08-07-2020, 09:11 PM
(ঞ) আমার মা হওয়া।
(Upload No. 128)
শম্পা একটু পাশ ফিরে আমার অনেকটা মুখোমুখি বসতেই আমি গলার স্বরটাকে আয়ত্তে রেখে বললাম, “আমার স্ত্রীর আরেক বান্ধবী, সৌমী। মেয়েটার বিয়ে হয়েছে বছর খানেক আগে। ভালো ছেলে দেখেই সম্মন্ধ করে ওর বাবা মা বিয়ে দিয়ে ছিলেন। আমরা তো পড়ে থাকতাম সেই মেঘালয়ে। তাই ওর সাথে যোগাযোগ একেবারেই হয় নি। আজ এই ষ্টেশনে আসতে আসতে বিদিশা, মানে যাকে তুমি আমার সাথে দেখেছো, সে জানালো ওই মেয়েটার জীবনটা বিয়ের পর সুখের হয় নি। বিয়ের ছ’মাসের মধ্যেই ও জানতে পারে যে ওর স্বামীর অনেক বদ অভ্যেস আছে। মদ আর মেয়ে মানুষ ছাড়া সে নাকি একটা দিনও থাকতে পারে না। তার স্ত্রী যথেষ্ট সুন্দরী হলেও বাইরের মেয়ে মানুষ নিয়েই নাকি তার দৈনন্দিন জীবন কাটে। এরা হচ্ছে আমার স্ত্রীর চার ছোটোবেলার বান্ধবী। আমার বিয়ের সময় বাকি তিনজনেই তখন অবিবাহিতা ছিলো। আমার বিয়ের আগেই, যখন মেয়ে দেখতে এসেছিলাম, তখন থেকেই এদের সবার সাথে আমার বন্ধুত্ব হয়ে গিয়েছিলো। এরা সবাই আমার স্ত্রীর মতোই সরল এবং খোলামেলা স্বভাবের। আমার সাথেও বাকি তিনজনের খুবই আন্তরিক সম্পর্ক। এদের চার বান্ধবীদের মধ্যে অবশ্য শুধু বিদিশাই বিয়ে করেনি এখনও। বিদিশার মুখে ওর এসব কথা শুনে আমার মনটা সত্যি খুব ভারী হয়ে গিয়েছিলো। বিদিশারও কান্না পেয়ে গিয়েছিলো। আমি চিন্তায় পড়ে গিয়েছিলাম ও একা একা ড্রাইভ করে ঠিকমতো ফিরতে পারবে কি না। তখনই ও অমন বায়না ধরে বসলো। আমার স্ত্রী সঙ্গে থাকলেও আমি সেটা করতাম। কিন্তু স্ত্রী সঙ্গে ছিলোনা বলে আমি ওকে ফিরিয়ে দিতে পারিনি। আমার স্ত্রী থাকলে ও নিজেই আমাকে সেটা করতে বলতো। কাল সারাটা দিন আমরা তিনজনে একসাথে কাটিয়েছি। আমিও সেটা না করলে সারাটা রাস্তা ধরে মনটা খচখচ করতো আমার। তাই অমনটা করেছি”।
আমি এইটুকু বলে থামতে শম্পাও বেশ কিছুক্ষণ চুপ করে থাকার পর বললো, “সত্যি এমন কাছের কারুর জীবনে যদি এমন ঘটনা ঘটে সেটা বুকে বড় বেশী করে বাজে গো। আমিতো মেয়েটাকে চিনিই না, তবু তোমার মুখে একথা শুনে আমারও মনটা খুব খারাপ হয়ে গেলো দীপ। কিন্তু কী করবে বলো, যার কপালে যা লিখে দিয়েছেন বিধাতা, সে আর কে খণ্ডাবে বলো? শুধু ঈশ্বরের কাছে মিনতি জানাই ওর দুঃখের দিন যেন খুব তাড়াতাড়ি শেষ হয়ে যায়”।
