26-07-2020, 06:02 AM
ফরিদ স্যার পানিপথের যুদ্ধ বিষয়ে লেকচার দিচ্ছিলেন, কবিরের কথা শুনতে পাননি
সম্ভবত। কবিরকে আরেকবার বলতে হল। ফরিদ স্যার এবার কবিরের দিকে তাকালেন
তারপর বললেন "এসো কবির।"
কবির ক্লাসে ঢুকে শেষের দিকের একটি বেঞ্চে বসে পড়ল।
ফরিদ স্যার আবারও তার লেকচার শুরু করতেই ঘন্টা পড়ে গেল। ফরিদ স্যার ক্লাস
থেকে বের হবার আগে কবিরকে ডাকলেন "শাহরিয়ার কবির?"
কবির দাড়িয়ে বলল "জি স্যার।"
"আমার সাথে একটু এসো।"
করিডোরে দাড়িয়ে ফরিদ স্যার বললেন "ভাল আছ কবির?"
"জি, ভাল" কবির মাথা নেড়ে জবাব দিল।
"এতোদিন কলেজে আসনি কেন বাবা? শরীর কি খারাপ ছিল।" কন্ঠে দরদ ফুটিয়ে
বললেন ফরিদ স্যার।
কবির না বোধক ভাবে মাথা নাড়ল।
"যাও বাবা ক্লাসে যাও। কলেজ মিস দিওনা, আর মনোযোগ দিয়ে পড়াশোনা করো।"
অন্য যেকোন ছাত্র এত দেরী করল হয়তো ক্লাসেই ঢুকতে দিতোনা। এক
সপ্তাহ কলেজে না এলে প্রিন্সিপালের কাছে রিপোর্ট চলে যাওয়ার কথা, দীর্ঘদিন
অনিয়মিত থাকলে টিসি পর্যন্ত দিয়ে দিতে পারে। কবির জানে এসবের কিছুই হবেনা
তার বেলায়। কলেজে প্রিন্সিপাল থেকে শুরু করে ঝাড়ুদার পর্যন্ত সকলের
চোখেই কবিরের জন্য করুনা। এতো করুনার মাঝে কবির ভীষন অস্বস্তি বোধ
করে। হয়তো এটাই কবীরের কলেজ বিমুখ হওয়ার প্রধান কারন।
ফরিদ স্যারের সাথে কথা বলে কবির ক্লাসে ঢুকতেই লম্বা, হ্যাংলা, পাতলা একটি
ছেলে এগিয়ে এসে হাত মিলিয়ে বলল "কিরে কবির, তোকে তো আর দেখাই
যা না, কই থাকিস আজকাল?"
"বাড়িতেই আছি।"
"কাল না তোদের এলাকায় গেলাম, তোকে কোথাও পেলাম না, বাড়িতে তালা
ঝুলছিল। বিল্টু, বাবলু বলল তারাও তোকে সপ্তাহ খানেক হল দেখেনি। আমি তো
ভীষণ চিন্তায় ছিলাম, কোন বিপদে তো আবার পড়িসনি?"
"আমার আবার কিসের বিপদ হবে!"
