Thread Rating:
  • 24 Vote(s) - 3.17 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
চোরাবালি (কালেক্টেড)
#57
পর্ব তিন। সানাইয়ের সুর (#4-#14)

সকালে ঘুম থেকে উঠতে একটু দেরি হয় অভির। গতরাতে বালিশে মুখ গুঁজে অনেকক্ষণ পড়েছিল, হটাত ঝোঁকের বশে লেখার সাথে একি করে ফেলল। কখন চোখে বুজে ঘুমের কোলে ঢলে পড়েছিল জানা নেই। তবে সকালে উঠে গায়ের ওপর গলা পর্যন্ত চাদরে ঢাকা দেখে বুঝতে কষ্ট হয়না যে, ওর ঘুমিয়ে পড়ার পর লেখা রাতে এসেছিল ওর পিঠের নখের দাগ আড়াল করার জন্য। আকাশের মেঘ অনেক আগেই কেটে গেছে, ঝলমলে রোদ আকাশে, সেই সাথে গরম। সকালেই স্নান সেরে তৈরি হয়ে যায়, এইবার বাড়ি ফিরতে হবে। তবে অনেকক্ষণ লেখার দেখা পায় না, লেখার ব্যাপারে ঠিক জিজ্ঞেস করতেও একটু বাধে অভির। সকালের খাবার শেষ করে বিদায় জানানোর সময়ে লেখা সামনে আসে। চোখাচুখি হতেই এক সলজ্জ হাসি দেয় অভিকে দেখে। সেই হাসিতে মাখা রক্তিম গালের লালিমা। বিদায় বেলায় শুধু হাত তুলে একটু বাই জানিয়ে দেয়। ঘটনাটা বড় বাধে অভির বুকে, ঠিক করল কি? বাড়িতে ফোন করে জানিয়ে দিয়েছিল যে দুপুরের আগেই পৌঁছে যাবে। বড় রাস্তা পড়তেই শোঁ শোঁ করে বাইক চালিয়ে দেয়, যত তাড়াতাড়ি পারে যেন এই জায়গা থেকে পালিয়ে যেতে পারলে বাঁচে।

বাড়ি যখন পৌঁছায় তখন দুপুর হয়ে যায়। বাড়িতে পা রাখা মাত্রই, মনামি ওকে একপাশে ডেকে নিয়ে যায়। দিদির এইভাবে ডেকে নিয়ে যাওয়াতে অভি প্রমাদ গোনে, লেখা কি ঝন্টুদাকে সব বলে দিয়েছে নাকি? ইতিমধ্যে তাহলে ওর নামে দিদির কাছে নালিশ চলে এসেছে। কপালে অনেক দুঃখ আছে তাহলে।

মনামি ভাইকে জিজ্ঞেস করে, “হ্যাঁ রে, গয়না কিনতে কবে যাবো?”
অভি মাথা চুলকিয়ে উত্তর দেয়, “জমির টাকাটা হাতে পেলেই তোর গয়না হয়ে যাবে।”

