09-07-2020, 10:19 PM
(This post was last modified: 11-04-2021, 04:36 PM by kumdev. Edited 2 times in total. Edited 2 times in total.)
।।৬২।।
স্বার্থপর, মণ্টির প্রয়োজন ফুরিয়েছে এখন অন্য মইয়ের সন্ধানে। ন্যাকা সেজে থাকা একটা ভান।যখন জিজ্ঞেস করল, সোম বিদেশ যাবে কিনা? তার উত্তরে রঞ্জনা অবলীলায় বলল,যাইতেও পারে।আম্মুর সঙ্গেও বিদেশ নিয়ে কথা বলছিল নিজে শুনেছে।এরপর কিভাবে অবিশ্বাস করেন? গুলনারের চোখ ঝাপসা হয়ে এল। যাইতে ইচ্ছা হয় যাক। কাউকে জোর করে বেঁধে রাখতে চায় না। পুরুষ মানুষ যা ইচ্ছে তাই করবে আর যত দায় মেয়েদের? প্রচলিত ধারণাকে প্রশ্রয় দিতে পারবে না গুলনার। কারো দয়া করুণার পাত্রী হয়ে জীবন ধারণ করা তার পক্ষে সম্ভব নয়। জেনিফার আলম স্বামীকে তালাক দিয়ে খারাপ কি আছে?
বেলা পড়ে এসেছে,সুর্য ঢলে পড়েছে পশ্চিমে। গুলনার গাড়ীতে উঠে বসে আছে। ইউসুফচাচা কোথায় গেল এদিক ওদিক দেখছেন।কিছুক্ষন পর ছুটে এসে স্টিয়ারিঙ্গে বসলেন।
— চাচা কোথায় গেছিলেন?
— চা খাইতেছিলাম। মা তোমার মুখ খান শুকনা দেখায় ক্যান? শরীর খারাপ?
ওরা চাচাকে চা দেয়নি তারই খোজ নেওয়া উচিত ছিল। গুলনার পিছনে হেলান দিয়ে বসে মৃদু হেসে বলেন,আমার কিসসু হয় নাই,আমি ভাল আছি। চাচা আপনের বাড়ির সব ভাল তো?
— চাচীর শরীর ভাল না,বয়স হইলে যা হয়।
--চাচীরে খুব ভালবাসেন?মজা করে বললেন গুলনার।
ইউসুফমিঞা উদাস গলায় বলল,নয় বচ্ছর বয়সে বাপ-মা ছাইড়া আমার কাছে আসছে।অখন আমি ছাড়া তার কেইবা আছে।
গুলনারকে এক বিষণ্ণতা আচ্ছন্ন করে।মনটা অতীতের দিকে পায়ে পায়ে হাটতে থাকে। সেই ছেলেগুলো ভালবাসার কোন ভান করে নাই,শুধু শারীরি সুখ ছিল তাদের কাম্য। আজ হয়তো হাজতবাস করছে। আর হিপোক্রিটগুলো দিব্যি জেলের বাইরে নিশ্চিন্তে ঘুরে বেড়াচ্ছে। কত পুরানো কথা মনে পড়তেছে। নুসরতের কথা মনে পড়তে মনে মনে লজ্জিত হন। নিজের সুখে মজে থেকে তার কথা মনেই পড়েনি। কোথায় আছে,কেমন আছে কে জানে।
উত্তরা থেকে ফোন এসেছিল। রিসিভার কানে দিতে ওপাস হতে প্রশ্ন শুনতে পায় বলদেব,কি সিদ্ধান্ত করলে?
অনেক খরচের ব্যাপার কি বলবে বলদেব? ইচ্ছে হলেই হবে না,কে যোগাবে ব্যয়ভার?
—টাকার কথা ভাবছো?আমি আছি কি করতে?
