29-07-2020, 02:26 AM
(আগের পর্বের পর)
বাড়ির পরিবেশটা নিস্তব্ধ হয়ে গেছে. সবাই চুপচাপ বসে রয়েছে. বাড়ির মহিলারা নিজেদের মধ্যে আলোচনা করছে.
রঞ্জিত বাবু : এটা কি হয়ে গেলো বলোতো রিমির মা?
দীপালি দেবী (দুঃখী মুখে): মেয়েটাকে এতক্ষন কত আমরা বোঝালাম... কিন্তু আমরাতো জানি কি হচ্ছে ওর মনে. ওর তো ইচ্ছে ছিলোনা.... শুধু আমাদের কথা মেনে এই বিয়েতে রাজী হয়েছিলো. কেন যে আমার মেয়েটার সাথেই এমন হলো...... মেয়েটার চোখে জল দেখেছি আমি.
রঞ্জিত বাবু : ও কোথায়?
রিমির মা : ও নিজের ঘরে. ওর ভাই, ঝিলমিল, অভিষেক সবাই আছে ওর সাথে..... ওরা যদি ওকে বোঝাতে পারে....
রঞ্জিত বাবু বন্ধুর হাত ধরে বললো : কি থেকে কি হয়ে গেলো তাইনা? তোদের ডেকে পাঠালাম আমাদের খুশিতে অংশ নিতে...... সেই খুশিটাই আর রইলোনা......
অরিন্দম বাবু বন্ধুর পিঠে চাপড় মেরে উৎসাহের সাথে বললেন : আরে দূর ব্যাটা.... তখন থেকে মুখ গোমড়া করে বকেই চলেছে... আরে আমি বলছিনা কিচ্ছু হয়নি..... cheer up ব্যাটা..... ওই ছেলে গেছে ভালো হয়েছে......
রঞ্জিত বাবু : তা ঠিক...... ঠিকই বলেছিস..... কিন্তু আমার মেয়েটা..... মানে.....এরপরে লোকজনের মুখে কথাবার্তা শুরু হবে আমার মেয়েটাকে নিয়ে..তাদের মুখ কিকরে বন্ধ করবো বলতো..?
অরিন্দম বাবু : নিকুচি করেছে ওসব লোকেদের.... খেয়ে দেয়ে কাজ নেই.. শুধু পর নিন্দা পর চর্চা.... আরে.... আমাদের মেয়ে কি কোনো অংশে কম নাকি? তুই চিন্তা করিসনা....এখন যেটা আগে হলো মেয়েটার পাশে থেকে আমাদের ওকে আনন্দে রাখা. আর যতদূর বিয়ের কথা........ আমি রিমি মায়ের বিয়ের দায়িত্ব নিলাম. ওর বিয়ের জন্য পাত্র আমি দেখবো. তুই আমায় বিশ্বাস করিস তো?
রঞ্জিত বাবু : ছি. ছি..... এ আবার কি কথা....? তুই আমার ছোটবেলার বন্ধু. বিশ্বাস অবিশ্বাসের কথা আবার আসছে কেন? কিন্তু তোর কাছে কি ভালো পাত্রের সন্ধান আছে? তোর পরিচিত বা ফ্যামিলির কেউ বুঝি?
অরিন্দম বাবু হেঁয়ালি করে হেসে বললেন : তুইও পাত্রের পরিবার কে চিনিস....বিশেষত পাত্রের বাবা... তাকে ভালো করেই চিনিস.
রঞ্জিত বাবু চিন্তায় পড়লেন : আমি? আমিও পাত্রের বাবাকে চিনি? কে বলতো? কার কথা বলছিস বলতো?
অরিন্দম বাবু হেসে বললেন : ওরে গাধা আমি রে আমি. আমি আমার কথা বলছিলাম.
রঞ্জিত বাবু আর ওনার স্ত্রী অবাক. রঞ্জিত বাবু বন্ধুর দিকে হা করে তাকিয়ে বললেন : তুই? মানে তুই অভিষেকের সাথে আমার মেয়ের...
অরিন্দম বাবু হেসে : হ্যা রে ব্যাটা..... আমার ছেলের সাথে. (তারপরে নিজের স্ত্রীয়ের দিকে তাকিয়ে বললেন ): কিগো? কি বলো? ছেলের জন্য এর থেকে ভালো পাত্রী পাবে তুমি?
অভির মা হেসে বললো : একদম না.... তোমার সাথে আমি পুরো একমত..
রঞ্জিত বাবু বন্ধুর হাত ধরে বললো : তুই... তুই সত্যি আমার মেয়েকে নিজের বাড়ির বৌমা করতে চাস..... মানে আজ যা হলো তারপরও? তোর মতো এমন একজন বিরাট মাপের মানুষ আমার মেয়েকে....
অভির বাবা : এই ব্যাটা.... নেকুমি হচ্ছে? বন্ধুত্বের মাঝে টাকা পয়সা নিয়ে আসছিস? এই বয়সে বন্ধুর কাছে মার খাবি নাকি? ওরে তুই আমার রঞ্জু রে..... সেই রঞ্জু. যার সাথে আমার ছোটবেলাটা কেটেছে. তোর মেয়ে যদি আমার বাড়ির বৌমা হয়ে আসে তবে এর থেকে ভালো আর কি হতে পারে রে?
আর কি হলো আজ? যা হয়েছে ভালোই হয়েছে... অমন একটা characterless ছেলে কি আমাদের রিমির যোগ্য ছিল নাকি? আমার ছেলেকে আমি আমার আদর্শে মানুষ করেছি. আমার ছেলেটা খুব ভালো রে...... বলনা.... আমার ছেলেটাকে তোরা আপন করে নিবি?
রঞ্জিত বাবু অশ্রু চোখে বন্ধুর হাত ধরে বললো : যখন নিজের পরিবারের লোকেদের পাশে পাইনি...তখন তুই সবসময় আমার পাশে ছিলি..... আর সেই মানুষটার ছেলেকে আমরা আপন করে নেবোনা? কি বলছিস তুই?
অভির মা : দীপালি? তোমাদের কোনো আপত্তি নেই তো?
রিমির মা অভিষেকের মায়ের হাত দুটো ধরে বললো : দিদি..... এটাই বোধহয় হবার ছিল...... আপনাদের মতো পরিবার আমাদের চোখের সামনে থাকা সত্ত্বেও..... যাক গে....ছাড়ুন.......যা হবার হয়ে গেছে.... আমার মেয়েটা আপনাদের মতো মানুষকে পাশে পাবে... এর থেকে ভালো আর কিচ্ছু নয়.
অভির মা : সত্যি... কোথা থেকে যে কখন কি হয়ে যায়.... এসেছিলাম তোমার মেয়ের এনগেজমেন্ট এর অনুষ্ঠানে.... আর এখানে এসে পেয়ে গেলাম ছেলের জন্য পাত্রী.
রিমির মা : কিন্তু দিদি..... অভিষেকের মতামত টাও তো আমাদের নেওয়া উচিত তাইনা.... আমরা হুট্ করে এমন একটা ডিসিশন নিয়ে নিলাম... কিন্তু জীবনটা তো ওকে কাটাতে হবে.
অভির বাবা : সেটা তোমরা ভেবোনা.... আমার ছেলে আমার অবাধ্য কোনোদিন হয়নি.... তাছাড়া আমরাও তো ভাবছিলাম ফিরে গিয়েই ওর জন্য পাত্রী দেখা শুরু করবো. এখন আর সেই সব বালাই থাকবেনা. কিন্তু আমি ভাবছিলাম রিমিকে নিয়ে..... এমন একটা ঘটনার পরে ও কি.....
