Thread Rating:
  • 34 Vote(s) - 3.35 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
Thriller মুখোশ - The Mask by Daily Passenger
#51
৬। এর মধ্যে ইয়া বড় বড় আর্মি অফিসাররা এই ব্যাপারের সাথে ইনভলভ হয়ে পড়েন। কিন্তু এই সময় একটা সমস্যা দেখা দিল। এটা এমন একটা জিনিস যেটা নিয়ে বাইরে আলোচনা করা যাবে না। জানবে শুধু আর্মির কিছু অফিসার, আর কিছু উচ্চ পদস্থ অফিসার ফ্রম মিনিস্ট্রি অফ ডিফেন্স। কিছু বৈজ্ঞানিকও জানবেন এই ব্যাপারটা নিয়ে। পার্ট বাই পার্ট এগোনো হবে গোটা জিনিসটা নিয়ে। গোটা প্রজেক্টের অনেকগুলো ফেস আছে। যতটা সম্ভব গোপনীয়তা বজায় রেখে পুরো কাজটা শেষ করতে হবে।
 
৭। সমস্যা হল চারপাশে চরের অভাব নেই। আমাদের শত্রু দেশগুলোর চর তো আছেই। তাছাড়া ইন্টারনাল এনিমিও কম নয়। তাছাড়া আছে টেরর প্রবলেম। মেহেরা একটা খুব বিখ্যাত ফেস। মেহেরা বেশী ছোটাছুটি করছে মানে এরা সবাই বুঝে যাবে যে কিছু নতুন ব্যাপার হতে চলেছে। তাই ওনাকে স্পেশাল সিকিউরিটি প্রভাইড করেছে গভমেনট। কিন্তু এখন প্রবলেম হল যাদের সাথে মেহেরা দেখা করবেন তারাও সবাই নেক্সট জেনারেশন আর্মসের সাথে কোনও না কোনও ভাবে লিঙ্কড। সুতরাং ব্যাপারটা জানাজানি হতে বেশী সময় লাগবে না। তাই চাই নিরাপত্তা। আর যথা সম্ভব গোপনীয়তা। এই ব্যাপারে কাউকে বিশ্বাস করা যাবে না। এমনকি গভমেন্টের নিজের লোককেও নয়।
 
৮। বাইরে কোথাও মিটিং মিছিল করলে জানাজানি হওয়ার সম্ভাবনা বেশী। আর মিথ্যা বলব কেন আমাদের নিজেদের ভেতরেও তো কথা চালাচালি করার লোকের কোনও অভাব নেই। সুতরাং ঠিক হল দরকারি মিটিংগুলো সব হবে ভীষণ গোপনে এই ব্লু রিসোর্ট হোটেলে।
 
৯। এইবার রঞ্জন বাবুর মতন লোক ছাতি চিতিয়ে হোটেলে এলে আর কেউ জানুক না জানুক গোটা মিডিয়া সেটা নিয়ে তুলকালাম বাঁধিয়ে দেবে। তার ওপর হোটেলে আছেন মেহেরা। সুতরাং। আরেকটু ভেবে ঠিক করা হল পাবলিকলি কেউ কাউকে মিট করবে না। হোটেলের স্টাফদেরও বিশ্বাস করা যাবে না। সুতরাং যারা মেহেরার সাথে দেখা করতে আসবেন তারা আসবেন পেছনের গেট দিয়ে। এমারজেন্সি এক্সিটের প্যাসেজ দিয়ে ওনারা ওপরে উঠে আসবেন। এইবার ঘর যদি করিডরের মাঝ খানে হয় তো আসতে যেতে কারোর না কারোর সামনে আগন্তুক কে পড়তে হতে পারে। তাই এক্সিট ডোরের একদম সামনের ঘরটা বুক করতে হবে। তাতেও কেউ না কেউ দেখে ফেলতে পারে। স্টিল দ্যাট ইস মোর সিকিওর্ড। সিকিউরিটি মেসার হিসাবে কয়েকটা জিনিস ঠিক করা হল।
 
ক। হোটেলের পেছন দিকের সিসি টিভি ক্যামেরা বন্ধ থাকবে।
 
খ। যখন কোনও গেস্ট পেছনের গেট দিয়ে ঢুকবেন তখন সমস্ত হোটেলের কর্মচারীদের সেখান থেকে
সরিয়ে নেওয়া হবে।
 
গ। যে ফ্লোরে মেহেরা থাকবেন সেই ফ্লোরের ক্যামেরা বন্ধ থাকবে।
 
ঘ। ঘর হবে এক্সিটের একদম মুখে।
 
ঙ। যখন কোনও গেস্ট আসবেন তার আগে সেই ফ্লোর থেকে সব রুম বয়দের সরিয়ে নেওয়া হবে।
 
চ। হোটেলের একজন কি দুজন বাদ দিয়ে কেউ জানবে না যে কোনও হাই প্রোফাইল গেস্ট এসেছে মেহেরার রুমে।
 
ছ। আর মেহেরা খুব লো প্রোফাইল মেন্টেন করবেন নিজে।
 
জ। বাইরে গভমেন্ট প্লেসে কোথাও এরা মিট করবেন না। কারণ সেখানে চর না থাকলেও মিডিয়ায় এই ব্যাপারটা প্রচার হতে বেশী সময় লাগবে না। তারপর সবাই কিছু একটা হচ্ছে সেটা বুঝে ফেলবে।
 
