05-03-2019, 03:15 PM
নির্লজ্জের মতন ভোগ করে চললাম ওর অসহায় নরম ছোট শরীরটাকে। ওর নিঃশ্বাস প্রশ্বাসের গতিও ধীরে ধীরে কমে আসছে। বুঝতে পারছি যে ওর শরীরটাও হাল ছেড়ে দিয়েছে। কিন্তু আমার সেটা নিয়ে কোনও মাথা ব্যথা নেই। কোমরের আগু পিছু করার গতিটা আরও বেড়ে গেছে। কতক্ষণ এইভাবে একটা অসার শরীরকে ভোগ করেছি জানি না, কিন্তু হঠাত বুঝতে পারলাম যে বাঁড়ার ভেতর একটা চেনা শিহরণ জেগে উঠেছে। আর বেশ তীব্র ভাবে জেগে উঠেছে অনুভূতিটা। বেরোবে আমার রস। কিন্তু আমার অভিজ্ঞতা বলে আরও মিনিট তিনেক কি পাঁচেকের ধাক্কা। কিন্তু এর মধ্যে থামাতে পারব না। এইবার থামলে আর কিছু হবে না। ওর বুক থেকে মুখ উঠিয়ে ওর ঠোঁটের ওপর নামিয়ে নিয়ে গেলাম আমার ক্ষুধার্ত ঠোঁট দুটোকে। মনের সুখে চুষে চললাম ওর ভেজা ঠোঁট দুটোকে। ওর চোখ বন্ধ। মুখটা ঘামে ভিজে গেছে। বৃষ্টির তেজ বেড়েছে। আমরা ভিজে যাচ্ছি। আমাদের জামা কাপড় ভিজে যাচ্ছে, কিন্তু সেই নিয়ে আমার আর এখন কোনও মাথা ব্যথা নেই। মালিনীকে যতটা জোরের সাথে চুদেছি, এখন এই ভার্জিন মেয়েটাকেও সেই একই জোরের সাথে চুদে চলেছি। অবশ্য মালিনীকে চোদার সময়েও প্রথম দিন আমার মনে হয়েছিল যে ও একটা ভার্জিন বউ। হাহা। আমার ভেতরের পশুটা এখন নিজের কামনা চরিতার্থ করতে চাইছে। শরীরের ভেতরের রস উগড়ে দিতে চাইছে। তবে মালিনীর মতন ওর শরীরের ভেতর রস ঢালতে পারব না। এইসব চিন্তা মাথায় আসতেই ভেতরের উত্তেজনা আরও বেড়ে গেল। পুরো ব্যাপারটাই তো আসলে মেন্টাল গেম।
নাহ আর বেশীক্ষণ ধরে রাখতে পারব না। অবশ্য আর ধরে রাখতে চাইও না। ওর শরীরের ভেতরটা একদম আঠালো হয়ে গেছে। ফলে আমার উত্তেজনা আরও বেড়ে উঠেছে প্রত্যেকটা ঘর্ষণের সাথে। শরীর শরীরকে চেনে। ও নেতিয়ে গেলেও এখন ওর শরীর বুঝতে পেরেছে যে আমার হয়ে এসেছে। আর তাই ফিরে এসেছে ওর চেতনা। ও আমাকে মিন মিন করে বলল “সোনা ভেতরে ফেলিস না। প্রেগন্যান্ট হয়ে যেতে পারি। “ আমি কোনও উত্তর দিলাম না। বীর্য উঠে আসছে আমার বাঁড়ার গা বেয়ে। ঠিক এই সময় শক্ত ফোলা জিনিসটাকে ওর ভেতর থেকে বের করে নিলাম। আর সাথে সাথে বাঁড়ার মুখ দিয়ে ছলকে বেরিয়ে এলো সাদা রঙের বীর্য। ডান হাত দিয়ে খিচতে শুরু করে দিয়েছি বাঁড়াটাকে। গরম ভেজা জিনিসটা কাঁপছে। আর মুখ থেকে ছলকে ছলকে বেরিয়ে চলেছে শারীরিক রস। ওর তলপেট, স্তন নাভি… কোথায় কোথায় গিয়ে আমার উদ্ধত রস ছিটকে পরে ছে সেটা এই অন্ধকারে সঠিক বলতে পারব না। কয়েক ফোঁটা হয়ত গিয়ে পরে ছে ওর মুখের ওপর। ওর শরীর অবশ্য এখনও নিথর হয়ে পরে আছে। আর আমি নির্মম ভাবে ওর শরীরের ওপর নিজের জৈবিক রসের বর্ষণ করে চলেছি। অবশেষে জৈবিক নিয়মেই লাভার উদ্গিরন বন্ধ হল। বসে পড়লাম মাটির ওপর। আরও মিনিট পাঁচেক দুজনেই চুপ করে বসে রইলাম। ও ধীরে ধীরে উঠে বসল। আমি উঠে দাঁড়িয়ে জাঙ্গিয়া সমেত প্যান্টটা উঠিয়ে নিলাম কোমর অব্দি।
ও উঠে দাঁড়িয়ে নিজের ড্রেসটা মাটি থেকে ওঠাতে গিয়ে একবার থেমে গেল। বৃষ্টি বেশ জোরেই হচ্ছে। আমরা দুজনেই ভিজে গেছি। ও ভেজা ড্রেসটা মাটি থেকে না উঠিয়ে নগ্ন ভাবেই টলতে টলতে এগিয়ে গেল লেকের দিকে। অন্ধকার রাত। চারপাশে কাউকে দেখতে পাচ্ছি না। কিন্তু তাও এইভাবে লেকের কমপ্লেক্সের ভেতর দিয়ে হেঁটে চলা? আমি চট করে ওর হ্যান্ড ব্যাগ আর ড্রেসটা মাটির ওপর থেকে উঠিয়ে নিয়ে ওর পিছন পিছন দৌড় লাগালাম। ওর শরীরে কোনও জোর নেই। আর তার ওপর হাই হিল। শরীরটা মাতালদের মতন এদিক ওদিক টলছে। একটা গাছের নিচে গিয়ে মাটিতে বসে পড়ল কিছুক্ষনের জন্য। আবার উঠে এগিয়ে চলল লেকের দিকে। আমি একবার বললাম “কি করতে চাইছিস?” ও আমার দিকে ফিরে শুধু একটা মিষ্টি হাসি ছুঁড়ে দিল আমার দিকে। আবার এগিয়ে চলল জলের দিকে। গুড গড। ও কি জলে নামবে? কিন্তু লেকের জলের চারপাশের বেড়া দিয়ে ঘেরা রয়েছে। আমার চোখ চারপাশে ঘোরা ফেরা করছে।
ও আপন মনে নগ্ন ভাবে হেঁটে চলেছে বৃষ্টির মধ্যে। বেড়াতে এসে ধাক্কা খেয়ে একবার আমার দিকে ফিরে তাকাল। বলল “ ওয়েট ফর মি। আমি দুই মিনিটে পরিষ্কার হয়ে আসছি।” আমি অনেক দস্যিপনা করেছি জীবনে, কিন্তু এরকম অদ্ভুত কাজ জীবনে করিনি। ওর শরীর হালকা, ছোট খাটো। এইবার বুঝলাম যে ওর শরীরটা বেশ ফিট। এক লাফে বেড়া টপকে লেকের ভেতর নেমে গেল। আমি বোকার মতন দাঁড়িয়ে আছি। সত্যি ডানপিটে মেয়ে। একটা কবিতা মনে পরে গেল। বাপরে কি ডানপিটে ছেলে… সরি... ছেলে না এখানে বলতে হয় বাপরে কি ডানপিটে মেয়ে...শিলনোড়া… প্রায় মিনিট ১০ পর ও বেড়া টপকে আবার আমার সামনে এসে দাঁড়াল। সম্পূর্ণ নগ্ন আর পরিষ্কার। নিজের নগ্নতা ঢাকার ব্যাপারে এখনও ওর কোনও মাথা ব্যথা নেই। হ্যান্ড ব্যাগ থেকে প্যান্টিটা বের করে পরে নিল। নিজের মনেই বলল “আজ ব্রা পরে আসা উচিৎ ছিল। “ আমি সায় দিয়ে মাথা নাড়ালাম। চপচপে ভেজা ড্রেসটা আমার হাত থেকে নিয়ে পরে নিল। ভেজা জিনিসটা ওর শরীরের সাথে পুরো সেঁটে রয়েছে। ওর কিন্তু এই ব্যাপারে কোনও মাথা ব্যথা নেই।
লেকের গেটের কাছে পৌঁছানোর আগে কয়েকটা মুখ দেখতে পেলাম। চারটে ছেলে। প্রত্যেকে ভিজে চুপসে গেছে। কিন্তু চোখে মুখে একটা ক্রূর হাসি । একটা অশ্লীল হাসি নিয়ে ওরা রাকার ভেজা শরীরটার দিকে তাকিয়ে আছে। এইবার আর মিথ্যে বলে লাভ নেই। রাকা এই মুখ গুলোকে আগে দেখেনি। কিন্তু আমার চোখ তো আর রাকার চোখ নয়। আমরা দেওয়ালের ধারে এসে যখন এইসব শুরু করেছিলাম সেই সময় থেকে এই চারটে ছেলে আমাদের পিছু নিয়েছিল, মানে ওই গাছের নিচ থেকে ওঠার পর থেকে। অবশ্য ওরা নিজেদের যতটা সম্ভব আড়াল করে রেখেছিল যাতে আমরা দেখতে না পাই। কিন্তু অভ্যেস, বা বলা ভালো প্র্যাকটিস একটা খুব খারাপ ব্যাপার। যতই গোপনীয়তা বজায় রাখার চেষ্টা করুক না কেন, কেউ আমাকে (আমাদের নয়… আমাকে) ফলো করলে সেটা ধরতে পারব না এমনটা কোনও দিনও হয়নি। আমার সেন্স আমাকে বলে দেয় যে আমাকে কেউ ফলো করছে, আমার বিপদ হতে পারে। আজকেও তার অন্যথা হয়নি। এটাই আমার অভ্যেস… না, বলা ভালো প্র্যাকটিস। অবশ্য তখন ওদের দেখেও আমি না দেখার ভান করে রাকার সাথে মিলিত হয়েছি। আসলে অনেকে থাকে যারা অন্যের সহবাসের ব্যাপারটা দেখতে চায়, উপভোগ করতে চায়, অন্যের সহবাসের দৃশ্য তাদের উত্তেজিত করে। এই নিয়ে আমার কোনও মাথা ব্যথা নেই। আর তাই সেই সময় আমি ওদের উপেক্ষা করেছিলাম। কিন্তু এইবার যেটা হল সেটা না হলেই বোধহয় ভালো হত।
