05-03-2019, 03:54 PM
৩। যে ফাইলগুলো সিজ করে আনা হয়েছে তাতে কোনও কাজের জিনিস পাওয়া যায়নি। ওনার সারা জীবনের বিভিন্ন গবেষণা আর পড়াশুনার কিছু অত্যন্ত সাধারণ নোটস ছাড়া তেমন কিছু নেই এই কাগজের টুকরোগুলোতে।
৪। এইটা খুব জরুরি তথ্য। একটা ছোট রাইটিং প্যাড নিয়ে আসা হয়েছিল। মিস্টার মুখার্জির নিজের হাতের লেখা পাওয়া গেছে এতে। ক্রোনোলজিকালি কবে কবে উনি কোন কোন আর্মসের ব্যাপারে গবেষণা শেষ করেছেন সেগুলো লেখা আছে এই প্যাডে। গবেষণার রেজাল্ট কি সেটাও পাওয়া যাচ্ছে এই প্যাডের লেখা থেকে। কোন প্রাইভেট সেফ খুললে কোন গবেষণার ফাইল পাওয়া যাবে সেই তথ্যও লেখা আছে এই প্যাডে। জরুরি বিষয় হল, এই ফিউসের উল্লেখও পাওয়া গেছে এই প্যাডে, এটাই প্যাডের একদম লাস্ট এন্ট্রি। কোন সেফে সেই ফাইল পাওয়া যাবে সেটাও লেখা আছে এই প্যাডে। কিন্তু সেফ খুলে যে কিছুই পাওয়া যায়নি সে কথা তো আগেই বলেছি।
মিস্টার বেরা মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়েছেন। বাকিরা চুপ করে ওনাকে ঘিরে দাঁড়িয়ে আছেন। আরিফ একটু সাহস করে বললেন “স্যার কিছু তো বলুন!” মিস্টার বেরার মুখ থমথমে। উনি বললেন “ নিজের গালে একটা থাপ্পড় মারতে ইচ্ছে করছে। মিস্টার মুখার্জি ছিলেন আমাদের দেশের সম্পদ, এক বিরল প্রতিভা। ওনার মতন এত রকমের আর এত সংখ্যায় আর্মস নিয়ে আগে কেউ গবেষণা করেছেন বলে মনে হয় না। সারা জীবনে ২২ টার ওপর বিভিন্ন রকমের আর্মস নিয়ে উনি গবেষণা করেছেন। ফিউসটার ফাইলের কথা ছেড়েই দিলাম। আরও ৯ টা ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ গবেষণার ফাইল সযত্নে রাখা ছিল ওনার বিভিন্ন প্রাইভেট সেফে। আরিফ, চোর বিশাল বড় দাও মেরেছে। চোর এই ফিউসের ফাইলটার সাথে বাকি ৯টা গবেষণার ফাইলও নিয়ে গেছে।” রবিন বাবু বললেন “স্যার সংকেতের ওপর আমাদের সন্দেহ যখন এতটাই প্রবল তখন আপনার বাড়ি গিয়ে ওর জিনিসপত্র খানা তল্লাশি করে দেখলে হয় না। হয়ত জিনিসগুলো এখনও ওর কাছেই আছে। “
মিস্টার বেরা বললেন “বাড়িটা আমার ঠিকই। কিন্তু ওর জিনিস খানা তল্লাশি করে দেখতে হলে আরও স্ট্রং বেসিস চাই, এভিডেন্স চাই। সোজা কথা বলতে গেলে, আমাদের কাছে আছে কিছু হাইপোথিসিস, প্রমান একটাও নেই। তাছাড়া সংকেতের বিরুদ্ধে এখন অব্দি এই চুরি সংক্রান্ত কোনও কংক্রিট লিড আমাদের হাতে আসেনি। খুনের ব্যাপারে ওর বিরুদ্ধে প্রমান ছিল। কিন্তু ও নিজে এগিয়ে এসে স্পার্ম টেস্ট করিয়ে নিল আমাদের দিয়ে। (একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন) আমাদের সামনে এইবার খুব ডেঞ্জারাস একটা ছেলে দাঁড়িয়ে আছে। ল্যাপটপ আর হার্ড ডিস্কটা কোথা থেকে কেনা হয়েছে সেই নিয়ে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব তথ্য জোগাড় করার চেষ্টা করো। প্রমান চাই ...প্রমান। সংকেতের ফোন ট্যাপ করো। ও কি করছে, কি বলছে, কি ভাবছে সব আমি জানতে চাই। আরিফ আরেকটা কাজ করো। মালিনী বলে ওই মেয়েটার ব্যাপারে খোঁজ খবর নেওয়া শুরু করো। আর সংকেতের মোবাইল লোকেশন আর কল ডিটেলস কতক্ষণে আসবে? তাড়া দাও ওদের। আজ সংকেতের ফিঙ্গারপ্রিন্ট নেওয়া হয়েছিল। দেখো আমাদের ডেটাবেসে কোনও ম্যাচ পাওয়া যায় কিনা। ওর ফেস চেক করো আমাদের ডেটাবেসে, দেখো কোনও ফেসিয়াল ম্যাচ পাওয়া যায় কিনা। আর সংকেতের পিছনে কাকে পাঠিয়েছে? “
আরিফ বললেন “ স্যার আপনার প্রিয় সুজন পাণ্ডে। “ মিস্টার বেরা একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে বললেন “যাক এটা একটা ভালো কাজ করেছ। দেখি অমিতাভ বচ্চনের সাথে পালা পড়লে এই ছেলের কি হাল হয়!” যদিও মিস্টার পাণ্ডে এই লেখায় তেমন সিরিয়স কেউ নয় আর ওর রোল শুধু মাত্র কয়েক মিনিটের তবুও এখানে সুজন পাণ্ডের ব্যাপারে একটু বলে রাখি। সুজন পাণ্ডের বয়স ২৮। কম্যান্ডো ট্রেনিং প্রাপ্ত যুবক। উচ্চতা ৬ ফুট সাড়ে ৪ ইঞ্চি। এই উচ্চতার জন্য ডিপার্টমেন্টে ওর নাম হয়েছে আমিতাভ বচ্চন। তিনটে ডাকাতকে একা হাতে গ্রেপ্তার করার জন্য সরকার পক্ষ থেকে ওকে মেডেল দেওয়া হয়েছিল। পুলিশ বিভাগে যে বক্সিং টুর্নামেন্ট হয় তাতে মিস্টার পাণ্ডে শেষ তিন বছর ধরে খেতাব জিতে এসেছেন। ভীষণ ফিট বডি আর তেমনই দশাসই চেহারা। পুলিশ মহলে ওনার আরেকটা নাম আছে। ফাস্টেস্ট হ্যান্ড। কারণ একটাই... ভীষণ দ্রুত ঘুষি মারতে পারেন উনি, আর তেমনই জোর ওনার ঘুষির। এত ফাস্ট ঘুষি ডিপার্টমেন্টে আর কেউ মারতে পারে না। এই ভদ্রলোককে মিস্টার আরিফ খান আমার পেছনে লেলিয়ে দিয়েছেন। কিন্তু দুঃখের কথা হল এই যে, যখন, এই কথাগুলো হচ্ছে তখন অলরেডি এই নাটকে ওনার রোল শেষ হয়ে গেছে। আমিতাভ বচ্চনকে এই সব ফালতু কাজে বেশীক্ষণ বেঁধে রাখা যায় কি? উনি শুধু গেস্ট অ্যাপিয়ারেন্স দিয়ে কেটে পড়েছেন। খবরটা যদিও এসেছে বেশ খানিকক্ষণ পড়ে।
খারাপ সময় চললে একের পর এক দুঃসংবাদ আসতেই থাকে। মিস্টার বেরার আজ তেমনই একটা দিন। হঠাৎ করে হাঁপাতে হাঁপাতে এসে মণ্ডল বাবু বললেন “স্যার সর্বনাশ হয়ে গেছে। এক্ষুনি একবার যেতে হবে।” মিস্টার বেরা একটু বিরক্তির সাথে বললেন “কোথায়?” উনি বললেন “হাসপাতালে।” মিস্টার বেরা জিজ্ঞেস করলেন “ তোমার বাড়িতে আবার কার কি হল? এই তো কয়েকদিন আগে তোমার বউয়ের কোমর না পা কি একটা ভেঙ্গে গেছিল না?” “স্যার সুজন। এক্ষনি চলুন। “ এই কথা শোনার পর আর বসে থাকা যায় না। মিস্টার বেরা ওনার গোটা টিম নিয়ে দ্রুত থানা থেকে বেরিয়ে এসে গাড়িতে চড়ে বসলেন। দুটো পুলিশের জিপ ছুটে চলল হাসপাতালের উদ্দেশ্যে। হাসপাতাল অবশ্য থানা থেকে বেশী দূরে নয়। পথে যেতে যেতে মিস্টার বেরা মণ্ডলকে জিজ্ঞেস করলেন “কি হয়েছে কিছু জানতে পেরেছ?” মণ্ডল বললেন “না স্যার হাসপাতাল থেকে ফোন করে আর্জেন্ট বেসিসে আসতে বলা হয়েছে। হাসপাতাল থেকে পুলিশের কন্ট্রোল রুমে ফোন করেছিল। অবস্থা নাকি সিরিয়স। ও আপনাকে কিছু বলতে চায়। আর শুধু আপনাকেই বলতে চায়। “
হাসপাতাল এসে গেছে। সবাই পড়ি মরি করে হাসপাতালের ভেতরে ঢুকে নিজেদের পরিচয় দিতেই সরাসরি ওদের নিয়ে যাওয়া হল সুজন পান্ডের কেবিনে। ২০ মিনিট আগে ওনাকে অ্যাডমিট করা হয়েছে। ওনাকে দেখেই বোঝা যাচ্ছে যে ওনার আয়ু আর বেশীক্ষণ নেই। মিস্টার বেরা নিজের অত্যন্ত প্রিয় চেলা সুজন পান্ডের মাথার কাছে দাঁড়িয়ে জিজ্ঞেস করলেন “ সুজন তোমার কিচ্ছু হবে না। শান্ত হও আগে। তারপর বলো, আমাকে তুমি কি বলতে চেয়েছিলে? “ সুজনের মুখে যে হাসিটা ফুটে উঠল সেটা প্রায় চোখেই দেখা যায় না। ওনার হাঁপ ধরে গেছে। ব্যথায় অসম্ভব কাতরাচ্ছেন ভদ্রলোক। তবুও কোনও মতে মুখ খুললেন উনি। “ স্যার সংকেত।” মিস্টার বেরা বললেন “হুম বলো। সংকেত কি?” মিস্টার পান্ডে একটা জোরে দম নিয়ে কোনও মতে পরের কথাগুলো বলে ফেললেন,” স্যার সংকেত আমাকে মেরেছে। “