১০। আড়াই মাস মতন আগে মেহেরার সেক্রেটারি নিজে এসে পুরো হোটেল দেখে ম্যানেজারকে গোপনীয়তার ব্যাপারে কিছুটা আভাষ দিয়ে দুটো রুম বুক করেন। বুকিং করলেও ১০৯ আর ১১০ নম্বর ঘরের ব্যাপারে তখন কোনও কিছু ঠিক করা ছিল না। ১০৯ আর ১১০ নম্বর ঘরেই যে ওনারা থাকবেন সেইটা ওনার আসার ২৫ দিন মতন আগে এসে ঠিক করেন এই সেক্রেটারি বাবু। ঘর দুটো করিডরের একদম শেষ প্রান্তে। তারপরেই এমারজেন্সি এক্সিট। আর এই এক্সিটটা সোজা নেমে গেছে হোটেলের পেছনের গেটের সামনে।
 
১১। এইবার অন্যদিকে বেশ কয়েকটা ঘটনা ঘটে গেছে ইতিমধ্যে। এর মধ্যে দুটো ফ্যাক্ট আর বাকিগুলো হাইপোথিসিস।
 
হাইপোথিসিস-১। এত গোপনীয়তা সত্ত্বেও ইতিমধ্যে আমাদের শত্রু বা শত্রুরা খবর পেয়ে গেছে যে একটা ভয়ানক কিছু তৈরি করছে আমাদের দেশের বৈজ্ঞানিক মহল। এবং সেটা আর্ম সংক্রান্ত কিছু। সুতরাং লোক লাগিয়ে দেওয়া হল পিছনে।
 
হাইপোথিসিস-২। ওরা রঞ্জন বাবুর ইনভলভমেন্টের ব্যাপারটা জেনে ফেলে। এইখানে একটা তথ্য জানিয়ে রাখছি। একটা সহজ সলিউশন হতেই পারত গোটা ব্যাপারটার। আমি এই প্রশ্নটা মিস্টার মেহেরাকে করেছিলাম। এতকিছু না করে রঞ্জন বাবুকে প্রপার সিকিউরিটি দিয়ে নিয়ে গেলেই তো হত। দিল্লি হোক বা কোনও একটা আর্মির ব্রাঞ্চে। কিন্তু সেটা এই পরিস্থিতিতে সম্ভব নয়। কারণ আমাদের দেশের রাজনীতি। দুটো জায়গায় বাই-পোল ইলেকশন হবে। এই দুটো জায়গাতেই রঞ্জন বাবু পার্টির ফেস। ওনাকে এখন রাত দিন ভোট জোটানোর জন্য দৌড়াদৌড়ি করতে হচ্ছে। এছারাও পার্টির অনেক কাজ দেখতে হচ্ছে ওনাকে। রঞ্জনবাবু যে কাজটা করছিলেন সেটা করছিলেন গোপনে। উনি যে রাজনৈতিক দলের সাথে যুক্ত সেই দলের নেতারাও ওনার এই কাজের ব্যাপারে কিছুই জানেন না। এই অবস্থায় উনি কোলকাতা ছেড়ে চলে গিয়ে আর্মির অফিসারদের সাথে বসে মিটিং মিছিল করলে পার্টির উপর মহল সেটাকে ভালো চোখে মেনে নেবে না। পার্টির ভেতরেই ওনার পেছেন লোক লাগবে এটা জানার জন্য যে কি এমন কাজ আছে ওনার ডিফেন্স মিনিস্ট্রির সাথে যার জন্য উনি নিজের পার্টিকে এই ইলেকশনের সময় অবহেলা করছেন। আর আপনারা নিশ্চই এটা জানেন যে রাজনৈতিক পার্টির অনেকের সাথেই আমাদের শত্রুপক্ষের চরদের গোপনে যোগাযোগ থাকে। মোটের ওপর পার্টির কাজ ছেড়ে রঞ্জন বাবুর এই পরিস্থিতিতে কোলকাতা ছেড়ে কয়েকদিনের জন্য কোথাও যাওয়া অসম্ভব। আর তাতে অন্যান্য রিস্কও থেকে যায়। রাজনৈতিক মহলে কথা চালাচালি শুরু হলে ব্যাপারটা জানাজানি হতে বেশী সময় লাগবে না। আমাদের দেশের এটা দুর্ভাগ্য, আমাদের দেশের রাজনীতি আমাদের দেশের বিজ্ঞানের থেকে অনেক বেশী শক্তিশালী। সুতরাং কি দাঁড়াল? যা হবার সব কিছু হবে এই কোলকাতার বুকে।
 
