08-07-2020, 02:00 AM
ঘরে এসে গিটার নিয়ে টুং টাং করতে লাগলো অভিষেক. এ কি ঝামেলায় পড়লাম রে ভাই. বাবা মা বেশ অনেকদিন ধরেই ছেলেকে চাপ দিচ্ছে. মা ঘরে এসে ছেলের পাশে বসে মাথায় হাত বুলিয়ে জিজ্ঞেস করলো : কি হয়েছে বাবু?
অভি : মা... বাবা ওসব কি বলছিলো নিজের বন্ধুকে? এবারে ওনার হয়ে গেলে আমাদের বাড়িতে ওনাদের ডেকে পাঠাবে... মানে কি?
মা : ঠিকই তো বলেছে তোর বাবা.. তোকেও তো এবার বিয়ে দিতে হবে নাকি?
অভি : এই বয়সে? মা আমার বয়সই বা কত.... এত তাড়াতাড়ি বিয়ে করে কি করব? না.. না বাবাকে বোঝাও....
মা : আচ্ছা তুই কি চাস? সারাজীবন আইবুড়ো হয়ে থাকবি?
অভি : তা কেন? তবে এখন কেন?
মা : এটাই ঠিক বয়স বাবা. তোর বাবারও এই বয়সেই বিয়ে হয়ে গেছিলো..... আচ্ছা তোর চিন্তা কি? তোর বাবার এত বড়ো ব্যবসা. ভগবানের আশীর্বাদে আমাদের তো কোনো রকম সমস্যার নেই. তাহলে বিয়ে করতে অসুবিধা কোথায় তোর?
অভি : মা কিন্তু.....
এবারে মা মোক্ষম অস্ত্র প্রয়োগ করলো.
মা : মেয়েটা বড়ো হচ্ছে. কদিন পর বিয়ে করে বাড়ি ছেড়ে চলে যাবে. বাড়িটা ফাঁকা হয়ে যাবে. তখন যদি আরেকটা মেয়ে পাশে থাকে তাহলে কিছুটা দুঃখ তো কমবে. তাকেই মেয়ের মতো ভালোবাসবো.
অভি : হুমমম.... খুব যে স্বপ্ন দেখছো..... তা সে যদি তোমার মনের মতো না হয়. বাবার মতো রাগী আর তোমার মেয়ের মতো আধ পাগলী হয়?
মা : আমার ছেলের জন্য কি যাকে তাকে নিয়ে আসবো নাকি? সে হবে একেবারে পরীর মতো.
অভি : মা.... আমি কি ছোট বাচ্চা নাকি? পরীর মতো... যত্তসব.
মা হেসে অভির মাথায় হাত বুলিয়ে চলে গেলো. অভিষেকের মাথায় ঘুরতে লাগলো পরীর মতো.... পরীর মতো. আজ যাকে দেখলাম সেও তো পরীর থেকে কম কিছু নয়. কি সুন্দর চোখ দুটো, হাসিটা কি অসাধারণ. সাদা সালোয়ার কামিজে সত্যি সত্যিই তো ওকে পরীর মতোই লাগছিলো. কি নাম ওর? পরীই নয়তো? বার বার ওই হাসি মুখটা ভেসে উঠছে চোখের সামনে. কি লম্বা মেয়েটা. প্রায় অভিরই হাইটের. খুব কম মেয়েই আছে ওরকম উচ্চতার এই কলকাতায়. পাখার হাওয়ায় চুলগুলো যখন মুখের ওপর চলেছে আসছিলো আর মেয়েটি সেগুলো সরাচ্ছিলো আর তারফলে চুড়ির ছন ছন শব্দ... উফফফফ আর ওই হাসিটা... ওই হাসিটা কিছুতেই ভুলতে পারছেনা অভি.
কিরে কীভাবছিস দাদা?
পরীর কথা.....
হ্যা? পরী? সেটা আবার কে?
অভির হুশ ফিরে এলো. সে বললো : কিছুনা... তুই কি করতে এলি সেটা বল?
ঝিলমিল : বাবা পাঠালো..... বললো কাল বাবা মাকে নিয়ে যেতে হবে মলে. নতুন ড্রেসের ব্যাপারে.
অভি : আরে.... এটা কি পুজোর বাজার হচ্ছে নাকি? কে না কে বাবার বন্ধুর মেয়ের এনগেজমেন্ট. তার জন্য নতুন ড্রেস কেনার কোনো মানে হয়?
