08-07-2020, 09:14 PM
(ঞ) আমার মা হওয়া।
(Upload No. 129)
আমি একটু আমতা আমতা করে বললাম, “ না মানে, আমি তো নিজে কলেজ বা কলেজ জীবনে কোনো মেয়ের সাথে কথা বলতাম না। তোমার সাথেও তাই। আজ এতোদিন পরে এমন এক বন্ধুর সাথে এই ট্রেনে বসে এমন অন্তরঙ্গ ভাবে গল্প করতে করতে আমি ভুলেই গিয়েছিলাম যে আমাদের মধ্যে সত্যি তেমন অন্তরঙ্গ সম্পর্ক তো আদৌ নেই, যার সুবাদে আমি অমন ব্যক্তিগত ব্যাপারে তোমাকে প্রশ্ন করতে পারি। আই অ্যাম রিয়েলি সরি শম্পা। যাকগে, এসব ছেড়ে বলো দেখি আমাদের ক্লাসের মেয়েরা আর কে কোথায় আছে? কারুর সঙ্গে এখনো যোগাযোগ আছে তোমার”?
শম্পা কয়েক সেকেণ্ড চুপ করে থেকে বললো, “যোগাযোগ সেভাবে কারুর সাথেই নেই। সবারই বিয়ে হয়ে গেছে। একমাত্র তপুই আছে মেঘালয়ে। ও একটা কলেজে চাকরি পেয়ে আরেক কলেজ টিচারকে বিয়ে করে ওখানেই আছে এখনো। শ্বশুর বাড়ি নর্থ বেঙ্গলে কোথাও। কিন্তু ওর বরও মেঘালয়ে আরেকটি কলেজের টিচার। ওরা দুজনেই একসাথেই আছে। এ ছাড়া আর কারুর খবর তেমন জানি না। আচ্ছা তোমার মমতার কথা মনে আছে দীপ”?
আমি বললাম, “হ্যা হ্যা, মনে আছে। ও তো আমাদের সাইন্স সেকশনেই ছিলো। মাধ্যমিকে মেঘালয়ের মধ্যে টপ ফাইভের মধ্যে ছিলো। বেশ ছোটোখাটো ফর্সা মতো ছিলো মেয়েটা। তাই না”?
শম্পা একটু অবাক হয়ে বললো, “আরে ! তোমার তো দেখছি বেশ মনে আছে ওর কথা। আমি তো ভাবতাম তুমি কোনো মেয়ের সাথে কথা যেমন বলতে না তেমনি কারুর দিকে চোখ তুলে তাকাতেও না”।
আমি একটু হেঁসে বললো, “তুমি যেমনটা ভাবছো তেমন কোনও ব্যাপার নয় শম্পা। আসলে ওর কথা মনে আছে একটা অন্য কারণে। তা ওর কথা ওঠালে কেন বলো তো”?
শম্পা ঠোঁট টিপে হেঁসে বললো, “বারে, তোমার সাথে পুরোনো বন্ধুদের কথা বলবো আর মমতার কথা উঠবে না, এ কি হতে পারে”?
আমি অবাক হয়ে বললাম, “মানে”?