হাইপোথিসিস-৩। আমার বিশ্বাস কোনও একটা ব্যাকচ্যানেল লাগিয়ে সংকেত রায় নামক এই ব্যক্তিটিকে এন্ট্রান্সে উত্তীর্ণ করে দেওয়া হয়। বোর্ডের পরীক্ষায় তার নাম বেরোয়। পয়সা দিলে এমনটা যে হয়েই থাকে সেটা অস্বীকার করার কোনও মানে নেই। আর ব্যাক চ্যানেল বলতে আমি খুব স্ট্রং ব্যাক চ্যানেল বলছি। কোন চ্যানেলে এটা করা হয়েছে সেটা আপাতত আমাদের আলোচনার বিষয়বস্তু নয়। যে নিজের প্রভাব খাটিয়ে সংকেতের নাম মেরিট লিস্টে তুলে দিয়েছে সে হয়ত নিজেই জানে না যে এর পেছনে কোন চক্রান্ত কাজ করছে। হয়ত তার কোনও এক প্রভাবশালী বন্ধু মদের ঠেকে তাকে এই উপকারটা করতে বলেছেন টাকার বিনিময়ে আর উনি করে দিয়েছেন। যিনি উপকারটা চেয়েছেন তিনিও হয়ত এর মাথামুণ্ডু কিছুই জানেন না কারণ তাকেও হয়ত কেউ না কেউ টাকা খাইয়ে এই রিকোয়েস্ট করেছে। মানে হতে পারে ইট ইস অ্যা লং চেইন। তাই এই নিয়ে মাথা ঘামিয়ে কোনও লাভ নেই।
 
ফ্যাক্ট-১। যেই মুহূর্তে মিস্টার মেহেরার জন্য ব্লু রিসোর্ট হোটেলে দুটো রুম বুক করা হল ঠিক তার তিন দিন পরে সংকেতের নামে একটা রুম বুক করা হল সেই একই হোটেলে। দুজনকে একই হোটেলে রাখতেই হবে।
 
ফ্যাক্ট-২। যেই মুহূর্তে বেশী টাকা দিয়ে মিস্টার মেহেরার সেক্রেটারি ১০৯ আর ১১০ নম্বর রুম ফিক্স করলেন ঠিক তার পরের দিন একজন অচেনা লোক এসে ১০৭ নম্বর রুমটা ফিক্স করে ফেলল সংকেত রায়ের জন্য। একেও অনেক চড়া রেটে ঘর বুক করতে হয়েছে। সংকেতের বক্তব্য ওদের টাকার টানাটানি। কিন্তু সেটাই যদি হবে তো এরকম চড়া রেটে ২৫ দিনের জন্য রুম বুক করা হল কেন?
 
হাইপোথিসিস-৪। মেহেরার রুম ফিক্স করার ব্যাপারে যথেষ্ট গোপনীয়তা নেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছিল। তা সত্ত্বেও সেটা জানাজানি হওয়ার অর্থ হল হোটেলের ভেতরেই কেউ আছে যে ব্যাপারটা লিক করেছে। হতে পারে মিস্টার মেহেরা এই হোটেলে ঘর বুক করার পর তাকে টাকা দিয়ে দলে টেনে নেওয়া হয়েছিল, কিন্তু মোটের ওপর কেউ একজন হোটেলে আছে যে এই খবর গুলো লিক করেছে। অন্তত রুম ফিক্স করার খবরটা। শহরে কে যে কি করছে সেটা কি আর ঠিক করে বলা যায়! আরও গুছিয়ে বলতে মোটের ওপর আমার মতে এই হোটেলে কেউ একজন আছে যে খবর লিক করছে বা সংকেতকে হেল্প করছে। এই নিয়ে পরে আরও কিছু বলার আছে আমার। ভুলে গেলে মনে করিয়ে দিও।
 
১২। আবার মেইন ঘটনায় ফেরা যাক। সংকেত চলে এলো হোটেলে, ছাত্রের বেশে। ঘর আগে থেকেই ফিক্সড।
 
১৩। তারপর এলেন মিস্টার মেহেরা। এনার ঘরও আগে থেকেই ফিক্সড।
 
১৪। সব রকম নিরাপত্তা ব্যবস্থা পাকা করা হল মিস্টার মেহেরার জন্য।
 
১৫। উনি এখানে আসার আগের দিন থেকে ফার্স্ট ফ্লোর আর পেছনের গেটের ক্যামেরা অফ করে দেওয়া হল।
 
১৬। সংকেত রায় জেনে ফেলল যে ফার্স্ট ফ্লোরের ক্যামেরা বন্ধ করে রাখা হয়েছে। কি করে জানল সেটা আমাদের ভালো মতন ভেবে দেখতে হবে। হতে পারে... যে আগে রুমের ব্যাপারে সংকেত দের খবর দিয়েছিল সেই জানিয়েছে। কিন্তু এখানে একটা অন্য সমস্যা আছে। ম্যানেজারের বয়ান অনুযায়ী ৪-৫ জন লোক ছাড়া কেউ জানত না এই ব্যাপারটা। তারা সবাই হোটেলের পুরানো আর বিশ্বস্ত লোক। বুকিঙের খবর জানাজানি হতে সময় লাগে না। কিন্তু এটা এমন একটা জিনিস যেটা সহজে জানতে পারা যায় না। কেউ হঠাৎ করে গিয়ে ক্যামেরার একটা সুইচ বন্ধ করে দিলে বাকি কারোর সেটা জানার কথা নয়। কম্পিউটারে বসে রেকর্ড বা ফুটেজ চেক না করলে ক্যামেরা কাজ করছে কিনা সেটা বোঝার দ্বিতীয় কোনও উপায় নেই। আমার বলার অর্থ এইঃ প্রথম ব্যক্তি, যে সংকেতদের রুমের ব্যাপারে জানিয়েছিল আর দ্বিতীয় ব্যক্তি, যে ক্যামেরার ব্যাপারটা সংকেতকে জানিয়েছে, হতেই পারে তারা ভিন্ন দুজন ব্যক্তি। আবার এমনও হতে পারে যে তারা একই ব্যক্তি। আরেকটা সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না এখানে, সেটাও বলে রাখছি, সংকেত নিজেই হয়ত কোনও ভাবে জেনে গেছে যে ফার্স্ট ফ্লোরের ক্যামেরা কাজ করছে না। সবটাই জানতে হবে।
 
