25-07-2020, 07:44 PM
"" এক""
ডি এস পি সহায় সাহেবের ফোনটা ছাড়ার পরে নিশিকান্তের মনে হয় যেন তার কান থেকে এইবার আগুনের হল্কা বেরোবে।
সহায় সাহেব যে ভদ্র ভাষায় তাকে এইভাবে ঝাড়বে তা নিশিকান্ত স্বপ্নেও বোধহয় ভাবতে পারেনি,
সহায় সাহেব তাকে শুধু মা ,বোন তুলে খিস্তি দিতেই বাকি রেখেছিলো আর সবই বলেছে।
আজ সহায় সাহেব বলার আগে নিশিকান্ত নিজেই বোধহয় জানতো না, যে সে এতটা অপদার্থ, অক্ষম, অকর্মণ্য আর মাথামোটা।
তবে সহায় সাহেবেরও খুব একটা দোষ দেওয়া যায় না তা নিশিকান্তও ভালো করেই জানে,
যে খিস্তি সে এখনই শুনলও সে নিশ্চিত যে এই ধরনের বা তার থেকে বেশী কড়া খিস্তি ডি এস পি সহায় সাহেব তার বসের কাছ থেকে নিশ্চয় এখুনি শুনেছেন।
পুলিসের এই রীতি মেনেই এইবার নিশিকান্ত ফোনে তার জুনিয়ার কে ধরে আর সহায় সাহেবের পুরো বক্তব্যটায় কপি পেস্ট করে তাকে ঝেড়ে ভুত ভাগিয়ে দেয়।
চার মাস ধরে এই অশান্তি আর গাল খাওয়ার পালা শুরু হয়েছে, তার আগে জেলার এই ছ টা থানায় সে কিরকম শান্তি আর আরাম ছিল টা বোধহয় এখন কলেজের ইতিহাস বইয়েই খুজতে হবে।
কয়লা, লোহা আরও কত কি যে এইখানে মা লক্ষ্মী বাস করেন তা বোধহয় গুনে শেষ করা যাবে না।
এই জেলা শহরে পোস্টিঙের জন্য কিরকম ধরাধরি চলে তা নিশিকান্ত নিজের অভিজ্ঞতাতেই জানে, তবে তার বেলায় কিন্তু কোনও পলিটিকাল প্রেশার বা সিনিয়ারদের কে কিছু খাইয়ে এই পোস্টিং হয়নি,
উল্টে তাকেই তার এই জেলার সিনিয়ার অফিসাররা যেচেই চেয়ে নিয়েছিলো,
তার একটাই কারন ছিল যে শত বদগুন থাকা স্বত্তেও নিশিকান্ত একটা ব্যাপারে একনম্বর ছিল আর সেটা ছিল তার যে কোন কেস শলভ করার ম্যাজিকের মত দ্রুততা আর সাফল্য।
সহায় সাহেব ছিল নিশিকান্তের ইমিডিয়েট বস আর তার প্রায় ২৫ বছরের চাকরীর সুবাদে তিনি ভালো করেই জানতেন যে একটা পুরুষ মানুষের যতগুলো খারাপ গুন থাকতে পারে তা সবই নিশিকান্তের পুরো মাত্রাই ছিল,
তবে তার কাজের প্রতি পাগলের মত টান এই গুনের জন্যই সহায় সাহেব নিজে তদ্বির করে নিশিকান্তকে এই শিল্পাঞ্চলের জেলায় নিয়ে এসেছিলো,
কারন তিনি জানতেন যে নিশিকান্তের মত শিকারির জন্য এই এলাকা অচিরেই একটা মৃগয়াক্ষেত্র হয়ে দাঁড়াবে।
তবে নিশিকান্ত কে সহায় সাহেব আজ যা বললেন তার কারন এই জেলায় আর তার পার্শ্ববর্তী এলাকায় মাসখানেক ধরেই কয়েকটা রহস্যময় মৃত্যু হয়েছিলো যার কিনারা করা তো দুরের কথা,
সেগুলো আত্মহত্য না খুন সেটাই এই জেলার পুলিশমহল বুঝে উঠতে পারেনি।
আজ নিশিকান্তকে সেই জন্যই সহায় সাহেব মুখে যা এলো তা বলে গেলো কারন ,
আগের মৃত্যুগুলোর কোন সুরহা তো বাদই গেল আজ সকালেই আবার আরেকটা সেই একই রকম লাশ পাওয়া গেছে দুই জেলার সীমান্তবর্তী একটি নদীর ধারে,
সেই একই ধরন মৃত্যুর।
সহায় সাহেব ডি এস পি হিসাবে দায়িত্ব নেবার পরে এটা তার এলাকায় চার নম্বর মৃত্যু , তাই তিনি নিজে যতটা চাপে আছেন, ঠিক তার দিগুন খিস্তির চাপ নিশিকান্তের দিকে ট্র্যান্সফার করে দিচ্ছে সঙ্গে সঙ্গেই।
তবে নিশিকান্ত যতটা না সহায় সাহেবের ওপর রেগে আছে তার থেকে ঢের বেশী সে নিজের উপরেই ক্ষুণ্ণ,
কারন তার ১৪ বছরের সার্ভিস লাইফে এতটা নাকাল সে কোন কেস নিয়েই হয়নি,
তার সব থেকে বেশী রাগের কারন হচ্ছে সে বুঝতেই পারছে না যে মৃত্যুগুলো কি খুন না আত্মহত্য?
