08-07-2020, 09:09 PM
(ঞ) আমার মা হওয়া।
(Upload No. 127)
দু’নম্বর প্লাটফর্মে কামরূপ এক্সপ্রেস দাঁড়িয়ে ছিলো। আমি নিজের রিজার্ভড সীট খুঁজে নিয়ে হকারের কাছ থেকে একটা খবরের কাগজ নিয়ে সীটে বসে চোখ বুলাতে লাগলাম। মিনিট খানেক পরেই শ্যাম বর্ণা চুড়িদার পড়া এক মহিলা পাশের সীটে এসে বসেই আমার মুখের দিকে অবাক চোখে অনেকক্ষণ তাকিয়ে থেকে জিজ্ঞেস করলো, “আরে, বিশ্বদীপ না”?
আমি আশ্চর্য হয়ে মহিলার দিকে অপ্রস্তুত ভাবে চেয়ে বললাম, “হ্যা.... কিন্তু মাফ করবেন, আমি কিন্তু আপনাকে ঠিক......”
মহিলা নিজের চোখ থেকে চশমাটা খুলতে খুলতে বললো, “কি? চিনতে কষ্ট হচ্ছে? অবশ্য তুমি কবেই বা আমার মুখের দিকে তাকিয়ে দেখেছো”!
আমি ভদ্রমহিলার মুখের দিকে একটু সময় দেখে নিয়েও ঠিক চিনতে পারলাম না। কিন্তু তার মুখটা আমার বেশ পরিচিত মনে হচ্ছিলো। মনে হচ্ছিলো বেশ কিছুদিন আগে ভদ্রমহিলাকে কোথায় যেন দেখেছি! আর সেটা একদিনের দেখা নয়। অনেক দিন অনেক বার মেয়েটাকে দেখেছি। কিন্তু ঠিক কিছুতেই মনে করতে পারছিলাম না। আমি অসহায়ের মতো বলে উঠলাম, “আই এম সরি, ম্যাডাম। মনে হচ্ছে কোথায় যেন দেখেছি, কিন্তু সত্যি আপনাকে সঠিক চিনতে পারছি না”।
ভদ্রমহিলা এবারে মিষ্টি করে হেঁসে বললো, “আরে আমি শম্পা। শম্পা ভৌমিক। আমরা একসাথে কলেজে পড়তাম। একেবারেই চিনতে পারছো না”?
নামটা শুনেই আমি চিনতে পারলাম। কিন্তু আমার কলেজের সহপাঠিনী শম্পার মুখের যে ছবিটা আমার মনে ভাসছিলো তার সাথে এ ভদ্রমহিলার মুখের একদম মিল খুঁজে পাচ্ছিলাম না আমি। রোগা পাতলা শম্পা নামের কালো মেয়েটা খুবই সাধারণ দেখতে ছিলো। দু’বার মুখ ঘুড়িয়ে দেখার মতো মুখশ্রী ছিলো না তার একেবারেই। ক্লাসের সব ছেলেই কোনো না কোনো মেয়ের পেছন লাগতো। কিন্তু শম্পা নামের ওই মেয়েটার পেছনে কেউ কোনোদিন লাগতো না। আর এ ভদ্রমহিলা তো মোটেও কালো নন। গায়ের রঙ বেশ উজ্জ্বল শ্যাম বর্ণের মনে হচ্ছে। আর মুখটা তো প্রায় ফর্সাই বলা যায়। চেহারাতেও বেশ চটক আছে, বেশ সেক্সি দেখতে। চুলগুলোও বেশ সিল্কি, আর সপাট নেমে এসেছে পিঠের ওপর। আর শম্পার চুলগুলো ছিলো রুক্ষ আর খুব কোঁকড়ানো। কিন্তু চোখ দুটো সত্যি মিলছে। ওই শম্পার চোখ দুটোও এমনি শান্ত আর গভীর ছিলো।
আমি অবাক চোখে মহিলার দিকে চেয়ে বললাম, “সত্যি বলছো? তুমি সত্যিই শম্পা? তোমার চেহারার এতো পরিবর্তন হয়ে গেছে যে আমি কেন, সবাই তোমাকে চিনতে ভুল করবে। এখন কোথায় আছো? মেঘালয়েই না অন্য কোথাও? বিয়ে টিয়ে করেছো”?
শম্পা হাত তুলে আমাকে থামাতে থামাতে বললো, “ধীরে, ধীরে, বাব্বা, প্রশ্নের বন্যা বইয়ে দিচ্ছো একেবারে। একটু আগে তো চিনতেই পারছিলে না। সবার আগে বলো তুমি এখানে কেন”?