শম্পা আগের মতোই ঠোঁট টিপে টিপে বললো, “তুমি তো কারুর কোনো খবর রাখোনি। কে তোমাকে পছন্দ করতো, কে তোমাকে নিয়ে স্বপ্ন দেখতো। কিন্তু আজ
দেখতে পাচ্ছি সে তোমার মনের কোণে রয়ে গেছে”।
আমি শম্পার কথা শুনে পুরোনো ঘটনা মনে করতে করতে বললাম, “আরে না শম্পা, তুমি ভুল ভাবছো। আমি বললাম না, ওকে মনে আছে আমার অন্য কারনে। আচ্ছা শোনো বলছি। আমরা যখন প্রি-ইউনিভার্সিটি সেকেণ্ড ইয়ারে পড়তাম, মমতা একদিন কেমিস্ট্রি ল্যাবরেটরিতে নিজের হাতের ওপর এসিড ফেলে দিয়েছিলো। ব্যাপারটা খুবই সিরিয়াস ছিলো, ওর হাতটা নষ্ট হয়ে যেতে পারতো সেদিন। কিন্তু আমি ঠিক পাশের সীটেই থাকাতে আমার চোখে পড়ে গিয়েছিলো ঘটনাটা। সঙ্গে সঙ্গে আমি অ্যাল্কালাইন ট্রিট দিয়ে ওর হাতটাকে নষ্ট হওয়া থেকে বাঁচাতে পেরেছিলাম।এর পর আরেক বার সেকেণ্ড ইয়ারের প্রমোশনাল টেস্টের সময় আরেকদিন জুলোজি প্রাক্টিকাল টেস্টে ডিসেক্সন করতে পারছিলো না মমতা। আমার কাছে সাহায্য চাইতে ইনভিজিলেটরের চোখ এড়িয়ে আমি নিজের ডিসেক্সনটা কমপ্লিট করে মমতার ট্রের সাথে আমার ট্রেটা বদলে দিয়ে নিজে আরেকবার ডিসেক্সন করে নিয়েছিলাম। কিন্তু ভাগ্যের পরিহাস তো তোমরা সবাই দেখতে পেয়েছো। মমতা ফার্স্ট ডিভিশন পেয়ে ফাইনাল বি এস সি তে প্রমোশন পেয়েছিলো। আর আমি পরীক্ষায় ফেল করেছিলাম। আর তারপরই আমার কলেজে পড়া শেষ হয়ে গিয়েছিলো। এখন তুমি বলো মমতার কথা আমি ভুলতে পারি”?
এবারে শম্পা অবাক হয়ে বললো, “কী বলছো তুমি দীপ? তুমি যে ব্রিলিয়ান্ট ছিলে তা তো আমরা জানতামই। আমাদের সবার ধারণা ছিলো সাইন্স সেকশনের তুমি, সুমন্ত আর মমতা তিনজনেই ফার্স্ট ডিভিশনে পাবে। তোমার রেজাল্ট খারাপ হওয়াতে আমরা সবাই খুব হতাশ হয়েছিলাম জানো? কিন্তু মমতাকে তুমি এভাবে হেল্প করেছিলে এ কথা আমরা কেউ শুনিনি। তুমি সত্যি বলছো দীপ”?
আমি মুচকি হেঁসে বললাম, “ইয়ার্কি ঠাট্টার সময় ছাড়া আমি কখনো মিথ্যে কথা বলিনা শম্পা। আর এতো বছর বাদে মিথ্যে কথা বলে কার কী লাভ হবে বলো? মেয়েটা পড়াশোনায় খুব শার্প ছিলো। আসাম ইউনিভারসিটি থেকে ফিজিক্সে ফার্স্ট ক্লাস সেকেণ্ড হয়ে মাস্টার্স করেছে শুনেছিলাম। জানিনা তারপর ও কোথায় আছে কী করছে”।
শম্পা বললো, “আমি ওর সম্পর্কে শেষ শুনেছিলাম, যখন ও মাস্টার্স করছিলো তখন কোন এক অ্যাসামিজ ছেলের সাথে নাকি প্রেম করতো। মাস্টার্স কমপ্লিট করার পর ওর আর কোনো খবর পাই নি। কিন্তু এটা কি তুমি জানতে যে মমতা তোমায় ভালোবাসতো”?
আমি খুব অবাক হয়ে বললাম, “কী বলছো তুমি শম্পা! তুমি নিশ্চয়ই আমার সঙ্গে ঠাট্টা করছো। যে মেয়েটার সাথে ওই দু’দিন ছাড়া আমি আর কখনো কোথাও কথা পর্যন্ত বলিনি, সে আমাকে ভালোবাসতো? না না, এ হতেই পারে না”।
শম্পা আমার কথা শুনে মুচকি মুচকি হাঁসতে হাঁসতে বললো, “আমি ঠাট্টা করছি না দীপ। আমি সিরিয়াসলি বলছি। তুমি না জানলেও ব্যাপারটা সত্যি। আর পরের কথাটা শুনে তুমি আরো অবাক হবে জানি”।
আমি আবারও অবাক বিস্ময়ে চোখ প্রায় কপালে তুলে বললাম, “আর কী বলবে”?
