11-07-2020, 01:01 PM
(ঞ) আমার মা হওয়া।
(Upload No. 132)
সতী বললো, “হু, তুমি যে কেবল আমার মন রাখতে এ কথা বলছো, সেটা বুঝতে কষ্ট হচ্ছে না আমার”।
শম্পা অবাক হয়ে বললো, “ও মা, সে কি কথা? আমি কখন এমন কিছু বললাম”?
সতী বললো, “বলোনি বলেই তো বলছি। আমি যেমন তোমাকে বন্ধু করে নিয়েছি সেকথা পরিষ্কার তোমাকে জানিয়ে দিলাম, তুমি কিন্তু এখনো তেমন করে বলো নি”।
শম্পা হাঁসতে হাঁসতে বললো, “এ মা। কী দুষ্টু মেয়ে দ্যাখো। আচ্ছা বাবা মানছি। দীপের সঙ্গে এখনো বধুত্ত্ব না হলেও আজ থেকে তুমি আমার বন্ধু হয়ে গেলে। এবার খুশী তো”?
সতী খুশী হয়ে বললো, “এ কথাটাই তো তখন থেকে শুনতে চাইছিলাম। থ্যাঙ্ক য়ু ভেরি মাচ, শম্পাদি। ঈশ, আমারো এখন তোমাকে খুব দেখতে ইচ্ছে করছে গো। আমি যে এখানে ফেঁসে আছি সে কথাতো নিশ্চয়ই শুনেছো দীপের মুখে। কবে যে খালাস হয়ে এখান থেকে শিলং ফিরবো জানিনা। কিন্তু যখনই যাই না কেন যদি গৌহাটিতে থাকতে হয় যাবার পথে, তাহলে সেদিনই তোমার সাথে দেখা করার চেষ্টা করবো । নইলে সোজা শিলং চলে গেলেও এক সপ্তাহের মধ্যে আমাদের দেখা হচ্ছে। এ কথা দিলাম তোমাকে”।
এবার শম্পা খুব খুশী হয়ে বললো, “থ্যাঙ্ক য়ু সতী, থ্যাঙ্ক য়ু সো মাচ। কিন্তু কথাটা মনে রেখো। আমি ঈশ্বরের কাছে তোমার জন্যে আজ থেকে রোজ প্রার্থনা করবো যেন তোমার সব ঝামেলা নির্বিঘ্নে পার হয়ে যায়। আর তোমার কোল আলো করে যে আসছে তাকে যেন খুব শিগগীর আমি বুকে জড়িয়ে ধরে আদর করতে পারি”।
শম্পার কথা শুনে খুশীতে আমার চোখ দিয়ে বেড়িয়ে আসছিলো। আমাদের অনাগত সন্তানের জন্যে এমন শুভেচ্ছা এর আগে আর কেউ আমাদের দ্যায় নি। সতীরও বোধহয় আমার মতোই গলা বুজে আসছিলো। বেশ কিছুক্ষণ ওর কোনো কথাই শুনলাম না। সতীকে চুপ করে থাকতে দেখে শম্পা বলে উঠলো, “হ্যালো সতী, কি হলো? লাইনে আছো তো না কি”?
সতীর ভাঙা ভাঙা গলা শুনতে পেলাম। বললো, “হ্যা হ্যা শম্পাদি। শুনছি তোমার কথা। তোমাকে আমার বুকে জড়িয়ে ধরতে ইচ্ছে করছে গো। আমার সন্তানের জন্যে তোমার শুভেচ্ছা শুনে আমার মন ভরে গেছে গো। আনন্দে আমার চোখ দিয়ে জল বেড়িয়ে এসেছে। তাই কথা বলতে পারছিলাম না”।
শম্পা বললো, “এই কি হচ্ছে সতী! একদম কাঁদবেনা। তুমি জানোনা, এ সময়ে তোমাকে সব সময় হাসি খুশী থাকতে হবে? লক্ষীটি একদম মন ভার করে থাকবে না। আচ্ছা শোনো সতী, রাতে খাবার মতো কিছু একটা তো রাঁধতে হবে। নাহলে আমার সাথে সাথে তোমার বরকেও যে না খেয়ে রাত কাটাতে হবে। আর দীপ আমার ঘরে প্রথম বার এসে না খেয়ে থাকবে, এ কি আমার ভালো লাগবে? তাই বলছিলাম কি, এখন রাখছি। তাড়াতাড়ি করে কিছু একটা বানিয়ে নিই। খেয়ে দেয়ে তোমাকে আরেকবার ফোন করতে পারতাম। কিন্তু অনেক রাত হয়ে গেছে বলে সেটা করতে চাই না। আমি দীপের কাছ থেকে তোমার ফোন নাম্বার রেখে দিচ্ছি। পরে তোমার সাথে আবার কথা বলবো কেমন”?