আমি উচ্ছাস কমিয়ে বললাম, “আমার শ্বশুর বাড়ি এখানে। দেশবন্ধু পারায়। বৌকে নিয়ে এসেছিলাম। ও কিছুদিন এখানে থাকবে। ওকে রেখে চলে যাচ্ছি শিলং। আমার এখন ওখানেই পোস্টিং। তা, তুমি এখানে কী ব্যাপারে”?
শম্পা মুচকি হেঁসে বললো, “তোমার মতো আমারও শ্বশুর বাড়ি এখানেই। মাটিগাড়ায়। সে এল আই সি-তে কাজ করে। গৌহাটিতে পোস্টেড এখন। ওর একটা ট্রেনিং পরেছে দিল্লীতে। পরশুদিন এখান থেকে রওনা হয়ে গেছে। আমি ওর সাথে এখানে এসেছিলাম। এখন ফিরে যাচ্ছি গৌহাটি। তোমাকে পেয়ে ভালোই হলো একটা মনের মতো সঙ্গী পেলাম সাড়া রাস্তার জন্যে। তা বিয়ে কবে করেছো? ছেলেমেয়ে হয়েছে”?
ট্রেন তখন স্টেশন থেকে ছেড়ে দিয়েছে। আমি একটু হেঁসে বললাম, “এখনো কিছু হয়নি। তবে হয়তো দু’আড়াই মাসের মধ্যেই কিছু একটা হবে। আর বিয়ে করেছি এইটি সিক্সের মার্চে”।
শম্পা খুশী হয়ে আমার হাত ধরে বললো, “ম্যানি ম্যানি কনগ্র্যাচুলেশন্স ইন অ্যাডভান্স দীপ। আই উইশ ইউ এ ভেরি ভেরি গুডলাক। তা তোমার বউ দেখতে নিশ্চয়ই খুব সুন্দরী, তাই না”?
আমি নিজের পকেট থেকে ওয়ালেটটা বের করে সেটা মেলে ধরলাম শম্পার মুখের কাছে। বললাম, “এই হচ্ছে আমার বেটার হাফের ছবি। সতী”।
শম্পা ওয়ালেটটা হাতে নিয়ে খুব মন দিয়ে সতীর ছবিটা দেখতে দেখতে নিজের মনেই বলে উঠলো, “বাঃ, কী সুন্দরী গো? দারুণ দেখতে তো! অবশ্য তোমার সঙ্গে এমন একটা মেয়েকেই মানায়” I অনেকক্ষণ ধরে সতীর ছবিটা দেখে আমার হাতে ওয়ালেটটা ফিরিয়ে দিতে দিতে শম্পা বললো, “সত্যি, তোমার বৌ দেখতেও যেমন মিষ্টি, নামটাও ঠিক ততোটাই মিষ্টি, সতী। বাঃ। তোমার সঙ্গে দারুণ মানিয়েছে” I একটু থেমেই মুচকি মুচকি হাঁসতে হাঁসতে শম্পা বললো, “একটা কথা বোধহয় তোমাকে কেউ কখনো বলেনি দীপ। আজ বললে কারো কোনো ক্ষতি হবে না, তাই বলছি। আমাদের ক্লাসের সব মেয়েই কিন্তু মনে মনে তোমার জন্যে পাগল ছিলো। কিন্তু তুমি তো মেয়েদেরকে তোমার ধারে কাছে ঘেঁসতেই দিতে না। কোনোদিন তোমাকে কোনো মেয়ের সাথে কথা বলতে দেখিনি আমরা। কিন্তু আজ তোমার বৌয়ের ছবি দেখে আমার মনে হচ্ছে সত্যি তোমার উপযুক্ত বউ-ই পেয়েছো তুমি। আমাদের ক্লাসের সবচেয়ে সুন্দরী ছিলো মিতা। কিন্তু সেও তোমার বৌয়ের মতো এতো সুন্দরী ছিলো না”।
আমি শম্পার কথা শুনে হাঁসতে হাঁসতে বললাম, “তাই না কি? সত্যি এ ব্যাপারটা তুমি না বললে জানতেই পারতাম না কখনো। তা তুমিও কি সেই দলে ছিলে”?
