Thread Rating:
  • 34 Vote(s) - 3.35 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
Thriller মুখোশ - The Mask by Daily Passenger
#24
নাহ...।কিছুতেই মেলানো যাচ্ছে না...অবশ্য একটা সম্ভাবনা থাকতে পারে যে শিখা জানে যে এখন দোলন ওর পরিবারের শোকে ভেঙ্গে পরে ছে। এখন ও হাবি জাবি যা কিছু বলতে পারে আর দোলন সরল মনে ওর কথা বিশ্বাস করে নেবে। তার থেকেও বড় কথা হল দীপকের মৃত্যুর ব্যাপারেও যদি ওর আমার ওপর সন্দেহ হয়ে থাকে (যদিও আমি জানি না যে কেন) তাহলেও ও দোলনের মাথায় সন্দেহ ঢুকিয়ে প্রতিশোধ তোলার চেষ্টা করতে পারে। কারণ দোলনদের ক্ষমতা তো নেহাত কম নয়। তার সাথে রেপের ব্যাপারটা যোগ হলে তো নাথিং লাইক দ্যাট। সেটা হলে বলতে হবে যে শিখা এক মস্ত বড় খেলোয়াড়। দোলনদের ক্ষমতা ইউস করছে পরোক্ষ ভাবে, আর আমাকে মেসেজ করে ডেকে আমাকে ব্ল্যাক মেইল করে কিছু পয়সা হাতাবে। তবে গতকাল সকালে ওর মেইলে যা ঢুকেছে সেটা দেখার পরও ও এত সাহস পায় কি করে! শিখা ব্যাপারটা কেমন জানি মাথা ব্যথার পর্যায়ে চলে যাচ্ছে মিনিটে মিনিটে। রাকার সাথে দেখার করার জন্য নির্দিষ্ট হওয়া গন্তব্য স্থলে পৌঁছে গেছি সময়ের আগেই। চারপাশে তাকিয়ে দেখলাম যে রাকা এখনও এসে পৌছায়নি। অগত্যা ট্যাক্সি ভাড়া মিটিয়ে সামনের একটা চায়ের দোকানে গিয়ে বেঞ্চে বসে পড়লাম। আরেকটা সিগারেট ধরালাম। দোলনকে দোষ দিয়ে কি হবে! মাথায় সন্দেহ বা চিন্তা ঢুকলে সেটা যতক্ষণ না শলভ হচ্ছে ততক্ষণ মাথার ভেতরটা খচ খচ করে চলে। এখন আমারও সেই একই অবস্থা। হোয়াই দোলন? পাঁচটা বাজতে যখন ঠিক দুই কি তিন মিনিট বাকি এমন সময় ফোনটা বেজে উঠল। দেখলাম দোলন। ফোন তুলে খুব গম্ভীর গলায় বিরক্তির সাথে বললাম হ্যালো।ও কিছুক্ষণ চুপ। তারপর বলল সরি সোনা। তুই আমাদের সাথে দেখা করতে এসেছিলিস। আমার তখন মাথার ঠিক ছিল না। আসলে নিচে বসে বসে লোকজন এমন সব কথা আলোচনা করছে যে তাতে মাথায় সন্দেহ আসতে বাধ্য। তবে তোর ওপর যে কেন বিনা কারণে সন্দেহ করতে গেলাম সেটা এখনও বুঝতে পারছি না। হতে পারে ওই শিখাই এর জন্য দায়ী। তবে তুই চলে যাওয়ার পর মনটা আরও খারাপ হয়ে গেছে। সোনা তুই কিন্তু আমার কথায় কিছু মনে করিস না। এরকম কোনও দিন তোর সাথে হলে বুঝতে পারবি যে এই সময় মাথার ঠিক থাকে না। কাকে কি বলছি সব সময় বুঝে উঠতে পারা যায় না। আমি চুপ করে শুনে যাচ্ছি। আমার চোখ চারপাশে রাকাকে খুজে চলেছে। শালা এই সব মেয়েদের কোনও সময় জ্ঞান নেই। ও থেমে বলল তুই চুপ করে আছিস? জানি তুই রাগ করেছিস। প্লীজ ডোন্ট মাইন্ড। মুয়ায়ায়ায়ায়ায়াহ।আমি নিরুত্তাপ ভাবে বললাম আমি রাস্তায় আছি। রাকার সাথে দেখা করতে এসেছি।ও একটু চমকে গিয়ে বলল রাকার সাথে দেখা করছিস? কোথায়?” বললাম কফি শপ, ঢাকুরিয়া লেকের পাশে। তবে ও এখনও আসেনি।একটু থেমে নিয়ে বলল কেন?” বললাম জানি না কেন। ও আমায় দেখা করতে বলেছে। যতদূর বুঝতে পেরেছি যে ও তোকে নিয়ে খুব চিন্তিত। গতকাল তোর কিছু কথা থেকে ওরও মনে হয়েছে যে তুই আমাকে সন্দেহ করছিস। তাই ও আমাকে ডেকেছে আমার সাথে কথা বলার জন্য। আমার মনে হল যে ও আমাদের প্রবলেম মিটিয়ে নিতে বলবে। সেই সাথে হয়ত এই ব্যাপারেও আমাকে কিছু জ্ঞান দেবে।ও বলল কোন ব্যাপারে?” বললাম এই যা সব হচ্ছে চারপাশে। খুন, বদনাম ইত্যাদি।দোলন একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল শালাটার সব ব্যাপারে বাড়াবাড়ি। ওকে কে বলেছে এত নাক গলাতে। মালটা সব ব্যাপারে এরকম ওস্তাদি ফলাতে যায় আর শেষে নিজে ফেঁসে যায়। মালটার ঘটে যে কবে ভগবান শুভ বুদ্ধি দেবেন সেটা কে জানে!আমি একটু চুপ করে থেকে বললাম একটা কথা অনেকক্ষণ ভেবেও আমি কিছুতেই বুঝতে পারছি না। পুলিশ আমাকে ডেকেছিল ফুটেজ দেখে সন্দেহ হয়েছিল বলে। কিন্তু তারপর তো ময়নাতদন্তের রিপোর্ট এসে গেছে। অনেক কিছুই জানা গেছে। তারপরও কেন যে তোর আর শিখাদির মতন লোকজন আমাকে সন্দেহ করছে সেটা কিছুতেই আমার মগজে ঢুকছে না। তোদের সাথে আগের দিন পার্টি করতে যাওয়া ছাড়া আমার যে আর কি দোষ আছে সেটাই দেখতে পাচ্ছি না। শেষের কথাগুলো আমি ইচ্ছে করেই বেশ ঝাঁঝের সাথে বললাম। তারপর বিড়বিড় করে বললাম বাবা ঠিকই বলেছিল যে শহরের ছেলে মেয়েদের সাথে বাইরে বেশী ফুর্তি করতে যাওয়া মানে নিজের বিপদ নিজে ডেকে আনা। ঘাট হয়েছে, এই বিপদ থেকে বেরোই একবার। আর তোদের সাথে আমি নেই এই সব ব্যাপারে।ওর পরের বুঝতে পারলাম যে ও আমার গলার বিরক্তিটা বেশ ভালোই বুঝতে পেরেছে। ও বলল পুচু আবারও বলছি যে তখন কি বলতে কি বলেছি সেই নিয়ে কিছু মাইন্ড করিস না। আই লাভ ইউ। রাকা আর তুই ছাড়া আমার আর কে আছে বল? তবে রাকা একটা গাধা। ওকে বুঝিয়ে বলে দিস যে আমার ব্যাপারে চিন্তা করে আরও রোগা না হতে। তোরা শুধু কফি খাবি?” বললাম কফি শপে এখনও বিয়ার সাপ্লাই শুরু করেনি। নইলে এখন মদ খেতেই ইচ্ছে করছে।ও বলল লেকের পাশেই একটা ভালো বার আছে। সেখানে গিয়ে মদ আর ডিনার করে নিতে পারিস। লাভ ইউ। আর শোন রাকা কে বলে দিস যে আমার আর তোর ব্যাপারে এত চিন্তা করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ। তবে ও বেশী বাড়াবাড়ি করলে পরে আমাদের ওকে বাঁচানোর জন্য ছুটতে হবে। তাই যেন একটু ঠাণ্ডা থাকে। এটা পুলিশের ব্যাপার। কাকু কে দেখে দেখে ও নিজেকে উকিল ভাবতে শুরু করে দিয়েছে। বললাম ঠিক আছে। বলে দেব। ও বলল উফফ।। এত কাটাকাটা কথা বলছিস কেন? ছেলের অভিমান তো ভয়ানক। তুই সামনে থাকলে তোকে একশটা কিসি করে তোর সব রাগ ভাঙিয়ে দিতাম। বললাম আমি টু দি পয়েন্ট কথা বলছি। কাটাকাটা নয়। যাই হোক।ও বলল ঠিক আছে, রাতে একবার কল করব। ফোন তুলিস। এখন রাখছি। লাভ ইউ ভেরি মাচ।একটু হেসে লাভ ইউ টুবলে আমিও কলটা কেটে দিলাম।
 
