13-07-2020, 09:20 PM
||তেরো||
কবীর ঘোষের দেওয়া পাঁচহাজার টাকাটা বিজলীর ভ্যানিটি ব্যাগেই ছিল, ওটা কাল রাতে কবীর ঘোষকে দেওয়া সার্ভিস এর পুরষ্কার। তার সাথে ছিল আরও টাকা। তুতেনখামেনের রত্নভান্ডার আবিষ্কার করার মতন চেঁচিয়ে উঠে তন্ময় বলল, "স্যার অনেক টাকা। গুনে দেখুন মনে হচ্ছে হাজার দশেকের নিচে হবে না।"
যতই বিজলীকে চাপে রাখার চেষ্টা করুক লোকটা, এখন বিজলীর মনে কোন হ্যারাসমেন্টের কষ্ট নেই। কবীর যখন কথা দিয়েছে, নিশ্চই এসে পড়বে ও অরুন ঝাকে নিয়ে।
কবীর ঘোষের দেওয়া পাঁচহাজার টাকাটা বিজলীর ভ্যানিটি ব্যাগেই ছিল, ওটা কাল রাতে কবীর ঘোষকে দেওয়া সার্ভিস এর পুরষ্কার। তার সাথে ছিল আরও টাকা। তুতেনখামেনের রত্নভান্ডার আবিষ্কার করার মতন চেঁচিয়ে উঠে তন্ময় বলল, "স্যার অনেক টাকা। গুনে দেখুন মনে হচ্ছে হাজার দশেকের নিচে হবে না।"
আশেপাশে যারা বসেছিল, ছিঁচকে চোর, কানা থেকে হুল্লোড়বাজ হুতুম, তাদের চোখ বড়বড় হয়ে গেছে - "শালা চোখের সামনে এত টাকা পাত্তির ছড়াছড়ি, অথচ আমরা কিনা....."
-- "কোথ্ থেকে এল এই মাল? রঞ্জিত তোমাকে দিয়েছে নাকি?"
এবারে আপনি থেকে সোজা তুমিতে। জানতে চাইলেন ডিউটি অফিসার।
বিজলী চুপ করে রয়েছে। উনি আবার বললেন, "আমি জানি রঞ্জিত নিজের দোষেই মরেছে। ছেলেটা অত্যাধিক ড্রাগ সেবন করত। মরার আগে দোষটা তোমার ঘাড়ে চাপিয়ে গেছে। এখন এই ছেলের বাড়ীর লোককে খবর দিয়েছি আমরা। তারা আসবেন, ডেডবডি পোষ্টমর্টেম হবে। ততক্ষণ তোমার তো একটা ব্যবস্থা করতে হবে। তা কি? খাতির টাতির আমরা কিছু পাব না?"
টাকার বান্ডিলটা কানের কাছে নিয়ে এমন ভাবে বাতাস করতে লাগলেন, যেন অলরেডী ওটা ওনার হয়ে গেছে।
বিজলী এখনও বুঝতে পারছে না কিভাবে এই গেরো থেকে উদ্ধার পাবে? দু একবার মিনমিন করে বলল, "স্যার আমার কোন দোষ নেই। আমি তখন পিটার ক্যাটে ছিলাম। আমাকে জোড় করে নিয়ে গেল। তারপর বাড়ীতে....."
ডিউটি অফিসার বললেন, "বাড়ীতে কি?"
বিজলী বলতে গিয়েও বলতে পারল না, ঐ তন্ময় বলে পুলিশটা তন্ময় হয়ে ওর দিকে তাকিয়ে রয়েছে। বিজলী বলল, "স্যার আমার ফোনটা একটু ইউজ করতে পারি?"
ও তাকিয়ে দেখল ডিউটি অফিসার হাসছেন, একেবারে খ্যাঁকশেয়ালের হাসি, তারমানে দাঁওটা এবার ভালই মারা যাবে।
"হে মা জগদম্বা, হে মা ভবানী, ভাল পাত্তি পাইয়ে দাও। কথা দিচ্ছি অনেক ফুল চড়াবো মনসা মন্দিরে গিয়ে।"
খসখস করে কাগজে কি যেন লিখলেন, মনে হয় কিছু একটা হিসাব করলেন, সব শেষে বিজলীকে বললেন, "করো ফোনটা করো, দেখি তোমার জন্য এখানে কে আসে।"
খুবই করুন অবস্থা বিজলীর। মোবাইল থেকে কবীরকে ধরার চেষ্টা করতে লাগল বিজলী। ডিউটি অফিসার ক্ল্যাসিক সিগারেটের প্যাকেটটা নেড়েচেড়ে দেখছেন, একবার বিজলীর দিকেও তাকালেন, সিগারেটের প্যাকেটটা মুখের কাছে নিয়ে এসে বললেন, স্মোকিং গার্ল?
