26-07-2020, 06:04 AM
কবির যখন বাড়ি থেকে বের হয় তখন চারটা বাজে। একটি জলপাই রংয়ের টিশার্ট আর
নীল জিন্স পরেছে, চুল আঁচড়াতেও ভুলে যায়নি সে। বাড়ি থেকে বের হয়ে সরু
রাস্তাটি হয়ে বাইপাস রোডে ওঠে কবির। সেখানে সাধারনত সবসময় রিক্সা দাড়িয়ে
থাকে, কিন্তু আজ একটাও নেই। কিছুক্ষন দাড়িয়ে থাকার পরও যখন কোন রিক্সা না
পেলনা তখন কবির হেঁটেই রওনা দেয়। স্নিগ্ধাদের বাড়িতে পৌঁছাতে আরো
আধাঘন্টা লেগে গেল। তবে বাড়ি খুঁজে পেতে সমস্যা হলনা। নিকুঞ্জ নীড়ের
দোতলায় উঠে কলিং বেল টিপতেই একজন মহিলা দরজা খোলে। স্নিগ্ধার মাকে
চিনতে সমস্যা হয়না কবিরের।
কবিরকে দেখে শিরীন প্রশ্নবোধক দৃষ্টিতে জিজ্ঞাস করে "তুমি কে? কাকে
চাও?"
"একদম বলবি না। তুমিই বল ও কে?" স্নিগ্ধা মায়ের পাশে এসে দাড়িয়ে বলে।
শিরিন নিচ থেকে উপর কবিরকে পর্যবেক্ষণ করলেন। চোখ দুটো দেখেই
মুখে হাসি ফুটে উঠল তার।
"কবির!"
"এই তো চিনতে পেরেছ। বলেছিলাম না, তোমাকে একটা সারপ্রাইজ দিব। ওই
সেই সারপ্রাইজ।"
"বাইরে দাড়িয়ে কেন, ভেতরে এস বাবা! কতো বড় হয়ে গেছ, চিনতেই পারিনি।
শেষবার যখন দেখেছি তখন এতোটুকু ছিলে!"
কবির ভেতরে ঢুকতেই স্নিগ্ধা ওর হাত ধরে টেনে একটি ঘরে নিয়ে আসে।
সেটাকে ঘর না বলে পুতুলের শোরুম বলেও চালিয়ে দেয়া যায়। ঘরের এক
কোনে বেশ বড় শোকেস, যার ভেতরে স্তরে স্তরে সাজানো পুতুল।
শোকেসের উপরে একগাদা টেডিবেয়ার। অন্যপাশে টেবিলটার এক কোনায় কিছু
বই পত্র, বাকিটা জুড়ে পুতুল সাজানো। বিছানার উপরেও একটা মস্ত বড় টেডিবেয়ার।
কবির বিছানায় বসে পুরো রুমটা একবার ঘুরে দেখে।
"এটা তোর বেডরুম?"
"হ্যাঁ।"
"আমি তো ভেবেছিলাম পুতুলের দোকান। তুই কি এখনো পুতুল নিয়ে খেলিস?"
"নাহ। আসলে পুতুল কালেক্ট করা আমার শখ। আমার কাছে বার্বিডলের সব কয়টা
ভার্সন আছে, সব রংয়ের টেডিবেয়ার আছে।"
হঠাত স্নিগ্ধা শোকেস থেকে কিছু একটা বের করে কবিরের সামনে ধরে
জিজ্ঞাসা করে "এটা চিনতে পারছিস?"
কবির দেখল স্নিগ্ধার হাতে একটি খেলনা রোবট। কবির সাথে সাথে চিনে ফেলে,
এটি তার ছেলেবেলার সবচেয়ে প্রিয় খেলনা, অপ্টিমাস প্রাইম।
"এটা তোর কাছে কিভাবে? চুরি করেছিলি? তাই তো বলি ঢাকা থেকে আসার দিন
আমার অপটিমাস প্রাইমকে খুঁজে পাইনা কেন?"
