06-07-2020, 09:28 AM
পঞ্চম পরিচ্ছদ – মরুভুমি আর মরীচিকা
(#১০)
শনিবার বড়দা যথাসময়ে স্বপনের বাড়ি আসেন। এসেই উনি ভাস্করের সম্পরকে সব খোঁজ খবর নিতে শুরু করেন।
স্বপন – দেখুন বড়দা আমি ভাস্করকে চিনি। ওর বাড়ি নিয়ে প্রায় কিছুই জানি না।
বড়দা – তবে তুমি ওদের বিয়ে দিতে কেন চাইছ ?
স্বপন – ওর বাড়িতে সুধু ওর মা আছেন। ওর বাবা বেশ কিছু বছর আগে মারা গিয়েছেন। সেই সময় ভাস্করকে দুবাই ছেড়ে ফিরে আসতে হয়।
বড়দা – ভাস্কর দুবাইয়ে কি করত ?
মানসী – ও একটা গাড়ির ডিলার আলামুল্লাহ কোম্পানিতে আকাউন্টেসে কাজ করত।
বড়দা – তোমাকে কোন কথা জিজ্ঞাসা করিনি। তোমাকে যখন জিজ্ঞাসা করবো তখন উত্তর দেবে।
স্বপন – বড়দা বিয়েটা মানসীর
বড়দা – তাতে কি হয়েছে ? আমি আর তুমি ত সেই কথাই বলছি। ও শুধু চুপচাপ শুনে যাক।
স্বপন – ভাস্কর দুবাইয়ে যা চাকুরি করত তাতে খুব বেশি টাকা পয়সা জমাতে পারেনি। ফলে দেশে ফিরে আসার কিছুদিনের মধ্যেই সব টাকা ফুড়িয়ে যায় ।
বড়দা – এখন ওদের চলে কি ভাবে ?
স্বপন – অদের বাড়িটা ওর বাবার বানানো। দুটো ঘর ভাড়া দেওয়া আছে। সেই ভাড়ার পয়সা আর যখন যা কাজ পায় তাই করে।
বড়দা – তবে বিয়ে করে বউ কে কি খাওয়াবে ?
স্বপন – সে মানসীরও কিছু ইনকাম আছে।
বড়দা – বৌয়ের পয়সায় সংসার চালাবে ?
স্বপন – ক্ষতিটাই বা কি তাতে ?
বড়দা – এটা আমার কাছে ভাল লাগছে না
স্বপন – বড়দা আপনি বিয়ে করছেন না। রাঙ্গাদির বিয়ের কথা হচ্ছে। তাই আপনার ভাল লাগা বা না লাগার থেকে রাঙ্গাদির ভাল লাগার গুরুত্ব অনেক বেশি।
বড়দা – শুধু ভাল লাগা দিয়ে বিয়ে হয় না।
স্বপন – আর কি চাই ?
বড়দা – তুমি মাঝে মাঝে ছেলে মানুসের মত কথা বল। একটা ছেলের বংশের কথা কিছু জানি না। ওর কোন ইনকাম নেই আর ওর সাথে বোনের বিয়ে দেব !
স্বপন – আপনাদের কি বংশ মহিমা আছে ?
বড়দা – কি বলতে চাইছ তুমি ?
স্বপন – বড়দা রাগ করবেন না। আপনি একটা সরকারি কেরানী। আপনার বাবার কাগজের ব্যবসা ছিল। তার আগে আপনার পূর্ব পুরুষরা বাংলাদেশে চাষবাস করে দিন কাটাতেন। এর মধ্যে বিশাল কিছু মহান ঘটনা নেই। আর আমার মনে হয় ভাস্করের বংশ এর থেকে খুব বেশি আলাদা হবে না।
বড়দা – কিন্তু ছেলেটা বেকার।
স্বপন – আপনার যখন বিয়ে হয় তখন আপনারা সবাই মিলে দুটো ঘরে ভাড়া নিয়ে থাকতেন। আপনি ১৮৫ টাকা মাইনে পেতেন। তাও সুলগ্না বৌদির বাবা আপনার সাথে বিয়ে দিয়েছিলেন।
বড়দা – সে উনি জ্ঞানী মানুষ, আমাকে দেখে বুঝেছিলেন আমার কি ক্ষমতা।
স্বপন – আপনাদের বাড়ি সুলগ্না বৌদির বাবার বানানো। কিন্তু ভাস্করের বাড়ি ওর বাবার বানানো।
বড়দা – তাতে কি হল ?