আমিও ভাঙা ভাঙা গলায় বললাম, “আমিও ঠিক এই কথাটাই বিদিশাকে বললাম। এর চেয়ে বেশী তো আর কিছু করার নেই আমাদের। তোমার মতো অজানা অচেনা একটা মেয়ের শুভেচ্ছা যেন ওর কাছে গিয়ে পৌঁছয়” I একটু থেমে আমি আবার বললাম, “তোমার সাথে আজ যদি এখানে দেখা না হতো তাহলে সারাটা রাস্তা সৌমীর কথা ভাবতে ভাবতেই ভারাক্রান্ত মন নিয়েই শিলং পর্যন্ত যেতে হতো আমাকে”।
শম্পা প্রসঙ্গ পাল্টে বললো, “তোমার বৌয়ের ছবি দেখে আর এমন মিষ্টি স্বভাবের কথা শুনে, আর সেই সঙ্গে তার বান্ধবীদের কথা শুনে তোমার বউকে খুব দেখতে ইচ্ছে করছে দীপ। আমার সাথে যোগাযোগ রাখবে? তোমার বউ ফিরে এলে আমি ওর সাথে দেখা করতে চাই। অবশ্য তোমার যদি আপত্তি না থাকে”।
আমি চট করে বললাম, “আরে আপত্তির কথা উঠছে কোথায়? সতী নিজেও আমাকে অনেকদিন বলেছে যে আমার সঙ্গে পড়া মেয়েদেরকে দেখতে ওর খুব ইচ্ছে করে। কিন্তু তুমি তো জানোই বাণী বাদে আর কোনো মেয়ের সাথেই আমার আলাপ ছিলোনা কলেজ জীবনে। বাণীরও বিয়ে হয়ে গেছে। ও এখন শুনেছি আগরতলায় আছে। আর তাছাড়া এতদিন বাদে কে কোথায় আছে সে তো আমার নিজেরই জানা নেই। তোমায় দেখে সতীও খুব খুশী হবে। কিন্তু এখন তো তোমাকে ও সতীকে দুজনকেই মাস তিন চার অপেক্ষা করতেই হবে। সব কিছু ভালোয় ভালোয় মিটে গেলে ওকে নিয়ে আসবার সাথে সাথেই তোমাকে খবর দেবো। তুমি তোমার কন্টাক্ট নাম্বার থাকলে আমাকে দিয়ে দাও এখুনি। আমি নোট করে নিচ্ছি। শিলঙে আমাদের বাড়িতে কোনো টেলিফোন নিইনি। কারণ খুব বেশীদিন বোধহয় শিলঙে থাকাও হবে না। শুনতে পাচ্ছি খুব শিগগীরই নাকি আমার গৌহাটিতে ট্রান্সফার করার একটা সম্ভাবনা আছে। তাই ভেবেছি, মাস ছয়েকের মধ্যে আর ফোন কানেকশন নিচ্ছি না। তবে তোমাকে আমার অফিসের ফোন নাম্বারটা দিয়ে যাচ্ছি। অফিস টাইমে আমাকে সে নাম্বারে পাবে। অবশ্য যদি ছুটিতে না থাকি আর যদি অন্যত্র ট্রান্সফার না হয়ে যাই” বলে পকেট থেকে নোট বুক বের করে একটা কাগজে ফোন নাম্বার লিখে শম্পাকে দিয়ে, শম্পার বাড়ির ফোন নাম্বারটা নোট বুকে লিখে নিয়ে বললাম, “সত্যি, এতদিন বাদে তোমাকে দেখে আমার যে কী ভালো লাগছে, সে তোমায় আমি বলে বোঝাতে পারছি না শম্পা”।
আমি পরিপূর্ণ দৃষ্টি মেলে শম্পার দিকে দেখতে দেখতে বললাম, “এতক্ষণ শুধু আমার কথাই বলে গেলাম। এবার তোমার কথা কিছু বলো শুনি। যদিও তোমার মুখ দেখে বুঝতে পারছি তুমি বেশ সুখেই আছো। কিন্তু সবার আগে বলো তুমি নিজের আগের চেহারার এমন আমূল পরিবর্তন কী করে করে ফেললে? আমি তো তোমাকে চিনতেই পারিনি। আর আমার বিশ্বাস আমার পুরোনো বন্ধুরা কেউই তোমাকে চিনতে পারবে না। কী করে সম্ভব করলে এমনটা”?
