24-07-2020, 07:06 PM
(This post was last modified: 11-09-2020, 09:08 PM by kumdev. Edited 1 time in total. Edited 1 time in total.)
[২৭]
হৃষিকেশ মাইতি বেশ খুশি,কমরেড জানকি টিভি ক্যামেরার সামনে তার জয় নিশ্চিত বলায়। তিনি কমরেড জানকির পাশেই বসেছিলেন।রাত হয়েছে ভীড় ক্রমশ কমছে পার্টি অফিসে।কমরেড মাইতি উঠে পড়লেন,কাল ম্যাডাম চলে যাবেন।কলকাতা থেকে ক্যুরিয়ার মারফৎ টিকিট এসে গেছে।
–আজ আসি ম্যাডাম? হৃষিকেশ মাইতি বলেন।
–আচ্ছা,দেখা হবে কলকাতায়।হেসে বললেন জানকি।
এত পরিশ্রম তার পরেও মুখে লেগে আছে হাসি।কমরেড জানকি দেখার ফুরসৎ পাননি,এবার ব্যাগ খুলে পার্শেল বের করে দেখলেন,একটি টিকিটেই দুজনের নাম। মিস জানকি পাণ্ডা,মিস্টার অরুণ পাল।মুখে মৃদু হাসি খেলে
যায়,পরমুহুর্তে ঠোটে ঠোট চেপে কি ভাবেন।এখন কি খোকন বাড়িতে?দু-একজন যারা ছিলেন তাদের বললেন,আমি আসি।আমার কাজ আমি করে গেলাম। এবার আপনারা সামলে নেবেন।পুলিশের কাজে হস্তক্ষেপ করবেন না,মানুষ ভাল ভাবে নেয়না।
কমরেড জানকি চলে যাবার কিছুক্ষন পর ঢুকল নন্দ পয়াল।
–কিরে সারাদিন কোথায় ছিলি? শালা টিভিতে ছবি উঠল-হেভি গ্যাঞ্জাম।কাল দেখাবে টিভিতে।
নন্দ কোন কথা বলেনা,বসে চুপচাপ সিগারেট ধরায়।
–কি বস একা একাই মৌজ করবে?এক পিস ছাড়ো।
নন্দ সিগারেটের প্যাকেট এগিয়ে দিল,অন্যরা প্যাকেট থেকে সিগারেট নিয়ে মৌজ করে টানতে থাকে।
মহাদেববাবুর বাড়ির নীচে গাড়ি থামতে কমরেড জানকি নেমে এদিক ওদিক দেখলেন,আশপাশে কেউ নেই।একটা কুকুর বিরক্ত হয়ে কেউকেউ করে সরে গেল।দোতলায় উঠতে উঠতে কাকে যেন খুজছে চোখ।ঘরে ঢুকে পোষাক বদলে গা এলিয়ে দিলেন বিছানায়।একটু ঝিমুনি এসে থাকবে সম্ভবত,শব্দ পেয়ে চোখ খোলেন।শৈলপিসি খাবার নামিয়ে রাখছে।
–সবার খাওয়া হয়ে গেছে?
শৈল চলে যাচ্ছিল,জানকির কথায় দাঁড়িয়ে পড়ে।ফিরে দাঁড়িয়ে বলে,দাদায় ফেরে নাই।খোকন কেন আজ এত দেরি করছে?শৈলকে চিন্তিত মনে হল।
–কোথায় গেছে খোকন?
–পড়াইতে কিন্তু সেতো সেই বিকালে, এত বয়স হল তবু মায়েরে ভুলতে পারেনা।তালাশ করে বেড়ায় সে থাকলে ত পাবি।
জানকির মনে হল খোকনের প্রতি এই মহিলারই যা একটু টান।কাল বিকেলে গাড়ি,এত ব্যস্ত হবার কিছু নেই তবু চিন্তা পিছু ছাড়ছেনা।খেয়েদেয়ে শোবার আয়োজন করতে থাকেন।বেশ ঠাণ্ডা পড়েছে,বিছানায় উঠে লেপের মধ্যে ঢুকে একটা বই নিয়ে আধশোয়া হয়ে চোখ বোলাচ্ছেন।টিভি সাক্ষাৎ কার মন্দ হয়নি।ছোকরা সাংবাদিকটা নারীর ইজ্জৎ নিয়ে নানা প্রশ্ন করছিল, সম্ভবত তিনি মেয়ে বলে।এমন বিরক্তিকর লাগছিল ভাবলেন একবার জিজ্ঞেস করেন,নারীর ইজ্জৎ কি তাদের সতীচ্ছদেই সীমাবদ্ধ? তার গুণাবলী শিক্ষা মহানুভবতা প্রতিভা ইত্যাদির কোন মূল্য নেই? নিজেকে সংযত করলেন,নাহলে কি কথার কি অর্থ করে সংবাদের শিরোনাম খাড়া করে হৈচৈ বাধাবে।মনে হল দরজায় কে যেন খুটখট করল?মহাদেববাবু নিশ্চয়ই আসবেননা এতরাতে।
–কে? কমরেড?
