05-03-2019, 03:51 PM
এইবার আর অন্য কোনও টেস্ট না করে সোজা সুজি সেই কেমিক্যাল টেস্টের দিকে ওনারা এগিয়ে গেলেন। আমি সায় দিলাম। বললেন “ আর্জেন্ট বেসিসে রেজাল্ট আনা হবে। তবে এখানে একটা ব্যাপারে আপনাকে সাইন করতে হবে।” বললাম “কি ব্যাপারে?” উনি বললেন “ সম্মতি তো দিতেই হবে। তাছাড়া। (একটু থেমে বললেন) যত দিন না রেজাল্ট আসছে ততদিন আপনি কিন্তু শহর ছেড়ে কোথাও যেতে পারবেন না। “ আমি বললাম “ এটা বাজে ব্যাপার। কিন্তু তবুও জানতে চাইছি এটাই তো সেই স্পার্ম টেস্ট? রাইট?” বললেন “ইয়েস। মানে ওইরকম একটা টেস্ট।” বললাম “কত দিনে রেজাল্ট আসার ডেডলাইন?” উনি হেসেবললেন “আগামিকাল। ম্যাক্স টু ম্যাক্স পরশু। ডিটেল রিপোর্ট হাতে আসতে সময় লাগবে অনেক। তবে ম্যাচ পজিটিভ না নেগেটিভ সেটা পরশুর মধ্যেই জানা যাবে। আমরা ইতিমধ্যে ল্যাবের সাথে কথা বলে রেখেছি। টেস্ট হলেই তৎক্ষণাৎ সব কিছু ল্যাবে পাঠিয়ে দেওয়া হবে।“ বললাম “ ধুসস। পরশু অব্দি আমি আপনার বাড়ির ভাত খাব।” আমাকে নিয়ে ওনারা চলে গেলেন…...সব হয়ে গেছে।
এইবার রেজাল্ট এলে সব কিছু জানা যাবে। আমি বললাম “ শহর ছেড়ে যাওয়ার অনুমতি নেই। কিন্তু শহরের ভেতরে অন্য কোথাও?” উনি বললেন “আই অ্যাম সরি সংকেত। তোমাকে এতটা হ্যাপা পোহাতে হচ্ছে। কিন্তু আমি তোমাকে বারবার মানা করেছিলাম। (একটু থেমে বললেন) তুমি এই শহরে যেখানে খুশি ঘুরতে পারো। কোনও সমস্যা নেই। কোথায় থাকবে কি করবে সেটা সম্পূর্ণ তোমার ব্যক্তিগত ব্যাপার। যেমন চলছে সবকিছু তেমনই চলবে। (আবার একটু থেমে কি একটা ভেবে বললেন) আমার কেন জানি মনে হচ্ছে গোটা ব্যাপারটা অনেক বেশী ঘোড়েল, জিনিসটা যতটা সিম্পল ভেবেছিলাম ততটা নয়।” বললাম “বেশ।” ওরা আরেক রাউন্ড ফিসিকাল টেস্ট করে বলল মেডিক্যালি সব ঠিক আছে এখন। অতএব থানা থেকে আমার ছুটি হয়ে গেল। সবাই আমার জন্য বাইরে দাঁড়িয়ে ছিল। এখনও ওদের মাথায় ঢুকছে না লাই ডিটেকটর টেস্টে পাশ করা সত্ত্বেও এই টেস্ট করার কি মানে থাকতে পারে।
আমি বেরিয়ে এসে দেখলাম দোলন, বেলা আনটি, সুধা আনটি সবাই এসে থানার ক্যাম্পাসের ভিতরেই দাঁড়িয়ে আছেন। আমাকে থানার দরজায় ছেড়ে দিয়ে অর্জুন স্যার ভেতরে ঢুকে গেলেন। সবাইকে বলে দিলেন যে এইবার আপনারা আসুন। এরপর থেকে দরকার পড়লে ওনারাই যোগাযোগ করে নেবেন। সবাই যে যার মতন ফিরে গেল। ও হ্যাঁ একটা কথা বলতে ভুলে গেছি। থানার বাইরে বেরিয়ে দেখলাম আমার সেই উকিল বাবু এখনও ক্যাম্পাসের বাইরে অপেক্ষা করছেন। আমাকে সবার সাথে অক্ষত অবস্থায় বেরিয়ে আসতে দেখে ধীরে ধীরে উনিও কেটে পড়লেন। আমি সঞ্চিতা ম্যাডামের সাথে গাড়ি করে বাড়ি ফিরে চললাম। পথে আমাদের মধ্যে তেমন কোনও কথা হল না। সঞ্চিতা ম্যাডাম শুধু আমাকে জানিয়ে দিলেন আজ এত ধকলের পর আর টিউশানি করতে হবে না। সেটা শুরু হবে আগামীকাল থেকে। আমি ওনাকে একবার বলার চেষ্টা করলাম যে আমি একদম বিন্দাস আছি। উনি আমার কথায় তেমন আমল না দিয়ে বললেন “আমি অলরেডি ওদের জানিয়ে দিয়েছি। “
৩৬
গল্পের এই অংশে আমি নিজে অনুপস্থিত। কিন্তু যা যা ঘটেছে সেগুলোকে যতটা সম্ভব নিখুঁত ভাবে তুলে ধরার চেষ্টা করছি। এখানে দুটো প্রশ্ন সবার মনে আসতে পারে।
১। এই অংশে কেন আমি নেই?
উত্তরঃ পরের অংশটা পড়লে সবাই সেটা বুঝে যাবেন।
২। আমি নিজে অনুপস্থিত থেকেও কি করে ঘটনার নিখুঁত বিবরণ দিতে পারব?
উত্তরঃ সেটা বলার সময় আসবে পরে। এখনও দিস ইস টু আর্লি। এইবার শুরু করা যাক।
আমাদের রেহাই দিয়ে অর্জুন বেরা আবার গিয়ে ঢুকলেন নিজের ঘরে। এটা অবশ্য ওনার নিজের ঘর নয়। বরং বলা যেতে পারে যে এই কয়েক দিনের জন্য এই ঘরটা আর এই থানাটা হল গিয়ে ওনার বেস অফ অপারেশন। আরেকটা লম্বা সিগারেট জ্বালিয়ে সিলিঙের দিকে তাকিয়ে চুপ করে বসে রইলেন কিছুক্ষণ। ধীরে ধীরে ওনার চোখ বুজে এলো। কি এত ভাবছেন সেটা উনিই জানেন। হুঁশ ফিরল একজনের গলার আওয়াজ পেয়ে। “ওহ আরিফ! ল্যাবের কাজ মিটে গেছে?” আরিফ খান হল স্পেশাল ব্র্যাঞ্চের অফিসার। আরিফ খান অর্জুন বেরার অনেক দিনের সঙ্গী। একটা চেয়ার টেনে নিয়ে আরিফ খান আসন গ্রহণ করে বললেন “ইয়েস। একজন কে দিয়ে স্পেসিমেন পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। জানিয়ে দিয়েছি যে আর্জেন্ট বেসিসে রিপোর্ট চাই”। অর্জুন বাবু জ্বলন্ত সিগারেটে একটা টান দিয়ে বললেন “বাকিদের ডেকে পাঠাও তো। একটা গেম প্ল্যান ঠিক করে নেওয়া দরকার। ব্যাপার ভীষণ গুরুতর। “
আরিফ সাহেব তক্ষুনি চেয়ার ছেড়ে উঠে বাইরে বেরিয়ে গেলেন। মিনিট ৩ এর মধ্যে আবার ফিরে এলেন। এবার আর উনি একা নন। ওনার সাথে আছেন, মিসেস রাহা। ইনি সেই সাইকোলজিস্ট যিনি আমাকে পরীক্ষা করেছিলেন। আর আছেন ইনস্পেকটর মণ্ডল। ইনি যে একজন উচ্চপদস্থ অফিসার সেটা ওনাকে দেখেই বুঝেছিলাম। এখন অবশ্য বেরা সাহেবের সামনে একটু চুপসে রয়েছেন। রবিন দাস। ইনিও ক্রাইম ব্র্যাঞ্চের গোয়েন্দা। বিনয় দত্ত। আরেকজন দুঁদে গোয়েন্দা। আর আছেন এই থানার বড় দারোগা। ধ্রুব লাহিড়ী। আরও দুয়েকজন গোয়েন্দা একে একে প্রবেশ করলেন লাহিড়ী বাবুর পেছন পেছন। সবাই আসন গ্রহণ করার সাথে সাথে কোনও রকম ভনিতা না করে মিস্টার বেরা সোজা কাজের কথায় চলে এলেন। “আপনারা জানেন আমাকে কেন এখানে পাঠানো হয়েছে?”