শম্পা একটু হেঁসে বললো, “মানে তুমি বলতে চাইছো কালো কুৎসিত সেই রোগা পাতলা মেয়েটা যার দিকে কোনো ছেলে তাকাতে চাইতো না, তাই না” ?
আমি একটু অপ্রস্তুত হয়ে আমতা আমতা করে বললাম, “ না না, ছি ছি শম্পা। আমি কিন্তু সত্যি......”
শম্পা আবার নিষ্পাপ হাঁসি হেঁসে বললো, “আরে এতো অপ্রস্তুত হবার কী আছে দীপ? এটাই তো সত্যি, তাই না? তখন আমার যে চেহারা ছিল তাতে নিজের প্রতি আমার নিজেরই বিতৃষ্ণা এসে গিয়েছিলো। আমাদের ক্লাসে সবাই আমার চেয়ে সুন্দরী ছিলো। আমি তো ছার, তুমি তো তাদের দিকেও তাকাতে না। কিন্তু আজ তুমি আমার পাশে বসে আছো, এটা ভেবেই ভগবানকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। এমন যে কোনোদিন হতে পারে, এতো স্বপ্নেও ভাবিনি আমি” I
কিছুটা দম নিয়ে শম্পা আবার বললো, “শোনো, বলছি আমার রূপান্তরের গল্প। বিএসসি ফাইনাল দেবার পর বাবা মার সাথে ঘুরতে গিয়েছিলাম সিমলা। সেখানে গিয়ে বাবার এক দুর সম্পর্কের বোনের সাথে দেখা হয়। বাবার সাথে বহু বছর তার যোগাযোগ ছিলোনা। তিনি পেশায় একজন বিউটিসিয়ান। সিমলা থেকে যখন আমাদের ফিরে আসার কথা, তখন পিসি নিজেই আগ্রহ করে বাবা মার সাথে পরামর্শ করে আমাকে রেখে দিলেন তার কাছে। পিসির খুব অন্তরঙ্গ আরেক ক্লায়েন্ট ছিলো যিনি পেশায় ছিলেন এক জিম ইন্সট্রাক্টার। নিজের চিকিৎসার সাথে সাথে পিসি তার সেই জিন ইন্সট্রাক্টার বন্ধুর কাছেও আমাকে পাঠাতে শুরু করলেন। দিন পনেরো যেতে না যেতেই আমি নিজের মধ্যে পরিবর্তন দেখতে পেলাম। ছ’মাসেই তার পরিচর্যায় আর সিমলার আবহাওয়ায় আমার চেহারা আমূল বদলে গেলো। ছ’মাস বাদে যখন বাড়ি ফিরে এলাম তখন বাবা মাও আমাকে চিনতে পারেনি”।
এতোটা বলে শম্পা থামলো। তারপর সুন্দর করে হেঁসে বললো, “এই হলো আমার কায়া পাল্টানোর গল্প। এর পর রমেণের প্রেমে পরলাম”।
এটুকু বলেই শম্পা বেশ শব্দ করে হেঁসে উঠলো। আশে পাশের যাত্রীরাও শম্পার দিকে তাকাতে শম্পা নিজেকে সামলে নিয়ে হঠাৎ নিজের পার্স খুলে দুটো ক্যাডবেরির প্যাকেট বের করে একটা আমার হাতে দিয়ে বললো, “এটা ধরো। একটু পরে বলছি। সবার অ্যাটেনশন এখন এদিকে”।