রিমির বাবা : ও নিয়ে তুই ভাবিসনা একদম..... অজান্তে একটা ভুল করতে যাচ্ছিলাম আমরা. কিন্তু এখন তো আর সেই ভয় নেই... তুই আমার কাছে কি সেটা আমার মেয়ে খুব ভালো করে জানে. তোর ঘরে গেলে ও খুশি থাকবে তাতে কোনো সন্দেহ নেই....
অভির বাবা : আহা... তাও....তুই একবার রিমি মায়ের সাথে কোথা বল .
অভির মা বললো : অভি আর রিমির সাথে আমাদের কথা বলা উচিত.... জীবনটা ওদের... ওরাই ডিসিশন নিক.
অভির বাবা : আরে আমার ছেলেকে নিয়ে আমার ভাবনা নেই. রঞ্জু.... তুই একবার রিমি মায়ের সাথে কথা বল. ওর মতামত টা আগে জানা দরকার. ও যদি সময় চায় তাও ঠিকাছে. এসব ব্যাপারে তাড়াহুড়ো করা ঠিক নয়.
রিমির মা : ওদের ডেকে পাঠাই একবার এখানে.
ওপরে তখন ওরা দুজন বারান্দায় দাঁড়িয়ে. একটু আগেই অভি রিমির চোখে মুছিয়ে দিয়েছে. অভি যদিও বাইরে তাকিয়ে কিন্তু পাশে দাঁড়িয়ে থাকা মেয়েটা তখনো ওকে দেখছে.
কে এই ছেলেটা? ও তো একদম অচেনা রিমির কাছে. আজই ভালোভাবে পরিচিত হলো কিন্তু...... রিমি জানেনা কেন এই অজানা ছেলেটাকে কাছের মানুষ মনে হচ্ছে. যে ভাবে আপন বন্ধুর মতো ওর চোখের জল মুছিয়ে দিলো অভিষেক তাতে রিমির ওর প্রতি একটা ভালোলাগা তৈরী হয়েছে. সেই প্রথম যখন ছেলেটাকে হা করে ওর মুখের দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখেছিলো তখন থেকে এই এখন পর্যন্ত ছেলেটার সঙ্গে মিশে যেন রিমি অভির সম্পর্কে সব কিছুই জেনে গেছে.
সেই বোকার মতো সকালে হা করে তাকিয়ে থাকা, বার বার লুকিয়ে রিমিকে দেখা, রিমির ছবির দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকা, সবই লক্ষ করেছে রিমি. এমনকি তখন ভুলবশত অভিকে স্মোকার ভেবে কথাও শুনিয়ে দিয়েছিলো রিমি. কেন? কি দরকার ছিল অভিকে তখন বকার? অভিকে স্মোকার ভেবে এত রাগ হচ্ছিলো কেন রিমির? ও সিগারেট খাক বা না খাক তাতে রিমির কি? এই প্রশ্ন গুলো তখন ওর মাথায় না আসলেও এখন আসছে. কিন্তু উত্তর যে জানা নেই ওর. তাছাড়া ছাদে অভি যে প্রশ্নটা করলো..... তার উত্তরই বা কি? রিমির কাছে কি সত্যি এর জবাব আছে?
এই কি হলো?
অভির কথায় আবার বাস্তবের ফিরে এলো রিমি. অভির দিকে তাকিয়ে থেকে চোখে সরিয়ে নিয়ে বললো : কিছুনা.... এমনি ভাবছিলাম.
অভি : কি? .... কি ভাবছিলে?
রিমি : কিছু প্রশ্নের উত্তর.
অভি : মানে?
রিমি : কিছুনা... ছাড়ো.
চোখের কোণের নতুন জলটুকু মুছে নিলো রিমি.
অভি ওর থেকে মুখ ঘুরিয়ে বাইরে তাকিয়ে বললো : কিছু প্রশ্নের উত্তর অজানা থাকাটাই ভালো. তাতেই জীবনটা বেশি ভালো ভাবে কাটা যায়. আবার কিছু প্রশ্নের উত্তর সেই প্রশ্নেই লুকিয়ে থাকে.... শুধু বুঝে নিতে হয়.
রিমি : হ্যা.... অনেক সময় উত্তর চোখের সামনেই থাকে কিন্তু আমরা দেখতে পাইনা.
অভি : তোমার কথা জানিনা....কিন্তু আমি পেয়েছি. কিন্তু পেয়েও...
রিমি : মানে?
অভি হেসে : কিছুনা..... ছাড়ো. But I hope তুমি এখন....
অভিষেকের কোথা সম্পূর্ণ হলোনা... তার আগেই নিচ থেকে রিমির মা রিমিকে ডাকলো... বাবলি... একবার নীচে আয়তো মা.
রিমি : মা ডাকছে...
অভি : হ্যা যাও...
বাবু...... এই বাবু.... (অভির মায়ের ডাক)
অভি : ওবাবা... এযে আমাকেও আমার মা ডাকছে.... আবার কি হলো?
রিমি আর অভিষেক ঘর থেকে বেরিয়ে নীচে নেমে এলো. সাথে অর্ক আর ঝিলমিলও পেছনে এলো. নীচে বড়োদের সবার মুখে ভাব কেমন যেন সন্দেহ জনক লাগলো অভির. সবাই ওদের দুজনের দিক এমন ভাবে চেয়ে আছে কেন? ওদের পাশাপাশি নামতে দেখে নীচে দাঁড়িয়ে থাকা দুই বন্ধু ও ওদের পিতারা একে ওপরের দিকে তাকিয়ে হালকা হাসলো.
ওরা নীচে নামতেই রিমির মা রিমির কাছে চলে এলো সাথে অভির মাও. দুই মা রিমিকে নিয়ে সোফায় বসলো. রিমির মাথায় অভির মা হাত বুলিয়ে দিতে লাগলো.
অভির বাবা নিজের মেয়েকে বললো : ঝিলমিল... তুই একটু ওপরে যা.... আমার তোর দাদার সাথে কিছু কথা আছে. যা মা.
রঞ্জিত বাবুও অর্ককে ওপরে পাঠিয়ে দিলেন. ওরা দুজন চলে গেলো. অভির সব ব্যাপার কেমন যেন লাগছে. অভির বাবা সিরিয়াস মুখ নিয়ে ছেলের কাছে এগিয়ে আসলেন. ছেলের কাছে এসে তিনি বললেন : বাবু.....আমরা এতক্ষন তোদের ব্যাপারেই আলোচনা করছিলাম.
অভি ভাবলো আমাদের ব্যাপারে? ....মানে? আমরা আবার কারা?
অরিন্দম বাবু ছেলের দিকে তাকিয়ে থেকেই বললেন : দেখো... তুমি বড়ো হয়েছো... এখন আমার সাথে অফিসে জয়েন করেছো. খুব ভালোই কাজ করছো. I am proud of you. এবারে সময় হয়েছে তুমি নিজের জীবনে আরেকটু সিরিয়াস হও.
অভি : বাবা..... . আমি বুঝলাম না... কি বলতে চাইছো তুমি?
অভির বাবার পাশে এবারে রিমির বাবাও এসে দাঁড়ালেন. অভি একটু ঘাবড়ে গেলো. পাশে তাকিয়ে দেখলো ওর মা, রিমির মাও অভির দিকে তাকিয়ে. রিমিও কিছু বুঝছেনা... তাই রিমিও অভির দিকে তাকিয়ে. সবাই ওর দিকে তাকিয়ে. বাবারে ! যে কেউ ঘাবড়ে যাবে.
শোনো অভি...
বাবার ডাকে আবার বাবার দিকে তাকালো অভিষেক.