গেটের কাছে পৌঁছাতে না পৌঁছাতে ওদের চোখের দৃষ্টি আরও প্রখর আর অশ্লীল হয়ে উঠল। অবশ্য ওরা আমাকে দেখছিল না। ওরা দেখছিল রাকার ভেজা শরীরটাকে যেটা ওর ভেজা ড্রেসের নিচে প্রায় নগ্ন হয়ে আছে। রাকা ওদের লক্ষ্য করেছে। একটু সরে এলো আমার দিকে। আমি ওকে ডান হাত দিয়ে জড়িয়ে ধরে ওকে আশ্বস্ত করলাম। এই প্রথমবার দেখলাম যে রাকার দম্ভেও ভাটি পরে ছে। ওর চাহুনি মাটির দিকে নেমে গেছে। ও জানে যে এই ভেজা পাতলা ড্রেসটা ওকে পুরো দুনিয়ার সামনে প্রায় নগ্ন করে দিয়েছে। ওদের সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় ও নিজের নগ্ন হাত দুটোকে ড্রেসের ওপর দিয়ে নিজের ব্রা হীন বুকের ওপর চেপে ধরল। একটা ছেলে অশ্লীল ভাবে একটা সিটি মারল। ওর চোখ মাটির দিকে। ওর গতি একটু যেন কমে আসছিল সিটির শব্দটা শোনার পর, কিন্তু আমি ওকে প্রায় ধাক্কা মেরে লেকের গেট দিয়ে বের করে নিয়ে গেলাম।
“এইভাবে বাড়ি যেতে পারবি না। তোর বাবা মা কি বলবে? দাঁড়া একটা কিছু বন্দোবস্ত করা দরকার। “ আমার মুখের কথা শেষও হয়নি, ঠিক সেই সময় পেছন থেকে একটা গলা পেলাম। “কত টাকা দিয়ে এই মালটাকে নিয়ে এসেছিলে দাদা বলবে? এত বৃষ্টির মধ্যেও তোমাকে ছেড়ে পালায়নি।” এখানেই ছেলেটা থামল না। বলে চলল “ শালা আমাদেরও টাকা আছে কিছু। আমরাও বৃষ্টির তোয়াক্কা না করে ফুর্তি করতে চাই। খাসা মাল … হ্যাঁ বল?” পাশ থেকে তিন জন হেসে উঠল। ফুটপাথে এখন লোকের ভিড় তেমন নেই। রাকা ওর ভেজা শরীর নিয়েই ওদের দিকে ধেয়ে যাচ্ছিল, কিন্তু পারল না। আমি ওকে ধাক্কা মেরে গাড়ির দিকে পাঠিয়ে দিলাম। গলা নামিয়ে বললাম “চুপ চাপ গাড়িতে গিয়ে বসে পড়। রাকাকে আসতে দেখে ওর ড্রাইভার বেরিয়ে এসেছে গাড়ির ভেতর থেকে। হাতে ছাতা। এখন রাকার মাথায় ছাতা ধরার কোনও মানে নেই। আমি রাকাকে আবার বললাম “চুপচাপ গাড়িতে গিয়ে বসে পড়। বাকিটা আমি দেখে নিচ্ছি। “ ড্রাইভার দরজা খুলে দিতেই ও ক্ষুণ্ণ মুখে গাড়িতে চড়ে বসল। আমি ড্রাইভারকে বললাম “পাঁচ মিনিট এখানেই বসে থাক। আমি আসছি। ভেতর থেকে লক করে দাও।” ছেলেগুলো গাড়ির জানলার দিকে এক দৃষ্টে চেয়ে আছে। খিস্তি খেউড় করছে।
ওদের পাত্তা না দিয়ে কফি শপের কয়েকটা দোকানের পরেই একটা বড় জামা কাপড়ের দোকান দেখে ওই দিকে দৌড় লাগালাম। খুব বেশী হলে মিনিট পাঁচ, তার মধ্যে আবার ব্যাক করলাম রাকার পরনের ড্রেসের মতন একদম একই ড্রেস নিয়ে। অবশ্য আমি জানি আমি যেটা কিনেছি সেটা অনেক শস্তা। এর থেকে ভালো ড্রেস এদের কাছে নেই। তবে দেখতে একই রকম। আর এটা শুঁকনো। আর এই মুহূর্তে এটাই সব থেকে বড় কথা। আমি আসতেই ড্রাইভার গাড়ির দরজার লক খুলে দিল ভেতর থেকে। আমি পিছনের দরজা খুলে রাকার হাতে প্লাস্টিকটা হস্তান্তরিত করে দিয়ে বললাম “তুই এগিয়ে যা। ওই পিছনে একটা বার আছে ওখানে গিয়ে বস। ওয়াশরুমে গিয়ে ড্রেস চেঞ্জ করে এই প্লাস্টিকে ড্রেসটা ভরে রাখিস। আমি আসছি।” ও বলল “তুইও আয়।” বললাম “ আসছি। ছোট একটা কাজ সেরে আসছি।” রাকার গোঁ কম নয়। দেখলাম গাড়িটা নিজের জায়গা থেকে নড়ল না। আমি ধীরে ধীরে এদিক ওদিক দেখতে দেখতে এগিয়ে গেলাম লেকের গেটের দিকে। ছেলেগুলো পারলে আমাকে প্রায় ঘিরে ধরবে। আমি ওদের উপেক্ষা করে গেট দিয়ে ঢুকে গেলাম।
২২
খুব বেশী হলে মিনিট দুই তিন… বাইরে বেরিয়ে এসে দেখলাম যে রাকা গাড়ির কাঁচের ভেতর থেকে উদগ্রীব হয়ে লেকের গেটের দিকে তাকিয়ে আছে। আমাকে বাইরে বেরিয়ে আসতে দেখে ওর ভেতর থেকে যে একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস পড়ল সেটা বেশ লক্ষ্য করলাম। আমি গাড়ির দিকে এগিয়ে আসার আগেই একটা ক্ষীণ চিৎকার শুনে পিছনে ফিরে দেখলাম দুটো ছেলে বাইরে বেরিয়ে এসেছে। রাকা কি দেখল রাকাই জানে। কিন্তু ওকে চোখ মেরে একটা ইশারা করতেই ওর গাড়ি ছুটে বারের দিকে চলে গেল। আমার হেঁটে বারে পৌঁছাতে আরও মিনিট দশেক লেগেছে। ভেতরে ঢোকার আগে রাকাকে একটা ফোন করলাম। ও আমাকে টেবিল নাম্বার বলে দিল। এরকম ভেজা শরীর নিয়ে ঢুকতে একটু কেমন যেন লাগছিল, কিন্তু তারপর বুঝতে পারলাম যে এই হঠাত বৃষ্টির জন্য বার পুরো খালি।। রাকা ইতিমধ্যে ড্রেস চেঞ্জ করে নিয়েছে, মানে এখন ওর মাথা ভেজা থাকলেও ড্রেস পুরো শুঁকনো। ভেতরে এক কোনায় একটা ব্যান্ড বাজছে, কিন্তু আমরা বসেছি অনেক দূরে।
রাকা আমার হাতটা চেপে ধরে বলল “থ্যাংকস সোনা। “ বললাম “কেন? কি হল?” এখন আর সময় চেক করার কোনও মানে নেই। এর মধ্যেই আমার সঞ্চিতা ম্যাডামের সামনে উপস্থিত হওয়ার কথা ছিল। যখন সব টাইম ফেল করেই গেছে, তখন আর সময় নিয়ে মাথা ব্যথা করে কি লাভ। ও বলল “তুই একাই ওই চারজনকে কাত করে দিলি?” বললাম “কাত করিনি তো। ওদের শুধু বুঝিয়ে দিয়ে এলাম যে বাজে ব্যবহার করলে অনেক সময় লোকজন মেরে নাক মুখ ফাটিয়ে দেয়। বাকিটা ওদের বুঝতে দে।” একটু থেমে বললাম “বাই দা ওয়ে তুই চলে আসার পর ওদের পালের গোদাটার পুরো নাকটাই মেরে ফাটিয়ে দিয়ে এসেছি। বাকিগুলো হয়ত কেটে পরে ছে। ” ও ইতিমধ্যে ড্রিংকের অর্ডার দিয়ে দিয়েছে। আমার জন্য একটা দামি স্কচ অর্ডার করেছে। আমি কিছু বলার আগেই ও আমাকে বলল “এটা আমার তরফ থেকে পার্টি দিচ্ছি।” চিয়ার্স করে ড্রিংক শুরু করার পর রাকা বলল “ আমাকে দোলন ফোন করেছিল।”
আমি বললাম “তারও আগে আমার আরেকটা নিউজ দেওয়ার আছে। শুনলে হয়ত ঘাবড়ে যাবি।” ও বলল “কি নিউজ?” বললাম “ আমি যে মেসে শিফট করেছি তার মালকিন হলেন আমাদের সঞ্চিতা ম্যাডাম।” ও বলল “হোয়াট।” আমি অকপটে পুরো ব্যাপারটা ওকে খুলে বললাম। অবশ্য সঞ্চিতা ম্যাডামের সেই মেসেজ বা অজানা ভয়ের ব্যাপারটা চেপে রেখে। বলল “ তুই আমাদের বাড়িতেও শিফট করতে পারিস। তোর কোনও টাকাও লাগবে না।” আমি বললাম “আমার টাকার চিন্তা খুব একটা নেই। কিন্তু আমার এই সময়ে আমার বাবা আমাকে কোনও টাকা ছোঁয়াবে বলে মনে হয় না। সুতরাং একটু সাধারণ ভাবেই চলাফেরা করা ভালো। “ যতটা সময় আমরা ওখানে বসে ছিলাম , পুরো সময়টা ধরে রাকা ওর হাত দিয়ে আমার ডান হাতটাকে চেপে ধরে রেখেছিল। দোলনের ব্যাপারটা বলে রাখি এই বেলা। রাকা দোলনকে বলেছে যে আমরা কফি শপে না বসে লেকের ধার দিয়ে হাঁটছিলাম। ও আমার আর দোলনের রিলেশনের ব্যাপারে খুব চিন্তিত। আমি যে খুব দুঃখ পেয়েছি সেটাও ও বলেছে দোলনকে। রাকার ধারণা যে আমি এই সব ব্যাপারের সাথে কোনও ভাবে জড়িত নই। সেটাও ও দোলনকে জানিয়েছে।
