05-07-2020, 02:25 PM
(This post was last modified: 02-03-2021, 09:25 PM by kumdev. Edited 1 time in total. Edited 1 time in total.)
।।৪৭।।
সকাল বেলা রান্না করে দেবকে খাইয়ে দাইয়ে কলেজে বেরিয়ে যান গুলনার এহসান। একদিন সাইদা বেগম সই করতে দেখে জিজ্ঞেস করেছিলেন, কিছু মনে না করলে একটা কথা জিজ্ঞেস করবো?
ভুমিকা শুনে গুলনার ভ্রু কুচকে তাকান। সাইদা তার চেয়ে বয়সে বেশ বড়,তার কলিগ। গুলনারের বিষয় ইতিহাস সাইদা বেগম ইংরেজি পড়ান।
— আপনি নামের শেষে সোম লেখেন। আপনার স্বামী কি * ?
— সেইটা আমি বলতে পারবো না।
— বুঝলাম না।
— শুনতে অদ্ভুত লাগবে তিনি নিজেরে শুধু মানুষ মনে করেন।
— ইন্টারেষ্টিং। ভাবছি একদিন উনার সঙ্গে আলাপ করতে হবে।
— প্রয়োজন ছাড়া আলাপ তার অপছন্দ। গুলনার বলেন।
গায়ে পড়ে আলাপ করা গুলনার পছন্দ করেন না। বাধ্য হয়ে বানিয়ে বলতে হল। সাইদা একটু মনক্ষুন্ন হন।
— ভদ্রলোক সামাজিক নন?
গুলনার খোচাটা গায়ে মাখে না বলেন,তা বলতে পারেন। মাপ করবেন আমার ক্লাস আছে।
দুজন দু-ঘরে শোবার ব্যবস্থা দেব এত সহজে মেনে নেবে আশা করেনি গুলনার। শুধু একটা ব্যাপার কলেজ থেকে ফিরলেই বায়না,গান শুনাও। গান না-শুনালে এমন অশান্তি করে তা বলার নয়। খাবে না তার সঙ্গে কথা বলবে না। তখন বাধ্য হয়ে তানপুরা নিয়ে বসতে হয়। ওনার আম্মু বলছিলেন উনি কাঁদেন না– । কিন্তু গান শুনতে শুনতে চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়ে। গুলনার লক্ষ্য করেছেন দেবের পছন্দ রবীন্দ্র নাথের গান। বাড়ী থেকে তাই ‘গীতবিতান’ নিয়ে এসে নতুন করে ঝালানো শুরু করেন।
প্রাইভেটে ভাল রেজাল্ট করা কঠিন। তাও প্রথম বিভাগে পাস করে দেব। দর্শন শাস্ত্রে অনার্স নিয়ে ভর্তি করে দিলেন কলেজে। দুপুরে একা একা বাড়িতে বসে কাটাতে হয়না। প্রতি সপ্তাহে দুইরাত বাড়িতে একা থাকতে হয় দেবকে। গুলনার দেখা করতে যান মায়ের সঙ্গে।বাসায় থাকলেই বা কি বরং না থাকলে দেবের সুবিধে।ইচ্ছেমত আশপাশ অঞ্চল ঘুরতে বের হয়। নদীর স্রোতের মত সময় বয়ে যায়।দেখতে দেখতে কেটে যায় কয়েকটা বছর। কলেজে কিছু বন্ধু-বান্ধবী জুটেছে গুলনারের পছন্দ নয়। নিষেধ করতে গেলে আবার কি হয় ভেবে কিছু বলেন না। কড়া নজর রাখেন পড়াশুনায় কোন ঢিলেমী না পড়ে। একদিন কলেজ থেকে ক্লান্ত হয়ে ফিরেছেন অমনি আবদার গান শুনাও। গুলনার বলেন,এখন না পরে। ব্যস নিজের ঘরে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দিল। রাতে খেতে ডাকলে বলে,ক্ষিধে নেই। যে মানুষ খেতে ভালবাসে কেউ বিশ্বাস করবে ক্ষিধে নেই? অগত্যা তানপুরা নিয়ে বসলেন গুলনার। তানপুরার মুর্ছনায় দরজা খুলে গেল। গুলনার গায়,
”আমার হিয়ার মাঝে লুকিয়ে ছিলে
দেখতে আমি পাইনি তোমায় দেখতে আমি পাইনি…..। ”
সামনে বলদেব চোখ বুজে গান শুনছে,কপোল বেয়ে গড়িয়ে পড়ছে অশ্রু। গান শেষ হলে চোখ খোলে বলদেব। গুলনার জিজ্ঞেস করেন,আমি যখন গান গাই আপনি চোখ বুজে থাকেন,আমার দিকে দেখেন না। আমারে কি আপনার অপছন্দ?