সতী বললো, “না না শম্পাদি, আমার তো এমনিতেই এখন রাতে ঘুম কম হচ্ছে। রাত একটা দেড়টার আগে একেবারেই ঘুম আসে না। তুমি এখন খাবার ব্যবস্থা করে নাও। খাওয়া দাওয়া হয়ে গেলে আবার আমাকে ফোন করবে। আচ্ছা তুমি বরং তোমার নাম্বারটাই আমাকে দাও। আমি জেগে থাকলে তোমাকে আবার ফোন করবো ঘণ্টা খানেক পর”।
শম্পা আদুরে গলায় বললো, “পাগলী মেয়ে কোথাকার। আচ্ছা ঠিক আছে লিখে নাও আমার নাম্বার”।
সতী শম্পাদির নাম্বার নোট করে নিয়ে বললো, “ঠিক চিনেছো আমায়। আমি সত্যি বোধহয় একটা পাগলী। তবে এ পাগলীর পাগলামি সহ্য করার জন্যে তৈরী থেকো। আমাকে যখন দেখবে তখন বুঝবে আমি কতোটা বদ্ধ পাগলী। আচ্ছা শম্পাদি, এখন ছাড়ছি তাহলে। ওঃ হ্যা, আরেকটা কথা শুনে রাখো। কাজে লাগতে পারে। তোমাকে একটা টিপস দিচ্ছি। এক রাত পেটের খাবার না হলেও আমার বরের কোনো অসুবিধে হয়না, মুখের খাবারটা জুটলেই সে খুশী হয়। বুঝেছো তো? তাই বলছি, বেশী কিছু রান্না করে সময় নষ্ট কোরো না। ও কে, পরে কথা হবে। ও হ্যা, শোনো শোনো শম্পাদি, আরেকটা দরকারী কথা বলতে ভুলে গেছি। আমার বর কিন্তু নিজে থেকে এগোবে না তোমার দিকে, সে আমি খুব ভালো করেই জানি। তাই বন্ধুত্ব করতে চাইলে তুমিই জাপটে ধরে শুরু কোরো, আচ্ছা রাখছি, বাই”।
আমি অনেক আগেই বাথরুম থেকে ফিরে এসে সোফায় বসে সিগারেট খেতে শুরু করেছিলাম। ফোন নামিয়ে রেখেই শম্পা আমার দিকে চেয়ে বললো, “বাপরে! এ কী মেয়ে বিয়ে করেছো তুমি দীপ? এ দেখি একেবারে পাগলী। আমাকেও পাগল করে ফেলেছে প্রথম পরিচয়েই”।
আমি একটু ঘাবড়ে গিয়ে বললাম, “মানে? ও কিছু উল্টো পালটা বলেছে না কি তোমাকে ? আই এম সরি শম্পা, আই এম রিয়েলি সরি। ওর কথায় তুমি কিছু মনে কোরো না প্লীজ”।
শম্পা সামনের সোফায় বসতে বসতে বললো, “আরে তুমি আমার কথার প্রকৃত অর্থটা বুঝতে ভুল করেছো। আসলে আমি বলতে চাইছিলাম যে তোমার বৌয়ের কথা শুনে ওর সাথে দেখা করতে আমার মন ছটফট করছে। ওকে দেখার জন্যে মনটা একেবারে পাগল হয়ে গেছে আমার। তুমি সত্যি কথাই বলেছিলে, সতী খুব ফ্রী খুব সহজ আর খুব খোলামেলা স্বভাবের” I কিন্তু সাথে সাথেই সোফা থেকে ঝট করে উঠে বললো, “কিন্তু এখন এখানে বসলে তো চলবে না দীপ। কিচেনে না গেলে শুধু গল্প করে পেট ভরবে? কিন্তু তুমিই বা একা এখানে বসে কী করবে? টি ভি দেখবে ? না কি আমার সাথে কিচেনে বসে গল্প করবে? চলো কিচেনেই যাই। আমার রান্নাও হবে আর তোমার সাথে গল্পও হবে”।
