25-07-2020, 08:49 PM
(This post was last modified: 16-09-2020, 10:35 PM by kumdev. Edited 2 times in total. Edited 2 times in total.)
[২৯]
ভোরের আলো ফুটতে না-ফুটতে পিছনের বাগানে দয়েল শালিক চখা-চখির কিচিরমিচির শুরু হয়ে যায়।ঘুম ভেঙ্গে চোখ মেলেন জানকি।গত রাতের কথা মনে পড়তে ঘাড় ঘুরিয়ে দেখলেন পাশে খোকন নেই।মনে মনে হাসেন।মাথার কাছে রাখা পাঞ্জাবি পরে নিলেন।তারপর কয়েকটা ফোন করলেন।খোকন কি এখনো ঘুমোচ্ছে?
পার্টির লোকজনে প্রতিক্রিয়া অনুমান করার চেষ্টা করেন।অন্যান্য স্টেট নিয়ে চিন্তা নেই বাঙাল উড়ষ্যার কমরেডরা ব্যাপারটা নিয়ে হৈ-চৈ করতে পারে। বিয়ে করেনি তা নিয়ে অনেক গালগল্প কানে এসেছে বিয়ে করলেও তারা থেমে যাবে না যারা গসিপ ভালবাসে তারা করবেই।
কিছুক্ষন পরে শৈল চা দিয়ে গেল।চা খেয়ে নিত্যকার মত পিছনের বাগানে হাটতে গেলেন জানকি।যমুনা মাঠ সেরে ফিরে এসেছেন।কর্তার হুকুম ভাল-মন্দ রান্না করতে হবে।ওনার কমরেড চলে যাবে আজ।বাড়ির মধ্যে বাইরের লোক তার পছন্দ নয়।বাঁচা যায় আপদ বিদায় হলে,মনটা তাই ফুরফুরে।বনু ঘুমোচ্ছে, জামাই এসেছে কত রাতে ঘুমিয়েছে কে জানে।যমুনা নারী-পুরুষের একটা সম্পর্কই জানেন।
জানকির শরীরের মধ্যে একটা অনুভুতির টের পান।আগে এরকম হতো না।ড মুখার্জী বয়স্ক মানুষ সেই একবারই যা হয়েছে।যেচে বলা যায় আমাকে করো।কোনো কারণে কামার্ত হলে মাথার ঠিক থাকে না।পার্টির মধ্যে এরকম ঘটনা ঘটেছে।পরে ক্ষমা টমা চেয়ে মিট্মাট করতে হয়েছে। খোকন একেবারে আলাদা।ও বলছিল শরীর ওর কাছে গৌন।যাক সময় চলে যাচ্ছে না।বাসায় ফিরে প্রস্তুত হতে থাকেন।
জানকি একবার পার্টি অফিসে যাবেন।এদিক-ওদিক তাকিয়ে তার চোখ কাকে যেন খোজে।পার্ট অফিসে পৌছে দেখলেন কমরেডরা উত্তেজিত।তাকে দেখে ভীড় থেকে এগিয়ে এলেন কমরেড হৃষিকেশ মাইতি।
–কমরেড পুলিশ খুব বাড়াবাড়ি করছে।
নিজের চেয়ারে বসতে বসতে জিজ্ঞেস করলেন জানকি,কেন কি করলো?
–আজ ভোরবেলা নন্দকে এ্যারেষ্ট করেছে।
–কেন? সে কি করেছে?
–নন্দ পার্টির এ্যাসেট,এই সময় তাকে যদি আটকে রাখে তাহলে নির্বাচনে তার প্রভাব পড়বে।
–কতদিন রাজনীতি করছেন?