শম্পার হাত থেকে ক্যাডবেরি নিয়ে দীপ মুখে পুরলো। একটু বাদে নিজের ওপর থেকে অন্যান্য সহযাত্রীদের চোখ সরে যেতে শম্পা আবার বলতে লাগলো, “যে মেয়েটার দিকে আগে কোনো ছেলে দ্বিতীয় বার তাকিয়ে দেখতো না, সিমলা থেকে ফেরার পর সে দেখতে পেলো চেনা অচেনা সবাই বার বার তার দিকে তাকাচ্ছে। যেখানেই গেছি সেখানেই দেখেছি ছোট বড় সব বয়সের পুরুষদের লালসার দৃষ্টি আমার সারা শরীরের ওপর ঘুরে বেড়াতো। এক বছর আগেও যেসব ছেলেদের সামনে দিয়ে যাবার সময় তারা একনজর আমার দিকে দেখেই মুখ ঘুড়িয়ে নিতো তারাই বছর ঘুরতে না ঘুরতেই পেছনে আমার অস্তিত্ব বুঝতে পেরে বার বার পেছন ফিরে আমার দিকে দেখতে শুরু করলো। ব্যাপারটা আমি বেশ উপভোগ করছিলাম সেই দিনগুলোতে। অনেক ছেলেই আমাকে প্রেম নিবেদন করতে শুরু করলো। কিন্তু আমার মনে যার ছবি এঁকে নিয়েছিলাম আরো অনেক আগে, জেগে ঘুমিয়ে যাকে নিয়ে স্বপ্ন দেখতাম তার আর দেখা পেলাম না। বিয়ের বয়স পেরিয়ে যাচ্ছে দেখে বাবা মার পছন্দ করা রমেণের সাথেই গাঁটছড়া বাঁধলাম বছর পাঁচেক আগে। অবশ্য বিয়ে করার আগে বছর খানেক প্রেম করে নিয়েছি। ওর বোনের বিয়ে না দিয়ে নিজে বিয়ে করতে চায় নি। বিয়ের সময় রমেণ মেঘালয়েই ছিলো। গৌহাটিতে বদলি হয়ে এসেছি বছর দুয়েক। লাচিত নগরে একটা ফ্ল্যাটও কিনেছি আমরা ছ’ সাত মাস আগে। তারপর থেকে নিজের ফ্ল্যাটেই আছি স্বামীকে নিয়ে। মোটামুটি এই। আর ওহ, একটা পয়েন্ট বাকী রয়ে গেছে, তাই না? বাচ্চা নিতে চাইছি এখন আমরা দুজনেই। কিন্তু এখনো কিছু হয় নি। আশায় আছি। ব্যস, আমার গল্প শেষ”।
আমি এতক্ষণ মন দিয়ে শম্পার কথা শুনছিলাম। ও থামতেই বলে উঠলাম, “বাঃ, সত্যি শম্পা তোমার গল্প শুনে খুব ভালো লাগলো” বলে মনে মনে আরো একটু কি ভেবে বললাম, “তবে শম্পা, তোমার ওই পিসি কিন্তু বলতে গেলে তোমার নবজন্ম দিয়েছেন”।
শম্পা মিষ্টি হেঁসে বললো, “একেবারে সত্যি কথা বলেছো তুমি দীপ। তারপর থেকে ওই পিসিকে আমি মামনি বলে ডাকি” I মাথা নিচু করে কিছু সময় বাদে আবার বললো, “সে পিসিকে না পেলে আমার জীবনটা যে কোন পথে যেতো, তা ভেবে এখনো আমি শিউরে উঠি”।
আমি খুব খুশী হয়ে বললাম, “পুরোনো বন্ধুরা কেউ ভালো আছে শুনলে নিজেরও সুখ হয়। ট্রেনে উঠে তোমাকে পেয়ে আর তোমার কথা শুনে আমার সত্যি খুব আনন্দ হচ্ছে। তোমার সাথে দেখা না হলে সারাটা রাস্তা আমাকে মন ভারী করে মুখ বুজে কাটাতে হতো। কিন্তু শেষ একটা কথা যা আমার জানতে ইচ্ছে করছে সেটা তুমি উহ্যই রেখে গেছো। ব্যাপারটা একটু বেশী ব্যক্তিগত। তাই মুখ ফুটে তোমাকে জিজ্ঞেসও করতে পারছি নে”।
শম্পা তার সুন্দর ভ্রূ দুটো ওপরে উঠিয়ে বললো, “বারে, এতো বছরে কতো কীই তো হয়েছে জীবনে, তোমার কৌতুহল মেটাতে যেটুকু বলে দরকার ছিলো তা তো প্রায় মোটামুটি সবই বললাম। তুমি এবারে ঠিক কোন কথা জানতে চাইছো বলো তো”?
