08-07-2020, 10:42 PM
(This post was last modified: 11-04-2021, 04:33 PM by kumdev. Edited 3 times in total. Edited 3 times in total.)
।।৫৯।।
আম্মুর ঘর থেকে বেরিয়ে স্নান খাওয়া দাওয়া সেরে ঘরে এসে বিশ্রাম করে। একটা চিন্তা মনের মধ্যে উথাল পাথাল। তবু নিজের চোখে না দেখা অবধি খুতখুতানি থাকবে। শুনেছে বিদেশে নানা সুযোগ সুবিধে। শিক্ষা মানুষের ক্ষুধা বাড়িয়ে দেয়। যত জানা যায় মনে হয় তত মনে হয় কিছুই জানা হল না। জ্ঞানের অন্দরে যে উকি দিয়েছে সেই বুঝতে পারে তার জানা কত নগন্য। মৌসমের হাতছানি তাকে টানতে থাকে। বিছানায় এপাশ ওপাশ করতে করতে উঠে বসে। ভার্সিটী ঘুরে এলে হয়,কোনো খবর থাকলে জানা যেত। এলোমেলো ভাবতে ভাবতে পায়জামা পাঞ্জাবি গলিয়ে একসময় বেরিয়ে পড়ে। ড.এমবিকে বলতে হবে বাড়িতে যেন ফোন না করেন। ভাগ্যিস তখন মণ্টি ছিলনা।
একবার মনে হয় বাসে চেপে বসবে কিনা? মুন্সিগঞ্জ দুই ঘণ্টার পথ। পাসের খবর শুনলে মণ্টি খুশি হবে। পরক্ষনে মনে হল নিশ্চিত না হয়ে কাউকে কিছু বলা ঠিক হবে না। মণ্টিকে সঙ্গে নিয়ে গেলে বিদেশ যাওয়ায় মণ্টি আপত্তি করবে না। আম্মু ভুল বলেন নাই তাকে শক্ত হতে হবে। মুশকিল হচ্ছে মণ্টির সামনে সব গোলমাল হয়ে যায়। একটা রিক্সা একেবারে গা ঘেষে থামে।একটু হলেই ধাক্কা দিচ্ছিল। এক পা পিছিয়ে গিয়ে নিজেকে বাঁচিয়ে বলদেব দেখে রিক্সার সওয়ারীর মুখে একরাশ হাসি।
— উফ খুব ভয় পেয়ে গেছিলাম।
— কখন থেকে ডাকছি সোম সোম,তুমি কি কানে কম শোনো?
এতক্ষনে মনে পড়ে মেয়েটির নাম রঞ্জনা। তার সহপাঠী হলেও নামটা কিছুতেই মনে করতে পারছিল না। নাম মনে করতে পেরে স্বস্তি বোধ করে। রঞ্জনাকে বলে,আসলে একটু অন্যমনস্ক ছিলাম।
— উঠে এসো। ভার্সিটিতে যাবে তো?
— ভার্সিটিতে? তা মন্দ হয়না,চলো। বলদেব রিক্সায় উঠে বসে বলে,ভাইসাব আমি উঠলাম বলে আপনি রাগ করলেন না তো?
রিক্সাওলা প্যাডেলে চাপ দিয়ে ভাবে দুনিয়ায় কত রকম পাগল আছে। রঞ্জনা জিজ্ঞেস করে, কেন রাগ করবে কেন?
— আমি উঠলাম আরো ভারী হল। তাতে ওর কষ্ট বাড়ল।
— তুমি সবার কথা ভাবো?
— সবাইকে নিয়ে আমি। আমি সমগ্রের অংশমাত্র।
— ও বাবা! তোমার সঙ্গে কথা বললে মনে হয় ক্লাসে লেকচার শুনছি।
— রঞ্জনা রেজাল্টের কথা কিছু শুনেছো?
— সেই খবর জানতেই তো যাচ্ছি।আচ্ছা সোম ড.এমবি নাকি চলে যাবেন? তুমি কিছু শুনেছো?