হাসিতে সারা মুখ উদ্ভাসিত। বলদেব নীচু হয়ে দুই করতলে গুলনারের দু-গাল ধরে। গুলনারের বুক কেপে ওঠে মনে হল দেব বুঝি তাকে চুম্বন করবে। করলেও আজ তিনি আপত্তি করবেন না। বলদেব কপালে কপাল ছুইয়ে বলে,তুমি বলেছিলে জাগনো থাকলে তোমারে দেখতে পাবো বিশ্বাস করো চোখ বুজলেও আমি আমার মন্টিকে দেখতে পাই।
গুলনারকে ছেড়ে বলদেব উঠে দাড়িয়ে বলে,ক্ষিধে লেগেছে খেতে দেও।
গুলনার রান্না ঘরে গিয়ে খাবার সাজাতে থাকে। গানের চর্চা ছেড়েই দিয়েছিল,দেবের জন্য আবার গান শুরু করেছে গুলনার।
রাতের খাওয়ার পর বলদেব নিজের ঘরে শুতে চলে যায়। গুলনারের চোখে ঘুম আসে না। বিছানায় এপাশ-ওপাশ করেন। রাতে এমন করে শরীরের মধ্যে অনেক কষ্টে নিজেকে দমণ করে গুলনার। দেবের কি তার মতো যন্ত্রণা হয় না? একদিনও আবদার করেনি তার কাছে শোবার জন্য। হঠাৎ মনে হল কেউ দরজায় শব্দ করছে। গুলনারের মুখে হাসি ফোটে। উঠে দরজা খুলে দেখেন কেউ কোথাও নেই। তাহলে বোধ হয় চলে গেছে? সন্তর্পণে দেবে ঘরের ভিতর উকি দিলেন,শিশুর মত বালিশ আকড়ে ঘুমোচ্ছে বলদেব। তাহলে ভুল শুনে থাকবেন।
একদিন নুসরতের ফোন আসে। ডিএম বদলি হয়ে চলে গেছেন অন্যত্র।সঙ্গে আমিনাবেগমকে নিয়ে গেছেন।কোথায় গেছেন কাউকে বলেন নি।যাবার আগে খুব খারাপ ব্যবহার করেছেন।সবাই ওকে সংবর্ধনা দেবার কথা বললে উনি মুখের উপর বলে দেন,সবাই নানা প্রশস্তি করবেন তিনি মনে এক মুখে আর এক পছন্দ করেন না।তিনি যা ভাল বুঝেছেন করেছেন উদ্দেশ্য প্রণোদিত হয়ে কিছু করেন নি।যদি কারো স্বার্থে আঘাত লেগে থাকে তিনি অসহায়। নুসরত বলে,মন্টি-দি একবার এসো না। কতদিন তোমায় দেখি না। গুলনার বলেন,নারে এখন অসম্ভব,কদিন পর দেবের ফাইন্যাল পরীক্ষা।
পরীক্ষার কটাদিন গুলনার ছুটি নেয়। বেরোবার আগে দেবের কপালে চুম্বন করে দোয়া মাগে। ঐ সপ্তাহে বাড়ি যায়নি গুলনার। নাদিয়া বেগম অস্থির হয়ে ছেলে মামুনকে খোজ নিতে বলেন। বিরক্ত ড.মামুন হাসপাতাল থেকে তাড়াতাড়ি বেরিয়ে মুন্সিগঞ্জের দিকে গাড়ি চালালো। ফ্লাটের দরজায় নক করতে অপা দরজা খুলে ইশারায় মুখে আঙ্গুল দিয়ে শব্দ করতে নিষেধ করেন। গুলনারের সঙ্গে ঘরে ঢুকে অদ্ভুতভাবে অপাকে লক্ষ্য করেন।
— দুলাভাই কই?
ইঙ্গিতে দেখালেন,পাশের ঘরে।
— অপা তুমি কিন্তু আম্মুরেও ছাড়ায়ে যাচ্ছো।
লাজুক হেসে গুলনার বলেন,তুই বুঝবি না একটা বলদরে মানুষ করা কত ঝঞ্ঝাট। সব সময় নজর রাখতে হয়– ।
— তুমি কলেজে গেলে কে নজর রাখে?
— এখন কলেজে যাই না,ছুটি নিয়েছি।
ড.মামুন হতবাক,কি বলবেন ভেবে পান না। নারীর ভালবাসা নিছক নর-নারীর প্রেম নয়,একটি মিশ্র উপাদান। অপা কেন আসেনি,বাসায় ফিরে মাকে কি বলবেন?