রিপন নামের ছেলেটি জবাবে কিছু বলতো, কিন্তু তখনই মুকুন্দ স্যার এসে পড়াতে
বলতে পারল না। দুজনই তাদের নিজেদের সিটে বসে পড়ল।
মুকুন্দ স্যার বাংলা পড়ান। বাংলা সাবজেক্টটা কবিরের কাছে সবচেয়ে বোরিং লাগে, আর
মুকুন্দ স্যারের পড়ানোর স্টাইলটাও বোরিং। মুকুন্দ স্যার পড়ানো শুরু করলে
বেশিভাগ ছাত্রের ঝিমুনি এসে যায়।
সেদিনও কপোতাক্ষ নদ কবিতার তাত্পর্য শুনতে শুনতে ছাত্রছাত্রীরা ঝিমুচ্ছিল, কিন্তু
হঠাত করে প্রিন্সিপাল স্যারের এসে পড়াতে তাদের ঝিমুনিও হঠাত করে উবে যায়।
প্রিন্সিপাল স্যারের সাথে আরেকজন মধ্যবয়সি লোক এবং কলেজ ড্রেস পরা একটি
মেয়ে। প্রিন্সিপাল স্যার বললেন "তোমাদেরকে তোমাদের নতুন সহপাঠীর
সাথে পরিচয় করিয়ে দিতে আমি এসেছি। ওর নাম সাদিয়া আক্তার স্নিগ্ধা। আগে
ভীকারুননিসা নুন কলেজে পড়ত। ওর বাবা হঠাত এই শহরে ট্রান্সফার হয়ে আসাতে ও
এখন থেকে তোমাদের সাথে পড়বে।"
ভীকারুন্নিসা কলেজের কথা শুনে ক্লাসের সবাই চমকে উঠল, এমন নামিদামি কলেজ
থেকে যে কেউ তাদের কলেজে আসতে পারে তা যেন অবিশ্বাস্য ব্যাপার।
ক্লাসের সকলেই মেয়েটির দিকে ড্যাব ড্যাব চোখে তাকিয়েছিল। মেয়েটি
মেয়েদের সারির প্রথম সিটে বসে পড়ল। প্রিন্সিপাল স্যার এবং সাথের লোকটি কথা
বলতে বলতে বেরিয়ে যেতেই মুকুন্দ স্যারের ঝিমুনি ধরিয়ে দেয়া লেকচার শুরু
হল।
কবির একবার মেয়েটির দিকে তাকালো, মেয়েটি লেকচার শুনছিল মনোযোগ
দিয়ে। ফর্সা মুখ, টানা টানা দুটি চোখ, অসাধারণ মুখাবয়ব। স্লিম হলেও দেহের
বাঁকগুলো স্পষ্ট, অসাধারণ ফিগার। কিন্তু সবচেয়ে আজব ব্যাপার হল মেয়েটিকে
কেন যেন চেনা চেনা লাগছিল। হয়তো চেনা চেনা লাগাটাও সৌন্দর্যেরই একটি
বৈশিষ্ট্য।
স্নিগ্ধা তার বিছানায় আধাশোয়া হয়ে টিভি দেখছিল। স্নিগ্ধার মন আজ খুব খারাপ। একটার পর
একটা চ্যানেল বদলাচ্ছে সে, তার কিছুই ভাল লাগছে না। হঠাত তার মা শিরিন রুমে চলে
আসে।
"অনেক রাত হয়েছে। এখন টিভি বন্ধ করে শুয়ে পড়, আমি মশারী টানিয়ে দিচ্ছি।"
শিরীন মশারী টানিয়ে দিয়ে রুম থেকে বের হয়ে যায়। স্নিগ্ধা শুয়ে শুয়ে
অপেক্ষা করে যতক্ষন না তার বাবা মার বেডরুমের লাইট নিভে যায়। পাশের রুমে
লাইট নিভে যাওয়ার এক মিনিট পর স্নিগ্ধা তার মোবাইল ফোনটি বের করে কল করে।
একবার রিং হয়ে তা কেটে যায় এবং সাথে সাথে রিং বেজে ওঠে। কলটা রিসিভ
করতেই অন্যপাশ থেকে ছেলে কন্ঠ ভেসে আসে।
"হ্যালো জান, কেমন আছ?"
"ভাল না।"
"কেন, কি হল? শরীর খারাপ?"
" না জান, মন খারাপ। এখানে কিছুই ভাল লাগছে না, কেন যে বাবা এই গেঁয়ো শহরটায়
বদলি হয়ে এল।"
"কেন, বগুড়া শহরটা তো বেশ সুন্দর। আমি বেশ কয়েকবার গিয়েছিলাম, আমার
কয়েকজন ফ্রেন্ডের বাড়ি ওখানে।"
"তারপরও, আগের কলেজ, বন্ধু বান্ধবদের খুব মিস করছি।"
"আমাকে মিস করোনা?"
