Thread Rating:
  • 34 Vote(s) - 3.35 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
Thriller মুখোশ - The Mask by Daily Passenger
#40
শুধু একটা হাঁপ ধরা ভাব রয়েছে ওনার শরীরে। এই রকম একটা মাখনের মতন শরীর ওনার, এত ভয়ানক অরগ্যাসমের পর এত তাড়াতাড়ি ঠাণ্ডা হবে কি করে! আমার লিঙ্গেই তো এখনও শিথিলতা পুরোপুরি ফিরে আসেনি। তবে শ্বাস প্রশ্বাস অনেকটা স্বাভাবিক হয়ে গেছে। একটু প্রানায়ামে বসতে হবে। তবে তার আগে তিনটে কল সারতে হবে। আর দাঁড়ালাম না।
 
ঘরে ঢুকেই নগ্ন হয়ে তোয়ালে জড়িয়ে নিলাম। স্নানে যাব সবার আগে। তারপর বাকি সব কিছু। কিন্তু তার আগেই দরজায় নক পড়ল। শ্যামাদি আজ আসবে না।বললাম কেন?” ম্যাডাম বললেন এই মহিলা আর শ্যামাদি নাকি পাশাপাশি বাড়িতে থাকে। ওরা দুজনেই এই পাশাপাশি বাড়িতে কাজ করে। গতকাল বিকাল বেলার পর নাকি শ্যামাদি আর বাড়ি ফেরেনি।বললাম মানে?” উনি বললেন হাউ ডু আই নো? তবে রোজ নাকি এক সাথেই ওরা বাড়ি ফেরে। গতকাল অনেকক্ষণ ধরে শ্যামাদির জন্য দাঁড়িয়ে থাকার পরেও ও আসছে না দেখে এই মহিলা একাই বাড়ি ফিরে গেছে। শ্যামাদি আমার বাড়িতে কাজ করার পরেও আরেক বাড়িতে কাজ করে। সেখানে খোঁজ নিয়ে জেনেছে যে সেখানেও নাকি শ্যামাদি গতকাল যায়নি।
 
বললাম স্ট্রেঞ্জ।ম্যাডাম বললেন সে তো বটেই। তারপর সারারাত বাড়ি ফেরেনি। এক দিকে সৌরভ পাল বিদায় নিল, অন্য দিকে শ্যামাদি। অন্য দিকে আবার সৌরভ পাল শ্যামাদিকে টাকা খাইয়ে এই বাড়িতে এন্ট্রি নিয়ে আমার জন্য ক্যামেরা ফিট করেছিল। তবে এই সব বস্তির মেয়েদের ব্যাপার স্যাপার কিছু বোঝা যায় না।আমি বললাম আপনি এই নিয়ে খামোকা টেনশন নিতে যাবেন না। উনি বললেন সে আর নিয়ে কি হবে?” বললাম আমাদের গ্রামের দিকে এরকম হামেশা হয়। লোকের বাড়িতে কাজ করে। তলায় তলায় অন্য কারোর সাথে হয়ত লটরপটর আছে। হঠাত হাতে বেশী টাকা এসে যাওয়া কেটে পড়েছে। একটাই সমস্যা আপনার। শ্যামাদি সত্যিই যদি বিদায় নিয়ে থাকে তো আরেকজন কাজের লোক দেখতে হবে আপনাকে। তবে শ্যামদিকে খুব একটা বিশ্বাসী লোক বলা যায় না।
 
উনি বললেন হুম। বাই দা ওয়ে। সেক্সের সময় নোংরা কথাবার্তা বলতে আমারও খারাপ লাগে না। বরং ভালোই লাগে। তোমাকে দেখে একটা জিনিস খুব ভালো লেগেছে সংকেত। মিলনের সময় তুমি একরকম, কিন্তু মিলন শেষ হতে না হতেই তুমি আবার আমার ছাত্র হয়ে যাও। আমি বললাম ওটা একে অপরের গোপন ব্যাপার, কিন্তু এটাতো পাবলিক রিলেশন, এইখানে আমরা দুজনেই মার্জিত। উনি আমার নগ্ন বুকে একটা চুমু খেয়ে বললেন ঠিক বলেছ। পাবলিকলি আমি তোমার প্রফেসর, কিন্তু বেডরুমে বা এই বাড়ির চার দেওয়ালের ভেতর আমি তোমার বেশ্যা। আমি ওনার ঠোঁটে একটা চুমু খেয়ে ওনাকে আমার আলিঙ্গন থেকে মুক্তি দিলাম। উনি চলে যেতেই আমি দরজা দিয়ে বাথরুমে ঢুকে গেলাম।
 