হৃষিকেশ মাইতি থমকে গেলেন।তারপর আমতা আমতা করে বলেন,সবাই বলছিল বিরোধীরা ফাকা মাঠে গোল করে বেরিয়ে যাবে,নন্দ থাকলে সেই সাহস করতো না।
–শুনুন কমরেড মাইতি নন্দ কোন দোষ না করলে পুলিশ বেশিক্ষন তাকে আটকে রাখতে পারবে না।পুলিশকে তার কাজ করতে দিন।দশ জনে খেলেও ম্যাচ জেতা যায়।ভরসা রাখুন এই ম্যাচ আমাদের।স্ক্রুটিনি ইত্যাদি কতদুর কি হল সব বাড়ী বাড়ী ঘুরে ভোটার স্লিপ বিলি হল কিনা দেখুন।ধরে নিন নির্বাচন হয়ে গেছে এখন কেবল ফল প্রকাশের অপেক্ষা।
কমরেড জানকির কথা শুনলে মনে ভরসা আসে,হৃষিকেশ মাইতি দুশ্চিন্তার ভারমুক্ত হলেন। ভীড়ের উত্তেজনা এখন স্তিমিত।
বাস্তবিক নির্বাচনে আদিবাসিগোষ্ঠী বিপুল উৎসাহে এসেছিল ভোট দিতে অন্যান্যবার যা দেখা যায়নি।হৃষিকেশ মাইতিও জিতেছিলেন বিপুল ভোটে।এসব পরের কথা।
অনিতা ওষুধ কিনতে এসেছে।চায়না ওর মুখের দিকে তাকিয়ে কিছু বোঝার চেষ্টা করেন।নীল বলছিল কলকাতা যাবে তাকে কিছু বলেনি?দোকানে ভীড় চায়না এগিয়ে গিয়ে বললেন,কই দেখি প্রেস্ক্রিশন।
অনিতা প্রেসক্রিপশন এগিয়ে দিল।চায়না নিজেই ওষুধ বের করতে থাকেন।পল্টূ বলল,ম্যাডাম আমাকে দিন।
--তুমি ওদিকটা দেখো।চায়না নিজেই ওষুধ বাছাই করতে থাকেন।
টেবিলে বসে বিল করতে করতে ইশারায় অনিতাকে ভিতরে ডাকেন।অনিতা ডালা ঠেলে ভিতরে যেতে নীচু গলায় বললেন,নীলুর খবর কি?
--কে নীলু?অনিতা বলল।
চায়না লেখা থামিয়ে চোখ তুলে দেখিলেন।আর কিছু বললেন না।নীলুকে চেনে না।
বিমর্ষ্মুখে জানকি বাসায় ফিরলেন।সারাদিনে একবার দেখা হলনা।বেলা বাড়তে থাকে,মন ভীষণ চঞ্চল।তাহলে কি মত বদলেছে?লজ্জায় সামনা সামনি হতে চাইছে না।পোড় খাওয়া রাজনীতিক জানকি অত সহজে ভেঙ্গে পড়ার মেয়ে নয়।এর আগেও বড় ঘটনার সম্মুখীন হয়েছেন সামলে নিয়েছেন।পরিস্থিতিকে সহজভাবে মেনে নিতে জানেন।
বিকেল বেলা বিশাল জনতা নিয়ে জানকি ট্রেন ধরতে গেলেন খড়গপুরে।লালসেলাম ধ্বনিতে মুখর প্লাটফর্ম।অন্যান্য কামরার কৌতুহলি যাত্রীরা উকি দিয়ে দেখছে। কেউ কেউ পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করল।কমরেডের মুখ দেখে সবার মনে হয় এতদিন ছিলেন সেজন্য মন খারাপ।অনেকের চোখে জল এসে যায়। মহাদেব পালকে বললেন,আপনার কথা মনে আছে।
দূর থেকে সব দেখছিল নীল। মনে মনে ভাবছিল কি অবস্থা হবে যখন মহাদেব পাল জানতে পারবে তার ছেলে বাড়ী ছেড়ে চলে গেছে।মনা হয়তো স্বস্তির শ্বাস ফেলবে,তার লজ্জার সাক্ষী চলে গেছে অনেক দুরে।দু-বেলা চোখের সামনে দেখে আর সঙ্কুচিত হতে হবেনা।ট্রেন ছেড়ে দিল জানকি জানলা দিয়ে মুখ বের করে হাত নাড়েন।তারপর যেখানে নির্দিষ্ট জায়গা রিজার্ভ কুপে গিয়ে বসলেন।রুমাল বের করে মুখ মুছে আপন মনে হাসলেন।খোকন এল না।ট্রেনের গতি বাড়তে থাকে।জানকি জানলার ধারে হেলান দিয়ে ছলছল চোখে বাইরের দিকে তাকিয়ে থাকেন।
যা বাবাঃ গায়েব হয়ে গেল নাকি?নীল ট্রেনে উঠে সব যাত্রীদের মুখ তন্ন তন্ন করে খোজে জাকির দেখা নেই।ট্রেনের সিস্টেম তার ভাল জানা নেই।পকেটে হাত দিয়ে টিকিটটা অনুভব করে।একটু দূরে একজন চেকার দেখে এগিয়ে গেল।সব শুনে চেকার হতভম্ব।এই কুপে একজন বড় নেত্রী আছে উনি জানেন।জেরক্সে চোখ বুলিয়ে জিজ্ঞেস করেন,আপনি কে?