"চুরি বলছিস কেন? তোর স্মৃতি হিসাবে রেখে দিয়েছিলাম।"
"আমি সরি। আমি আসলে মজা করছিলাম।" গম্ভীর মুখে বলে কবির।
"আমি জানি।" মিষ্টি করে হেসে বলে স্নিগ্ধা।
"তুই একটু বস, আমি এক্ষুনি আসছি।" বলে স্নিগ্ধা রুম থেকে বেরিয়ে যায়।
কিছুক্ষন পর যখন ফিরে আসে তখন তার হাতে একটি এলবাম। এলবামটা খুলে কবিরকে
দেখাতে লাগল, কবির ও স্নিগ্ধার পুরনো দিনের অনেকগুলো ছবি সেখানে।
কিছুক্ষন পর শিরিন স্নিগ্ধা ও কবিরকে ডেকে নিয়ে যায়। ডাইনিং টেবিলে নাস্তা
দিয়েছেন তিনি। কবির ভদ্রতামুলক মৃদু আপত্তি জানিয়ে বসে যায়। নাস্তা শেষে স্নিগ্ধা
কবিরকে ছাদে নিয়ে যায়। ছাদের ঠিক মাঝখানে একটি বড়সড় দোলনা, দুইজন
অনায়াসে বসতে পারে সেটাতে।
স্নিগ্ধা দোলনাটা দেখিয়ে বলে "এই দোলনাটার জন্যই আমি এই বাড়িটা পছন্দ
করেছিলাম।"
স্নিগ্ধা দোলনাটার একপাশে বসে কবিরকে বসতে বলে। কবির এসে পাশে বসে।
তখন সন্ধা ঘনিয়ে এসেছে দিগন্তের কাছে মেঘগুলো লাল ও গোলাপী বর্ন
ধারন করেছে। পাশের আমবাগান থেকে ঘরে ফেরা পাখিদের কিচির মিচির শব্দ
আসছিল। হঠাৎ স্নিগ্ধার মোবাইলটা বেজে ওঠে। স্নিগ্ধা দোলনা থেকে উঠে
ছাদের এক কোনায় গিয়ে কল রিসিভ করে কথা বলে। কবির তীক্ষ দৃষ্টিতে স্নিগ্ধার
দিকে তাকিয়ে থাকে। কিছুক্ষন পর স্নিগ্ধা ফিরে আসে।
"কার সাথে কথা বললি? তোর বয়ফ্রেন্ড?"
"তুই কিভাবে বুঝলি?" স্নিগ্ধা চমকে উঠে বলে।
"আন্দাজে বললাম", কবির মুচকি হেসে বলে।
"তোর কাছে লুকাবো না। ওর নাম সজল। এইবার ইন্টারমিডিয়েট দিয়েছে।"
স্নিগ্ধা এক মুহুর্ত থেমে যোগ করে "ওর সাথে আমার রিলেশন দুই মাস হল।"
স্নিগ্ধা তার মোবাইল ঘেঁটে একটি ছবি বের করে কবিরকে দেখায়।
ছবিতে স্নিগ্ধার পাশে একটি লম্বা চওড়া ফর্সা ছেলে দাড়িয়ে আছে।
কবিরের মনে হল বুকে যেন কিছু একটা বিঁধে গেল, কিন্তু মুখে হাসি টেনে
বলে "বাহ ভালই তো।"
স্নিগ্ধা এবার জিজ্ঞাসা করে "তোর খবর বল। প্রেম টেম করিস?"
"নাহ! ওসবের ভেতর আমি নেই।"
"সেটাই ভাল। কোন ঝামেলা নেই।"
"তাহলে তুই ঝামেলার মধ্যে গেলি কেন?"
"আমি কি আর ইচ্ছা করে ঝামেলায় গেছি?"
স্নিগ্ধা গানের সুরে বলে "আমি তো প্রেমে পড়িনি, প্রেম আমার উপরে
পড়েছে।"
"রাত হয়ে গেছে, আমাকে যেতে হবে।" কবির বলে।
"তুই কি ভেবেছিস আম্মু তোকে ডিনার না করিয়ে যেতে দিবে?"
