22-07-2020, 01:15 AM
সবাই বসে চা খাচ্ছে. দুই বন্ধু আয়েশ করে মাটিতে বসে চা খাচ্ছে. দুই বৌ আর বাড়ির অন্যরা হেসে গল্প করছে. ঝিলমিল আর অর্কর মধ্যেও বেশ বন্ধুত্ব হয়ে গেছে. ওরা মোবাইল নিয়ে কিছু দেখছে. শুধু দুই যুবক যুবতী চুপচাপ বসে আছে. যে যার মতো চা খাচ্ছে. কিন্তু কেউ কারোর দিকে তাকাচ্ছে না. এখনও সেইভাবে কেউ আসেনি. তাই বাড়ি ফাঁকাই. কাল সবাই আসবে এক এক করে.
কিন্তু কে জানতো কিছু সময় পরেই এমন একটা ব্যাপার ঘটবে যেটা একেবারেই অপ্রত্তাশিত. জীবনে কত কিছুই তো ঘটে.... এটাও না হয় তারই আরেকটা উদাহরণ.
তবে তার আগের সময় টুকু ছিল আরও অদ্ভুত. চা খাওয়া হয়ে গেলে পর অভি ভাবলো একটু বাইরে থেকে ঘুরে আসা যাক. ঘরে থাকতে ইচ্ছে করছেনা. ঘরে থাকলেই ওর মুখোমুখি হতে হবে. ও আর সেটা চাইছেনা. কি হবে আর ওই অপ্সরার কথা ভেবে যে কালকে অন্য কারোর হয়ে যাবে? এই অল্প পরিচিতি বা আজকে কাটানো ওই সময়ের তো কোনো ভবিষ্যত নেই. তাহলে কেন বেকার নিজেকে নিজে এইভাবে কষ্ট দেবে অভিষেক? তার থেকে ভালো হবে ওকে এড়িয়ে চলা.
অভি কিছুক্ষন পরে রেডি হয়ে বাইরে এলো. ওকে দেখে ওর বাবা বললো...
অরিন্দম বাবু : কিরে? কোথায় যাচ্ছিস?
অভি : একটু বাইরে থেকে ঘুরে আসি...... সবার জন্য একটু ice cream নিয়ে আসি.
অরিন্দম বাবু : কি দরকার......থাক না ঘরে.
রঞ্জিত বাবু : আহা... যাক না ঘুরে আসুক..... নতুন জায়গা.... একা একা লাগছে হয়তো.... ওকে ওর মতো থাকতে দে তো... তুমি যাও বাবা... ঘুরে এসো.
এমন সময় রিমির মা বললো : ওহ অভি... বাবা তুই যখন বেরোচ্ছিস তখন একটা কাজ করবি বাবা?
অভিষেক : হ্যা.. নিশ্চই... বলুন না..
দীপালি দেবী হঠাৎ রিমিকে ডাকলো : বাবলি...... এই বাবলি....
রিমি : হ্যা... মা? কি?
দীপালি দেবী : একবার নীচে আয় তো....
অভি ভাবলো.... এই রে.... আবার ওকে ডাকে কেন?
রিমি ওপর থেকে নেমে এলো.
রিমি : হ্যা মা.... কি হয়েছে? ডাকলে কেন?
রিমির মা : তোর ওই দুলটা আর আংটিটা তো আনার কথা আজ......ওদের অর্ডার দেয়া ছিল. তোর বাবা পুরো ভুলে মেরেছে. তোকে নিয়ে যাবার কথা তো আজ.
হঠাৎ রঞ্জিত বাবু বললেন :এইরে... তাইতো.... এসব কাজের ঠেলায় পুরো ভুলেই মেরে দিয়েছি.
অরিন্দম বাবু বললেন : না ভাই.... এটা তোমার বরাবরের দোষ. আগেও ভুলে যেতিস.... এখনও তাই.
দীপালি দেবী : যা বলেছেন দাদা.....
রিমি : হ্যা তো কি?
রিমির মা : তা বলছিলাম তুই যা না অভির সাথে. ও তো বাইরেই যাচ্ছে. দুজনে গাড়ি নিয়ে চলেযা....আবার ফিরে আয়.
রঞ্জিত বাবু : হ্যা..... সেই তো.... তুই চলে যা অভির সাথে. ওর সাথে গিয়ে ওগুলো নিয়ে আয়. ওখান থেকে কিছু খেয়েও আসবি.
