোথিসিসটাকে মনে করে রেখে দিয়েছে আর সেই অনুযায়ী পরের উত্তরগুলো সাজিয়ে গেছে। আমি হিসাব করে দেখেছিলাম যে ওই ৩০ মিনিটের সেশানে লোকটা ১০ টা প্রি-হাইপোথিসিস অন দা ফ্লাই মুখস্থ করে ফেলেছিল। আর বাকি কাউন্টার প্রশ্নের উত্তরগুলো ও ওই প্রি-হাইপোথিসিস অনুযায়ী দিয়ে গেছে। সাধারণ লোকের পক্ষে এটা করা প্রায় অসম্ভব।”
মিস্টার বেরা বললেন “ এত কথা বলার অর্থ এই যে পলিগ্রাফ টেস্টের সময় সাবজেক্ট যদি প্রশ্নের পিঠে পিঠে উত্তর দিয়ে চলে তাহলে সেটা অনেক সময় আমাদের হিতের বিরুদ্ধে চলে গেলেও যেতে পারে। আর তুমি কি এটা জানো আরিফ, অনেক ক্রিমিনাল আছে যারা জেনে বুঝে ইচ্ছে করে এই টেকনিক ইউজ করে। ওদের টার্গেট হল কোনও প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার আগেই ওরা সময় নিয়ে ভাববে না। সময় নিয়ে ভাবলে যদি চিত্ত বৈকল্য আসে তাহলে তো মেশিন সেটা ধরে ফেলবে! এতে কাউন্টার প্রশ্নে ফেঁসে যাওয়ার রিস্ক যে থাকে সেটা বলাই বাহুল্য তবুও অনেকেই এটা ট্রাই করে। তাই অন দা কন্ট্রারি, আমি চাই যে সাবজেক্ট যেন একটু ভেবে চিনতে উত্তর দেয়। সব সময় প্রশ্নের পিঠে উত্তর দেওয়া ভালো নয়। এইবার তোমার অরিজিন্যাল প্রশ্নের উত্তরে আসছি। কেন আমি ওই সেশনে সংকেতকে আমার গিন্নীর রান্নার হাত কেমন সেটা জিজ্ঞেস করেছিলাম। একে একে চিন্তা করো।
১। সংকেত যখন এখানে এসেছিল তখন কি ও জানত যে ওর পলিগ্রাফ টেস্ট করা হবে? আনসার ইস নো। যে ওর টেস্ট নেবে, অর্থাৎ আমি নিজেই জানতাম না তো ও কি করে জানবে। অর্থাৎ ও যখন এখানে আসে তখন ওর মাথা ফ্রেশ, পরিষ্কার। ও কোনও উত্তর মুখস্থ করার সুযোগ পায়নি।
২। সত্যি কথা বলব একটা? ওর বজ্রআঁটুনি অ্যালিবাইগুলো শোনার পর থেকে আমি কিন্তু ভাবতে শুরু করেছিলাম যে ও সম্পূর্ণ নির্দোষ। বেকার বিনাকারনে এরকম একটা বিশ্রী ব্যাপারে ফেঁসে গেছে বা কেউ ওকে জেনে বুঝে ফাঁসিয়েছে। পলিগ্রাফ টেস্ট চলাকালীন প্রথমবার আমার সন্দেহটা ওর ওপর গিয়ে পড়ে। খেয়াল করে দেখো আমি প্রশ্ন করার স্পীড বাড়িয়ে চললাম, সেই সাথে সংকেতও প্রশ্নের পিঠে উত্তর চাপিয়ে যেতে লাগলো। অর্থাৎ ও এটা জানে যে “বেশী চিন্তা করা যাবে না।” বেশী চিন্তা করলেই বিপদে পড়তে পারে! সাধারণ লোকে একটু হলেও ভেবে চিনতে উত্তর দিত, কিন্তু ও সেটা করল না। এইবার একটা কথা বলো আরিফ, সাধারণ লোক এই “না-ভেবে-উত্তর-দেওয়া”র স্ট্র্যাটেজিটা জানবে কেমন করে? ও ক্রিমিনালদের সেই সহজ টেকনিকটা আমার ওপর খাটিয়েছে। অবশ্য এটাও হতে পারে যে গোটা ব্যাপারটাই কাকতালীয়। কিন্তু আমার হাইপোথিসিস অনুযায়ী এই টেকনিক ও জেনে বুঝে খাটিয়েছে।
৩। প্রথম সবকটা প্রশ্নের উত্তরকে মেশিন “১০০%” সত্যি বলে সার্টিফাই করার পর আমার সন্দেহ আরও প্রবল হয়ে গেল। কোনও সন্দেহই নেই যে ও মেশিনকে বিট করছে। দেখো, এইবার শুধু মাত্র ২ টো সম্ভাবনা থেকে যায়।
প্রথম, ও সব সত্যি কথা বলছে। সেক্ষেত্রে ওর প্রশ্নের সাথে সাথে উত্তর দেওয়ার ব্যাপারটাকে কাকতালীয় বলে মেনে নেওয়া ছাড়া আর অন্য কোনও রাস্তা থাকে না। তবে এটা মানতে বেশ কষ্ট হচ্ছে। কারণ আমরা জানি যে সত্যি কথা বললেও খুব কম সময় মেশিন সেটাকে ১০০% ট্রু বলে ঘোষণা করে। যদি ৯০% ট্রু বলত তাহলেও আমি মেনে নিতাম, কিন্তু ১০০%? হাউ? ৯০% সাবজেক্টের ক্ষেত্রে সাবজেক্ট নিজের নাম বললেও মেশিন সেটাকে ১০০% ট্রু বলে মানে না। মেশিন হয়ত বলবে ৮৫% ট্রু। অর্থাৎ পরিস্থিতির চাপে পড়ে সাবজেক্টের একটু হলেও চিত্ত বৈকল্য হয়েছে, আর এটাই স্বাভাবিক।
