Thread Rating:
  • 34 Vote(s) - 3.35 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
Thriller মুখোশ - The Mask by Daily Passenger
#6
আবার সেই বোরিং লেকচার। বক বক করেই চলেছেন স্যার। শার্টটা ঘামে ভিজে গেছিল পুরো। এখন ফ্যানের তলায় বসে বেশ একটা ঠাণ্ডা ঠাণ্ডা অনুভুতি হচ্ছে। ঘুম এলে বিপদ। কলেজের দ্বিতীয় দিনেই ঘুম। কিন্তু বেশ একটা শরীর ছেড়ে দেওয়া আরামের ভাব ধীরে ধীরে আমাকে গ্রাস করতে শুরু করেছে। জোড়ে নিঃশ্বাস ভেতরে টেনে বন্ধ করে রাখলাম কয়েক সেকন্ডের জন্য। তারপর নিঃশ্বাস ছেড়ে দিয়েই আবার জোরালো নিঃশ্বাস ভেতরে নিয়ে বন্ধ করে রাখলাম। এরকম বেশ কয়েক বার করার পর বুঝলাম ঘুমের যে আমেজটা আমাকে গ্রাস করতে আসছিল সেটা ভ্যানিশ করে গেছে। শেষ ক্লাস শুরু হল। এই স্যার বেশ গম্ভীর। জানা জিনিস পড়ালেও এটা কিন্তু মানতেই হবে যে ইনি পড়ান ভালো। অন্তত যারা প্রথমবার এই সব জিনিস শিখছে তাদের জন্য উনি খুবই ভালো। আমি স্বভাববশত এদিক ওদিক সবাইকে লক্ষ্য করছি। স্যার হঠাত করে আমাকে ইশারায় ডেকে দাঁড় করালেন। কি হে মনে হয় তোমার এই সব কিছু জানা?” আমি আশ্চর্য হওয়ার ভান করে দাঁড়িয়ে রইলাম মুখ বুজে। কি হল? উত্তর দিতে পারছ না কেন? এসব তোমার জানা?” আমি বললাম না। জানা নয়। কেন?” স্যার বললেন কেন, কিভাবে এসব তো তুমি বলবে। আমি তো অনেকক্ষণ ধরে দেখছি তোমার মন এদিক ওদিক ঘুরে বেড়াচ্ছে। তো গোটা ক্লাসের এর ওর দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে কি খুঁজছ সেটা যদি একটু বলে দাও তো আমাদের সবার একটু উপকার হয়।আমি কিছু একটা বলতে যাচ্ছিলাম স্যার আমাকে থামিয়ে বসতে ইশারা করে বোর্ডের দিকে ঘুরে গেলেন। এখন বসে পড়ো। কিন্তু ক্লাস ওভারের পর আমার সাথে দেখা করবে। বুঝতে পারলাম আজ কপাল খারাপ চলছে। একে প্রায় ১৭০০ বার কান ধরে উঠবস করে ঘাম ঝরাতে হয়েছে, এখন স্যারের ধ্মকানি খেয়ে খেয়ে ঘাম ঝরাতে হবে। সময়ের নিয়মে ক্লাস শেষ হল আর স্যার হনহন করে ক্লাস থেকে বেড়িয়ে গেল। আমি দৌড় মারলাম পেছন পেছন। অবশ্য বেরনোর আগে চট করে ব্যাগটা গুছিয়ে নিলাম। এই সুযোগ কেউ ছাড়ে? আজ অবশ্য পরের দুটো ক্লাস অফ। নইলে ক্লাসেই ফিরে আসতে হত। আবার সেই ক্যালানে গুলো এসে বোকা বোকা র্যাগিং শুরু করবে। তার আগেই বেড়িয়ে পড়তে হবে। আমি দরজার দিকে ছুট মারতে যাব ঠিক এমন সময় কুন্তল বলল কি রে ব্যাগ নিয়ে যাচ্ছিস? সিনিয়ররা এলে কি হবে?” আমি একটা খুশি খুশি ভাব দেখিয়ে বললাম আমাকে না পেয়ে ওরা একটু দুঃখ পাবে। কিন্তু স্যারের সাথে দেখা করে আর ফিরছি না। যদি কেউ আমার কথা জিজ্ঞেস করে তো বলে দিস যে আমাকে স্যার ডেকেছেন আর তাই আমাকে চলে যেতে হয়েছে। আমি আর ওর উত্তরের জন্য অপেক্ষা না করে হুঁশ করে বেড়িয়ে গেলাম। তাছাড়া আমাকে অন্য একটা জায়গাতেও যেতে হবে আজ সন্ধ্যায়। ক্লাস থেকে সোজা স্যারের ঘরের সামনে গিয়ে হাজির হলাম। না স্যার সেখানে নেই। একজন পিয়নকে দেখে জিজ্ঞেস করলাম স্যারের ব্যাপারে। ও বলল স্যার নিচে নেমে গেছে। ওনার গাড়িটা গেটের বা দিকে পার্ক করা আছে। উনি ওই দিকেই না কি গেছেন। আবার দৌড় মারলাম। কালো রঙের স্যান্ট্রোর সামনে দাঁড়িয়ে স্যার মোবাইলে কি একটা করছেন আর ডান হাতের তর্জনী আর মধ্যাঙ্গুলির মধ্যে একটা জ্বলন্ত সিগারেট ধরা। আমি গিয়ে দাঁড়ালাম স্যারের সামনে। স্যার মোবাইল থেকে মুখ না তুলেই জিজ্ঞেস করলেন কোথা থেকে এসেছ?” বললাম মিরাট।