স্বপন – তাতে এই হল যে ভাস্করের সাথে রাঙ্গাদির বিয়ে দেওয়া যায়।
বড়দা – আমার মত নেই।
স্বপন – শ্রেয়সীর যার সাথে বিয়ে দিয়েছেন তার থেকে ভাস্কর অনেক ভাল ছেলে।
বড়দা – ঠিক আছে, ভাস্কর আসুক ওর সাথে কথা বলে দেখি।
স্বপন – বড়দা আমি দুঃখিত, অনেক আজে বাজে কথা খারাপ ভাবে বলেছি আপনাকে। আমার আপনাদের ছোট করার কোন উদ্দেশ্য নেই।
বড়দা – স্বপন আমি তোমার কথায় রাগ করি না। তুমি যা বলেছ সেসব ঠিকই বলেছ। কিন্তু আমার মাথা সেটা মেনে নিলেও মন মানছে না।
মানসী – কিন্তু দাদা আমি চাই ভাস্করকে বিয়ে করতে।
বড়দা – তুমি কি বোঝ ? তুমি ভাবছ যে তুমি অনেক বড় হয়ে গেছ। কিন্তু যতই বড় হও না কেন আমার থেকে বড় হতে পারবে না।
নিহারিকা চা জলখাবার দেয়। বড়দা খুশী মনে সেসব খেতে থাকেন। এর মধ্যেই ভাস্কর চলে আসে। স্বপন ভাস্কর আর বড়দার আলাপ করিয়ে দেয়।
বড়দা – ভাস্কর তুমি আমার বোন কে বিয়ে করতে চাও ?
ভাস্কর – হ্যাঁ দাদা
বড়দা – কেন চাও ?
ভাস্কর – ভাল লেগেছে তাই
বড়দা – তোমার তো কোন নিশ্চিত আয় নেই। কি ভাবে খাওয়াবে ?
ভাস্কর – সে আমরা দুজনে সব করে নিতে পারবো
বড়দা – তোমরা দুজনে ? তুমি একা পারবে না ?
ভাস্কর – এই মুহূর্তে একা সামলানোর ক্ষমতা নেই। কিন্তু আমি বলছি আর দু বছরের মধ্যে আমি ঠিক সেই ক্ষমতা অর্জন করবো।
বড়দা – এত দিন কেন পারনি
ভাস্কর – এতদিন জীবনের কোন লক্ষ্যই ছিল না। আর সামনে কোন লক্ষ্য না থাকলে কেউ দৌড়ায় না।
বড়দা – তুমি বলছ যে সব ছেলেই বিয়ের পড়ে দৌড়ানো শুরু করে !
ভাস্কর – না না সবাই তা নয়। কিন্তু আমি পারিনি সেটা আমার অক্ষমতা
বড়দা – এইসব কথা তুমি বলেছ মানসীকে ?
ভাস্কর – এর থেকে অনেক বেশি বলেছি। আমি কিছুই লুকাইনি মানসীর কাছে। আসলে আমি বিয়ে করতেও চাইনি। মানসী ভরসা দেওয়াতেই বিয়ে করতে চাই।
বড়দা এবার মানসীকে আলাদা ডেকে নিয়ে গেলেন।
বড়দা – তুই কি হিসাবে এই ছেলেটাকে বিয়ে করার জন্য পছন্দ করলি ?
