Thread Rating:
  • 34 Vote(s) - 3.35 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
Thriller মুখোশ - The Mask by Daily Passenger
#41
দরজার ঠিক মুখোমুখি চওড়া সোফায় একজন মহিলা বসে আছেন। হাতে একটা লম্বা সরু ব্রাউন সিগারেট। ওনার বা ওনাদের বেশভুষার দিকে যাওয়ার আগে চারপাশে কি দেখছি সেটাই বলে ফেলি।এটাকে ঠিক ঘর বলা যায় না। এটা একটা বিশাল বড় প্রাইভেট বার। একদিকে বার কাউন্টার আছে। কাউন্টার এখন খালি। কাউন্টারের পেছনে দেওয়ালের গায়ে প্রচুর দামি দামি মদ সাজানো। একটা ছোট রেফ্রিজারেটর রয়েছে ঘরের এক কোণে। ঘরের সিলিঙ্গে দুটো গোলাকার ডি যে লাইট সেট করা আছে। আপাতত ডি যে লাইটগুলো অফ করা আছে। সাদা রঙের উজ্জ্বল আলো জ্বলছে ঘরের ভেতর। ঘরের ঠিক সেন্টারে অনেকটা জায়গা খালি। পার্টির সময় বোধহয় এই খালি জায়গায় নাচ গান হয়ে থাকে। ঘরের পেছন দিকে একটা সেন্টার টেবিল আর টেবিলটাকে চারপাশে ঘিরে আছে চারটে চওড়া নিচু সোফা। বড় বড় লাউঞ্জগুলোতে সচরাচর এরকম সোফা দেখতে পাওয়া যায়। কাউন্টারের এক পাশে একটা বন্ধ দরজা। খুব সম্ভবত দরজার পেছেন একটা অ্যাটাচড টয়লেট আছে। বেশ বড় বার সেটা মানতে হবে। কম করে ২০ থেকে ২৫ জন আরামসে ধরে যাবে এই ঘরের ভেতর। কাউন্টারের সামনে তিনটে উঁচু গোল স্টুল রাখা আছে।
 
কি রে খালি হাতে বসে আছিস কেন? এখনও শুরু করিসনি? “ বেলা আন্টির কথায় হুঁশ ফিরল আমার। আমার দিকে ফিরে বললেন আলাপ করিয়ে দি? ইনি মিসেস সুধা সান্যাল।সেটা আর বলে দিতে হয় না। রাকার মার নাম আমার বেশ ভালোই মনে আছে, আর উনি যে আজ এখানে থাকবেন সেটা তো আগে থেকেই জানা। সুধা, আর এই হল সংকেত।সুধা আন্টি আমাকে একবার আপাদ মস্তক ভালো করে মেপে নিয়ে একটা অর্থপূর্ণ হাসি হেসে বললেন নট ব্যাড। নট ব্যাড অ্যাট অল। একটু থেমে সিগারেটটাকে সামনের ছাইদানিতে তখনকার জন্য নামিয়ে রেখে বললেন সো ইউ আর সংকেত।এতে এত আশ্চর্য বা পুলকিত হওয়ার কি আছে কে জানে! এই প্রশ্নের কোনও উত্তর হয় না। চুপ চাপ দাঁড়িয়ে রইলাম।
 
কি হল দাঁড়িয়ে রইলে কেন? বসো।বেলা আন্টির নির্দেশ পেয়ে একবার ভেবে দেখলাম কোথায় বসা ঠিক হবে? ওনাদের সাথে সোফায়, নাকি এই গোল উঁচু স্টুলগুলোর একটাতে। একটু বিনয় দেখানো ভালো। একটা স্টুলে গিয়ে চড়ে বসলাম। সুধা আন্টিও নিজের সিট ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়েছেন। বেলা আন্টি বললেন এত লোকের সাথে কথা বলতে বলতে চোয়াল ব্যথা হয়ে গেছে। তুই আসার একটু আগে বাড়ি খালি হয়েছে। শাওয়ার পর্যন্ত নিতে পারিনি। টেল ইউ হোয়াট, এই বিধবা সেজে নাটক করা আর পোষাচ্ছে না। সবাই বিদায় নেওয়ার পর এই একটু আগে গিয়ে কোনও মতে ড্রেস চেঞ্জ করার সুযোগ পেয়েছি।সুধা আন্টি বললেন সে তোর মুখ দেখেই বুঝতে পারছি। কালি পড়ে গেছে। একটু ভালো করে ড্রিংক নে। ফ্রেশ লাগবে। এই সময় একটু লাইট হেডেড হলে দেখবি ভালো লাগবে। তবে এই প্রথম তোকে মেক আপ ছাড়া দেখছি, স্কিন বেশ ভালো মেইনটেইন করেছিস।
 