লাহিড়ী একটু আমতা আমতা করে বললেন “ আন্দাজ করতে পারি। শান্তনু মুখার্জি আর রঞ্জন মুখার্জির খুনের ব্যাপারে কি?” মিস্টার বেরা একটু বিরক্তি দেখিয়ে বললেন “ নো মাই ডিয়ার। নট অ্যাট অল। রঞ্জন মুখার্জি মিনিস্টার হতে পারেন আর সেই নিয়ে এত মাতামাতি করার মতন সময় তোমাদের থাকতে পারে, কিন্তু আমার নেই। আর হু ইজ দিস শান্তনু মুখার্জি? ওর নাম তো দুদিন আগে কেউ জানতই না। “ লাহিড়ী বাবু হেসেবললেন “তাহলে নিশ্চই রাজেন মেহেরার ব্যাপারটা! রাইট?” মিস্টার বেরা বললেন “ইয়েস। এইবার পথে এসেছ। আমাকে এখানে আনা হয়েছে রাজেন মেহেরার কেসটা হ্যান্ডেল করতে। ব্যাপারটা যেমন সিরিয়স তেমনই গোপনীয়। (একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন) কিন্তু এখন তো মনে হচ্ছে এই সব কটা জিনিস একই সুত্রে গাঁথা। আমি পুরো ব্যাপারটা গুছিয়ে আপনাদের বলব। কিন্তু তার আগে কয়েকটা প্রশ্ন করতে হবে। “
উনি মিসেস রাহার দিকে তাকিয়ে বললেন “ আপনি ছেলেটাকে কিছু জিজ্ঞেস করলেন না কেন? হাই হ্যালো করেই ছেড়ে দিলেন?” মিসেস রাহার উত্তর তৈরি ছিল। উনি বললেন “স্যার প্রশ্ন করে কোনও লাভ হত না। আমি প্রায় এক দশক ধরে ক্রিমিন্যাল সাইকোলজি প্র্যাকটিস করছি। এই চোখের চাহুনি আমার চেনা।” মিস্টার বেরা জিজ্ঞেস করলেন “একটু ক্লারিফাই করে বলুন।” একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে মিসেস রাহা বললেন “বাঘা ক্রিমিনালের চোখ। ইনোসেন্ট, কিন্তু ভেতরে অনেক কিছু লুকিয়ে আছে। কিছু মনে করবেন না স্যার একটা কথা তখন বলব বলব করেও আপনাকে বলা হয়নি।” মিস্টার বেরা বললেন “সেটা কি?” মিসেস রাহা বললেন “ ঘরে যারা ছিল সবার ওপর চোখ বুলিয়েই আমি বুঝতে পেরেছি যে সবাই টেন্সড হয়ে আছে। কিন্তু এই ছেলেটার মধ্যে টেনশনের কোনও লেশ মাত্র নেই। শান্ত মুখে বসে আছে। স্থির শান্ত চোখ। ওর চোখের কোনায় কৌতুকের ঝিলিক। দিস ইস ভেরি অ্যাবনর্মাল। ইন ফ্যাক্ট ওর মুখ দেখে মনে হতে বাধ্য যে ও যেন গোটা জিনিসটা এনজয় করছে। ওর চোখ আর বডি ল্যানগোয়েজ দেখে আমার মনে হয়েছে ও আগে থেকেই জানত যে এরকম একটা সিচুয়েশন আসবে। তৈরি হয়েই এসেছে এই সিচুয়েশন ফেস করার জন্য। আর সেই কারনেই ওকে প্রশ্ন করে কোনও লাভ হত না। টলাতে পারতাম না ওকে। আমার ভুল হতে পারে কিন্তু আমি মোটামুটি জানতাম যে ওকে লাই ডিটেক্টর টেস্ট করে টলাতে পারবেন না। “
মিস্টার বেরা বললেন “ হুম, কোথায় আর টলাতে পারলাম?” মিসেস রাহা বললেন “স্যার লাই ডিটেক্টর টেস্টে আপনি তাদের টলাতে পারবেন যারা মিথ্যা বলার সময় কিছুটা হলেও নার্ভাস হয়ে যায়। তখন মেশিন ওদের পালস, প্রেসার, স্কিন কনডাকটিভিটি ইত্যাদি দেখে বুঝতে পারে যে সামথিং ইস নট রাইট। কিন্তু এরকম ধীর স্থির ছেলেকে আপনি টলাবেন কি করে? “ বেরা বললেন “আপনি ঠিকই বলেছেন। নার্ভের ওপর অসাধারন কন্ট্রোল ছেলেটার। আমার ইনফ্যাক্ট অন্য আরেকটা জিনিস স্ট্রেঞ্জ লেগেছে। আজ অব্দি কমবার তো এই টেস্ট করলাম না। এই সব সিচুয়েশনে সত্যি কথা বলার সময়ও সবার মধ্যে একটা হালকা চাঞ্চল্য লক্ষ্য করা যায়। অ্যান্ড মেশিন সেটা ক্যাচ করতে পারে। কিন্তু এই সংকেতের ক্ষেত্রে সব কটা উত্তর একদম ১০০% ট্রু বলে শো করেছে। অর্থাৎ একটাও উত্তর দেওয়ার সময় এক মুহূর্তের জন্য হলেও ওর শরীরে বা মনে কোথাও কোনও রকম চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়নি। এটা রিয়েলি অবিশ্বাস্য। “ মিসেস রাহা বললেন “সেই জন্যই আমি আপনাকে বলব ভাবছিলাম যে এই ছেলেকে লাই ডিটেক্টর মেশিনের সামনে বসিয়ে কোনও লাভ নেই। হি নোস হোয়াট হি ইস ডুইয়িং। অ্যান্ড হি ইস ওয়েল প্রিপেয়ার্ড ফর দ্যাট।” মিস্টার বেরা বললেন “ হুমম। বেশী ভালোমানুষি কখনই ভালো নয়। ১০০% ট্রু ফর অল দা আনসারস ইস ইভেন ওয়ার্স। আর আপনার কথা যদি মেনে নেওয়া হয় তো বলতে হবে যে ছেলে আমাদের নিয়ে খেলা করার জন্য রেডি হয়েই এসেছিল। “
মিস্টার মণ্ডল বললেন “ তাহলে স্যার এখন কি করণীয়? ছেলেটা তো নিজে যেচেই…” মিস্টার বেরা বললেন “ জানি মণ্ডল জানি। ছেলেটা ইচ্ছে করেই স্পার্ম ম্যাচ করে দেখতে বলল। ও জানে আমরা কোনও ম্যাচ পাব না। অর্থাৎ, ছেলেটাকে কড়া নজরে রাখতে হবে। আচ্ছা এইবার কাজের কথায় আসা যাক। তার আগে লাহিড়ী, তুমি রঞ্জন মুখার্জি, শান্তনু মুখার্জি, দীপক, শিখা এদের সবার ফাইল গুলো নিয়ে এসো। কথা বলতে সুবিধা হবে।” কথা মতন কাজ হল। ফাইল এলো। সেই সাথে সবার জন্য চা কফি ইত্যাদি নিয়ে আসা হল। কোর্টের ভেতর থেকে একটা কালো রঙের ডাইরি বের করে মিস্টার বেরা প্রথম ফাইলটা খুললেন। একে একে সব কটা ফাইলের ওপর উনি চোখ বুলিয়ে কিছু জিনিস নিজের ডাইরিতে নোট করে নিলেন। সব শেষে খুললেন রাজেন মেহেরার এফ আই আর এর ফাইলটা। সেটাও খুব ভালো ভাবে খুঁটিয়ে দেখলেন উনি। তারপর নড়ে চড়ে বসে বললেন “ রাজেন মেহেরা এখানে যা বলেছেন, ব্যাপারটা তার থেকেও অনেক বেশী সিরিয়স। গোপনীয়তার কারণে আপনাদের সব কিছু বলতে পারেন নি উনি। এইবার আমি সেই কথাগুলোই আপনাদের বলব। “
“একটা কথা মনে রাখবেন এই ব্যাপার যেন বাইরে কোথাও লিক না হয়। দেশের সিকিউরিটির ব্যাপার এটা। “ একজন উঠে গিয়ে ঘরের দরজাটা বন্ধ করে দিলেন। একটু গলা খাঁকড়িয়ে মিস্টার বেরা শুরু করলেন। “ আমি সব বলছি তার আগে আরেকটা সামান্য প্রশ্ন আছে। শান্তনু মুখার্জির ফাইলে দেখলাম দীপক বয়ান দিয়েছে যে একটা কালো রঙের স্যান্ট্রো দুর্ঘটনার সময় ওদের গাড়ির থেকে কিছুটা দূরে দাঁড়িয়ে ছিল। পরে আপনারা খোঁজ করে দেখেছেন যে সেই গাড়ির নাম্বার ভুয়ো। এই ব্যাপারে কোনও রকম প্রগ্রেস হয়েছে? “ লাহিড়ী বললেন “না স্যার। সেই গাড়ির কোনও খোঁজ আমরা পাইনি।”