মানসী – আমার ভাস্করকে খারাপ লাগেনি
বড়দা – খারাপ লাগেনি বুঝলাম, কিন্তু ভাল কেন লাগল ?
মানসী – দাদা এটা ভাল বা খারাপ লাগার জন্যে নয়। এটা বেঁচে থাকার জন্যে।
বড়দা – আমরা কি তোমাকে খুব কষ্টে রেখেছি ! তুমি কি আমাদের সাথে বেঁচে থাকবে না ?
মানসী – দাদা এই ভাবে তোমাদের বোঝা হয়ে কতদিন থাকবো ?
বড়দা – আমরা কেউ কি তোমাকে বোঝা বলেছি ?
মানসী – তোমরা কেউ আমাকে বোঝা বলবে না। আমি তোমাদের সাথে খুব ভালই আছি। কিন্তু এই ভাবে আর কতদিন ?
বড়দা – কিন্তু তাই বলে আমি তোমাকে যার তার সাথে বিয়ে দিতে পারি না।
মানসী – বড়দা, ভাস্করকে আমি চিনেছি। ওর সাথে খারাপ থাকবো না।
বড়দা – আমি যদি বিয়ে দিতে রাজি না হই ?
মানসী – তোমার অমতে বিয়ে করবো না।
বড়দা ফিরে এসে স্বপন কে বললেন যে উনি এই বিয়েতে রাজি নন।
স্বপন – কেন বড়দা ?
বড়দা – দেখো এতদিন আমি জানতাম যে তুমি মানসীর খুব ভাল বন্ধু। কিন্তু আমি ভাবতে পারিনি তুমি এই রকম সম্বন্ধ নিয়ে আসবে আমার বোনের জন্য।
ভাস্কর – দাদা আমার কোন খারাপ উদ্দেশ্য নেই
বড়দা – রাখ তোমার উদ্দেশ্য। একটা সাদা সিধে মেয়ে দেখে তোমার মনে হয়েছে পটিয়ে নিতে পারবে। তুমি জান যে তোমার মত অকর্মণ্য আর অপদার্থ ছেলেকে কোন মেয়েই পছন্দ করবে না। তাই আমার এই সরল বোনকে বোকা বানিয়েছ। কিন্তু তুমি জানতে না যে ওর একটা দাদা আছে। আমি তোমার মত ছেলের সাথে আমার বোনের বিয়ে দেব না।
স্বপন – বড়দা আপনার বোনের বিয়ে দেওয়া নিয়ে আমি জোর করতে পারি না
বড়দা – স্বপন আমি তোমার সাথে এ নিয়ে আর কোন কথা বলতে চাই না।
ভাস্কর – দাদা আপনার বোন আমার সাথে অসুখী হবে না।
বড়দা – রাখ তোমার সুখ। তুমি ভাল থাকার বোঝো কি ? তুমি কি ভেবেছ আমি বুঝিনা তুমি কি জন্যে মানসীকে বিয়ে করতে চাইছ ? তোমার আসল উদ্দেশ্য বুঝে ফেলেছি।
ভাস্কর – আপনি যা ভাবছেন তা নয়
বড়দা – আমি তোমাদের মত ছেলেদের বেশ চিনি। আমার বোনের সাথে কি করতে চাও আমি বুঝি না ? শরীরের গরম ঠাণ্ডা হয়ে গেলেই ওকে ছেড়ে চলে যাবে।
ভাস্কর – দাদা আপনি এইভাবে আমাকে বলতে পারেন না
বড়দা – রাখ তোমার কথা বলা। আমি তোমার নোংরা উদ্দেশ্য মেটানোর জন্য আমার বোনকে তোমার সাথে বিয়ে দেব না।