শম্পাও হাঁসতে হাঁসতে বললো,“পাগল”? বেশ কিছুক্ষণ হেঁসে, বেশ কষ্টে হাঁসি থামিয়ে বললো, “সত্যি বলতে লজ্জা নেই আজ দীপ। সে দলে ছিলাম না বললে সত্যি বলা হবে না। কিন্তু তুমি তো জানোই আমি ছিলাম আমাদের ক্লাসের সবচেয়ে কুৎসিত দেখতে। কোনোদিন কোনো ছেলে আমার মুখের দিকে তাকাতো না। তাই বামন হয়ে চাঁদ ধরার মতো দুঃসাহস আমার ছিলোনা। তবে বলতে পারো, সে দলে থাকলেও আমি ছিলাম লাইনের সবার শেষে”।
শম্পার অকপট স্বীকারোক্তি শুনে আমি একটু লজ্জাই পেলাম। এদিক ওদিক তাকিয়ে দেখতে দেখতে অপ্রস্তুতের মতো বলতে লাগলাম, “এই যাহ্*, এভাবে বলছো কেন ? আমি তো তেমন কোনো কেউ কেটা ছিলাম না। খুবই সাধারন একটা ছেলে ছিলাম আর পাঁচ জনের মতো। কিন্তু মেয়েদের সাথে কেন কথা বলতাম না সেটা সম্পূর্ণ আলাদা কারণ ছিলো। তোমরা যদি ভেবে থাকো আমি অহঙ্কারের বশবর্তী হয়ে বা ঘৃণা বশতঃ মেয়েদেরকে এড়িয়ে চলতাম তাহলে সেটা তোমাদের একটা ভুল । কারুর সাথে হৃদয়ঘটিত ব্যাপার ঘটে যাবার ভয়েই আমি তেমনটা করতাম। কারণ আমার ভবিষ্যৎ তখন একেবারেই অনিশ্চিত আর আঁধারে ঢাকা ছিলো। কাউকে ভালোবেসে তার কাছ থেকে দুরে সরে গিয়ে কষ্ট পেতে রাজী ছিলাম না। আর নিজেরাই তো দেখেছো, সেকেণ্ড ইয়ারের পরীক্ষার রেজাল্ট খারাপ হতেই আমি পড়াশোনা ছেড়ে দিয়েছিলাম। তোমরা সবাই আমাকে পেছনে ফেলে এগিয়ে গিয়েছিলে। গ্রাজুয়েশনটা কমপ্লিট করাই হয় নি আমার আর। নেহাত মাধ্যমিকে ফার্স্ট ডিভিশন পেয়েছিলাম বলে কপাল গুনে ব্যাঙ্কে একটা চাকুরী পেয়ে নিজের জীবনটার একটা হিল্লে করতে সক্ষম হয়েছি”।
আমি থামতেই দু’জনেই খানিকক্ষণ চুপচাপ হয়ে রইলাম। তারপর শম্পা বললো, “আমার যতদুর মনে পড়ে, আর্টস সেকশনের বাণী রায় ছাড়া তুমি অন্য কোনো মেয়ের সাথে কথা বলতে না। অবশ্য বাণীর সঙ্গে যে তোমার তেমন কোনো সম্পর্ক ছিলো না সেটা আমরা সবাই জানতাম”।
চৌদ্দ পনেরো বছর আগেকার কলেজ জীবনের নানা কথা আমার মনে ভিড় করে আসছিলো। শম্পার কথা শুনে বললাম, “বাণীর বড় ভাই সুমন্ত আমাদের সাইন্স সেকশনে পড়তো, আর সে ছিলো আমার খুব কাছের বন্ধু। সুমন্তর সঙ্গে আমার বন্ধুত্ত্ব এখনো অটুট আছে। আর একই ব্যাঙ্কে আছি বলে মাঝে মধ্যেই আমাদের দেখা হয়। সুমন্তর সুবাদেই বাণীর সাথে কথা বলতাম। কিন্তু আজ এতদিন বাদে এখানে ট্রেনের মধ্যে তোমার সাথে দেখা হওয়াতে আমার কী যে ভালো লাগছে! কলেজ ছাড়ার পর এই প্রথম কোনো সহপাঠিনীর সাথে আমার দেখা হলো। সত্যি ভেতরে ভেতরে একটা অদ্ভুত রোমাঞ্চ হচ্ছে”।
শম্পাও উচ্ছসিত ভঙ্গীতে বললো, “আমারও ঠিক তাই মনে হচ্ছে দীপ। এত বছর বাদে হঠাৎ করে এভাবে তোমাকে দেখতে পাবো, এ কথা একবারের জন্যেও মনে হয় নি আমার। ইশ, এখন আমার খুব আপসোস হচ্ছে, ষ্টেশনে ঢোকার আগে তখন যদি তোমার সাথে কথা বলতাম, তাহলে তোমার বৌকেও দেখতে পেতাম”।
আমি অবাক হয়ে শম্পার দিকে চেয়ে বললাম, “ষ্টেশনের বাইরে তুমি আমায় দেখতে পেয়েছিলে”?
শম্পা বললো, “হ্যা তো, কিন্তু একটু সন্দেহও হয়েছিলো যে তোমার মতোই দেখতে অন্য কেউ হবে হয়তো। তাই তখন কিছু বলি নি। আর দ্যাখো, কী ভাগ্য আমার ! তোমার ঠিক পাশের সীটটাই আমার কপালে পড়েছে। তোমার বউ তোমাকে ষ্টেশনে ছাড়তে এসেছিলো বুঝি, তাই না”?