আমরা বৃষ্টিতে আঁটকে পরে অনেকক্ষণ দাঁড়িয়েছিলাম একটা দোকানের নিচে। গাড়ি অনেক দূরে ছিল। আমি নাকি পাঁচ কাপ চা খেয়েছি ওর পয়সায়, আর দোলন পরে যেন সেই টাকাটা শোধ করে দেয়। এখন আমরা একটা বারে এসে ঢুকেছি। একটু মদ খেয়ে বেরবো। দোলন যেন আমাকে নিয়ে কোনও চিন্তা না করে... কারণ… রাকা আমাকে ড্রপ করে দেবে। আমি সব শুনে একটু হেসে বললাম “ ভাগ্যিস আমি দোলন নই। তোর কথা শুনেই আমার সন্দেহ হত।” ও বলল “কেন?” বললাম “তোর বানানো গল্পে একটা বিশাল বড় ফাঁক দেখতে পাচ্ছি যে।” ও বলল “বিশাল বড় ফাঁক?” বললাম “অনেক ফাঁক আছে। তবে একটাই যথেষ্ট।” ও বলল “সেটা কি?” বললাম “আমরা বৃষ্টিতে আঁটকে পরে দোকানের নিচে শেলটার নিয়েছি, এই অব্দি ঠিক ছিল। কিন্তু এই মোবাইলের যুগে, ফোন করে ড্রাইভারকে ডেকে গাড়িতে উঠে পড়লাম না … এই ব্যাপারটা কেমন আষাঢ়ে হয়ে যাচ্ছে না?” ও বলল “শালা তুই আর এখন টেনশন দিস না। তবে ঠিক বলেছিস। এটা কাঁচা খেলেছি।” বললাম “এখন আর এই নিয়ে টেনশন করে লাভ নেই। তবে, পরে সত্যি সিরিয়স কিছু হলে শুধু এই একটা মিথ্যা তোকে ডুবিয়ে ছাড়বে।” ও আমাকে বলল “আমাকে?” বললাম “আমাকে নিয়ে ডুববে বলে তোর মনে হচ্ছে?... আমি ঠিক ডুবতে শিখিনি। ডুবলে তুই একাই ডুববি।” কথা অন্য দিকে ঘুরে গেল।
তবে বার থেকে বেরনোর পর আমি রাকার সাথে ফিরিনি। আমি রাকাকে বললাম “অনেক রাত হয়েছে। এইবার তুই বাড়ি ফিরে যা। আমিও একটা ট্যাক্সি ধরে নিচ্ছি।” ট্যাক্সিতে চড়েই মোবাইল বের করলাম। দেখলাম প্রায় পঞ্চাশটা মিসড কল। মালিনী প্রায় ১০ টা কল করেছে। আমি ওকে রিং ব্যাক করতেই ও ফোন তুলে বলল “শোনো, এখানে একটা কেলেঙ্কারি হয়েছে সেই ভি আই পি কে নিয়ে। পরে বলব। তুমি কেমন আছ? (আমি কিছুই বললাম না, কিন্তু ও বলেই চলল) আমার মোবাইলে অনেক দিন ধরে একটা প্রবলেম হচ্ছে। তোমাকে অনেক আগেই বলব বলে ভেবেছিলাম, কিন্তু ভুলে গেছি। মোবাইলটা গেছে মনে হচ্ছে। অনেক সময় মোবাইলে কথা বলার সময় ক্যাচ ক্যাচ ঘস ঘস যত সব বিচ্ছিরি শব্দ হয়। মাঝে মাঝে শব্দগুলো ভীষণ বেড়ে যায়। জানি না মোবাইলে কি হল। তুমি একবার আমার মোবাইলটাকে নিয়ে গিয়ে সারিয়ে নিয়ে আসবে?” আমি জানি ওর মোবাইলে কোনও প্রবলেম নেই, তবুও বললাম “ হোয়াই নট মাই সুইটি। কালই আমি হোটেলে গিয়ে তোমার থেকে মোবাইলটা কালেক্ট করে নিচ্ছি। তোমার কি কাল নাইট আছে?” ও বলল “হ্যাঁ।” বললাম “বেশ তাহলে নটার দিকে গিয়ে কালেক্ট করে নেব।” লাভ ইউ ইত্যাদি বলে ফোন কেটে দিলাম।
সঞ্চিতা ম্যাডামও একটা কল করেছেন। এখন ওনাকে রিং ব্যাক করার মানে নেই কারণ আর একটু পরেই ওনার সাথে দেখা হবে। বৃষ্টির জন্য রাস্তা একদম খালি। ট্যাক্সিটা বেশ দ্রুত এগিয়ে চলেছে। কলেজের সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় দেখলাম যে কলেজের সামনে বেশ ভালো জল জমেছে। বৃষ্টি এখনও হয়েই চলেছে। বাড়ির থেকে একটু দূরে গাড়িটা ছেড়ে দিলাম। গায়ের জল শুঁকিয়ে গেছিল। আবার একটু ভিজে নিতে হবে ম্যাডামের সামনে যাওয়ার আগে। ঘড়িতে এখন প্রায় ৯.৪০ মিনিট। প্রথম দিনেই এত লেট। রাকার সাথে বারে অনেকক্ষণ বসে ছিলাম বটে কিন্তু ১ পেগের বেশী মদ খাইনি। ম্যাডাম গন্ধ পাবেন না। কলিং বেল বাজানোর আধ মিনিটের মধ্যে দরজা খুলে গেল। ওনার ভুরু কুঁচকে রয়েছে। বুঝতে পারলাম যে উনি বেশ রেগে আছেন। কাক ভেজা হয়ে ঢুকছি দেখে ম্যাডাম বললেন “ এই তোমার ৭ টার মধ্যে ফিরে আসা?” বললাম “ খুব বাজে ফেঁসে গেছিলাম হঠাত বৃষ্টি আসায়। প্রায় কোনও বাস নেই। আর যে বাসগুলো আসছে সেগুলোতে এত ভিড় যে ওঠা যাচ্ছে না। শেষে প্রায় ২ কিলোমিটার হেঁটে একটা বাস পেয়েছি। কোলকাতায় বৃষ্টি হলে তো খুব বাজে অবস্থা হয় দেখছি। আর অনেক জায়গায় দেখলাম জল জমতে শুরু করে দিয়েছে।”
ম্যাডাম বললেন “ফোন তুলছিলে না কেন?” বললাম “রিং শুনতে পেলে তো তুলব। আপনি যখন কল করেছিলেন তখন বাসের ভেতর প্রায় একশটা মানুষের ধাক্কা সহ্য করছি। বৃষ্টির জন্য নেমেও চেক করতে পারিনি।” উনি একটু নরম হয়ে বললেন “ প্রথম দিনেই এত লেট করে এলে। আমি ভয় পাচ্ছিলাম যে আমার হাজবেন্ড ফিরে এলে কি লঙ্কা কাণ্ডটাই না বাধা ত। যাও ড্রেস চেঞ্জ করে নাও। নইলে আবার ঠাণ্ডা লেগে যাবে।” আমি সিঁড়ি দিয়ে ওঠার আগে ওনাকে জিজ্ঞেস করলাম “ম্যাডাম একটা রিকোয়েস্ট ছিল। অবশ্য যদি আপনার কোনও আপত্তি না থাকে।” উনি বললেন “কি?” বললাম “ বাড়ি থেকে চিঠি এলে, বা কিছু জিনিস এলে আপনার এই অ্যাড্রেসে নিলে আপনার কোনও আপত্তি আছে?” উনি বললেন “এতে আবার জিজ্ঞেস করার কি আছে? রাতে খাওয়ার পর ফুল অ্যাড্রেসটা লিখে নিও।” আমি ওপরে উঠে গেলাম। যাক এই ধাক্কাটা সামলানো গেছে। পথে অবশ্য ট্যাক্সিটাকে একটা এফ এল শপের সামনে দাঁড় করিয়ে দুটো মদের বোতল উঠিয়ে নিয়েছিলাম। সেগুলোকে ভালো করে লুকিয়ে রাখতে হবে।
ফ্রেশ হয়ে বেরতে না বেরতেই কলিং বেলের শব্দ পেলাম। ঘরে পরার ভদ্র পায়জামা পাঞ্জাবি পরে রেডি হয়ে নিলাম। মনে হল ম্যাডামের হাজবেন্ড বাড়ি ফিরে এসেছেন। আমার ফার্স্ট ইম্প্রেশনটা যাতে ভালো হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। এই দিকে একটা অন্য সমস্যা হয়েছে। বোতলগুলো বের করার সময় খেয়াল করলাম যে ব্যাগের ভেতরের জেরক্সগুলো সব ভিজে গেছে। সেগুলোকে বিছানার ওপর আর টেবিলের ওপর মেলে রেখে দিলাম যাতে তাড়াতাড়ি শুঁকিয়ে যেতে পারে। ল্যাপটপটা ভেতরে ঢুকিয়ে রেখে দিয়ে গেছিলাম, সেটাতে বসে আজ কয়েকটা কাজ সারতে হবে। অবশ্য সেটা খাওয়ার পর এসে করলেও চলবে। ডাইরিটাতেও বেশ কিছু জিনিস লিখতে হবে। সেটা এইবেলা সেরে নিলে ভালো হয়। ডাইরিটা খুলে খুব তাড়াতাড়ি কিছু পয়েন্ট নোট করা শুরু করলাম। কয়েকটা পয়েন্ট একটু ইলাবোরেট করে লিখতে বাধ্য হলাম। লেখা যখন প্রায় শেষ হব হব করছে এমন সময় দরজায় টোকা পড়ল। দরজা খোলার আগে ডাইরিটা বন্ধ করে দিলাম আর সেই জায়গায় ক্লাসের একটা খাতা খুলে রেখে দিলাম।
ম্যাডাম আর ম্যাডামের পিছনে একজন ভদ্রলোক। ভদ্রলোকের হাইট ৫ ফুট ১১ ইঞ্চি। শরীরে সামান্য মেদ জমেছে। গায়ের রঙ চাপা। ভদ্রলোকের গায়ের জোর যে ভালোই সেটা দেখেই বোঝা হয়। মানে এক কথায় উনি দরকার পড়লে যেমন দু ঘা দিতে পারেন, তেমনি দু ঘা নিতেও পারেন। পরনে সাদা রঙের হাফ শার্ট আর ব্ল্যাক ট্রাউজার। কাঁধের ওপর একটা কালো ব্লেজার ফেলে রেখে দিয়েছেন। চোখ মুখে ব্যক্তিত্বের ছাপ স্পষ্ট। চোখে মোটা ফ্রেমের যে চশমটা পরেছেন সেটা ওনার চেহারার ব্যক্তিত্ব যেন আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। উনি ম্যাডামের পেছন পেছন ঘরের ভেতর প্রবেশ করলেন। উনি দেখলাম ঘরের চারপাশটা একবার দেখে নিলেন, মানে সব জিনিসের ওপর একবার চোখ বুলিয়ে নিলেন। বিছানার অবস্থাটা যে তথৈবচ সেটা আর বলে দিতে হয় না।
