Thread Rating:
  • 34 Vote(s) - 3.35 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
Thriller মুখোশ - The Mask by Daily Passenger
#47
মেয়েটা দোলনের থেকে অনেক কম সেক্সি, মানে ফিগারের দিক থেকে। ইতি মধ্যে দোলন ক্লাসের অর্ধেকের বেশী ছেলের হার্ট থ্রব হয়ে গেছে। রাকা রোগাটে বলে ওকে কেউ খুব একটা পাত্তা দেয় না। আর তাছাড়া ভীষণ ডাঁটিয়াল মেয়ে হিসাবে পরিচিত। কিন্তু আমি জানি মেয়েটা কত সুইট। ওর স্তনের আর পাছার সাইজ কম বলে ওর ফিগার ছেলেদের তেমন পছন্দ নয়। তাছাড়া ওর বাবা অবিনাশ সান্যাল। কিন্তু এই মেয়েটা যে কতটা প্র্যাক্টিকাল আর ডাউন টু আর্থ, সেটা ওর সাথে আলাপ হওয়ার আগে বোঝা অসম্ভব।
 
এর পরের মেসেজটা এলো সঞ্চিতা ম্যাডামের কাছ থেকে। ঘরের লোকে আগে খবর পায়। এটাই আমার সুবিধা। শোনো, নেক্সট ক্লাস হবে না। তুমি এখনই বেরিয়ে পুলিশ স্টেশন চলে এসো। পারলে সাথে রাকা কে নিয়ে এসো।আমি রিপ্লাই দিলাম ক্লাস হবে না কেন?” রিপ্লাই এলো রঞ্জিত বাবু (আমাদের স্যার, যিনি নেক্সট ক্লাস নেবেন) এখন আমার সাথে থানায় যাচ্ছেন। দেরী করবে না। বেরিয়ে পড়ো। ভীষণ একলা লাগছে। ভয় হচ্ছে। আমি মেসেজটা রাকাকে ফরোয়ার্ড করে দিলাম। রাকা রিপ্লাই দিল ম্যাডামের বাড়িতে শিফট করার পর এইটা একটা সুবিধা হয়েছে। সব খবর তুই আগে ভাগে পেয়ে যাবি। সবাইকে জানিয়ে দিয়ে বেরিয়ে পড়ি চল।
 
কিন্তু বেরোতে পারলাম না। তার আগেই প্রায় সাত আটজন পুলিশ এসে ক্লাসে ঢুকে পড়েছে। আমি অবশ্য সঞ্চিতা ম্যাডামের দেওয়া খবরটা এখনও কাউকে দিতে পারিনি। একজন অফিসার বললেন তোমরা সবাই থানায় চলো। একটু দরকার আছে। এমারজেন্সি হয়েছে। ভয় পেও না। তোমাদের নেক্সট ক্লাস হবে না। কাউকে গ্রেফতার করে নিয়ে যাচ্ছি না। শুধু তোমাদের থেকে একটু হেল্প চাই। তোমরা আধ ঘণ্টার ভেতর ওখানে থেকে বেরিয়ে নিজেদের বাড়ি ফিরে যেতে পারবে। আবারও বলছি শুধু তোমাদের সাহায্য চাই বলে তোমাদের আসতে বলছি। রাদার অনুরোধ করছি। প্লীজ হেল্প আস, কোঅপরেট উইথ আস। কাউকে কোনও রকম জোর করা হচ্ছে না বা লিগ্যাল ফাঁদে ফেলার চেষ্টা করা হচ্ছে না। কাউকে গ্রেফতার করা হচ্ছে না। শুধু সহযোগিতার প্রত্যাশায় আমরা রিকোয়েস্ট করছি।
 
সবাই এর ওর মুখের দিকে চাওয়া চাওয়ি করছি। হঠাৎ রাকা উঠে দাঁড়িয়ে বলল চলুন যাওয়া যাক। আমাদের ম্যামও কিছু একটা এমারজেন্সির কারণে একটু আগেই বেরিয়ে গেলেন। আশা করছি এই ব্যাপারের সাথে ওনার কোনও লিঙ্ক নেই।অফিসার হেসেবললেন মিস সান্যাল, আপনি বুদ্ধিমতী। লিঙ্ক আছে। আবার লিঙ্ক নেইও। রাকা বলল মানে?” উনি বললেন মানে উনি পরোক্ষ ভাবে লিঙ্কড। তবে ঠিক লিঙ্কড বলতে যা বোঝায় তেমন কিছু নয়। থানায় গেলেই সব বুঝতে পারবেন। কিন্তু আপনাদের সাহায্য খুবই দরকার। আর ব্যাপারটা সিরিয়স।আমরা সবাই উঠে পড়লাম। উনি বলে দিলেন তাড়াহুড়া নেই। নিজেরা নিজেদের মতন ধীরে সুস্থে চলে এসো।
 
