08-07-2020, 09:16 PM
ঞ) আমার মা হওয়া।
(Upload No. 130)
আমি নিজেকে অসহায় বোধ করলাম। আমি ভাবছিলাম কোনো একটা হোটেলে উঠে সেখান থেকে সতীকে ফোন করে সব কথা জানাবো। কিন্তু শম্পা যেভাবে একটা ছোট্ট মেয়ের মতো জিদ ধরে বসেছে, তাতে করে ওকে বোঝাবো কী করে। তাই শেষ বারের মতো বললাম, “কোনো ট্যাক্সিও তো চোখে পড়ছে না। আর আশেপাশে কোনো PCO-ও খোলা দেখতে পাচ্ছিনা, সতীকেও একটা ফোন করা দরকার। কিন্তু সবার আগে দরকার তোমার জন্যে একটা ট্যাক্সি জোগাড় করা”।
আমার কথা শেষ হতে না হতেই পাশের একটা সরু গলি থেকে একটা অটো রিক্সা বেরোতেই আমি হাত দেখিয়ে সেটাকে থামালাম। শম্পাকে বারান্দায় দাঁড়িয়ে থাকতে বলেই নিজে ওটো রিক্সাটার কাছে ছুটে গিয়ে ড্রাইভারের সাথে কথা বলেই হাতের ঈশারায় শম্পাকে ডেকে দুজনে মিলে অটোতে উঠে ওকে বললাম, “ভাড়া একটু বেশী দিতে হবে একে। কিন্তু তাতে কিছু যায় আসে না শম্পা। কিন্তু তুমি কী একা যেতে পারবে? না আমি পৌঁছে দিয়ে আসবো তোমায়”?
শম্পা একটু ভয় পেয়ে বললো, “না না, আমি একা কিছুতেই যেতে পারবো না এ অটোতে। তুমি দয়া করে আমাকে একটু পৌঁছে দেবে প্লীজ। যদি আমার ওখানে থাকতে না-ই চাও তাহলে না হয় এ অটোটাতেই আবার ফিরে এসো এখানে”।
আমি কিছু একটা ভাবতে শুরু করতেই শম্পা আবার বলে উঠলো, “জানি তোমার ওপর হয়তো একটু জুলুম করা হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু পুরোনো বন্ধু হিসেবে এটুকু কি আমি দাবি করতে পারি না তোমার কাছে দীপ”?
শম্পার কথার জবাব দেবার আগেই অটো ড্রাইভার অসমীয়া ভাষায় বলে উঠলো, “কি করিব আপনালোকে কওক চোন ? যাব নে নাই। এনেকুয়া বতরত মই আরু রখি থাকিব নোয়ারিম দেই। নগলে মোক এরি দিয়ক”। (বাংলা অর্থ—আপনারা কী করতে চান বলুন তো? আপনারা সত্যি যাবেন যাবেন কি না। এমন খারাপ অবস্থায় আমি কিন্তু আপনাদের জন্যে অপেক্ষা করে থাকতে পারবো না।)
আমি তাড়াতাড়ি বলে উঠলাম, “নহয় নহয় ভাইটি, খং নকরিবা। জাম বুলিহে তোমাক মাতিছু নহয়। বলা, স্টার্ট দিয়া তুমি”। (বাংলা অর্থ—না না ভাই তুমি রাগ কোরো না। যাবো বলেই তো ডেকেছি। আচ্ছা তুমি স্টার্ট দাও।)
অটো চলতে শুরু করলো। শম্পা কৃতজ্ঞতার দৃষ্টিতে আমার দিকে চেয়ে বললো, “থ্যাঙ্ক ইউ দীপ। কিন্তু তোমাকে ঝামেলায় ফেলে দিলাম বলে একটু দুঃখও হচ্ছে। এজন্যে আমাকে মাফ করে দিও প্লীজ”।
মিনিট পনেরোর মধ্যেই লাচিত নগর পৌঁছে গেলো অটো। শম্পা পথ চিনিয়ে দিয়ে অটোটাকে একটা ছ’তলা এপার্টমেন্টের স্যামনে নিয়ে গিয়ে দাঁড় করিয়ে দুহাতে আমার একটা হাত ধরে মিনতির সুরে বললো, “দীপ, প্লীজ নেমে এসো। এখানে তোমার কোনো প্রব্লেম হবে না। আমি কথা দিচ্ছি কাল খুব ভোরে আমি আবার পল্টন বাজার ট্যাক্সি স্ট্যান্ডে তোমাকে পৌঁছে দেবো”।
আমি শম্পার হাত থেকে নিজের হাত ছাড়িয়ে নিতে নিতে শান্ত গলায় বললাম, “এক মিনিট দাঁড়াও। দেখি অটোটা আবার যেতে রাজী হলে আমি চলে যাবো। সেক্ষেত্রে আমি তোমায় কথা দিচ্ছি আর একদিন তোমার এখানে নিশ্চয়ই আসবো” বলে অটো ড্রাইভারকে জিজ্ঞেস করলাম, “ভাইটি, আকৌ লই জাবা নেকি মোক পল্টন বজারত”? (বাংলা অর্থ – ভাই, আমাকে আবার পল্টন বাজারে নিয়ে যাবে?)