ঝিলমিল : কে না কে কি বলছিস দাদা? বাবার বেস্ট ফ্রেন্ড বলে কথা. ওরা নাকি আগে দুর্গাপুরে থাকতো. 2 বছর হলো এদিকে চলে এসেছে. এখন সোদপুরে থাকে. এখানে বেহালায় কাকুর শশুরবাড়ি আছে. একবার উনি এইবাড়িতেও এসেছিলেন তখন তুই কলেজে ছিলিস আর আমি কলেজে. তাই আমাদের সাথে দেখা হয়নি.
অভি : ওহ.... তাই বুঝি?
ঝিলমিল : তাছাড়া...... স্ট্যাটাস মেইনটেইন বলে একটা ব্যাপার হয় জানিস তো? সত্যি দাদা.... তুই আর হাইফাই হলিনা... এখনও মিডলক্লাস চিন্তাধারা.... এইজন্যই বাবার কাছে এত বকা খাস.....
অভি : তবেরে ! স্টেটাস তাইনা? দাঁড়া... দাঁড়া পালাবিনা...... এদিকে আয়.
মুখ ভেংচে পালিয়ে গেলো ঝিলমিল. উফফফফ.... কি বিচ্ছু মেয়ে.
আবার কালকে বাবা মাকে নিয়ে যেতে হবে. কালকে গিয়ে যদি আবার দেখা হয়েযায় ওর সাথে? ধুর..... যত্তসব. লোকের কি আর খেয়ে দিয়ে কাজ নেই যে রোজ রোজ শপিং করতে যাবে. অভি... মাথা থেকে ওসব ঝেড়ে ফেলো.... না... একটু রেডিও শুনি.
অভিষেক ফোনে রেডিও অন করে শুনতে লাগলো. ও বাবা.... একিরে? শান্তির বদলে অশান্তি শুরু হলো. রেডিও তে বাজছে EK LADKI KO DEKHA TOH AISA LAGAA........
আরে ঘোড়ার ডিম..... আর গান ছিলোনা? এটাই বাজাতে হলো?
সেই অসাধারণ গানটা..... যেটা আজও মনে ঝড় তোলে. কিন্তু অভিষেক এখন এই গানটা শুনতে চাইনা..... ও ভুলতে চায় ওই মুখটা. কয়েক মুহূর্তের আলাপ কিন্তু কি আকর্ষণ অনুভব করছে ওই মুখটার প্রতি. কিন্তু এর যে কোনো ভবিষ্যত নেই. কে সে? তাকে তো চেনেই না অভি. তাই কোনো মানেই হয়না ওই মুখ মনে রেখে. নেহাত নাম জানলে তাও ফেসবুকে চেক করা যেত. সেই উপায়ও তো নেই.
ভুলে যাও..... ভুলে যাও অভি বাবু.. নইলে পাগল হয়ে যাবে.
নিজেকেই নিজে বোঝালো অভি. ফোন রেখে শুয়ে ঘুমোনোর চেষ্টা করতে লাগলো ও. কিন্তু মন যে বড়োই অবুঝ. সে ওতো সহজে ওকে কিছুই ভুলতে দিলোনা. বার বার ওর চোখের সামনে ভেসে উঠছে ওই মুখটা.
"আচ্ছা আপনি বলুন... ওকে দারুন লাগছে না? " উফফফফ.... কি সুন্দর গলার স্বর. যেন কতদিনের চেনা. যখন ওকে প্রশ্নটা করেছিল মেয়েটা তখনি ঘাবড়ে গেছিলো অভি. ও বেশ স্মার্ট ছেলে কিন্তু আজ যে কি হয়েছিল সে নিজেও জানেনা.
না.... না ... এটা ঠিক না.. এসব ভাবা বন্ধ কর অভি. ঘুমো ঘুমো. ঘুমিয়ে পড়.
সকালে উঠে বাবার সাথে অফিস গেলো অভি. আজ একটা জরুরি মিটিং আছে. বিকেলে মাকে রেডি হয়ে থাকতে বলেছে. ফিরেই মাকে তুলে নেবে গাড়িতে. অফিসের সারাদিনের ঝামেলা মিটিয়ে গাড়ি নিয়ে ফিরে এলো বাড়িতে. একটু ফ্রেশ হবে ভেবেছিলো কিন্তু বাবা বললো না নামতে. অরিন্দম বাবু স্ত্রীকে ফোন করে ডাকলো. নেমে এলেন ওনার স্ত্রী.