অরিন্দম বাবু : আমি আর তোমার কাকু ঠিক করেছি আমাদের বন্ধুত্ব আরেকধাপ এগিয়ে নিয়ে যাবো. আজকে যেটা হলো সেটা খুবই unexpected কিন্তু এটা হয়ে একদিকে থেকে ভালোই হয়েছে... নইলে অমন একটা ছেলে রিমি মায়ের....... থাক.. আর ওসব কথা টেনে এনে লাভ নেই. এবারে আমাদের উচিত পুরোনো কে ভুলে আগে কি হবে সেটা নিয়ে ভাবা. রিমি মা আমার বন্ধুর মেয়ে, তোমার বাবার বেস্ট ফ্রেন্ডর মেয়ে. ও তো আমার মেয়ের মতোই. আমি চাই ও আমাদের বাড়িতেই আসুক. সেটা নিয়েই আমি আর রঞ্জু আলোচনা করছিলাম.
অভি : ম.... মানে !? বুঝলাম না বাবা... কি বলছো তুমি?
বাবা রাগী ভাবে : মানে? মানে তোর পৈতে.... কিংবা অন্নপ্রাশন.... আরে গাধা... তোর বিয়ে ব্যাপারে কথা বলছি.... উফফ কিচ্ছু বোঝেনা গাধাটা.
রঞ্জিত বাবু : আহা... ওকে অমন করে বকছিস কেন? অভি..... তোমার বাবা আর আমি সেই ছোট্টবেলার বন্ধু. আমার পাশে যখন আমার পরিবার ছিলোনা তখন আমার এই বন্ধুটা কিন্তু সবসময় ছিল. তাই আমরা ভাবছিলাম আমাদের এই বন্ধুত্বটা আরও একধাপ বাড়াতে....... মানে... তোমার আর আমার মেয়ে.....রিমি......তুমি বুঝতে পারছো নিশ্চই? অবশ্য যদি তোমার আপত্তি না থাকে.... তোমার কোনো আপত্তি থাকলে তুমি বলতে পারো অভি.... কোনো অসুবিধা নেই . তুমি চাইলে সময় নাও.... আমি বুঝি অভি হঠাৎ করে এমন একটা ডিসিশন.....
অভির বাবা নিজের বন্ধুকে থামিয়ে : আরে আমার ছেলেটাকে এত কি বলছিস? ওতো বোঝাতে হবেনা আমার ছেলেকে. আমি তোকে বলছিনা আমি যা বলবো আমার ছেলে তাই করবে.
রিমির বাবা : না .. না.... অরিন্দম.... এটা ওকেই ভাবতে দে. হুট্ করে এমন কিছু সিদ্ধান্ত নেয়া....
অরিন্দম বাবু : আরে তুই থামতো.... যাকে জিজ্ঞেস করার কথা তাকে না করে এই গাধাটাকে নিয়ে পড়ে আছিস.
এই বলে অভির বাবা নিজেই এগিয়ে গেলেন রিমির দিকে. রিমির মাথায় হাত রেখে ওর পাশে বসে বললেন : কিরে মা? আসবি আমার বাড়িতে সারা জীবনের জন্য থাকতে? আসবি তোর এই বাবাটার কাছে? একটা কথা বলতে পারি তোকে মা..... আমার ছেলেটা যতই গাধা হোক..... আমার ছেলেটা কিন্তু খুব ভালো. আমার গর্ব. একদিনের জন্য আমাদের অবাধ্য হয়নি ও. সবসময় যাতে আমরা খুশি থাকি তাই ও চেয়েছে. যতই ছেলেটাকে বকি..... আমি জানি অভি আমাদের কতটা ভালোবাসে. এইটুকু বলতে পারি মা... তুই ঠকবি না.
সেটা বলার প্রয়োজন ছিলোনা.... রিমি এই একদিনেই যেন সেটা বুঝে গেছে.
অভিষেক তো হা...... এ কি শুনছে সে ! বাবা ওর এত তারিফ করছে? বাবারে... এও সম্ভব?
অভির বাবা রিমিকে বললেন : রিমি..... কোনো তাড়াহুড়ো নেই. তুই সময় নে. এখনই কিছু তাড়াহুড়ো করে তো আর হচ্ছেনা. আর তাছাড়া তোর ইচ্ছা না হলে কোনো প্রবলেম নেই. আমাদের সব খুলে বলবি. তোর সিদ্ধান্ত যা হবে তাই আমরা সবাই মানবো.
অভির মা রিমির মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন : মা.. তোর কোনো তাড়া নেই... সময় নে. ভাব. পরে নিজের মতামত জানাস. আর যাই ডিসিশন নিবি আমরা তাই মেনে নেবো. একদম ভাববিনা যে আমরা কিছু মনে করবো.
অভির বাবা : হ্যা মা.....পুরোটা তোর ওপর. তুই না বললেও কোনো অসুবিধা নেই.
রিমির বাবা নিজের মেয়েকে বললেন : বাবলি.... আমরা একটা ভুল করে ফেলেছিলাম রে...... বুঝিনি যার সাথে তোর বিয়ের কথা ভাবছিলাম সে এরকম বেরোবে.... শুধু তারা কতটা প্রতিষ্ঠিত সেটাই দেখেছিলাম... ভেতরের মানুষটাকে চিনতেই পারিনি মা...... কিন্তু এবারে আমি তোকে বুক ঠুকে বলতে পারি..... এই আমার বন্ধুটার বাড়িতে গেলে তুই আমাদের থেকেও বেশি ভালোবাসা পাবি, নিজের মেয়ের মতো রাখবে তোকে আমার এই বন্ধুটা.
অভিষেকের দিকে তাকিয়ে তিনি বললেন : অভি আমি বুঝতে পারছি হটাত করে এসব নিয়ে এগোনো উচিত নয়. তারওপর আমার মেয়েটাকে তুমি আজ এই প্রথম দেখছো কারণ ছোট্টবেলার সেই ঘটনার তোমার মনেও নেই হয়তো. কিন্তু ওর বাবা হয়ে আমি এইটুকু বলতে পারি আমার মেয়েটা খুবই ভালো সেই ব্যাপারে তুমি....
অভি সঙ্গে সঙ্গে রঞ্জিত কাকুকে থামিয়ে বললেন : এমা কাকু এভাবে বলবেন না..... ওর সাথে যতটুকু সময় কাটিয়েছি তাতে বুঝেছি ও খুব ভালো.... খুব ভালো মনের. আমরা এই একদিনেই ভালো বন্ধু হয়ে গেছি.
(এই বলে ও রিমির দিকে তাকালো. রিমি মাথা নিচু করে বসে আছে. ওর দুই পাশে অভিষেকের বাবা মা বসে. অভিষেকের মায়ের হাত রিমি চেপে ধরে আছে. যেন ওরা অভিষেকের নয়, রিমির বাবা মা.)
এরকম একটা মুহূর্তে অভিষেকের উল্লাসে লাফানোর কথা কিন্তু একটা প্রশ্নের উত্তর যে সে পেয়েও পায়নি. সেটার উত্তর যে এখনও বাকি. সেটার উত্তর জানতে চায় অভি. তাছাড়া আরেকটা ব্যাপার আছে....
রঞ্জিত বাবু : তাহলে তোমার কোনো আপত্তি নেই তো বাবা?
অভি রিমির দিকে তাকিয়েই বললো : আমরা কি একটু আলাদা ভাবে কথা বলতে পারি? আসলে ওর মতামতটাও তো..
রঞ্জিত বাবু : হ্যা নিশ্চই বাবা........তোমরা যাও না.. ওপরে গিয়ে কথা বলো. আমি জানি.......হঠাৎ করে জীবনের এত বড়ো সিদ্ধান্ত নেওয়া যায় না... তোমরা একবার তাও কথা বলো.
অভির বাবা : হ্যা যা মা.. কথা বল... আর তুই যাই সিদ্ধান্ত নিস.... আমরা তাই মেনে নেবো... সেই নিয়ে একটুও ভাববিনা.
