06-07-2020, 10:29 PM
ষষ্ঠ পরিচ্ছদ – সবাইতো সুখী হতে চায়
(#৬)
শনিবার সকালে ওরা তিনজনে স্বপনের বাড়ি যায়। মানসী যেতে চাইছিল না। কিন্তু সৃজা জোর করে নিয়ে যায়। স্বপন সেদিন আর অফিস যায়নি। স্বপনের বাড়ি পৌঁছেই সৃজা হাউ মাউ করে স্বপনের কাছে বাবার নামে নালিশ করতে শুরু করে। ও যে কি বলছিল স্বপন কিছুই বোঝে না। সৃজা থামলে স্বপন দীপ্তিকে বলে, “এবার বল কি হয়েছে ।”
সৃজা – এতক্ষন আমি কি বললাম
স্বপন – তুই হুর হুর করে কি বললি কিছুই বুঝলাম না
সৃজা – আমার ভীষণ রাগ হচ্ছে। কিন্তু তুমি ছাড়া আর কারো কাছে বলতে পারছি না
স্বপন – আমি কি তোর বাবাকে বকে দেব না তোর বাবা আমার কথা শুনবে
সৃজা – না তুমি বকবে না। কিন্তু জান বাবা শুধু তোমাকেই ভয় পায়।
স্বপন – হ্যাঁ দীপ্তি বলো ঠিক কি হয়েছে।
দীপ্তি সেদিন যা যা কথা হয়েছে সব বলে।
স্বপন – বড়দা বিয়ে করবে সেতো ভাল কথা
সৃজা – তোমার রাগ হচ্ছে না ?
স্বপন – কেন রাগ হবে ?
সৃজা – রাঙ্গাপির বিয়ে না দিয়ে নিজে আবার বিয়ে করছে !
স্বপন – রাঙ্গাদির বিয়ে দিচ্ছে না সেটা ওনার নিজের বিয়ের থেকে আলাদা
সৃজা – কেন আলাদা ?
স্বপন – বড়দা একটু দাদাগিরি করে, শুধু টাকা চেনে। সব মেনে নিলাম। কিন্তু উনি রাঙ্গাদির বিয়ে দেওয়া ছাড়া বাড়ির বাকি সব দায়িত্ব পালন করেছেন। তাই না ?
মানসী – হ্যাঁ দাদা সব কিছুই করেছে
স্বপন – সৃজা তুই বল
সৃজা – হ্যাঁ সেসব করেছে
স্বপন – তোর বাবার কাছে সাহায্য চেয়ে পাসনি সেরকম কখন হয়েছে ?
সৃজা – না হয় নি
দীপ্তি – সে দিক থেকে বড়দা আমাদের বাড়ির সত্যিকারের গার্জেন।
স্বপন – ওনার কোন খারাপ অভ্যেস আছে ?
সৃজা – না, মদ বা সিগারেট খায় না।
স্বপন – মেয়েদের নিয়ে ঘোরে ?
সৃজা – আমরা দেখিনি বা জানিনা
স্বপন – সৃজা তোর কত দিন বিয়ে হয়েছে ?
সৃজা – এক বছর হল প্রায়
স্বপন – তুই মানব কে ছাড়া আর সেক্স ছাড়া থাকতে পারবি ?
সৃজা – বেশীদিন পারবো না
স্বপন – এখন সেক্স কেমন লাগে ?
সৃজা – খুব ভাল
স্বপন – বিয়ের আগে তোর সেক্স নিয়ে এই অ্যাডিকসন ছিল ?
সৃজা – বিয়ের আগে সেক্স জানতাম। কিন্তু তার কি মজা সেটা তো জানতাম না।
স্বপন – আর এখন
সৃজা – এখন সারাদিন মনে হয় কখন রাত্রি হবে আর মানবের কাছে যাবো। কিন্তু পিসে তুমি ভীষণ অসভ্য আমাকে দিয়ে কিসব বলিয়ে নিলে। আর আমার আসল কথা ভুলে গেলে।
স্বপন – না না ভুলিনি। এবার বল বড়দার কতদিন হল একা আছেন ?
সৃজা – মা প্রায় ২০ বছর হল মারা গেছেন
স্বপন – বড়দা এতদিন সেক্স ছাড়া আছেন
সৃজা – হ্যাঁ তাই
স্বপন – বড়দা চাইলে আগেও বিয়ে করতে পারতেন
মানসী – বড়দাকে অনেকে অনেকবার বলেছে বিয়ে করবার জন্যে। কিন্তু দাদা মেয়ের বিয়ে না দিয়ে কোন কিছু ভাবেন নি।
স্বপন – রাঙ্গাদি কোনদিন সেই ভাবে সেক্সের স্বাদ পায়নি। কিন্তু সৃজা আর দীপ্তি তোমরা পারবে ২০ বছর সেক্স ছাড়া থাকতে ?