শম্পা আমাকে কিচেনে একটা চেয়ারে বসতে দিয়ে নিজে রান্নার আয়োজন করতে করতে টুকটাক কথা বলতে লাগলো। আমি পেছন থেকে শম্পাকে দেখতে দেখতে হঠাৎ বলে উঠলাম, “সত্যি, তোমার চেহারার একেবারে আমূল পরিবর্তন হয়ে গেছে শম্পা। পেছন থেকেও তোমাকে দারুণ লাগছে তোমায় দেখতে”।
শম্পা পেছন ফিরে আমাকে মৃদু ধমক দিয়ে বললো, “এই দুষ্টুমি হচ্ছে না? এখন বুঝতে পারছি আমাদের কলেজের সেই দীপ আর নেই। সে পুরো বদলে গেছে”।
আমি বললাম, “হ্যা সেটা আমিও মানছি শম্পা। আমি আর আগের মতো নেই। আসলে, তখন ভবিষ্যৎ নিয়ে এতোটাই দুর্ভাবনা ছিলো যে একমাত্র সিগারেট ছাড়া আর কোনো কিছুর প্রতি আসক্ত হতে পারিনি। সুখের স্বপ্ন দেখতে ভয় করতো। সেটাই ছিলো আমার ওপর তোমার অভিযোগের মূল কারণ। কিন্তু চাকরি পাবার পর যখন পায়ের নিচে শক্ত মাটি পেয়ে ভালো করে দাঁড়াতে পারলাম, তখন জীবনটাকে অন্য রকম ভাবে গড়ে তুলতে ইচ্ছে হলো। আর সতীকে পাবার পর আরো বেশী পাল্টে গেলাম যেন। আগে যেমন রিজার্ভড থাকতাম, এখন ঠিক তার উল্টো। এখন আমি সবার সাথে প্রাণ খুলে কথা বলি। আগে মেয়েদের কাছ থেকে দুরে থাকতাম, এখন আমি বেছে বেছে বেশ কিছু মেয়ের সাথে মেলামেশা করি। এটা গ্রো করেছে সতী আর ওর বান্ধবীদের সাহচর্যে। তুমি তো তার নমুনা আজ সকালেই দেখেছো। কিন্তু ছোট বেলায় মা বাবার কাছে শেখা অনেক কথাই আমি মেনে চলার চেষ্টা করি। কোনো মেয়ের ইচ্ছের বিরুদ্ধে আমি কখনোই তাদের সাথে মেলামেশা করার চেষ্টা করি না। সমাজের প্রতি সবটুকু না পারলেও কিছুটা কর্তব্য পালন করার চেষ্টা করি। আমার যেসব কূ-অভ্যেস সমাজের চোখে হেয় বলে মনে হতে পারে সে গুলোকে সযত্নে গোপন রাখার চেষ্টা করি। বিপদে আপদে নিজের সামর্থ্য অনুযায়ী আশে পাশের লোকেদের পাশে দাঁড়াবার চেষ্টা করি। সুতরাং পরিবর্তন যে আমার মধ্যেও অনেক হয়েছে সেটা অস্বীকার করার উপায় কোথায়? তবে এক্ষুনি যেটা করলাম সেটা যদি তোমার খারাপ লেগে থাকে তাহলে আমি ক্ষমা চাইছি তোমার কাছে। বাবা মার কাছ থেকে এটাও শিখেছি যে নিজে ভুল করলে ক্ষমা চেয়ে নিতে হয়”।
শম্পা আমার কথা শুনতে শুনতে রান্নার কাজ করে যাচ্ছিলো। আমার শেষ কথাটা শুনে আবার ঘাড় ঘুড়িয়ে বললো, “আঃ, দীপ কি হচ্ছে? আমি তোমাকে আঘাত দেবার জন্যে কিন্তু ওকথা বলিনি। তুমি এতো সিরিয়াসলি নিচ্ছো কেন সেটা”?