এইবেলা ওনাদের বেশ ভুষার একটু বর্ণনা দিয়ে রাখা ভালো। প্রথমে বেলা মুখার্জির কথায় আসি কারণ ওনার কল পেয়েই আমি এখানে এসেছি। আর তাছাড়া এই কথাটা ভুললে চলবে না যে উনি একজন সদ্য বিধবা মহিলা। যে শাড়িটা পরে আছেন সেটার রঙ এক কথায় বলতে গেলে বলতে হয় সাদা, কিন্তু এটাকে ঠিক বিধবার শাড়ি বলা যায় না। কারণ, শাড়িটা অত্যন্ত ফিনফিনে, স্বচ্ছ,দামি মেটিরিয়ালের তৈরি, আর সব থেকে বড় ব্যাপার যেটা ঘরে ঢুকেই লক্ষ্য করেছি সেটা হল ওনার শাড়ির জায়গায় জায়গায় উজ্জ্বল গোলাপি রঙের সুতো দিয়ে অদ্ভুত সুন্দর সব ফুল, নকসা ইত্যাদির কাজ করা রয়েছে। শাড়ির সিংহভাগ অংশের রঙ যদিও সাদা কিন্তু হলপ করে বলতে পারি এই রকম শাড়ির দাম হাজার চারেকের নিচে হয় না। ধনী মহিলাদের সচরাচর বিশেষ বিশেষ অকেশনে, ফানশানে, পার্টিতে এইরকম শাড়ি পরতে দেখা যায়। এই সব শাড়ি শরীর ঢাকার থেকে শরীর প্রদর্শনের কাজ করায় বেশী পারদর্শী। এনার ক্ষেত্রেও একই ব্যাপার দেখলাম। শাড়ির ভেতর দিয়ে পরনের আকাশি নীল রঙের সায়াটাও স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে, লাল রঙের ব্যাকলেস নূডল স্ট্র্যাপ ব্লাউজটার কথা ছেড়েই দিলাম। এরকম সরু দড়ির মতন স্ট্র্যাপ দেওয়া সংক্ষিপ্ত ব্লাউজ কে ব্লাউজ না বলে ব্রা বললেও কোনও ক্ষতি নেই। অবশ্য এই ধরণের ব্লাউজ এখন মহিলাদের মধ্যে বেশ পপুলার। ফ্যাশন।
 
শাড়িটাকে নাভির প্রায় পাঁচ আঙুল নিচে বাধা হয়েছে। গোল সুগভীর নাভি সহ সমগ্র তলপেট সেই শুরু থেকেই নগ্ন হয়ে আছে। আর এটা আমি শাড়ির স্বচ্ছতার কারণে বলছি না, আমি বলছি কারণ নাভি আর তলপেট সত্যি সত্যিই নগ্ন হয়ে আছে। শাড়িটাকে ভীষণ আলুথালু ভাবে কোনও রকমে শরীরের ওপর মেলে দেওয়া হয়েছে। ব্লাউজে ঢাকা ডান দিকের স্তনটাও শাড়ির আঁচলের উপর দিয়ে নগ্ন হয়ে আছে। প্রায় সমস্ত স্তন বিভাজিকা স্বচ্ছ শাড়ির নিচে নগ্ন হয়ে আছে। বলাই বাহুল্য বেলা আন্টির এই সব ব্যাপারে কোনও খেয়াল নেই। কিন্তু আরও আশ্চর্য লাগল এই দেখে যে সুধা আন্টিও ওনাকে নিজের শরীর ঢাকার ব্যাপারে কোনও কথা বলছেন না বা কোনও ইশারাও করছেন না। সত্যি কথা বলতে গেলে বলতে হয় বেলা আন্টি কে দেখে মনে হচ্ছে উনি কোনও একটা পার্টিতে এসেছেন ফুর্তি করতে, আর শাড়িটা না পরলেই নয় তাই কোনও মতে জিনিসটাকে চাপিয়ে রেখেছেন নিজের ডাঁসা শরীরটার ওপর। ব্লাউজের নিচে যে ব্রা বা ব্রা জাতীয় কোনও কিছু নেই সেটা বুঝতে এক মুহূর্তের বেশী লাগার কথা না। আর হ্যাঁ, আগের দিন ওনার স্তন দুটো দেখে মনে হয়েছিল যে ওনার স্তন দুটো মালিনীর স্তনের মতন চাপা, কিন্তু আজ এই অবস্থায় দেখে মনে হল যে ওনার স্তন দুটো বেশ ভারী আর বয়সের জন্য একটু হলেও ঝুলে পরেছে। কিন্তু সারা শরীরে প্রায় এক ফোঁটাও মেদের চিহ্ন নেই। তলপেটে সামান্য একটা ফোলা ফোলা ভাব আছে, ব্যস ওই অব্দি। নাভির চারপাশটাও অদ্ভুত রকম চাপা।
 
সুধা আন্টি বিধবা নন। তাই ওনার শাড়ির রঙ টকটকে লাল। ব্লাউজটাও ম্যাচিং। দুজনের ব্লাউজের ডিজাইনই এক। মানে নুডল স্ট্র্যাপ ব্লাউজ, ব্যাকলেস। এনার ব্লাউজের ভেতর হয়ত একটা বাড়তি সাপোর্ট আছে কারণ স্তনগুলো বুকের উপর অস্বাভাবিক ভাবে বাইরের দিকে উঁচিয়ে আছে। তবে একটা ব্যাপারে আমি নিশ্চিত যে এনার স্তনের সাইজ বেলা আন্টির থেকে অনেকটাই ছোট। রাকা এনার ধরণ পেয়েছে। এনারও শরীরে এক ফোঁটা মেদ নেই। এনার শাড়িটাও স্বচ্ছ, কিন্তু নিপুণ ভাবে পরা আছে বলে সায়া ইত্যাদি বাইরে থেকে দেখা যাচ্ছে না। তবে স্বচ্ছ শাড়ির বাইরে থেকে এনারও চাপা তলপেট আর গভীর নাভিটা স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। এনার তলপেটে অবশ্য কোনও রকম ফোলা ভাব নেই। একদম চাপা তলপেট। স্বচ্ছ শাড়ির ভেতরে এনার চাপা ব্লাউজে ঢাকা স্তন দুটোও বাস্তবে নগ্ন হয়ে আছে। এনার গায়ের রঙ সামান্য চাপা। মুখটা খুব মিষ্টি, কিন্তু মুখটা ব্রণর দাগে ভর্তি। এনাদের দুজনেরই সারা গায়ে, মানে গায়ের যতটা নগ্ন হয়ে আছে, কোথাও এক ফোঁটা লোম বা চুলের লেশ মাত্র দেখতে পাওয়া যাবে না। কিন্তু তবুও বলতে হয় যে সুধা আন্টির সারা হাত আর তলপেটে কেমন জানি একটা রোঁয়া ওঠা ভাব আছে। অন্যদিকে বেলা আন্টির স্কিন মাখনের মতন মসৃণ। যাই হোক, এনাদের ফ্যাশন এনাদের কাছেই থাক। আপাতত আমাকে কেন ডাকা হয়েছে সেইটা জানা দরকার।
 