রাকার গাড়ি থাকলে ও নিশ্চই আমাকে জোর করে ওর সাথে নিয়ে যেত। কিন্তু তেমনটা হল না। আমরা যে যার মতন অটো, বাস ইত্যাদি ধরে থানায় পৌছালাম। এটা সেই আগের থানা। পৌঁছে দেখলাম সবাই বাইরে ভিড় করে দাঁড়িয়ে আছে। থানার ঠিক সদর দরজার সামনে সঞ্চিতা ম্যাডাম আর আরও বেশ কয়েকজন প্রফেসর ভীষণ ব্যস্ত ভাবে পুলিশদের সাথে কথা বলে চলেছেন। প্রায় সব ব্যাচের ছেলে মেয়েরা এসে জমা হয়েছে থানার ক্যাম্পাসের ভেতর। একটাই স্বস্তির কারণ, বাইরে রিপোর্টার দেখা যাচ্ছে না এখনও। রাকা আমার জন্য মেইন গেটের বাইরে অপেক্ষা করছিল। ওর সাথে থানার ক্যাম্পাসের ভেতর প্রবেশ করতে করতে আরেকজনকে দেখতে পেলাম।
 
আমার সেই উকিল বাবু, যাকে গতকাল সকাল সকাল গিয়ে বেশ খানিকটা রগড়ে দিয়ে এসেছিলাম। উনি আমার কথা মতন থানার ক্যাম্পাসের ঠিক বাইরে দাঁড়িয়ে আছেন। ওনার গাড়ির নম্বর আমার জানা। বড় গাড়িটা ফুটপাতের ধারে পার্ক করা আছে। গাড়ির বাইরে আরও দুজন উকিল দাঁড়িয়ে আছে। বুঝলাম সাঙ্গপাঙ্গ নিয়ে পুরো রেডি হয়ে এসেছেন। ভেতরে ঢুকে গেলাম। তবে বেশী দূর এগোতে পারলাম না। এত ভিড়। আর এত গুঞ্জন। বাপরে বাপ। আর আজ থানার চেহারা একেবারে বদলে গেছে। প্রায় গোটা রাজ্যের পুলিশ এসে জড়ো হয়েছে থানায়। সবাই আর্মড। ভীষণ জরুরি কালীন অবস্থা এখন থানার ভেতর। দৌড়াদৌড়ি চলছে।
 
রাকা কে বললাম কি হয়েছে কিছু জানিস?” রাকা বলল জানি না। সেই কেসটা নিয়ে হয়ত জেরা করতে চায়। তবে সবাইকে ডেকে পাঠানোর কারণটা ঠিক বুঝতে পারছি না। ওর কথা শেষ হতে না হতে একটা বড় লাল বাতি ওয়ালা গাড়ি এসে গেটের সামনে থামল। সাথে সাথে থানার ভেতর থেকে বেশ কয়েকজন পুলিশ বাইরে বেরিয়ে এসে সবাইকে এদিক ওদিক সরিয়ে গাড়িটা যাতে ভেতরে ঢুকতে পারে তার বন্দবস্ত করে দিল। গাড়িটা একলা ঢুকল না। ওই গাড়িটার পিছনে আরও তিনটে গাড়ি এসে ঢুকল ক্যাম্পাসের ভেতর। একদল পুলিশ সাথে সাথে ঘিরে ফেলল গাড়ি গুলোকে।
 
এত কম জায়গায় এতগুলো ছেলে মেয়ে। রাকা পড়েই যাচ্ছিল, আমি ওকে জড়িয়ে ধরে নিজের দিকে নিয়ে এলাম। সব কটা গাড়ির ভেতর থেকে বেশ কয়েকজন অফিসার আবির্ভূত হলেন। পেছনের দুটো গাড়ি ব্যাক করে বেরিয়ে গেল। সবার গুঞ্জন থেমে গেছে। দ্বিতীয় গাড়িটা থেকে দুজন অফিসার ইতি মধ্যেই নেমে পড়েছেন। আরেকজন এখনও বাকি। কালো কাঁচের বাইরে থেকেই তার আবছা অবয়ব বুঝতে পারছি। থানার গেটের সামনে আরও কয়েকজন পুলিশ এসে জড়ো হয়েছে। কমান্ডো টাইপের পুলিশ এরা। কারোর হাতে চা আর কারোর হাতে সিগারেট, কারোর হাতে বা দুটোই আছে। ওদের দেখেও বুঝতে পারছি যে ওরাও ঠিক জানে না যে কে এসেছে।
 
অবশেষে দ্বিতীয় গাড়ির পিছনের দরজাটা আবার খুলল। কালো কোর্ট পরা একজন দীর্ঘকায় পুরুষ বের হলেন গাড়ির ভেতর থেকে। গাড়ির দরজা বন্ধ হল। দুটো গাড়িই ব্যাক করে ক্যাম্পাসের বাইরে বেরিয়ে গেল। উনি ধীরে ধীরে সবাইকে নিরীক্ষণ করা শুরু করেছেন। গেটের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা সেই কমান্ডো টাইপের অফিসারদের মধ্যে একজন মুখ খুললেন। শালা পাগলা এসেছে। এ বি। আবার কেউ মরবে।পাশের একজন বললেন এটা হতই। এত ঢিলে ঢালা করলে এমনটাই হবে। রেডি হয়ে যা। অনেক দৌড়াতে হবে এইবার। উনি এখনও আমাদের দিকে পিছন করে দাঁড়িয়ে আছেন। কিন্তু উনি আমাদের সবার উদ্দেশ্যে কিছু কথা বলছেন। এই গলা আমার চেনা।
 