রিমি একবার অভির দিকে তাকালো. কিন্তু অভি অন্যদিকে তাকিয়ে. রিমি অভিকে এক পলক দেখে নিয়ে বললো : আচ্ছা..... বেশ. আমি রেডি হয়ে আসছি.
ঝিলমিল বলে উঠলো আমিও যাবো দাদার সাথে. এগরোল খাবো. অভি বাইরে গেলো গাড়ির কাছে. ভেতরে বসে চুপচাপ অপেক্ষা করতে লাগলো. মনটা ভালো লাগছেনা. একটু একটু করে যত সময় যাচ্ছে ওর মনে হচ্ছে ততো রিমি ওর কাছ থেকে দূরে সরে যাচ্ছে. ও আটকাতে পারছেনা, আটকানোর অধিকার ওর নেই. একটু পরে দেখলো ঝিলমিল রিমির সাথে গেট দিয়ে বেরিয়ে ওর গাড়ির কাছেই আসছে. অভি দরজা খুলে দিলো. ভেবেছিলো ঝিলমিল ওর পাশে বসবে কিন্তু ঝিলমিল নিজেই দরজার কাছে এসে বললো - দিদি..... তুমি সামনে বসো... আমি পেছনে যাচ্ছি.
উফফফ.... মেয়েটা যে কি করেনা. রাগ হলো অভির ঝিলমিলের ওপর. ঝিলমিল পেছনে চলে গেলো. অভিষেকের পাশের সিটে এসে বসলো রিমি. অভি এক নজর তাকালো ওর দিকে. হলুদ একটা সালোয়ার কামিজ আর হলুদ ওড়না জড়ানো গলায়. অপূর্ব লাগছে ওকে. গা থেকে সুন্দর সেন্টের গন্ধ বেরিয়ে আসছে.
অভি নিজেকে কোনোরকমে সামলে নিয়ে একটু কঠোর গলায় বললো : সিট্ বেল্ট টা....
রিমি : হ্যা?
অভি ইশারায় বুঝিয়ে দিলো সিট্ বেল্ট লাগিয়ে নিতে.
অভির মুখটা একটু কঠোর দেখে রিমি অবাক হলো. ছেলেটা হঠাৎ এমন চুপচাপ হয়ে গেলো কেন? ওর দিকে তাকাচ্ছে না কেন? সকালে যে ছেলেটাকে দেখেছিলো আর এখন যাকে দেখছে দুজন যেন আলাদা মানুষ.
অভি সামনে তাকিয়েই জিজ্ঞেস করলো : কোথায় যাবো?
রিমি : চলো.... আমি বলছি.
অভি গাড়ি স্টার্ট দিলো.
গাড়ি চলছে..... ট্রাফিক এড়িয়ে অভিষেক গাড়ি এগিয়ে নিয়ে চলেছে. এর মধ্যে একবারও পাশে তাকায়নি ও. কিন্তু ওর পাশে বসে থাকা মানুষটা বার বার তাকাচ্ছে অভির দিকে. অভিষেক সেটা হয়তো নিজেও বুঝতে পারছে কিন্তু ও চুপচাপ গাড়ি চালিয়ে যাচ্ছে. ও নিজেকে পাশের মানুষটার থেকে লুকিয়ে রাখতে চাইছে.
কি অদ্ভুত দুটো ব্যাপার . একদিন যাকে দেখে অভিষেক নিজের হৃদয় হারিয়ে ফেলেছিলো আজ সেই মেয়েটি স্বয়ং ওর গাড়িতেই, ওর পাশেই বসে কিন্তু অভির মুখে আনন্দ একটুও নেই.
আর দ্বিতীয় হলো একদিন অভি বার বার তাকিয়ে তাকিয়ে দেখছিলো পরীকে আর সে একবারও সেই ভাবে তাকায়নি অভির দিকে. আর আজ সেই পরীই বার বার তাকাচ্ছে অভির দিকে. কিন্তু আজ অভিষেক আর তাকাচ্ছেনা.
অভিকে রাস্তা চিনিয়ে নিয়ে এলো রিমি. একটা দোকানের সামনে এসেছল ওকে থামতে বললো রিমি.
অভি বললো ওদের যেতে. ও বাইরেই অপেক্ষা করবে. কিন্তু রিমি ওকে এই প্রথম জোর করে নিয়ে গেলো ভেতরে. দোকানের মালিক রিমিকে আগে থেকেই চেনে. হাসি মুখে ওদের বসালেন উনি. অর্ডার দেওয়া জিনিস গুলো এসেছে কিন্তু জিজ্ঞেস করতে উনি বললেন..