"অন্য দিন খেয়ে যাব, আজ যাই।"
"আমি কিছু জানিনা, আম্মুকে বলে যা।"
কবির সিঁড়ি দিয়ে নেমে দোতলায় নেমে আসতেই স্নিগ্ধার বাবার সাথে দেখা
হয়ে যায়। জামান সাহেব ড্রয়িং রুমে বসে টিভিতে খবর দেখছিলেন। কবির সালাম
দিয়ে বলে-
"আংকেল কেমন আছেন?"
"এই তো, ভাল আছি। তুমি কেমন আছ? আর তোমার বাবা মা কেমন আছেন?" জামান
সাহেব হাসি মুখে জিজ্ঞাসা করেন।
"ভাল" কবির একটি শব্দে উত্তর দেয়।
তখন কবিরকে দেখে শিরিন ড্রয়িংরুমে এসেছেন।
"আন্টি, আমি এখন আসি।"
"সেকি? ডিনার করে যাও?"
"অন্য একদিন খেয়ে যাব, আজ আসি।"
"আচ্ছা বাবা, সাবধানে যেও আর মাঝে মাঝেই এসো কিন্তু।"
পরের দিন বেশ সকাল সকাল ঘুম ভেঙে যায় কবিরের। সে উঠে বসে বিছানাতে।
সামনের দেয়ালে টাঙানো দেয়াল ঘড়িতে ছয়টা ত্রিশ বাজে। কবির কিছুতেই
বুঝতে পারেনা এতো ভোরে তার ঘুম কেন ভেঙে গেল। গতরাতেও কবির রাত
একটা পর্যন্ত জেগে ছিল, সে হিসাবে সকাল আটটার আগে ওঠার কথা নয়। তবে
সকালে ঘুম একবার ভেঙে গেলে আর ঘুমাতে পারেনা কবির। তাই দাঁতব্রাশ করে
হাতমুখ ধুয়ে নিয়ে হাঁটতে বের হল। বহুদিন পর সে সকাল বেলা হাঁটতে বের
হয়েছে। কবির অবাক হয়ে আবিষ্কার করল যে এলাকায় অনেক পরিবর্তন হয়েছে
যা সে জানেনা। যে মাঠে কবির আগে ক্রিকেট খেলত সেখানে একটি নির্মানাধীন
বিল্ডিং, পাশের পাড়ার দিকে যাওয়া ইঁটপাতা রাস্তাটি পাকা রাস্তায় পরিনত হয়েছে, এলাকা
জুড়ে এখানে সেখানে অনেকগুলো নতুন মুদিদোকান ও চায়ের দোকান
হয়েছে। সেরকম একটি চায়ের দোকানে বসে একটা টোস্ট ও এককাপ চা
খেয়ে কবির বাড়ির দিকে রওনা দিল।
বাড়িতে পৌঁছে দেখে ঘরের দরজা খোলা। তাতে অবাক হলনা কবির, সুলতানা খালার
কাছেও ঘরের চাবি আছে।
সুলতানা তখন ঘর ঝাড় দিচ্ছিল, কবিরকে দেখে মুখে হাসি টেনে বলে "কবির বাবু এত
সকাল সকাল কই গেছিলা?'
"বাইরে থেকে একটু ঘুরে এলাম।"
"আইজকা কি খাইবেন? ফ্রিজে মুরগির মাংস আছে। রান্দি?"
কবির হ্যাঁ বোধক ভাবে মাথা নেড়ে নিজের রুমের দিকে যায়। তার খাওয়া দাওয়ার
ব্যাপারে তেমন আগ্রহ নেই, বাজার আর রান্না দুটোই সুলতানা করে।
কবির তার রুমে যেয়ে কলেজড্রেস পরে ব্যাগ কাঁধে নিয়ে বেরিয়ে যায়ে।
সরু রাস্তাটি পেরিয়ে বাইপাসে উঠতেই দেখে স্নিগ্ধা একটি রিক্সার সিটে বসে
আছে, কবিরকে দেখে হাত নেড়ে ডাকে "কবির তাড়াতাড়ি আয়।"
কবির রিক্সায় উঠতে উঠতে জিজ্ঞাসা করে "কতোক্ষন হল অপেক্ষা করছিস?"
"প্রায় পনের মিনিট। এতো দেরি হল কেন?"
"তোকে কে দেরী করতে বলেছে?"