একটু ভাবার সময় চেয়ে নিল বলদেব। মণ্টি এসে কোথায় গেল? ঘরের মধ্যে দম বন্ধ হয়ে আসছে,খোলা হাওয়ায় একটু বেড়িয়ে এলে ভাল লাগবে। বলদেব রাস্তায় নামল। মণ্টির আচরণ অদ্ভুত লাগছে কেন এমন করছে? সরাসরি কিছু বললে বোঝা যেত। ফুটপথ ধরে হাটতে থাকল আনমনা।
নাদিয়া বেগম মেয়ের ঘরে গিয়ে দেখলেন,দরজা খোলা। বিছানায় উপুড় হয়ে শুয়ে আছে মণ্টি। পিঠে হাত রেখে বলেন,অসময়ে শুইয়া পড়লি,তর কি শরীর খারাপ?
মায়ের দিকে না তাকিয়ে গুলনার বলেন,তোমার জামাই কি বিদেশ গ্যাছে গিয়া?
— তর কথা তো আমি কিছু বুঝতে পারিনা,তুই গেছিলি কই?
— গেছিলাম তোমার জামাইয়ের খবর নিতে।
— কি আবোল তাবোল বলতেছিস? তুই কি পাগল হইলি?
এক ঝটকায় উঠে বসে গুলনার বলেন,হ,আমি পাগল হইয়া গেছি। তারপর কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে বলেন,মা আমার ভুল হইয়া গ্যাছে, কি বানাইতে কি বানাইলাম।
নাদিয়া বেগম কথার মাথা মুণ্ডু বুঝতে পারেন না। মেয়ের কান্নায় আপ্লুত হয়ে বুকে জড়িয়ে ধরে বলেন,কান্দিস না মা। সব ঠিক হইয়া যাইবো– -ওঠ মা,চেঞ্জ কইরা আয়। বলা একটু বাইর হইছে,আসনের সময় হইয়া গ্যাছে।
নাদিয়া বেগম চিন্তিত মুখে বেরিয়ে গেলেন। হঠাৎ কি হইল? কলেজে কোনো গোলমাল হইল নাকি? দরকার নাই তর কাম করনের কত করে বুঝানো হইল,শুনলে তো? সব রাগ গিয়ে পড়ে স্বামীর উপর। মেয়েটারে আস্কারা দিয়া মাথায় উঠাইছেন। অখন দেখো কেমুন নিশ্চিন্ত,যত জ্বালা পুহাইতে হইবো মায়েরে।
ড.রিয়াজ নীচে নেমে ইউসুফের সঙ্গে কথা বলছেন।মেয়ে কোথায় গেছিল,কার বাসায়? খোজ খবর নিচ্ছেন। বলদেব ফিরে ড.রিয়াজকে দেখে দাঁড়িয়ে পড়ে।
— আব্বু আপনে কখন আসলেন?
— এই আসলাম। তুমি উপরে যাও,আমি আসতেছি। ড.রিয়াজ জামাইকে লক্ষ্য করেন।বলদেব উপরে উঠে ঘরে গিয়ে দেখল মণ্টি উপুড় হয়ে শুয়ে আছে।মনে হয় ক্লান্ত ঘুমাচ্ছে ঘুমাক।
ইয়াসিন পাকের ঘরে করিম খাবার এগিয়ে এগিয়ে দেয়। নাদিয়া বেগম নিজের হাতে পরিবেশন করেন। টেবিল আজ একটু চুপচাপ কেউ কথা বলেনা। বলদেব খেয়ে চলেছে। গুলনারের খাওয়া হতে কাউকে কিছু না বলে উঠে চলে যান। নাদিয়া বেগম নীচু হয়ে বলদেবের কানের কাছে মুখ নিয়ে বলেন,তুমি ওরে একটু বুঝাইয়া বলবা,অর মনটা ভাল না।
—আমারও তাই মনে হল। আপনে কোন চিন্তা করবেন না আম্মু। রাত পোহালে দেখবেন মন একেবারে ঝরঝরে।
ড.রিয়াজ সাহেব আড়চোখে জামাইকে লক্ষ্য করেন। তার মনের ধন্দ্ব কাটেনা কিছুতে। কত জটিল রোগের কারণ নির্ণয় করেছেন অনায়াসে কিন্তু মণ্টির ব্যাপারটা তাকে ভাবিয়ে তুলেছে।
সবাই যে যার ঘরে চলে গেছে। লাইট নিভিয়ে ঘর অন্ধকার করে শুয়ে আছেন গুলনার। মনের মধ্যে চলছে ভাঙচুর। অন্ধকারেও বুঝতে পারেন দেব ঘরে ঢুকেছে। নীরবে লক্ষ্য করেন দেবকে।
বলদেব বুঝতে পারে মণ্টি ঘুমায় নাই। বলেদেব উদ্দেশ্যহীন ভাবে বলে,পাস করার পর দুইজনরে সংবাদটা দেবার জন্য মনটা অস্থির হয়ে উঠেছিল। একজনরে দেওয়া অসম্ভব আরেকজনের পাত্তা নাই। একবার ভাবলাম যাই ছুটে মুন্সিগঞ্জে– ।গুলনারের সাড়া শব্দ নাই। বলদেব দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে,আজ মা থাকলে কি খুশিই না হতো।
— আপনের মায় তো ল্যাখাপড়া থিকা অনেক দূরে সে পাসের মর্ম কি বুঝতো?
