Thread Rating:
  • 34 Vote(s) - 3.35 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
Thriller মুখোশ - The Mask by Daily Passenger
#50
ফুটেজ দেখার সময় উনি মিস্টার বেরার পেছনে এসে দাঁড়িয়েছিলেন, এইবার নিজের চেয়ারে ফিরে গিয়ে বললেন স্যার অনেক ভি আই পি ওনার সাথে দেখা করতে আসতেন। প্রয়াত রঞ্জন মুখার্জিও বার দুই তিনেক এসেছিলেন। তবে কেউ সামনের দিক দিয়ে ঢুকতেন না। ঢুকতেন পেছন দিক দিয়ে। ওই দিকে ক্যামেরা অন থাকে না। আর ফার্স্ট ফ্লোরের ক্যামেরাও বন্ধ। সুতরাং বুঝতেই পারছেন…” কি একটা ভেবে নিয়ে একটু পরে বললেন স্যার একবার মনে আছে দুপুরের দিকে হোটেলের পিছনে দুই জন আর্মির অফিসারও এসেছিলেন। আমাদের বলা হয় ফার্স্ট ফ্লোর থেকে সব রুম বয়দের কিছুক্ষনের জন্য সরিয়ে নিতে। আমি সবাইকে সরিয়ে নেওয়ার পর ওই দুই অফিসার একটা বড় সুটকেস নিয়ে ওপরে উঠে মিস্টার মেহেরার ঘরে ঢুকে যান। ওনারা অনেকক্ষণ ছিলেন ওই ঘরে। পরে ওনারা চলে যান। তবে…” মিস্টার বেরা একটু বিরক্ত হয়ে বললেন তবে কি?” জবাব এলো স্যার মিথ্যে বলব না। যতদূর মনে পড়ে, সুটকেসটা ঘরেই রেখে গেছিলেন ওনারা।
 
মিস্টার বেরা কিছু বলার আগেই ম্যানেজার বলে চললেন স্যার হোটেলের স্টাফরাও যাতে ওনার ঘরে কে আসছে বা যাচ্ছে সেটা জানতে না পারে তার জন্যই হয়ত এই ব্যবস্থা করতে বলেছিল। তাছাড়া, সবাই বুঝত যে মিস্টার মেহেরা খুব হোমরাচোমরা গোছের কেউ। যদিও চেক ইনের সময় উনি নিজের প্রফেসনের জায়গায় লিখেছিলেন ব্যাবসা।মিস্টার বেরা বেজার মুখ নিয়ে বললেন সেটা দেখেছি। কিন্তু সমস্যা হল হোটেলের পিছন দিকের আর ফার্স্ট ফ্লোরের সিসিটিভি যদি বন্ধই থাকে তাহলে আর বাকি ফুটেজ দেখে কি করব?” উনি ল্যাপটপ থেকে সিডিটা বের করে সেটা ম্যানেজারের হাতে ফেরত দিতে গিয়েই সিডির ওপর লেখা তারিখটা দেখে চমকে উঠলেন। আরিফ এই ডেটটাও ভালো করে দেখো। এই একই দিনে মিস্টার মেহেরা দুপুর বেলায় মিসিং কির রিপোর্ট লিখিয়েছিলেন। আচ্ছা একটা কথা বলুন , হোটেল থেকে বেরনোর সময় চাবি রিসেপশনে জমা করে দিয়ে যেতে হয় না?”
 
ম্যানেজার বললেন বাকি সবার জন্য এই নিয়ম। কিন্তু বুঝতেই তো পারছেন এনার ব্যাপারটা একটু অন্য। ওনার রুমের দুটো চাবিই উনি চেক ইনের সময় উঠিয়ে নিয়েছিলেন। একটা থাকত ওনার কাছে। আর একটা থাকত ওনার সেক্রেটারির কাছে। সেক্রেটারিরটা খোয়া যায়নি সেদিন। ওনার কাছে যেটা থাকত সেটা খোয়া গেছিল। পরে অবশ্য আমরা দেখি যে সেটা ফার্স্ট ফ্লোরের করিডরের ওপরে পড়ে আছে। তখন আমরা সেই নিয়ে কোনও রকম মাথা ব্যথা করিনি, কিন্তু এখন যে হারে হোটেলে পুলিশ আর গোয়েন্দাদের যাতায়াত লেগে আছে তাতে মনে হচ্ছে…” মিস্টার বেরা বললেন আপনি বললেন যে সংকেত রায় বলেছিলেন যে মিস্টার মেহেরার বডি গার্ডরা ওনাকে ফিসিকালি আবিউস করেছে। কথাটা কি সত্যি?” ম্যানেজার বললেন সেটা আর কি করে ভেরিফাই করব স্যার? ওপরের ক্যামেরা তো বন্ধ করা ছিল।মিস্টার বেরা বললেন কেউ কিছু দেখেনি?” ম্যানেজার মাথা নাড়িয়ে বুঝিয়ে দিলেন যে এই ব্যাপারে ওনার আর কিছু বলার নেই।
 