--আমার নাম নীলাদ্রি শেখর রায়।
জেরক্সে তাই লেখা।চেকার বললেন,আপনি আমার সঙ্গে আসুন।
কুপের কাছে গিয়ে দরজায় টোকা দিলেন।ভিতর থেকে আওয়াজ এল,কে-এ?
--ম্যাডাম আমি চেকার একটূ ডিস্টার্ব করলাম।
জানকি দরজা খুলতেই চেকার বললেন,ইনি খোজ করছিলেন,আপনি চেনেন?
জানকির চোখে জল আসার উপক্রম।বললেন,ভিতরে এসো।আপনাকে ধন্যবাদ।
দরজা বন্ধ করে জড়িয়ে ধরলেন নীলকে বললেন,এরকম কেউ করে।এখনো আমার বুক ঢিপঢিপ করছে।
--বারে কি করলাম?
সিটে বসতে বসতে বল্লেন,কোথায় ছিলে সারাদিন?আমার চিন্তা হয়না?
নীল পাশে বসে বলল,চলে যাব তাই শেষবারের মত গ্রাম দেখতে বেরিয়েছিলাম।
--পা তুলে আমার দিকে ঘুরে বোসো।খুব খারাপ লাগছে?
--একটা মেয়ে অনিতার সঙ্গে দেখা হল।ওর মা অসুস্থ ওষুধ কিনতে যাচ্ছিল।কলকাতায় যাচ্ছি শুনে এমনভাবে হাসল খুব খারাপ লাগল।
--অনিতা কে?
--আমার বোনের বন্ধু।মঙ্গলার মা অনেক সহজ সরল চায়নাআণ্টির মত কৌশলী নয়।
--আমাকে কেমন মনে হয়?
--তুমি বাইরে যেমন ভাবই করো ভিতরে খুব নরম।জানকির পা কোলে নিয়ে মট মট আঙুল ফোটাতে থাকে নীল।
জানকি খুশিতে ভরপুর,যেমনটি চেয়েছিল বুঝি তার বেশিই পেয়ে গেল।
--আচ্ছা এখানে তো চারজন বসা যায়।
--পুরোটা রিজার্ভ করা।
--তাহলে টাকা অনেক বেশি লাগিল না?
--আমাকে কিছু দিতে হয়নি পার্টি থেকে বুক করে দিয়েছে,।
গাড়ি ছুটে চলেছে।জানকির পায়ে হাত বোলাতে বোলাতে নীল জিজ্ঞেস করে,গাড়ি ত উল্টো দিকে চলছে।আমরা কোথায় যাচ্ছি?
–আমার গ্রামে।
–কোথায় তোমার গ্রাম?
–নিয়ালি।ভুবনেশ্বর নেমে যেতে হয়।
–তুমি যে বললে কলকাতায় গিয়ে পড়বো?
–তোমার জাকির পরে ভরসা নেই?
আলো কমে এসেছে সন্ধ্যে হয় হয় শৈলপিসি ঘরবার করে খোকন কমরেডের সঙ্গে পলাল নাতো।ছেলেটা সেই সকালে খেয়ে বেরিয়েছে এখনো ফিরল না কারো কোনো হুশ নেই।যমুনার সঙ্গে দেখা হতে শৈল বলল,খোকন গেল কোথায়?পলাইল নাতো?
--তোর যত অলক্ষুনে কথা।দ্যাখ কোথায় ঘুরে বেড়াচ্ছে।
--এ কেমন কথা তোমার চিন্তা হয়না?
