Thread Rating:
  • 17 Vote(s) - 3.41 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
Romance রোদে ভেজা তিলোত্তমা Written By pinuram
#16
রোদে ভেজা তিলোত্তমা (#০৭)

যদিও ষষ্টি থেকে কলেজের ছুটি কিন্তু মহালয়ার পর থেকেই আমাদের কলেজে আসা এক প্রকার বন্ধ হয়ে গেল আর সেই সাথে মধুছন্দার সাথে নিয়মিত দেখা হওয়া বন্ধ হয়ে গেল। এমন দুষ্টু মেয়ে শেষ দিনে বলে পর্যন্ত গেল না কোলকাতায় থাকবে না জলপাইগুড়ি যাবে। অনু ঠিক শুঁকে শুঁকে গন্ধ পেয়ে গেল আমাদের ব্যাপারে আর তারপর থেকেই আমার পেছনে লাগতে শুরু করে দিল। ওকে জিজ্ঞেস করলেই খ্যাপাতে শুরু করে দেয়, আমি যে ঘোড়া ডিঙ্গিয়ে ঘাস খেয়েছি তাই ছন্দার কোন ব্যাপারে আমাকে কিছুই জানাতে রাজি নয়। ওই পুজোতে আমার ঘাড় ভেঙ্গে এক জোড়া জুতো কিনলো। জুতো কিনতে যাবার দিনেও ওকে কত অনুরোধ করলাম একবারের জন্য ছন্দাকে ডেকে নিতে, কিন্তু শয়তানি হাসি দিয়ে জানিয়ে দিল যে ছন্দার কোন খবর ওর কাছে নেই। আমাদের বাড়িতে একটাই টেলিফোন ছিলো, সেই টেলিফোন আবার এক তলার বৈঠক খানায়। একবার রিং বেজে উঠলে সবাই হুমড়ি খেয়ে পড়ে, কার ফোন এলো কার ফোন এলো। ওই বারোয়ারি ফোন থেকে প্রেমালাপ করা কেন সামান্য কথা বলা অসম্ভব ব্যাপার। বাবা জ্যাঠা কাকা ছাড়া বিশেষ কারুর ফোন আসতো না। মাঝে মাঝে দুর্গাপুর থেকে বড়দির ফোন আসতো, আর সেই সময়ে বড়দির সাথে কথা বলার জন্য লাইন লেগে যেত।

বাবা জেঠা পুজোর কর্তা, কিন্তু আমাদের মানে আমি, নবীন, বিষ্টু, বাপ্পা এদের মাথায় সব কাজের ভার এসে পড়তো। ডেকোরেটারের কাছে দৌড়ানো থেকে রান্নার লোক খোঁজা। মা জেঠিমার বয়স হয়েছে, রান্নায় যোগদান দিলেও একটু আধটু হাতা খুন্তি নাড়া ছাড়া বিশেষ কিছুই করতে পারে না। মা জেঠিমার পরের প্রজন্মের হাতে তখন রান্নার ভার, কিন্তু আমার কাকিমা হেঁসেলে যায় না বললেই চলে। নন্দ কাকিমা আর অনুর ছোট কাকিমা শ্রেয়সী, আজকাল রান্নার তদারকি করে, তবে জেঠিমার হাতের পায়েস আজও অমৃত। সবাই পাত চেটে খেয়ে যায়।

চতুর্থীর আগের রাতে শিব মন্দির মাঠের পাশের তাল দীঘির ঘাটে আমি নবীন দেবু আর বাপ্পা আয়েশ করে সিগারেট টানছি। মন্দির মাঠের একপাশে দুর্গা মন্ডপ অন্য দিকে যাত্রা পালার জন্য মঞ্চ বাঁধা হয়েছে। মন্টু গুপ্ত আসতে পারবে না কিন্তু হাতিবাগানের এক নামকরা নাট্য কম্পানি অষ্টমীর রাতে যাত্রা পালা করতে আসছে। ওদিকে দেবুর ঘ্যানর ঘ্যানর আরো বেড়ে গেল।

সিগারেটে টান মেরে দেবু কানের কাছে ভ্যান ভ্যান করে বললো, "প্লিস পুটু, আমার একটা হিল্লে করে দে।"

আমি বললাম, "কি হয়েছে, নিজে থেকে বলতে কেন পারিস না।"