অটো ড্রাইভার জবাবে বললো, “নহয় চার, আরু হিফালে নেযাও মই। মই এতিয়া ঘরলোই হে যাম, রাজগড়ত। হিফালে যাব বিচারিলে যাব পারে”। (বাংলা অর্থ – না স্যার, আমি আর ওদিকে যাবো না এখন। আমি এখন রাজগড়ে আমার বাড়ি চলে যাবো। ওদিকে যেতে চাইলে যেতে পারেন।)
বাধ্য হয়ে আমাকে অটো থেকে নামতে হলো। রাজগড়ে গিয়ে ভালো কোনো হোটেল পাওয়া যাবে না। তাছাড়া রাজগড় থেকে ভোরে পল্টন বাজার আসতে কোনও অটো বা ট্যাক্সি পাবার সম্ভাবনাও খুব কম থাকবে। অটো ড্রাইভারকে ভাড়া দিয়ে বিদেয় করে শম্পার দিকে মুখ করতেই আধো অন্ধকারেও ওর মুখে খুশীর ছোঁয়া দেখতে পেলাম আমি।
কিছু বলবার আগেই বিল্ডিংটার ভেতর থেকে সিকিওউরিটি স্টাফ এসে গেটের ভেতর থেকেই শম্পাকে চিনতে পেরে গেট খুলে দিলো। শম্পা খুব শান্ত স্বরে বললো, “এসো দীপ, ভেতরে চলো। সিকিউরিটির সামনে আর কথা বাড়িও না”।
আমি লাগেজগুলো আবার হাতে নিতে নিতে বললাম, “কিন্তু শম্পা, আমি বলছিলাম .......”
আমাকে মাঝ পথে থামিয়ে দিয়েই শম্পা বলে উঠলো, “এসো, ঘরে গিয়ে যা বলবার বোলো, এখানে আর কোনো কথা নয়”।
লিফটে চড়ে চারতলায় শম্পাদের ঘরে ঢুকেই শম্পা আমাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই একদিকে ঈশারা করে বললো, “ওখানে ফোন আছে। সবার আগে তোমার বউকে আগে ফোন করো। তাকে সব কথা জানিয়ে বলো যে তুমি আমার এখানে এসেছো। তোমার বউ যদি তোমাকে আমার এখানে থাকতে মানা করে, তাহলে না হয় তুমি চলে যেও। আমি তোমায় বাধা দেবো না। আর এবারে আমি গাড়ি নিয়ে গিয়ে তুমি যে হোটেলে বা যেখানে থাকতে চাও, সেখানে রেখে আসবো। নো প্রব্লেম, কিন্তু এটাও তোমার স্ত্রীকে জানিয়ে দিও যে আমি তোমাকে আমার এখানে রাতটা থেকে যাবার অনুরোধ করছি।..... তুমি কথা বলো, আমি আসছি” বলে ভেতরের রুমের দিকে যেতে যেতে বললো, “সময় নিয়ে, সব কিছু খুলে বোলো, তাড়াহুড়ো করার দরকার নেই কিছু” বলে ভেতরের একটা রুমে ঢুকে গেলো।
হাতের লাগেজগুলো ড্রয়িং রুমের এক সাইডে নামিয়ে রেখে আমি শিলিগুড়ির নাম্বার ডায়েল করতেই সতীর দাদা ফোন রিসিভ করতেই আমি বললাম, “দাদা, আমি দীপ বলছি”।
দাদা- “হ্যা, বলো দীপ, ভালোমতো পৌঁছে গেছো তো”?