"কি কথা ছিল? কলেজে একসাথে যাব।"
নীল জিন্স পরেছে, চুল আঁচড়াতেও ভুলে যায়নি সে। বাড়ি থেকে বের হয়ে সরু
রাস্তাটি হয়ে বাইপাস রোডে ওঠে কবির। সেখানে সাধারনত সবসময় রিক্সা দাড়িয়ে
থাকে, কিন্তু আজ একটাও নেই। কিছুক্ষন দাড়িয়ে থাকার পরও যখন কোন রিক্সা না
পেলনা তখন কবির হেঁটেই রওনা দেয়। স্নিগ্ধাদের বাড়িতে পৌঁছাতে আরো
আধাঘন্টা লেগে গেল। তবে বাড়ি খুঁজে পেতে সমস্যা হলনা। নিকুঞ্জ নীড়ের
দোতলায় উঠে কলিং বেল টিপতেই একজন মহিলা দরজা খোলে। স্নিগ্ধার মাকে
চিনতে সমস্যা হয়না কবিরের।
কবিরকে দেখে শিরীন প্রশ্নবোধক দৃষ্টিতে জিজ্ঞাস করে "তুমি কে? কাকে
চাও?"
"একদম বলবি না। তুমিই বল ও কে?" স্নিগ্ধা মায়ের পাশে এসে দাড়িয়ে বলে।
শিরিন নিচ থেকে উপর কবিরকে পর্যবেক্ষণ করলেন। চোখ দুটো দেখেই
মুখে হাসি ফুটে উঠল তার।
"কবির!"
"এই তো চিনতে পেরেছ। বলেছিলাম না, তোমাকে একটা সারপ্রাইজ দিব। ওই
সেই সারপ্রাইজ।"
"বাইরে দাড়িয়ে কেন, ভেতরে এস বাবা! কতো বড় হয়ে গেছ, চিনতেই পারিনি।
শেষবার যখন দেখেছি তখন এতোটুকু ছিলে!"
কবির ভেতরে ঢুকতেই স্নিগ্ধা ওর হাত ধরে টেনে একটি ঘরে নিয়ে আসে।
সেটাকে ঘর না বলে পুতুলের শোরুম বলেও চালিয়ে দেয়া যায়। ঘরের এক
কোনে বেশ বড় শোকেস, যার ভেতরে স্তরে স্তরে সাজানো পুতুল।
শোকেসের উপরে একগাদা টেডিবেয়ার। অন্যপাশে টেবিলটার এক কোনায় কিছু
বই পত্র, বাকিটা জুড়ে পুতুল সাজানো। বিছানার উপরেও একটা মস্ত বড় টেডিবেয়ার।
কবির বিছানায় বসে পুরো রুমটা একবার ঘুরে দেখে।
"এটা তোর বেডরুম?"
"হ্যাঁ।"
"আমি তো ভেবেছিলাম পুতুলের দোকান। তুই কি এখনো পুতুল নিয়ে খেলিস?"
"নাহ। আসলে পুতুল কালেক্ট করা আমার শখ। আমার কাছে বার্বিডলের সব কয়টা
ভার্সন আছে, সব রংয়ের টেডিবেয়ার আছে।"
হঠাত স্নিগ্ধা শোকেস থেকে কিছু একটা বের করে কবিরের সামনে ধরে
জিজ্ঞাসা করে "এটা চিনতে পারছিস?"
কবির দেখল স্নিগ্ধার হাতে একটি খেলনা রোবট। কবির সাথে সাথে চিনে ফেলে,
এটি তার ছেলেবেলার সবচেয়ে প্রিয় খেলনা, অপ্টিমাস প্রাইম।
"এটা তোর কাছে কিভাবে? চুরি করেছিলি? তাই তো বলি ঢাকা থেকে আসার দিন
আমার অপটিমাস প্রাইমকে খুঁজে পাইনা কেন?"