ডাকসাইটে সুন্দরী কলগার্ল এর এখন কি অবস্থা, এ যাত্রা কবীর ঘোষই যদি ওকে বাঁচিয়ে দিতে পারে। তবেই স্বস্তি।
কবীরের লাইনটা কিছুতেই পাওয়া যাচ্ছে না। বিজলী হতাশ চোখে ডিউটি অফিসারের দিকে তাকালো।
-- "কি হল? লাইন পাওয়া যাচ্ছে না?"
- "না দেখি, আর একবার চেষ্টা করে।"
-- "এ লাইনে কতদিন?"
বিজলী যেন কিছুটা হতচকিত। কি উত্তর দেবে ভেবে পাচ্ছে না।
ডিউটি অফিসার বললেন, "রঞ্জিতের সঙ্গে আলাপটা কি ইন্টারনেট ছবি দেখে? আছে না কি তোমার কোথাও? উত্তেজক ভঙ্গীমার ছবি?"
বিজলী জবাব না দিয়ে তখনও কবীরকে ধরার চেষ্টা করে যাচ্ছে। বেশ কিছুক্ষণ ধরে চেষ্টা করেও যখন ওকে পেল না, তখন মোহনলালকে আবার ধরার চেষ্টা করতে লাগল।
-- "কি ব্যাপার? আমার উত্তরটা যে দিলে না বড়?"
- "না স্যার। ঔ হোটেলে। বললাম না, পিটার ক্যাট হোটেলে। ওখানেই দেখা হয়েছিল।"
-- "ওখান থেকে রঞ্জিত তোমাকে বাড়ীতে নিয়ে গেল?"
- "হ্যাঁ স্যার।"
-- "তারপর?"
ঐ তন্ময় লোকটা আবার তাকিয়ে আছে বিজলীর দিকে। বিজলী বলল, "তারপর....."
ডিউটি অফিসারের চোখে একটু ঘুমঘুম আসছে। হাই উঠছে। তুড়ি মেরে হাইটাকে উনি যমের দক্ষিণ দুয়ারে পাঠানোর ব্যবস্থা করলেন, তারপর বিজলীকে বললেন, "তারপর?"
ইতিমধ্যেই মটন চাপ আর তন্দুরি চলে এসেছে ওনার জন্য। নিজেই তন্ময়কে বললেন, "একটা ছোট পাঁইট হলে মন্দ হত না। কি বলো তন্ময়? বড়কর্তার অভিযানের ঠেলায় আমিও অস্থির, যখন তখন এসে পড়লে লজ্জ্বার আর শেষ থাকবে না। আমিও তাই আনলাম না।"
রুটীটী ছিঁড়ে মাংসের চাপের সাথে মাখিয়ে, গালে পুরে, আঙুলটা চাটতে চাটতে বিজলীকে বললেন, "তারপর?"
- "আমাকে জোর করল স্যার।"
-- "জোর করল?"
খেতে খেতেই আবার সেই শেয়ালের মতন হাসি। তন্ময়ের দিকে তাকিয়ে হাসতে হাসতেই বললেন, "কি বলছে শুনেছ তন্ময়? ওকে নাকি জোর করেছে!"
খেতে খেতে এমন ভাবে খ্যাঁক খ্যাঁক করে হাসতে লাগলেন, যেন রুটীর টুকরোটা গলায় আটকে গিয়ে এক্ষুনি বিষম লেগে যাবে। হলও তাই। কাশতে কাশতে চেঁচিয়ে উঠে বললেন, "এই জল দে এক্ষুনি।"
বিজলীর মুখ গম্ভীর, ঠিকমত বোঝাতেই পারছে না অফিসারকে। জল খেয়ে কাশি থামিয়ে, উনি এবার একটু মুখ ভেঙচে, জিভটাকে গালের এপাশ ওপাশ করে বললেন, "থানা, কোর্ট, কাছারি,মামলা, মোকদ্দমা, তারিখ এসব অনেক ঝেমেলা। মাত্র দশ হাজার টাকায় কি আর সব হয়? ওতো পকেট খরচাতেই চলে যাবে সব।"
- "কিন্তু স্যার? আমি তো কিছু করিনি।"
-- "চোপ, একদম চোপ।"
এমন ভাবে বিজলীকে দাবড়ে দিলেন, বিজলীর মনে হল, টাকাটা তো গেলই, এবার না ওকে সারারাত গরাদের ভেতরেই কাটাতে না হয়।
কাঁদতে কাঁদতে বলল, "আমি কিছু করিনি স্যার। সত্যি বলছি। ওই আমাকে রেপের মতন করে করবার চেষ্টা করছিল। আমি তারপরে ওখান থেকে পালিয়ে এসেছি।"
-- "তুমি রঞ্জিতকে আগে চিনতে না সত্যি?"