শম্পা গলাটা আরো নামিয়ে আমার কানের কাছে ঝুঁকে বললো, “তুমি যদি ওকে বিয়ে না-ও করতে তবু তোমার সাথে প্রেম করতে রাজী ছিলো ও” বলে মুচকি মুচকি হাঁসতে লাগলো।
আমার তখন চোখের সামনে ভুত দেখার মতো অবস্থা। অনেকক্ষণ বিস্ময়ে বোবা হয়ে থাকার পর বললাম, “ওহ মাই গড, এ আমি কী শুনছি? এ যে আমি স্বপ্নেও ভাবি নি”!
শম্পা কৌতুহলী সুরে জিজ্ঞেস করলো, “ও তোমাকে কোনোদিন কিছু বলেনি দীপ”?
আমার যেন অবাক হবার আর শেষ নেই। বললাম, “না তো! তোমাকে তো বললাম ওই কেমিস্ট্রি আর জুলোজি প্রাক্টিকালে ওই দুবার ছাড়া ওর সাথে আমার আর কোনোদিন কথা হয় নি। আর তুমি বলছো.....উঃ আমি সত্যি ভাবতে পারছি না”।
শম্পা এবারে খুব শান্ত গলায় বললো, “তুমি আর কবে কার খবর রাখতে? আগেই তো বললাম, শুধু মমতা কেন, আমাদের ক্লাসের অনেক মেয়েই তখন মনে মনে তোমাকে ভালোবাসতো। আমার মনেও একটা প্রশ্ন ছিলো তখন থেকেই। তুমি মেয়েদেরকে সব সময় এড়িয়ে চলতে কেন। মেয়েদের প্রতি এমন উদাসীনতা সে সময় অন্য কোনো ছেলের মধ্যে দেখিনি। আজ অবশ্য সে জবাব তোমার কাছে পেয়েছি। কিন্তু ষ্টেশনের বাইরে তোমাকে দেখেও যে চিনতে পারিনি তার একটা কারণ এটাও। আমি যে দীপকে জানতাম সে মেয়েদের কাছ থেকে সব সময় পঁচিশ গজ দুরে থাকতো, আর এখানে সে কি না একটা মেয়েকে ওভাবে অমন খোলা জায়গায়... I তাই তো একবার সন্দেহ হলেও মন থেকে সে সম্ভাবনাকে উড়িয়ে দিয়েছিলাম। তা সত্যি দীপ, আমার যেমন বাইরেটা বদলে গেছে তেমনি তোমার ভেতরের স্বভাবটাও অনেক বদলে গেছে”।
সারাটা পথ দুই পুরোনো বন্ধু মিলে বিভিন্ন ঘটনার স্মৃতি রোমন্থন করতে করতে গৌহাটি গিয়ে যখন পৌছলাম রাত তখন সাড়ে নটা। ট্রেন সাড়ে তিন ঘন্টা লেটে পৌছেছে। ট্রেন ঠিক সময়ে এলে আমি শিলং পৌঁছে যেতে পারতাম রাত দশটার মধ্যে। কিন্তু তখন আর হোটেলে ওঠা ছাড়া আমার সামনে আর কোনো উপায় ছিলো না। অফিসের বেশ কয়েকজন কলিগের বাড়িতেও গিয়ে উঠতে পারতাম, কিন্তু এতো রাতে হঠাৎ করে কারুর বাড়ি গিয়ে ওঠা মানে তাদেরকে বিব্রত করে তোলা। আমার সেটা ঠিক পছন্দ নয়। তাছাড়া আকাশ মেঘলা, ঝিরিঝিরি বৃষ্টিও পরছিলো তখন। এমনিতেই নভেম্বর মাস শেষের দিকে। তার ওপর অসময়ের বৃষ্টিতে ঠাণ্ডা আরও জাঁকিয়ে বসেছে।
তাই স্টেশন থেকে বাইরে বেড়িয়েই আমি দু’কাঁধের সাথে নিজের ও শম্পার লাগেজ দুটো ঝুলিয়ে বাইরে রাস্তায় এসে একটা দোকানের বারান্দায় উঠে দাঁড়ালাম।
আমি শম্পাকে বললাম, “শম্পা অবস্থা তো বেগতিক দেখছি। তুমি বাড়ি যাবে কি করে? ট্যাক্সি ফ্যাক্সি পাবে কি”?