–ঘুমিয়ে পড়েছেন?
মহাদেববাবুর গলা পেয়ে দ্রুত একটি চাদর জড়িয়ে নিয়ে দরজা খোলেন জানকি।কি ব্যাপার আসুন।
–ফিরতে এত দেরী হয়ে গেল হে-হে-হে–।আপনি আবার কাল চলে যাচ্ছেন।ভাবলাম দেখা করে আসি।
–সেতো বিকেলবেলা।
–তখন তো ভীড়ের মধ্যে আপনাকে একা পাবোনা।একটা প্রাইভেট কথা–।
–প্রাইভেট? জানকির কপালে ভাজ পড়ে ভাবেন,খোকনকে নিয়ে নয়তো?
–আমরা গ্রামের মানুষ পেচিয়ে কথা বলতে পারিনা।নমিনেশন পাইনি কোন দুঃখ নেই।পার্টি যাকে যোগ্য মনে
করেছে সেই ব্যাপারে আমি কিছু বলছিনা।কিন্তু আমি কি মিন্সিপ্যালিটিরও যোগ্য নই?
এতক্ষনে জানকি স্বস্তির শ্বাস ফেলেন।মহাদেববাবুর দিকে তাকিয়ে বলেন,সেতো অনেক দেরী আছে তা ছাড়া পৌরসভার ব্যাপার জেলা কমিটি দেখে।
–তা জানি কিন্তু স্টেট কমিটির অনুমোদন নাহলে মানে আমি বলতে চাই,শিক্ষাগত যোগ্যতা ছাড়া অভিজ্ঞতার কথাটা কি আমরা অস্বীকার করতে পারি?
–অভিজ্ঞতা শিক্ষার অংশ তা অস্বীকার করা যায় কিভাবে? ঠিক আছে এখন বিধান সভার কথা ভাবুন সময় হলে অন্য কথা ভাবা যাবে।
–ব্যস আমার আর কিছু বলার নেই আপনি যখন বলেছেন আমি নিশ্চিত হলাম।আপনি বিশ্রাম করেন।আসি কমরেড।
এবার জানকির অভিমান হয়,কি আক্কেল খোকনের?যা বলার স্পষ্ট করে বললেই হয়।চোখের পাতা ভিজে যায়।ঘুরে বিছানা দিকে যেতে গিয়ে আবার দরজায় খুটখুট শব্দ।দরজা খুলতেই দমকা হাওয়ার মত প্রবেশ করে নীল।
–এতক্ষনে সময় হল?
–কি করে আসবো?মহাদেব পালের সঙ্গে তুমি গপ্পো করছো।
–বাজে কথা বলবেনা,চিন্তায় চিন্তায় কি অবস্থা আমার।
–আর আমার বুঝি চিন্তা হয়না? আমার মন এখন খুব খারাপ।
–কেন মনের আবার কি হল?কমরেড জানকি শঙ্কিত হলেন তা হলে কি কাল যাওয়া নিয়ে কোনো দ্বিধা?
–আজ খুব শীত পড়েছে তাইনা?
জানকির শীত চলে গেছে,মন খারাপের কারণ না জানা অবধি স্বস্তি পাচ্ছেননা।অপেক্ষা করেন কি বলে খোকন।জিজ্ঞেস করেন,কেন মন খারাপ বললে না তো?
–সেকি একটা? তোমাকে বলব না তো কাকে বলবো?
মহাদেববাবু ঠিকই বলেছেন ছেলেটা তার ক্ষ্যাপাটে,অসংলগ্ন কথাবার্তা।জানকি বলেন,একটা-একটা করে বলো।
–জানো প্রথমে আমার খুব রাগ হয়েছিল,পরে বুঝলাম আমি শুধু নিজের দিকটাই ভেবেছি। চায়নাআণ্টির দিকটাও ভাবতে হবে।
চায়না নামটা শোনা-শোনা জানকি মনে করার চেষ্টা করেন কোথায় শুনেছেন?