আমি অন্য প্রসঙ্গে যাবার উদ্দেশ্যে বললাম, “আচ্ছা শম্পা, আমি যদি এখানে বসে একটা সিগারেট খাই, তাহলে তোমার কি অসুবিধে হবে”?
শম্পা বললো, “আমার বরও সিগারেট খায়। আমি বারণ করলেও শোনে না। তুমি খেতে চাইলে খেতে পারো। দাঁড়াও তোমাকে অ্যাশট্রেটা এনে দিচ্ছি” বলে ভেতরের একটা রুম থেকে অ্যাশট্রে এনে আমার হাতে দিয়ে বললো, “আচ্ছা দীপ, একটা কথা জিজ্ঞেস করবো, সত্যি জবাব দেবে”?
আমি একটা সিগারেট ধরিয়ে বললাম, “তোমার এ প্রশ্নের জবাব কিন্তু আমি ট্রেনেই একবার দিয়েছিলাম। তুমি হয়তো মনে করতে পারছো না। তাই আবার বলছি, ঠাট্টা ইয়ার্কির সময় ছাড়া আমি কখনো মিথ্যে কথা বলি না। বলো কী জানতে চাও? আমি সত্যি জবাবই দেবো”।
শম্পা আমার দিকে পেছন ফিরে কাজ করতে করতেই বললো, “পেছন থেকে আমায় দেখে তুমি খোলাখুলি বলে দিলে আমাকে সুন্দর লাগছে দেখতে। আর তো কিছু করো নি। আমার জীবনে একটা সময় এমন গেছে, যে আমি চাইতাম কোনো ছেলে আমার দিকে তাকাক, আমাকে দেখুক। কিন্তু সে সাধ আমার পুরো হয় নি তখন। কিন্তু আজ পথ চলতে কতো পুরুষ লালসার চোখ নিয়ে যে আমার দিকে তাকায়, কতো নোংরা মন্তব্য করে, মেয়ে হয়ে এ সব অনেক কিছুই আমাকে মেনে নিতে হয় কোনো প্রতিবাদ না করে। তাই তুমি ভেবো না যে আমি তোমার সে কথায় বিরক্ত হয়েছি। কিন্তু এখন আমি তোমাকে যেটা জিজ্ঞেস করছি, তার জবাব দিতে যদি তুমি নিজেকে বিব্রত বোধ করো, তাহলে তার জবাব দিতে হবে না। কিন্তু যদি জবাব দাও তাহলে মিথ্যে বলবে না”।
আমি ছোট্ট করে বললাম, “বলো কী জানতে চাও”?
শম্পা পেছন ফিরেই চুপচাপ দাঁড়িয়ে থেকে বলতে লাগলো, “তুমি যে কলেজে পড়ার সময় কোনো মেয়ের দিকেই তাকাতে না এতো আমার অজানা নয়। কিন্তু ভুল করেও কখনো কি আমার দিকে তোমার নজর পরেছিলো”?
আমি একটু সময় চুপ করে থেকে বললাম, “তুমি খারাপ পেয়ো না শম্পা, কিন্তু সত্যি আমার তেমন কিছু মনে পড়ছে না”।
শম্পা এবারে সহজ ভাবে বললো, “তাহলে আজ কি করে বলছো যে আমি আগের থেকে অনেক সুন্দর হয়েছি? তুমি তো আগে আমার দিকে চেয়েও দ্যাখো নি কখনো তাহলে তফাৎটা বুঝলে কী করে”?
