28-07-2020, 08:36 PM
(This post was last modified: 16-09-2020, 11:00 PM by kumdev. Edited 2 times in total. Edited 2 times in total.)
[৩৮]
পরীক্ষার কটা দিন যেন ঝড় বয়ে গেল।ঘুম ভাঙ্গতে হাতড়ে দেখল পাশে আমু নেই। নীলের পরীক্ষা ভালই হয়েছে তবু শঙ্কা আমুকে কথা দিয়েছে ফার্স্ট ক্লাস।যদি না হয় মুখ দেখাতে পারবে না।
জানকি চা নিয়ে এসে ডাকলেন,খোকন ওঠো চা নিয়ে এসেছি।
নীল মটকা মেরে পড়ে থাকে।জানকি বলেন,কি হল খোকন গরম চা ঢেলে দেব?
নীল তড়াক করে উঠে বসে বলল,তুমি আমাকে খোকন বলবে না।
জানকি অবাক হয় কি হল আবার?
--শোনো আমু যখন ছোটো ছিলাম তখন আলাদা।খোকন বললে কেমন খোকা-খোকা লাগে।আমি তোমার হাজব্যাণ্ড এটা তো তুমি মানবে?
জানকির মজা লাগে বললেন,আমি কি অস্বীকার করেছি?
--না না সিরিয়াসলি বলছি।ধরো আমাদের সন্তান হল--।
--ধরাধরির কি আছে নিজে বয়ে বেড়াচ্ছি না?
--আমাকে খোকন-খোকন বললে সেকি ভাববে তুমি বলো?দাও চা দাও।
হায় ভগবান কাকে নিয়ে পড়লাম এত অনেক দূর ভেবে বসে আছে।জানকি বললেন,ঠাণ্ডা হয়ে গেছে গরম করে আনছি।
মহাদেব পাল নমিনেশন জমা দিয়েছেন। কদিন পর আমু যাবেন বক্তৃতা দিতে নয় সরেজমিনে দেখতে। মহাদেব পাল সহ কয়েক জায়গায় দাঁড়িয়েছে বিদ্রোহী প্রার্থী। মহাদেব পালের বিরুদ্ধে নন্দ পয়ালের মত একজন সমাজ বিরোধী দাঁড়ায় কোন সাহসে?
কমরেড জেপি ভাল ভাবে নেননি ব্যাপারটা। কলকাতার ত্যাগরাজ হলে সেমিনার হয়ে গেলে জেপি চলে যাবেন। অন্য রাজ্য হতেও নেতৃবৃন্দ আসছেন,প্রধান বক্তা কমরেড জেপি। মাতৃত্বের লক্ষ্যণ জেপির শরীরে স্পষ্ট,এই অবস্থায় মেদিনীপুরে যাওয়া ঠিক হবেনা নীল অনেক বুঝিয়েছে। কিন্তু জানকীর এককথা,আমি মা,আমি বুঝি আমার দায়িত্ব। জানকী এমনভাবে কথা বলেন যেন নীল একটা শিশু।
নীল চুপি চুপি গেছিল ত্যাগরাজ হলে,বসেছিল পিছনের দিকে। জেপি-নিলের সম্পর্ক যারা জানে তারা ছিলেন সামনের দিকে। মঞ্চে ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী সহ প্রথম সারির নেতৃবৃন্দ। খুব গম্ভীর চিন্তামগ্ন সাদা ধুতি পাঞ্জাবিতে বেশ লাগছিল মুখ্যমন্ত্রীকে। নাম ঘোষণা হতে মঞ্চে প্রবেশ করলেন কমরেড জেপি। পরনে কটকি শাড়ি ছোট করে ছাটা চুল।মুখে মৃদু হাসি। শাড়িটা এমন ভাবে পরেছে বোঝার উপায় নেই উদরের স্ফীতি।হাতে একতাড়া কাগজ। সবাইকে সম্বোধন করে শুরু করলেন বিনীত ভঙ্গিতে। দেশের পরিস্থিতি বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের অবস্থান ব্যাখ্যা করলেন। দর্শক আসনে পাথর চাপা নীরবতা। অনেকে মাথা নেড়ে সম্মতি প্রকাশ করছেন। তারপর একমুহূর্ত থামলেন।