মিস্টার খান ততক্ষণে নিজের মোবাইল খুলে আমার ছবিটা ওনার সামনে মেলে ধরেছেন, “ঠিক দেখেছ সুজন? এই ছেলেটাই?” মিস্টার পাণ্ডে আরেকটা দম নিয়ে কোনও মতে বলে চললেন “ স্যার আপনার বাড়ি থেকে একটু দূরে একটা সিগারেটের দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে আমি বাড়ির দিকে লক্ষ্য রেখেছিলাম। হঠাৎ খেয়াল হল আমার প্যান্টের পকেটে একটা চিরকুট কেউ ফেলে দিয়ে গেছে। কখন ফেলে দিয়ে গেছে জানি না।” ডাক্তার সেই চিরকুটটা মিস্টার বেরার সামনে মেলে ধরলেন। বাঙলায় লেখা কয়েকটা লাইন “ ঘরের ছেলে ঘরে ফিরে যাও। আমার নাগাল পাওয়া অর্জুন বেরার ক্ষমতার বাইরে। আমার যা দরকার সেটা আমি হাতিয়ে নিয়েছি। এখন আমার পেছনে লেগে বেকার সময় নষ্ট করে কোনও লাভ নেই। ...আপনার হিতৈষী শ্রীমান সংকেত রায়।”
সুজন বলে চললেন “ চিরকুটটা পড়েই পেছনে ঘুরে দেখি সংকেত আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি মুচকি হাঁসছে। আমাকে ওর পিছন পিছন আসতে ইশারা করে ও দৌড় মারল। আমি ভাবলাম ও পালিয়ে যাচ্ছে। এই সুযোগ হাতছাড়া করা যায় না। ওর পিছন পিছন দৌড়ালাম। প্রায় মিনিট দশেক দৌড়ানোর পর একটা অন্ধকার ফাঁকা গলির মধ্যে ঢুকে বুঝতে পারলাম যে ওকে আমি হারিয়ে ফেলেছি। আবার আপনার বাড়ির সামনে ফিরে যাব ঠিক করে পিছনে ঘুরতেই দেখি ও আমার মুখোমুখি দাঁড়িয়ে আছে। স্যার দুই হাত দূরে দাঁড়িয়ে আছে এই সংকেত রায়। আজ যাকে আপনারা অতক্ষন ধরে থানায় বসিয়ে রেখেছিলেন। আমার কোনও ভুল হয়নি। হি ইস সংকেত রায়। একই মুখ, একই হাইট, একই বডি ল্যাঙ্গোয়েজ। গলার আওয়াজও এক। ও আমাকে ওপেন চ্যালেঞ্জ দিল। আমি পিস্তল বের করার আগেই এক লাথিতে ও আমাকে মাটিতে শুইয়ে দিয়েছে। পিস্তলটা অন্ধকারে কোথায় গিয়ে পড়েছে জানি না। ঠিক করলাম হাতাহাতি করে ব্যাটাকে শায়েস্তা করব। কিন্তু স্যার আয়াম ভেরি সরি। আই অ্যাম নো ম্যাচ ফর দিস সংকেত রায়। অমানুষিক গায়ের জোর আর তেমনই কমব্যাট টেকনিক। খুব বেশী হলে ৩০-৪০ সেকেন্ড। বলতে পারব না কি হল। আমি মাটিতে পড়ে পড়ে কাতরাচ্ছি আর সংকেত হাঁসতে হাঁসতে ওখানে থেকে চলে গেল। ৭.৩০ থেকে কতক্ষণ মরার মতন…”
মিস্টার পাণ্ডের অবস্থা এখন আরও খারাপ তাই ডাক্তার মিস্টার বেরাদের ওখান থেকে বের করে দিলেন। ওনারা বাইরে আসতে না আসতেই খবর এলো মিস্টার পাণ্ডে ওনার ইহলীলা সাঙ্গ করে অন্য জগতে পাড়ি দিয়েছেন। ডাক্তার কে মিস্টার বেরা জিজ্ঞেস করলেন “পাণ্ডের কি কি ইনজুরি ছিল?” ডাক্তার বললেন “স্যার উনি যে এতক্ষন বেঁচে ছিলেন কি করে সেটাই আশ্চর্য। পুরো স্পাইনাল কর্ড টুকরো টুকরো হয়ে গেছে। হাঁটু থেঁৎলে গেছে। কোমরও ড্যামেজড। আরও কিছু হাড় ভেঙেছে বাজে ভাবে। কিন্তু ৩০-৪০ সেকন্ডে এরকম চেহারার একটা লোকের কেউ এই হাল করতে পারে? “ উনি এক মুখ হতাশা নিয়ে মাথা নাড়তে নাড়তে বিদায় নিলেন। মিস্টার বেরা হঠাৎ কি মনে করে সবাইকে বললেন “চটপট থানায় ফিরতে হবে। পাণ্ডের বডি পোস্টমর্টেমের জন্য পাঠিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করো। “ আবার সবাই পড়ি কি মরি করে ফিরে এলো থানায়। থানায় ঢুকেই উনি থানার নম্বর থেকে ওনার বাড়িতে ডায়াল করলেন। ঘড়িতে সময় ৯.৪৫।
প্রথমবার রিং হয়ে কেটে গেল। কেউ কল ওঠাল না। আবার ডায়াল করলেন উনি। এইবার অন্য দিক থেকে ভেসে এলো সঞ্চিতা ম্যাডামের গলা। “হ্যালো।” মিস্টার বেরা চেয়ারে বসে পড়ে বললেন “সঞ্চিতা আমি বলছি। “ ম্যাম বললেন “হুম বলো।” মিস্টার বেরা বললেন “ আরে একটা কথা বলার জন্য ফোন করেছিলাম। আজ রাত্রে আমি ফিরছি না। ফিরলেও অনেক দেরী হবে। তোমরা ডিনার করে নিও। আমি খেয়েই আসব। “ ওই দিক থেকে চীৎকার ভেসে এলো। “ সে তুমি আর বাড়ির খাবার খাবে কেন? আমি তো রান্নাই করতে পারি না। নুন ছাড়া রান্না কি আর পোষায়?” ম্যাম এত জোরে কথা বলছেন যে ঘরের সবাই সেই কথা শুনতে পাচ্ছে। স্যার গলা নামিয়ে বললেন “আহা সঞ্চিতা এখনও তুমি ওই রাগ ধরে বসে আছো? আর একটু আস্তে কথা বলো। চারপাশে লোক আছে। সবাই তোমার গলা শুনতে পাচ্ছে। “ ওই দিক থেকে ম্যাডাম বললেন “সরি। “ স্যার বললেন “সংকেত কেমন আছে? সব ঠিক ঠাক?” ম্যাডাম বললেন “হ্যাঁ। ও ঠিকই আছে। এই তো সামনে বসে ক্রিকেট ম্যাচ দেখছে। “ স্যার বললেন “ শোনো না একটা ছোট হেল্প করতে হবে তোমাকে। একটু আমার কাজের ঘরে যাও। “ ম্যাডাম বললেন “কেন? আর ঘরটার কি অবস্থা হয়েছে গো?” স্যার বললেন “উফফ কথা না বাড়িয়ে আমার কাজের ঘরে যাও। একটু দরকার আছে।”
যতক্ষণে ম্যাডাম উপরে উঠে ওনার কাজের ঘরে গেলেন ততক্ষণে মিস্টার বেরা কলম দিয়ে খসখস করে একটা সাদা কাগজে কিছু লিখে কাগজটা মিস্টার মণ্ডলের দিকে এগিয়ে দিলেন। কাগজটা হাতে নিয়েই মিস্টার মণ্ডল দৌড় মারলেন। ওই দিক থেকে ম্যাডাম বললেন “ হুম বলো। চলে এসেছি। কি খুঁজতে হবে?” স্যার বললেন “ কোনও কথা বলবে না। যা বলছি। শুধু শুনে যাও। কোনও প্রশ্ন নয়। আর আমি কোনও প্রশ্ন করলে এক কথায় তার উত্তর দেবে। “ ম্যাডাম বললেন “ওকে।” স্যার “সংকেত এখন নিচে?” ম্যাডাম “হ্যাঁ। কিন্তু তুমি…” স্যার বললেন “সঞ্চিতা। কোনও কথা বলবে না। শুধু উত্তর দাও। তোমরা কটায় বাড়ি পৌঁছালে?” ম্যাডাম একটু ভেবে বললেন “৬.৪০ এর দিকে।” স্যার “ তারপর কি আর সংকেত বাড়ি থেকে বেরিয়েছে?” ম্যাডাম “না।” স্যার “তুমি ১০০% শিওর?” ম্যাম “হ্যাঁ। আমি ড্রেস চেঞ্জ করে নিচে নামলাম। সংকেতও ৫ মিনিটের মধ্যে ফ্রেশ হয়ে এসে ক্রিকেট ম্যাচ দেখতে বসে গেল। তারপর থেকে তো ওখানেই আছে।”
স্যার বললেন “ এখন সংকেত কোথায়?” ম্যাডাম বললেন “নিচে।” স্যার বললেন “ যেটা বলছি খুব মন দিয়ে শোনো। ভয় পাবে না। একদম স্বাভাবিক থাকবে। আমাদের ধারণা সংকেত সুবিধের ছেলে নয়। অনেক কারণ আছে এরকম ভাবার। তুমি জানো আমি ব্লাইন্ড খেলি না। আপাতত ওর ঘর আমাদের সার্চ করতে হবে। আর এখনই করতে হবে। “ ম্যাডাম বললেন “কিভাবে?” স্যার বললেন “চুপ করে শুনে যাও। তুমি সংকেত কে গিয়ে একদম স্বাভাবিক ভাবে বলো যে আমি তোমাকে একটা ফাইল খুঁজতে বলেছি।সেটা তুমি খুঁজে পাচ্ছ না। বা বুঝতে পারছ না কোন ফাইলের কথা বলছি। ওকে হেল্প করতে বলো। খেয়াল রেখো, একদম ক্যাজুয়ালি গিয়ে কথাটা বলবে। আমি লাইন ধরে আছি। ফোনটা ওর হাতে দিয়ে ওকে দোতলায় পাঠিয়ে দেবে। তুমি নিচেই থেকে যেও। “ ম্যাডাম বললেন “ওকে। ওয়েট করো।”
কিছুক্ষণ পর আবার ম্যাডামের গলার আওয়াজ পাওয়া গেল। একদম স্বাভাবিক। “এই সংকেত। ও একটু তোমার সাথে কথা বলতে চায়। কি ফাইল দরকার। আমি ছাতার মাথা কিছুই বুঝতে পারছি না। এইসব ফাইল টাইল বোঝা কি আমাদের কাজ? বলো? বাপু এত দরকারি ফাইল হলে অফিস যাওয়ার আগেই নিয়ে গেলে হয়। “ আমি ফোনটা উঠিয়ে বললাম “হ্যাঁ স্যার বলুন। “ মিস্টার বেরা বললেন “সংকেত, কেমন আছ? আমি কিন্তু আজকের জন্য আবার সরি বলছি। “ বললাম “স্যার আপনি বেকার ভাবছেন। বলুন। কি ফাইল, আর কোথায় আছে?” স্যার বললেন “আমার কাজের ঘরে যাও। তারপর বলছি।” আমি ততক্ষণে ম্যাডামের ইশারায় ওনার কাজের ঘরের দিকে দৌড় মেরেছি। বললাম “হ্যাঁ স্যার বলুন। “ উনি বললেন “ দেখো টেবিলের পাশে ফাইলের যে স্তূপ আছে, সেখানে ডিপ ব্লু কালারের একটা মোটা ফাইল আছে কি না?” হেসেবললাম “ স্যার টেবিল আর কোথায়? টেবিল তো ভেঙ্গে গেছে। না তেমন কোনও ফাইল দেখতে পাচ্ছি না তো। ও হ্যাঁ পেয়েছি। ডিপ ব্লু না মেরুন?”