ও বাবা...... পেছন পেছন তরাং তরাং করে লাফাতে লাফাতে চলে এলেন ঝিলমিল দেবী.
অভি : একি !! ও আবার আমাদের সাথে কেন?
মা : ওমা...... মেয়েটা বাড়িতে একা থাকবে নাকি?
অভি : একা কেন? বাড়িতে রঘুদা, চাপাদি, কাজের লোক সবাই আছে.
বাবা : ও আসলেই বা তোর কি? তুই চালা.
উফফফফ.... আমি যেন গাড়ির ড্রাইভার. স্যার আদেশ দিচ্ছেন.
ট্রাফিক লাইনে গাড়ি দাঁড় করাতে হলো. আশ পাশ থেকে আরও অনেকগুলো গাড়ি ওদের গাড়ির পাশে এসে থামলো. অভিষেক এদিক ওদিক তাকাচ্ছে. ঠিক ওদের সামনে দাঁড়ানো গাড়িটায় চোখ গেলো ওর.
কে ওটা? অনেক গুলো মেয়ে রয়েছে গাড়িতে বোঝা যাচ্ছে. কিন্তু একটা মুখ কেমন যেন চেনা চেনা লাগছে না? ওটা কি তাহলে?
চোখের চশমাটা সেট করে তীক্ষ্ণ চোখে দেখার চেষ্টা করলো. একবার মনে হলো মেয়েটা হাসতে হাসতে পেছনে ওর দিকে তাকালো. মেয়েটিও লক্ষ্য করেছে পেছন থেকে কেউ ওদের গাড়ির দিকেই দেখছে. এই রে !! আবার চোখ ঘুরিয়ে নিলো অভিষেক. মেয়েটিও আবার সামনে তাকালো.
কিন্তু........মুখটা যতটা দেখতে পাচ্ছে তাতে মনে হচ্ছে.....
এই অভি ... গাড়ি চালা....সবুজ হয়ে গেছে দেখতে পাচ্ছিস না? উফফফ... কোথায় হারিয়ে যায় মাঝে মাঝে?
অভির হুশ ফিরে এলো. পেছন থেকে পেঁ পো শব্দ. তাড়াতাড়ি গাড়ি অন করলো অভি.
বাবা : ইডিয়ট একটা.. ..... ওদিকে গাড়ি ছেড়ে দিয়েছে আর উনি ওদিকে বসেই আছে.
মা : আহহহহহ্হঃ..... বার বার আমার ছেলেটাকে বকো নাতো...
ঝিলমিল ফিসফিস করে দাদাকে বললো : দেখলি কেমন বকা খেলি?
উফফফফ..... এই পাগলির জ্বালায় নিজেই না পাগল হয়ে যাই. ভাবলো অভি.
গাড়ি চালিয়ে চলে গেলো অভি. আর তাকালোনা ওই গাড়িটার দিকে. দোকান থেকে কেনাকাটার পরে ফিরে বিছানায় গা এলিয়ে দিলো অভি. সারাদিনের অফিসের ধকল, সন্ধে দোকানে গিয়ে হা করে শুধু তাকিয়ে তাকিয়ে মা বাবার কাপড় কেনা দেখা আর বোনের দুস্টুমি সামলানো সব মিলিয়ে হাপিয়ে পড়েছে. কাল শনিবার. আবার সকাল সকাল উঠে বাবা মাকে আর ওই পেত্নীটাকে নিয়ে দূরে যেতে হবে. উফফফ... কোথায় ভেবেছিলো শনিবার রবিবার আরাম করে ফিল্ম দেখে কাটাবে. Tom cruise এর নতুন ফিল্মটা এই সুযোগে বন্ধুদের সাথে গিয়ে দেখে আসবে ভেবেছিলো. গেলো সব মাটি হয়ে. এখন চলো বাবার বন্ধুর বাড়ি. সারাদিন বোর হওয়া.
মা : কিরে? এখন এমন গা এলিয়ে দিয়েছিস কেন?
অভি : না মা..... কিছুনা.... ওই একটু হাপিয়ে গেছিলাম.... সারাদিনের যা ধকল গেলো.
বাবা : সেই ধকল তো আমার ওপর দিয়েও গেলো.... কই? আমিতো তোর মতো বিছানায় গা এলিয়ে দিই নি.
অভি খুব আস্তে বললো : তুমি তো মিলিটারিদেরকেও হারিয়ে দেবে.
বাবা : কিছু বললি?