চারদিকে চোখ বুলিয়ে আবার শুরু করলেন, “এবার আসি রাজ্যের কথায়..” মুখ্যমন্ত্রী একবার চোখ তুলে দেখলেন।…..” আমি অনুরোধ করবো বিশেষ করে যারা পুরানো দিনের….যেবার আমরা ক্ষমতায় এলাম সেই সময়ের দিকে ফিরে দেখুন… .প্রতিক্রিয়াশীল আক্রমণে দেওয়ালে আমাদের পিঠ ঠেকে গেছে…আর পিছবার উপায় নেই….সমাজ বিরোধী পেশি শক্তি সবাই আমাদের বিরুদ্ধে আমাদের শক্তি কেবল গণশক্তি। তাও বিক্ষিপ্ত কিছু সংঘর্ষের পর আমরা পেলাম অগণিত মানুষের আশীর্বাদ…রাজ্যে বাম সরকার প্রতিষ্ঠীত হল। প্রতিক্রিয়াশীল শক্তি সমাজবিরোধী শক্তি ভয় পেয়ে দিশাহারা। সমাজ বিরোধীরা নিরাপদ আশ্রয়ের সন্ধানে ফিরছে।” এক চুমুক জল খেয়ে আবার শুরু করলেন “বিভিন্ন বামপন্থি শিবিরে ভীড় করতে লাগল আশ্রয়ের আশায়…..অনেকে জায়গা করে নিল আমাদের পার্টিতে।” গলার স্বর বদলে …” আমরা গণশক্তির উপর ভরসা হারিয়ে তাদের উপর নির্ভরশিল হয়ে পড়লাম।”……”সামন্ত যুগের কথা ভাবুন..।রাজ্য সরকারের সমান্তরাল অঞ্চলে অঞ্চলে একেকজন সামন্ত রাজার অধীন গড়ে উঠল সামন্তঅঞ্চল,জমিদারদের লেঠেল বাহিনীর মত রাজার অধীনে গুণ্ডা সমাজ বিরোধী। মাঝে মাঝে আমন্ত্রিত বাইজীর জলসা ঘরে সঙ্গীতানুষ্ঠান …..আহা! কি সংস্কৃতিবান! অশিক্ষিত রাজার আচরণে প্রতিনিয়ত লাঞ্ছিত আহত হচ্ছে মানবতা….।”সবাইকে মনে হচ্ছে একটু বিরক্ত।ফিস ফাঁস আলোচনা শুরু হয়ে গেল। জানকী বলেন “যা বলছি বিভিন্ন অঞ্চলে ঘুরে যে অভিজ্ঞতা হয়েছে তার বিবরণ…..আমরা ক্রমশ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ছি। পার্টি সংখ্যাগত ভাবে আয়তনে বাড়লেও গুণগত মান সে তুলনায় বাড়েনি। পার্টি হয়ে উঠছে ক্ষমতার উৎস উপার্জন ক্ষেত্র….।এখনো সময় আছে শুধরে নেবার…..না হলে সিদ্ধান্ত নেবে জনগণ।” মুখ্যমন্ত্রী ঘাড় ঘুরিয়ে তাচ্ছিল্যের দৃষ্টি মেলে দেখলেন।নিলের কানে এল কে যেন অনুচ্চ কণ্ঠে বলল এটা উড়িষ্যা নয় কমরেড পশ্চিম বঙ্গ। অন্ধকারে বেরিয়ে গেল নীল হল ছেড়ে। জানকী বাসায় ফিরে দেখলেন খোকন বিছানায় উপুড় হয়ে শুয়ে
আছে। কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে দেখে গোছগাছ শুরু করেন।
ঘণ্টা খানেক বাদে ট্রেন। হাতে সময় নেই কমরেড জেপির যাবার কথা অঞ্চলে পৌঁছে গেছে। সরাসরি শ্বশুর বাড়িতেই উঠবেন।
–তোমাকে যেতেই হবে?নীলের গলা পেয়ে জানকী উঠে নীলকে চুমু খেয়ে বলেন, আমার দায়িত্ব।
–তুমি এইসব পার্টি-ফার্টি ছেড়ে দাও–।
–খাবো কি? তুমি চাকরি করো তখন ভাববো। কটা দিন লক্ষি হয়ে থেকো।
–আমি তোমার সঙ্গে যাবো।
–ছেলে মানুষী করেনা।কদিন পরে রেজাল্ট বের হবে তুমি বলেছিলে মনে আছে আমাকে উপহার দেবে?
