Thread Rating:
  • 9 Vote(s) - 2.78 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
Romance কাজল নদী Written By Tumi_je_amar
#48
(#০৫)

মানসী সৃজা আর দীপ্তিকে দেখে একটু থতমত খেয়ে যায়। কি করবে ভেবে পায় না। তারপর হেসে ওঠে।

মানসী – কি দেখতে এসেছিস তোরা ?

সৃজা – আমার রাঙ্গা পিসেকে দেখতে এসেছি

মানসী – সেটা আবার কে ?

দীপ্তি – বেশী নকশা করোনা, তুমি আমাদের কাছে লুকিয়ে রাখতে পারলে ?

সৃজা – রাঙ্গাপি এটা তুমি মোটেও ভাল করো নি।

মানসী – আমি করলাম টা কি !
দীপ্তি – এখনও লজ্জা ?

মানসী – লজ্জা কোথায় পেলাম !

সৃজা – (ভাস্করের দিকে তাকিয়ে) – এইযে পিসেমশায় তোমার নাম কি ?

ভাস্কর – আমার নাম ভাস্কর, কিন্তু আমি তোমার পিসেমশায় কি করে হলাম !

সৃজা – এটা আমার রাঙ্গাপিসি, তাই তুমি পিসেমশায়


ভাস্কর – এখনও বিয়ে করিনি


দীপ্তি – করোনি, কিন্তু করতে তো চাও। বিয়েতো একটা বাহানা মাত্র। 

ভাস্কর – সেটা চাই, এখন তোমার রাঙ্গা দিদি চাইলেই হয়

সৃজা – কি রাঙ্গাপি তুমি একে বিয়ে করবে না ?

মানসী – আমি চাইলেই কি আর হবে ?

সৃজা – আমি আজকেই বাবাকে বলবো, দেখো তোমার ঠিক বিয়ে হয়ে যাবে।

মানসী – না না সোনা, বড়দাকে বলিস না। বড়দা একে পছন্দ করে না।

সৃজা – বাবা এনাকে জানলো কি ভাবে ?

মানসী – এই ভাস্করকেই দাদা স্বপনের বাড়িতে দেখেছিলো আর বিয়েতে মত দেয়নি। 

দীপ্তি – সেতো আমরা জানি। কিন্তু এই ভাস্করদার সাথে তোমার যোগাযোগ আছে সেটা তো বলোনি !

মানসী – একদিন তোকে ঠিক বলতাম। কিন্তু সৃজা দাদাকে এখনই কিছু বলিস না।

সৃজা – এখন বলবো না তো কি তোমার বয়েস ৬০ হয়ে গেলে বলবো ? 

মানসী – আমি পরে বলবো। এইসব তোকে ভাবতে হবে না।

সৃজা – তুমি কি বলবে বা করবে আমি জানি। বাবাকে বলতে গেলেই শাড়িতে হিসি করে ফেলবে।

মানসী – মারবো এবার তোকে

দীপ্তি – কিন্তু আমরা জানি তুমি বড়দাকে বলতে পারবে না

মানসী – আর একটু সময় দে ঠিক বলবো 

সৃজা – তুমি চিন্তা করোনা পিসেমশায়, খুব তাড়াতাড়িই তোমাদের বিয়ে হয়ে যাবে।

রাত্রে বড়দা একটু তাড়াতাড়ি বাড়ি ফেরেন। তারপর সব ভাই বোনরা ফিরলে সবাইকে একসাথে ডাকেন। সবাই আসলে উনি বলেন যে উনি এবার বিয়ে করতে চান। 

মা (বড়দার) – এই বয়েসে বিয়ে করবি বাবা !