৩৪
 
আমার নাম অর্জুন বেরা। সবাই আমাকে আমার পিছনে এ বি বলে ডাকে। আমি হেড অফ স্পেশ্যাল ব্র্যাঞ্চ, কলকাতা। আপনাদের সবার সহযোগিতা চাই। এইবার উনি আমার দিকে ঘুরলেন। গুড গড। সঞ্চিতা ম্যাডামের হাজবেন্ড। একটা জিনিস লক্ষ্য করার মতন। ওনাকে দেখেই সবাই কেমন জানি থ মেরে গেছে। দেখে মনে হল, সবাই ওনাকে দেখছে আর উনি সবাইকে মেপে চলেছেন। আরেকটা জিনিস এই বেলায় না বললেই নয়। ওনার মাথায় পুরু ব্যান্ডেজ বাঁধা। সামনেটা লাল হয়ে আছে। হাঁটা চলা দেখে মনে হল কেমন জানি একটু টেনে টেনে হাঁটছেন। মনে মনে না হেসেপারলাম না।
 
ওনার সাথে আমার চোখা চুখি হল। কয়েক মুহূর্তের জন্য দুজনের চোখের তারা একে ওপরের ওপর স্থির হয়ে গেল। ওনার চোখ সরে গেল আমার চোখের ওপর থেকে। পাশে দাঁড়িয়ে থাকা একজন অফিসার কে উনি বললেন এত লোক দিয়ে কি হবে? এখানে কি ভাষণ হবে নাকি?” এত লোকের মাঝে দাঁড়িয়ে আছেন। তবুও ওনার গলার আওয়াজে গোটা ক্যাম্পাসটা কাঁপছে। অফিসার কিছু একটা বললেন ফিসফিস করে। উনি বললেন কয়েকজনের নাম বলছি। বাকিদের কারোর এখানে থাকার কোনও কারণ নেই। পুলিশ বিভাগের পক্ষ থেকে আমি ক্ষমা চাইছি বিনা কারণে আপনাদের এখানে ডেকে নিয়ে আসার জন্য।পকেট থেকে একটা কাগজ বের করলেন। বুক পকেট থেকে একটা চশমা বের করলেন। তবে সেটা চোখে দেওয়ার আগেই হাঁক পারলেন সংকেত রায়।
 
আমি এগিয়ে গেলাম। উনি বললেন আপনার চোখ বড্ড বেশী কথা বলে মিস্টার রায়। সেই ভাষা ডিকোড করার সময় এসেছে। রাকা সান্যাল...।আরও প্রায় চল্লিশ জনের নাম পড়ে বাকি সবাইকে মুক্তি দিয়ে উনি গটগট করে ভেতরে ঢুকে গেলেন। ওনার পিছন পিছন আমরাও থানার ভেতর প্রবেশ করলাম। ম্যাডাম ভীষণ ব্যাকুল ভাবে ভেতরে বসেছিলেন। উনি ম্যাডামকে নিয়ে ভেতরে প্রবেশ করলেন। এটাই সেই ঘর যেখানে বসে আমি বেলা আনটির ছবি এঁকেছিলাম। ঘরের ভেতর তিল ধারনের জায়গা নেই। ম্যাম বললেন তোমার মাথায় কি হল? আর এরকম ভাবে হাঁটছ কেন?”
 
উনি একটা সিগারেট ধরিয়ে বড়বাবুর আসন গ্রহণ করলেন। আগের দিনের সেই দারোগা একপাশে দাঁড়িয়ে আছেন মুখ বন্ধ করে। একটানে প্রায় অর্ধেক সিগারেট শেষ করে দিয়ে উনি মুখ খুললেন। আপনাদের ক্লাসের ক্ষতি করার জন্য আমি সত্যি খুব দুঃখিত। কিন্তু বিশ্বাস করুন আমার হাতে আর অন্য কোনও রাস্তা ছিল না। মুখ্য সচিব, স্টেট মিনিস্ট্রি আর সব শেষে ইন্ডিয়ান ডিফেন্স মিনিস্ট্রির কাছ থেকে কল এসেছে। তাই এই নাজেহাল অবস্থা। ব্যাপারটা বাজে। কিন্তু খুব সিরিয়াস।
 
একটু থামলেন। ওনার সামনের চেয়ারে সঞ্চিতা ম্যাডাম বসে আছেন। উনি বললেন তোমার লাগল কি করে?” উনি বললেন সরকারের তলব পেয়ে অসময়ে ফিরতে হল। তখন তোমার ক্লাস চলবে তাই ডুপ্লিকেট চাবি দিয়ে ঘরে ঢুকলাম। ঢুকেই বুঝতে পারলাম যে ঘরে আরও কেউ রয়েছে। বাই দা ওয়ে একটা জিনিস সবাই কে জানিয়ে দেওয়া দরকার। সঞ্চিতা বেরা ইজ মাই ওয়াইফ। আর এই সংকেত রায় আমাদের বাড়িতে পেয়িং গেস্ট হিসাবে থাকেন। ও আপনাদের ম্যাডামের নিজের ভাইয়ের মতন। (গলা নামিয়ে নিয়ে বললেন) কিন্তু তাই বলে কেউ পার পাবে না।
 