— ড.মামুন কতক্ষন?
সবাই চমকে দেখে বলদেব দরজায় দাড়িয়ে। গুলনার বিরক্ত হয়ে বলেন,আসেন আড্ডা দেন।
বলদেব ব্যাজার মুখে চলে যাবার জন্য পা বাড়াতে গুলনার বলেন,থাক রাগ দেখাতে হবে না। পনেরো মিনিট কথা বলেন।
— দেখলে মামুন,আমি কি রাগ দেখালাম?
গুলনার বলেন,বসেন টিফিনটাও সেরে নেন। গুলনার রান্না ঘরে চলে গেলেন। ড.মামুন ভাবেন,তিনি এ কোন পাগলখানায় এসে পড়লেন? আম্মুকে এসব বলা যাবে না। ড.মামুন জিজ্ঞেস করেন,আপনি অপার সব কথা শোনেন কেন? প্রতিবাদ করতে পারেন না?
বলদেব উদাসভাবে কি যেন ভাবে,তারপর ধীরভাবে বলে, আমার মা বলতো বলা মানিয়ে চলতে হয় সংসারে, মানিয়ে চলার মধ্যে কোন গ্লানি নেই। ইনফিরিওরিটি কমপ্লেক্স মানে হেরে যাবার ভয় মানিয়ে চলার অন্তরায়। গুলনার চা নিয়ে ঢুকতে ঢুকতে বলেন,ওকে আমার বিরুদ্ধে কি লাগাচ্ছেন?
বলদেব ঘাড় নেড়ে বলে,দেখলে মামুন দিস ইজ কমপ্লেক্স।
— আপনার পরীক্ষা কেমন হচ্ছে?
— আমি আমার মত লিখছি এবার যিনি খাতা দেখবেন তিনি তার জ্ঞান বুদ্ধি মত নম্বর দেবেন।
টিফিন সেরে ড.মামুন উঠে দাঁড়িয়ে জিজ্ঞেস করেন,আম্মুরে কি বলবো?
— যা খুশি। তুই কি ভেবেছিস আমি তোকে মিথ্যে বলা শেখাবো?
ড.মামুন সিড়ি দিয়ে নামতে নামতে ভাবেন,অপা তোমারে মিথ্যে বলতে হবে না। তোমার হয়ে সে পাপ আমি করবো।
সকাল বেলা রান্না করে দেবকে খাইয়ে দাইয়ে কলেজে বেরিয়ে যান গুলনার এহসান। একদিন সাইদা বেগম সই করতে দেখে জিজ্ঞেস করেছিলেন, কিছু মনে না করলে একটা কথা জিজ্ঞেস করবো?
ভুমিকা শুনে গুলনার ভ্রু কুচকে তাকান। সাইদা তার চেয়ে বয়সে বেশ বড়,তার কলিগ। গুলনারের বিষয় ইতিহাস সাইদা বেগম ইংরেজি পড়ান।
— আপনি নামের শেষে সোম লেখেন। আপনার স্বামী কি * ?
— সেইটা আমি বলতে পারবো না।
— বুঝলাম না।
— শুনতে অদ্ভুত লাগবে তিনি নিজেরে শুধু মানুষ মনে করেন।
— ইন্টারেষ্টিং। ভাবছি একদিন উনার সঙ্গে আলাপ করতে হবে।
— প্রয়োজন ছাড়া আলাপ তার অপছন্দ। গুলনার বলেন।
গায়ে পড়ে আলাপ করা গুলনার পছন্দ করেন না। বাধ্য হয়ে বানিয়ে বলতে হল। সাইদা একটু মনক্ষুন্ন হন।
— ভদ্রলোক সামাজিক নন?