আমি স্টুলের ওপর বসছি দেখে দুজনেই সমস্বরে বলে উঠলেন সেকি ওখানে কেন? তুমি আজকের হিরো। এখানে এসে বসো।কথাটা বলে সেন্টার টেবিলের এধারে রাখা সোফার দিকে ইঙ্গিত করে দিলেন। বেলা আন্টি কেমন জানি আলুথালু ভাবে কাউন্টারের পেছন দিকে যেতে যেতে বললেন তুমি যে মদ খাও সেটা তো গোটা দুনিয়া জানে। কিন্তু কি খাও সেটা জানি না।আমি বললাম এখন শুধু বিয়ার খাবে। চিলড।উনি কাউন্টারের ওপর দুটো হুইস্কির গ্লাস আর একটা বিয়ার মগ রেখে ফ্রিজটা খুলে একবার ভেতরটা দেখে নিলেন। বিয়ার আছে, কিন্তু ঠাণ্ডা হবে না। গরম চলবে?” আমি সরাসরি উত্তর দিলাম গরম বিয়ার?” ঘরে যদিও এসি চলছে, তবুও গরম বিয়ার খাওয়ার মানে হয় না। উনি সুধা আন্টির দিকে তাকিয়ে বললেন সিঙ্গেল মল্ট তো?” সুধা আন্টি হেসে সম্মতি জানালো। আমার দিকে তাকিয়ে বললেন বিয়ার ঠাণ্ডা হবে না। এখন ফ্রিজে ঢুকিয়ে রাখলেও সময় লাগবে ঠাণ্ডা হতে। সিঙ্গেল মল্ট চলবে?” বিভিন্ন কারণে অনেক দিন সিঙ্গেল মল্ট থেকে বঞ্চিত হয়ে আছি। লজ্জা ঝেড়ে বললাম চলবে।
 
কেন জানি না বারবার আমার মোবাইলের দিকে চোখ চলে যাচ্ছে। সময়টা কেটে যাচ্ছে অথচ আমাকে কেন ডাকা হয়েছে সেটাই বুঝতে পারছি না। বিয়ারের গ্লাসের জায়গায় আরেকটা হুইস্কির গ্লাস স্থান পেল। ফ্রিজের ভেতর থেকে একটা বোতল বের করে সেটার ঢাকনাটা খুলে সুধা আন্টির দিকে এগিয়ে দিলেন। সুধা আন্টি সেটাকে হাতে নিলেন না, শুধু বোতলটার খোলা মুখের কাছে নিজের নাক নিয়ে গিয়ে চোখ বন্ধ করে প্রান ভরে একটা গভীর নিঃশ্বাস নিলেন। হেসে বললেন পারফেক্ট।তিনটে গ্লাস ভর্তি হয়ে গেল। বোতলটা ঢাকনা বন্ধ করে আবার ফ্রিজের ভেতর চালান হয়ে গেল। সুধা আন্টি নিজের গ্লাসটা নিয়ে নিজের সিটে ফিরে এসে সোফায় বসে পড়লেন আমার মুখোমুখি। বলাই বাহুল্য আমি এতক্ষনে সোফায় বসে বসে ওনাদের কার্যকলাপ দেখছিলাম। বেলা আন্টি ওনার আর আমার গ্লাস দুটো নিয়ে এসে টেবিলের ওপর সাজিয়ে রেখে আমার পাশের সোফায় বসে পড়লেন। গ্লাস ঠোকাঠুকি হল। তিনজনেই নিজেদের গ্লাসে প্রথম চুমুক দিয়ে দিয়েছি।
 
বেলা আন্টির যে নিজের স্বামী বা সন্তান বিয়োগের ব্যাপারে কোনও রকম দুঃখ বা মাথা ব্যথা নেই সেটা অনেক আগেই বুঝে ছিলাম, তাই ওনার এখনকার আচরণ নিয়ে পাতা ভরিয়ে কোনও লাভ নেই। দুজনেই একটা করে সিগারেট ধরালেন। আমি অবশ্য ওনাদের সামনে সিগারেট খাওয়া থেকে নিজেকে আটকে রাখলাম। বেলা আন্টি শুরু করলেন। সংকেত। তুমি ইউ পি থেকে এসেছ, রাইট?” একই কথা কতবার বলা যায়! মাথা নেড়ে সম্মতি জানালাম। তোমার বাড়ির অবস্থা কেমন?” বললাম খারাপ না। সুধা আন্টির মুখ দেখে বুঝতে পারছি না যে ওনার মাথার ভেতর কি চলছে। উনি নিজের গ্লাসটার দিকে এক দৃষ্টে চেয়ে আছেন। সিগারেটটা ঠোঁটের কোনায় গুঁজে ঘন ঘন ধোঁয়া ছাড়ছেন। বেলা আন্টি বললেন রঞ্জন আর শান্তনু মারা যাওয়ার পর সবার তোমার ওপর সন্দেহ হয়েছিল।আমি বললাম আমি আগেই বলেছি, আমি নির্দোষ।উনি যেন আমার কথা শুনেও শুনতে পেলেন না, বলে চললেন দীপকের ডেথ নিয়েও তুমি সাসপেক্ট লিস্টে ছিলে।আমি চুপ। বললেন আজ সকালে শিখা, মানে ওই দীপকের গ্রাম থেকে আনা রক্ষিতাটা খুন হয়েছে। হুমম মতন একটা শব্দ করে বুঝিয়ে দিলাম এই তথ্যটাও আমার কাছে অজানা নয়। উনি বললেন তুমি নিজের ব্যাপারে কি বলবে? এতগুলো খুনের সাথে তোমার কোনও সম্পর্ক নেই?”
 
