Thread Rating:
  • 26 Vote(s) - 3.23 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
Adultery যেমন করে চাই তুমি তাই/কামদেব
।।৫৩।।


     বিশাল দোতলা বাড়ী সামনে কিছুটা ফাকা জায়গায় গাড়ি পার্কিংযের ব্যবস্থা। কয়েক পা হেটে সিড়ি দিয়ে উঠতে হয়। গেট পেরিয়ে গাড়ি ঢোকে,গাড়ির থেকে নেমে জেনিফার এপাশ-ওপাশ চোখ বুলিয়ে বাড়িটা দেখে বললেন,এতো প্রাসাদ!
দেবও অবাক হয়েছিল গুলনার বললেন, এইটা আব্বুর বাড়ি,আমার না।
জেনিফার মনে মনে হাসেন। গুলনারের সঙ্গে সঙ্গে জেনিফার ভিতরে গিয়ে বৈঠকখানা ঘরে বসলেন।
— আপনি একমিনিট বসুন। গুলনার ভিতরে ঢুকে গেলন।
জেনিফার অবাক হয়ে চারদিক দেখছেন। বড় বড় তৈলচিত্র দেওয়ালে শোভা পাচ্ছে। বার্মা কাঠের আসবাবে সুসজ্জিত ঘর। বোঝা যায় বনেদী বংশ। জানতে ইচ্ছে হয় বলু কেমন আছে এখানে?
গুলনার নিজের ঘরে ঢুকে দেখলেন দেব পাশ বালিশ আকড়ে ঘুমিয়ে আছে। একটা আটপৌরে সালোয়ার কামিজ পরলেন। টেবিলে রাখা পানির গেলাস নিয়ে চুমুক দিলেন। পিছন ফিরে দেখলেন ড্যাবড্যাব করে চেয়ে আছে দেব।
— তোমার সাথে দেখা করতে আসছে একজন। বলো তো কে?
— মণ্টি তুমি আমারে বলদা বলতে চাও বলো,খারাপ লাগেনা। কিন্তু বলদা ভেবো না।
গুলনার খিলখিল করে হেসে উঠে জিজ্ঞেস করেন,তোমারে বলদা ভাবলাম কখন?
— আমার এই ঠিকানা কেউ জানলে তো আসবে?
— আমি মিছা কথা বললাম? জামা গায়ে দিয়ে চলো দেখবে কেউ আসছে কি না?
বলদেব উঠে জামা গায় দিয়ে গুলনারের সঙ্গে বৈঠকখানায় গিয়ে অবাক।ম্যাম আপনি?
— বলু আমি আর এখন তোমার বস না। তুমিও আর সে তুমি নেই।
— আমি একটা পাস করেছি কিন্তু আমি যা ছিলাম তাই আছি।
গুলনার বলেন,আপনারা কথা বলেন। আমি আম্মুরে খবর দিয়ে আসি। গুলনার চলে গেলেন। কিছুক্ষন পর করিম এসে চা নাস্তা দিয়ে গেল।
জেনিফার খেতে খেতে জিজ্ঞেস করেন,এরপর তুমি কি করবে ঠিক করেছো?
— মণ্টির ইচ্ছা আমি অধ্যাপক হই।
— তোমার কি ইচ্ছা?