পুজোর আগেই মছলন্দপুরের আম বাগান বিক্রি হয়ে যায় কুড়ি লাখ টাকায়। এর মাঝে অবশ্য দিদিকে নিয়ে বড়মাকে নিয়ে বেশ কয়েকবার নৈহাটি মামার বাড়িতে গিয়েছিল জামা কাপড় নিতে, তবে সর্বদা লেখাকে এড়িয়েই চলেছে, যদিও এই ব্যাপারটা কারুর চোখে পরেনি। লেখাও খুব দরকার না পড়লে ওর সামনে আসেনি, একটা অদৃশ্য দুর্ভেদ্য দেয়াল গড়ে ওঠে ওদের মাঝে। খুব দরকার পড়লে, ছোট বাক্যে, অথবা হ্যাঁ নাতেই কথাবার্তা হয় ওদের মাঝে। সেই দুর্যোগের রাতে আকস্মিক ভাবে ঘটে যাওয়া ঘটনা অভিকে আর লেখাকে তাড়িয়ে বেড়ায়।
পর্ব তিন। সানাইয়ের সুর (#4-#14)
সকালে ঘুম থেকে উঠতে একটু দেরি হয় অভির। গতরাতে বালিশে মুখ গুঁজে অনেকক্ষণ পড়েছিল, হটাত ঝোঁকের বশে লেখার সাথে একি করে ফেলল। কখন চোখে বুজে ঘুমের কোলে ঢলে পড়েছিল জানা নেই। তবে সকালে উঠে গায়ের ওপর গলা পর্যন্ত চাদরে ঢাকা দেখে বুঝতে কষ্ট হয়না যে, ওর ঘুমিয়ে পড়ার পর লেখা রাতে এসেছিল ওর পিঠের নখের দাগ আড়াল করার জন্য। আকাশের মেঘ অনেক আগেই কেটে গেছে, ঝলমলে রোদ আকাশে, সেই সাথে গরম। সকালেই স্নান সেরে তৈরি হয়ে যায়, এইবার বাড়ি ফিরতে হবে। তবে অনেকক্ষণ লেখার দেখা পায় না, লেখার ব্যাপারে ঠিক জিজ্ঞেস করতেও একটু বাধে অভির। সকালের খাবার শেষ করে বিদায় জানানোর সময়ে লেখা সামনে আসে। চোখাচুখি হতেই এক সলজ্জ হাসি দেয় অভিকে দেখে। সেই হাসিতে মাখা রক্তিম গালের লালিমা। বিদায় বেলায় শুধু হাত তুলে একটু বাই জানিয়ে দেয়। ঘটনাটা বড় বাধে অভির বুকে, ঠিক করল কি? বাড়িতে ফোন করে জানিয়ে দিয়েছিল যে দুপুরের আগেই পৌঁছে যাবে। বড় রাস্তা পড়তেই শোঁ শোঁ করে বাইক চালিয়ে দেয়, যত তাড়াতাড়ি পারে যেন এই জায়গা থেকে পালিয়ে যেতে পারলে বাঁচে।

বাড়ি যখন পৌঁছায় তখন দুপুর হয়ে যায়। বাড়িতে পা রাখা মাত্রই, মনামি ওকে একপাশে ডেকে নিয়ে যায়। দিদির এইভাবে ডেকে নিয়ে যাওয়াতে অভি প্রমাদ গোনে, লেখা কি ঝন্টুদাকে সব বলে দিয়েছে নাকি? ইতিমধ্যে তাহলে ওর নামে দিদির কাছে নালিশ চলে এসেছে। কপালে অনেক দুঃখ আছে তাহলে।

মনামি ভাইকে জিজ্ঞেস করে, “হ্যাঁ রে, গয়না কিনতে কবে যাবো?”
অভি মাথা চুলকিয়ে উত্তর দেয়, “জমির টাকাটা হাতে পেলেই তোর গয়না হয়ে যাবে।”