— তুমি যেমন শুনেছো। নিস্পৃহ গলায় বলে বলদেব।
খুব সেয়ানা রঞ্জনা ভাবে।কথা বের করার জন্য রঞ্জনা বলে, মেয়েরা কারো সঙ্গে ভাল করে কথা বললে লোকে শুরু করে জল্পনা। বয়স স্টেটাস যেন ধর্তব্যের মধ্যেই পড়ে না।
— আমাকে তোমার রিক্সায় তুলে নিলে,এই নিয়েও কথা উঠতে পারে।
— উঠুক,যাকে আমার ভাল লাগে তাকে তুলব কে কি ভাবল আমি পরোয়া করিনা।কথাগুলো বলে রঞ্জনা আড়চোখে সোমকে দেখে।
বলদেবের মণ্টির কথা মনে পড়ল। মণ্টিও কথায় কথায় এরকম বলে।ভার্সিটি পৌছে দুজনে সিড়ি বেয়ে উপরে উঠে করিডর দিয়ে অফিসের দিকে যায়। ড.এমবির ঘরের দরজা ভেজানো। বলদেবের মনে হল একবার উকি দিয়ে দেখবে কিনা? বলেছিলেন কথা আছে। দরজা ঠেলে উকি দিতে একেবারে চোখাচুখি। সামনে এক ভদ্রলোক বসে আছেন।
— এসো,তোমার কথাই বলছিলাম। ড.এমবি বললেন।
বলদেব ভিতরে ঢুকতে মৌসম বলেন,ড.জাভেদ এর নাম বলদেব সোম।
বলদেব সালাম করে। মৌসম বলেন,ইনি ড.জাভেদ শামিম। রূপনগর কলেজের অধ্যক্ষ। শোনো সোম তুমি পরে আমার সঙ্গে দেখা কোরো।
বলদেব বেরিয়ে যেতে ড.জাভেদ বলেন,এক্সপিরিয়েন্স থাকলে ভাল হত।
— আমি সব দিক ভেবেই আপনাকে বলেছি। ও যদি ফার্স্ট না হত তাহলেও আমি ওর কথা বলতাম।
— ড.নুর আমাকে ভুল বুঝবেন না। আপনার মতামতকে আমি শ্রদ্ধা করি।
রঞ্জনা থমকে দাঁড়িয়ে পড়ে। এমবির ঘরে কেমন হুট করে ঢুকে গেল রঞ্জনা অবাক হয়ে ভাবে যা রটে তা কিছু ত বটে। বলদেব বের হতে রঞ্জনা জিজ্ঞেস করল, রেজাল্টের কথা কিছু বললেন?
— রূপনগর কলেজের অধ্যক্ষ ড.জাভেদ শামিমের সঙ্গে আলাপ করিয়ে দিলেন।
— আমার বোন অঞ্জনা রূপনগরে পড়ে।রেজাল্টের কিছু জানতে পারলে?
এমবির কাছে যা শুনেছে সেটা বলা ঠিক হবে না বলদেব ভাবে।বলল,চলো অফিসে খোজ নিই।
অফিসে খোজ নিতে জানালো,দু-একদিনের মধ্যে রেজাল্ট বেরিয়ে যাবে। রঞ্জনা জিজ্ঞেস করে,এবার কি করবে সোম? বাড়ি যাবে তো?
— বাড়ি গিয়ে কি করব।ভাবছি একটু এখানে থাকবো।
— চলো তাহলে ক্যাণ্টিনে,কফি খেয়ে আসি।
— আমার ভীড় ভাল লাগে না।তোমার নামটা বেশ।
রঞ্জনার মুখে লালের ছোপ লাগে। বলদেব বলে,তোমার নাম শুনে একটা লাইন মনে পড়ল,বলবো?