— আমি এইসব নিয়ে মাথা ঘামাই না। বেঁচে থাকার জন্য দু-মুঠো পেলেই আমি খুশি। সঞ্চয়ের পাহাড় করলে মনের শান্তি নষ্ট।
— বলু,সবাই যদি তোমার মত ভাবতো তাহলে দুনিয়াটা বেহেশত হয়ে যেত। মমতা ভরা দৃষ্টিতে বলুকে দেখেন জেনিফার। বলদেব কিছু নাবলে মাথা নীচু করে বসে থাকে কিছুক্ষন,তারপর মুখ তুলে বলে,ম্যাম আমার মত বলতে কি বুঝিয়েছেন আমি জানিনা। আপনি বেহেশতের কথা বলেছেন,ভুলে যাবেন না জাহান্নামও আছে। দিন আছে যেমন রাত্রিও আছে। যদি জাহান্নাম না থাকতো তাহলে বেহেশতের কোন কদর থাকতো না। জীবনে দুঃখ আছে বলেই সুখের জন্য হাহাকার। আল্লাহ বা ভগবান যাই বলেন সব দিক ভেবে এই বৈচিত্র্যময় দুনিয়া গড়েছেন। আমি সামান্য মানুষ কেউ আমার সঙ্গ পেলে আনন্দ পেলে শান্তি পেলে আমিও শান্তি পাই আমার ভাল লাগে।
জেনিফারের বুকের মধ্যে টনটন করে উঠল। তিনিও ইচ্ছে করলে বলুকে পড়িয়ে নিজের কাছে রাখতে পারতেন। দুর্বিষহ জীবনের ভার তাহলে বয়ে বেড়াতে হত না। তার অবস্থার জন্য তিনিই দায়ী। একবার এদিক-ওদিক দেখে নীচু স্বরে বললেন,আমি যদি আনন্দ পাই তুমি সঙ্গ দেবে?
— এখন আর সম্ভব না।
— কেন নয় বলু?
— শুনুন জেনিফার,আপনাকে যতদুর জানি,আপনার শান্তি অন্যের অশান্তির কারণ হোক তা নিশ্চয়ই কাম্য নয়।  কলেজে পড়েছিলাম,রাতে যদি সূর্যশোকে ঝরে অশ্রূধারা সূর্য নাহি ফেরে ব্যর্থ হয় তারা। উপনিষদে একটা কথা আছে 'চরৈবেতি' অর্থাৎ এগিয়ে চলো। চলার নাম জীবন।চলতে হবে সামনে লক্ষ্যাভিমুখে।পিছন ফিরে তাকালে গতি ব্যাহত হবে।
জেনিফার আলম মুগ্ধ দৃষ্টি মেলে তাকিয়ে থাকেন বলুর দিকে। তেমনিই আছে কেবল শারীরী ভাষা বদলে গেছে,মনে হচ্ছে কোন অধ্যাপক ক্লাসে লেকচার করছেন।
— জানেন জেনিফার, জন্মের পর থেকেই এই পৃথিবীর আলো বাতাস জল ফুল ফল আমাকে ঋণী করে চলেছে প্রতিনিয়ত। ভিতর থেকে কে যেন আমাকে মনে করিয়ে দেয়,এত নিলে বিনিময়ে কি রেখে যাচ্ছো পরবর্তী প্রজন্মের জন্য? আমি কাজ করার তাগিদ অনুভব করি। আত্মসুখে মগ্ন না থেকে যতটুকু সাধ্য আমার কাজ করে যাই। সেই আমার বেঁচে থাকার সার্থকতা কিম্বা সান্ত্বনাও বলতে পারেন।
গুলনার প্রবেশ করেন পিছনে তার মা। জেনিফার উঠে দাঁড়িয়ে সালাম করেন। নাদিয়া বেগম ইশারায় বসতে বলে বলেন,আপনি জেলা ম্যাজিস্ট্রেট? আমি আগে কোনো মহিলা ম্যাজিস্ট্রেট দেখিনি।
জেনিফার লজ্জিতভাবে হাসলেন।
— আপনারে আমার কৃতজ্ঞতা জানাই। নাদিয়া বেগম বলেন।
—  বলদেবকে দেখিয়ে বলেন,বলু যা করেছে সে তুলনায় আমি কিছুই করিনি।
— ঐ ডাকাইতের কথা বাদ দাও। ডাকাইতি করছে তার শাস্তি অরে পাইতেই হইবো।