ওপরের ক্যামেরা যে বন্ধ সেটা কে কে জানত?” প্রশ্নটা শুনে ম্যানেজার মাথা চুলকে বললেন স্যার , হোটেলে ব্যাক অফিসে আর ফ্রন্ট ডেস্কে যারা কাজ করে তারা সবাই জানত। আমরা বুঝতে পারতাম দেশের ডিফেন্সের ব্যাপারে ওখানে কিছু একটা …” মিস্টার বেরা ধমকে উঠলেন আপনাকে যেটুকু জিজ্ঞেস করেছি শুধু সেইটুকু বলুন। অহেতুক বাজে কথা বলে সময় নষ্ট করবেন না। মানে হোটেলের লোকেরা জানত যে উপরের ক্যামেরা কাজ করে না। আর আপনি বলছেন সেদিন সংকেত রায় বারবার বলছিলেন যে ফুটেজ চেক করে দেখে বলুন আমি সিকিউরিটিকে মেরেছি কি না? কি তাই তো?“ ম্যানেজার নিরবে মাথা নাড়ালেন, “স্যার ফুটেজ বন্ধ। এইদিকে ছেলেটা গোটা দুনিয়ার সামনে বারবার ফুটেজ দেখাতে বলছে। কি আর করি। কোনও মতে ব্যাপারটাকে ধামাচাপা দিতে হল। লোকে যদি জানতে পারে যে ক্যামেরা বন্ধ করে রাখা আছে তাহলে বুঝতেই পারছেন সবাই মিলে আমাদের কি হাল করবে…” মিস্টার বেরার ঠোঁটের কোণে এতক্ষনে একটা হাসির ঝিলিক খেলে গেল।
 
কিছু বুঝতে পারছ আরিফ? সংকেত রায়ও জানত যে ফার্স্ট ফ্লোরের ক্যামেরা বন্ধ করে রাখা আছে। আর তাই ও অত সাহস দেখিয়ে সবার সামনে দাঁড়িয়ে বারবার করে বলছিল ফুটেজ চেক করে দেখতে! ও সিকিউরিটিকে পেটানোর মুহূর্ত থেকে জানত যে এই ফ্লোরের সমস্ত ক্যামেরা অকেজো। হাহা। কিন্তু এইবার প্রশ্ন হল যে সেটা ও জানল কি করে? ম্যানেজার বাবু, আপনি তো বলছেন হোটেলের ভেতরের লোক ছাড়া কেউ জানে না যে ওপরের ক্যামেরা বন্ধ। ম্যানেজার বললেন ইভেন রুম বয়রা পর্যন্ত এই ব্যাপারটা জানত না। কয়েকজন সিনিয়র স্টাফ ছাড়া আর কেউ এই ব্যাপারে কিছু জানত না। যারা এই ব্যাপারটা জানত তাদের পরিষ্কার বলে রখা হয়েছিল যে এই নিয়ে ওরা যেন রুম বয় বা বাইরের কোনও লোকের সামনে নিজেদের মধ্যেও কোনও রকম আলোচনা না করে। ব্যাপারটা জানাজানি হলে খুব বিপদ হতে পারে।
 
মিস্টার বেরা বললেন হোটেলের স্টাফদের মধ্যে কারোর সাথে সংকেত রায়ের জানাশোনা ছিল?” উত্তরটা দিতে ম্যানেজারের দেরী হল না। উনি বললেন স্যার একটা কথা বলতে ভুলে গেছি। আসলে কেউ এই ব্যাপারে কিছু জিজ্ঞেস করেনি। আমাদের হোটেলে একজন কাজ করে মালিনী বলে। ও কিন্তু এই ক্যামেরার ব্যাপারটা জানত। যতদূর শুনেছি, এই মালিনীর ভাই নাকি সংকেতের ক্লাসমেট। মিস্টার বেরা হেসেবললেন তাই নাকি? আরিফ ম্যানেজার বাবুর জন্য এক কাপ চা! এতক্ষনে উনি কিছু কাজের কথা বলতে শুরু করেছেন।
 
ফোন করে চা আনতে বলে দেওয়া হল। ম্যানেজার বলে চললেন স্যার, ওই মালিনীর ভাই আগেও আমাদের হোটেলে এসেছিল ওর দিদির সাথে দেখা করতে। কিন্তু ডিউটির সময় বাড়ির লোকদের সাথে দেখা করা নিয়ম বিরুদ্ধ। এই নিয়ে মালিনীকে দুই একবার কথাও শুনতে হয়েছে। এর পর বহুদিন ওই ছেলেটাকে দেখা যায়নি। কিন্তু সংকেত যেদিন এখানে এলো ঠিক তার পরের দিন ছেলেটা আবার হোটেলে এসেছিল। যদিও সংকেত আমাদের সিকিউরিটিকে বলেছিল যে ছেলেটা এসেছে সংকেতের গেস্ট হিসাবে সংকেতের সাথে দেখা করতে, কিন্তু আমি জানি ছেলেটাকে সংকেত ওর দিদির সাথেই দেখা করানোর জন্য নিয়ে এসেছিল। তারপরে অবশ্য আর কোনও দিনও ছেলেটাকে হোটেলে আসতে দেখা যায়নি।
 
মিস্টার বেরা বললেন আর কিছু বলতে পারেন এই মালিনীর ব্যাপারে?” ম্যানেজার আবার আমতা আমতা করতে শুরু করে দিয়েছেন। বললেন স্যার ইয়ে মানে। একটা কথা বলা ঠিক হবে কিনা জানি না। মালিনীকে আসলে আমি খুব স্নেহ করি তো। তবে…” মিস্টার বেরা বললেন যা জানেন নির্ভয়ে বলে যান। নইলে আপনিই ফ্যাসাদে পড়বেন। ম্যানেজার বললেন একটা কানাঘুষা শুনেছি যে এক মিনিট দাঁড়ান। একটা সিডি দেখুন। এইগুলো গ্রাউন্ড ফ্লোরের ফুটেজ।আবার সবাই মিলে ল্যাপটপের স্ক্রিনের ওপর ঝুঁকে পড়ল। কিছুটা দেখার পর, ম্যানেজার বললেন এইবার দের ঘণ্টা মতন ভিডিও এগিয়ে দিন। হ্যাঁ এই যে। এইবার দেখুন। কিছু বুঝলেন?”
 