দীপ্তি – না পারবো না
সৃজা – ভীষণ কষ্ট হবে
স্বপন – বাঘ রক্তের স্বাদ পেলে রক্ত ছাড়া থাকতে পারে না, সেটা বুঝিস ?
সৃজা – হ্যাঁ জানি
স্বপন – তোর বাবা তোর জন্যে এই ২০ বছর সেই কষ্ট করেছেন
সৃজা – হ্যাঁ মেনে নিচ্ছি বাবা আমার জন্যে খুব কষ্ট করেছেন
স্বপন – বড়দা এই মেয়েটাকে ১৫ বছরের বেশী ধরে জানেন আর ভালবাসেন। কিন্তু ওই ব্রততীও তোর বাবার কোথায় এতদিন বিয়ে না করে আছে।
সৃজা – তুমি কি করে জানলে ?
স্বপন – আমি আর নিহারিকা দেখেছি বড়দাকে ওই মেয়েটার সাথে।
মানসী – আমাদের বলো নি তো
স্বপন – কেন বলবো সবাইকে। ওনার পার্সোনাল জীবনে দখল দেবার কোন অধিকার আমার নেই
সৃজা – সত্যি পিসে আমরা কেউ এই ভাবে চিন্তা করিনি
দীপ্তি – কিন্তু বড়দা এতদিন রাঙ্গাদির বিয়ে কেন দেননি ?
স্বপন – আমার মনে হয় শুরুর দিকে সেটা সৃজাকে মানুষ করার জন্যে। বৌদি মারা যাবার পরে বড়দার কাছে দুটো অপশন ছিল, মানসী বা শ্রেয়সী – দুজনের একজন সৃজাকে দেখবে। উনিও জানেন যে শ্রেয়সী কোন কাজের মেয়ে না। তাই ওর বিয়ে দিয়ে দিয়েছেন। আর মানসীকে সৃজার দায়িত্ব দিয়েছেন।
দীপ্তি – কিন্তু আমি আর লেখা দিদি আসার পরে ?
স্বপন – তোমরা আসার পরে উনি জানতেন এক দিন না একদিন তোমাদের বাচ্চা হবে। আর তোমাদের নিজেদের বাচ্চা হলে তোমরা সেইভাবে সৃজার ওপর খেয়াল রাখতে পারবে না। তাই যতদিন না সৃজার বিয়ে হয় উনি নিজের সাথে সাথে মানসীকে আর ব্রততীকে বিয়ে করতে দেন নি।
সৃজা – পিসে সাংঘাতিক অ্যানালিসিস তোমার
দীপ্তি – কিন্তু এখন ?
স্বপন – এখন মানসীর টাকা। উনি আর সব কিছু ছাড়তে পারবেন, টাকা ছাড়তে পারবেন না।
সৃজা – সেটা তো অন্যায়
স্বপন – সেটা অবশ্যই ঠিক কাজ নয়। কিন্তু তার জন্যে ব্রততীকে বঞ্চিত করা ঠিক হবে না।
দীপ্তি – তবে আমরা কি করবো
স্বপন – মনের আনন্দে বড়দার বিয়ের জোগাড় করো
সৃজা – তারপর ?
স্বপন – দেখো রাঙ্গাদিদি অনেক বড় হয়েছে। আমি অনেক বার বুঝিয়েছি। এবার ওর নিজের স্বার্থ নিজে দেখার সময় এসেছে। রাঙ্গাদিকে ওর পয়সা নিজে চাইতে হবে বড়দার কাছে।
দীপ্তি – রাঙ্গাদি কোনদিন পারবে না। আমি কতদিন হিসাব করে দেখিয়ে দিচ্ছি ওর কত টাকা আছে বড়দার কাছে।
মানসী – আমার দাদা আমাকে কোনদিন ফেলে দেবে না
স্বপন – সেটা আমিও জানি। কিন্তু আমরা সবাই মানুষ, সবাইকে একদিন না একদিন যেতেই হবে। যেদিন বড়দা থাকবেন না তখন কি হবে তোমার ?