বড়দা – মা, সৃজার বিয়ে দিয়ে দিয়েছি। সব ভাই বোনরাও দাঁড়িয়ে গেছে। আমার এখন আর কি কাজ। তোমার বৌমা মারা যাবার পর থেকে একাই আছি। ব্রততী আমার জন্যে ২০ বছর ধরে অপেক্ষা করছে। এবার ওর সাথে বিয়েটা করেই নেব।

মেজ ভাই – তুমি বিয়ে করলে আমার কোন আপত্তি নেই

ছোট ভাই – আমিই বা কি বলবো

মানসী – হ্যাঁ হ্যাঁ দাদা তুমি এবার বিয়ে করেই নাও। তুমি বিয়ে করলে খুব ভাল হবে।

সৃজা – তোমার সব কাজ হয়ে গেছে ?
বড়দা – কেন মা আর কি বাকি আছে ?

সৃজা – রাঙ্গাপির বিয়ে কে দেবে ?

বড়দা – মানসীর বিয়ে দিতে পারিনি কিন্তু ওর জন্যে বিউটি পার্লার করে দিয়েছি। ও তো বেশ ভালই আছে।

সৃজা – তোমার চোখ আছে ?
বড়দা – সে আবার কি ?

সৃজা – তোমার চোখ থাকলে দেখতে পেতে রাঙ্গাপি কেমন আছে। আর পার্লার তুমি করে দাও নি। আমার মায়ের পয়সা আর স্বপন পিসের বুদ্ধিতে হয়েছে।

বড়দা – যে ভাবেই হোক ঠিক তো চলছে।

সৃজা – কি ঠিক চলছে ? রাঙ্গাপি পার্লার চালায় আর তুমি মাসে দশ হাজার টাকা করে আয় করো। রাঙ্গাপির কি হয় ?

বড়দা – আমরা তো সবাই একসাথে থাকি। সবার পয়সা কি আলাদা ?

মানসী – সৃজা বাবার সাথে এইভাবে কেউ কথা বলে না।

সৃজা – বাবা যদি বাবার মত কথা বলে তবে আমার এইভাবে কথা বলার দরকার হত না।

মেজ ভাই – আমি সৃজার কথা সাপোর্ট করছি। আমরা দুই ভাই যে ব্যবসা করি তার সব পয়সা তো তোমাকে দেই না। সংসার চালানোর যতটা লাগে ততোটা দেই। তবে মানসীর সব পয়সা তুমি কেন নেবে ?

সৃজা – আমার কথা হল রাঙ্গাপির গত সাত বছরে পার্লার থেকে যত আয় হয়েছে সেই টাকা তুমি রাঙ্গাপিকে দিয়ে দেবে। আর রাঙ্গাপির বিয়ে দেবে। তার পর তুমি যা খুশী করতে পারো।

বড়দা – মানসী বিয়ে দেবার দায়িত্ব বাবার ছিল। কিন্তু সেটা দেবার আগেই উনি চলে গেছেন।

মেজ ভাই – দাদা তুমি এইকথা বলতে পারো না। বাবা থাকতেও আমাদের বিয়ের সব ব্যবস্থা তুমিই করেছ। আমাদের বা বাবার মত নাও নি।

বড়দা – তোমাদের অমতে তো বিয়ে দেইনি।

ছোট ভাই – আমরা সব সময় তোমার কথা শুনে চলি।

মানসী – তোমরা কি শুরু করেছো ? আমার কোন টাকা চাই না। দাদা তুমি বিয়ে করে নাও।

সৃজা – রাঙ্গাপি তুমি কি রকম মানুষ ? আমি তোমার মত আর কাউকে দেখিনি, যে নিজের ভবিষ্যৎ চিন্তা করে না।

মা – আমার মানসী মোমবাতির মত, নিজে জ্বলে গিয়ে বাকি সবাইকে আলো দেয়। হ্যাঁ বাবা তুই মানসীর বিয়ে দিয়ে নিজে বিয়ে কর।

এই তর্ক বিতর্ক অনেক রাত পর্যন্ত চলে। কিন্তু কেউ বড়দাকে থামাতে পারে না। বড়দা বলে উনি পরের সপ্তাহেই রেজিস্ট্রি করে বিয়ে করছেন। সেইভাবে নোটিশও দেওয়া হয়ে গেছে। 

সৃজা – তবে তোমার সাথে আমার কোন সম্পর্ক নেই।

মানসী – সৃজা বড় বেশী পেকে গেছ তুমি।

সৃজা – ঠিক আছে স্বপন পিসে আর শ্রদ্ধা পিসেকে ডাকো। ওদের সাথে কথা বল। 

মা – না না জামাইদের এর মধ্যে ডাকতে হবে না।

মানসী – দাদা তুমি বিয়ে করে নাও। আমি সৃজাকে বুঝিয়ে দেব।

সৃজা – তুমি আমাকে বুঝিয়ে দেবে কিন্তু ভাস্কর পিসেমশায়কে কি বলবে ?