পুজোর আগেই মছলন্দপুরের আম বাগান বিক্রি হয়ে যায় কুড়ি লাখ টাকায়। এর মাঝে অবশ্য দিদিকে নিয়ে বড়মাকে নিয়ে বেশ কয়েকবার নৈহাটি মামার বাড়িতে গিয়েছিল জামা কাপড় নিতে, তবে সর্বদা লেখাকে এড়িয়েই চলেছে, যদিও এই ব্যাপারটা কারুর চোখে পরেনি। লেখাও খুব দরকার না পড়লে ওর সামনে আসেনি, একটা অদৃশ্য দুর্ভেদ্য দেয়াল গড়ে ওঠে ওদের মাঝে। খুব দরকার পড়লে, ছোট বাক্যে, অথবা হ্যাঁ নাতেই কথাবার্তা হয় ওদের মাঝে। সেই দুর্যোগের রাতে আকস্মিক ভাবে ঘটে যাওয়া ঘটনা অভিকে আর লেখাকে তাড়িয়ে বেড়ায়।
পর্ব তিন। সানাইয়ের সুর (#4-#14)
সকালে ঘুম থেকে উঠতে একটু দেরি হয় অভির। গতরাতে বালিশে মুখ গুঁজে অনেকক্ষণ পড়েছিল, হটাত ঝোঁকের বশে লেখার সাথে একি করে ফেলল। কখন চোখে বুজে ঘুমের কোলে ঢলে পড়েছিল জানা নেই। তবে সকালে উঠে গায়ের ওপর গলা পর্যন্ত চাদরে ঢাকা দেখে বুঝতে কষ্ট হয়না যে, ওর ঘুমিয়ে পড়ার পর লেখা রাতে এসেছিল ওর পিঠের নখের দাগ আড়াল করার জন্য। আকাশের মেঘ অনেক আগেই কেটে গেছে, ঝলমলে রোদ আকাশে, সেই সাথে গরম। সকালেই স্নান সেরে তৈরি হয়ে যায়, এইবার বাড়ি ফিরতে হবে। তবে অনেকক্ষণ লেখার দেখা পায় না, লেখার ব্যাপারে ঠিক জিজ্ঞেস করতেও একটু বাধে অভির। সকালের খাবার শেষ করে বিদায় জানানোর সময়ে লেখা সামনে আসে। চোখাচুখি হতেই এক সলজ্জ হাসি দেয় অভিকে দেখে। সেই হাসিতে মাখা রক্তিম গালের লালিমা। বিদায় বেলায় শুধু হাত তুলে একটু বাই জানিয়ে দেয়। ঘটনাটা বড় বাধে অভির বুকে, ঠিক করল কি? বাড়িতে ফোন করে জানিয়ে দিয়েছিল যে দুপুরের আগেই পৌঁছে যাবে। বড় রাস্তা পড়তেই শোঁ শোঁ করে বাইক চালিয়ে দেয়, যত তাড়াতাড়ি পারে যেন এই জায়গা থেকে পালিয়ে যেতে পারলে বাঁচে।

বাড়ি যখন পৌঁছায় তখন দুপুর হয়ে যায়। বাড়িতে পা রাখা মাত্রই, মনামি ওকে একপাশে ডেকে নিয়ে যায়। দিদির এইভাবে ডেকে নিয়ে যাওয়াতে অভি প্রমাদ গোনে, লেখা কি ঝন্টুদাকে সব বলে দিয়েছে নাকি? ইতিমধ্যে তাহলে ওর নামে দিদির কাছে নালিশ চলে এসেছে। কপালে অনেক দুঃখ আছে তাহলে।

মনামি ভাইকে জিজ্ঞেস করে, “হ্যাঁ রে, গয়না কিনতে কবে যাবো?”
অভি মাথা চুলকিয়ে উত্তর দেয়, “জমির টাকাটা হাতে পেলেই তোর গয়না হয়ে যাবে।”