১৭। সংকেত রায় জেনে বুঝে লিফটের সামনে গিয়ে ধাক্কা মারে মিস্টার মেহেরাকে। কারণ সেই সুযোগে তার ঘরের চাবিটা সরিয়ে নেওয়া। সোজা কথায় পকেট মেরেছে।
 
১৮। মিস্টার মেহেরার গার্ডরা এসে সংকেত কে সরিয়ে নিয়ে যায়। মিস্টার মেহেরাকে নিয়ে ওরা নিচে নেমে যায়। অন্য দিকে চাবি হাতে পেয়েই সংকেত ওনার ঘরে গিয়ে কিছু একটা করে ফেলল। সেটা কি আমি জানি না। কিন্তু ওরা নেমে যাওয়ার আরও ১৫ মিনিট পরে সংকেত নিচে নেমে আসে অন্য দিকের এমারজেন্সি এক্সিট দিয়ে। এই এক্সিটটা হোটেলের সামনের দিকের এক্সিট যেটা শেষ হয় হোটেলের মেইন রিসেপশনের ঠিক পাশে। এই ১৫ মিনিট ল্যাগের জন্যই আমার বিশ্বাস সংকেত চাবিটা হাতে পেয়ে কিছু একটা নিশ্চই করেছে।
 
১৯। সংকেতের কাজ শেষ হওয়ার পর ও চাবিটা ইচ্ছে করে করিডরের এক পাশে ফেলে দেয়। তার আগে অবশ্য সেই চাবি থেকে নিজের হাতের ছাপ মুছে দিয়েছিল। আর তাই চাবিতে শুধু সংকেতের নয়, অন্য কারোর, এমনকি মিস্টার মেহেরার হাতের ছাপও সেদিন পাওয়া যায়নি।
 
২০। মেহেরা সাবধানী লোক এবং একই সাথে বিচক্ষনও বটে। মেহেরা তক্ষুনি যদি বুজতে পারে যে চাবিটা মিসিং তাহলে খুব বিপদ হয়ে যাবে। সুতরাং এই অবস্থায় সংকেত কে অন্য একটা diversionary tactic অ্যাপ্লাই করতে হয়। রাদার ও সেফটির জন্য সেটা করতে বাধ্য হয়। ও জানে যে এই ফ্লোরের ক্যামেরা কাজ করছে না। ও চুপচাপ নো স্মোকিং বোর্ডটা সরিয়ে ফেলে। সেখানেই দাঁড়িয়ে সিগারেট জ্বালায়। আলার্ম বেজে ওঠে। একজন দশাসই সিকিউরিটি ছুটে এসে ওকে ধূমপান করতে বারণ করে। ও তাকে পাত্তা না দেওয়ার ভান করে চলে যাওয়ার চেষ্টা করে। সিকিউরিটি নিজের ডিউটি করতে গিয়ে ওর ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে, কিন্তু সংকেতকে ওই সিকিউরিটি চিনত না। সংকেত সিকিউরিটির বেশ কয়েকটা হাড় ভেঙ্গে দেয় কয়েক মুহূর্তে, দিয়ে তাকে লিফটে করে নিচে পাঠিয়ে দেয়।
 
২১। নিচে এসে সিকিউরিটি কমপ্লেন করে। সংকেত এমারজেন্সি এক্সিট দিয়ে বাইরে বেরিয়ে এসে ভালোমানুষ সেজে পুরো ব্যাপারটা অস্বীকার করে। মিস্টার মেহেরার বডি গার্ড ওকে ধাক্কা দিয়ে লিফটের সামনে থেকে সরিয়ে দিয়েছিল। এই ঘটনাটাকে প্রচণ্ড রঙ চড়িয়ে সবার সামনে তুলে ধরে ব্যাপারটাকে অন্য দিকে ঘুরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে। ওর হাতিয়ার একটা, আর টার্গেটও একটা। হাতিয়ারঃ ওপরের ক্যামেরা কাজ করে না। তাই কেউ চাইলেও কিছু প্রমান করতে পারবে না। টার্গেটঃ মিস্টার মেহেরাকে কোনও ভাবে বিচলিত করে অন্য দিকে ব্যস্ত রাখা। ওনার মনটা ওনার চাবির দিকে যেতে দেওয়া চলবে না। ফিকিরটা কাজে লাগে। ও সবার সামনে উপরে সিকিউরিটিকে পেটানোর ব্যাপারটা অস্বীকার করে। এবং একই সাথে নাম না নিয়ে এটাও বলে যে মিস্টার মেহেরার বডি গার্ড ওকে ফিসিকালি অ্যাবিউস করেছে। কোনও গেস্টেকে কেউ ফিসিকালি অ্যাবিউস করতে পারে না। সুতরাং, সংকেত একসাথে দুটো চ্যালেঞ্জ করে বসে হোটেলের ম্যানেজমেন্টের সামনে। এক, সবার সামনে ফুটেজ খুলে দেখা হোক ওই বডি গার্ড ওকে ফিসিকালি অ্যাবিউস করেছে কিনা!
 