রিমি উঠে দাঁড়ালো. একবার অভির দিকে তাকিয়ে চোখ নামিয়ে সিঁড়ি দিয়ে ওপরে যেতে লাগলো. পেছনে অভি. আবার অভি রিমি নিজের ঘরের দিকে চলে গেলো. পাশের ঘরেই ওদের ভাই বোন বসে ছিল. ওদের দেখে ওরা ছুট্টে এলো জানতে কি হয়েছে. রিমি অর্ককে বললো ওদের দুজনের কিছু দরকারি কথা আছে. বলে রিমি আর অভি রিমির ঘরে ঢুকে গেলো. দরজাটা ভিজিয়ে দিলো রিমি. এসে বসলো বিছানায়. অভি দাঁড়িয়ে রইলো. দুজনেই চুপ.
অভি তাকিয়ে দেখলো রিমির মুখটা নিচু করে নামানো. খুব সিরিয়াস.
অভি একবার পেছন ফিরে রিমির টেবিলে কি একটা দেখলো. তারপরে আবার তাকালো ওই চুপচাপ থাকা মেয়েটার দিকে.
অভি এবারে বললো : দেখো তুমি তোমার মতামত দিতে পারো. আমি জানি একদিনে কাউকে চেনা সম্ভব নয়. কিন্তু... কি জানো....ওই যে নীচে যে দুটো মানুষ বসে ছিল.... মানে আবার বাবা মা.. ওরা যে কতটা ভালো মানুষ তা আমি বলে বোঝাতে পারবোনা. বলে বোঝানো যায়না. তোমায় একদিনেই কতটা আপন করে নিয়েছে দেখলে তো? বাবা আমায় আদর করে গাধা বলে...আমার ওপর রাগ করলেও আমি জানি আমায় মানুষটা কতটা ভালোবাসে. আর আমার মা.... মায়ের ব্যাপারে আলাদা কি বলবো? আমার বন্ধু সে. বাবা বকলেই বাবাকেই বকে দেয়. আর তুমি যদি আমার ব্যাপারে বলো তাহলে বলি আমি আমার বাবার আদর্শে মানুষ রিমি. আমি অন্তত ওই মানুষগুলোর মতো নই যাদের সাথে তোমার আজ অব্দি পরিচয় হয়েছে.
রিমি তাকালো অভির দিকে.
অভি হেসে বললো : এইরে..... আমি আবার এত বড়ো বড়ো কথা বলছি বলে ভেবোনা নিজেকে ভালো সাজিয়ে তোমার সামনে তুলে ধরছি যাতে তুমি ইমপ্রেস হও. একদমই নয়. তোমার নিজের সিদ্ধান্ত নেয়ার সম্পূর্ণ অধিকার আছে.
রিমি মুচকি হেসে বললো : আমি জানি কাকু কাকিমা কতটা ভাল মানুষ. আমায় যে ভাবে আপন করে নিয়েছেন ওরা. বাবা মায়ের ভালোবাসা নকল হয়না অভি. আমি জানি তোমার বাবা মা কতটা ভালো মনের মানুষ. আর..... তাদের ছেলেটাও.
অভি লজ্জা পেয়ে গেলো একটু. তারপরে বললো : রিমি আমি জানি একদিনের আলাপে এত বড়ো সিদ্ধান্ত নেওয়া যায়না. কিন্তু আমাদের বড়োরা চায়..... মানে...তুমি কি সত্যি এই ব্যাপারটাকে এগিয়ে নিয়ে যেতে.......
রিমি : কিছু ঘটনা, কিছু মুহূর্ত এত কষ্ট দেয় যেগুলোর ব্যাথা চাইলেও ভুলতে পারা যায়না. বার বার মনে পড়ে. আজ যা হলো সেটা আবার আমায় ওই পুরোনো চেনা মানুষটার মুখটা মনে করিয়ে দিলো. আবার মনে পড়ে গেলো চেনা মুখের আড়ালে লুকোনো অচেনা দুশ্চরিত্র মানুষটাকে.
অভি : আমি বুঝছি.... চেনা মানুষই যদি এরকম বেরোতে পারে তাহলে অচেনা মানুষ তো অজানাই. তাকে কিকরে....... কিন্তু একটা কথা বলবো? যদি এইভাবে আমরা বিশ্বাস, hope, এগুলো হারিয়ে ফেলি তাহলে তো বন্ধুত্ব, ভালোবাসা সব একদিন শেষ হয়েছে যাবে. হ্যা আমি জানি যে এই বিশ্বাসের ফায়দা তোলে কেউ কেউ আবার এমনও অচেনা মানুষ আছে যারা জীবনটা শুরু করে অচেনা মানুষের সাথে..... তারপরে সেই মানুষটা নিজের থেকেও আপন হয়ে ওঠে. যেমন আমার বাবা মা. ওদের তো অরেঞ্জ ম্যারেজ. কেউ বলবে? মা বাবাকে আর বাবা মাকে কতটা ভালোবাসে সেটা ছোট্ট থেকে দেখে আসছি. যাক.... এসব বাদ দাও.... দেখো তোমার কোনো প্রেসার নেবার দরকার নেই. তুমি চাইলে না বলে দিতে পারো.
রিমি : আমি.... মানে..... আসলে...
রিমির এরকম বিব্রত অবস্থা দেখে ও সামান্য হেসে বললো : আরে রিলাক্স.... বললাম তো কোনো চাপ নেই..... আচ্ছা একটা কথা বলোতো? এই যে আমাকে এতক্ষন ধরে দেখলে..... কি মনে হয়? কেমন আমি? ক্যাবলা, স্মার্ট, নাকি বাবা আমায় যা বলে সেটাই.. মানে গাধা... হি হি...
অভি পরিবেশ টা হালকা করার জন্যই এটা বলেছিলো. কিন্তু রিমি এটা শুনে ওর দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো -
আমি যদি তোমায় এই প্রশ্নটাই করি? তোমার আমাকে কেমন লাগে অভি? (হটাৎ করেই প্রশ্নটা করলো রিমি)
অভি তাকিয়ে রইলো রিমির দিকে. কিন্তু চুপ করে. কি উত্তর দেবে ভেবে পাচ্ছেনা ও. কি বলবে ছেলেটা? ভালোবাসার প্রথম অনুভূতি তো এই মেয়েটার মুখ দেখেই, সেদিন থেকেই যেদিন প্রথম দেখেছিলো ওই অপূর্ব মুখটা. অভির সামনে ভেসে উঠলো সেদিনের সেই অসাধারণ মুহূর্তটা. সাদা চুড়িদার পড়া ওই মেয়েটা, হাতে সবুজ চুরি.....
কি হলো? উত্তর দাও?
রিমির কথায় আবার বর্তমানে ফিরে এলো অভিষেক.
রিমি তাকিয়ে ওর দিকেই. আবার জিজ্ঞেস করলো রিমি : তুমি কি চাও আমাদের বাবা মায়েরা যেটা চাইছে সেটাই হোক.
রিমি উত্তর জানে. ও যে ছেলেটার চোখ পড়েছে. সেই সকাল থেকেই রিমি বুঝেছে অভি ওকে চায়. কিন্তু রিমি চায় অভিষেক নিজে বলুক নিজের মনের কথা.
অভি তাকিয়ে ওর দিকে. রিমি এগিয়ে এলো অভির কাছে. চোখে চোখ রেখে আবার জিজ্ঞেস করলো রিমি সেই একি প্রশ্ন.
বলো অভি......? আমি আগে তোমার মতামত জানতে চাই. তুমি কি চাও ওরা আমাদের নিয়ে যেটা ভাবছে সেটা নিয়ে আমাদের এগোনো উচিত ? কি হলো বলো? চাও?
