Thread Rating:
  • 25 Vote(s) - 3.16 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
Adultery যেমন করে চাই তুমি তাই/কামদেব
।।৬১।।


    আব্বু কি কিছুই জানেন না? শত ব্যস্ততার মধ্যে সব খবর লোক লাগিয়ে সংগ্রহ করেছিলেন। একজন মানুষ তার আদরের মেয়ের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলছে তার নাকের ডগায় কিছুই কি তার নজরে পড়েনি? গুলনার এহসানের চোখে পানি এসে পড়ে। মামুন দুলাভাইয়ের খবর দিতে একেবারে গদগদ ভাব। ওরা কেউ লোভীটার স্বরূপ জানে না। গুলনার স্থির করেন দূরে দূরে থাকা ঠিক হবে না কতকাল এভাবে যন্ত্রণা সহ্য করতে থাকবেন।সত্যকে এড়িয়ে চলা বোকামী বরং মুখোমুখি হয়ে একটা ফয়সলা করে ফেলাই ভাল। যা অনিবার্য তাকে মেনে নিতে ভয় পায় না গুলনার। যে গাছ রোপন করেছেন সেই গাছ নিজ হাতেই তিনি উপড়ে ফেলে দেবেন। সাহানা বলছিল ড.এম.বি দেশ ছেড়ে চলে যাবেন। দেবকেও কি নিয়ে যাবেন সঙ্গে? যাক যেখানে খুশি যাক গুলনার ওকে নিয়ে বেশি ভাবতে চান না। ভোরবেলা গোসল করতে গিয়ে নজরে পড়ে বস্তিদেশ কালো পশমে ভরে গেছে। নিয়মিত সেভ করা হয় না। কি হবে এসব করে? গুলনার আগ্রহ বোধ করেন না।
সকালবেলা ঘুম থেকে উঠে আম্মুর ঘরে এসে চা নাস্তা খায়। মন্টি না থাকায় বলদেবের এইটাই দস্তুর হয়ে দাড়িয়েছে। স্বামী সকালে চেম্বারে চলে যান,নাদিয়া বেগমের সময় দামাদের সাথে ভালই কাটে। সোজা মানুষের সাথে কথা বলার আরাম আলাদা। জামাই খাইতে ভালবাসে,কখনো নিজের প্লেটের খাবার তুলে দেন নাদিয়া বেগম। কোনো সঙ্কোচ নাই তৃপ্তি করে খায়।
করিম এসে খবর দিল জামাইয়ের ফোন। কদিন ধরে শুরু হয়েছে এই ঝামেলা। পাস করছে তো কি হইছে? অভিনন্দনের ঠেলায় অস্থির। শান্তিতে খাইতেও দিবো না? নাদিয়া বেগম ইঙ্গিত করতে ফোন ধরতে গেল বলদেব। কিছুক্ষন পর গম্ভীরমুখে ফিরে আসে বলদেব। একদিকে কলেজের চাকরী অন্যদিকে বিদেশ যাবার আমন্ত্রণ। শ্যাম রাখি না কুল রাখি অবস্থা বলদেবের।এই সময় মণ্টি কোথায় গিয়ে পড়ে আছে  কাছে থাকলে তার সাথে আলোচনা করা যেত।
জামাইয়ের চিন্তিত মুখ দেখে নাদিয়া জিজ্ঞেস করেন,কি হইছে বাবা? কেডা ফোন করছিল?
আম্মুর উদবিগ্ন মুখ দেখে বলদেব হেসে বলে,রূপ নগরের ড.জাভেদ শামীম সাহেব। জানতে চাইছিলেন কবে কাজে যোগ দেবো।
— সবে চিঠি আইলো এত ব্যস্ত হইবার কি আছে? কাজে যোগ দিলেই দেখতে পাইব।
মন ভারাক্রান্ত হলে আম্মুর সাথে কথা বললে বেশ হাল্কা বোধ হয়। বলদেব জিজ্ঞেস করে,আমি যদি বিদেশ যাই তাহলে আপনার খারাপ লাগবে?