যাই হোক, ঘরে ঢুকতে না ঢুকতেই আমার সিক্সথ সেন্স আমাকে বলল যে ভেতরে কেউ আছে। হতে পারে সঞ্চিতা ইউ। বা সংকেত। উপরে উঠতে উঠতে বুঝতে পারলাম যে শব্দ আসছে আমার কাজের ঘর থেকে। পা টিপে টিপে পাশের দুটো ঘর দেখে নিলাম। দুটো ঘরই খালি। মানে বেডরুম আর সংকেত যে ঘরে থাকে, দুটোই খালি। কাজের ঘরের দরজা বন্ধ। চাবি দিয়ে আনলক করলাম। ভেতরে ঢুকলাম। ২ সেকন্ডের মধ্যে সব কিছু ব্ল্যাংক।উনি থামলেন।
 
একজন অফিসার ব্যস্ত হয়ে বললেন স্যার তেমন হলে আপনি নিজে একা ঘরের ভেতর না ঢুকে আমাকে কল করে দিতেন। আমি তো পাশেই ছিলাম। দুজনে মিলে একসাথে না হয়... অর্জুন স্যার বললেন তাতে কোনও লাভ হত না মণ্ডল।ম্যাডাম বললেন তোমার এই অবস্থা করে ফেলল দুই সেকন্ডে?” উনি বললেন দুই সেকন্ডে ব্ল্যাংক হয়ে গেল। তারপর আমার অসার শরীরটা নিয়ে যা খুশি করেছে। ওই অফিসার বললেন স্যার, আপনি পাল্টা কিছু করতে পারলেন না? আপনি তো বুঝতেই পেরেছিলেন যে ভেতরে কেউ আছে। উনি হেসেবললেন সেই জন্যই তো বললাম, তুমি এসে আমার কোনও সাহায্য করতে পারতে না। ঘরে ঢোকার সাথে সাথে ঘাড়ের পেছেন এমন জায়গায় একটা বাড়ি খেলাম...সব কিছু ঝাপসা হয়ে গেল। অফিসার দাঁত ক্যালাতে ক্যালাতে এগিয়ে এসে বললেন স্যার কি যে বলেন! ঘাড়ের ওপর একটা মার খেয়ে আপনি আউট হয়ে গেলেন?”
 
উনি ভুরু কুঁচকে সেই অফিসারের দিকে তাকিয়ে বললেন পুরোটা আগে শোনো, তারপর বকবক করবে। বাড়িটা ঠিক এমন জায়গায় মেরেছে যেখানে মারলে যেকোনো মানুষ অসাড় হয়ে পড়বে। তারপরের মুহূর্তেই আমি বুঝতে পারলাম সে আমাকে দুই হাতে মাথার উপর তুলে ধরেছে। একটু পরে বুঝতে পারলাম যে ও আমাকে একটা পুতুলের মতন মাটিতে ছুঁড়ে ফেলে দিল, অ্যান্ড টেবিল টপকে ছুঁড়ে ফেলে দিল। টেবিলের উল্টো দিকে গিয়ে পড়লাম। শরীরে অসহ্য ব্যথা, তবুও নিস্তার দিল না। আবার আমাকে দুই হাতে মাটি থেকে তুলে ধরল। কিন্তু এইবার মেঝেতে ছুঁড়ে ফেলল না। আমার টেবিলের ওপর মুখ নিচু করে ফেলে দিল আমাকে। ভাবলাম সব কিছু শেষ হয়েছে। কিন্তু না। আমার শরীরটা তখন অসাড় হয়ে টেবিলের ওপর পড়ে আছে। ও আমার মাথাটা তুলে টেবিলের কাঁচের ওপর ঠুকে দিল। সব কাঁচ ভেঙ্গে আমার মাথাটা টেবিলের মাঝখানে গর্ত করে নিচের দিকে ঝুলে পড়েছে। সব বুঝতে পারছি। কিছু করতে পারছি না। এরপরও নিস্তার দিল না। গোটা টেবিলটা ভেঙ্গে গেল। খুব স্মভবত একটা লাথি মেরেছে। টেবিলের ওপর থেকে আমার অসাড় শরীরটা উঠিয়ে নিয়ে অবহেলা ভরে ঘরের এক কোনায় ছুঁড়ে ফেলে দিল। আমার চোখের সামনে আমার সারা ঘর সার্চ করে অনেকগুলো কাগজ পত্র নিয়ে বেরিয়ে গেল। দৃষ্টি তখন এমন ঝাপসা যে এতক্ষন ধরে আমার সামনে থাকা সত্ত্বেও আমি ওর মুখটা স্পষ্ট দেখতে পেলাম না।
 
আরেকটা সিগারেট ধরিয়ে বললেন মণ্ডল, মনে হচ্ছিল মহাভারতের ভগবান ভীমের সাথে যুদ্ধ হচ্ছে। আমার ওজন ৭৯ কেজি। কিন্তু ওর গায়ের জোরের সামনে আমি একটা পুতুল বই কিছুই না। ভীষণ ভারী হাত। আমাদের জাত ভাই। মানে এক কথায় প্রফেশনল। অ্যাসাসিন। শুধু তুমি কেন? ও আরও ১০ জনকে হয়ত মেরে ফেলে দিয়ে নিঃশব্দে বেরিয়ে যেত। ভারী হাত বুঝলে হে, ভীষণ ভারী হাত। আমার এই লাশের মতন শরীরটা ওর সামনে একটা পুতুল বই কিছুই না। যাই হোক। কাজের কথায় ফেরা যাক এইবার।
 