এরপর আর অনেক কথা হয়। কিন্তু বড়দা ওনার সিদ্ধান্ত বদলান না। স্বপন পরিস্কার বুঝতে পারে বড়দা আসলে বোনের বিয়েই দিতে চান না। মানসীর বিয়ে হয়ে গেলে অই বিউটি পার্লারের সব ইনকাম মানসী নিয়ে যাবে। বড়দার কাছে কিছুই আসবে না। সুতরাং বিয়ে না দেওয়াই ভাল। মুখে বলছিলেন বোনকে নিয়ে খুব চিন্তিত। কিন্তু আসলে বোনের পয়সা নিয়ে বেশী চিন্তিত। বোনের থেকে বোনের পয়সার গুরুত্ব অনেক বেশী। তাই বোনের বিয়ে দেবার কোন মানেই হয়না। তার জন্য স্বপনের রুড কথা গুলোও হজম করে নিলেন। কারন উনি বুঝতে পারছিলেন স্বপনের সাথে তর্ক করলে স্বপন থামবে না, বরং আরও গণ্ডগোল বেশী হবে। মানসীও ৪০ বছরের অভ্যেস ছেড়ে বেরিয়ে আসতে পারেনি। ৪০ বছর ধরে বাবা আর দাদার আজ্ঞাবাহিনি হয়ে জীবন কাটিয়েছে। সেই জায়গা থেকে নিজে সিদ্ধান্ত নেবার সাহস পায় নি।
স্বপন জোর করতে চাইছিল কিন্তু নিহারিকা ওকে নিষেধ করে। আর স্বপন দেখে মানসী নিজেই যখন বড়দার বিরুদ্ধে জেতে সাহস পাচ্ছে না, তখন জোর করে বিয়ে দেবার ফল ভাল নাও হতে পারে। তাই সেস পর্যন্ত বিয়ে আর হয় না। বড়দা বাড়ি ফিরে যান। উনি ভেবেছিলেন মানসীকেও সাথে নিয়ে যাবেন কিন্তু মানসীর মনের অবস্থা দেখে ওকে স্বপনের কাছে আরও দুদিন থেকে যেতে বলেন।
পরদিন রবিবার। ভোর পাঁচটার সময় ভাস্কর এসে স্বপনের বাড়ির দরজা জরে নক করতে থাকে।
(#১০)
শনিবার বড়দা যথাসময়ে স্বপনের বাড়ি আসেন। এসেই উনি ভাস্করের সম্পরকে সব খোঁজ খবর নিতে শুরু করেন।
স্বপন – দেখুন বড়দা আমি ভাস্করকে চিনি। ওর বাড়ি নিয়ে প্রায় কিছুই জানি না।
বড়দা – তবে তুমি ওদের বিয়ে দিতে কেন চাইছ ?
স্বপন – ওর বাড়িতে সুধু ওর মা আছেন। ওর বাবা বেশ কিছু বছর আগে মারা গিয়েছেন। সেই সময় ভাস্করকে দুবাই ছেড়ে ফিরে আসতে হয়।
বড়দা – ভাস্কর দুবাইয়ে কি করত ?
মানসী – ও একটা গাড়ির ডিলার আলামুল্লাহ কোম্পানিতে আকাউন্টেসে কাজ করত।
বড়দা – তোমাকে কোন কথা জিজ্ঞাসা করিনি। তোমাকে যখন জিজ্ঞাসা করবো তখন উত্তর দেবে।
স্বপন – বড়দা বিয়েটা মানসীর
বড়দা – তাতে কি হয়েছে ? আমি আর তুমি ত সেই কথাই বলছি। ও শুধু চুপচাপ শুনে যাক।
স্বপন – ভাস্কর দুবাইয়ে যা চাকুরি করত তাতে খুব বেশি টাকা পয়সা জমাতে পারেনি। ফলে দেশে ফিরে আসার কিছুদিনের মধ্যেই সব টাকা ফুড়িয়ে যায় ।
বড়দা – এখন ওদের চলে কি ভাবে ?
স্বপন – অদের বাড়িটা ওর বাবার বানানো। দুটো ঘর ভাড়া দেওয়া আছে। সেই ভাড়ার পয়সা আর যখন যা কাজ পায় তাই করে।
বড়দা – তবে বিয়ে করে বউ কে কি খাওয়াবে ?