উনি একটা হুম মতন শব্দ করে বললেন শোন এটা খুব বড় কলেজ আর শহরটা মিরাট নয়, কলকাতা। একটু সাবধানে চলো আর পড়াশুনায় মন দাও এদিক ওদিক না তাকিয়ে। আজ প্রথম দিন তাই কিছু বললাম না। কিন্তু পরে এরকম অন্যমনস্ক দেখলে বাড়িতে চিঠি পাঠাতে বাধ্য হব। পাশ দিয়ে কয়েকজন ছেলে মেয়ে যাচ্ছিল তাদের সামনেই স্যার আমাকে ঠাণ্ডা অথচ কড়া গলায় জ্ঞান দিয়ে চললেন। স্যারের কথা শেষ হলে আমি মাথা নেড়ে বুঝিয়ে দিলাম যে আমি এরকম আর করব না। স্যার বললেন বেশ। ভালো। পরের ক্লাসে দেখা হচ্ছে। ভালো করে পড়াশুনা করো। এখন তোমার ওইটাই কাজ। আর নিজের কাজ তুমি যদি মন দিয়ে করতে পারো তাহলে মনে হয় তোমার বাড়ির লোকও খুব খুশি হবে।শেষের কথা গুলোয় বেশ একটা নরম গলার স্বর পেলাম। সচরাচর এরকম জ্ঞান শোনার পর স্যারের পা ছুয়ে প্রনাম করতে হয়। কিন্তু কেন জানি না প্রনাম না করে আমি ডান হাতটা বাড়িয়ে দিলাম হ্যান্ডশেক করার উদ্দেশ্য। স্যারও হাতের সিগারেটটা ফেলে দিয়ে রুমাল দিয়ে একবার ডান হাতের চেটোটা মুছে নিয়ে আমার সাথে হাত মিলিয়ে দুবার ওপর নিচে ঝাঁকিয়ে দিলেন। গাড়ি চড়ে নিজেই ড্রাইভ করে বেড়িয়ে গেলেন। আমি কলেজের গেট দিয়ে বেড়িয়ে এসেই একটা ট্যাক্সি ধরে নিলাম। মোবাইলে একবার সময় দেখে নিলাম। সময় আছে হাতে। একটা সিগারেট ধরালাম জানলার কাঁচ নামিয়ে।
 
বিশাল বড় ইলেক্ট্রনিক্সের জিনিস প্ত্রের দোকান। আমি এসেছি একটা ভালো ল্যাপটপ কিনতে। দোকানে ঢোকার সাথে সাথে একজন ইউনিফর্ম পরা সেলসম্যান এগিয়ে এসে কি নিতে এসেছি জানতে চাইল। আমি বললাম ল্যাপটপ।ও একজনকে ডেকে আমাকে ল্যাপটপ সেকশনে নিয়ে যেতে বলল। দ্বিতীয় লোকটা আমার সামনে ওদের কাছে কি কি ল্যাপটপ আছে তার একটা বিশাল লিস্ট পড়তে যাবে যাবে করছে এমন সময় আমি পকেট থেকে একটা ভাঁজ করা কাগজ বের করে ওর হাতে ধরিয়ে দিলাম। এরকম চাই। লোকটা খুব মন দিয়ে কাগজের লেখাটা বার দুই তিনেক পড়ল। আমার মুখের ওপরও বার দুই তিনেক চোখা বোলাল ও। আমার বয়স দেখে বোধহয় বিশ্বাস করতে পারছে না যে এই বয়সের ছেলে এত ভয়ানক একটা ল্যাপটপ কিনতে এসেছে। লোকটা মাথা নেড়ে বলল না। এরকম ল্যাপটপ হবে না। তবে এর ধারে কাছে বেশ কিছু জিনিস আছে আমাদের কাছে। যদি দেখতে চান তো…” আমি থামিয়ে দিয়ে বললাম না। ধারে কাছ দিয়ে গেলে হবে না। ঠিক এটাই চাই। লোকটা বলল স্যার কি কাজে ব্যবহার করবেন যদি বলেন, তাহলে হয়ত আমি বলতে পারি যে এর থেকেও শস্তা কোনও ল্যাপটপে আপনার কাজ হয়ে যাবে কি না।বললাম কাজ জেনে কি হবে। কিনলে বেস্ট জিনিস কিনব। নইলে আর কিনে কি লাভ।কাচুমাচু মুখ করে বলল সরি স্যার এটা হবে না। আর তাছাড়া এর দাম অনেক…” ইতিমধ্যে কালো ব্লেজার পরা একজন আমাদের দিকে এগিয়ে এসেছে। কি ব্যাপার?” বুঝলাম ইনি সেলসম্যানদের ম্যানেজার বা লিড টাইপের কেউ। আগের লোকটা এই ব্লেজার পরা লোকটার হাতে নিরবে আমার দেওয়া কাগজটা ধরিয়ে দিয়ে বিদায় নিল। লোকটা একবার আগা গোরা কাগজটা পড়ে নিয়ে বলল কিসে পেমেন্ট করবেন?” বললাম চেক।