আমি খোলা খুলি হেঁসে বললাম, “ওহ মাই গড, তুমি ভুল করছো শম্পা। তুমি যাকে দেখেছো, মানে যে মেয়েটা আমার সঙ্গে ছিলো সে আমার স্ত্রী নয়, আমার স্ত্রীর ছোট বেলার বান্ধবী। আমার বউয়ের কথায় আমাকে ড্রপ করতে এসেছিলো। খুব ভালো মেয়ে, একেবারে আমার বউয়ের মতোই ফ্রী অ্যান্ড ফ্রাংক। আর খুব মিষ্টি স্বভাবের মেয়ে”।
শম্পা আমার দিকে একটু ঝুঁকে ঈষৎ চাপা গলায় বললো, ‘হুম, সে যে ফ্রী, ফ্রাংক আর মিষ্টি সেটা আমি দেখেই বুঝেছি। যা করছিলে দুজনে মিলে”!
আমি একটু অবাক হয়ে বললাম, “কী দেখেছো তুমি”?
শম্পা তেমনি ভাবে চাপা গলায় বললো, “গাড়ির পেছনে গিয়ে দুজনে যা করেছো ঠিক সেটাই দেখেছি। খুব ভালো সম্পর্ক তোমাদের দু’জনের সেটা বুঝতে বাকি থাকেনি। কিন্তু তোমার স্ত্রী কি জানে তার সাথে তোমার এমন মধুর সম্পর্কের কথা”?
আমি কয়েক সেকেণ্ড চুপ করে থেকে বললাম, “আমি আমার বৌয়ের কাছে কোনো কথাই গোপন করি না। তার সামনেও আমরা এমন ভাবেই মেলামেশা করি। আজো গৌহাটি পৌঁছেই সব কথা তাকে ফোন করে জানাবো। তোমার সাথে এভাবে দেখা হয়ে যাবার কথাও বলবো তাকে”।
শম্পা মুচকি হেঁসে বললো, “সত্যি তুমি ভাগ্যবান। এমন সুন্দর বৌয়ের সাথে সাথে এমন মিষ্টি শালী ক’জনের ভাগ্যে জোটে? কিন্তু তাই বলে খোলা জায়গায় অমন করতে তোমার একটুও দ্বিধা হলো না? আমার মতো আরো অনেকেই তো দেখে থাকতে পারে”!
আমি শান্ত স্বরে বললাম, “আসলে। ব্যাপারটা একটু অন্য রকম হয়ে দাঁড়িয়েছিলো তখন। আমি চলে যাচ্ছি বলে ওর মনে আমার স্ত্রীর মতোই কিছুটা ব্যথা তো ছিলোই, কিন্তু তার সাথে সাথে ওদের আরেক বান্ধবীর একটা দুঃখের কথা বলতে বলতে ওর খুব মন খারাপ হয়ে গিয়েছিলো। তাই আমার কাছে অমন দাবী করে বসলো ও। আর আমিও যাবার সময় ওকে কষ্ট দিয়ে যেতে চাইছিলাম না। তাই যে কেউ দেখে ফেলতে পারে, এ ঝুঁকি থাকা সত্ত্বেও শালীনতার মাত্রা ছাড়িয়ে অমনটা করতে হয়েছে আমায়। কিন্তু আমাদের দু’জনের মাঝে ওকে নিয়ে কোনো সমস্যাই নেই। আর শুধু ও-ই নয়। ওদের আরো দু’বান্ধবী আছে, তাদের সাথেও আমার একই রকম মিষ্টি সম্পর্ক। আর আমার বৌও সবটাই জানে । সুতরাং ভেবো না যে আমি বৌকে ফাঁকি দিয়ে শালীদের সাথে অবৈধ প্রেম করে বেড়াচ্ছি”।
শম্পা কয়েক সেকেণ্ড আমার মুখের দিকে চেয়ে বোধহয় বুঝবার চেষ্টা করলো যে আমি কতখানি সত্যি কথা বলছি। তারপর আস্তে করে বললো, “যদিও অনধিকার চর্চার মতো মনে হবে, তবুও বলছি, এমন কী হয়েছিলো যাতে করে তোমাকে ও কাজ করতে হলো”?