অভি : হ্যা? কই... নাতো.
বাবা : শোনো...... আমি আর তোমার মা ঠিক করেছি এবার তোমাকেও......
অভি : বাবা.... প্লিজ..... এত তাড়াতাড়ি
বাবা : কোনো প্লিজ নয়. উহ্হঃ.... কে আমার গুরুদেব এলেন রে..... এত তাড়াতাড়ি নয়. এখন নয় তো কখন শুনি? আমাদেরও তো বয়স হচ্ছে. এরপর তো একদিন....
অভি : আহঃ বাবা.... এসব আবার কি কথা?
মা : আমি তো নাতি নাতনির মুখ না দেখে কোথাও যাচ্ছিনা.
অভি : ওই দেখো.... ইনি আবার কোন কোথা কোথায় নিয়ে গেলো রে বাবা... আরে মা হচ্ছেটা কি?
মা : এবার কিন্তু আমি তোমার বাবার দলে. বাবা একদম ঠিক. আমরা তোমার জন্য এবারে মেয়ে দেখা শুরু করবো. আগে কালকের ব্যাপারটা মিটিয়ে আসি.
অভি আস্তে করে : ব্যাস....... হয়ে গেলো. বারোটা বেজে গেলো.
বাবা : আবার কিছু বললি মনে হলো.
অভি : হ্যা..... বললাম খিদে পেয়েছে... খেতে কি দেবে?
রাতে শুয়ে শুয়ে ভাবতেই লাগলো অভিষেক. এই এতদিনের স্বাধীন জীবনের বারোটা বাজবে এবারে. আগে যেখানে খুশি ঘুরতে যেতে পারতাম, বন্ধুদের সাথে আড্ডা, ফিল্ম দেখা সব করতে পারতাম. কিন্তু এবারে থেকে সব কিছুর পারমিশন নিতে হবে আরেকজনের থেকে. আগে ছিল বাবা মা আর এখন হবেন অর্ধাঙ্গিনী. এই বিছানাটা পুরো ওর দখলে ছিল. যেদিকে যেভাবে পারতো সেইভাবেই শুয়ে পড়তো. এখন এটাও আরেকজনের সাথে শেয়ার করতে হবে. আহারে আমার বিছানা. এতদিন তোর ওপর শুধু আমার অধিকার ছিল, আমার বন্ধু বিছানা রে..... এবারে আরেকজন আসবে এখানে. কিন্তু যদি তার পাশে "ও" থাকতো? তাহলে? "ওর" সাথে শুধু এই বিছানা কেন.... নিজের সব টুকু ভাগ করে নিতে অভি রাজী. মুখটা এখনও মনে ভাসছে ওর.
অভির হঠাৎ কি মনে হলো. নিজের ড্রয়িং খাতাটা আর ব্রাশ নিয়ে আঁকতে শুরু করলো অচেনা মানুষটার ছবি. চিরদিনের জন্য ও এই মুখটা মনে রাখতে চায়. ওর আঁকার হাত খুব ভালো. ওর অনেক ছবি দিয়ে ওর বাবা নিজের অফিস সাজিয়েছে. এতটাই ভালো আঁকার হাত ওর. অনেক সময় পার হয়ে গেলো ওর. কিন্তু শেষ রেজাল্ট যেটা বেরোলো.. সেটা অসাধারণ. একেবারে সেই মুখ. সেই মায়াময় চোখ, সেই মোহময়ী হাসি.
খুব ঘুম পাচ্ছে অভির. ওই ভাবেই খাতা পেন্সিল, ব্রাশ সরিয়ে শুয়ে পড়লো ও. খাতা ঐভাবেই পড়ে রইলো.
পরেরদিন তাড়াতাড়ি ওঠার কোনো ইচ্ছাই ছিলোনা অভিষেকের. সেই উঠতেই হলো.
হাতের ধাক্কায় ঘুম ভেঙে গেলো. কেউ বলছে এই ওঠ ওঠ
অভি চোখে ডলতে ডলতে : উফফফফ মা এত তাড়া কিসের? আর বাবাও না সত্যি.... এনগেজমেন্ট কালকে. আজকে থেকে যাবার কি দরকার? এই বাবাও না কিযে হঠাৎ হঠাৎ কাজ করেনা. উফফফ... আর পারা......
পুরো কোথা আর শেষ হলোনা অভির. চোখ ডলতে ডলতে ও ভেবেছিলো মায়ের সাথে কথা বলছে ও. এবারে তাকিয়ে দেখলো সামনে স্বয়ং বাঘ নিজেই দাঁড়িয়ে! এবারে শিকার হতেই হবে.
