14-07-2020, 06:32 PM
(আগের পর্বের পর)
হা করে অভি ওর দিকে তাকিয়ে আছে দেখে রিমি হেসে ফেললো. অভি নিজেকে সামলে নিলো. ততক্ষনে গেমের বাইক রাস্তার পোস্টে ধাক্কা মেরে উল্টে গেছে. এদিকে অভিষেকেরও উল্টে যাবার উপক্রম.
এও কি সম্ভব? যাকে সেদিন মলে দেখলো, যার মুখের ওই হাসি দূর থেকে দেখেই অভি বাবুর বুক ধুকপুক করতে শুরু করেছিল, যাকে এদিক ওদিক সব মুখের মধ্যেই খুঁজে বেরিয়েছে সেই অপ্সরা স্বয়ং তার সামনে দাঁড়িয়ে তাকে হাই বলছে ! কিন্তু এই সুন্দরী এখানে কি করছে?
হাই অভিষেক... আমি রিমি.
রিমির আবার ডাকে মোবাইল ফেলে উঠে দাঁড়ালো অভি. সামনে সেই সেদিনের সুন্দরী দাঁড়িয়ে. হাসিমুখে হাত বাড়িয়ে দিলো ওর দিকে. অভি কোনোরকমে নিজেকে সামলে হাত বাড়ালো ওর দিকে. আবার সেই হাতে হাত ঠেকলো. দ্বিতীয়বারের মতো. কিন্তু এবারে পরিপূর্ণ ভাবে. কি নরম হাতটা. রিমি অভির দিকে তাকিয়ে কি যেন দেখতে লাগলো.
রিমি : আচ্ছা..... আমি কি আপনাকে কোথাও দেখেছি? আমাদের কি আগেও আলাপ হয়েছে?
অভিষেক খুব নিচু স্বরে বললো : সেদিন ওই শপিং মলে. আপনি একটা পাঞ্জাবী....
রিমি : ওহ হ্যা..... তাই তো....right... তাই আপনাকে এত চেনা চেনা লাগছে.
রিমির মা প্লেটে করে মিষ্টি আর লুচি তরকারি নিয়ে এলো. এসেই দুজন লম্বা মানুষকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে হেসে সবাইকে বললো: ওই দেখো সবাই..... বাড়ির সব থেকে লম্বা দুজন দাঁড়িয়ে. আগে ছিল আমার একটা.... আজ আবার আরেকজন এলেন লম্বা......সবাই হেসে ফেললো. ওরা দুজনেও হেসে ফেললো.
সত্যি.... অভিষেকের একদম সমান উচ্চতা রিমির. রিমি অভির এত সামনে দাঁড়াতেই সেটা অভি বুঝতে পেরেছে. যদিও মেয়েরা এত লম্বা হলে কেমন কেমন লগে কিন্তু আশ্চর্য ভাবে রিমিকে এই উচ্চতায় দারুন লাগছে.
সবাই হাসলেও একজন ওদের পাশাপাশি দাঁড়িয়ে থাকাটা ভালো করে লক্ষ্য করছে. বাহ্..... বেশ লাগছে কিন্তু ওদের পাশাপাশি. কিন্তু এখন আর কিছুই সম্ভব নয়. অভির বাবা এটাই ভাবছিলো এমন সময় রঞ্জিত বাবু বললেন : আমার হবু জামাই যদি অভিষেকের মতো হতো আরও ভালো হতো জানিস.
অরিন্দম : কেন? কি প্রবলেম?
রঞ্জিত : না না প্রব্লেম তেমন কিছু নয়.... বেশ ভালো... এডুকেটেড. ভালো জায়গায় কাজও করে . ওসব ঠিকই আছে শুধু.......
অরিন্দম : শুধু কি?
রঞ্জিত বাবু সামান্য হেসে বললেন : আমার মেয়ের থেকে তিন ইঞ্চি খাটো. যদিও এতে ওদের কোনো আপত্তি নেই.
অরিন্দম : তিন ইঞ্চি?.. ... এমনিতে দেখলে কিছুনা.... আবার অনেকের কাছে বড়ো ব্যাপার. স্ত্রী স্বামীর থেকে লম্বা হবে এটা আবার অনেক পুরুষের গায়ে লাগে. তবে তুই যখন বলছিস ওদের কোনো আপত্তি নেই তখন... ও নিয়ে আর ভাবিসনা.