--এত বকিস কেন?মার চেয়ে মাসীর দরদ বেশি।
--এ তুমি কেমন মা?ছেলেটা কোন সকালে বেরল তোমার চিন্তা হয়না?
যমুনা জ্বলে ওঠেন,তুই খোকনের কে?কাজের লোক কাজের মত থাকবি।দিন দিন তোর আস্পর্ধা বাড়ছে।
--কাজের নোক সেইটা ঠিক তোমার বিয়ের আগের থেকে এ বাড়ীতে আছি।যেচে আসিনি তোমার ভাতার আমাকে নিয়ে এসেছে।
--এই মাগী আমাকে মুখ খোলাবি না।ভেবেছিস আমি কিছু বুঝিনা?
শৈলপিসি হেসে বলল,সেতো তুমিও বোঝো আমিও বুঝি ঐসব কথা থাক।
[--বক বক নাকরে চা কর।
সবাই খাবার উদ্যোগ করছে।জানকি বাঙ্কের থেকে একটা ব্যাগ নামিয়ে দুটো কাগজের প্লেট নামিয়ে নীলের হাতে দিলেন।নীল পা গুটিয়ে বসে কম্বল পাশে সরিয়ে রাখে।তারপর দুটো পার্শেল বের করে একটা নীলের হাতে দিলেন।
–কি আছে?
–মাংস আর রুমালি রুটি।
–তুমি থাকলে আমার চিন্তা নেই।
কথাটা ভাল লাগে জানকির,নীল পার্শেল খুলতে লাগল।জানকি হাত থেকে পার্শেল ছিনিয়ে নিয়ে বলেন,দাঁড়াও।
নীল নীচে নেমে দাড়াতে জানকি নীচু হয়ে পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করে বললেন,হাত ধুয়ে এসো একটু আগে পায়ে হাত দিলে না।
নীল হেসে বেসিনে হাত ধুতে চলে যায়।ফিরে এসে দেখে খাবার, জলের বোতল সাজিয়ে বসে আছেন জানকি।সামনা সামনি বসে দুজনে আহার শেষ করে।নীল জিজ্ঞেস করল,তুমি আমাকে প্রণাম করলে?
--তুমি পায়ে হাত দিলে আমার দেবতা না?
নীল অবাক হয় এ একেবারে অন্য জানকি। জানকি প্লেট হাড়ের টুকরো কুড়িয়ে নিয়ে বেসিনের দিকে গেলেন।নীল বসে আছে চুপচাপ। হঠাৎ খেয়াল হয় অনেক্ষন গেছে জানকি এত দেরী হচ্ছে কেন?উঠে দেখতে গেল।অবাক হয়ে দেখল দরজার কাছে দাঁড়িয়ে জানকি সিগারেট টানছেন।
–তুমি সিগারেট খাও?
জানকি হেসে বলেন,তোমার পছন্দ নয়?
–না তা নয়–।
–তুমি খাবে? বলে প্যাকেট এগিয়ে দিলেন।
–আমি খাই না।ছোট বেলা একবার লুকিয়ে খেয়েছিলাম।চলো কুপে বসে খাবে।
কুপে ফিরে এসে জানকি বললেন,এখন একটান দিয়ে দেখো।
–তাহলে ঐটা দাও।বলে জানকির মুখ থেকে সিগারেটটা নিয়ে টান দিয়ে খুক খুক করে কাশতে থাকে।চোখে জল এসে যায়। জানকি জামার কলার দিয়ে মোছাতে গেলে স্তন বেরিয়ে পড়ে।নীল স্তনে হাত দিয়ে হেসে বলে,আমার দুধ খেতে খুব ভাল লাগে।
–এখন না বাড়ি গিয়ে খেও–যত ইচ্ছে।খালি দুষ্টুমি!বলে চুমু খেলেন।বিছানা করে নীলের মাথা কোলে নিয়ে জানকি বললেন,এবার ঘুমাও।
--তুমি?