মিস্টার বেরা বললেন “সেই গাড়ির খোঁজ পেতে হবে। যাই হোক। রাজেন মেহেরা আপনাদের এখানে পর পর দুটো এফ আই আর করেছেন। প্রথমটাতে উনি বলেছেন যে ওনার রুম কি মিসিং। অর্থাৎ যেটা ওনার কাছে ছিল। পরে অবশ্য অদ্ভুত ভাবে একজন রুম বয় সেটাকে হোটেলের করিডরে আবিস্কার করেছে। আর সেকন্ড এফ আই আরে উনি বলেছেন যে ওনার কিছু ফাইল আর টাকা পয়সা মিসিং হয়ে গেছে। রাইট? যেটা উনি আপনাদের বলেননি সেটা হল, যে ফাইল গুলো মিসিং হয়েছে তার মধ্যে একটা ফাইল হল একটা অয়েপন রিলেটেড ফাইল। বলাই বাহুল্য দেশের ডিফেন্স বিভাগের ফাইল সেটা। সেই ফাইলে একটা স্পেশ্যাল ডিভাইসের ব্যাপারে ডিটেলিং করা ছিল। ডিসাইন, ইনটিগ্রেসন-টেকনিক, ফরমুলা ইত্যাদি সব কিছু লেখা ছিল সেই ফাইলে। এক কথায় আমার হাতে সেই ফাইল পড়লে আমি সেই ফাইল পড়ে ওরকম ডিভাইস বানিয়ে ফেলতে পারি। সঠিক না জানলেও এটুকু বুঝতে পেরেছি যে ডিভাইসটা খুবই মারাত্মক। ভুল লোকের হাতে পড়লে সবার ঘোর বিপদ। দ্বিতীয় যে ফাইলটা মিসিং হয়েছে সেটাও এই একই ডিভাইস রিলেটেড ফাইল। আচ্ছা এখানে একটা কথা বলে রাখি। যে জিনিসটার ব্যাপারে আমরা কথা বলছি সেই ভয়ানক জিনিসটা আমরা এখনও তৈরি করতে পারিনি কারণ সেই জিনিসটা তৈরি করার জন্য যে সব পার্টস লাগে তার মধ্যে একটা পার্টের ডিসাইন এখনও আমরা তৈরি করে উঠতে পারিনি। আমরা বলতে আমাদের দেশের বৈজ্ঞানিকদের কথা বলছি। আর সেই পার্টটা নিয়েই রিসার্চ করছিলেন আমাদের লেট রঞ্জন মুখার্জি। সেন্ট্রাল গভর্নমেন্ট থেকে ওনাকে ব্যাক করা হচ্ছিল এই গবেষণার ব্যাপারে। মিস্টার মুখার্জির কাজ শেষ হয়ে গিয়েছিল। রাজেন মেহেরার বয়ান অনুযায়ী দ্বিতীয় মিসিং ফাইলটাতে ছিল সেই মিসিং ক্রুসিয়াল পার্টের ডিসাইন। প্রথম ফাইলের অনেক গুলো কপি আমাদের ডিফেন্সের কাছে আছে। কিন্তু এই পার্টের ডিসাইনের কপি ছিল মাত্র দুটো। প্রথমটা লেট মিস্টার মুখার্জি হস্তান্তরিত করেছিলেন মিস্টার মেহেরাকে। আর আরেকটা কপি আছে ওনার বাড়িতে। গোপন সেফে। ঠিক হয়েছিল যে টেস্টিং ফেস শেষ হওয়ার পর সিকিউরিটির কারণে উনি সেই সেকন্ড ফাইলটা হয় নষ্ট করে দেবেন বা সরকারের হাতে তুলে দেবেন। মিস্টার মুখার্জির সাথে ডিফেন্সের এই নিয়ে পাকা কথা শুরুতেই হয়ে গিয়েছিল। সুতরাং মোটের ওপর এই দাঁড়াচ্ছে যে এই দুটো ফাইল এক লোকের হাতে পড়লে আমাদের ঘোর বিপদ হতে পারে। শুধু একটা ফাইল পেলে তেমন কিছু হয়ত করতে পারবে না, কিন্তু দুটো ফাইল এক সাথে পেলে…” উনি থামলেন।
“এইবার কয়েকটা কথা পয়েন্ট অয়াইস বলছি। খুব মন দিয়ে সবাই শুনুন।”
১। আমরা জানি অন্তত একজন লোক আছে যার হাতে এখন এই দুটো ফাইলই আছে। কে সেই লোক? যে ফাইলগুলো চুরি করেছে।
২। ফাইলগুলো সে নিজের কাজে ব্যবহার করবে না অন্য কাউকে বেঁচে দেবে সেটা আমাদের জানতে হবে।
৩। সে কি অলরেডি কারোর কাছ থেকে নিযুক্ত হয়েই এই ফাইল চুরি করতে এসেছিল? সেটা আমাদের জানতে হবে। সেক্ষেত্রে এই দুটো ফাইল সেই নিয়োগকর্তার হাতে চলে যাবে কিছু দিনের মধ্যেই। হতে পারে ইতিমধ্যে সেই ফাইল হস্তান্তরিত হয়ে গেছে। যাই হোক আমাদের একটা চেষ্টা দেখতেই হবে।
৪। এই ব্যাপারে একটা স্ট্রেঞ্জ কো ইন্সিডেন্স আছে। মিস্টার মেহেরা থাকতেন রুম নাম্বার ১০৯। ওনার বডি গার্ডরা থাকত রুম-১১০ এ। হোটেলের নাম ব্লু রিসোর্ট। সেই একই হোটেলের ১০৭ নম্বর ঘরে থাকত আমাদের সকলের প্রিয় সংকেত রায়।
৫। আমার ঘর থেকে আজ যে ফাইলগুলো চুরি গেছে সেই ফাইলগুলোও ডিফেন্স সংক্রান্ত। ডিফেন্সে একবার একটা জিনিস কেনা বেচার ব্যাপারে কিছু ফ্রড হয়েছিল। আমি তখন সেই কেসে কাজ করেছিলাম। ফাইলগুলোতে বেশ কিছু ন্যাশনাল অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল অয়েপন ডিলারদের নাম ধাম ঠিকানা ইত্যাদি আছে। এদের প্রত্যেকে যে বেআইনি ভাবে নিজেদের ব্যবসা চালাচ্ছে সেটা বলাই বাহুল্য।
৬। রঞ্জন বাবুর বাড়িতে গিয়ে ইম্মিডিয়েটলি আমাদের সেকন্ড ফাইলটা সিকিওর করতে হবে। আর সেটাও যদি ইতি মধ্যে কেউ সরিয়ে দিয়ে থাকে তো বিপদ আরও ভয়ানক। কারণ একজনের হাতে পুরো ডিসাইনটা চলে গেছে বা যাবে, আর আমাদের দেশের হাতে কিছুই নেই। শুধু প্রথম ফাইলের ডিসাইন থেকে সম্পূর্ণ জিনিসটা বানানো অসম্ভব।
৭। রঞ্জন বাবুকে খুন করা হল কেন সেটা বুঝতে হবে। অর্থাৎ, এই খুনটা কি রাজনৈতিক খুন নাকি আরও সিরিয়স কিছু সেটা এখনও আমরা বুঝতে পারিনি।
৮। কালো স্যান্ট্রোটার কি হল সেটা জানতে হবে। যেটা ওই দুর্ঘটনার স্থলে দুর্ঘটনা ঘটার মুহূর্তে কয়েক হাত দূরে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে তামাশা দেখছিল।
৯। আপাত ভাবে দুর্ঘটনার জন্য দীপক দায়ী। কিন্তু ভাবতে হবে দীপক কেন এই কাজটা করতে গেল। কার ইশারায় ও এই কাজটা করেছে।
১০। শিখাকে খুন করার কারণ কি?
১১। দীপককে বন্দুকটা কে দিল? আর কখনই বা দিল? যাকে ধরা হয়েছে সে তো এখন অব্দি স্বীকার করেনি যে সেই দীপককে বন্ধুকটা চালান করেছিল।
১২। যে সময় শিখা খুন হয় সেই সময় সংকেত আমার ওয়াইফের সাথে মর্নিং ওয়াক করছিল। ফেসবুকে সেই ছবি পোষ্ট করা হয়েছে। তাহলে কেন ওই দুই মহিলা বললেন যে ওনারা সংকেতকেই এই খুনের জন্য দায়ী করছেন। সংকেতের অ্যালিবাই পাকা। কিন্তু ওই দুই মহিলার বয়ান অনুযায়ী সেই দ্বিতীয় সংকেত আগের দিন রাত থেকে পরের দিন সকাল ৮ টা অব্দি ওই বাড়িতে ছিল।
১৩। মহিলাদের বয়ান অনুযায়ী সংকেত বা দ্বিতীয় সংকেত ১২ তারিখ অনেক রাত অব্দি শিখার ঘরে ছিল। অ্যান্ড দে হ্যাড সেক্স। অথচ সংকেত তখন মিস্টার মুখার্জির বাড়িতে। উফফ টু মাচ অফ অ্যালিবাই।
১৪। যদি ধরে নি সংকেত কোনও ভাবে শিখার মৃত্যুর ব্যাপারে জড়িত, তাহলেও কয়েকটা জিনিস এখনও মাথায় ঢুকছে না।
ক। সংকেত রঞ্জন বাবুর মৃত্যুর ব্যাপারে আদৌ জড়িত কিনা।
খ। ওর চুরির ব্যাপারে কোনও রকম হাত আছে কিনা।
গ। আমাকে আজ যে মেরেছে তার মুখ আমি দেখতে পাইনি। কিন্তু আগেই বলেছি যে সেও একই পারফিউম
ইউস করে যেটা সংকেত করে। হতে পারে কোয়িন্সিডেন্স। কিন্তু সংকেত তখন ক্লাসে বসে আছে সবার
সাথে। তাহলে এই দ্বিতীয় ব্যক্তিটা কে?
ঘ। এই প্রশ্নটা খুব ভাইটাল। সংকেত কি সত্যিই নির্দোষ?
১৫। এই সব কটা খুন, দুর্ঘটনা , চুরি কি একই সুত্রে গাঁথা?