প্রথম দেহটা পাওয়া যায় নিশিকান্ত জয়েন করার তিনদিনের মাথায়, সে জীপ নিয়ে ঘটনা স্থলে পৌঁছে দেখে যে একটা বছর বাইশ -চব্বিশের ছেলে দেখে মনে হয় যে কলেজের স্টুডেন্ট হবে,
পরনে ভালো জামাকাপড়, পকেটে দামী ফোন আর মানিব্যাগে টাকাতে ভর্তি,
জামাকাপড়ও খুব একটা অবিন্যাস্ত ছিলনা, দেহটা দেখে মনে হয় যেন ঘুমোতে ঘুমোতেই সে যেন মৃত্যুর দেশে পাড়ি দিয়েছে, চোখে মুখে কোন ছাপ ছিলনা মৃত্যুর।
পোস্টমর্টেমের রিপোর্টে অস্বাভাবিক সেরকম কিছু পাওয়া যায়নি, রিপোর্ট ছিল যে আচমকা প্রেশার ফেল করে স্ট্রোক হয়েই মৃত্যু।
বেড়াল যেমন মাছের গন্ধ পায় ঠিক তেমনি নিশিকান্তের নাকও যেন অপরাধের গন্ধ পায়,
তার এতদিনের অভিজ্ঞতা যেন তাকে কানে কামড়ে বলছিল যে এই ব্যাপারটা যত সোজা দেখতে আদপেই তত সোজা নয়।
ছেলেটির নাম ছিল অর্ণব নন্দী, সে কলেজে রসায়ন নিয়ে মাস্টার্স করছিলো,
তবে নিশিকান্তর একটু খটকা লাগে যখন সে জানতে পারে যে অর্ণবের বাড়ী থেকে ওই নদীর পাড় কিছু না হলেও দশ কিলোমিটার দুরে ছিল আর তার যদি শরীরই খারাপ হয় তাহলে সে ডাক্তারখানা না গিয়ে ওই নির্জন নদীর পাড়ে কি করছিলো ?
তবে তার এই খটকার জবাব অর্ণবের বাড়ীর লোকেরাই দিয়ে দেয়।
তারা জানায় যে অর্ণবের সাত -আটজন বন্ধুদের ওই নদীর পাড়টা একটা নিয়মিত ঠেক ছিল,
নিশিকান্তের সন্দেহ তবুও না যাওয়াতে সে অর্ণবের সমস্ত বন্ধুদের জিজ্ঞাসাবাদ করে জানতে পারে যে সেদিন ওই নদীর পারে অর্ণব ছাড়া আর কেউই যায়নি,
নিশিকান্ত অর্ণবের সমস্ত বন্ধুদের মোবাইল নাম্বার নিয়ে চেকও করে যে তারা ঠিকই বলছে,
কারন সেইদিন অর্ণবের কোন বন্ধুরই মোবাইল টাওয়ার সেই লোকেশনে দেখাচ্ছিল না।
অর্ণবের বাড়ীর লোকও থানায় খুনের রিপোর্ট লেখাতে খুব একটা আগ্রহী ছিলনা,
কারন তাদের ধারণা ছিল যে অর্ণব অসুস্থ হয়েই মারা গেছিলো আর এটার সপক্ষে তারা যুক্তি হিসাবে বলেওছিল যে অর্ণব বেশ কিছুদিন ধরেই অসুস্থ ছিল,
তার অসুখ ডাক্তাররা ধরতে পারেননি, তাই পরীক্ষার পরে অর্ণবের বাবা তাকে নিয়ে দক্ষিণ ভারতে যাবার জন্য টিকিটও কেটে ফেলেছিলো,
তবে কপাল বলেই মেনে নিয়েছিলো অর্ণবের বাড়ীর লোকজনেরা।
কিন্তু নিশিকান্ত কিছুতেই এটা ভেবে উঠতে পারছিলো না যে বাড়ী থেকে অতদুরে একটা অসুস্থ ছেলে অত ভালো জামাকাপড় পড়ে,
পকেটে অত টাকা নিয়ে কেনই বা গেল?