শম্পা এদিক ওদিক দেখতে দেখতে বললো, “হু তাই তো দেখছি। কাউকে যে গাড়ি
নিয়ে আসতে বলবো তারও তো উপায় নেই। গাড়ি তো লক করা আছে গ্যারেজে। আর চাবিটাও ফ্ল্যাটের ভেতরে রেখে গেছি যাবার সময়। দেখি কোনো একটা ট্যাক্সি বোধ হয় পাওয়া যাবে। তা তুমি কোথায় যাচ্ছো? তুমিও তো শিলঙের গাড়ি পাচ্ছো না এখন”।
আমিও এদিক ওদিক দেখতে দেখতে বললাম, “আমার তো আর দুরে কোথাও যাবার দরকার নেই। সকালে এখান থেকেই শেয়ার ট্যাক্সি পেয়ে যাবো শিলং যাবার। তাই ভাবছি আশে পাশেই একটা হোটেলে উঠে রাতটা কাটিয়ে দেবো। কিন্তু আমি যেটা ভাবছি, এরকম ওয়েদারে তোমাকে একা একা একটা ট্যাক্সিতে উঠিয়ে পাঠিয়ে দিয়ে আমিও তো নিশ্চিন্ত থাকতে পারবো না”।
শম্পা চারপাশ দেখতে দেখতে বললো, “ আমি একটা সাজেশান দিতে পারি”?
আমি জিজ্ঞাসু চোখে তার দিকে চাইতেই শম্পা বললো, “তোমার যদি আপত্তি না থাকে তাহলে তুমি আজ রাতটা আমাদের ফ্ল্যাটেই থেকে যেতে পারো”।
আমি হা হা করে বলে উঠে বললাম, “আরে না না, তুমি আমাকে নিয়ে ব্যস্ত হয়ো না শম্পা। আমাকে কাল খুব ভোরের গাড়ি ধরে যেতে হবে। আমাকে অফিসে জয়েন করতে হবে কালই। কাল যেতে দেরী হলে আমার অফিসে জয়েন করা হবে না”।
শম্পা অবুঝের মতো বললো, “কাল তোমার কোনো সমস্যা হবে না অফিসে জয়েন করতে। আমি নিজে গাড়িতে করে তোমাকে এখানে ট্যাক্সি স্ট্যান্ডে পৌঁছে দেবো খুব সকালে। চলো না দীপ প্লীজ। তুমি আজ রাতটা অন্তত আমার কাছে কাটাও। এটা আমার জীবনের স্মরণীয় রাত হয়ে যাবে তাহলে। প্লীজ দীপ, তুমি অমত কোরোনা। অবশ্য তোমার যদি আমার মতো একটা মেয়ের সঙ্গে এক ফ্ল্যাটে থাকতে কোনো রকম প্রব্লেম থাকে, বা আমাকে তোমার খারাপ বলে মনে হয়, তাহলে আমি তোমাকে জোর করবো না”।
আমি ওর কথা শুনে ব্যতিব্যস্ত হয়ে বলে উঠলাম, “কী আশ্চর্য ! এতো বছর বাদে তোমার সাথে দেখা হওয়াতে আমার যে কতো ভালো লাগছে সে তো আজ সারাদিনে অনেক বার বলেছি তোমায় শম্পা। আর এখন যখন আমরা ছাড়াছাড়ি হতে যাচ্ছি, তখন তুমি এ কথা বলছো? আচ্ছা তুমি একবারও ভাবছো না যে তোমার স্বামীর অনুপস্থিতিতে তুমি আমাকে এতো রাতে তোমার বাড়িতে নিয়ে গেলে তোমার কোনো প্রব্লেম হতে পারে”?