বলল এর কত দাম হয় জানা আছে তো?” আমি শুধু হাসলাম কিছু বললাম না। আসুন, এই সোফায় বসুন। আমি আসছি। লোকটা চলে গেল আমার দেওয়া কাগজটা আমার হাতেই ফেরত দিয়ে। দোকানে এখন বেশ ভিড়। অন্য কারোর দিকে নজর দেওয়ার মতন সময় কারোর নেই। চারপাশটা একবার দেখে নিলাম। দোকানের এখানে ওখানে সিকিউরিটি ক্যামেরা বসানো আছে। বিলিং কাউন্টারেও দেখলাম একটা বেশ বড় লাইন। সেলসম্যানরা এদিক ওদিক ব্যস্ত ভাবে দৌড়াদৌড়ি করে চলেছে। প্রায় মিনিট কুড়ি পরে কালো ব্লেজার পরা লোকটা ফেরত এলো। ডান হাতে একটা বড় অ্যাটাচির মতন জিনিস। আর অন্য হাতে একটা ল্যাপটপের ব্যাগ মুড়ে ভাঁজ করা। অ্যাটাচির মতন জিনিসটা আমার পাশে সোফায় রেখে ল্যাপটপের ব্যাগটা আমার হাতে ধরিয়ে দিয়ে গম্ভীর ভাবে বলল এটা ফ্রি। আর কিছু চাই?” আমি বললাম ল্যাপটপের সাথে লাগে এমন যা কিছু আপনার জরুরি বলে মনে হয় সেগুলো এই ব্যাগটায় ভরে দিলে আমার বেশ ভালো লাগতো। ও হ্যাঁ একটা কথা। আচ্ছা ইন্টেরনেটের ব্যাপারে আপনাদের এখানে কোনও সাহায্য পাওয়া গেলেও আমার বেশ ভালো লাগতো। একটু থেমে বললাম আমার কিন্তু আনলিমিটেড ইন্টারনেটে অভ্যাস। সেটা হলেই মঙ্গল।লোকটা একটু হেঁসে আমার হাত থেকে ল্যাপটপের ব্যাগটা নিয়ে আবার চলে গেল। আমি সোফায় রাখা বাক্সটা একবার হাতে তুলে নেড়ে চেড়ে দেখে নিলাম। কিছুক্ষণ পর লোকটা আবার ফেরত এলো। বললাম টোটাল কত হয়েছে?” বলল ল্যাপটপের দাম এমনিতে পড়ে…” আমি ওকে থামিয়ে দিয়ে বললাম টোটাল ফিগারটা একবারে বললে আমার বেশ ভালো লাগতো।জবাব এলো চার লাখ চৌত্রিশ হাজার।আমি আমার নিজের ব্যাগের ভেতর থেকে একটা ভাঁজ করা চেক বার করে ওর হাতে ধরিয়ে দিয়ে উঠে দাঁড়ালাম। ও নিজের বুক পকেট থেকে একটা বিলের মতন কাগজ বের করে আমার হাতে ধরিয়ে দিল। হ্যান্ডশেক করে বললাম আপনার সাথে কথা বলে বেশ ভালো লাগলো।দুই কাঁধে দুটো ল্যাপটপের ব্যাগ আর ডান হাতে ওই ভারী বাক্সটা নিয়ে বাইরে বেড়িয়ে এলাম। গেটের মুখে একজন সিকিউরিটি বিল দেখতে চাইল। আমি বুক পকেট থেকে লোকটার দেওয়া কাগজটা ওর হাতে দিয়ে দিলাম। কাগজে একটা ফুটো করে আমার হাতে হাঁসি মুখে ফেরত দিয়ে দিল। বেড়িয়েই একটা ট্যাক্সি ধরলাম। এইবার হোটেলে ফিরতে হবে। কিন্তু না। ট্যাক্সিটা আমি একটু আগেই ছেড়ে দিলাম।
 
সকালেই দৌড়নোর সময় দেখেছিলাম এই মদের দোকানটা। একটা বড় হুইস্কির বোতল কিনলাম। মদের দোকানের তিনটে দোকান পরে একটা একটা বড় হার্ডঅয়ারের দোকান। ওখানে থেকে প্রয়োজন মতন কয়েকটা শক্ত পোক্ত অথচ ছোট খাটো জিনিস কিনে খালি ব্যাগটায় ভরে নিলাম। এখন রাস্তায় লোক আর গাড়ির ভিড়ে তিল ধারনের জায়গা নেই। প্রতি পদে কারোর না কারোর সাথে ধাক্কা খাচ্ছি। ধীরে ধীরে হাঁটতে হাঁটতে গেলাম সকালের সেই লেকের ধারে। গেটের সামনে দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময় খেয়াল করলাম অনুচ্চ গেটটায় তালা মারা আছে। ভেতরে কোনও আলো নেই। বুঝলাম এখানে রাতের বেলায় আসা বারণ। আমি আরেকটু এগিয়ে গিয়ে একটা জায়গায় চায়ের দোকান পেয়ে বেঞ্চে বসে পড়লাম। একটা সিগারেট জ্বালিয়ে একটা চায়ের অর্ডার দিলাম। এখান থেকে লেকের পাশের পাঁচিল আর গেটটা ভালো ভাবে দেখা যায়। নাহ, এক কাপ চা খেয়ে উঠলাম না। প্রায় দশ কাপ চা খেলাম আর সেই সাথে প্রায় এক ডজন সিগারেট ধ্বংস করলাম। অনেকটা সময় কাটাতে হবে। অবশেষে উঠে পড়লাম। হোটেল মুখো রওয়ানা হলাম। সকালে দৌড়ে এসেছিলাম বলে বুঝতে পারিনি, কিন্তু এখন তিনটে ব্যাগ নিয়ে হাঁটতে হাঁটতে বুঝতে পারলাম যে জায়গাটা হোটেল থেকে বেশ দূরে। পায়ে হেঁটে হোটেল ফিরতে অনেকক্ষণ লেগে গেল। ঘড়িতে দেখলাম ৯ টা বাজতে যায়। রিসেপশনে গিয়ে বললাম রুম ১০৭।