নাদিয়া বেগম মমতামাখা দৃষ্টিতে বলদেবকে দেখেন,যেন তার জামাই এখনই বিদেশ চলে যাচ্ছে। তারপর বলদেবের মাথায় হাত বুলিয়ে বলেন,একটু তো খারাপ লাগবোই। মামুনের বাপে তো তারে এই বছর বিদেশ পাঠাইবো আরো শিখবার জইন্য। খারাপ লাগলেও আমি তো মানা করতে পারিনা। কোন মায়ে সন্তানের উন্নতিতে বাঁধা হইতে চায়?
নাদিয়া বেগমের চোখের কোল চক চক করে। বলদেব মাটিতে বসে আম্মুর কোলে মুখ গুজে দিয়ে বলে,আম্মু আপনে আমার সাথে যাইবেন?
— দ্যাখো পাগলের কাণ্ড। আমি কি করতে যামু,ডাক্তাররে ফেলাইয়া আমার কোনদিকে যাওনের উপায় নাই। যতই হম্বিতম্বি করুক আমারে ছাড়া ডাক্তার একবেলা থাকুক তো দেখি কতবড় বীরপুরুষ?
এই হচ্ছে বাঙ্গালী নারী,কতখানি আত্মপ্রত্যয় থাকলে এভাবে বলতে পারে। মায়ের মধ্যেও বলদেব এই নারীকে প্রত্যক্ষ করেছিল। করিম ঢুকে ইতস্তত করে।
— কিরে কিছু বলবি নাকি? নাদিয়া বেগম জিজ্ঞেস করেন।
— মা অপা আসছে।
বলদেব উঠে দাড়ায়। নাদিয়া বেগম বলেন,কে মণ্টি আসছে? বলদেবকে বলেন,তুমি বসো বাবা।
— জ্বি। করিম জবাব দিল।
বলদেব ধন্দ্বে পড়ে যায়,মাথা নীচু করে বসে থাকে। নাদিয়া বেগম ভাবেন আজ আসলো,কলেজ ছুটি নাকি? কি হইল আবার?
গুলনার ঢুকে আড় চোখে বলদেবকে দেখে বলেন,আম্মু কেমুন আছো?
— সেই খবর জানতে অতদুর থিকা ছুইটা আসলা?
— তুমি রাগ করতেছো? একটা জরুরী কাজের জন্য আসছি। অনেক কথা আছে তোমার লগে।
— বলার ইচ্ছা বিদেশ যাইব। মামুনের সাথে গেলে কেমন হয়?
— ওনার পাখা গজাইছে অখন কত রকম ইচ্ছা হইবো।
— এ কেমুন ধারা কথা? মেয়েমানুষের এত মেজাজ ভাল না।
— মেয়েমানুষ মুখ বুইজা সইহ্য করবো। পুরুষের দাসীবাদী হইয়া কাটাইব।
— কি যাতা বলতেছিস? তুই কি বলতে চাস আমি কি ডাক্তারের দাসীবাদী?
— আমি আসতেছি। তুমার সাথে তর্ক করতে চাই না।
— না খাইয়া কই যাস?
— আমি খাইয়া আসছি। ইউসুফ চাচারে গাড়ি আনতে বলছি।
করিম এসে খবর দিল,অপা গাড়ি আসছে। গুলানার বেরিয়ে গেলেন,বলদেবের সঙ্গে একটা কথাও বললেন না। মেয়ের ব্যবহার নাদিয়া বেগমের ভাল লাগে না। নিজের মনে বলেন, বাপের আদরে মাইয়াটা বেয়াদব হইয়া গেছে।
— আম্মু মনে হয় মণ্টির আমার উপর অভিমান হইছে। এত ঘটনা ঘটল উচিত ছিল আমার মুন্সিগঞ্জে যাওয়া।
--ক্যান মুন্সীগঞ্জে যাওনের কই দরকার?মামুন ত ওরে খবর দিছে।তুমি ওরে বেশী আশকারা দিওনা।একটু কড়া হও।
--চিন্তা করবেন না আম্মু আমি খুবই কড়া।দেখলেন না আমার সঙ্গে কথা বলার সাহস হল? 