স্নান সেরে বেরিয়ে এক ঘণ্টার প্রানায়াম সেরে নিলাম। সাথে কিছু এক্সারসাইজ। এখনও ম্যাডামের ডাক এলো না। এতে আশ্চর্য হওয়ার কিছু নেই কারণ আজ ওনাকে একা হাতে সব সামলাতে হচ্ছে। আর তাছাড়া এখন উনি শারীরিক ভাবে টায়ার্ডও আছেন। কাল রাত থেকে তো আর কম ধকল যায়নি। প্রথম ফোনটা করলাম মালিনীকে।
বললাম কি আমাকে তো ভুলেই গেছ! আজকাল আর মেসেজ করছ না, কলও করছ না।
উত্তর এলো একই কথা আমিও বলতে পারি।
আমি বললাম আমি কি করে আমার নতুন কিউট বউকে ভুলে যাব। এদিকে বৃষ্টি, তারপর ওই তোমাদের মিনিস্টারের মেয়ে আমাদের ক্লাসমেট, তাই ওনার কাজের জন্য আমাদের গিয়ে কিছু বেগার খাটতে হয়েছে। তবুও, তুমি একটা মেসেজ তো করতে পারতে।
ও বলল সোনা, আমি মেসেজ করব কি, এখন শিরে সংক্রান্তি চলছে। সবার চাকরি নিয়ে টানাটানি পড়ে গেছে।
আমি বললাম কেন?”
ও বলল আরে ওই ভি আই পি র বেশ কিছু জিনিস মিসিং।
বললাম সেকি। ওর সাথে তো এতগুলো সিকিউরিটি থাকে। তাতেও?”
বলল প্রথমে একটা চাবি মিস প্লেসড হয়েছিল। সেটা অবশ্য উনি আমাদের আগেই জানিয়েছিলেন। পরে অবশ্য সেই চাবি পাওয়া গেছিল। এটা কিছুদিন আগের ঘটনা। এখন ওনার দাবি ওনার ঘর থেকে বেশ কিছু জরুরি কাগজ পত্র হাওয়া হয়ে গেছে।
বললাম ঠিক আছে। টেক কেয়ার। ফাঁকা হয়ে কল কর।
ও বলল জানি না। সারা হোটেলে সার্চ চলছে। জানি না কি এমন ছাতার মাথা জিনিস ছিল ওই কাগজে।
বললাম ঠিক আছে পরে কথা হবে।
 
ফোন কেটে দিয়ে রাকাকে কল করলাম। ওর সাথে অনেক কথা হল। ও আজ দোলনের বাড়িতে যাচ্ছে। আমি ওকে জানিয়ে দিলাম যে আমার বিশেষ কিছু কাজ আছে। আমি আজ হয়ত যেতে পারব না। ও অবশ্য আমাকে যাওয়ার জন্য অনেকবার বলল, কিন্তু আমি কাটিয়ে দিলাম। আমার এক রিলেটিভ আসবে, সময় পেলে ওর সাথে দেখা করে অনেকটা সময় কাটাতে হবে ওনার সাথে। তাই এই রিস্ক নিতে পারছি না। তাছাড়া একটা জিনিস আমি রাকাকে পরিষ্কার ভাবে জানিয়ে দিলাম যে সেদিন ওর সাথে কথা বলার পর আমি ফিল করেছি যে রাকার মতন ম্যাচিওরড মেয়েকেই ভালোবাসা যায়। দোলন ইস নট মাই টাইপ। রাকা তাতে খুশি হয়ে ফোন কেটে দিল।
 
লাস্ট ফোনটা করলাম দোলনকে। ও আজ মৎসমুখীর কাজ শেষ হওয়ার পর রাতের দিকে ওর মাসির বাড়ি চলে যাবে কয়েকদিনের জন্য। ওর আর এই বাড়িতে ভালো লাগছে না। ওর মাসির বাড়ির ঠিকানাও আমাকে দিয়ে দিয়েছে। আমি ওকে বলেছি যে সময় পেলে নিশ্চয় গিয়ে ওর সাথে দেখা করে আসব। মাসির বাড়ি থেকে ব্যাক করে ও আবার কলেজ জয়েন করবে। ডিউটি খতম। এইবার নিচে গিয়ে দেখতে হবে ম্যাডামের কি অবস্থা।
 
তবে তার আগেই দরজায় নক পড়ল। ম্যাডাম। চোখ দুটো লাল। বললেন এই আমি ঘরে ঢুকে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। এই সবে স্নান সেরে বেরিয়ে ছি। ব্রেক ফাস্ট রেডি হতে একটু সময় লাগবে। আমি বললাম নো প্রবলেম।উনি দ্রুত নিচে নেমে গেলেন।
 
৩০
 
ব্রেকফাস্ট শেষ হতে না হতেই উনি লাঞ্চের তোর জোর শুরু করে দিয়েছেন। আমি খবরের কাগজটা হাতে নিয়ে একটু উল্টে পাল্টে দেখছি, এমন সময় আবার ফোন। রাকা। কি ব্যাপার।ও বলল গুরুতর ব্যাপার। শিখাদি খুন হয়েছে। আমি বলতে যাচ্ছিলাম যে এরকম মেয়েরা খুন হলে এত গুরুতর কিছু হয় না, কিন্তু গলার স্বর বদলে জিজ্ঞেস করলাম আরেকটা খুন? “ ও বলল হ্যাঁ। ডিটেল জানি না। দোলন ফোন করে জানাল। ওদের বাড়িতে কোনও এক পুলিশ অফিসারের আসার কথা ছিল আজ দুপুরে, সে নাকি এই কেস নিয়ে ব্যস্ত থাকবে বলে আসতে পারবে না। সেই সুত্রেই দোলন খবরটা পেয়েছে। ওর কাছেও কোনও ডিটেল নেই।বললাম স্ট্রেঞ্জ। কয়েকদিন আগে দীপক আর আজ শিখাদি। ফ্যান্টাস্টিক।
 