সকালে যখন বেড়িয়েছি তখন মালিনী ছিল না। অন্য একজন মেয়ে ছিল। এখন দেখলাম মালিনী দাঁড়িয়ে আছে। বেশ হাঁসি হাঁসি মুখ করে আমার হাতে ঘরের চাবি ধরিয়ে দিল। ওর সাথে চোখা চুখি হতেই আমি চোখ ঘুরিয়ে নিলাম। কিন্তু একটা ব্যাপার লক্ষ্য করলাম। কাউন্টারে এখন বেশ কয়েকজন লোক ছিল। কিন্তু তারই মধ্যে মালিনী সবার দৃষ্টি এড়িয়ে নিজের নরম হাতটা দিয়ে আমার ডান হাতটা একবার চেপে ধরল কয়েক সেকন্ডের জন্য। হাত ছাড়ানোর দরকার হল না কারণ ও নিজেই হাতটা সরিয়ে নিয়েছে সময় মতন। উফফ কি নরম মাইরি ওর হাতটা। আমি ওর দিকে ফিরেও তাকালাম না। সোজা লিফটের সামনে এসে দাঁড়ালাম। একজন রুম বয়ের সাথে চোখাচুখি হল। আমাদের দুজনের ঠোঁটের কোণায় একটা অস্ফুট হাঁসি খেলে গেল। লোকটা মাথা নাড়িয়ে ইশারায় জিজ্ঞেস করল সব ঠিক আছে তো? আমিও হেঁসে মাথা নাড়িয়ে বুঝিয়ে দিলাম যে সব ঠিক আছে। ঘরে ঢুকেই প্রথম কাজ যেটা করলাম সেটা হল ডিনারের অর্ডার দেওয়া। সেই দুটো রুটি খেয়েছিলাম কোন বেলায়। তারপর থেকে একদম উপোষ। তারপর আর দেরী না করে বোতল খুলে বসলাম। অবশ্য নিচে ফোন করে আইস আর ঠাণ্ডা জল দেওয়ার জন্য বলে দিয়েছিলাম। মদ খেতে খেতে ল্যাপটপটাকে অন করে সেটা নিয়ে বসলাম। বলাই বাহুল্য যে এত লাখ টাকার ল্যাপটপ ভালোই হবে। শুধু ভালোই নয় অনেক কিছু এই ল্যাপটপে বসেই করা যায় যেগুলো সাধারণ ল্যাপটপে করতে গেলে ল্যাপটপ হ্যাং করে যাবে। ইন্টারনেটের জন্য একটা ইউ এস বি স্টিক নতুন ল্যাপটপের ব্যাগে ভরে দিয়েছে লোকটা। কয়েক মুহূর্ত মাত্র লাগল কানেক্ট করতে। ব্যাগের ভেতরে আর কি কি প্রয়োজনীয় জিনিস ও আমাকে দিয়েছে সেগুলো এক এক করে হাতে নিয়ে ভালো করে দেখে নিলাম। দামি মোবাইলটা অন করেছি। ল্যাপটপের একটা ছবি তুলে মোবাইলটাকে ল্যাপটপের সাথে কানেক্ট করলাম। ছবি ট্রান্সফার শেষ করে ফেসবুকে আপলোড করে ক্যাপশন দিলাম ইঞ্জিনিয়ারিং পড়তে এসে প্রথম ল্যাপটপ। বেশ ভারী কিন্তু অনবদ্য কনফিগারেশন। ব্যবহার করে বেশ ভালো লাগলো।দেখলাম আগের পোস্ট করা ছবিগুলোতে প্রচুর কমেন্ট পড়েছে। কমেন্ট পড়ার এখন সময় নেই। মোবাইলটা থেকে বেশ কিছু জিনিস ল্যাপটপে ট্রান্সফার করে ফেললাম চটপট। এদিকে প্রথম গ্লাস শেষের পথে। ল্যাপটপে আরও কিছু প্রয়োজনীয় কাজ সারতে সারতে ডিনার এসে গেল। আমি উঠে শুধু আমার মোবাইলটা আলমারিতে ভরে রেখে দিলাম দরজা খোলার আগে। আজ তন্দুরি রুটি আর কষা পাঁঠার মাংস অর্ডার করেছি। তার সাথে দু প্লেট আলুভাজা। আলু খেতে আমার ভালোই লাগে। আলু না খেলে এত আলুর দোষ সচরাচর হয় না। ডিনার দিতে যে এসেছিল নতুন কেনা ল্যাপটপটা তার নজর এড়ায়নি। তার চোখে এক মুহূর্তের জন্য হলেও একটা বিস্ময়ের ঝিলিক খেলে গেল। ল্যাপটপে বসে আরও অনেক কাজ করতে হবে আজই। কিন্তু গরম গরম খাবারের গন্ধ আমার নাকে ঢুকতেই সব কিছু কেমন যেন গুলিয়ে গেল। সব মানসিক আর শারীরিক কন্ট্রোলের বাঁধ ভেঙ্গে গেল এক নিমেষে। দ্বিতীয় গ্লাসটা এখনও অর্ধেক বাকি। এক ঢোকে বাকি গ্লাসের পানীয় গলায় ঢেলে দিয়ে খেতে বসে পড়লাম। আগে ডিনার তারপর বাকি সব।
 
খাওয়া সেরে উঠে প্লেটগুলো বাইরে রেখে এসে তৃতীয় বার গ্লাসটা ভরে নিলাম। ডিনারের অর্ডার দেওয়ার সময় আরও দু-একটা জিনিসের অর্ডার দিয়ে দিয়েছিলাম। এইবার ওদের ক্যান্টিনে আরেকবার ফোন করে জানিয়ে দিলাম যে আধা ঘণ্টা পরে আরও কিছু বরফ, একটা ঠাণ্ডা জলের বোতল আর আগের বার যেটা আনতে বলেছিলাম সেটা যেন পাঠিয়ে দেওয়া হয়। গ্লাসে একটা চুমুক দিয়ে সোজা হয়ে বজ্রাসনে বসে পড়লাম। ছোট বেলাকার অভ্যাস। খেয়ে উঠে অন্তত হাফ অ্যাঁন আওয়ার বজ্রাসনে বসে প্রানায়ম করি যাতে খাবার খুব তাড়াতাড়ি হজম হয়। আজ অব্দি