রঞ্জিত : তা ঠিক...... কিন্তু আমি কিকরে বুঝবো বল? এই সেদিন অব্দি আমার মেয়েটা আমার কাঁধের হাইট ছিল . হুট্ করে যে ইয়া লম্বা হয়ে যাবে কে ভেবেছিলো? পুরো মামাদের গুন পেয়েছে. ঢ্যাঙা হলো পুরো আমার মেয়েটা.
অরিন্দম : বেশ হয়েছে মামাদের গুন পেয়েছে.. তোর মতো গুন তো আর পায়নি... উফফফফ.... সেবারের থেকেও আরও মোটা হয়ে গেছিস. থামরে থাম.. এবারে থাম নইলে বেলুনের মতো ফেটে যাবি এবারে...
দুই বন্ধু আবার হেসে উঠলো. অভির মা রিমিকে পাশে বসিয়ে কথা বলছে. মায়ের পাশেই অভি. মনটা এতক্ষন কেমন কালো মেঘে ঢেকে ছিল এখন আবার মেঘ কেটে সূর্য দেখা দিয়েছে.
বার বার চোখে যাচ্ছে মায়ের পাশে বসে থাকা অপ্সরার দিকে. হাতে খাবারের প্লেট নিয়ে বসেই আছে অভি. খাওয়া ভুলে গেছে.
একি? খাচ্ছেন না কেন? খান........ রিমি বললো অভিকে.
অভি : হ্যা? হ্যা খাচ্ছি....
রিমি ওর দিকে তাকিয়ে হেসে আবার কাকিমার দিকে মানে অভির মায়ের দিকে তাকালো.
অভির মা হেসে বললো : তুই ওকে আপনি আপনি করে বলছিস কেন মা? ও তো তোরই বয়সী. তা ছাড়া তোরা সেই ছোট বেলার বন্ধু.....যদিও তোদের কারোর কিছু মনে থাকার কথা নয়.
রিমি : তাই কাকিমা? কই আমার তো মনে পড়ছেনা...
অভির মা হেসে : মনে থাকার কোথাও নয়. তোরা তখনকার বন্ধুরা যখন তোরা বন্ধু মানেই জানতিস না. সেই আমাদের বাড়িতে এলে দুজনে বসে কত খেলতিস দুজনে. আর যাবার সময় হলেই কান্না জুড়ে দিতিস দুটোতে. সে আর যাবিনা তুই কিছুতেই.
রিমি হাসলো আর আড় চোখে কাকিমার পাশে বসে থাকা ছেলেটার দিকে একবার তাকিয়ে নিলো.
অভি যেন এখনও নেশার মধ্যেই রয়েছে. এ যেন অসম্ভব, অপ্রত্যাশিত. সেদিনের অপরিচিত মেয়েটি যাকে দেখে অভির বুকের বাঁ পাশটা কেমন করছিলো সেই কিনা শেষ পর্যন্ত বেরোলো ওর বাবার বন্ধুর মেয়ে !
কিরে দাদা? কি তখন থেকে ভাবছিস বলতো? খা..... লুচি যে ঠান্ডা হয়ে গেলো. কোথায় হারিয়ে গেলি? এই জন্যই বাবার কাছে এত বকা খাস.
বোনের কথায় আর রাগ হচ্ছেনা অভিষেকের. কেমন যেন আনন্দ আনন্দ ভাব হচ্ছে. হবারই কথা. যাকে দেখে সেদিন থেকে বুকের ভেতরে কুমার শানুর রোমান্টিক গান বেজেই চলেছে আজ সেই সুন্দরী তার পাশেই বসে ওর মায়ের সাথে গল্প করছে.
রিমি : কাকিমা.. ওপরে চলো... আমার ঘরে. ঝিলমিল তুইও আয়. চলো....কাকিমা.
অভির মা : হ্যা..... চল.
দীপালি কাকিমা : হ্যা... বাবলি কাকিমাকে তোর ঘরে নিয়ে যা. তোমরা ওপরে যাও. আমিও আসছি. গিয়ে দেখাই তোমাকে দেখাই দিদি.... মেয়ের জন্য কি কি কিনলাম.
অভির মা বোন রিমির সাথে ওপরে চলে যেতে লাগলো. অভি বাবু তখনো প্লেট হাতে তাকিয়েই রয়েছে. স্মার্ট ছেলেটা যেন আজ ভ্যাবলা হয়ে গেছে. যেতে যেতে একবার পেছন ফিরে তাকালো রিমি. চোখের সাথে চোখের মিল হলো. হালকা করে মাথা নাড়িয়ে ইশারায় রিমি অভিকেও ওপরে আসতে বললো. তারপরে ঝিলমিলের সাথে কথা বলতে বলতে ওপরে উঠে গেলো.