অভি : মা... বাবা ওসব কি বলছিলো নিজের বন্ধুকে? এবারে ওনার হয়ে গেলে আমাদের বাড়িতে ওনাদের ডেকে পাঠাবে... মানে কি?
মা : ঠিকই তো বলেছে তোর বাবা.. তোকেও তো এবার বিয়ে দিতে হবে নাকি?
অভি : এই বয়সে? মা আমার বয়সই বা কত.... এত তাড়াতাড়ি বিয়ে করে কি করব? না.. না বাবাকে বোঝাও....
মা : আচ্ছা তুই কি চাস? সারাজীবন আইবুড়ো হয়ে থাকবি?
অভি : তা কেন? তবে এখন কেন?
মা : এটাই ঠিক বয়স বাবা. তোর বাবারও এই বয়সেই বিয়ে হয়ে গেছিলো..... আচ্ছা তোর চিন্তা কি? তোর বাবার এত বড়ো ব্যবসা. ভগবানের আশীর্বাদে আমাদের তো কোনো রকম সমস্যার নেই. তাহলে বিয়ে করতে অসুবিধা কোথায় তোর?
অভি : মা কিন্তু.....
এবারে মা মোক্ষম অস্ত্র প্রয়োগ করলো.
মা : মেয়েটা বড়ো হচ্ছে. কদিন পর বিয়ে করে বাড়ি ছেড়ে চলে যাবে. বাড়িটা ফাঁকা হয়ে যাবে. তখন যদি আরেকটা মেয়ে পাশে থাকে তাহলে কিছুটা দুঃখ তো কমবে. তাকেই মেয়ের মতো ভালোবাসবো.
অভি : হুমমম.... খুব যে স্বপ্ন দেখছো..... তা সে যদি তোমার মনের মতো না হয়. বাবার মতো রাগী আর তোমার মেয়ের মতো আধ পাগলী হয়?
মা : আমার ছেলের জন্য কি যাকে তাকে নিয়ে আসবো নাকি? সে হবে একেবারে পরীর মতো.
অভি : মা.... আমি কি ছোট বাচ্চা নাকি? পরীর মতো... যত্তসব.
মা হেসে অভির মাথায় হাত বুলিয়ে চলে গেলো. অভিষেকের মাথায় ঘুরতে লাগলো পরীর মতো.... পরীর মতো. আজ যাকে দেখলাম সেও তো পরীর থেকে কম কিছু নয়. কি সুন্দর চোখ দুটো, হাসিটা কি অসাধারণ. সাদা সালোয়ার কামিজে সত্যি সত্যিই তো ওকে পরীর মতোই লাগছিলো. কি নাম ওর? পরীই নয়তো? বার বার ওই হাসি মুখটা ভেসে উঠছে চোখের সামনে. কি লম্বা মেয়েটা. প্রায় অভিরই হাইটের. খুব কম মেয়েই আছে ওরকম উচ্চতার এই কলকাতায়. পাখার হাওয়ায় চুলগুলো যখন মুখের ওপর চলেছে আসছিলো আর মেয়েটি সেগুলো সরাচ্ছিলো আর তারফলে চুড়ির ছন ছন শব্দ... উফফফফ আর ওই হাসিটা... ওই হাসিটা কিছুতেই ভুলতে পারছেনা অভি.
কিরে কীভাবছিস দাদা?
পরীর কথা.....
হ্যা? পরী? সেটা আবার কে?
অভির হুশ ফিরে এলো. সে বললো : কিছুনা... তুই কি করতে এলি সেটা বল?
ঝিলমিল : বাবা পাঠালো..... বললো কাল বাবা মাকে নিয়ে যেতে হবে মলে. নতুন ড্রেসের ব্যাপারে.
অভি : আরে.... এটা কি পুজোর বাজার হচ্ছে নাকি? কে না কে বাবার বন্ধুর মেয়ের এনগেজমেন্ট. তার জন্য নতুন ড্রেস কেনার কোনো মানে হয়?
ঝিলমিল : কে না কে কি বলছিস দাদা? বাবার বেস্ট ফ্রেন্ড বলে কথা. ওরা নাকি আগে দুর্গাপুরে থাকতো. 2 বছর হলো এদিকে চলে এসেছে. এখন সোদপুরে থাকে. এখানে বেহালায় কাকুর শশুরবাড়ি আছে. একবার উনি এইবাড়িতেও এসেছিলেন তখন তুই কলেজে ছিলিস আর আমি কলেজে. তাই আমাদের সাথে দেখা হয়নি.