আমি সরল মনে বললো, “আরে কী বলছো তুমি শম্পা। আমরা তো একসাথে পড়া বন্ধু। বন্ধু বন্ধুর কাছে কিছু জানতে চাইতেই পারে। এতে তুমি অনধিকার চর্চার কথা তুলছো কেন”? একটু থেমে আশেপাশের যাত্রীদের ওপর নজর বুলিয়ে বললাম, “ট্রেনের মধ্যে আপনজনদের জীবন নিয়ে আলোচনা করতে ভয় হয়। আশে পাশের লোকেরাও শুনে ফেলার সম্ভাবনা থাকে। তুমি একটু আমার দিকে ঘুরে বোসো, আমি নিচু গলায় কথাগুলো বলছি”।
__________________________
ss_sexy
(Upload No. 127)
দু’নম্বর প্লাটফর্মে কামরূপ এক্সপ্রেস দাঁড়িয়ে ছিলো। আমি নিজের রিজার্ভড সীট খুঁজে নিয়ে হকারের কাছ থেকে একটা খবরের কাগজ নিয়ে সীটে বসে চোখ বুলাতে লাগলাম। মিনিট খানেক পরেই শ্যাম বর্ণা চুড়িদার পড়া এক মহিলা পাশের সীটে এসে বসেই আমার মুখের দিকে অবাক চোখে অনেকক্ষণ তাকিয়ে থেকে জিজ্ঞেস করলো, “আরে, বিশ্বদীপ না”?
আমি আশ্চর্য হয়ে মহিলার দিকে অপ্রস্তুত ভাবে চেয়ে বললাম, “হ্যা.... কিন্তু মাফ করবেন, আমি কিন্তু আপনাকে ঠিক......”
মহিলা নিজের চোখ থেকে চশমাটা খুলতে খুলতে বললো, “কি? চিনতে কষ্ট হচ্ছে? অবশ্য তুমি কবেই বা আমার মুখের দিকে তাকিয়ে দেখেছো”!
আমি ভদ্রমহিলার মুখের দিকে একটু সময় দেখে নিয়েও ঠিক চিনতে পারলাম না। কিন্তু তার মুখটা আমার বেশ পরিচিত মনে হচ্ছিলো। মনে হচ্ছিলো বেশ কিছুদিন আগে ভদ্রমহিলাকে কোথায় যেন দেখেছি! আর সেটা একদিনের দেখা নয়। অনেক দিন অনেক বার মেয়েটাকে দেখেছি। কিন্তু ঠিক কিছুতেই মনে করতে পারছিলাম না। আমি অসহায়ের মতো বলে উঠলাম, “আই এম সরি, ম্যাডাম। মনে হচ্ছে কোথায় যেন দেখেছি, কিন্তু সত্যি আপনাকে সঠিক চিনতে পারছি না”।
ভদ্রমহিলা এবারে মিষ্টি করে হেঁসে বললো, “আরে আমি শম্পা। শম্পা ভৌমিক। আমরা একসাথে কলেজে পড়তাম। একেবারেই চিনতে পারছো না”?
নামটা শুনেই আমি চিনতে পারলাম। কিন্তু আমার কলেজের সহপাঠিনী শম্পার মুখের যে ছবিটা আমার মনে ভাসছিলো তার সাথে এ ভদ্রমহিলার মুখের একদম মিল খুঁজে পাচ্ছিলাম না আমি। রোগা পাতলা শম্পা নামের কালো মেয়েটা খুবই সাধারণ দেখতে ছিলো। দু’বার মুখ ঘুড়িয়ে দেখার মতো মুখশ্রী ছিলো না তার একেবারেই। ক্লাসের সব ছেলেই কোনো না কোনো মেয়ের পেছন লাগতো। কিন্তু শম্পা নামের ওই মেয়েটার পেছনে কেউ কোনোদিন লাগতো না। আর এ ভদ্রমহিলা তো মোটেও কালো নন। গায়ের রঙ বেশ উজ্জ্বল শ্যাম বর্ণের মনে হচ্ছে। আর মুখটা তো প্রায় ফর্সাই বলা যায়। চেহারাতেও বেশ চটক আছে, বেশ সেক্সি দেখতে। চুলগুলোও বেশ সিল্কি, আর সপাট নেমে এসেছে পিঠের ওপর। আর শম্পার চুলগুলো ছিলো রুক্ষ আর খুব কোঁকড়ানো। কিন্তু চোখ দুটো সত্যি মিলছে। ওই শম্পার চোখ দুটোও এমনি শান্ত আর গভীর ছিলো।
আমি অবাক চোখে মহিলার দিকে চেয়ে বললাম, “সত্যি বলছো? তুমি সত্যিই শম্পা? তোমার চেহারার এতো পরিবর্তন হয়ে গেছে যে আমি কেন, সবাই তোমাকে চিনতে ভুল করবে। এখন কোথায় আছো? মেঘালয়েই না অন্য কোথাও? বিয়ে টিয়ে করেছো”?
শম্পা হাত তুলে আমাকে থামাতে থামাতে বললো, “ধীরে, ধীরে, বাব্বা, প্রশ্নের বন্যা বইয়ে দিচ্ছো একেবারে। একটু আগে তো চিনতেই পারছিলে না। সবার আগে বলো তুমি এখানে কেন”?
আমি উচ্ছাস কমিয়ে বললাম, “আমার শ্বশুর বাড়ি এখানে। দেশবন্ধু পারায়। বৌকে নিয়ে এসেছিলাম। ও কিছুদিন এখানে থাকবে। ওকে রেখে চলে যাচ্ছি শিলং। আমার এখন ওখানেই পোস্টিং। তা, তুমি এখানে কী ব্যাপারে”?