--ট্রেনে আমার ঘুম আসেনা।
জানকির পেটে আঙুল দিয়ে আকিবুকি কাটতে থাকে।জানকির মন তখন বহুদূরে ভোর ভোর পৌছে যাবে।বাড়িতে বিয়ের জন্য তাগাদা দেয় আজ নিয়ে চলেছে সঙ্গে করে।বাড়ীর লোকের মুখগুলো সামনে ভেসে ওঠে।
ভোরের আলো ফুটতে না-ফুটতে পিছনের বাগানে দয়েল শালিক চখা-চখির কিচিরমিচির শুরু হয়ে যায়।ঘুম ভেঙ্গে চোখ মেলেন জানকি।গত রাতের কথা মনে পড়তে ঘাড় ঘুরিয়ে দেখলেন পাশে খোকন নেই।মনে মনে হাসেন।মাথার কাছে রাখা পাঞ্জাবি পরে নিলেন।তারপর কয়েকটা ফোন করলেন।খোকন কি এখনো ঘুমোচ্ছে?
পার্টির লোকজনে প্রতিক্রিয়া অনুমান করার চেষ্টা করেন।অন্যান্য স্টেট নিয়ে চিন্তা নেই বাঙাল উড়ষ্যার কমরেডরা ব্যাপারটা নিয়ে হৈ-চৈ করতে পারে। বিয়ে করেনি তা নিয়ে অনেক গালগল্প কানে এসেছে বিয়ে করলেও তারা থেমে যাবে না যারা গসিপ ভালবাসে তারা করবেই।
কিছুক্ষন পরে শৈল চা দিয়ে গেল।চা খেয়ে নিত্যকার মত পিছনের বাগানে হাটতে গেলেন জানকি।যমুনা মাঠ সেরে ফিরে এসেছেন।কর্তার হুকুম ভাল-মন্দ রান্না করতে হবে।ওনার কমরেড চলে যাবে আজ।বাড়ির মধ্যে বাইরের লোক তার পছন্দ নয়।বাঁচা যায় আপদ বিদায় হলে,মনটা তাই ফুরফুরে।বনু ঘুমোচ্ছে, জামাই এসেছে কত রাতে ঘুমিয়েছে কে জানে।যমুনা নারী-পুরুষের একটা সম্পর্কই জানেন।
জানকির শরীরের মধ্যে একটা অনুভুতির টের পান।আগে এরকম হতো না।ড মুখার্জী বয়স্ক মানুষ সেই একবারই যা হয়েছে।যেচে বলা যায় আমাকে করো।কোনো কারণে কামার্ত হলে মাথার ঠিক থাকে না।পার্টির মধ্যে এরকম ঘটনা ঘটেছে।পরে ক্ষমা টমা চেয়ে মিট্মাট করতে হয়েছে। খোকন একেবারে আলাদা।ও বলছিল শরীর ওর কাছে গৌন।যাক সময় চলে যাচ্ছে না।বাসায় ফিরে প্রস্তুত হতে থাকেন।
জানকি একবার পার্টি অফিসে যাবেন।এদিক-ওদিক তাকিয়ে তার চোখ কাকে যেন খোজে।পার্ট অফিসে পৌছে দেখলেন কমরেডরা উত্তেজিত।তাকে দেখে ভীড় থেকে এগিয়ে এলেন কমরেড হৃষিকেশ মাইতি।
–কমরেড পুলিশ খুব বাড়াবাড়ি করছে।
নিজের চেয়ারে বসতে বসতে জিজ্ঞেস করলেন জানকি,কেন কি করলো?
–আজ ভোরবেলা নন্দকে এ্যারেষ্ট করেছে।
–কেন? সে কি করেছে?
–নন্দ পার্টির এ্যাসেট,এই সময় তাকে যদি আটকে রাখে তাহলে নির্বাচনে তার প্রভাব পড়বে।
–কতদিন রাজনীতি করছেন?
