07-07-2020, 11:14 AM
সপ্তম পরিচ্ছদ – এই আমাদের পৃথিবী
(#০১)
ভাস্কর – সেটা খুব ভাল। আমি মা কে বলে দেখবো।
(#০১)
কিছুদিন পরে মানসী আর ভাস্কর স্বপনের বাড়ি যায়। কিছুক্ষন গল্প করে। মাসীর বাড়ির কথা বলে। স্বপন আর নীহারিকা দুজনেই খুব খুশী হয়।
মানসী – স্বপন আমি অনেকদিন একটা কথা শুনে এসেছি
স্বপন – কি ?
মানসী – অভাগা যেদিকে চায়, সাগর শুকায়ে যায়
স্বপন – তাতে কি হল
মানসী – আমি এতদিন ভাবতাম আমিও অভাগা আর যেদিকেই যাই না কেন, কোন সমাধান পাই না।
নীহারিকা – স্বপন কে তো অনেকদিন আগেই পেয়েছ।
মানসী - আর স্বপন তো আমার মরুদ্যান। বাকি সব দিকে ধু ধু বালি দেখে এসেছি।
স্বপন – আজ কি আলাদা দেখলে ?
মানসী – আজ দেখছি ওই কথাটা ঠিক নয়। কোন না কোন দিকে জল ঠিক পাওয়া যায়।
স্বপন – আসলে কি জানো এতদিন তুমি আর ভাস্কর মরুভুমির মাঝে দাঁড়িয়ে সমুদ্র খুঁজেছ। তাই শুধু দু একটা মরুদ্যান খুঁজে পেয়েছ। জল পেতে হলে তোমাকে মরুভুমির থেকে বাইরে আসতে হবে সেটা তোমরা ঠিক বোঝো নি।
ভাস্কর – তবে আজ কি করে আমরা মরুভুমি থেকে বেরিয়ে আসলাম !
স্বপন – তোমরা দুজনেই একটা অদৃশ্য লক্ষন রেখার মাঝে আটকে ছিলে। আজ দুজনেই সেই গণ্ডি অগ্রাহ্য করে বেরিয়ে এসেছ। ইংরাজিতে একটা কথা আছে – You have to come out of the box. তোমরা এতদিন সেই বাক্সের ভেতরে বসে জীবন খুঁজেছ।
মানসী – তবে কি আমরা কোন সময়েই কোন গণ্ডির মধ্যে থাকবো না ?
স্বপন – দেখো নিষেধের সীমারেখা বা শৃঙ্খলার নিয়ম আর virtual বা কাল্পনিক লক্ষন রেখা একটা ভিত্তিহীন বাধা। যে সীতার মত অবলা নারী – তার পক্ষে সেই গণ্ডি পার হওয়া সম্ভব নয় বা উচিতও নয়। কিন্তু তুমি তো সেই আগেকার দিনের ‘অবলা নারী’ নও।
নীহারিকা – কিন্তু বাড়ির লোক আমাদের সেই ভাবেই দেখতে চায়।
স্বপন – আমাদের সেই বাধা শুরুতেই ভেঙ্গে দিতে হবে
ভাস্কর – এখন কি করবো আমরা ?
স্বপন – মান্না দের সেই গানটা মনে করো – “তুমি আর আমি আর আমাদের সন্তান, এই আমাদের পৃথিবী, তুমি সুর আমি কথা, মিলে মিসে হয় গান, এই আমাদের পৃথিবী।”
মানসী – মনে করলাম, তারপর ?
স্বপন – এবার তোমাদের পৃথিবী বানাতে লেগে পড়ো।
মানসী – তুমি আর আমি না হয় হল, সন্তান কোথায় পাবো ?
স্বপন – তোমরা তোমাদের পৃথিবী বানাও, আমি সন্তানের ব্যবস্থা করে দেবো ।
নীহারিকা – কি করে করবে ?
স্বপন – তোমাকে চিন্তা করতে হবে না। সময় হলে ঠিক জানতে পারবে।
নীহারিকা – আমার বাবা মাঝে মাঝে তোমায় ভীষণ ভয় করে।
ওরা চারজনে মিলে অনেকক্ষণ আলোচনা করে। প্রথমেই বিয়ের তারিখ ঠিক করে।
মানসী – আমার বিয়ের তারিখ আমি ঠিক করবো !!??
স্বপন – তবে কে ঠিক করবে
মানসী – একবার দাদার সাথে কথা বলবো না ?