বলদেব হাসে আপন মনে,টের পায় মণ্টি রাগ করে বলছে। গায়ে না মেখে বলে,চাঁদ মানুষের নাগালের বাইরে তবু কি তা মানুষের ভাল লাগতে নাই?
গুলনার এ কথার কোন জবাব দেয়না।
বলদেব বলে,তুমি বলেছিলে লেখাপড়া করতে হবে। সেই থেকে মনে হচ্ছিল নিজেকে কর্জদার। যে করেই হোক তোমার ঋণ শোধ করবো। অধ্যাপকের নিয়োগপত্র পেয়েছি। এখন মনে হচ্ছে আমি ঋণমুক্ত।
— তাই নাকি? গুলনার চুপ করে থাকতে পারেন না বলেন, খাওনের খরচা বাদ দিলেও হিসাব করছেন আপনের পড়াশুনায় কত টাকা লাগছে?
একথায় বলদেব হোচট খায়। একমুহূর্ত ভেবে বলে,হিসাবে আমি কাঁচা। তুমি হিসাবটা দিও,চেষ্টা করবো পাই পয়সা মিটিয়ে দিতে।
— অনেক লেখাপড়া করে বেশ উন্নতি হয়েছে। মনে বিদেশ যাওনের বাসনা জাগছে? কে উস্কাইতেছে আমি জানি না ভাবতেছেন? ভাল মানুষ আমার মায়েরে ভুলাইতে পারলেও আমারে ভুলাইতে পারবেন না– বেইমান।
বলদেব বিছানায় উঠে গুলনারকে ধরে বলে,মণ্টি তোমার কি হয়েছে?
এক ঝটকায় ঠেলে দিয়ে বলেন, খবরদার বলছি আমার গায়ে হাত দিবেন না আপনে ছুইলে আমার গা গুলায়।
— এ তুমি কি বলছো? আমি তোমার দেব– ।
— আপনের গায়ে অন্য মেয়ে মানুষের গন্ধ।
— ছিঃ মণ্টি নিজেকে এত ছোট কোর না।
— সত্যি কথা শুনে গায়ে লাগছে? আমি নিজেকে ছোট করছি আর আপনি খুব বড় মানুষ হইয়া গেছেন– জানোয়ার লম্পট মা মাসী জ্ঞান নাই– । গুলনার বালিশে মুখ গুজে কেদে ফেলেন।
— বুঝতে পারছি গুজব তোমাকেও স্পর্শ করেছে।
— বুকে হাত দিয়া বলেন তো আপনি তারে স্পর্শ করেন নাই?
— তোমার মনে জমে আছে পুঞ্জিভুত ঘৃণা,এই মন নিয়ে কিছু বুঝতে পারবে না,আমিও তোমাকে কিছু বোঝাতে চাই না।
— আল্লাহর দিব্য দিয়া বলেন তো আপনি তারে স্পর্শ করেন নাই।
— আমি তো বলেছি এত ঘৃণা নিয়ে কিছু বোঝা যায় না। আমি আল্লাহপাকের নাম করে বললেও তুমি ভাববে আমি কাফের। সকাল হোক পরিস্কার হোক মন,সব তোমাকে বলবো। সন্দেহের কীট দংশনে অকারণ ক্ষতবিক্ষত হয়োনা। শোনো বিদেশ গেলেও তোমাকে নিয়ে যাবো।
— আ-হা! কি কথা। আমি কোন বংশের মেয়ে জানেন? কারো সতীন হয়ে থাকবো ভেবেছেন? সবাইকে নিজের মত ভাবেন নাকি?