ডি এস পি সহায় সাহেবের ফোনটা ছাড়ার পরে নিশিকান্তের মনে হয় যেন তার কান থেকে এইবার আগুনের হল্কা বেরোবে।
সহায় সাহেব যে ভদ্র ভাষায় তাকে এইভাবে ঝাড়বে তা নিশিকান্ত স্বপ্নেও বোধহয় ভাবতে পারেনি,
সহায় সাহেব তাকে শুধু মা ,বোন তুলে খিস্তি দিতেই বাকি রেখেছিলো আর সবই বলেছে।
আজ সহায় সাহেব বলার আগে নিশিকান্ত নিজেই বোধহয় জানতো না, যে সে এতটা অপদার্থ, অক্ষম, অকর্মণ্য আর মাথামোটা।
তবে সহায় সাহেবেরও খুব একটা দোষ দেওয়া যায় না তা নিশিকান্তও ভালো করেই জানে,
যে খিস্তি সে এখনই শুনলও সে নিশ্চিত যে এই ধরনের বা তার থেকে বেশী কড়া খিস্তি ডি এস পি সহায় সাহেব তার বসের কাছ থেকে নিশ্চয় এখুনি শুনেছেন।
পুলিসের এই রীতি মেনেই এইবার নিশিকান্ত ফোনে তার জুনিয়ার কে ধরে আর সহায় সাহেবের পুরো বক্তব্যটায় কপি পেস্ট করে তাকে ঝেড়ে ভুত ভাগিয়ে দেয়।
চার মাস ধরে এই অশান্তি আর গাল খাওয়ার পালা শুরু হয়েছে, তার আগে জেলার এই ছ টা থানায় সে কিরকম শান্তি আর আরাম ছিল টা বোধহয় এখন কলেজের ইতিহাস বইয়েই খুজতে হবে।
কয়লা, লোহা আরও কত কি যে এইখানে মা লক্ষ্মী বাস করেন তা বোধহয় গুনে শেষ করা যাবে না।
এই জেলা শহরে পোস্টিঙের জন্য কিরকম ধরাধরি চলে তা নিশিকান্ত নিজের অভিজ্ঞতাতেই জানে, তবে তার বেলায় কিন্তু কোনও পলিটিকাল প্রেশার বা সিনিয়ারদের কে কিছু খাইয়ে এই পোস্টিং হয়নি,
উল্টে তাকেই তার এই জেলার সিনিয়ার অফিসাররা যেচেই চেয়ে নিয়েছিলো,
তার একটাই কারন ছিল যে শত বদগুন থাকা স্বত্তেও নিশিকান্ত একটা ব্যাপারে একনম্বর ছিল আর সেটা ছিল তার যে কোন কেস শলভ করার ম্যাজিকের মত দ্রুততা আর সাফল্য।
সহায় সাহেব ছিল নিশিকান্তের ইমিডিয়েট বস আর তার প্রায় ২৫ বছরের চাকরীর সুবাদে তিনি ভালো করেই জানতেন যে একটা পুরুষ মানুষের যতগুলো খারাপ গুন থাকতে পারে তা সবই নিশিকান্তের পুরো মাত্রাই ছিল,
তবে তার কাজের প্রতি পাগলের মত টান এই গুনের জন্যই সহায় সাহেব নিজে তদ্বির করে নিশিকান্তকে এই শিল্পাঞ্চলের জেলায় নিয়ে এসেছিলো,
কারন তিনি জানতেন যে নিশিকান্তের মত শিকারির জন্য এই এলাকা অচিরেই একটা মৃগয়াক্ষেত্র হয়ে দাঁড়াবে।
তবে নিশিকান্ত কে সহায় সাহেব আজ যা বললেন তার কারন এই জেলায় আর তার পার্শ্ববর্তী এলাকায় মাসখানেক ধরেই কয়েকটা রহস্যময় মৃত্যু হয়েছিলো যার কিনারা করা তো দুরের কথা,
সেগুলো আত্মহত্য না খুন সেটাই এই জেলার পুলিশমহল বুঝে উঠতে পারেনি।
আজ নিশিকান্তকে সেই জন্যই সহায় সাহেব মুখে যা এলো তা বলে গেলো কারন ,
আগের মৃত্যুগুলোর কোন সুরহা তো বাদই গেল আজ সকালেই আবার আরেকটা সেই একই রকম লাশ পাওয়া গেছে দুই জেলার সীমান্তবর্তী একটি নদীর ধারে,
সেই একই ধরন মৃত্যুর।
সহায় সাহেব ডি এস পি হিসাবে দায়িত্ব নেবার পরে এটা তার এলাকায় চার নম্বর মৃত্যু , তাই তিনি নিজে যতটা চাপে আছেন, ঠিক তার দিগুন খিস্তির চাপ নিশিকান্তের দিকে ট্র্যান্সফার করে দিচ্ছে সঙ্গে সঙ্গেই।
তবে নিশিকান্ত যতটা না সহায় সাহেবের ওপর রেগে আছে তার থেকে ঢের বেশী সে নিজের উপরেই ক্ষুণ্ণ,
কারন তার ১৪ বছরের সার্ভিস লাইফে এতটা নাকাল সে কোন কেস নিয়েই হয়নি,
তার সব থেকে বেশী রাগের কারন হচ্ছে সে বুঝতেই পারছে না যে মৃত্যুগুলো কি খুন না আত্মহত্য?