রঞ্জনা গভীর দৃষ্টি মেলে তাকালো।
বলদেব আপন মনে বলে,”গাঁয়ের নামটি অঞ্জনা নদীর নামটি খঞ্জনা আমায় গাঁয়ের সবাই চেনে তাহার নামটি রঞ্জনা। ”
রঞ্জনা মুগ্ধ হয়ে চেয়ে থাকে বলদেব বলে,তুমি যাও।আমার যাওয়ার জায়গা নেই।
বলদেব ধীর পায়ে ক্যাম্পাস ছেড়ে বেরিয়ে যায়। এলোমেলো চুল হাওয়ায় উড়ছে, রঞ্জনার বুকে কি এক অচেনা অনুভুতি বুজকুড়ি কাটে। শুনেছে সবাই আড়ালে ওকে বলে মৌ-সোম।ম্যাডাম ওর চেয়ে বয়সে অনেক বড়। রঞ্জনার বিশ্বাস করতে মন চায়না।তাছাড়া ম্যাডামে স্বামী আছে।ম্যাডামের পাশে সোমকে কল্পনা করে মনে মনে হাসে। আমার যাওয়ার জায়গা নেই।কবিতার মত শুনতে লাগে।
উত্তরার নীচে দাঁড়িয়ে কি যেন ভাবে বলদেব। ভর দুপুরে নিশি পাওয়ার মত এতখানি পথ হেটে চলে এসেছে। ফিরে যাবে কিনা ভাবছে। নজরে পড়ে দূর থেকে হর্ণ বাজিয়ে আসছে জলপাই রঙের গাড়ী।তার সামনে এসে দাঁড়িয়ে পড়ে। দরজা খুলে ড.এমবি নেমে বলেন,একটু অপেক্ষা করবে তো? চলো উপরে চলো। তুমি একটা আস্ত পাগল।
ড.এমবির সঙ্গে উপরে উঠে এল বলদেব। সোফায় বসতে বলে জোরে পাখা ঘুরিয়ে দিলেন। এক মিনিট বলে পাশের ঘরে ঢুকে গেলেন।কেন এখানে এল বলদেব ভাবতে থাকে। এতটা উপরে উঠে আবার নীচে নেমে যাবে? সারা ঘরে সুন্দর এক মোহ ছড়িয়ে আছে। রোদ্দুরে আর বেরোতে ইচ্ছে হল না।এখানে খারাপ লাগছে না।
ড.এমবি চেঞ্জ করে ফিরে এসে সামনে সোফায় বসলেন। শ্যামলা রঙ পুরুষ্ট উরু হাটু অবধি লুঙ্গি তুলে জিজ্ঞেস করেন,কি ভাবছো সোম?
পায়ের গোছ দেখে শির শির করে উঠল শরীর, বলদেব চোখ তুলে সিলিং-র দিকে তাকিয়ে দেখল পাখা ঘুরছে মুখ দিয়ে বেরিয়ে এল, বেশ গরম।
— জামাটা খুলে রাখ। মৌসম এগিয়ে জামাটা টেনে খুলে দিল। বলদেব বাধা দিতে পারেনা।
— কই বললে নাতো কি ভাবছো?জানো সোম তোমার কথাটা নিয়ে অনেক ভেবেছি আমি।
--কোন কথা ম্যাম?
মৌসম উঠে বলদেবের পাশে বসে গাল টিপে দিয়ে বললেন,তোমাকে বলেছি না ম্যাম-ম্যাম করবে না। বলদেব ঘামছে।গায়ে গা লেগে আছে খারাপ লাগছে না আবার অস্বস্তি হচ্ছে।
মৌসম বললেন,ভালবাসায় বয়স কোনো বাধা হতে পারেনা।এটা নিছক সামাজিক সংষ্কার।
বলদেব কোনো কথা বলছে না দেখে মৌসম একটা হাত সোমের কাধে রেখে বললেন,তোমার মনে উথাল পাতাল ঝড় উঠেছে ঠিক বলিনি?
বলদেব চোখ তুলে তাকাতে বললেন,তুমি এক গভীর খাতের সামনে দাঁড়িয়ে,ওপারে যাবার ইচ্ছে লাফ দিতে ভয় পাচ্ছো।
— কিসের ভয়?