ম্যাডাম হেসে বললেন “ এগুলো জেরক্স করালে আজ?” বলে একটা পেজ বিছানা থেকে উঠিয়ে নিয়ে চোখের সামনে ধরে কিছুক্ষণ লেখা গুলো পরে বললেন “ বেকার টাকা নষ্ট করেছ। যাই হোক, ইনি আমার হাজবেন্ড আর এ হল সংকেত।” ভদ্রলোক “হাই” বলে আমার দিকে হাত বাড়িয়ে দিলেন হ্যান্ডশেক করার জন্য। আমি ইচ্ছে করে হ্যান্ডশেক না করে একটা নমস্কার করলাম। উনি একটু হেসে বললেন “হুম বলেছিলে বটে।” শেষের কথাটা অবশ্য বললেন ম্যাডামকে লক্ষ্য করে। ম্যাডাম বললেন “এখানে হ্যান্ডশেক করার জন্য কেউ হাত বাড়িয়ে দিলে হ্যান্ডশেক করতে হয়।” এইবার আর আমি কথা না বাড়িয়ে ওনার সাথে হ্যান্ডশেকের পর্বটা মিটিয়ে নিলাম। আমার হাত থেকে হাত ছাড়িয়ে নেওয়ার পর ভদ্রলোক আমাকে জিজ্ঞেস করলেন “ হাতে এরকম কড়া পড়ল কি ভাবে?” ভদ্রলোকের গলার আওয়াজ ওনার চেহারার সাথে মানানসই। বললাম “গ্রামে অনেক কাজ নিজেদের হাতে করতে হয় তো।” উনি বললেন “ হুমম। রাতে ডিনার কটার সময় কর?” বললাম “ঠিক নেই কিছু। গ্রামের দিকে তো কারেন্ট থাকে না অর্ধেক দিন। তাই আটটার মধ্যেই করে ফেলি। তবে এখানে এসে অভ্যেসটা বদলে গেছে।” উনি বললেন “ এত দিনের অভ্যেস এই কয়েকদিনেই বদলে গেল?” বললাম “ না না তেমন নয়। কিন্তু কলেজ পড়াশুনা …” ম্যাডাম বাধা দিয়ে বললেন “উফফ এসেই শুরু হয়েছে জিজ্ঞাসাবাদ।” আমি বললাম “না না ঠিক আছে। তবে এখানে খেতে খেতে ১০.৩০ হয়েই যায়। “
উনি ম্যাডামের দিকে ফিরে বললেন “ডিনার রেডি?” ম্যাডাম বললেন “কয়েকটা জিনিস শুধু গরম করতে হবে।” আমি বললাম “তাড়া নেই।” উনি বললেন “ এসো আমার ঘরে। বসে একটু গল্প করা যাক। অবশ্য তুমি যদি এখন কিছু পড়াশুনার কাজ করছিলে তো ছেড়ে দাও। “ বললাম “না না তেমন কিছু নয়।” ম্যাডাম বললেন “ সংকেত তুমি যদি আগে আমাকে বলতে যে এই বইয়ের পাতা জেরক্স করাচ্ছ তাহলে বারণ করতাম। বাড়িতেই এই বইটা আছে। সেখানে থেকেই পরে নিতে পারতে। “ আমি বললাম “ তাহলে ব্যাপারটা ফালতু হয়ে গেল বলতে চাইছেন? আমি তো আগামীকালের জন্যও বেশ কিছু জেরক্স করতে দিয়ে এসেছি। আগাম টাকাও দিয়ে এসেছি। যাই হোক নেক্সট টাইম থেকে আপনাকে জিজ্ঞেস না করে জেরক্স করাব না। ” ম্যাডাম বেরিয়ে যেতেই উনি বললেন “ আমি চেঞ্জ করে নিচ্ছি। পাঁচ মিনিট পর এসে তোমাকে ডেকে নিয়ে যাচ্ছি।” মাথা নাড়িয়ে সায় দিলাম। ফার্স্ট ইম্প্রেশন কেমন হল সেটা ঠিক বুঝতে পারলাম না।
পাঁচ মিনিট নয়, ডাক এলো প্রায় দশ মিনিট পর। ওনার কাজের ঘরে গিয়ে প্রবেশ করতেই উনি বললেন “দরজাটা বন্ধ করে দাও। এসি চালাব।” দরজা বন্ধ হল। উনি এসিটা অন করে আমাকে টেবিলের সামনে রাখা একটা চেয়ার দেখিয়ে দিলেন। বসে পড়লাম। উনিও ওনার বড় চেয়ারটাতে গিয়ে বসে পড়লেন। দেখলাম দুটো দামি কাঁচের গ্লাস সাজিয়ে রেখেছেন টেবিলের ওপর, পাশে বরফ রাখার জায়গা। একটা শেলফ খুলে একটা দামি স্কচের বোতল বের করে আমাকে জিজ্ঞেস করলেন “চলে তো?” বললাম “হ্যাঁ। তবে কম।” দুজনের গ্লাসে ড্রিংক ঢেলে উনি আমর সাথে চিয়ার্স করলেন। খাওয়া শুরু হল। আমি অবশ্য একবার ওনাকে বলেছি “ম্যাডাম যদি এখন …” উনি বললেন “প্রথমত, ইঞ্জিনিয়ারিং যারা পড়ে তাদের অধিকাংশই যে ড্রিংক করে সেটা ওনার অজানা নয়। আর আমরা দুজনেই এটা জানি যে সেদিন তুমি মিস্টার মুখার্জির ছেলে মেয়ের সাথে গেছিলে পার্টি করতে। “ আমি আর কথা বাড়াই নি। গোটা সময়টা আমাকে উনি অনেক প্রশ্ন করলেন। বাড়িতে কে কে আছে। বাবা কি করে, মা কি করে, সেদিন পার্টিতে কি কি হয়েছিল, এমনকি গতকাল হাসপাতালে আমার চোখের সামনে কি কি ঘটেছিল বা আমি কি কি দেখেছিলাম ইত্যাদি।
একটা কথা জিজ্ঞেস না করে পারলাম না যে “স্যার আপনি কি পুলিশ?” উনি হেসে বললেন “না।” আধ ঘণ্টা মতন পেড়িয়ে গেছে, আমাদের গ্লাস আরেকবার রিফিল করে দিয়েছেন উনি। এমন সময় দেখলাম দরজা খুলে ম্যাডাম প্রবেশ করলেন। “এখন তুমি ছেলেটার সাথে বসে বসে মদ খাচ্ছ?” উনি একটু গম্ভীর ভাবে বললেন “আয়াম সরি। তবে প্রাপ্ত বয়স্ক ছেলে মেয়েরা মদ্য পান করতেই পারে। আমি সংকেতের কাছ থেকে ওর বাড়ির খবর শুনছিলাম। অ্যান্ড আমার মনে হয় যে তোমাদের কাল খুব একটা তাড়া থাকার কথা নয়। অনেক বেলা অব্দি পরে পরে দুজনেই ঘুমাতে পারবে।” একটা সিগারেট ধরিয়ে বললেন “ ইনফ্যাক্ট কাল আমারও কোনও ডিউটি নেই।” ম্যাডামের মুখটা এক মুহূর্তের জন্য কেমন কালো হয়ে গিয়েছিল, কিন্তু তার পরের মুহূর্তেই নিজেকে সামলে নিয়ে বললেন “ আচ্ছা। কিন্তু আমাদের তাড়া থাকবে না কেন সেটা তো বুঝলাম না।” উনি সিগারেটে একটা টান দিয়ে বললেন “অর্ধেক কোলকাতা শহর জলের তলায় যেতে বসেছে। তোমাদের কলেজও প্রায় ডুবে গেছে। সারা রাত বৃষ্টি হলে কাল আর দেখতে হবে না। যা শুনলাম ভোর রাত থেকে বৃষ্টি আরও বেড়ে যাবে। তোমাদের ম্যানেজমেন্ট হয়ত কাল আর পরশুর জন্য কলেজ বন্ধ রাখতে বাধ্য হবে। কাল সারা দিন বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা। “ ম্যাডাম বললেন “হ্যাঁ নিউজেও সেরকম দেখলাম।” উনি এক ঢোকে গ্লাস শেষ করে বললেন “ তবে কোনও প্রেসার নেই। এনি ওয়ান ক্যান লিভ অ্যান্ড হ্যাভ হিস অর হার ডিনার। আমার আরেকটু সময় লাগবে।”
আমি পড়লাম ধর্ম সংকটে। উঠে পড়াই উচিৎ। কিন্তু এতে যদি ইনি আবার কিছু মাইন্ড করেন তো মহা বিপদ। আর তাছাড়া কথাটাও একটু অন্য দিকে ঘোরানো দরকার। ইনি অবশ্য মালিনীর বর নন যে মদ খেয়ে নিজের বউকে যা নয় তাই বলে চলবে। এনার কথা বার্তা বেশ মার্জিত। ম্যাডাম একটা চেয়ারের ওপর বসে বসে কি যেন ভাবছেন। আমি বললাম “ আচ্ছা একটা কথা আপনাকে বলা হয় নি। “ কথাটা বললাম ম্যাডামকে লক্ষ্য করে। দুজনেই আমার দিকে মুখ তুলে তাকালেন। বললাম “ আমার মর্নিং ওয়াক, এক্সারসাইজ ইত্যাদির বদভ্যাস আছে। খুব ভোরে বেরিয়ে যাই।” স্যার প্রশ্ন করলেন “কত ভোরে?” একটুও না ভেবে বললাম “চারটের দিকে।” ওনার ঠোঁটের কোনায় হাসি খেলে গেল। বললেন “ভেরি গুড। আমি অবশ্য জিম করি। বাড়িতেও একটা জিম আছে। পরে তোমাকে দেখিয়ে দেব। ইউ ক্যান ইউস দ্যাট অ্যাস অয়েল। তবে বাইরে দৌড়ানো আর ট্রেড মিলে দৌড়ানো কি এক জিনিস?” আমি হেসে মাথা নাড়িয়ে সায় দিলাম।