দোকানদার : কাল রাতেই এসেছে গেছে. আজ সকালে আপনারা এলেন না দেখে চিন্তা হচ্ছিলো. এই নিন দেখে নিন.
ঝিলমিল রিমির পাশেই বসে ছিল. ওরা দুজন দেখতে লাগলো দুল দুটো. অভিষেক পাশে বসে মোবাইল ঘাঁটছে.
ঝিলমিল ওগুলো দেখে বললো : বাহ্... দিদি খুব সুন্দর. একবার কানে দিয়ে দেখাওনা....
রিমি হেসে ওই দুটো নিজের কানের কাছে এনে ঝিলমিলকে দেখালো.
রিমি : কি.... কেমন লাগছে?
ঝিলমিল : দারুন রিমি দি..... কিরে দাদা.... তাইনা?
বোনের কথায় অভিষেক তাকালো বোনের দিকে.
অভি : কি? কি বললি?
ঝিলমিল : বললাম রিমিদিকে কি সুন্দর লাগছে বল... কালকে এই দুল দুটো পড়লে যা মানাবে না তোমায়.... কি বলিস দাদা?
অভি তাকালো রিমির দিকে. অসাধারণ লাগছে সামনে বসে থাকা মেয়েটাকে. কিন্তু অভি মুখে কিছুই প্রকাশ না করে সামান্য হেসে বললো : হ্যা সত্যি.. খুব ভালো লাগছে.
বলেই আবার মোবাইল ঘাঁটতে লাগলো. ওটা যে পাশে বসে থাকা মানুষটাকে এড়িয়ে চলার একটা বাহানা সেটা বলাই বাহুল্য.
দোকানদার : আর এই যে আংটিটা.
অভি আড় চোখে তাকালো ওটার দিকে. রিমি আংটিটা হাতে নিয়ে দেখছে. হঠাৎ ও তাকালো অভির দিকে. অমনি অভি চোখ নামিয়ে নিলো.
সব শেষে ওরা বেরিয়ে এলো দোকান থেকে. এদিকটা বেশ জমজমাট এলাকা. চারিদিকে দোকান. ভিড় ভালোই. অভি বললো : তাহলে আমরা ফিরি?
ঝিলমিল : দাঁড়া..... আমি এগরোল খাবো.
অভিষেক : কি দরকার? বাইরের খাবার ওতো খেতে হবেনা.
ঝিলমিল : না আমি খাবো.... দিদি খাবেতো তুমি?
রিমি হেসে বললো : তোর দাদা যদি খাওয়াতে রাজী হয় তো খেতে পারি. জিজ্ঞেস কর.... খাওয়াবে?
ঝিলমিল চোখ নাচিয়ে : কিরে দাদা?
অভি দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললো : চল....
তিনজনে গাড়ির কাছে ফিরে এসে রোল খাচ্ছে. যদিও অভির খাওয়ার ইচ্ছে ছিলোনা কিন্তু একজন তাকে বললো তাকেও খেতে হবে. আবার জোর করলো সে. অভিও আর না রাজী হয়ে থাকতে পারলোনা. নিতেই হলো. বেশ ভালোই বানিয়েছে. ওরা দুজন খেতে খেতে গল্প করছে. এই একদিনেরও কম সময় দুই জনে বেশ ভাব হয়েছে গেছে. অভি ওদের থেকে একটু দূরে দাঁড়িয়ে রোল খাচ্ছে. খাওয়া হয়ে গেলে রিমি ধীরে ধীরে এগিয়ে এলো অভিষেকের কাছে. ওরও ততক্ষনে খাওয়া হয়ে গেছিলো. অভি ওদের শেষ হবারই অপেক্ষা করছিলো.
রিমি এসে বললো : চলো যাই?
অভি : হ্যা.. চলো.
রিমি : একমিনিট....
অভি আবার ঘুরে দাঁড়ালো ওর দিকে. রিমি অভিকে ইশারায় দেখালো যে ওর ঠোঁটের কাছে এখনও কিছুটা খাবারের গুঁড়ো লেগে রয়েছে. অভি নিজে একবার হাত বুলালো ঠোঁটের কাছে কিন্তু আসল জায়গাটাই মিস করে গেলো.
রিমি ইশারায় বোঝালো এখনও লেগে আছে. অভি আবার হাত বোলালো... হায়রে ! ব্যাটা রোলটা তো আচ্ছা নাছোড়বান্দা ! তাও লেগে রইলো যেখানে ছিল সেখানেই.
অভি মুখ মুছে জিজ্ঞেস করলো : গেছে?
