05-07-2020, 05:13 PM
পঞ্চম পরিচ্ছদ – মরুভুমি আর মরীচিকা
(#৮)
সোমবার সকালে ভাস্কর এসেই মানসীকে দেখে। মানসী তখন একটা সাদা চুড়িদার পড়ে স্বপনের ছেলের সাথে খেলা করছিলো। ভাস্কর হেঁসে মানসীকে বলে, “নমস্কার রাঙ্গাদি, ভালো আছেন?”
মানসী – আমাকে রাঙ্গাদি বললে কথা বলব না
ভাস্কর – আচ্ছা ঠিক আছে। মানসী দেবী ভালো আছেন ?
মানসী – আপনার টাইটেলটা কি যেন ?
ভাস্কর – পাল
মানসী – হ্যাঁ, শ্রীল শ্রীযুক্ত ভাস্কর পাল মহাশয় আমি খুব ভালো আছি
ভাস্কর – এটা আবার কিরকম সম্বোধন !
মানসী – আপনি যদি মানসী দেবী বলেন তবে তার উত্তরে আমার ওইভাবেই বলা উচিত
ভাস্কর – বুঝলাম, এখন পড়িয়ে নেই, পরে কথা বলব।
ভাস্কর পড়াতে চলে যায়। স্বপন ভেতরের ঘর থেকে ওভার কথা শুনছিল। ও বাইরে হাসি হাসি মুখে বেড়িয়ে আসে। নিহারিকা ওদের চা দেয়।
স্বপন – আজকে ভাস্করের জন্য কি জলখাবার বানিয়েছ ?
মানসী – তোমরা ওকে রোজ জলখাবার বানিয় দাও নাকি !
স্বপন – না না, এটা তোমার অনারে বানানো
মানসী – মানে ?
স্বপন – আমরা চলে গেলে ওকে তোমার সামনে বসিয়ে রাখতে কিছু তো ঘুষ দিতে হবে
নিহারিকা – যাকে বাড়ির জামাই করতে চাই তাকে একটু তো খাতির করতেই হয়। আজ ধোকলা বানিয়েছি।
মানসী – ধোকলা আবার কি জিনিস ?
স্বপন – গুজরাতি ইডলি, চালের বদলে ব্যাসন দিয়ে বানানো আর গোল না করে চারকোনা করে কাটা।
মানসী – খাইনি কখনও
নিহারিকা – আজকে বরের সাথে খাস
মানসী – মারব কিন্তু
স্বপন – কেন কি হল ?
মানসী – বর বলল কেন !
স্বপন – এই না এখন বর বোলো না, প্রেমিক বোলো।
মানসী – তুমিও ! যা খুশী বল, আমার ধোকলা খাওয়া নিয়ে কথা। তবে তোমার এখানে আসলে সবসময়েই কিছু না কিছু নতুন খাই।
নিহারিকা – সেটা তোমার স্বপনের জন্য।
মানসী – আজকে তো তুই বানিয়েছিস
নিহারিকা – আমি আর ক’দিন বানাই।
ভাস্করের পড়ানো হয়ে গেলে স্বপন ওকে জিজ্ঞাসা করে ও এক ঘণ্টা সময় দিতে পারবে কি না।
ভাস্কর – হ্যাঁ আজ আমার কোন জায়গায় যাবার নেই, কি করতে হবে বলুন।
স্বপন – সেইরকম কিছু নয়, এখন আমাকে আর তোমার বৌদিকে মেয়ের জন্য একটু এক ডাক্তারের কাছে যেতে হবে। রাঙ্গাদি একা ছেলেটাকে নিয়ে বাড়ীতে থাকবে।
নিহারিকা – তাই আমরা ভাবছিলাম তুমি যদি একটু এখানে বসতে পারো
ভাস্কর – হ্যাঁ হ্যাঁ আমার রাঙ্গাদির সাথে বসে গল্প করতে কোন আপত্তি নেই
মানসী – রাঙ্গাদি বললে আমি কথা বলব না
নিহারিকা – সেটা তোরা ঠিক কর কি ভাবে কথা বলবি।
স্বপন নিহারিকা আর মেয়েকে নিয়ে চলে যায়। ভাস্কর আর মানসী দুজনে চুপ চাপ বসে থাকে। তারপর দুজনেই একসাথে কিছু বলতে যায়। আবার দুজনেই থেমে যায়।
ভাস্কর – মেয়েদের অধিকার আগে, তাই আপনি বলুন কি বলছিলেন
মানসী – না আপনি বলুন
ভাস্কর – আমার সাথে বসে থাকা মনে হয় আপনার পছন্দ নয়
মানসী – কেউ আমাকে ‘আপনি’ করে কথা বলছে আমি সেটায় অভ্যস্থ নই
ভাস্কর – তবে কি করা উচিত ?
