Thread Rating:
  • 17 Vote(s) - 3.35 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
কলগার্ল -Written By Lekhak (লেখক)
#16
।।এগারো।।


এই প্রথম শরীরে শক্তি বলে অবশিষ্ট আর কিছু নেই। মাথাটা ঝিম ঝিম করছে। কোমরে যন্ত্রণাটা এখনও রয়ে গেছে ভালমতন। ট্যাক্সি থেকে নামার সময় পা দুটো কেঁপে উঠল বিজলীর। নিজেকে ভীষন বোকা মনে হচ্ছিল ওর। অরুন ঝা এর হাত থেকে নিজেকে বাঁচানোর জন্য রঞ্জিতের ফাঁদে পা দিয়েই আজ এমন দূরবস্থা হল। কি দরকার ছিল তখন এই ঝুঁকিটা নেওয়ার? কবীর ঘোষ তো ওকে রাজরানী করেই রাখবে বলেছিল। ভুলটা করল বিজলীই। হঠাৎই রঞ্জিতকে নিয়ে পিটার ক্যাট থেকে বেরিয়ে যাওয়ার এমন আচরণে কবীর ঘোষ নিশ্চই বিস্মিত। কিন্তু বিজলী তাকে প্রত্যাখান করার পরেও সে ফোন করেছিল বিজলীকে। কিন্তু তাকে সাড়া দেবার চেষ্টা পর্যন্ত করেনি বিজলী। আফসোসটা তাই সারাজীবনের মতনই রয়ে যাবে।

চরম ভুলটা করে ও যে কি অন্যায় করে ফেলেছে তার জন্য নিজেকেই ক্ষমা করতে ইচ্ছে করছিল না বিজলীর। কবীর ঘোষকে ফোন করে আবার শরীরি সম্পর্কটাকে ফিরিয়ে আনতে হবে, সেই মুখটাও নেই। সব যেন খুইয়ে বসেছে নিজেরই দোষে।

ভাবতে ভাবতে রুমাল দিয়ে নিজের চোখের জলগুলো মুছছিল বিজলী। গড়িয়াহাট মোড়ে লোকজন, এতরাত্রে আসতে আসতে কমতে শুরু করছে। একটা ল্যাম্পপোষ্টের পাশে ঠায়ে দাঁড়িয়ে বেশ কিছুটা সময় এভাবেই কেটে গেল। ঘড়ির দিকে তাকালো বিজলী। তখন বাজে রাত্রি এগারোটা। এই সময়টা ওর মত প্রস্টিটিউটকে পাওয়ার জন্য খদ্দের প্রচুর। বিজলী এর আগে অনেক খদ্দের ধরেছে এই গড়িয়াহাট মোড় থেকেই। কিন্তু আজ ওর এই অবস্থায় বিন্দুমাত্র খদ্দের ধরার ইচ্ছা নেই। তবু ও আজ এসেছে এখানে শুধু একজনের জন্যই। যদি তাকে পাওয়া যায়। অন্তত একবার তাকে যদি দেখতে পাওয়া যায়। এই গড়িয়াহাট মোড়েই তার ঠেক। এখানে সে আড্ডা মারে। ওর মত অনেক কলগার্লই যার একডাকে চলে আসে। সেই মোহনলালের দেখা পাওয়ার জন্য ভীষন ভাবে উদগ্রীব বিজলী দাঁড়িয়ে রইল অধীর আগ্রহে।

মোবাইলে মোহনলালকে বারবার ধরার চেষ্টা করছিল বিজলী। কিছুতেই পাচ্ছিল না। মোবাইল অফ করে রেখেছে মোহনলাল, কেন কি কারন বিজলী জানে না। একটু দূরে দাঁড়িয়ে একজন লোভী পুরুষ লোভী দৃষ্টি দিয়ে ওকে দেখছে। যেন জরিপ করছে বিজলীকে। ও সায় দিলেই লোলুপ মানুষের মতো ওর সব কিছু ছিঁড়ে খাবে। চুষে চুষে দেখবে যৌনাঙ্গ থেকে কতটা রস বেরিয়ে আসে। অন্ধকারেও লোকটার চোখদুটো জ্বলছিল একটা সুন্দরী বেশ্যাকে দেখে পুরো লালসার আগুনে। লোকটা বিজলীকে ইশারা করে কিছু বলার চেষ্টা করছিল, বিজলী ওকে পাত্তা দিচ্ছিল না।