বলদেব লাইট জ্বেলে দিল।
— লাইট নিভান। চিৎকার করে বলেন গুলনার। আপনের মুখ দেখতে আমার ঘেন্না হয়।
ড রিয়াজ বিছানায় উঠে বদলেন।আওয়াজটা মণ্টির ঘর থেকে এল মনে হচ্ছে।
--উঠলেন ক্যান,কি হইছে।নাদিয়া বেগম বলেন।
--নাকিছু না।আবার শুয়ে পড়লেন।ঘুম আসেনা।
বলদেব লাইট নিভিয়ে দিয়ে বলল,তুমি আমাকে অপমান করতে চাইছো?
— মান-অপমান জ্ঞান আপনের তাইলে আছে? আপনের লগে এক ছাদের নীচে থাকতে আমার বমী পায়।
— তুমি আমাকে চলে যেতে বলছো?
— এত শিখছেন আর এইটা বুঝতে পারেন নাই? রাস্তার কুকুর রাস্তায় শোভা পায়।
বলদেব খাট থেকে নীচে নেমে কি ভাবে। এখন কত রাত হবে? তারপর মৃদু স্বরে বলে, তুমি ঠিকই বলেছো,রাস্তার কুকুর। লোভে পড়ে শিকলে বাঁধা পড়েছিলাম। তাহলে আমি আসি?
— হ্যা-হ্যা যান দেখি কে আপনের হাতির খাওন যোগায়?
বলদেব করতলের পিছন দিয়ে চোখ মোছে তারপর দরজা খুলে বেরিয়ে যায়। এহসান বাড়ির দরজা তখনো বন্ধ করেনি। ধীরে ধীরে রাস্তায় এসে দাঁড়ায় বলদেব।কোথায় যাবে তার ত কোথাও যাবার নেই।
স্বার্থপর, মণ্টির প্রয়োজন ফুরিয়েছে এখন অন্য মইয়ের সন্ধানে। ন্যাকা সেজে থাকা একটা ভান।যখন জিজ্ঞেস করল, সোম বিদেশ যাবে কিনা? তার উত্তরে রঞ্জনা অবলীলায় বলল,যাইতেও পারে।আম্মুর সঙ্গেও বিদেশ নিয়ে কথা বলছিল নিজে শুনেছে।এরপর কিভাবে অবিশ্বাস করেন? গুলনারের চোখ ঝাপসা হয়ে এল। যাইতে ইচ্ছা হয় যাক। কাউকে জোর করে বেঁধে রাখতে চায় না। পুরুষ মানুষ যা ইচ্ছে তাই করবে আর যত দায় মেয়েদের? প্রচলিত ধারণাকে প্রশ্রয় দিতে পারবে না গুলনার। কারো দয়া করুণার পাত্রী হয়ে জীবন ধারণ করা তার পক্ষে সম্ভব নয়। জেনিফার আলম স্বামীকে তালাক দিয়ে খারাপ কি আছে?
বেলা পড়ে এসেছে,সুর্য ঢলে পড়েছে পশ্চিমে। গুলনার গাড়ীতে উঠে বসে আছে। ইউসুফচাচা কোথায় গেল এদিক ওদিক দেখছেন।কিছুক্ষন পর ছুটে এসে স্টিয়ারিঙ্গে বসলেন।
— চাচা কোথায় গেছিলেন?
— চা খাইতেছিলাম। মা তোমার মুখ খান শুকনা দেখায় ক্যান? শরীর খারাপ?
ওরা চাচাকে চা দেয়নি তারই খোজ নেওয়া উচিত ছিল। গুলনার পিছনে হেলান দিয়ে বসে মৃদু হেসে বলেন,আমার কিসসু হয় নাই,আমি ভাল আছি। চাচা আপনের বাড়ির সব ভাল তো?