আরেকটা সিডি বের করে দিলেন। তাতেও তিনজনে মিলে অনেকক্ষণ ধরে কিছু দেখার পর মিস্টার বেরা জিজ্ঞেস করলেন এক্সাক্টলি কি বোঝাতে চাইছেন একটু খুলে বলবেন?” কথা থামাতে হল, কারণ চা এসে গেছে। আবার দরজা বন্ধ হতেই ম্যানেজার বললেন দেখলেন তো মালিনী নাইট ডিউটির সময় ঘণ্টা খানেকের জন্য দুদিন গায়েব হয়ে গেছিল।মিস্টার বেরা বললেন সো হোয়াট?” ম্যানেজার বললেন তাহলে একটু খুলেই বলি। মালিনী আগেও নাইট ডিউটির সময় এরকম ভাবে কাউন্টার ছেড়ে চলে যেত। আসলে সেই সময় কাউন্টারে কোনও লোক আসেনা। টুকটাক কল এলে রুম বয়রাই সেই কল রিসিভ করে নিতে পারে। আমি ওকে আগে এই নিয়ে জিজ্ঞেস করেছিলাম। ও বলেছিল যে ও হোটেলের ছাদে গিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। খালি খালি কাউন্টারে বসে থাকা ওর কাছে বোরিং তাই ছাদে চলে যায়। আমি দেখেছি কথাটা সত্যি। তেমন কিছু হলে ওর মোবাইলে কল করলেই ও নিচে চলে আসবে। ততক্ষণের জন্য একজন রুম বয় কাউন্টারে বসে কাউন্টার সামলায়। কিন্তু কানাঘুসা শুনেছি যে সংকেত আসার পর থেকে ও নাকি ছাদে যেত না?”
 
মিস্টার বেরা বললেন তাহলে কোথায় যেত বলে আপনার ধারণা?” উনি গলা খাটো করে বললেন সংকেতের ঘরে। আগে অবশ্য ছাদেই যেত আর সেটা আমি নিজের চোখে দেখেছি। আর এটাও ঠিক যে অন্ধকারে আমাদের হোটেলের ছাদ থেকে শহরের একটা খুব সুন্দর ভিউ পাওয়া যায়। মিস্টার বেরা বললেন সংকেতের ঘরে যেতে ওকে কেউ দেখেছে?” ম্যানেজার বললেন হ্যাঁ তেমনটাই শুনেছি। মিস্টার বেরা বললেন কোনও প্রমান আছে?” ম্যানেজার বললেন স্যার সেইভাবে তো আর প্রমান নেই। তবে কেউ কেউ নাকি ওকে সংকেতের ঘরে যেতে দেখেছে।
 
মিস্টার বেরা কয়েক মিনিটের জন্য চোখ বন্ধ করে বসে বসে কি যেন ভেবে চললেন। ওই দিকে ম্যানেজার মুখ বুজে চা পান করে চলেছেন। কিছুক্ষণ পর হঠাৎ সোজা হয়ে বসে মিস্টার বেরা জিজ্ঞেস করলেন একটা ব্যাপার বলুন। কবে থেকে ফার্স্ট ফ্লোরের ফুটেজ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল?” ম্যানেজার উত্তর দেওয়ার আগেই মিস্টার বেরা রেজিস্টারে কি যেন খুঁজতে শুরু করে দিয়েছেন। ম্যানেজার বললেন সেটা দেখে বলতে হবে।মিস্টার বেরা বললেন শুধু চট করে একটা জিনিস বলুন মিস্টার মেহেরা যেদিন চেক ইন করলেন সেদিন থেকে বন্ধ করেছেন নাকি তার আগে থেকেই?” ম্যানেজার বললেন তার আগের দিন সন্ধ্যা থেকে। ওনার সেক্রেটারি এসেছিলেন তার আগের দিন সব ব্যবস্থা চেক করতে। সেই তখন থেকেই ক্যামেরা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল।
 
মিস্টার বেরা হেসেবললেন উপায় আছে ভেরিফাই করার, আপনাদের মালিনী ছাদে যেত না সংকেতের ঘরে যেত। মিস্টার মেহেরা হোটেলে চেক ইন করেছেন সংকেতের চেকিন করার দিন তিনেক পর। অন্তত আপনাদের রেজিস্টার তাই বলছে। সুতরাং ওই দুই তিন দিনের ফুটেজ থাকার কথা। চেক করুন।ম্যানেজার হঠাৎ করে চমকে উঠে বললেন স্যার ঠিক তো। এটা তো মাথায় আসেনি। ওই দুই দিনের ফুটেজ আছে। উনি আবার সিডির খাপ খুলে খুঁজে দুটো সিডি বের করে মিস্টার বেরার হাতে দিয়ে দিলেন। মিস্টার বেরা বললেন আমি এই দুইদিনের গ্রাউন্ড ফ্লোরের ফুটেজও দেখতে চাই। ঠিক এই সময়কার।আবার বেশ কিছুক্ষণ নিরবে তিনজনে ফুটেজ দেখে চললেন।
 