–চায়নাআণ্টি আর সম্পর্ক রাখতে চায়না।
জানকির মনে পড়ে মহাদেববাবু বলেছিলেন চায়না নামে এক বিধবার কথা,নীল কি তার কথা বলছে? জিজ্ঞেস করেন, চায়না মানে যার ওষুধের দোকান আছে?
–হ্যা ললিতকাকু মারা যাবার পর চায়নাআণ্টিই তো দোকান সামলায়।তুমি রাগ করবেনা বলো? আমি চায়নাআণ্টিকে ভালবেসে ফেলেছিলাম।
–কিন্তু তিনি বিধবা, সেতো অবৈধ সম্পর্ক।
--তুমিই বলেছিলে পরস্পর কম্ফোর্ট--।
--আচ্ছা ঠিক আছে তুমি বলো।
--চায়না আণ্টি আমাকে ভুল বুঝেছে।আমি তার কাছে শারীরি সুখের জন্য যেতাম না। শারীরি সুখ আমার কাছে গৌণ--।
--তা হলে কেন যেতে?
–আগে বলো তুমি রাগ করোনি?
জানকি ভাবেন,এর উপর কিভাবে রাগ করা যায়? হেসে বলেন,বলো কি বলছিলে?
--একজন নারী বিপুল ঐশ্বর্যের অধিকারিণী।পরশমণির কথা শুনেছো যার স্পর্শে লোহা সোনা হয়ে যায়?পরশমণির মত তার সাহচর্যে বিমল আনন্দ পাওয়া যায়।একজন পুরুষের সাফল্যের পিছনে থাকে একজন নারীর হাত খুব পুরানো কথা।তবে সেই আনন্দ উপভোগের মত মন থাকতে হবে।সবাই পারে না শরীর নিয়ে টানাটানি করে।মাটির সম্পদ আহরণ করতে পারে একমাত্র গাছ।
জানকি মুগ্ধ বিস্ময়ে শুনতে থাকেন মনে হচ্ছে কুরে কুরে তার ভিতরের ভাবনাগুলো বের করে আনছে।তার ভিতরে ছিল অথচ তিনিই টের পাননি। বললেন,কাজের কথা সেরে নি।
টিকিটের জেরক্স কপি এগিয়ে দিয়ে বললেন,এটা রাখো।তোমার ইচ্ছে হলে যাবে।
--এটা দিয়ে আমি কি করব? কলকাতায় গিয়ে থাকব কোথায়?
--গড়িয়ায় আমার ফ্লাট আছে সেখানে থাকবে।ট্রেনে আমাকে তুলে দিতে অনেক লোক থাকবে।তুমি আমার সঙ্গে যাচ্ছো কেউ জানুক আমি চাইনা।
--বুঝেছি পাছে সবাই জেনে যায় তাই--।
--তুমি কিছুই বোঝোনি।সময় হলে আমিই সব জানাবো শুধু স্ক্যাণ্ডাল এড়াতে চাই।ট্রেন ছেড়ে দেবার পর আমার সঙ্গে মিট করবে।
নীল এমনভাবে তাকায় যেন জানকিকে নতুন করে চিনছে।জানকি জিজ্ঞেস করেন,কি হল?
--জানু তোমাকে একবার জড়িয়ে ধরতে ইচ্ছে করছে।
--ধরো কিন্তু আমাকে আর কখনো জানু বলবে না।
--কেন জানু কি খারাপ কথা?
--হ্যা খারাপ শুনলে গা রি-রি করে বমী পায়।
নীল বোকার মত দাঁড়িয়ে থাকে জানকি বললেন,এত সুন্দর কথা বলো একটা ভালো নাম দিতে পারোনা?দু-হাত বাড়িয়ে দিয়ে বললেন, এসো।
বুকের উপর ঝাপিয়ে পড়ে নীল।জানকি নিজেকে সামলে নিয়ে বললেন, কি হচ্ছে কি পড়ে যাবো।
–তুমি কোনদিন আমাকে তাড়িয়ে দেবেনা তো?
জানকির চোখে জল এসে যায়।কাকে নিয়ে জীবন-সমুদ্র পাড়ি দেবার কথা ভাবছেন?