উনি একটা সিগারেট ধরিয়ে বললেন “আপাতত এই অব্দিই থাক। আরও অনেক ব্যাপার আছে। সেই গুলো ধাপে ধাপে বলব। এখন একটা গেম প্ল্যান তৈরি করা যাক।”
৩৭
উনি বলে চললেন “কয়েকটা জিনিস আমাদের আজ কালের মধ্যেই শেষ করে ফেলতে হবে। প্লীজ নোট করে নিন। আরিফ পুরো টিমটাকে লিড করবেন। মিসেস রাহাকে আপাতত আমাদের দরকার পড়ছে না। কিন্তু পরে দরকার পড়লে আবার ওনাকে ডাকা যাবে খন। “ মিসেস রাহা ঘর ছেড়ে বেরিয়ে গেলেন। মিস্টার বেরা আবার শুরু করলেন। “ আরিফ প্লীজ নোট নিয়ে নাও। আর কাকে কোন কাজ দেওয়া হচ্ছে সেটা তুমি ঠিক করবে।
১। সংকেতের ওপর ২৪ ঘণ্টা নজর রাখতে হবে।
২। হোটেল ব্লু রিসোর্টের ম্যানেজার কে ফোন করে এখানে ডাক। আর এখনই ডাক। আমি এখনই ওর সাথে কথা বলতে চাই।
৩। সংকেতের বাড়ির লোকজনের ব্যাপারে খবর নাও। দরকার হলে ইউপি তে লোক পাঠাও।
৪। সংকেত এখানে আসার পর থেকে ওর মোবাইলে কার কার সাথে কথা বলেছে বা কাকে কাকে মেসেজ করেছে সব জানতে চাই।
৫। সংকেত কবে কখন কোথায় ছিল ওর মোবাইলের লোকেশন থেকে বের করে আমাকে জানাবে।
৬। এক্ষুনি একজনকে মিসেস মুখার্জির বাড়িতে পাঠিয়ে সেই ফাইলটাকে সিকিওর করতে হবে।
৭। শিখার আর দীপকের ব্যাপারে যতটা ইনফরমেশন কালেক্ট করতে পারো করে ফেলো।
৮। এই শহরে কালো রঙের স্যান্ট্রো কার কার আছে সবার নাম আর ব্যাকগ্রাউন্ড আমার চাই কালকের মধ্যে।
উনি একটু থেমে বললেন “এই তথ্যগুলো হাতে আসুক আগে। তারপর নেক্সট স্টেপ ওঠানো যাবে। খেয়াল রেখো হোটেলের ম্যানেজারের সাথে এখনই আমি দেখা করতে চাই। আর ওই ফাইলটা এখনই আমাদের সিকিওর করতে হবে। ও হ্যাঁ একটা কথা বলা হয়নি। অবশ্য আমার মনে হয় সবাই অলরেডি এটা জানে। সেটা হল মিস্টার রাজেন মেহেরার পরিচয়। উনি একজন সাইন্টিস্ট,আর অনেক দিন ধরে ডিফেন্সের সাথে কাজ করে চলেছেন। বাই দা অয়ে সব দিক থেকে ওনার রেকর্ড কিন্তু ভীষণ ভালো। “
কাজ শুরু হল। সবাই ঘর ছেড়ে বেরিয়ে যাওয়ার আগে মিস্টার বেরা বললেন “একটা জিনিস, সবাই একটু চোখ কান খোলা রেখো। আমরা সংকেতের ব্যাপারে টু মাচ ইনভেস্টিগেট করতে বাধ্য হচ্ছি কারণ ওই মহিলাদের বয়ান আর হোটেলের রুম। খেয়াল রেখো সংকেত ছাড়া অন্য কেউ এই গোটা ব্যাপারটার মধ্যে থাকতে পারে। সেই সম্ভাবনা কিন্তু উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। ডিফেন্স রিলেটেড চুরির সাথে ও আদৌ ইনভলভড কিনা সেই ব্যাপারে আমি শিওর নই। নাউ মুভ অন।”
আমার পিছনে লাগার জন্য একজন দারোগাকে তৎক্ষণাৎ নিয়োগ করা হল। সে প্লেন ড্রেসে জোঁকের মতন সারাক্ষন আমার পেছনে পেছনে ঘুরবে। আমার কল রেকর্ডস, মোবাইল লোকেশন সব বের করার বন্দবস্ত করা হল। একজন ছুটে চলল দোলনের বাড়ির উদ্দেশ্যে। আর হোটেলের ম্যানেজার রওনা দিল থানার উদ্দেশ্য। তার হাতে মোটা মোটা দুটো রেজিস্টার কপি। আর বেশ কয়েকটা সিডি। এইগুলো গোটা হোটেলের সিসিটিভি ফুটেজের সিডি। একজনকে ঠিক করা হল যে পরের দিন খুব ভোরে ইউপি র উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেবে।
হোটেলের ম্যানেজার থানায় ঢোকা মাত্র ওনাকে মিস্টার বেরার সামনে নিয়ে গিয়ে হাজির করা হল। ঘরের ভেতরে শুধু রইলেন মিস্টার বেরা, ম্যানেজার আর আরিফ সাহেব। দরজা বন্ধ করে দেওয়া হল। আরিফ জিজ্ঞেস করলেন “যা যা আনতে বলা হয়েছিল নিয়ে এসেছেন?” মিস্টার বেরা হোটেলের রেজিস্টারের রেকর্ডের ওপর চোখ বোলাতে শুরু করলেন। এক ফাঁকে কালো রঙের ডাইরিটা বের করে সেটাকে খুলে টেবিলে রেখে দিলেন। কিছুক্ষণ কারোর মুখে কোনও কথা নেই। মিস্টার বেরা অলস ভাবে একের পর এক রেজিস্টারের পাতা উল্টে চলেছেন। হঠাৎ একটা রেকর্ড দেখেই উনি সোজা হয়ে বসলেন।
“আরিফ কাম হিয়ার। “ আরিফ আর ম্যানেজার দুজনেই ঝুঁকে পড়লেন রেজিস্টারের ওপর। মিস্টার বেরা বললেন “সংকেত রায়ের চেক আউটের ডেটটা দেখো আর সেই সাথে সময়টাও দেখো। “ আরিফ ম্যানেজারের দিকে তাকিয়ে বললেন “ ভোর ৩.৩০ এ সংকেত রায় চেকআউট করেছেন? আর ৫.৩০ মিনিটে হোটেল থেকে বেরিয়ে গেলেন? এত ভোরে হঠাৎ করে চেক আউট করার কারণ?” ম্যানেজার বললেন “সেটা তো বলতে পারব না স্যার। তবে ওনার আরও বেশ কয়েকদিনের বুকিং করা ছিল। আগে ভাগে চলে যাওয়ার জন্য কিছুটা ফাইন ও দিতে হয়েছে। “ মিস্টার বেরা বললেন “আরিফ সংকেত যেদিন ভোরে চেক আউট করেছে, ঠিক সেই দিনই রাজেন মেহেরা মিসিং ফাইলের ব্যাপারে কমপ্লেন করেছেন। আগের দিন রাতে কোনও একটা সময় ওনার ঘর থেকে জিনিসগুলো সরানো হয়েছিল। এইবার তো ব্যাপারটা ভীষণ গোলমেলে ঠেকছে।”
ম্যানেজার একটু আমতা আমতা করে বললেন “একটা কথা বলব স্যার যদি কিছু মনে না করেন? “ মিস্টার বেরা একটা সিগারেট ধরাতে ধরাতে ম্যানেজারের দিকে তাকিয়ে বললেন “যা বলার বলে ফেলুন।” উনি মুখটা কাচুমাচু করে বললেন “স্যার সংকেত ছেলেটা সুবিধার ছিল না। “ আরিফ জিজ্ঞেস করলেন “এমন কথা আপনার মনে হওয়ার কারণ?” ম্যানেজার সেই সিকিউরিটি পেটানোর ব্যাপারটা সবিস্তারে বলে চললেন। প্রায় মিনিট পনের পর মিস্টার বেরা বললেন “এক সেকন্ড। অনেক কিছু শুনলাম। সেদিনকার ফুটেজ গুলো এনেছেন?” ম্যানেজার মাথা ঝাঁকিয়ে সিডির কভারটা খুলে কয়েকটা সিডি মিস্টার বেরার হাতে হস্তান্তরিত করলেন।
একটা সিডি দেখিয়ে বললেন “এইটা দেখুন। পুরো ঝামেলাটা দেখতে পাবেন।” মিস্টার বেরা নিজের ল্যাপটপ অন করলেন। সিডি চালানো হল। কিছুটা এগিয়ে যাওয়ার পর ম্যানেজার বললেন “এইখান থেকে দেখুন।” তিন জনে একটানা কিছুক্ষণ মনিটরের দিকে তাকিয়ে থাকার পর ভিডিওটাকে পস করে মিস্টার বেরা বললেন “আপনি বলছেন যে সংকেত রায় আপনাদের বলেছিলেন যে উনি সিকিউরিটির গায়ে হাত তোলেননি। কিন্তু আপনাদের সিকিউরিটির বয়ান অনুযায়ী সংকেত ইস দা কালপ্রিট। কেমন?” উনি মাথা নাড়িয়ে বললেন “স্যার যে ছেলে কয়েক সেকন্ডের মধ্যে ওই সিকিউরিটির এই হাল করতে পারে…” মিস্টার বেরা একটু বিরক্ত হয়ে বললেন “মশাই অবান্তর কথা বলা একটু বন্ধ করুন এইবার। কাজের কথা হল হোটেলের গ্রাউন্ড ফ্লোরে এই যে ঝামেলাটা দেখলাম তাতে দেখতে পাচ্ছি মিস্টার মেহেরা আর মিস্টার রায় সামনা সামনি দাঁড়িয়ে আছেন। ওনাদের মধ্যে কি কথা হল সেটা একটু গুছিয়ে বলবেন?”