ম্যাডাম রান্নাঘরে ছিলেন। একবার কিচেনের দিকে উঁকি মেরে দেখলাম উনি একমনে নিজের কাজ করে চলেছেন। আমি রাকা কে বললাম এই নিয়ে বেশী কিছু ভাবিস না। পরে কথা হবে। এত খুনোখুনির কথা আর ভালো লাগছে না। কেন যে মরতে এলাম এই শহরে। আগেই বেশ ভালো ছিলাম। আমি চট করে উঠে ড্রেস করে নিয়ে ম্যাডাম কে বললাম আপনার তো এখনও বেশ কিছুক্ষণ লাগবে না কি?” উনি বললেন হ্যাঁ, কোথাও বেরোবে?” বললাম হ্যাঁ, একটা ছোট কাজ সেরে আসছি। এক ঘণ্টার মধ্যেই ফিরে আসব। উনি বললেন আমার কিন্তু আরও অনেক বেশী সময় লাগবে।আমি বললাম এক ঘণ্টার মধ্যে ফিরে আসব বলেছি। ফিরে এসেই লাঞ্চ খেতে চাইব বলিনি। আসছি।
 
বেরিয়ে ই কিছু দূর গিয়ে একটা ট্যাক্সি ধরলাম। ঠিকানা বলার সাথে সাথে ট্যাক্সি ছুটে চলল গন্তব্যের দিকে। একটা বাড়ির নাম্বার দেখে ওনাকে বললাম এখানেই থামুন। আমার পাঁচ মিনিটের কাজ আছে। সাইড করে রাখুন। এসে আবার রিটার্ন যাব। উনি বললেন যেখান থেকে এসেছিলেন ওখানেই?” আমি বেল বাজিয়েছি। দরজা খুলতে দেরী হল। একজন লুঙ্গি পরা ভদ্রলোক ঢুলুঢুলু চোখে এসে দরজা খুলেছেন। কাকে চাই?” একটা ধাক্কা দিয়ে ওনাকে ঘরের ভেতর ঢুকিয়ে নিজেও ভেতরে ঢুকে গেলাম। দরজা বন্ধ হল। উনি জড় ভরতের মতন এখনও দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছেন। ঘরের চারপাশটা দেখে নিয়ে সোজা ওনার বাথরুমে চলে গেলাম। ট্যাপ খুলে নিচে রাখা বালতিতে জল ভরে সেটা নিয়ে বাইরে বেরিয়ে এলাম। উনি বাথরুমের সামনে এসে দাঁড়িয়েছেন। ওনার মাথায় পুরো বালতিটা খালি করে দিলাম। শোন আর মন দিয়ে মগজ দিয়ে কান খুলে শোন। রাতের হ্যাংওভার এখনও না কাটলে আরও দুই বালতি জল তোর মাথায় আমি ঢেলে দিচ্ছি। কিন্তু ম্যাটার সিরিয়স। তোর হাতে ঋণ চোকানোর সময় এসেছে। কাল ঠিক দুপুরের দিকে লোকাল থানার পাশে গিয়ে ঘুর ঘুর করবি।উনি আমতা আমতা করে বলতে যাচ্ছিলেন কিন্তু কাল দুপুরে আমার কোর্টে অন্য একটা…” একটা সপাটে থাপ্পড় বসিয়ে দিলাম ওনার গালে।
 
এইবার হ্যাং ওভার কাটল? ঋণ চোকানোর সময় এসেছে, সো চুকিয়ে দে। বেশী পাঁয়তারা কষেছ কি তোমাকে সপরিবারে মাটির নিচে পুঁতে রেখে দিয়ে যাব। ইস দ্যাট ক্লিয়ার। তোর কেস চুলায় যাক। কাল দুপুরে তোর ওই লোকাল থানার সামনে গিয়ে হাজিরা দিতে হবে। সন্ধ্যে ৬ টা অব্দি ওখান থেকে নড়েছ কি… “ ও হাত তুলে বুঝিয়ে দিল যে আর কিছু বলার দরকার নেই। বলে চললাম যদি তেমন কিছু দেখিস তো সোজা ভেতরে ঢুকে তোর এই মোটা মগজে যা যা আছে সব উগরে দিবি। কতটা উকিলি শিখেছিস সেটাও দেখার সময় এসেছে। অবশ্য তেমন কিছু না হলে তোর কিছু করার নেই। কিন্তু মনে রাখিস, একটুও যদি গাফিলতি দেখি, তো সোজা …” ও হাত তুলে আবার বুঝিয়ে দিল বাকিটা ও বুঝে গেছে। শালা এই উকিলগুলো দিন কে দিন মাথায় চড়ে বসছে। শালা আমাকে কোর্ট দেখাচ্ছে। দরজা খুলে বেরিয়ে যাওয়ার সময় ওনার দিকে ফিরে বললাম কথাটা যেন মনে থাকে।দেখলাম ওনার সব্লপবসনা বউ আর মেয়েও গলার আওয়াজ পেয়ে বাইরে বেরিয়ে এসেছে। দুজনেই যে সদ্য ঘুম থেকে উঠে এসেছে সেটা আর বলে দিতে হয় না। গতকাল নিশ্চয় কোনও পার্টি ছিল বাড়িতে। বাথরুমের সামনে জলে জলাকার, তারপর আমাকে ওরা কেউ আগে দেখেনি। ওনারা দুজনেই একটু থতমত খেয়ে গেছে। আমি ওনাদের হাত জোড় করে নমস্কার জানিয়ে বললাম অনেক সকাল হয়ে গেছে দেখে এসেছিলাম। কিন্তু এখন দেখছি যে অসময়ে চলে এসেছি। ম্যাডাম, উকিল বাবুকে একটু কড়া কফি খাওয়ান। এখনও ওনার হ্যান ওভার কাটেনি। উকিল বাবুর দিকে ফিরে বললাম অবশ্য উনি মনে হয় না চান যে আবার আমার এই বাড়িতে পায়ের ধুলো পড়ুক। একটু কফি খাওয়ান ওনাকে।
 
