Thread Rating:
  • 17 Vote(s) - 3.41 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
Romance রোদে ভেজা তিলোত্তমা Written By pinuram
#29
রোদে ভেজা তিলোত্তমা (#১৬)

এই সবে অনেক সময় চলে গেল। জেঠিমা আমাকে বললেন দেবুকে ফোন করে দিতে। আমার আগেই অনু দেবুকে ফোন করে জানিয়ে দিল সব কথা, সেই শুনে দেবুর চক্ষু চড়ক গাছ। এতো লোকের সামনে তাকে কাটা হবে শুনে হাত পা ঠাণ্ডা হয়ে গেল ওর, আমি ওকে বললাম যদি এখন না আসে তাহলে যেন অনুকে ভুলে যায়। অনু ওকে এক ধ্যাতানি দিয়ে বললো যদি আধ ঘন্টার মধ্যে না আসে তাহলে ফিনাইল খাবে। দেবু বেচারা আমাদের বাড়ির উদ্দশ্যে রওনা দিল।

ওদিকে মা জেঠিমা ছন্দার মা'কে ফোন করে দিল আমার কিছু বলার আগেই, সাথে এও জানাল যে পরের দিন বাড়ির সবাই ছন্দাকে দেখতে আসবে আর সেই সাথে আশীর্বাদ করে যাবে। মাসিমা সব শুনে আঁতকে উঠলেন, এত তাড়াতাড়ি এক রাতের মধ্যে এত সব কি করে হবে। আমাদের আবার পঙ্গপালের পরিবার আশীর্বাদ করতে বাবা কাকা জ্যাঠা, মামা মাসি পিসি আর এই গুটি কতক ভাই বোন মিলে জনা পঞ্চাশ যাবে। সেই শুনে মাসিমা হার্ট ফেল করার যোগাড়, এত লোক তো বর যাত্রী হয়। অনুর মা আমাদের পরিবারের ব্যাপারে বুঝিয়ে বললেন আর বললেন যে সবাই বাড়ির লোক কেউ বাইরের নয় সব কাজ হাতেহাতে করে নেবে। জেঠিমা বড়দা মেজদাকে আর শুভকে বললেন আশীর্বাদের জন্য ছন্দার বাড়ির সব কিছু ব্যাবস্থা করতে। কি কি কেনা হবে তাঁর ফর্দ বানানো হয়ে গেল। মেজদা আর শুভ জিনিস পত্র কিনতে বেড়িয়ে গেল।

আমি অনুর বাড়ি গিয়ে ছন্দাকে ফোন করলাম কারন আমাদের বাড়ি তখন হরিশার হাটের মতন অবস্থায় ছিলো। আমার ফোন পেয়েই তেড়ে ফুড়ে উঠলো, "যাও তোমার সাথে একদম কথা বলবো না।"

অভিমানিনীর ওই সুর অনেকদিন শুনিনি, আমার দুকানে যেন কেউ মধু ঢেলে দিল। ছন্দা চেঁচিয়ে উঠলো অইপাশ থেকে, "তোমার কোন আক্কেল নেই? এই রাতে বলছ ওঠ ছুঁড়ি তোর বিয়ে? আমি তোমাকে বলেই দিয়েছি যে বিয়ে করবো না।"

আমি আর কি বলি, "তুমি যে আমার সাথে এতদিন কথা বলোনি, তাই শেষ পর্যন্ত ঠিক করলাম একে বারে বিয়ে করেই লন্ডন যাবো।"

ছন্দা আবেগে কেঁদে ফেললো, "বড্ড শয়তান ছেলে তুমি, একবার হাতের কাছে পাই এমন মারবো না....."

আমি উত্তরে বললাম যে কিছুক্ষণের মধ্যে আমি, বড়দা আর মেজদা সব কিছু কেনা কাটা সেরে ওদের বাড়ি যাবো আর সব ব্যবস্থা করে দেবো। সেই শুনে একটু ক্ষান্ত হল ছন্দা।

কিছুক্ষণের মধ্যেই দেবু এসে পৌছাল, ওর অবস্থা আমার চেয়েও সঙ্গিন। আমি আর অনু ওকে একদিকে টেনে নিয়ে গিয়ে সব কিছু পাখি পড়ার মতন বুঝিয়ে দিলাম আর বললাম যে সবাই ঠিক আছে শুধু ও যেন বেঠিক না হয়ে যায়।