অভি এইবার ভুরু কুঁচকে রিমির চোখে চোখ রেখে বললো : না...... আমি চাইনা.
রঞ্জিত বাবু : এটা কি হয়ে গেলো বলোতো রিমির মা?
দীপালি দেবী (দুঃখী মুখে): মেয়েটাকে এতক্ষন কত আমরা বোঝালাম... কিন্তু আমরাতো জানি কি হচ্ছে ওর মনে. ওর তো ইচ্ছে ছিলোনা.... শুধু আমাদের কথা মেনে এই বিয়েতে রাজী হয়েছিলো. কেন যে আমার মেয়েটার সাথেই এমন হলো...... মেয়েটার চোখে জল দেখেছি আমি.
রঞ্জিত বাবু : ও কোথায়?
রিমির মা : ও নিজের ঘরে. ওর ভাই, ঝিলমিল, অভিষেক সবাই আছে ওর সাথে..... ওরা যদি ওকে বোঝাতে পারে....
রঞ্জিত বাবু বন্ধুর হাত ধরে বললো : কি থেকে কি হয়ে গেলো তাইনা? তোদের ডেকে পাঠালাম আমাদের খুশিতে অংশ নিতে...... সেই খুশিটাই আর রইলোনা......
অরিন্দম বাবু বন্ধুর পিঠে চাপড় মেরে উৎসাহের সাথে বললেন : আরে দূর ব্যাটা.... তখন থেকে মুখ গোমড়া করে বকেই চলেছে... আরে আমি বলছিনা কিচ্ছু হয়নি..... cheer up ব্যাটা..... ওই ছেলে গেছে ভালো হয়েছে......
রঞ্জিত বাবু : তা ঠিক...... ঠিকই বলেছিস..... কিন্তু আমার মেয়েটা..... মানে.....এরপরে লোকজনের মুখে কথাবার্তা শুরু হবে আমার মেয়েটাকে নিয়ে..তাদের মুখ কিকরে বন্ধ করবো বলতো..?
অরিন্দম বাবু : নিকুচি করেছে ওসব লোকেদের.... খেয়ে দেয়ে কাজ নেই.. শুধু পর নিন্দা পর চর্চা.... আরে.... আমাদের মেয়ে কি কোনো অংশে কম নাকি? তুই চিন্তা করিসনা....এখন যেটা আগে হলো মেয়েটার পাশে থেকে আমাদের ওকে আনন্দে রাখা. আর যতদূর বিয়ের কথা........ আমি রিমি মায়ের বিয়ের দায়িত্ব নিলাম. ওর বিয়ের জন্য পাত্র আমি দেখবো. তুই আমায় বিশ্বাস করিস তো?
রঞ্জিত বাবু : ছি. ছি..... এ আবার কি কথা....? তুই আমার ছোটবেলার বন্ধু. বিশ্বাস অবিশ্বাসের কথা আবার আসছে কেন? কিন্তু তোর কাছে কি ভালো পাত্রের সন্ধান আছে? তোর পরিচিত বা ফ্যামিলির কেউ বুঝি?
অরিন্দম বাবু হেঁয়ালি করে হেসে বললেন : তুইও পাত্রের পরিবার কে চিনিস....বিশেষত পাত্রের বাবা... তাকে ভালো করেই চিনিস.
রঞ্জিত বাবু চিন্তায় পড়লেন : আমি? আমিও পাত্রের বাবাকে চিনি? কে বলতো? কার কথা বলছিস বলতো?
অরিন্দম বাবু হেসে বললেন : ওরে গাধা আমি রে আমি. আমি আমার কথা বলছিলাম.
রঞ্জিত বাবু আর ওনার স্ত্রী অবাক. রঞ্জিত বাবু বন্ধুর দিকে হা করে তাকিয়ে বললেন : তুই? মানে তুই অভিষেকের সাথে আমার মেয়ের...
অরিন্দম বাবু হেসে : হ্যা রে ব্যাটা..... আমার ছেলের সাথে. (তারপরে নিজের স্ত্রীয়ের দিকে তাকিয়ে বললেন ): কিগো? কি বলো? ছেলের জন্য এর থেকে ভালো পাত্রী পাবে তুমি?
অভির মা হেসে বললো : একদম না.... তোমার সাথে আমি পুরো একমত..
রঞ্জিত বাবু বন্ধুর হাত ধরে বললো : তুই... তুই সত্যি আমার মেয়েকে নিজের বাড়ির বৌমা করতে চাস..... মানে আজ যা হলো তারপরও? তোর মতো এমন একজন বিরাট মাপের মানুষ আমার মেয়েকে....
অভির বাবা : এই ব্যাটা.... নেকুমি হচ্ছে? বন্ধুত্বের মাঝে টাকা পয়সা নিয়ে আসছিস? এই বয়সে বন্ধুর কাছে মার খাবি নাকি? ওরে তুই আমার রঞ্জু রে..... সেই রঞ্জু. যার সাথে আমার ছোটবেলাটা কেটেছে. তোর মেয়ে যদি আমার বাড়ির বৌমা হয়ে আসে তবে এর থেকে ভালো আর কি হতে পারে রে?
আর কি হলো আজ? যা হয়েছে ভালোই হয়েছে... অমন একটা characterless ছেলে কি আমাদের রিমির যোগ্য ছিল নাকি? আমার ছেলেকে আমি আমার আদর্শে মানুষ করেছি. আমার ছেলেটা খুব ভালো রে...... বলনা.... আমার ছেলেটাকে তোরা আপন করে নিবি?
রঞ্জিত বাবু অশ্রু চোখে বন্ধুর হাত ধরে বললো : যখন নিজের পরিবারের লোকেদের পাশে পাইনি...তখন তুই সবসময় আমার পাশে ছিলি..... আর সেই মানুষটার ছেলেকে আমরা আপন করে নেবোনা? কি বলছিস তুই?
অভির মা : দীপালি? তোমাদের কোনো আপত্তি নেই তো?
রিমির মা অভিষেকের মায়ের হাত দুটো ধরে বললো : দিদি..... এটাই বোধহয় হবার ছিল...... আপনাদের মতো পরিবার আমাদের চোখের সামনে থাকা সত্ত্বেও..... যাক গে....ছাড়ুন.......যা হবার হয়ে গেছে.... আমার মেয়েটা আপনাদের মতো মানুষকে পাশে পাবে... এর থেকে ভালো আর কিচ্ছু নয়.
অভির মা : সত্যি... কোথা থেকে যে কখন কি হয়ে যায়.... এসেছিলাম তোমার মেয়ের এনগেজমেন্ট এর অনুষ্ঠানে.... আর এখানে এসে পেয়ে গেলাম ছেলের জন্য পাত্রী.
রিমির মা : কিন্তু দিদি..... অভিষেকের মতামত টাও তো আমাদের নেওয়া উচিত তাইনা.... আমরা হুট্ করে এমন একটা ডিসিশন নিয়ে নিলাম... কিন্তু জীবনটা তো ওকে কাটাতে হবে.
অভির বাবা : সেটা তোমরা ভেবোনা.... আমার ছেলে আমার অবাধ্য কোনোদিন হয়নি.... তাছাড়া আমরাও তো ভাবছিলাম ফিরে গিয়েই ওর জন্য পাত্রী দেখা শুরু করবো. এখন আর সেই সব বালাই থাকবেনা. কিন্তু আমি ভাবছিলাম রিমিকে নিয়ে..... এমন একটা ঘটনার পরে ও কি.....
রিমির বাবা : ও নিয়ে তুই ভাবিসনা একদম..... অজান্তে একটা ভুল করতে যাচ্ছিলাম আমরা. কিন্তু এখন তো আর সেই ভয় নেই... তুই আমার কাছে কি সেটা আমার মেয়ে খুব ভালো করে জানে. তোর ঘরে গেলে ও খুশি থাকবে তাতে কোনো সন্দেহ নেই....