শম্পা মুচকি হেঁসে বললো, “তোমার মতো আমারও শ্বশুর বাড়ি এখানেই। মাটিগাড়ায়। সে এল আই সি-তে কাজ করে। গৌহাটিতে পোস্টেড এখন। ওর একটা ট্রেনিং পরেছে দিল্লীতে। পরশুদিন এখান থেকে রওনা হয়ে গেছে। আমি ওর সাথে এখানে এসেছিলাম। এখন ফিরে যাচ্ছি গৌহাটি। তোমাকে পেয়ে ভালোই হলো একটা মনের মতো সঙ্গী পেলাম সাড়া রাস্তার জন্যে। তা বিয়ে কবে করেছো? ছেলেমেয়ে হয়েছে”?
ট্রেন তখন স্টেশন থেকে ছেড়ে দিয়েছে। আমি একটু হেঁসে বললাম, “এখনো কিছু হয়নি। তবে হয়তো দু’আড়াই মাসের মধ্যেই কিছু একটা হবে। আর বিয়ে করেছি এইটি সিক্সের মার্চে”।
শম্পা খুশী হয়ে আমার হাত ধরে বললো, “ম্যানি ম্যানি কনগ্র্যাচুলেশন্স ইন অ্যাডভান্স দীপ। আই উইশ ইউ এ ভেরি ভেরি গুডলাক। তা তোমার বউ দেখতে নিশ্চয়ই খুব সুন্দরী, তাই না”?
আমি নিজের পকেট থেকে ওয়ালেটটা বের করে সেটা মেলে ধরলাম শম্পার মুখের কাছে। বললাম, “এই হচ্ছে আমার বেটার হাফের ছবি। সতী”।
শম্পা ওয়ালেটটা হাতে নিয়ে খুব মন দিয়ে সতীর ছবিটা দেখতে দেখতে নিজের মনেই বলে উঠলো, “বাঃ, কী সুন্দরী গো? দারুণ দেখতে তো! অবশ্য তোমার সঙ্গে এমন একটা মেয়েকেই মানায়” I অনেকক্ষণ ধরে সতীর ছবিটা দেখে আমার হাতে ওয়ালেটটা ফিরিয়ে দিতে দিতে শম্পা বললো, “সত্যি, তোমার বৌ দেখতেও যেমন মিষ্টি, নামটাও ঠিক ততোটাই মিষ্টি, সতী। বাঃ। তোমার সঙ্গে দারুণ মানিয়েছে” I একটু থেমেই মুচকি মুচকি হাঁসতে হাঁসতে শম্পা বললো, “একটা কথা বোধহয় তোমাকে কেউ কখনো বলেনি দীপ। আজ বললে কারো কোনো ক্ষতি হবে না, তাই বলছি। আমাদের ক্লাসের সব মেয়েই কিন্তু মনে মনে তোমার জন্যে পাগল ছিলো। কিন্তু তুমি তো মেয়েদেরকে তোমার ধারে কাছে ঘেঁসতেই দিতে না। কোনোদিন তোমাকে কোনো মেয়ের সাথে কথা বলতে দেখিনি আমরা। কিন্তু আজ তোমার বৌয়ের ছবি দেখে আমার মনে হচ্ছে সত্যি তোমার উপযুক্ত বউ-ই পেয়েছো তুমি। আমাদের ক্লাসের সবচেয়ে সুন্দরী ছিলো মিতা। কিন্তু সেও তোমার বৌয়ের মতো এতো সুন্দরী ছিলো না”।
আমি শম্পার কথা শুনে হাঁসতে হাঁসতে বললাম, “তাই না কি? সত্যি এ ব্যাপারটা তুমি না বললে জানতেই পারতাম না কখনো। তা তুমিও কি সেই দলে ছিলে”?