নীহারিকা –এই মেয়েটা সত্যি কোনদিন মানুষ হবে না !
স্বপন – তোমার দাদা তোমার বিয়ে দিতে চায় ?
মানসী – মনে হয় না
স্বপন – তোমার দাদা ভাস্কর কে পছন্দ করে ?
মানসী – একদম না
স্বপন – তোমার দাদাকে ভাস্করের সাথে বিয়ের কথা বললে দাদা রাজী হবে ?
মানসী – মনে হয় না
স্বপন – তবে নিজের রাস্তা নিজে বানাও। অন্যের বানানো রাস্তায় হাঁটার স্বপ্ন দেখো না।
ওদের বিয়ের তারিখ ঠিক হয় ২০১২ সালের ২২-শে এপ্রিল, রবিবার। আর দেড় মাস মত বাকি।
মানসী – কাকে কাকে নিমন্ত্রণ করতে হবে ?
স্বপন – একদম কাছের মানুষদের
মানসী – আর প্যান্ডেল ?
স্বপন – তুমি কি প্যান্ডেল করবে ?
মানসী – প্যান্ডেল ছাড়া বিয়ে কোথায় করবো ?
নীহারিকা – আমার বোনের যে ভাবে বিয়ে হয়েছে, ঠিক সেই ভাবে।
অপ্রাসঙ্গিক হলেও এখানে বলে রাখি স্বপন নীহারিকার বোনের বিয়ে একজন বাঙালি খ্রিস্টান ছেলের সাথে দিয়েছে। আর ওর বিয়ে রেজিস্ট্রি করে একটা হোটেলে হয়েছিল। স্বপন সেই রেজিস্ট্রার কে চিনতো, তাই ও বলে বিয়ের সব ব্যবস্থা ওই করবে।
মানসী – জানো আমার স্বপ্ন ছিল সুন্দর প্যান্ডেল করে, অনেক আলো জ্বালিয়ে, কয়েকশো লোকের মাঝে আমি হালকা লাল বেনারসি পরে ছাদনা তলায় বিয়ে করবো।
স্বপন শুনে একটু চুপ করে থাকে। তারপর মানসীর হাত দুটো নিজের বুকের মধ্যে চেপে ধরে কেঁদে ফেলে।
নীহারিকা – কি হল কাঁদছ কেন ?
স্বপন – আমি আমার সব থেকে প্রিয় বন্ধুর এই স্বপ্ন পুরন করতে পারবো না।
ভাস্কর হতভম্ব হয়ে যায়। মানসীও একটু অপ্রস্তুত হয়ে পরে। একটু সামলিয়ে নিয়ে ও স্বপনের হাত ছাড়িয়ে ওর মাথায় হাত রাখে।
মানসী – তুমি আমার বিয়ে দিচ্ছ এই অনেক বেশী। যে ভাবে সম্ভব সেই ভাবেই বিয়ে দাও। আমি তাতেই খুশী থাকবো। তুমি ছাড়া বাকি সবাই সহানুভুতি জানায়, কেউ এগিয়ে আসে না।
স্বপন – তবু আমি তোমার স্বপ্নের কথা মনে রাখবো।
ভাস্কর – আমি আমার মাকে জানিয়ে দিয়েছি আমার বিয়ের কথা।
মানসী – তাই ! শুনে মা কি বললেন ?
ভাস্কর – মা খুশিই হল। বলল যে উনি তো বিয়ে দিতে পারেন নি। তাই আমি যাকে পছন্দ করে বিয়ে করবো তাতে কোন আপত্তি নেই।
স্বপন – খুব ভাল কথা
ভাস্কর – মায়ের শুধু একটা ইচ্ছে আছে
মানসী – কি ?
ভাস্কর – আমরা যেন বিয়ে করে একবার বাড়ি যাই, মা তোমাকে বরন করবে। তারপর আমরা আমাদের যেখানে ভাল লাগে সেখানে গিয়ে থাকবো।
স্বপন – আমার মনে হয় মানসী বিয়ের পরে তিন রাত্রি তোমার বাড়ি থাকবে। তুমি মাকে বলে রাখবে সেই তিনদিন যেন তোমার সেই ভুদেব কাকু না আসেন।
ভাস্কর – সেটা খুব ভাল। আমি মা কে বলে দেখবো।
""পৃথিবীটা রঙ্গমঞ্চ আমরা সবাই অভিনেতা"" !!