উনি চেয়ার থেকে উঠে শেলফ খুলে একটা বাক্স বের করে তার থেকে দুটো চাবি নিয়ে আমার দিকে এগিয়ে ধরলেন। আমি চাবি দুটো হাতে নিতেই উনি বললেন “ একটা মেইন গেটের, একটা মেইন ডোরের। এমনিতেও তোমার কাছে একটা ডুপ্লিকেট সেট থাকা উচিৎ। কারণ কে কখন আসবে যাবে সেটা সব সময় আগে থেকে প্ল্যান করা যায় না। “ আমি ধন্যবাদ জানিয়ে চাবি দুটো পকেটস্থ করলাম। আমার গ্লাসও প্রায় শেষের দিকে। উনি আমার গ্লাসে আরেকবার পানীয় ঢালতে যাচ্ছিলেন কিন্তু আমি বাধা দিয়ে উঠে পড়লাম। বললাম “ আজ ভীষণ টায়ার্ড। শোয়ার আগে একটু বই খাতা নিয়েও বসতে হবে। আজ আর না। “ ম্যাডামও উঠে পড়লেন। বললেন “চলো আমরা গিয়ে ডিনার করে নি। ওর টাইম লাগবে।” আমি গুড নাইট জানিয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে এলাম। ম্যাডামের পিছন পিছন নিচে নামতে নামতে জিজ্ঞেস করলাম “ উনি কি অনেক পরে খাবেন? নইলে আমরা আরও কিছুক্ষণ ওয়েট করতে পারতাম।” ম্যাডাম বললেন “ওয়েট করে লাভ নেই। ওর খেতে খেতে সেই তিনটে বাজবে। “ বললাম “বাবা এত লেট করে খান?” উনি জবাব দিলেন “সব সময় নয়। তবে আজকে ওইরকমই হবে।”
নাহ আর বেশীক্ষণ ধরে রাখতে পারব না। অবশ্য আর ধরে রাখতে চাইও না। ওর শরীরের ভেতরটা একদম আঠালো হয়ে গেছে। ফলে আমার উত্তেজনা আরও বেড়ে উঠেছে প্রত্যেকটা ঘর্ষণের সাথে। শরীর শরীরকে চেনে। ও নেতিয়ে গেলেও এখন ওর শরীর বুঝতে পেরেছে যে আমার হয়ে এসেছে। আর তাই ফিরে এসেছে ওর চেতনা। ও আমাকে মিন মিন করে বলল “সোনা ভেতরে ফেলিস না। প্রেগন্যান্ট হয়ে যেতে পারি। “ আমি কোনও উত্তর দিলাম না। বীর্য উঠে আসছে আমার বাঁড়ার গা বেয়ে। ঠিক এই সময় শক্ত ফোলা জিনিসটাকে ওর ভেতর থেকে বের করে নিলাম। আর সাথে সাথে বাঁড়ার মুখ দিয়ে ছলকে বেরিয়ে এলো সাদা রঙের বীর্য। ডান হাত দিয়ে খিচতে শুরু করে দিয়েছি বাঁড়াটাকে। গরম ভেজা জিনিসটা কাঁপছে। আর মুখ থেকে ছলকে ছলকে বেরিয়ে চলেছে শারীরিক রস। ওর তলপেট, স্তন নাভি… কোথায় কোথায় গিয়ে আমার উদ্ধত রস ছিটকে পরে ছে সেটা এই অন্ধকারে সঠিক বলতে পারব না। কয়েক ফোঁটা হয়ত গিয়ে পরে ছে ওর মুখের ওপর। ওর শরীর অবশ্য এখনও নিথর হয়ে পরে আছে। আর আমি নির্মম ভাবে ওর শরীরের ওপর নিজের জৈবিক রসের বর্ষণ করে চলেছি। অবশেষে জৈবিক নিয়মেই লাভার উদ্গিরন বন্ধ হল। বসে পড়লাম মাটির ওপর। আরও মিনিট পাঁচেক দুজনেই চুপ করে বসে রইলাম। ও ধীরে ধীরে উঠে বসল। আমি উঠে দাঁড়িয়ে জাঙ্গিয়া সমেত প্যান্টটা উঠিয়ে নিলাম কোমর অব্দি।
ও উঠে দাঁড়িয়ে নিজের ড্রেসটা মাটি থেকে ওঠাতে গিয়ে একবার থেমে গেল। বৃষ্টি বেশ জোরেই হচ্ছে। আমরা দুজনেই ভিজে গেছি। ও ভেজা ড্রেসটা মাটি থেকে না উঠিয়ে নগ্ন ভাবেই টলতে টলতে এগিয়ে গেল লেকের দিকে। অন্ধকার রাত। চারপাশে কাউকে দেখতে পাচ্ছি না। কিন্তু তাও এইভাবে লেকের কমপ্লেক্সের ভেতর দিয়ে হেঁটে চলা? আমি চট করে ওর হ্যান্ড ব্যাগ আর ড্রেসটা মাটির ওপর থেকে উঠিয়ে নিয়ে ওর পিছন পিছন দৌড় লাগালাম। ওর শরীরে কোনও জোর নেই। আর তার ওপর হাই হিল। শরীরটা মাতালদের মতন এদিক ওদিক টলছে। একটা গাছের নিচে গিয়ে মাটিতে বসে পড়ল কিছুক্ষনের জন্য। আবার উঠে এগিয়ে চলল লেকের দিকে। আমি একবার বললাম “কি করতে চাইছিস?” ও আমার দিকে ফিরে শুধু একটা মিষ্টি হাসি ছুঁড়ে দিল আমার দিকে। আবার এগিয়ে চলল জলের দিকে। গুড গড। ও কি জলে নামবে? কিন্তু লেকের জলের চারপাশের বেড়া দিয়ে ঘেরা রয়েছে। আমার চোখ চারপাশে ঘোরা ফেরা করছে।
ও আপন মনে নগ্ন ভাবে হেঁটে চলেছে বৃষ্টির মধ্যে। বেড়াতে এসে ধাক্কা খেয়ে একবার আমার দিকে ফিরে তাকাল। বলল “ ওয়েট ফর মি। আমি দুই মিনিটে পরিষ্কার হয়ে আসছি।” আমি অনেক দস্যিপনা করেছি জীবনে, কিন্তু এরকম অদ্ভুত কাজ জীবনে করিনি। ওর শরীর হালকা, ছোট খাটো। এইবার বুঝলাম যে ওর শরীরটা বেশ ফিট। এক লাফে বেড়া টপকে লেকের ভেতর নেমে গেল। আমি বোকার মতন দাঁড়িয়ে আছি। সত্যি ডানপিটে মেয়ে। একটা কবিতা মনে পরে গেল। বাপরে কি ডানপিটে ছেলে… সরি... ছেলে না এখানে বলতে হয় বাপরে কি ডানপিটে মেয়ে...শিলনোড়া… প্রায় মিনিট ১০ পর ও বেড়া টপকে আবার আমার সামনে এসে দাঁড়াল। সম্পূর্ণ নগ্ন আর পরিষ্কার। নিজের নগ্নতা ঢাকার ব্যাপারে এখনও ওর কোনও মাথা ব্যথা নেই। হ্যান্ড ব্যাগ থেকে প্যান্টিটা বের করে পরে নিল। নিজের মনেই বলল “আজ ব্রা পরে আসা উচিৎ ছিল। “ আমি সায় দিয়ে মাথা নাড়ালাম। চপচপে ভেজা ড্রেসটা আমার হাত থেকে নিয়ে পরে নিল। ভেজা জিনিসটা ওর শরীরের সাথে পুরো সেঁটে রয়েছে। ওর কিন্তু এই ব্যাপারে কোনও মাথা ব্যথা নেই।
লেকের গেটের কাছে পৌঁছানোর আগে কয়েকটা মুখ দেখতে পেলাম। চারটে ছেলে। প্রত্যেকে ভিজে চুপসে গেছে। কিন্তু চোখে মুখে একটা ক্রূর হাসি । একটা অশ্লীল হাসি নিয়ে ওরা রাকার ভেজা শরীরটার দিকে তাকিয়ে আছে। এইবার আর মিথ্যে বলে লাভ নেই। রাকা এই মুখ গুলোকে আগে দেখেনি। কিন্তু আমার চোখ তো আর রাকার চোখ নয়। আমরা দেওয়ালের ধারে এসে যখন এইসব শুরু করেছিলাম সেই সময় থেকে এই চারটে ছেলে আমাদের পিছু নিয়েছিল, মানে ওই গাছের নিচ থেকে ওঠার পর থেকে। অবশ্য ওরা নিজেদের যতটা সম্ভব আড়াল করে রেখেছিল যাতে আমরা দেখতে না পাই। কিন্তু অভ্যেস, বা বলা ভালো প্র্যাকটিস একটা খুব খারাপ ব্যাপার। যতই গোপনীয়তা বজায় রাখার চেষ্টা করুক না কেন, কেউ আমাকে (আমাদের নয়… আমাকে) ফলো করলে সেটা ধরতে পারব না এমনটা কোনও দিনও হয়নি। আমার সেন্স আমাকে বলে দেয় যে আমাকে কেউ ফলো করছে, আমার বিপদ হতে পারে। আজকেও তার অন্যথা হয়নি। এটাই আমার অভ্যেস… না, বলা ভালো প্র্যাকটিস। অবশ্য তখন ওদের দেখেও আমি না দেখার ভান করে রাকার সাথে মিলিত হয়েছি। আসলে অনেকে থাকে যারা অন্যের সহবাসের ব্যাপারটা দেখতে চায়, উপভোগ করতে চায়, অন্যের সহবাসের দৃশ্য তাদের উত্তেজিত করে। এই নিয়ে আমার কোনও মাথা ব্যথা নেই। আর তাই সেই সময় আমি ওদের উপেক্ষা করেছিলাম। কিন্তু এইবার যেটা হল সেটা না হলেই বোধহয় ভালো হত।
গেটের কাছে পৌঁছাতে না পৌঁছাতে ওদের চোখের দৃষ্টি আরও প্রখর আর অশ্লীল হয়ে উঠল। অবশ্য ওরা আমাকে দেখছিল না। ওরা দেখছিল রাকার ভেজা শরীরটাকে যেটা ওর ভেজা ড্রেসের নিচে প্রায় নগ্ন হয়ে আছে। রাকা ওদের লক্ষ্য করেছে। একটু সরে এলো আমার দিকে। আমি ওকে ডান হাত দিয়ে জড়িয়ে ধরে ওকে আশ্বস্ত করলাম। এই প্রথমবার দেখলাম যে রাকার দম্ভেও ভাটি পরে ছে। ওর চাহুনি মাটির দিকে নেমে গেছে। ও জানে যে এই ভেজা পাতলা ড্রেসটা ওকে পুরো দুনিয়ার সামনে প্রায় নগ্ন করে দিয়েছে। ওদের সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় ও নিজের নগ্ন হাত দুটোকে ড্রেসের ওপর দিয়ে নিজের ব্রা হীন বুকের ওপর চেপে ধরল। একটা ছেলে অশ্লীল ভাবে একটা সিটি মারল। ওর চোখ মাটির দিকে। ওর গতি একটু যেন কমে আসছিল সিটির শব্দটা শোনার পর, কিন্তু আমি ওকে প্রায় ধাক্কা মেরে লেকের গেট দিয়ে বের করে নিয়ে গেলাম।