অভির বাবা : আহা... তাও....তুই একবার রিমি মায়ের সাথে কোথা বল .
অভির মা বললো : অভি আর রিমির সাথে আমাদের কথা বলা উচিত.... জীবনটা ওদের... ওরাই ডিসিশন নিক.
অভির বাবা : আরে আমার ছেলেকে নিয়ে আমার ভাবনা নেই. রঞ্জু.... তুই একবার রিমি মায়ের সাথে কথা বল. ওর মতামত টা আগে জানা দরকার. ও যদি সময় চায় তাও ঠিকাছে. এসব ব্যাপারে তাড়াহুড়ো করা ঠিক নয়.
রিমির মা : ওদের ডেকে পাঠাই একবার এখানে.
ওপরে তখন ওরা দুজন বারান্দায় দাঁড়িয়ে. একটু আগেই অভি রিমির চোখে মুছিয়ে দিয়েছে. অভি যদিও বাইরে তাকিয়ে কিন্তু পাশে দাঁড়িয়ে থাকা মেয়েটা তখনো ওকে দেখছে.
কে এই ছেলেটা? ও তো একদম অচেনা রিমির কাছে. আজই ভালোভাবে পরিচিত হলো কিন্তু...... রিমি জানেনা কেন এই অজানা ছেলেটাকে কাছের মানুষ মনে হচ্ছে. যে ভাবে আপন বন্ধুর মতো ওর চোখের জল মুছিয়ে দিলো অভিষেক তাতে রিমির ওর প্রতি একটা ভালোলাগা তৈরী হয়েছে. সেই প্রথম যখন ছেলেটাকে হা করে ওর মুখের দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখেছিলো তখন থেকে এই এখন পর্যন্ত ছেলেটার সঙ্গে মিশে যেন রিমি অভির সম্পর্কে সব কিছুই জেনে গেছে.
সেই বোকার মতো সকালে হা করে তাকিয়ে থাকা, বার বার লুকিয়ে রিমিকে দেখা, রিমির ছবির দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকা, সবই লক্ষ করেছে রিমি. এমনকি তখন ভুলবশত অভিকে স্মোকার ভেবে কথাও শুনিয়ে দিয়েছিলো রিমি. কেন? কি দরকার ছিল অভিকে তখন বকার? অভিকে স্মোকার ভেবে এত রাগ হচ্ছিলো কেন রিমির? ও সিগারেট খাক বা না খাক তাতে রিমির কি? এই প্রশ্ন গুলো তখন ওর মাথায় না আসলেও এখন আসছে. কিন্তু উত্তর যে জানা নেই ওর. তাছাড়া ছাদে অভি যে প্রশ্নটা করলো..... তার উত্তরই বা কি? রিমির কাছে কি সত্যি এর জবাব আছে?
এই কি হলো?
অভির কথায় আবার বাস্তবের ফিরে এলো রিমি. অভির দিকে তাকিয়ে থেকে চোখে সরিয়ে নিয়ে বললো : কিছুনা.... এমনি ভাবছিলাম.
অভি : কি? .... কি ভাবছিলে?
রিমি : কিছু প্রশ্নের উত্তর.
অভি : মানে?
রিমি : কিছুনা... ছাড়ো.
চোখের কোণের নতুন জলটুকু মুছে নিলো রিমি.
অভি ওর থেকে মুখ ঘুরিয়ে বাইরে তাকিয়ে বললো : কিছু প্রশ্নের উত্তর অজানা থাকাটাই ভালো. তাতেই জীবনটা বেশি ভালো ভাবে কাটা যায়. আবার কিছু প্রশ্নের উত্তর সেই প্রশ্নেই লুকিয়ে থাকে.... শুধু বুঝে নিতে হয়.
রিমি : হ্যা.... অনেক সময় উত্তর চোখের সামনেই থাকে কিন্তু আমরা দেখতে পাইনা.
অভি : তোমার কথা জানিনা....কিন্তু আমি পেয়েছি. কিন্তু পেয়েও...
রিমি : মানে?
অভি হেসে : কিছুনা..... ছাড়ো. But I hope তুমি এখন....
অভিষেকের কোথা সম্পূর্ণ হলোনা... তার আগেই নিচ থেকে রিমির মা রিমিকে ডাকলো... বাবলি... একবার নীচে আয়তো মা.
রিমি : মা ডাকছে...
অভি : হ্যা যাও...
বাবু...... এই বাবু.... (অভির মায়ের ডাক)
অভি : ওবাবা... এযে আমাকেও আমার মা ডাকছে.... আবার কি হলো?
রিমি আর অভিষেক ঘর থেকে বেরিয়ে নীচে নেমে এলো. সাথে অর্ক আর ঝিলমিলও পেছনে এলো. নীচে বড়োদের সবার মুখে ভাব কেমন যেন সন্দেহ জনক লাগলো অভির. সবাই ওদের দুজনের দিক এমন ভাবে চেয়ে আছে কেন? ওদের পাশাপাশি নামতে দেখে নীচে দাঁড়িয়ে থাকা দুই বন্ধু ও ওদের পিতারা একে ওপরের দিকে তাকিয়ে হালকা হাসলো.
ওরা নীচে নামতেই রিমির মা রিমির কাছে চলে এলো সাথে অভির মাও. দুই মা রিমিকে নিয়ে সোফায় বসলো. রিমির মাথায় অভির মা হাত বুলিয়ে দিতে লাগলো.
অভির বাবা নিজের মেয়েকে বললো : ঝিলমিল... তুই একটু ওপরে যা.... আমার তোর দাদার সাথে কিছু কথা আছে. যা মা.
রঞ্জিত বাবুও অর্ককে ওপরে পাঠিয়ে দিলেন. ওরা দুজন চলে গেলো. অভির সব ব্যাপার কেমন যেন লাগছে. অভির বাবা সিরিয়াস মুখ নিয়ে ছেলের কাছে এগিয়ে আসলেন. ছেলের কাছে এসে তিনি বললেন : বাবু.....আমরা এতক্ষন তোদের ব্যাপারেই আলোচনা করছিলাম.
অভি ভাবলো আমাদের ব্যাপারে? ....মানে? আমরা আবার কারা?
অরিন্দম বাবু ছেলের দিকে তাকিয়ে থেকেই বললেন : দেখো... তুমি বড়ো হয়েছো... এখন আমার সাথে অফিসে জয়েন করেছো. খুব ভালোই কাজ করছো. I am proud of you. এবারে সময় হয়েছে তুমি নিজের জীবনে আরেকটু সিরিয়াস হও.
অভি : বাবা..... . আমি বুঝলাম না... কি বলতে চাইছো তুমি?
অভির বাবার পাশে এবারে রিমির বাবাও এসে দাঁড়ালেন. অভি একটু ঘাবড়ে গেলো. পাশে তাকিয়ে দেখলো ওর মা, রিমির মাও অভির দিকে তাকিয়ে. রিমিও কিছু বুঝছেনা... তাই রিমিও অভির দিকে তাকিয়ে. সবাই ওর দিকে তাকিয়ে. বাবারে ! যে কেউ ঘাবড়ে যাবে.
শোনো অভি...
বাবার ডাকে আবার বাবার দিকে তাকালো অভিষেক.