আর দুই, ও সিকিউরিটির গায়ে হাত তুলেছে কিনা সেটাও ফুটেজ খুলে সবার সামনে দেখা হোক। সাইকোলজিকাল গেমটা চিন্তা কর। ও যদি না জানত যে ক্যামেরা কাজ করছে না তাহলে এত সাহস করে এতগুলো লোকের সামনে মিস্টার মেহেরাকে চ্যালেঞ্জ করতে পারত না। কিন্তু এখন মিস্টার মেহেরা আর হোটেল ম্যানেজমেন্ট দুজনেই ব্যাকফুটে পড়ে গেছে। এরা দুজনেই জানে ফুটেজ নেই। তাই কিছু প্রমান করতে পারবে না। হোটেল ম্যানেজমেন্ট সংকেতের চেঁচামেচি শুনে মিস্টার মেহেরাকে আটকে রাখতে বাধ্য হয়। স্বাভাবিক ভাবেই এই অবস্থায় মিস্টার মেহেরার মন কোনও ভাবে ওনার চাবির দিকে যেতে পারে না। অন্য দিকে হোটেল ম্যানেজমেন্টও ভয় পেয়ে গেছে কারণ সংকেত কথার ছলে সবার সামনে ঘোষণা করে দিয়েছে যে যদি ফুটেজ না থাকে তাহলে ম্যানেজমেন্টকে হোটেলের গেস্টদের সিকিউরিটি নিয়ে ছিনিমিনি খেলার জন্য জবাবদিহি করতে হবে। ভিড় জমতে শুরু করে। ম্যানেজমেন্ট কোনও মতে প্রাইভেসির অজুহাত দেখিয়ে গোপনে ফুটেজ চেক করার ভান করে জানিয়ে দেয় যে দুজনেই নিরপরাধ। সবাই সরে পড়ে। সংকেতের কাজ হয়ে যায়। এরকম ঘটনার পর স্বাভাবিক ভাবেই মানুষ ডিস্টার্বড হয়ে থাকে। তাই বিকেল অব্দি মিস্টার মেহেরা বুঝতেই পারেননি যে ওনার পকেটে ওনার ঘরের চাবিটা আর নেই। পরে বুঝতে পেরে অবশ্য এফ আই আর করেছিলেন।
 
২২। এর পর একদিন সংকেত কোনও ভাবে জানতে পারে যে ওর যা দরকার সেটা মিস্টার মেহেরার ঘরে চলে এসেছে। কিভাবে জানতে পারে সেটা নিয়ে আমাকে আরও ভাবতে হবে। কিন্তু এটা ঠিক যে আর্মির দুই জন অফিসার ঠিক সেদিনই মিস্টার মেহেরার হাতে আরেকটা জিনিস হ্যান্ড ওভার করে কালো রঙের সুটকেসে। ফার্স্ট ইন্টালিজেন্ট ফিউস। রঞ্জন মুখার্জির ডিসাইন ব্যবহার করে ইঞ্জিনিয়াররা এই ফিউসটা বানিয়েছে। সুতরাং কি দাঁড়াল পুরো ব্যাপারটা? মিস্টার মেহেরার ঘরে আগেই ফাইলটা এসে গিয়েছিল। আর এখন ফার্স্ট ফিউসটাও চলে এসেছে। এগুলো স্থানান্তরিত হওয়ার আগে হাতিয়ে নিতে হবে। রাত ২ টো বেজে ১০ মিনিটে মিস্টার মেহেরা ড্রিংক করে ঘুমাতে যান। ২.৩০ মিনিটের পর ওনার ঘরে ঢোকে সংকেত রায়। কি ভাবে ঢুকেছিল সেটাও ভাবার বিষয়। কিন্তু মোটের ওপর সংকেত যা নেওয়ার নিয়ে বেরিয়ে যায়। সেদিনই ৩.৩০ মিনিটে ও চেক আউট করে। ঠিক ৫ টা বেজে ২৫ মিনিটে ও হোটেল ছেড়ে চলে যায়। চলে আসে আমাদের বাড়িতে।
 