যা ফল পেয়েছি তাতে এই অভ্যেসটা ছাড়ার কোনও প্রশ্ন ওঠে না। এই সব কাজ আমি অ্যাঁলার্ম সেট করে করতে বসি। এবারও তার অন্যথা হল না। অ্যাঁলার্ম বাজার পর বজ্রাসন ভেঙ্গে একটু সোজা হয়ে বসে নিঃশ্বাস প্রশ্বাসটাকে স্বাভাবিক করছি, ঠিক এমন সময় দরজায় ধাক্কা। আজ রাতে অনেক কাজ। একটু মদ খেতে হলে খালি মুখে খেতে পারি না। তাই দুই প্লেট স্যালাড আর দুই প্লেট চিকেন টেংরি কাবাব বলে রেখেছিলাম। আমি যে খুব খাদুকে সেটা বলে দিতে হয় না। খাবার রেখে ছেলেটা চলে গেল। আমিও সেই ভয়ানক মোবাইল, দামি ল্যাপটপ আর আমার সেই বাদামি রঙের ডাইরিটা খুলে বসে পড়লাম। মোবাইল আর ল্যাপটপ দুটোই নেটে কানেক্টেড। এই বেলা কিছু কাজ সেরে রাখা দরকার। ক্লাসে অনেক নোটস দেয় ঠিকই। কিন্তু অসাধারান কিছু করতে হলে ইন্টারনেট থেকে সব কিছুর ব্যাপারে যত বেশী জানা যায় সবটাই তুলে নেওয়া ভালো। এটাই আমার পড়াশুনার নিয়ম। আর তাই আমি ক্লাসের বাকি দের থেকে অনেক বেশী এগিয়ে। অবশ্য একটা ব্যাপার স্বীকার না করে পারব না, সেটা হল এই যে, এখানে আমার বয়সও বাকিদের থেকে বছর দুয়েক হলেও বেশী।
 
কাবাব আর স্যালাড শেষ। পাঁচ নম্বর গ্লাস শুরু হয়েছে সবে। ল্যাপটপে কাজ এখনও শেষ হয় নি। নেশা আমার খুব কম হয়। কিন্তু সমস্যা হল কাল যে খুব ভোরে উঠতে হবে সেটা কাজের চাপে পুরো ভুলে মেরে দিয়েছিলাম। সম্বিত ফিরল। দরজায় খুব মৃদু ঠকঠক শব্দ। মোবাইলে সময় দেখলাম। রাত ১ টা বেজে ১৫। ল্যাপটপ, মোবাইল আর ডাইরি, সব বন্ধ করে আলমারিতে পুড়ে দিলাম। দরজায় ঠকঠক শব্দটা হয়েই চলেছে। কিন্তু আমি দরজা খোলার কোনও রকম তাড়া দেখালাম না। গ্লাসে আরেকটা বড় চুমুক দিয়ে বুক ভরে একটা গভীর নিঃশ্বাস টেনে নিয়ে অবশেষে গিয়ে দরজা খুললাম। অনুমান নির্ভুল। মালিনী।
 

 
আজ আর ওকে ধাক্কা দেওয়ার সুযোগ দিলাম না। আমি নিজেই দরজা থেকে পিছিয়ে এসে ওকে ভেতরে ঢোকার রাস্তা দিয়ে দিলাম। মালিনী গতকালের মতন আজও ঘরের বাইরে করিডরের ওপর নজর বুলিয়ে নিয়ে ঘরে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দিল। এ সি টা একটু চালাবেন?” এটা আমার একটা বাজে অভ্যেস আমি প্রানায়াম বা আসনে বসলেই এসি বন্ধ করে দি। সমস্যা হল সেসব করে ওঠার পর মন আর শরীর এত ঠাণ্ডা আর ফোকাসড হয়ে যায় যে এসিটা আবার চালানোর কথা আর মাথায় থাকে না। আমি বিনা বাক্যব্যয়ে এসিটা চালিয়ে দিলাম। আজ সত্যি ভীষণ গরম বাইরে। রাতের দিকেও মনে হচ্ছিল যে বাইরে লু বইছে। মালিনী সটান গিয়ে চেয়ারে বসে পড়ল। আপনি আমার সাথে এইরকম ব্যবহার করছেন কেন?” ওর চোখে কি লেখা আছে সেটা একটু মন দিয়ে পড়বার চেষ্টা করলাম। সামান্য উচ্ছ্বাস মাখা একটা অপরাধী ভাব স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি। কিন্তু তাছাড়াও একটা পেয়ে না পাওয়া ভাব। আর সব থেকে বেশী যেটা চোখে পড়ল সেটা হল দুঃখ। হুম এমনটাই হওয়ার ছিল। না না আমি বিশাল বড় প্লে বয় নই। কিন্তু মালিনীর মতন মেয়েদের সামনে যা টোপ দেওয়ার সবটাই দেওয়া হয়েছিল। কথা, ইমোশান, জেলাসি, ওর জন্য ভাবনা, একটা উদ্দাম ভবিষ্যতের হাতছানি, প্রচ্ছন্ন সেক্স, ব্যথা আর বোকা বোকা ভাবে ওকে উপেক্ষা করে চলার নাটক। তাই আমার ধারণা ছিল যে এমনটা হয়ত হতই, আজ নয়ত কাল। আমি ওর উপস্থিতিকে প্রায় উপেক্ষা করে ওর পাশ থেকে তরলের গ্লাসটা উঠিয়ে নিলাম। কি করেছি আমি আপনার সাথে?” কঠিন আর কর্কশ গলায় প্রশ্নটা করলাম। কেন আপনি জানেন না?” ও কিছুক্ষণ আমার দিকে স্থির ভাবে তাকিয়ে আছে। আমার হাতে গ্লাস ধরা, কিন্তু আমার চোখ স্থির ওর মুখের ওপর,ওর ভেজা দুটো চোখের ওপর, ওর ভেজা দুটো ফোলা ফোলা ঠোঁটের ওপর। গ্লাসে একটা চুমুক মেরে খুব নির্লিপ্ত ভাবে বললাম না।