— চাচীর শরীর ভাল না,বয়স হইলে যা হয়।
--চাচীরে খুব ভালবাসেন?মজা করে বললেন গুলনার।
ইউসুফমিঞা উদাস গলায় বলল,নয় বচ্ছর বয়সে বাপ-মা ছাইড়া আমার কাছে আসছে।অখন আমি ছাড়া তার কেইবা আছে।
গুলনারকে এক বিষণ্ণতা আচ্ছন্ন করে।মনটা অতীতের দিকে পায়ে পায়ে হাটতে থাকে। সেই ছেলেগুলো ভালবাসার কোন ভান করে নাই,শুধু শারীরি সুখ ছিল তাদের কাম্য। আজ হয়তো হাজতবাস করছে। আর হিপোক্রিটগুলো দিব্যি জেলের বাইরে নিশ্চিন্তে ঘুরে বেড়াচ্ছে। কত পুরানো কথা মনে পড়তেছে। নুসরতের কথা মনে পড়তে মনে মনে লজ্জিত হন। নিজের সুখে মজে থেকে তার কথা মনেই পড়েনি। কোথায় আছে,কেমন আছে কে জানে।
উত্তরা থেকে ফোন এসেছিল। রিসিভার কানে দিতে ওপাস হতে প্রশ্ন শুনতে পায় বলদেব,কি সিদ্ধান্ত করলে?
অনেক খরচের ব্যাপার কি বলবে বলদেব? ইচ্ছে হলেই হবে না,কে যোগাবে ব্যয়ভার?
—টাকার কথা ভাবছো?আমি আছি কি করতে?
একটু ভাবার সময় চেয়ে নিল বলদেব। মণ্টি এসে কোথায় গেল? ঘরের মধ্যে দম বন্ধ হয়ে আসছে,খোলা হাওয়ায় একটু বেড়িয়ে এলে ভাল লাগবে। বলদেব রাস্তায় নামল। মণ্টির আচরণ অদ্ভুত লাগছে কেন এমন করছে? সরাসরি কিছু বললে বোঝা যেত। ফুটপথ ধরে হাটতে থাকল আনমনা।
নাদিয়া বেগম মেয়ের ঘরে গিয়ে দেখলেন,দরজা খোলা। বিছানায় উপুড় হয়ে শুয়ে আছে মণ্টি। পিঠে হাত রেখে বলেন,অসময়ে শুইয়া পড়লি,তর কি শরীর খারাপ?
মায়ের দিকে না তাকিয়ে গুলনার বলেন,তোমার জামাই কি বিদেশ গ্যাছে গিয়া?
— তর কথা তো আমি কিছু বুঝতে পারিনা,তুই গেছিলি কই?
— গেছিলাম তোমার জামাইয়ের খবর নিতে।
— কি আবোল তাবোল বলতেছিস? তুই কি পাগল হইলি?
এক ঝটকায় উঠে বসে গুলনার বলেন,হ,আমি পাগল হইয়া গেছি। তারপর কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে বলেন,মা আমার ভুল হইয়া গ্যাছে, কি বানাইতে কি বানাইলাম।
নাদিয়া বেগম কথার মাথা মুণ্ডু বুঝতে পারেন না। মেয়ের কান্নায় আপ্লুত হয়ে বুকে জড়িয়ে ধরে বলেন,কান্দিস না মা। সব ঠিক হইয়া যাইবো– -ওঠ মা,চেঞ্জ কইরা আয়। বলা একটু বাইর হইছে,আসনের সময় হইয়া গ্যাছে।
নাদিয়া বেগম চিন্তিত মুখে বেরিয়ে গেলেন। হঠাৎ কি হইল? কলেজে কোনো গোলমাল হইল নাকি? দরকার নাই তর কাম করনের কত করে বুঝানো হইল,শুনলে তো? সব রাগ গিয়ে পড়ে স্বামীর উপর। মেয়েটারে আস্কারা দিয়া মাথায় উঠাইছেন। অখন দেখো কেমুন নিশ্চিন্ত,যত জ্বালা পুহাইতে হইবো মায়েরে।
ড.রিয়াজ নীচে নেমে ইউসুফের সঙ্গে কথা বলছেন।মেয়ে কোথায় গেছিল,কার বাসায়? খোজ খবর নিচ্ছেন। বলদেব ফিরে ড.রিয়াজকে দেখে দাঁড়িয়ে পড়ে।
— আব্বু আপনে কখন আসলেন?