সিডি কটা ম্যানেজারের হাতে ফেরত দিয়ে মিস্টার বেরা আরিফের দিকে তাকিয়ে বললেন দুদিনই এই মেয়েটা সংকেতের ঘরে গেছিল। আমাদের কাছে এখন তার প্রমান আছে। প্রথম দিন বেশীক্ষণ না থাকলেও পরের দিন মালিনী প্রায় ঘণ্টা খানেক কাটিয়ে এসেছে সংকেতের ঘরে। ম্যানেজার বললেন, “এরপরেও নাকি বার দুয়েক মালিনীকে সংকেতের ঘরে যেতে দেখেছে কেউ কেউ। মিস্টার বেরা বললেন কি মনে হয় আপনার ম্যানেজার বাবু। এতক্ষন ধরে মালিনী ওই ঘরের ভেতরে কি করছিল?” ম্যানেজার একটু গলা খাঁকড়িয়ে বললেন আজ্ঞে সেটা আমি বলতে পারব না। তবে মিস্টার মেহেরার ঘর থেকে কিছু জিনিস চুরি হওয়ার পর আমি মালিনীকে আড়ালে ডেকে জিজ্ঞেস করেছিলাম যে মেহেরার ব্যাপারে বা ফার্স্ট ফ্লোরের ক্যামেরার ব্যাপারে ও কাউকে কিছু বলেছে কিনা। ও জোর গলায় বলেছে যে ও কাউকে কিছু বলেনি। আমি বিশেস করে সংকেতের কথাও জিজ্ঞেস করেছিলাম। মালিনী আমাকে বলেছিল যে সংকেত ওর ভাইয়ের বন্ধু। সংকেতের সাথে ওর ভাইয়ের ব্যাপারে এমনি দুই একটা কথা হয়েছে বটে, কিন্তু এইসব নিয়ে সংকেতের সাথে ওর কোনও রকম কথাই হয়নি।
 
মিস্টার বেরা বললেন স্যার কেউ কারোর ভাইয়ের ব্যাপারে দুই একটা কথা বলার জন্য মাঝ রাতে অভিসারিকার মতন কোনও বোর্ডারের ঘরে গিয়ে হাজিরা দেয় না। আর কি এমন কথা ছিল যে সেটা বলতে প্রায় ঘণ্টা খানেক লেগে গেল। ডাল মে কুছ তো কালা হ্যায়। একটা কথা বলুন এই মালিনী বলে মেয়েটির চরিত্র কেমন? আর ও কতদিন ধরে আপনাদের হোটেলে কাজ করছে?” ম্যানেজার বললেন ওর নামে খারাপ কিছু কোনও দিন শুনিনি। বিয়েটা ভালো হয়নি বেচারির। তবে কোনও বোর্ডারের সাথে ওর যে কোনও খারাপ সম্পর্ক থাকতে পারে সেটা আমি আগে কখনও শুনিনি। মিস্টার বেরা জিজ্ঞেস করলেন এই মালিনীর বয়স কত? দেখে তো মনে হচ্ছে সংকেতের থেকে বয়সে অনেকটাই বড়?” ম্যানেজার বললেন ৩০ এর ওপরে। বাকিটা রেকর্ড দেখে বলতে হবে। আরিফ হেসেবললেন স্যার আজকাল বয়সটা কোনও ম্যাটার নয়। মিস্টার বেরা বললেন সেটা জানি আরিফ। তবুও সব দিকটা বুঝে শুনে দেখছি। বাই দা ওয়ে, মালিনীর বিয়ে ভালো হয়নি আপনি সেটা কি করে জানলেন? “
 
ম্যানেজার বললেন মালিনীই আমাকে দুঃখ করে বলেছিল সেই সব কথা। ওদের বাড়ির আর্থিক অবস্থা ভালো নয়। তার ওপর মালিনীর ওপর ওর বর সন্দেহ করে। ওর বরের ধারণা হোটেলে রিসেপশনিস্টদের চরিত্র খুব খারাপ হয়। ও মাঝে একবার চাকরি ছেড়ে দেবে ভেবেছিল। কিন্তু পরে আর্থিক সমস্যার কথা ভেবে ছাড়তে পারেনি। ওর বরের মাথার ওপর প্রচুর লোণ। সবটা জানি না। তবে এইটুকু জানি যে ওর বরের আর ওর এখানে মাথা গোঁজার জায়গা নেই। আমাকে খুব শ্রদ্ধা করে বলে এইসব কথা বলেছিল। বাড়িতে কিছু সমস্যা আছে। ওর বর তো বাইরে ইন্সিওরেন্সের দালালি করে। উইক এন্ডে এখানে আসে। শনিবার দুপুরের মধ্যে চলে আসে, সোমবার সকাল বেলায় ফিরে যায়। মালিনী নিজের শশুর বাড়িতে থাকে না। থাকে একটা মেসে। ওর বর এলে এই হোটেলেই আমি ওদের জন্য বন্দবস্ত করে দি। মানে, বুঝতেই তো পারছেন, আমি ওকে খুব স্নেহ করি।
 
মিস্টার বেরা বললেন আপনাকে কেউ শ্রদ্ধা করে বলেই যে তার চরিত্র খুব ভালো সেটা ঠিক মেনে নেওয়া যাচ্ছে না। বাট স্টিল, মালিনী কেন নিজের শ্বশুর বাড়িতে থাকে না সেই ব্যাপারে কিছু বলেনি আপনাকে?” ম্যানেজার বললেন বলেছিল যে বাড়িতে ওর বরের জ্যাঠারা ওদের খুব কথা শোনায়। ওরা নাকি ওর বরের কাছ থেকে অনেক টাকা পাবে। সেই সব আর কি। ঠিক বলতে পারব না। মিস্টার বেরা বললেন এইবার বলুন আপনি কি করে উইক এন্ডে ওদের থাকার ব্যবস্থা করে দেন?” ম্যানেজার বললেন দেখুন আমার দেশের বাড়ি অনেক দূরে। আমি উইক এন্ডে সেখানে চলে যাই। এখানে আমার থাকার জন্য একটা ঘর দিয়েছে হোটেল থেকে। আমি সেখানেই থাকি। উইক এন্ডে আমার ঘরটা খালি পড়ে থাকে। ওরা থাকে সেখানে। মিস্টার বেরা বললেন বেশ। আপনার ঘরটা কোন ফ্লোরে?” ম্যানেজার বললেন থার্ড।
 