অরিন্দম বাবু : আমি আর তোমার কাকু ঠিক করেছি আমাদের বন্ধুত্ব আরেকধাপ এগিয়ে নিয়ে যাবো. আজকে যেটা হলো সেটা খুবই unexpected কিন্তু এটা হয়ে একদিকে থেকে ভালোই হয়েছে... নইলে অমন একটা ছেলে রিমি মায়ের....... থাক.. আর ওসব কথা টেনে এনে লাভ নেই. এবারে আমাদের উচিত পুরোনো কে ভুলে আগে কি হবে সেটা নিয়ে ভাবা. রিমি মা আমার বন্ধুর মেয়ে, তোমার বাবার বেস্ট ফ্রেন্ডর মেয়ে. ও তো আমার মেয়ের মতোই. আমি চাই ও আমাদের বাড়িতেই আসুক. সেটা নিয়েই আমি আর রঞ্জু আলোচনা করছিলাম.
অভি : ম.... মানে !? বুঝলাম না বাবা... কি বলছো তুমি?
বাবা রাগী ভাবে : মানে? মানে তোর পৈতে.... কিংবা অন্নপ্রাশন.... আরে গাধা... তোর বিয়ে ব্যাপারে কথা বলছি.... উফফ কিচ্ছু বোঝেনা গাধাটা.
রঞ্জিত বাবু : আহা... ওকে অমন করে বকছিস কেন? অভি..... তোমার বাবা আর আমি সেই ছোট্টবেলার বন্ধু. আমার পাশে যখন আমার পরিবার ছিলোনা তখন আমার এই বন্ধুটা কিন্তু সবসময় ছিল. তাই আমরা ভাবছিলাম আমাদের এই বন্ধুত্বটা আরও একধাপ বাড়াতে....... মানে... তোমার আর আমার মেয়ে.....রিমি......তুমি বুঝতে পারছো নিশ্চই? অবশ্য যদি তোমার আপত্তি না থাকে.... তোমার কোনো আপত্তি থাকলে তুমি বলতে পারো অভি.... কোনো অসুবিধা নেই . তুমি চাইলে সময় নাও.... আমি বুঝি অভি হঠাৎ করে এমন একটা ডিসিশন.....
অভির বাবা নিজের বন্ধুকে থামিয়ে : আরে আমার ছেলেটাকে এত কি বলছিস? ওতো বোঝাতে হবেনা আমার ছেলেকে. আমি তোকে বলছিনা আমি যা বলবো আমার ছেলে তাই করবে.
রিমির বাবা : না .. না.... অরিন্দম.... এটা ওকেই ভাবতে দে. হুট্ করে এমন কিছু সিদ্ধান্ত নেয়া....
অরিন্দম বাবু : আরে তুই থামতো.... যাকে জিজ্ঞেস করার কথা তাকে না করে এই গাধাটাকে নিয়ে পড়ে আছিস.
এই বলে অভির বাবা নিজেই এগিয়ে গেলেন রিমির দিকে. রিমির মাথায় হাত রেখে ওর পাশে বসে বললেন : কিরে মা? আসবি আমার বাড়িতে সারা জীবনের জন্য থাকতে? আসবি তোর এই বাবাটার কাছে? একটা কথা বলতে পারি তোকে মা..... আমার ছেলেটা যতই গাধা হোক..... আমার ছেলেটা কিন্তু খুব ভালো. আমার গর্ব. একদিনের জন্য আমাদের অবাধ্য হয়নি ও. সবসময় যাতে আমরা খুশি থাকি তাই ও চেয়েছে. যতই ছেলেটাকে বকি..... আমি জানি অভি আমাদের কতটা ভালোবাসে. এইটুকু বলতে পারি মা... তুই ঠকবি না.
সেটা বলার প্রয়োজন ছিলোনা.... রিমি এই একদিনেই যেন সেটা বুঝে গেছে.
অভিষেক তো হা...... এ কি শুনছে সে ! বাবা ওর এত তারিফ করছে? বাবারে... এও সম্ভব?
অভির বাবা রিমিকে বললেন : রিমি..... কোনো তাড়াহুড়ো নেই. তুই সময় নে. এখনই কিছু তাড়াহুড়ো করে তো আর হচ্ছেনা. আর তাছাড়া তোর ইচ্ছা না হলে কোনো প্রবলেম নেই. আমাদের সব খুলে বলবি. তোর সিদ্ধান্ত যা হবে তাই আমরা সবাই মানবো.
অভির মা রিমির মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন : মা.. তোর কোনো তাড়া নেই... সময় নে. ভাব. পরে নিজের মতামত জানাস. আর যাই ডিসিশন নিবি আমরা তাই মেনে নেবো. একদম ভাববিনা যে আমরা কিছু মনে করবো.
অভির বাবা : হ্যা মা.....পুরোটা তোর ওপর. তুই না বললেও কোনো অসুবিধা নেই.
রিমির বাবা নিজের মেয়েকে বললেন : বাবলি.... আমরা একটা ভুল করে ফেলেছিলাম রে...... বুঝিনি যার সাথে তোর বিয়ের কথা ভাবছিলাম সে এরকম বেরোবে.... শুধু তারা কতটা প্রতিষ্ঠিত সেটাই দেখেছিলাম... ভেতরের মানুষটাকে চিনতেই পারিনি মা...... কিন্তু এবারে আমি তোকে বুক ঠুকে বলতে পারি..... এই আমার বন্ধুটার বাড়িতে গেলে তুই আমাদের থেকেও বেশি ভালোবাসা পাবি, নিজের মেয়ের মতো রাখবে তোকে আমার এই বন্ধুটা.
অভিষেকের দিকে তাকিয়ে তিনি বললেন : অভি আমি বুঝতে পারছি হটাত করে এসব নিয়ে এগোনো উচিত নয়. তারওপর আমার মেয়েটাকে তুমি আজ এই প্রথম দেখছো কারণ ছোট্টবেলার সেই ঘটনার তোমার মনেও নেই হয়তো. কিন্তু ওর বাবা হয়ে আমি এইটুকু বলতে পারি আমার মেয়েটা খুবই ভালো সেই ব্যাপারে তুমি....
অভি সঙ্গে সঙ্গে রঞ্জিত কাকুকে থামিয়ে বললেন : এমা কাকু এভাবে বলবেন না..... ওর সাথে যতটুকু সময় কাটিয়েছি তাতে বুঝেছি ও খুব ভালো.... খুব ভালো মনের. আমরা এই একদিনেই ভালো বন্ধু হয়ে গেছি.
(এই বলে ও রিমির দিকে তাকালো. রিমি মাথা নিচু করে বসে আছে. ওর দুই পাশে অভিষেকের বাবা মা বসে. অভিষেকের মায়ের হাত রিমি চেপে ধরে আছে. যেন ওরা অভিষেকের নয়, রিমির বাবা মা.)
এরকম একটা মুহূর্তে অভিষেকের উল্লাসে লাফানোর কথা কিন্তু একটা প্রশ্নের উত্তর যে সে পেয়েও পায়নি. সেটার উত্তর যে এখনও বাকি. সেটার উত্তর জানতে চায় অভি. তাছাড়া আরেকটা ব্যাপার আছে....
রঞ্জিত বাবু : তাহলে তোমার কোনো আপত্তি নেই তো বাবা?
অভি রিমির দিকে তাকিয়েই বললো : আমরা কি একটু আলাদা ভাবে কথা বলতে পারি? আসলে ওর মতামতটাও তো..
রঞ্জিত বাবু : হ্যা নিশ্চই বাবা........তোমরা যাও না.. ওপরে গিয়ে কথা বলো. আমি জানি.......হঠাৎ করে জীবনের এত বড়ো সিদ্ধান্ত নেওয়া যায় না... তোমরা একবার তাও কথা বলো.
অভির বাবা : হ্যা যা মা.. কথা বল... আর তুই যাই সিদ্ধান্ত নিস.... আমরা তাই মেনে নেবো... সেই নিয়ে একটুও ভাববিনা.