আমি খুব শান্ত গলায় বললাম এই কথা গুলো বলার জন্য আমাকে আজ ডেকে এনেছেন?” উনি বললেন সে কথায় আসছি? কিন্তু তার আগে বলো যে তোমার এই ব্যাপারে কোনও হাত নেই?” বললাম আমি বাইরের ছেলে। এখানে আসার আগে কে দীপক, কে শান্তনু, কে শিখা, এদের কাউকেই তো চিনতাম না। ফ্র্যাঙ্কলি স্পিকিং আন্টি, শুধু রঞ্জন বাবুর নাম কয়েকবার শুনেছিলাম। কিন্তু তাও ওই নাম শোনা অব্দি। এক্ষেত্রে ওনাদের আনন্যাচরাল ডেথের সাথে আমি যুক্ত হবই বা কি করে? তবুও আপনাদের যদি তেমন কিছু মনে হয় তো সে কথা আমাকে না বলে পুলিশ আর সি আই ডি কে জানালে বোধহয় সবার কাজে সুবিধা হবে। আর আমি যদি সত্যি এতটা ডেঞ্জারাস হতাম তো আপনারা নিশ্চয় এই অবস্থায় আমার সাথে বসে মদ্য পান করতে পারতেন না বা করার সাহস দেখাতেন না।হঠাৎ করে দুজনেই হাসি তে ফেটে পড়লেন। সুধা আন্টি বললেন জানি পাগল, জানি। তুমি খুন করনি। এর সাথে তুমি কোনও ভাবে যুক্তও নও। জাস্ট দুই একটা ব্যাপার থেকে হঠাৎ মনে হয়েছিল যে তুমি কোনও ভাবে ইনভলভড হলেও হতে পার, বাট নট মোর দ্যান দ্যাট। আমরা জাস্ট মজা করছিলাম।
 
আমি এইবার একটু সোজা হয়ে বসে বললাম তাহলে এইবার যদি আমাকে এখানে ডাকার আসল কারণটা বলেন তো …” সুধা আন্টি বেলা আন্টির দিকে একটা ইশারা করলেন, যার মানে এইবার শুরু কর। বেলা আন্টি গ্লাসে একটা বড় চুমুক মেরে শুরু করলেন, “ তুমি খুনি নও। কিন্তু তুমি ধোয়া তুলসী পাতাও নও।বললাম মানে?” বললেন যেদিন রঞ্জন মারা যায়, সেদিন বিকালের দিকে তুমি এখানে এসেছিলে, রাইট? দোলন তোমাকে ফার্স্ট ফ্লোরে নিয়ে আসে, রাইট? তোমাকে রঞ্জনের কাজের ঘরে বসিয়ে দিয়ে যায় কয়েক মিনিটের জন্য। কি ঠিক বলছি?” আমি মাথা নাড়িয়ে বুঝিয়ে দিলাম ওনার অনুমান নির্ভুল। উনি আবার শুরু করলেন এইবার একটা কথা বলবে সংকেত, কাজের ঘরে বাড়ির মালিক টেবিলের এক দিকে বসে, আর ভিজিটাররা টেবিলের অন্য দিকে বসে। ঠিক কি না?” আবার মাথা নাড়াতে হল সম্মতির ভঙ্গিতে। উনি সিগারেটে একটা টান দিয়ে বললেন দোলন নিচে আসার কিছুক্ষণ পরেই আমি ওপরে যাই কাজে। গিয়ে দেখি তুমি রঞ্জনের চেয়ারে বসে ওর টেবিলের ড্রয়ারে কি সব দেখছ! কেমন এটাও ঠিক বললাম তো?”
 
কেন জানি না আপনা থেকেই আমার চোয়াল শক্ত হয়ে গেছে ওনার কথা শুনতে শুনতে। এইবার আর মাথা নাড়ালাম না। উনি আমার দিকে কিছুক্ষণ হাসি মুখে তাকিয়ে থেকে বললেন রঞ্জনের সব কটা ড্রয়ার বন্ধ থাকত শুধু ফার্স্ট ড্রয়ারটা ছাড়া। ওই খানে সব সময় হাজার দশেক কি বিশেক টাকা রাখা থাকত। আমার বা দোলনের যদি কখনও দরকার হয় তাহলে যেন ওই খান থেকে টাকা উঠিয়ে নিতে পারি। সকালে বাড়ি থেকে বেরনোর আগে আমি ওখানে বিশ হাজার টাকা দেখে গিয়েছিলাম। কথা হয়েছিল যে ফিরে এসে ওটা আমি খরচ করব শান্তনুর কাজের ব্যাপারে কারণ রঞ্জন তখন শান্তনুর ব্যাপারে পুরো ভেঙ্গে পরে ছিল। তারপর যা হইচই কথাটা মাথা থেকে বেরিয়ে গেছিল। তারপর তোমাকে দেখলাম ওখানে। তুমি ওখানে যাওয়ার আগে বাইরের কোনও লোক ওখানে যায়নি, মানে ফার্স্ট ফ্লোরে। আমাকে দেখেই তুমি চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়িয়ে এমন একটা ভাণ করলে যেন কিছুই হয়নি, আর, কোনও কথা না বলে তক্ষুনি ঘর থেকে বেরিয়ে গেলে। সন্দেহ হওয়ায় আমি তখনই ঘরে তালা দিয়ে দি। পরে রাতের দিকে আবার তোমার কথাটা মনে পড়ার পর ওই ঘরে যাই এবং গিয়ে ওই ড্রয়ারটা খুলে দেখেছি, টাকাগুলো ওখানে আর ছিল না। সংকেত, তুমি খুনি নও, কিন্তু তুমি একটা চোর। একজন সদ্য মৃত মানুষের বাড়িতে ঢুকে ওদের অ্যাবসেন্টমাইন্ডেডনেসের সুযোগ নিয়ে ওদের বাড়ি থেকে ২০ হাজার টাকা সরাতে তোমার একটুও প্রানে বাঁধল না। টাকার দরকার হলে পরে সরাসরি আমাকে এসে বলতে পারতে। কিন্তু তুমি যেটা করেছ সেটাকে বলে চুরি। তুমি তো একটা চোর।
 