এইখানে বলার জিনিস একটাই, ভুলে যেও না দুটো ফাইলই আগে থেকে মিস্টার মেহেরার হাতে ছিল। কিন্তু ঠিক যেদিন অ্যাকচুয়াল ফিউসটা মিস্টার মেহেরার হাতে আসে, ঠিক সেদিনই রাতে ওটা চুরি যায়। চুরি যায় ২ টো বেজে ১০ মিনিটের পর। কারণ তার আগে মিস্টার মেহেরা জেগে ছিলেন। আর জিনিসগুলো ছিল ওনার চোখের সামনে। উনি ঘুমিয়ে পড়ার পরই জিনিসটা চুরি যায়। আমরা ফুটেজে দেখেছি সংকেত ২.৩০ অব্দি অন্য একজনের ঘরে ছিল ফোর্থ ফ্লোরে। তারপর ও নিচে নেমে আসে। এইখানে একটা জিনিস বলে রাখি, ফিউস জিনিসটা খুব একটা বড় কিছু নয়। যদিও সেটাকে একটা বড় সুটকেসে ভরে নিয়ে আসা হয়েছিল, তবুও জিনিসটাকে খুব সহজেই একটা খুব ছোট হ্যান্ড ব্যাগের ভেতর পুরে রাখা যায়। এটা মিস্টার মেহেরাই আমাকে বলেছেন।
 
২৩। অন্য দিক থেকে বলছি এইবার। সংকেতকে যদি শুধু জিনিসটা বানানোর ফরমুলা চুরি করতে হত তাহলে কিন্তু আগেই করতে পারত। কারণ মিস্টার মুখার্জির ফাইলটা অনেক আগেই মিস্টার মেহেরা পেয়ে গেছেন। আর আমি আশা করছি সংকেত সেটা জানত। তাহলে ওকে ফিউসটা হাতে আসা অব্দি ওয়েট করতে হল কেন? এই থেকেই আমি আরেকটা ঘটনার ব্যাপারে একটা হাইপোথিসিস তৈরি করেছি। মন দিয়ে শোনো সেটা। ইন্টারেস্টিং লাগবে।
 
ক। রঞ্জন মুখার্জি কেন মারা গেলেন? রঞ্জন মুখার্জি ছাড়া এই জিনিস আর কেউ বানাতে পারবে না। মানে আজকের ডেটে। পরে কি হবে সেটা নিয়ে আপাতত চিন্তা করার কোনও কারণ নেই। মিস্টার মেহেরার বয়ান অনুযায়ী, যেদিন রঞ্জন মুখার্জি ওনাকে ফাইলটা হ্যান্ড ওভার করেন ঠিক তার দুদিনের মধ্যেই ওনাকে হত্যা করা হয়। অর্থাৎ দা ব্রেন ইস গান। অ্যান্ড এই অবস্থায় ফিউসের ডিসাইনের দুটো কপি আছে। যার একটা আছে মিস্টার মেহেরার কাছে। আর একটা রঞ্জন মুখার্জির প্রাইভেট সেফের ভেতর। অবশ্য আরেকটা কপি আছে, সেটার কথায় আসছি।
 
খ। রঞ্জন মুখার্জির দেওয়া ফাইলটা যদি মেহেরার কাছ থেকে সরিয়ে নেওয়া হয় তাহলেও ব্যাপারটা পুরোপুরি কভার করা যাবে না। কারণ, সংকেত জানত যে ইতিমধ্যে বৈজ্ঞানিক আর ইঞ্জিনিয়াররা মিলে গোপনে আর্মিদের রিসার্চ সেন্টারে মিস্টার মুখার্জির ডিসাইন অনুযায়ী একটা কিছু তৈরি করছে। সেটা দেওয়া হবে মিস্টার মেহেরার হাতে। আর সেটা যত দিন না হাতে পাচ্ছেন ততদিন মিস্টার মেহেরা শহর ছেড়ে নড়বেন না। সেই সাথে আরেকটা জিনিস বলে রাখি তোমাদের। সুটকেসে শুধু ফিউসটাই ছিল না। আরেকটা ছোট ফাইলও ছিল। সেই ফাইলটা পড়েই ইঞ্জিনিয়াররা এই জিনিসটা বানিয়েছে। অর্থাৎ সিকিউরিটি রিসনে ইঞ্জিনিয়াররা যে ডিসাইন দেখে ফিউসটা বানিয়েছে সেই জিনিসটাও সরকারের হাতে তুলে দিচ্ছে। এরপর ওরা চাইলেও আরেকটা ফিউস বানাতে পারবে না। বলাই বাহুল্য যে অনেকে মিলে এটা বানিয়েছে। সেই অনেকের প্রত্যেকেই শুধু একটা ছোট অংশের ওপর কাজ করেছে। পুরো ব্যাপারটা কেউই জানে না। সিকিউরিটি ইস্যু! বুঝতেই পারছ।
 
এইবার, দুটো ফাইল, অর্থাৎ ফার্স্ট ফাইল আর রঞ্জন মুখার্জির দেওয়া ফাইলটা যদি ইতি মধ্যে চুরি হয়ে যায় তাহলে এই থার্ডফাইলটা আর কোনও দিনই সিকিউরিটি রিসনে মিস্টার মেহেরা নিজের ঘরে আনবেন না। অর্থাৎ, অরিজিন্যাল জিনিসটার, মানে ফিউস ছাড়া বাকি জিনিসটার অনেকগুলো ফাইল অলরেডি আমাদের দেশের কাছে আছে। আর ফিউসের ডিসাইনের এই থার্ড কপিটাও আমাদের কাছে আছে। তাই মিস্টার সংকেত রায় অপেক্ষা করতে লাগল কবে এই থার্ড আর লাস্ট কপিটা মিস্টার মেহেরার হাতে এসে পৌছায়। আর সেই সাথে ফিউসটা। ফিউসটাও হাতানো খুব দরকার। কারণ পরে এই ফিউসটা দেখেই আবার সেই অরিজিন্যাল ডিসাইনের আরেকটা কপি বৈজ্ঞানিকরা বানিয়ে ফেলতে পারবে। রঞ্জন মুখার্জি আউট। সুতরাং এই কটা জিনিস হাতিয়ে নিতে পারলে আমাদের দেশের হাতে আর কিছুই থাকবে না। অনেক প্ল্যান করে খেলাটা খেলা হয়েছে আরিফ। যত ভাবছি তত নতুন দিক খুলে যাচ্ছে।
 