দেবু বৈঠকখানায় ঢুকে অত লোকজন দেখে চমকে গেল। বাবা জ্যাঠা দেবুকে রিতিমত সি বি আইয়ের মতন প্রশ্ন বানে জর্জরিত করে দিলেন। কি করো, বাড়িতে কেকে আছেন, কোথায় বাড়ি বাবা কি করেন, কয় ভাইবোন ইত্যাদি। আমি আর ছোড়দি দুর থেকে ওকে দেখে হাসি থামাতে পারলাম না ওদিকে অনুর গলা শুকিয়ে আমাদের বকাঝকা শুরু করে দিল।

আমার ছোট পিসেমশায় বড় মজার লোক, এতক্ষণ চুপচাপ ছিলেন, দেবুর ওই অবস্থা দেখে আর নিজেকে সামলাতে না পেরে বললেন, "এই যে দেবশিস, একবার কান ধরে উঠ বস কর তো।"

তাঁর কথা শুনে দেবু হাসবে না কাঁদবে ভেবে পেল না, ছোট পিসে মশায় গম্ভির কণ্ঠে বললেন, "বাড়ির দুই জামাই যখন মেয়ে দেখতে এসেছিলো ওদের কিন্তু কান ধরে উঠ বস করিয়ে ছিলাম এটা আমাদের বাড়ির রীতি। জামাই কে আগে আমরা কান ধরে উঠবস করাই। যদি ভালো করে, তবেই মেয়ে নিয়ে যেতে দেই নচেত নয়।"

অত গুলো লোকের সামনে ওই কথা শুনে দেবুর হার্ট ফেল করার যোগাড়, সবাই হেসে ফেললো দেবুর অবস্থা দেখে। শেষ পর্যন্ত বিশুদা ওকে বাঁচিয়ে নিয়ে এলো ঐইখান থেকে। অনুর মায়ের জামাই দেখে কত খাতির, এটা খাও সেটা খাও। অনু লাজুক হেসে ছোড়দির পেছনে দাঁড়িয়ে দেখে গেল। ঠিক হলো যে বাড়ি গিয়ে দেবু বাবা মায়ের সাথে কথা বলে আমাদের জানাবে সেইমতন আমার জ্যাঠা আর সিধু জ্যাঠা ওর বাবার সাথে কথা বার্তা বলবেন।

শুভ আর মেজদা বাজার করে আসার পরে আমার ছোট কাকিমা আর ভাইদের নিয়ে আমরা গাড়ি করে চলে গেলাম ছন্দার বাড়িতে। আমাদের পৌঁছানর খবর মা আগে থেকেই মাসিমাকে দিয়ে দিয়েছিলেন। অনুর দুই ভাই আর আমার দুই ভাই মিলে ঘর সাজাতে লেগে গেল, বড়দা আর মেজদা জিনিস পত্র বুঝিয়ে দিল সেই সাথে রান্নার ঠাকুরের ব্যাবস্থা। ছোট কাকিমা আর মাসিমা পরের দিনের ব্যাবস্থায় লেগে গেলেন। সব যেন যুদ্ধ কালীন তৎপরতায় ঘটে গেল। ছাড়পত্র পেয়ে গেছিলাম তাই ছন্দাকে নিয়ে একটু আড়ালে বসার অবকাশ পেয়ে গেছিলাম।

ছাদে উঠতেই ছন্দা আমাকে কষে এক চাঁটি লাগিয়ে দিল আর বুকের ওপরে ঝাপিরে পড়লো, "যাও তোমার সাথে একদম কথা বলব না। বলা নেই কওয়া নেই, এই ভাবে কেউ বিয়ে করতে আসে নাকি?"

আমি ওকে জড়িয়ে ধরে মাথায় চুমু খেয়ে বললাম, "কি করি সোনা, নাহলে কোন উদো পাড়ার বৈশাখিকে আমার গলায় বাঁধতে চলেছিলো।"

ছন্দা বুকের ওপরে আঁকিবুঁকি কেটে বললো, "এতোদিন কথা বলোনি কেন?"

আমি আকাশ থেকে পড়লাম, "আমি কথা বলনি না তুমি কথা বলনি? কত বার তোমার অফিসের নিচে দাঁড়িয়ে থেকেছি। তুমি বের হতে আর আমাকে দেখেই ট্যাক্সি নিয়ে নিতে।"

ঠোঁট কামড়ে ধরে দুষ্টুমি ভরা হাসি দিয়ে বললো, "বাস ধরলে তো জানতাম যে তুমি আমার পেছন পেছন বাসে চাপবে তাই ট্যাক্সি নিতাম। এবারে ওই চারদিনের ট্যাক্সি ভাড়া দাও?"