ওর উত্তর এল সাথে সাথে আজ সকাল বেলায় বাইরে থেকে যখন ফিরলেন তখন আপনার দিকে তাকিয়ে হাসলাম কিন্তু আপনি পাত্তাই দিলেন না। (এটা আমি খেয়ালই করিনি। কারণ দৌড়ে ফেরার পর, সিকিউরিটির সাথে কথা বলে ভেতরে ঢোকার সময় আমি নিজের চিন্তায় নিজেই মগ্ন ছিলাম। তখন সত্যি মালিনীর কথা মাথায় আসেনি। চাবিটা আমার কাছেই ছিল তাই রিসেপশনের দিকে যাবারও প্রয়োজন পড়েনি। যাই হোক সেই ভাব মনের মধ্যে লুকিয়ে অন্য একটা মিথ্যা উপেক্ষার ভাব ফুটিয়ে তুললাম মুখের ওপর। ভাবখানা এমন করছি যে আমি জেনে বুঝেই ওকে উপেক্ষা করেছি। ও বলে চলল) একটু আগে যখন ফিরলেন তখনও… (জানি ওর মতন মেয়ের পক্ষে বাকিটা নিজের মুখে বলা সম্ভব হবে না। হয়ত অন্য কোনও মেয়ে হলে বলত তোমার হাত ধরে ওই খানে অতগুলো লোকের সামনে তোমাকে ইশারা করলাম ...।) কিন্তু তখনও আপনি ফিরেই দেখলেন না। আর এখন দেখুন, আমার সাথে আপনি আপনি করে কথা বলছেন। গতকাল তো বেশ তুমি তুমি করে কথা বলছিলেন? গতকাল শুনতে ভালো লাগছিল আপনার কথা। কিন্তু আজ আপনি বানিয়ে ছাড়লেন?” আমি একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললাম দেখুন তুমি ব্যাপারটা এক দিক থেকে আসে না। কাল আপনাকে আমার মনের ভাব বুঝিয়েছি। হয়ত ঘটনাচক্রে একটু তাড়াতাড়ি বলে ফেলেছি। কিন্তু দেরী হলেও মনের ভাব একই থাকত সেটা হয়ত আপনিও জানেন বা অলরেডি আমাকে দেখে বুঝতে পেরেছেন। (এটা পুরো ঢপ। কিন্তু এছাড়া কোনও উপায় আছে?) এটাও আপনাকে স্পষ্ট বলে দিয়েছিলাম যে আপনার পার্সোনাল ব্যাপারে আমি কখনও কোনও মাথা গলাবো না। আমি এটা খুব ভালো করে জানি যে এই ভালোবাসার কোনও নাম নেই বা কোনও ভবিষ্যৎ নেই। তবু আমার মনের কথা কিন্তু আপনাকে বলে ছিলাম। আর কিছু হোক বা নাই হোক অন্তত যদি আমার ভালোবাসার মেয়ের সাথে আমি বন্ধু হতে পারতাম। আমি জানি আপনি দুঃখী (থ্যাংকস টু কুন্তল) । তাই হয়ত তাড়াতাড়ি বলে ফেলেছিলাম মনের কথা। কিন্তু আমি তখনও জানতাম যে এই সম্পর্ক এক তরফা। আপনার দিক থেকে এখানে কিছুই নেই। তা হোক, তবু আমার ভালোবাসা তো! সেই জন্যই তুমি বলেছিলাম। কিন্তু তারপর আপনি যা করলেনএক ঝটকায় বুঝিয়ে দিলেন যে কোনও বন্ধুত্ব সম্ভব নয় আপনার বা আমার মধ্যে। আমার ভালোবাসার ব্যাপারে কিছু নোংরা ইঙ্গিত করলেন, কিন্তু নোংরা ইশারা করে আমার ভালোবাসাটাকে শেষ করে দিতে চাইলেন। আপনি একটা কাজ করে বুঝিয়ে দিলেন আমাকে আপনি কতটা নিচ মনে করেন।আমি থামলাম।
 
মালিনীর মুখ আমার চোখের ওপর স্থির। আমি গ্লাসে ধীরে সুস্থে চুমুক দিয়ে চলেছি কিন্তু চোখ স্থির। কয়েক সেকন্ড দুজনেই চুপ। এইবার কিছু না বললেই নয় বলে বললাম আপনার বরের কাছে টাকাটা দিতে পেরেছেন?” আমি জানি দিতে পারেনি, তবু না জানার ভান করলে এখানে ক্ষতি নেই। বলল না এই শনিবার সন্ধ্যায় আসছে। তখন দিয়ে দেব। তবে কালকের ব্যবহারের জন্য আমি লজ্জিত আর খুবই দুঃখিত। কিন্তু বিশ্বাস করুন আমি এখন অসহায়। আগে অনেকবার বিপদ এসেছে, কিন্তু কোনও না কোনও পথ বেড়িয়ে এসেছে। কিন্তু এইবার যেন সব পথ বন্ধ। অথচ সমস্যা হল যদি কাল আপনি টাকাটা না দিতেন তাহলে আমাকে সত্যি অন্য কারোর সাথে গিয়ে…(ও নিজেকে একটু সামলে নিল।) আপনি টাকাটা ফেরত নিয়ে নিন।