শম্পা অবুঝের মতোই জবাব দিলো, “আরে বাবা আমার কী প্রব্লেম হবে সেটা তো আমি বুঝবো, আর আমিই সামলাবো। তোমায় সে নিয়ে একেবারেই ভাবতে হবে না। প্লীজ দীপ। তোমাকে পেয়ে আমার সারাটা দিন যেমন খুশীতে কেটেছে এর শেষ মুহূর্তে আমার খুশীটাকে নষ্ট করে দিও না প্লীজ”।
______________________
ss_sexy
(Upload No. 129)
আমি একটু আমতা আমতা করে বললাম, “ না মানে, আমি তো নিজে কলেজ বা কলেজ জীবনে কোনো মেয়ের সাথে কথা বলতাম না। তোমার সাথেও তাই। আজ এতোদিন পরে এমন এক বন্ধুর সাথে এই ট্রেনে বসে এমন অন্তরঙ্গ ভাবে গল্প করতে করতে আমি ভুলেই গিয়েছিলাম যে আমাদের মধ্যে সত্যি তেমন অন্তরঙ্গ সম্পর্ক তো আদৌ নেই, যার সুবাদে আমি অমন ব্যক্তিগত ব্যাপারে তোমাকে প্রশ্ন করতে পারি। আই অ্যাম রিয়েলি সরি শম্পা। যাকগে, এসব ছেড়ে বলো দেখি আমাদের ক্লাসের মেয়েরা আর কে কোথায় আছে? কারুর সঙ্গে এখনো যোগাযোগ আছে তোমার”?
শম্পা কয়েক সেকেণ্ড চুপ করে থেকে বললো, “যোগাযোগ সেভাবে কারুর সাথেই নেই। সবারই বিয়ে হয়ে গেছে। একমাত্র তপুই আছে মেঘালয়ে। ও একটা কলেজে চাকরি পেয়ে আরেক কলেজ টিচারকে বিয়ে করে ওখানেই আছে এখনো। শ্বশুর বাড়ি নর্থ বেঙ্গলে কোথাও। কিন্তু ওর বরও মেঘালয়ে আরেকটি কলেজের টিচার। ওরা দুজনেই একসাথেই আছে। এ ছাড়া আর কারুর খবর তেমন জানি না। আচ্ছা তোমার মমতার কথা মনে আছে দীপ”?
আমি বললাম, “হ্যা হ্যা, মনে আছে। ও তো আমাদের সাইন্স সেকশনেই ছিলো। মাধ্যমিকে মেঘালয়ের মধ্যে টপ ফাইভের মধ্যে ছিলো। বেশ ছোটোখাটো ফর্সা মতো ছিলো মেয়েটা। তাই না”?
শম্পা একটু অবাক হয়ে বললো, “আরে ! তোমার তো দেখছি বেশ মনে আছে ওর কথা। আমি তো ভাবতাম তুমি কোনো মেয়ের সাথে কথা যেমন বলতে না তেমনি কারুর দিকে চোখ তুলে তাকাতেও না”।
আমি একটু হেঁসে বললো, “তুমি যেমনটা ভাবছো তেমন কোনও ব্যাপার নয় শম্পা। আসলে ওর কথা মনে আছে একটা অন্য কারণে। তা ওর কথা ওঠালে কেন বলো তো”?
শম্পা ঠোঁট টিপে হেঁসে বললো, “বারে, তোমার সাথে পুরোনো বন্ধুদের কথা বলবো আর মমতার কথা উঠবে না, এ কি হতে পারে”?
আমি অবাক হয়ে বললাম, “মানে”?