স্বপন – সে মানসীরও কিছু ইনকাম আছে।
বড়দা – বৌয়ের পয়সায় সংসার চালাবে ?
স্বপন – ক্ষতিটাই বা কি তাতে ?
বড়দা – এটা আমার কাছে ভাল লাগছে না
স্বপন – বড়দা আপনি বিয়ে করছেন না। রাঙ্গাদির বিয়ের কথা হচ্ছে। তাই আপনার ভাল লাগা বা না লাগার থেকে রাঙ্গাদির ভাল লাগার গুরুত্ব অনেক বেশি।
বড়দা – শুধু ভাল লাগা দিয়ে বিয়ে হয় না।
স্বপন – আর কি চাই ?
বড়দা – তুমি মাঝে মাঝে ছেলে মানুসের মত কথা বল। একটা ছেলের বংশের কথা কিছু জানি না। ওর কোন ইনকাম নেই আর ওর সাথে বোনের বিয়ে দেব !
স্বপন – আপনাদের কি বংশ মহিমা আছে ?
বড়দা – কি বলতে চাইছ তুমি ?
স্বপন – বড়দা রাগ করবেন না। আপনি একটা সরকারি কেরানী। আপনার বাবার কাগজের ব্যবসা ছিল। তার আগে আপনার পূর্ব পুরুষরা বাংলাদেশে চাষবাস করে দিন কাটাতেন। এর মধ্যে বিশাল কিছু মহান ঘটনা নেই। আর আমার মনে হয় ভাস্করের বংশ এর থেকে খুব বেশি আলাদা হবে না।
বড়দা – কিন্তু ছেলেটা বেকার।
স্বপন – আপনার যখন বিয়ে হয় তখন আপনারা সবাই মিলে দুটো ঘরে ভাড়া নিয়ে থাকতেন। আপনি ১৮৫ টাকা মাইনে পেতেন। তাও সুলগ্না বৌদির বাবা আপনার সাথে বিয়ে দিয়েছিলেন।
বড়দা – সে উনি জ্ঞানী মানুষ, আমাকে দেখে বুঝেছিলেন আমার কি ক্ষমতা।
স্বপন – আপনাদের বাড়ি সুলগ্না বৌদির বাবার বানানো। কিন্তু ভাস্করের বাড়ি ওর বাবার বানানো।
বড়দা – তাতে কি হল ?
স্বপন – তাতে এই হল যে ভাস্করের সাথে রাঙ্গাদির বিয়ে দেওয়া যায়।
বড়দা – আমার মত নেই।
স্বপন – শ্রেয়সীর যার সাথে বিয়ে দিয়েছেন তার থেকে ভাস্কর অনেক ভাল ছেলে।
বড়দা – ঠিক আছে, ভাস্কর আসুক ওর সাথে কথা বলে দেখি।
স্বপন – বড়দা আমি দুঃখিত, অনেক আজে বাজে কথা খারাপ ভাবে বলেছি আপনাকে। আমার আপনাদের ছোট করার কোন উদ্দেশ্য নেই।
বড়দা – স্বপন আমি তোমার কথায় রাগ করি না। তুমি যা বলেছ সেসব ঠিকই বলেছ। কিন্তু আমার মাথা সেটা মেনে নিলেও মন মানছে না।
মানসী – কিন্তু দাদা আমি চাই ভাস্করকে বিয়ে করতে।
বড়দা – তুমি কি বোঝ ? তুমি ভাবছ যে তুমি অনেক বড় হয়ে গেছ। কিন্তু যতই বড় হও না কেন আমার থেকে বড় হতে পারবে না।
নিহারিকা চা জলখাবার দেয়। বড়দা খুশী মনে সেসব খেতে থাকেন। এর মধ্যেই ভাস্কর চলে আসে। স্বপন ভাস্কর আর বড়দার আলাপ করিয়ে দেয়।
বড়দা – ভাস্কর তুমি আমার বোন কে বিয়ে করতে চাও ?