আমি- “হ্যা দাদা, এমনিতে কোনো প্রব্লেম হয় নি। ট্রেনটা বেশ কয়েক ঘণ্টা লেট হয়েছে গৌহাটি পৌঁছতে। রাত সাড়ে নটা নাগাদ গৌহাটি পৌছেছি। আজ আর শিলং যেতে পারছি না। এখানেই রাতে থাকতে হচ্ছে। দাদা, একটু সতীকে দিন না”।
দাদা- “হ্যা, এই নাও, সতী এখানেই আছে”।
এবারে সতী ফোন নিয়ে বললো, “কি ব্যাপার দীপ? সব ঠিক ঠাক আছে তো”?
আমি- “হ্যা সতী সব ঠিক আছে। তুমি ঠিক আছো তো”?
সতী- “হ্যা হ্যা, আমি ঠিক আছি। কিন্তু দাদাকে কী বলছিলে? আজ শিলং যেতে পারছো না ? তাহলে কি গৌহাটিতেই রাতে থাকছো”?
আমি- “হ্যা মণি, শোনোনা, তোমাকে একটা কথা বলছি। শিলিগুড়িতে ট্রেনে উঠতেই আমার পাশের সীটে আমার এক পুরোনো ক্লাসমেটের সাথে দেখা হয়ে গেছে। ও গৌহাটিতে থাকে। একসাথে গৌহাটী পৌঁছতেই দেখি বৃষ্টি হচ্ছে। রাত তখন প্রায় সাড়ে নটা। রাস্তা ঘাটে লোক জন প্রায় ছিলোই না বলতে গেলে। কোনো ট্যাক্সি ফ্যাক্সিও পাচ্ছিলাম না। অনেকক্ষণ অপেক্ষা করে একটা অটো পেয়ে ওকে একা ছেড়ে দিতে না পেরে ওকে বাড়ি পৌঁছে দিয়ে আর ফিরে গিয়ে কোনো হোটেলে উঠতে পারলাম না। এদিকে সে মেয়েটাও খুব করে ধরেছে ওর এখানেই থেকে যেতে। কি করি বলো তো”?
সতী- “মেয়েটা মানে? তোমার সেই ক্লাসমেট”?
আমি- “হ্যা মণি, ওর নাম শম্পা”।
সতী- “শম্পা? এ নামে তোমার কোনো ক্লাসমেটের কথা তো আগে তোমার মুখে কোনোদিন শুনিনি”!
আমি- “আরে তার কথা আমিই ভুলে গিয়েছিলাম, তুমি আর কোত্থেকে শুনবে? আচ্ছা তার কথা পরে অন্য সময় তোমাকে খুলে বলবো। কিন্তু এখন আমার কি করা উচিৎ বলে তুমি ভাবছো? আমি কি ওর এখানে থেকে যাবো? না চলে যাবো? আমার কিন্তু সত্যি থাকতে খুব একটা ইচ্ছে নেই। কিন্তু ও এমন করে বলছে, তাছাড়া এখন বেড়িয়ে যেতে হলে ও নাকি নিজে ড্রাইভ করে আমাকে ছেড়ে আসবে বলছে। এদিকে ওর বরও বাইরে। আমি বুঝতে পারছি না আমার সত্যি সত্যি কি করা উচিৎ”।
সতী- “শোনো দীপ, আমি আমার ঘরে যাচ্ছি। তুমি পাঁচ মিনিট বাদে ওপরের ঘরের নাম্বারে ফোন করো। আমি তোমার বান্ধবীর সাথে কথা বলবো। ও কে”?