মিস্টার বেরা বললেন সংকেত সোমবার ভোরে চেকআউট করেছে আপনার হোটেল থেকে। রবিবার গোটা রাতটা ও সেই হোটেলেই ছিল। চুরিটাও হয়েছে ওই দিন রাতেই। চুরির কথায় পরে আসছি। তার আগে একটা কথা বলুন, তারমানে সেইদিনও মালিনী আর তার বর থার্ড ফ্লোরে আপনার ঘরেই ছিল? রবিবার তো ওর বর আপনাদের হোটেলে থাকে। কি তাই তো?” ম্যানেজার বললেন ও সেটা বলতে ভুলে গেছিলাম। মিস্টার মেহেরা আসার পর থেকে আমার আর বাড়ি যাওয়া হয়নি। ওদের জন্য আমি ফোর্থ ফ্লোরে একটা ছোট ঘরের বন্দবস্ত করে দিয়েছিলাম। মিস্টার বেরা উঠে দাঁড়িয়ে একটু আড়মোড়া ভেঙ্গে বললেন ওই দিনকার ফুটেজ দেখব। গ্রাউন্ড আর ফোর্থ ফ্লোরের। ফার্স্ট ফ্লোরের ফুটেজ না থাকায় সব কিছু কেমন জানি গুবলেট হয়ে গেছে। জানি না আর কত হ্যাপা পোহাতে হবে এই জন্য।
 
প্রায় ২০ মিনিট ধরে তিনজন মিলে ফুটেজের বিভিন্ন অংশ মনযোগ দিয়ে দেখলেন। আরিফ বললেন স্যার এই দিন মালিনী সংকেতের ঘরে যায়নি। সংকেত ওদের ঘরে এসেছে। কিন্তু ব্যাপারটা কেমন জানি গুলিয়ে গেল। ওদের ঘরে তো মালিনীর বরের থাকার কথা। মিস্টার বেরা এই কথার কোনও উত্তর না দিয়ে চুপ করে স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে বসে রইলেন। ভিডিওটা একটু একটু করে এগিয়ে দিচ্ছেন উনি। একসময় ভিডিওটাকে পস করে বললেন সময়টা লক্ষ্য কর আরিফ। ২.৩০ মিনিট। সংকেত এতক্ষন্ ধরে মালিনী আর মালিনীর বরের সাথে ছিল। কি করছিল সেটা জরুরি নয়। ম্যানেজার বাবু সংকেত লিফট ব্যবহার করত না?” ম্যানেজার বললেন সেটা তো জানি না। মিস্টার বেরা বললেন এখন তো দেখছি সার্ভিস এক্সিট দিয়ে বেরিয়ে গেল। দেখা যাক।
 
আরও কিছুক্ষণ ধরে ফুটেজ দেখে সিডিটা বের করতে করতে মিস্টার বেরা বললেন ২ টো বেজে ৩৫ মিনিটে সংকেত রায় আপানাদের মালিনীর ঘর থেকে বেরিয়ে যায়। তারপর ৩ টে বেজে ৩০ মিনিটে গিয়ে চেক আউট করে। এর মাঝে ও কি করছিল বা কোথায় ছিল সেটা পরিষ্কার হল না। আর তাছাড়া সংকেত যখন মালিনীর ঘরে গেছিল তখন দুটো ভারী পার্সেল নিয়ে গেছিল। যখন বেরিয়ে এল তখন হাতে একটা মাত্র ছোট পার্সেল। প্রশ্ন হল পার্সেলে কি ছিল? অবশ্য খাওয়ার দাওয়ারের জিনিস থাকতে পারে। এটা নিয়ে পরে ভাবা যাবে খন। আপাতত চুরিটা যদি ২.৩০ থেকে ৩.৩০ এর মধ্যে হয়ে থাকে তো সংকেতের রোলটা এখানে ঠিক উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। ছেলেটা সত্যি অদ্ভু্ত। ও লিফট ব্যবহার করে না…”
 
বেশ কিছুক্ষণ ধরেই ম্যানেজার বাবু বেশ উসখুস করছিলেন। মিস্টার বেরা ওনাকে বললেন কিছু বলবেন?” উনি বললেন স্যার আসলে অনেক দেরী হয়ে যাচ্ছে। আপনাদের যদি আর তেমন কিছু জিজ্ঞাসা না থাকে তো আমি এইবার উঠি?” আরিফ বললেন রেজিস্টার বইটার আমরা কয়েকটা জায়গার একটু কপি করে নেব। আর সিডিগুলো আপাতত এখানেই রেখে যান। পরে দেখা হয়ে গেলে পাঠিয়ে দেব। ম্যানেজার উঠতে যাচ্ছিলেন তার আগেই মিস্টার বেরা কি ভেবে বললেন দাঁড়ান। আরেকটা জিনিস জিজ্ঞেস করার ছিল।
 