রিমি উঠে দাঁড়ালো. একবার অভির দিকে তাকিয়ে চোখ নামিয়ে সিঁড়ি দিয়ে ওপরে যেতে লাগলো. পেছনে অভি. আবার অভি রিমি নিজের ঘরের দিকে চলে গেলো. পাশের ঘরেই ওদের ভাই বোন বসে ছিল. ওদের দেখে ওরা ছুট্টে এলো জানতে কি হয়েছে. রিমি অর্ককে বললো ওদের দুজনের কিছু দরকারি কথা আছে. বলে রিমি আর অভি রিমির ঘরে ঢুকে গেলো. দরজাটা ভিজিয়ে দিলো রিমি. এসে বসলো বিছানায়. অভি দাঁড়িয়ে রইলো. দুজনেই চুপ.
অভি তাকিয়ে দেখলো রিমির মুখটা নিচু করে নামানো. খুব সিরিয়াস.
অভি একবার পেছন ফিরে রিমির টেবিলে কি একটা দেখলো. তারপরে আবার তাকালো ওই চুপচাপ থাকা মেয়েটার দিকে.
অভি এবারে বললো : দেখো তুমি তোমার মতামত দিতে পারো. আমি জানি একদিনে কাউকে চেনা সম্ভব নয়. কিন্তু... কি জানো....ওই যে নীচে যে দুটো মানুষ বসে ছিল.... মানে আবার বাবা মা.. ওরা যে কতটা ভালো মানুষ তা আমি বলে বোঝাতে পারবোনা. বলে বোঝানো যায়না. তোমায় একদিনেই কতটা আপন করে নিয়েছে দেখলে তো? বাবা আমায় আদর করে গাধা বলে...আমার ওপর রাগ করলেও আমি জানি আমায় মানুষটা কতটা ভালোবাসে. আর আমার মা.... মায়ের ব্যাপারে আলাদা কি বলবো? আমার বন্ধু সে. বাবা বকলেই বাবাকেই বকে দেয়. আর তুমি যদি আমার ব্যাপারে বলো তাহলে বলি আমি আমার বাবার আদর্শে মানুষ রিমি. আমি অন্তত ওই মানুষগুলোর মতো নই যাদের সাথে তোমার আজ অব্দি পরিচয় হয়েছে.
রিমি তাকালো অভির দিকে.
অভি হেসে বললো : এইরে..... আমি আবার এত বড়ো বড়ো কথা বলছি বলে ভেবোনা নিজেকে ভালো সাজিয়ে তোমার সামনে তুলে ধরছি যাতে তুমি ইমপ্রেস হও. একদমই নয়. তোমার নিজের সিদ্ধান্ত নেয়ার সম্পূর্ণ অধিকার আছে.
রিমি মুচকি হেসে বললো : আমি জানি কাকু কাকিমা কতটা ভাল মানুষ. আমায় যে ভাবে আপন করে নিয়েছেন ওরা. বাবা মায়ের ভালোবাসা নকল হয়না অভি. আমি জানি তোমার বাবা মা কতটা ভালো মনের মানুষ. আর..... তাদের ছেলেটাও.
অভি লজ্জা পেয়ে গেলো একটু. তারপরে বললো : রিমি আমি জানি একদিনের আলাপে এত বড়ো সিদ্ধান্ত নেওয়া যায়না. কিন্তু আমাদের বড়োরা চায়..... মানে...তুমি কি সত্যি এই ব্যাপারটাকে এগিয়ে নিয়ে যেতে.......
রিমি : কিছু ঘটনা, কিছু মুহূর্ত এত কষ্ট দেয় যেগুলোর ব্যাথা চাইলেও ভুলতে পারা যায়না. বার বার মনে পড়ে. আজ যা হলো সেটা আবার আমায় ওই পুরোনো চেনা মানুষটার মুখটা মনে করিয়ে দিলো. আবার মনে পড়ে গেলো চেনা মুখের আড়ালে লুকোনো অচেনা দুশ্চরিত্র মানুষটাকে.
অভি : আমি বুঝছি.... চেনা মানুষই যদি এরকম বেরোতে পারে তাহলে অচেনা মানুষ তো অজানাই. তাকে কিকরে....... কিন্তু একটা কথা বলবো? যদি এইভাবে আমরা বিশ্বাস, hope, এগুলো হারিয়ে ফেলি তাহলে তো বন্ধুত্ব, ভালোবাসা সব একদিন শেষ হয়েছে যাবে. হ্যা আমি জানি যে এই বিশ্বাসের ফায়দা তোলে কেউ কেউ আবার এমনও অচেনা মানুষ আছে যারা জীবনটা শুরু করে অচেনা মানুষের সাথে..... তারপরে সেই মানুষটা নিজের থেকেও আপন হয়ে ওঠে. যেমন আমার বাবা মা. ওদের তো অরেঞ্জ ম্যারেজ. কেউ বলবে? মা বাবাকে আর বাবা মাকে কতটা ভালোবাসে সেটা ছোট্ট থেকে দেখে আসছি. যাক.... এসব বাদ দাও.... দেখো তোমার কোনো প্রেসার নেবার দরকার নেই. তুমি চাইলে না বলে দিতে পারো.
রিমি : আমি.... মানে..... আসলে...
রিমির এরকম বিব্রত অবস্থা দেখে ও সামান্য হেসে বললো : আরে রিলাক্স.... বললাম তো কোনো চাপ নেই..... আচ্ছা একটা কথা বলোতো? এই যে আমাকে এতক্ষন ধরে দেখলে..... কি মনে হয়? কেমন আমি? ক্যাবলা, স্মার্ট, নাকি বাবা আমায় যা বলে সেটাই.. মানে গাধা... হি হি...
অভি পরিবেশ টা হালকা করার জন্যই এটা বলেছিলো. কিন্তু রিমি এটা শুনে ওর দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো -
আমি যদি তোমায় এই প্রশ্নটাই করি? তোমার আমাকে কেমন লাগে অভি? (হটাৎ করেই প্রশ্নটা করলো রিমি)
অভি তাকিয়ে রইলো রিমির দিকে. কিন্তু চুপ করে. কি উত্তর দেবে ভেবে পাচ্ছেনা ও. কি বলবে ছেলেটা? ভালোবাসার প্রথম অনুভূতি তো এই মেয়েটার মুখ দেখেই, সেদিন থেকেই যেদিন প্রথম দেখেছিলো ওই অপূর্ব মুখটা. অভির সামনে ভেসে উঠলো সেদিনের সেই অসাধারণ মুহূর্তটা. সাদা চুড়িদার পড়া ওই মেয়েটা, হাতে সবুজ চুরি.....
কি হলো? উত্তর দাও?
রিমির কথায় আবার বর্তমানে ফিরে এলো অভিষেক.
রিমি তাকিয়ে ওর দিকেই. আবার জিজ্ঞেস করলো রিমি : তুমি কি চাও আমাদের বাবা মায়েরা যেটা চাইছে সেটাই হোক.
রিমি উত্তর জানে. ও যে ছেলেটার চোখ পড়েছে. সেই সকাল থেকেই রিমি বুঝেছে অভি ওকে চায়. কিন্তু রিমি চায় অভিষেক নিজে বলুক নিজের মনের কথা.
অভি তাকিয়ে ওর দিকে. রিমি এগিয়ে এলো অভির কাছে. চোখে চোখ রেখে আবার জিজ্ঞেস করলো রিমি সেই একি প্রশ্ন.
বলো অভি......? আমি আগে তোমার মতামত জানতে চাই. তুমি কি চাও ওরা আমাদের নিয়ে যেটা ভাবছে সেটা নিয়ে আমাদের এগোনো উচিত ? কি হলো বলো? চাও?
অভি এইবার ভুরু কুঁচকে রিমির চোখে চোখ রেখে বললো : না...... আমি চাইনা.
চলবে..........