মানসী – তোমার কাছে এসে থাকবো।
স্বপন – সে এখনও থাকতে পারো। কিন্তু তোমাকে তোমার বোনের দয়ায় বেঁচে থাকতে হবে।
নিহারিকা – মোটেও না। আমি সেরকম নই।
স্বপন – জীবন টা গল্পের বই নয় যে লেখক লিখে দিলেন ওরা সুখে শান্তিতে সংসার করতে থাকল, আর সবাই সুখে থাকল। সত্যিকারের জীবনে অনেক কিছু হয়, যেটা দেখে আমাদের ভয় লাগে, হয়ত আমার সুখ নষ্ট হবে! আর আমরা সবাই সুখী হতে চাই। সুখের জায়গায় আমরা কেউ কোন কম্প্রোমাইজ করি না। তাই ভবিস্যতে কি হবে আর আমারাই বা কোন অবস্থায় কি করবো আমরা নিজেরাও জানি না।
সৃজা স্বপনকে জড়িয়ে ধরে। ওর বুকের মধ্যে মুখ চেপে থাকে অনেকক্ষণ। তারপর আবার উঠে বসে।
সৃজা – আর বলো
স্বপন – এতক্ষন এটা কি করলি ?
সৃজা – এটা আমাদের মাথাকে একটু ব্রেক দিলাম। আর তোমাকে ভালবাসা জানালাম। কিন্তু এই ভালবাসার ইংরাজি Love নয়, এই ভালবাসার ইংরাজি Gratitude.
স্বপন – সত্যি অনেক বড় হয়ে গিয়েছিস তুই
মানসী – সৃজা বুঝতে পারছিস আমি কেন স্বপনকে এতো ভালবাসি
সৃজা – সেই জন্যেই আজকে আমিও পিসের কাছেই এসেছি। আর কারো কাছে যাই নি।
দীপ্তি – কিন্তু রাঙ্গাদি কি কিছু বলবে বড়দা কে ?
স্বপন – না বললে নিজে ভুগবে। আমরা কি করবো !
সৃজা – আমরা সবাই চুপ চাপ থাকবো ?
স্বপন – দেখ রাঙ্গাদির বিয়ে দেবোই, আর ওই ভাস্করের সাথেই দেবো। ওদের আর একটু তৈরি হতে দে। বড়দার বিয়ের সাথে রাঙ্গাদির বিয়ের কোন সম্পর্ক নেই। রাঙ্গাদির বিয়ে যখন হবার ঠিক হবে।
দীপ্তি – ঠিক বলছ ?
মানসী – স্বপন যখন বলেছে তখন ঠিক হবে।
নিহারিকা – অনেক কথা হল। এবার সবাই জলখাবার খেয়ে নাও।
সৃজা – কি বানিয়েছ নেহাপি ?
নিহারিকা – আমি চাউমিন বানিয়েছি আর তোর পিসে চিলি চিকেন বল বানিয়েছে।
নিহারিকা সবাইকে খেতে দেয়। সৃজা খুব খুশী, মানসী আর দীপ্তিরও ভাল লাগে।
সৃজা – কি সুন্দর খেতে এই চিকেন বল। কিভাবে বানালে ?
স্বপন – কেন বলবো তোকে ?
সৃজা – বলো না প্লীজ, মানবকে বানিয়ে খাওয়াবো
স্বপন – হাড় ছাড়া চিকেন একটু সেদ্ধ করবি। একটু ছোলার ডাল ভিজিয়ে রাখবি। তারপর জল ঝড়িয়ে ডাল আর চিকেন একসাথে মিক্সিতে পিসে নিবি। তারপর কাঁচা ডিম আর পেঁয়াজ কুচি দিয়ে মাখাবি। গোল গোল বল করে অল্প ভেজে নিবি। তারপর যেভাবে চিলি চিকেন করিস সেইভাবে বানিয়ে নিবি, শুধু চিকেন এর জায়গায় এই চিকেন বল দিবি।
সৃজা – সোজা তো
স্বপন – আমি কখন বললাম কঠিন
দীপ্তি – শুনতে সোজা, করে দেখ না কত ঝামেলা হয়।
নিহারিকা – খাওয়া হলে চল একটু ঘুরে আসি।
সৃজা – কোথায় যাব ?
নিহারিকা – চল না গেলেই দেখতে পাবি। রাঙ্গাদি কোথায় ভাস্করের সাথে প্রেম করত সেই জায়গা দেখাবো।
জলখাবার হয়ে গেলে নিহারিকা ওদেরকে নিয়ে একটু ঘুরতে যায়। নিহারিকা শুধু দীপ্তি কে বলে ঘরে থাকতে।
নিহারিকা – না দীপ্তি বৌদি তোমাকে নিয়ে যাবো না।
দীপ্তি – আমি কি দোষ করলাম ?