সরাসরি আমার মুখের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলেন তুমি যে পারফিউম ইউস করো ওর গা থেকে আমি সেই একই পারফিউমের গন্ধ পেয়েছি। তাই জিজ্ঞেস করছি, ১ টা বেজে ১৭ মিনিটে তুমি কোথায় ছিলে?” আমি সহজ গলায় বললাম ক্লাসে। সবার সাথে বসেছিলাম। স্যার ও এই ব্যাপারে বলতে পারবেন। তখন ক্লাস চলছিল। উনি ভুরু কুঁচকে কিছু একটা ভাবলেন। এরপর আবার মুখ খুললেন শিখা বলে ওই যে মেয়েটা মারা গেছে তার পোস্টমর্টেম রিপোর্ট এসেছে?” একজন অফিসার একটা খাম নিয়ে এগিয়ে গিয়ে বললেন এই যে।উনি খাম থেকে রিপোর্টটা বের করে বেশ ভালো করে পড়লেন।
 
সঞ্চিতা ম্যাডামের দিকে তাকিয়ে বললেন তুমি যখন ক্লাসে ঢুকেছিলে তখন ও ক্লাসে ছিল?” ম্যাডাম বললেন হ্যাঁ।প্রশ্ন এলো ওকে কেমন দেখাচ্ছিল?” ম্যাডাম বললেন নর্মাল। স্বাভাবিক। ও আগের ক্লাসেও টাইমে প্রেজেন্ট ছিল। সেটাও আমি জানি। তুমি যে সময়ের কথা বলছ সেই সময় ও ক্লাসেই ছিল। উনি বিরক্ত মুখে বললেন আমি ওকে দোষ দিচ্ছি না কোনও। কিছু জিনিস শুধু ক্লিয়ার করে নিচ্ছি। আর কেন নিচ্ছি তার কারণটা এইবার ক্লিয়ার করে দিচ্ছি।আরেকটা সিগারেট ধরালেন উনি। শিখা বলে তোমাদেরই কলেজের একটি মেয়ে মারা গেছে। গতকাল। মেয়েটি এক কথায় ছিল বহু ভোগ্যা। তবে ওর ধরা বাঁধা মালিক ছিল তোমাদেরই কলেজের দীপক বলে একটি ছেলে যে কিছুদিন আগে আত্মহত্যা করেছে। এই দীপক হচ্ছে একটা রাজনৈতিক গুণ্ডা যাকে অনেক দিন ধরেই সরানোর কথা চলছিল উপর মহলে। আশা করি এই সব কটা কথাই আপনাদের সবার জানা।
 
এইবার কাজের কথায় আসি। শিখা একজনের বাড়িতে পেয়িং গেস্ট হিসাবে থাকত। বাড়ির মালকিন হলেন গিয়ে দুই বোন। বৃদ্ধা। ওনারা শিখার ডেড বডি দেখে শুরুতে ফিট হয়ে গেলেও পরে ওনাদের সেন্স ফিরে আসে এবং পুলিশের আর্টিস্টকে আততায়ীর একটা মোটামুটি বিবরণ ওনারা দিয়েছেন। সেই হিসাবে আমরা একটা স্কেচও বানিয়েছি। ছেলেটা আগের দিন সন্ধ্যার পর বাড়িতে ঢোকে। ছেলেটা আগেও দুই তিনবার ওই বাড়িতে গেছে। শিখার ঘর দোতলায়। শিখার সাথে পরের দিন সকাল অব্দি ছেলেটা ছিল। ৮টা বাজতে না বাজতেই ছেলেটা বিদায় নেয়। সাথে তিনটে ভারী ভারী ব্যাগ।
 
পরে ওনারা আর ওনাদের বাড়ির কাজের লোক পুরো ব্যাপারটা জানতে পারেন। বাড়িটা পলকা বাড়ি। মানে উপরে কি হচ্ছে অনেক সময় নিচ থেকে টের পাওয়া যায়। ওপরের টেবিল, খাট ইত্যাদির আওয়াজ শুনে ওনাদের মনে হয়েছিল যে শিখা ইজ হ্যাভিং সেক্স উইথ দ্যাট বয়। এটাতে ওনারা তেমন কিছু আশ্চর্য হননি। এই শব্দ ওনারা আগেও শুনেছেন আর শিখা কি জাতের মেয়ে সেটাও ওনারা খুব ভালোভাবেই জানেন। সমস্যা হল খুনটা নিয়ে। (পাশে ঘুরে একজন অফিসারের দিকে তাকিয়ে উনি জিজ্ঞেস করলেন) ছবিটা এসেছে?” ছবি হস্তান্তরিত হল। উনি বলে চললেন এই ছবিটা আমি আগেই দেখেছি। আমাকে স্ক্যান করে পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু অরিজিন্যাল ছবিটা একবার আপনাদের সবাইকে দেখাতে চাই। এই দেখুন।পেন্সিল স্কেচ। অসাধারন ছবি। অবশ্য এরকম ছবি আমি এর আগেও অনেকবার দেখেছি। ছবিটা আমার। কেন জানি না ছবিটা দেখে আমি খুব একটা আশ্চর্য হলাম না। রাকা সমেত বাকি সবাই আমার ছবিটা দেখে আঁতকে উঠেছে।
 