গুলনার খোচাটা গায়ে মাখে না বলেন,তা বলতে পারেন। মাপ করবেন আমার ক্লাস আছে।
দুজন দু-ঘরে শোবার ব্যবস্থা দেব এত সহজে মেনে নেবে আশা করেনি গুলনার। শুধু একটা ব্যাপার কলেজ থেকে ফিরলেই বায়না,গান শুনাও। গান না-শুনালে এমন অশান্তি করে তা বলার নয়। খাবে না তার সঙ্গে কথা বলবে না। তখন বাধ্য হয়ে তানপুরা নিয়ে বসতে হয়। ওনার আম্মু বলছিলেন উনি কাঁদেন না– । কিন্তু গান শুনতে শুনতে চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়ে। গুলনার লক্ষ্য করেছেন দেবের পছন্দ রবীন্দ্র নাথের গান। বাড়ী থেকে তাই ‘গীতবিতান’ নিয়ে এসে নতুন করে ঝালানো শুরু করেন।
প্রাইভেটে ভাল রেজাল্ট করা কঠিন। তাও প্রথম বিভাগে পাস করে দেব। দর্শন শাস্ত্রে অনার্স নিয়ে ভর্তি করে দিলেন কলেজে। দুপুরে একা একা বাড়িতে বসে কাটাতে হয়না। প্রতি সপ্তাহে দুইরাত বাড়িতে একা থাকতে হয় দেবকে। গুলনার দেখা করতে যান মায়ের সঙ্গে।বাসায় থাকলেই বা কি বরং না থাকলে দেবের সুবিধে।ইচ্ছেমত আশপাশ অঞ্চল ঘুরতে বের হয়। নদীর স্রোতের মত সময় বয়ে যায়।দেখতে দেখতে কেটে যায় কয়েকটা বছর। কলেজে কিছু বন্ধু-বান্ধবী জুটেছে গুলনারের পছন্দ নয়। নিষেধ করতে গেলে আবার কি হয় ভেবে কিছু বলেন না। কড়া নজর রাখেন পড়াশুনায় কোন ঢিলেমী না পড়ে। একদিন কলেজ থেকে ক্লান্ত হয়ে ফিরেছেন অমনি আবদার গান শুনাও। গুলনার বলেন,এখন না পরে। ব্যস নিজের ঘরে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দিল। রাতে খেতে ডাকলে বলে,ক্ষিধে নেই। যে মানুষ খেতে ভালবাসে কেউ বিশ্বাস করবে ক্ষিধে নেই? অগত্যা তানপুরা নিয়ে বসলেন গুলনার। তানপুরার মুর্ছনায় দরজা খুলে গেল। গুলনার গায়,
”আমার হিয়ার মাঝে লুকিয়ে ছিলে
দেখতে আমি পাইনি তোমায় দেখতে আমি পাইনি…..। ”
সামনে বলদেব চোখ বুজে গান শুনছে,কপোল বেয়ে গড়িয়ে পড়ছে অশ্রু। গান শেষ হলে চোখ খোলে বলদেব। গুলনার জিজ্ঞেস করেন,আমি যখন গান গাই আপনি চোখ বুজে থাকেন,আমার দিকে দেখেন না। আমারে কি আপনার অপছন্দ?
হাসিতে সারা মুখ উদ্ভাসিত। বলদেব নীচু হয়ে দুই করতলে গুলনারের দু-গাল ধরে। গুলনারের বুক কেপে ওঠে মনে হল দেব বুঝি তাকে চুম্বন করবে। করলেও আজ তিনি আপত্তি করবেন না। বলদেব কপালে কপাল ছুইয়ে বলে,তুমি বলেছিলে জাগনো থাকলে তোমারে দেখতে পাবো বিশ্বাস করো চোখ বুজলেও আমি আমার মন্টিকে দেখতে পাই।
গুলনারকে ছেড়ে বলদেব উঠে দাড়িয়ে বলে,ক্ষিধে লেগেছে খেতে দেও।
গুলনার রান্না ঘরে গিয়ে খাবার সাজাতে থাকে। গানের চর্চা ছেড়েই দিয়েছিল,দেবের জন্য আবার গান শুরু করেছে গুলনার।
রাতের খাওয়ার পর বলদেব নিজের ঘরে শুতে চলে যায়। গুলনারের চোখে ঘুম আসে না। বিছানায় এপাশ-ওপাশ করেন। রাতে এমন করে শরীরের মধ্যে অনেক কষ্টে নিজেকে দমণ করে গুলনার। দেবের কি তার মতো যন্ত্রণা হয় না? একদিনও আবদার করেনি তার কাছে শোবার জন্য। হঠাৎ মনে হল কেউ দরজায় শব্দ করছে। গুলনারের মুখে হাসি ফোটে। উঠে দরজা খুলে দেখেন কেউ কোথাও নেই। তাহলে বোধ হয় চলে গেছে? সন্তর্পণে দেবে ঘরের ভিতর উকি দিলেন,শিশুর মত বালিশ আকড়ে ঘুমোচ্ছে বলদেব। তাহলে ভুল শুনে থাকবেন।