— নিরাপত্তার ভয়। যদি খাতে পড়ে যাও? আবার ওপার থেকে উচ্চাশার হাতছানিকেও উপেক্ষা করতে পারছো না,তাই না?
— আমি জানতে চাই– আরো– আরো মৌ– ।
— মৌ হাত বাড়িয়ে আছে যাতে তুমি না পড়ে যাও। শোনো সোম সব মানুষের জীবনে এইরকম এক একটা বাঁক আসে তখন থমকে দাড়াতে হয়। সিদ্ধান্ত নিতে হয় দৃঢ়তার সঙ্গে যারা নিতে পারে না তারা হারিয়ে যায় সাধারণের ভীড়ে। আমি তোমাকে জোর করবো না। তোমার সামনে দুটো অপশন– এক,আমার সঙ্গে বিদেশে চলো সেখানে বিশাল উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ আর দুই,রূপনগর কলেজে অধ্যাপনার চাকরি আর দিনগত পাপক্ষয় । উভয় ক্ষেত্রে মৌ তোমার পাশে থাকবে। এবার তোমার বিবেচনা।
বলদেবের মাথা ঝিমঝিম করে। কি করবে কিছু বুঝে উঠতে পারে না।উদ্গত আবেগ ঠেলে বেরোতে চায়।
মৌসম নিবিঢ় দৃষ্টিতে সোমের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলেন, একটু ড্রিঙ্ক করবে?
— না,আমার অভ্যাস নেই।
— কেউ অভ্যাস নিয়ে জন্মায় না। অভ্যাস করতে হয়। আচ্ছা সোম তোমার সঙ্গে মেয়েটি ছিল ও কে?
— এবার পরীক্ষা দিয়েছে।তোমার ছাত্রী রঞ্জনা ওকে চেনো না?
— জীবনে পেরিয়ে এলাম কতদিন সব দিনের কথা কে মনে রাখে? শুধু ভুলতে পারিনা সেই দিনটার কথা যেদিন ধরা দেয় অর্থবহ চেহারা নিয়ে। শোনো কোন তাড়া নেই ভাবো,যদি তুমি যাও তাহলে আমি এ মাসে যাবো না। নাহলে এমাসেই চলে যাবো। ড.জাভেদের সঙ্গে কথা হয়েছে,এই সপ্তাহে তুমি চিঠি পেয়ে যাবে।
— একটা কথা জিজ্ঞেস করবো?
— অবশ্যই। আমি তো তোমার কথা শুনতে চাই। সোম তোমার কথা শুনতে আমার ভাল লাগে।
— সে কথা নয়,মানে তুমি আমার জন্য এত করছ কেন?
ড.এমবি ম্লান হাসলেন। তোমার কৌতুহল স্বাভাবিক সোম। পাওয়ার মধ্যে আনন্দ আছে তার চেয়ে বেশি আনন্দ দেওয়ার মধ্যে। শোনো সোম,সব সময় আল্লাহর মেহেরবানি মেলে না তাই বলে মানুষ উপাসনা করবে না?