“এইভাবে বাড়ি যেতে পারবি না। তোর বাবা মা কি বলবে? দাঁড়া একটা কিছু বন্দোবস্ত করা দরকার। “ আমার মুখের কথা শেষও হয়নি, ঠিক সেই সময় পেছন থেকে একটা গলা পেলাম। “কত টাকা দিয়ে এই মালটাকে নিয়ে এসেছিলে দাদা বলবে? এত বৃষ্টির মধ্যেও তোমাকে ছেড়ে পালায়নি।” এখানেই ছেলেটা থামল না। বলে চলল “ শালা আমাদেরও টাকা আছে কিছু। আমরাও বৃষ্টির তোয়াক্কা না করে ফুর্তি করতে চাই। খাসা মাল … হ্যাঁ বল?” পাশ থেকে তিন জন হেসে উঠল। ফুটপাথে এখন লোকের ভিড় তেমন নেই। রাকা ওর ভেজা শরীর নিয়েই ওদের দিকে ধেয়ে যাচ্ছিল, কিন্তু পারল না। আমি ওকে ধাক্কা মেরে গাড়ির দিকে পাঠিয়ে দিলাম। গলা নামিয়ে বললাম “চুপ চাপ গাড়িতে গিয়ে বসে পড়। রাকাকে আসতে দেখে ওর ড্রাইভার বেরিয়ে এসেছে গাড়ির ভেতর থেকে। হাতে ছাতা। এখন রাকার মাথায় ছাতা ধরার কোনও মানে নেই। আমি রাকাকে আবার বললাম “চুপচাপ গাড়িতে গিয়ে বসে পড়। বাকিটা আমি দেখে নিচ্ছি। “ ড্রাইভার দরজা খুলে দিতেই ও ক্ষুণ্ণ মুখে গাড়িতে চড়ে বসল। আমি ড্রাইভারকে বললাম “পাঁচ মিনিট এখানেই বসে থাক। আমি আসছি। ভেতর থেকে লক করে দাও।” ছেলেগুলো গাড়ির জানলার দিকে এক দৃষ্টে চেয়ে আছে। খিস্তি খেউড় করছে।
ওদের পাত্তা না দিয়ে কফি শপের কয়েকটা দোকানের পরেই একটা বড় জামা কাপড়ের দোকান দেখে ওই দিকে দৌড় লাগালাম। খুব বেশী হলে মিনিট পাঁচ, তার মধ্যে আবার ব্যাক করলাম রাকার পরনের ড্রেসের মতন একদম একই ড্রেস নিয়ে। অবশ্য আমি জানি আমি যেটা কিনেছি সেটা অনেক শস্তা। এর থেকে ভালো ড্রেস এদের কাছে নেই। তবে দেখতে একই রকম। আর এটা শুঁকনো। আর এই মুহূর্তে এটাই সব থেকে বড় কথা। আমি আসতেই ড্রাইভার গাড়ির দরজার লক খুলে দিল ভেতর থেকে। আমি পিছনের দরজা খুলে রাকার হাতে প্লাস্টিকটা হস্তান্তরিত করে দিয়ে বললাম “তুই এগিয়ে যা। ওই পিছনে একটা বার আছে ওখানে গিয়ে বস। ওয়াশরুমে গিয়ে ড্রেস চেঞ্জ করে এই প্লাস্টিকে ড্রেসটা ভরে রাখিস। আমি আসছি।” ও বলল “তুইও আয়।” বললাম “ আসছি। ছোট একটা কাজ সেরে আসছি।” রাকার গোঁ কম নয়। দেখলাম গাড়িটা নিজের জায়গা থেকে নড়ল না। আমি ধীরে ধীরে এদিক ওদিক দেখতে দেখতে এগিয়ে গেলাম লেকের গেটের দিকে। ছেলেগুলো পারলে আমাকে প্রায় ঘিরে ধরবে। আমি ওদের উপেক্ষা করে গেট দিয়ে ঢুকে গেলাম।
২২
খুব বেশী হলে মিনিট দুই তিন… বাইরে বেরিয়ে এসে দেখলাম যে রাকা গাড়ির কাঁচের ভেতর থেকে উদগ্রীব হয়ে লেকের গেটের দিকে তাকিয়ে আছে। আমাকে বাইরে বেরিয়ে আসতে দেখে ওর ভেতর থেকে যে একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস পড়ল সেটা বেশ লক্ষ্য করলাম। আমি গাড়ির দিকে এগিয়ে আসার আগেই একটা ক্ষীণ চিৎকার শুনে পিছনে ফিরে দেখলাম দুটো ছেলে বাইরে বেরিয়ে এসেছে। রাকা কি দেখল রাকাই জানে। কিন্তু ওকে চোখ মেরে একটা ইশারা করতেই ওর গাড়ি ছুটে বারের দিকে চলে গেল। আমার হেঁটে বারে পৌঁছাতে আরও মিনিট দশেক লেগেছে। ভেতরে ঢোকার আগে রাকাকে একটা ফোন করলাম। ও আমাকে টেবিল নাম্বার বলে দিল। এরকম ভেজা শরীর নিয়ে ঢুকতে একটু কেমন যেন লাগছিল, কিন্তু তারপর বুঝতে পারলাম যে এই হঠাত বৃষ্টির জন্য বার পুরো খালি।। রাকা ইতিমধ্যে ড্রেস চেঞ্জ করে নিয়েছে, মানে এখন ওর মাথা ভেজা থাকলেও ড্রেস পুরো শুঁকনো। ভেতরে এক কোনায় একটা ব্যান্ড বাজছে, কিন্তু আমরা বসেছি অনেক দূরে।
রাকা আমার হাতটা চেপে ধরে বলল “থ্যাংকস সোনা। “ বললাম “কেন? কি হল?” এখন আর সময় চেক করার কোনও মানে নেই। এর মধ্যেই আমার সঞ্চিতা ম্যাডামের সামনে উপস্থিত হওয়ার কথা ছিল। যখন সব টাইম ফেল করেই গেছে, তখন আর সময় নিয়ে মাথা ব্যথা করে কি লাভ। ও বলল “তুই একাই ওই চারজনকে কাত করে দিলি?” বললাম “কাত করিনি তো। ওদের শুধু বুঝিয়ে দিয়ে এলাম যে বাজে ব্যবহার করলে অনেক সময় লোকজন মেরে নাক মুখ ফাটিয়ে দেয়। বাকিটা ওদের বুঝতে দে।” একটু থেমে বললাম “বাই দা ওয়ে তুই চলে আসার পর ওদের পালের গোদাটার পুরো নাকটাই মেরে ফাটিয়ে দিয়ে এসেছি। বাকিগুলো হয়ত কেটে পরে ছে। ” ও ইতিমধ্যে ড্রিংকের অর্ডার দিয়ে দিয়েছে। আমার জন্য একটা দামি স্কচ অর্ডার করেছে। আমি কিছু বলার আগেই ও আমাকে বলল “এটা আমার তরফ থেকে পার্টি দিচ্ছি।” চিয়ার্স করে ড্রিংক শুরু করার পর রাকা বলল “ আমাকে দোলন ফোন করেছিল।”
আমি বললাম “তারও আগে আমার আরেকটা নিউজ দেওয়ার আছে। শুনলে হয়ত ঘাবড়ে যাবি।” ও বলল “কি নিউজ?” বললাম “ আমি যে মেসে শিফট করেছি তার মালকিন হলেন আমাদের সঞ্চিতা ম্যাডাম।” ও বলল “হোয়াট।” আমি অকপটে পুরো ব্যাপারটা ওকে খুলে বললাম। অবশ্য সঞ্চিতা ম্যাডামের সেই মেসেজ বা অজানা ভয়ের ব্যাপারটা চেপে রেখে। বলল “ তুই আমাদের বাড়িতেও শিফট করতে পারিস। তোর কোনও টাকাও লাগবে না।” আমি বললাম “আমার টাকার চিন্তা খুব একটা নেই। কিন্তু আমার এই সময়ে আমার বাবা আমাকে কোনও টাকা ছোঁয়াবে বলে মনে হয় না। সুতরাং একটু সাধারণ ভাবেই চলাফেরা করা ভালো। “ যতটা সময় আমরা ওখানে বসে ছিলাম , পুরো সময়টা ধরে রাকা ওর হাত দিয়ে আমার ডান হাতটাকে চেপে ধরে রেখেছিল। দোলনের ব্যাপারটা বলে রাখি এই বেলা। রাকা দোলনকে বলেছে যে আমরা কফি শপে না বসে লেকের ধার দিয়ে হাঁটছিলাম। ও আমার আর দোলনের রিলেশনের ব্যাপারে খুব চিন্তিত। আমি যে খুব দুঃখ পেয়েছি সেটাও ও বলেছে দোলনকে। রাকার ধারণা যে আমি এই সব ব্যাপারের সাথে কোনও ভাবে জড়িত নই। সেটাও ও দোলনকে জানিয়েছে।
আমরা বৃষ্টিতে আঁটকে পরে অনেকক্ষণ দাঁড়িয়েছিলাম একটা দোকানের নিচে। গাড়ি অনেক দূরে ছিল। আমি নাকি পাঁচ কাপ চা খেয়েছি ওর পয়সায়, আর দোলন পরে যেন সেই টাকাটা শোধ করে দেয়। এখন আমরা একটা বারে এসে ঢুকেছি। একটু মদ খেয়ে বেরবো। দোলন যেন আমাকে নিয়ে কোনও চিন্তা না করে... কারণ… রাকা আমাকে ড্রপ করে দেবে। আমি সব শুনে একটু হেসে বললাম “ ভাগ্যিস আমি দোলন নই। তোর কথা শুনেই আমার সন্দেহ হত।” ও বলল “কেন?” বললাম “তোর বানানো গল্পে একটা বিশাল বড় ফাঁক দেখতে পাচ্ছি যে।” ও বলল “বিশাল বড় ফাঁক?” বললাম “অনেক ফাঁক আছে। তবে একটাই যথেষ্ট।” ও বলল “সেটা কি?” বললাম “আমরা বৃষ্টিতে আঁটকে পরে দোকানের নিচে শেলটার নিয়েছি, এই অব্দি ঠিক ছিল। কিন্তু এই মোবাইলের যুগে, ফোন করে ড্রাইভারকে ডেকে গাড়িতে উঠে পড়লাম না … এই ব্যাপারটা কেমন আষাঢ়ে হয়ে যাচ্ছে না?” ও বলল “শালা তুই আর এখন টেনশন দিস না। তবে ঠিক বলেছিস। এটা কাঁচা খেলেছি।” বললাম “এখন আর এই নিয়ে টেনশন করে লাভ নেই। তবে, পরে সত্যি সিরিয়স কিছু হলে শুধু এই একটা মিথ্যা তোকে ডুবিয়ে ছাড়বে।” ও আমাকে বলল “আমাকে?” বললাম “আমাকে নিয়ে ডুববে বলে তোর মনে হচ্ছে?... আমি ঠিক ডুবতে শিখিনি। ডুবলে তুই একাই ডুববি।” কথা অন্য দিকে ঘুরে গেল।