–আর তুমি কি দেবে?
–আমি? জানকী কি যেন ভাবেন তারপর বলেন, আমি কি দেবো তাতো ভাষায় বোঝানো যাবেনা সোনা। কিছুক্ষণ খোকনকে জড়িয়ে ধরে চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকেন। নীলকে দেখে জানকীর চোখ চক চক করছে,জিজ্ঞেস করে, তুমি কাঁদছ?
জানকী চোখ মুছে হেসে বলেন,কাদবো কেন? কিসের দুঃখ আমার?
মহাদেব পাল নিজে গাড়ি নিয়ে স্টেশনে অপেক্ষা করছিলেন। জানকী গাড়িতে উঠতে মহাদেব পাল সামনে গোবিন্দের পাশে বসেন। খোকনের ঘরে জানকীর থাকার ব্যবস্থা হয়েছে। জানকী চেঞ্জ করে নিলেন।যমুনা চা নিয়ে ঢুকলেন।
আড়চোখে তাকালেন জানকীর পেটের দিকে। মৃদু হাসি ফুটে উঠল ওষ্ঠে। জিজ্ঞেস করলেন,খোকন এলোনা?
–ওর রেজাল্ট বেরোবার সময় হয়ে গেছে,বেরোলেই চলে আসবে।জানকি বলেন।
–কতদিন খোকনকে দেখিনি,অনামিকার পর আমিই তো ওকে মানুষ করেছি।
–অনামিকা?
–খোকনের মা।কত বয়স সবে বোল ফুটেছে ঐটুকু বাচ্চা রেখে মুখ পুড়িয়ে চলে গেল।
–চলে গেলেন? কোথায় চলে গেলেন?
–ওমা তুমি জানবে কি করে? আচ্ছা তুমি বল একসঙ্গে থাকলে স্বামী-স্ত্রী বিবাদ হয়না? যাক তুমি চা খাও, আমি রান্না সেরে আসছি। যমুনা চলে গেলেন।
জানকীর মনে হল ভদ্রমহিলা কিছু একটা চেপে গেলেন। খোকনের মা মারা গেছেন তিনি জানতেন।চা খেতে খেতে
আজকের সেমিনারের কথা মনে পড়ল। তার বক্তৃতা নেতাদের পছন্দ হয়নি সেটা অনুভব করেছেন। নিজেকে বুঝতে হলে নিজেকে নিজের থেকে বিচ্ছিন্ন করতে হবে। পৃথিবীর আকার বুঝতে বাইরে দেখলে তার গোলাকার আয়তন বোঝা যায়।
সকালে টিফিন করে জেলা অফিসে গেলেন। কমরেড জেপি ঢুকতে কমরেড তমাল সেন হাসি থামিয়ে উঠে দাঁড়ালেন।
–কমরেড সেনের সঙ্গে একটু কথা আছে।কমরেড জেপির কথায় অন্যরা চলে গেল।
তমাল সেনের কপালে ভাজ।তার সঙ্গে কি কথা। জেপি সাধারণত টাউন অফিসে বসেন,জেলা অফিসে আসেন না।
–কি বুঝছেন কমরেড পরিস্থিতি?