মৌসমের শরীরের ভার সোমের উপর গায়ের গন্ধ নাকে এসে লাগতে বলদেবের মাথা ঝিমঝিম করে। বলদেব উঠে দাঁড়ায়। মৌসম উঠে দাঁড়িয়ে বলেন,তুমি ঠিকই বলেছিলে চুমুতেও নেশা হয়। তারপর মাথা করতলে ধরে বলদেবের ঠোটে আলতো করে চুমু খেয়ে বললেন,সোম আমরা চলি সমুখপানে কে আমাদের বাঁধবে রইল যারা পিছন টানে কাঁদবে তারা কাঁদবে।পিছুটান ভুলে সামনে দিকে তাকাও জান।
মৌয়ের চোখে লালসার লেলিহান শিখা,চোখের দিকে তাকাতে সারা শরীরে বিদ্যুতের শিহরণ অনুভব করে বলদেব। এখানে থাকলে বিপর্যয়ের আশঙ্কা।জামা গায়ে দিয়ে বিদায় নিয়ে দ্রুত বেরিয়ে গেল।
আম্মুর ঘর থেকে বেরিয়ে স্নান খাওয়া দাওয়া সেরে ঘরে এসে বিশ্রাম করে। একটা চিন্তা মনের মধ্যে উথাল পাথাল। তবু নিজের চোখে না দেখা অবধি খুতখুতানি থাকবে। শুনেছে বিদেশে নানা সুযোগ সুবিধে। শিক্ষা মানুষের ক্ষুধা বাড়িয়ে দেয়। যত জানা যায় মনে হয় তত মনে হয় কিছুই জানা হল না। জ্ঞানের অন্দরে যে উকি দিয়েছে সেই বুঝতে পারে তার জানা কত নগন্য। মৌসমের হাতছানি তাকে টানতে থাকে। বিছানায় এপাশ ওপাশ করতে করতে উঠে বসে। ভার্সিটী ঘুরে এলে হয়,কোনো খবর থাকলে জানা যেত। এলোমেলো ভাবতে ভাবতে পায়জামা পাঞ্জাবি গলিয়ে একসময় বেরিয়ে পড়ে। ড.এমবিকে বলতে হবে বাড়িতে যেন ফোন না করেন। ভাগ্যিস তখন মণ্টি ছিলনা।
একবার মনে হয় বাসে চেপে বসবে কিনা? মুন্সিগঞ্জ দুই ঘণ্টার পথ। পাসের খবর শুনলে মণ্টি খুশি হবে। পরক্ষনে মনে হল নিশ্চিত না হয়ে কাউকে কিছু বলা ঠিক হবে না। মণ্টিকে সঙ্গে নিয়ে গেলে বিদেশ যাওয়ায় মণ্টি আপত্তি করবে না। আম্মু ভুল বলেন নাই তাকে শক্ত হতে হবে। মুশকিল হচ্ছে মণ্টির সামনে সব গোলমাল হয়ে যায়। একটা রিক্সা একেবারে গা ঘেষে থামে।একটু হলেই ধাক্কা দিচ্ছিল। এক পা পিছিয়ে গিয়ে নিজেকে বাঁচিয়ে বলদেব দেখে রিক্সার সওয়ারীর মুখে একরাশ হাসি।
— উফ খুব ভয় পেয়ে গেছিলাম।
— কখন থেকে ডাকছি সোম সোম,তুমি কি কানে কম শোনো?
এতক্ষনে মনে পড়ে মেয়েটির নাম রঞ্জনা। তার সহপাঠী হলেও নামটা কিছুতেই মনে করতে পারছিল না। নাম মনে করতে পেরে স্বস্তি বোধ করে। রঞ্জনাকে বলে,আসলে একটু অন্যমনস্ক ছিলাম।
— উঠে এসো। ভার্সিটিতে যাবে তো?
— ভার্সিটিতে? তা মন্দ হয়না,চলো। বলদেব রিক্সায় উঠে বসে বলে,ভাইসাব আমি উঠলাম বলে আপনি রাগ করলেন না তো?
রিক্সাওলা প্যাডেলে চাপ দিয়ে ভাবে দুনিয়ায় কত রকম পাগল আছে। রঞ্জনা জিজ্ঞেস করে, কেন রাগ করবে কেন?
— আমি উঠলাম আরো ভারী হল। তাতে ওর কষ্ট বাড়ল।
— তুমি সবার কথা ভাবো?
— সবাইকে নিয়ে আমি। আমি সমগ্রের অংশমাত্র।
— ও বাবা! তোমার সঙ্গে কথা বললে মনে হয় ক্লাসে লেকচার শুনছি।
— রঞ্জনা রেজাল্টের কথা কিছু শুনেছো?
— সেই খবর জানতেই তো যাচ্ছি।আচ্ছা সোম ড.এমবি নাকি চলে যাবেন? তুমি কিছু শুনেছো?