একদিন নুসরতের ফোন আসে। ডিএম বদলি হয়ে চলে গেছেন অন্যত্র।সঙ্গে আমিনাবেগমকে নিয়ে গেছেন।কোথায় গেছেন কাউকে বলেন নি।যাবার আগে খুব খারাপ ব্যবহার করেছেন।সবাই ওকে সংবর্ধনা দেবার কথা বললে উনি মুখের উপর বলে দেন,সবাই নানা প্রশস্তি করবেন তিনি মনে এক মুখে আর এক পছন্দ করেন না।তিনি যা ভাল বুঝেছেন করেছেন উদ্দেশ্য প্রণোদিত হয়ে কিছু করেন নি।যদি কারো স্বার্থে আঘাত লেগে থাকে তিনি অসহায়। নুসরত বলে,মন্টি-দি একবার এসো না। কতদিন তোমায় দেখি না। গুলনার বলেন,নারে এখন অসম্ভব,কদিন পর দেবের ফাইন্যাল পরীক্ষা।
পরীক্ষার কটাদিন গুলনার ছুটি নেয়। বেরোবার আগে দেবের কপালে চুম্বন করে দোয়া মাগে। ঐ সপ্তাহে বাড়ি যায়নি গুলনার। নাদিয়া বেগম অস্থির হয়ে ছেলে মামুনকে খোজ নিতে বলেন। বিরক্ত ড.মামুন হাসপাতাল থেকে তাড়াতাড়ি বেরিয়ে মুন্সিগঞ্জের দিকে গাড়ি চালালো। ফ্লাটের দরজায় নক করতে অপা দরজা খুলে ইশারায় মুখে আঙ্গুল দিয়ে শব্দ করতে নিষেধ করেন। গুলনারের সঙ্গে ঘরে ঢুকে অদ্ভুতভাবে অপাকে লক্ষ্য করেন।
— দুলাভাই কই?
ইঙ্গিতে দেখালেন,পাশের ঘরে।
— অপা তুমি কিন্তু আম্মুরেও ছাড়ায়ে যাচ্ছো।
লাজুক হেসে গুলনার বলেন,তুই বুঝবি না একটা বলদরে মানুষ করা কত ঝঞ্ঝাট। সব সময় নজর রাখতে হয়– ।
— তুমি কলেজে গেলে কে নজর রাখে?
— এখন কলেজে যাই না,ছুটি নিয়েছি।
ড.মামুন হতবাক,কি বলবেন ভেবে পান না। নারীর ভালবাসা নিছক নর-নারীর প্রেম নয়,একটি মিশ্র উপাদান। অপা কেন আসেনি,বাসায় ফিরে মাকে কি বলবেন?
— ড.মামুন কতক্ষন?
সবাই চমকে দেখে বলদেব দরজায় দাড়িয়ে। গুলনার বিরক্ত হয়ে বলেন,আসেন আড্ডা দেন।
বলদেব ব্যাজার মুখে চলে যাবার জন্য পা বাড়াতে গুলনার বলেন,থাক রাগ দেখাতে হবে না। পনেরো মিনিট কথা বলেন।
— দেখলে মামুন,আমি কি রাগ দেখালাম?
গুলনার বলেন,বসেন টিফিনটাও সেরে নেন। গুলনার রান্না ঘরে চলে গেলেন। ড.মামুন ভাবেন,তিনি এ কোন পাগলখানায় এসে পড়লেন? আম্মুকে এসব বলা যাবে না। ড.মামুন জিজ্ঞেস করেন,আপনি অপার সব কথা শোনেন কেন? প্রতিবাদ করতে পারেন না?
বলদেব উদাসভাবে কি যেন ভাবে,তারপর ধীরভাবে বলে, আমার মা বলতো বলা মানিয়ে চলতে হয় সংসারে, মানিয়ে চলার মধ্যে কোন গ্লানি নেই। ইনফিরিওরিটি কমপ্লেক্স মানে হেরে যাবার ভয় মানিয়ে চলার অন্তরায়। গুলনার চা নিয়ে ঢুকতে ঢুকতে বলেন,ওকে আমার বিরুদ্ধে কি লাগাচ্ছেন?
বলদেব ঘাড় নেড়ে বলে,দেখলে মামুন দিস ইজ কমপ্লেক্স।
— আপনার পরীক্ষা কেমন হচ্ছে?
— আমি আমার মত লিখছি এবার যিনি খাতা দেখবেন তিনি তার জ্ঞান বুদ্ধি মত নম্বর দেবেন।
টিফিন সেরে ড.মামুন উঠে দাঁড়িয়ে জিজ্ঞেস করেন,আম্মুরে কি বলবো?
— যা খুশি। তুই কি ভেবেছিস আমি তোকে মিথ্যে বলা শেখাবো?
ড.মামুন সিড়ি দিয়ে নামতে নামতে ভাবেন,অপা তোমারে মিথ্যে বলতে হবে না। তোমার হয়ে সে পাপ আমি করবো।