"তোমাকেও খুব মিস করি।"
এমন সময় কারো হেঁটে আসার শব্দে সচকিত হয় স্নিগ্ধা, তবে মোবাইল ফোন
লুকানোর চেষ্টা করেনা।
"এতো রাতে কার সাথে কথা বলছ মামনি?"
"শিউলির সাথে কথা বলি আব্বু" স্নিগ্ধা স্বাভাবিক স্বরেই উত্তর দেয়।
"কথা তাড়াতাড়ি শেষ করো মামনি, অনেক রাত হয়েছে, সকালে কলেজে যেতে
হবেনা?"
জামান রুম থেকে বের হয়ে যেতেই স্নিগ্ধা সজলের থেকে বিদায় নিয়ে
ফোন কেটে দেয় ও ঘুমানোর চেষ্টা করে। কিন্তু তার ঘুম সহজে আসতে
চায়না। বারবার সজলের কথা মনে পড়ছে। ও কেমন আছে, কি করছে তা তো
জিজ্ঞাসা করা হলনা। আবার কি ফোন দিব? না থাক, ও হয়তো পড়ছে, আবার ডিস্টার্ব করা
ঠিক হবেনা। স্নিগ্ধা মনে মনে ভাবল।
সজল এবছর ইন্টারমেডিয়েট দিয়েছে, এখন ইউনিভার্সিটি ভর্তির প্রস্তুতি নিচ্ছে।
সজল ও স্নিগ্ধার পরিচয় তিন মাসের এবং প্রেমের সম্পর্ক দুই মাসের।
সজল স্নিগ্ধাকে প্রথম দেখেছিল কলেজের ফাংশনে। স্নিগ্ধা সেবার ফাংশনে
দেশাত্ববোধক গান গেয়েছিল। সেই প্রথম দেখাতেই প্রেমে পড়ে যায়
সজল। অনেক কষ্টে স্নিগ্ধার ফোন নাম্বার যোগাড় করে সজল, প্রথমে
ফোনে আলাপ তারপর বন্ধুত্ব অতঃপর প্রেম, এভাবে এগোয় ওদের রিলেশন।
টিফিনের আগে শেষ ক্লাসটি নেন শহীদ স্যার। তিনি ইংরেজি পড়ান। তবে বিসিএস এর
পরীক্ষার জন্য তিনি পনের দিনের ছুটিতে আছেন। একয়দিন একেকদিন একেক
টিচার ক্লাসটা নিতেন। তবে আজকে কেউই এলনা। ছাত্রছাত্রীরা গল্পগুজবে ও
আড্ডায় পার করে দিতে লাগল পিরিয়ডটা।
স্নিগ্ধা ক্লাসরুমটা খুঁটিয়ে দেখল। ছাদের দিকে যায়গায় যায়গায় মাকড়সার জাল ঝুলছে,
মেঝেতে ধুলোর পরত তার উপরে লম্বা লম্বা বেঞ্চ। আগের কলেজের
মতো আলাদা আলাদা ডেস্ক নেই, একেকটা বেঞ্চে তিন, চারজন করে বসতে
হচ্ছে। ভাল কলেজগুলোতে ক্লাস টেনে ভর্তি নেয়না বলে বাধ্য হয়ে এই মধ্যম
সারির কলেজে ভর্তি করা হয়েছে স্নিগ্ধাকে।
ইতিমধ্যে বেশ কয়েকজন মেয়ের সাথে পরিচয় হয়ে গেছে স্নিগ্ধার। তাদের
সাথে গল্প করার ফাঁকে আড় চোখে ছেলেদের দিকে লক্ষ করছে। বিগত ছয়
বছর সে গার্লস কলেজে পড়েছে। একই ক্লাসে ছেলে ও মেয়েদের
দেখতে সে অভ্যস্ত নয়। তাছাড়া অধিকাংশ ছেলে ঘুরে ফিরেই স্নিগ্ধার দিকে
তাকাচ্ছিল, তাদের মাঝে কয়েকজনের দৃষ্টি বেশ নোংরা। স্নিগ্ধার ভীষন অস্বস্তি
লাগছে।