শম্পা আগের মতোই ঠোঁট টিপে টিপে বললো, “তুমি তো কারুর কোনো খবর রাখোনি। কে তোমাকে পছন্দ করতো, কে তোমাকে নিয়ে স্বপ্ন দেখতো। কিন্তু আজ
দেখতে পাচ্ছি সে তোমার মনের কোণে রয়ে গেছে”।
আমি শম্পার কথা শুনে পুরোনো ঘটনা মনে করতে করতে বললাম, “আরে না শম্পা, তুমি ভুল ভাবছো। আমি বললাম না, ওকে মনে আছে আমার অন্য কারনে। আচ্ছা শোনো বলছি। আমরা যখন প্রি-ইউনিভার্সিটি সেকেণ্ড ইয়ারে পড়তাম, মমতা একদিন কেমিস্ট্রি ল্যাবরেটরিতে নিজের হাতের ওপর এসিড ফেলে দিয়েছিলো। ব্যাপারটা খুবই সিরিয়াস ছিলো, ওর হাতটা নষ্ট হয়ে যেতে পারতো সেদিন। কিন্তু আমি ঠিক পাশের সীটেই থাকাতে আমার চোখে পড়ে গিয়েছিলো ঘটনাটা। সঙ্গে সঙ্গে আমি অ্যাল্কালাইন ট্রিট দিয়ে ওর হাতটাকে নষ্ট হওয়া থেকে বাঁচাতে পেরেছিলাম।এর পর আরেক বার সেকেণ্ড ইয়ারের প্রমোশনাল টেস্টের সময় আরেকদিন জুলোজি প্রাক্টিকাল টেস্টে ডিসেক্সন করতে পারছিলো না মমতা। আমার কাছে সাহায্য চাইতে ইনভিজিলেটরের চোখ এড়িয়ে আমি নিজের ডিসেক্সনটা কমপ্লিট করে মমতার ট্রের সাথে আমার ট্রেটা বদলে দিয়ে নিজে আরেকবার ডিসেক্সন করে নিয়েছিলাম। কিন্তু ভাগ্যের পরিহাস তো তোমরা সবাই দেখতে পেয়েছো। মমতা ফার্স্ট ডিভিশন পেয়ে ফাইনাল বি এস সি তে প্রমোশন পেয়েছিলো। আর আমি পরীক্ষায় ফেল করেছিলাম। আর তারপরই আমার কলেজে পড়া শেষ হয়ে গিয়েছিলো। এখন তুমি বলো মমতার কথা আমি ভুলতে পারি”?
এবারে শম্পা অবাক হয়ে বললো, “কী বলছো তুমি দীপ? তুমি যে ব্রিলিয়ান্ট ছিলে তা তো আমরা জানতামই। আমাদের সবার ধারণা ছিলো সাইন্স সেকশনের তুমি, সুমন্ত আর মমতা তিনজনেই ফার্স্ট ডিভিশনে পাবে। তোমার রেজাল্ট খারাপ হওয়াতে আমরা সবাই খুব হতাশ হয়েছিলাম জানো? কিন্তু মমতাকে তুমি এভাবে হেল্প করেছিলে এ কথা আমরা কেউ শুনিনি। তুমি সত্যি বলছো দীপ”?
আমি মুচকি হেঁসে বললাম, “ইয়ার্কি ঠাট্টার সময় ছাড়া আমি কখনো মিথ্যে কথা বলিনা শম্পা। আর এতো বছর বাদে মিথ্যে কথা বলে কার কী লাভ হবে বলো? মেয়েটা পড়াশোনায় খুব শার্প ছিলো। আসাম ইউনিভারসিটি থেকে ফিজিক্সে ফার্স্ট ক্লাস সেকেণ্ড হয়ে মাস্টার্স করেছে শুনেছিলাম। জানিনা তারপর ও কোথায় আছে কী করছে”।
শম্পা বললো, “আমি ওর সম্পর্কে শেষ শুনেছিলাম, যখন ও মাস্টার্স করছিলো তখন কোন এক অ্যাসামিজ ছেলের সাথে নাকি প্রেম করতো। মাস্টার্স কমপ্লিট করার পর ওর আর কোনো খবর পাই নি। কিন্তু এটা কি তুমি জানতে যে মমতা তোমায় ভালোবাসতো”?
আমি খুব অবাক হয়ে বললাম, “কী বলছো তুমি শম্পা! তুমি নিশ্চয়ই আমার সঙ্গে ঠাট্টা করছো। যে মেয়েটার সাথে ওই দু’দিন ছাড়া আমি আর কখনো কোথাও কথা পর্যন্ত বলিনি, সে আমাকে ভালোবাসতো? না না, এ হতেই পারে না”।
শম্পা আমার কথা শুনে মুচকি মুচকি হাঁসতে হাঁসতে বললো, “আমি ঠাট্টা করছি না দীপ। আমি সিরিয়াসলি বলছি। তুমি না জানলেও ব্যাপারটা সত্যি। আর পরের কথাটা শুনে তুমি আরো অবাক হবে জানি”।
আমি আবারও অবাক বিস্ময়ে চোখ প্রায় কপালে তুলে বললাম, “আর কী বলবে”?