২০
 
সত্যিই রাকার কোনও সময় জ্ঞান নেই। এখনও ওর কোনও দেখা নেই। বেঞ্চ থেকে উঠে আরেকটা সিগারেট ধরাতে না ধরাতেই আকাশে একটা হালকা মেঘের গর্জন শোনা গেল। অনেকক্ষণ আগে থেকেই লক্ষ্য করছিলাম যে মেঘ করেছে। তবে সময় যত যাচ্ছে ততই যেন মেঘের ঘনঘটা বেড়েই চলেছে। ফোরকাস্টে বলা আছে যে কোলকাতা ভেসে যাবে, এমন বৃষ্টি হওয়ার চান্স আছে। এখন যে হারে মেঘ জমা হচ্ছে তাতে সেই সম্ভাবনা ঠিক উড়িয়ে দেওয়া যায় না। ভাগ্যিস ল্যাপটপের ব্যাগটা সাথে এনেছি। ফিরতি পথে দুটো বড় মদের বোতল তুলে নিতে হবে। একমনে সিগারেট টানতে টানতে আকাশে মেঘেরে আনাগোনা দেখছি, ঠিক এমন সময়, হিল তোলা জুতোর শব্দ পেয়ে বাম দিকে তাকাতে বাধ্য হলাম।
 