বলদেব বলে,আম্মু আমাকে আরো গুরুদণ্ড দিবেন।
গুলনারের মনে হয় ঘরে তার উপস্থিতি দেব উপেক্ষা করছেন। একবার ফিরেও দেখছেন না। সবুর করেন,শোবার সময় আপনাকে গুরুদণ্ড দেবো মনে মনে বলেন গুলনার।
নীচে গাড়ির শব্দ শোনা গেল। গুলনার বলেন,মনে হয় আব্বু আসলেন।
ড রিয়াজ ঢুকতেই বলদেব বলল,আব্বু উনি জেনিফার আলম আমার বস ছিলেন আর উনি আমার আব্বু ড--।
--ওনাকে আমি চিনি।
পরস্পর সেলাম বিনিময় করে ড রিয়াজ বললেন,আপনার সব কথা শুনেছি মুজাম্মেলের কাছে।
একবার বিবির দিকে তাকিয়ে রিয়াজ সাহেব ধরা গলায় বলেন,কাগজে সংবাদটা পড়েই মনটা অস্থির হয়ে পড়ল। ভাল করে রোগী দেখতে পারিনা। আমরা স্বার্থপর তাই কেবল ভেবেছি এইটা মন্টি না হয়ে অন্য মেয়ে হোক। তারপর মুজাম্মেলের কাছে শুনে ভাবলাম ছুটে যাই।
— এইসব তো আমারে কন নাই? নাদিয়া বেগম বলেন।
— তোমারে বললে কাঁদন শুরু করতা।
— তারপর যখন শুনলাম এক পিয়নের সাথে আপনে সাদি দেওনের ব্যবস্থা করছেন, মাথায় আগুন জ্বইলা উঠল। মামুনরে পাঠাইলাম।
--দেব আপনি ভিতরে চলুন।দেবকে নিয়ে গুলনার ভিতরে চলে গেলেন।
— আপনে পিয়ন-পিয়ন কইরবেন না।
— পিয়নরে কি অফিসার বলবো?
— আপনেরে কিছু বলতে হবে না। আইসা অবধি দেখতেছি আপনে বলারে নিয়া পড়ছেন।
— মেহেরবানি কইরা কথাটা বলতে দাও। তালাশ করতে করতে এক পুরান পেশেণ্টর কাছে দেবের সম্পর্কে জানলাম।
— পেশেণ্টের নাম কি স্যর?জেনিফার জিজ্ঞেস করেন।
— সেইটা উহ্য থাক। তিনি যা কইলেন শুইন্যা আমি তাজ্জব। মানুষ এইরকম হয় নাকি? আমার অহঙ্কারে আঘাত লাগল– একটা নামগোত্রহীন মানুষ হবে আমার দামাদ?
— আপনের এত অহঙ্কার কিসের? কি মনে করেন আপনে বলারে?
— আচ্ছা বেগম আমারে দেখলে তুমার জিভ চুলকায়?
— আপনে আইসা অবধি আমার দামাদরে নিয়া পড়ছেন,ক্যান সে আপনের কি ক্ষতি করছে?
— আব্বু প্লিজ চুপ করেন। গুলনার ঢুকে বাবাকে সামাল দেন।
— তুই যাস নাই? দেবরে তুই দেখিস মা– ছেলেটা বড় সাদাসিধা, এই যুগে অচল। গলা ধরে আসে ড.রিয়াজ সাহেবের।
জেনিফার আলম অস্বস্তিতে পড়ে যান। একসময় উঠে বলন, আমি আসি স্যর।গুলনারের দিকে তাকিয়ে বললেন,বলুকে বলবেন?
জেনিফার আলম বেরিয়ে গাড়ির দরজা খুলে আকাশের দিকে তাকালেন।সূর্য অস্ত গেছে একটু পরেই ঝলমলিয়ে তারায় ভরে যাবে আকাশ।ভিতরে ঢুকে হেলান দিয়ে বসলেন।
[+] 5 users Like kumdev's post
Like Reply


Messages In This Thread
RE: যেমন করে চাই তুমি তাই/কামদেব - by kumdev - 06-07-2020, 05:54 PM



Users browsing this thread: 1 Guest(s)