অভি : ওহ.... তাই বুঝি?
ঝিলমিল : তাছাড়া...... স্ট্যাটাস মেইনটেইন বলে একটা ব্যাপার হয় জানিস তো? সত্যি দাদা.... তুই আর হাইফাই হলিনা... এখনও মিডলক্লাস চিন্তাধারা.... এইজন্যই বাবার কাছে এত বকা খাস.....
অভি : তবেরে ! স্টেটাস তাইনা? দাঁড়া... দাঁড়া পালাবিনা...... এদিকে আয়.
মুখ ভেংচে পালিয়ে গেলো ঝিলমিল. উফফফফ.... কি বিচ্ছু মেয়ে.
আবার কালকে বাবা মাকে নিয়ে যেতে হবে. কালকে গিয়ে যদি আবার দেখা হয়েযায় ওর সাথে? ধুর..... যত্তসব. লোকের কি আর খেয়ে দিয়ে কাজ নেই যে রোজ রোজ শপিং করতে যাবে. অভি... মাথা থেকে ওসব ঝেড়ে ফেলো.... না... একটু রেডিও শুনি.
অভিষেক ফোনে রেডিও অন করে শুনতে লাগলো. ও বাবা.... একিরে? শান্তির বদলে অশান্তি শুরু হলো. রেডিও তে বাজছে EK LADKI KO DEKHA TOH AISA LAGAA........
আরে ঘোড়ার ডিম..... আর গান ছিলোনা? এটাই বাজাতে হলো?
সেই অসাধারণ গানটা..... যেটা আজও মনে ঝড় তোলে. কিন্তু অভিষেক এখন এই গানটা শুনতে চাইনা..... ও ভুলতে চায় ওই মুখটা. কয়েক মুহূর্তের আলাপ কিন্তু কি আকর্ষণ অনুভব করছে ওই মুখটার প্রতি. কিন্তু এর যে কোনো ভবিষ্যত নেই. কে সে? তাকে তো চেনেই না অভি. তাই কোনো মানেই হয়না ওই মুখ মনে রেখে. নেহাত নাম জানলে তাও ফেসবুকে চেক করা যেত. সেই উপায়ও তো নেই.
ভুলে যাও..... ভুলে যাও অভি বাবু.. নইলে পাগল হয়ে যাবে.
নিজেকেই নিজে বোঝালো অভি. ফোন রেখে শুয়ে ঘুমোনোর চেষ্টা করতে লাগলো ও. কিন্তু মন যে বড়োই অবুঝ. সে ওতো সহজে ওকে কিছুই ভুলতে দিলোনা. বার বার ওর চোখের সামনে ভেসে উঠছে ওই মুখটা.
"আচ্ছা আপনি বলুন... ওকে দারুন লাগছে না? " উফফফফ.... কি সুন্দর গলার স্বর. যেন কতদিনের চেনা. যখন ওকে প্রশ্নটা করেছিল মেয়েটা তখনি ঘাবড়ে গেছিলো অভি. ও বেশ স্মার্ট ছেলে কিন্তু আজ যে কি হয়েছিল সে নিজেও জানেনা.
না.... না ... এটা ঠিক না.. এসব ভাবা বন্ধ কর অভি. ঘুমো ঘুমো. ঘুমিয়ে পড়.
সকালে উঠে বাবার সাথে অফিস গেলো অভি. আজ একটা জরুরি মিটিং আছে. বিকেলে মাকে রেডি হয়ে থাকতে বলেছে. ফিরেই মাকে তুলে নেবে গাড়িতে. অফিসের সারাদিনের ঝামেলা মিটিয়ে গাড়ি নিয়ে ফিরে এলো বাড়িতে. একটু ফ্রেশ হবে ভেবেছিলো কিন্তু বাবা বললো না নামতে. অরিন্দম বাবু স্ত্রীকে ফোন করে ডাকলো. নেমে এলেন ওনার স্ত্রী.
ও বাবা...... পেছন পেছন তরাং তরাং করে লাফাতে লাফাতে চলে এলেন ঝিলমিল দেবী.
অভি : একি !! ও আবার আমাদের সাথে কেন?
মা : ওমা...... মেয়েটা বাড়িতে একা থাকবে নাকি?