দেবু মিন মিন করে বললো, "কথা বলতে গেলেই তেড়ে আসে যে, কি করে মনের কথা বলি বলতো। অত দামী একটা হাতির দাঁতের লকেট দিলাম, তাও যে সুন্দরীর মন গলাতে পারলাম না।"

নবীন একটু তফাতে বসে ছিলো সেই খান থেকে চেঁচিয়ে বললো, "আমাদের দুইজন কে আমিনিয়ায় ভালো করে খাওয়া তবে ভেবে দেখবো।"

দেবু ওর ওপরে খেপে গিয়ে বলতো, "শুয়োর রোজ দিন এক প্যাকেট চারমিনার মারিস, তাতেও তোর মন ভরে না?"

আমি ওকে বললাম, "এক কাজ করিস, এবারে পুজোতে আমাদের পাড়ায় চলে আসিস। একটা হিল্লে হয়ে যাবে তোর।"

বাপ্পা ওকে জিজ্ঞেস করলো, "শালা পাড়ার মেয়েকে হাতিয়ে নিয়ে বেড়িয়ে যাবি, আমরা কি পাবো, লবডঙ্কা?"

নবীন হঠাৎ সিগারেট ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়ে দেবুর দিকে শান্ত অথচ গম্ভীর ভাবে তাকিয়ে বললো, "শোন দেবু, অনুকে বুঝাতে পারি বলতে পারি এই মাত্র, তবে জোর করবো না। যদি অনু মেনে নেয়, তাহলে বিয়ে পর্যন্ত তোদের পাশে থাকবো, ওর বাড়িকে মানিয়ে নেওয়ার দায়িত্ত আমার আর পুটুর। কিন্তু একটা কথা মনে রাখিস। কোনোদিন যদি অনুর চোখে জল দেখেছি, কাল হোক কি ত্রিশ বছর পরে হোক, যেখানে থাকবি সেখানে গিয়ে তোকে কেটে ওইখানে পুঁতে রেখে আসবো।"

অনু আমাদের চোখের মণি সেটা দেবু সেদিন হাড়ে হাড়ে টের পেল। নবীনের মুখে ওই গুরু গম্ভীর বার্তা শোনার পরে গুম মেরে গেল। আমি ওকে দুইজনকে শান্ত করে বললাম, যে জীবনের এখন অনেক বাকি কে কখন কোথায় কি অবস্থায় থাকবে সেটার ঠিক নেই। ভবিষ্যৎ নিয়ে এখুনি মাথা ব্যাথা করে কোন লাভ নেই, সময়কে তার নিজের প্রবাহে ছেড়ে দেওয়া বুদ্ধিমানের কাজ।

পঞ্চমীর দিন বিকেলেই বড়দি আর ভাগ্নে ভাগ্নি বাড়িতে এসে গেল। বাড়ির সব থেকে ছোট ভাগ্নি, বুবাই থপথপ করে সারা ঘর ময় ঘুরে বেরায়। নবীন আসলেই ওর বেশি মজা কারন নবীন ওকে নিয়ে ঘুরতে যায়, কোল্ড ড্রিঙ্কস কিনে দেয়, কাঁধে করে মেলায় নিয়ে যায়। নৈহাটি থেকে বড় মামা সবার জন্য নতুন কাপড় নিয়ে এসে গেছে, বড় মামা মানে জেঠিমার বড় ভাই, সেই সকলের বড় মামা। নৈহাটিতে খুব বড় কাপড়ের দোকান, আমাদের বাড়ির অধিকাংশ জামা কাপড় মামার দোকান থেকেই আসে, কথায় আছে মামা বাড়ির আবদার সেটাই খাটাই তাঁর ওপরে।

ক্লাস টেনের পরে আর চক্ষু দান দেখা হয়ে ওঠেনি আমাদের। ছোড়দি একবার আমাকে জিজ্ঞেস করলো চক্ষু দান দেখতে যাবো কি না। কিছু একটা ভেবে শেষ পর্যন্ত যাবো বলে ঠিক করলাম।