স্যার কিছু বলার আগেই আমি ফাইলটা দেখতে পেয়ে বললাম “স্যার, পেয়েছি।” উনি বললেন “ওটা একটু বের করবে?” বললাম “করে ফেলেছি। এইবার?” স্যার বললেন “ ফাইলটা খুলে ফার্স্ট এন্ট্রিতে কি আছে একটু বলবে?” বললাম “স্যার এটা তো গোপন ফাইল? পড়ব?” উনি হেসেবললেন “হ্যাঁ। এখন আর তেমন গোপন কিছু নয়। “ আমি পড়ে শোনালাম। স্যার বললেন “ ভেরি গুড। তোমার শরীর কেমন এখন? ফ্র্যাঙ্কলি বলো। “ বললাম “ ঠিকই আছে। “ উনি বললেন “আমার একটা ছোট্ট কাজ করে দেবে? অবশ্য তুমি যদি পড়াশুনা করছিলে তো…” বললাম “না না। ম্যাচ আছে আজ। ইন্ডিয়া-ইংল্যান্ড। ওই দেখছিলাম। “ স্যার বললেন “ তাহলে বাইরে গিয়ে এই ফাইলটার ৩ কপি জেরক্স করিয়ে আনতে পারবে? “ বললাম “গোটা ফাইলটার? এতো বেশ মোটা ফাইল স্যার।” স্যার বললেন “হ্যাঁ। কটা কপি করাবে?” বললাম “৩ কপি। “ উনি বললেন “ নিচে গিয়ে তোমার ম্যাডামের হাতে ফোনটা দাও। ওনাকে দুটো কথা বলার ছিল। তুমি রেডি হয়ে নাও। অনেক রাত হয়ে গেছে এমনিতেই। আর সাবধানে যেও। “ অগত্যা দৌড়ে গিয়ে ম্যাডামের হাতে ফোনটা ধরিয়ে দিয়ে বললাম “ ২ মিনিটে আসছি।” ম্যাডামের গলা ভেসে আসতেই স্যার বললেন “ ও কি ওপরে চলে গেছে?” ম্যাডাম বললেন “হ্যাঁ। “ স্যার বললেন “ ওকে বিশু বাবুর দোকানে যেতে বলো। হাতে ১০০০ টাকার মতন ধরিয়ে দাও। জেরক্স করাতে কাজে লাগবে। দুজন অফিসার তোমার বাড়িতে যাবে ওর ঘর সার্চ করতে। ওদের সংকেতের ঘরটা দেখিয়ে দিও। বুঝতে পেরেছ? “
ম্যাডাম কাঁপা কাঁপা গলায় বললেন “কিন্তু ও যদি ফিরে আসে?” মিস্টার বেরা বললেন “ সেই চিন্তা আমাকে করতে দাও। আর ও নিচে এলে আরেকবার ওকে ফোনটা দিও। “ আমি ইতিমধ্যে রেডি হয়ে নিচে নেমে এসেছি। ম্যাডাম আমার হাতে ফোনটা ধরিয়ে দিয়ে রান্না ঘরে চলে গেলেন। “ বললাম “হ্যাঁ স্যার।” উনি বললেন “ সংকেত বাজে কষ্ট দিচ্ছি তোমাকে। তোমাকে কোথায় গিয়ে জেরক্স করাতে হবে সেটা ম্যাডামের কাছ থেকে জেনে নিও। দোকানটা কাছেই। উনি তোমাকে টাকাও দিয়ে দেবেন। ঠিক তিন কপি করিও। আমি পরে কোনও এক সময় এসে ওইগুলো নিয়ে আবার বেরিয়ে যাব। দোকানদার যদি বলেন যে এখন ওনার অনেক কাজ আছে বা দোকান বন্ধ করতে হবে তাহলে আমার নাম করবে। দোকান যদি দেখো ইতিমধ্যে বন্ধ হয়ে গেছে তাহলে দরজায় কড়া নাড়বে। উনি ভেতরেই থাকেন। উনি এলে আমার নাম বলবে। কাজ হয়ে যাবে। “ আমি “ওকে” বলে ফোন কেটে দিলাম। ঘড়িতে ৯.৫৫। ম্যাডাম আমাকে দুটো ৫০০ টাকার নোট ধরিয়ে দিয়ে বললেন “এরকম মোটা ফাইল কেউ জেরক্স করায়? যাই হোক। তুমি বিশু বাবুর দোকান চেনো? এখন হয়ত অন্য দোকান সব বন্ধ হয়ে যাবে।” বললাম “না। চিনি না।” ম্যাডাম মোটামুটি বুঝিয়ে দিলেন কিভাবে স্টার জেরক্সের দোকানে যেতে হবে। হাঁটা পথে খুব বেশী হলে ৫ মিনিট। ম্যাডাম একটা প্লাস্টিকের ভেতর ফাইলটা ভরে দিলেন। আমি দৌড় মারলাম।
অন্যদিকে ফোনটা কেটেই মিস্টার বেরা আরেকটা নাম্বার ডায়াল করেছেন। ফোন ওঠাতেই মিস্টার বেরা বললেন “বিশু বাবু। আমি অর্জুন বেরা। কাজের কথা আছে। শুনে যান। আপনার দোকান কি এখন খোলা? “ উত্তর এলো “হ্যাঁ।” মিস্টার বেরা বললেন “ভেরি গুড। একটা ছেলে একটা ডিপ ব্লু রঙের ফাইল নিয়ে আপনার দোকানে আসবে ৩ কপি জেরক্স করাতে। এখন আপনার কাজ হল ওকে আপনার দোকানে আটকে রাখা। “ প্রশ্ন এলো “কতক্ষণ?” মিস্টার বেরা বললেন “ যতক্ষণ না আমার মোবাইল থেকে আপনার মোবাইলে মেসেজ ঢুকছে ততক্ষণ। পাতি আটকে রাখুন। ও জেরক্স না নিয়ে ফিরবে না। সুতরাং আপনি আপনার খেলা চালিয়ে যাবেন। বুঝতে পেরেছেন?” উত্তর এলো “হ্যাঁ।” ফোন কেটে গেল। সবাই উঠে দৌড় লাগাল কন্ট্রোল রুমের দিকে। মিস্টার বেরা মণ্ডলের দিকে তাকিয়ে বললেন “সব রেডি।” মণ্ডল বললেন “স্যার দুটো টিমই আর ২-৩ মিনিটের মধ্যে পৌঁছে যাবে। “ স্যার বললেন “আমি পুরো ভিডিও কভারেজ চাই। কোনও মিস্টেক আমি বরদাস্ত করব না এইবার। ফোন স্পিকারে দাও। দুটো টিমের সবাইকে একটা কনফারেন্সে জয়েন করাও। মণ্ডল বাবু একে একে সবাইকে কনফারেন্সে জয়েন করালেন। মিস্টার বেরা বললেন “ টিম -১ লোকেশন থেকে কতদূরে?” একজন জবাব দিল “ স্যার এই পৌঁছে গেছি। “ মিস্টার বেরা বললেন “টিম-২?” উত্তর এলো “আপনার বাড়ির সামনে। “
স্যার বললেন “ বাড়ি থেকে একটু দূরে গাড়ি পার্ক করে ভেতরে ঢুকে পড়ো। আর ভিডিও কভারেজ কোথায়?” সামনে রাখা দুটো টিভিতে ভিডিও স্ট্রিমিং হতে শুরু করে দিল। টিম-১ কি ভিডিও তুলছে সেটা বলার মানে নেই কারণ ওই ভিডিও করা হচ্ছে আমাকে নিয়ে। তাই এখানে কি হচ্ছে সেটা সরাসরি লিখে দিচ্ছি। আমি ম্যাডামের কথা মতন বিশু বাবার দোকানের সামনে এসে হাজির হলাম। একজন বয়স্ক ভদ্রলোক এক মনে একটা মোটা বই জেরক্স করে চলেছেন। আমি ওনাকে বললাম “দাদা, একটা জেরক্স করাতে হবে।” উনি বিরক্তির সাথে আমার দিকে তাকিয়ে বললেন “ ক-পাতা আছে?” বললাম “অনেক। “ উনি বললেন “ কয় কপি?” বললাম “৩।” উনি এগিয়ে এলেন আমার দিকে। “কই দেখি?” আমি ফাইলটা ওনার হাতে ধরিয়ে দিলাম। উনি ফাইলটা উল্টে পাল্টে ফেরত দিয়ে বললেন “ এখন এত বড় একটা ফাইল নিয়ে এসেছ? আজ হবে না।” বললাম “ মিস্টার অর্জুন বেরা আমাকে পাঠিয়েছেন। “ উনি খেঁকিয়ে উঠলেন “ অর্জুন বেরা তো কি হয়েছে? আমি কি ওরটা খাই না পরি? মাথা কিনে নিয়েছে যেন… অর্জুন বেরা। জত্তসব ফালতু। আচ্ছা করে দিচ্ছি। বসতে হবে। আগে এইটা শেষ করব। তারপর। “ বললাম “ কতক্ষণ লাগবে? আমি ঘুরে আসব কিছুক্ষণ পর?” উনি নড়ে চড়ে উঠে বললেন “ ভাই দোকান বন্ধ করে দেব। কি এত তাড়া হে তোমার? আর পুলিশের ফাইল আমি এইভাবে আমার জিম্মায় রাখতে পারব না। তুমি বাপু ফাইল নিয়ে কেটে পড়ো।” আমি ব্যস্ত ভাবে বললাম “আরে না না। ঠিক আছে, আপনি ফাইলটা রাখুন। আমি অপেক্ষা করছি। “ টিম-১ এর ভিডিও তে আমাকে দেখা যাচ্ছে। আমি একটা দোকানের সামনে বোকার মতন দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে একের পর এক সিগারেট ধ্বংস করে চলেছি।