উনি আবার শুরু করলেন ওই দুই মহিলা শব্দ শুনে যা বুঝে ছিলেন সেটা হল সারা রাত ধরে বার বার শিখা ওই ছেলেটার সাথে সহবাসে লিপ্ত হয়েছিল। এইবার আমার হাতে যে পোস্টমর্টেম রিপোর্টটা এসেছে তাতে লেখা আছে যে, শিখা একজন ছেলের সাথে অনুমান মতন ৭ বার সহবাসে লিপ্ত হয়েছিল। এবং ওরা আন প্রটেকটেড সেক্স করেছিল। মোটামুটি যা বোঝা যাচ্ছে সেটা হল, প্রায় ৭ বার, আবারও বলছি আনুমানিক, ৭ বার, ছেলেটি শিখার শরীরের ভেতর নিজের স্পার্ম ডিপোসিট করেছে। একটাই ছেলে বলছি, কারণ নিচের মহিলারা বলেছেন আর কেউ শিখার ঘরে যায়নি। এবং সকাল বেলায় ওনারা সেই ছেলেটিকেই বেরিয়ে যেতে দেখেছেন। আর তাছাড়া শিখার শরীরের ভেতর একটাই ছেলের স্পার্ম পাওয়া গেছে। বিভিন্ন বার বিভিন্ন পরিমাণে ঢেলে দেওয়া হয়েছে সেই স্পার্ম শিখার শরীরের ভেতরে। উনি থামলেন।
 
উনি আরেকটা সিগারেট ধরালেন। বাপরে বাপ কতগুলো সিগারেট খাবেন? শুরু করলেন আমি এই সব তথ্য সবার সামনে রাখছি যাতে আমরা একটা আলোচনা করতে পারি। এইবার এগোনো যাক। আমরা জিজ্ঞাসাবাদ করে মোটামুটি জানতে পারি কবে ছেলেটা প্রথম বার ওই বাড়িতে আসে। সচরাচর কেউ এইভাবে ডেট মনে রাখতে পারে না। কিন্তু এই ক্ষেত্রে তার ব্যতিক্রম হয়েছে। ছেলেটা প্রথমবার ওই বাড়িতে যায় রঞ্জন মুখার্জির মৃত্যুর আগের দিন। ওনারা ডেট বলতে পারেননি। কিন্তু ওনাদের মনে ছিল ছেলেটা প্রথম যেদিন ওই বাড়িতে এসেছিল তার পরের দিনই মাননীয় মন্ত্রী রঞ্জন মুখার্জি মারা যান। সুতরাং...ছেলেটা সেখানে মিনিট ১৫ মতন ছিল তারপর বেরিয়ে যায়।
 
শিখার খাট ভীষণ পলকা। তাতে নড়াচড়া করলে ভীষণ শব্দ হয়। সেদিন শিখা ছিল মত্য অবস্থায়। কোনও সেন্স ছিল না ওর। ওনাদের বয়ান অনুযায়ী এর আগেও শিখা অনেকবার এরকম মত্ত অবস্থায় বাড়ি ফিরেছে। কিন্তু প্রত্যেকবার দীপক ওকে ছাড়তে এসেছিল। দীপকের জায়গায় ওই ছেলেটাকে প্রথমবার দেখে ওরা চমকে যায়। কিন্তু পরে খাটের নড়াচড়ার শব্দ শুনে ওনারা বুঝতে পারেন যে শিখা ইজ হ্যাভিং সেক্স উইথ দ্যাট গাই। এইবার সংকেত ডিরেক্ট প্রশ্ন তোমাকে। সেদিন তুমি শিখাকে ছাড়তে গেছিলে। হ্যাঁ বা না। এই উত্তর তুমি নাও দিতে পারো। কিন্তু একটা বড় হোটেলের বাইরে লাগানো ক্যামেরা থেকে আমি স্পষ্ট দেখেছি যে তুমি সেদিন শিখাকে নিয়ে একটা গাড়িতে উঠেছিলে। আর গাড়িটা ছিল …(উনি রাকার দিকে অর্থপূর্ণ দৃষ্টিতে একবার দেখে নিলেন।) ওনারা যে টাইম বলছে সেই টাইমের সাথে গোটা ব্যাপারটা মোটামুটি কিন্তু মিলে যাচ্ছে। তোমার উকিলের নাম্বার দাও। ওনার মতামত পেলে যদি তোমার কোনও সুবিধা হয়।
 
আমি বললাম উকিল দিয়ে কি হবে। আমি নিজেই এর উত্তর দিচ্ছি। সেইদিন সবাই বাইরে বেড়াতে যাচ্ছে। দীপকদার অনুরোধে আমি শিখাদিকে ওর বাড়ি অব্দি ছাড়তে যাই। যে দুই মহিলার কথা বলছেন তাদের মধ্যে একজন সেদিন দরজা খুলে আমাদের ভেতরে ঢুকতে দিয়েছিলেন। অনেক কথাও শুনতে হয়েছিল ওনার কাছ থেকে। আমি শিখাদির বাথরুমে ঢুকে একটু ফ্রেশ হয়ে বেরিয়ে আসার সময় দেখি ও বিছানায় বমি করার তাল করেছে। কোনও সেন্স নেই। ভীষণ ড্রাঙ্ক। ওকে বাথরুমে নিয়ে যাওয়ার তোড়জোর শুরু করি। হতে পারে ওকে নিয়ে টানা হ্যাচড়া করার সময় ওই শব্দ হয়েছে। আমি নিজেও তখন একটু হলেও ড্রাঙ্ক ছিলাম। সঠিক বলতে পারব না। কিন্তু আমি শিখাদিকে বাথরুমে নিয়ে যাওয়ার অনেক চেষ্টা করেছিলাম যাতে ও বমি করে বিছানাটা না ভাসিয়ে দেয়।
 