হৃষিকেশ মাইতি থমকে গেলেন।তারপর আমতা আমতা করে বলেন,সবাই বলছিল বিরোধীরা ফাকা মাঠে গোল করে বেরিয়ে যাবে,নন্দ থাকলে সেই সাহস করতো না।
–শুনুন কমরেড মাইতি নন্দ কোন দোষ না করলে পুলিশ বেশিক্ষন তাকে আটকে রাখতে পারবে না।পুলিশকে তার কাজ করতে দিন।দশ জনে খেলেও ম্যাচ জেতা যায়।ভরসা রাখুন এই ম্যাচ আমাদের।স্ক্রুটিনি ইত্যাদি কতদুর কি হল সব বাড়ী বাড়ী ঘুরে ভোটার স্লিপ বিলি হল কিনা দেখুন।ধরে নিন নির্বাচন হয়ে গেছে এখন কেবল ফল প্রকাশের অপেক্ষা।
কমরেড জানকির কথা শুনলে মনে ভরসা আসে,হৃষিকেশ মাইতি দুশ্চিন্তার ভারমুক্ত হলেন। ভীড়ের উত্তেজনা এখন স্তিমিত।
বাস্তবিক নির্বাচনে আদিবাসিগোষ্ঠী বিপুল উৎসাহে এসেছিল ভোট দিতে অন্যান্যবার যা দেখা যায়নি।হৃষিকেশ মাইতিও জিতেছিলেন বিপুল ভোটে।এসব পরের কথা।
অনিতা ওষুধ কিনতে এসেছে।চায়না ওর মুখের দিকে তাকিয়ে কিছু বোঝার চেষ্টা করেন।নীল বলছিল কলকাতা যাবে তাকে কিছু বলেনি?দোকানে ভীড় চায়না এগিয়ে গিয়ে বললেন,কই দেখি প্রেস্ক্রিশন।
অনিতা প্রেসক্রিপশন এগিয়ে দিল।চায়না নিজেই ওষুধ বের করতে থাকেন।পল্টূ বলল,ম্যাডাম আমাকে দিন।
--তুমি ওদিকটা দেখো।চায়না নিজেই ওষুধ বাছাই করতে থাকেন।
টেবিলে বসে বিল করতে করতে ইশারায় অনিতাকে ভিতরে ডাকেন।অনিতা ডালা ঠেলে ভিতরে যেতে নীচু গলায় বললেন,নীলুর খবর কি?
--কে নীলু?অনিতা বলল।
চায়না লেখা থামিয়ে চোখ তুলে দেখিলেন।আর কিছু বললেন না।নীলুকে চেনে না।
বিমর্ষ্মুখে জানকি বাসায় ফিরলেন।সারাদিনে একবার দেখা হলনা।বেলা বাড়তে থাকে,মন ভীষণ চঞ্চল।তাহলে কি মত বদলেছে?লজ্জায় সামনা সামনি হতে চাইছে না।পোড় খাওয়া রাজনীতিক জানকি অত সহজে ভেঙ্গে পড়ার মেয়ে নয়।এর আগেও বড় ঘটনার সম্মুখীন হয়েছেন সামলে নিয়েছেন।পরিস্থিতিকে সহজভাবে মেনে নিতে জানেন।
বিকেল বেলা বিশাল জনতা নিয়ে জানকি ট্রেন ধরতে গেলেন খড়গপুরে।লালসেলাম ধ্বনিতে মুখর প্লাটফর্ম।অন্যান্য কামরার কৌতুহলি যাত্রীরা উকি দিয়ে দেখছে। কেউ কেউ পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করল।কমরেডের মুখ দেখে সবার মনে হয় এতদিন ছিলেন সেজন্য মন খারাপ।অনেকের চোখে জল এসে যায়। মহাদেব পালকে বললেন,আপনার কথা মনে আছে।
দূর থেকে সব দেখছিল নীল। মনে মনে ভাবছিল কি অবস্থা হবে যখন মহাদেব পাল জানতে পারবে তার ছেলে বাড়ী ছেড়ে চলে গেছে।মনা হয়তো স্বস্তির শ্বাস ফেলবে,তার লজ্জার সাক্ষী চলে গেছে অনেক দুরে।দু-বেলা চোখের সামনে দেখে আর সঙ্কুচিত হতে হবেনা।ট্রেন ছেড়ে দিল জানকি জানলা দিয়ে মুখ বের করে হাত নাড়েন।তারপর যেখানে নির্দিষ্ট জায়গা রিজার্ভ কুপে গিয়ে বসলেন।রুমাল বের করে মুখ মুছে আপন মনে হাসলেন।খোকন এল না।ট্রেনের গতি বাড়তে থাকে।জানকি জানলার ধারে হেলান দিয়ে ছলছল চোখে বাইরের দিকে তাকিয়ে থাকেন।
যা বাবাঃ গায়েব হয়ে গেল নাকি?নীল ট্রেনে উঠে সব যাত্রীদের মুখ তন্ন তন্ন করে খোজে জাকির দেখা নেই।ট্রেনের সিস্টেম তার ভাল জানা নেই।পকেটে হাত দিয়ে টিকিটটা অনুভব করে।একটু দূরে একজন চেকার দেখে এগিয়ে গেল।সব শুনে চেকার হতভম্ব।এই কুপে একজন বড় নেত্রী আছে উনি জানেন।জেরক্সে চোখ বুলিয়ে জিজ্ঞেস করেন,আপনি কে?