দেখুন, ব্যাপারটা একটু অন্য অ্যাঙ্গেল থেকে দেখার চেষ্টা করছি। মেহেরা আসার আগের দিন থেকে ফার্স্ট ফ্লোরের ক্যামেরা বন্ধ হয়ে যায়, রাইট? তার মানে চেক ইন করার আগেই ঠিক ছিল যে উনি ফার্স্ট ফ্লোরেই কোনও একটা ঘরে থাকবেন? ঠিক তো?” ম্যানেজার বললেন হ্যাঁ।বেরা বললেন অনুমান করতে পারি মেহেরার সেক্রেটারি এসে সব কিছু দেখে শুনে ওনার জন্য ঘর পছন্দ করেন। আর তারপর সেই ক্যামেরা আপনারা বন্ধ করে দেন।ম্যানেজার বলে উঠলেন নানা। রুম প্রায় ২৫ দিন আগে থেকে বুক করা ছিল। সঠিক ডেটটা দেখে বলতে হবে। তবে এই বুকিঙটা আমি নিজেই কনফার্ম করেছিলাম তাই মনে আছে। ব্যাপারটা খুলে বলছি। সচরাচর চেক ইন করার সময় গেস্টের প্রেফারেন্স আর কোন ঘর খালি আছে দেখে ঘর দেওয়া হয়। তবে এনার ক্ষেত্রে ব্যাপারটা হয়েছিল অন্য। প্রায় মাস দুয়েক আগে এনার সেক্রেটারি এনার নামে দুটো রুম বুক করেন। প্রেফারেন্সে লেখা ছিল পাশা পাশি দুটো রুম চাই। নইলে হবে না। তারপর উনি এখানে আসার দিন ২৫ আগে ওনার সেক্রেটারি আবার এসে হাজির হন। আমরা ওনাকে বলি যে পাশাপাশি দুটো রুম ওনাদের দিতে পারব, কিন্তু এক্স্যাক্টলি কোন কোন রুম দিতে পারব সেটা এত আগে থেকে বলা সম্ভব নয়। চেক ইনের দিন ঠিক করা যাবে সেটা। তাতে সেক্রেটারি গোটা হোটেলটা একবার ঘুরে দেখেন। উনি ফিরে এসে বলে দেন যে ১০৯ আর ১১০ নাম্বার রুমই ওনার চাই। আমি কারণ জিজ্ঞেস করলে বলেন যে সেটা সময়ে জানা যাবে। উনি এমন রুম খুঁজছিলেন যেটা এমারজেন্সে এক্সিটের একদম পাশে। ১০৯ আর ১১০ হল এই ফ্লোরের লাস্ট দুটো ঘর। তাই এই দুটো ঘরই ওনার চাই। অগ্রিম একগুচ্ছ টাকাও দিয়ে গেছিলেন। এখন অবশ্য পুরোটা বুঝতে পেরেছি। আসলে…”
 
মিস্টার বেরা অলস ভঙ্গিতে বললেন রুম দুটোর ঠিক পাশেই এক্সিট। আর এই এক্সিটটা হোটেলের পেছন দিককার এক্সিট তাই তো? পিছনের গেট দিয়ে অনায়াসে ভি আই পি গেস্ট এসে ওনার সাথে দেখা করতে পারবেন গোপনে। সুটকেস নিয়ে এসে ওনার ঘরে রেখে দিয়ে চলে যেতে পারবেন। আর তেমন দরকার হলে উনিও সেই এক্সিট দিয়ে বেরিয়ে যেতে পারবেন। এমনকি ফার্স্ট ফ্লোরের করিডর দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময় কারোর মুখোমুখি হওয়ারও কোনও সম্ভাবনা এখানে নেই, কারণ এক্সিটের দরজা খুলে ভেতরে ঢুকলেই প্রথম ঘরটা মিস্টার মেহেরার। লোকে না দেখলেও ক্যামেরা ওনাদের গতিবিধি ঠিকই ধরতে পারত আর পরে সেই জিনিস হোটেলের স্টাফ বা অন্য কেউ জেনে যেতে পারত। তাই ফার্স্ট ফ্লোরের ক্যামেরাও বন্ধ করে দেওয়া হল। অভূতপূর্ব সতর্কতা। একটা কথা, সংকেত মালিনীর ঘর থেকে বেরিয়ে যেই এমারজেন্সি এক্সিটটা দিয়ে ... ম্যানেজার বললেন একই সিঁড়ি। হোটেলের পেছন দিকের এক্সিটে নিয়ে যাবে।মিস্টার বেরা বললেন আপনাকে শেষ দুটো উপকার করতে হবে। তাহলেই আপাতত আপনার ছুটি। প্রথমটা এখনই করুন। সংকেত নিজের রুমটা কবে বুক করেছে? আগে থেকেই বুক করা ছিল নাকি অন স্পট বুকিং করেছে এখানে এসে? আমি রুম বলতে ১০৭ নম্বর রুমের কথা বলছি। ম্যানেজার বললেন স্যার এটা একটু চেক করে দেখতে হবে।
 
উনি মোবাইল ওঠানোর তোড়জোর শুরু করেছেন দেখে মিস্টার বেরা ওনাকে বললেন সাবধান। মালিনী যেন এই ব্যাপারটা কিছুতেই জানতে না পারে। ম্যানেজার বললেন ভেতরের ডাটা অপারেটরকে ফোন করে জেনে নিচ্ছি। আর তাছাড়া আজ মালিনীর নাইট নেই। অনেক দিন ধরে বেচারি নাইট করে করে ক্লান্ত হয়ে পড়েছে আর তার ওপর...হ্যালো। শিবু? ভাই এখনকি তোর সামনে কম্পিউটার খোলা আছে। বাহ খুব ভালো। শোন না একটা উপকার করতে হবে ভাই। আর বলিস কেন? ১ মাসের জন্য রুম বুক করে আগে ভাগে কেটে পড়বে। এখন আবার নতুন বুকিং করে সেই ফাইন অ্যাডজাস্ট করার ধান্দা। একটা জিনিস দেখে একটু বল। ১০৭ নম্বর ঘর তো এখন খালি, নাকি? বেশ বেশ। ১০৭ নম্বর ঘরের লাস্ট বর্ডার কে ছিল একটু দেখে বল তো। হ্যাঁ তাহলে আমার ঠিক মনে আছে। এইবার একটা ছোট জিনিস, এই রুমের বুকিং ডিটেলসটা একটু দিতে পারবি? হ্যাঁ হ্যাঁ আগের বুকিঙের। আর বলিস কেন। হ্যাঁ বল। কি বলিস? আর আরেকবার চেক করে দেখে বল। আচ্ছা ১০৮ নম্বর রুমের কি খবর রে? বুকিং ডিটেলসটা বল। বেশ বেশ। এইবার ১০৯ আর ১১০ নাম্বার রুমের বুকিংএকই দিনে তো। ঠিক আছে। লক্ষ্মীছেলে আমার। চল এখন রাখছি। একটু পরে গিয়ে কথা বলব। হ্যাঁ... আমার জন্য একটা ফিশ মিল বলে দিস। ভেরি গুড।
 