টিম-২ এদিকে ততক্ষণে গিয়ে প্রবেশ করেছে আমার ঘরে। সমস্ত জিনিস উল্টে পাল্টে দেখে চলেছে ওরা। পটু হাতের কাজ। আলমারি খোলাই ছিল। ভেতরটা নেড়ে ঘেঁটে দেখেও খুব একটা কিছু পাওয়া গেল না। শুধু ধরা পড়ে গেল আমার সেই দামি ল্যাপটপটা। ওরা তৎক্ষণাৎ তার মডেল নাম্বার ইত্যাদি সব নোট করে নিল। সেই ল্যাপটপের রসিদের জন্য ওরা অনেক খোঁজাখুঁজি করেও ওটার হদিশ পেল না। গোটা ঘরে আর কোনও রকম সন্দেহজনক কিছুই পাওয়া যায়নি। ড্রয়ারে হাজার তিনেক টাকা ছিল। ব্যস। সব কাগজ পত্র উল্টে পাল্টে দেখে শেষমেশ ওরা হাল ছেড়ে দিল। মিস্টার বেরা বললেন “ এইবার সংকেতের ঘর থেকে কার কার ফিঙ্গারপ্রিন্ট পাওয়া যায় কালেক্ট করে নাও।” ওদের নিজেদের হাতে গ্লাভস। ওদের আঙুলের ছাপ পাওয়া যাবে না। ওরা সারা ঘরময় তন্নতন্ন করে খুঁজে যতরকমের ফিঙ্গারপ্রিন্ট আবিস্কার করতে পেরেছে সব কালেক্ট করে নিল। এইবার নিচে যাও। মিস্টার বেরা ইতিমধ্যে সঞ্চিতা ম্যাডামকে কল করেছেন। ম্যাডাম হ্যালো বলতেই স্যার বললেন “ ওরা নিচে আসছে। ওদের তুমি তোমার ফিঙ্গারপ্রিন্ট দিয়ে দাও। একটু মনে করে বলো আজ শ্যামাদিকে দিয়ে শেষ কোন কাজটা করিয়েছিলে?” ম্যাডাম বললেন “শ্যামাদি তো এই দুদিন হল আসছে না। সব কাজ আমাকে করতে হচ্ছে।” স্যার বললেন “ও কি হল হঠাৎ করে?” ম্যাডাম সেই মহিলার মুখ থেকে শোনা কথাগুলো তাড়াতাড়ি উগড়ে দিলেন। স্যার বললেন “স্ট্রেঞ্জ। এরকম তো আগে কখনও করেনি। ওর বাড়ির ঠিকানাটা চট করে দাও তো। “
ম্যাডাম দিলেন। মিস্টার খান সেটা নোট করে নিলেন। স্যার বললেন “ এক কথায়, আমরা কিভাবে শ্যামাদির ফিঙ্গারপ্রিন্ট পাব? সেটা একটু ভেবে বলে ফেলো।” ম্যাডাম কিছু একটা বলতে গিয়েও বলতে পারলেন না। চেপে গেলেন (বেডরুমে ফিঙ্গারপ্রিন্ট কালেক্ট করলে আমার হাতের ছাপও পাওয়া যাবে। আমার বেডরুমে ওনার আঙুলের ছাপ পাওয়া গেলে কোনও ক্ষতি নেই কারণ উনি আমার ঘরে অনেকবার এসেছেন, কিন্তু ওনার বেডরুমে আমার যাওয়ার কথা নয়।)। উনি একটু ভেবে নিয়ে বললেন “ঘর মোছার বালতিতে পাওয়া যাবে নিশ্চই। “ সেখান থেকে যত রকমের ফিঙ্গারপ্রিন্ট পাওয়া গেল সব কালেক্ট করে নেওয়া হল। বিদায় নেওয়ার আগে ওরা একটা ধোয়া গ্লাসে ম্যাডামের আঙুলের ছাপ ফেলে সেই গ্লাসটা সঙ্গে নিয়ে নিল। সহজ ভাবেই ওরা ফিঙ্গারপ্রিন্ট নিতে পারত বটে, কিন্তু হাতে কালির দাগ লেগে থাকলে পাছে আমার সন্দেহ হয়, তাই এই পন্থা।
ওরা বেরিয়ে যেতে না যেতেই আমার ফোনটা বেজে উঠল। বললাম “হ্যালো?” স্যার বললেন “ তোমার কাজ হয়েছে?” বললাম “ না। এই সবে শুরু করেছে। “ উনি বললেন “বিশুবাবুকে একবার ফোনটা দাও। তোমার ম্যাডাম ওইদিকে চেঁচামেচি করছেন।” আমি ফোনটা বিশু বাবুর হাতে ধরিয়ে দিলাম। বিশু বাবু তিনবার হ্যাঁ, ঠিক আছে, আচ্ছা মতন বলে ফোনটা কেটে আমার হাতে ফেরত দিয়ে বললেন “তুমি বাড়ি ফিরে যাও। উনি লোক পাঠিয়ে পরে এইগুলো কালেক্ট করে নেবেন।” আমি বললাম “ একটু আগে যে বললেন পুলিশের ফাইল নিজের কাছে রাখতে চান না। এখন কি হল?” উনি এমন একটা নজর দিয়ে আমার দিকে তাকালেন যে এরপর আর ওখানে দাঁড়িয়ে থাকতে পারলাম না। ঘরে ঢুকে ম্যাডামকে স্যারের সাথে কি কথা হয়েছে বলে উপরে উঠে এলাম।
পুলিশরা এই মুহূর্তে তিনটে কাজ নিয়ে ব্যস্ত। ফিঙ্গারপ্রিন্ট মিলিয়ে দেখা। মালিনীর ব্যাপারে খবর নেওয়া। আমার কল রেকর্ড আর আমার মোবাইল লোকেশন খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে পড়া। ও হ্যাঁ... আরেকটা জিনিস আছে। সেটা হল আমার ল্যাপটপের ব্যাপারে আরও কিছু গবেষণা করে যা কিছু তথ্য পাওয়া যায় সব জেনে নেওয়া। ওদের ফাইন্ডিংসের কথায় একটু পরে আসছি কারণ এইসব কাজ গোটাতে ওনাদের অনেক টাইম লাগবে। সেই সুযোগে অন্য দিকে কি কি হয়েছে সেই কথা এই বেলা বলে নেওয়া দরকার। ঘরে ঢুকেই ম্যাডাম আমাকে বললেন “ যাও গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নাও। তোমার ওপর দিয়ে অনেক ধকল গেছে। ফ্রেশ হয়ে খেয়ে দেয়ে একটু রেস্ট নাও। “ আমি ওনার পিঠের সাথে সেঁটে দাঁড়িয়ে বললাম “আপনাকে দেখলেই আমি ফ্রেশ হয়ে যাই।”
ম্যাডাম আমার দিকে ফিরে আমার বুকে একটা কিল মেরে বললেন “ আমার রান্না খুব খারাপ। তাই না?” আমি বললাম “ উফফ সত্যি কথা না বললে ওখানে তো আমি উল্টে কেস খেয়ে যেতাম। হেহে।” ম্যাডাম বললেন “তুমি ভারী অসভ্য।” বললাম “কেন? আমি আবার কি অসভ্যতা করলাম?” ম্যাডাম বললেন “ জিজ্ঞেস করল এখানে এসে প্রেমে পড়েছ কিনা আর তুমি ফস করে বলে দিলে হ্যাঁ?” আমি বললাম “ আপনার জন্য আমি হয়ত টাইমপাস, কিন্তু আমার কাছে তো আপনি…” কথাটা শেষ না করে একটা চোখ মারলাম। ম্যাডাম আমাকে জড়িয়ে ধরে বললেন “আমার বুকটা কেমন ধুকপুক করছিল জানো। যখন তোমাকে নাম জিজ্ঞেস করা হল।” বললাম “ উত্তর দেওয়া না দেওয়ার অধিকার তো আমার। আর তাছাড়া এই ক্রিমিন্যাল কেসের সাথে আমার লাভ লাইফ আসছে কোথা থেকে। তবে সত্যি এটা চিন্তার কথা। শিখাদির বাড়ির লোকেরা আমাকে ওখানে সেদিন দেখল কি করে? আমি তো আপনার সাথে ছিলাম সারারাত। “ ম্যাডাম বললেন “আমিও সেটা বুঝতে পারলাম না। তবে আমার নামটা তুমি না বলে আমার সংসারটাকে বাঁচিয়ে দিয়েছ। এই জন্য তোমার একটা কিসি প্রাপ্য।” উনি আমার ঠোঁটে আলতো করে একটা চুমু খেলেন। ওনাকে বললাম “এতো অল্পে মন ভরে না। আরও চাই।”
৪। এইটা খুব জরুরি তথ্য। একটা ছোট রাইটিং প্যাড নিয়ে আসা হয়েছিল। মিস্টার মুখার্জির নিজের হাতের লেখা পাওয়া গেছে এতে। ক্রোনোলজিকালি কবে কবে উনি কোন কোন আর্মসের ব্যাপারে গবেষণা শেষ করেছেন সেগুলো লেখা আছে এই প্যাডে। গবেষণার রেজাল্ট কি সেটাও পাওয়া যাচ্ছে এই প্যাডের লেখা থেকে। কোন প্রাইভেট সেফ খুললে কোন গবেষণার ফাইল পাওয়া যাবে সেই তথ্যও লেখা আছে এই প্যাডে। জরুরি বিষয় হল, এই ফিউসের উল্লেখও পাওয়া গেছে এই প্যাডে, এটাই প্যাডের একদম লাস্ট এন্ট্রি। কোন সেফে সেই ফাইল পাওয়া যাবে সেটাও লেখা আছে এই প্যাডে। কিন্তু সেফ খুলে যে কিছুই পাওয়া যায়নি সে কথা তো আগেই বলেছি।
মিস্টার বেরা মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়েছেন। বাকিরা চুপ করে ওনাকে ঘিরে দাঁড়িয়ে আছেন। আরিফ একটু সাহস করে বললেন “স্যার কিছু তো বলুন!” মিস্টার বেরার মুখ থমথমে। উনি বললেন “ নিজের গালে একটা থাপ্পড় মারতে ইচ্ছে করছে। মিস্টার মুখার্জি ছিলেন আমাদের দেশের সম্পদ, এক বিরল প্রতিভা। ওনার মতন এত রকমের আর এত সংখ্যায় আর্মস নিয়ে আগে কেউ গবেষণা করেছেন বলে মনে হয় না। সারা জীবনে ২২ টার ওপর বিভিন্ন রকমের আর্মস নিয়ে উনি গবেষণা করেছেন। ফিউসটার ফাইলের কথা ছেড়েই দিলাম। আরও ৯ টা ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ গবেষণার ফাইল সযত্নে রাখা ছিল ওনার বিভিন্ন প্রাইভেট সেফে। আরিফ, চোর বিশাল বড় দাও মেরেছে। চোর এই ফিউসের ফাইলটার সাথে বাকি ৯টা গবেষণার ফাইলও নিয়ে গেছে।” রবিন বাবু বললেন “স্যার সংকেতের ওপর আমাদের সন্দেহ যখন এতটাই প্রবল তখন আপনার বাড়ি গিয়ে ওর জিনিসপত্র খানা তল্লাশি করে দেখলে হয় না। হয়ত জিনিসগুলো এখনও ওর কাছেই আছে। “