______________________________
ss_sexy
(Upload No. 132)
সতী বললো, “হু, তুমি যে কেবল আমার মন রাখতে এ কথা বলছো, সেটা বুঝতে কষ্ট হচ্ছে না আমার”।
শম্পা অবাক হয়ে বললো, “ও মা, সে কি কথা? আমি কখন এমন কিছু বললাম”?
সতী বললো, “বলোনি বলেই তো বলছি। আমি যেমন তোমাকে বন্ধু করে নিয়েছি সেকথা পরিষ্কার তোমাকে জানিয়ে দিলাম, তুমি কিন্তু এখনো তেমন করে বলো নি”।
শম্পা হাঁসতে হাঁসতে বললো, “এ মা। কী দুষ্টু মেয়ে দ্যাখো। আচ্ছা বাবা মানছি। দীপের সঙ্গে এখনো বধুত্ত্ব না হলেও আজ থেকে তুমি আমার বন্ধু হয়ে গেলে। এবার খুশী তো”?
সতী খুশী হয়ে বললো, “এ কথাটাই তো তখন থেকে শুনতে চাইছিলাম। থ্যাঙ্ক য়ু ভেরি মাচ, শম্পাদি। ঈশ, আমারো এখন তোমাকে খুব দেখতে ইচ্ছে করছে গো। আমি যে এখানে ফেঁসে আছি সে কথাতো নিশ্চয়ই শুনেছো দীপের মুখে। কবে যে খালাস হয়ে এখান থেকে শিলং ফিরবো জানিনা। কিন্তু যখনই যাই না কেন যদি গৌহাটিতে থাকতে হয় যাবার পথে, তাহলে সেদিনই তোমার সাথে দেখা করার চেষ্টা করবো । নইলে সোজা শিলং চলে গেলেও এক সপ্তাহের মধ্যে আমাদের দেখা হচ্ছে। এ কথা দিলাম তোমাকে”।
এবার শম্পা খুব খুশী হয়ে বললো, “থ্যাঙ্ক য়ু সতী, থ্যাঙ্ক য়ু সো মাচ। কিন্তু কথাটা মনে রেখো। আমি ঈশ্বরের কাছে তোমার জন্যে আজ থেকে রোজ প্রার্থনা করবো যেন তোমার সব ঝামেলা নির্বিঘ্নে পার হয়ে যায়। আর তোমার কোল আলো করে যে আসছে তাকে যেন খুব শিগগীর আমি বুকে জড়িয়ে ধরে আদর করতে পারি”।
শম্পার কথা শুনে খুশীতে আমার চোখ দিয়ে বেড়িয়ে আসছিলো। আমাদের অনাগত সন্তানের জন্যে এমন শুভেচ্ছা এর আগে আর কেউ আমাদের দ্যায় নি। সতীরও বোধহয় আমার মতোই গলা বুজে আসছিলো। বেশ কিছুক্ষণ ওর কোনো কথাই শুনলাম না। সতীকে চুপ করে থাকতে দেখে শম্পা বলে উঠলো, “হ্যালো সতী, কি হলো? লাইনে আছো তো না কি”?
সতীর ভাঙা ভাঙা গলা শুনতে পেলাম। বললো, “হ্যা হ্যা শম্পাদি। শুনছি তোমার কথা। তোমাকে আমার বুকে জড়িয়ে ধরতে ইচ্ছে করছে গো। আমার সন্তানের জন্যে তোমার শুভেচ্ছা শুনে আমার মন ভরে গেছে গো। আনন্দে আমার চোখ দিয়ে জল বেড়িয়ে এসেছে। তাই কথা বলতে পারছিলাম না”।
শম্পা বললো, “এই কি হচ্ছে সতী! একদম কাঁদবেনা। তুমি জানোনা, এ সময়ে তোমাকে সব সময় হাসি খুশী থাকতে হবে? লক্ষীটি একদম মন ভার করে থাকবে না। আচ্ছা শোনো সতী, রাতে খাবার মতো কিছু একটা তো রাঁধতে হবে। নাহলে আমার সাথে সাথে তোমার বরকেও যে না খেয়ে রাত কাটাতে হবে। আর দীপ আমার ঘরে প্রথম বার এসে না খেয়ে থাকবে, এ কি আমার ভালো লাগবে? তাই বলছিলাম কি, এখন রাখছি। তাড়াতাড়ি করে কিছু একটা বানিয়ে নিই। খেয়ে দেয়ে তোমাকে আরেকবার ফোন করতে পারতাম। কিন্তু অনেক রাত হয়ে গেছে বলে সেটা করতে চাই না। আমি দীপের কাছ থেকে তোমার ফোন নাম্বার রেখে দিচ্ছি। পরে তোমার সাথে আবার কথা বলবো কেমন”?