ওনার শেষ কথা গুলো শুনতে শুনতে কেন জানি না আমার চোয়ালটা আবার নরম হয়ে এসেছে। আবার আমি স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে এসেছি। আমার চোখ ওনার চোখের ওপর স্থির হয়ে আছে। কিন্তু এই ফাঁকে একবার মোবাইলে সময়টা দেখে নিলাম। আবার ওনার মুখের ওপর আমার দৃষ্টি স্থির। উনি বললেন এই ব্যাপারে তোমার কিছু বলার আছে?” আমি বললাম আপনি যখন সব কিছু বুঝেই গেছেন তখন আর নতুন করে কিছু বলার নেই। আমার টাকার দরকার কি দরকার নয়, আর কত টাকার দরকার সেই প্রসঙ্গ এখন থাক। আমি এবারও বলব, চুরির অভিযোগ প্রমান করতে পারলে আপনি প্লীজ গিয়ে পুলিশে এফ আই আর করুন। কিন্তু এখানে আমাকে এইভাবে বসিয়ে রাখার কারণ এখনও আমি ঠিক বুঝে উঠতে পারিনি।
 
উনি একটা কিছু বলতে যাচ্ছিলেন, কিন্তু এইবার তার আগেই আমি বলে চললাম মিস্টার সান্যালের মতন বড় উকিল হায়ার করার ক্ষমতা না থাকলেও একজন উকিল আমি ঠিক দাঁড় করিয়ে দেব কোর্টে। আন্ড ট্রাস্ট মি, এরকম কেস হলে মিস্টার সান্যালও হয়ত কিছু প্রমান করতে পারবেন না।সুধা আন্টি এই প্রথম বার মুখ খুললেন ছোকরা একে তো লোকের বাড়িতে এসে চুরি করেছ, তার পর আবার কোর্ট দেখাচ্ছ?” বললাম আন্টি, রাগ করবেন না প্লীজ। রঞ্জন বাবুকে আমি খুব শ্রদ্ধা করতাম। আমি জানি আপনার স্বামী মিস্টার অবিনাশ সান্যাল কে কোর্টে দেখলে সবাই ভয় পায়। তবুও আমি হলপ করে বলতে পারি আপনারা এই কথাগুলো ওনাকে বলেননি। যদি বলতেন তাহলে উনি দুই একটা জিনিস পরীক্ষা করে আর দুই একটা কথা জিজ্ঞেস করে সোজা বলে দিতেন যে এই রকম ব্যাপার নিয়ে কোর্টে যাওয়ার কোনও মানে হয় না।
 
ওনারা যেন আমার কথা শুনে একটু আশ্চর্য হয়েছেন এই প্রথমবার। এইবার আমারও কিছুটা না বললেই নয় তাই বলে চললাম একটা জিনিস আপনারা জানেন কি না জানি না। কিন্তু আদালত ব্যাপারটা বাইরে থেকে দেখে যতটা ফিল্মি মনে হয় ব্যাপারটা আদপেও তেমন নয়। আপনাদের কোর্ট চিনিয়ে আমার কোনও লাভ নেই, তবুও শুনে রাখুন। আমাকে পুলিশ ধরলেই আমার উকিল গিয়ে জামিনের আবেদন করবে। এই সব ক্ষেত্রে জামিন হয়ে যায়। যদি নাও হয় তবুও বিশ্বাস করুন দুটো হিয়ারিঙ্গের ভেতর জামিন হয়ে যাবে। ক্রস করতে উঠে আমার উকিল বার বার একই প্রশ্ন করবে। মিসেস মুখার্জি আপনি কি নিজের চোখে ওনাকে টাকাটা চুরি করতে দেখেছিলেন। আপনি সত্যি বললে কি বলবেন জানি না। কিন্তু মিথ্যা বললেই আরও পাঁচটা প্রশ্ন আসবে। আমার জামিন হয়ে যাবে। আবারও বলছি ম্যাক্স টু ম্যাক্স দুটো হিয়ারিঙ্গের পর আমার খালাস হয়ে যাবে। ট্রাস্ট মি।
 