মিস্টার বেরা বললেন “বাড়িটা আমার ঠিকই। কিন্তু ওর জিনিস খানা তল্লাশি করে দেখতে হলে আরও স্ট্রং বেসিস চাই, এভিডেন্স চাই। সোজা কথা বলতে গেলে, আমাদের কাছে আছে কিছু হাইপোথিসিস, প্রমান একটাও নেই। তাছাড়া সংকেতের বিরুদ্ধে এখন অব্দি এই চুরি সংক্রান্ত কোনও কংক্রিট লিড আমাদের হাতে আসেনি। খুনের ব্যাপারে ওর বিরুদ্ধে প্রমান ছিল। কিন্তু ও নিজে এগিয়ে এসে স্পার্ম টেস্ট করিয়ে নিল আমাদের দিয়ে। (একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন) আমাদের সামনে এইবার খুব ডেঞ্জারাস একটা ছেলে দাঁড়িয়ে আছে। ল্যাপটপ আর হার্ড ডিস্কটা কোথা থেকে কেনা হয়েছে সেই নিয়ে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব তথ্য জোগাড় করার চেষ্টা করো। প্রমান চাই ...প্রমান। সংকেতের ফোন ট্যাপ করো। ও কি করছে, কি বলছে, কি ভাবছে সব আমি জানতে চাই। আরিফ আরেকটা কাজ করো। মালিনী বলে ওই মেয়েটার ব্যাপারে খোঁজ খবর নেওয়া শুরু করো। আর সংকেতের মোবাইল লোকেশন আর কল ডিটেলস কতক্ষণে আসবে? তাড়া দাও ওদের। আজ সংকেতের ফিঙ্গারপ্রিন্ট নেওয়া হয়েছিল। দেখো আমাদের ডেটাবেসে কোনও ম্যাচ পাওয়া যায় কিনা। ওর ফেস চেক করো আমাদের ডেটাবেসে, দেখো কোনও ফেসিয়াল ম্যাচ পাওয়া যায় কিনা। আর সংকেতের পিছনে কাকে পাঠিয়েছে? “
আরিফ বললেন “ স্যার আপনার প্রিয় সুজন পাণ্ডে। “ মিস্টার বেরা একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে বললেন “যাক এটা একটা ভালো কাজ করেছ। দেখি অমিতাভ বচ্চনের সাথে পালা পড়লে এই ছেলের কি হাল হয়!” যদিও মিস্টার পাণ্ডে এই লেখায় তেমন সিরিয়স কেউ নয় আর ওর রোল শুধু মাত্র কয়েক মিনিটের তবুও এখানে সুজন পাণ্ডের ব্যাপারে একটু বলে রাখি। সুজন পাণ্ডের বয়স ২৮। কম্যান্ডো ট্রেনিং প্রাপ্ত যুবক। উচ্চতা ৬ ফুট সাড়ে ৪ ইঞ্চি। এই উচ্চতার জন্য ডিপার্টমেন্টে ওর নাম হয়েছে আমিতাভ বচ্চন। তিনটে ডাকাতকে একা হাতে গ্রেপ্তার করার জন্য সরকার পক্ষ থেকে ওকে মেডেল দেওয়া হয়েছিল। পুলিশ বিভাগে যে বক্সিং টুর্নামেন্ট হয় তাতে মিস্টার পাণ্ডে শেষ তিন বছর ধরে খেতাব জিতে এসেছেন। ভীষণ ফিট বডি আর তেমনই দশাসই চেহারা। পুলিশ মহলে ওনার আরেকটা নাম আছে। ফাস্টেস্ট হ্যান্ড। কারণ একটাই... ভীষণ দ্রুত ঘুষি মারতে পারেন উনি, আর তেমনই জোর ওনার ঘুষির। এত ফাস্ট ঘুষি ডিপার্টমেন্টে আর কেউ মারতে পারে না। এই ভদ্রলোককে মিস্টার আরিফ খান আমার পেছনে লেলিয়ে দিয়েছেন। কিন্তু দুঃখের কথা হল এই যে, যখন, এই কথাগুলো হচ্ছে তখন অলরেডি এই নাটকে ওনার রোল শেষ হয়ে গেছে। আমিতাভ বচ্চনকে এই সব ফালতু কাজে বেশীক্ষণ বেঁধে রাখা যায় কি? উনি শুধু গেস্ট অ্যাপিয়ারেন্স দিয়ে কেটে পড়েছেন। খবরটা যদিও এসেছে বেশ খানিকক্ষণ পড়ে।
খারাপ সময় চললে একের পর এক দুঃসংবাদ আসতেই থাকে। মিস্টার বেরার আজ তেমনই একটা দিন। হঠাৎ করে হাঁপাতে হাঁপাতে এসে মণ্ডল বাবু বললেন “স্যার সর্বনাশ হয়ে গেছে। এক্ষুনি একবার যেতে হবে।” মিস্টার বেরা একটু বিরক্তির সাথে বললেন “কোথায়?” উনি বললেন “হাসপাতালে।” মিস্টার বেরা জিজ্ঞেস করলেন “ তোমার বাড়িতে আবার কার কি হল? এই তো কয়েকদিন আগে তোমার বউয়ের কোমর না পা কি একটা ভেঙ্গে গেছিল না?” “স্যার সুজন। এক্ষনি চলুন। “ এই কথা শোনার পর আর বসে থাকা যায় না। মিস্টার বেরা ওনার গোটা টিম নিয়ে দ্রুত থানা থেকে বেরিয়ে এসে গাড়িতে চড়ে বসলেন। দুটো পুলিশের জিপ ছুটে চলল হাসপাতালের উদ্দেশ্যে। হাসপাতাল অবশ্য থানা থেকে বেশী দূরে নয়। পথে যেতে যেতে মিস্টার বেরা মণ্ডলকে জিজ্ঞেস করলেন “কি হয়েছে কিছু জানতে পেরেছ?” মণ্ডল বললেন “না স্যার হাসপাতাল থেকে ফোন করে আর্জেন্ট বেসিসে আসতে বলা হয়েছে। হাসপাতাল থেকে পুলিশের কন্ট্রোল রুমে ফোন করেছিল। অবস্থা নাকি সিরিয়স। ও আপনাকে কিছু বলতে চায়। আর শুধু আপনাকেই বলতে চায়। “
হাসপাতাল এসে গেছে। সবাই পড়ি মরি করে হাসপাতালের ভেতরে ঢুকে নিজেদের পরিচয় দিতেই সরাসরি ওদের নিয়ে যাওয়া হল সুজন পান্ডের কেবিনে। ২০ মিনিট আগে ওনাকে অ্যাডমিট করা হয়েছে। ওনাকে দেখেই বোঝা যাচ্ছে যে ওনার আয়ু আর বেশীক্ষণ নেই। মিস্টার বেরা নিজের অত্যন্ত প্রিয় চেলা সুজন পান্ডের মাথার কাছে দাঁড়িয়ে জিজ্ঞেস করলেন “ সুজন তোমার কিচ্ছু হবে না। শান্ত হও আগে। তারপর বলো, আমাকে তুমি কি বলতে চেয়েছিলে? “ সুজনের মুখে যে হাসিটা ফুটে উঠল সেটা প্রায় চোখেই দেখা যায় না। ওনার হাঁপ ধরে গেছে। ব্যথায় অসম্ভব কাতরাচ্ছেন ভদ্রলোক। তবুও কোনও মতে মুখ খুললেন উনি। “ স্যার সংকেত।” মিস্টার বেরা বললেন “হুম বলো। সংকেত কি?” মিস্টার পান্ডে একটা জোরে দম নিয়ে কোনও মতে পরের কথাগুলো বলে ফেললেন,” স্যার সংকেত আমাকে মেরেছে। “
মিস্টার খান ততক্ষণে নিজের মোবাইল খুলে আমার ছবিটা ওনার সামনে মেলে ধরেছেন, “ঠিক দেখেছ সুজন? এই ছেলেটাই?” মিস্টার পাণ্ডে আরেকটা দম নিয়ে কোনও মতে বলে চললেন “ স্যার আপনার বাড়ি থেকে একটু দূরে একটা সিগারেটের দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে আমি বাড়ির দিকে লক্ষ্য রেখেছিলাম। হঠাৎ খেয়াল হল আমার প্যান্টের পকেটে একটা চিরকুট কেউ ফেলে দিয়ে গেছে। কখন ফেলে দিয়ে গেছে জানি না।” ডাক্তার সেই চিরকুটটা মিস্টার বেরার সামনে মেলে ধরলেন। বাঙলায় লেখা কয়েকটা লাইন “ ঘরের ছেলে ঘরে ফিরে যাও। আমার নাগাল পাওয়া অর্জুন বেরার ক্ষমতার বাইরে। আমার যা দরকার সেটা আমি হাতিয়ে নিয়েছি। এখন আমার পেছনে লেগে বেকার সময় নষ্ট করে কোনও লাভ নেই। ...আপনার হিতৈষী শ্রীমান সংকেত রায়।”