নতুন খদ্দেরের হাতের আদর খাওয়ার ইচ্ছা আপাতত নেই। রঞ্জিতের সেই উদ্দাম অত্যাচারের দৃশ্যটা ভেসে উঠছিল চোখ বন্ধ করলেই। লোকটা একটু কাছে এগিয়ে এসেছে। মুখ দিয়ে বাংলা ধেনোর গন্ধ বেরোচ্ছে ভকভক করে।

যেন যৌনতার স্বাদ উপভোগ করার জন্য মরীয়া। পকেট থেকে দুটো পাঁচশ টাকার নোট বের করে বিজলীকে দেখাচ্ছিল, যেন টাকার লোভে বিজলী রাজী হয়ে যাবে ওকে সঙ্গ দিতে। ঘন কালো অন্ধকার রাতে শুরু হয়ে যাবে শরীর সুখের উন্মাদনা। কবীর ঘোষ আর রঞ্জিতের পর এ এক বিজলীর নতুন দীওয়ানা। এই প্রথম বিজলীর মনে হচ্ছিল লোকটা আর একটু কাছে আসলেই ওর গালে ঠেসে একটা চড় মারবে, আচ্ছা করে শিক্ষা দেবে, ঘুচিয়ে দেবে মেয়েমানুষ নিয়ে ফুর্তী করার রঙিন স্বপ্ন। বেশি বার বাড়লে আশেপাশের লোকজন ডেকে তাদের হাতে তুলে দিতেও ও পিছপা হবে না।

পুরুষমানুষ পেলে যে কলগার্ল হামলে হামি খায়, তার এমন আচরণ বেশ অবাক হতাশ জনক। বিজলীর কেন যেন মনে হচ্ছিল যৌনতার পেশাটাকে হঠাৎই ঘেন্না করতে ইচ্ছে করছে ওর। একাধিক পুরুষের সাথে শরীর সংসর্গ করে আজ ও ক্লান্ত, নিজের সেই ইচ্ছাটাকেই হারিয়ে ফেলেছে। বুনো শূয়োরের মত ঝাঁপিয়ে পড়া লোকগুলোকে সঙ্গ দিতে দিতে বেশ্যাবৃত্তির প্রতি যেন অনীহা ধরে গেছে। ভাল লাগছে না কিছুই। মুখ থেকে একদলা থুথু হয়ে বেরিয়ে আসতে চাইছে ঘৃণা, তীব্র ঘৃণা। মক্ষিরানীর আজ আর কারুর রানী সাজার মন নেই, বাকী জীবনটা অন্য কোন পেশায় নিযুক্ত হয়ে ও কাটিয়ে দেবে। ছেড়ে দেবে বেশ্যাবৃত্তি, এই জগতের স্বার্থপর পুরুষমানুষ গুলোকে শুধুই একতরফা সুখ দিতে ও আর রাজী নয়। আজ থেকে সুখ শুধু নিজে নেবে পৃথিবীর সম্রাজ্ঞী হয়ে। কলগার্ল বিজলী কারুর বশ্যতা স্বীকার করতে এখন থেকে আর রাজী হবে না।

কি দরকার ছিল ওর? এমন পেশাটাকেই বেছে নেওয়া। এত সুন্দর মুখশ্রী যার। সিনেমার লাইনেও অবধারিত সুযোগ মিলে যেত। কয়েকজন প্রোডিউসার আর নায়ককে খুশি করতে পারলেই তো কেল্লা ফতে। ঠিকই বলেছিল অরুন ঝা। - "বিজলী তোমার যা ফিগার-ফেস, বেশ্যাবৃত্তিতে নিযুক্ত না হয়ে তোমার সিনেমায় নামা উচিত ছিল। দেখতে সিনেমার প্রযোজকরা কেমন মাথায় করে রাখত তোমাকে। বলো তো কথা বলতে পারি একজনের সঙ্গে।"

সে রাত্রে অরুন ঝা এর সঙ্গে ভরপুর যৌনসঙ্গম করে, বিজলীর মনে হয়েছিল লোকটার কাঁধে ভর করে এবার রুপালী জগতে পদার্পণ করলে কি রকম হয়? যা বলছে, ভুল তো কিছু বলছে না। সিনেমায় নামার সব গুনই যখন আছে তখন একবার ট্রাই করে দেখতে ক্ষতি কি? শুধু অভিনয়টা একবার শিখে নিতে হবে। তাছাড়া আজকাল নায়িকারা আবার অভিনয় জানে নাকি? সব তো মুখস্থ করে গড়গড় করে বলে। ওতে কোন প্রাণ নেই। বিজলী সিনেমায় নামলে নিজেকে ঠিক তৈরী করে নেবে।

