Thread Rating:
  • 17 Vote(s) - 3.35 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
কলগার্ল -Written By Lekhak (লেখক)
#19
।।বারো।।


মেয়েমানুষের শরীরেকে যারা টাকা দিয়ে ভোগ করে, তারা আবার সুইসাইড করে নাকি? ওসব তো প্রেম ভালবাসায় হয়। ইদানিং সেটারও চল নেই বিশেষ। এ আবার কি ফ্যাসাদে পড়া গেল? রঞ্জিত বিজলীর জন্য খামোকা সুইসাইড করতে যাবে কেন?

বিজলীর চোখে মুখে যেন অন্ধকার নেমে আসছিল। এমনিতেই শরীরটা ভাল নেই, রঞ্জিত একপ্রকার অত্যাচার করেছে ওর ওপরে। বিজলী না বলে চলে আসার পর, ওকে না দেখতে পেয়ে সুইসাইড নোট লিখে গেছে রঞ্জিত, বিজলীর কেমন অদ্ভূত লাগছে ব্যাপারটা। ছেলেটি কি তাহলে মানসিক কোনো রোগী? মেয়েমানুষকে না পেলে আত্মাহুতি দেবে, এ কেমন ব্যাপার?

পুলিশভ্যানে ওঠার পর চোয়াল দুটো শক্ত করার চেষ্টা করছিল বিজলী, পুরুষমানুষ নিয়ে খেলতে খেলতে হঠাৎই একটা ছেলের প্রাণ চলে গেল ওর জন্য। বিজলী আফসোসে দু হাত দিয়ে মুখটা ঢেকে ফেললো। গাড়ী চলতে আরম্ভ করেছে, বিজলীর সামনে একটা সেপাই বসে আছে। হাত দিয়ে দুচোখ ঢেকে বিজলী ভাবছে, থানায় গিয়ে শেষ পর্যন্ত কি হবে কে জানে?

ভয়ভয় করছে বিজলীর বুকের ভেতরটা। গাড়ীতে চলতে চলতেই ওর একবার মনে হল, কবীরকে ফোন করলে কেমন হয়? এমন একটা টেনশন সিচুয়েশন, কবীরই যদি ওকে বাঁচাতে পারে। কিন্তু কবীর কি শেষ পর্যন্ত রাজী হবে এসব উটকো ঝেমেলা মেটাতে? বেশ্যার জন্য দরদ দেখানো? এই পরিস্থতিতে? কেই বা রাজী হয়?

কবীরের চোখের ওপর বুড়ো আঙুল দেখিয়ে নিমেষে পিটার ক্যাট থেকে বেরিয়ে এসেছিল বিজলী। উদ্দেশ্য অরুন ঝাকে অ্যাভোয়েড করা আর রঞ্জিতকে সঙ্গ দেওয়া। আর এখন? কে কার সাহায্য ভিক্ষা করতে চাইছে। যার কোন দোষ নেই, সেই কবীর ঘোষকে একবারের জন্যও মনে পড়েনি বিজলীর। আর ও কি না রঞ্জিতকে নিয়েই.....

কোথা থেকে কি যেন হয়ে গেল। হঠাৎ স্বর্গ থেকে পতন। শরীর দেওয়া নেওয়ার স্বর্গরাজ্য থেকে এখন নরকের অন্ধকার। ছিঁচকে চোরের পাশে, দাগী বদমাইসদের সাথে বিজলীকে যদি লকআপে আটকে রাখে?

যাদবপুর থানায় এসেছে ভ্যানটা। বিজলী গাড়ী থেকে নামল। সাদা পোষাকের উর্দীপরা পুলিসটা ওকে নিয়ে গেল ভেতরে। বিজলী ভেতরে ঢুকে দেখলো, দুজন বেশ্যা কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে বসে আছে, কিন্তু ওরা ঠিক ওর মতন নয়। পথচলতি বেশ্যা যাকে বলে। দু একটা হিজরেও ঘুরঘুর করছে থানার ভেতরে। ডিউটি অফিসারের চোখ থেকে ঝড়ে পড়ছে লালসা ভরা চাউনি। আড়চোখে বিজলীকে দেখছেন তিনি। মাঝে মধ্যে রিপোর্ট লিখছেন, সামনে ফেলা সার্ভিস রিভালবারে হাত বোলাচ্ছেন। ভয়ে যেন বুক ঢিপঢিপ করছে সকলের। এর আগে কখনও তারা থানাতে আসেনি।

বিজলী ভাবছিল, পুলিশের কোন বড় কর্তা যদি তার চেনা জানা থাকতো? মোবাইল থেকে একটা ফোন করলেই কাজ হয়ে যেত। বিজলীকে তখুনি ছেড়ে দিত, হ্যারাসমেন্ট করতো না।

এমন একটা ঘটনার আকস্মিকতায় বাকহীন হয়ে গেছে বিজলী। এরপরে কি হবে ও বুঝতে পারছে না। সমস্ত রাত থানাতেই থাকতে হবে নাকি? তারপরে রঞ্জিতের মৃত্যুকে কেন্দ্র করে যদি একটা হুলুস্থুল কান্ড বেধে যায়?