শম্পাও হাঁসতে হাঁসতে বললো,“পাগল”? বেশ কিছুক্ষণ হেঁসে, বেশ কষ্টে হাঁসি থামিয়ে বললো, “সত্যি বলতে লজ্জা নেই আজ দীপ। সে দলে ছিলাম না বললে সত্যি বলা হবে না। কিন্তু তুমি তো জানোই আমি ছিলাম আমাদের ক্লাসের সবচেয়ে কুৎসিত দেখতে। কোনোদিন কোনো ছেলে আমার মুখের দিকে তাকাতো না। তাই বামন হয়ে চাঁদ ধরার মতো দুঃসাহস আমার ছিলোনা। তবে বলতে পারো, সে দলে থাকলেও আমি ছিলাম লাইনের সবার শেষে”।
শম্পার অকপট স্বীকারোক্তি শুনে আমি একটু লজ্জাই পেলাম। এদিক ওদিক তাকিয়ে দেখতে দেখতে অপ্রস্তুতের মতো বলতে লাগলাম, “এই যাহ্*, এভাবে বলছো কেন ? আমি তো তেমন কোনো কেউ কেটা ছিলাম না। খুবই সাধারন একটা ছেলে ছিলাম আর পাঁচ জনের মতো। কিন্তু মেয়েদের সাথে কেন কথা বলতাম না সেটা সম্পূর্ণ আলাদা কারণ ছিলো। তোমরা যদি ভেবে থাকো আমি অহঙ্কারের বশবর্তী হয়ে বা ঘৃণা বশতঃ মেয়েদেরকে এড়িয়ে চলতাম তাহলে সেটা তোমাদের একটা ভুল । কারুর সাথে হৃদয়ঘটিত ব্যাপার ঘটে যাবার ভয়েই আমি তেমনটা করতাম। কারণ আমার ভবিষ্যৎ তখন একেবারেই অনিশ্চিত আর আঁধারে ঢাকা ছিলো। কাউকে ভালোবেসে তার কাছ থেকে দুরে সরে গিয়ে কষ্ট পেতে রাজী ছিলাম না। আর নিজেরাই তো দেখেছো, সেকেণ্ড ইয়ারের পরীক্ষার রেজাল্ট খারাপ হতেই আমি পড়াশোনা ছেড়ে দিয়েছিলাম। তোমরা সবাই আমাকে পেছনে ফেলে এগিয়ে গিয়েছিলে। গ্রাজুয়েশনটা কমপ্লিট করাই হয় নি আমার আর। নেহাত মাধ্যমিকে ফার্স্ট ডিভিশন পেয়েছিলাম বলে কপাল গুনে ব্যাঙ্কে একটা চাকুরী পেয়ে নিজের জীবনটার একটা হিল্লে করতে সক্ষম হয়েছি”।
আমি থামতেই দু’জনেই খানিকক্ষণ চুপচাপ হয়ে রইলাম। তারপর শম্পা বললো, “আমার যতদুর মনে পড়ে, আর্টস সেকশনের বাণী রায় ছাড়া তুমি অন্য কোনো মেয়ের সাথে কথা বলতে না। অবশ্য বাণীর সঙ্গে যে তোমার তেমন কোনো সম্পর্ক ছিলো না সেটা আমরা সবাই জানতাম”।
চৌদ্দ পনেরো বছর আগেকার কলেজ জীবনের নানা কথা আমার মনে ভিড় করে আসছিলো। শম্পার কথা শুনে বললাম, “বাণীর বড় ভাই সুমন্ত আমাদের সাইন্স সেকশনে পড়তো, আর সে ছিলো আমার খুব কাছের বন্ধু। সুমন্তর সঙ্গে আমার বন্ধুত্ত্ব এখনো অটুট আছে। আর একই ব্যাঙ্কে আছি বলে মাঝে মধ্যেই আমাদের দেখা হয়। সুমন্তর সুবাদেই বাণীর সাথে কথা বলতাম। কিন্তু আজ এতদিন বাদে এখানে ট্রেনের মধ্যে তোমার সাথে দেখা হওয়াতে আমার কী যে ভালো লাগছে! কলেজ ছাড়ার পর এই প্রথম কোনো সহপাঠিনীর সাথে আমার দেখা হলো। সত্যি ভেতরে ভেতরে একটা অদ্ভুত রোমাঞ্চ হচ্ছে”।
শম্পাও উচ্ছসিত ভঙ্গীতে বললো, “আমারও ঠিক তাই মনে হচ্ছে দীপ। এত বছর বাদে হঠাৎ করে এভাবে তোমাকে দেখতে পাবো, এ কথা একবারের জন্যেও মনে হয় নি আমার। ইশ, এখন আমার খুব আপসোস হচ্ছে, ষ্টেশনে ঢোকার আগে তখন যদি তোমার সাথে কথা বলতাম, তাহলে তোমার বৌকেও দেখতে পেতাম”।
আমি অবাক হয়ে শম্পার দিকে চেয়ে বললাম, “ষ্টেশনের বাইরে তুমি আমায় দেখতে পেয়েছিলে”?
শম্পা বললো, “হ্যা তো, কিন্তু একটু সন্দেহও হয়েছিলো যে তোমার মতোই দেখতে অন্য কেউ হবে হয়তো। তাই তখন কিছু বলি নি। আর দ্যাখো, কী ভাগ্য আমার ! তোমার ঠিক পাশের সীটটাই আমার কপালে পড়েছে। তোমার বউ তোমাকে ষ্টেশনে ছাড়তে এসেছিলো বুঝি, তাই না”?