- "না স্যার, একবারই দেখা হয়েছিল। ও বলল, তোমাকে আমার বাড়ী নিয়ে যেতে চাই। এখন বাড়ীতে কেউ নেই। আমরা নিরিবিলিতে বসে একটু গল্প করব, তারপরেই....."
ডিউটি অফিসার বললেন, "নিশ্চয়ই তারমানে কোন কড়া মাদক সেবন করেছিল করবার আগে। আমরা তো ওর ঘর সার্চ করে ড্রাগ পেয়েছি। বাগানের মালীটা ফোন করে জানালো আমাদেরকে। বলল, একটা সুন্দরী মেয়ে এসেছিল একটু আগে। রঞ্জিতের মোবাইল সার্চ করে তোমার নম্বরটা পেলাম। ট্রেস করে পিছু ধাওয়া করে গড়িয়াহাটে গিয়ে তোমায় পেয়েছি। তা এত রাত্রে ওখানে আবার কি করছিলে?"
বিজলী জবাবটা দিতেই যাচ্ছিল। এমন সময় দেখল ওর ফোনটা বাজছে, কে যেন ওকে কল ব্যাক করেছে।
এবার যেন আশার আলো। ঘোর অমাবস্যায় চাঁদের উদয় হওয়ার মতন কবীর ঘোষ ওকে ফোন করেছে।
-- "কি ব্যাপার বিজলী তুমি ফোন করেছিলে? তোমার একটা মিস কল দেখলাম।"
- "হ্যাঁ, আমি খুবই বিপদে পড়েছি, তুমি একটু আসতে পারবে?"
-- "কেন কোথায়? কি হয়েছে?"
- "আমি যাদবপুর থানায় রয়েছি এখন। না এলে খুব সমস্যায় পড়ে যাব। ফোনে কাউকেই পাচ্ছি না অনেক্ষণ ধরে।"
-- "তোমার কোন প্রবলেম?"
- "তুমি এসো না? না এলে আমি কিছুই বোঝাতে পারছি না এখন। খুব সমস্যায় জড়িয়েছি।
-- "কিন্তু বিজলী আমার সাথে অরুন ঝা আছে এখন, তোমার কোন অসুবিধে নেই তো? তখন ওকে দেখেই তুমি ছোঁড়াটাকে নিয়ে বেরিয়ে গেলে। অরুন তারপর থেকে সারাদিন আমার সাথেই আছে।"
বিজলী কি যেন ভাবলো, "তারপর বলল, না না অসুবিধে নেই, তোমরা দুজনেই এসো। আমি অপেক্ষা করছি এখানে।"
ফোনটা রেখে দেওয়ার আগে বিজলী বলল, "কতক্ষণে আসছ?"
কবীর বলল, "আসছি কুড়ি পঁচিশ মিনিটের মধ্যে।"
ডিউটি অফিসার ওর দিকে তাকিয়ে শয়তানের হাসি হাসছেন, খুব আনন্দ হয়েছে, কেউ আসবে শুনে। বিজলীকে খেতে খেতেই আবার বললেন, "ইনি কে?"
বিজলী বলল, "কবীর ঘোষ। খুব বড় ব্যাবসায়ী।"
-- "আচ্ছা আচ্ছা, কিসের ব্যাবসা?"
- "অনেক কিছুরই। আমি অতসব বলতে পারবো না। তবে বড় বিজনেস ম্যান।"
-- "রঞ্জিতের কেউ হয়?"
- "না না রঞ্জিতকে উনি চেনেনই না। উনি আমার বন্ধু। রঞ্জিতের সাথে পিটারক্যাট থেকে বেরিয়ে যাবার আগে, আমি ইনার সাথেই ছিলাম।"
-- "ও আচ্ছা।"
খাওয়াটা এবার শেষ হয়েছে। জল খেয়ে একটা লম্বা ঢেঁকুড় তুললেন ডিউটি অফিসার। বিজলীর সিগারেটের প্যাকেটটা এখন যেহেতু ওনার দখলে, ওটা থেকে একটা সিগারেট বার করে লম্বা লম্বা ধোঁয়া ছাড়তে লাগলেন বিজলীর মুখের ওপরে।
যতই বিজলীকে চাপে রাখার চেষ্টা করুক লোকটা, এখন বিজলীর মনে কোন হ্যারাসমেন্টের কষ্ট নেই। কবীর যখন কথা দিয়েছে, নিশ্চই এসে পড়বে ও অরুন ঝাকে নিয়ে।
""পৃথিবীটা রঙ্গমঞ্চ আমরা সবাই অভিনেতা"" !!