রিমি মুচকি হেসে এবারে নিজেই ওর হাত দিয়ে অভির ঠোঁটের কাছটা মুছে দিলো. অভি শুধু চেয়ে রইলো রিমির দিকে. রিমিও হঠাৎ কি ভেবে হাতটা সঙ্গে সঙ্গে সরিয়ে একটু দূরে সরে গেলো. অভির দিকে না তাকিয়েই বললো : যাওয়া যাক?
অভি : হুম... চলো.
অভি গাড়ির দরজা খুলেছে এমন সময় রিমির ফোন বেজে উঠলো. রিমি দেখলো বাবার ফোন.
রিমি : হ্যালো বাবা.. ওগুলো নিয়ে নিয়েছি... ফিরবো এবারে.
এইটুকু বলেই রিমি থেমে গেলো. ওর মুখে কেমন একটা চিন্তার ভাব ফুটে উঠলো. অভিষেকও সেটা লক্ষ করলো. রিমি আবার বললো : কেন বাবা? কিছু হয়েছে? তোমার গলাটা অমন শোনাচ্ছে কেন?..... সত্যি করে বলোতো কি হয়েছে?
অভি রিমির দিকে তাকিয়ে ছিল. এমন সময় ওর ফোনটাও বেজে উঠলো. অভি দেখলো বাবা ফোন করেছে. রিসিভ করলো ফোনটা.
অভি : হ্যা বাবা বলো...
বাবা : কোথায় তোরা?
অভি : এইতো ফিরবো এবারে
বাবা : হুম.... তাড়াতাড়ি ফিরে আয়.
একি? বাবার গলাটাও কেমন গম্ভীর শোনাচ্ছে.
অভি : কেন বাবা কি হয়েছে?
বাবা : আঃ.... যা বললাম কর. তাড়াতাড়ি ফিরে আয়.
দুজনেই প্রায় একি সাথে ফোন রাখলো. দুজনেই একে ওপরের দিকে তাকালো. দুজনেরই মুখে চিন্তার ছাপ. ঝিলমিল কিছুই বুঝলোনা. ও জিজ্ঞেস করলো কি দাদাকে কি হয়েছে কিন্তু দাদার কাছেও যে জবাব নেই. ওরা তাড়াতাড়ি করে গাড়িতে বসে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হলো.
বাড়ি পৌঁছে যে খবরটা ওরা পেলো তাতে ওরা তিনজনেই হতভম্ব হয়ে গেলো. এনগেজমেন্ট ক্যানসেল. এ সম্পর্ক আর এগোবেনা.
হঠাৎ করে এমন একটা কথা শুনে মুহূর্তের জন্য অভিষেক অবাক হয়ে গেলেও একটু পরে নিজেকে সামলে নিলো. এ কি শুনছে ও? এ বিয়ে হবেনা? এনগেজমেন্ট ক্যানসেল? সত্যি? উফফফফফ ভাবতেই পারছেনা ফিরে এসে এমন অসাধারণ একটা খবর পাবে ও. সবার মুখে গম্ভীর ভাব. সবাই দুঃখ দুঃখ মুখ করে দাঁড়িয়ে আছে. শুধু একজন কোনোরকমে নিজের আনন্দকে কন্ট্রোল করছে. এতক্ষন সত্যিই অভির মুখ সিরিয়াস ছিল কিন্তু এই খবর পাবার পর অভিকে সিরিয়াস হবার নাটক করতে হচ্ছে.
কিন্তু কে জানতো কিছু সময় পরেই এমন একটা ব্যাপার ঘটবে যেটা একেবারেই অপ্রত্তাশিত. জীবনে কত কিছুই তো ঘটে.... এটাও না হয় তারই আরেকটা উদাহরণ.
তবে তার আগের সময় টুকু ছিল আরও অদ্ভুত. চা খাওয়া হয়ে গেলে পর অভি ভাবলো একটু বাইরে থেকে ঘুরে আসা যাক. ঘরে থাকতে ইচ্ছে করছেনা. ঘরে থাকলেই ওর মুখোমুখি হতে হবে. ও আর সেটা চাইছেনা. কি হবে আর ওই অপ্সরার কথা ভেবে যে কালকে অন্য কারোর হয়ে যাবে? এই অল্প পরিচিতি বা আজকে কাটানো ওই সময়ের তো কোনো ভবিষ্যত নেই. তাহলে কেন বেকার নিজেকে নিজে এইভাবে কষ্ট দেবে অভিষেক? তার থেকে ভালো হবে ওকে এড়িয়ে চলা.