পুজোর আগেই মছলন্দপুরের আম বাগান বিক্রি হয়ে যায় কুড়ি লাখ টাকায়। এর মাঝে অবশ্য দিদিকে নিয়ে বড়মাকে নিয়ে বেশ কয়েকবার নৈহাটি মামার বাড়িতে গিয়েছিল জামা কাপড় নিতে, তবে সর্বদা লেখাকে এড়িয়েই চলেছে, যদিও এই ব্যাপারটা কারুর চোখে পরেনি। লেখাও খুব দরকার না পড়লে ওর সামনে আসেনি, একটা অদৃশ্য দুর্ভেদ্য দেয়াল গড়ে ওঠে ওদের মাঝে। খুব দরকার পড়লে, ছোট বাক্যে, অথবা হ্যাঁ নাতেই কথাবার্তা হয় ওদের মাঝে। সেই দুর্যোগের রাতে আকস্মিক ভাবে ঘটে যাওয়া ঘটনা অভিকে আর লেখাকে তাড়িয়ে বেড়ায়।
ইতিমধ্যে মুম্বাই থেকে শর্বাণী তার একমাত্র ছেলে, তিতাশকে নিয়ে চলে আসে। অভির এক মাত্র ভাগ্নে, চোখের মণি কিন্তু বড্ড শয়তান। কোলকাতাতে পা রাখার আগে থেকেই আবদার শুরু হয়ে যায় মামার কাছে। এইবার এটা চাই, ওটা চাই, ইত্যাদি। ঠিক হল লক্ষ্মী পুজোর পরেই মনামির আশীর্বাদ হবে, সেই সাথে শিতাভ্রর আশীর্বাদ ও হয়ে যাবে একদিনে। আজকাল মানুষের হাতে সময় কম, তাই এক সাথেই দুটো কাজ সেরে ফেললে টাকা এবং সময়ের সাশ্রয় হয়। সেই হিসাবে দেবাশিস বাবুকে আমন্ত্রন জানানো মনামির আশীর্বাদে হয়েছিল। ঠিক হয়েছিল যে বিয়ের সময়ে ফাল্গুনীকে নিমন্তন্ন করা হবে এবং বৌভাতে দেবাশিস বাবু আসবেন। যেহেতু দুই পক্ষের আশীর্বাদ এক সাথেই হবে তাই বড় রাস্তার ওপরে একটা বিয়ে বাড়ি ভাড়া করা হয়।

মনামির আশীর্বাদের আগের দিনেই নৈহাটি থেকে মামা মামিমার সাথে লেখাও মধ্যমগ্রামে চলে আসে। বাড়ি ভর্তি লোকজন, অনেক দুর থেকেও আত্মীয়রা এসে হাজির। ঝন্টু জানিয়ে দেয় যে, পরের দিন সকালে বিউটিসিয়ান নিয়ে সোজা মধ্যমগ্রাম চলে আসবে। অভিকে দেখে লেখা কেমন যেন শামুকের খোলের মধ্যে ঢুকে যায়। এমনিতেই লেখা একটু চুপচাপ থাকত, কিন্তু সেই রাতের সেই ঘটনার পর থেকে দুইজনের মধ্যে সেই যে কথা বন্ধ হয়ে গিয়েছিল সেই সঙ্কোচ এখন পর্যন্ত কেউই কাটিয়ে উঠতে পারেনি।

সেদিন সকালের দিকে শিতাভ্র মনামিকে ফোন করে দেখা করতে ইচ্ছে প্রকাশ করে। বলে, যে একবার লাঞ্চে দেখা করতে চায়। মনামির খুব ইচ্ছে একবার শিতাভ্রর সাথে দেখা করতে যাওয়ার, কিন্তু কিছুতেই সেই কথা বাড়িতে বলতে পারছে না, বললেই দিদি মা বাড়ির বড়রা রেগে উঠবে।

শেষ ভরসা অভি, তাই অভিকে ডেকে বলে, “এই শোন না, শিতাভ্র লাঞ্চে ডেকেছে।”
অভি ভুরু কুঁচকে বলে, “একটা মাত্র দিন আর, কালকেই দেখা হবে। অত উতলা হচ্ছিস কেন?”
মনামির কিছুতেই তর সয়না, একবার শিতাভ্রর সাথে যে করে হোক দেখা করা ওর চাই। মুখ কাচুমাচু করে অনুরোধ করে, “প্লিজ আমার সোনা ভাইটি, প্লিজ কিছু একটা বাহানা বানা, আমি একবার দেখা করতে চাই।”
দিদির এহেন আচরন দেখে অভি হেসে ফেলে, “আচ্ছা দেখছি কি করা যায়।”