আমি আমার মানিব্যাগ ওর হাতে সঁপে দিয়ে বললাম, "আগে হৃদয় নিয়েছিলে আজকে এই পকেট তোমার।"

মানিব্যাগ আমাকে ফিরিয়ে দিয়ে বললো, "মনে থাকে যেন এই কথা।"

আমি ওর নাকের ডগায় নাক ঘষে বললাম, "লন্ডন তাহলে একসাথেই যাচ্ছি?"

মৃদু হেসে মাথা নাড়ালো, "হ্যাঁ, তবে এত তাড়াতাড়ি ভিসা পাবো কি করে?"

আমি বললাম যে সেই চিন্তা জ্যাঠা মশায়ের, কাস্টমসে চাকরি করেন দুতাবাসের অনেক লোক জন তাঁর চেনাজানা। ওই নিয়ে বিশেষ অসুবিধে হবে না।

সব কিছু ঠিক ঠাক হয়ে গেল, একে একে সবার আশীর্বাদ হয়ে গেল, প্রথমে ছন্দার তারপরে অনুর তারপরে দেবুর শেষে আমার। দুই সপ্তাহ পরেই অনুর বিয়ে আর তার চার দিন পরে আমার। বাড়িতে সাজ সাজ রব, কেনা কাটা, বাজার করা ম্যারাপ বাঁধা সবকিছু যুদ্ধ কালিন ততপরতায় শুরু হয়ে গেল। আমি ভেবেছিলাম কথাবার্তা ঠিক হয়ে যাবার পরে ছন্দার সাথে একটু নিরিবিলিতে কথা বলতে পারবো, সেই কবে থেকে কত কথা জমে আছে বুকের মধ্যে অইদিকে ছন্দার অবস্থা আমার মতন। ওর পেট প্রায় ফেটে যাচ্ছিল, এর মাঝে কোন রকমে একবার দেখা পেয়েছিলাম সেদিন আমাকে খুব মেরেছিলো আর বুকে মুখ লুকিয়ে এক ঘন্টা ধরে কেঁদেছিলো। কিন্তু ওই পর্যন্ত, তারপরে আর ছন্দাকে একা পাওয়া গেল না। রোজ দিন কেউ না কেউ ওকে নিয়ে বিয়ের কেনা কাটা করতে বেড়িয়ে যায় আমি কিছুতেই সাথে থাকতে পারি না। ধীরে ধীরে অনুর বিয়ের দিন কাছে চলে এলো।

অনুর বিয়ের দুই দিন আগেই মা জেঠিমা ছন্দাকে বাড়িতে ডেকে নিয়ে এলো। উঠতে বসতে ছন্দা, বাবা জেঠার "বৌমা" ডাকে সাড়া দিতে শুরু করলো। এক বেলার মধ্যেই বাড়ির বড় বৌমা হয়ে উঠলো, সবার চোখের মণি, ভাই বোনেদের বড় বৌদি আর মায়ের চেয়েও কাকিমার বড় আদুরে হয়ে গেল। সব থেকে অবাক করে দিল আমাকে, "পার্থ" ছেড়ে "ওগো, হ্যাঁ গো" শুরু করে দিল, আমি ওই ডাক শুনে হেসে আর কুল পাই না।

এর মাঝে আমরা নবীনকে একদম ভুলে গেছিলাম। সন্ধের দিকে ছন্দা আমাকে নবীনের কথা মনে করিয়ে দিতেই আমার মাথায় হাত। আমি আর ছন্দা সেদিন বিকেলে নবীনের বাড়িতে গেলাম। নবীন যে বদলে গেছে সেটা আর বলে দিতে হল না।

আমাদের দেখে হেসে বললো, "তোদের বিয়েতে আমি থাকতে পারবো না রে।"

আমরা দুইজনেই অবাক হয়ে গেলাম, ছন্দা ওকে জিজ্ঞেস করলো, "কেন, তোর তো ফ্রাঙ্কফুর্ট যেতে তো অনেক দেরি আছে, তাহলে?"