সুজন বলে চললেন “ চিরকুটটা পড়েই পেছনে ঘুরে দেখি সংকেত আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি মুচকি হাঁসছে। আমাকে ওর পিছন পিছন আসতে ইশারা করে ও দৌড় মারল। আমি ভাবলাম ও পালিয়ে যাচ্ছে। এই সুযোগ হাতছাড়া করা যায় না। ওর পিছন পিছন দৌড়ালাম। প্রায় মিনিট দশেক দৌড়ানোর পর একটা অন্ধকার ফাঁকা গলির মধ্যে ঢুকে বুঝতে পারলাম যে ওকে আমি হারিয়ে ফেলেছি। আবার আপনার বাড়ির সামনে ফিরে যাব ঠিক করে পিছনে ঘুরতেই দেখি ও আমার মুখোমুখি দাঁড়িয়ে আছে। স্যার দুই হাত দূরে দাঁড়িয়ে আছে এই সংকেত রায়। আজ যাকে আপনারা অতক্ষন ধরে থানায় বসিয়ে রেখেছিলেন। আমার কোনও ভুল হয়নি। হি ইস সংকেত রায়। একই মুখ, একই হাইট, একই বডি ল্যাঙ্গোয়েজ। গলার আওয়াজও এক। ও আমাকে ওপেন চ্যালেঞ্জ দিল। আমি পিস্তল বের করার আগেই এক লাথিতে ও আমাকে মাটিতে শুইয়ে দিয়েছে। পিস্তলটা অন্ধকারে কোথায় গিয়ে পড়েছে জানি না। ঠিক করলাম হাতাহাতি করে ব্যাটাকে শায়েস্তা করব। কিন্তু স্যার আয়াম ভেরি সরি। আই অ্যাম নো ম্যাচ ফর দিস সংকেত রায়। অমানুষিক গায়ের জোর আর তেমনই কমব্যাট টেকনিক। খুব বেশী হলে ৩০-৪০ সেকেন্ড। বলতে পারব না কি হল। আমি মাটিতে পড়ে পড়ে কাতরাচ্ছি আর সংকেত হাঁসতে হাঁসতে ওখানে থেকে চলে গেল। ৭.৩০ থেকে কতক্ষণ মরার মতন…”
মিস্টার পাণ্ডের অবস্থা এখন আরও খারাপ তাই ডাক্তার মিস্টার বেরাদের ওখান থেকে বের করে দিলেন। ওনারা বাইরে আসতে না আসতেই খবর এলো মিস্টার পাণ্ডে ওনার ইহলীলা সাঙ্গ করে অন্য জগতে পাড়ি দিয়েছেন। ডাক্তার কে মিস্টার বেরা জিজ্ঞেস করলেন “পাণ্ডের কি কি ইনজুরি ছিল?” ডাক্তার বললেন “স্যার উনি যে এতক্ষন বেঁচে ছিলেন কি করে সেটাই আশ্চর্য। পুরো স্পাইনাল কর্ড টুকরো টুকরো হয়ে গেছে। হাঁটু থেঁৎলে গেছে। কোমরও ড্যামেজড। আরও কিছু হাড় ভেঙেছে বাজে ভাবে। কিন্তু ৩০-৪০ সেকন্ডে এরকম চেহারার একটা লোকের কেউ এই হাল করতে পারে? “ উনি এক মুখ হতাশা নিয়ে মাথা নাড়তে নাড়তে বিদায় নিলেন। মিস্টার বেরা হঠাৎ কি মনে করে সবাইকে বললেন “চটপট থানায় ফিরতে হবে। পাণ্ডের বডি পোস্টমর্টেমের জন্য পাঠিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করো। “ আবার সবাই পড়ি কি মরি করে ফিরে এলো থানায়। থানায় ঢুকেই উনি থানার নম্বর থেকে ওনার বাড়িতে ডায়াল করলেন। ঘড়িতে সময় ৯.৪৫।
প্রথমবার রিং হয়ে কেটে গেল। কেউ কল ওঠাল না। আবার ডায়াল করলেন উনি। এইবার অন্য দিক থেকে ভেসে এলো সঞ্চিতা ম্যাডামের গলা। “হ্যালো।” মিস্টার বেরা চেয়ারে বসে পড়ে বললেন “সঞ্চিতা আমি বলছি। “ ম্যাম বললেন “হুম বলো।” মিস্টার বেরা বললেন “ আরে একটা কথা বলার জন্য ফোন করেছিলাম। আজ রাত্রে আমি ফিরছি না। ফিরলেও অনেক দেরী হবে। তোমরা ডিনার করে নিও। আমি খেয়েই আসব। “ ওই দিক থেকে চীৎকার ভেসে এলো। “ সে তুমি আর বাড়ির খাবার খাবে কেন? আমি তো রান্নাই করতে পারি না। নুন ছাড়া রান্না কি আর পোষায়?” ম্যাম এত জোরে কথা বলছেন যে ঘরের সবাই সেই কথা শুনতে পাচ্ছে। স্যার গলা নামিয়ে বললেন “আহা সঞ্চিতা এখনও তুমি ওই রাগ ধরে বসে আছো? আর একটু আস্তে কথা বলো। চারপাশে লোক আছে। সবাই তোমার গলা শুনতে পাচ্ছে। “ ওই দিক থেকে ম্যাডাম বললেন “সরি। “ স্যার বললেন “সংকেত কেমন আছে? সব ঠিক ঠাক?” ম্যাডাম বললেন “হ্যাঁ। ও ঠিকই আছে। এই তো সামনে বসে ক্রিকেট ম্যাচ দেখছে। “ স্যার বললেন “ শোনো না একটা ছোট হেল্প করতে হবে তোমাকে। একটু আমার কাজের ঘরে যাও। “ ম্যাডাম বললেন “কেন? আর ঘরটার কি অবস্থা হয়েছে গো?” স্যার বললেন “উফফ কথা না বাড়িয়ে আমার কাজের ঘরে যাও। একটু দরকার আছে।”
যতক্ষণে ম্যাডাম উপরে উঠে ওনার কাজের ঘরে গেলেন ততক্ষণে মিস্টার বেরা কলম দিয়ে খসখস করে একটা সাদা কাগজে কিছু লিখে কাগজটা মিস্টার মণ্ডলের দিকে এগিয়ে দিলেন। কাগজটা হাতে নিয়েই মিস্টার মণ্ডল দৌড় মারলেন। ওই দিক থেকে ম্যাডাম বললেন “ হুম বলো। চলে এসেছি। কি খুঁজতে হবে?” স্যার বললেন “ কোনও কথা বলবে না। যা বলছি। শুধু শুনে যাও। কোনও প্রশ্ন নয়। আর আমি কোনও প্রশ্ন করলে এক কথায় তার উত্তর দেবে। “ ম্যাডাম বললেন “ওকে।” স্যার “সংকেত এখন নিচে?” ম্যাডাম “হ্যাঁ। কিন্তু তুমি…” স্যার বললেন “সঞ্চিতা। কোনও কথা বলবে না। শুধু উত্তর দাও। তোমরা কটায় বাড়ি পৌঁছালে?” ম্যাডাম একটু ভেবে বললেন “৬.৪০ এর দিকে।” স্যার “ তারপর কি আর সংকেত বাড়ি থেকে বেরিয়েছে?” ম্যাডাম “না।” স্যার “তুমি ১০০% শিওর?” ম্যাম “হ্যাঁ। আমি ড্রেস চেঞ্জ করে নিচে নামলাম। সংকেতও ৫ মিনিটের মধ্যে ফ্রেশ হয়ে এসে ক্রিকেট ম্যাচ দেখতে বসে গেল। তারপর থেকে তো ওখানেই আছে।”
স্যার বললেন “ এখন সংকেত কোথায়?” ম্যাডাম বললেন “নিচে।” স্যার বললেন “ যেটা বলছি খুব মন দিয়ে শোনো। ভয় পাবে না। একদম স্বাভাবিক থাকবে। আমাদের ধারণা সংকেত সুবিধের ছেলে নয়। অনেক কারণ আছে এরকম ভাবার। তুমি জানো আমি ব্লাইন্ড খেলি না। আপাতত ওর ঘর আমাদের সার্চ করতে হবে। আর এখনই করতে হবে। “ ম্যাডাম বললেন “কিভাবে?” স্যার বললেন “চুপ করে শুনে যাও। তুমি সংকেত কে গিয়ে একদম স্বাভাবিক ভাবে বলো যে আমি তোমাকে একটা ফাইল খুঁজতে বলেছি।সেটা তুমি খুঁজে পাচ্ছ না। বা বুঝতে পারছ না কোন ফাইলের কথা বলছি। ওকে হেল্প করতে বলো। খেয়াল রেখো, একদম ক্যাজুয়ালি গিয়ে কথাটা বলবে। আমি লাইন ধরে আছি। ফোনটা ওর হাতে দিয়ে ওকে দোতলায় পাঠিয়ে দেবে। তুমি নিচেই থেকে যেও। “ ম্যাডাম বললেন “ওকে। ওয়েট করো।”
কিছুক্ষণ পর আবার ম্যাডামের গলার আওয়াজ পাওয়া গেল। একদম স্বাভাবিক। “এই সংকেত। ও একটু তোমার সাথে কথা বলতে চায়। কি ফাইল দরকার। আমি ছাতার মাথা কিছুই বুঝতে পারছি না। এইসব ফাইল টাইল বোঝা কি আমাদের কাজ? বলো? বাপু এত দরকারি ফাইল হলে অফিস যাওয়ার আগেই নিয়ে গেলে হয়। “ আমি ফোনটা উঠিয়ে বললাম “হ্যাঁ স্যার বলুন। “ মিস্টার বেরা বললেন “সংকেত, কেমন আছ? আমি কিন্তু আজকের জন্য আবার সরি বলছি। “ বললাম “স্যার আপনি বেকার ভাবছেন। বলুন। কি ফাইল, আর কোথায় আছে?” স্যার বললেন “আমার কাজের ঘরে যাও। তারপর বলছি।” আমি ততক্ষণে ম্যাডামের ইশারায় ওনার কাজের ঘরের দিকে দৌড় মেরেছি। বললাম “হ্যাঁ স্যার বলুন। “ উনি বললেন “ দেখো টেবিলের পাশে ফাইলের যে স্তূপ আছে, সেখানে ডিপ ব্লু কালারের একটা মোটা ফাইল আছে কি না?” হেসেবললাম “ স্যার টেবিল আর কোথায়? টেবিল তো ভেঙ্গে গেছে। না তেমন কোনও ফাইল দেখতে পাচ্ছি না তো। ও হ্যাঁ পেয়েছি। ডিপ ব্লু না মেরুন?”