শম্পা গলাটা আরো নামিয়ে আমার কানের কাছে ঝুঁকে বললো, “তুমি যদি ওকে বিয়ে না-ও করতে তবু তোমার সাথে প্রেম করতে রাজী ছিলো ও” বলে মুচকি মুচকি হাঁসতে লাগলো।
আমার তখন চোখের সামনে ভুত দেখার মতো অবস্থা। অনেকক্ষণ বিস্ময়ে বোবা হয়ে থাকার পর বললাম, “ওহ মাই গড, এ আমি কী শুনছি? এ যে আমি স্বপ্নেও ভাবি নি”!
শম্পা কৌতুহলী সুরে জিজ্ঞেস করলো, “ও তোমাকে কোনোদিন কিছু বলেনি দীপ”?
আমার যেন অবাক হবার আর শেষ নেই। বললাম, “না তো! তোমাকে তো বললাম ওই কেমিস্ট্রি আর জুলোজি প্রাক্টিকালে ওই দুবার ছাড়া ওর সাথে আমার আর কোনোদিন কথা হয় নি। আর তুমি বলছো.....উঃ আমি সত্যি ভাবতে পারছি না”।
শম্পা এবারে খুব শান্ত গলায় বললো, “তুমি আর কবে কার খবর রাখতে? আগেই তো বললাম, শুধু মমতা কেন, আমাদের ক্লাসের অনেক মেয়েই তখন মনে মনে তোমাকে ভালোবাসতো। আমার মনেও একটা প্রশ্ন ছিলো তখন থেকেই। তুমি মেয়েদেরকে সব সময় এড়িয়ে চলতে কেন। মেয়েদের প্রতি এমন উদাসীনতা সে সময় অন্য কোনো ছেলের মধ্যে দেখিনি। আজ অবশ্য সে জবাব তোমার কাছে পেয়েছি। কিন্তু ষ্টেশনের বাইরে তোমাকে দেখেও যে চিনতে পারিনি তার একটা কারণ এটাও। আমি যে দীপকে জানতাম সে মেয়েদের কাছ থেকে সব সময় পঁচিশ গজ দুরে থাকতো, আর এখানে সে কি না একটা মেয়েকে ওভাবে অমন খোলা জায়গায়... I তাই তো একবার সন্দেহ হলেও মন থেকে সে সম্ভাবনাকে উড়িয়ে দিয়েছিলাম। তা সত্যি দীপ, আমার যেমন বাইরেটা বদলে গেছে তেমনি তোমার ভেতরের স্বভাবটাও অনেক বদলে গেছে”।
সারাটা পথ দুই পুরোনো বন্ধু মিলে বিভিন্ন ঘটনার স্মৃতি রোমন্থন করতে করতে গৌহাটি গিয়ে যখন পৌছলাম রাত তখন সাড়ে নটা। ট্রেন সাড়ে তিন ঘন্টা লেটে পৌছেছে। ট্রেন ঠিক সময়ে এলে আমি শিলং পৌঁছে যেতে পারতাম রাত দশটার মধ্যে। কিন্তু তখন আর হোটেলে ওঠা ছাড়া আমার সামনে আর কোনো উপায় ছিলো না। অফিসের বেশ কয়েকজন কলিগের বাড়িতেও গিয়ে উঠতে পারতাম, কিন্তু এতো রাতে হঠাৎ করে কারুর বাড়ি গিয়ে ওঠা মানে তাদেরকে বিব্রত করে তোলা। আমার সেটা ঠিক পছন্দ নয়। তাছাড়া আকাশ মেঘলা, ঝিরিঝিরি বৃষ্টিও পরছিলো তখন। এমনিতেই নভেম্বর মাস শেষের দিকে। তার ওপর অসময়ের বৃষ্টিতে ঠাণ্ডা আরও জাঁকিয়ে বসেছে।
তাই স্টেশন থেকে বাইরে বেড়িয়েই আমি দু’কাঁধের সাথে নিজের ও শম্পার লাগেজ দুটো ঝুলিয়ে বাইরে রাস্তায় এসে একটা দোকানের বারান্দায় উঠে দাঁড়ালাম।
আমি শম্পাকে বললাম, “শম্পা অবস্থা তো বেগতিক দেখছি। তুমি বাড়ি যাবে কি করে? ট্যাক্সি ফ্যাক্সি পাবে কি”?