______________________________
ss_Sexy
(Upload No. 128)
শম্পা একটু পাশ ফিরে আমার অনেকটা মুখোমুখি বসতেই আমি গলার স্বরটাকে আয়ত্তে রেখে বললাম, “আমার স্ত্রীর আরেক বান্ধবী, সৌমী। মেয়েটার বিয়ে হয়েছে বছর খানেক আগে। ভালো ছেলে দেখেই সম্মন্ধ করে ওর বাবা মা বিয়ে দিয়ে ছিলেন। আমরা তো পড়ে থাকতাম সেই মেঘালয়ে। তাই ওর সাথে যোগাযোগ একেবারেই হয় নি। আজ এই ষ্টেশনে আসতে আসতে বিদিশা, মানে যাকে তুমি আমার সাথে দেখেছো, সে জানালো ওই মেয়েটার জীবনটা বিয়ের পর সুখের হয় নি। বিয়ের ছ’মাসের মধ্যেই ও জানতে পারে যে ওর স্বামীর অনেক বদ অভ্যেস আছে। মদ আর মেয়ে মানুষ ছাড়া সে নাকি একটা দিনও থাকতে পারে না। তার স্ত্রী যথেষ্ট সুন্দরী হলেও বাইরের মেয়ে মানুষ নিয়েই নাকি তার দৈনন্দিন জীবন কাটে। এরা হচ্ছে আমার স্ত্রীর চার ছোটোবেলার বান্ধবী। আমার বিয়ের সময় বাকি তিনজনেই তখন অবিবাহিতা ছিলো। আমার বিয়ের আগেই, যখন মেয়ে দেখতে এসেছিলাম, তখন থেকেই এদের সবার সাথে আমার বন্ধুত্ব হয়ে গিয়েছিলো। এরা সবাই আমার স্ত্রীর মতোই সরল এবং খোলামেলা স্বভাবের। আমার সাথেও বাকি তিনজনের খুবই আন্তরিক সম্পর্ক। এদের চার বান্ধবীদের মধ্যে অবশ্য শুধু বিদিশাই বিয়ে করেনি এখনও। বিদিশার মুখে ওর এসব কথা শুনে আমার মনটা সত্যি খুব ভারী হয়ে গিয়েছিলো। বিদিশারও কান্না পেয়ে গিয়েছিলো। আমি চিন্তায় পড়ে গিয়েছিলাম ও একা একা ড্রাইভ করে ঠিকমতো ফিরতে পারবে কি না। তখনই ও অমন বায়না ধরে বসলো। আমার স্ত্রী সঙ্গে থাকলেও আমি সেটা করতাম। কিন্তু স্ত্রী সঙ্গে ছিলোনা বলে আমি ওকে ফিরিয়ে দিতে পারিনি। আমার স্ত্রী থাকলে ও নিজেই আমাকে সেটা করতে বলতো। কাল সারাটা দিন আমরা তিনজনে একসাথে কাটিয়েছি। আমিও সেটা না করলে সারাটা রাস্তা ধরে মনটা খচখচ করতো আমার। তাই অমনটা করেছি”।
আমি এইটুকু বলে থামতে শম্পাও বেশ কিছুক্ষণ চুপ করে থাকার পর বললো, “সত্যি এমন কাছের কারুর জীবনে যদি এমন ঘটনা ঘটে সেটা বুকে বড় বেশী করে বাজে গো। আমিতো মেয়েটাকে চিনিই না, তবু তোমার মুখে একথা শুনে আমারও মনটা খুব খারাপ হয়ে গেলো দীপ। কিন্তু কী করবে বলো, যার কপালে যা লিখে দিয়েছেন বিধাতা, সে আর কে খণ্ডাবে বলো? শুধু ঈশ্বরের কাছে মিনতি জানাই ওর দুঃখের দিন যেন খুব তাড়াতাড়ি শেষ হয়ে যায়”।