ওই যে তিনি। মুখে একটা কাচুমাচু ভাব নিয়ে রাকা প্রায় দৌড়ে দৌড়ে এগিয়ে আসছে আমার দিকে। রাস্তার ধারে দেখলাম ওর গাড়িটা পার্ক করে রাখা আছে। তবে... এখানে তো গাড়ি পার্ক করার নিয়ম নেই। অবশ্য অবিনাশ বাবুর বেপরোয়া মেয়ের সামনে কোলকাতার ট্রাফিক আইনের কি আর মাহাত্ম্য! একটা ডিপ ব্লু রঙের ড্রেস পরেছে ও। হাতকাটা ঢোলা ড্রেসটা কাঁধের ওপর থেকে শুরু করে একটানা নেমে এসেছে থাইয়ের ওপর অব্দি। প্রায় অর্ধেকের বেশী থাই আর পায়ের পুরো নিম্নভাগটা নগ্ন। একবার উঁচু হিলের জন্য হোঁচট খেয়ে প্রায় পরে ই যাচ্ছিল, একটু সামনের দিকে ঝুঁকে কোনও মতে সামলে নিয়েই আবার এগিয়ে এলো আমার দিকে। এত খাটো ড্রেস পরেছে যে একটু সামনের দিকে ঝুঁকলেই ড্রেসের পেছন দিকটা উঠে গিয়ে পাছা সমেত ওর সরু কোমরটাকে গোটা দুনিয়ার সামনে নগ্ন করে ফেলবে। অবশ্য ভেতরে প্যান্টি পরা আছে বলে লোকে শুধু ওর টাইট পাছার শেপ আর সাইজটাই উপভোগ করতে পারবে। নগ্নতা কিছু দেখতে পাবে না। তবে তাও বা কম কিসের। চারপাশের অনেকেই অবশ্য ওকে তাড়িয়ে তাড়িয়ে দেখছে বেশ কিছুক্ষণ ধরে। যদিও আজ ও ঢোলা ড্রেস পরেছে তবুও অন্য দিনের মতনই ড্রেসের নিচে ওর বুক জোড়া উদ্যাম ক্যাম্বিশ বলের মতন অবাধ্য হয়ে এদিক ওদিক লাফিয়ে চলেছে প্রতিটা দ্রুত পদক্ষেপের সাথে সাথে। রাকার অবশ্য সেই নিয়ে কোনও মাথা ব্যথা নেই।
 
আমার সামনে এসেই নিজের দুই কান ধরে বলল সরি সরি। কখন এসেছিস?” বললাম এই তো কিছুক্ষণ। বলল চল লেকের ধারে গিয়ে বসা যাক।আমি বললাম আকাশের অবস্থা দেখেছিস?” ও আকাশের দিকে মুখ তুলে তাকাল খুব অবাক চোখ করে। বললাম যে কোনও সময়ে বৃষ্টি নামতে পারে। লেকের ধারে গিয়ে বসার রিস্ক নিয়ে কি লাভ।ও আমার বাম হাতটা নিজের ডান হাতে ধরে আমাকে বগলদাবা করে লেকের গেট দিয়ে ঢুকে গেল। বলল বৃষ্টিতে ভিজতে তোর মতন ছেলেদের এত ভয় কেন। বৃষ্টিই তো সব থেকে বেশী রোম্যান্টিক ব্যাপার। আমি আর কথা বাড়ালাম না। মনে মনে শুধু প্রার্থনা করলাম হে ভগবান অসময়ে বৃষ্টি ডেকে নিয়ে এসো না। হেভি কেস খেয়ে যাব। এই মেয়েটা পাগল। ওর পাল্লায় পরে আমিও আজ কেস খেয়ে ভূত হয়ে যাব।
 
লেকের পাঁচিলের ভেতর যত প্রেমিক প্রেমিকা ছিল সব আকাশের অবস্থা দেখে ধীরে ধীরে কেটে পড়তে শুরু করে দিয়েছে। এই সময় পুলিশের হাতে ধরা পড়লে হেনস্থার শেষ থাকবে না। তবে রাকাকে বাধা দিয়ে কোনও লাভ নেই। প্রায় পুরো লেকটাকে প্রদক্ষিন করে একটা বড় গাছের নিচে এসে দাঁড়াল। গাছের নিচটা পরিষ্কার। আকাশ থেকে এখনও আলো মিলিয়ে যায়নি। আমি এদিক ওদিক তাকিয়ে দেখছি বলে ও আমাকে বলল চাপ নিস না। এখানে কেউ আসবে না। বসে পড়।বসে পড়ব? কিন্তু কোথায়? ও ওর হ্যান্ডব্যাগ থেকে একটা বড় রুমাল বের করে মাটিতে পেতে তার ওপরে বসে পড়ল। অগত্যা আমিও ওর দেখা দেখি পকেট থেকে রুমাল বের করে বসে পড়লাম। ও কোনও সময় নষ্ট করল না। সরাসরি মেইন পয়েন্টে চলে এলো। কাল কি বলতে গিয়ে বলতে পারলি না?” আমি চুপ। ও বলল তোর কথা শুনে আমার কি মনে হয়েছে সেটা বলি? কারণ আমার তোকে দেখে মনে হচ্ছে যে তুই নিজের মুখে সেটা বলতে লজ্জা পাচ্ছিস।আমি মাথা নেড়ে বললাম হ্যাঁ তাই ভালো।
 