এইবার সুধা সান্যাল কিছু একটা বলতে যাচ্ছিলেন, আমি আবারও ওনাকে থামিয়ে দিলাম আপনার হাজব্যান্ড কে সবাই কোর্টে সমীহ করে চলে। কিন্তু একটা জিনিস গিয়ে একটু জিজ্ঞেস করে দেখবেন। আপনার স্বামী সত্যিকারের কটা কেস জিতেছেন। অর্ধেকের বেশী কেস ঝুলে আছে, অর্থাৎ উনি জেতেননি। বাকি কেসগুলোর ম্যাক্সিমাম আউট অফ কোর্ট সেটেলমেন্ট হয়েছে। অর্থাৎ এইগুলোও উনি জেতেননি, হতে পারে সেটেলমেন্টে ওনার ক্লায়েন্ট কিছুটা লাভবান হয়েছে। বাকি কেসগুলোর উনি যে টাকা পেয়েছেন সেগুলো পেয়েছেন লিগ্যাল অ্যাডভাইস দিয়ে। অর্থাৎ এই কেসগুলোও উনি জেতেননি। বাকি কেস গুলো আধা আধি উনি জিতেছেন আর আধা আধি উনি হেরেছেন। আমি নিজে আউট অফ কোর্ট সেটেলমেন্ট করব না। আমার মতন কেসগুলোর ক্ষেত্রে অবশ্য অন্য ভাবেও আউট অফ কোর্ট সেটেলমেন্ট হয়ে থাকে। (হেঁহেঁ করে হাঁসতে হাঁসতে বললাম) মিসেস মুখার্জি আমাকে মানহানির জন্য ক্ষতি পূরণ দেবেন। দুই দশ দিন বড় বড় উকিলরা এই সব কেস টানার চেষ্টা করেন এই আশায় যে উল্টো দিকে যে আছে সে ভেঙ্গে পড়বে, কিন্তু সেটা না হলে নিজের মক্কেল কে সেটেলমেন্টের পাঠ পড়িয়ে সরে পরেন নিজের ফিস নিয়ে। কারণ এইসব ফালতু তুচ্ছ কেস নিয়ে দিনের পর দিন কোর্টে গিয়ে নিজের আর আদালতের সময় নষ্ট করার কোনও মানে নেই। দরকার হলে এখনই জিজ্ঞেস করুন আপনার স্বামীকে। মনে হয় না উনি অন্য কিছু বলবেন।
 
এইবার আমার হাসির পালা। হাসি থামিয়ে বললাম স্বামী আর পুত্র হারানোর কয়েক ঘণ্টা পর এরকম শোক সন্তপ্ত অবস্থায়, (গলা খাঁকড়িয়ে হেসে বললাম) মানে সচরাচর যেরকম সবার হয়ে থাকে, কে কে বাড়ির দোতলায় উঠেছে, এই হিসাব আপনি কতটা নিখুঁত ভাবে রেখেছেন, সেটা আদালতে গিয়ে প্রমান করতে হবে সব থেকে আগে! সমস্যা কি জানেন আনলেস প্রোভেন গিলটি, কোর্ট আইনত আপনার স্বামীর থেকে আমাকে বেশী প্রেফার করবেন। যতটা সাধারণ ভাবে কথাগুলো বললাম ততটা সোজা না হলেও, মোটের ওপর এই। আমার গ্লাসে একটা লম্বা চুমুক দিয়ে বললাম আন্টি আপনিও খুব টায়ার্ড, আমিও আপনাদের কথা শুনে টায়ার্ড হয়ে পরেছি। (একটু গম্ভীর হয়ে বললাম) দরকার হলে শুধু কোর্ট কেন, আপনাদের আমি আর কি কি দেখাতে পারি সেই প্রশ্ন এখন থাক। আমাকে এখানে কেন ডেকেছেন সেটাই খুলে বলুন। অবশ্য এখানে একটা কথা আমি বলিনি যেটা অবিনাশ বাবু আপনাদের বলবেন। মানে সেটাই হবে ওনার তুরুপের তাস।সুধা আন্টি জিজ্ঞেস করলেন সেটা কি?” বললাম কেসটা লম্বা টানার ভয় দেখিয়ে আমাকে ক্যারিয়ারের ভয় দেখাবেন। অর্থাৎ কেস লম্বা চললে আমি পাস করার পর কোনও চাকরি পাব না। বদনাম হবে। আর এইসব ভয়ে আমি হয়ত ভেঙ্গে পড়লেও পড়তে পারি। অবশ্য এইগুলো তর্ক সাপেক্ষ ব্যাপার। কিন্তু সত্যি। সবাই বদনামের ভয় করে। আমিও চাই না যে এরকম একটা সামান্য ব্যাপার নিয়ে ফালতু নিজের ক্যারিয়ার নষ্ট করতে। তাই জানতে চাইছি আপনারা কিভাবে ব্যাপারটা সেটেলমেন্ট করার কথা চিন্তা করছেন? (একটু থেমে বললাম) আপনাদের যদি গোপনে সেটেলমেন্ট করার ইচ্ছে না থাকত তাহলে নিশ্চয় আমাকে এইখানে ডেকে পাঠাতেন না। সরাসরি গিয়ে পুলিশে খবর দিতেন।আমি মুখ বন্ধ করলাম। অনেক হেভি ডোজ দেওয়া হয়ে গেছে। তবে বদনামের ভয় ইত্যাদি শুনে ওনাদের দুজনের মুখে আবার কিছুটা হলেও আত্মপ্রত্যয় ফিরে এসেছে।
 