অভি : একা কেন? বাড়িতে রঘুদা, চাপাদি, কাজের লোক সবাই আছে.
বাবা : ও আসলেই বা তোর কি? তুই চালা.
উফফফফ.... আমি যেন গাড়ির ড্রাইভার. স্যার আদেশ দিচ্ছেন.
ট্রাফিক লাইনে গাড়ি দাঁড় করাতে হলো. আশ পাশ থেকে আরও অনেকগুলো গাড়ি ওদের গাড়ির পাশে এসে থামলো. অভিষেক এদিক ওদিক তাকাচ্ছে. ঠিক ওদের সামনে দাঁড়ানো গাড়িটায় চোখ গেলো ওর.
কে ওটা? অনেক গুলো মেয়ে রয়েছে গাড়িতে বোঝা যাচ্ছে. কিন্তু একটা মুখ কেমন যেন চেনা চেনা লাগছে না? ওটা কি তাহলে?
চোখের চশমাটা সেট করে তীক্ষ্ণ চোখে দেখার চেষ্টা করলো. একবার মনে হলো মেয়েটা হাসতে হাসতে পেছনে ওর দিকে তাকালো. মেয়েটিও লক্ষ্য করেছে পেছন থেকে কেউ ওদের গাড়ির দিকেই দেখছে. এই রে !! আবার চোখ ঘুরিয়ে নিলো অভিষেক. মেয়েটিও আবার সামনে তাকালো.
কিন্তু........মুখটা যতটা দেখতে পাচ্ছে তাতে মনে হচ্ছে.....
এই অভি ... গাড়ি চালা....সবুজ হয়ে গেছে দেখতে পাচ্ছিস না? উফফফ... কোথায় হারিয়ে যায় মাঝে মাঝে?
অভির হুশ ফিরে এলো. পেছন থেকে পেঁ পো শব্দ. তাড়াতাড়ি গাড়ি অন করলো অভি.
বাবা : ইডিয়ট একটা.. ..... ওদিকে গাড়ি ছেড়ে দিয়েছে আর উনি ওদিকে বসেই আছে.
মা : আহহহহহ্হঃ..... বার বার আমার ছেলেটাকে বকো নাতো...
ঝিলমিল ফিসফিস করে দাদাকে বললো : দেখলি কেমন বকা খেলি?
উফফফফ..... এই পাগলির জ্বালায় নিজেই না পাগল হয়ে যাই. ভাবলো অভি.
গাড়ি চালিয়ে চলে গেলো অভি. আর তাকালোনা ওই গাড়িটার দিকে. দোকান থেকে কেনাকাটার পরে ফিরে বিছানায় গা এলিয়ে দিলো অভি. সারাদিনের অফিসের ধকল, সন্ধে দোকানে গিয়ে হা করে শুধু তাকিয়ে তাকিয়ে মা বাবার কাপড় কেনা দেখা আর বোনের দুস্টুমি সামলানো সব মিলিয়ে হাপিয়ে পড়েছে. কাল শনিবার. আবার সকাল সকাল উঠে বাবা মাকে আর ওই পেত্নীটাকে নিয়ে দূরে যেতে হবে. উফফফ... কোথায় ভেবেছিলো শনিবার রবিবার আরাম করে ফিল্ম দেখে কাটাবে. Tom cruise এর নতুন ফিল্মটা এই সুযোগে বন্ধুদের সাথে গিয়ে দেখে আসবে ভেবেছিলো. গেলো সব মাটি হয়ে. এখন চলো বাবার বন্ধুর বাড়ি. সারাদিন বোর হওয়া.
মা : কিরে? এখন এমন গা এলিয়ে দিয়েছিস কেন?
অভি : না মা..... কিছুনা.... ওই একটু হাপিয়ে গেছিলাম.... সারাদিনের যা ধকল গেলো.
বাবা : সেই ধকল তো আমার ওপর দিয়েও গেলো.... কই? আমিতো তোর মতো বিছানায় গা এলিয়ে দিই নি.
অভি খুব আস্তে বললো : তুমি তো মিলিটারিদেরকেও হারিয়ে দেবে.
বাবা : কিছু বললি?
অভি : হ্যা? কই... নাতো.
বাবা : শোনো...... আমি আর তোমার মা ঠিক করেছি এবার তোমাকেও......
অভি : বাবা.... প্লিজ..... এত তাড়াতাড়ি
বাবা : কোনো প্লিজ নয়. উহ্হঃ.... কে আমার গুরুদেব এলেন রে..... এত তাড়াতাড়ি নয়. এখন নয় তো কখন শুনি? আমাদেরও তো বয়স হচ্ছে. এরপর তো একদিন....