আমি- “ঠিক আছে মণি, আমি পাঁচ মিনিট বাদেই তোমায় ফোন করছি” বলে আমি ফোন কেটে দিলাম।
ফোনটা রেখে একটা সোফাতে বসে আমি ভাবতে লাগলাম শম্পার এখানে রাতে থাকাটা ঠিক হবে কি না। দু’তিন মিনিট পরেই শম্পা ড্রয়িং রুমে এসে আমাকে বললো, “দীপ, সরি, আমার একটু ভুল হয়ে গেছে। আমার সঙ্গে তোমায় আরেকটু বেরোতে হবে । এ ক’দিন ঘরে ছিলাম না। ফ্রিজ খুলে দেখি রাতে খাবার মতো কিছুই নেই। কিছু একটা তো আনতে হবে। প্লীজ একটু চলো না আমার সাথে। বেশী দুরে নয় এই কাছেই। বাইরে যা অবস্থা তাতে কোনও দোকান টোকানও খোলা পাবো কি না কে জানে। রাত প্রায় সাড়ে দশটা হতে চললো। পাশে গলির ভেতর একটা ছোট্ট মুদিখানা অনেক রাত অব্দি খোলা থাকে। কপাল ভালো থাকলে সেটা খোলা পাবো, নইলে যা হবে সেটা পরে ভেবে দেখা যাবে”।
আমি সোফা ছেড়ে উঠে দাঁড়াতে দাঁড়াতে বললাম, “কিন্তু সতী মানে আমার স্ত্রীযে তোমার সাথে কথা বলতে চাইছিলো”।
শম্পা আমার হাত ধরে টানতে টানতে বললো, “আমরা ফিরে এসেই তার সঙ্গে কথা বলছি। আগে যেতে হবে আমাদের। দোকানটা বন্ধ করে ফেললে মুশকিলে পরে যাবো। এসো চলো”।
আমি আর কোনো কথা না বলে শম্পার সাথে বেড়িয়ে গেলাম। পাশের গলির যে দোকানটার কথা শম্পা বলেছিলো সেটা বেশী দুরে ছিলো না। ওখান থেকে ডিম, পাউরুটি, মাখন আর বিস্কুট নিয়ে ঘরে ফিরে এসেই শম্পা বললো, “এবারে তোমার বৌয়ের সাথে আগে কথা বলে নিই। তারপর অন্য কাজ। তুমি নাম্বারটা ডায়াল করো। আমি এগুলো কিচেনে রেখে আসছি”।
_____________________________
ss_sexy
(Upload No. 130)
আমি নিজেকে অসহায় বোধ করলাম। আমি ভাবছিলাম কোনো একটা হোটেলে উঠে সেখান থেকে সতীকে ফোন করে সব কথা জানাবো। কিন্তু শম্পা যেভাবে একটা ছোট্ট মেয়ের মতো জিদ ধরে বসেছে, তাতে করে ওকে বোঝাবো কী করে। তাই শেষ বারের মতো বললাম, “কোনো ট্যাক্সিও তো চোখে পড়ছে না। আর আশেপাশে কোনো PCO-ও খোলা দেখতে পাচ্ছিনা, সতীকেও একটা ফোন করা দরকার। কিন্তু সবার আগে দরকার তোমার জন্যে একটা ট্যাক্সি জোগাড় করা”।
আমার কথা শেষ হতে না হতেই পাশের একটা সরু গলি থেকে একটা অটো রিক্সা বেরোতেই আমি হাত দেখিয়ে সেটাকে থামালাম। শম্পাকে বারান্দায় দাঁড়িয়ে থাকতে বলেই নিজে ওটো রিক্সাটার কাছে ছুটে গিয়ে ড্রাইভারের সাথে কথা বলেই হাতের ঈশারায় শম্পাকে ডেকে দুজনে মিলে অটোতে উঠে ওকে বললাম, “ভাড়া একটু বেশী দিতে হবে একে। কিন্তু তাতে কিছু যায় আসে না শম্পা। কিন্তু তুমি কী একা যেতে পারবে? না আমি পৌঁছে দিয়ে আসবো তোমায়”?
শম্পা একটু ভয় পেয়ে বললো, “না না, আমি একা কিছুতেই যেতে পারবো না এ অটোতে। তুমি দয়া করে আমাকে একটু পৌঁছে দেবে প্লীজ। যদি আমার ওখানে থাকতে না-ই চাও তাহলে না হয় এ অটোটাতেই আবার ফিরে এসো এখানে”।
আমি কিছু একটা ভাবতে শুরু করতেই শম্পা আবার বলে উঠলো, “জানি তোমার ওপর হয়তো একটু জুলুম করা হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু পুরোনো বন্ধু হিসেবে এটুকু কি আমি দাবি করতে পারি না তোমার কাছে দীপ”?