এত কিছু লোভনীয় প্রস্তাব আর সবকিছু পাকা কথা হয়ে যাবার পরও আজ পিটারক্যাটে অরুনঝাকে দেখে বিজলীর তাড়াতাড়ি বেরিয়ে আসার একটাই কারণ, সেদিন একটা চরম ভুল করে ফেলেছিল বিজলী। নিজের দম্ভটাকে ও সামলাতে পারেনি।

অরুন ঝা ওকে বলেছিল, "আমি তোমাকে দুলাল বসুর কাছে নিয়ে যাব, তোমার মতন রূপসীকে দেখলে উনি এককথায় লুফে নেবেন তোমাকে, ওনার নতুন ছবিতে তোমাকে সাইন করাবেন, বাংলা ছবির নতুন হিরোইন হবে তুমি, শুধু লোকটাকে যদি তুষ্ট করতে পারো..... তাহলে আর পেছন ফিরে তাকাতে হবে না সারা জীবনে, উনি তোমার কেরিয়ার, ভবিষ্যত সবই গড়ে দেবেন।"

প্রস্তাবটা মন্দ লাগেনি বিজলীর। সিনেমার নায়িকা হওয়ার সুযোগ কজনের আসে? কিন্তু এই প্রস্তাব গ্রহণ করতে গেলে, বিনিময়ে তাকে কি করতে হবে?

অরুন ঝা হেসে বলেছিল, "কিছুই নয়, যেটা তুমি খুব সহজে করতে পারো। পুরুষমানুষকে যৌনসুখ দিয়ে তুমি যেমন রাতের রঙ্গিনী হয়ে যাও, দুলাল বসু তোমার বাকী জীবনটায় সেভাবেই রাতের রঙ্গিনী করবে তোমাকে।"

বিজলী বলেছিল, "মানে? তারমানে আমি ওনার কেপ্ট হবো?"

অরুন ঝা বলেছিল, "হ্যাঁ সারাজীবনের জন্য। এটাই ওনার গিভ এন্ড টেক পলিসি। বর্তমানে দুজন স্বনামধন্য নায়িকা ওনার কেপ্ট। তারা কোনদিন বিয়ে করবে না জীবনে। দুলাল বসু তাদেরকে পরের পর ছবিতে চান্স দিয়ে যাবে, আর তারাও রক্ষিতার ভূমিকা পালন করে যাবে, সারাজীবন ধরে।"

বিজলী হেসে বলেছিল, "বারে? আমার কি আলাদা কোনো জীবন নেই না কি? একটা লোককে শুধু শরীর দিয়ে তুষ্ট করে যাব? আমাকে যদি অন্য প্রোডিউসারদেরও পছন্দ হয়?"

অরুন ঝা বলেছিল, "সে তো হবেই। তুমি যাতে হাত ফস্কে বেরিয়ে না যাও, এইজন্য এটাই ওনার টেকনিক। বলতে পারো একটা ফরমূলার মতন। ফান্ডাটা যে ওনার ভালই আছে, সেতো আমি জানি, সেইজন্যই তোমাকে বললাম।"

বিজলী বলেছিল, "তাহলে আমার উত্তর না। এই মূহূর্তে যেটা করছি, আমার সেটাই ভাল। আপাতত নায়িকা হওয়ার কোন ইচ্ছা আমার নেই।"

সবাই যে ওকে চিরকালের রক্ষিতা বানাতে চায়। কলগার্ল বিজলীর এমনই রূপ। সেই কবীর ঘোষ থেকে শুরু করে, রঞ্জিত, দুলাল বসু। এমনকি অরুন ঝাও বাদ নেই।

বিজলীকে অরুন ঝা বড়মুখ করে বলেছিল, "আচ্ছা বিজলী সারাজীবন কাটানোর জন্য এই বান্দাটাকে কেমন লাগে তোমার? যদি আমি তোমাকে আমার কাছে রেখে দিই, চিরকালের জন্য।"

 - "ডোন্ট ট্রাই টু বিকাম স্মার্ট অরুন। তুমিও দেখি দুলাল বসু হওয়ার চেষ্টা করছ আস্তে আস্তে। আমি তোমার কাছে চিরকাল পড়ে থাকবো, তুমি ভাবলে কি করে?"