"চুরি বলছিস কেন? তোর স্মৃতি হিসাবে রেখে দিয়েছিলাম।"
"আমি সরি। আমি আসলে মজা করছিলাম।" গম্ভীর মুখে বলে কবির।
"আমি জানি।" মিষ্টি করে হেসে বলে স্নিগ্ধা।
"তুই একটু বস, আমি এক্ষুনি আসছি।" বলে স্নিগ্ধা রুম থেকে বেরিয়ে যায়।
কিছুক্ষন পর যখন ফিরে আসে তখন তার হাতে একটি এলবাম। এলবামটা খুলে কবিরকে
দেখাতে লাগল, কবির ও স্নিগ্ধার পুরনো দিনের অনেকগুলো ছবি সেখানে।
কিছুক্ষন পর শিরিন স্নিগ্ধা ও কবিরকে ডেকে নিয়ে যায়। ডাইনিং টেবিলে নাস্তা
দিয়েছেন তিনি। কবির ভদ্রতামুলক মৃদু আপত্তি জানিয়ে বসে যায়। নাস্তা শেষে স্নিগ্ধা
কবিরকে ছাদে নিয়ে যায়। ছাদের ঠিক মাঝখানে একটি বড়সড় দোলনা, দুইজন
অনায়াসে বসতে পারে সেটাতে।
স্নিগ্ধা দোলনাটা দেখিয়ে বলে "এই দোলনাটার জন্যই আমি এই বাড়িটা পছন্দ
করেছিলাম।"
স্নিগ্ধা দোলনাটার একপাশে বসে কবিরকে বসতে বলে। কবির এসে পাশে বসে।
তখন সন্ধা ঘনিয়ে এসেছে দিগন্তের কাছে মেঘগুলো লাল ও গোলাপী বর্ন
ধারন করেছে। পাশের আমবাগান থেকে ঘরে ফেরা পাখিদের কিচির মিচির শব্দ
আসছিল। হঠাৎ স্নিগ্ধার মোবাইলটা বেজে ওঠে। স্নিগ্ধা দোলনা থেকে উঠে
ছাদের এক কোনায় গিয়ে কল রিসিভ করে কথা বলে। কবির তীক্ষ দৃষ্টিতে স্নিগ্ধার
দিকে তাকিয়ে থাকে। কিছুক্ষন পর স্নিগ্ধা ফিরে আসে।
"কার সাথে কথা বললি? তোর বয়ফ্রেন্ড?"
"তুই কিভাবে বুঝলি?" স্নিগ্ধা চমকে উঠে বলে।
"আন্দাজে বললাম", কবির মুচকি হেসে বলে।
"তোর কাছে লুকাবো না। ওর নাম সজল। এইবার ইন্টারমিডিয়েট দিয়েছে।"
স্নিগ্ধা এক মুহুর্ত থেমে যোগ করে "ওর সাথে আমার রিলেশন দুই মাস হল।"
স্নিগ্ধা তার মোবাইল ঘেঁটে একটি ছবি বের করে কবিরকে দেখায়।
ছবিতে স্নিগ্ধার পাশে একটি লম্বা চওড়া ফর্সা ছেলে দাড়িয়ে আছে।
কবিরের মনে হল বুকে যেন কিছু একটা বিঁধে গেল, কিন্তু মুখে হাসি টেনে
বলে "বাহ ভালই তো।"
স্নিগ্ধা এবার জিজ্ঞাসা করে "তোর খবর বল। প্রেম টেম করিস?"
"নাহ! ওসবের ভেতর আমি নেই।"
"সেটাই ভাল। কোন ঝামেলা নেই।"
"তাহলে তুই ঝামেলার মধ্যে গেলি কেন?"
"আমি কি আর ইচ্ছা করে ঝামেলায় গেছি?"
স্নিগ্ধা গানের সুরে বলে "আমি তো প্রেমে পড়িনি, প্রেম আমার উপরে
পড়েছে।"
"রাত হয়ে গেছে, আমাকে যেতে হবে।" কবির বলে।
"তুই কি ভেবেছিস আম্মু তোকে ডিনার না করিয়ে যেতে দিবে?"
"অন্য দিন খেয়ে যাব, আজ যাই।"
"আমি কিছু জানিনা, আম্মুকে বলে যা।"
কবির সিঁড়ি দিয়ে নেমে দোতলায় নেমে আসতেই স্নিগ্ধার বাবার সাথে দেখা
হয়ে যায়। জামান সাহেব ড্রয়িং রুমে বসে টিভিতে খবর দেখছিলেন। কবির সালাম
দিয়ে বলে-
"আংকেল কেমন আছেন?"