বুদ্ধি খাটিয়ে বড়মাকে বলে যে দিদির একটা গলার হার বদলের জন্য বৌবাজার যেতে হবে। দীপাদেবী একটু ইতস্তত করেন কিন্তু তারপরে সম্মতি দেন। শিতাভ্র জানিয়ে দেয় যে পিয়ারলেস ইনের আহেলিতে ওদের জন্য অপেক্ষা করবে।
বাইকে যেতে যেতে মনামি অভিকে বলে, “এই শোন না, আমার আরো একটা কথা রাখবি?”
অভি জিজ্ঞেস করে, “কি বল?”
মনামি গলা নামিয়ে অভির কানে কানে বলে, “জাস্ট দু ঘন্টা একটু ছাড় চাই ওর সাথে।”
অভি প্রশ্ন করে, “মানে?”
মনামি ফিসফিস কর বলে, “লাঞ্চের পরে আমি আর শিতাভ্র একটু কোথাও যাবো, তুই ততক্ষন অন্য কোথাও একটু ঘুরে বেড়িয়ে নিস।”
দিদির অভিপ্রায় অভির বুঝতে বিন্দু মাত্র অসুবিধে হয় না, তাই হেসে ফেলে, “আচ্ছা বাবা, তোদের একাই ছেড়ে দেব চিন্তা নেই। আমি কেন কাবাবে হাড্ডি হতে যাবো বল। আমি ত এখন বাইরের...”
খুব জোড়ে পিঠের ওপরে এক কিল মারে মনামি, “এতটা ইমোশানাল ব্লাক মেল করতে হবে না, যা। যেতে হবে না যা, বাড়ি ফিরে চল।”
অভি প্রমাদ গোনে, “না রে, তুই ও না আচ্ছা মেয়ে। নিয়েই ত যাচ্ছি রে বাবা।”

আহেলিতে শিতাভ্র ওদের জন্য অপেক্ষা করছিল। খাওয়া শুধু নিমিত্ত মাত্র, দিদির ছটফটানি অতি সহজে অভির চোখে ধরা পরে যায়। কখন একটু পাবে শিতাভ্রকে তাই মাঝে মাঝেই চোখের ইশারায় অভিকে অনুরোধ করে খাওয়ার পরেই বেড়িয়ে যেতে। অভি মাথা দুলিয়ে জানিয়ে দেয় যে ওদের একা ছেড়ে দেবে। খাওয়া শেষ, টেবিলে বসে বিলের জন্য অপেক্ষা করছিল ওরা। চুপ করে ওদের সামনে বসে ছিল অভি আর এক দৃষ্টিতে দিদিকে দেখে যাচ্ছিল। আর কয়েকদিনের মধ্যে, মিস চ্যাটারজি, মিসেস ভট্টাচারজি হয়ে যাবে, পদবী পালটে যাওয়ার সাথে সাথে অনেক কিছুই পালটে যাবে। মনামির সাথে চোখাচুখি হতেই অভির এই ভাব্ব্যাক্তি ধরা পরে যায়। মনামি খুব ভালো ভাবে ভাইয়ের অব্যাক্ত ভাষা গুলো বোঝে, তাই ইশারায় জানতে চায় এর কারন, যদিও ওই ছলছল চোখের ভাষা ওর অজানা নয়। মাথা দুলিয়ে অভি জানায় যে কিছুই হয়নি। 