তমাল সেন হেসে বলেন,বোর্ড এবারো আমাদের হাতে থাকবে।
–যারা নির্দেশ অমান্য করে দাঁড়িয়েছে তাদের প্রত্যাহার করতে বলুন।
–নন্দ ফন্দ এরা ত পার্টি সদস্য নয়,আমার কথা শুনবে কেন? সখ হয়েছে জামানত জব্দ হবে।
–আপনি তো পার্টি সদস্য।
তমাল সেন হতচকিত কি বলতে চান কমরেড জেপি?
–শুনুন কমরেড দীর্ঘ দিনের সংগ্রামে একটা কেরিয়ার গড়ে ওঠে।সেটা এভাবে নষ্ট করবেন না। আমি তথ্য প্রমাণ না নিয়ে কথা বলছি না। একটা রেপিষ্ট তার এত সাহস হয় কি করে?কারা পিছনে আছে বের করুন।
ইঙ্গিতটা তমাল সেনের বুঝতে অসুবিধে হয়না। কেউ নিশ্চয়ই চুকলি করেছে। তমাল সেন বলেন, বিশ্বাস করুন কমরেড সবাই কিন্তু–।
–আমি জানি। আপনার কথা যারা শুনবে তাদের গুলো দেখুন।বাকিগুলো আমি দেখছি। আজকের কথা খুব সিক্রেট দেখবেন যেন মুখে মুখে না ফেরে?
–আমি আপনাকে কথা দিলাম,দু-দিনের মধ্যে ব্যবস্থা করছি।
–চা খাওয়াবেন তো? ওদের ডাকুন।আর হ্যাঁ হৃষিকেশবাবুকে নির্বাচনের কাজ থেকে দূরে রাখুন।
কমরেড তমাল সেনের মুখ লাল।কমরেড জেপি এলাকায় থাকেন না অথচ সমগ্র ব্যাপার তার নখ দর্পনে।ঋষিকে সন্দেহ হয়েছিল।উনি ঋষিকেই দূরে রাখতে বললেন।
জানকির মনে একটা আশঙ্কা পার্টি যদি এভাবে চলতে থাকে তাহলে একদিন মানুষ জবাব দেবে।
পরীক্ষার কটা দিন যেন ঝড় বয়ে গেল।ঘুম ভাঙ্গতে হাতড়ে দেখল পাশে আমু নেই। নীলের পরীক্ষা ভালই হয়েছে তবু শঙ্কা আমুকে কথা দিয়েছে ফার্স্ট ক্লাস।যদি না হয় মুখ দেখাতে পারবে না।
জানকি চা নিয়ে এসে ডাকলেন,খোকন ওঠো চা নিয়ে এসেছি।
নীল মটকা মেরে পড়ে থাকে।জানকি বলেন,কি হল খোকন গরম চা ঢেলে দেব?
নীল তড়াক করে উঠে বসে বলল,তুমি আমাকে খোকন বলবে না।
জানকি অবাক হয় কি হল আবার?
--শোনো আমু যখন ছোটো ছিলাম তখন আলাদা।খোকন বললে কেমন খোকা-খোকা লাগে।আমি তোমার হাজব্যাণ্ড এটা তো তুমি মানবে?
জানকির মজা লাগে বললেন,আমি কি অস্বীকার করেছি?
--না না সিরিয়াসলি বলছি।ধরো আমাদের সন্তান হল--।
--ধরাধরির কি আছে নিজে বয়ে বেড়াচ্ছি না?
--আমাকে খোকন-খোকন বললে সেকি ভাববে তুমি বলো?দাও চা দাও।
হায় ভগবান কাকে নিয়ে পড়লাম এত অনেক দূর ভেবে বসে আছে।জানকি বললেন,ঠাণ্ডা হয়ে গেছে গরম করে আনছি।
মহাদেব পাল নমিনেশন জমা দিয়েছেন। কদিন পর আমু যাবেন বক্তৃতা দিতে নয় সরেজমিনে দেখতে। মহাদেব পাল সহ কয়েক জায়গায় দাঁড়িয়েছে বিদ্রোহী প্রার্থী। মহাদেব পালের বিরুদ্ধে নন্দ পয়ালের মত একজন সমাজ বিরোধী দাঁড়ায় কোন সাহসে?