শম্পার কথার জবাব দেবার আগেই অটো ড্রাইভার অসমীয়া ভাষায় বলে উঠলো, “কি করিব আপনালোকে কওক চোন ? যাব নে নাই। এনেকুয়া বতরত মই আরু রখি থাকিব নোয়ারিম দেই। নগলে মোক এরি দিয়ক”। (বাংলা অর্থ—আপনারা কী করতে চান বলুন তো? আপনারা সত্যি যাবেন যাবেন কি না। এমন খারাপ অবস্থায় আমি কিন্তু আপনাদের জন্যে অপেক্ষা করে থাকতে পারবো না।)
আমি তাড়াতাড়ি বলে উঠলাম, “নহয় নহয় ভাইটি, খং নকরিবা। জাম বুলিহে তোমাক মাতিছু নহয়। বলা, স্টার্ট দিয়া তুমি”। (বাংলা অর্থ—না না ভাই তুমি রাগ কোরো না। যাবো বলেই তো ডেকেছি। আচ্ছা তুমি স্টার্ট দাও।)
অটো চলতে শুরু করলো। শম্পা কৃতজ্ঞতার দৃষ্টিতে আমার দিকে চেয়ে বললো, “থ্যাঙ্ক ইউ দীপ। কিন্তু তোমাকে ঝামেলায় ফেলে দিলাম বলে একটু দুঃখও হচ্ছে। এজন্যে আমাকে মাফ করে দিও প্লীজ”।
মিনিট পনেরোর মধ্যেই লাচিত নগর পৌঁছে গেলো অটো। শম্পা পথ চিনিয়ে দিয়ে অটোটাকে একটা ছ’তলা এপার্টমেন্টের স্যামনে নিয়ে গিয়ে দাঁড় করিয়ে দুহাতে আমার একটা হাত ধরে মিনতির সুরে বললো, “দীপ, প্লীজ নেমে এসো। এখানে তোমার কোনো প্রব্লেম হবে না। আমি কথা দিচ্ছি কাল খুব ভোরে আমি আবার পল্টন বাজার ট্যাক্সি স্ট্যান্ডে তোমাকে পৌঁছে দেবো”।
আমি শম্পার হাত থেকে নিজের হাত ছাড়িয়ে নিতে নিতে শান্ত গলায় বললাম, “এক মিনিট দাঁড়াও। দেখি অটোটা আবার যেতে রাজী হলে আমি চলে যাবো। সেক্ষেত্রে আমি তোমায় কথা দিচ্ছি আর একদিন তোমার এখানে নিশ্চয়ই আসবো” বলে অটো ড্রাইভারকে জিজ্ঞেস করলাম, “ভাইটি, আকৌ লই জাবা নেকি মোক পল্টন বজারত”? (বাংলা অর্থ – ভাই, আমাকে আবার পল্টন বাজারে নিয়ে যাবে?)
অটো ড্রাইভার জবাবে বললো, “নহয় চার, আরু হিফালে নেযাও মই। মই এতিয়া ঘরলোই হে যাম, রাজগড়ত। হিফালে যাব বিচারিলে যাব পারে”। (বাংলা অর্থ – না স্যার, আমি আর ওদিকে যাবো না এখন। আমি এখন রাজগড়ে আমার বাড়ি চলে যাবো। ওদিকে যেতে চাইলে যেতে পারেন।)
বাধ্য হয়ে আমাকে অটো থেকে নামতে হলো। রাজগড়ে গিয়ে ভালো কোনো হোটেল পাওয়া যাবে না। তাছাড়া রাজগড় থেকে ভোরে পল্টন বাজার আসতে কোনও অটো বা ট্যাক্সি পাবার সম্ভাবনাও খুব কম থাকবে। অটো ড্রাইভারকে ভাড়া দিয়ে বিদেয় করে শম্পার দিকে মুখ করতেই আধো অন্ধকারেও ওর মুখে খুশীর ছোঁয়া দেখতে পেলাম আমি।
কিছু বলবার আগেই বিল্ডিংটার ভেতর থেকে সিকিওউরিটি স্টাফ এসে গেটের ভেতর থেকেই শম্পাকে চিনতে পেরে গেট খুলে দিলো। শম্পা খুব শান্ত স্বরে বললো, “এসো দীপ, ভেতরে চলো। সিকিউরিটির সামনে আর কথা বাড়িও না”।
আমি লাগেজগুলো আবার হাতে নিতে নিতে বললাম, “কিন্তু শম্পা, আমি বলছিলাম .......”