ও একটু থেমে বলল তুই আমাকে পছন্দ করিস। কিন্তু তুই বুঝেছিলিস যে আমি বিশালকে পছন্দ করি, তাই তুই আমাদের মাঝে আসতে চাইছিলিস না। আমার চিবুক আর গাল দুটো নিজের বাম হাতের আঙুলের মধ্যে নিয়ে আমাকে আদর করে বলল ইউ আর সো সুইট। সো কিউট। আমরা কেন তোর মতন নই বলবি?” এই কথার কোনও উত্তর হয় না, চুপ করে বসে রইলাম। একটু থেমে আমাকে লক্ষ্য করল ও কয়েক মুহূর্তের জন্য। আমি মাটির দিকে মুখ করে বসে আছি। ও আবার শুরু করল শোন , আমাকে তোর সেক্সি লাগে, আমাকে তুই রেস্পেকট করিস। তাহলে মুখ ফুটে সেদিন কিছু তো বলবি পাগল। আমি বললাম কি বলতাম?” ও বলল বলতিস তোর মনের কথা।বললাম তখন তুই কি করতিস? তুই তো জানতিস যে দোলনও আমাকে পছন্দ করে। আর বলে কি লাভ হত? তুই তো আর আমাকে পছন্দ করিস না।
 
ও বলল দোলনের ব্যাপারটা জানতাম। কলেজের দ্বিতীয় দিন থেকেই ও তোকে নিয়ে এত বেশী বকা শুরু করেছিল যে তখনই বুঝতে পেরেছিলাম যে ও তোর ব্যাপারে মজে গেছে। তবে সত্যি বলতে কি ওর কথা শুনে শুনেই হয়ত আমিও তোর ব্যাপারে নিজের অজান্তে একটু সিরিয়স হয়ে পরে ছিলাম। আর পাগল, তোকে পছন্দ না করলে কি এইভাবে তোর সাথে দেখা করতে আসি কোনও দিন? এখনও তুই বুঝতে পারছিস না যে আমিও তোকে পছন্দ করি?” বললাম হুমম। কিন্তু দোলন সেদিন আমাকে প্রপোজ করার পর তো আমি ওকে হ্যাঁ বলে দিয়েছি। ও একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল জানি রে সব জানি। দোলন আমাকে সব বলেছে। কিন্তু একটা কথা বল, দোলনের মতন একটা মেয়ের সাথে তুই কি সহজ সরল ভাবে কোনও দিন মিশতে পারবি। তোকে গতকাল পুলিশ ডেকে দুটো প্রশ্ন করেছে বলে খামকা তোর ওপরে সন্দেহ করে বসে আছে। এইভাবে কত দিন টানতে পারবি? ওর আগের আফেয়ারটা কেন কেটে গেছে জানিস? ওর ওভার পসেসিভনেস আর সন্দেহ রোগের জন্য। অবশ্য এক্ষেত্রে ওর সন্দেহ যে তুই এই কেলেঙ্কারির সাথে কোনও ভাবে যুক্ত হলেও হতে পারিস। সন্দেহ করাটা ওর একটা রোগের পর্যায়ে গিয়ে দাঁড়িয়েছে।
 
বললাম জানি সেটা। আজ ওর সাথে দেখা করতে গিয়েছিলাম। ও আমার ওপর প্রচুর খেরে বসে আছে।শেষ কথা গুলো গলা নিচু করে মাটির দিকে মুখ নামিয়ে বললাম। ও বলল একটা সত্যি কথা বলবি?” আমি ওর দিকে করুণ মুখ নিয়ে তাকাতে বাধ্য হলাম। বলল তুই জীবনে কতবার প্রেমে পরে ছিস?” আমি আশ্চর্য হয়ে বললাম এই প্রশ্নের মানে? কবার প্রেমে পরে ছি মানে? প্রেম কতবার হয়?” ও আমার কাঁধে হাত রেখে বলল উফফ মাইন্ড করছিস কেন? তোদের মতন গুড বয় গুলোকে নিয়ে এই এক সমস্যা। তোরা এত ভালো যে সব কিছুতেই তোদের খারাপ লেগে যায়।একটু থেমে বলল শোন, কাল তোর মেসেজগুলো দেখে আমার মনে হয়েছে যে তুই দোলনের এখনকার অসহায় অবস্থার কথা চিন্তা করে ওকে একটু কমফোর্ট দেওয়ার জন্য ওকে হ্যাঁ বলে দিয়েছিস।
 
আমি বললাম হতে পারে।আমার মুখ মাটির দিকে। সত্যিই ওর সওয়াল জবাবের সামনে নিজেকে ভীষণ অসহায় মনে হচ্ছে। ও আমার মাথায় হাত বোলাতে বোলাতে বলল তুই কি ওকে সত্যি ভালোবাসিস?” বললাম জানি না। তবে আজ ও আমার সাথে বিনা কারণে যেমন ব্যবহার করেছে এই সামান্য ব্যাপার নিয়ে তাতে…” আমার গলাটা আপনা থেকেই বুজে গেল। আমি অন্য দিকে মুখ ফিরিয়ে রইলাম। হাতের আঙুলগুলো দিয়ে সস্নেহে আমার চুলে বিলি কাটতে কাটতে বলল পাগল কোথাকার। এই অল্পেতে এত ভেঙ্গে পড়ার কি আছে? আমি দোলনকে বাধা দি নি। তোকেও এই সম্পর্কে ঢুকতে কোনও রকম বাধা দি নি। কিন্তু আমি জানতাম যে এই ব্যাপারটা টিকবে না। আর এতে সব থেকে বেশী কার ক্ষতি হবে জানিস? “
 