কমরেড জেপি ভাল ভাবে নেননি ব্যাপারটা। কলকাতার ত্যাগরাজ হলে সেমিনার হয়ে গেলে জেপি চলে যাবেন। অন্য রাজ্য হতেও নেতৃবৃন্দ আসছেন,প্রধান বক্তা কমরেড জেপি। মাতৃত্বের লক্ষ্যণ জেপির শরীরে স্পষ্ট,এই অবস্থায় মেদিনীপুরে যাওয়া ঠিক হবেনা নীল অনেক বুঝিয়েছে। কিন্তু জানকীর এককথা,আমি মা,আমি বুঝি আমার দায়িত্ব। জানকী এমনভাবে কথা বলেন যেন নীল একটা শিশু।
নীল চুপি চুপি গেছিল ত্যাগরাজ হলে,বসেছিল পিছনের দিকে। জেপি-নিলের সম্পর্ক যারা জানে তারা ছিলেন সামনের দিকে। মঞ্চে ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী সহ প্রথম সারির নেতৃবৃন্দ। খুব গম্ভীর চিন্তামগ্ন সাদা ধুতি পাঞ্জাবিতে বেশ লাগছিল মুখ্যমন্ত্রীকে। নাম ঘোষণা হতে মঞ্চে প্রবেশ করলেন কমরেড জেপি। পরনে কটকি শাড়ি ছোট করে ছাটা চুল।মুখে মৃদু হাসি। শাড়িটা এমন ভাবে পরেছে বোঝার উপায় নেই উদরের স্ফীতি।হাতে একতাড়া কাগজ। সবাইকে সম্বোধন করে শুরু করলেন বিনীত ভঙ্গিতে। দেশের পরিস্থিতি বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের অবস্থান ব্যাখ্যা করলেন। দর্শক আসনে পাথর চাপা নীরবতা। অনেকে মাথা নেড়ে সম্মতি প্রকাশ করছেন। তারপর একমুহূর্ত থামলেন।
চারদিকে চোখ বুলিয়ে আবার শুরু করলেন, “এবার আসি রাজ্যের কথায়..” মুখ্যমন্ত্রী একবার চোখ তুলে দেখলেন।…..” আমি অনুরোধ করবো বিশেষ করে যারা পুরানো দিনের….যেবার আমরা ক্ষমতায় এলাম সেই সময়ের দিকে ফিরে দেখুন… .প্রতিক্রিয়াশীল আক্রমণে দেওয়ালে আমাদের পিঠ ঠেকে গেছে…আর পিছবার উপায় নেই….সমাজ বিরোধী পেশি শক্তি সবাই আমাদের বিরুদ্ধে আমাদের শক্তি কেবল গণশক্তি। তাও বিক্ষিপ্ত কিছু সংঘর্ষের পর আমরা পেলাম অগণিত মানুষের আশীর্বাদ…রাজ্যে বাম সরকার প্রতিষ্ঠীত হল। প্রতিক্রিয়াশীল শক্তি সমাজবিরোধী শক্তি ভয় পেয়ে দিশাহারা। সমাজ বিরোধীরা নিরাপদ আশ্রয়ের সন্ধানে ফিরছে।” এক চুমুক জল খেয়ে আবার শুরু করলেন “বিভিন্ন বামপন্থি শিবিরে ভীড় করতে লাগল আশ্রয়ের আশায়…..অনেকে জায়গা করে নিল আমাদের পার্টিতে।” গলার স্বর বদলে …” আমরা গণশক্তির উপর ভরসা হারিয়ে তাদের উপর নির্ভরশিল হয়ে পড়লাম।”……”সামন্ত যুগের কথা ভাবুন..।রাজ্য সরকারের সমান্তরাল অঞ্চলে অঞ্চলে একেকজন সামন্ত রাজার অধীন গড়ে উঠল সামন্তঅঞ্চল,জমিদারদের লেঠেল বাহিনীর মত রাজার অধীনে গুণ্ডা সমাজ বিরোধী। মাঝে মাঝে আমন্ত্রিত বাইজীর জলসা ঘরে সঙ্গীতানুষ্ঠান …..