বড়দা – এই ভাস্কর কে ?

সৃজা – তুমি তো শুধু তোমার বউ নিয়ে পরে আছো। রাঙ্গাপি তোমার কাছে শুধুই কাজের মানুষ। তার ভালবাসার কোন খবর তোমার রাখার দরকার নেই।

বড়দা – মানসী কে এই ভাস্কর ?

মানসী – কেউ না দাদা। ও কথা ছাড়।

সৃজা – কেন ছাড়বে ? ভাস্কর পিসে হল সেই মানুষ যার সাথে স্বপন পিসে রাঙ্গাপির বিয়ে দিতে চেয়েছিল।

বড়দা – সেই অপদার্থ ছেলেটা ?

সৃজা – তোমার কাছে সবাই অপদার্থ ! তুমি পয়সা ছাড়া আর কিছু বোঝো নাকি !

মানসী – আঃ সৃজা, কি হচ্ছে টা কি ?

বড়দা – ওই ভাস্করের মত বেকার ছেলের সাথে আমার বোনের বিয়ে হতে পারে না।

সৃজা – গত কুড়ি বছরে তুমি একটাও সাকার ছেলে খুঁজে পাওনি।

বড়দা – খুজেছি, পাইনি

সৃজা – শ্রেপির জন্যে পেলে, আমার জন্যে পেলে, দেশের আরও কত জনের বিয়ে দিলে আর রাঙ্গাপির জন্যে ছেলে পেলে না। এটা বিশ্বাস করতে বল ? তুমি আসলে কোনদিন চাওনি রাঙ্গাপির বিয়ে হোক।

মা – কেন চাইবে না ?

সৃজা - ঠাম্মা তুমি সরল মানুষ, তুমি বুঝবে না। 

মানসী – তোমাকে আর বোঝাতে হবে না।

সৃজা – তুমি কাল ভাস্কর পিসেকে নিয়ে এখানে আসবে। সবাইকে বলবে কবে বিয়ে করছ।

মানসী – না না তা হয় না।

বড়দা – মানসীর বিয়ে কিছুতেই ভাস্করের সাথে হবে না। আর মানসী ভাস্করকে বিয়ে করলে আমাদের সাথে কোন সম্পর্ক থাকবে না।

সৃজা – কেন ?

মানসী – সবাই দয়া করে চুপ করবে। আমি আর সহ্য করতে পারছি না। 

মানসী উঠে চলে যায়। না খেয়েই শুয়ে পড়ে। সৃজা গিয়ে অনেক বার খাবার জন্য ডাকে কিন্তু মানসী ওঠে না। বাকি সবাইও যে যার মত ঘরে চলে যায়। দীপ্তি আর লেখা সবার কথাই শোনে কিন্তু ওরা কিছু বলে না। পরদিন দীপ্তি স্বপনকে অফিসে ফোন করে সব জানায়। স্বপন সব শোনার পড়ে বলে যে বড়দা বিয়ে করছে সেটা খুব ভাল কথা। দীপ্তি বলে যে শনিবারে ও সৃজা আর মানসীকে নিয়ে স্বপনের বাড়ি যাবে।

""পৃথিবীটা রঙ্গমঞ্চ আমরা সবাই অভিনেতা"" !! Sad

Like Reply


Messages In This Thread
RE: কাজল নদী Written By Tumi_je_amar - by Kolir kesto - 06-07-2020, 07:02 PM



Users browsing this thread: 4 Guest(s)