পরে অবশ্য শিখাদি জল খেয়ে অনেকটা শান্ত হয়। আমাকে বলেছিল যে বাথরুমে গিয়ে নিজেই বমি করে নেবে তেমন দরকার হলে। আমি বেরিয়ে আসি। ও হ্যাঁ, ভালো কথা ওর ঘরে অনেকগুলো গাঁজার সিগারেট দেখেছিলাম সেদিন। এর থেকে বেশী আমার সাথে শিখাদির কোনও রকম সম্পর্ক হয়নি। কোনও দিনও হয়নি। আমি ওই দিনের পর আর কোনও দিন শিখাদির ওই বাড়িতে পাও রাখিনি। আবারও বলছি ওর নেশাগ্রস্ত শরীরটাকে বিছানা থেকে নামিয়ে বাথরুমে নিয়ে যাওয়ার জন্য অনেকক্ষণ ধরে আমি চেষ্টা করেছিলাম। আর সেন্সলেস অবস্থায় ও কোনও রকম হেল্প করেনি। তাতে শব্দ হয়ে থাকলে আমি জানি না। এটাও আপনি সত্যি কথা বলেছেন যে শিখাদির ঘরে যে খাটটা আছে সেটা ভীষণ পলকা। একটু নড়াচড়া করলেই তাতে ভীষণ শব্দ হয়। কিন্তু আমাদের মধ্যে কোনও যৌন মিলন সেদিন হয়নি।
 
উনি বললেন বেশ মেনে নিলাম। এইবার এগিয়ে পড়া যাক। ১২ই আগস্ট, মানে ওদের বাড়িতে কাজের আগের দিনএক সেকন্ড একটু ক্লিয়ার করে বলি ব্যাপারটা? ওই দিন বৃষ্টিতে সারা শহর ভেসে গেছিল। সেদিন দুপুর বেলায় সংকেত আমার সাথে আমার লাগেজ মাথায় নিয়ে আমাকে ট্যাক্সি ধরিয়ে দেয়। এটা আমি নিজে জানি। ওর কিছু কাজ ছিল তাই ওই দুর্যোগ মাথায় নিয়ে ওকে বেরোতে হয়েছিল।সঞ্চিতা ম্যাডাম কিছু বলতে যাচ্ছিলেন তার আগেই উনি বললেন ওয়েট মাই ডিয়ার। এখনও কথা শেষ হয়নি। এক মাত্র দোলন কাজ করবে। ও মেয়ে বলে চারদিনের মাথায় কাজটা হয়ে যায়। কাজ বলতে আমি শ্রাদ্ধের কথা বলেছি। সংকেত, ডিরেক্ট প্রশ্ন করছি তোমাকে। সেদিন আমাকে ছেড়ে দিয়ে তুমি কোন কাজে গেছিলে?”
 
আমি বললাম সে কথা আমি আপনাকে বলছি। কিন্তু তার আগে আমার একটা প্রশ্ন আছে। শুধু একটা ছবির ওপর ভরসা করে আপনি এত বড় একটা কেসের তদন্ত করছেন?” বাকিরা সবাই কেমন জানি একটা থমথমে মুখ নিয়ে আমার দিকে তাকাল। বুঝতে পারলাম যে ভুল লোকের ব্যাপারে ভুল প্রশ্ন করেছি। কিন্তু তাতে এদের কিছু এসে গেলেও আমার কিছু এসে যায় না। বললাম একটা সহজ প্রশ্ন। কিসের তদন্ত করছেন আপনি? শিখাদির মৃত্যুর? কে এই শিখা? একটা পলিটিকাল দালালের রক্ষিতা। আপনার মতন একজন এত্ত বড় অফিসার সেই শিখাদির মৃত্যুর পিছনে এতটা সময় নষ্ট করছেন? সেটা দেখে একটু আশ্চর্য লাগছে না কি?” শেষের কথাগুলো বলতে বলতে হেসেই ফেললাম। উনি কিন্তু তীক্ষ্ণ নজরে আমার দিকে তাকিয়ে আছেন।
 