অভি কিছুক্ষন পরে রেডি হয়ে বাইরে এলো. ওকে দেখে ওর বাবা বললো...
অরিন্দম বাবু : কিরে? কোথায় যাচ্ছিস?
অভি : একটু বাইরে থেকে ঘুরে আসি...... সবার জন্য একটু ice cream নিয়ে আসি.
অরিন্দম বাবু : কি দরকার......থাক না ঘরে.
রঞ্জিত বাবু : আহা... যাক না ঘুরে আসুক..... নতুন জায়গা.... একা একা লাগছে হয়তো.... ওকে ওর মতো থাকতে দে তো... তুমি যাও বাবা... ঘুরে এসো.
এমন সময় রিমির মা বললো : ওহ অভি... বাবা তুই যখন বেরোচ্ছিস তখন একটা কাজ করবি বাবা?
অভিষেক : হ্যা.. নিশ্চই... বলুন না..
দীপালি দেবী হঠাৎ রিমিকে ডাকলো : বাবলি...... এই বাবলি....
রিমি : হ্যা... মা? কি?
দীপালি দেবী : একবার নীচে আয় তো....
অভি ভাবলো.... এই রে.... আবার ওকে ডাকে কেন?
রিমি ওপর থেকে নেমে এলো.
রিমি : হ্যা মা.... কি হয়েছে? ডাকলে কেন?
রিমির মা : তোর ওই দুলটা আর আংটিটা তো আনার কথা আজ......ওদের অর্ডার দেয়া ছিল. তোর বাবা পুরো ভুলে মেরেছে. তোকে নিয়ে যাবার কথা তো আজ.
হঠাৎ রঞ্জিত বাবু বললেন :এইরে... তাইতো.... এসব কাজের ঠেলায় পুরো ভুলেই মেরে দিয়েছি.
অরিন্দম বাবু বললেন : না ভাই.... এটা তোমার বরাবরের দোষ. আগেও ভুলে যেতিস.... এখনও তাই.
দীপালি দেবী : যা বলেছেন দাদা.....
রিমি : হ্যা তো কি?
রিমির মা : তা বলছিলাম তুই যা না অভির সাথে. ও তো বাইরেই যাচ্ছে. দুজনে গাড়ি নিয়ে চলেযা....আবার ফিরে আয়.
রঞ্জিত বাবু : হ্যা..... সেই তো.... তুই চলে যা অভির সাথে. ওর সাথে গিয়ে ওগুলো নিয়ে আয়. ওখান থেকে কিছু খেয়েও আসবি.
রিমি একবার অভির দিকে তাকালো. কিন্তু অভি অন্যদিকে তাকিয়ে. রিমি অভিকে এক পলক দেখে নিয়ে বললো : আচ্ছা..... বেশ. আমি রেডি হয়ে আসছি.
ঝিলমিল বলে উঠলো আমিও যাবো দাদার সাথে. এগরোল খাবো. অভি বাইরে গেলো গাড়ির কাছে. ভেতরে বসে চুপচাপ অপেক্ষা করতে লাগলো. মনটা ভালো লাগছেনা. একটু একটু করে যত সময় যাচ্ছে ওর মনে হচ্ছে ততো রিমি ওর কাছ থেকে দূরে সরে যাচ্ছে. ও আটকাতে পারছেনা, আটকানোর অধিকার ওর নেই. একটু পরে দেখলো ঝিলমিল রিমির সাথে গেট দিয়ে বেরিয়ে ওর গাড়ির কাছেই আসছে. অভি দরজা খুলে দিলো. ভেবেছিলো ঝিলমিল ওর পাশে বসবে কিন্তু ঝিলমিল নিজেই দরজার কাছে এসে বললো - দিদি..... তুমি সামনে বসো... আমি পেছনে যাচ্ছি.
উফফফ.... মেয়েটা যে কি করেনা. রাগ হলো অভির ঝিলমিলের ওপর. ঝিলমিল পেছনে চলে গেলো. অভিষেকের পাশের সিটে এসে বসলো রিমি. অভি এক নজর তাকালো ওর দিকে. হলুদ একটা সালোয়ার কামিজ আর হলুদ ওড়না জড়ানো গলায়. অপূর্ব লাগছে ওকে. গা থেকে সুন্দর সেন্টের গন্ধ বেরিয়ে আসছে.
অভি নিজেকে কোনোরকমে সামলে নিয়ে একটু কঠোর গলায় বললো : সিট্ বেল্ট টা....
রিমি : হ্যা?
অভি ইশারায় বুঝিয়ে দিলো সিট্ বেল্ট লাগিয়ে নিতে.