গ। সংকেত সবকিছু হাতিয়ে নিয়ে সেদিনই বেরিয়ে গেল হোটেল ছেড়ে। ব্যস। গল্প এখানেই শেষ।
 
২৪। ব্রেন, মানে রঞ্জন মুখার্জিকে শেষ করা এই গোটা মিশনের একটা বড় পার্ট। এমনিতে রঞ্জন মুখার্জির নাগাল পাওয়া সংকেত রায়ের পক্ষে তেমন সহজ কিছু নয়। দোলন মুখার্জি সংকেতের ক্লাসমেট। ওকে পটিয়ে ওদের বাড়িতে ও যে ইতিমধ্যে এন্ট্রি নিয়ে নিয়েছে সেটা আমি জানি। কিন্তু রঞ্জন মুখার্জির বাড়িতে ঢুকে রঞ্জন মুখার্জিকে খুন করলে সবাই খুব সহজেই বুঝে যাবে যে ওই খুনি। তাই রঞ্জন মুখার্জিকে মারতে হবে এমন একটা জায়গায় যেখানে অনেক লোকের ভিড়। আর সবাই ব্যস্ত। যেখানে কেউ সংকেত রায়কে সন্দেহ করবে না।
 
২৫। সুতরাং...প্রথমে শান্তনু কে মেরে রঞ্জন মুখার্জি কে পাবলিক প্লেসে আসতে বাধ্য করো। দোলনের বন্ধু হিসাবে ও রঞ্জন বাবুর ধারে কাছে থাকতে পারবে। আর কোনও একটা সুযোগে
 
৩৯
 
নাহ আর ভাবতে পারছি না। এখন আপাতত এই অব্দিই থাক। কি বলো? এখনও অনেক কাজ বাকি। কি হল? পিজ্জাগুলো তো ঠাণ্ডা হয়ে গেল। নাও, খেয়ে নাও। পরে ভেবে আমার কথাগুলোর ব্যাপারে কমেন্ট করবে। আরও অনেক কিছু ভাবা বাকি। অনেক কিছু করা বাকি। তবে এতগুলো হাইপোথিসিস থেকে শুধু একটাই ফাইনাল হাইপোথিসিস করা যায়। আমার মতে সংকেত রায় সুবিধের ছেলে নয়। ওর সব কিছু ফেক। নাও নাও শুরু করো। আমাকেও একটা স্লাইস দাও প্লীজ। তবে একটা ব্যাপার ক্লিয়ার করে দিচ্ছি এখনই। এই ব্যাপারে যতক্ষণ না একটা কিছু সুরাহা হচ্ছে ততক্ষণ অব্দি বাড়ি ফেরার কথা মাথা থেকে বের করে দাও সবাই। আগে কাজ, তারপর বাকি সব কিছু।
 
একটা সিগারেট ধরিয়ে হাঁসতে হাঁসতে মিস্টার বেরা বললেন আমি অ্যাকশন নেবো। কিন্তু তার আগে একটু সিওর হয়ে নিতে চাইছি শুধু একটা ব্যাপারে। সেটা হল এই যেঃ সংকেত ইস দা কালপ্রিট। কপাল ভালো হলে আমার হাইপোথিসিস যে ঠিক তার একটা প্রমান অন্তত কিছুক্ষনের মধ্যেই আমরা পেয়ে যাব। আমার বিশ্বাস মিস্টার মুখার্জির প্রাইভেট সেফের ভেতর থেকে সেই ফাইল আর পাওয়া যাবে না। কারণটা কি জানো আরিফ? আমি জানি ইতিমধ্যে অনেকবার সংকেত রায়ের পায়ের ধুলা ওই বাড়িতে পড়েছে। ওই ফাইলটা ও ইতিমধ্যে সরিয়ে ফেলেছে। আমরা সব জায়গায় ওর থেকে পাঁচ পা করে পিছিয়ে আছি। কিন্তু কেন? ভাবো আরিফ... ভাবো। আরও বড় সমস্যা হল এই যে..এই অবস্থায় সংকেতকে নিয়ে কোর্টে গেলে হাসির খোঁড়াক হতে হবে। হি ইজ অ্যা ড্যাম গুড প্রফেশনল। সংকেত রায়, আমি তোমাকে ছাড়ব না। শুধু একটা ভুল চাল চেলে দেখো। তোমাকে জেলের ঘানি টানিয়ে তবেই আমি ছাড়ব। আপাতত মিটিং ভেঙ্গে গেল। সবাই যে যার কাজে ফিরে গেল। মিস্টার বেরা বাইরে গেলেন একটা সিগারেটের প্যাকেট কিনতে।
 