বেলা আনটি বললেন আমিও কোর্টে যেতে চাই না। তবে তুমি কোর্ট চিনলেও আইন পুরোটা জানো কি জানো না সেটা দেখার দায় এই ক্ষেত্রে আমি অবিনাশকে দিতেও চাই না। তেমন দরকার হলে ভেবে দেখা যাবে খন। তবে এটাও বিশ্বাস করতে পারো, তেমন যদি হয় তো তোমার ঘাড়ে শুধু চুরি নয়... আর কি কি মামলা আমি চাপাবো সেটা তুমি স্বপ্নেও ভাবতে পারবে না।আমি শান্ত ভাবে বললাম আনটি , তেমন মামলা হলে আমার দিক থেকেও তেমন উকিল আসবে যারা কোর্টে অবিনাশ বাবুর প্যান্ট খুলে ফেলতে...।দুজনেই আবার নড়ে চড়ে বসেছেন। বাকি কথাগুলো নিজেই গিলে নিলাম। একটু থেমে বললাম কি বলবেন বলুন?” উনি বললেন টাকাটা তুমি সরিয়েছ। সত্যি কি মিথ্যে?” বললাম সে কথা ছেড়ে বলুন কি চান আমার কাছ থেকে। সুধা আনটি এইবার মধ্যস্থতায় এগিয়ে এলেন। আমার গ্লাস খালি। দেখছি সবার গ্লাসই খালি। কার কার রিপিট হবে?” আমি ধীরে ধীরে ধৈর্য হারাতে শুরু করে দিয়েছি। আমার নিজের কানেই আমার নিজের গলাটা কেমন যেন বজ্র কঠিন শোনালো। যেন আমি ওনাদের হুমকি দিচ্ছি। বললাম রিপিট হবে কি হবে না সেটা আনটির পরের কথার ওপর নির্ভর করছে। একটা কথা বলতে পারি তেমন দরকার হলে কোর্ট কেন, অবিনাশ বাবু যেন বাড়ি থেকেও এক পা বেরোতে না পারেন তার ব্যবস্থা আমি করতে পারি।
 
দুজনে একবার নিজেদের মধ্যে চোখাচুখি করলেন। সুধা আনটি এইবার মুখ খুললেন তুমি কি আমাদের হুমকি দিচ্ছ?” আমি বললাম ৯৯৯****৭৭৭। ডায়াল করুন আর আমি যা যা বলব সেটাই বলুন। নিজের মুখে নিজের নিন্দে করার ইচ্ছে আমার নেই।সুধা আনটি বললেন এটা কার নাম্বার।আমি হো হো করে হেঁসে উঠে বললাম আপনার মেয়ের, রাকার।উনি একটু নড়েচড়ে বসলেন। বললাম তার আগে একটা কথা বলুন, আমি যে আজ এখানে এসেছি সেটা আর কে কে জানে?” ওনাদের হাব ভাব দেখে নিয়ে বললাম অর্থাৎ কেউ জানে না। মানে রাকাও না। ভালো কথা। এইবার রাকাকে কল করুন। কলটা স্পিকারে দিন। যা যা বলতে বলছি সেগুলো বলুন। আপনার আর বেলা আনটির মধ্যে কথা হচ্ছিল, আর আপনারা আমাকে সন্দেহ করছেন। আমি অচেনা ছেলে। তাছাড়া পুলিশও আমাকে সন্দেহ করছিল। ব্যাপারগুলো বুঝিয়ে বলুন। আর সাথে এটাও বলুন যে দরকার হলে আপনারা ঠিক করেছেন যে আমার গোটা ফ্যামিলিকে এই নোংরা কাজের জন্য ধ্বংস করে ছাড়বেন।ওনার মোবাইলটা আমিই টেবিল থেকে উঠিয়ে নিয়ে ওনার দিকে এগিয়ে দিলাম আনলক করার জন্য। উনি করলেন। আমি রাকার নাম্বার ডায়াল করে ওনার হাতের সামনে রেখে দিলাম স্পিকার অন করে। একটু পরে ওই দিক থেকে রাকার হাস্কি ভয়েস ভেসে এলো।
 
মম কি ব্যাপার।কল শুরু হয়ে গেছে। ওনারা দুজন এখনও দুজনের দিকে তাকিয়ে দেখছেন। সুধা আনটি বললেন আচ্ছা শোন তোদের সাথে সংকেত বলে যে ছেলেটা পড়ে ওর ব্যাপারে একটু কথা বলার ছিল। রাকা একটু গলা খাঁকড়িয়ে জিজ্ঞেস করল কি ব্যাপার?” সুধা আনটি বললেন তোর আনটির সাথে কথা হচ্ছিল। আমাদের কেন জানি না মনে হচ্ছিল যে পুলিশ প্রথমে ওকে সন্দেহ করলেও ওর ব্যাপারে তেমন কিছু খোঁজ খবর না করেই ওকে ছেড়ে দিয়েছে। বাট আজ শিখার ব্যাপারটা হওয়ার পর, আই মিন, এটা কি কাকতালীয়? আমরা ভাবছি তোর বাপির সাথে কথা বলে ওকে একবার ভালো করে রগড়ে দেখব। আর তেমন হলে ওর গোটা ফ্যামিলিকে …” এর পর আর ওনাকে কিছু বলতে হয়নি। উল্টো দিক থেকে রাকা চিৎকার করে উঠেছে, “ ওর বিরুদ্ধে কোনও প্রমান নেই তবুও তোমরা যা খুশি করে চলেছ। ওর ফ্যামিলির গায়ে হাত দেবে তোমরা? তুমি আমি ড্যাড... সবাইকে ওরা রাস্তায় তেমন কিছু হলে আগুপিছু না ভেবে এই ভুল করতেও যেও না। ওর ফ্যামিলি অব্দি কোনও রকম আঁচ গেলে এখানে আগুন লেগে যাবে। দে আর কিং মেকারস। জাস্ট রিল্যাক্স। আর ড্রিংক করতে গেছ, সো ড্রিংক করো। বেশী চিন্তা করার কোনও দরকার নেই। ড্যাড কেস নিয়ে ব্যস্ত, কাল মুম্বাই যাচ্ছে। পরশু ফিরছে। তারপর আমি নিজে গিয়ে ড্যাডের সাথে কথা বলব। বাই। মরতে না চাইলে ওর বা ওর ফ্যামিলিকে নিয়ে বেশী দালালি করতে যেও না।এই না হলে মেয়ে! মাকে বলছে দালালি করতে যেও না। হেভি ব্যাপার। তবে ওষুধে কাজ হয়েছে। কল কেটে গেল। আবার আমি সময়টা একবার দেখে নিলাম। বললাম আমি টাকা চুরি করেছি কি করিনি এটা এখন থাক। কিন্তু এখনও আমি এটা বুঝতে পারিনি যে কেন আপনারা আমাকে এখানে ডেকে নিয়ে এসেছেন।এইবার হাল সামলালেন বেলা আনটি।
 