সতী বললো, “না না শম্পাদি, আমার তো এমনিতেই এখন রাতে ঘুম কম হচ্ছে। রাত একটা দেড়টার আগে একেবারেই ঘুম আসে না। তুমি এখন খাবার ব্যবস্থা করে নাও। খাওয়া দাওয়া হয়ে গেলে আবার আমাকে ফোন করবে। আচ্ছা তুমি বরং তোমার নাম্বারটাই আমাকে দাও। আমি জেগে থাকলে তোমাকে আবার ফোন করবো ঘণ্টা খানেক পর”।
শম্পা আদুরে গলায় বললো, “পাগলী মেয়ে কোথাকার। আচ্ছা ঠিক আছে লিখে নাও আমার নাম্বার”।
সতী শম্পাদির নাম্বার নোট করে নিয়ে বললো, “ঠিক চিনেছো আমায়। আমি সত্যি বোধহয় একটা পাগলী। তবে এ পাগলীর পাগলামি সহ্য করার জন্যে তৈরী থেকো। আমাকে যখন দেখবে তখন বুঝবে আমি কতোটা বদ্ধ পাগলী। আচ্ছা শম্পাদি, এখন ছাড়ছি তাহলে। ওঃ হ্যা, আরেকটা কথা শুনে রাখো। কাজে লাগতে পারে। তোমাকে একটা টিপস দিচ্ছি। এক রাত পেটের খাবার না হলেও আমার বরের কোনো অসুবিধে হয়না, মুখের খাবারটা জুটলেই সে খুশী হয়। বুঝেছো তো? তাই বলছি, বেশী কিছু রান্না করে সময় নষ্ট কোরো না। ও কে, পরে কথা হবে। ও হ্যা, শোনো শোনো শম্পাদি, আরেকটা দরকারী কথা বলতে ভুলে গেছি। আমার বর কিন্তু নিজে থেকে এগোবে না তোমার দিকে, সে আমি খুব ভালো করেই জানি। তাই বন্ধুত্ব করতে চাইলে তুমিই জাপটে ধরে শুরু কোরো, আচ্ছা রাখছি, বাই”।
আমি অনেক আগেই বাথরুম থেকে ফিরে এসে সোফায় বসে সিগারেট খেতে শুরু করেছিলাম। ফোন নামিয়ে রেখেই শম্পা আমার দিকে চেয়ে বললো, “বাপরে! এ কী মেয়ে বিয়ে করেছো তুমি দীপ? এ দেখি একেবারে পাগলী। আমাকেও পাগল করে ফেলেছে প্রথম পরিচয়েই”।
আমি একটু ঘাবড়ে গিয়ে বললাম, “মানে? ও কিছু উল্টো পালটা বলেছে না কি তোমাকে ? আই এম সরি শম্পা, আই এম রিয়েলি সরি। ওর কথায় তুমি কিছু মনে কোরো না প্লীজ”।
শম্পা সামনের সোফায় বসতে বসতে বললো, “আরে তুমি আমার কথার প্রকৃত অর্থটা বুঝতে ভুল করেছো। আসলে আমি বলতে চাইছিলাম যে তোমার বৌয়ের কথা শুনে ওর সাথে দেখা করতে আমার মন ছটফট করছে। ওকে দেখার জন্যে মনটা একেবারে পাগল হয়ে গেছে আমার। তুমি সত্যি কথাই বলেছিলে, সতী খুব ফ্রী খুব সহজ আর খুব খোলামেলা স্বভাবের” I কিন্তু সাথে সাথেই সোফা থেকে ঝট করে উঠে বললো, “কিন্তু এখন এখানে বসলে তো চলবে না দীপ। কিচেনে না গেলে শুধু গল্প করে পেট ভরবে? কিন্তু তুমিই বা একা এখানে বসে কী করবে? টি ভি দেখবে ? না কি আমার সাথে কিচেনে বসে গল্প করবে? চলো কিচেনেই যাই। আমার রান্নাও হবে আর তোমার সাথে গল্পও হবে”।