একটু থেমে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল তোর। তুই সরল একটা ছেলে। গ্রাম থেকে এসেছিস। তবে তুই হেভি হ্যান্ডু আছিস। অ্যান্ড মানতেই হবে যে ইউ হ্যাভ অ্যাঁ গ্রেট বড (বড হল বডির সংক্ষিপ্ত ভার্সান)। আর তার থেকেও বড় কথা যেটা আমরা দুজনেই মেনে নিয়েছি সেটা হল এই যে তুই আমাদের থেকে আলাদা। তোর ভ্যালুস আলাদা। আমরা খারাপ আর তুই ভালো। কেন একবার সেদিন বললি না যে রাকা তোকে আমার খুব ভালো লাগে?” আমি অন্য দিকে মুখ করে বসেই আছি। রাকা আমার চুলে বিলি করতে করতে আবার সেই একই প্রশ্ন করল তুই কি দোলনকে সত্যিই ভালোবেসে ফেলেছিস? না কিওর এই অসহায় ব্যাপারটা তোকে প্রম্পট করেছে ওর প্রস্তাবে হ্যাঁ বলে দিতে? আফটার তুই খুব সফট মাইন্ডেড ছেলে।বললাম প্রথমবার কেউ আমাকে এরকম ভাবে কিছু একটা বলেছে। তার পরের দিনই তার লাইফে এরকম একটা দুর্ঘটনা ঘটে গেল। আমি কেমন যেন মাথা ঠিক রাখতে পারিনি। মনে হচ্ছিল যে দোলনকে সুখি করতে পারলে আমার ভালো লাগবে...কারণ ও আমাকে ভালোবাসে।
 
ও চুপ। বললাম হতে পারে সেই জন্যেই।ও বলল তুই কিন্তু আমার আগের প্রশ্নের কোনও জবাব দিলি না!বললাম কোন প্রশ্ন?” ও বলল তুই সত্যিই দোলনকে ভালো যে বাসিস না সেটা বুঝে গেছি। কিন্তু তুই এর আগে কোনও দিন প্রেমে পরে ছিস?” এইবার অনেকক্ষণ পর ওর দিকে ফিরে কাতর চোখ নিয়ে বললাম না। কেন?” ও হেসে বলল সোনা, এটাই তোদের সমস্যা। তোরা জীবনে প্রেমে পড়িসনি। তবে চোখের সামনে অনেককে দেখেছিস প্রেম করতে, বিয়ে করতে। তোদের ভেতরে ভেতরে একটা চাহিদা থাকে যে কেউ থাকুক যে তোর সাথে কথা বলুক, তোকে ভালোবাসুক, তোকে আদর করুক। ঠিক কি না?” আমি চুপ। আবার আমার চোখ মাটির দিকে। বলে চলল সেই সময় ধরে নে যে হঠাত করে কেউ এসে তোকে বলল যে তোকে তার খুব মনে ধরেছে। এইবার? এইবার... তখন তোর মনের এত দিন ধরে চাপা ভালোবাসার সবটা বাইরে বেরিয়ে আসতে চাইবে পাগল হয়ে। কেন না এত দিন ধরে তুই যেটা ভেতরে ভেতরে চাইছিলিস সেটা পেয়ে গেছিস।
 
আবার বলা শুরু করল ও যেহেতু তুই কারোর সাথে প্রেম করছিস না, তাই তুই নিজের মুখে সেই মেয়েটাকে না বলতে পারবি না, অন্তত তার মুখের ওপর। আর তোর মতন ছেলেরা ইউসুয়ালি লাজুক হয়ে থাকে। অবশ্য কারোর সাথে প্রেম থাকলে তখন সেটা আলাদা ব্যাপার। যাই হোক। তুই হ্যাঁ বলে দিবি কোনও কিছু না ভেবে। তারপর হঠাত বুঝতে পারবি যে ভুল করে ফেলেছিস। মস্ত বড় ভুল করে ফেলেছিস। তখন আর বেরিয়ে আসার রাস্তা নেই। রাস্তা নেই বলা ভুল। কিন্তু তোদের মতন ছেলেরা ততদিনে নিজেদের অস্তিত্ব ত্যাগ করে ফেলেছিস। প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছিস বা হাবুডুবু খাওয়ার নাটক করে চলেছিস। এইভাবে ভালোবেসে, বেঁচে থেকে কি লাভ বলতে পারিস?” আমি বললাম তুই কতবার প্রেমে পরে ছিস এইবার বলবি?” ও বলল মিথ্যে বলে কি লাভ। কলেজ থেকে টোটাল দুই জন। বিশালের ব্যাপারটা ধরলে তিন। তবে সেগুলোকে প্রেম বললে ভালোবাসা ব্যাপারটাকে খেলো করা হবে। সেগুলো ছিল লাভ অ্যাট ফার্স্ট সাইট। এখন আমার বিশ্বাস লাভ কোনও দিনও ফার্স্ট সাইটে হতেই পারে না। আগে ভালো করে জেনে বুঝে তবেই ভালোবাসা আসে। লাভ অ্যাট ফার্স্ট সাইট অনেকের ক্ষেত্রে টিকেও যায়, কিন্তু আমার চোখে সেটা শুধু মাত্র ইনফ্যাচুয়েশন ছাড়া আর কিচুই নয়। কিছু না জেনে আগুপিছু না ভেবে হঠাত করে কাউকে দেখে প্রেমে হাবুডুবু খেতে শুরু করাটা বাচ্চাদের জন্য ঠিক আছে। বাট, আমরা ঠিক বাচ্চা নই। আমাদের একটু বুঝে শুনে ফিউচার চিন্তা করে প্রেম করা উচিৎ। তাছাড়া, প্রেমে ব্রেকআপ হলে যাই হোক না কেন অনেক দিন ধরে বেশ পেইন ফিল করতে হয়।
 