ম্যানেজার আবার শুরু করলেন তার উপাখ্যান। ম্যানেজারের উপাখ্যান শেষ হওয়ার পর মিস্টার বেরা জিজ্ঞেস করলেন “ফার্স্ট ফ্লোরের ভিডিও ফুটেজটা চেক করে সংকেত কে পেনালাইজ করলেন না কেন? ওর নামে এফ আই আর করলেন না কেন?” এইবার ম্যানেজার একটু গলা নামিয়ে বললেন “স্যার এখানে একটা গল্প আছে।“ উনি আরও গলা নামিয়ে বললেন “ওই মেহেরা বলে যে ভদ্রলোক এসেছেন উনি আসার পর থেকে ফার্স্ট ফ্লোরের সিসিটিভি ফুটেজ বন্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়া আছে। “ এইবার মিস্টার বেরা যে খুবই আশ্চর্য হয়েছেন সেটা বেশ বোঝা যাচ্ছে। “এমনটা করার কারণ? আর কেই বা এই নির্দেশ দিয়েছিল?” ম্যানেজার বললেন “স্যার উপর মহল থেকে নির্দেশ এসেছিল। বলা হয়েছিল ওনার ঘরে কে আসছে বা কে থাকছে কিছুই যেন রেকর্ড না করা হয়। ইভেন হোটেলের স্টাফরাও যাতে সেই ব্যাপারে কোনও কিছু ট্র্যাক না করতে পারে। “
এইবার রেজাল্ট এলে সব কিছু জানা যাবে। আমি বললাম “ শহর ছেড়ে যাওয়ার অনুমতি নেই। কিন্তু শহরের ভেতরে অন্য কোথাও?” উনি বললেন “আই অ্যাম সরি সংকেত। তোমাকে এতটা হ্যাপা পোহাতে হচ্ছে। কিন্তু আমি তোমাকে বারবার মানা করেছিলাম। (একটু থেমে বললেন) তুমি এই শহরে যেখানে খুশি ঘুরতে পারো। কোনও সমস্যা নেই। কোথায় থাকবে কি করবে সেটা সম্পূর্ণ তোমার ব্যক্তিগত ব্যাপার। যেমন চলছে সবকিছু তেমনই চলবে। (আবার একটু থেমে কি একটা ভেবে বললেন) আমার কেন জানি মনে হচ্ছে গোটা ব্যাপারটা অনেক বেশী ঘোড়েল, জিনিসটা যতটা সিম্পল ভেবেছিলাম ততটা নয়।” বললাম “বেশ।” ওরা আরেক রাউন্ড ফিসিকাল টেস্ট করে বলল মেডিক্যালি সব ঠিক আছে এখন। অতএব থানা থেকে আমার ছুটি হয়ে গেল। সবাই আমার জন্য বাইরে দাঁড়িয়ে ছিল। এখনও ওদের মাথায় ঢুকছে না লাই ডিটেকটর টেস্টে পাশ করা সত্ত্বেও এই টেস্ট করার কি মানে থাকতে পারে।
আমি বেরিয়ে এসে দেখলাম দোলন, বেলা আনটি, সুধা আনটি সবাই এসে থানার ক্যাম্পাসের ভিতরেই দাঁড়িয়ে আছেন। আমাকে থানার দরজায় ছেড়ে দিয়ে অর্জুন স্যার ভেতরে ঢুকে গেলেন। সবাইকে বলে দিলেন যে এইবার আপনারা আসুন। এরপর থেকে দরকার পড়লে ওনারাই যোগাযোগ করে নেবেন। সবাই যে যার মতন ফিরে গেল। ও হ্যাঁ একটা কথা বলতে ভুলে গেছি। থানার বাইরে বেরিয়ে দেখলাম আমার সেই উকিল বাবু এখনও ক্যাম্পাসের বাইরে অপেক্ষা করছেন। আমাকে সবার সাথে অক্ষত অবস্থায় বেরিয়ে আসতে দেখে ধীরে ধীরে উনিও কেটে পড়লেন। আমি সঞ্চিতা ম্যাডামের সাথে গাড়ি করে বাড়ি ফিরে চললাম। পথে আমাদের মধ্যে তেমন কোনও কথা হল না। সঞ্চিতা ম্যাডাম শুধু আমাকে জানিয়ে দিলেন আজ এত ধকলের পর আর টিউশানি করতে হবে না। সেটা শুরু হবে আগামীকাল থেকে। আমি ওনাকে একবার বলার চেষ্টা করলাম যে আমি একদম বিন্দাস আছি। উনি আমার কথায় তেমন আমল না দিয়ে বললেন “আমি অলরেডি ওদের জানিয়ে দিয়েছি। “
৩৬
গল্পের এই অংশে আমি নিজে অনুপস্থিত। কিন্তু যা যা ঘটেছে সেগুলোকে যতটা সম্ভব নিখুঁত ভাবে তুলে ধরার চেষ্টা করছি। এখানে দুটো প্রশ্ন সবার মনে আসতে পারে।
১। এই অংশে কেন আমি নেই?
উত্তরঃ পরের অংশটা পড়লে সবাই সেটা বুঝে যাবেন।
২। আমি নিজে অনুপস্থিত থেকেও কি করে ঘটনার নিখুঁত বিবরণ দিতে পারব?
উত্তরঃ সেটা বলার সময় আসবে পরে। এখনও দিস ইস টু আর্লি। এইবার শুরু করা যাক।
আমাদের রেহাই দিয়ে অর্জুন বেরা আবার গিয়ে ঢুকলেন নিজের ঘরে। এটা অবশ্য ওনার নিজের ঘর নয়। বরং বলা যেতে পারে যে এই কয়েক দিনের জন্য এই ঘরটা আর এই থানাটা হল গিয়ে ওনার বেস অফ অপারেশন। আরেকটা লম্বা সিগারেট জ্বালিয়ে সিলিঙের দিকে তাকিয়ে চুপ করে বসে রইলেন কিছুক্ষণ। ধীরে ধীরে ওনার চোখ বুজে এলো। কি এত ভাবছেন সেটা উনিই জানেন। হুঁশ ফিরল একজনের গলার আওয়াজ পেয়ে। “ওহ আরিফ! ল্যাবের কাজ মিটে গেছে?” আরিফ খান হল স্পেশাল ব্র্যাঞ্চের অফিসার। আরিফ খান অর্জুন বেরার অনেক দিনের সঙ্গী। একটা চেয়ার টেনে নিয়ে আরিফ খান আসন গ্রহণ করে বললেন “ইয়েস। একজন কে দিয়ে স্পেসিমেন পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। জানিয়ে দিয়েছি যে আর্জেন্ট বেসিসে রিপোর্ট চাই”। অর্জুন বাবু জ্বলন্ত সিগারেটে একটা টান দিয়ে বললেন “বাকিদের ডেকে পাঠাও তো। একটা গেম প্ল্যান ঠিক করে নেওয়া দরকার। ব্যাপার ভীষণ গুরুতর। “
আরিফ সাহেব তক্ষুনি চেয়ার ছেড়ে উঠে বাইরে বেরিয়ে গেলেন। মিনিট ৩ এর মধ্যে আবার ফিরে এলেন। এবার আর উনি একা নন। ওনার সাথে আছেন, মিসেস রাহা। ইনি সেই সাইকোলজিস্ট যিনি আমাকে পরীক্ষা করেছিলেন। আর আছেন ইনস্পেকটর মণ্ডল। ইনি যে একজন উচ্চপদস্থ অফিসার সেটা ওনাকে দেখেই বুঝেছিলাম। এখন অবশ্য বেরা সাহেবের সামনে একটু চুপসে রয়েছেন। রবিন দাস। ইনিও ক্রাইম ব্র্যাঞ্চের গোয়েন্দা। বিনয় দত্ত। আরেকজন দুঁদে গোয়েন্দা। আর আছেন এই থানার বড় দারোগা। ধ্রুব লাহিড়ী। আরও দুয়েকজন গোয়েন্দা একে একে প্রবেশ করলেন লাহিড়ী বাবুর পেছন পেছন। সবাই আসন গ্রহণ করার সাথে সাথে কোনও রকম ভনিতা না করে মিস্টার বেরা সোজা কাজের কথায় চলে এলেন। “আপনারা জানেন আমাকে কেন এখানে পাঠানো হয়েছে?”