নবীন বাঁকা হেসে বললো, "না রে, আমি কাল দিল্লী চলে যাচ্ছি, ওইখানে কিছুদিন থাকবো তারপরে ফ্রাঙ্কফুর্ট চলে যাবো।"

ছন্দা আর আমি পরস্পরের মুখের দিকে তাকালাম, ছন্দা আক্ষেপের সুরে বললো, "অনুকে জানিয়েছিস যে তুই চলে যাচ্ছিস? ও শুনলে কিন্তু খুব দুঃখ পাবে।"

নবীন কাষ্ঠ হেসে বললো, "না রে, ওর সাথে দেখা করার আর সময় পাই নি। এক বার ভেবেছিলাম যে তোদের বাড়ি যাবো কিন্তু তোরা এসেছিস তাই আর যাবো না।"

ছন্দা ওকে চেপে ধরলো, "তোর নিশ্চয় এখন কোন বিশেষ কাজ নেই আর কাজ থাকলেও পরে করা যাবে। এখুনি চল অনুর সাথে দেখা করবি।"

নবীন বেশ কিছুক্ষণ ভাবলো, তারপরে ওকে বললো, "না রে ছন্দা আমি আর যাবো না ওর সামনে।"

ছন্দা ছাড়তে নারাজ, "কেন যাবি না? তোরা নাকি ছোট বেলার বন্ধু আর আজকে এত আনন্দের দিনে তুই ওর সাথে দেখা না করেই চলে যাবি?"

নবীন চুপ, ছন্দা ওকে চেপে ধরলো, "যতক্ষণ না আসল কথা খুলে বলছিস ততখন আমি এখান থেকে যাবো না।"

নবীন ওর আলমারি থেকে একটা পুরানো জুতোর বাক্স এনে আমার হাতে ধরিয়ে দিল। আমি বাক্স খুলে দেখলাম ওর মধ্যে একটা অতি পুরাতন মাটির পুতুল। পুতুল দেখে আমার পুরানো দিনের কথা মনে পরে গেল। আমার বেশ মনে আছে ওই পুতুল বড়দা অনুকে চড়কের মেলায় কিনে দিয়েছিলো। আমরা তখন অনেক ছোট, ক্লাস সেভেন কি এইটে পড়ি। এক বিকেলে আমি নবীন পিতু বিষ্টু সবাই মিলে উঠানে ডাঙ্গুলি খেলছিলাম আর অনু ওই পুতুলকে শাড়ি পড়াচ্ছিল বারান্দায় বসে। আমাদের ডাঙ্গুলির গুলি গিয়ে লাগে ওর পুতুলে আর পা ভেঙ্গে যায়, আমি অনুর ওপরে খুব তোরবাড় করেছিলাম কিন্তু নবীন ওই পুতুল নিয়ে বলেছিলো যে পুতুলের পা জোড়া লাগিয়ে দেবে। তারপরে আমি আর খোঁজ নেইনি পুতুলের কি দশার হয়েছিলো।

ছন্দা আমার দিকে একবার তাকালো তারপরে নবীনকে বললো, "তুই এতদিন কেন চুপ ছিলিস, কেন বলিসনি যে অনুকে তুই ভালোবাসিস।"

নবীনের কাষ্ঠ হেসে জবাব দিল, "কে বলেছে আমি অনুকে ভালোবাসি?"

ছন্দা ছাড়ার পাত্রী নয়, "তোর চোখ তোর সাড়া শরীর চেঁচিয়ে বলছে যে তুই ওকে ভীষণ ভালোবাসিস আর তাই ওকে না জানিয়ে চুপিচুপি চোরের মতন পালিয়ে যাচ্ছিস। তুই কি ভাবিস আমাদের চোখ নেই?"

ছন্দা আমার হাত থেকে জুতোর বাক্স নিয়ে ওকে ধরা গলায় বললো, "এতোদিন এই মাটির পুতুল অতি সযত্নে রেখেছিস কেন? চার বছর আগের ষষ্টির রাতের কথা মনে আছে তোর? অনু তোকে বারেবারে জিজ্ঞেস করেছিলো যে তোর কিছু বলার আছে কি না, তুই তাও চুপ করেছিলি, কেন? আমি সেদিন পার্থকে বলতে গিয়েও বললাম না, ভেবেছিলাম কোনোদিন তোর মনের কথা বলবি কিন্তু..... ছাড়, আর কিছু বলার নেই আমার রে।"

নবীন ধরা পরে গেছে শেষ পর্যন্ত মনের কথা খুলে বললো আমাদের কাছে, "আমি কালো কুতসিত দেখতে ছন্দা, এই চেহারা নিয়ে কি ওর মতন সুন্দরীকে ভালোবাসা যায় বল? আমার চেহারায় পক্সের দাগ, ছোট বেলা থেকে রোগা পটকা ছিলাম। ভেবেছিলাম বড় হলে মনের কথা বলব কিন্তু যত বড় হলাম পেঁচি অনু তত সুন্দরী হয়ে উঠলো। আমার মতন কুতসিত দেখতে একটা ছেলে ওর পাশে বড় বেমানান দেখাবে তাই সরে এলাম। দেবু আমার চেয়ে দেখতে শুনতে ভালো, ওদের দুইজনের জুটি একদম হর পার্বতীর।"