আমি খোলা খুলি হেঁসে বললাম, “ওহ মাই গড, তুমি ভুল করছো শম্পা। তুমি যাকে দেখেছো, মানে যে মেয়েটা আমার সঙ্গে ছিলো সে আমার স্ত্রী নয়, আমার স্ত্রীর ছোট বেলার বান্ধবী। আমার বউয়ের কথায় আমাকে ড্রপ করতে এসেছিলো। খুব ভালো মেয়ে, একেবারে আমার বউয়ের মতোই ফ্রী অ্যান্ড ফ্রাংক। আর খুব মিষ্টি স্বভাবের মেয়ে”।
শম্পা আমার দিকে একটু ঝুঁকে ঈষৎ চাপা গলায় বললো, ‘হুম, সে যে ফ্রী, ফ্রাংক আর মিষ্টি সেটা আমি দেখেই বুঝেছি। যা করছিলে দুজনে মিলে”!
আমি একটু অবাক হয়ে বললাম, “কী দেখেছো তুমি”?
শম্পা তেমনি ভাবে চাপা গলায় বললো, “গাড়ির পেছনে গিয়ে দুজনে যা করেছো ঠিক সেটাই দেখেছি। খুব ভালো সম্পর্ক তোমাদের দু’জনের সেটা বুঝতে বাকি থাকেনি। কিন্তু তোমার স্ত্রী কি জানে তার সাথে তোমার এমন মধুর সম্পর্কের কথা”?
আমি কয়েক সেকেণ্ড চুপ করে থেকে বললাম, “আমি আমার বৌয়ের কাছে কোনো কথাই গোপন করি না। তার সামনেও আমরা এমন ভাবেই মেলামেশা করি। আজো গৌহাটি পৌঁছেই সব কথা তাকে ফোন করে জানাবো। তোমার সাথে এভাবে দেখা হয়ে যাবার কথাও বলবো তাকে”।
শম্পা মুচকি হেঁসে বললো, “সত্যি তুমি ভাগ্যবান। এমন সুন্দর বৌয়ের সাথে সাথে এমন মিষ্টি শালী ক’জনের ভাগ্যে জোটে? কিন্তু তাই বলে খোলা জায়গায় অমন করতে তোমার একটুও দ্বিধা হলো না? আমার মতো আরো অনেকেই তো দেখে থাকতে পারে”!
আমি শান্ত স্বরে বললাম, “আসলে। ব্যাপারটা একটু অন্য রকম হয়ে দাঁড়িয়েছিলো তখন। আমি চলে যাচ্ছি বলে ওর মনে আমার স্ত্রীর মতোই কিছুটা ব্যথা তো ছিলোই, কিন্তু তার সাথে সাথে ওদের আরেক বান্ধবীর একটা দুঃখের কথা বলতে বলতে ওর খুব মন খারাপ হয়ে গিয়েছিলো। তাই আমার কাছে অমন দাবী করে বসলো ও। আর আমিও যাবার সময় ওকে কষ্ট দিয়ে যেতে চাইছিলাম না। তাই যে কেউ দেখে ফেলতে পারে, এ ঝুঁকি থাকা সত্ত্বেও শালীনতার মাত্রা ছাড়িয়ে অমনটা করতে হয়েছে আমায়। কিন্তু আমাদের দু’জনের মাঝে ওকে নিয়ে কোনো সমস্যাই নেই। আর শুধু ও-ই নয়। ওদের আরো দু’বান্ধবী আছে, তাদের সাথেও আমার একই রকম মিষ্টি সম্পর্ক। আর আমার বৌও সবটাই জানে । সুতরাং ভেবো না যে আমি বৌকে ফাঁকি দিয়ে শালীদের সাথে অবৈধ প্রেম করে বেড়াচ্ছি”।
শম্পা কয়েক সেকেণ্ড আমার মুখের দিকে চেয়ে বোধহয় বুঝবার চেষ্টা করলো যে আমি কতখানি সত্যি কথা বলছি। তারপর আস্তে করে বললো, “যদিও অনধিকার চর্চার মতো মনে হবে, তবুও বলছি, এমন কী হয়েছিলো যাতে করে তোমাকে ও কাজ করতে হলো”?
আমি সরল মনে বললো, “আরে কী বলছো তুমি শম্পা। আমরা তো একসাথে পড়া বন্ধু। বন্ধু বন্ধুর কাছে কিছু জানতে চাইতেই পারে। এতে তুমি অনধিকার চর্চার কথা তুলছো কেন”? একটু থেমে আশেপাশের যাত্রীদের ওপর নজর বুলিয়ে বললাম, “ট্রেনের মধ্যে আপনজনদের জীবন নিয়ে আলোচনা করতে ভয় হয়। আশে পাশের লোকেরাও শুনে ফেলার সম্ভাবনা থাকে। তুমি একটু আমার দিকে ঘুরে বোসো, আমি নিচু গলায় কথাগুলো বলছি”।
__________________________
ss_sexy