শম্পা আমাকে কিচেনে একটা চেয়ারে বসতে দিয়ে নিজে রান্নার আয়োজন করতে করতে টুকটাক কথা বলতে লাগলো। আমি পেছন থেকে শম্পাকে দেখতে দেখতে হঠাৎ বলে উঠলাম, “সত্যি, তোমার চেহারার একেবারে আমূল পরিবর্তন হয়ে গেছে শম্পা। পেছন থেকেও তোমাকে দারুণ লাগছে তোমায় দেখতে”।
শম্পা পেছন ফিরে আমাকে মৃদু ধমক দিয়ে বললো, “এই দুষ্টুমি হচ্ছে না? এখন বুঝতে পারছি আমাদের কলেজের সেই দীপ আর নেই। সে পুরো বদলে গেছে”।
আমি বললাম, “হ্যা সেটা আমিও মানছি শম্পা। আমি আর আগের মতো নেই। আসলে, তখন ভবিষ্যৎ নিয়ে এতোটাই দুর্ভাবনা ছিলো যে একমাত্র সিগারেট ছাড়া আর কোনো কিছুর প্রতি আসক্ত হতে পারিনি। সুখের স্বপ্ন দেখতে ভয় করতো। সেটাই ছিলো আমার ওপর তোমার অভিযোগের মূল কারণ। কিন্তু চাকরি পাবার পর যখন পায়ের নিচে শক্ত মাটি পেয়ে ভালো করে দাঁড়াতে পারলাম, তখন জীবনটাকে অন্য রকম ভাবে গড়ে তুলতে ইচ্ছে হলো। আর সতীকে পাবার পর আরো বেশী পাল্টে গেলাম যেন। আগে যেমন রিজার্ভড থাকতাম, এখন ঠিক তার উল্টো। এখন আমি সবার সাথে প্রাণ খুলে কথা বলি। আগে মেয়েদের কাছ থেকে দুরে থাকতাম, এখন আমি বেছে বেছে বেশ কিছু মেয়ের সাথে মেলামেশা করি। এটা গ্রো করেছে সতী আর ওর বান্ধবীদের সাহচর্যে। তুমি তো তার নমুনা আজ সকালেই দেখেছো। কিন্তু ছোট বেলায় মা বাবার কাছে শেখা অনেক কথাই আমি মেনে চলার চেষ্টা করি। কোনো মেয়ের ইচ্ছের বিরুদ্ধে আমি কখনোই তাদের সাথে মেলামেশা করার চেষ্টা করি না। সমাজের প্রতি সবটুকু না পারলেও কিছুটা কর্তব্য পালন করার চেষ্টা করি। আমার যেসব কূ-অভ্যেস সমাজের চোখে হেয় বলে মনে হতে পারে সে গুলোকে সযত্নে গোপন রাখার চেষ্টা করি। বিপদে আপদে নিজের সামর্থ্য অনুযায়ী আশে পাশের লোকেদের পাশে দাঁড়াবার চেষ্টা করি। সুতরাং পরিবর্তন যে আমার মধ্যেও অনেক হয়েছে সেটা অস্বীকার করার উপায় কোথায়? তবে এক্ষুনি যেটা করলাম সেটা যদি তোমার খারাপ লেগে থাকে তাহলে আমি ক্ষমা চাইছি তোমার কাছে। বাবা মার কাছ থেকে এটাও শিখেছি যে নিজে ভুল করলে ক্ষমা চেয়ে নিতে হয়”।
শম্পা আমার কথা শুনতে শুনতে রান্নার কাজ করে যাচ্ছিলো। আমার শেষ কথাটা শুনে আবার ঘাড় ঘুড়িয়ে বললো, “আঃ, দীপ কি হচ্ছে? আমি তোমাকে আঘাত দেবার জন্যে কিন্তু ওকথা বলিনি। তুমি এতো সিরিয়াসলি নিচ্ছো কেন সেটা”?