বাইরে বেরিয়ে একটা সিগারেট ধরিয়ে বললাম চলো হে পাইলট। ফিরে চলো।গাড়ি আবার আগের রাস্তা ধরে ফিরে চলল। রাস্তায় একটা ফোন সারতে হল। ট্যাক্সি থেকে নেমে আবার মালিনীকে একটা ফোন করলাম। ওর গলা শুনে বুঝতে পারলাম যে এখনও বেশ চাপে আছে। বললাম শুধু একটা কথা বল। তোমার মোবাইলটা কখন কালেক্ট করে নেব।বলল সেটা পরে করলেও হবে। ভীষণ নয়েস হচ্ছে। এছারা আর কোনও প্রবলেম নেই। আমি বললাম তোমার সময় হলে আমাকে জানিয়ে দিও। এখনও ব্যস্ত?” বলল হ্যাঁ ভীষণ। বললাম না গোটা হোটেল সার্চ হচ্ছে। তোমার ঘরেও সার্চ হবে। হেহে। তবে রুমটা এখনও খালি। অন্য রুমগুলোতে লোক আছে। সবাই আপত্তি জানাচ্ছে। একটা বাজে ক্যায়োস। বললাম ঠিক আছে রাখছি। কোনও দরকার পড়লে জানিও।এত তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরছি দেখে ম্যাডাম একটু আশ্চর্জ হয়ে বললেন গার্ল ফ্রেন্ড আজকে বেশী আমল দেয় নি বুঝি? আজ এত তাড়াতাড়ি বিফোর টাইম?” আমি বললাম সে আবার কে? যত সব বাজে কথা। বেশী বাজে বকলে কিন্তু লাঞ্চের আগেই আরেকবার…” উনি বললেন সেটা চাইলে পেতেও পারো। তবে তার আগে দেখাতে হবে যে তুমি আমাকে কতটা ভালোবাসো।আমি উপরে উঠে গেলাম। যেতে যেতে বললাম বই নিয়ে বসতে হবে। পরে কথা হবে।
 
লাঞ্চের আগেই রাকার আরেকবার ফোন এলো। ও বলল শোন আমি দোলনের বাড়িতে এসেছি। দুজন পুলিশ এসে ইতিমধ্যে ওদের সাথে দেখা করে গেছে। আমার বাবা ছিল বলে ওখানে ডিটেলে ব্যাপারটা বলেছে। খুব বাজে ভাবে খুন করেছে শিখাকে।বললাম কি ভাবে?” ও বলল তুই ম্যাডামের বাড়ির ঠিকানা দে। আমি ফিরতি পথে ট্যাক্সি করে গিয়ে একবার তোর সাথে দেখা করে আসব।বললাম সেটা না করাই ভালো। এমনিতেই আমি মাত্র দুই দিন হল এখানে এসেছে। এরই মধ্যে বাড়িতে খুনোখুনি নিয়ে আলোচনা শুরু হলে বেশীদিন আর এখানে রাখবেন না। রাকা হেসে বলল তাতে এক দিক থেকে ভালোই হবে। আমার জানু সারাক্ষন আমার চোখের সামনে থাকবে। আর তোর কোনও পয়সাও লাগবে না। বললাম সেটা ঠিকই বলেছিস, কিন্তু বেকার ইম্প্রেশন খারাপ করার কোনও মানে দাঁড়াচ্ছে না। তুই বাড়ির কাছে এসে ফোন করিস, আমি বেরিয়ে গিয়ে তোর সাথে দেখা করে নেব। তুই ঠিকানাটা নোট করে নে। ফোন কেটে গেল।
 
লাঞ্চের সময় ম্যাডাম বললেন সংকেত, আমি একটু ঘুমাব। তার আগে কি…” আমি বললাম ম্যাম আপনি একটু রেস্ট নিয়ে নিন। রাতে না হয় আবার।উনি বললেন বেশ বেশ যেমন তোমার ইচ্ছে। আমি জোর করব না। এমনিতে কাল রাত থেকে অনেক বার হয়েছে।আজ দুপুরের রান্নাটা সত্যিই ভালো হয়েছে। কচি পাঁঠার ঝোল। কিন্তু রাকার কথা গুলো মনে কোনায় এমন ভাবে দাগ কেটে গেছে যে কিছুতেই খাওয়াতে ফোকাস করতে পারলাম না। অবশ্য ভাব খানা এমন দেখালাম যেন হেভি খাচ্ছি। খেয়ে দেয়ে উঠে কানে হেড ফোন গুঁজে একটু শুয়ে রইলাম। কিছু ভালো গান আর কিছু খারাপ গান শুনে সময়টা দ্রুত পার হয়ে গেল।
 