লাহিড়ী একটু আমতা আমতা করে বললেন “ আন্দাজ করতে পারি। শান্তনু মুখার্জি আর রঞ্জন মুখার্জির খুনের ব্যাপারে কি?” মিস্টার বেরা একটু বিরক্তি দেখিয়ে বললেন “ নো মাই ডিয়ার। নট অ্যাট অল। রঞ্জন মুখার্জি মিনিস্টার হতে পারেন আর সেই নিয়ে এত মাতামাতি করার মতন সময় তোমাদের থাকতে পারে, কিন্তু আমার নেই। আর হু ইজ দিস শান্তনু মুখার্জি? ওর নাম তো দুদিন আগে কেউ জানতই না। “ লাহিড়ী বাবু হেসেবললেন “তাহলে নিশ্চই রাজেন মেহেরার ব্যাপারটা! রাইট?” মিস্টার বেরা বললেন “ইয়েস। এইবার পথে এসেছ। আমাকে এখানে আনা হয়েছে রাজেন মেহেরার কেসটা হ্যান্ডেল করতে। ব্যাপারটা যেমন সিরিয়স তেমনই গোপনীয়। (একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন) কিন্তু এখন তো মনে হচ্ছে এই সব কটা জিনিস একই সুত্রে গাঁথা। আমি পুরো ব্যাপারটা গুছিয়ে আপনাদের বলব। কিন্তু তার আগে কয়েকটা প্রশ্ন করতে হবে। “
উনি মিসেস রাহার দিকে তাকিয়ে বললেন “ আপনি ছেলেটাকে কিছু জিজ্ঞেস করলেন না কেন? হাই হ্যালো করেই ছেড়ে দিলেন?” মিসেস রাহার উত্তর তৈরি ছিল। উনি বললেন “স্যার প্রশ্ন করে কোনও লাভ হত না। আমি প্রায় এক দশক ধরে ক্রিমিন্যাল সাইকোলজি প্র্যাকটিস করছি। এই চোখের চাহুনি আমার চেনা।” মিস্টার বেরা জিজ্ঞেস করলেন “একটু ক্লারিফাই করে বলুন।” একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে মিসেস রাহা বললেন “বাঘা ক্রিমিনালের চোখ। ইনোসেন্ট, কিন্তু ভেতরে অনেক কিছু লুকিয়ে আছে। কিছু মনে করবেন না স্যার একটা কথা তখন বলব বলব করেও আপনাকে বলা হয়নি।” মিস্টার বেরা বললেন “সেটা কি?” মিসেস রাহা বললেন “ ঘরে যারা ছিল সবার ওপর চোখ বুলিয়েই আমি বুঝতে পেরেছি যে সবাই টেন্সড হয়ে আছে। কিন্তু এই ছেলেটার মধ্যে টেনশনের কোনও লেশ মাত্র নেই। শান্ত মুখে বসে আছে। স্থির শান্ত চোখ। ওর চোখের কোনায় কৌতুকের ঝিলিক। দিস ইস ভেরি অ্যাবনর্মাল। ইন ফ্যাক্ট ওর মুখ দেখে মনে হতে বাধ্য যে ও যেন গোটা জিনিসটা এনজয় করছে। ওর চোখ আর বডি ল্যানগোয়েজ দেখে আমার মনে হয়েছে ও আগে থেকেই জানত যে এরকম একটা সিচুয়েশন আসবে। তৈরি হয়েই এসেছে এই সিচুয়েশন ফেস করার জন্য। আর সেই কারনেই ওকে প্রশ্ন করে কোনও লাভ হত না। টলাতে পারতাম না ওকে। আমার ভুল হতে পারে কিন্তু আমি মোটামুটি জানতাম যে ওকে লাই ডিটেক্টর টেস্ট করে টলাতে পারবেন না। “
মিস্টার বেরা বললেন “ হুম, কোথায় আর টলাতে পারলাম?” মিসেস রাহা বললেন “স্যার লাই ডিটেক্টর টেস্টে আপনি তাদের টলাতে পারবেন যারা মিথ্যা বলার সময় কিছুটা হলেও নার্ভাস হয়ে যায়। তখন মেশিন ওদের পালস, প্রেসার, স্কিন কনডাকটিভিটি ইত্যাদি দেখে বুঝতে পারে যে সামথিং ইস নট রাইট। কিন্তু এরকম ধীর স্থির ছেলেকে আপনি টলাবেন কি করে? “ বেরা বললেন “আপনি ঠিকই বলেছেন। নার্ভের ওপর অসাধারন কন্ট্রোল ছেলেটার। আমার ইনফ্যাক্ট অন্য আরেকটা জিনিস স্ট্রেঞ্জ লেগেছে। আজ অব্দি কমবার তো এই টেস্ট করলাম না। এই সব সিচুয়েশনে সত্যি কথা বলার সময়ও সবার মধ্যে একটা হালকা চাঞ্চল্য লক্ষ্য করা যায়। অ্যান্ড মেশিন সেটা ক্যাচ করতে পারে। কিন্তু এই সংকেতের ক্ষেত্রে সব কটা উত্তর একদম ১০০% ট্রু বলে শো করেছে। অর্থাৎ একটাও উত্তর দেওয়ার সময় এক মুহূর্তের জন্য হলেও ওর শরীরে বা মনে কোথাও কোনও রকম চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়নি। এটা রিয়েলি অবিশ্বাস্য। “ মিসেস রাহা বললেন “সেই জন্যই আমি আপনাকে বলব ভাবছিলাম যে এই ছেলেকে লাই ডিটেক্টর মেশিনের সামনে বসিয়ে কোনও লাভ নেই। হি নোস হোয়াট হি ইস ডুইয়িং। অ্যান্ড হি ইস ওয়েল প্রিপেয়ার্ড ফর দ্যাট।” মিস্টার বেরা বললেন “ হুমম। বেশী ভালোমানুষি কখনই ভালো নয়। ১০০% ট্রু ফর অল দা আনসারস ইস ইভেন ওয়ার্স। আর আপনার কথা যদি মেনে নেওয়া হয় তো বলতে হবে যে ছেলে আমাদের নিয়ে খেলা করার জন্য রেডি হয়েই এসেছিল। “
মিস্টার মণ্ডল বললেন “ তাহলে স্যার এখন কি করণীয়? ছেলেটা তো নিজে যেচেই…” মিস্টার বেরা বললেন “ জানি মণ্ডল জানি। ছেলেটা ইচ্ছে করেই স্পার্ম ম্যাচ করে দেখতে বলল। ও জানে আমরা কোনও ম্যাচ পাব না। অর্থাৎ, ছেলেটাকে কড়া নজরে রাখতে হবে। আচ্ছা এইবার কাজের কথায় আসা যাক। তার আগে লাহিড়ী, তুমি রঞ্জন মুখার্জি, শান্তনু মুখার্জি, দীপক, শিখা এদের সবার ফাইল গুলো নিয়ে এসো। কথা বলতে সুবিধা হবে।” কথা মতন কাজ হল। ফাইল এলো। সেই সাথে সবার জন্য চা কফি ইত্যাদি নিয়ে আসা হল। কোর্টের ভেতর থেকে একটা কালো রঙের ডাইরি বের করে মিস্টার বেরা প্রথম ফাইলটা খুললেন। একে একে সব কটা ফাইলের ওপর উনি চোখ বুলিয়ে কিছু জিনিস নিজের ডাইরিতে নোট করে নিলেন। সব শেষে খুললেন রাজেন মেহেরার এফ আই আর এর ফাইলটা। সেটাও খুব ভালো ভাবে খুঁটিয়ে দেখলেন উনি। তারপর নড়ে চড়ে বসে বললেন “ রাজেন মেহেরা এখানে যা বলেছেন, ব্যাপারটা তার থেকেও অনেক বেশী সিরিয়স। গোপনীয়তার কারণে আপনাদের সব কিছু বলতে পারেন নি উনি। এইবার আমি সেই কথাগুলোই আপনাদের বলব। “
“একটা কথা মনে রাখবেন এই ব্যাপার যেন বাইরে কোথাও লিক না হয়। দেশের সিকিউরিটির ব্যাপার এটা। “ একজন উঠে গিয়ে ঘরের দরজাটা বন্ধ করে দিলেন। একটু গলা খাঁকড়িয়ে মিস্টার বেরা শুরু করলেন। “ আমি সব বলছি তার আগে আরেকটা সামান্য প্রশ্ন আছে। শান্তনু মুখার্জির ফাইলে দেখলাম দীপক বয়ান দিয়েছে যে একটা কালো রঙের স্যান্ট্রো দুর্ঘটনার সময় ওদের গাড়ির থেকে কিছুটা দূরে দাঁড়িয়ে ছিল। পরে আপনারা খোঁজ করে দেখেছেন যে সেই গাড়ির নাম্বার ভুয়ো। এই ব্যাপারে কোনও রকম প্রগ্রেস হয়েছে? “ লাহিড়ী বললেন “না স্যার। সেই গাড়ির কোনও খোঁজ আমরা পাইনি।”