স্নিগ্ধার দৃষ্টি হঠাত আটকে যায় শেষের বেঞ্চের একটি ছেলের দিকে।
ছেলেটা উদাস ভঙ্গিতে জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে আছে। স্নিগ্ধার কেন যেন
ছেলেটাকে চেনা চেনা লাগছে, সম্ভবত ছেলেটার সাথে তার পরিচিত কারো
চেহারার মিল রয়েছে। হঠাৎ করে তার মনে পড়ে যায় কার চেহারার সাথে
ছেলেটার চেহারার মিল রয়েছে। একই সাথে তার মনে অন্য একটা সম্ভাবনাও উঁকি
দেয়।
স্নিগ্ধা তার পাশে বসে থাকা শারমিনকে জিজ্ঞাসা করে-
"ঐ ছেলেটা কে?"
"কোন ছেলে?"
"ঐ যে লাস্ট বেঞ্চ কর্নারে?"
"ওর নাম কবির। আগে ভাল ছাত্র ছিল। ইদানিং ক্লাসই করেনা। মাসে দু এক দিন দেখা যায়
ওকে কলেজে।"
কবির নামটি শুনেই স্নিগ্ধা চমকে ওঠে, কিন্তু মুখে তা প্রকাশ করেনা।
শারমিন এবার প্রশ্ন করে "হঠাত ওর কথা জিজ্ঞাস করলে কেন? কোন সমস্যা?"
"না, কিছু না। এমনিই জিজ্ঞাসা করলাম।"
ঠিক তখনই টিফিনের ঘন্টা পড়ে গেল।
সম্ভবত। কবিরকে আরেকবার বলতে হল। ফরিদ স্যার এবার কবিরের দিকে তাকালেন
তারপর বললেন "এসো কবির।"
কবির ক্লাসে ঢুকে শেষের দিকের একটি বেঞ্চে বসে পড়ল।
ফরিদ স্যার আবারও তার লেকচার শুরু করতেই ঘন্টা পড়ে গেল। ফরিদ স্যার ক্লাস
থেকে বের হবার আগে কবিরকে ডাকলেন "শাহরিয়ার কবির?"
কবির দাড়িয়ে বলল "জি স্যার।"
"আমার সাথে একটু এসো।"
করিডোরে দাড়িয়ে ফরিদ স্যার বললেন "ভাল আছ কবির?"
"জি, ভাল" কবির মাথা নেড়ে জবাব দিল।
"এতোদিন কলেজে আসনি কেন বাবা? শরীর কি খারাপ ছিল।" কন্ঠে দরদ ফুটিয়ে
বললেন ফরিদ স্যার।
কবির না বোধক ভাবে মাথা নাড়ল।
"যাও বাবা ক্লাসে যাও। কলেজ মিস দিওনা, আর মনোযোগ দিয়ে পড়াশোনা করো।"
অন্য যেকোন ছাত্র এত দেরী করল হয়তো ক্লাসেই ঢুকতে দিতোনা। এক
সপ্তাহ কলেজে না এলে প্রিন্সিপালের কাছে রিপোর্ট চলে যাওয়ার কথা, দীর্ঘদিন
অনিয়মিত থাকলে টিসি পর্যন্ত দিয়ে দিতে পারে। কবির জানে এসবের কিছুই হবেনা
তার বেলায়। কলেজে প্রিন্সিপাল থেকে শুরু করে ঝাড়ুদার পর্যন্ত সকলের
চোখেই কবিরের জন্য করুনা। এতো করুনার মাঝে কবির ভীষন অস্বস্তি বোধ
করে। হয়তো এটাই কবীরের কলেজ বিমুখ হওয়ার প্রধান কারন।
ফরিদ স্যারের সাথে কথা বলে কবির ক্লাসে ঢুকতেই লম্বা, হ্যাংলা, পাতলা একটি
ছেলে এগিয়ে এসে হাত মিলিয়ে বলল "কিরে কবির, তোকে তো আর দেখাই
যা না, কই থাকিস আজকাল?"