বেলা চারটে নাগাদ রাকার ফোন এলো। বাড়ির থেকে দূরে দাঁড়িয়ে আছি। চলে আয়। আমি একবার ম্যাডামের ঘরটা গিয়ে দেখে নিলাম। ভেতর থেকে লক। কোনও আওয়াজ আসছে না। নেমে গেলাম। রাকা আমাকে যা বলল তার সারমর্ম করলে এরকম দাঁড়ায়ঃ
১। শিখার ঘরে শিখার মৃত দেহ আবিষ্কার করেছেন বাড়ির দুই মালকিন। ওনারা দুজন বোন। দুজনেই বিধবা। কারোর কোনও ছেলে পুলে নেই। স্বামী বিয়োগের পর প্রথম বোন এসে এই বাড়িতে উঠেছিলেন। তার পর দ্বিতীয় বোন এসে ওঠেন। দুজনেরই বয়স প্রায় আশির কাছাকাছি। (এগুলো জানা খবর, মানে শিখার ব্যাপারটা ছাড়া আর ওনারা যে দুই বোন সেটা ছাড়া। )
 
২। কোনও কিছু ধারালো জিনিস দিয়ে শিখার মাথাটাকে ওর শরীরের থেকে আলাদা করে বিছানার বালিশের ওপর শুইয়ে রাখা হয়েছিল।
 
৩। শিখার মেইন বডিটা পরে ছিল মেঝেতে। নগ্ন। সারা গায়ে একটা সুতোও ছিল না।
 
৪। শিখার দুটো হাত কেটে ওর মাথার দুপাশে সাজিয়ে রাখা হয়েছিল।
 
৫। শিখার দুটো পা কেটে বিছানার শেষ প্রান্তে সাজিয়ে রাখা হয়েছিল।
 
৬। ঘরে প্রচুর গাঁজার সিগারেট পাওয়া গেছে।
 
৭। একটা ভদকার বোতল পাওয়া গেছে। তবে সেটা প্রায় শেষ।
 
৮। শিখার মোবাইল পাওয়া গেছে যেটা পুলিশ বাজেয়াপ্ত করেছে।
 
৯। আশ্চর্য জিনিস হল সারা ঘরে তন্নতন্ন করে খুঁজেও এই জিনিসগুলো পাওয়া যায়নি।
 
ক। শিখার একটাও ড্রেস, আন্ডার গারমেন্ট, কোনও কিচ্ছু না। আলমারি পুরো খালি।
 
খ। গোটা ঘরে একটা টাকা,পয়সা বা একটা সিকি আধুলিও পাওয়া যায়নি। শিখার পার্স পাওয়া গেছে অবশ্য। তবে সেটা খালি। একটা কাগজ বা একটা পয়সাও পাওয়া যায়নি ভেতর থেকে।
 
গ। এটা সব থেকে আশ্চর্যের বিষয়। গোটা ঘরে একটাও ফিঙ্গার প্রিন্ট পাওয়া যায়নি। এমনকি শিখাদিরও নয়।
 
১০। দীপকের মৃত্যুটাকে সবাই দোলনের দাদা আর দোলনের বাবার মৃত্যুর সাথে কানেকটেড ধরে নিয়েছে। আর এইবার দীপকের গার্ল ফ্রেন্ডের এরকম শোচনীয় মৃত্যুতে সবাই নাকি শিওর যে এই সবকটা মৃত্যু এক সুত্রে গাঁথা। হতে পারে এইগুলো পলিটিকাল মার্ডার।
 
১১। দুজন বোন , মানে বাড়ির মালকিনরা ভীষণ শকে আছেন। বড় বোন প্রথমে গিয়ে শিখার ডেড বডি আবিষ্কার করে সেখানেই মূর্ছা যান। পরে ছোটবোন গিয়ে সব কিছু দেখে চিৎকার করে সেখানেই ফিট হয়ে যান। তবে ততক্ষণে বাড়ির কাজের মাসি চলে এসেছিল। সে সব ব্যাপার স্যাপার দেখে পাড়ার ক্লাবের লোক জনকে ডেকে নিয়ে আসে। তারাই পুলিশকে খবর দেয়। বাড়িতে কে এসেছিল, কি বৃত্তান্ত কালকের আগে জানা যাবে না কারণ দুজন মহিলাই হসপিটালে ভর্তি। ডাক্তার ২৪ ঘণ্টার আগে পুলিশকে ওদের সাথে কথা বলতে দিতে নারাজ।
 
১২। লাশ চালান করে দেওয়া হয়েছে পরীক্ষার জন্য।
 
সব শুনে আমি বললাম কিছু করার নেই। দেখা যাক কি হয়। বাই দা ওয়ে আমি আজ যেতে পারিনি বলে ওরা বেশী মাইন্ড করেনি তো?” রাকা বলল দোলন একটু দুঃখ করেছে। কাকিমাও দুঃখ করেছেন। তবে তেমন কিছু নয়। আসলে অনেক লোক বলা হয়েছিল। সবাই প্রায় কাটিয়ে দিয়েছে। লোক হয়েছিল, তবে কেউ খায়নি। আয়োজন ভালোই ছিল। তবে অনেক খাওয়া নষ্ট হয়েছে এই যা।জিজ্ঞেস করলাম তোরাই লাস্ট ব্যাচ ছিলিস?” বলল হ্যাঁ।বললাম রাতে লোক কেমন হয়েছে জানিস কিছু? তেমন ভিড় না হলে একবার গিয়ে দেখা করে আসতে পারি।বলল দূর ছুটির দিন বলে সবাই সকালেই চলে এসেছে। দোলন ৮ টার দিকে ওর মাসির বাড়ি চলে যাবে।বললাম হ্যাঁ আমার সাথে কথা হয়েছিল। মাসির বাড়ি যাওয়ার ব্যাপারটা বলেছে বটে।রাকা বলল কিন্তু আন্টি ভীষণ একলা ফিল করছেন। দোলনকে অনেকবার বলেছেন দুদিন থেকে তারপর যেতে। কিন্তু ওর মাথায় জেদ চেপেছে। এখন আর ওর এই বাড়ি ভালো লাগছে না। তবে অনেক বোঝানোর পর ঠিক হয়েছে যে ও দিন চারেকের ভেতর ফিরে আসবে। কিন্তু এই অবস্থায় ও এই বাড়িতে কিছুতেই থাকবে না। ওকে একটু ঠাণ্ডা হতে হবে। ও ওর দাদার একটা ছবিও গুছিয়ে নিয়েছে। জেদি মেয়ে আফটার অল।
 