— এই আসলাম। তুমি উপরে যাও,আমি আসতেছি। ড.রিয়াজ জামাইকে লক্ষ্য করেন।বলদেব উপরে উঠে ঘরে গিয়ে দেখল মণ্টি উপুড় হয়ে শুয়ে আছে।মনে হয় ক্লান্ত ঘুমাচ্ছে ঘুমাক।
ইয়াসিন পাকের ঘরে করিম খাবার এগিয়ে এগিয়ে দেয়। নাদিয়া বেগম নিজের হাতে পরিবেশন করেন। টেবিল আজ একটু চুপচাপ কেউ কথা বলেনা। বলদেব খেয়ে চলেছে। গুলনারের খাওয়া হতে কাউকে কিছু না বলে উঠে চলে যান। নাদিয়া বেগম নীচু হয়ে বলদেবের কানের কাছে মুখ নিয়ে বলেন,তুমি ওরে একটু বুঝাইয়া বলবা,অর মনটা ভাল না।
—আমারও তাই মনে হল। আপনে কোন চিন্তা করবেন না আম্মু। রাত পোহালে দেখবেন মন একেবারে ঝরঝরে।
ড.রিয়াজ সাহেব আড়চোখে জামাইকে লক্ষ্য করেন। তার মনের ধন্দ্ব কাটেনা কিছুতে। কত জটিল রোগের কারণ নির্ণয় করেছেন অনায়াসে কিন্তু মণ্টির ব্যাপারটা তাকে ভাবিয়ে তুলেছে।
সবাই যে যার ঘরে চলে গেছে। লাইট নিভিয়ে ঘর অন্ধকার করে শুয়ে আছেন গুলনার। মনের মধ্যে চলছে ভাঙচুর। অন্ধকারেও বুঝতে পারেন দেব ঘরে ঢুকেছে। নীরবে লক্ষ্য করেন দেবকে।
বলদেব বুঝতে পারে মণ্টি ঘুমায় নাই। বলেদেব উদ্দেশ্যহীন ভাবে বলে,পাস করার পর দুইজনরে সংবাদটা দেবার জন্য মনটা অস্থির হয়ে উঠেছিল। একজনরে দেওয়া অসম্ভব আরেকজনের পাত্তা নাই। একবার ভাবলাম যাই ছুটে মুন্সিগঞ্জে– ।গুলনারের সাড়া শব্দ নাই। বলদেব দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে,আজ মা থাকলে কি খুশিই না হতো।
— আপনের মায় তো ল্যাখাপড়া থিকা অনেক দূরে সে পাসের মর্ম কি বুঝতো?
বলদেব হাসে আপন মনে,টের পায় মণ্টি রাগ করে বলছে। গায়ে না মেখে বলে,চাঁদ মানুষের নাগালের বাইরে তবু কি তা মানুষের ভাল লাগতে নাই?
গুলনার এ কথার কোন জবাব দেয়না।
বলদেব বলে,তুমি বলেছিলে লেখাপড়া করতে হবে। সেই থেকে মনে হচ্ছিল নিজেকে কর্জদার। যে করেই হোক তোমার ঋণ শোধ করবো। অধ্যাপকের নিয়োগপত্র পেয়েছি। এখন মনে হচ্ছে আমি ঋণমুক্ত।
— তাই নাকি? গুলনার চুপ করে থাকতে পারেন না বলেন, খাওনের খরচা বাদ দিলেও হিসাব করছেন আপনের পড়াশুনায় কত টাকা লাগছে?