মিস্টার বেরা থানায় ফিরতে না ফিরতেই প্রথম দুঃসংবাদটা এসে হাজির হল। আর সেটা এলো লেট মিস্টার মুখার্জির বাড়ি থেকে। দুজন দুঁদে অফিসার সরকারি অর্ডার নিয়ে রওয়ানা দিয়েছিল সেই ফিউস বানানোর ফাইলটা উদ্ধার করতে। বেলা মুখার্জির দিক থেকে কোনও রকম বাঁধা আসেনি। কাজের ঘরের দরজায় তালা মারা ছিল। ঘর খুলে উনি মিস্টার মুখার্জির কাজের ঘরের সব কটা ড্রয়ার আর প্রাইভেট সেফের চাবি এক কথায় অফিসারদের হাতে হস্তান্তরিত করে দিয়েছিলেন। অফিসাররা সমস্ত ড্রয়ার আর সব সেফ তন্ন তন্ন করে খুঁজেও সেই ফাইলের হদিস পায়নি। এখানেই শেষ নয়। সব কটা প্রাইভেট সেফ খাঁখাঁ করছে। একটা কাগজের টুকরো পর্যন্ত কোথাও পাওয়া যায়নি। ড্রয়ার আর আলমারি খুঁজে গুটি কয়েক ফাইল তারা উদ্ধার করেছেন। সেই ফাইলগুলো তারা সিজ করেছেন। মিস্টার মুখার্জির ল্যাপটপ ওনারা সিজ করেছেন। বেলা মুখার্জি ল্যাপটপ সিজের ব্যাপারে প্রথমে আপত্তি করলেও পরে বাধা দেননি। ল্যাপটপের পাসওয়ার্ড মিসেস মুখার্জির অজানা। এইসব জিনিস আর কাগজপত্র নিয়ে দুজন অফিসার থানায় ফিরে এসেছেন।
 
আরেকটা ব্যাপার লক্ষ্যনীয়। মিস্টার মুখার্জির কাজের ঘর তন্ন তন্ন করে খুঁজে একটাও ফিঙ্গারপ্রিন্ট উদ্ধার করা যায়নি। মানে কেউ খুব যত্নে সমস্ত ফিঙ্গার প্রিন্ট মুছে দিয়ে গেছে। মিসেস মুখার্জিকে জিজ্ঞেস করে জানতে পারা যায় যে এই ঘর বিগত ৩-৪ দিন ধরে বন্ধ পড়ে আছে। এমনকি ধোয়া মোছাও করা হয়নি এই ঘরে। উনি নিজেই ৩-৪ দিন আগে এই ঘরে তালা মেরেছিলেন, আর চাবি থাকত ওনার বেডরুমের প্রাইভেট সেফে। অফিসারদের অনুরোধে উনি বাড়ির বাকি প্রাইভেট সেফগুলোও নিজে খুঁজে দেখেছেন। একটাও কাজের জিনিস কোথাও পাওয়া যায়নি। মোটের ওপর এই। মিস্টার বেরা, মিস্টার আরিফ খান আর রবিনবাবু মিস্টার মুখার্জির বাড়ি থেকে উদ্ধার করা ফাইলগুলো উপর হামলে পড়লেন। সাইবার ক্রাইম বিভাগের দুজন বড় অফিসারকে তক্ষুনি তলব করে নিয়ে আসা হল থানায়। ল্যাপটপটা চালান করে দেওয়া হল তাদের জিম্মায়। ফাইলের ব্যাপারে সবাই হাল ছেড়ে দিলেও মিস্টার বেরার একটা ক্ষীণ আশা এখনও টিকে আছে এই ল্যাপটপের ওপরে। ওনার ধারণা ফাইলটার একটা সফট কপি ল্যাপটপে পাওয়া গেলেও যেতে পারে।
 
প্রায় ঘণ্টা খানেক ধরে মিস্টার মুখার্জির বাড়ি থেকে উদ্ধার করে আনা ফাইল,কাগজ পত্র আর ল্যাপটপ ঘেঁটে মিস্টার বেরা অ্যান্ড হিজ টিম যে তথ্যগুলো সংগ্রহ করতে পেরেছেন সেগুলো নিচে লিখে দেওয়া হল।
 
১। ল্যাপটপের গায়েও কোনও আঙুলের ছাপ পাওয়া যায়নি। সেটা অবশ্য আগে থেকেই জানা।
 
২। ল্যাপটপের ডিস্কটাও ওনার প্রাইভেট সেফের মত খাঁ খাঁ করছে। অনেক চেষ্টা করেও কোনও ডাটা রিট্রিভ করা গেলো না। বিশেষজ্ঞদের ধারণা এটা একটা আনকোরা নতুন হার্ড ডিস্ক। ল্যাপটপের মডেল নাম্বার ইত্যাদি সব নোট করে নেওয়া হয়েছে। এই ল্যাপটপের বিক্রেতাকে খুঁজে বের করার জন্য পুলিশ এখন উঠে পড়ে লেগেছে। 
[+] 1 user Likes pcirma's post
Like Reply


Messages In This Thread
RE: মুখোশ - The Mask by Daily Passenger - by pcirma - 05-03-2019, 03:53 PM



Users browsing this thread: 3 Guest(s)