"এই তো, ভাল আছি। তুমি কেমন আছ? আর তোমার বাবা মা কেমন আছেন?" জামান
সাহেব হাসি মুখে জিজ্ঞাসা করেন।
"ভাল" কবির একটি শব্দে উত্তর দেয়।
তখন কবিরকে দেখে শিরিন ড্রয়িংরুমে এসেছেন।
"আন্টি, আমি এখন আসি।"
"সেকি? ডিনার করে যাও?"
"অন্য একদিন খেয়ে যাব, আজ আসি।"
"আচ্ছা বাবা, সাবধানে যেও আর মাঝে মাঝেই এসো কিন্তু।"
পরের দিন বেশ সকাল সকাল ঘুম ভেঙে যায় কবিরের। সে উঠে বসে বিছানাতে।
সামনের দেয়ালে টাঙানো দেয়াল ঘড়িতে ছয়টা ত্রিশ বাজে। কবির কিছুতেই
বুঝতে পারেনা এতো ভোরে তার ঘুম কেন ভেঙে গেল। গতরাতেও কবির রাত
একটা পর্যন্ত জেগে ছিল, সে হিসাবে সকাল আটটার আগে ওঠার কথা নয়। তবে
সকালে ঘুম একবার ভেঙে গেলে আর ঘুমাতে পারেনা কবির। তাই দাঁতব্রাশ করে
হাতমুখ ধুয়ে নিয়ে হাঁটতে বের হল। বহুদিন পর সে সকাল বেলা হাঁটতে বের
হয়েছে। কবির অবাক হয়ে আবিষ্কার করল যে এলাকায় অনেক পরিবর্তন হয়েছে
যা সে জানেনা। যে মাঠে কবির আগে ক্রিকেট খেলত সেখানে একটি নির্মানাধীন
বিল্ডিং, পাশের পাড়ার দিকে যাওয়া ইঁটপাতা রাস্তাটি পাকা রাস্তায় পরিনত হয়েছে, এলাকা
জুড়ে এখানে সেখানে অনেকগুলো নতুন মুদিদোকান ও চায়ের দোকান
হয়েছে। সেরকম একটি চায়ের দোকানে বসে একটা টোস্ট ও এককাপ চা
খেয়ে কবির বাড়ির দিকে রওনা দিল।
বাড়িতে পৌঁছে দেখে ঘরের দরজা খোলা। তাতে অবাক হলনা কবির, সুলতানা খালার
কাছেও ঘরের চাবি আছে।
সুলতানা তখন ঘর ঝাড় দিচ্ছিল, কবিরকে দেখে মুখে হাসি টেনে বলে "কবির বাবু এত
সকাল সকাল কই গেছিলা?'
"বাইরে থেকে একটু ঘুরে এলাম।"
"আইজকা কি খাইবেন? ফ্রিজে মুরগির মাংস আছে। রান্দি?"
কবির হ্যাঁ বোধক ভাবে মাথা নেড়ে নিজের রুমের দিকে যায়। তার খাওয়া দাওয়ার
ব্যাপারে তেমন আগ্রহ নেই, বাজার আর রান্না দুটোই সুলতানা করে।
কবির তার রুমে যেয়ে কলেজড্রেস পরে ব্যাগ কাঁধে নিয়ে বেরিয়ে যায়ে।
সরু রাস্তাটি পেরিয়ে বাইপাসে উঠতেই দেখে স্নিগ্ধা একটি রিক্সার সিটে বসে
আছে, কবিরকে দেখে হাত নেড়ে ডাকে "কবির তাড়াতাড়ি আয়।"
কবির রিক্সায় উঠতে উঠতে জিজ্ঞাসা করে "কতোক্ষন হল অপেক্ষা করছিস?"
"প্রায় পনের মিনিট। এতো দেরি হল কেন?"
"তোকে কে দেরী করতে বলেছে?"
"কি কথা ছিল? কলেজে একসাথে যাব।"