মিস্টার বেরা আর আরিফ দুজনেই ম্যানেজারের দিকে তাকিয়ে আছেন। উনি উঠে দাঁড়িয়েছিলেন। কিন্তু আবার ধীরে ধীরে বসে পড়ে বললেন ১০৯ আর ১১০ নম্বর ঘরের ব্যাপারে আপনাকে যা বলেছি সেটা একদম ঠিক। কিন্তু অন্যটা তাজ্জব ব্যাপার স্যার। দুই মাস আগে ওদের বুকিঙের ঠিক তিন দিন পর সংকেত রায়ের নামে রুম বুক করা হয় এই হোটেলে। মেহেরার সেক্রেটারি এসে যেদিন ১০৯ আর ১১০ নম্বর রুম ফাইনাল করে পেমেন্ট দিয়ে গেল, ঠিক তার পরের দিনই একজন এসে ১০৭ নম্বর রুমটা সংকেত রায়ের নামে কনফার্ম করিয়ে নিয়ে গেছে। দিনটা ছিল শনিবার, তাই আমি এখানে ছিলাম না। যিনি কনফার্ম করিয়েছেন তিনি আমাদের অন্য একজন জুনিয়র ম্যানেজার। যে এসেছিল সে পুরো ২৫ দিনের ভাড়া আগাম দিয়ে গেছে। অবশ্য কথা হয়েছিল যে চেকইনের সময় এক্সাক্ট কত দিন থাকবে সেটা জানানো হবে। একটু চড়া দামেই রুমটা বুক করা হয়েছে স্যার।
 
মিস্টার বেরা বললেন ধন্যবাদ। আপনি এইবার আসতে পারেন। আপনার সাথে আমাদের একজন অফিসার যাবেন, প্লেন ড্রেসে। তাকে আপনি ১০৭ নম্বর ঘরে নিয়ে যাবেন। উনি একটু ঘরটা সার্চ করে দেখবেন। ম্যানেজার বললেন স্যার এখন সার্চ করে কি করবেন? সে ছেলে তো অনেক দিন হল ঘর ছেড়ে চলে গেছে। তারপর তো ঘর ভাল করে ধুয়ে মুছে সাফ করা হয়েছে। মিস্টার বেরা বললেন তবুও একবার দেখা যাক। আমি কিছু খুঁজছি না। আমার ধারণা কিছুই পাব না। আর সেটাই আমি কনফার্ম করতে চাই। আরিফ মিস্টার বেরার কথার মানে ধরতে পারলেও ম্যানেজার বাবু পারেননি। উনি বললেন কিছুই পাবেন না তো…” মিস্টার বেরা হেয়ালি করে বললেন স্যার, ৭ দিন ধরে একটা ছেলে আপনাদের হোটেলের একটা রুমে ছিল। সে চলে যাওয়ার পর থেকে ওই রুমটায় এসে আর কেউ থাকেনি। কিন্তু তবুও বলছি ওই রুমে আমরা সত্যিই কিছুই পাব না। কিছু পেলেই ভাবনার কথা। কিছু না পেলে আমি আপাতত নিশ্চিন্ত। আপনি এইবার আসুন। ও হ্যাঁ আরিফ একজন ফটোগ্রাফারকেও অফিসারের সাথে পাঠিয়ে দিও। জাস্ট ইন কেস।
 
প্রায় ২৫ মিনিট পর আরিফ ফিরে এসে বললেন স্যার কি বুঝলেন?” মিস্টার বেরা বললেন মণ্ডল কি চলে গেছে? নইলে ওকেও ডেকে নাও। আর রবিন?” আরিফ বললেন সবাই আছে। সবাইকেই ডেকে নিচ্ছি। স্যার এইবার আর চা নয় অন্য কিছু খেতে হবে। পেটটা চুই চুই করছে। উনি হেসেবললেন তথাস্তু। অর্ডার করো তোমরা। আমি মিটিয়ে দিচ্ছি।আবার সবাই এসে গোল করে ঘিরে বসলেন মিস্টার বেরাকে। মিস্টার বেরা শুরু করলেন সবার আগে আরিফ তুমি একটা জিনিস জানো না সেটা আমি জানিয়ে দিতে চাই। তুমি যখন ম্যানেজারকে ছাড়তে গেছিলে তখন আমি মিস্টার মেহেরার সাথে ফোনে কথা বলে নিয়েছি। এর আগে অবশ্য একবার ওনার সাথে আমার কথা হয়েছে। তবে এইবার সিরিয়াসলি বললাম। ১০৭ নম্বর রুমের গেস্টকে উনি ঠিক মনে করতে পারছিলেন না। তবে ছবি মেইল করতে একবারে চিনে ফেললেন। সেদিন সকাল বেলার ঘটনাটাও খুলে বললেন। ওনার সাথে সংকেতের ধাক্কা লাগে ফার্স্ট ফ্লোরের লিফটের সামনে। ওনার বডি গার্ডরা এসে সংকেত কে লিফটের সামনে থেকে সরিয়ে দেয়। ওনারা নেমে চলে যাওয়ার প্রায় ১৫ মিনিট পর নিচে হইচই শুনে উনি দেখেন যে সংকেতের সাথে ম্যানেজমেন্টের বাওয়াল শুরু হয়েছে। বাকিটা পরে বলছি।
 