কিছুপরে অভি দিদির হাত ধরে শিতাভ্রর দিকে তাকায়। শিতাভ্র ভুরু কুঁচকে অভিকে প্রশ্ন করে, “কি হল মিস্টার চ্যাটারজি। তোমার দিদিকে নিয়ে যাচ্ছি বলে হিংসে হচ্ছে নাকি?”
মুচকি হাসে অভি, “তা একটু হচ্ছে বইকি।” একটু থেমে অভি বলতে শুরু করে, “শিতাভ্রদা, তোমাকে একটা গল্প বলি শোন।” মনামি আর শিতাভ্র, অভির এহেন আচরনে আশ্চর্যচকিত হয়ে ওর দিকে তাকিয়ে থাকে। অভি বলে, “একটা মাটির হাঁড়ির দোকান ছিল, সেই দোকানির কাছে একটা ছেলে কাজ করত। একদিন সেই দোকানি কাজের ছেলেটাকে একটা হাড়ি দিয়ে একজনের কাছে পাঠায়। কিছু পরে সেই ছেলেটা কাচুমাচু মুখ নিয়ে ফিরে এসে জানায় যে পথে যেতে যেতে মাটির হাড়িটা হাত থেকে পরে গিয়ে ভেঙ্গে গেছে। সেই শুনে দোকানি খুব গাল মন্দ করে ছেলেটাকে। ছেলেটা মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে থাকে। দোকানি আবার ওকে একটা হাড়ি দিয়ে বলে এই বার যেন হাড়িটা না ভাঙ্গে। ছেলেটাও মাথা দুলিয়ে হাড়িটা নিয়ে চলে যেতে থাকে। তখন দোকানি ছেলেটাকে ডেকে, সপাটে একটা চড় কষিয়ে দেয়। চড়টা ভীষণ জোরেই মারে দোকানি, ছেলেটা হতভম্ব হয়ে কিছুক্ষন দাঁড়িয়ে থেকে হাড়িটা নিয়ে চলে যায়। এই ব্যাপারটা ওই দোকানের পাশের দোকানি দেখে জিজ্ঞেস করে, আচ্ছা ভাই, তুমি ত প্রথম হাড়িটা ভাঙ্গার জন্য ছেলেটাকে অনেক গালমন্দ করলে, তাতে তোমার পেট ভরল না যে আবার ছেলেটাকে মারতে গেলে। দোকানি হেসে বলে, প্রথম হাড়ি ভাঙ্গার জন্য গালমন্দ করেছি ঠিক। কিন্তু চড় মারার পেছনে অন্য কারন, ওই চড়টা ওর মনে থাকবে, আর এই বারে এই দ্বিতীয় হাড়িটা আর ভাঙ্গবে না।” 
গল্পটা শুনে শিতাভ্র অভির দিকে হাজার প্রশ্ন নিয়ে তাকিয়ে থাকে। অভির এই গল্পের অন্তর্নিহিত অর্থ বুঝতে মনামির একটুও অসুবিধে হয় না, চোখের কোনায় এক ফোঁটা জল চলে আসে ভাইয়ের এই গল্প শুনে। অভি কিছুক্ষন চুপ থেকে শিতাভ্রর হাতের মধ্যে দিদির হাত দিয়ে গাঢ় গম্ভীর কণ্ঠে বলে, “আমি তোমার হাতে আমার ঘুম, আমার শান্তি, আমার ঢাল, আমার তরোয়াল, আমার অনেক কিছুই তুলে দিলাম। যদি কোনদিন তোমার জন্য দিদির চোখে এক ফোঁটা জল দেখি তাহলে সব থেকে আগে তোমার ধড় থেকে মাথাটা আলাদা করব তারপরে ওই কাটা মাথাকে জিজ্ঞেস করব যে দিদির চোখে জল কেন।”   

কথাটা বলতে বলতে অভির চোখের জল চলে আসে। ভীষণ শক্ত করে শিতাভ্রর হাত ধরে থাকে আর সেই মুঠোতে মনামির হাত। কথাটা শোনার পর শিতাভ্রর চোয়াল কঠিন হয়ে ওঠে। মনামির মনে হল যেন ওর সুখের নীড় ভেঙ্গে চুরমার হয়ে গেল চোখের সামনে, ভীষণ ক্রোধে চোখ মুখ লাল হয়ে জ্বালা করে ওঠে। হাতের মুঠো শিথিল করতেই, শিতাভ্র হাত ছাড়িয়ে উঠে দাঁড়ায়। 