আমিও ভাঙা ভাঙা গলায় বললাম, “আমিও ঠিক এই কথাটাই বিদিশাকে বললাম। এর চেয়ে বেশী তো আর কিছু করার নেই আমাদের। তোমার মতো অজানা অচেনা একটা মেয়ের শুভেচ্ছা যেন ওর কাছে গিয়ে পৌঁছয়” I একটু থেমে আমি আবার বললাম, “তোমার সাথে আজ যদি এখানে দেখা না হতো তাহলে সারাটা রাস্তা সৌমীর কথা ভাবতে ভাবতেই ভারাক্রান্ত মন নিয়েই শিলং পর্যন্ত যেতে হতো আমাকে”।
শম্পা প্রসঙ্গ পাল্টে বললো, “তোমার বৌয়ের ছবি দেখে আর এমন মিষ্টি স্বভাবের কথা শুনে, আর সেই সঙ্গে তার বান্ধবীদের কথা শুনে তোমার বউকে খুব দেখতে ইচ্ছে করছে দীপ। আমার সাথে যোগাযোগ রাখবে? তোমার বউ ফিরে এলে আমি ওর সাথে দেখা করতে চাই। অবশ্য তোমার যদি আপত্তি না থাকে”।
আমি চট করে বললাম, “আরে আপত্তির কথা উঠছে কোথায়? সতী নিজেও আমাকে অনেকদিন বলেছে যে আমার সঙ্গে পড়া মেয়েদেরকে দেখতে ওর খুব ইচ্ছে করে। কিন্তু তুমি তো জানোই বাণী বাদে আর কোনো মেয়ের সাথেই আমার আলাপ ছিলোনা কলেজ জীবনে। বাণীরও বিয়ে হয়ে গেছে। ও এখন শুনেছি আগরতলায় আছে। আর তাছাড়া এতদিন বাদে কে কোথায় আছে সে তো আমার নিজেরই জানা নেই। তোমায় দেখে সতীও খুব খুশী হবে। কিন্তু এখন তো তোমাকে ও সতীকে দুজনকেই মাস তিন চার অপেক্ষা করতেই হবে। সব কিছু ভালোয় ভালোয় মিটে গেলে ওকে নিয়ে আসবার সাথে সাথেই তোমাকে খবর দেবো। তুমি তোমার কন্টাক্ট নাম্বার থাকলে আমাকে দিয়ে দাও এখুনি। আমি নোট করে নিচ্ছি। শিলঙে আমাদের বাড়িতে কোনো টেলিফোন নিইনি। কারণ খুব বেশীদিন বোধহয় শিলঙে থাকাও হবে না। শুনতে পাচ্ছি খুব শিগগীরই নাকি আমার গৌহাটিতে ট্রান্সফার করার একটা সম্ভাবনা আছে। তাই ভেবেছি, মাস ছয়েকের মধ্যে আর ফোন কানেকশন নিচ্ছি না। তবে তোমাকে আমার অফিসের ফোন নাম্বারটা দিয়ে যাচ্ছি। অফিস টাইমে আমাকে সে নাম্বারে পাবে। অবশ্য যদি ছুটিতে না থাকি আর যদি অন্যত্র ট্রান্সফার না হয়ে যাই” বলে পকেট থেকে নোট বুক বের করে একটা কাগজে ফোন নাম্বার লিখে শম্পাকে দিয়ে, শম্পার বাড়ির ফোন নাম্বারটা নোট বুকে লিখে নিয়ে বললাম, “সত্যি, এতদিন বাদে তোমাকে দেখে আমার যে কী ভালো লাগছে, সে তোমায় আমি বলে বোঝাতে পারছি না শম্পা”।
আমি পরিপূর্ণ দৃষ্টি মেলে শম্পার দিকে দেখতে দেখতে বললাম, “এতক্ষণ শুধু আমার কথাই বলে গেলাম। এবার তোমার কথা কিছু বলো শুনি। যদিও তোমার মুখ দেখে বুঝতে পারছি তুমি বেশ সুখেই আছো। কিন্তু সবার আগে বলো তুমি নিজের আগের চেহারার এমন আমূল পরিবর্তন কী করে করে ফেললে? আমি তো তোমাকে চিনতেই পারিনি। আর আমার বিশ্বাস আমার পুরোনো বন্ধুরা কেউই তোমাকে চিনতে পারবে না। কী করে সম্ভব করলে এমনটা”?