--আমার নাম নীলাদ্রি শেখর রায়।
জেরক্সে তাই লেখা।চেকার বললেন,আপনি আমার সঙ্গে আসুন।
কুপের কাছে গিয়ে দরজায় টোকা দিলেন।ভিতর থেকে আওয়াজ এল,কে-এ?
--ম্যাডাম আমি চেকার একটূ ডিস্টার্ব করলাম।
জানকি দরজা খুলতেই চেকার বললেন,ইনি খোজ করছিলেন,আপনি চেনেন?
জানকির চোখে জল আসার উপক্রম।বললেন,ভিতরে এসো।আপনাকে ধন্যবাদ।
দরজা বন্ধ করে জড়িয়ে ধরলেন নীলকে বললেন,এরকম কেউ করে।এখনো আমার বুক ঢিপঢিপ করছে।
--বারে কি করলাম?
সিটে বসতে বসতে বল্লেন,কোথায় ছিলে সারাদিন?আমার চিন্তা হয়না?
নীল পাশে বসে বলল,চলে যাব তাই শেষবারের মত গ্রাম দেখতে বেরিয়েছিলাম।
--পা তুলে আমার দিকে ঘুরে বোসো।খুব খারাপ লাগছে?
--একটা মেয়ে অনিতার সঙ্গে দেখা হল।ওর মা অসুস্থ ওষুধ কিনতে যাচ্ছিল।কলকাতায় যাচ্ছি শুনে এমনভাবে হাসল খুব খারাপ লাগল।
--অনিতা কে?
--আমার বোনের বন্ধু।মঙ্গলার মা অনেক সহজ সরল চায়নাআণ্টির মত কৌশলী নয়।
--আমাকে কেমন মনে হয়?
--তুমি বাইরে যেমন ভাবই করো ভিতরে খুব নরম।জানকির পা কোলে নিয়ে মট মট আঙুল ফোটাতে থাকে নীল।
জানকি খুশিতে ভরপুর,যেমনটি চেয়েছিল বুঝি তার বেশিই পেয়ে গেল।
--আচ্ছা এখানে তো চারজন বসা যায়।
--পুরোটা রিজার্ভ করা।
--তাহলে টাকা অনেক বেশি লাগিল না?
--আমাকে কিছু দিতে হয়নি পার্টি থেকে বুক করে দিয়েছে,।
গাড়ি ছুটে চলেছে।জানকির পায়ে হাত বোলাতে বোলাতে নীল জিজ্ঞেস করে,গাড়ি ত উল্টো দিকে চলছে।আমরা কোথায় যাচ্ছি?
–আমার গ্রামে।
–কোথায় তোমার গ্রাম?
–নিয়ালি।ভুবনেশ্বর নেমে যেতে হয়।
–তুমি যে বললে কলকাতায় গিয়ে পড়বো?
–তোমার জাকির পরে ভরসা নেই?
আলো কমে এসেছে সন্ধ্যে হয় হয় শৈলপিসি ঘরবার করে খোকন কমরেডের সঙ্গে পলাল নাতো।ছেলেটা সেই সকালে খেয়ে বেরিয়েছে এখনো ফিরল না কারো কোনো হুশ নেই।যমুনার সঙ্গে দেখা হতে শৈল বলল,খোকন গেল কোথায়?পলাইল নাতো?
--তোর যত অলক্ষুনে কথা।দ্যাখ কোথায় ঘুরে বেড়াচ্ছে।
--এ কেমন কথা তোমার চিন্তা হয়না?
--এত বকিস কেন?মার চেয়ে মাসীর দরদ বেশি।
--এ তুমি কেমন মা?ছেলেটা কোন সকালে বেরল তোমার চিন্তা হয়না?