বললাম আমার সাথে তোর কোনও ফিউচার আছে বলে মনে করছিস?” ও একটু ভেবে নিয়ে বলল আছে।বললাম কি ভাবে?” ও বলল আমি আসলে ভবিষ্যতের কথা ভেবেই আমরা আর কয়েক বছর পর দুজনেই ইঞ্জিনিয়ার হয়ে যাব। দুজনেই চাকরি করব। বললে খারাপ শোনাবে কিন্তু এটা সত্যি কথা যে আমাদের বাবারাও আমাদের জন্য অনেক অনেক টাকা রেখে দিয়ে যাবে। (একটু হে হে করে হাসল ও) তারপর আর কি চাই? চাকরি করব। বাড়ি আসব। দুজন একটু ঝগড়া করব। তারপর রাগ ভাঙাবো, তারপর গুড সেক্স অ্যান্ড রোম্যান্স, অ্যান্ড ফাইনালি দুজন দুজনের সাথে জড়াজড়ি করে ঘুমিয়ে পড়ব। বিয়ের কয়েক বছর পরে একটা কি দুটো বাচ্চা নেব। তাদের সাথে খেলব, মজা করব। লাইফ ইস সিম্পল। নিজেরা ফুর্তি করব, বাচ্চাদের সাথে ফুর্তি করব, অফিসে কাজ করব, আর বাড়িতে এসে বাপেদের টাকা ওড়াব। অবশ্য সব সময় নয়, যখন ওড়ানোর দরকার পড়বে তখন ওড়াব। হেহে।আমি হেসে বললাম তুইও লাইফটাকে এত সিম্পল ভাবে ভাবতে পারিস?” ও বলল লাইফে এত জটিলতা দেখেছি বলেই লাইফটাকে সিম্পল ভাবে দেখতে ভালো লাগে। তবে ক্লাসে তোর যা রেসপন্স দেখেছি সেটা থেকে আমার, মানে আমাদের অনেকেরই মনে হয় যে তুই বোধহয় টপ করবি। অনেক বড় চাকরি পাবি। তোর লাইফ এত সিম্পল বলে তুই পড়াশুনায় আমাদের থেকে অনেক বেশী ফোকাস করতে পারিস। তুই অনেক বড় হবি, আর আমার তাতে গর্বের সীমা থাকবে না। এর থেকে বেশী আর কিছু শুনতে চাস আমার ফিউচার প্ল্যানের ব্যাপারে?“
 
আমি বললাম একটা কথা বলবি এইবারে?” ও বলল বল। তোর সাথে কথা বলার জন্যই তো এত সেজে গুঁজে এসেছি।বললাম তাহলে তুই কেন সেদিন আমাকে বললি না যে তুইও আমাকে লাইক করিস? আমি তোকে লাইক করি সেটা হয়ত কোনও দিনও বলতে পারতাম না। হয়ত আজকের আগে বুঝতেও পারতাম না যে তোকে আমি লাইক করি। তোকে দেখে ভালো লাগত। কিন্তু ভালো তো মাধুরীকেও লাগে। তাই বলে সেটাকে ঠিক প্রেম বলা যায় না, তাই না? তাই বলছি যে হয়ত কোনও দিন বুঝতেও পারতাম না যে আমার আসল পছন্দ কেমন! কিন্তু তুই তো সব কিছু বুঝতিস। তাহলে? কেন বললি না?” ও বলল সোনা আমি তোর আর দোলনের মধ্যে আসতে চাইনি কখনও। অবশ্য একটা দোষ আমারও আছে। আমি যে তোকে ভালোবাসি সেটা সেদিন নৌকায় উঠে বুঝতে পেরেছি। যেই মুহূর্তে দোলন তোকে খোলাখুলি প্রপোজ করল, সাথে সাথে বুঝতে পারলাম যে আমার ভেতরটা কেমন জানি ভেঙ্গে গেল। অথচ তার কিছুক্ষণ আগে অব্দি আমি বিশালকে পাইনি বলে দুঃখ করে চলেছি। যেই ও তোকে বলল যে ও তোকে পছন্দ করে, সেই মুহূর্তে আমি বুঝতে পারলাম যে ও তোকে তোর যেই যেই জিনিসের জন্য পছন্দ করে, তোর সেই সেই জিনিস আমারও ভীষণ পছন্দ। কিন্তু মুখ ফুটে বলতে পারিনি, বা সত্যি বলতে গেলে বলতে হয় যে কোনও দিনও বুঝতে পারিনি। কারণ হয়ত আমি অন্ধ ছিলাম।
 
জিজ্ঞেস করলাম তাহলে?” ও বলল তাহলে টা তো তুই বলবি। আমি না। তবে তারও আগে কয়েকটা জিনিস ক্লিয়ার করে নেওয়া দরকার।বললাম কি?” বলল একবার ফাইনালি কনফার্ম কর, তুই কি দোলনকে ভালোবাসিস?” বললাম না। ওর অসহায় অবস্থা দেখে ফস করে ওকে হ্যাঁ বলে দিয়েছিলাম। তবে এখন দুই দিনেই মনে হচ্ছে যে সেটা ঠিক হয়নি। দোলনকে আমি সেই ভাবে কোনও দিনও নিজের কাছে চাইনি।এক নিশ্বাসে কথাগুলো বলে দিয়ে থামলাম। এইবার ওর দিকে ফিরে বললাম ফেঁসে গেছি বলে মনে হচ্ছে।ও মিষ্টি করে হেসে বলল এইবার আরেকটা কথা সত্যি করে বল আমি যেমন সেদিন দোলন তোকে প্রপোজ করার সাথে সাথে বুঝতে পেরেছিলাম যে কি হারিয়ে ফেলেছি, তোর কি তেমন কোনও বোধ কাজ করছে আমার ব্যাপারে?”
 