নিহারিকা – স্বপন যাবে না, ও দুপুরের রান্না করবে। তুমি ওর সাথে থাকো।
মানসী – হ্যাঁ হ্যাঁ তুমি থাকো আর স্বপনের কাছে রান্না শেখো।
দীপ্তি – ঠিক আছে।
নিহারিকা ছেলে মেয়ে সৃজা আর মানসীকে নিয়ে চলে যায়।
দীপ্তি – চল স্বপনদা কি রান্না করবে দেখি
স্বপন – রান্না করা আছে
দীপ্তি – তবে নেহা যে বলে গেল তুমি রান্না করবে
স্বপন – নেহা আমাদের দুজনকে একসাথে থাকার সময় দিয়ে গেল
দীপ্তি – কেন ?
স্বপন – আমরা দুজন খেলা করবো তাই
দীপ্তি – যাঃ
স্বপন – বলেছিলাম না আমরা নুঙ্কু নুঙ্কু খেলবো
এরপর দুজনে সেই আদিম খেলায় মেতে ওঠে।
ওদিকে সৃজারা ঘুরে বেড়াচ্ছে।
সৃজা – এই দিকটা কি সুন্দর গো !
মানসী – হ্যাঁ খুব সুন্দর জায়গা।
সৃজা – মনে হচ্ছে অনেকগুলো লেকের মধ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছি
মানসী – এই সব জায়গা অনেক অনেক আগে গঙ্গা নদীর রাস্তা ছিল। এখন নদী সরে গিয়েছে আর এই নিচু জায়গা গুলো জলে ভরে লেকের মত তৈরি হয়েছে। এগুলোকে ভেরী বলে।
সৃজা – এই সব তো আমরা ভূগোল বইতে পড়েছি। কিন্তু এই জায়গা বাড়ির এতো কাছে তা কোনদিন জানতাম না।
নিহারিকা – আমি ওইসব ভূগোল জানি না। কিন্তু আমারও এখানে ঘুরতে ভাল লাগে।
সৃজা – একদিন মানব কে নিয়ে আসবো। মানব ভূগোলের প্রোফেসর, কিন্তু আমার মনে হয় ও কখনও এই জায়গায় আসেনি।
ওরা প্রায় দু ঘণ্টা ঘুরে, রুবি হসপিটালের পাস থেকে গরম জিলাপি কিনে বাড়ি ফেরে। স্বপন আর দীপ্তির রান্না করা ততক্ষনে শেষ হয়ে গেছে। স্বপন আগের রাতে করা রান্না গুলো গরম করে সাজিয়ে রাখে।
সৃজা – কি ছোট কাকি কি রান্না করলে
দীপ্তি - মাছের ঝোল আর ভাত
সৃজা – এতে আবার নতুন কি হল
দীপ্তি – সব সময় যে নতুন কিছু হবে তার কোন মানে আছে ?
স্বপন – রান্না ঘরে গিয়ে দেখে নে কি কি রান্না করেছি
সৃজা রান্না ঘর থেকে ঘুরে আসে।
সৃজা – বাপরে কত কি রান্না করেছো ! এইটুকু সময়ে এতো রান্না কি করে করলে ?
নিহারিকা –কাল রাতে সব কিছু অর্ধেক করা ছিল।
সৃজা – ছোট কাকি বাড়ি গিয়ে পরে আবার এই সব রান্না করে খাওয়াবে
মানসী – ও রান্না করেছে নাকি
সৃজা – তো এতক্ষন কাকি কি করছিল ?
দীপ্তি – খেলা করছিলাম। এবার চান করে খেয়ে নাও। তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরবো।
সৃজা – সবে তো ১২ টা বাজে আর জলখাবার তো একটু আগেই খেলাম।
স্বপন – ঠিক আছে আয়, আমার পাশে বোস। গল্প করি।
ওরা দুপুরে খেয়ে চলে যায়। বাড়ি ফিরেই সৃজা ঘর পরিস্কার করতে লাগে।
লেখা – কি করছিস এখন ?
সৃজা – বাবা নতুন মা আনবে, এই নোংরা ঘর ভাল লাগবে না।
লেখা – সেদিন তো খুব আপত্তি ছিল, আজ কি হল ?
সৃজা – আমরা সবাই স্বার্থপর জান
লেখা – কে বলল ?
সৃজা – আমরা কেউ বাবার সুখ বা আনন্দের কথা কোনদিন চিন্তা করিনি। দেখো না এবার কিরকম আনন্দ করি।
লেখা – স্বপনের কাছ থেকে কি শুনে আসলি যে এত পরিবর্তন ?
সৃজা – সে তোমরা ছোট কাকি আর রাঙ্গাপির কাছে শুনে নিও
লেখা – তুই কি করবি ?
সৃজা – কাল নতুন মা আসবে। মা ঘোরে আসলে আমি আর মা রঙ্গিলা সিনেমার গানের সাথে নাচবো।
লেখা – বড়দা তোকে দেবে নাচতে ?