প্রথম দেহটা পাওয়া যায় নিশিকান্ত জয়েন করার তিনদিনের মাথায়, সে জীপ নিয়ে ঘটনা স্থলে পৌঁছে দেখে যে একটা বছর বাইশ -চব্বিশের ছেলে দেখে মনে হয় যে কলেজের স্টুডেন্ট হবে,
পরনে ভালো জামাকাপড়, পকেটে দামী ফোন আর মানিব্যাগে টাকাতে ভর্তি,
জামাকাপড়ও খুব একটা অবিন্যাস্ত ছিলনা, দেহটা দেখে মনে হয় যেন ঘুমোতে ঘুমোতেই সে যেন মৃত্যুর দেশে পাড়ি দিয়েছে, চোখে মুখে কোন ছাপ ছিলনা মৃত্যুর।
পোস্টমর্টেমের রিপোর্টে অস্বাভাবিক সেরকম কিছু পাওয়া যায়নি, রিপোর্ট ছিল যে আচমকা প্রেশার ফেল করে স্ট্রোক হয়েই মৃত্যু।
বেড়াল যেমন মাছের গন্ধ পায় ঠিক তেমনি নিশিকান্তের নাকও যেন অপরাধের গন্ধ পায়,
তার এতদিনের অভিজ্ঞতা যেন তাকে কানে কামড়ে বলছিল যে এই ব্যাপারটা যত সোজা দেখতে আদপেই তত সোজা নয়।
ছেলেটির নাম ছিল অর্ণব নন্দী, সে কলেজে রসায়ন নিয়ে মাস্টার্স করছিলো,
তবে নিশিকান্তর একটু খটকা লাগে যখন সে জানতে পারে যে অর্ণবের বাড়ী থেকে ওই নদীর পাড় কিছু না হলেও দশ কিলোমিটার দুরে ছিল আর তার যদি শরীরই খারাপ হয় তাহলে সে ডাক্তারখানা না গিয়ে ওই নির্জন নদীর পাড়ে কি করছিলো ?
তবে তার এই খটকার জবাব অর্ণবের বাড়ীর লোকেরাই দিয়ে দেয়।
তারা জানায় যে অর্ণবের সাত -আটজন বন্ধুদের ওই নদীর পাড়টা একটা নিয়মিত ঠেক ছিল,
নিশিকান্তের সন্দেহ তবুও না যাওয়াতে সে অর্ণবের সমস্ত বন্ধুদের জিজ্ঞাসাবাদ করে জানতে পারে যে সেদিন ওই নদীর পারে অর্ণব ছাড়া আর কেউই যায়নি,
নিশিকান্ত অর্ণবের সমস্ত বন্ধুদের মোবাইল নাম্বার নিয়ে চেকও করে যে তারা ঠিকই বলছে,
কারন সেইদিন অর্ণবের কোন বন্ধুরই মোবাইল টাওয়ার সেই লোকেশনে দেখাচ্ছিল না।
অর্ণবের বাড়ীর লোকও থানায় খুনের রিপোর্ট লেখাতে খুব একটা আগ্রহী ছিলনা,
কারন তাদের ধারণা ছিল যে অর্ণব অসুস্থ হয়েই মারা গেছিলো আর এটার সপক্ষে তারা যুক্তি হিসাবে বলেওছিল যে অর্ণব বেশ কিছুদিন ধরেই অসুস্থ ছিল,
তার অসুখ ডাক্তাররা ধরতে পারেননি, তাই পরীক্ষার পরে অর্ণবের বাবা তাকে নিয়ে দক্ষিণ ভারতে যাবার জন্য টিকিটও কেটে ফেলেছিলো,
তবে কপাল বলেই মেনে নিয়েছিলো অর্ণবের বাড়ীর লোকজনেরা।
কিন্তু নিশিকান্ত কিছুতেই এটা ভেবে উঠতে পারছিলো না যে বাড়ী থেকে অতদুরে একটা অসুস্থ ছেলে অত ভালো জামাকাপড় পড়ে,
পকেটে অত টাকা নিয়ে কেনই বা গেল?
""পৃথিবীটা রঙ্গমঞ্চ আমরা সবাই অভিনেতা"" !!