আমি চুপ। ও বলল এটা আমাদের দুজনের কাছে দুজনের আগে ক্লিয়ার হওয়া দরকার। আমি চাই না যে দোলন আর তুই যে হঠকারিতা করে ভুল করে ফেলেছিস সেটা আমরাও রিপিট করি। তাই এটা খুব জরুরি প্রশ্ন।আমি বললাম এইটুকু বলতে পারি যে সেদিন রাতের আগে আমি দোলনের দিকে সেইভাবে কোনও দিন তাকিয়েই দেখিনি। যদি কারোর কথা আমার মাথায় মাঝে মধ্যে হলেও আসত তবে সেটা হল তোর কথা। এর থেকে বেশী কিছু বলা ঠিক হবে না। আর তোকে যে আমার ম্যাচিওরড মনে হয় সেটা তো আগেই বলেছি। রেস্পেকট করি তোকে।ও মৃদু হেসে বলল থ্যাংকস। এইটাই জানতে চাইছিলাম। এইবার তাহলে ফিউচারে কি করণীয় সেটা নিয়ে ভাবা যাক।আমি ওর প্ল্যানের জন্য অপেক্ষা করছি। রাকা আমার মাথার ওপর থেকে হাত সরিয়ে আমার একটা হাত চেপে ধরে কি যেন ভেবে চলেছে। কিছুক্ষণ পর আমার সাথে আরেকটু ঘন হয়ে বসে ও ফিস ফিস করে বলল আমিও ক্লিয়ার করে বলছি যে আমি তোকে পছন্দ করি। তুইও আমাকে পছন্দ করিস। কিন্তু সমস্যা দাঁড়িয়েছে ওই দোলনকে নিয়ে। বেচারিও তোকে পছন্দ করে। আর এখন দোলনের যা মনের অবস্থা এখন যদি ও জানতে পারে যে তুই ওকে পছন্দ করিস না আর ব্রেক আপ করতে চাস তাহলে...আরও ভেঙে পড়বে। আর আমার সাথে তোর কিছু একটা শুরু হয়েছে জানতে পারলে তো কথাই নেই। এই রকম অবস্থায় ওকে এইসব জানতে দেওয়াটা ঠিক হবে না। আরেকটু সামলে নিক নিজেকে। তারপর ওকে বুঝিয়ে শুনিয়ে বলতে হবে সব কিছু।
 
আমি সায় দিয়ে বললাম এটা তুই ঠিক বলেছিস।ও বলল আরেকটা ব্যাপার কি জানিস, আমাদের ব্যাপারটা জানাজানি হলে দোলন আর আমাদের সাথে কোনও সম্পর্ক রাখবে না। সেটা আমি চাই না। দোলন আমার অনেক দিনের বন্ধু। দুম করে এই সম্পর্কটা কেটে যাক সেটাও আমি চাইছি না। সুতরাং কয়েকদিন একটু রেখে ঢেকে চলতে হবে।বললাম একদিন না একদিন তো জানাতেই হবে।বলল সেটা জানাতে হবে। তবে দেখতে হবে যে কিভাবে জানালে সব থেকে কম ড্যামেজ হয়।বললাম তাহলে এতদিন তুই আমাকে ওর সামনে মুখোশ পরে অভিনয় করে যেতে বলছিস?” ও বলল সোনা তুমি তো অলরেডি নিজের অজান্তেই ভালোবাসার মুখোশটা পরেই ফেলেছ। আমি শুধু বলছি, আরও কয়েকদিন পর যখন দোলন একদম থিতু হয়ে সামলে নেবে তখন ঠিক সময় দেখে মুখোশটা ছিঁড়ে ফেলিস। তার আগে যেমন চলছে চলুক।আমি বললাম ও হ্যাঁ ভালো কথা। আমি যে তোর সাথে দেখা করতে এসেছি সেটা দোলনকে বলে দিয়েছি।ও আমার দিকে তাকিয়ে বলল হোয়াট? তুই কি পাগল?” আমি বললাম কেন এতে পাগলামিটা দেখছিস কোথায়?” বলল ও তোকে সন্দেহ করে দেখেও …” আমি বললাম আমি কি জানতাম যে আজ এখানে এসে আমাদের মধ্যে এত কথা হবে? তুই আমাকে পছন্দ করিস সেটাও কি আমি আগে ভাবে জানতাম? আমার মনে হয়েছিল যে তুই আমার আর দোলনের ব্যাপার নিয়ে কথা বলার জন্য এখানে ডেকেছিস। ইনফ্যাক্ট ওকে আমি সেটাই বলেছি।রাকা বলল তোদের ব্যাপারে কথা বলার জন্য তোকে আমি লেকের ধারে ডাকব? এখানে কারা আসে জানিস? এখানে আমাদের বয়সী ছেলে মেয়েরা শুধু প্রেম করতে আসে।
 