শিতাভ্র একভাবে অভির দিকে তাকিয়ে থাকে কিছুক্ষন। তারপর কোনোরকমে একটা হাসি টেনে বলে, “লাঞ্চটা বেশ ভালোই হল কি বল। আমার একটু কাজ আছে, বুঝলে এইবার আসি।”
মনামি বুঝে যায় যে শিতাভ্র ভীষণ ভাবে আহত হয়েছে অভির কথা শুনে তাই অবস্থার সামাল দেওয়ার জন্য শিতাভ্রর হাত ধরে বলে, “আমার ভাইটা সত্যি একটা পাগল, প্লিজ কিছু মনে কর না।”
আস্তে করে মনামির হাত ছাড়িয়ে নেয় শিতাভ্র, “না না, সেটা কিছু নয়। এই একটু দরকারি কাজ আছে, কাল দেখা হবেই ত।”
দুই চোখ উপচে পড়ার জোগাড় মনামির, দাঁত পিষে অভির দিকে রোষকষিত নয়নে বলে, “লাঞ্চ হয়ে গেছে, এবারে শান্তি, বাড়ি চল তাহলে।”

মাথা নিচু করে দিদির পেছন পেছন রেস্টুরেন্ট ছেড়ে বেড়িয়ে আসে অভি। সারাটা রাস্তা, ভাই বোন একদম চুপ। মনামির বুকের রক্ত তোলপাড় করে ওঠে, শিতাভ্র কি ভাবল, ওর প্রতিক্রিয়া ঠিক ভাবে বুঝতে পারছে না, আগামী কাল কি হবে, এই কথার রেশটা কতটা ওদের জীবন প্রভাবিত করবে, সেই সব চিন্তায় মগ্ন হয়ে যায়। থমথমে মুখ নিয়ে বাড়িতে পা রাখতেই, শর্বাণী জিজ্ঞেস করে, কি ব্যাপার। মনামি, উত্তর এড়িয়ে অভিকে টানতে টানতে নিজের ঘরে নিয়ে যায়। অভি প্রমাদ গোনে দিদির রক্ত চক্ষু দেখে। মাথা নিচু করে চুপচাপ দিদির সামনে দাঁড়িয়ে থাকে অভি। কি উত্তর দেবে ভেবে পায় না, দিদিকে যে ভীষণ ভাবে ভালোবাসে আর সেই ভালোবাসার টানেই এই কথাটা সেই সময়ে শিতাভ্রকে বলে ফেলেছে। মাথা নিচু করে দিদির সামনে দাঁড়িয়ে কিছু একটা বলতে চেষ্টা করে। চোখ দুটো ভীষণ ভাবে জ্বালা করে ওঠে মনামির, ভাইয়ের দিকে এগিয়ে এসে সপাটে এক চড় কষিয়ে দেয়। চড়ের আওয়াজ বাড়ির লোকেরাও শুনতে পায়। বিয়ের বাড়িতে একটু আওয়াজ একটু শব্দ হওয়া স্বাভাবিক, কিন্তু মনামির এই চড়ের আওয়াজে সারা বাড়িতে নেমে আসে নিস্তব্ধতা।  
অভির কলার ধরে কাঁদতে কাঁদতে চেঁচিয়ে ওঠে, “সব শেষ করে দিয়েছিস, এবারে শান্তি। তোর দিদি তোর কাছেই থাকবে।”
শর্বাণী ঘরের মধ্যে ঢুকে জিজ্ঞেস করে, “কি ব্যাপার, ওর ওপরে এত খেপে আছিস কেন?”
মনামি দাঁতে দাঁত চেপে উত্তর দেয়, “আমি বিয়ে করব না।”
অবাক হয়ে শর্বাণী জিজ্ঞেস করে, “কি এমন হয়েছে, অভি কি করেছে?”