— তুমি যেমন শুনেছো। নিস্পৃহ গলায় বলে বলদেব।
খুব সেয়ানা রঞ্জনা ভাবে।কথা বের করার জন্য রঞ্জনা বলে, মেয়েরা কারো সঙ্গে ভাল করে কথা বললে লোকে শুরু করে জল্পনা। বয়স স্টেটাস যেন ধর্তব্যের মধ্যেই পড়ে না।
— আমাকে তোমার রিক্সায় তুলে নিলে,এই নিয়েও কথা উঠতে পারে।
— উঠুক,যাকে আমার ভাল লাগে তাকে তুলব কে কি ভাবল আমি পরোয়া করিনা।কথাগুলো বলে রঞ্জনা আড়চোখে সোমকে দেখে।
বলদেবের মণ্টির কথা মনে পড়ল। মণ্টিও কথায় কথায় এরকম বলে।ভার্সিটি পৌছে দুজনে সিড়ি বেয়ে উপরে উঠে করিডর দিয়ে অফিসের দিকে যায়। ড.এমবির ঘরের দরজা ভেজানো। বলদেবের মনে হল একবার উকি দিয়ে দেখবে কিনা? বলেছিলেন কথা আছে। দরজা ঠেলে উকি দিতে একেবারে চোখাচুখি। সামনে এক ভদ্রলোক বসে আছেন।
— এসো,তোমার কথাই বলছিলাম। ড.এমবি বললেন।
বলদেব ভিতরে ঢুকতে মৌসম বলেন,ড.জাভেদ এর নাম বলদেব সোম।
বলদেব সালাম করে। মৌসম বলেন,ইনি ড.জাভেদ শামিম। রূপনগর কলেজের অধ্যক্ষ। শোনো সোম তুমি পরে আমার সঙ্গে দেখা কোরো।
বলদেব বেরিয়ে যেতে ড.জাভেদ বলেন,এক্সপিরিয়েন্স থাকলে ভাল হত।
— আমি সব দিক ভেবেই আপনাকে বলেছি। ও যদি ফার্স্ট না হত তাহলেও আমি ওর কথা বলতাম।
— ড.নুর আমাকে ভুল বুঝবেন না। আপনার মতামতকে আমি শ্রদ্ধা করি।
রঞ্জনা থমকে দাঁড়িয়ে পড়ে। এমবির ঘরে কেমন হুট করে ঢুকে গেল রঞ্জনা অবাক হয়ে ভাবে যা রটে তা কিছু ত বটে। বলদেব বের হতে রঞ্জনা জিজ্ঞেস করল, রেজাল্টের কথা কিছু বললেন?
— রূপনগর কলেজের অধ্যক্ষ ড.জাভেদ শামিমের সঙ্গে আলাপ করিয়ে দিলেন।
— আমার বোন অঞ্জনা রূপনগরে পড়ে।রেজাল্টের কিছু জানতে পারলে?
এমবির কাছে যা শুনেছে সেটা বলা ঠিক হবে না বলদেব ভাবে।বলল,চলো অফিসে খোজ নিই।
অফিসে খোজ নিতে জানালো,দু-একদিনের মধ্যে রেজাল্ট বেরিয়ে যাবে। রঞ্জনা জিজ্ঞেস করে,এবার কি করবে সোম? বাড়ি যাবে তো?
— বাড়ি গিয়ে কি করব।ভাবছি একটু এখানে থাকবো।
— চলো তাহলে ক্যাণ্টিনে,কফি খেয়ে আসি।
— আমার ভীড় ভাল লাগে না।তোমার নামটা বেশ।
রঞ্জনার মুখে লালের ছোপ লাগে। বলদেব বলে,তোমার নাম শুনে একটা লাইন মনে পড়ল,বলবো?