আমাকে মাঝ পথে থামিয়ে দিয়েই শম্পা বলে উঠলো, “এসো, ঘরে গিয়ে যা বলবার বোলো, এখানে আর কোনো কথা নয়”।
লিফটে চড়ে চারতলায় শম্পাদের ঘরে ঢুকেই শম্পা আমাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই একদিকে ঈশারা করে বললো, “ওখানে ফোন আছে। সবার আগে তোমার বউকে আগে ফোন করো। তাকে সব কথা জানিয়ে বলো যে তুমি আমার এখানে এসেছো। তোমার বউ যদি তোমাকে আমার এখানে থাকতে মানা করে, তাহলে না হয় তুমি চলে যেও। আমি তোমায় বাধা দেবো না। আর এবারে আমি গাড়ি নিয়ে গিয়ে তুমি যে হোটেলে বা যেখানে থাকতে চাও, সেখানে রেখে আসবো। নো প্রব্লেম, কিন্তু এটাও তোমার স্ত্রীকে জানিয়ে দিও যে আমি তোমাকে আমার এখানে রাতটা থেকে যাবার অনুরোধ করছি।..... তুমি কথা বলো, আমি আসছি” বলে ভেতরের রুমের দিকে যেতে যেতে বললো, “সময় নিয়ে, সব কিছু খুলে বোলো, তাড়াহুড়ো করার দরকার নেই কিছু” বলে ভেতরের একটা রুমে ঢুকে গেলো।
হাতের লাগেজগুলো ড্রয়িং রুমের এক সাইডে নামিয়ে রেখে আমি শিলিগুড়ির নাম্বার ডায়েল করতেই সতীর দাদা ফোন রিসিভ করতেই আমি বললাম, “দাদা, আমি দীপ বলছি”।
দাদা- “হ্যা, বলো দীপ, ভালোমতো পৌঁছে গেছো তো”?
আমি- “হ্যা দাদা, এমনিতে কোনো প্রব্লেম হয় নি। ট্রেনটা বেশ কয়েক ঘণ্টা লেট হয়েছে গৌহাটি পৌঁছতে। রাত সাড়ে নটা নাগাদ গৌহাটি পৌছেছি। আজ আর শিলং যেতে পারছি না। এখানেই রাতে থাকতে হচ্ছে। দাদা, একটু সতীকে দিন না”।
দাদা- “হ্যা, এই নাও, সতী এখানেই আছে”।
এবারে সতী ফোন নিয়ে বললো, “কি ব্যাপার দীপ? সব ঠিক ঠাক আছে তো”?
আমি- “হ্যা সতী সব ঠিক আছে। তুমি ঠিক আছো তো”?
সতী- “হ্যা হ্যা, আমি ঠিক আছি। কিন্তু দাদাকে কী বলছিলে? আজ শিলং যেতে পারছো না ? তাহলে কি গৌহাটিতেই রাতে থাকছো”?
আমি- “হ্যা মণি, শোনোনা, তোমাকে একটা কথা বলছি। শিলিগুড়িতে ট্রেনে উঠতেই আমার পাশের সীটে আমার এক পুরোনো ক্লাসমেটের সাথে দেখা হয়ে গেছে। ও গৌহাটিতে থাকে। একসাথে গৌহাটী পৌঁছতেই দেখি বৃষ্টি হচ্ছে। রাত তখন প্রায় সাড়ে নটা। রাস্তা ঘাটে লোক জন প্রায় ছিলোই না বলতে গেলে। কোনো ট্যাক্সি ফ্যাক্সিও পাচ্ছিলাম না। অনেকক্ষণ অপেক্ষা করে একটা অটো পেয়ে ওকে একা ছেড়ে দিতে না পেরে ওকে বাড়ি পৌঁছে দিয়ে আর ফিরে গিয়ে কোনো হোটেলে উঠতে পারলাম না। এদিকে সে মেয়েটাও খুব করে ধরেছে ওর এখানেই থেকে যেতে। কি করি বলো তো”?