একথায় বলদেব হোচট খায়। একমুহূর্ত ভেবে বলে,হিসাবে আমি কাঁচা। তুমি হিসাবটা দিও,চেষ্টা করবো পাই পয়সা মিটিয়ে দিতে।
— অনেক লেখাপড়া করে বেশ উন্নতি হয়েছে। মনে বিদেশ যাওনের বাসনা জাগছে? কে উস্কাইতেছে আমি জানি না ভাবতেছেন? ভাল মানুষ আমার মায়েরে ভুলাইতে পারলেও আমারে ভুলাইতে পারবেন না– বেইমান।
বলদেব বিছানায় উঠে গুলনারকে ধরে বলে,মণ্টি তোমার কি হয়েছে?
এক ঝটকায় ঠেলে দিয়ে বলেন, খবরদার বলছি আমার গায়ে হাত দিবেন না আপনে ছুইলে আমার গা গুলায়।
— এ তুমি কি বলছো? আমি তোমার দেব– ।
— আপনের গায়ে অন্য মেয়ে মানুষের গন্ধ।
— ছিঃ মণ্টি নিজেকে এত ছোট কোর না।
— সত্যি কথা শুনে গায়ে লাগছে? আমি নিজেকে ছোট করছি আর আপনি খুব বড় মানুষ হইয়া গেছেন– জানোয়ার লম্পট মা মাসী জ্ঞান নাই– । গুলনার বালিশে মুখ গুজে কেদে ফেলেন।
— বুঝতে পারছি গুজব তোমাকেও স্পর্শ করেছে।
— বুকে হাত দিয়া বলেন তো আপনি তারে স্পর্শ করেন নাই?
— তোমার মনে জমে আছে পুঞ্জিভুত ঘৃণা,এই মন নিয়ে কিছু বুঝতে পারবে না,আমিও তোমাকে কিছু বোঝাতে চাই না।
— আল্লাহর দিব্য দিয়া বলেন তো আপনি তারে স্পর্শ করেন নাই।
— আমি তো বলেছি এত ঘৃণা নিয়ে কিছু বোঝা যায় না। আমি আল্লাহপাকের নাম করে বললেও তুমি ভাববে আমি কাফের। সকাল হোক পরিস্কার হোক মন,সব তোমাকে বলবো। সন্দেহের কীট দংশনে অকারণ ক্ষতবিক্ষত হয়োনা। শোনো বিদেশ গেলেও তোমাকে নিয়ে যাবো।
— আ-হা! কি কথা। আমি কোন বংশের মেয়ে জানেন? কারো সতীন হয়ে থাকবো ভেবেছেন? সবাইকে নিজের মত ভাবেন নাকি?
বলদেব লাইট জ্বেলে দিল।
— লাইট নিভান। চিৎকার করে বলেন গুলনার। আপনের মুখ দেখতে আমার ঘেন্না হয়।
ড রিয়াজ বিছানায় উঠে বদলেন।আওয়াজটা মণ্টির ঘর থেকে এল মনে হচ্ছে।
--উঠলেন ক্যান,কি হইছে।নাদিয়া বেগম বলেন।
--নাকিছু না।আবার শুয়ে পড়লেন।ঘুম আসেনা।
বলদেব লাইট নিভিয়ে দিয়ে বলল,তুমি আমাকে অপমান করতে চাইছো?
— মান-অপমান জ্ঞান আপনের তাইলে আছে? আপনের লগে এক ছাদের নীচে থাকতে আমার বমী পায়।
— তুমি আমাকে চলে যেতে বলছো?
— এত শিখছেন আর এইটা বুঝতে পারেন নাই? রাস্তার কুকুর রাস্তায় শোভা পায়।
বলদেব খাট থেকে নীচে নেমে কি ভাবে। এখন কত রাত হবে? তারপর মৃদু স্বরে বলে, তুমি ঠিকই বলেছো,রাস্তার কুকুর। লোভে পড়ে শিকলে বাঁধা পড়েছিলাম। তাহলে আমি আসি?
— হ্যা-হ্যা যান দেখি কে আপনের হাতির খাওন যোগায়?
বলদেব করতলের পিছন দিয়ে চোখ মোছে তারপর দরজা খুলে বেরিয়ে যায়। এহসান বাড়ির দরজা তখনো বন্ধ করেনি। ধীরে ধীরে রাস্তায় এসে দাঁড়ায় বলদেব।কোথায় যাবে তার ত কোথাও যাবার নেই।