এ তো মহা বিপদ। আমি সাথে সাথে বললাম আগে আপনাদের সমস্যা মিটুক, তারপর ফেরত দিয়ে দেবেন। আর আমি জানি না যে আমি কত দিন এখানে আছি। তার মধ্যে না দিতে পারলে কোনও ক্ষতি নেই। ও বলল তখন যদি আমাদের হাতে টাকা না থাকে!বললাম তখনকারটা তখন দেখা যাবে। এখন আপনার ডিউটির টাইমে এখানে বসে থাকবেন না। চলে যান।ও যেন উঠতে গিয়েও বসে পড়ল। বলল এখন কেউ কাউন্টারে আসবে না। এক জনকে বসিয়ে দিয়ে এসেছি। খুব সিরিয়স কিছু না হলে আমার খোঁজ কেউ করবে না। কিন্তু...আমি জানি ও আরও কিছু বলতে চাইছে। কিন্তু বলতে পারছে না। এরকম সময় বক্তাকে সময় দেওয়া উচিৎ। আমি চুপ। টেবিলের দিকে এগিয়ে গিয়ে আরেকটা পেগ ঢেলে নিলাম। ও একটু দম নিয়ে শান্ত গলায় বলল আপনি যতক্ষণ না আপনি থেকে তুমি তে নামতে পারছেন ততক্ষণ আমি আপনার টাকা নিতে পারব না।আমি বললাম সেটা আগেই বলে দিয়েছি। তুমিতে নামতে হলে দুজনকেই নামতে হবে। নইলে হবে না।বলল ওকে। আমি একটু হেঁসে ওর সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে বললাম তোমার একটা বর আছে। সে থাকতে এত বড় কথা বলার সাহস রাখো? মানে, আমি তোমাকে কি চোখে দেখি সব কিছু জানার পরও?” ও গলায় দৃঢ়তার সুর, “বরের ব্যাপারে যা দেখার সব দেখা হয়ে গেছে। এখন আর ওই নিয়ে কথা বাড়িয়ে কোনও লাভ নেই।সাথে সাথে বললাম তার মানে তোমার চোখে আমি যা দেখেছি সব সত্যি।মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ আর নায়ের মাঝে কিছু একটা বোঝাতে চাইল। বলল ওর কথা ছেড়ে দাও। জীবনে কিছু কিছু ভুল হয়ে যায়। ধরে নাও আমার বিয়েটাও সেরকমই একটা কিছু।আমি হেঁসে বললাম বেশ। কিন্তু আমার সাথে এই ব্যাপারটা নিয়েও তো পরে আক্ষেপ করতে পার। কারণ বয়সের ব্যবধান, এই সম্পর্কের ভবিষ্যৎ, কোনও কিছুই কিন্তু তোমার অজানা নয়।ও এইবার সাবলীল ভাবে হেঁসে বলল আমি দুর্বল মেয়ে নই। দুর্বল হলে এতদিনে গলায় দড়ি দিতাম নইলে বিষ খেতাম। বিয়েটা বাড়ির মর্জিতে করেছিলাম। ব্লাইন্ড খেলেছিলাম। এখানেও খেলছি। কিন্তু বিয়ের ক্ষেত্রে ওটা ছিল আমার পরিবারের ডিসিশন। আমার নয়। এখানে আমি নিজে ব্লাইন্ড খেলছি। ওখানে আমি একটা ভালো নিরাপদ ভবিষ্যৎ খুঁজেছিলাম, আর এখানে খুঁজছি একজন বন্ধু। এখানে সব ডিসিশন আমার নিজের। আর হ্যাঁ আমরা দুজনেই দুজনের কাছে পরিষ্কার যে আমরা কেউ কারোর ক্ষতি করব না, কিন্তু আমরা দুজনে এটাও জানি যে আমাদের গোটা ব্যাপারটার মধ্যে কোনও ভবিষ্যৎ নেই। ব্যাপারটা গোপনীয়, গর্হিত, কিন্তু, কিন্তু.হয়ত এতেই আমি শান্তি পাব, যে শান্তি বহুদিন ধরে আমি খুঁজে চলেছি..।আমি জানি ও পরকীয়া প্রেম কে কিভাবে ব্যক্ত করবে তার ভাষা খুজে পাচ্ছে না। বললাম কিন্তু আমরা যত দিন দুজনে দুজনের সাথে থাকব ততদিন একে ওপরের পরিপূরক হয়ে চলতে পারব। হোক না গোপনে, কিন্তু তাতে কি? ভালোবাসা তো সব সময় সমাজের নিয়ম কানুন মেনে হয় না। (একটু থেমে বললাম) কি ঠিক বলেছি?” ওর চোখে জল। গতকাল চোখের জলগুলো কোনও ভাবে আঁটকে রেখেছিল, কিন্তু আজ এরকম মুহূর্তে পারল না।
 