রঞ্জনা গভীর দৃষ্টি মেলে তাকালো।
বলদেব আপন মনে বলে,”গাঁয়ের নামটি অঞ্জনা নদীর নামটি খঞ্জনা আমায় গাঁয়ের সবাই চেনে তাহার নামটি রঞ্জনা। ”
রঞ্জনা মুগ্ধ হয়ে চেয়ে থাকে বলদেব বলে,তুমি যাও।আমার যাওয়ার জায়গা নেই।
বলদেব ধীর পায়ে ক্যাম্পাস ছেড়ে বেরিয়ে যায়। এলোমেলো চুল হাওয়ায় উড়ছে, রঞ্জনার বুকে কি এক অচেনা অনুভুতি বুজকুড়ি কাটে। শুনেছে সবাই আড়ালে ওকে বলে মৌ-সোম।ম্যাডাম ওর চেয়ে বয়সে অনেক বড়। রঞ্জনার বিশ্বাস করতে মন চায়না।তাছাড়া ম্যাডামে স্বামী আছে।ম্যাডামের পাশে সোমকে কল্পনা করে মনে মনে হাসে। আমার যাওয়ার জায়গা নেই।কবিতার মত শুনতে লাগে।
উত্তরার নীচে দাঁড়িয়ে কি যেন ভাবে বলদেব। ভর দুপুরে নিশি পাওয়ার মত এতখানি পথ হেটে চলে এসেছে। ফিরে যাবে কিনা ভাবছে। নজরে পড়ে দূর থেকে হর্ণ বাজিয়ে আসছে জলপাই রঙের গাড়ী।তার সামনে এসে দাঁড়িয়ে পড়ে। দরজা খুলে ড.এমবি নেমে বলেন,একটু অপেক্ষা করবে তো? চলো উপরে চলো। তুমি একটা আস্ত পাগল।
ড.এমবির সঙ্গে উপরে উঠে এল বলদেব। সোফায় বসতে বলে জোরে পাখা ঘুরিয়ে দিলেন। এক মিনিট বলে পাশের ঘরে ঢুকে গেলেন।কেন এখানে এল বলদেব ভাবতে থাকে। এতটা উপরে উঠে আবার নীচে নেমে যাবে? সারা ঘরে সুন্দর এক মোহ ছড়িয়ে আছে। রোদ্দুরে আর বেরোতে ইচ্ছে হল না।এখানে খারাপ লাগছে না।
ড.এমবি চেঞ্জ করে ফিরে এসে সামনে সোফায় বসলেন। শ্যামলা রঙ পুরুষ্ট উরু হাটু অবধি লুঙ্গি তুলে জিজ্ঞেস করেন,কি ভাবছো সোম?
পায়ের গোছ দেখে শির শির করে উঠল শরীর, বলদেব চোখ তুলে সিলিং-র দিকে তাকিয়ে দেখল পাখা ঘুরছে মুখ দিয়ে বেরিয়ে এল, বেশ গরম।
— জামাটা খুলে রাখ। মৌসম এগিয়ে জামাটা টেনে খুলে দিল। বলদেব বাধা দিতে পারেনা।
— কই বললে নাতো কি ভাবছো?জানো সোম তোমার কথাটা নিয়ে অনেক ভেবেছি আমি।
--কোন কথা ম্যাম?
মৌসম উঠে বলদেবের পাশে বসে গাল টিপে দিয়ে বললেন,তোমাকে বলেছি না ম্যাম-ম্যাম করবে না। বলদেব ঘামছে।গায়ে গা লেগে আছে খারাপ লাগছে না আবার অস্বস্তি হচ্ছে।
মৌসম বললেন,ভালবাসায় বয়স কোনো বাধা হতে পারেনা।এটা নিছক সামাজিক সংষ্কার।
বলদেব কোনো কথা বলছে না দেখে মৌসম একটা হাত সোমের কাধে রেখে বললেন,তোমার মনে উথাল পাতাল ঝড় উঠেছে ঠিক বলিনি?
বলদেব চোখ তুলে তাকাতে বললেন,তুমি এক গভীর খাতের সামনে দাঁড়িয়ে,ওপারে যাবার ইচ্ছে লাফ দিতে ভয় পাচ্ছো।
— কিসের ভয়?