আমি বললাম কিন্তু এই সময় আন্টিকে কে এই রকম একা রেখে চলে যাচ্ছে?” রাকা বলল বস, এই সব মেয়েরা এমনিতে ভালো, কিন্তু গুড ফর নাথিং। ওর নিজের মায়ের সাথে বনিবনা নেই। তাই বলে এই অবস্থাতে কেউ কারোর মাকে একলা ফেলে রাখে না। আমারও আমার মার সাথে কোনও বনিবনা নেই, তাই বলে কি এই অবস্থায় আমি মাকে একলা ফেলে রেখে চলে যেতাম?” আমি বললাম বাড়িতে নিশ্চয় আরও লোক এসেছে?” রাকা বলল না সব বাইরের লোক। আত্মীয় সজন বলতে তেমন কাউকে দেখলাম না যে কাকিমা কে সাপোর্ট করবে। অগত্যা ঠিক হয়েছে বাড়ি ফিরে গিয়ে মা কিছু জামা কাপড় নিয়ে শিফট করবে ওখানে দিন চারেকের জন্য, মানে দোলন যত দিন না ওখানে আসে। আফটার অল দুজনেই একই বয়সী, দুজনের মেন্টালিটিই এক। সুতরাং দোলন আর আমি আশা করছি যে দুজন দুজনের সাথে থাকলে হয়ত কাকিমা তাড়াতাড়ি নিজেকে গুঁটিয়ে নিতে পারবেন। হেসে বললাম এটা তোরা ঠিক বুঝেছিস। হেহেরাকা রাস্তার মাঝেই আমাকে একটা হাগ দিয়ে ট্যাক্সি চেপে চলে গেল। আমি বাড়ি ফিরে এলাম। খানিকক্ষণ চুপ করে বসে থেকে দুই তিনটে ফোন সেরে নিলাম। তারপর সকালের সেই অচেনা নাম্বারে ডায়াল করলাম।
 
তুমি এলে না ফাইনালি?” বললাম আন্টি কিছু মনে করবেন না। একটা ব্যাপারে বাজে ফেঁসে গেছিলাম। তবে সন্ধ্যায় আসব ভাবছি।বললেন হুম সেটা আসতে পারো।একটা কথা এখানে বলে রাখা ভালো, ওনার গলার স্বর শুনে মনে হল যে উনি নিজেকে পুরোপুরি সামলে নিয়েছেন। বললাম লোকজন আসছে তো? তখন গিয়ে না হয় দেখা করে আসব। উনি বললেন না তেমন কেউ আর সন্ধ্যায় আসবে বলে মনে হচ্ছে না। যারা আসবে তারা ৭ টার মধ্যেই চলে আসবে। বললাম তাহলে তখনই আসা ভালো। উনি বললেন তুমি দেরী করেও আসতে পারো।বললাম দোলন আমাকে কল করেছিল। বলল যে ও মাসির বাড়ি যাচ্ছে।বললেন হ্যাঁ। সেটা এক দিক থেকে বোধহয় ভালোই হয়েছে। ও শান্তনু কে ভীষণ ভালবাসত।কিছুক্ষণ দুজনেই চুপ। আবার বললাম তাহলে ও কখন রওয়ানা দিচ্ছে বলুন। আমি না হয় তার আগেই চলে আসি?” উনি বললেন ও ঠিক ৮ টার ভেতর বেরিয়ে যাবে।আবার দুজন খানিকক্ষণ চুপ। বললাম একটা কথা, আপনি আমার সাথে কিছু কথা বলতে চাইছিলেন। মনে হচ্ছিল যে কথাটা একটু গোপন। আমি যদিও আন্দাজ করতে পারছি না যে কি গোপনীয় কথা থাকতে পারে। তবুও। আজ যদি দোলন ৮ টার দিকে চলে যায়, তাহলে কি আমি ৮ টার পর আসব? নাকি তখন লোকজন থাকবে?” উনি হেসে বললেন নো নো। কেউ থাকবে না। রাতে খাবার দাবারের বন্দবস্ত হয়েছিল বটে। তবে সেটা দুপুরেই মার্জ করে দিয়েছি। রাতে আর কেউ আসবে না। কেউ এলে ওই সাতটার মধ্যে এসে যাবে। যারা খাবে তাদের জন্য ভালো পার্সেল সিস্টেম করে দিয়েছি। তুমি ৮ টার পর চলে এসো। সেটাই ভালো হবে।এখন নিয়ম ভঙ্গের কাজে পার্সেল সিস্টেমও খুব পপুলার। এটা অবশ্য আমার অজানা কিছু নয়।
 