আহা! কি সংস্কৃতিবান! অশিক্ষিত রাজার আচরণে প্রতিনিয়ত লাঞ্ছিত আহত হচ্ছে মানবতা….।”সবাইকে মনে হচ্ছে একটু বিরক্ত।ফিস ফাঁস আলোচনা শুরু হয়ে গেল। জানকী বলেন “যা বলছি বিভিন্ন অঞ্চলে ঘুরে যে অভিজ্ঞতা হয়েছে তার বিবরণ…..আমরা ক্রমশ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ছি। পার্টি সংখ্যাগত ভাবে আয়তনে বাড়লেও গুণগত মান সে তুলনায় বাড়েনি। পার্টি হয়ে উঠছে ক্ষমতার উৎস উপার্জন ক্ষেত্র….।এখনো সময় আছে শুধরে নেবার…..না হলে সিদ্ধান্ত নেবে জনগণ।” মুখ্যমন্ত্রী ঘাড় ঘুরিয়ে তাচ্ছিল্যের দৃষ্টি মেলে দেখলেন।নিলের কানে এল কে যেন অনুচ্চ কণ্ঠে বলল এটা উড়িষ্যা নয় কমরেড পশ্চিম বঙ্গ। অন্ধকারে বেরিয়ে গেল নীল হল ছেড়ে। জানকী বাসায় ফিরে দেখলেন খোকন বিছানায় উপুড় হয়ে শুয়ে
আছে। কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে দেখে গোছগাছ শুরু করেন।
ঘণ্টা খানেক বাদে ট্রেন। হাতে সময় নেই কমরেড জেপির যাবার কথা অঞ্চলে পৌঁছে গেছে। সরাসরি শ্বশুর বাড়িতেই উঠবেন।
–তোমাকে যেতেই হবে?নীলের গলা পেয়ে জানকী উঠে নীলকে চুমু খেয়ে বলেন, আমার দায়িত্ব।
–তুমি এইসব পার্টি-ফার্টি ছেড়ে দাও–।
–খাবো কি? তুমি চাকরি করো তখন ভাববো। কটা দিন লক্ষি হয়ে থেকো।
–আমি তোমার সঙ্গে যাবো।
–ছেলে মানুষী করেনা।কদিন পরে রেজাল্ট বের হবে তুমি বলেছিলে মনে আছে আমাকে উপহার দেবে?
–আর তুমি কি দেবে?
–আমি? জানকী কি যেন ভাবেন তারপর বলেন, আমি কি দেবো তাতো ভাষায় বোঝানো যাবেনা সোনা। কিছুক্ষণ খোকনকে জড়িয়ে ধরে চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকেন। নীলকে দেখে জানকীর চোখ চক চক করছে,জিজ্ঞেস করে, তুমি কাঁদছ?
জানকী চোখ মুছে হেসে বলেন,কাদবো কেন? কিসের দুঃখ আমার?
মহাদেব পাল নিজে গাড়ি নিয়ে স্টেশনে অপেক্ষা করছিলেন। জানকী গাড়িতে উঠতে মহাদেব পাল সামনে গোবিন্দের পাশে বসেন। খোকনের ঘরে জানকীর থাকার ব্যবস্থা হয়েছে। জানকী চেঞ্জ করে নিলেন।যমুনা চা নিয়ে ঢুকলেন।
আড়চোখে তাকালেন জানকীর পেটের দিকে। মৃদু হাসি ফুটে উঠল ওষ্ঠে। জিজ্ঞেস করলেন,খোকন এলোনা?
–ওর রেজাল্ট বেরোবার সময় হয়ে গেছে,বেরোলেই চলে আসবে।জানকি বলেন।
–কতদিন খোকনকে দেখিনি,অনামিকার পর আমিই তো ওকে মানুষ করেছি।
–অনামিকা?