অভির মুখটা একটু কঠোর দেখে রিমি অবাক হলো. ছেলেটা হঠাৎ এমন চুপচাপ হয়ে গেলো কেন? ওর দিকে তাকাচ্ছে না কেন? সকালে যে ছেলেটাকে দেখেছিলো আর এখন যাকে দেখছে দুজন যেন আলাদা মানুষ.
অভি সামনে তাকিয়েই জিজ্ঞেস করলো : কোথায় যাবো?
রিমি : চলো.... আমি বলছি.
অভি গাড়ি স্টার্ট দিলো.
গাড়ি চলছে..... ট্রাফিক এড়িয়ে অভিষেক গাড়ি এগিয়ে নিয়ে চলেছে. এর মধ্যে একবারও পাশে তাকায়নি ও. কিন্তু ওর পাশে বসে থাকা মানুষটা বার বার তাকাচ্ছে অভির দিকে. অভিষেক সেটা হয়তো নিজেও বুঝতে পারছে কিন্তু ও চুপচাপ গাড়ি চালিয়ে যাচ্ছে. ও নিজেকে পাশের মানুষটার থেকে লুকিয়ে রাখতে চাইছে.
কি অদ্ভুত দুটো ব্যাপার . একদিন যাকে দেখে অভিষেক নিজের হৃদয় হারিয়ে ফেলেছিলো আজ সেই মেয়েটি স্বয়ং ওর গাড়িতেই, ওর পাশেই বসে কিন্তু অভির মুখে আনন্দ একটুও নেই.
আর দ্বিতীয় হলো একদিন অভি বার বার তাকিয়ে তাকিয়ে দেখছিলো পরীকে আর সে একবারও সেই ভাবে তাকায়নি অভির দিকে. আর আজ সেই পরীই বার বার তাকাচ্ছে অভির দিকে. কিন্তু আজ অভিষেক আর তাকাচ্ছেনা.
অভিকে রাস্তা চিনিয়ে নিয়ে এলো রিমি. একটা দোকানের সামনে এসেছল ওকে থামতে বললো রিমি.
অভি বললো ওদের যেতে. ও বাইরেই অপেক্ষা করবে. কিন্তু রিমি ওকে এই প্রথম জোর করে নিয়ে গেলো ভেতরে. দোকানের মালিক রিমিকে আগে থেকেই চেনে. হাসি মুখে ওদের বসালেন উনি. অর্ডার দেওয়া জিনিস গুলো এসেছে কিন্তু জিজ্ঞেস করতে উনি বললেন..
দোকানদার : কাল রাতেই এসেছে গেছে. আজ সকালে আপনারা এলেন না দেখে চিন্তা হচ্ছিলো. এই নিন দেখে নিন.
ঝিলমিল রিমির পাশেই বসে ছিল. ওরা দুজন দেখতে লাগলো দুল দুটো. অভিষেক পাশে বসে মোবাইল ঘাঁটছে.
ঝিলমিল ওগুলো দেখে বললো : বাহ্... দিদি খুব সুন্দর. একবার কানে দিয়ে দেখাওনা....
রিমি হেসে ওই দুটো নিজের কানের কাছে এনে ঝিলমিলকে দেখালো.
রিমি : কি.... কেমন লাগছে?
ঝিলমিল : দারুন রিমি দি..... কিরে দাদা.... তাইনা?
বোনের কথায় অভিষেক তাকালো বোনের দিকে.
অভি : কি? কি বললি?
ঝিলমিল : বললাম রিমিদিকে কি সুন্দর লাগছে বল... কালকে এই দুল দুটো পড়লে যা মানাবে না তোমায়.... কি বলিস দাদা?
অভি তাকালো রিমির দিকে. অসাধারণ লাগছে সামনে বসে থাকা মেয়েটাকে. কিন্তু অভি মুখে কিছুই প্রকাশ না করে সামান্য হেসে বললো : হ্যা সত্যি.. খুব ভালো লাগছে.
বলেই আবার মোবাইল ঘাঁটতে লাগলো. ওটা যে পাশে বসে থাকা মানুষটাকে এড়িয়ে চলার একটা বাহানা সেটা বলাই বাহুল্য.
দোকানদার : আর এই যে আংটিটা.
অভি আড় চোখে তাকালো ওটার দিকে. রিমি আংটিটা হাতে নিয়ে দেখছে. হঠাৎ ও তাকালো অভির দিকে. অমনি অভি চোখ নামিয়ে নিলো.