বললাম ঠিক আছে আমি ঠিক ৮ টা বেজে ১০ মিনিটের দিকে আপনার বাড়ি পৌছাব। উনি বললেন থ্যাঙ্কস ডিয়ার। একটু সময় নিয়ে এস। আর ডিনার এখানেই করবে। আজ আর আলাদা করে কিছু রান্না হয়নি। তাই দুপুরের খাবারই পাবে। তবে রান্না খুব খারাপ হয়নি। একটু বাসী খাবার খেতে হবে এই যা। আমি বললাম ছি ছি, এ কি বলছেন। বাসী খাবারে আমি অভ্যস্ত। তবে কাকুর কাজের ব্যাপারে তো, তাই এই খাবার আমি খাব না। উনি বললেন বাসী খাবারে যে তুমি অভ্যস্ত সেটা আমি জানি। এস। খাবার পছন্দ না হলে ভেবে দেখা যাবে খন। ডিনার এখানে খেলেই ভালো, কারণ সময় লাগবে কথা বার্তা বলতে। রাখছি এখন। এখনও অনেক লোক আছে। তবে সবাই যাবে যাবে করছে। বাসী খাবারে আমি অভ্যস্ত এটা উনি কি করে জানলেন সেটা বুঝতে পারলাম না। তবে ওনার শেষ কিছু কথার মধ্যে একটা অন্য ইঙ্গিত পাচ্ছিলাম। সঠিক বুঝতে না পারলেও... যেতে হবে। কটায় যাব সেটাই এখন ভেবে ঠিক করতে হবে। কিছুক্ষণ অনেক কিছু ভেবেও তল না পেয়ে শেষে ঠিক করলাম যে যা আছে কপালে দেখা যাবে। কিন্তু আজই কথা বলে ফিরে আসি। কাল থেকে কলেজ আর টিউশানি। আর তারপর রাকা আর ম্যাডাম তো আছেনই। দোলনের কথা ভেবে বুকের ভেতরটা কেমন যেন করে উঠল। কিন্তু কিছু করার নেই। ওয়ার্ক কামস ফার্স্ট। যদি কপালে থাকে তো দোলনের সাথেও
 
ঠিক ছটার সময় ম্যাডামের ঘরের দরজায় গিয়ে নক করলাম। ব্যাপার কি এখনও ঘুমাচ্ছেন। বার পাঁচেক নক করার পর দরজা খুলল। হাসি মুখে জিজ্ঞেস করলেন কি ব্যাপার?” বললাম শুনুন, দুপুরে যাইনি বলে কাকিমা, মানে দোলনের মা ভীষণ জোরাজুরি করেছেন। আসলে আমি কাকুর কাজের সময় গিয়ে অনেক জোগাড় যন্তর করে দিয়ে এসেছিলাম। এখন একবার না গেলেই নয়। কিন্তু কটায় পৌছাব বুঝতে পারছি না। ম্যাডাম বললেন বেশ তো যাও না। গিয়ে ঘুরে এসো।বললাম না। এখন আমাকে একজনের সাথে দেখা করতে যেতে হবে। সকালে দেশের বাড়ি থেকে একজনের আসার কথা ছিল। ওই যে সকালে বেরিয়ে ছিলাম মনে আছে? বেরনোর পর মেসেজ পেলাম যে ট্রেন ভয়ানক লেট যাচ্ছে। এই এতক্ষনে এসে পৌছাবে। উনি বললেন তাহলে তখন গিয়ে কোথায় দাঁড়িয়েছিলে?” বললাম কোথায় আর গেলাম? বলছি না বেরনোর একটু পর মাঝ রাস্তা থেকেই মেসেজ পেয়ে ফিরে আসতে হয়েছে। উনি বললেন ও তাই এত তাড়াতাড়ি ফিরে চলে এসেছিলে। ঠিক আছে। তাহলে ফাইনাল প্ল্যান কি?”
 
মনে মনে ভাবলাম উনি যদি সকালেই বেরনোর সময় একটু খুঁটিয়ে জিজ্ঞেস করতেন যে কোথায় যাচ্ছি আর কেন যাচ্ছি তাহলে এই অজুহাতটা এখন খাটত না, আবার নতুন একটা কিছু ভেবে বলতে হত। বললাম প্রথমে ওই ভদ্র লোকের সাথে গিয়ে দেখা করতে হবে। তারপর ওনাকে নিয়ে গিয়ে একটা ধর্মশালায় ওঠাতে হবে। ওনার এখন দিন তিনেকের মামলা। তারপর দোলনদের বাড়ি যাব। দেখা করে আবার ধর্মশালায় ফিরে গিয়ে ওনাদের সাথে ডিনার সেরে ফিরব।ম্যাডাম বিষণ্ণ মুখ নিয়ে বললেন ভাবলাম ও ফিরে আসার আগে দুজন দুজনের সাথে বসে একবার ডিনার করব, কিন্তু তুমি আজকেই সব মাটি করে দিলে? কিন্তু এটাও দরকার। একটা জিনিস দেখে খুব ভালো লাগলো। তোমাদের গ্রামের লোক জনদের ভেতর ইউনিটি খুব বেশী। বললাম ওদের কোলে পিঠে মানুষ হয়েছি। এখন আমি শহরে আছি। ওদের কেউ এখানে এলে একটু দেখা না করলে হয়?” উনি বললেন ঠিক আছে। আজ তোমার জন্য কিন্তু ডিনার রাখছি না। বললাম ঠিক আছে। আমি বেরিয়ে যাচ্ছি। বেশী রাত হলে আমি এসে ডুপ্লিকেট চাবি দিয়ে খুলে ঢুকে যাব। ভেতর থেকে ছিটকিনি দেওয়া থাকলে আপনাকে কল করে ওঠাব।উনি আমার দিকে এগিয়ে এসে আমার সাথে ঘন হয়ে দাঁড়িয়ে বললেন অর্থাৎ আজ আমাদের কিছু হবে না। বললাম কাল কলেজ আছে। যদি তাড়াতাড়ি ফিরে আসতে পারি তো কেন হবে না। বাই।
 