অভির কলার ছেড়ে দিয়ে বলে শর্বাণীর প্রশ্নের উত্তরে মনামি বলে, “এর জ্বালায় আমি মরেও শান্তি পাব না। শিতাভ্রকে বলে যে...” কথাটা শেষ করে না মনামি। 
অভির দুচোখ জ্বালা করে ওঠে। সেই ছোট বেলা থেকে একসাথে বড় হওয়া, পুকুর পাড়ের পেয়ারা গাছে উঠে কাঁচা পেয়ারা খাওয়া। চোয়াল চেপে বুকের বেদনা ঢেকে বলে, “তুই অনেক বদলে গেছিস রে। আগে রাতের খাওয়ার পরে আমি তুই বড়মা গল্প করতাম, এখন ভেবে দ্যাখ তুই কি করিস। এখন পর্যন্ত ওকে ঠিক ভাবে চিনিসও না।”
দাঁতে দাঁত পিষে মনামি উত্তর দেয়, “ওকে অন্তত তোর চেয়ে ভালো চিনি।”
চোখে জল তাও ম্লান হাসে অভি, “হ্যাঁ তা সত্যি, ঘন্টার পর ঘন্টা ফোনে ভিডিও কল করে অনেক দূরে চলে গেছিস। তোর জন্য কতবার এই পোড়া পিঠে পাপার কাছে বেল্টের মার খেয়েছি, বড়মার কাছে কানমলা খেয়েছি, পাড়ার ছেলেদের পিটিয়ে পা ভেঙ্গে দিয়েছি। তোকে মুড়ি মাখার জন্য কেউ জ্বালাতন করবে না, আমার জামার বোতাম সেলাই করে দেওয়ার জন্য জ্বালাতন করবে না। সেগুলো সব ভুল, সব ছেলে খেলা তাই না।”
চেঁচিয়ে ওঠে মনামি, “তুই কি চাস, তোর দিদি সব সময়ে তোর কাছে থাকবে?”
অভি কাষ্ঠ হাসি হেসে মাথা নাড়িয়ে বলে, “না রে, আমার দিদি আমার কাছে থাকবে না সেটা আমি ভালো ভাবেই জানি, কিন্তু কিছুতেই যে মানতে পারছি না রে। দুমাস আগেও তুই আমার দিদিভাই ছিলিস এখন শুধু মাত্র দিদিতে এসে ঠেকেছিস, কি করে মেনে নেব, বল।” দিদির সামনে হাঁটু গেড়ে মাথা নিচু করে বসে নিচু গলায় বলে, “তোরা যেভাবে আমার কথাটা নিয়েছিস, আমি ঠিক সেইভাবে বলতে চাইনি রে দিদিভাই...”
ভাইয়ের গলায়, “দিদিভাই” ডাক শুনে হাউহাউ করে কেঁদে ফেলে মনামি, “তুই পুরো পাগল।” অভির মাথা নিজের কোলের মধ্যে গুঁজে কেঁদে ফেলে, “ওদের ফোন করে বলে দে যে আমি বিয়ে করব না।”
শর্বাণী অবাক হয়ে প্রশ্ন করে, “আরে বলবি ত কি হয়েছে, অভি কি বলেছে?”
মনামি কাঁদতে কাঁদতে বলে, “এই পাগলটার জ্বালায় আমি যেখানেই বিয়ে করব সেখানে গিয়ে কিছু না কিছু একটা বাঁধিয়ে আসবে।” 
অভি মনামির কোলে মাথা গুঁজে ফুঁপিয়ে ওঠে, “না রে আমি আর তোর কোন কিছুর মধ্যে আসব না।”
[+] 4 users Like pnigpong's post
Like Reply


Messages In This Thread
RE: চোরাবালি (কালেক্টেড) - by pnigpong - 01-08-2020, 08:00 PM



Users browsing this thread: 16 Guest(s)