সব শেষে ওরা বেরিয়ে এলো দোকান থেকে. এদিকটা বেশ জমজমাট এলাকা. চারিদিকে দোকান. ভিড় ভালোই. অভি বললো : তাহলে আমরা ফিরি?
ঝিলমিল : দাঁড়া..... আমি এগরোল খাবো.
অভিষেক : কি দরকার? বাইরের খাবার ওতো খেতে হবেনা.
ঝিলমিল : না আমি খাবো.... দিদি খাবেতো তুমি?
রিমি হেসে বললো : তোর দাদা যদি খাওয়াতে রাজী হয় তো খেতে পারি. জিজ্ঞেস কর.... খাওয়াবে?
ঝিলমিল চোখ নাচিয়ে : কিরে দাদা?
অভি দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললো : চল....
তিনজনে গাড়ির কাছে ফিরে এসে রোল খাচ্ছে. যদিও অভির খাওয়ার ইচ্ছে ছিলোনা কিন্তু একজন তাকে বললো তাকেও খেতে হবে. আবার জোর করলো সে. অভিও আর না রাজী হয়ে থাকতে পারলোনা. নিতেই হলো. বেশ ভালোই বানিয়েছে. ওরা দুজন খেতে খেতে গল্প করছে. এই একদিনেরও কম সময় দুই জনে বেশ ভাব হয়েছে গেছে. অভি ওদের থেকে একটু দূরে দাঁড়িয়ে রোল খাচ্ছে. খাওয়া হয়ে গেলে রিমি ধীরে ধীরে এগিয়ে এলো অভিষেকের কাছে. ওরও ততক্ষনে খাওয়া হয়ে গেছিলো. অভি ওদের শেষ হবারই অপেক্ষা করছিলো.
রিমি এসে বললো : চলো যাই?
অভি : হ্যা.. চলো.
রিমি : একমিনিট....
অভি আবার ঘুরে দাঁড়ালো ওর দিকে. রিমি অভিকে ইশারায় দেখালো যে ওর ঠোঁটের কাছে এখনও কিছুটা খাবারের গুঁড়ো লেগে রয়েছে. অভি নিজে একবার হাত বুলালো ঠোঁটের কাছে কিন্তু আসল জায়গাটাই মিস করে গেলো.
রিমি ইশারায় বোঝালো এখনও লেগে আছে. অভি আবার হাত বোলালো... হায়রে ! ব্যাটা রোলটা তো আচ্ছা নাছোড়বান্দা ! তাও লেগে রইলো যেখানে ছিল সেখানেই.
অভি মুখ মুছে জিজ্ঞেস করলো : গেছে?
রিমি মুচকি হেসে এবারে নিজেই ওর হাত দিয়ে অভির ঠোঁটের কাছটা মুছে দিলো. অভি শুধু চেয়ে রইলো রিমির দিকে. রিমিও হঠাৎ কি ভেবে হাতটা সঙ্গে সঙ্গে সরিয়ে একটু দূরে সরে গেলো. অভির দিকে না তাকিয়েই বললো : যাওয়া যাক?
অভি : হুম... চলো.
অভি গাড়ির দরজা খুলেছে এমন সময় রিমির ফোন বেজে উঠলো. রিমি দেখলো বাবার ফোন.
রিমি : হ্যালো বাবা.. ওগুলো নিয়ে নিয়েছি... ফিরবো এবারে.
এইটুকু বলেই রিমি থেমে গেলো. ওর মুখে কেমন একটা চিন্তার ভাব ফুটে উঠলো. অভিষেকও সেটা লক্ষ করলো. রিমি আবার বললো : কেন বাবা? কিছু হয়েছে? তোমার গলাটা অমন শোনাচ্ছে কেন?..... সত্যি করে বলোতো কি হয়েছে?
অভি রিমির দিকে তাকিয়ে ছিল. এমন সময় ওর ফোনটাও বেজে উঠলো. অভি দেখলো বাবা ফোন করেছে. রিসিভ করলো ফোনটা.
অভি : হ্যা বাবা বলো...
বাবা : কোথায় তোরা?
অভি : এইতো ফিরবো এবারে
বাবা : হুম.... তাড়াতাড়ি ফিরে আয়.
একি? বাবার গলাটাও কেমন গম্ভীর শোনাচ্ছে.
অভি : কেন বাবা কি হয়েছে?
বাবা : আঃ.... যা বললাম কর. তাড়াতাড়ি ফিরে আয়.