একটু থামলো নবীন, ছন্দা আর আম্মি মন দিয়ে ওর কথা শুনে গেলাম। নবীন বলে চলে, "আমি ইচ্ছে করেই দিল্লীতে এম টেক নিলাম যাতে আর ওর সামনে না থাকতে হয়। ভেবেছিলাম যে দেবু হয়ত বাইরে চলে যাবে কিন্তু দেবু যখন গেল না তখন আমাকেই যেতে হবে তাই ফ্রাঙ্কফুর্ট চলে যাচ্ছি চিরদিনের জন্য। আমি বাড়িতে বলিনি তবে তোদের বলছি আমি কোনোদিন দেশে ফিরবো না। এখানে আর কিছু নেই আমার জন্য....."

কথাটা আর শেষ করতে পারল না নবীন, ছন্দার হাত ধরে কান্নায় ভেঙ্গে পড়ল নবীন, "এইসব অনুকে দয়া করে বলিস না তাহলে আমি মরেও শান্তি পাব না। শুধু এই বাক্সটা আমাকে দিয়ে দে এটাই আমার অনুসুয়া। আমার হয়ে প্লিস দেবুকে বলিস কোনোদিন যেন অনুকে কষ্ট না দেয় তাহলে আমি কিন্তু ওকে মেরে ফেলবো।"

আমরা ওকে কি সান্তনা দেব ভেবে পেলাম না, অনু কি সত্যি এতদিনে বোঝেনি যে নবীন ওকে ভালোবাসে? আমরা বেশ কিছুক্ষণ ওর সাথে বসলাম আর তারপরে চলে এলাম। ছন্দার মন ভারি হয়ে গেছিলো, সারাটা সময় আমার হাত শক্ত করে ধরেছিলো। দুইজনে চুপচাপ বাড়ি ফিরে এসেছিলাম। নবীনের ওই কথা কোনোদিন অনুকে আমরা জানাই নি।

অনুর বিয়ের দিন কাক ভোরে নবীন দিল্লী চলে গেছিলো আমি ওকে কোলকাতা এয়ারপোর্টে ছাড়তে গিয়েছিলাম। ছন্দা যেতে পারেনি। নবীন, ছন্দাকে একটা দামী সোনার হার উপহার দিয়েছিলো আর আমার জন্য একটা রোলেক্সের ঘড়ি।

ঘটা করে অনুর বিয়ে হলো আর তারপরের দিনেই ছন্দাকে বাড়ি পাঠিয়ে দিল মা। ওর বাড়ির বিয়ের ব্যাবস্থা মেজদা আর আমার দুই ভাই মিলে করেছিলো। বউভাতের পরের দিনেই দেবু আর অনু বাড়িতে এসে গেছিলো। বিয়ে ভালো ভাবেই মিটে গেছিলো। আমাদের ভিসা পেতে বিশেষ বেগ হয়নি, তবে একমাসের মতন লেগেছিলো আর আমাদের লন্ডন যাওয়া এক মাসের মতন পিছিয়ে গিয়েছিলো। যাওয়ার দিনে এয়ারপোর্টে দাঁড়িয়ে ছন্দা আর অনুর কি কান্না, দেবু অনেকক্ষণ আমার হাত ধরে দাঁড়িয়ে ছিলো।

প্লেনে উঠে অনেকক্ষণ জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে ছিলো ছন্দা মন বড় কেঁদে উঠেছিলো ওর সেইসাথে আমার। আমার হাত খানি ধরে দিল্লী পর্যন্ত চুপ করে চোখ বন্ধ করে ছিলো। গভীর রাতে দেশ ছাড়লাম, ছেড়ে গেলাম রোদে ভেজা কল্লোলিনী সাথে রইলো আমার তিলোত্তমা যাকে নিয়ে ওই রোদে কতবার ভিজেছি।


সমাপ্ত ...

""পৃথিবীটা রঙ্গমঞ্চ আমরা সবাই অভিনেতা"" !! Sad

[+] 3 users Like Kolir kesto's post
Like Reply


Messages In This Thread
RE: রোদে ভেজা তিলোত্তমা Written By pinuram - by Kolir kesto - 09-07-2020, 01:18 PM



Users browsing this thread: 2 Guest(s)