ভাস্কর – হ্যাঁ দাদা
বড়দা – কেন চাও ?
ভাস্কর – ভাল লেগেছে তাই
বড়দা – তোমার তো কোন নিশ্চিত আয় নেই। কি ভাবে খাওয়াবে ?
ভাস্কর – সে আমরা দুজনে সব করে নিতে পারবো
বড়দা – তোমরা দুজনে ? তুমি একা পারবে না ?
ভাস্কর – এই মুহূর্তে একা সামলানোর ক্ষমতা নেই। কিন্তু আমি বলছি আর দু বছরের মধ্যে আমি ঠিক সেই ক্ষমতা অর্জন করবো।
বড়দা – এত দিন কেন পারনি
ভাস্কর – এতদিন জীবনের কোন লক্ষ্যই ছিল না। আর সামনে কোন লক্ষ্য না থাকলে কেউ দৌড়ায় না।
বড়দা – তুমি বলছ যে সব ছেলেই বিয়ের পড়ে দৌড়ানো শুরু করে !
ভাস্কর – না না সবাই তা নয়। কিন্তু আমি পারিনি সেটা আমার অক্ষমতা
বড়দা – এইসব কথা তুমি বলেছ মানসীকে ?
ভাস্কর – এর থেকে অনেক বেশি বলেছি। আমি কিছুই লুকাইনি মানসীর কাছে। আসলে আমি বিয়ে করতেও চাইনি। মানসী ভরসা দেওয়াতেই বিয়ে করতে চাই।
বড়দা এবার মানসীকে আলাদা ডেকে নিয়ে গেলেন।
বড়দা – তুই কি হিসাবে এই ছেলেটাকে বিয়ে করার জন্য পছন্দ করলি ?
মানসী – আমার ভাস্করকে খারাপ লাগেনি
বড়দা – খারাপ লাগেনি বুঝলাম, কিন্তু ভাল কেন লাগল ?
মানসী – দাদা এটা ভাল বা খারাপ লাগার জন্যে নয়। এটা বেঁচে থাকার জন্যে।
বড়দা – আমরা কি তোমাকে খুব কষ্টে রেখেছি ! তুমি কি আমাদের সাথে বেঁচে থাকবে না ?
মানসী – দাদা এই ভাবে তোমাদের বোঝা হয়ে কতদিন থাকবো ?
বড়দা – আমরা কেউ কি তোমাকে বোঝা বলেছি ?
মানসী – তোমরা কেউ আমাকে বোঝা বলবে না। আমি তোমাদের সাথে খুব ভালই আছি। কিন্তু এই ভাবে আর কতদিন ?
বড়দা – কিন্তু তাই বলে আমি তোমাকে যার তার সাথে বিয়ে দিতে পারি না।
মানসী – বড়দা, ভাস্করকে আমি চিনেছি। ওর সাথে খারাপ থাকবো না।
বড়দা – আমি যদি বিয়ে দিতে রাজি না হই ?
মানসী – তোমার অমতে বিয়ে করবো না।
বড়দা ফিরে এসে স্বপন কে বললেন যে উনি এই বিয়েতে রাজি নন।
স্বপন – কেন বড়দা ?