অভি : আহঃ বাবা.... এসব আবার কি কথা?
মা : আমি তো নাতি নাতনির মুখ না দেখে কোথাও যাচ্ছিনা.
অভি : ওই দেখো.... ইনি আবার কোন কোথা কোথায় নিয়ে গেলো রে বাবা... আরে মা হচ্ছেটা কি?
মা : এবার কিন্তু আমি তোমার বাবার দলে. বাবা একদম ঠিক. আমরা তোমার জন্য এবারে মেয়ে দেখা শুরু করবো. আগে কালকের ব্যাপারটা মিটিয়ে আসি.
অভি আস্তে করে : ব্যাস....... হয়ে গেলো. বারোটা বেজে গেলো.
বাবা : আবার কিছু বললি মনে হলো.
অভি : হ্যা..... বললাম খিদে পেয়েছে... খেতে কি দেবে?
রাতে শুয়ে শুয়ে ভাবতেই লাগলো অভিষেক. এই এতদিনের স্বাধীন জীবনের বারোটা বাজবে এবারে. আগে যেখানে খুশি ঘুরতে যেতে পারতাম, বন্ধুদের সাথে আড্ডা, ফিল্ম দেখা সব করতে পারতাম. কিন্তু এবারে থেকে সব কিছুর পারমিশন নিতে হবে আরেকজনের থেকে. আগে ছিল বাবা মা আর এখন হবেন অর্ধাঙ্গিনী. এই বিছানাটা পুরো ওর দখলে ছিল. যেদিকে যেভাবে পারতো সেইভাবেই শুয়ে পড়তো. এখন এটাও আরেকজনের সাথে শেয়ার করতে হবে. আহারে আমার বিছানা. এতদিন তোর ওপর শুধু আমার অধিকার ছিল, আমার বন্ধু বিছানা রে..... এবারে আরেকজন আসবে এখানে. কিন্তু যদি তার পাশে "ও" থাকতো? তাহলে? "ওর" সাথে শুধু এই বিছানা কেন.... নিজের সব টুকু ভাগ করে নিতে অভি রাজী. মুখটা এখনও মনে ভাসছে ওর.
অভির হঠাৎ কি মনে হলো. নিজের ড্রয়িং খাতাটা আর ব্রাশ নিয়ে আঁকতে শুরু করলো অচেনা মানুষটার ছবি. চিরদিনের জন্য ও এই মুখটা মনে রাখতে চায়. ওর আঁকার হাত খুব ভালো. ওর অনেক ছবি দিয়ে ওর বাবা নিজের অফিস সাজিয়েছে. এতটাই ভালো আঁকার হাত ওর. অনেক সময় পার হয়ে গেলো ওর. কিন্তু শেষ রেজাল্ট যেটা বেরোলো.. সেটা অসাধারণ. একেবারে সেই মুখ. সেই মায়াময় চোখ, সেই মোহময়ী হাসি.
খুব ঘুম পাচ্ছে অভির. ওই ভাবেই খাতা পেন্সিল, ব্রাশ সরিয়ে শুয়ে পড়লো ও. খাতা ঐভাবেই পড়ে রইলো.
পরেরদিন তাড়াতাড়ি ওঠার কোনো ইচ্ছাই ছিলোনা অভিষেকের. সেই উঠতেই হলো.
হাতের ধাক্কায় ঘুম ভেঙে গেলো. কেউ বলছে এই ওঠ ওঠ
অভি চোখে ডলতে ডলতে : উফফফফ মা এত তাড়া কিসের? আর বাবাও না সত্যি.... এনগেজমেন্ট কালকে. আজকে থেকে যাবার কি দরকার? এই বাবাও না কিযে হঠাৎ হঠাৎ কাজ করেনা. উফফফ... আর পারা......
পুরো কোথা আর শেষ হলোনা অভির. চোখ ডলতে ডলতে ও ভেবেছিলো মায়ের সাথে কথা বলছে ও. এবারে তাকিয়ে দেখলো সামনে স্বয়ং বাঘ নিজেই দাঁড়িয়ে! এবারে শিকার হতেই হবে.
কেমন লাগলো নতুন আপডেট.
জানাবেন বন্ধুরা. ভালো লাগলে লাইক এবং রেপুটেশন দিতে পারেন. ধন্যবাদ.