অভিও উঠে দাঁড়িয়ে এগিয়ে যাচ্ছিলো এমন সময় পাশে থেকে বাবা আর কাকুর কথা শুনতে পেলো. বাবা বলছে: যাক.. চেনা লোক যখন পাত্রপক্ষকে তোদের সাথে আলাপ করিয়েছে তখন আর ভয় কিসের? নিজের লোক তা আর ঠকাবেনা.
রঞ্জিত বাবু : চেনা মানে? তোর বৌদির জামাই বাবু.... একেবারেই নিজের লোক. তাইতো এত ভরসা পাচ্ছি. ওনাদের পাড়াতেই তো থাকে পাত্রপক্ষ. অজয় বাবুরা... মানে পাত্রের বাবা আর তোর বৌদির জামাই বাবু খুবই পরিচিত. তাইতো এত ভরসা পেলাম.
অভির বুকে একটা ধাক্কা লাগলো. এতক্ষন ধরে সে শুধু রিমির কথাই ভেবেছে. কিন্তু এতক্ষন সে ভুলেই গেছিলো যাকে দেখে ও সেদিনও মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে ছিল আর আজও মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে ছিল কাল সে অন্যকারোর হয়ে যেতে চলেছে. একজন এসে আংটি পরিয়ে দিয়ে তাকে নিজের করে নিতে চলেছে.
অভি... যাওনা ওপরে যাও. রিমির ঘরে যাও. কাকিমার ডাকে আবার বাস্তবে ফিরে অভি. হ্যা কাকিমা বলে ওপরে উঠতে লাগলো. মনটা কিছুক্ষনের জন্য আনন্দে নেচে উঠেছিল কিন্তু এখন.........
হাহঃ...... একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো অভি. সিঁড়ি দিয়ে একধাপ করে উঠছে আর চোখের সামনে ভেসে উঠছে স্মৃতি গুলো.
কেন? কেন?..... কেন একেই বাবার বন্ধুর মেয়ে হতে হলো? এমনটা না হলে কি পারতোনা?
অভি ঘরে ঢুকতে যাচ্ছিলো. ফোনটা বেজে উঠলো অভির. দেখলো অনিল ফোন করেছে. অনিল ওর বেস্ট ফ্রেন্ড. ওরা খুব ভালো বন্ধু. একে ওপরের সব কথা শেয়ার করে ওরা. অভি একমাত্র অনিলকেই জানিয়েছিল সেই অজানা মেয়েটার কথা. সেদিন অনিল বলেছিলো.....
Flashback
অনিল : জিও গুরু.......তোমার বুকও তাহলে কারোর জন্য দুরু দুরু করলো শেষ অব্দি? আমি তো ভেবেছিলাম...... তুই শালা সিঙ্গেল মরবি.
অভিষেক : আরে থামতো ব্যাটা...... ভালো লেগেছে বলিছি তোকে.... এটা বলিনি যে পরিচয় হয়েছে আমাদের. কিন্তু সত্যি ভাই..... ওকে যখন প্রথমবার দেখলাম জানিনা কেন কিরকম একটা হতে লাগলো. খুব টানছিলো ওর হাসিটা. খুব ইচ্ছে করছিলো গিয়ে কথা বলি... কিন্তু সাহস হলোনা. তুই তো জানিস ভাই... এসব ব্যাপারে আমি খুব ভীতু.
অনিল : সেতো ভালো করেই জানি. সেইবার ক্লাসে মনে আছে? কতবার বললাম যা.... প্রিয়াঙ্কার সাথে গিয়ে কথা বল, মনের কথাটা বল... আর ..... তুই গিয়ে কি বললি? প্রিয়াঙ্কা.....তোর... তোর.... তোর.....ঘড়িটা খুব সুন্দর. একটু দেখতে পারি? বোনের জন্য কিনবো এরকম একটা..... মানে...সত্যি... তুই আলাদা জিনিস.
অভিষেক : কি করবো বল? এমনিতে আমি সবার সাথে স্মার্টলি কথা বলতে পারি কিন্তু এই একটা ব্যাপারে.... কেস খেয়ে যাই. মুখ থেকে আসল কথা বার করতেই পারিনা.