"বাড়িতেই আছি।"
"কাল না তোদের এলাকায় গেলাম, তোকে কোথাও পেলাম না, বাড়িতে তালা
ঝুলছিল। বিল্টু, বাবলু বলল তারাও তোকে সপ্তাহ খানেক হল দেখেনি। আমি তো
ভীষণ চিন্তায় ছিলাম, কোন বিপদে তো আবার পড়িসনি?"
"আমার আবার কিসের বিপদ হবে!"
রিপন নামের ছেলেটি জবাবে কিছু বলতো, কিন্তু তখনই মুকুন্দ স্যার এসে পড়াতে
বলতে পারল না। দুজনই তাদের নিজেদের সিটে বসে পড়ল।
মুকুন্দ স্যার বাংলা পড়ান। বাংলা সাবজেক্টটা কবিরের কাছে সবচেয়ে বোরিং লাগে, আর
মুকুন্দ স্যারের পড়ানোর স্টাইলটাও বোরিং। মুকুন্দ স্যার পড়ানো শুরু করলে
বেশিভাগ ছাত্রের ঝিমুনি এসে যায়।
সেদিনও কপোতাক্ষ নদ কবিতার তাত্পর্য শুনতে শুনতে ছাত্রছাত্রীরা ঝিমুচ্ছিল, কিন্তু
হঠাত করে প্রিন্সিপাল স্যারের এসে পড়াতে তাদের ঝিমুনিও হঠাত করে উবে যায়।
প্রিন্সিপাল স্যারের সাথে আরেকজন মধ্যবয়সি লোক এবং কলেজ ড্রেস পরা একটি
মেয়ে। প্রিন্সিপাল স্যার বললেন "তোমাদেরকে তোমাদের নতুন সহপাঠীর
সাথে পরিচয় করিয়ে দিতে আমি এসেছি। ওর নাম সাদিয়া আক্তার স্নিগ্ধা। আগে
ভীকারুননিসা নুন কলেজে পড়ত। ওর বাবা হঠাত এই শহরে ট্রান্সফার হয়ে আসাতে ও
এখন থেকে তোমাদের সাথে পড়বে।"
ভীকারুন্নিসা কলেজের কথা শুনে ক্লাসের সবাই চমকে উঠল, এমন নামিদামি কলেজ
থেকে যে কেউ তাদের কলেজে আসতে পারে তা যেন অবিশ্বাস্য ব্যাপার।
ক্লাসের সকলেই মেয়েটির দিকে ড্যাব ড্যাব চোখে তাকিয়েছিল। মেয়েটি
মেয়েদের সারির প্রথম সিটে বসে পড়ল। প্রিন্সিপাল স্যার এবং সাথের লোকটি কথা
বলতে বলতে বেরিয়ে যেতেই মুকুন্দ স্যারের ঝিমুনি ধরিয়ে দেয়া লেকচার শুরু
হল।
কবির একবার মেয়েটির দিকে তাকালো, মেয়েটি লেকচার শুনছিল মনোযোগ
দিয়ে। ফর্সা মুখ, টানা টানা দুটি চোখ, অসাধারণ মুখাবয়ব। স্লিম হলেও দেহের
বাঁকগুলো স্পষ্ট, অসাধারণ ফিগার। কিন্তু সবচেয়ে আজব ব্যাপার হল মেয়েটিকে
কেন যেন চেনা চেনা লাগছিল। হয়তো চেনা চেনা লাগাটাও সৌন্দর্যেরই একটি
বৈশিষ্ট্য।
স্নিগ্ধা তার বিছানায় আধাশোয়া হয়ে টিভি দেখছিল। স্নিগ্ধার মন আজ খুব খারাপ। একটার পর