৩৮
 
সবাইকে আমরা যা যা জানতে পেরেছি সেই ব্যাপারে কিছুটা ওয়াকিবহাল করা দরকার। আমি খুব একটা ডিটেল করছি না। শুধু আমি কয়েকটা সিদ্ধান্তে এসেছি সেইগুলো এই বেলা বলে রাখতে চাই। আরিফ ভুল হলে ঠিক করে দিও। বা কোনও কাউন্টার হাইপোথিসিস থাকলে সেটাও বলতে পারো।
 
ও হ্যাঁ। ম্যানেজারের সাথে আমাদের যা কথাবার্তা হয়েছে সেগুলো আমরা সব রেকর্ড করেছি। তোমরা পরে সেগুলো শুনে নিও। তোমাদেরও যদি অন্য কোনও প্রশ্ন বা হাইপোথিসিস থাকে সেটাও পরে বলতে পারো। হোটেলের ফুটেজগুলোও আছে, সেগুলোও দরকার হলে দেখে নিও। আমি আপাতত ওইগুলো রেখে দিয়েছি, কারণ পরে দরকার হতে পারে। এবারও আমি পয়েন্ট অয়াইস বলছি। আর যেভাবে ঘটনাগুলো ঘটেছে বলে মনে করছি সেইভাবে সাজাচ্ছি। আবারও বলছি এটা হল আমার হাইপোথিসিস। এইবার বলছি তাহলে? প্লীজ কেউ একজন নোট করে নাও। খাবারের কথা বলেছ? প্রথমে আমি কিছু ফ্যাক্টস বলছি, তারপর হাইপোথিসিস।
 
১। আমাদের ডিফেন্স রিসার্চ একটা ডেডলি অস্ত্র বানানোর ডিসিশন নেয় বছর দুয়েক আগে। রঞ্জন বাবু তখন থেকে ওদের সাথে কাজ করছেন গোপনে। মাঝে অবশ্য ছাড়া ছাড়ি হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু শুরু দিকটায় উনি খুব ক্লোসলি কাজ করেছেন টিমের সাথে। মেহেরাও সেই সময় থেকেই একই টিমের পার্ট। শুনে বুঝতে পারলাম যে এই অস্ত্র একবার তৈরি হলে আমাদের শ্ত্রু দেশগুলোর থেকে আমরা অনেকটাই এগিয়ে থাকব। এই রকম জিনিস আগে কেউ কখনও বানায়নি।
 
২। মাস আটেক আগে মেহেরা কোলকাতায় আসেন। রঞ্জন বাবুর সাথে দেখা করেন। ডিফেন্সের কাজ মোটামুটি শেষ। রঞ্জন বাবুকে উনি পুরো জিনিসটা রিভিউ করতে বলেন। আর সেই সাথে আরেকটা অনুরোধ করেন। ডিভাইসটার জন্য একটা ইন্টালিজেন্ট ফিউস তৈরি করতে। ওইটা ছাড়া এই জিনিসটা ব্যবহার করা যাবে না। এই নিয়ে নাকি রঞ্জন বাবুর পচুর পড়াশুনা আছে, আর একটা পেটেন্ডও নিয়েছেন উনি। প্লীজ ডোন্ট আস্ক যে এই ইন্টালিজেন্ট ফিউস বস্তুটা কি, কারণ আমি সেটার মাথা মুণ্ডু কিছুই জানি না। আমি আজ অব্দি বাড়ির ফিউসই জীবনে কোনও দিনও চেঞ্জ করিনি। মিস্টার মুখার্জিকে বলা হয় যে সেন্ট্রাল গভমেন্ট এই ব্যাপারে ওনাকে সব রকম সহযোগিতা করবে।
 
৩। রঞ্জন বাবু কাজটা হাতে নেন। উনি বিচক্ষন লোক। খুব কম সময়ের মধ্যে মোটামুটি জিনিসটা তৈরিও করে ফেলেন। ডেমোর বন্দবস্ত করা হয়। সবাই দেখে খুশি। ডিসাইন ফাইনাল করার কথা বলা হয় রঞ্জন বাবুকে।
 
৪। মাস তিনেক আগে রঞ্জন বাবুর কাজ শেষ হয়। মেহেরাকে উনি ব্যাপারটা জানান। মেহেরা ঠিক করেন যে তিনি নিজে আসবেন কোলকাতায়। কথাবার্তা বলার পর ডেট ফাইনালাইস করা হয়।
 
৫। ব্লু রিসোর্ট হোটেলে ওনার নামে রুম বুক করা হয়। রুম এখনও ফাইনাল নয়। কারণ হোটেলের প্রথা হল এই যে চেক ইনের সময় গেস্টের প্রেফারেন্স আর রুমের অ্যাভেইলেবিলিটি দেখে তাকে রুম দেওয়া হবে। 
[+] 2 users Like pcirma's post
Like Reply


Messages In This Thread
RE: মুখোশ - The Mask by Daily Passenger - by pcirma - 05-03-2019, 03:52 PM



Users browsing this thread: 4 Guest(s)