শম্পা একটু হেঁসে বললো, “মানে তুমি বলতে চাইছো কালো কুৎসিত সেই রোগা পাতলা মেয়েটা যার দিকে কোনো ছেলে তাকাতে চাইতো না, তাই না” ?
আমি একটু অপ্রস্তুত হয়ে আমতা আমতা করে বললাম, “ না না, ছি ছি শম্পা। আমি কিন্তু সত্যি......”
শম্পা আবার নিষ্পাপ হাঁসি হেঁসে বললো, “আরে এতো অপ্রস্তুত হবার কী আছে দীপ? এটাই তো সত্যি, তাই না? তখন আমার যে চেহারা ছিল তাতে নিজের প্রতি আমার নিজেরই বিতৃষ্ণা এসে গিয়েছিলো। আমাদের ক্লাসে সবাই আমার চেয়ে সুন্দরী ছিলো। আমি তো ছার, তুমি তো তাদের দিকেও তাকাতে না। কিন্তু আজ তুমি আমার পাশে বসে আছো, এটা ভেবেই ভগবানকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। এমন যে কোনোদিন হতে পারে, এতো স্বপ্নেও ভাবিনি আমি” I
কিছুটা দম নিয়ে শম্পা আবার বললো, “শোনো, বলছি আমার রূপান্তরের গল্প। বিএসসি ফাইনাল দেবার পর বাবা মার সাথে ঘুরতে গিয়েছিলাম সিমলা। সেখানে গিয়ে বাবার এক দুর সম্পর্কের বোনের সাথে দেখা হয়। বাবার সাথে বহু বছর তার যোগাযোগ ছিলোনা। তিনি পেশায় একজন বিউটিসিয়ান। সিমলা থেকে যখন আমাদের ফিরে আসার কথা, তখন পিসি নিজেই আগ্রহ করে বাবা মার সাথে পরামর্শ করে আমাকে রেখে দিলেন তার কাছে। পিসির খুব অন্তরঙ্গ আরেক ক্লায়েন্ট ছিলো যিনি পেশায় ছিলেন এক জিম ইন্সট্রাক্টার। নিজের চিকিৎসার সাথে সাথে পিসি তার সেই জিন ইন্সট্রাক্টার বন্ধুর কাছেও আমাকে পাঠাতে শুরু করলেন। দিন পনেরো যেতে না যেতেই আমি নিজের মধ্যে পরিবর্তন দেখতে পেলাম। ছ’মাসেই তার পরিচর্যায় আর সিমলার আবহাওয়ায় আমার চেহারা আমূল বদলে গেলো। ছ’মাস বাদে যখন বাড়ি ফিরে এলাম তখন বাবা মাও আমাকে চিনতে পারেনি”।
এতোটা বলে শম্পা থামলো। তারপর সুন্দর করে হেঁসে বললো, “এই হলো আমার কায়া পাল্টানোর গল্প। এর পর রমেণের প্রেমে পরলাম”।
এটুকু বলেই শম্পা বেশ শব্দ করে হেঁসে উঠলো। আশে পাশের যাত্রীরাও শম্পার দিকে তাকাতে শম্পা নিজেকে সামলে নিয়ে হঠাৎ নিজের পার্স খুলে দুটো ক্যাডবেরির প্যাকেট বের করে একটা আমার হাতে দিয়ে বললো, “এটা ধরো। একটু পরে বলছি। সবার অ্যাটেনশন এখন এদিকে”।