শম্পা এদিক ওদিক দেখতে দেখতে বললো, “হু তাই তো দেখছি। কাউকে যে গাড়ি
নিয়ে আসতে বলবো তারও তো উপায় নেই। গাড়ি তো লক করা আছে গ্যারেজে। আর চাবিটাও ফ্ল্যাটের ভেতরে রেখে গেছি যাবার সময়। দেখি কোনো একটা ট্যাক্সি বোধ হয় পাওয়া যাবে। তা তুমি কোথায় যাচ্ছো? তুমিও তো শিলঙের গাড়ি পাচ্ছো না এখন”।
আমিও এদিক ওদিক দেখতে দেখতে বললাম, “আমার তো আর দুরে কোথাও যাবার দরকার নেই। সকালে এখান থেকেই শেয়ার ট্যাক্সি পেয়ে যাবো শিলং যাবার। তাই ভাবছি আশে পাশেই একটা হোটেলে উঠে রাতটা কাটিয়ে দেবো। কিন্তু আমি যেটা ভাবছি, এরকম ওয়েদারে তোমাকে একা একা একটা ট্যাক্সিতে উঠিয়ে পাঠিয়ে দিয়ে আমিও তো নিশ্চিন্ত থাকতে পারবো না”।
শম্পা চারপাশ দেখতে দেখতে বললো, “ আমি একটা সাজেশান দিতে পারি”?
আমি জিজ্ঞাসু চোখে তার দিকে চাইতেই শম্পা বললো, “তোমার যদি আপত্তি না থাকে তাহলে তুমি আজ রাতটা আমাদের ফ্ল্যাটেই থেকে যেতে পারো”।
আমি হা হা করে বলে উঠে বললাম, “আরে না না, তুমি আমাকে নিয়ে ব্যস্ত হয়ো না শম্পা। আমাকে কাল খুব ভোরের গাড়ি ধরে যেতে হবে। আমাকে অফিসে জয়েন করতে হবে কালই। কাল যেতে দেরী হলে আমার অফিসে জয়েন করা হবে না”।
শম্পা অবুঝের মতো বললো, “কাল তোমার কোনো সমস্যা হবে না অফিসে জয়েন করতে। আমি নিজে গাড়িতে করে তোমাকে এখানে ট্যাক্সি স্ট্যান্ডে পৌঁছে দেবো খুব সকালে। চলো না দীপ প্লীজ। তুমি আজ রাতটা অন্তত আমার কাছে কাটাও। এটা আমার জীবনের স্মরণীয় রাত হয়ে যাবে তাহলে। প্লীজ দীপ, তুমি অমত কোরোনা। অবশ্য তোমার যদি আমার মতো একটা মেয়ের সঙ্গে এক ফ্ল্যাটে থাকতে কোনো রকম প্রব্লেম থাকে, বা আমাকে তোমার খারাপ বলে মনে হয়, তাহলে আমি তোমাকে জোর করবো না”।
আমি ওর কথা শুনে ব্যতিব্যস্ত হয়ে বলে উঠলাম, “কী আশ্চর্য ! এতো বছর বাদে তোমার সাথে দেখা হওয়াতে আমার যে কতো ভালো লাগছে সে তো আজ সারাদিনে অনেক বার বলেছি তোমায় শম্পা। আর এখন যখন আমরা ছাড়াছাড়ি হতে যাচ্ছি, তখন তুমি এ কথা বলছো? আচ্ছা তুমি একবারও ভাবছো না যে তোমার স্বামীর অনুপস্থিতিতে তুমি আমাকে এতো রাতে তোমার বাড়িতে নিয়ে গেলে তোমার কোনো প্রব্লেম হতে পারে”?
শম্পা অবুঝের মতোই জবাব দিলো, “আরে বাবা আমার কী প্রব্লেম হবে সেটা তো আমি বুঝবো, আর আমিই সামলাবো। তোমায় সে নিয়ে একেবারেই ভাবতে হবে না। প্লীজ দীপ। তোমাকে পেয়ে আমার সারাটা দিন যেমন খুশীতে কেটেছে এর শেষ মুহূর্তে আমার খুশীটাকে নষ্ট করে দিও না প্লীজ”।
______________________
ss_sexy