বললাম বেশ আপনি অনেক কথা জিজ্ঞেস করেছেন। উকিলের সাহায্য নিতে বলেছেন আমাকে। আমি যে উকিলের মতামত ছাড়া আপনার কোনও প্রশ্নের উত্তর দিতে বাধ্য নই সেই ব্যাপারে আমাকে জানানোর জন্য অনেক ধন্যবাদ। আমি আমার সাংবিধানিক অধিকার খুব ভালো ভাবেই জানি। একটা সহজ প্রশ্ন। শিখাদির ওই পোস্টমর্টেম রিপোর্টে কি ওর মৃত্যুর সময়টা লেখা আছে? আমি সেই প্রথম দিনের পর আর কোনও দিনও শিখাদির বাড়ি যাইনি। অর্থাৎ, যখন শিখাদি মারা গেছিল তখন আমি নিশ্চই অন্য কোথাও ছিলাম। আমাকে আগে সেই বেসিক প্রশ্নটা সরাসরি কেন করছেন না আপনি? আপনি বড় অফিসার। কিন্তু নিজের কেস সাজানোর চক্করে বেকার এধার ওধারে ঢিল মেরে চলেছেন। সোজাসুজি প্রশ্ন করছি। সবার সামনে করছি। রিপোর্ট কি বলছে? কটায় শিখাদি মারা গেছে? আপনার বাকি প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার আগে সেই প্রশ্নের উত্তর আমি দিতে চাই। আর সেই উত্তর আমি দিতে চাই সবার সামনে।
 
৩৫
 
সবার মধ্যে একটা চাপা গুঞ্জন শুরু হয়ে গেছে। ম্যাডামও একটু অস্বস্তিতে পড়ে গেছেন। উত্তর আসতে বেশী দেরী হল না। আর উত্তরটা এলো বজ্র কঠিন শব্দে। সকাল সাড়ে ছটায়। কিন্তু অনেক সময় আপাত ভাবে যেটাকে ঠিক বলে মনে হয় সেটা আসলে ঠিক হয় না। আসল সত্যি হয়ত অন্য কিছু। কিন্তু আমাদের চোখের ওপর এমন একটা পর্দা ফেলে দেওয়া হয় যে ভুলটাকেই আমরা ঠিক বলে ধরে নি। তাই আবারও জিজ্ঞেস করছি ১৫ই আগস্ট আপনি কোথায় ছিলেন? “ এইবার আমারও উত্তরটা এলো ইস্পাতের মতন ঠাণ্ডা স্বরে।

ম্যাম আপনি কি কিছু বলবেন? সেদিনের আপনার রোগা হওয়ার রিসোলিউশনের ব্যাপারে?” ম্যাডাম এইবার নড়েচড়ে বসলেন। উনি বললেন অর্জুন তোমার সন্দেহ নিরাধার। সেদিন ভোরবেলায় আমি সংকেতকে জাগিয়ে বলি আমার সাথে মর্নিং ওয়াকে যেতে। ও রাজি হয়। আমরা…” বাকি কথাটা আর ওনাকে শেষ করতে দিলাম না। বললাম স্যার। ওই অভিজ্ঞতা আমার কাছে ট্রমা। উনি আমাকে রোগা হওয়ার জন্য মর্নিং ওয়াকে নিয়ে গেলেন। কিন্তু স্বাধীনতা দিবসের জন্য চারপাশে যে সাজগোজ হচ্ছে সেটা দেখে উনি মর্নিং ওয়াক ছেড়ে সেলফি তে মননিবেশ করলেন। সেলফির পিছনে অধিকাংশ সময় নষ্ট করেছেন। এখানে সেলফি ওখানে সেলফি, এই কলেজের সামনে দাঁড়িয়ে সেলফি, ওই কলেজের সামনে দাঁড়িয়ে সেলফি। বাই দা অয়ে একটা কলেজে দিদি ট্রেস পাসিং করতে যাচ্ছিলেন। না আটকালে বিপদ হত। শেষে পাঁচিলের ধারে দাঁড়িয়ে সেলফি। আরে সেলফি তুললে বাড়িতে তুলুন, মর্নিং ওয়াক ইজ নট দা প্লেস ফর দ্যাট। সব কথা শোনার পর উনি শান্ত ভাবে শুধু একটাই কথা বললেন এনি প্রুফ অফ দোজ সেলফিস?” ম্যাম বললেন সব কটা তৎক্ষণাৎ ফেসবুকে আপলোড করেছি। একটা নতুন অভিজ্ঞতার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছিলাম। যা দেখেছি যা তুলেছি সব পোষ্ট করেছি। ফেসবুকে পাবে।উনি কথা বন্ধ করে সামনে রাখা ল্যাপটপটা অন করলেন। পাঁচ মিনিট সব চুপ। কি দেখলেন উনিই জানেন। সব কিছু দেখে শুনে আবার প্রশ্ন করলেন ১৫ইআগস্টে ফিরে আসা যাক।ম্যাডাম বললেন ওই দিন কি এমন হয়েছে? ওই মেয়েটা যেদিন মারা গেছে সেই সময় ও যে মেয়েটার বাড়িতে ছিল না সেটা তো গোটা দুনিয়া এতক্ষনে আমার ফেসবুক পোষ্টে দেখে ফেলেছে। তুমি ১৫ই আগস্ট নিয়ে এত মাতামাতি করছ কেন?” উনি ঠাণ্ডা গলায় বললেন অ্যালিবাই ভালো। কিন্তু অনেক সময় অ্যালিবাইও কাজে লাগে না মিস্টার রায়। শেষ বারের মতন জিজ্ঞেস করছি ১৫ই আগস্ট কোথায় ছিলেন?”
[+] 1 user Likes pcirma's post
Like Reply


Messages In This Thread
RE: মুখোশ - The Mask by Daily Passenger - by pcirma - 05-03-2019, 03:50 PM



Users browsing this thread: 4 Guest(s)