সৃজা – বাবাকেও নাচাবো।
(#৬)
শনিবার সকালে ওরা তিনজনে স্বপনের বাড়ি যায়। মানসী যেতে চাইছিল না। কিন্তু সৃজা জোর করে নিয়ে যায়। স্বপন সেদিন আর অফিস যায়নি। স্বপনের বাড়ি পৌঁছেই সৃজা হাউ মাউ করে স্বপনের কাছে বাবার নামে নালিশ করতে শুরু করে। ও যে কি বলছিল স্বপন কিছুই বোঝে না। সৃজা থামলে স্বপন দীপ্তিকে বলে, “এবার বল কি হয়েছে ।”
সৃজা – এতক্ষন আমি কি বললাম
স্বপন – তুই হুর হুর করে কি বললি কিছুই বুঝলাম না
সৃজা – আমার ভীষণ রাগ হচ্ছে। কিন্তু তুমি ছাড়া আর কারো কাছে বলতে পারছি না
স্বপন – আমি কি তোর বাবাকে বকে দেব না তোর বাবা আমার কথা শুনবে
সৃজা – না তুমি বকবে না। কিন্তু জান বাবা শুধু তোমাকেই ভয় পায়।
স্বপন – হ্যাঁ দীপ্তি বলো ঠিক কি হয়েছে।
দীপ্তি সেদিন যা যা কথা হয়েছে সব বলে।
স্বপন – বড়দা বিয়ে করবে সেতো ভাল কথা
সৃজা – তোমার রাগ হচ্ছে না ?
স্বপন – কেন রাগ হবে ?
সৃজা – রাঙ্গাপির বিয়ে না দিয়ে নিজে আবার বিয়ে করছে !
স্বপন – রাঙ্গাদির বিয়ে দিচ্ছে না সেটা ওনার নিজের বিয়ের থেকে আলাদা
সৃজা – কেন আলাদা ?
স্বপন – বড়দা একটু দাদাগিরি করে, শুধু টাকা চেনে। সব মেনে নিলাম। কিন্তু উনি রাঙ্গাদির বিয়ে দেওয়া ছাড়া বাড়ির বাকি সব দায়িত্ব পালন করেছেন। তাই না ?
মানসী – হ্যাঁ দাদা সব কিছুই করেছে
স্বপন – সৃজা তুই বল
সৃজা – হ্যাঁ সেসব করেছে
স্বপন – তোর বাবার কাছে সাহায্য চেয়ে পাসনি সেরকম কখন হয়েছে ?
সৃজা – না হয় নি
দীপ্তি – সে দিক থেকে বড়দা আমাদের বাড়ির সত্যিকারের গার্জেন।
স্বপন – ওনার কোন খারাপ অভ্যেস আছে ?
সৃজা – না, মদ বা সিগারেট খায় না।
স্বপন – মেয়েদের নিয়ে ঘোরে ?
সৃজা – আমরা দেখিনি বা জানিনা
স্বপন – সৃজা তোর কত দিন বিয়ে হয়েছে ?
সৃজা – এক বছর হল প্রায়
স্বপন – তুই মানব কে ছাড়া আর সেক্স ছাড়া থাকতে পারবি ?
সৃজা – বেশীদিন পারবো না
স্বপন – এখন সেক্স কেমন লাগে ?
সৃজা – খুব ভাল
স্বপন – বিয়ের আগে তোর সেক্স নিয়ে এই অ্যাডিকসন ছিল ?
সৃজা – বিয়ের আগে সেক্স জানতাম। কিন্তু তার কি মজা সেটা তো জানতাম না।
স্বপন – আর এখন
সৃজা – এখন সারাদিন মনে হয় কখন রাত্রি হবে আর মানবের কাছে যাবো। কিন্তু পিসে তুমি ভীষণ অসভ্য আমাকে দিয়ে কিসব বলিয়ে নিলে। আর আমার আসল কথা ভুলে গেলে।
স্বপন – না না ভুলিনি। এবার বল বড়দার কতদিন হল একা আছেন ?
সৃজা – মা প্রায় ২০ বছর হল মারা গেছেন
স্বপন – বড়দা এতদিন সেক্স ছাড়া আছেন
সৃজা – হ্যাঁ তাই
স্বপন – বড়দা চাইলে আগেও বিয়ে করতে পারতেন
মানসী – বড়দাকে অনেকে অনেকবার বলেছে বিয়ে করবার জন্যে। কিন্তু দাদা মেয়ের বিয়ে না দিয়ে কোন কিছু ভাবেন নি।
স্বপন – রাঙ্গাদি কোনদিন সেই ভাবে সেক্সের স্বাদ পায়নি। কিন্তু সৃজা আর দীপ্তি তোমরা পারবে ২০ বছর সেক্স ছাড়া থাকতে ?