শম্পার হাত থেকে ক্যাডবেরি নিয়ে দীপ মুখে পুরলো। একটু বাদে নিজের ওপর থেকে অন্যান্য সহযাত্রীদের চোখ সরে যেতে শম্পা আবার বলতে লাগলো, “যে মেয়েটার দিকে আগে কোনো ছেলে দ্বিতীয় বার তাকিয়ে দেখতো না, সিমলা থেকে ফেরার পর সে দেখতে পেলো চেনা অচেনা সবাই বার বার তার দিকে তাকাচ্ছে। যেখানেই গেছি সেখানেই দেখেছি ছোট বড় সব বয়সের পুরুষদের লালসার দৃষ্টি আমার সারা শরীরের ওপর ঘুরে বেড়াতো। এক বছর আগেও যেসব ছেলেদের সামনে দিয়ে যাবার সময় তারা একনজর আমার দিকে দেখেই মুখ ঘুড়িয়ে নিতো তারাই বছর ঘুরতে না ঘুরতেই পেছনে আমার অস্তিত্ব বুঝতে পেরে বার বার পেছন ফিরে আমার দিকে দেখতে শুরু করলো। ব্যাপারটা আমি বেশ উপভোগ করছিলাম সেই দিনগুলোতে। অনেক ছেলেই আমাকে প্রেম নিবেদন করতে শুরু করলো। কিন্তু আমার মনে যার ছবি এঁকে নিয়েছিলাম আরো অনেক আগে, জেগে ঘুমিয়ে যাকে নিয়ে স্বপ্ন দেখতাম তার আর দেখা পেলাম না। বিয়ের বয়স পেরিয়ে যাচ্ছে দেখে বাবা মার পছন্দ করা রমেণের সাথেই গাঁটছড়া বাঁধলাম বছর পাঁচেক আগে। অবশ্য বিয়ে করার আগে বছর খানেক প্রেম করে নিয়েছি। ওর বোনের বিয়ে না দিয়ে নিজে বিয়ে করতে চায় নি। বিয়ের সময় রমেণ মেঘালয়েই ছিলো। গৌহাটিতে বদলি হয়ে এসেছি বছর দুয়েক। লাচিত নগরে একটা ফ্ল্যাটও কিনেছি আমরা ছ’ সাত মাস আগে। তারপর থেকে নিজের ফ্ল্যাটেই আছি স্বামীকে নিয়ে। মোটামুটি এই। আর ওহ, একটা পয়েন্ট বাকী রয়ে গেছে, তাই না? বাচ্চা নিতে চাইছি এখন আমরা দুজনেই। কিন্তু এখনো কিছু হয় নি। আশায় আছি। ব্যস, আমার গল্প শেষ”।
আমি এতক্ষণ মন দিয়ে শম্পার কথা শুনছিলাম। ও থামতেই বলে উঠলাম, “বাঃ, সত্যি শম্পা তোমার গল্প শুনে খুব ভালো লাগলো” বলে মনে মনে আরো একটু কি ভেবে বললাম, “তবে শম্পা, তোমার ওই পিসি কিন্তু বলতে গেলে তোমার নবজন্ম দিয়েছেন”।
শম্পা মিষ্টি হেঁসে বললো, “একেবারে সত্যি কথা বলেছো তুমি দীপ। তারপর থেকে ওই পিসিকে আমি মামনি বলে ডাকি” I মাথা নিচু করে কিছু সময় বাদে আবার বললো, “সে পিসিকে না পেলে আমার জীবনটা যে কোন পথে যেতো, তা ভেবে এখনো আমি শিউরে উঠি”।
আমি খুব খুশী হয়ে বললাম, “পুরোনো বন্ধুরা কেউ ভালো আছে শুনলে নিজেরও সুখ হয়। ট্রেনে উঠে তোমাকে পেয়ে আর তোমার কথা শুনে আমার সত্যি খুব আনন্দ হচ্ছে। তোমার সাথে দেখা না হলে সারাটা রাস্তা আমাকে মন ভারী করে মুখ বুজে কাটাতে হতো। কিন্তু শেষ একটা কথা যা আমার জানতে ইচ্ছে করছে সেটা তুমি উহ্যই রেখে গেছো। ব্যাপারটা একটু বেশী ব্যক্তিগত। তাই মুখ ফুটে তোমাকে জিজ্ঞেসও করতে পারছি নে”।
শম্পা তার সুন্দর ভ্রূ দুটো ওপরে উঠিয়ে বললো, “বারে, এতো বছরে কতো কীই তো হয়েছে জীবনে, তোমার কৌতুহল মেটাতে যেটুকু বলে দরকার ছিলো তা তো প্রায় মোটামুটি সবই বললাম। তুমি এবারে ঠিক কোন কথা জানতে চাইছো বলো তো”?
______________________________
ss_Sexy