চেয়ার ছেড়ে ও ধীরে ধীরে উঠে দাঁড়ালো। আমি গ্লাস হাতে নিয়ে বিছানায় বসে আছি নিরবে। আমার মন শান্ত। আমার চোখ ওর দুটো জলে ভরা চোখের ওপর স্থির। ওর চোখে এক ভয়ানক ব্যাকুলতা। মনের বেশ কিছু কথা আজ ও আমাকে বলে দিয়েছে। ভীষণ সংক্ষেপে বলেছে, ফাইনালি বলেছে তো! কিন্তু তবুও মনে হচ্ছে আরও কিছু বলার চেষ্টা করছে দুই চোখ দিয়ে। কিন্তু হয় সম্ভ্রম, না হয় লজ্জা আর না হয় সমাজের কিছু বাঁধা নিষেধের ভয়ে এই গোপন কক্ষেও আমার সামনে বলে উঠতে পারছে না। আরও পাঁচ মিনিট দুজনেই চুপ। আমি গ্লাস হাতে স্থির বসে আছি।, আর ও স্থির দাঁড়িয়ে আছে আমার থেকে কয়েক হাত দূরে। খুব সম্ভব ওর চোখের ভাষা কিছুটা হলেও আমি পড়তে পেরেছি। মনে ভয় আছে। হয়ত চাইছে আমি গিয়ে নিজের দুই শক্ত হাতের মধ্যে ওকে নিয়ে নিজের বুকের নিরাপত্তার মধ্যে ওকে টেনে নি। ওকে জড়িয়ে ধরে ভালোবাসার আশ্বাস দি। এসব ক্ষেত্রে মেয়েরা চায় যেন ছেলেরা এগিয়ে আসে। কিন্তু আমি এগোলাম না। আমি অপেক্ষা করছি ওর পরের পদক্ষেপের জন্য। ওর চোখের তারায় অনেক কিছু খেলে যাচ্ছে থেকে থেকে। দু একবার আমার চোখের ওপর থেকে চোখ সরিয়ে আমাকে আপাদমস্তক একবার দেখেও নিল। ডান হাতের আঙুলগুলো যেন সামান্য কাঁপছে। না আমার চোখে এখন ইনোসেন্স নেই। আমি ভেতরে ভেতরে জানি যে ওর যদি সামান্য বুদ্ধি থাকে তো বুঝতে পারবে আমার মনের ভেতরে ওকে পাবার এক ভয়ানক আগুন দাবানলের আকার ধারন করেছে। সেই আগুনে ভালোবাসা আছে, কিন্তু তার থেকেও হয়ত বেশী আছে ওকে, ওর শরীরটাকে পাওয়ার কামনা। ওর সাথে এক হয়ে যাওয়ার বাসনা। এতে অবশ্য মালিনীর বা অন্য কারোর খারাপ মনে করার কোনও কারণ নেই। আমরা ভদ্র সমাজে বসবাস করা লোকেরা যতই মুখে বলি না কেন যে প্রেম বন্ধুত্ব ইত্যাদি হল মন আর আত্মার বন্ধন, কিন্তু আমরা সবাই মনে মনে জানি যে এটা একটা সাধারণ নিছক ভন্ডামি ছাড়া আর কিছুই নয়। এই সব বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্ক নিয়ে আমরা যতই জ্ঞান দিই না কেন, মনে মনে আমরা সবাই এটা জানি যে এই সব সম্পর্ক প্রধানত চালিত হয় শারীরিক ক্ষুধার দ্বারা। আজকের দিনে কারোর এত সময় নেই যে শুধু কিছু আতলেমি মার্কা ভাঁট করার জন্য আর কিছু সুখ দুঃখের কথা বলার জন্য এরকম একটা সম্পর্কের মধ্যে নিজেকে জড়িয়ে ফেলবে। সুতরাং ছেলে হোক আর মেয়েই হোক কারোর কাছেই এই ব্যাপারটা নতুন বা অজানা কিছু নয়। অবশ্য শারীরিক মিলনের সময় বা আগে পরে কিছু মিষ্টি কথা বার্তা হতেই পারে, কিন্তু সেটা সততার সাথে বলতে গেলে নিতান্তই গৌণ। আমি বিয়ের বাইরে একজনের সাথে জড়িয়ে পড়েছি কেন না আমি আমার বরের সামনে নিজের সমস্যার কথা বলতে পারি না, বা সে আমার সাথে জড়িয়ে পড়েছে কারণ আমি ওর সমস্যার কথা শুনে খুব ভালো বুঝতে পারি, ওর মন আমি পড়তে পারি, এই সব যারা বলে, তারা সবাই জানে যে এই সব তারা বলতে বাধ্য হচ্ছে শুধু মাত্র নিজের বা সমাজের কাছে একটা অজুহাত দাঁড় করানোর জন্য। গোপন মুহূর্তে আগে শারীরিক মিলন তার পর এই সব ভাব ভালোবাসা বিনিময়। সুতরাং...ওর চোখের চাহুনিতেও আজ আমাকে পাবার একটা সুপ্ত বাসনা জেগে উঠেছে সেটা বুঝতে পারছি। কিন্তু মনের সমস্ত শক্তি আর লজ্জা দিয়ে সেই চাহুনিকে ও দমন করে চলেছে। কে এমন আছে যে এত ইমোশানাল ঘটনার পর মিলিত হতে চাইবে না নিজের নতুন বন্ধুর সাথে। সরি প্রেমিকের সাথে। নতুন বলেই হয়ত আকর্ষণ আরও বেশী। তাই হয়ত ওকে সেই বাসনা দমন করার জন্য অনেক বেশী চেষ্টা করতে হচ্ছে। যদি সেটা সত্যি না হত, তাহলে হয়ত এতক্ষনে ও এই ঘর থেকে বেড়িয়ে গিয়ে আবার নিজের ডিউটি জয়েন করে ফেলত। কিন্তু তেমন তো কিছু করছে না। মানে এক কথায় ফেঁসে গেছে। 
[+] 4 users Like pcirma's post
Like Reply


Messages In This Thread
RE: মুখোশ - The Mask by Daily Passenger - by pcirma - 05-03-2019, 02:54 PM



Users browsing this thread: 9 Guest(s)