আমি অন্য প্রসঙ্গে যাবার উদ্দেশ্যে বললাম, “আচ্ছা শম্পা, আমি যদি এখানে বসে একটা সিগারেট খাই, তাহলে তোমার কি অসুবিধে হবে”?
শম্পা বললো, “আমার বরও সিগারেট খায়। আমি বারণ করলেও শোনে না। তুমি খেতে চাইলে খেতে পারো। দাঁড়াও তোমাকে অ্যাশট্রেটা এনে দিচ্ছি” বলে ভেতরের একটা রুম থেকে অ্যাশট্রে এনে আমার হাতে দিয়ে বললো, “আচ্ছা দীপ, একটা কথা জিজ্ঞেস করবো, সত্যি জবাব দেবে”?
আমি একটা সিগারেট ধরিয়ে বললাম, “তোমার এ প্রশ্নের জবাব কিন্তু আমি ট্রেনেই একবার দিয়েছিলাম। তুমি হয়তো মনে করতে পারছো না। তাই আবার বলছি, ঠাট্টা ইয়ার্কির সময় ছাড়া আমি কখনো মিথ্যে কথা বলি না। বলো কী জানতে চাও? আমি সত্যি জবাবই দেবো”।
শম্পা আমার দিকে পেছন ফিরে কাজ করতে করতেই বললো, “পেছন থেকে আমায় দেখে তুমি খোলাখুলি বলে দিলে আমাকে সুন্দর লাগছে দেখতে। আর তো কিছু করো নি। আমার জীবনে একটা সময় এমন গেছে, যে আমি চাইতাম কোনো ছেলে আমার দিকে তাকাক, আমাকে দেখুক। কিন্তু সে সাধ আমার পুরো হয় নি তখন। কিন্তু আজ পথ চলতে কতো পুরুষ লালসার চোখ নিয়ে যে আমার দিকে তাকায়, কতো নোংরা মন্তব্য করে, মেয়ে হয়ে এ সব অনেক কিছুই আমাকে মেনে নিতে হয় কোনো প্রতিবাদ না করে। তাই তুমি ভেবো না যে আমি তোমার সে কথায় বিরক্ত হয়েছি। কিন্তু এখন আমি তোমাকে যেটা জিজ্ঞেস করছি, তার জবাব দিতে যদি তুমি নিজেকে বিব্রত বোধ করো, তাহলে তার জবাব দিতে হবে না। কিন্তু যদি জবাব দাও তাহলে মিথ্যে বলবে না”।
আমি ছোট্ট করে বললাম, “বলো কী জানতে চাও”?
শম্পা পেছন ফিরেই চুপচাপ দাঁড়িয়ে থেকে বলতে লাগলো, “তুমি যে কলেজে পড়ার সময় কোনো মেয়ের দিকেই তাকাতে না এতো আমার অজানা নয়। কিন্তু ভুল করেও কখনো কি আমার দিকে তোমার নজর পরেছিলো”?
আমি একটু সময় চুপ করে থেকে বললাম, “তুমি খারাপ পেয়ো না শম্পা, কিন্তু সত্যি আমার তেমন কিছু মনে পড়ছে না”।
শম্পা এবারে সহজ ভাবে বললো, “তাহলে আজ কি করে বলছো যে আমি আগের থেকে অনেক সুন্দর হয়েছি? তুমি তো আগে আমার দিকে চেয়েও দ্যাখো নি কখনো তাহলে তফাৎটা বুঝলে কী করে”?
______________________________
ss_sexy