তবে বার থেকে বেরনোর পর আমি রাকার সাথে ফিরিনি। আমি রাকাকে বললাম “অনেক রাত হয়েছে। এইবার তুই বাড়ি ফিরে যা। আমিও একটা ট্যাক্সি ধরে নিচ্ছি।” ট্যাক্সিতে চড়েই মোবাইল বের করলাম। দেখলাম প্রায় পঞ্চাশটা মিসড কল। মালিনী প্রায় ১০ টা কল করেছে। আমি ওকে রিং ব্যাক করতেই ও ফোন তুলে বলল “শোনো, এখানে একটা কেলেঙ্কারি হয়েছে সেই ভি আই পি কে নিয়ে। পরে বলব। তুমি কেমন আছ? (আমি কিছুই বললাম না, কিন্তু ও বলেই চলল) আমার মোবাইলে অনেক দিন ধরে একটা প্রবলেম হচ্ছে। তোমাকে অনেক আগেই বলব বলে ভেবেছিলাম, কিন্তু ভুলে গেছি। মোবাইলটা গেছে মনে হচ্ছে। অনেক সময় মোবাইলে কথা বলার সময় ক্যাচ ক্যাচ ঘস ঘস যত সব বিচ্ছিরি শব্দ হয়। মাঝে মাঝে শব্দগুলো ভীষণ বেড়ে যায়। জানি না মোবাইলে কি হল। তুমি একবার আমার মোবাইলটাকে নিয়ে গিয়ে সারিয়ে নিয়ে আসবে?” আমি জানি ওর মোবাইলে কোনও প্রবলেম নেই, তবুও বললাম “ হোয়াই নট মাই সুইটি। কালই আমি হোটেলে গিয়ে তোমার থেকে মোবাইলটা কালেক্ট করে নিচ্ছি। তোমার কি কাল নাইট আছে?” ও বলল “হ্যাঁ।” বললাম “বেশ তাহলে নটার দিকে গিয়ে কালেক্ট করে নেব।” লাভ ইউ ইত্যাদি বলে ফোন কেটে দিলাম।
সঞ্চিতা ম্যাডামও একটা কল করেছেন। এখন ওনাকে রিং ব্যাক করার মানে নেই কারণ আর একটু পরেই ওনার সাথে দেখা হবে। বৃষ্টির জন্য রাস্তা একদম খালি। ট্যাক্সিটা বেশ দ্রুত এগিয়ে চলেছে। কলেজের সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় দেখলাম যে কলেজের সামনে বেশ ভালো জল জমেছে। বৃষ্টি এখনও হয়েই চলেছে। বাড়ির থেকে একটু দূরে গাড়িটা ছেড়ে দিলাম। গায়ের জল শুঁকিয়ে গেছিল। আবার একটু ভিজে নিতে হবে ম্যাডামের সামনে যাওয়ার আগে। ঘড়িতে এখন প্রায় ৯.৪০ মিনিট। প্রথম দিনেই এত লেট। রাকার সাথে বারে অনেকক্ষণ বসে ছিলাম বটে কিন্তু ১ পেগের বেশী মদ খাইনি। ম্যাডাম গন্ধ পাবেন না। কলিং বেল বাজানোর আধ মিনিটের মধ্যে দরজা খুলে গেল। ওনার ভুরু কুঁচকে রয়েছে। বুঝতে পারলাম যে উনি বেশ রেগে আছেন। কাক ভেজা হয়ে ঢুকছি দেখে ম্যাডাম বললেন “ এই তোমার ৭ টার মধ্যে ফিরে আসা?” বললাম “ খুব বাজে ফেঁসে গেছিলাম হঠাত বৃষ্টি আসায়। প্রায় কোনও বাস নেই। আর যে বাসগুলো আসছে সেগুলোতে এত ভিড় যে ওঠা যাচ্ছে না। শেষে প্রায় ২ কিলোমিটার হেঁটে একটা বাস পেয়েছি। কোলকাতায় বৃষ্টি হলে তো খুব বাজে অবস্থা হয় দেখছি। আর অনেক জায়গায় দেখলাম জল জমতে শুরু করে দিয়েছে।”
ম্যাডাম বললেন “ফোন তুলছিলে না কেন?” বললাম “রিং শুনতে পেলে তো তুলব। আপনি যখন কল করেছিলেন তখন বাসের ভেতর প্রায় একশটা মানুষের ধাক্কা সহ্য করছি। বৃষ্টির জন্য নেমেও চেক করতে পারিনি।” উনি একটু নরম হয়ে বললেন “ প্রথম দিনেই এত লেট করে এলে। আমি ভয় পাচ্ছিলাম যে আমার হাজবেন্ড ফিরে এলে কি লঙ্কা কাণ্ডটাই না বাধা ত। যাও ড্রেস চেঞ্জ করে নাও। নইলে আবার ঠাণ্ডা লেগে যাবে।” আমি সিঁড়ি দিয়ে ওঠার আগে ওনাকে জিজ্ঞেস করলাম “ম্যাডাম একটা রিকোয়েস্ট ছিল। অবশ্য যদি আপনার কোনও আপত্তি না থাকে।” উনি বললেন “কি?” বললাম “ বাড়ি থেকে চিঠি এলে, বা কিছু জিনিস এলে আপনার এই অ্যাড্রেসে নিলে আপনার কোনও আপত্তি আছে?” উনি বললেন “এতে আবার জিজ্ঞেস করার কি আছে? রাতে খাওয়ার পর ফুল অ্যাড্রেসটা লিখে নিও।” আমি ওপরে উঠে গেলাম। যাক এই ধাক্কাটা সামলানো গেছে। পথে অবশ্য ট্যাক্সিটাকে একটা এফ এল শপের সামনে দাঁড় করিয়ে দুটো মদের বোতল উঠিয়ে নিয়েছিলাম। সেগুলোকে ভালো করে লুকিয়ে রাখতে হবে।
ফ্রেশ হয়ে বেরতে না বেরতেই কলিং বেলের শব্দ পেলাম। ঘরে পরার ভদ্র পায়জামা পাঞ্জাবি পরে রেডি হয়ে নিলাম। মনে হল ম্যাডামের হাজবেন্ড বাড়ি ফিরে এসেছেন। আমার ফার্স্ট ইম্প্রেশনটা যাতে ভালো হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। এই দিকে একটা অন্য সমস্যা হয়েছে। বোতলগুলো বের করার সময় খেয়াল করলাম যে ব্যাগের ভেতরের জেরক্সগুলো সব ভিজে গেছে। সেগুলোকে বিছানার ওপর আর টেবিলের ওপর মেলে রেখে দিলাম যাতে তাড়াতাড়ি শুঁকিয়ে যেতে পারে। ল্যাপটপটা ভেতরে ঢুকিয়ে রেখে দিয়ে গেছিলাম, সেটাতে বসে আজ কয়েকটা কাজ সারতে হবে। অবশ্য সেটা খাওয়ার পর এসে করলেও চলবে। ডাইরিটাতেও বেশ কিছু জিনিস লিখতে হবে। সেটা এইবেলা সেরে নিলে ভালো হয়। ডাইরিটা খুলে খুব তাড়াতাড়ি কিছু পয়েন্ট নোট করা শুরু করলাম। কয়েকটা পয়েন্ট একটু ইলাবোরেট করে লিখতে বাধ্য হলাম। লেখা যখন প্রায় শেষ হব হব করছে এমন সময় দরজায় টোকা পড়ল। দরজা খোলার আগে ডাইরিটা বন্ধ করে দিলাম আর সেই জায়গায় ক্লাসের একটা খাতা খুলে রেখে দিলাম।
ম্যাডাম আর ম্যাডামের পিছনে একজন ভদ্রলোক। ভদ্রলোকের হাইট ৫ ফুট ১১ ইঞ্চি। শরীরে সামান্য মেদ জমেছে। গায়ের রঙ চাপা। ভদ্রলোকের গায়ের জোর যে ভালোই সেটা দেখেই বোঝা হয়। মানে এক কথায় উনি দরকার পড়লে যেমন দু ঘা দিতে পারেন, তেমনি দু ঘা নিতেও পারেন। পরনে সাদা রঙের হাফ শার্ট আর ব্ল্যাক ট্রাউজার। কাঁধের ওপর একটা কালো ব্লেজার ফেলে রেখে দিয়েছেন। চোখ মুখে ব্যক্তিত্বের ছাপ স্পষ্ট। চোখে মোটা ফ্রেমের যে চশমটা পরেছেন সেটা ওনার চেহারার ব্যক্তিত্ব যেন আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। উনি ম্যাডামের পেছন পেছন ঘরের ভেতর প্রবেশ করলেন। উনি দেখলাম ঘরের চারপাশটা একবার দেখে নিলেন, মানে সব জিনিসের ওপর একবার চোখ বুলিয়ে নিলেন। বিছানার অবস্থাটা যে তথৈবচ সেটা আর বলে দিতে হয় না।
ম্যাডাম হেসে বললেন “ এগুলো জেরক্স করালে আজ?” বলে একটা পেজ বিছানা থেকে উঠিয়ে নিয়ে চোখের সামনে ধরে কিছুক্ষণ লেখা গুলো পরে বললেন “ বেকার টাকা নষ্ট করেছ। যাই হোক, ইনি আমার হাজবেন্ড আর এ হল সংকেত।” ভদ্রলোক “হাই” বলে আমার দিকে হাত বাড়িয়ে দিলেন হ্যান্ডশেক করার জন্য। আমি ইচ্ছে করে হ্যান্ডশেক না করে একটা নমস্কার করলাম। উনি একটু হেসে বললেন “হুম বলেছিলে বটে।” শেষের কথাটা অবশ্য বললেন ম্যাডামকে লক্ষ্য করে। ম্যাডাম বললেন “এখানে হ্যান্ডশেক করার জন্য কেউ হাত বাড়িয়ে দিলে হ্যান্ডশেক করতে হয়।” এইবার আর আমি কথা না বাড়িয়ে ওনার সাথে হ্যান্ডশেকের পর্বটা মিটিয়ে নিলাম। আমার হাত থেকে হাত ছাড়িয়ে নেওয়ার পর ভদ্রলোক আমাকে জিজ্ঞেস করলেন “ হাতে এরকম কড়া পড়ল কি ভাবে?” ভদ্রলোকের গলার আওয়াজ ওনার চেহারার সাথে মানানসই। বললাম “গ্রামে অনেক কাজ নিজেদের হাতে করতে হয় তো।” উনি বললেন “ হুমম। রাতে ডিনার কটার সময় কর?” বললাম “ঠিক নেই কিছু। গ্রামের দিকে তো কারেন্ট থাকে না অর্ধেক দিন। তাই আটটার মধ্যেই করে ফেলি। তবে এখানে এসে অভ্যেসটা বদলে গেছে।” উনি বললেন “ এত দিনের অভ্যেস এই কয়েকদিনেই বদলে গেল?” বললাম “ না না তেমন নয়। কিন্তু কলেজ পড়াশুনা …” ম্যাডাম বাধা দিয়ে বললেন “উফফ এসেই শুরু হয়েছে জিজ্ঞাসাবাদ।” আমি বললাম “না না ঠিক আছে। তবে এখানে খেতে খেতে ১০.৩০ হয়েই যায়। “