মিস্টার বেরা বললেন “সেই গাড়ির খোঁজ পেতে হবে। যাই হোক। রাজেন মেহেরা আপনাদের এখানে পর পর দুটো এফ আই আর করেছেন। প্রথমটাতে উনি বলেছেন যে ওনার রুম কি মিসিং। অর্থাৎ যেটা ওনার কাছে ছিল। পরে অবশ্য অদ্ভুত ভাবে একজন রুম বয় সেটাকে হোটেলের করিডরে আবিস্কার করেছে। আর সেকন্ড এফ আই আরে উনি বলেছেন যে ওনার কিছু ফাইল আর টাকা পয়সা মিসিং হয়ে গেছে। রাইট? যেটা উনি আপনাদের বলেননি সেটা হল, যে ফাইল গুলো মিসিং হয়েছে তার মধ্যে একটা ফাইল হল একটা অয়েপন রিলেটেড ফাইল। বলাই বাহুল্য দেশের ডিফেন্স বিভাগের ফাইল সেটা। সেই ফাইলে একটা স্পেশ্যাল ডিভাইসের ব্যাপারে ডিটেলিং করা ছিল। ডিসাইন, ইনটিগ্রেসন-টেকনিক, ফরমুলা ইত্যাদি সব কিছু লেখা ছিল সেই ফাইলে। এক কথায় আমার হাতে সেই ফাইল পড়লে আমি সেই ফাইল পড়ে ওরকম ডিভাইস বানিয়ে ফেলতে পারি। সঠিক না জানলেও এটুকু বুঝতে পেরেছি যে ডিভাইসটা খুবই মারাত্মক। ভুল লোকের হাতে পড়লে সবার ঘোর বিপদ। দ্বিতীয় যে ফাইলটা মিসিং হয়েছে সেটাও এই একই ডিভাইস রিলেটেড ফাইল। আচ্ছা এখানে একটা কথা বলে রাখি। যে জিনিসটার ব্যাপারে আমরা কথা বলছি সেই ভয়ানক জিনিসটা আমরা এখনও তৈরি করতে পারিনি কারণ সেই জিনিসটা তৈরি করার জন্য যে সব পার্টস লাগে তার মধ্যে একটা পার্টের ডিসাইন এখনও আমরা তৈরি করে উঠতে পারিনি। আমরা বলতে আমাদের দেশের বৈজ্ঞানিকদের কথা বলছি। আর সেই পার্টটা নিয়েই রিসার্চ করছিলেন আমাদের লেট রঞ্জন মুখার্জি। সেন্ট্রাল গভর্নমেন্ট থেকে ওনাকে ব্যাক করা হচ্ছিল এই গবেষণার ব্যাপারে। মিস্টার মুখার্জির কাজ শেষ হয়ে গিয়েছিল। রাজেন মেহেরার বয়ান অনুযায়ী দ্বিতীয় মিসিং ফাইলটাতে ছিল সেই মিসিং ক্রুসিয়াল পার্টের ডিসাইন। প্রথম ফাইলের অনেক গুলো কপি আমাদের ডিফেন্সের কাছে আছে। কিন্তু এই পার্টের ডিসাইনের কপি ছিল মাত্র দুটো। প্রথমটা লেট মিস্টার মুখার্জি হস্তান্তরিত করেছিলেন মিস্টার মেহেরাকে। আর আরেকটা কপি আছে ওনার বাড়িতে। গোপন সেফে। ঠিক হয়েছিল যে টেস্টিং ফেস শেষ হওয়ার পর সিকিউরিটির কারণে উনি সেই সেকন্ড ফাইলটা হয় নষ্ট করে দেবেন বা সরকারের হাতে তুলে দেবেন। মিস্টার মুখার্জির সাথে ডিফেন্সের এই নিয়ে পাকা কথা শুরুতেই হয়ে গিয়েছিল। সুতরাং মোটের ওপর এই দাঁড়াচ্ছে যে এই দুটো ফাইল এক লোকের হাতে পড়লে আমাদের ঘোর বিপদ হতে পারে। শুধু একটা ফাইল পেলে তেমন কিছু হয়ত করতে পারবে না, কিন্তু দুটো ফাইল এক সাথে পেলে…” উনি থামলেন।
“এইবার কয়েকটা কথা পয়েন্ট অয়াইস বলছি। খুব মন দিয়ে সবাই শুনুন।”
১। আমরা জানি অন্তত একজন লোক আছে যার হাতে এখন এই দুটো ফাইলই আছে। কে সেই লোক? যে ফাইলগুলো চুরি করেছে।
২। ফাইলগুলো সে নিজের কাজে ব্যবহার করবে না অন্য কাউকে বেঁচে দেবে সেটা আমাদের জানতে হবে।
৩। সে কি অলরেডি কারোর কাছ থেকে নিযুক্ত হয়েই এই ফাইল চুরি করতে এসেছিল? সেটা আমাদের জানতে হবে। সেক্ষেত্রে এই দুটো ফাইল সেই নিয়োগকর্তার হাতে চলে যাবে কিছু দিনের মধ্যেই। হতে পারে ইতিমধ্যে সেই ফাইল হস্তান্তরিত হয়ে গেছে। যাই হোক আমাদের একটা চেষ্টা দেখতেই হবে।
৪। এই ব্যাপারে একটা স্ট্রেঞ্জ কো ইন্সিডেন্স আছে। মিস্টার মেহেরা থাকতেন রুম নাম্বার ১০৯। ওনার বডি গার্ডরা থাকত রুম-১১০ এ। হোটেলের নাম ব্লু রিসোর্ট। সেই একই হোটেলের ১০৭ নম্বর ঘরে থাকত আমাদের সকলের প্রিয় সংকেত রায়।
৫। আমার ঘর থেকে আজ যে ফাইলগুলো চুরি গেছে সেই ফাইলগুলোও ডিফেন্স সংক্রান্ত। ডিফেন্সে একবার একটা জিনিস কেনা বেচার ব্যাপারে কিছু ফ্রড হয়েছিল। আমি তখন সেই কেসে কাজ করেছিলাম। ফাইলগুলোতে বেশ কিছু ন্যাশনাল অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল অয়েপন ডিলারদের নাম ধাম ঠিকানা ইত্যাদি আছে। এদের প্রত্যেকে যে বেআইনি ভাবে নিজেদের ব্যবসা চালাচ্ছে সেটা বলাই বাহুল্য।
৬। রঞ্জন বাবুর বাড়িতে গিয়ে ইম্মিডিয়েটলি আমাদের সেকন্ড ফাইলটা সিকিওর করতে হবে। আর সেটাও যদি ইতি মধ্যে কেউ সরিয়ে দিয়ে থাকে তো বিপদ আরও ভয়ানক। কারণ একজনের হাতে পুরো ডিসাইনটা চলে গেছে বা যাবে, আর আমাদের দেশের হাতে কিছুই নেই। শুধু প্রথম ফাইলের ডিসাইন থেকে সম্পূর্ণ জিনিসটা বানানো অসম্ভব।
৭। রঞ্জন বাবুকে খুন করা হল কেন সেটা বুঝতে হবে। অর্থাৎ, এই খুনটা কি রাজনৈতিক খুন নাকি আরও সিরিয়স কিছু সেটা এখনও আমরা বুঝতে পারিনি।
৮। কালো স্যান্ট্রোটার কি হল সেটা জানতে হবে। যেটা ওই দুর্ঘটনার স্থলে দুর্ঘটনা ঘটার মুহূর্তে কয়েক হাত দূরে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে তামাশা দেখছিল।
৯। আপাত ভাবে দুর্ঘটনার জন্য দীপক দায়ী। কিন্তু ভাবতে হবে দীপক কেন এই কাজটা করতে গেল। কার ইশারায় ও এই কাজটা করেছে।
১০। শিখাকে খুন করার কারণ কি?
১১। দীপককে বন্দুকটা কে দিল? আর কখনই বা দিল? যাকে ধরা হয়েছে সে তো এখন অব্দি স্বীকার করেনি যে সেই দীপককে বন্ধুকটা চালান করেছিল।
১২। যে সময় শিখা খুন হয় সেই সময় সংকেত আমার ওয়াইফের সাথে মর্নিং ওয়াক করছিল। ফেসবুকে সেই ছবি পোষ্ট করা হয়েছে। তাহলে কেন ওই দুই মহিলা বললেন যে ওনারা সংকেতকেই এই খুনের জন্য দায়ী করছেন। সংকেতের অ্যালিবাই পাকা। কিন্তু ওই দুই মহিলার বয়ান অনুযায়ী সেই দ্বিতীয় সংকেত আগের দিন রাত থেকে পরের দিন সকাল ৮ টা অব্দি ওই বাড়িতে ছিল।
১৩। মহিলাদের বয়ান অনুযায়ী সংকেত বা দ্বিতীয় সংকেত ১২ তারিখ অনেক রাত অব্দি শিখার ঘরে ছিল। অ্যান্ড দে হ্যাড সেক্স। অথচ সংকেত তখন মিস্টার মুখার্জির বাড়িতে। উফফ টু মাচ অফ অ্যালিবাই।
১৪। যদি ধরে নি সংকেত কোনও ভাবে শিখার মৃত্যুর ব্যাপারে জড়িত, তাহলেও কয়েকটা জিনিস এখনও মাথায় ঢুকছে না।
ক। সংকেত রঞ্জন বাবুর মৃত্যুর ব্যাপারে আদৌ জড়িত কিনা।
খ। ওর চুরির ব্যাপারে কোনও রকম হাত আছে কিনা।
গ। আমাকে আজ যে মেরেছে তার মুখ আমি দেখতে পাইনি। কিন্তু আগেই বলেছি যে সেও একই পারফিউম
ইউস করে যেটা সংকেত করে। হতে পারে কোয়িন্সিডেন্স। কিন্তু সংকেত তখন ক্লাসে বসে আছে সবার
সাথে। তাহলে এই দ্বিতীয় ব্যক্তিটা কে?
ঘ। এই প্রশ্নটা খুব ভাইটাল। সংকেত কি সত্যিই নির্দোষ?
১৫। এই সব কটা খুন, দুর্ঘটনা , চুরি কি একই সুত্রে গাঁথা?