খাওয়া দাওয়া সেরে রাত এগারোটা নাগাদ মন্ডপের দিকে হাঁটা দিলাম, যাওয়ার আগে নবীন আর বাপ্পাকে ডেকে নিলাম। দুইজনে আমাকে জিজ্ঞেস করলো অনুকে ডাকতে, আমি জানিয়ে দিলাম পাড়ার পুজো ইচ্ছে হলে আসবে না ইচ্ছে হলে আসবে না আমি কারুর পায়ে তেল মাখিয়ে ডাকতে যেতে পারছি না। 
ওদিকে নন্দন পাল রঙ তুলি নিয়ে তৈরি, চক্ষু দান দেখতে অনেকেই এসেছে। ধিরে ধিরে কাঁপা কাঁপা হাতে মায়ের মুখের ওপর থেকে কাপড় সরিয়ে নন্দন পাল সরু তুলি দিয়ে চোখ আঁকা শুরু করে দিলেন। প্রায় ছয় বছর পরে মায়ের প্রতিমার চক্ষু দান দেখে মন হারিয়ে গেল, আপনা হতেই মাথা নুইয়ে এলো ওই কাঠ মাটির বিগ্রহের সামনে। মাটির প্রতিমা আর মাটির রইলো না, প্রানবন্ত হয়ে উঠে দশ হাতে নির্মল চোখে আমাদের সবার দিকে তাকিয়ে আশীর্বাদ করছেন।

আলতো হাতের ছোঁয়াতে সম্বিত ফিরে এলো সেই সাথে নাকে ভেসে এলো অতি পরিচিত সুবাস। কানে এল অতি পরিচিত অতি আকাঙ্খিত কণ্ঠস্বর, "যতই এটম ইলেকট্রন হোক না কেন, এই মাটির বিগ্রহের মহিমা আলাদা, তোর মাথা ঠিক নুয়াতেই হলো।"

আমি অবাক হয়ে ঘুরে দাঁড়িয়ে দেখি ছন্দাকে সাথে নিয়ে আমার পেছনে অনু দাঁড়িয়ে। অমি কিছু বলতে যাবার আগেই অনু আমাকে চুপ করে থাকতে বললো কারন আমার বাবা আর জেঠা মশায় মন্ডপে এসে গেছেন, সেই সাথে বেশ কয়েকজন কর্তা ব্যাক্তি। কালো প্রারম্ভ পুজো শুরু হবে কয়েক ঘন্টা পরেই। আমি এপাশ অপাশ তাকিয়ে চুপচাপ মন্ডপ থেকে বেড়িয়ে এলাম, সবার চোখ আড়াল করে পেছন পেছন ছন্দাও বেড়িয়ে এলো।

আমি ওকে অন্ধকারে টেনে নিয়ে জিজ্ঞেস করলাম, "তোর কি ব্যাপার বলত? বলা নেই কওয়া নেই।"

আমার গালে আলতো চাপর মেরে বললো, "কেমন চমক দিয়েছি বল।"

আমি ওকে কাছে টানতে গেলাম কিন্তু কিছুতেই কাছে আসবে না, না না বলে লাজুক হেসে একটু তফাতে দাঁড়িয়ে বললো, "সেই বিকেলে এসেছি আর অনুর ঘরের জানালা থেকে তোকে শুধু ঘর বাহির করতে দেখে গেলাম।"

আমি ওকে জিজ্ঞেস করলাম, "একবার ডাক দিলেই পারতিস, ডাকলি না কেন?"

মিচকি হেসে বললো, "তাহলে এই চমকের কি মানে হতো?"

আমি বললাম, "যদি না আসতাম তাহলে কি করতিস?"

আমার কাছে সরে এসে বললো, "অনু প্লান করেই ছিলো, যদি তুই না আসতিস তাহলে ও তোকে জোর করে বাড়ি থেকে তুলে আনতো।"

আকাশ পানে তাকিয়ে বললো দুষ্টু মিষ্টি কণ্ঠে বললো, "তোর খুব ইচ্ছে ছিলো একসাথে রাত কাটানোর, দেখ তোর ইচ্ছে পুরন হয়ে গেল। আমি আর তুই একা এই রাতে এই খোলা আকাশের তলায়।"

আমি ওর কাঁধে আলতো ধাক্কা মেরে বললাম, "একা যখন তখন নিশ্চয় সংকোচ বোধ চলে গেছে।"

ভুরু কুঁচকে আমার দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করলো, "মানে?"