একটা চ্যানেল বদলাচ্ছে সে, তার কিছুই ভাল লাগছে না। হঠাত তার মা শিরিন রুমে চলে
আসে।
"অনেক রাত হয়েছে। এখন টিভি বন্ধ করে শুয়ে পড়, আমি মশারী টানিয়ে দিচ্ছি।"
শিরীন মশারী টানিয়ে দিয়ে রুম থেকে বের হয়ে যায়। স্নিগ্ধা শুয়ে শুয়ে
অপেক্ষা করে যতক্ষন না তার বাবা মার বেডরুমের লাইট নিভে যায়। পাশের রুমে
লাইট নিভে যাওয়ার এক মিনিট পর স্নিগ্ধা তার মোবাইল ফোনটি বের করে কল করে।
একবার রিং হয়ে তা কেটে যায় এবং সাথে সাথে রিং বেজে ওঠে। কলটা রিসিভ
করতেই অন্যপাশ থেকে ছেলে কন্ঠ ভেসে আসে।
"হ্যালো জান, কেমন আছ?"
"ভাল না।"
"কেন, কি হল? শরীর খারাপ?"
" না জান, মন খারাপ। এখানে কিছুই ভাল লাগছে না, কেন যে বাবা এই গেঁয়ো শহরটায়
বদলি হয়ে এল।"
"কেন, বগুড়া শহরটা তো বেশ সুন্দর। আমি বেশ কয়েকবার গিয়েছিলাম, আমার
কয়েকজন ফ্রেন্ডের বাড়ি ওখানে।"
"তারপরও, আগের কলেজ, বন্ধু বান্ধবদের খুব মিস করছি।"
"আমাকে মিস করোনা?"
"তোমাকেও খুব মিস করি।"
এমন সময় কারো হেঁটে আসার শব্দে সচকিত হয় স্নিগ্ধা, তবে মোবাইল ফোন
লুকানোর চেষ্টা করেনা।
"এতো রাতে কার সাথে কথা বলছ মামনি?"
"শিউলির সাথে কথা বলি আব্বু" স্নিগ্ধা স্বাভাবিক স্বরেই উত্তর দেয়।
"কথা তাড়াতাড়ি শেষ করো মামনি, অনেক রাত হয়েছে, সকালে কলেজে যেতে
হবেনা?"
জামান রুম থেকে বের হয়ে যেতেই স্নিগ্ধা সজলের থেকে বিদায় নিয়ে
ফোন কেটে দেয় ও ঘুমানোর চেষ্টা করে। কিন্তু তার ঘুম সহজে আসতে
চায়না। বারবার সজলের কথা মনে পড়ছে। ও কেমন আছে, কি করছে তা তো
জিজ্ঞাসা করা হলনা। আবার কি ফোন দিব? না থাক, ও হয়তো পড়ছে, আবার ডিস্টার্ব করা
ঠিক হবেনা। স্নিগ্ধা মনে মনে ভাবল।
সজল এবছর ইন্টারমেডিয়েট দিয়েছে, এখন ইউনিভার্সিটি ভর্তির প্রস্তুতি নিচ্ছে।
সজল ও স্নিগ্ধার পরিচয় তিন মাসের এবং প্রেমের সম্পর্ক দুই মাসের।
সজল স্নিগ্ধাকে প্রথম দেখেছিল কলেজের ফাংশনে। স্নিগ্ধা সেবার ফাংশনে
দেশাত্ববোধক গান গেয়েছিল। সেই প্রথম দেখাতেই প্রেমে পড়ে যায়
সজল। অনেক কষ্টে স্নিগ্ধার ফোন নাম্বার যোগাড় করে সজল, প্রথমে