উনি একটা সিগারেট ধরিয়ে বললেন “আপাতত এই অব্দিই থাক। আরও অনেক ব্যাপার আছে। সেই গুলো ধাপে ধাপে বলব। এখন একটা গেম প্ল্যান তৈরি করা যাক।”
৩৭
উনি বলে চললেন “কয়েকটা জিনিস আমাদের আজ কালের মধ্যেই শেষ করে ফেলতে হবে। প্লীজ নোট করে নিন। আরিফ পুরো টিমটাকে লিড করবেন। মিসেস রাহাকে আপাতত আমাদের দরকার পড়ছে না। কিন্তু পরে দরকার পড়লে আবার ওনাকে ডাকা যাবে খন। “ মিসেস রাহা ঘর ছেড়ে বেরিয়ে গেলেন। মিস্টার বেরা আবার শুরু করলেন। “ আরিফ প্লীজ নোট নিয়ে নাও। আর কাকে কোন কাজ দেওয়া হচ্ছে সেটা তুমি ঠিক করবে।
১। সংকেতের ওপর ২৪ ঘণ্টা নজর রাখতে হবে।
২। হোটেল ব্লু রিসোর্টের ম্যানেজার কে ফোন করে এখানে ডাক। আর এখনই ডাক। আমি এখনই ওর সাথে কথা বলতে চাই।
৩। সংকেতের বাড়ির লোকজনের ব্যাপারে খবর নাও। দরকার হলে ইউপি তে লোক পাঠাও।
৪। সংকেত এখানে আসার পর থেকে ওর মোবাইলে কার কার সাথে কথা বলেছে বা কাকে কাকে মেসেজ করেছে সব জানতে চাই।
৫। সংকেত কবে কখন কোথায় ছিল ওর মোবাইলের লোকেশন থেকে বের করে আমাকে জানাবে।
৬। এক্ষুনি একজনকে মিসেস মুখার্জির বাড়িতে পাঠিয়ে সেই ফাইলটাকে সিকিওর করতে হবে।
৭। শিখার আর দীপকের ব্যাপারে যতটা ইনফরমেশন কালেক্ট করতে পারো করে ফেলো।
৮। এই শহরে কালো রঙের স্যান্ট্রো কার কার আছে সবার নাম আর ব্যাকগ্রাউন্ড আমার চাই কালকের মধ্যে।
উনি একটু থেমে বললেন “এই তথ্যগুলো হাতে আসুক আগে। তারপর নেক্সট স্টেপ ওঠানো যাবে। খেয়াল রেখো হোটেলের ম্যানেজারের সাথে এখনই আমি দেখা করতে চাই। আর ওই ফাইলটা এখনই আমাদের সিকিওর করতে হবে। ও হ্যাঁ একটা কথা বলা হয়নি। অবশ্য আমার মনে হয় সবাই অলরেডি এটা জানে। সেটা হল মিস্টার রাজেন মেহেরার পরিচয়। উনি একজন সাইন্টিস্ট,আর অনেক দিন ধরে ডিফেন্সের সাথে কাজ করে চলেছেন। বাই দা অয়ে সব দিক থেকে ওনার রেকর্ড কিন্তু ভীষণ ভালো। “
কাজ শুরু হল। সবাই ঘর ছেড়ে বেরিয়ে যাওয়ার আগে মিস্টার বেরা বললেন “একটা জিনিস, সবাই একটু চোখ কান খোলা রেখো। আমরা সংকেতের ব্যাপারে টু মাচ ইনভেস্টিগেট করতে বাধ্য হচ্ছি কারণ ওই মহিলাদের বয়ান আর হোটেলের রুম। খেয়াল রেখো সংকেত ছাড়া অন্য কেউ এই গোটা ব্যাপারটার মধ্যে থাকতে পারে। সেই সম্ভাবনা কিন্তু উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। ডিফেন্স রিলেটেড চুরির সাথে ও আদৌ ইনভলভড কিনা সেই ব্যাপারে আমি শিওর নই। নাউ মুভ অন।”
আমার পিছনে লাগার জন্য একজন দারোগাকে তৎক্ষণাৎ নিয়োগ করা হল। সে প্লেন ড্রেসে জোঁকের মতন সারাক্ষন আমার পেছনে পেছনে ঘুরবে। আমার কল রেকর্ডস, মোবাইল লোকেশন সব বের করার বন্দবস্ত করা হল। একজন ছুটে চলল দোলনের বাড়ির উদ্দেশ্যে। আর হোটেলের ম্যানেজার রওনা দিল থানার উদ্দেশ্য। তার হাতে মোটা মোটা দুটো রেজিস্টার কপি। আর বেশ কয়েকটা সিডি। এইগুলো গোটা হোটেলের সিসিটিভি ফুটেজের সিডি। একজনকে ঠিক করা হল যে পরের দিন খুব ভোরে ইউপি র উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেবে।
হোটেলের ম্যানেজার থানায় ঢোকা মাত্র ওনাকে মিস্টার বেরার সামনে নিয়ে গিয়ে হাজির করা হল। ঘরের ভেতরে শুধু রইলেন মিস্টার বেরা, ম্যানেজার আর আরিফ সাহেব। দরজা বন্ধ করে দেওয়া হল। আরিফ জিজ্ঞেস করলেন “যা যা আনতে বলা হয়েছিল নিয়ে এসেছেন?” মিস্টার বেরা হোটেলের রেজিস্টারের রেকর্ডের ওপর চোখ বোলাতে শুরু করলেন। এক ফাঁকে কালো রঙের ডাইরিটা বের করে সেটাকে খুলে টেবিলে রেখে দিলেন। কিছুক্ষণ কারোর মুখে কোনও কথা নেই। মিস্টার বেরা অলস ভাবে একের পর এক রেজিস্টারের পাতা উল্টে চলেছেন। হঠাৎ একটা রেকর্ড দেখেই উনি সোজা হয়ে বসলেন।
“আরিফ কাম হিয়ার। “ আরিফ আর ম্যানেজার দুজনেই ঝুঁকে পড়লেন রেজিস্টারের ওপর। মিস্টার বেরা বললেন “সংকেত রায়ের চেক আউটের ডেটটা দেখো আর সেই সাথে সময়টাও দেখো। “ আরিফ ম্যানেজারের দিকে তাকিয়ে বললেন “ ভোর ৩.৩০ এ সংকেত রায় চেকআউট করেছেন? আর ৫.৩০ মিনিটে হোটেল থেকে বেরিয়ে গেলেন? এত ভোরে হঠাৎ করে চেক আউট করার কারণ?” ম্যানেজার বললেন “সেটা তো বলতে পারব না স্যার। তবে ওনার আরও বেশ কয়েকদিনের বুকিং করা ছিল। আগে ভাগে চলে যাওয়ার জন্য কিছুটা ফাইন ও দিতে হয়েছে। “ মিস্টার বেরা বললেন “আরিফ সংকেত যেদিন ভোরে চেক আউট করেছে, ঠিক সেই দিনই রাজেন মেহেরা মিসিং ফাইলের ব্যাপারে কমপ্লেন করেছেন। আগের দিন রাতে কোনও একটা সময় ওনার ঘর থেকে জিনিসগুলো সরানো হয়েছিল। এইবার তো ব্যাপারটা ভীষণ গোলমেলে ঠেকছে।”
ম্যানেজার একটু আমতা আমতা করে বললেন “একটা কথা বলব স্যার যদি কিছু মনে না করেন? “ মিস্টার বেরা একটা সিগারেট ধরাতে ধরাতে ম্যানেজারের দিকে তাকিয়ে বললেন “যা বলার বলে ফেলুন।” উনি মুখটা কাচুমাচু করে বললেন “স্যার সংকেত ছেলেটা সুবিধার ছিল না। “ আরিফ জিজ্ঞেস করলেন “এমন কথা আপনার মনে হওয়ার কারণ?” ম্যানেজার সেই সিকিউরিটি পেটানোর ব্যাপারটা সবিস্তারে বলে চললেন। প্রায় মিনিট পনের পর মিস্টার বেরা বললেন “এক সেকন্ড। অনেক কিছু শুনলাম। সেদিনকার ফুটেজ গুলো এনেছেন?” ম্যানেজার মাথা ঝাঁকিয়ে সিডির কভারটা খুলে কয়েকটা সিডি মিস্টার বেরার হাতে হস্তান্তরিত করলেন।
একটা সিডি দেখিয়ে বললেন “এইটা দেখুন। পুরো ঝামেলাটা দেখতে পাবেন।” মিস্টার বেরা নিজের ল্যাপটপ অন করলেন। সিডি চালানো হল। কিছুটা এগিয়ে যাওয়ার পর ম্যানেজার বললেন “এইখান থেকে দেখুন।” তিন জনে একটানা কিছুক্ষণ মনিটরের দিকে তাকিয়ে থাকার পর ভিডিওটাকে পস করে মিস্টার বেরা বললেন “আপনি বলছেন যে সংকেত রায় আপনাদের বলেছিলেন যে উনি সিকিউরিটির গায়ে হাত তোলেননি। কিন্তু আপনাদের সিকিউরিটির বয়ান অনুযায়ী সংকেত ইস দা কালপ্রিট। কেমন?” উনি মাথা নাড়িয়ে বললেন “স্যার যে ছেলে কয়েক সেকন্ডের মধ্যে ওই সিকিউরিটির এই হাল করতে পারে…” মিস্টার বেরা একটু বিরক্ত হয়ে বললেন “মশাই অবান্তর কথা বলা একটু বন্ধ করুন এইবার। কাজের কথা হল হোটেলের গ্রাউন্ড ফ্লোরে এই যে ঝামেলাটা দেখলাম তাতে দেখতে পাচ্ছি মিস্টার মেহেরা আর মিস্টার রায় সামনা সামনি দাঁড়িয়ে আছেন। ওনাদের মধ্যে কি কথা হল সেটা একটু গুছিয়ে বলবেন?”
ম্যানেজার আবার শুরু করলেন তার উপাখ্যান। ম্যানেজারের উপাখ্যান শেষ হওয়ার পর মিস্টার বেরা জিজ্ঞেস করলেন “ফার্স্ট ফ্লোরের ভিডিও ফুটেজটা চেক করে সংকেত কে পেনালাইজ করলেন না কেন? ওর নামে এফ আই আর করলেন না কেন?” এইবার ম্যানেজার একটু গলা নামিয়ে বললেন “স্যার এখানে একটা গল্প আছে।“ উনি আরও গলা নামিয়ে বললেন “ওই মেহেরা বলে যে ভদ্রলোক এসেছেন উনি আসার পর থেকে ফার্স্ট ফ্লোরের সিসিটিভি ফুটেজ বন্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়া আছে। “ এইবার মিস্টার বেরা যে খুবই আশ্চর্য হয়েছেন সেটা বেশ বোঝা যাচ্ছে। “এমনটা করার কারণ? আর কেই বা এই নির্দেশ দিয়েছিল?” ম্যানেজার বললেন “স্যার উপর মহল থেকে নির্দেশ এসেছিল। বলা হয়েছিল ওনার ঘরে কে আসছে বা কে থাকছে কিছুই যেন রেকর্ড না করা হয়। ইভেন হোটেলের স্টাফরাও যাতে সেই ব্যাপারে কোনও কিছু ট্র্যাক না করতে পারে। “