মানসী – আমাকে নাম ধরে তুমি করে কথা বলুন
ভাস্কর – না মানসী তুমিও যদি আমাকে ‘তুমি’ করে কথা বল তবেই রাজী আছি।
মানসী – আমারও ‘আপনি’ করে কথা বলতে ভালো লাগে না
ভাস্কর – তুমি এতো ভালো মেয়ে কিন্তু বিয়ে করো নি কেন ?
মানসী – ভালো মেয়ের সংজ্ঞা কি ভাস্কর ?
ভাস্কর – এই একটা জিনিসের কোন সংজ্ঞা নেই। এটা সবাই নিজের মনে ঠিক করে।
মানসী – ঠিক বুঝলাম না
ভাস্কর – একটা চোরের কাছে যে ভালো চুরি করতে পারে বা যে পুলিশ ওকে ধরে ছেড়ে দেয়, তারা ভালো মানুষ।
মানসী – তার মানে তুমি বলতে চাইছ আমি চোর
ভাস্কর – আমাকে পুরো বলতে দাও। একজন সাধারণ লোকের কাছে যে পুরোহিত পুজো দেবার জন্য ওকে সময় দেয় তিনি ভালো পুরোহিত। একজন ভিখারির কাছে যে অনেক ভিক্ষা দেয় সে ভালো লোক।
মানসী – বুঝলাম, কিন্তু আমাকে এর মধ্যে কোনটা মনে হল ?
ভাস্কর – এর মধ্যে কোনটাই নয়। আমরা একটা মেয়ের মধ্যে যে ব্যবহার, যে শালীনতা আশা করি, তুমি তাই। সেই জন্যেই তুমি ভালো মেয়ে।
মানসী – তবে আমরা বন্ধু হতে পারি ?
ভাস্কর – তুমি তো জানলে না আমি ভালো ছেলে কিনা ?
মানসী – আমি আর ভালো ছেলে খুঁজি না। তথাকথিত ভালো ছেলে দেখে দেখে বিরক্ত হয়ে গেছি।
ভাস্কর – তবে কি আমাকে খারাপ ছেলে মনে হচ্ছে।
মানসী – আমি চিন্তাই করছি না তুমি ভালো না খারাপ। আমার ভালো লেগেছে তাই বলছি বন্ধু হবে কি না ?
ভাস্কর – তোমার আমাকে ভালো লেগেছে ?
ঘরের দরজা খোলাই ছিল। পাশের বাড়ির বৌদি ঢুকে জিজ্ঞাসা করেন নিহারিকা কোথায়। আর বসে পড়েন ওদের সাথে গল্প করতে।
(#৮)
সোমবার সকালে ভাস্কর এসেই মানসীকে দেখে। মানসী তখন একটা সাদা চুড়িদার পড়ে স্বপনের ছেলের সাথে খেলা করছিলো। ভাস্কর হেঁসে মানসীকে বলে, “নমস্কার রাঙ্গাদি, ভালো আছেন?”
মানসী – আমাকে রাঙ্গাদি বললে কথা বলব না
ভাস্কর – আচ্ছা ঠিক আছে। মানসী দেবী ভালো আছেন ?
মানসী – আপনার টাইটেলটা কি যেন ?
ভাস্কর – পাল
মানসী – হ্যাঁ, শ্রীল শ্রীযুক্ত ভাস্কর পাল মহাশয় আমি খুব ভালো আছি
ভাস্কর – এটা আবার কিরকম সম্বোধন !
মানসী – আপনি যদি মানসী দেবী বলেন তবে তার উত্তরে আমার ওইভাবেই বলা উচিত
ভাস্কর – বুঝলাম, এখন পড়িয়ে নেই, পরে কথা বলব।
ভাস্কর পড়াতে চলে যায়। স্বপন ভেতরের ঘর থেকে ওভার কথা শুনছিল। ও বাইরে হাসি হাসি মুখে বেড়িয়ে আসে। নিহারিকা ওদের চা দেয়।
স্বপন – আজকে ভাস্করের জন্য কি জলখাবার বানিয়েছ ?
মানসী – তোমরা ওকে রোজ জলখাবার বানিয় দাও নাকি !
স্বপন – না না, এটা তোমার অনারে বানানো
মানসী – মানে ?
স্বপন – আমরা চলে গেলে ওকে তোমার সামনে বসিয়ে রাখতে কিছু তো ঘুষ দিতে হবে
নিহারিকা – যাকে বাড়ির জামাই করতে চাই তাকে একটু তো খাতির করতেই হয়। আজ ধোকলা বানিয়েছি।
মানসী – ধোকলা আবার কি জিনিস ?
স্বপন – গুজরাতি ইডলি, চালের বদলে ব্যাসন দিয়ে বানানো আর গোল না করে চারকোনা করে কাটা।
মানসী – খাইনি কখনও
নিহারিকা – আজকে বরের সাথে খাস
মানসী – মারব কিন্তু
স্বপন – কেন কি হল ?
মানসী – বর বলল কেন !