বিজলীর বুক চুষে, স্তন খেয়ে অনেক মিনতি করেও অরুন ঝা রাজী করাতে পারেনি ওকে। সেদিনের ঐ রাতের পর অনেক চেষ্টা করেছিল বিজলীকে আবার পাওয়ার। কিন্তু বিজলী ওমুখো হয় নি। কতবার ওকে ফোনে ধরার চেষ্টা করেছে, বারবার রিকোয়েস্ট করেছে, কিন্তু তাতেও বিজলীকে টলানো যায়েনি। শরীর বেচে যে খায়, তার কিনা এত দেমাক? কই কবীর ঘোষের বেলায় তো ওকে না করতে পারেনি। ইচ্ছে তো ছিল রঞ্জিতেরও। খামোকা লোকটাকে অ্যাভোয়েড করতে গিয়ে রঞ্জিতের আঘাতটা ওকে সহ্য করতে হল। বিজলীর যেন আফসোসটা কিছুতেই যাচ্ছিল না। গড়িয়াহাট মোড়ে দাঁড়িয়ে ও কি করবে ভেবে পাচ্ছে না। মোহনলালকে অনেক চেষ্টা করেও ফোনে ধরা গেল না। ওদিকে লোকটাও এগিয়ে এসেছে বিজলীর একদম কাছে। কি কেলটে মার্কা দেখতে। মুখে খোঁচা খোঁচা দাড়ি, পাতা খোর, গ্যাঁজা খোরের মতন চেহারা, বিজলীকে দেখে যেন জল গড়াচ্ছে তার জিভ দিয়ে।

বেশ বিরক্ত হয়েই বিজলী লোকটাকে বলল, "কি চাই?"

লোকটা বলল, "তোমাকে চাই সুন্দরী। কি দেখতে তোমাকে! আহ যেন মরে যাই! চলো না ডারলিং, যাবে আমার সাথে?"

 - "আর একটু এগোলে ঠাস করে চড় মারবো একটা গালে। মেয়েছেলে দেখে নখরা হচ্ছে তোমার?"

লোকটা বলল, "চোপ শালা মাগী। বেশ্যা তুই। নখরা তো তুই করছিস আমার সাথে।"

পা থেকে মাথা অবধি যেন আগুন জ্বলে গেল বিজলীর। আঁতে ঘা দিয়ে লোকটা ওকে মোক্ষম জবাব দিয়েছে। বিজলী বলল, "কি? আমি প্রস্টিটিউট?"

লোকটা বলল, "তা ছাড়া আবার কি? চল অনেক নোট আছে আমার পকেটে। চল তোকে দেব, চল।"

তুই তুকারি করে কথা বলছে একটা কলগার্লের সাথে? যে কিনা উচ্চবিত্ত লোকেদের শরীর বেচে এসেছে এতদিন। হাই প্রোফাইল কাস্টমাররা সব পাগল হয়ে যাচ্ছে বিজলীর সাথে রাত কাটিয়ে, আর সেখানে কিনা একটা ছোটলোক মার্কা লোক ওকে বলছে বেশ্যা?

বিজলী বলল, "আমি কিন্তু চেঁচিয়ে লোক জড়ো করব এক্ষুনি।"

লোকটা বলল, "ডাক না ডাক। কেউ আসবে না তোর কথা শুনে।"

কি আস্পর্ধা ছোটলোকটার? বিজলী চেঁচাতেই যাচ্ছিল। এমন সময় অন্য একটা লোক এসে বিজলীর হাতটা ধরল।

 -- "আপনি আসুন আমার সঙ্গে।"

 - "কে আপনি?"

বিজলী ফিরে তাকালো।

একটা স্বাস্থ্যবান লোক। ওকে বলল, "আসুন আমি বলছি।"

রাস্তার দুটো তিনটে লোক দেখছে অবাক হয়ে। ওই মাতালটাও থ মেরে গেছে। লোকটা বিজলীর হাত ধরে ধরে টেনে নিয়ে যাচ্ছে। বিজলী বলল, "একি ছাড়ুন আমাকে। কোথায় টেনে নিয়ে যাচ্ছেন আমাকে?"

বেশ ভদ্রভাবেই লোকটা বলল, "আমি পুলিশ। একটু থানায় যেতে হবে আপনাকে। আপনার নামটা একজনের সুইসাইড নোটের পাশে পাওয়া গেছে।"

 - "সুইসাইড? কে সে?"

 -- "আপনি রঞ্জিত বলে কাউকে চেনেন?"

সামনেই পুলিশের জীপটা দাঁড়িয়ে আছে। লোকটা বলল, "উঠুন গাড়ীতে, থানায় গিয়ে সব বলছি।"

""পৃথিবীটা রঙ্গমঞ্চ আমরা সবাই অভিনেতা"" !! Sad

[+] 2 users Like Kolir kesto's post
Like Reply


Messages In This Thread
RE: কলগার্ল -Written By Lekhak (লেখক) - by Kolir kesto - 10-07-2020, 10:11 AM



Users browsing this thread: 3 Guest(s)