অনিল : হবেনা.. তোর দ্বারা প্রেম ফ্রেম হবেনা.... জাস্ট হবেনা.
অভিষেক : হুমমম.... আমিও তাই ভাবি.... কিন্তু সেদিন ওকে যখন দেখলাম না........কেন জানিনা কেমন একটা টান অনুভব করছিলাম. এরকম আগে কখনো হয়নি জানিস. ওর ওই চোখে দুটো, ওর হাসিটা, ওর চুল উফফফ সব মিলিয়ে.....
অনিল : বুঝলাম..
অভিষেক : কি বুঝলি?
অনিল : Ek ladki ko dekha toh aisa lagaa.....jise subha ki dhup jaise.....
অভিষেক : চুপ ব্যাটা... মার খাবি এবারে.
Present
ঘরে ঢোকার সময়ই অপ্সরার সাথে চোখাচুখি হয়ে ছিল. মিষ্টি হেসে মাথা নেড়ে ঘরে ঢোকার জন্য আমন্ত্রণ জানিয়ে ছিল. ওর ইচ্ছে করছিলো পাশে গিয়ে বসি রিমির কিন্তু তখনি ফোনটা বাজলো. অভি ঢুকে সোজা বারান্দায় চলে গেলো. ফোনটা ধরলো অভি.
অভি : হ্যা বল?
অনিল : কিরে? কি করছিস? পৌঁছে গেছিস?
অভি : হুম.. ..
অনিল : কি একটু আগে পৌছুলি?
অভি : হুম.
অনিল : সেই শেষমেষ বাবার বাধ্য ছেলে হয়ে যেতেই হলো তো?
অভি : হুম...
অনিল : আরে কি তখন থেকে হুম হুম করছিস....? মুড খারাপ নাকি?
অভি : না... ওই... কিছুনা
অনিল (একটু থেমে) : কি হয়েছে বলতো? তোর গলাটা এমন শোনাচ্ছে. হঠাৎ কি হলো তোর?
অভি : না... কিছুনা. এই অচেনা জায়গা তো তাই একটু....
অনিল : সেই ছোটবেলার কলেজের বন্ধু আমরা. তোকে খুব ভালো করে চিনি. বোরিং লাগলে সবার আগে তুই আমায় ফোন করতিস কিন্তু তা করিসনি. নিশ্চই অন্য ব্যাপার...... তাই এমন সিরিয়াস লাগছে তোকে. কি ব্যাপার বলতো? কি হলো তোর? এক মিনিট... এক মিনিট...... লেট্ মি থিঙ্ক... উমমম..... তুই কি এখনও ওই মেয়েটার কথা ভাবছিস... সত্যি করে বলতো?
অভি : হুম....
অনিল : আবার হুম...... ওরে ভুলে যা... ভুলে যা..... হঠাৎ করে দেখা হয়ে গেছিলো আবার হঠাৎ করেই চলে গেছে.... তুইও তাকে চিনিস না..... সেও তোকে চেনেনা... এক পলকের ভালোলাগা ছিল.... অমন হয়.... ওসব বাদ দে তো....... নইলে এমন চলতে থাকলে স্ট্রেইট পাগল হয়ে যাবি. তখন সব জায়গায় তুমি খালি তাকেই দেখবে বাবু.
অভিষেক সামনে তাকিয়ে ঘরে বসে থাকা মেয়েটাকে দেখে বললো : দেখছি তো...
অনিল : দেখছিস মানে? তুই কি ওখানে গিয়েও ওকে দেখতে পাচ্ছিস নাকি? এই সেরেছে.
অভি : হুম.. ....
অনিল : গেছে.....আমার বন্ধুটার মাথা পুরো গেছে. এই ভয়টাই পাচ্ছিলাম.... পুরো ক্র্যাক হয়ে গেছে আমার বন্ধুটার মাথা. এবারে সব জায়গায় ওকে দেখবি তুই. সবাইকে ওই মেয়েটা ভাবতে শুরু করবি তুই..... দেখিস বাবা.... আর যাকেই তোমার ওই প্রেমিকা হিসেবে দেখো..... নিজের বাবার বন্ধুর মেয়েকে আবার ওই প্রেমিকা হিসেবে দেখোনা. কেলেঙ্কারি হয়ে যাবে কিন্তু .
অভি : হয়ে গেছে তো....
অনিল : কি?
অভি : কেলেঙ্কারি !
চলবে......