উনি একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললেন তোমাকে ভয় দেখানোর কোনও উদ্দেশ্য আমাদের ছিল না। রাদার, আমরা তোমাকে ডেকেছিলাম অন্য কিছু বলার জন্য। আমি চুপ। উনি বললেন আমরা জিজ্ঞেস করতাম যে তোমার টাকার দরকার আছে কি না! কোর্টে কিছু হোক বা নাই হোক, কিন্তু বিবেকের দিক থেকে তুমি চোর। আমি জানি টাকাটা তুমিই সরিয়েছ। না, না । বাঁধা দিও না, আমি আইনের ব্যাপারে কথা বলছি না। তোমার বদনাম হতেই পারে, আবার নাও হতে পারে, কিন্তু বিবেকের দিক থেকে তুমি চোর। অ্যান্ড বাই দা ওয়ে হোয়াট ইস দিস কিং মেকার থিং?” বললাম বিবেকের দিক থেকে আমি মেনে নিচ্ছি আমি চোর। আর কিং ব্যাপারটা ছেড়েই দিন। কাজের কথায় আসুন। আর এটাও সত্যি যে এটা কোর্টে উঠলে আর কিছু হোক না হোক আমার বদনাম হবেই। কোর্টের ভারডিক্ট কেউ পড়ে না। শুধু যার নামে কেস উঠেছে তার নামটা মনে করে রেখে দেয়। আমিও চাই না তেমন কিছু হোক। আমি চাকরি করে বড় হতে চাই। আইনের চোখে আমি ছাড়া পেলেও সমাজ বলে তো একটা জিনিস আছে।
 
হঠাৎ যেন দুজনেই মৃত সঞ্জীবনী পান করে জেগে উঠেছেন। আবার চোখাচুখি হল ওনাদের মধ্যে। দুজনেরই ঠোঁটের কোণে একটা ক্ষীণ হাসির রেখা। আমি ইশারায় ওনাকে বাকি কথা ঝেড়ে কাশার জন্য ইশারা করলাম। উনি বললেন সরাসরি একটা কথা জিজ্ঞেস করছি। আর কথাটা আমাদের তিনজনের বাইরে যাবে না সেই প্রমিসও করছি। আর একই প্রমিস তোমার কাছ থেকেও চাই।বললাম আগে তো শুনি কি বলতে চাইছেন। কে নিজের নামে বদনাম কোড়াতে চায়। আগেই তো বলেছি, ওই ব্যাপারে আমার ভয় আছে। এরপর কলেজে গিয়ে কারোর সাথে মুখোমুখি হতে আমার লজ্জা হবে। সেই জন্যই জিজ্ঞেস করছি কি বলার জন্য আমাকে এখানে ডেকে এনেছেন সেটা এইবেলায় বলে আমাকে টেনশন মুক্ত করুন প্লীজ। আমার গলার সুর এখন অনেকটা নরম। আর ওনাদের চোখে মুখে ভরপুর কনফিডেন্স, ভাবখানা এই যে অনেকক্ষণ পর একটা তেজি ঘোড়ার মুখে নাল লাগানো গেছে ফাইনালি!
 
একটু কেশে আরেকটা সিগারেট ধরিয়ে বেলা আনটি বললেন তোমার কি টাকার দরকার?” বললাম হ্যাঁ।উনি এইবার প্রান খুলে একটা তাচ্ছিল্যের হাসি আমার দিকে ছুঁড়ে দিলেন। আগেই তো সে কথা স্বীকার করে নিতে পারতে। এতগুলো কোর্ট কাছারি হাবি জাবি বলে কেন সবার সময় নষ্ট করলে? তুমি টাকা পাবে। আরও টাকা পাবে। তবে তোমাকে আমাদের কথা মত চলতে হবে। আর এই কথা যেন বাইরে প্রকাশ না পায়। এমনকি দোলন বা রাকার সামনেও নয়। তুমি যদি আমাদের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যানও করো তবুও কথাটা যেন গোপন থাকে। তবে টাকার অফারের ব্যাপারটা আগে কান খুলে শুনে নাও। আমি বললাম আপনাদের রিপিট লাগবে? আমি ভরে নিয়ে আসছি।ওনারা নিজেদের খালি গ্লাস আমার দিকে এগিয়ে দিলেন। ওনাদের দুজনের মধ্যে যে চোখাচুখি হল সেটা আমি মিস করিনি। দুজনের গ্লাস রিফিল করে নিয়ে এলাম। সব শেষে নিজের গ্লাসটা রিফিল করে নিয়ে এসে আবার ওনাদের মুখোমুখি বসে পড়লাম। 
[+] 2 users Like pcirma's post
Like Reply
Do not mention / post any under age /rape content. If found Please use REPORT button.


Messages In This Thread
RE: মুখোশ - The Mask by Daily Passenger - by pcirma - 05-03-2019, 03:35 PM



Users browsing this thread: 7 Guest(s)