যমুনা জ্বলে ওঠেন,তুই খোকনের কে?কাজের লোক কাজের মত থাকবি।দিন দিন তোর আস্পর্ধা বাড়ছে।
--কাজের নোক সেইটা ঠিক তোমার বিয়ের আগের থেকে এ বাড়ীতে আছি।যেচে আসিনি তোমার ভাতার আমাকে নিয়ে এসেছে।
--এই মাগী আমাকে মুখ খোলাবি না।ভেবেছিস আমি কিছু বুঝিনা?
শৈলপিসি হেসে বলল,সেতো তুমিও বোঝো আমিও বুঝি ঐসব কথা থাক।
[--বক বক নাকরে চা কর।
সবাই খাবার উদ্যোগ করছে।জানকি বাঙ্কের থেকে একটা ব্যাগ নামিয়ে দুটো কাগজের প্লেট নামিয়ে নীলের হাতে দিলেন।নীল পা গুটিয়ে বসে কম্বল পাশে সরিয়ে রাখে।তারপর দুটো পার্শেল বের করে একটা নীলের হাতে দিলেন।
–কি আছে?
–মাংস আর রুমালি রুটি।
–তুমি থাকলে আমার চিন্তা নেই।
কথাটা ভাল লাগে জানকির,নীল পার্শেল খুলতে লাগল।জানকি হাত থেকে পার্শেল ছিনিয়ে নিয়ে বলেন,দাঁড়াও।
নীল নীচে নেমে দাড়াতে জানকি নীচু হয়ে পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করে বললেন,হাত ধুয়ে এসো একটু আগে পায়ে হাত দিলে না।
নীল হেসে বেসিনে হাত ধুতে চলে যায়।ফিরে এসে দেখে খাবার, জলের বোতল সাজিয়ে বসে আছেন জানকি।সামনা সামনি বসে দুজনে আহার শেষ করে।নীল জিজ্ঞেস করল,তুমি আমাকে প্রণাম করলে?
--তুমি পায়ে হাত দিলে আমার দেবতা না?
নীল অবাক হয় এ একেবারে অন্য জানকি। জানকি প্লেট হাড়ের টুকরো কুড়িয়ে নিয়ে বেসিনের দিকে গেলেন।নীল বসে আছে চুপচাপ। হঠাৎ খেয়াল হয় অনেক্ষন গেছে জানকি এত দেরী হচ্ছে কেন?উঠে দেখতে গেল।অবাক হয়ে দেখল দরজার কাছে দাঁড়িয়ে জানকি সিগারেট টানছেন।
–তুমি সিগারেট খাও?
জানকি হেসে বলেন,তোমার পছন্দ নয়?
–না তা নয়–।
–তুমি খাবে? বলে প্যাকেট এগিয়ে দিলেন।
–আমি খাই না।ছোট বেলা একবার লুকিয়ে খেয়েছিলাম।চলো কুপে বসে খাবে।
কুপে ফিরে এসে জানকি বললেন,এখন একটান দিয়ে দেখো।
–তাহলে ঐটা দাও।বলে জানকির মুখ থেকে সিগারেটটা নিয়ে টান দিয়ে খুক খুক করে কাশতে থাকে।চোখে জল এসে যায়। জানকি জামার কলার দিয়ে মোছাতে গেলে স্তন বেরিয়ে পড়ে।নীল স্তনে হাত দিয়ে হেসে বলে,আমার দুধ খেতে খুব ভাল লাগে।
–এখন না বাড়ি গিয়ে খেও–যত ইচ্ছে।খালি দুষ্টুমি!বলে চুমু খেলেন।বিছানা করে নীলের মাথা কোলে নিয়ে জানকি বললেন,এবার ঘুমাও।
--তুমি?
--ট্রেনে আমার ঘুম আসেনা।
জানকির পেটে আঙুল দিয়ে আকিবুকি কাটতে থাকে।জানকির মন তখন বহুদূরে ভোর ভোর পৌছে যাবে।বাড়িতে বিয়ের জন্য তাগাদা দেয় আজ নিয়ে চলেছে সঙ্গে করে।বাড়ীর লোকের মুখগুলো সামনে ভেসে ওঠে।