বাধা দিয়ে বললাম আমি কি জানতাম যে তুই এইভাবে লেকের ধারে গাছের নিচে বসে আমার সাথে কথা বলতে চাস? আমি ভেবেছিলাম ওই লেকের বাইরের যে কফি শপটা আছে সেখানে বসে আমরা গল্প করব বা অন্য কোথাও। ওকেও আমি সেটাই বলেছি।ও একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে বলল যাক বাঁচালি। কারণ লেক শুনলেই লোকজন অন্য রকম ধরে নেয়। কফি শপটা খারাপ দিসনি। বললাম কিছুই দিইনি। যেটা তখন ভেবেছিলাম সেটাই বলেছিলাম। এটা আলাদা কথা যে এখন সিচুয়েশন বদলে গেছে। ও বলল দোলন শুনে কি বলল?” দোলন যা বলেছে সেটা ওকে বলে দিলাম অকপটে। ও একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল এইবার বুঝে নে যে কে ম্যাচিওরড আর কে ইমম্যাচিওরড! তবে মেয়েটা আমার ভালো বন্ধু। সেটা ভেঙে গেলে কষ্ট লাগবে।বললাম আমারও। যাই হোক আপাতত প্ল্যান মাফিক লুকিয়ে প্রেম করা ছাড়া গতি নেই। আর কয়েকদিন অন্তত দোলনকে সাপোর্ট দেওয়ার জন্য আমাকে এই অভিনয়টা চালিয়ে যেতে হবে।মোবাইলে দেখলাম ৫ টা বেজে ৩৫ মিনিট। খুব কম সময়ের মধ্যে অনেকগুলো কথা হয়ে গেল। আকাশ কালো হয়ে এসেছে। আকাশে ঘন ঘন বিদ্যুতের ঝলকানি। বললাম আরেকটা বাজে ব্যাপার হয়েছে।ও বলল আবার কি?” ওকে আমি শিখাদি দোলনকে কি বলেছে সে সব খুলে বললাম।
 
ও বলল শিখার ব্যাপারটা দোলন আমাকেও বলেছে। তবে ও যে শিখার কথা এত সিরিয়সলি নিয়েছে সেটা জানতাম না। শিখা একটা স্কাউন্ড্রেল। আর দোলনের কি বুদ্ধি শুদ্ধি সব লোপ পেয়ে গেছে। ওরকম একটা রেন্ডির কথা শুনে ও তোর ওপর সন্দেহ করছে? এই জন্যই তোকে বলেছিলাম যে ওর সন্দেহ রোগ আছে।আমি করুণ মুখ নিয়ে বললাম দোলন আমাকে ভীষণ কড়া ভাবে অনেক কথা শুনিয়েছে আজ। শিখাদির সাথে কথা বলার পর ওর এই ধারণা আরও দৃঢ় হয়েছে যে আমি কোনও না কোনও ভাবে এই ব্যাপারের সাথে যুক্ত। কিন্তু আমি কি করব বল? আমাকে পুলিশে ধরিয়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়েছে... অথচআবার আমার গলা বুজে গেল। আমি অন্য দিকে তাকাতে বাধ্য হলাম। ও আবার আমার মাথায় হাত বোলাতে বোলাতে বলল তোর বাবাকে ফোন করে সব কথা জানা। বললাম বাবা এই সব শুনলে মরে যাবে। আমাদের ফ্যামিলিতে কারোর নামে কোনও কেচ্ছা বা কোনও এফ আই আর পর্যন্ত হয়নি। বাবাকে বলার আগে আমাকে সুইসাইড…” চেঁচিয়ে উঠল ও। এই কি যা তা বলে চলেছিস সংকেত!
 
ও জোর করে আমাকে ওর দিকে ফিরিয়ে আমার মুখটাকে ওর বুকের ওপর চেপে ধরল। অসহায় ভাবে আমিও জড়িয়ে ধরলাম ওকে। গুঙিয়ে বললাম ভীষণ হেল্পলেস ফিল করছি।রাকাও আমাকে জড়িয়ে ধরেছে সান্তনা দেওয়ার জন্য। একটা হাত দিয়ে আস্তে আস্তে আমার চুলে বিলি কাটতে কাটতে বলল তুই আর কখনও আমার সামনে এইসব সুইসাইড করার কথা বলবি না। ঠিক আছে তেমন যদি কিছু হয় তো আমি আমার বাবাকে বলব তোকে সাহায্য করতে। তবে একটা মেয়ে তোকে পুলিশে ধরিয়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়েছে বলে তুই আমাকে ছেড়ে চলে যেতে পারিস না। আর এখন নিজের মনটাকে হালকা করে ফেল সংকেত। আমি তোকে সাপোর্ট করার জন্য সব সময় তোর পাশে পাশে থাকব। চিন্তা করিস না।কথাটা বলে ও আমার মুখটাকে ওর বুকের ওপর আরও জোরে চেপে ধরল। মেয়েদের বুকের গরমে যে কি শান্তি পাওয়া যায় সেটা কারোর অজানা নয়। কতক্ষণ যে ওর বুকে নিজের মাথাটা চেপে ধরে ছটফট করেছি নিজেই জানি না। 
[+] 3 users Like pcirma's post
Like Reply


Messages In This Thread
RE: মুখোশ - The Mask by Daily Passenger - by pcirma - 05-03-2019, 03:13 PM



Users browsing this thread: 8 Guest(s)