স্যার কিছু বলার আগেই আমি ফাইলটা দেখতে পেয়ে বললাম “স্যার, পেয়েছি।” উনি বললেন “ওটা একটু বের করবে?” বললাম “করে ফেলেছি। এইবার?” স্যার বললেন “ ফাইলটা খুলে ফার্স্ট এন্ট্রিতে কি আছে একটু বলবে?” বললাম “স্যার এটা তো গোপন ফাইল? পড়ব?” উনি হেসেবললেন “হ্যাঁ। এখন আর তেমন গোপন কিছু নয়। “ আমি পড়ে শোনালাম। স্যার বললেন “ ভেরি গুড। তোমার শরীর কেমন এখন? ফ্র্যাঙ্কলি বলো। “ বললাম “ ঠিকই আছে। “ উনি বললেন “আমার একটা ছোট্ট কাজ করে দেবে? অবশ্য তুমি যদি পড়াশুনা করছিলে তো…” বললাম “না না। ম্যাচ আছে আজ। ইন্ডিয়া-ইংল্যান্ড। ওই দেখছিলাম। “ স্যার বললেন “ তাহলে বাইরে গিয়ে এই ফাইলটার ৩ কপি জেরক্স করিয়ে আনতে পারবে? “ বললাম “গোটা ফাইলটার? এতো বেশ মোটা ফাইল স্যার।” স্যার বললেন “হ্যাঁ। কটা কপি করাবে?” বললাম “৩ কপি। “ উনি বললেন “ নিচে গিয়ে তোমার ম্যাডামের হাতে ফোনটা দাও। ওনাকে দুটো কথা বলার ছিল। তুমি রেডি হয়ে নাও। অনেক রাত হয়ে গেছে এমনিতেই। আর সাবধানে যেও। “ অগত্যা দৌড়ে গিয়ে ম্যাডামের হাতে ফোনটা ধরিয়ে দিয়ে বললাম “ ২ মিনিটে আসছি।” ম্যাডামের গলা ভেসে আসতেই স্যার বললেন “ ও কি ওপরে চলে গেছে?” ম্যাডাম বললেন “হ্যাঁ। “ স্যার বললেন “ ওকে বিশু বাবুর দোকানে যেতে বলো। হাতে ১০০০ টাকার মতন ধরিয়ে দাও। জেরক্স করাতে কাজে লাগবে। দুজন অফিসার তোমার বাড়িতে যাবে ওর ঘর সার্চ করতে। ওদের সংকেতের ঘরটা দেখিয়ে দিও। বুঝতে পেরেছ? “
ম্যাডাম কাঁপা কাঁপা গলায় বললেন “কিন্তু ও যদি ফিরে আসে?” মিস্টার বেরা বললেন “ সেই চিন্তা আমাকে করতে দাও। আর ও নিচে এলে আরেকবার ওকে ফোনটা দিও। “ আমি ইতিমধ্যে রেডি হয়ে নিচে নেমে এসেছি। ম্যাডাম আমার হাতে ফোনটা ধরিয়ে দিয়ে রান্না ঘরে চলে গেলেন। “ বললাম “হ্যাঁ স্যার।” উনি বললেন “ সংকেত বাজে কষ্ট দিচ্ছি তোমাকে। তোমাকে কোথায় গিয়ে জেরক্স করাতে হবে সেটা ম্যাডামের কাছ থেকে জেনে নিও। দোকানটা কাছেই। উনি তোমাকে টাকাও দিয়ে দেবেন। ঠিক তিন কপি করিও। আমি পরে কোনও এক সময় এসে ওইগুলো নিয়ে আবার বেরিয়ে যাব। দোকানদার যদি বলেন যে এখন ওনার অনেক কাজ আছে বা দোকান বন্ধ করতে হবে তাহলে আমার নাম করবে। দোকান যদি দেখো ইতিমধ্যে বন্ধ হয়ে গেছে তাহলে দরজায় কড়া নাড়বে। উনি ভেতরেই থাকেন। উনি এলে আমার নাম বলবে। কাজ হয়ে যাবে। “ আমি “ওকে” বলে ফোন কেটে দিলাম। ঘড়িতে ৯.৫৫। ম্যাডাম আমাকে দুটো ৫০০ টাকার নোট ধরিয়ে দিয়ে বললেন “এরকম মোটা ফাইল কেউ জেরক্স করায়? যাই হোক। তুমি বিশু বাবুর দোকান চেনো? এখন হয়ত অন্য দোকান সব বন্ধ হয়ে যাবে।” বললাম “না। চিনি না।” ম্যাডাম মোটামুটি বুঝিয়ে দিলেন কিভাবে স্টার জেরক্সের দোকানে যেতে হবে। হাঁটা পথে খুব বেশী হলে ৫ মিনিট। ম্যাডাম একটা প্লাস্টিকের ভেতর ফাইলটা ভরে দিলেন। আমি দৌড় মারলাম।
অন্যদিকে ফোনটা কেটেই মিস্টার বেরা আরেকটা নাম্বার ডায়াল করেছেন। ফোন ওঠাতেই মিস্টার বেরা বললেন “বিশু বাবু। আমি অর্জুন বেরা। কাজের কথা আছে। শুনে যান। আপনার দোকান কি এখন খোলা? “ উত্তর এলো “হ্যাঁ।” মিস্টার বেরা বললেন “ভেরি গুড। একটা ছেলে একটা ডিপ ব্লু রঙের ফাইল নিয়ে আপনার দোকানে আসবে ৩ কপি জেরক্স করাতে। এখন আপনার কাজ হল ওকে আপনার দোকানে আটকে রাখা। “ প্রশ্ন এলো “কতক্ষণ?” মিস্টার বেরা বললেন “ যতক্ষণ না আমার মোবাইল থেকে আপনার মোবাইলে মেসেজ ঢুকছে ততক্ষণ। পাতি আটকে রাখুন। ও জেরক্স না নিয়ে ফিরবে না। সুতরাং আপনি আপনার খেলা চালিয়ে যাবেন। বুঝতে পেরেছেন?” উত্তর এলো “হ্যাঁ।” ফোন কেটে গেল। সবাই উঠে দৌড় লাগাল কন্ট্রোল রুমের দিকে। মিস্টার বেরা মণ্ডলের দিকে তাকিয়ে বললেন “সব রেডি।” মণ্ডল বললেন “স্যার দুটো টিমই আর ২-৩ মিনিটের মধ্যে পৌঁছে যাবে। “ স্যার বললেন “আমি পুরো ভিডিও কভারেজ চাই। কোনও মিস্টেক আমি বরদাস্ত করব না এইবার। ফোন স্পিকারে দাও। দুটো টিমের সবাইকে একটা কনফারেন্সে জয়েন করাও। মণ্ডল বাবু একে একে সবাইকে কনফারেন্সে জয়েন করালেন। মিস্টার বেরা বললেন “ টিম -১ লোকেশন থেকে কতদূরে?” একজন জবাব দিল “ স্যার এই পৌঁছে গেছি। “ মিস্টার বেরা বললেন “টিম-২?” উত্তর এলো “আপনার বাড়ির সামনে। “
স্যার বললেন “ বাড়ি থেকে একটু দূরে গাড়ি পার্ক করে ভেতরে ঢুকে পড়ো। আর ভিডিও কভারেজ কোথায়?” সামনে রাখা দুটো টিভিতে ভিডিও স্ট্রিমিং হতে শুরু করে দিল। টিম-১ কি ভিডিও তুলছে সেটা বলার মানে নেই কারণ ওই ভিডিও করা হচ্ছে আমাকে নিয়ে। তাই এখানে কি হচ্ছে সেটা সরাসরি লিখে দিচ্ছি। আমি ম্যাডামের কথা মতন বিশু বাবার দোকানের সামনে এসে হাজির হলাম। একজন বয়স্ক ভদ্রলোক এক মনে একটা মোটা বই জেরক্স করে চলেছেন। আমি ওনাকে বললাম “দাদা, একটা জেরক্স করাতে হবে।” উনি বিরক্তির সাথে আমার দিকে তাকিয়ে বললেন “ ক-পাতা আছে?” বললাম “অনেক। “ উনি বললেন “ কয় কপি?” বললাম “৩।” উনি এগিয়ে এলেন আমার দিকে। “কই দেখি?” আমি ফাইলটা ওনার হাতে ধরিয়ে দিলাম। উনি ফাইলটা উল্টে পাল্টে ফেরত দিয়ে বললেন “ এখন এত বড় একটা ফাইল নিয়ে এসেছ? আজ হবে না।” বললাম “ মিস্টার অর্জুন বেরা আমাকে পাঠিয়েছেন। “ উনি খেঁকিয়ে উঠলেন “ অর্জুন বেরা তো কি হয়েছে? আমি কি ওরটা খাই না পরি? মাথা কিনে নিয়েছে যেন… অর্জুন বেরা। জত্তসব ফালতু। আচ্ছা করে দিচ্ছি। বসতে হবে। আগে এইটা শেষ করব। তারপর। “ বললাম “ কতক্ষণ লাগবে? আমি ঘুরে আসব কিছুক্ষণ পর?” উনি নড়ে চড়ে উঠে বললেন “ ভাই দোকান বন্ধ করে দেব। কি এত তাড়া হে তোমার? আর পুলিশের ফাইল আমি এইভাবে আমার জিম্মায় রাখতে পারব না। তুমি বাপু ফাইল নিয়ে কেটে পড়ো।” আমি ব্যস্ত ভাবে বললাম “আরে না না। ঠিক আছে, আপনি ফাইলটা রাখুন। আমি অপেক্ষা করছি। “ টিম-১ এর ভিডিও তে আমাকে দেখা যাচ্ছে। আমি একটা দোকানের সামনে বোকার মতন দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে একের পর এক সিগারেট ধ্বংস করে চলেছি।