উনি ম্যাডামের দিকে ফিরে বললেন “ডিনার রেডি?” ম্যাডাম বললেন “কয়েকটা জিনিস শুধু গরম করতে হবে।” আমি বললাম “তাড়া নেই।” উনি বললেন “ এসো আমার ঘরে। বসে একটু গল্প করা যাক। অবশ্য তুমি যদি এখন কিছু পড়াশুনার কাজ করছিলে তো ছেড়ে দাও। “ বললাম “না না তেমন কিছু নয়।” ম্যাডাম বললেন “ সংকেত তুমি যদি আগে আমাকে বলতে যে এই বইয়ের পাতা জেরক্স করাচ্ছ তাহলে বারণ করতাম। বাড়িতেই এই বইটা আছে। সেখানে থেকেই পরে নিতে পারতে। “ আমি বললাম “ তাহলে ব্যাপারটা ফালতু হয়ে গেল বলতে চাইছেন? আমি তো আগামীকালের জন্যও বেশ কিছু জেরক্স করতে দিয়ে এসেছি। আগাম টাকাও দিয়ে এসেছি। যাই হোক নেক্সট টাইম থেকে আপনাকে জিজ্ঞেস না করে জেরক্স করাব না। ” ম্যাডাম বেরিয়ে যেতেই উনি বললেন “ আমি চেঞ্জ করে নিচ্ছি। পাঁচ মিনিট পর এসে তোমাকে ডেকে নিয়ে যাচ্ছি।” মাথা নাড়িয়ে সায় দিলাম। ফার্স্ট ইম্প্রেশন কেমন হল সেটা ঠিক বুঝতে পারলাম না।
পাঁচ মিনিট নয়, ডাক এলো প্রায় দশ মিনিট পর। ওনার কাজের ঘরে গিয়ে প্রবেশ করতেই উনি বললেন “দরজাটা বন্ধ করে দাও। এসি চালাব।” দরজা বন্ধ হল। উনি এসিটা অন করে আমাকে টেবিলের সামনে রাখা একটা চেয়ার দেখিয়ে দিলেন। বসে পড়লাম। উনিও ওনার বড় চেয়ারটাতে গিয়ে বসে পড়লেন। দেখলাম দুটো দামি কাঁচের গ্লাস সাজিয়ে রেখেছেন টেবিলের ওপর, পাশে বরফ রাখার জায়গা। একটা শেলফ খুলে একটা দামি স্কচের বোতল বের করে আমাকে জিজ্ঞেস করলেন “চলে তো?” বললাম “হ্যাঁ। তবে কম।” দুজনের গ্লাসে ড্রিংক ঢেলে উনি আমর সাথে চিয়ার্স করলেন। খাওয়া শুরু হল। আমি অবশ্য একবার ওনাকে বলেছি “ম্যাডাম যদি এখন …” উনি বললেন “প্রথমত, ইঞ্জিনিয়ারিং যারা পড়ে তাদের অধিকাংশই যে ড্রিংক করে সেটা ওনার অজানা নয়। আর আমরা দুজনেই এটা জানি যে সেদিন তুমি মিস্টার মুখার্জির ছেলে মেয়ের সাথে গেছিলে পার্টি করতে। “ আমি আর কথা বাড়াই নি। গোটা সময়টা আমাকে উনি অনেক প্রশ্ন করলেন। বাড়িতে কে কে আছে। বাবা কি করে, মা কি করে, সেদিন পার্টিতে কি কি হয়েছিল, এমনকি গতকাল হাসপাতালে আমার চোখের সামনে কি কি ঘটেছিল বা আমি কি কি দেখেছিলাম ইত্যাদি।
একটা কথা জিজ্ঞেস না করে পারলাম না যে “স্যার আপনি কি পুলিশ?” উনি হেসে বললেন “না।” আধ ঘণ্টা মতন পেড়িয়ে গেছে, আমাদের গ্লাস আরেকবার রিফিল করে দিয়েছেন উনি। এমন সময় দেখলাম দরজা খুলে ম্যাডাম প্রবেশ করলেন। “এখন তুমি ছেলেটার সাথে বসে বসে মদ খাচ্ছ?” উনি একটু গম্ভীর ভাবে বললেন “আয়াম সরি। তবে প্রাপ্ত বয়স্ক ছেলে মেয়েরা মদ্য পান করতেই পারে। আমি সংকেতের কাছ থেকে ওর বাড়ির খবর শুনছিলাম। অ্যান্ড আমার মনে হয় যে তোমাদের কাল খুব একটা তাড়া থাকার কথা নয়। অনেক বেলা অব্দি পরে পরে দুজনেই ঘুমাতে পারবে।” একটা সিগারেট ধরিয়ে বললেন “ ইনফ্যাক্ট কাল আমারও কোনও ডিউটি নেই।” ম্যাডামের মুখটা এক মুহূর্তের জন্য কেমন কালো হয়ে গিয়েছিল, কিন্তু তার পরের মুহূর্তেই নিজেকে সামলে নিয়ে বললেন “ আচ্ছা। কিন্তু আমাদের তাড়া থাকবে না কেন সেটা তো বুঝলাম না।” উনি সিগারেটে একটা টান দিয়ে বললেন “অর্ধেক কোলকাতা শহর জলের তলায় যেতে বসেছে। তোমাদের কলেজও প্রায় ডুবে গেছে। সারা রাত বৃষ্টি হলে কাল আর দেখতে হবে না। যা শুনলাম ভোর রাত থেকে বৃষ্টি আরও বেড়ে যাবে। তোমাদের ম্যানেজমেন্ট হয়ত কাল আর পরশুর জন্য কলেজ বন্ধ রাখতে বাধ্য হবে। কাল সারা দিন বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা। “ ম্যাডাম বললেন “হ্যাঁ নিউজেও সেরকম দেখলাম।” উনি এক ঢোকে গ্লাস শেষ করে বললেন “ তবে কোনও প্রেসার নেই। এনি ওয়ান ক্যান লিভ অ্যান্ড হ্যাভ হিস অর হার ডিনার। আমার আরেকটু সময় লাগবে।”
আমি পড়লাম ধর্ম সংকটে। উঠে পড়াই উচিৎ। কিন্তু এতে যদি ইনি আবার কিছু মাইন্ড করেন তো মহা বিপদ। আর তাছাড়া কথাটাও একটু অন্য দিকে ঘোরানো দরকার। ইনি অবশ্য মালিনীর বর নন যে মদ খেয়ে নিজের বউকে যা নয় তাই বলে চলবে। এনার কথা বার্তা বেশ মার্জিত। ম্যাডাম একটা চেয়ারের ওপর বসে বসে কি যেন ভাবছেন। আমি বললাম “ আচ্ছা একটা কথা আপনাকে বলা হয় নি। “ কথাটা বললাম ম্যাডামকে লক্ষ্য করে। দুজনেই আমার দিকে মুখ তুলে তাকালেন। বললাম “ আমার মর্নিং ওয়াক, এক্সারসাইজ ইত্যাদির বদভ্যাস আছে। খুব ভোরে বেরিয়ে যাই।” স্যার প্রশ্ন করলেন “কত ভোরে?” একটুও না ভেবে বললাম “চারটের দিকে।” ওনার ঠোঁটের কোনায় হাসি খেলে গেল। বললেন “ভেরি গুড। আমি অবশ্য জিম করি। বাড়িতেও একটা জিম আছে। পরে তোমাকে দেখিয়ে দেব। ইউ ক্যান ইউস দ্যাট অ্যাস অয়েল। তবে বাইরে দৌড়ানো আর ট্রেড মিলে দৌড়ানো কি এক জিনিস?” আমি হেসে মাথা নাড়িয়ে সায় দিলাম।
উনি চেয়ার থেকে উঠে শেলফ খুলে একটা বাক্স বের করে তার থেকে দুটো চাবি নিয়ে আমার দিকে এগিয়ে ধরলেন। আমি চাবি দুটো হাতে নিতেই উনি বললেন “ একটা মেইন গেটের, একটা মেইন ডোরের। এমনিতেও তোমার কাছে একটা ডুপ্লিকেট সেট থাকা উচিৎ। কারণ কে কখন আসবে যাবে সেটা সব সময় আগে থেকে প্ল্যান করা যায় না। “ আমি ধন্যবাদ জানিয়ে চাবি দুটো পকেটস্থ করলাম। আমার গ্লাসও প্রায় শেষের দিকে। উনি আমার গ্লাসে আরেকবার পানীয় ঢালতে যাচ্ছিলেন কিন্তু আমি বাধা দিয়ে উঠে পড়লাম। বললাম “ আজ ভীষণ টায়ার্ড। শোয়ার আগে একটু বই খাতা নিয়েও বসতে হবে। আজ আর না। “ ম্যাডামও উঠে পড়লেন। বললেন “চলো আমরা গিয়ে ডিনার করে নি। ওর টাইম লাগবে।” আমি গুড নাইট জানিয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে এলাম। ম্যাডামের পিছন পিছন নিচে নামতে নামতে জিজ্ঞেস করলাম “ উনি কি অনেক পরে খাবেন? নইলে আমরা আরও কিছুক্ষণ ওয়েট করতে পারতাম।” ম্যাডাম বললেন “ওয়েট করে লাভ নেই। ওর খেতে খেতে সেই তিনটে বাজবে। “ বললাম “বাবা এত লেট করে খান?” উনি জবাব দিলেন “সব সময় নয়। তবে আজকে ওইরকমই হবে।”