স্বপন – এই না এখন বর বোলো না, প্রেমিক বোলো।
মানসী – তুমিও ! যা খুশী বল, আমার ধোকলা খাওয়া নিয়ে কথা। তবে তোমার এখানে আসলে সবসময়েই কিছু না কিছু নতুন খাই।
নিহারিকা – সেটা তোমার স্বপনের জন্য।
মানসী – আজকে তো তুই বানিয়েছিস
নিহারিকা – আমি আর ক’দিন বানাই।
ভাস্করের পড়ানো হয়ে গেলে স্বপন ওকে জিজ্ঞাসা করে ও এক ঘণ্টা সময় দিতে পারবে কি না।
ভাস্কর – হ্যাঁ আজ আমার কোন জায়গায় যাবার নেই, কি করতে হবে বলুন।
স্বপন – সেইরকম কিছু নয়, এখন আমাকে আর তোমার বৌদিকে মেয়ের জন্য একটু এক ডাক্তারের কাছে যেতে হবে। রাঙ্গাদি একা ছেলেটাকে নিয়ে বাড়ীতে থাকবে।
নিহারিকা – তাই আমরা ভাবছিলাম তুমি যদি একটু এখানে বসতে পারো
ভাস্কর – হ্যাঁ হ্যাঁ আমার রাঙ্গাদির সাথে বসে গল্প করতে কোন আপত্তি নেই
মানসী – রাঙ্গাদি বললে আমি কথা বলব না
নিহারিকা – সেটা তোরা ঠিক কর কি ভাবে কথা বলবি।
স্বপন নিহারিকা আর মেয়েকে নিয়ে চলে যায়। ভাস্কর আর মানসী দুজনে চুপ চাপ বসে থাকে। তারপর দুজনেই একসাথে কিছু বলতে যায়। আবার দুজনেই থেমে যায়।
ভাস্কর – মেয়েদের অধিকার আগে, তাই আপনি বলুন কি বলছিলেন
মানসী – না আপনি বলুন
ভাস্কর – আমার সাথে বসে থাকা মনে হয় আপনার পছন্দ নয়
মানসী – কেউ আমাকে ‘আপনি’ করে কথা বলছে আমি সেটায় অভ্যস্থ নই
ভাস্কর – তবে কি করা উচিত ?
মানসী – আমাকে নাম ধরে তুমি করে কথা বলুন
ভাস্কর – না মানসী তুমিও যদি আমাকে ‘তুমি’ করে কথা বল তবেই রাজী আছি।
মানসী – আমারও ‘আপনি’ করে কথা বলতে ভালো লাগে না
ভাস্কর – তুমি এতো ভালো মেয়ে কিন্তু বিয়ে করো নি কেন ?
মানসী – ভালো মেয়ের সংজ্ঞা কি ভাস্কর ?
ভাস্কর – এই একটা জিনিসের কোন সংজ্ঞা নেই। এটা সবাই নিজের মনে ঠিক করে।
মানসী – ঠিক বুঝলাম না
ভাস্কর – একটা চোরের কাছে যে ভালো চুরি করতে পারে বা যে পুলিশ ওকে ধরে ছেড়ে দেয়, তারা ভালো মানুষ।
মানসী – তার মানে তুমি বলতে চাইছ আমি চোর
ভাস্কর – আমাকে পুরো বলতে দাও। একজন সাধারণ লোকের কাছে যে পুরোহিত পুজো দেবার জন্য ওকে সময় দেয় তিনি ভালো পুরোহিত। একজন ভিখারির কাছে যে অনেক ভিক্ষা দেয় সে ভালো লোক।
মানসী – বুঝলাম, কিন্তু আমাকে এর মধ্যে কোনটা মনে হল ?
ভাস্কর – এর মধ্যে কোনটাই নয়। আমরা একটা মেয়ের মধ্যে যে ব্যবহার, যে শালীনতা আশা করি, তুমি তাই। সেই জন্যেই তুমি ভালো মেয়ে।
মানসী – তবে আমরা বন্ধু হতে পারি ?
ভাস্কর – তুমি তো জানলে না আমি ভালো ছেলে কিনা ?
মানসী – আমি আর ভালো ছেলে খুঁজি না। তথাকথিত ভালো ছেলে দেখে দেখে বিরক্ত হয়ে গেছি।
ভাস্কর – তবে কি আমাকে খারাপ ছেলে মনে হচ্ছে।
মানসী – আমি চিন্তাই করছি না তুমি ভালো না খারাপ। আমার ভালো লেগেছে তাই বলছি বন্ধু হবে কি না ?
ভাস্কর – তোমার আমাকে ভালো লেগেছে ?
ঘরের দরজা খোলাই ছিল। পাশের বাড়ির বৌদি ঢুকে জিজ্ঞাসা করেন নিহারিকা কোথায়। আর বসে পড়েন ওদের সাথে গল্প করতে।
""পৃথিবীটা রঙ্গমঞ্চ আমরা সবাই অভিনেতা"" !!