আর দাঁড়ালাম না। বাইরে বেরিয়ে ই দুটো কল সেরে নিলাম। দুটো সিগারেট ধ্বংস করলাম। টাইম ইস পারফেক্ট। এইবার একটা ট্যাক্সি ধরে রওয়ানা দিলাম। দোলনের বাড়ির দিকে নয়। অন্য কোথাও। আকাশে মেঘ করেছে। ঘন বৃষ্টি না হলেও বৃষ্টির একটা সম্ভাবনা আছে। দুই এক জনের সাথে দেখা করতে হবে। দেশের বাড়ির লোকের ব্যাপারটা যে পুরো ঢপ সেটা তো সবারই জানা, তাই আর ওটা নিয়ে কিছু লেখার মানে দাঁড়াচ্ছে না। সব কাজ সেরে আরও দুটো ট্যাক্সি বদল করে অবশেষে দোলনদের বাড়িতে গিয়ে পৌছালাম। আজ বুক পকেট থেকে বের করে ওয়াচটা দেখে নেওয়া দরকার কারণ আজকের সময়ের দাম বড্ড বেশী। এই ঘড়ির দেখানো সময়ের দাম আমার মোবাইলের ঘড়ির দামের থেকে অনেক বেশী দামি। ঘড়ি বলছে ৮ টা বেজে ২৫ মিনিট। কলিং বেল বাজালাম। দরজা খুলল। বেলা মুখার্জি। ভেতরে এসো।বাড়ির সামনের পথটা অন্ধকার হয়ে আছে। ওনাকে ঠিক মতন দেখতে পেলাম না। তবে ওনার গলার আওয়াজ পেলাম। এই সব জিনিস বাড়ির চাকর বেয়ারাদের সামনে ডিসকাস করা ঠিক নয়, তাই ওদের আমি আজকের রাতের মতন ছুটি দিয়ে দিয়েছি। তাও বটে। নইলে এরকম বাড়ির মহিলারা নিজেরা গিয়ে দরজা খোলেন না। এনাদের অসংখ্য চাকর বাকরদের মধ্যে কেউ গিয়ে এই কাজটা করে।
 
আমি অন্ধকারে ওনাকে ফলো করতে করতেই জিজ্ঞেস করলাম কিন্তু কি নিয়ে এত গোপনীয়তা সেটা যদি বলতেন?” উনি হেসে বললেন সব জানতে পারবে। সময় হোক, সব জানতে পারবে।একটু জোরেই হেসে ফেললাম, বললাম তা ঠিক, সময় হলেই সবাই সব কিছু জানতে পারবে। সত্যি বাড়িটা পুরো খালি। কে বলবে আজ ওনাদের নিয়ম ভঙ্গের কাজ হয়েছে। কেউ নেই বাড়িতে। একটা যেন শ্মশানপুরীতে এসে ঢুকেছি। আরেকটা কথা জিজ্ঞেস না করে পারলাম না আন্টি এত অন্ধকার করে রেখেছেন কেন? এখন আপনাদের যা মনের অবস্থা একটু আলোতে থাকলে দেখবেন আপনাদের রিকোভার করতে সুবিধা হবে। আপনাদেরই লাভ...অন্ধকারেই আওয়াজ এলো সংকেত, আলো যেখানে থাকার সেখানে ঠিকই আছে। অন্ধকার শুধু এক তলায়। এখানে আলো জ্বালিয়ে রাখলে সরকারকে কিছু বেশী টাকা দেওয়া ছাড়া আর কোনও লাভ নেই। ইনফ্যাক্ট লাভের প্রশ্ন এখানে আসেই না।একটা অদ্ভুত সশব্দ হাসি দিলেন উনি। আমরা চওড়া সিঁড়ি বেয়ে উপর দিকে উঠে গেলাম। এই সিঁড়ি আমার মুখস্ত। তবুও ওনার পেছন পেছন যাওয়া ছাড়া গতি নেই। সিঁড়ির পথটাও অদ্ভুত ভাবে অন্ধকার হয়ে আছে। মানে ঘুটঘুটে অন্ধকার। দ্বিতল ছাড়িয়ে উনি সেকন্ড ফ্লোরের দিকে যাত্রা শুরু করলেন। এই পথও আমার মুখস্ত। অবশ্য তিন তলার কোনও ঘরে ঢোকার সৌভাগ্য আমার এখনও হয়নি। তিন তলায় আসতেই আলো চোখে পড়ল। অবশ্য এই আলো আমি বাড়ির বাইরে থেকেই দেখেছি। প্যাসেজে আলো জ্বলছে। এখানে দুটো পাশাপাশি ঘর। একটা ঘর বন্ধ। অন্য ঘরটার ভেতর থেকে আলো দরজার তলা দিয়ে বেরিয়ে আসছে। একদম উজ্জ্বল আলো। দরজা খুলে উনি ভেতরে ঢুকে গেলেন। পেছনে আমি। 
[+] 2 users Like pcirma's post
Like Reply


Messages In This Thread
RE: মুখোশ - The Mask by Daily Passenger - by pcirma - 05-03-2019, 03:35 PM



Users browsing this thread: 1 Guest(s)