দীপ্তি – না পারবো না
সৃজা – ভীষণ কষ্ট হবে
স্বপন – বাঘ রক্তের স্বাদ পেলে রক্ত ছাড়া থাকতে পারে না, সেটা বুঝিস ?
সৃজা – হ্যাঁ জানি
স্বপন – তোর বাবা তোর জন্যে এই ২০ বছর সেই কষ্ট করেছেন
সৃজা – হ্যাঁ মেনে নিচ্ছি বাবা আমার জন্যে খুব কষ্ট করেছেন
স্বপন – বড়দা এই মেয়েটাকে ১৫ বছরের বেশী ধরে জানেন আর ভালবাসেন। কিন্তু ওই ব্রততীও তোর বাবার কোথায় এতদিন বিয়ে না করে আছে।
সৃজা – তুমি কি করে জানলে ?
স্বপন – আমি আর নিহারিকা দেখেছি বড়দাকে ওই মেয়েটার সাথে।
মানসী – আমাদের বলো নি তো
স্বপন – কেন বলবো সবাইকে। ওনার পার্সোনাল জীবনে দখল দেবার কোন অধিকার আমার নেই
সৃজা – সত্যি পিসে আমরা কেউ এই ভাবে চিন্তা করিনি
দীপ্তি – কিন্তু বড়দা এতদিন রাঙ্গাদির বিয়ে কেন দেননি ?
স্বপন – আমার মনে হয় শুরুর দিকে সেটা সৃজাকে মানুষ করার জন্যে। বৌদি মারা যাবার পরে বড়দার কাছে দুটো অপশন ছিল, মানসী বা শ্রেয়সী – দুজনের একজন সৃজাকে দেখবে। উনিও জানেন যে শ্রেয়সী কোন কাজের মেয়ে না। তাই ওর বিয়ে দিয়ে দিয়েছেন। আর মানসীকে সৃজার দায়িত্ব দিয়েছেন।
দীপ্তি – কিন্তু আমি আর লেখা দিদি আসার পরে ?
স্বপন – তোমরা আসার পরে উনি জানতেন এক দিন না একদিন তোমাদের বাচ্চা হবে। আর তোমাদের নিজেদের বাচ্চা হলে তোমরা সেইভাবে সৃজার ওপর খেয়াল রাখতে পারবে না। তাই যতদিন না সৃজার বিয়ে হয় উনি নিজের সাথে সাথে মানসীকে আর ব্রততীকে বিয়ে করতে দেন নি।
সৃজা – পিসে সাংঘাতিক অ্যানালিসিস তোমার
দীপ্তি – কিন্তু এখন ?
স্বপন – এখন মানসীর টাকা। উনি আর সব কিছু ছাড়তে পারবেন, টাকা ছাড়তে পারবেন না।
সৃজা – সেটা তো অন্যায়
স্বপন – সেটা অবশ্যই ঠিক কাজ নয়। কিন্তু তার জন্যে ব্রততীকে বঞ্চিত করা ঠিক হবে না।
দীপ্তি – তবে আমরা কি করবো
স্বপন – মনের আনন্দে বড়দার বিয়ের জোগাড় করো
সৃজা – তারপর ?
স্বপন – দেখো রাঙ্গাদিদি অনেক বড় হয়েছে। আমি অনেক বার বুঝিয়েছি। এবার ওর নিজের স্বার্থ নিজে দেখার সময় এসেছে। রাঙ্গাদিকে ওর পয়সা নিজে চাইতে হবে বড়দার কাছে।
দীপ্তি – রাঙ্গাদি কোনদিন পারবে না। আমি কতদিন হিসাব করে দেখিয়ে দিচ্ছি ওর কত টাকা আছে বড়দার কাছে।
মানসী – আমার দাদা আমাকে কোনদিন ফেলে দেবে না
স্বপন – সেটা আমিও জানি। কিন্তু আমরা সবাই মানুষ, সবাইকে একদিন না একদিন যেতেই হবে। যেদিন বড়দা থাকবেন না তখন কি হবে তোমার ?