–খোকনের মা।কত বয়স সবে বোল ফুটেছে ঐটুকু বাচ্চা রেখে মুখ পুড়িয়ে চলে গেল।
–চলে গেলেন? কোথায় চলে গেলেন?
–ওমা তুমি জানবে কি করে? আচ্ছা তুমি বল একসঙ্গে থাকলে স্বামী-স্ত্রী বিবাদ হয়না? যাক তুমি চা খাও, আমি রান্না সেরে আসছি। যমুনা চলে গেলেন।
জানকীর মনে হল ভদ্রমহিলা কিছু একটা চেপে গেলেন। খোকনের মা মারা গেছেন তিনি জানতেন।চা খেতে খেতে
আজকের সেমিনারের কথা মনে পড়ল। তার বক্তৃতা নেতাদের পছন্দ হয়নি সেটা অনুভব করেছেন। নিজেকে বুঝতে হলে নিজেকে নিজের থেকে বিচ্ছিন্ন করতে হবে। পৃথিবীর আকার বুঝতে বাইরে দেখলে তার গোলাকার আয়তন বোঝা যায়।
সকালে টিফিন করে জেলা অফিসে গেলেন। কমরেড জেপি ঢুকতে কমরেড তমাল সেন হাসি থামিয়ে উঠে দাঁড়ালেন।
–কমরেড সেনের সঙ্গে একটু কথা আছে।কমরেড জেপির কথায় অন্যরা চলে গেল।
তমাল সেনের কপালে ভাজ।তার সঙ্গে কি কথা। জেপি সাধারণত টাউন অফিসে বসেন,জেলা অফিসে আসেন না।
–কি বুঝছেন কমরেড পরিস্থিতি?
তমাল সেন হেসে বলেন,বোর্ড এবারো আমাদের হাতে থাকবে।
–যারা নির্দেশ অমান্য করে দাঁড়িয়েছে তাদের প্রত্যাহার করতে বলুন।
–নন্দ ফন্দ এরা ত পার্টি সদস্য নয়,আমার কথা শুনবে কেন? সখ হয়েছে জামানত জব্দ হবে।
–আপনি তো পার্টি সদস্য।
তমাল সেন হতচকিত কি বলতে চান কমরেড জেপি?
–শুনুন কমরেড দীর্ঘ দিনের সংগ্রামে একটা কেরিয়ার গড়ে ওঠে।সেটা এভাবে নষ্ট করবেন না। আমি তথ্য প্রমাণ না নিয়ে কথা বলছি না। একটা রেপিষ্ট তার এত সাহস হয় কি করে?কারা পিছনে আছে বের করুন।
ইঙ্গিতটা তমাল সেনের বুঝতে অসুবিধে হয়না। কেউ নিশ্চয়ই চুকলি করেছে। তমাল সেন বলেন, বিশ্বাস করুন কমরেড সবাই কিন্তু–।
–আমি জানি। আপনার কথা যারা শুনবে তাদের গুলো দেখুন।বাকিগুলো আমি দেখছি। আজকের কথা খুব সিক্রেট দেখবেন যেন মুখে মুখে না ফেরে?
–আমি আপনাকে কথা দিলাম,দু-দিনের মধ্যে ব্যবস্থা করছি।
–চা খাওয়াবেন তো? ওদের ডাকুন।আর হ্যাঁ হৃষিকেশবাবুকে নির্বাচনের কাজ থেকে দূরে রাখুন।
কমরেড তমাল সেনের মুখ লাল।কমরেড জেপি এলাকায় থাকেন না অথচ সমগ্র ব্যাপার তার নখ দর্পনে।ঋষিকে সন্দেহ হয়েছিল।উনি ঋষিকেই দূরে রাখতে বললেন।
জানকির মনে একটা আশঙ্কা পার্টি যদি এভাবে চলতে থাকে তাহলে একদিন মানুষ জবাব দেবে।