বিজলী শরীর বেচে খায় বলে, অহঙ্কারে মাটিতে তার পা পড়ে না। তাকে কিনা শেষ পর্যন্ত পুলিশের সামনে কাঁচুমাচু হয়ে বসতে হয়েছে, রঞ্জিতটাই যত গোলমাল পাকিয়েছে, ক্লায়েন্ট বেঁচে থাকা মানে তো আখেরে বিজলীর মতন কলগার্লদেরই লাভ, আর এখানে এক ক্লায়েন্টের অপমৃত্যু, পরিণতি কোনদিকে এগোবে বিজলী কিছুই বুঝতে পারছে না।

বিজলীর গলা দিয়ে একটা বুকচাপা কান্না উথলে আসছিল, এবারে কান্নাটা রোধ করতে না পেরে ওর চোখে জল চলে এল, কিন্তু কান্নার কোন শব্দ বেরোলো না।

জীবনটাকে ওর আবার নতুন করে শুরু করতে ইচ্ছে করছে, ভাল লাগছে না এই পেশাটাকে, ঘেন্না ধরে গেছে। ভালবাসার একটা মানুষ খুঁজে নিয়ে, জীবনটাকে আবার নতুন করে শুরু করা যায় কি? মুখটা নিচু করে ও ভাবছিল, শরীরটাতো তার এঁটো হয়ে গেছে, এই শরীরকে সে পবিত্র করবে কেমন করে? শরীর তো আর কাঁচের গ্লাস নয়, ধুলেই সব পরিষ্কার। রঞ্জিতের সাথে আবার ওর পিটার ক্যাটে দেখা হল কেন? এসব এলোমেলো চিন্তায় এখন যাদবপুর থানায় বসে থাকতে থাকতে ওর ব্যাথায় টনটন করছে সমস্ত শরীর। ঘুম পাচ্ছে, মনে হচ্ছে এই ঘুম আর না ভাঙলেই বোধহয় ভালো।

ডিউটি অফিসার বসে বসে পান চিবোচ্ছিলেন। যেন একরাশ বিরক্তি ভর করেছে তার মুখে। বিরক্তি হবারই কথা। রাত বাড়লেই রাস্তায় মোদো মাতালের মোচ্ছব। বেশ্যা মাগীদের হুল্লোড়, পকেটমারদের বাড়বাড়ন্ত, দিল্লী থেকে উজিয়ে আসা কেপমারির দল। যত হ্যাপা তাঁকেই সামলাতে হচ্ছে। অ্যাসিসটেন্ট পিনাকী বাবু আজ আসেন নি। বড়বাবুর পায়ে খুব করে তেল মেরে উনি আজ কামাই করেছেন, আসলে বউয়ের সাথে লদকালদকী খেলা খেলছেন কামারহাটি পুলিশ কোয়ার্টারে।

পানের শেষ অংশটা চিবোচ্ছিলেন, আপন মনে বললেন, "যত শালা আমারই দোষ। সবাই যে যার দেখ সখ আহ্লাদ মিটিয়ে নিচ্ছে, আর আমি কিনা একাই খেটে মরছি।"

দাঁতের ফাঁকে সুড়ুৎ করে একটা সুপারি কুচি ঢুকে গেল। বিজলীকে সামনে বসিয়ে যেন খেঁকিয়ে উঠলেন উনি। - "বড়লোক বাপের ছেলেদের সাথে এসব বেলেল্লাপনা কেন করতে যান আপনারা? বড়লোক বাপের নাদান ছেলে, বিষ খেয়ে সুইসাইড করেছে, এখন আপনাকে নিয়ে কি করি বলুন তো?"

পিক ফেললেন, যেন খ্যাক খ্যাক করে হাসলেন। নোংরা রুমাল দিয়ে নাক ঝাড়লেন, বিজলীকে বললেন, "এসব বাঞ্চোৎ ছেলেরা বাপের টাকায় ফুর্তিগিরি করে, মেয়েমানুষ নিয়ে মোচ্ছব করে আবার সেই মেয়েমানুষের জন্যই বিষ খেয়ে আত্মহত্যা করে, অবাক লাগে।"

কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে তারপর বিজলীর দিকে তাকিয়ে বললেন, "আপনি ওখানে গেছিলেন?"

বিজলী জবাব দিতে পারছে না, ওর গলা দিয়ে স্বর বেরোচ্ছে না।

পাশে দাঁড়িয়ে আছে ঐ সাদা পোষাকের উর্দী পরা পুলিশটা। ডিউটি অফিসার ওকে বললেন, "তন্ময়, ওনার ভ্যানিটি ব্যাগটা একটু সার্চ করো তো? দেখি বিষ টিস কিছু পাওয়া যায় নাকি?"

বিজলীর প্রতিবাদ করার ক্ষমতা নেই। লোকটা ছোঁ মেরে ওর হাত থেকে ভ্যানিটি ব্যাগটা কেড়ে নিয়ে, সব ঘেঁটে ঘুঁটে দেখতে লাগল। কিছুক্ষণ পরে টেবিলের ওপর উপুর করে দিল ভ্যানিটি ব্যাগটা। টুকরো টুকরো প্রসাধনের জিনিষ গুলো, দশহাজার নগদ টাকা, আর ক্ল্যাসিকের সিগারেটের প্যাকেটটা টেবিলের ওপর ছড়িয়ে পড়ল।

""পৃথিবীটা রঙ্গমঞ্চ আমরা সবাই অভিনেতা"" !! Sad

[+] 1 user Likes Kolir kesto's post
Like Reply


Messages In This Thread
RE: কলগার্ল -Written By Lekhak (লেখক) - by Kolir kesto - 13-07-2020, 09:16 PM



Users browsing this thread: 1 Guest(s)