বড়দা – দেখো এতদিন আমি জানতাম যে তুমি মানসীর খুব ভাল বন্ধু। কিন্তু আমি ভাবতে পারিনি তুমি এই রকম সম্বন্ধ নিয়ে আসবে আমার বোনের জন্য।
ভাস্কর – দাদা আমার কোন খারাপ উদ্দেশ্য নেই
বড়দা – রাখ তোমার উদ্দেশ্য। একটা সাদা সিধে মেয়ে দেখে তোমার মনে হয়েছে পটিয়ে নিতে পারবে। তুমি জান যে তোমার মত অকর্মণ্য আর অপদার্থ ছেলেকে কোন মেয়েই পছন্দ করবে না। তাই আমার এই সরল বোনকে বোকা বানিয়েছ। কিন্তু তুমি জানতে না যে ওর একটা দাদা আছে। আমি তোমার মত ছেলের সাথে আমার বোনের বিয়ে দেব না।
স্বপন – বড়দা আপনার বোনের বিয়ে দেওয়া নিয়ে আমি জোর করতে পারি না
বড়দা – স্বপন আমি তোমার সাথে এ নিয়ে আর কোন কথা বলতে চাই না।
ভাস্কর – দাদা আপনার বোন আমার সাথে অসুখী হবে না।
বড়দা – রাখ তোমার সুখ। তুমি ভাল থাকার বোঝো কি ? তুমি কি ভেবেছ আমি বুঝিনা তুমি কি জন্যে মানসীকে বিয়ে করতে চাইছ ? তোমার আসল উদ্দেশ্য বুঝে ফেলেছি।
ভাস্কর – আপনি যা ভাবছেন তা নয়
বড়দা – আমি তোমাদের মত ছেলেদের বেশ চিনি। আমার বোনের সাথে কি করতে চাও আমি বুঝি না ? শরীরের গরম ঠাণ্ডা হয়ে গেলেই ওকে ছেড়ে চলে যাবে।
ভাস্কর – দাদা আপনি এইভাবে আমাকে বলতে পারেন না
বড়দা – রাখ তোমার কথা বলা। আমি তোমার নোংরা উদ্দেশ্য মেটানোর জন্য আমার বোনকে তোমার সাথে বিয়ে দেব না।
এরপর আর অনেক কথা হয়। কিন্তু বড়দা ওনার সিদ্ধান্ত বদলান না। স্বপন পরিস্কার বুঝতে পারে বড়দা আসলে বোনের বিয়েই দিতে চান না। মানসীর বিয়ে হয়ে গেলে অই বিউটি পার্লারের সব ইনকাম মানসী নিয়ে যাবে। বড়দার কাছে কিছুই আসবে না। সুতরাং বিয়ে না দেওয়াই ভাল। মুখে বলছিলেন বোনকে নিয়ে খুব চিন্তিত। কিন্তু আসলে বোনের পয়সা নিয়ে বেশী চিন্তিত। বোনের থেকে বোনের পয়সার গুরুত্ব অনেক বেশী। তাই বোনের বিয়ে দেবার কোন মানেই হয়না। তার জন্য স্বপনের রুড কথা গুলোও হজম করে নিলেন। কারন উনি বুঝতে পারছিলেন স্বপনের সাথে তর্ক করলে স্বপন থামবে না, বরং আরও গণ্ডগোল বেশী হবে। মানসীও ৪০ বছরের অভ্যেস ছেড়ে বেরিয়ে আসতে পারেনি। ৪০ বছর ধরে বাবা আর দাদার আজ্ঞাবাহিনি হয়ে জীবন কাটিয়েছে। সেই জায়গা থেকে নিজে সিদ্ধান্ত নেবার সাহস পায় নি।
স্বপন জোর করতে চাইছিল কিন্তু নিহারিকা ওকে নিষেধ করে। আর স্বপন দেখে মানসী নিজেই যখন বড়দার বিরুদ্ধে জেতে সাহস পাচ্ছে না, তখন জোর করে বিয়ে দেবার ফল ভাল নাও হতে পারে। তাই সেস পর্যন্ত বিয়ে আর হয় না। বড়দা বাড়ি ফিরে যান। উনি ভেবেছিলেন মানসীকেও সাথে নিয়ে যাবেন কিন্তু মানসীর মনের অবস্থা দেখে ওকে স্বপনের কাছে আরও দুদিন থেকে যেতে বলেন।
পরদিন রবিবার। ভোর পাঁচটার সময় ভাস্কর এসে স্বপনের বাড়ির দরজা জরে নক করতে থাকে।
""পৃথিবীটা রঙ্গমঞ্চ আমরা সবাই অভিনেতা"" !!