— নিরাপত্তার ভয়। যদি খাতে পড়ে যাও? আবার ওপার থেকে উচ্চাশার হাতছানিকেও উপেক্ষা করতে পারছো না,তাই না?
— আমি জানতে চাই– আরো– আরো মৌ– ।
— মৌ হাত বাড়িয়ে আছে যাতে তুমি না পড়ে যাও। শোনো সোম সব মানুষের জীবনে এইরকম এক একটা বাঁক আসে তখন থমকে দাড়াতে হয়। সিদ্ধান্ত নিতে হয় দৃঢ়তার সঙ্গে যারা নিতে পারে না তারা হারিয়ে যায় সাধারণের ভীড়ে। আমি তোমাকে জোর করবো না। তোমার সামনে দুটো অপশন– এক,আমার সঙ্গে বিদেশে চলো সেখানে বিশাল উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ আর দুই,রূপনগর কলেজে অধ্যাপনার চাকরি আর দিনগত পাপক্ষয় । উভয় ক্ষেত্রে মৌ তোমার পাশে থাকবে। এবার তোমার বিবেচনা।
বলদেবের মাথা ঝিমঝিম করে। কি করবে কিছু বুঝে উঠতে পারে না।উদ্গত আবেগ ঠেলে বেরোতে চায়।
মৌসম নিবিঢ় দৃষ্টিতে সোমের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলেন, একটু ড্রিঙ্ক করবে?
— না,আমার অভ্যাস নেই।
— কেউ অভ্যাস নিয়ে জন্মায় না। অভ্যাস করতে হয়। আচ্ছা সোম তোমার সঙ্গে মেয়েটি ছিল ও কে?
— এবার পরীক্ষা দিয়েছে।তোমার ছাত্রী রঞ্জনা ওকে চেনো না?
— জীবনে পেরিয়ে এলাম কতদিন সব দিনের কথা কে মনে রাখে? শুধু ভুলতে পারিনা সেই দিনটার কথা যেদিন ধরা দেয় অর্থবহ চেহারা নিয়ে। শোনো কোন তাড়া নেই ভাবো,যদি তুমি যাও তাহলে আমি এ মাসে যাবো না। নাহলে এমাসেই চলে যাবো। ড.জাভেদের সঙ্গে কথা হয়েছে,এই সপ্তাহে তুমি চিঠি পেয়ে যাবে।
— একটা কথা জিজ্ঞেস করবো?
— অবশ্যই। আমি তো তোমার কথা শুনতে চাই। সোম তোমার কথা শুনতে আমার ভাল লাগে।
— সে কথা নয়,মানে তুমি আমার জন্য এত করছ কেন?
ড.এমবি ম্লান হাসলেন। তোমার কৌতুহল স্বাভাবিক সোম। পাওয়ার মধ্যে আনন্দ আছে তার চেয়ে বেশি আনন্দ দেওয়ার মধ্যে। শোনো সোম,সব সময় আল্লাহর মেহেরবানি মেলে না তাই বলে মানুষ উপাসনা করবে না?
মৌসমের শরীরের ভার সোমের উপর গায়ের গন্ধ নাকে এসে লাগতে বলদেবের মাথা ঝিমঝিম করে। বলদেব উঠে দাঁড়ায়। মৌসম উঠে দাঁড়িয়ে বলেন,তুমি ঠিকই বলেছিলে চুমুতেও নেশা হয়। তারপর মাথা করতলে ধরে বলদেবের ঠোটে আলতো করে চুমু খেয়ে বললেন,সোম আমরা চলি সমুখপানে কে আমাদের বাঁধবে রইল যারা পিছন টানে কাঁদবে তারা কাঁদবে।পিছুটান ভুলে সামনে দিকে তাকাও জান।
মৌয়ের চোখে লালসার লেলিহান শিখা,চোখের দিকে তাকাতে সারা শরীরে বিদ্যুতের শিহরণ অনুভব করে বলদেব। এখানে থাকলে বিপর্যয়ের আশঙ্কা।জামা গায়ে দিয়ে বিদায় নিয়ে দ্রুত বেরিয়ে গেল।