সতী- “মেয়েটা মানে? তোমার সেই ক্লাসমেট”?
আমি- “হ্যা মণি, ওর নাম শম্পা”।
সতী- “শম্পা? এ নামে তোমার কোনো ক্লাসমেটের কথা তো আগে তোমার মুখে কোনোদিন শুনিনি”!
আমি- “আরে তার কথা আমিই ভুলে গিয়েছিলাম, তুমি আর কোত্থেকে শুনবে? আচ্ছা তার কথা পরে অন্য সময় তোমাকে খুলে বলবো। কিন্তু এখন আমার কি করা উচিৎ বলে তুমি ভাবছো? আমি কি ওর এখানে থেকে যাবো? না চলে যাবো? আমার কিন্তু সত্যি থাকতে খুব একটা ইচ্ছে নেই। কিন্তু ও এমন করে বলছে, তাছাড়া এখন বেড়িয়ে যেতে হলে ও নাকি নিজে ড্রাইভ করে আমাকে ছেড়ে আসবে বলছে। এদিকে ওর বরও বাইরে। আমি বুঝতে পারছি না আমার সত্যি সত্যি কি করা উচিৎ”।
সতী- “শোনো দীপ, আমি আমার ঘরে যাচ্ছি। তুমি পাঁচ মিনিট বাদে ওপরের ঘরের নাম্বারে ফোন করো। আমি তোমার বান্ধবীর সাথে কথা বলবো। ও কে”?
আমি- “ঠিক আছে মণি, আমি পাঁচ মিনিট বাদেই তোমায় ফোন করছি” বলে আমি ফোন কেটে দিলাম।
ফোনটা রেখে একটা সোফাতে বসে আমি ভাবতে লাগলাম শম্পার এখানে রাতে থাকাটা ঠিক হবে কি না। দু’তিন মিনিট পরেই শম্পা ড্রয়িং রুমে এসে আমাকে বললো, “দীপ, সরি, আমার একটু ভুল হয়ে গেছে। আমার সঙ্গে তোমায় আরেকটু বেরোতে হবে । এ ক’দিন ঘরে ছিলাম না। ফ্রিজ খুলে দেখি রাতে খাবার মতো কিছুই নেই। কিছু একটা তো আনতে হবে। প্লীজ একটু চলো না আমার সাথে। বেশী দুরে নয় এই কাছেই। বাইরে যা অবস্থা তাতে কোনও দোকান টোকানও খোলা পাবো কি না কে জানে। রাত প্রায় সাড়ে দশটা হতে চললো। পাশে গলির ভেতর একটা ছোট্ট মুদিখানা অনেক রাত অব্দি খোলা থাকে। কপাল ভালো থাকলে সেটা খোলা পাবো, নইলে যা হবে সেটা পরে ভেবে দেখা যাবে”।
আমি সোফা ছেড়ে উঠে দাঁড়াতে দাঁড়াতে বললাম, “কিন্তু সতী মানে আমার স্ত্রীযে তোমার সাথে কথা বলতে চাইছিলো”।
শম্পা আমার হাত ধরে টানতে টানতে বললো, “আমরা ফিরে এসেই তার সঙ্গে কথা বলছি। আগে যেতে হবে আমাদের। দোকানটা বন্ধ করে ফেললে মুশকিলে পরে যাবো। এসো চলো”।
আমি আর কোনো কথা না বলে শম্পার সাথে বেড়িয়ে গেলাম। পাশের গলির যে দোকানটার কথা শম্পা বলেছিলো সেটা বেশী দুরে ছিলো না। ওখান থেকে ডিম, পাউরুটি, মাখন আর বিস্কুট নিয়ে ঘরে ফিরে এসেই শম্পা বললো, “এবারে তোমার বৌয়ের সাথে আগে কথা বলে নিই। তারপর অন্য কাজ। তুমি নাম্বারটা ডায়াল করো। আমি এগুলো কিচেনে রেখে আসছি”।
_____________________________
ss_sexy