মানসী – তোমার কাছে এসে থাকবো।
স্বপন – সে এখনও থাকতে পারো। কিন্তু তোমাকে তোমার বোনের দয়ায় বেঁচে থাকতে হবে।
নিহারিকা – মোটেও না। আমি সেরকম নই।
স্বপন – জীবন টা গল্পের বই নয় যে লেখক লিখে দিলেন ওরা সুখে শান্তিতে সংসার করতে থাকল, আর সবাই সুখে থাকল। সত্যিকারের জীবনে অনেক কিছু হয়, যেটা দেখে আমাদের ভয় লাগে, হয়ত আমার সুখ নষ্ট হবে! আর আমরা সবাই সুখী হতে চাই। সুখের জায়গায় আমরা কেউ কোন কম্প্রোমাইজ করি না। তাই ভবিস্যতে কি হবে আর আমারাই বা কোন অবস্থায় কি করবো আমরা নিজেরাও জানি না।
সৃজা স্বপনকে জড়িয়ে ধরে। ওর বুকের মধ্যে মুখ চেপে থাকে অনেকক্ষণ। তারপর আবার উঠে বসে।
সৃজা – আর বলো
স্বপন – এতক্ষন এটা কি করলি ?
সৃজা – এটা আমাদের মাথাকে একটু ব্রেক দিলাম। আর তোমাকে ভালবাসা জানালাম। কিন্তু এই ভালবাসার ইংরাজি Love নয়, এই ভালবাসার ইংরাজি Gratitude.
স্বপন – সত্যি অনেক বড় হয়ে গিয়েছিস তুই
মানসী – সৃজা বুঝতে পারছিস আমি কেন স্বপনকে এতো ভালবাসি
সৃজা – সেই জন্যেই আজকে আমিও পিসের কাছেই এসেছি। আর কারো কাছে যাই নি।
দীপ্তি – কিন্তু রাঙ্গাদি কি কিছু বলবে বড়দা কে ?
স্বপন – না বললে নিজে ভুগবে। আমরা কি করবো !
সৃজা – আমরা সবাই চুপ চাপ থাকবো ?
স্বপন – দেখ রাঙ্গাদির বিয়ে দেবোই, আর ওই ভাস্করের সাথেই দেবো। ওদের আর একটু তৈরি হতে দে। বড়দার বিয়ের সাথে রাঙ্গাদির বিয়ের কোন সম্পর্ক নেই। রাঙ্গাদির বিয়ে যখন হবার ঠিক হবে।
দীপ্তি – ঠিক বলছ ?
মানসী – স্বপন যখন বলেছে তখন ঠিক হবে।
নিহারিকা – অনেক কথা হল। এবার সবাই জলখাবার খেয়ে নাও।
সৃজা – কি বানিয়েছ নেহাপি ?
নিহারিকা – আমি চাউমিন বানিয়েছি আর তোর পিসে চিলি চিকেন বল বানিয়েছে।
নিহারিকা সবাইকে খেতে দেয়। সৃজা খুব খুশী, মানসী আর দীপ্তিরও ভাল লাগে।
সৃজা – কি সুন্দর খেতে এই চিকেন বল। কিভাবে বানালে ?
স্বপন – কেন বলবো তোকে ?
সৃজা – বলো না প্লীজ, মানবকে বানিয়ে খাওয়াবো
স্বপন – হাড় ছাড়া চিকেন একটু সেদ্ধ করবি। একটু ছোলার ডাল ভিজিয়ে রাখবি। তারপর জল ঝড়িয়ে ডাল আর চিকেন একসাথে মিক্সিতে পিসে নিবি। তারপর কাঁচা ডিম আর পেঁয়াজ কুচি দিয়ে মাখাবি। গোল গোল বল করে অল্প ভেজে নিবি। তারপর যেভাবে চিলি চিকেন করিস সেইভাবে বানিয়ে নিবি, শুধু চিকেন এর জায়গায় এই চিকেন বল দিবি।
সৃজা – সোজা তো
স্বপন – আমি কখন বললাম কঠিন
দীপ্তি – শুনতে সোজা, করে দেখ না কত ঝামেলা হয়।
নিহারিকা – খাওয়া হলে চল একটু ঘুরে আসি।
সৃজা – কোথায় যাব ?
নিহারিকা – চল না গেলেই দেখতে পাবি। রাঙ্গাদি কোথায় ভাস্করের সাথে প্রেম করত সেই জায়গা দেখাবো।
জলখাবার হয়ে গেলে নিহারিকা ওদেরকে নিয়ে একটু ঘুরতে যায়। নিহারিকা শুধু দীপ্তি কে বলে ঘরে থাকতে।
নিহারিকা – না দীপ্তি বৌদি তোমাকে নিয়ে যাবো না।
দীপ্তি – আমি কি দোষ করলাম ?
নিহারিকা – স্বপন যাবে না, ও দুপুরের রান্না করবে। তুমি ওর সাথে থাকো।
মানসী – হ্যাঁ হ্যাঁ তুমি থাকো আর স্বপনের কাছে রান্না শেখো।
দীপ্তি – ঠিক আছে।
নিহারিকা ছেলে মেয়ে সৃজা আর মানসীকে নিয়ে চলে যায়।
দীপ্তি – চল স্বপনদা কি রান্না করবে দেখি
স্বপন – রান্না করা আছে
দীপ্তি – তবে নেহা যে বলে গেল তুমি রান্না করবে
স্বপন – নেহা আমাদের দুজনকে একসাথে থাকার সময় দিয়ে গেল
দীপ্তি – কেন ?