আমি ওকে হেসে বললাম, "মানে আর কি, আমি আর তুই একা নির্জনে নিভৃতে কি হতে পারে সেটা বুঝে নে।"

এই বলেই ওর হাত ধরে টেনে আনলাম। টাল সামলাতে না পেরে আমার শরীরের ওপরে ঢলে পরে গেল আর সেই সাথে আমি ওর কোমর জড়িয়ে বুকের কাছে টেনে নিলাম। আধো আলো অন্ধকারে ওর চোখ দুটি চকচক করে উঠলো, সেই সাথে আমার মনে হল ওকে পিষে দেই। ওদিকে ঢাকের বাদ্যি বেশ জোরে বেজে উঠলো, মাথা নামাতে গিয়েও আর নামান হল না ঠোঁটের জায়গায় ওর নরম গালের ওপরে চুম্বন এঁকে ক্ষান্ত হতে হলো।

কোনোরকমে আমার বাহুপাশ ছাড়িয়ে আমাকে একটু ঠেলে দিয়ে বললো, "দিনে দিনে খুব শয়তান হয়ে যাচ্ছিস তুই।"

ঠিক সেই সময়ে অনু এসে গেল আর ধড়মড় করে ছন্দাকে ছেড়ে আমি একটু তফাৎ দাঁড়িয়ে পড়লাম। অনু আমাদের দুইজনকে দেখে হেসে বললো, "সারা রাত কি এখানে দাঁড়িয়ে থাকবি না বাড়ি যাবার ইচ্ছে আছে? এই ছন্দা, দেড়টা বাজে কিন্তু।"

ছন্দার অবস্থা ত্রিশঙ্কুর মতন। একদিকে আমি মুখ কাঁচুমাচু করে দাঁড়িয়ে, অন্য দিকে অনু ডাক দিচ্ছে বাড়ি ফেরার জন্য। আমার একদম ইচ্ছে ছিলো না যে অনু ছন্দার সাথে চলে যাক আর সেই এক ভাবব্যাক্তি ছন্দার সারা চেহারায় ফুটে উঠেছিলো, বুঝতে পারলাম যে বিধি বাম। আমি অনুকে অনুরোধ করলাম যে পরে ছন্দাকে বাড়ি পৌঁছে দেবো।

ছন্দা মুখ কাচুমাচু করে অনুর কাছে গিয়ে বললো, "দয়া করে কিছু একটা কর।"

অনু ওর গাল টিপে মিচকি হেসে বললো, "বাঃরে, এতদিন গাছে জল দিলাম আমি, বড় করলাম আমি আর একদিনে এসে টুক করে ফল পেড়ে খেয়ে নিলি? ওইসবে ভবি ভুলবে না, কিছু ঘুষ দিতে হবে!"

আমি অনুকে বললাম, "এই মেলা বাজে বকিস না, তোকে জুতো কিনে দিয়েছি আর তুই এইটুকু করতে পারবি না?"

অনু আমাকে বললো, "ঠিক আছে কিন্তু খুব সাবধানে। মন্ডপে কিন্তু বাড়ির অনেকে বসে আছে। একটু পরে কাল প্রারম্ভ শুরু হবে এই ঘাটে কিন্তু জেঠিমা আর মা জল ভরতে আসবে।"

আমি মাথা নাড়িয়ে বললাম, "হুম বড় সমস্যা বটে। তোদের চিলেকোঠা ঘরে গিয়ে আড্ডা মারা যেতে পারে।"

শেষমেশ তাই ঠিক হলো। ওদের চিলেকোঠা ঘরে আড্ডা মারা যাবে। অনু এক দৌড়ে আমার ছোড়দিকে জানিয়ে এলো যে আমি রাতে ওদের বাড়িতে থাকবো। আমাদের বাড়ির কেউ ছন্দাকে চিনতো না, তাই অনুর সাথে ওদের বাড়ি যাওয়াতে কারুর মনে কোন সন্দেহ হলো না।

""পৃথিবীটা রঙ্গমঞ্চ আমরা সবাই অভিনেতা"" !! Sad

[+] 1 user Likes Kolir kesto's post
Like Reply


Messages In This Thread
RE: রোদে ভেজা তিলোত্তমা Written By pinuram - by Kolir kesto - 07-07-2020, 07:22 PM



Users browsing this thread: 5 Guest(s)