ফোনে আলাপ তারপর বন্ধুত্ব অতঃপর প্রেম, এভাবে এগোয় ওদের রিলেশন।
টিফিনের আগে শেষ ক্লাসটি নেন শহীদ স্যার। তিনি ইংরেজি পড়ান। তবে বিসিএস এর
পরীক্ষার জন্য তিনি পনের দিনের ছুটিতে আছেন। একয়দিন একেকদিন একেক
টিচার ক্লাসটা নিতেন। তবে আজকে কেউই এলনা। ছাত্রছাত্রীরা গল্পগুজবে ও
আড্ডায় পার করে দিতে লাগল পিরিয়ডটা।
স্নিগ্ধা ক্লাসরুমটা খুঁটিয়ে দেখল। ছাদের দিকে যায়গায় যায়গায় মাকড়সার জাল ঝুলছে,
মেঝেতে ধুলোর পরত তার উপরে লম্বা লম্বা বেঞ্চ। আগের কলেজের
মতো আলাদা আলাদা ডেস্ক নেই, একেকটা বেঞ্চে তিন, চারজন করে বসতে
হচ্ছে। ভাল কলেজগুলোতে ক্লাস টেনে ভর্তি নেয়না বলে বাধ্য হয়ে এই মধ্যম
সারির কলেজে ভর্তি করা হয়েছে স্নিগ্ধাকে।
ইতিমধ্যে বেশ কয়েকজন মেয়ের সাথে পরিচয় হয়ে গেছে স্নিগ্ধার। তাদের
সাথে গল্প করার ফাঁকে আড় চোখে ছেলেদের দিকে লক্ষ করছে। বিগত ছয়
বছর সে গার্লস কলেজে পড়েছে। একই ক্লাসে ছেলে ও মেয়েদের
দেখতে সে অভ্যস্ত নয়। তাছাড়া অধিকাংশ ছেলে ঘুরে ফিরেই স্নিগ্ধার দিকে
তাকাচ্ছিল, তাদের মাঝে কয়েকজনের দৃষ্টি বেশ নোংরা। স্নিগ্ধার ভীষন অস্বস্তি
লাগছে।
স্নিগ্ধার দৃষ্টি হঠাত আটকে যায় শেষের বেঞ্চের একটি ছেলের দিকে।
ছেলেটা উদাস ভঙ্গিতে জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে আছে। স্নিগ্ধার কেন যেন
ছেলেটাকে চেনা চেনা লাগছে, সম্ভবত ছেলেটার সাথে তার পরিচিত কারো
চেহারার মিল রয়েছে। হঠাৎ করে তার মনে পড়ে যায় কার চেহারার সাথে
ছেলেটার চেহারার মিল রয়েছে। একই সাথে তার মনে অন্য একটা সম্ভাবনাও উঁকি
দেয়।
স্নিগ্ধা তার পাশে বসে থাকা শারমিনকে জিজ্ঞাসা করে-
"ঐ ছেলেটা কে?"
"কোন ছেলে?"
"ঐ যে লাস্ট বেঞ্চ কর্নারে?"
"ওর নাম কবির। আগে ভাল ছাত্র ছিল। ইদানিং ক্লাসই করেনা। মাসে দু এক দিন দেখা যায়
ওকে কলেজে।"
কবির নামটি শুনেই স্নিগ্ধা চমকে ওঠে, কিন্তু মুখে তা প্রকাশ করেনা।
শারমিন এবার প্রশ্ন করে "হঠাত ওর কথা জিজ্ঞাস করলে কেন? কোন সমস্যা?"
"না, কিছু না। এমনিই জিজ্ঞাসা করলাম।"
ঠিক তখনই টিফিনের ঘন্টা পড়ে গেল।