গাড়ী ছুটে চলেছে মীরপুরের দিকে। সব খোজ খবর নিয়ে এসেছেন গুলনার ,বাড়ি চিনতে অসুবিধা হল না। রূপনগর কলেজ ছাড়িয়ে রাস্তার উপর তিনতলা বাড়ী। দরজার কড়া নাড়তে একটি মেয়ে দরজা খুলে সপ্রশ্ন দৃষ্টি মেলে তাকালো।
— রঞ্জনা আছে?
— আপনি?
— সাহানা আমার সহকর্মী। আমরা এক কলেজে কাজ করি।
মেয়েটি উচ্ছসিত ভাবে বলে,আপনি ড.রিয়াজ সাহেবের মেয়ে? অপা আপনার কথা বলেছে। আমিই রঞ্জনা,ভিতরে আসেন।
গুলনার মেয়েটির পিছন পিছন গিয়ে একটী ঘরে ঢুকলেন। একটি সোফা দেখিয়ে বসতে বলে চলে গেল। একটু পরে সরবতের গেলাস হাতে ফিরে এল।
— তুমি এইবার পাস করলে?
— ঐ আর কি? লাজুক গলায় বলে রঞ্জনা। এবার আমাদের বিভাগের রেজাল্ট ভাল হয়নাই। একটা মাত্র ফার্স্ট ক্লাস।
— ছেলেটা সাই টাইপ কারো সাথে মিশতো না। নাম জানি না। এম.বি তাকে ডাকতেন সোম বলে। আমরাও সোম বলতাম।সোম খুব সরল সাদাসিধে কোনো অহঙ্কার নেই।অদ্ভুত অদ্ভুত কথা বলে।রঞ্জনা হেসে ফেলল।
--কি অদ্ভুত কথা?
--সে বলে বোঝাতে পারব না আপু আপনি যদি ওর সঙ্গে কথা বলেন আমি সিয়োর আপনার ভাল লাগবেই।
কথা বলিনি আবার ,মেয়ে পটানো কথা।গুলনার বলেন, তোমার সাথে আলাপ ছিল?
— অল্প আলাপ ছিল। আমার টিফিন খেয়েছে। ফিক করে হেসে বলে রঞ্জনা,খুব খেতে ভালবাসতো।
গুলনারের বুকের মধ্যে চিনচিন করে ওঠে। মনে হচ্ছে অঞ্জনা  আসছে,রঞ্জনা উঠে দরজা খুলতে গেল। গুলনারের আরও কিছু তথ্য চাই। বোনকে নিয়ে রঞ্জনা ফিরে এল,ইনি অপার কলেজের টিচার। ড.রিয়াজ উনার বাবা।
— আমার নাম মণ্টি,আমাকে মণ্টি অপা বলতে পারো। তুমি কোথায় পড়ো?
— জ্বি রূপনগর কলেজে,বি.এ প্রথম বর্ষ।
অঞ্জনা প্রণাম করে বই রাখতে চলে যায়। সাহানার বোনগুলো বেশ,ওরা তিন বোন কোন ভাই নেই।
— একটু চা করি? রঞ্জনা জিজ্ঞেস করে।
— অপা তুই কথা বল। আমি চা আনতেছি। অন্তরাল থেকে বলে অঞ্জনা।
— আচ্ছা রঞ্জনা এই এমবি কে?