দুজনেই প্রায় একি সাথে ফোন রাখলো. দুজনেই একে ওপরের দিকে তাকালো. দুজনেরই মুখে চিন্তার ছাপ. ঝিলমিল কিছুই বুঝলোনা. ও জিজ্ঞেস করলো কি দাদাকে কি হয়েছে কিন্তু দাদার কাছেও যে জবাব নেই. ওরা তাড়াতাড়ি করে গাড়িতে বসে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হলো.
বাড়ি পৌঁছে যে খবরটা ওরা পেলো তাতে ওরা তিনজনেই হতভম্ব হয়ে গেলো. এনগেজমেন্ট ক্যানসেল. এ সম্পর্ক আর এগোবেনা.
হঠাৎ করে এমন একটা কথা শুনে মুহূর্তের জন্য অভিষেক অবাক হয়ে গেলেও একটু পরে নিজেকে সামলে নিলো. এ কি শুনছে ও? এ বিয়ে হবেনা? এনগেজমেন্ট ক্যানসেল? সত্যি? উফফফফফ ভাবতেই পারছেনা ফিরে এসে এমন অসাধারণ একটা খবর পাবে ও. সবার মুখে গম্ভীর ভাব. সবাই দুঃখ দুঃখ মুখ করে দাঁড়িয়ে আছে. শুধু একজন কোনোরকমে নিজের আনন্দকে কন্ট্রোল করছে. এতক্ষন সত্যিই অভির মুখ সিরিয়াস ছিল কিন্তু এই খবর পাবার পর অভিকে সিরিয়াস হবার নাটক করতে হচ্ছে.
জানা গেলো ওই ছেলে টাকা পয়সা ও শিক্ষার দিক দিয়ে খুবই ভালো হলেও চরিত্রের দিক দিয়ে ঠিক তার উল্টো. অফিসেরই এক জুনিয়ারের সাথে সম্পর্ক হয় তার আর সেই সম্পর্ক চরম পর্যায় পৌঁছে যায়. মেয়েটি আজ ওর সন্তানের মা হতে চলেছে. অনেক ঝামেলা হচ্ছে ওই ছেলের বাড়িতে. ছেলেটা জোর করে আলাদা হবার চেষ্টা করেছিল, বাচ্চাটাকে নষ্ট করার কথা বলেছিলো কিন্তু মেয়েটি রাজী হয়নি. স্বার্থপরের মতো মা হয়ে নিজের সন্তানের হত্যা করতে রাজী হয়নি. ছেলের বাবা মা কিছুই জানতোনা. আজ ওই মেয়েটির পরিবার ওই ছেলের বাড়িতে গিয়ে সব জানায়. বেশ ঝামেলা হয়. শেষমেশ ঠিক হয় ওই মেয়েই হবে পুত্রবধূ. ছেলের বাবা একটু আগে নিজে ফোন করে সব রঞ্জিত বাবুকে জানিয়েছেন আর বার বার ক্ষমা চেয়েছেন.
রিমি কোনো প্রশ্ন করলোনা কাউকে, কিচ্ছু বল্লোনা কাউকে. চুপচাপ সিঁড়ি দিয়ে ওপরে উঠে গেলো. রিমির পেছনে পেছনে অভিষেকের মা আর রিমির মাও গেলো. ঝিলমিলও গেলো ওদের সাথে.
অভির তো নাচতে ইচ্ছে করছে. উফফফ.... ভাবা যায়না কি ভাগ্য মাইরি. ঠাকুরের নাম কীর্তন করতে ইচ্ছে করছিলো ওর. আনন্দে হাসি পাচ্ছে কিন্তু বেচারা হাসতেও পারছেনা. সামনেই বাবা কাকু আর অনেকেই দাঁড়িয়ে.
রিমি কোনো প্রশ্ন করলোনা কাউকে, কিচ্ছু বল্লোনা কাউকে. চুপচাপ সিঁড়ি দিয়ে ওপরে উঠে গেলো. রিমির পেছনে পেছনে অভিষেকের মা আর রিমির মাও গেলো. ঝিলমিলও গেলো ওদের সাথে.
অভির তো নাচতে ইচ্ছে করছে. উফফফ.... ভাবা যায়না কি ভাগ্য মাইরি. ঠাকুরের নাম কীর্তন করতে ইচ্ছে করছিলো ওর. আনন্দে হাসি পাচ্ছে কিন্তু বেচারা হাসতেও পারছেনা. সামনেই বাবা কাকু আর অনেকেই দাঁড়িয়ে.
চলবে.....
কেমন লাগলো বন্ধুরা? জানাবেন.
ভালো লাগলে লাইক, রেপস দিতে পারেন.