টিম-২ এদিকে ততক্ষণে গিয়ে প্রবেশ করেছে আমার ঘরে। সমস্ত জিনিস উল্টে পাল্টে দেখে চলেছে ওরা। পটু হাতের কাজ। আলমারি খোলাই ছিল। ভেতরটা নেড়ে ঘেঁটে দেখেও খুব একটা কিছু পাওয়া গেল না। শুধু ধরা পড়ে গেল আমার সেই দামি ল্যাপটপটা। ওরা তৎক্ষণাৎ তার মডেল নাম্বার ইত্যাদি সব নোট করে নিল। সেই ল্যাপটপের রসিদের জন্য ওরা অনেক খোঁজাখুঁজি করেও ওটার হদিশ পেল না। গোটা ঘরে আর কোনও রকম সন্দেহজনক কিছুই পাওয়া যায়নি। ড্রয়ারে হাজার তিনেক টাকা ছিল। ব্যস। সব কাগজ পত্র উল্টে পাল্টে দেখে শেষমেশ ওরা হাল ছেড়ে দিল। মিস্টার বেরা বললেন “ এইবার সংকেতের ঘর থেকে কার কার ফিঙ্গারপ্রিন্ট পাওয়া যায় কালেক্ট করে নাও।” ওদের নিজেদের হাতে গ্লাভস। ওদের আঙুলের ছাপ পাওয়া যাবে না। ওরা সারা ঘরময় তন্নতন্ন করে খুঁজে যতরকমের ফিঙ্গারপ্রিন্ট আবিস্কার করতে পেরেছে সব কালেক্ট করে নিল। এইবার নিচে যাও। মিস্টার বেরা ইতিমধ্যে সঞ্চিতা ম্যাডামকে কল করেছেন। ম্যাডাম হ্যালো বলতেই স্যার বললেন “ ওরা নিচে আসছে। ওদের তুমি তোমার ফিঙ্গারপ্রিন্ট দিয়ে দাও। একটু মনে করে বলো আজ শ্যামাদিকে দিয়ে শেষ কোন কাজটা করিয়েছিলে?” ম্যাডাম বললেন “শ্যামাদি তো এই দুদিন হল আসছে না। সব কাজ আমাকে করতে হচ্ছে।” স্যার বললেন “ও কি হল হঠাৎ করে?” ম্যাডাম সেই মহিলার মুখ থেকে শোনা কথাগুলো তাড়াতাড়ি উগড়ে দিলেন। স্যার বললেন “স্ট্রেঞ্জ। এরকম তো আগে কখনও করেনি। ওর বাড়ির ঠিকানাটা চট করে দাও তো। “
ম্যাডাম দিলেন। মিস্টার খান সেটা নোট করে নিলেন। স্যার বললেন “ এক কথায়, আমরা কিভাবে শ্যামাদির ফিঙ্গারপ্রিন্ট পাব? সেটা একটু ভেবে বলে ফেলো।” ম্যাডাম কিছু একটা বলতে গিয়েও বলতে পারলেন না। চেপে গেলেন (বেডরুমে ফিঙ্গারপ্রিন্ট কালেক্ট করলে আমার হাতের ছাপও পাওয়া যাবে। আমার বেডরুমে ওনার আঙুলের ছাপ পাওয়া গেলে কোনও ক্ষতি নেই কারণ উনি আমার ঘরে অনেকবার এসেছেন, কিন্তু ওনার বেডরুমে আমার যাওয়ার কথা নয়।)। উনি একটু ভেবে নিয়ে বললেন “ঘর মোছার বালতিতে পাওয়া যাবে নিশ্চই। “ সেখান থেকে যত রকমের ফিঙ্গারপ্রিন্ট পাওয়া গেল সব কালেক্ট করে নেওয়া হল। বিদায় নেওয়ার আগে ওরা একটা ধোয়া গ্লাসে ম্যাডামের আঙুলের ছাপ ফেলে সেই গ্লাসটা সঙ্গে নিয়ে নিল। সহজ ভাবেই ওরা ফিঙ্গারপ্রিন্ট নিতে পারত বটে, কিন্তু হাতে কালির দাগ লেগে থাকলে পাছে আমার সন্দেহ হয়, তাই এই পন্থা।
ওরা বেরিয়ে যেতে না যেতেই আমার ফোনটা বেজে উঠল। বললাম “হ্যালো?” স্যার বললেন “ তোমার কাজ হয়েছে?” বললাম “ না। এই সবে শুরু করেছে। “ উনি বললেন “বিশুবাবুকে একবার ফোনটা দাও। তোমার ম্যাডাম ওইদিকে চেঁচামেচি করছেন।” আমি ফোনটা বিশু বাবুর হাতে ধরিয়ে দিলাম। বিশু বাবু তিনবার হ্যাঁ, ঠিক আছে, আচ্ছা মতন বলে ফোনটা কেটে আমার হাতে ফেরত দিয়ে বললেন “তুমি বাড়ি ফিরে যাও। উনি লোক পাঠিয়ে পরে এইগুলো কালেক্ট করে নেবেন।” আমি বললাম “ একটু আগে যে বললেন পুলিশের ফাইল নিজের কাছে রাখতে চান না। এখন কি হল?” উনি এমন একটা নজর দিয়ে আমার দিকে তাকালেন যে এরপর আর ওখানে দাঁড়িয়ে থাকতে পারলাম না। ঘরে ঢুকে ম্যাডামকে স্যারের সাথে কি কথা হয়েছে বলে উপরে উঠে এলাম।
পুলিশরা এই মুহূর্তে তিনটে কাজ নিয়ে ব্যস্ত। ফিঙ্গারপ্রিন্ট মিলিয়ে দেখা। মালিনীর ব্যাপারে খবর নেওয়া। আমার কল রেকর্ড আর আমার মোবাইল লোকেশন খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে পড়া। ও হ্যাঁ... আরেকটা জিনিস আছে। সেটা হল আমার ল্যাপটপের ব্যাপারে আরও কিছু গবেষণা করে যা কিছু তথ্য পাওয়া যায় সব জেনে নেওয়া। ওদের ফাইন্ডিংসের কথায় একটু পরে আসছি কারণ এইসব কাজ গোটাতে ওনাদের অনেক টাইম লাগবে। সেই সুযোগে অন্য দিকে কি কি হয়েছে সেই কথা এই বেলা বলে নেওয়া দরকার। ঘরে ঢুকেই ম্যাডাম আমাকে বললেন “ যাও গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নাও। তোমার ওপর দিয়ে অনেক ধকল গেছে। ফ্রেশ হয়ে খেয়ে দেয়ে একটু রেস্ট নাও। “ আমি ওনার পিঠের সাথে সেঁটে দাঁড়িয়ে বললাম “আপনাকে দেখলেই আমি ফ্রেশ হয়ে যাই।”
ম্যাডাম আমার দিকে ফিরে আমার বুকে একটা কিল মেরে বললেন “ আমার রান্না খুব খারাপ। তাই না?” আমি বললাম “ উফফ সত্যি কথা না বললে ওখানে তো আমি উল্টে কেস খেয়ে যেতাম। হেহে।” ম্যাডাম বললেন “তুমি ভারী অসভ্য।” বললাম “কেন? আমি আবার কি অসভ্যতা করলাম?” ম্যাডাম বললেন “ জিজ্ঞেস করল এখানে এসে প্রেমে পড়েছ কিনা আর তুমি ফস করে বলে দিলে হ্যাঁ?” আমি বললাম “ আপনার জন্য আমি হয়ত টাইমপাস, কিন্তু আমার কাছে তো আপনি…” কথাটা শেষ না করে একটা চোখ মারলাম। ম্যাডাম আমাকে জড়িয়ে ধরে বললেন “আমার বুকটা কেমন ধুকপুক করছিল জানো। যখন তোমাকে নাম জিজ্ঞেস করা হল।” বললাম “ উত্তর দেওয়া না দেওয়ার অধিকার তো আমার। আর তাছাড়া এই ক্রিমিন্যাল কেসের সাথে আমার লাভ লাইফ আসছে কোথা থেকে। তবে সত্যি এটা চিন্তার কথা। শিখাদির বাড়ির লোকেরা আমাকে ওখানে সেদিন দেখল কি করে? আমি তো আপনার সাথে ছিলাম সারারাত। “ ম্যাডাম বললেন “আমিও সেটা বুঝতে পারলাম না। তবে আমার নামটা তুমি না বলে আমার সংসারটাকে বাঁচিয়ে দিয়েছ। এই জন্য তোমার একটা কিসি প্রাপ্য।” উনি আমার ঠোঁটে আলতো করে একটা চুমু খেলেন। ওনাকে বললাম “এতো অল্পে মন ভরে না। আরও চাই।”