দ্বিতীয়, ও জেনে বুঝে মিথ্যা কথা বলছে। আর মেশিন সেটা ধরতে পারছে না।
৪। আমি সেই মুহূর্তে দ্বিতীয় সম্ভাবনাটাকেই সত্যি বলে ধরে নিলাম। অর্থাৎ ও জেনে বুঝে মেশিন কে বিট করছে। তাই আমি ওকে হঠাৎ করে আমার গিন্নীর রান্নার হাত কেমন সেটা জিজ্ঞেস করলাম। আমার গিন্নি ওর কলেজের টিচার। সংকেত আমাদের বাড়িতে পেয়িং গেস্ট হিসাবে থাকে। সব থেকে বড় কথা এই যে ওকে উত্তরটা দিতে হবে আমার গিন্নীর সামনে। ইউসুয়ালি কেউ কারোর মুখের ওপর বলে না যে আপনার রান্নার হাত খুব খারাপ। অন্তত নিজের টিচারের সামনে ওনার রান্নার নিন্দে করা খুবই কঠিন। সুতরাং ওকে আমি পরোক্ষ ভাবে বাধ্য করলাম একটা মিথ্যা কথা বলতে। আমি চাইছিলাম যে ও বলুক সঞ্চিতা ম্যাডামের রান্নার হাত খুব ভালো। আর এই উত্তর শুনে মেশিন যদি দেখায় যে ও ১০০% সত্যি কথা বলছে তাহলে আমার আর কোনও সন্দেহই থাকবে না যে ও অন্যান্য প্রশ্নের জবাবেও মিথ্যা কথা বলেছে আর মেশিন সেটা ধরতে পারছে না।
এখানে আরিফ বাঁধা দিয়ে হেসেবললেন “স্যার অন্য আরেকটা সম্ভাবনাও থাকে। সাবজেক্ট এখানে নিজের বিশ্বাসের কথা বলছে। ওর যদি ম্যাডামের রান্না সত্যিই ভালো লাগে তাহলে তো আপনার প্ল্যান…”
মিস্টার বেরা বললেন “ ওর সাথে বসে একদিন আমি লাঞ্চ করেছিলাম। আমাদের বাড়িতে যে কাজ করে সে বাকি রান্নাগুলো করেছিল, শুধু একটা মেনু করেছিল আমার মিসেস। সেই তরকারি দিয়ে ভাত মেখে প্রথম গ্রাসটা মুখে পুড়তেই ওর মুখের যা অবস্থা হয়েছিল সেটা দেখার মতন… হাহাহাহা। বিয়ের পর আমার মিসেস সব রান্না নুন দিয়ে পুড়িয়ে দিত। আর এখন সব কটা রান্না হয় বিস্বাদ। নুনের ছিটেফোঁটাও থাকে না।
তাছাড়া ওর রান্নার হাত ভীষণ বাজে । আমাদের ওই ডোমেস্টিক হেল্প আছে বলে আমি কোনও মতে বাড়ির রান্না খেয়ে টিকে আছি। যাই হোক কাজের কথায় আসি, আমি চাইছিলাম ও মিথ্যে কথাটা বলুক আর মেশিন সেটাকে ১০০% ট্রু বলে মেনে নিক। কিন্তু সেই ফিকির কোনও কাজে লাগলো না। ও আমার আমার মিসেসের সামনেই বলে দিল যে ওনার রান্নার হাত খুব খারাপ। রান্নায় কোনও নুন থাকে না। আর এই সত্যি কথাটাকে মেশিনও ১০০% ট্রু বলে সার্টিফাই করল।” উনি একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললেন।
মিস্টার রাহা এই প্রথমবার মুখ খুললেন “মিস্টার বেরা, আপনি চাইছিলেন যে সংকেত ফ্লো তে একটা জ্ঞানত মিথ্যা কথা বলুক, বা বলতে বাধ্য হোক। কিন্তু সংকেত যদি খুব বড় জাতের ক্রিমিনাল হয়, অ্যান্ড ও যদি আগে এই টেস্ট কোনও দিন ফেস করে থাকে তো টেস্ট চলাকালীন কোন প্রশ্নের উত্তরে ও মিথ্যা কথা বলবে আর কোন প্রশ্নের উত্তরে ও ইচ্ছে করে সত্যি কথা বলে সামনে বসে থাকা অন্য পার্টিকে বিভ্রান্ত করবে সেটা ওর পক্ষে অন দা ফ্লাই ডিসাইড করা কিন্তু খুব একটা জটিল কিছু নয়। “ মিস্টার বেরা বললেন “আই নো, আই নো। এদিকে আমাদের বাড়ির কাজের লোকটাও নাকি দুই দিন ধরে আসছে না। “