— আমাদের ডিপার্টমেণ্টের প্রধান,পুরা নাম মৌসম বেনজির নুর। বিদেশে ওনার পড়াশুনা। আমরা ওনার নাম দিয়েছিলাম মৌ-সোম।রঞ্জনার মুখে দুষ্টু হাসি।
গুলনার খাদের কিনারায় চলে এসেছেন। আর এগোনো শালিনতার মাত্রা ছাড়াবে। কিন্তু তার সেসব ভাবার অবস্থা নেই,জিজ্ঞেস করেন,মৌ-সোম কেন?
রঞ্জনা মাথা নীচু করে বসে থাকে কথা বলে না।
— বুঝেছি। যেকথা সাহানাকে বলতে পারো কিন্তু আমাকে বলা যায়না। আমি তোমাদের অপা না।
— না না মণ্টি অপা তা নয়। আপনি যদি কিছু মনে করেন তাই– ।
— মনে করার কি আছে। দুই বোনে গল্প করছি,খারাপ কিছু বললে আমিই বকা দেবো– কি আমি বকা দিতে পারি না?
— মণ্টি অপা আপনাকে আমার খুব ভাল লাগছে। কলেজে ছেলে মেয়েরা কি করে আপনি জানেন কিন্তু মৌসম ম্যাম তার চেয়ে বয়সে অনেক ছোট সোমের সাথে– ।
— কি করেছে?
— সেইটা কেউ জানে না,সকলে বলে একটা সম্পর্ক আছে।
— শিক্ষক ছাত্র তো একটা সম্পর্ক।
— না না সেই রকম না। সোমকে দেখলে বোঝা যায় না। সব সময় কেমন উদাসীন উদাসীন ভাব। কিন্তু মৌসম ম্যামের চোখ দেখলে বোঝা যায়।
--সোমের বিয়ে হয়নি?
--মনে হয় না।
--কেন ওকি বলেছে?গুলনারের এখন মনে হচ্ছে নিষেধ করা ঠিক হয়নি।
--না  তা অবশ্য বলেনি তবে বোঝা যায়।বাড়ীর প্রতি কোনো টান নেই।বলত কোথাও যাবার জায়গা নেই।বউ থাকলে এরকম ঘুরে বেড়াতো?
এইবার গুলনার ধন্দ্বে পড়ে যান,কি বোঝাতে চায় রঞ্জনা?
রঞ্জনা বলে,শুনেছি মৌসম ম্যাম বিদেশ চলে যাবেন, সোমকেও নাকি সঙ্গে নিয়ে যাবেন।
— তোমার কি মনে হয় সোম যাবে?
— যাইতেও পারে। বললাম না সব সময় খালি ভাবে,উল্টা পালটা কথা কয়। কি বলে জানেন,আমরা কেউ সম্পুর্ণ না,অংশ মাত্র। পরমাণুর মত।
চা নিয়ে ঢুকতে ঢুকতে অঞ্জনা বলে,অপা সেইটা বল।
— হ্যা একদিন বলল,দেখো রঞ্জনা একব্যক্তি কিছু সৃষ্টি করল জানবে সেইটা সে একা করে নাই। তার পিছনে প্রত্যক্ষ পরোক্ষভাবে আছে কোনো মহিলা অথবা কারো না কারো প্রেরণা।
খিল খিল করে হেসে উঠল অঞ্জনা। রঞ্জনা খেয়াল করে আপুর হয়তো এসব আলাপ ভাল লাগছে না,বলল আপু আপনি সুন্দর গান করেন টিভিতে শুনেছি।
গুলনার হাসলেন বললেন,আজ উঠি।
রাগে জ্বলছেন গুলনার, গাড়িতে উঠতে উঠতে ভাবেন জেনিফারের পর মৌসম--সরল সাদাসিধে? লম্পট কোথাকার। 
[+] 5 users Like kumdev's post
Like Reply


Messages In This Thread
RE: যেমন করে চাই তুমি তাই/কামদেব - by kumdev - 09-07-2020, 05:12 PM



Users browsing this thread: 12 Guest(s)