স্বপন – আমরা দুজন খেলা করবো তাই
দীপ্তি – যাঃ
স্বপন – বলেছিলাম না আমরা নুঙ্কু নুঙ্কু খেলবো
এরপর দুজনে সেই আদিম খেলায় মেতে ওঠে।
ওদিকে সৃজারা ঘুরে বেড়াচ্ছে।
সৃজা – এই দিকটা কি সুন্দর গো !
মানসী – হ্যাঁ খুব সুন্দর জায়গা।
সৃজা – মনে হচ্ছে অনেকগুলো লেকের মধ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছি
মানসী – এই সব জায়গা অনেক অনেক আগে গঙ্গা নদীর রাস্তা ছিল। এখন নদী সরে গিয়েছে আর এই নিচু জায়গা গুলো জলে ভরে লেকের মত তৈরি হয়েছে। এগুলোকে ভেরী বলে।
সৃজা – এই সব তো আমরা ভূগোল বইতে পড়েছি। কিন্তু এই জায়গা বাড়ির এতো কাছে তা কোনদিন জানতাম না।
নিহারিকা – আমি ওইসব ভূগোল জানি না। কিন্তু আমারও এখানে ঘুরতে ভাল লাগে।
সৃজা – একদিন মানব কে নিয়ে আসবো। মানব ভূগোলের প্রোফেসর, কিন্তু আমার মনে হয় ও কখনও এই জায়গায় আসেনি।
ওরা প্রায় দু ঘণ্টা ঘুরে, রুবি হসপিটালের পাস থেকে গরম জিলাপি কিনে বাড়ি ফেরে। স্বপন আর দীপ্তির রান্না করা ততক্ষনে শেষ হয়ে গেছে। স্বপন আগের রাতে করা রান্না গুলো গরম করে সাজিয়ে রাখে।
সৃজা – কি ছোট কাকি কি রান্না করলে
দীপ্তি - মাছের ঝোল আর ভাত
সৃজা – এতে আবার নতুন কি হল
দীপ্তি – সব সময় যে নতুন কিছু হবে তার কোন মানে আছে ?
স্বপন – রান্না ঘরে গিয়ে দেখে নে কি কি রান্না করেছি
সৃজা রান্না ঘর থেকে ঘুরে আসে।
সৃজা – বাপরে কত কি রান্না করেছো ! এইটুকু সময়ে এতো রান্না কি করে করলে ?
নিহারিকা –কাল রাতে সব কিছু অর্ধেক করা ছিল।
সৃজা – ছোট কাকি বাড়ি গিয়ে পরে আবার এই সব রান্না করে খাওয়াবে
মানসী – ও রান্না করেছে নাকি
সৃজা – তো এতক্ষন কাকি কি করছিল ?
দীপ্তি – খেলা করছিলাম। এবার চান করে খেয়ে নাও। তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরবো।
সৃজা – সবে তো ১২ টা বাজে আর জলখাবার তো একটু আগেই খেলাম।
স্বপন – ঠিক আছে আয়, আমার পাশে বোস। গল্প করি।
ওরা দুপুরে খেয়ে চলে যায়। বাড়ি ফিরেই সৃজা ঘর পরিস্কার করতে লাগে।
লেখা – কি করছিস এখন ?
সৃজা – বাবা নতুন মা আনবে, এই নোংরা ঘর ভাল লাগবে না।
লেখা – সেদিন তো খুব আপত্তি ছিল, আজ কি হল ?
সৃজা – আমরা সবাই স্বার্থপর জান
লেখা – কে বলল ?
সৃজা – আমরা কেউ বাবার সুখ বা আনন্দের কথা কোনদিন চিন্তা করিনি। দেখো না এবার কিরকম আনন্দ করি।
লেখা – স্বপনের কাছ থেকে কি শুনে আসলি যে এত পরিবর্তন ?
সৃজা – সে তোমরা ছোট কাকি আর রাঙ্গাপির কাছে শুনে নিও
লেখা – তুই কি করবি ?
সৃজা – কাল নতুন মা আসবে। মা ঘোরে আসলে আমি আর মা রঙ্গিলা সিনেমার গানের সাথে নাচবো।
লেখা – বড়দা তোকে দেবে নাচতে ?
সৃজা – বাবাকেও নাচাবো।
""পৃথিবীটা রঙ্গমঞ্চ আমরা সবাই অভিনেতা"" !!